Powered By Blogger

Thursday, April 4, 2024

প্রবন্ধঃ ধর্ম্ম, ঈশ্বর ও বিজ্ঞান!

করোনা ভাইরাসে যখন গোটা পৃথিবী প্রায় অচল হ'য়ে যেতে বসেছে তখন করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি দেশ, প্রতিটি দেশের সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে এই রোগকে প্রতিহত করতে, আপ্রাণ চেষ্টা করছে এই রোগকে যত কম মানুষের থেকে দূরে রাখা যায়, নির্মূল করা যায়। করোনা ভাইরাসকে নির্মূল করার জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাগারে গবেষণা ক'রে চলেছে যত তাড়াতাড়ি এই রোগের প্রতিষেধক বের করা যায়। ডাক্তার, বিজ্ঞানী চিকিৎসাশাস্ত্র ও বিজ্ঞানকে হাতিয়ার ক'রে এই মহামারীকে খতম করার জন্য যুদ্ধে নেবে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ এক ভয়ংকর যুদ্ধ যে যুদ্ধে মানবশত্রু করোনা ভাইরাসকে খতম করতে পারে হাতের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও অস্ত্র নেই! অসহায় একতরফা যুদ্ধ, যে যুদ্ধে মানুষের শত্রুপক্ষের সবচাইতে বড় বন্ধু মানুষ! মানুষ এক অদ্ভুত চরিত্রের জীব! মানুষে মানুষে যখন যুদ্ধ হয় তখনও এই মানুষই মানুষের সর্বনাশের জন্য শয়তানের সঙ্গে হাত মেলায়, আবার যখন শত্রুপক্ষ কোনও মানুষ নয়, শত্রুপক্ষ এক ভাইরাস তখনও এই শত্রুপক্ষের সবচেয়ে বড় বন্ধু সেই অদ্ভুত জীব মানুষ! করোনা ভাইরাস যখন দ্রুতগতিতে তার মারণ যজ্ঞ শুরু ক'রে দিয়েছে তখন আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম এই মানুষই ঐ মারণ ভাইরাসকে সাদরে আহ্বান করছে! মানুষ যে কতটা উদাসীন ও ড্যাম কেয়ার, অহংকারী, উদ্ধত মনোভাবের হ'তে পারে, কায়েমী স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের জন্য কতটা নীচে নাবতে পারে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি সমগ্র বিশ্বজুড়ে! মানুষ সরকারী চেতাবনীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে উপেক্ষা করেছে ও করছে তাও আমরা দেখতে পেয়েছি ও প্রতিদিন পাচ্ছি! আমার দেশের দিকে তাকালেও আমরা একই দৃশ্য প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে দেখতে পেয়েছি ও পেয়ে চলেছি! আমরা দেখেছি সরকারী নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে লক ডাউন পিরিয়ডে জনতা-পুলিশে খণ্ডযুদ্ধ! দেখেছি এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুভয়ের সময়েও রাজাবাজার পার্ক সার্কাসে ও শাহীনবাগে আন্দোলনের নামে মানবতাবিরোধী সার্কাস! আর সম্প্রতি সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে দিল্লির নিজামউদ্দিন তবলীগ জামাতের ঘটনা! এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে দিয়েছে রাজ্যে ও দেশে প্রকৃতপক্ষে কঠোর আপোষহীন সরকার নেই, নেই কোনও রাজ্যে ও দেশে বলিষ্ঠ জনদরদী, দেশপ্রেমী নেতানেত্রী, বিধায়ক ও সাংসদ, দেশে বা রাজ্যে নেই কোনও বিধানসভা বা সংসদ ভবন, নেই কোনও সুপ্রিমকোর্ট! আমরা এইসময় করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যেমন বিজ্ঞান নির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছি সমস্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবং নানা মানুষের নানারকম মতামতও শুনতে পাচ্ছি! ঠিক তেমনি ধর্মীয় অঙ্গন থেকেও নানারকম বিজ্ঞান বিরোধী ঈশ্বর ও ধর্ম্ম নির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রচার দেখতে ও শুনতে পাচ্ছি!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কঠিন সময়ে ধর্ম্ম ও বিজ্ঞানে কোথায় বা কেন অকারণ বিরোধ?
উত্তর একটাই, ধর্ম্ম ও বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞানতা! ধর্ম্ম ও বিজ্ঞানের প্রকৃত অর্থ জানা না থাকার কারণে এবং ধর্ম্ম ও বিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার কারণে এই অকারণ বিরোধ! এ ছাড়া ধান্দাবাজ ধর্ম্ম ব্যবসায়ীর সীমাহীন লোভ-লালসা ও বিজ্ঞান সাধনায় যুক্ত অহংকারী ব্যক্তির তীব্র অহংকার এই অকারণ বিরোধের মূল রসদ ও দাহ্য পদার্থ! আর সাধারণ মানুষ, সরল-সাদাসিধা মানুষ, মূর্খ, বেকুব মানুষ, লোভী মানুষ, বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা মানুষ, রিপু তাড়িত মানুষ, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ এই বিরোধকে জিইয়ে রাখার প্রধান সোর্স!
যাই হ'ক কিছু মানুষ এইসময় যেমন বলছে করোনা মোকাবিলায় ঈশ্বর, আল্লা বা গডের ওপর শুধু নির্ভর থাকার কথা আবার এর বিরোধিতায় আবার শোনা যাচ্ছে আল্লা, যীশু, ভগবান দিয়ে করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়, এসময় ডাক্তার, বিজ্ঞানীরাই প্রকৃত ভগবান!
এখন আসুন একটু বিশ্লেষণ ক'রে দেখা যাক এর উত্তর কি ও কোথায়!
কোথায় আল্লা, কোথায় যীশু, কোথায় ভগবান!------এই কথাটায় আল্লা, ভগবান নাহয় abstract form-এ বিরাজ করে, তা'তে নাহয় বিশ্বাস নাই থাকতে পারে কোনও কোনও মানুষের কিন্তু যীশু তো রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন সেখানে তাঁকে অস্বীকার ক'রে কোনও ডাক্তারের ওপর, কোনও বিজ্ঞানীর উপর ভরসা করা অহংকার ছাড়া আর কিছুই নয়! ডাক্তার, বিজ্ঞানী কি দিতে পারেন? মরা মানুষের দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন না কিন্তু চিকিৎসায় ভুল বশতঃ জীবন্ত মানুষের প্রাণ নিয়ে নিতে পারেন। তিনি চিকিৎসা দিতে পারেন, দিতে পারেন সেবা; সুস্থ ক'রে তোলার জন্য প্রাণপাত ক'রে পরিশ্রম করতে পারেন আর বিজ্ঞানী দিনরাত এক ক'রে, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে আবিষ্কার করতে পারেন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট সৃষ্টিকে কিন্তু কোনও কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না তাই আল্লা, ঈশ্বর, গড, ভগবান যাই-ই বলুন না কেন তিনি দয়া পরবশ ডাক্তার, বিজ্ঞানীর অন্তরে অবস্থান করেন বলেই ডাক্তার রোগীকে সুস্থ ক'রে তুলতে পারেন, মৃতপ্রায় মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন, বিজ্ঞানী ঔষুধ আবিষ্কার করতে পারেন আর যাদের ভিতরে অবস্থান করেন না তারা রোগীকে আয়ের, ব্যবসার উপকরণ বানিয়ে নেয়, ল্যাবরেটরিতে জৈবি মারণাস্ত্র তৈরি করার নেশায় নেশাগ্রস্থ হ'য়ে বুঁদ হ'য়ে পড়ে থাকেন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ধ্বংস করার জন্য!!! আর যীশু বারবার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে এসে সারাজীবন যে মানব সেবা ক'রে গেছেন, দুরারোগ্য ব্যাধিমুক্ত ক'রে নুতন জীবন দান করে গেছেন, অন্ধচোখে দৃষ্টি দান করেছেন, পঙ্গুকে পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছেন, মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চার ক'রে গেছেন আর সেই সেবা, সেই অলৌকিক চিকিৎসার ছিটেফোঁটাও কোনও ডাক্তার, বিজ্ঞানী দিতে পারেনি ও পারবে না! ডাক্তার, বিজ্ঞানী এই অলৌকিক কর্মকান্ডের হদিস কোনও দিনও পায়নি ও পাবে না! অথচ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত না কারণ জানতে পারছো ততক্ষণ পর্যন্ত তা তোমার কাছে অলৌকিক, যে মুহূর্তে তুমি এর রহস্য ভেদ করতে পারবে, কারণকে জানতে পারবে সেই মুহূর্তে তা অলৌকিকত্বের খোলস ছেড়ে লৌকিক হ'য়ে তোমার কাছে ধরা দেবে! তাই প্রকৃত ডাক্তার, প্রকৃত বিজ্ঞানী আল্লা, ঈশ্বর, গড, ভগবানপ্রেমী ও তাঁদের মূর্ত রূপের পূজারী!!!!
আর, বিপদগ্রস্থ মানুষের সমবেত আকুল প্রার্থনার ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের বিজ্ঞান যে সূক্ষ্ম বিজ্ঞান তার হদিস অহংকারী বিজ্ঞানীদের উপলব্ধির বাইরে। মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানীরা কিছুই সৃষ্টি করে না ঈশ্বরের সৃষ্ট সৃষ্টিকে খুঁজে বের করে মাত্র। এই খুঁজে বের করার জন্য তাঁদের অন্তরে একটা অহংকার থাকতে পারে কিন্তু প্রকৃত বিজ্ঞানী মাত্রই এক একজন ঈশ্বর সাধক আর তাঁরা প্রতিমুহূর্তে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে অনুভব করে আর অনুভব করে অস্তিত্ব ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের বাঁচার জন্য ঈশ্বরের কাছে সম্মিলিত আকুল প্রার্থনার কারণে! আর ঐ প্রার্থনা আশীর্বাদ হ'য়ে ঝ'রে পড়ে ঐ বিশেষ জ্ঞানের ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষগুলোর ওপর যাদের আমরা বিজ্ঞানী বলি! এর জন্য সমস্ত কৃতিত্ব, প্রশংসা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা পাওয়ার অধিকার ঐ বিপদগ্রস্থ সাধারণ মূর্খ মানুষগুলোর! বিজ্ঞানী ঈশ্বরের উপলক্ষ বা মাধ্যম মাত্র, এর বেশি কিছু নয়! হাজারো লাখো বিজ্ঞানীর মধ্যে যে বিজ্ঞানী ঈশ্বরের সৃষ্টিকে খুঁজে পান তিনি তাঁর দয়ায় পান এইটা মূল বিচার্য বিষয়। ঈশ্বর ওই বিজ্ঞানীর মধ্যে জাগ্রত হন, মহাশক্তি হ'য়ে আবির্ভুত হন! তাই সেই ডাক্তার, সেই বিজ্ঞানী সেই মহাশক্তির স্পর্শে মহাপুরুষ অর্থাৎ মহান পুরণকারী পুরুষে রূপান্তরিত হন! আর তার প্রসাদ ভোগ করে বিশ্ব জুড়ে ঈশ্বরের সমস্ত সন্তান অর্থাৎ আম আদমী!
সেই অপেক্ষায় আমরা আছি! খুব শীঘ্রই একদিন সুন্দর সকালে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দয়ায় আবিষ্কৃত হবে করোনার ওষুধ আর মানুষ মুক্তি পাবে সেই নরক যন্ত্রণা থেকে! আসুন আমরা সরকার, প্রশাসন, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের কথা মেনে চলি এবং ঈশ্বরের আছে আরাধনা করি, হে ঈশ্বর! হে আল্লা! হে ভগবান! হে দয়াল! হে প্রভু! হে ঠাকুর! তুমি আমাদের এই ভয়ঙ্কর দমবন্ধ করা নরক কুন্ড থেকে রক্ষা করো ও উদ্ধার করো!
(লেখা ৪ই এপ্রিল,২০২০)

No comments:

Post a Comment