Powered By Blogger

Monday, January 29, 2024

কবিতাঃ তোমার আমার সবার ঘর।

বুকের মাঝে ক্ষতের নকশা কাটা
মনের মাঝে দুঃখের ঝড় তোলে
সেই ঝড়েতে যায় জীবন ভেসে
ভুত-বর্তমান সব ভোলে।
ভাবি আমি তবু একলা বসে
কেন এমন হ'লো!?
দয়াল যদি থাকে বুকের মাঝেই
বুকে কেন ভরা হলাহল!?
এমন সময় কে যেন হাঁক দিয়ে যায়
কানের মাঝে সাড়া জাগে
বুকের মাঝে যদি থাকেই ক্ষত
থাক না ক্ষত শত ফুলের মতো
দেখতে পাবি সেথায় আছে দয়াল
হাতের স্পর্শে যাচ্ছে মুছে
আছে যত ক্ষত ভয়াল!
মনের চোখ মেলে দ্যাখ আগে।
দয়াল প্রেমের ঝর্ণা ধারা
ক্ষতের মাঝে যায় ব'য়ে
মৃতসঞ্জীবনী সুধা যেন
ফল্গুধারা হ'য়ে।
জমাট ক্ষতের নকশা কাঁথায়
প্রেমের ঝরণাধারা ঝরে কিন্তু অঝোর ধারায়!
বরফ গ'লে জল হ'লে ভাই
সেই জলেতে তৃষ্ণা মেটায়।
তৃষ্ণা মেটে শুখা প্রাণের
প্রাণের পরশ জাগে সেথায়!
তৃষ্ণা মেটে যে জলেতে
সেই জলেতে বিষ কোথায়!?
বুকের মাঝে ফাটলগুলো
জোড়া লাগে পাথর সম
তৃষিত বুকে প্রেমের সিক্ত ছোঁয়ায়
দূর হ'য়ে যায় ক্ষত আছে যত
বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্রতম।
মিষ্টি মুখের মিষ্টি চাউনি
তা'তে মিষ্টি হাসির দোলা জাগে!
সেই মুখের সেই হাসিতে আর
চাউনি মাঝে প্রাণ হারাতে
মধুমক্ষি সম আমার পরাণ ভাগে!
পরাণ ভাগে হ'য়ে মাতাল
স্বর্গ-মর্ত-পাতাল ছুঁয়ে
কোথায় গেলে ওগো দয়াল
তোমায় পাবো সেই তৃষ্ণা বুকে ব'য়ে?
তোমার মিষ্টি মুখের মিষ্টি চাউনি
দয়াল! বুকের মাঝে তোলে ঝড়
ঝর্ণা হ'য়ে পড়ে ঝ'রে হৃদপিন্ড ফুঁড়ে ফুঁড়ে
চাউনি মাঝে দেখি সেথায়, দেখি হাসির মাঝে
নেই কেউ আপন, নেই কেউ সেথায় পর।
ঐ বুকের মাঝে দেখো চেয়ে,
মেলে নয়ন পরাণ দিয়ে
অশ্রু ভেজা নয়ন জুড়ে দেখতে পাবে
সেথায় তুমি তোমার আমার সবার ঘর।

(লেখা ২৯শে জানুয়ারি' ২৩)

Wednesday, January 24, 2024

প্রবন্ধঃ ফটো বিতর্ক।

সম্প্রতি ফেসবুকে সৎসঙ্গের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মন্দিরে ক'জনের ফটো রাখা হবে চার জনের নাকি পাঁচ জনের এই নিয়ে নাকি বিতর্ক দানা বাঁধছে সেই কারণে দ্বন্ধের সমাধানের জন্য স্বস্তি-যজ্ঞ/Swasti-Jogyo Team-এর একটা লেখা পোষ্ট হয়েছে ফেসবুকে এবং তা শেয়ারও হ'য়ে চলেছে লেখাটাকে সমর্থন ক'রে।

লেখাটা পুরোটা পড়েছি। বুঝলাম অকারণ এইসব প্রশ্ন উত্থাপন। এইসব প্রশ্ন উত্থাপন করা মানে আগ বাড়িয়ে সৎসঙ্গীদের মনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা এবং সৎসঙ্গ বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দেওয়া। যেমন ইতিমধ্যেই দেখলাম একটা শেয়ারে একজন এই বিষয়ে সমালোচনা ক'রে তার বক্তব্য পেশ করেছে আর একজন তার কমেন্টে 'একদম ঠিক' ব'লে সমর্থন ক'রে কমেন্ট করেছে। আরও কমেন্ট আসছে পোষ্টের বক্তব্য বিষয়ে রাখা যুক্তির বিরোধীতা ক'রে এবং আরও হয়তো আসবে এরকম কমেন্ট। আর যদি আগ বাড়িয়ে এই বিষয় নিয়ে পোষ্ট না হ'তো তাহ'লে বিরুদ্ধবাদীরা সুযোগ পেত না।

আরো কমেন্ট আসলে তখন তার উত্তর দেবেন তো? শুরু হবে বিতর্ক। তা' বিতর্ক শুরু করলো কে? কোথা থেকে এর সূত্রপাত হ'লো? তারপরে এ ওকে, ও একে দোষ দেবে। এই ধরণের প্রশ্নে দরকার হ'লে ঠাকুরবাড়ি থেকে উত্তর দেবে কিংবা এই ধরণের প্রশ্নের উত্থাপন করবে ও তার যথাযথ সমাধান দেবে। আগ বাড়িয়ে কোথায় কে কি বলছে, কোথায় কি করছে, কি লিখছে তা ঘাঁটাঘাঁটি করা কি দরকার? যদি তেমন বাড়াবাড়ি হয় এই প্রশ্ন নিয়ে, হয় সমালোচনা তখন নিশ্চয়ই উত্তর দেওয়া যেতে পারে এবং দেওয়াও উচিত কিন্তু নিজের নিজের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী।

তাই সেধে সেধে ঘা করার কোনও দরকার নেই। যার যা ভালো লাগে করুক ও বলুক। শুধু লক্ষ্য রাখুন মাত্রা ছাড়া হচ্ছে কিনা সমালোচনা। তখন নাহয় যুক্তির চাবুক দিয়ে আগাপাছতলা কঠিন আঘাত করবেন। এছাড়া আরো শ্রীশ্রীঠাকুরের অগুন্তি বহু বিষয় আছে যা নিয়ে আলোচনা বা লেখালেখি করা যেতে পারে।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে,
লেখার শেষ স্ট্যাঞ্জাতে লেখা হয়েছে,
"অনেক কিছু লিখলাম, শুধু গুরুভাইদের মনের সন্দেহ দূরীকরণের জন্য। এটা আমাদের একান্ত নিজেদের লেখা । আমাদের যুক্তি অন্যের সঙ্গে না মিলতে ও পারে । তবে আমাদের যেটা মনে হলো তাই লিখলাম, আশা করি অনেকের সন্দেহ দূর হবে ।"

উপরের এই লেখাটায় লেখা হয়েছে, গুরুভাইদের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য এই লেখা লেখা হয়েছে। এর পরেই আবার লেখা হয়েছে, উনাদের যুক্তি অন্যের সঙ্গে না মিলতেও পারে।

প্রশ্ন জাগে মনে, যদি না মেলে তাহ'লে গুরুভাইবোনেদের মনের সন্দেহ দূর হবে কি করে? উনাদের যেটা মনে হয়েছে সেটা লিখেছেন, আবার অন্য সৎসঙ্গীদের মনে অন্যরকম মনে হবে, বিরোধীদের আর একরকম মনে হবে তখন তারা অন্যরকম লিখবে আর শুরু হবে বিতর্ক, মহা বিতর্ক। সুযোগ নেবে বিরুদ্ধবাদী সুযোগসন্ধানীরা। যারা লেখাটা লিখে পোষ্ট করেছেন ও শেয়ার করেছেন যারা তাঁরা আশা করছেন, সৎসঙ্গে ও মন্দিরে চারটে না পাঁচটা ফটো রাখা হবে তা নিয়ে গুরুভাইবোনেদের সন্দেহ দূর হবে; কিন্তু তারা কোনও গ্যারান্টি দিতে পারছেন না।

প্রশ্ন হচ্ছে, লেখা যুক্তি সঙ্গত হ'লে গ্যারান্টি দিতে হবে কেন? সলিড যুক্তির ওপর যদি লেখা দাঁড়ায় তাহ'লে গ্যারান্টি দিতে হয় না ও মানা, না-মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতটাই কনফিডেন্ট থাকতে হয়।


আর, ফটো রাখার ব্যাপারে ঠাকুরবাড়ির নির্দেশ মেনে চলা ভালো। সাধারণভাবে তিনজনের ফটো থাকবেই। শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীঠাকুরের সহধর্মিণী লক্ষ্মীস্বরূপিণী শ্রীশ্রীবড়মা, আর শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রধান ভক্ত এ যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা। আর, একজনের ফটো থাকবে তা' হ'লো সৎসঙ্গের পরিচালক বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব। যিনি আমাদের পথপ্রদর্শক। কেমনভাবে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে জীবনে চলবো প্রতিমুহুর্তে তা নিজে আচরণ ক'রে ক'রে দেখিয়ে দেন পূজ্যপাদ আচার্যদেব; যাতে এই কঠিন শয়তানী সময়ে আমাদের চলার পথে কোনও ভুল না-হয়, আশপাশের শয়তান দ্বারা যাতে বিভ্রান্ত হ'য়ে না পড়ি। বিপদে-আপদে কি ক'রে চলবো, কি ক'রে উদ্ধার পাবো, কি ক'রে জটিল সমস্যা মুক্ত হবো, কি ক'রে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে রক্ষা পাবো তা তিনি নিখুঁত সমাধান দেন, আচরণ ক'রে ক'রে দেখিয়ে দেন। শ্রীশ্রীঠাকুরই যে মুখ্য, এক ও একমাত্র আরাধ্য, ঠাকুরই যে নিরাকারের সাকার রূপ, ঠাকুরই যে আমার একমাত্র বাঁচার আধার ও আশ্রয়, ঠাকুরই যে জগতের সমস্ত সমস্যার সমাধান, ঠাকুরই সৃষ্টির পরম কারণ, ঠাকুরই যে পূর্ব পূর্ব রূপের বর্তমান প্রতিফলন তা' যুক্তি দিয়ে, আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন, দেখিয়ে দেন বলেই তিনি আচার্যদেব। এইসব জটিল বিষয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সিদ্ধান্ত, আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ শিরোধার্য হওয়া উচিত।।


আর, শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ফটো রাখা বা না-রাখা নিয়ে এখনো পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির বা আচার্যদেবের কোনও নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত নেই। বর্তমান সময় স্পুটনিকের যুগ। গরুরগাড়ির যুগ নয় যে ধীরে ধীরে চলবো। তাই, বিশ্বজুড়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র টানে উদ্দাম গতিতে উদোম হ'য়ে ছুটে চলা যুব সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করার জন্য, পথ ভোলা, জীবন্রের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হওয়া, মিথ্যে রঙ্গীন দুনিয়ার হাতছানিতে ছুটে চলা, অলীক মায়ার মোহন বাঁশীর সুরে বিভ্রান্ত হ'য়ে আলো ভেবে আগুনে হাত দিয়ে হাত ঝলসে যাওয়া, সমাজের কুহেলিকাময় প্রহেলিকার আবর্তে জীবনের শুরুতেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিবাহ, সাহিত্য, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদির বিষাক্ত আবহাওয়ায় ভয়ংকর ভাবে সংক্রামিত, ক্ষতবিক্ষত জীবনকে জীবনের, বাচা-বাড়ার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বাস্তবভাবে যুবকদের সামনে সময়োচিত যুগপোযোগী স্পুটনিকের গতিতে ছুটে চলা একজন প্রচন্ড ব্যক্তিত্ববান, আকর্ষণীয় যুব আইকন থাকার দরকার, যিনি আবার গোঁড়া, কট্টর ইষ্টপ্রাণ, আচার্যপ্রাণ, আদর্শপ্রাণ, আচারবান, চরিত্রবান, জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান। ভারত তথা বিশ্বজুড়ে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্ব্বিশেষে যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আকর্ষণ তীব্র বাঁধভাঙা জলের ঢেউ-এর মতন। তাই যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ অবিনদাদার গ্রহণযোগ্যতা অসীম, অনন্ত। তাই তারা ভালোবেসে ফটো রাখে, রাখতে চায় যা আজ সাধারণ মানুষের কাছে, রাজনৈতিক দলের কাছে, অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার ও সৎসঙ্গ বিরোধীদের কাছে ইর্ষনীয়। যেখানেই অবিনদাদার আগমন হয় সেখানেই লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি যুবকযুবতী, কিশোরকিশোরী, প্রৌঢ়, বৃদ্ধা পঙ্গপালের মতো, আগুনে পোকার মতো নিজের থেকে ছুটে যায় বাড়ি ঘর সব কিছু পিছনে ফেলে রেখে, রোগ-শোক-বার্ধক্য উপেক্ষা ক'রে কারও তোয়াক্কা না ক'রে। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ময়দান ভরাবার জন্য কোনও এজেন্ট নিয়োগ করতে হয় না, সরকারি-বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থাকে অচল ক'রে রেল্ভাড়া, বাসভাড়া ফাঁকি দিতে হয় না অগণিত লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে। এটা সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিক্ষা, যে শিক্ষা রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত হ'য়ে ব'য়ে চলেছে বংশ পরম্পরায়।
তাই, ফটো রাখা, না-রাখা ব্যক্তিগত ভালোবাসার ব্যাপার; সর্বোপরি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশের ব্যাপার। কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছেন,
"এক আদেশে চলে যারা
তাদের নিয়ে সমাজ গড়া।"----শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণী যেন আমরা শয়নে-স্বপনে-জাগরণে সবসময় মনে রাখি। অলমিতি বিস্তারেন।

প্রবন্ধঃ সৎসঙ্গের বর্তমান সঙ্গীত বিতর্ক!

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার পরিচালনায় বর্তমানে ঈশ্বর আরাধনায় সৎসঙ্গের সঙ্গীতের যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, আধ্যাত্মিক জগতে যে বিপ্লব ঘটেছে তা' নিয়ে সৎসঙ্গ জগত ও আধ্যাত্মিক জগতে ভালোমন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য ক'রে চলেছি। আর, এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়ার নানা প্ল্যাটফর্মে।

সঙ্গীত ঈশ্বর আরাধনার, ঈশ্বর সাধনার, ঈশ্বরের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করার, ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করার, ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করার, ঈশ্বর ধ্যানে মগ্ন থাকার, ঈশ্বর উপলব্ধি ও ঈশ্বর দর্শন লাভ করার এক ও একমাত্র সহজ উপায় ও মাধ্যম। সঙ্গীতের মধ্যে ঈশ্বর অবস্থান করেন। যে সঙ্গীতে ঈশ্বরের মূর্চ্ছনা আসে না, সৃষ্টি সুরের সুমধুর কম্পনবিশেষ অনুভূত হয় না শরীরে-মনে- প্রাণে-হৃদয়ে, শরীরের শিরায় শিরায়, রুধিরাতে সৃষ্টির নাম তরঙ্গ ব'য়ে না যায় সেই সঙ্গীত, সঙ্গীত নয়। সঙ্গীতের অসীম শক্তি যে কি তা আমরা সঙ্গীত সম্রাট তানসেনের সঙ্গীত ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছি। সম্রাট তানসেনের সঙ্গীত প্রকৃতিকে বাধ্য করতো তাঁর ইচ্ছার দাস হ'তে, এতটাই ছিল তানসেনের তীব্র প্রকৃতি প্রেম অর্থাৎ ঈশ্বর প্রেম। তানসেন যেমন দীপক রাগ গেয়ে বহ্নিশিখা ছড়িয়ে দিতেন প্রকৃতির বুকে ঠিক তেমনি যথাসময়ে মেঘমল্লার গেয়ে আকাশের বুক থেকে বৃষ্টি ঝড়িয়ে সব শান্ত ক'রে দিতে ভুলতেন না। এতটাই ছিল তাঁর সঙ্গীতের বিভিন্ন রাগের ওপর অভূতপূর্ব অকল্পনীয় নিয়ন্ত্রণ। তাঁর সঙ্গীতের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমপর্ণে ঈশ্বর নিজেই তাঁর সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্প সঁপে দিয়েছিল তাঁর কন্ঠে, মা সরস্বতী তাঁর কন্ঠে আশ্রয় নিয়েছিল ঈশ্বরের আদেশে। এর থেকে প্রমাণ হয় ঈশ্বর আরাধনার জন্য সঙ্গীত এক মোক্ষম অস্ত্র।

আমরা যুগ যুগ ধ'রে ঈশ্বর আরাধনার সঙ্গীত শুনে এসেছি। তা'তে মুগ্ধ হয়েছি, মোহিত হয়েছি, ঈশ্বর আরাধনায় মগ্ন হয়েছি। আমরা যুগ যুগ ধ'রে কত রকমের গানের সঙ্গে কিংবা এককভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কত রকমের নৃত্য পরিবেশন হ'তে দেখেছি। ভারতীয় নৃত্য সাধারণত ধ্রুপদী এবং লোক নৃত্যের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে আধা ধ্রুপদী ও উপজাতীয় নৃত্যে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকারের নৃত্যের উদ্ভব হয়েছে। আমরা সেই নৃত্য দেখে বিহ্বল হয়েছি, উদ্বেলিত হয়েছি।

আবার যখন আমরা নটরাজের নৃত্য দেখেছি। ঐশ্বরিক মহাজাগতিক নর্তক, নৃত্যের ঈশ্বর নটরাজ শিবের তান্ডব নৃত্য দেখেছি। তার সঙ্গে দেখেছি নটরাজের লাস্য নৃত্য। ঈশ্বর কাল-মহাকাল বেশে বিশ্বধ্বংসের জন্য এই নাচ নাচেন। লাস্য হল মধুর ও সুচারু নৃত্যকলা। লাস্যকে তাণ্ডবের নারীসুলভ বিকল্প বলে ধরা হয়। নটরাজের মূর্তির মধ্যে এই দুই রূপই বিদ্যমান। এই নাচ দেখতে দেখতে আমরা আবেগে ভাবাবেশে ডুবে গেছি, আচ্ছন্ন হয়েছি, আসক্তি-অনুরাগ আমাদের নৃত্যের উৎসের প্রতি অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি সমাধিস্থ করেছে। 
বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে তাঁতে বিলীন হয়েছি।

ঠিক তেমনি, বর্তমান সৎসঙ্গের সঙ্গীতের ধারা আমাদের, বিশেষ ক'রে পথহারা, হতাশাগ্রস্থ, ক্ষতবিক্ষত, অবসাদগ্রস্থ, দিশেহারা, বিষাক্ত সমাজ ব্যবস্থার শিকার লক্ষ লক্ষ যুবসমাজের কাছে এক নুতন ভাবে বাঁচার, জীবন খুঁজে পাবার, ঘরে ফেরার, ভালোবাসার দিশা দেখায়, রক্তে উত্তেজনার সৃষ্টি ক'রে ঐশ্বরিক প্রকৃত বাঁচা-বাড়ার এক বৈপ্লবিক মানসিকতায় উত্তীর্ণ করে।

এই সঙ্গীতধারা সম্পর্কে আমার প্রশ্নদাতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই এককথায় সংক্ষেপে এই ট্রেন্ড অভূতপূর্ব! অভূতপূর্ব!!
এটি প্রথম দর্শনে বিতর্কিত বলে মনে হবে। এর গভীরতা বিশাল। সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে ভক্তিমূলক গানে এসব কি হচ্ছে!? কিন্তু আপনাকে গানের সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে মুক্তো তুলে আনতে হবে। গানের কথায় ঢুকতে হবে। গানের কথার সাথে সুর সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা দেখতে হবে। উপরি ভাসা ভাসা ভাবে ভাবলে, শুনলে হবে না। সমালোচনা করার মানসিকতা নিয়ে, ত্রুটি খোঁজার প্রবণতা নিয়ে, দোষ দর্শন দৃষ্টি দিয়ে, সংকীর্ণ মনোভাব ও একচক্ষু হরিণের দৃষ্টি দিয়ে বর্তমান সঙ্গীতের ট্রেন্ড বোঝা যাবে না; এর জন্য আপনি অযোগ্য ও অদক্ষ। উপরে বর্ণিত প্রচলিত ও নানা ধারার সঙ্গীতের সঙ্গে তানসেনের সঙ্গীতের এবং ভারতীয় নানা ধ্রুপদী নৃত্য, লোকনৃত্য ইত্যাদির সঙ্গে নটরাজের নৃত্যের যে উপমা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আশা করি পাঠকের কাছে বোধগম্য ও হৃদয়ঙ্গম হবে। 

প্রচলিত ব্যবস্থায় অধিকাংশ মানুষ মনের সঙ্কীর্ণতার কারণে নতুন জিনিস নিতে পারে না। তাই, বিশ্বকবি বলেছিলেন, "মনের চর্চা যাদের কম, গোঁড়ামি তাদের বেশী, সামান্যতম নতুনত্বে তাদের বাধে।" পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,

"যদি এমনতর কোন নবীন অনুশাসন/ দেখতে পাও, যা' প্রাচীন অনুশাসন-উদ্দেশ্যকে আপূরিত ক'রে জীবনকে আরো অগ্রগতিতে অনুপ্রেরিত ক'রে তোলে- প্রাচীনের যুগোপযোগী রদবদলের ভিতর-দিয়ে, বুঝে নিও- ঐ অনুশাসন প্রাচীনেরই আপূরয়মান নবীন অবতারণা; ঐ নবীন অনুশাসনের মানে কিন্তু এ নয়কো যে প্রাচীন অনুশাসনের সাথে তার দ্বন্দ্ব বা ভেদ আছে, বরং তা' প্রাচীনেরই নবীন প্রেরণা- আরোতরের দিকে, -------- ঐ অনুশাসনে অনুশাসিত না হওয়াই  কিন্তু অপরাধের, যে-অপরাধ তোমার সত্তাকে------- আরোতর প্রগতি হ'তে বঞ্চিত ক'রে তুলবে; সাবধান! বিহিত ধী নিয়ে বোঝ, দেখ, চল। "--- শ্রীশ্রীঠাকুর। (আর্য্যপ্রাতিমোক্ষ- ১৫ ; ৫৭৮৯)

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ভয়ানক জটিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তরুণদের এই ভয়ানক বিষাক্ত পরিবেশ থেকে বের করে আনতে হবে। কোন পথে? পথ দেখাবে কে? পৃথিবীতে কেউ আছে কি? আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে হবে যা সমসাময়িক।

বর্তমান সময় স্পুটনিকের যুগ। গরুরগাড়ির যুগ নয় যে ধীরে ধীরে চলবো। তাই, বিশ্বজুড়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র টানে উদ্দাম গতিতে উদোম হ'য়ে ছুটে চলা যুব সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করার জন্য, পথ ভোলা, জীবন্রের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হওয়া, মিথ্যে রঙ্গীন দুনিয়ার হাতছানিতে ছুটে চলা, অলীক মায়ার মোহন বাঁশীর সুরে বিভ্রান্ত হ'য়ে আলো ভেবে আগুনে হাত দিয়ে হাত ঝলসে যাওয়া, সমাজের কুহেলিকাময় প্রহেলিকার আবর্তে জীবনের শুরুতেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিবাহ, সাহিত্য, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদির বিষাক্ত আবহাওয়ায় ভয়ংকর ভাবে সংক্রামিত, ক্ষতবিক্ষত জীবনকে জীবনের, বাঁচা-বাড়ার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বাস্তবভাবে যুবকদের সামনে সময়োচিত যুগপোযোগী স্পুটনিকের গতিতে ছুটে চলা একজন প্রচন্ড ব্যক্তিত্ববান, আকর্ষণীয় যুব আইকন থাকার দরকার, যিনি আবার গোঁড়া, কট্টর ইষ্টপ্রাণ, আচার্যপ্রাণ, আদর্শপ্রাণ, আচারবান, চরিত্রবান, জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান হবেন। ভারত তথা বিশ্বজুড়ে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্ব্বিশেষে যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আকর্ষণ তীব্র বাঁধভাঙা জলের ঢেউ-এর মতন। তাই যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ অবিনদাদার গ্রহণযোগ্যতা অসীম, অনন্ত। তাই তারা ভালোবেসে ফটো রাখে, রাখতে চায় যা আজ সাধারণ মানুষের কাছে, রাজনৈতিক দলের কাছে, অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার ও সৎসঙ্গ বিরোধীদের কাছে ইর্ষনীয়। যেখানেই অবিনদাদার আগমন হয় সেখানেই লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি যুবকযুবতী, কিশোরকিশোরী, প্রৌঢ়, বৃদ্ধা পঙ্গপালের মতো, আগুনে পোকার মতো নিজের থেকে ছুটে যায় বাড়ি ঘর সব কিছু পিছনে ফেলে রেখে, রোগ-শোক-বার্ধক্য উপেক্ষা ক'রে কারও তোয়াক্কা না ক'রে। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ময়দান ভরাবার জন্য কোনও এজেন্ট নিয়োগ করতে হয় না, সরকারি-বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থাকে অচল ক'রে রেল্ভাড়া, বাসভাড়া ফাঁকি দিতে হয় না অগণিত লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে। এটা সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিক্ষা, যে শিক্ষা রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত হ'য়ে ব'য়ে চলেছে বংশ পরম্পরায়।

প্রবন্ধ পরমপিতা শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের মন্দির প্রতিষ্ঠা ও আমরা।

আজ ২২শে জানুয়ারি'২৪ অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হ'লো। পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদীজী।

ত্রেতা যুগে পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্র আজ থেকে প্রায় ৭০০০ হাজার বছর আগে ভারতের অযোধ্যার মাটিতে নেমে এসেছিলেন আর সারাজীবন ঘরেবাইরে তাঁর সন্তানদের হাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লাঞ্ছিত অপমানিত হ'য়ে চরম দুঃখ কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত ক'রে শুধু মানুষের মঙ্গলের জন্য, মানুষের ভালো থাকার জন্য, মানুষের বাঁচা-বাড়ার জন্য জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।

আর, আজও তাঁর তিরোধানের ৭০০০ বছর পরও তাঁর বাস্তব উপস্থিতি নিয়ে, জীবন নিয়ে, তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে হ'য়ে চলেছে বিতর্ক, বাত বিতন্ডা। আর তা হ'য়ে চলেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঈশ্বরবিশ্বাসীদের পরস্পরের মধ্যে; আর অবিশ্বাসীদের কথা না-হয় ছেড়েই দিলাম। হ'য়ে চলেছে হাজার বছর ধ'রে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাকে মূলধন ক'রে ক্ষমতাসীন মানুষের পৃষ্টপোষকতায়।

আজ ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭৬বছর হ'য়ে গেছে, ৭৬বছর ধ'রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণপুরুষের জন্মস্থানে তাঁর প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে শ্রীরামভক্তদের। কথায় আছে, লোহে লোহেকো কাটতা হ্যায়। আর সেইজন্যই বুঝি আজ দরকার হয়েছে প্রকৃতির ইশারাতেই সেই 'লোহে লোহেকো কাটতা হ্যায়' তত্ত্বেই পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণপ্রতিষ্ঠার তাঁর জন্মভুমি জন্মস্থানে। রাজনৈতিক চরম নোংরামিকে খতম করতেই দরকার হয়েছে রাজনৈতিক দলের হাত দিয়েই সৃষ্টিকর্তা, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমকারণ, পরমসত্ত্বা, পরমাত্মা, সদগুরু, জীবন্ত ঈশ্বর পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠার, মন্দির প্রতিষ্ঠার।

আজ আরও একবার প্রমাণিত হ'লো, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্য সত্যই। ঈশ্বরের জগতে দের হ্যাঁয় লেকিন অন্ধেরা নেহী হ্যাঁয়। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তিনি তাঁর কাজ করিয়ে নেন যথাসময়ে। জগতে কোনও শয়তানের শক্তি নেই তা আটকায়। গোরা কেটে আগায় জল দেওয়া বিশ্বজুড়ে বহু মতবাদ গরীব মানুষ, সাধারণ মানুষের বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে সুড়সুড়ি দিয়ে ঈশ্বরের অবস্থান অস্বীকার করিয়ে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে নিজের জীবনের, নিজের চরিত্রের, নিজের ঘরের ঝুল পরিষ্কার করার শিক্ষায় শিক্ষিত না ক'রে সমাজের ঝুল ঝাড়ার শিক্ষায়, অবৈজ্ঞানিক মতবাদে দীক্ষিত ক'রে আটকাতে চেয়েছিল ঈশ্বরের রথের জয়যাত্রা। কিন্তু ব্যর্থতার চোরাবালিতে সলিল সমাধি ঘটেছে তাদের। অবশিষ্ট হতাশাগ্রস্থ যারা বর্তমান তারা আজও ব্যর্থতার হাঁপর টেনে চলেছে নবীন রক্তের কাঁধে ভর ক'রে সুদিনের আশায়। আর, খন্ড খন্ড হ'য়ে বিরোধীতা ক'রে চলেছে অধর্মের নামে ধর্মের বিরুদ্ধে, মিথ্যের নামে সত্যের বিরুদ্ধে।

আমাদের নপুংশতার জন্যই সত্য লাঞ্ছিত হয়, ধর্ম কলঙ্কিত হয়, ঈশ্বর অপমানিত হয়। শয়তান আনন্দিত, উল্লসিত হয় বাঁধভাঙা জলের ঢেউয়ের মতো। কিন্তু ঈশ্বরের বিধান অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘনীয়। শয়তানের জন্য শেষের সেদিন ভয়ংকর। সেদিন শয়তান ঈশ্বরের কাছে আত্মসমপর্ণ করে। আর, মূর্খ, অতি বোদ্ধা, অহংকারী, এক হাত দূরের জিনিস দেখতে না পাওয়া অতি বিজ্ঞরা ঘটনার পরম্পরায় ভাঙবে তবু মচকাবে না অহংকারী, মিথ্যে তত্ত্বে ডুবে থেকে হতাশায় জর্জরিত হ'য়ে বিদায় নেয় এই পৃথিবীকে নোংরা ক'রে রেখে।
ধর্ম বিশ্বাসী, ঈশ্বরবিশ্বাসীদের কাছে না-হয় শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ভগবান, ঈশ্বর। কিন্তু ঈশ্বর অবিশ্বাসী, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষিতদের কাছে শ্রীরামচন্দ্র কি মর্যাদা পুরুষ নন? তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারাজীবনের যন্ত্রণাময় নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত কাহিনী কি বিস্ময়কর নয়?

যাই হ'ক, নালা, ডোবা, পুকুর, খালবিল, নদনদী, সমুদ্র সবেতেই জল আছে। কোথাও জল স্থির, কোথাও চঞ্চল, কোথাও বেগবান, কোথাও বা প্রবল জলস্রোত। কোথাও জল নোংরা, কোথাও পচা দূর্গন্ধ, কোথাও বা ঘোলাটে, কোথাও পরিষ্কার, কোথাও টলটলে ঝলমলে। যে যার ধারে বা তীরে বসে, সে তার গন্ধ পায়, ঝঙ্কার শুনতে পায়। তাই এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।

তাই, আমি আমার দয়াল প্রভুর সুরে সুর মিলিয়ে আমার মতো ক'রে বলি, 'যার যা'কে লাগে ভালো সে তারে ভজুক গো, আমার লাগে ভালো ভজিতে আমার দয়াল প্রভুর পূর্বরূপ চন্দ্রমুখী শ্রীরাম গো।'

আজ আমরা প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের অপদার্থ সন্তান এতবছর পর যখন তাঁর জন্মস্থানে তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা, তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করছি, করছি বিশ্বজুড়ে যত শ্রীশ্রীরামচন্দ্র অনুগামী তারা যেন একথা মনে ক'রেই তাঁর প্রাণ, তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির প্রতিষ্ঠা করি, আনন্দ উপভোগ করি, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমসত্ত্বা, পরমকারণ, পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র শুধু হিন্দুদের জন্য, কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য এই ধরাধামে আবির্ভূত হননি। তিনি তাঁর সৃষ্ট এই পৃথিবী গ্রহের মানবজাতির জন্য, বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের জন্য, তাঁদের বাঁচা-বাড়ার জন্য, তাঁদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জটিল সমস্যাজর্জরিত জীবনে সঠিক, নিখুঁত, নির্ভুল সমাধানের পথ দেখাবার জন্য নেমে এসেছিলেন। যেমন আমরা জাগতিক জীবনের পিতামাতা আমাদের সন্তানের জন্য জন্ম থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত আকুল হয়ে থাকি যা'তে আমাদের সন্তান ভালো থাকে, সুখে থাকে, আনন্দে থাকে, ফুর্তিতে থাকে; থাকে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয়, দরিদ্রতা মুক্ত হ'য়ে। আমার পিতা, আমার পিতার পিতা তাঁর পিতা, আমার সন্তানেরও পিতা, আমাদের সবার পিতা ত্রেতা যুগে আবির্ভূত সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্রও আমাদের সবার জন্য আকুল হ'য়েই নেমে এসেছিলেন আমাদের মাঝে। আজ তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা আর মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন জানাই তাঁর রাতুল চরণে সশ্রদ্ধ নতজানু কোটি কোটি প্রণাম। জয় শ্রীরাম।


স্মৃতিচারণঃ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও আমি,

শ্রদ্ধেয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটা পড়ে কিছু কথা মনে পড়ে গেল, অতীত ভেসে উঠলো চোখের সামনে, তাই ল্যাপটপের কি বোর্ডে আঙ্গুল রাখলাম।

সময়টা ৭০দশক। সম্ভবত বাম জমানার শুরুর (১৯৭৭) পরেই। আমার বয়স তখন সম্ভবত ২৪-২৫। বাম আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। মিছিল, মিটিং, স্লোগান, নাটক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচন্ড সক্রিয় অবস্থানের পরে সবে একটু থিতু হয়েছি, সেই সময় মনে হ'লো আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথা। তাঁর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা তীব্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। উঠলো দু'টো কারণে। একটা তিনি আমার প্রিয় লেখক, দ্বিতীয়ত তিনি ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত, আমার শ্রদ্ধেয় গুরুভাই। তাঁর 'ঘুণ পোকা' উপন্যাস আমি প্রথম পড়ি। এবং ঘুণ পোকায় আক্রান্ত হ'য়ে একেবারে ঝুরঝুরে হ'য়ে যাই। তারপরে 'কাগজের বউ, দূরবীন, যাও পাখি, রঙ্গীন সাঁকো, পারাপার' ইত্যাদি নানা উপন্যাস পড়ে ফেলেছি। এখন আর সব মনে পড়ে না। পড়াও হ'য়ে ওঠে না। তবে 'ঘুণ পোকা' একেবারে শরীরে-মনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। একটা শীর্ষেন্দু ফোবিয়া কাজ করছিল তখন আমার তরুণ তাজা রক্তে। সঙ্গে সমানভাবে পড়া চলছিল সৎসঙ্গ প্রকাশিত আলোচনা পত্রিকায় অনুলেখক শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা, রেবতীদা, মণিলালদা, দেবীদা সংকলিত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথোপকথন সমৃদ্ধ বিভিন্ন লেখা। অদ্ভুত একটা মিল, ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম শীর্ষেন্দুবাবুর লেখায়।

তাই, ছুটে গেছিলাম আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে দু'দুবার। কিন্তু দু'বারই তিনি অফিসে না থাকায় দেখা হয়নি। দ্বিতীয়বার যখন গেছিলাম তখন দেখা হয়েছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আমি তখন তাঁকে চিনতাম না। একজনকে শীর্ষেন্দুবাবুর কথা জিজ্ঞেস করায় জানতে পেরেছিলাম তিনি অফিসে নেই, কিন্তু কোথায় তিনি বসেন জিজ্ঞেস করায় তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বসার চেয়ারটা। তার একটু দূরে বসেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। অফিসের সেই ব্যক্তিকে সুনীলবাবুকে দেখিয়ে 'উনি কে' জিজ্ঞেস করায় ঐ ব্যক্তি আমাকে বলেছিলেন, উনি কবি, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সময় একটা দু'টো তাঁর লেখা উপন্যাস যে পড়িনি তা নয়। কিন্তু এখন আর মনে পড়ে না। লাইব্রেরী থেকে অনেক লেখকের বই এনে পড়তাম। থ্রিলার, গোয়েন্দা উপন্যাস ইত্যাদি আরও নানারকম বই পড়তাম। সুনীলবাবুর দিকে এগিয়ে গেলাম এই ভেবে যে, এতবড় একজন বিখ্যাত লেখক, কবি সামনে ব'সে আছেন একবার তাঁর সঙ্গে দেখা ক'রে যাই। একজন বিখ্যাত লেখকের দেখা পায়নি তো কি আছে আর একজন বিখ্যাত লেখকের তো দেখা পেলাম। কাছে যাওয়ার সময় শীর্ষেন্দুবাবুর চেয়ারটা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম। তিনি মাথা তুলে আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। পায়ে হাত দিয়ে যে প্রণাম নিষেধ আমার ঠাকুরের তখন সেইমুহুর্তে সেটা মাথায় ছিল না। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন কাউকে খুঁজছি কিনা। আমি উনাকে আমার আসার কারণাটা বললাম। উনি আমায় শীর্ষেন্দুবাবু অফিসের কাজে বাইরে কোথায় গেছেন সেটা বললেন। এখন আর সে কথা মনে নেয়। তারপর তিনি আমাকে দাঁড়িয়ে আছি দেখে সামনের একটা চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন। আমার মত অপরিচিত অখ্যাত যুবকের প্রতি উনার আন্তরিকতায় আমি অভিভূত হ'য়ে গেছিলাম। আমি উনার সামনে বসতে সঙ্কোচ বোধ করছিলাম। অবশেষে বসলাম।
উনি তখন কি যেন লিখছিলেন মাথা নীচু ক'রে। একটু চুপ ক'রে থাকার পর অনেক গল্প হ'লো। শীর্ষেন্দুবাবুর প্রিয় পাঠক জেনে খুশী হলেন। উনারও কয়েকটা উপন্যাস পড়েছি সেটাও উনাকে বলেছিলাম। তারপর কথায় কথায় আমিও যে শীর্ষেন্দুবাবুর মতো ঠাকুরের দীক্ষিত সে কথাও জানালাম। আলোচনায় একইসঙ্গে বাম আন্দোলনে অংশ নেওয়া ও শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শন ভালো লাগা উঠে এলো। তখন সদ্য সদ্য বাম আন্দোলনের একটা তীব্র বাতাবরণ এবং আমার মধ্যে তা'তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার একটা গর্ব ফুটে উঠছিল আমার কথায়, চোখেমুখে। লেখালেখির বিষয়েও কথা উঠলো। উনি সব শুনলেন লিখতে লিখতে, কখনোবা মাথা তুলে। একটু অবাক হচ্ছিলেন আমার যৌবন বয়সে একইসঙ্গে বাম আন্দোলন এবং ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাস, সাথে গুরুগ্রহণ দু'টো পরস্পর বিরোধী বিষয়ের প্রতি সমান তীব্রতা দেখে! তখন তাঁর চোখমুখের অভিব্যক্তি দেখে যা বুঝেছিলাম তাই লিখলাম, ভুলও হ'তে পারে। শুধু উনি আমাকে বললেন, খুব বই পড়তে আর লিখে যেতে। এই পর্যন্তই আমার মনে আছে। আর কিছু অবশিষ্ট মনে নেই। তারপর উঠে এসেছিলাম বিদায় নিয়ে পরে আসবো ব'লে।

সেই ঘটনার পর আর কোনওদিন যাওয়ার ইচ্ছা হয়নি সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে, ইচ্ছে হয়নি কারও সঙ্গে দেখা করার; না শীর্ষেন্দুবাবু, না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় না অন্য কেউ। দেখা হয়েছে অনেক শিক্ষা, ক্রীড়া, সাহিত্য, নাটক, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের সঙ্গে সেই থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বা আলাপ-পরিচয় দানা বাঁধেনি। তবে সুনীলবাবুর ঐ পরামর্শ আজও মাথায় আছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের গ্রন্থ ছাড়া আর কারও বই পড়তে ইচ্ছে হয়নি; কিন্তু যখনি কোনও লেখা, কোনও কথা পড়েছি ও পড়ি বা শুনেছি ও শুনি শ্রীশ্রীঠাকুরের অসীম দয়ায় আজ সবকিছুর পিছনে সত্যটা দেখতে পাই। আর, তাঁর দ্বিতীয় পরামর্শ মেনেছি কিনা জানি না, তবে লেখার আনন্দে লিখে গেছি হাতে যখনি খাতা ডায়েরি পেয়েছি আর এখন তো এই কম্প্যুটার- ল্যাপটপ আর মোবাইলের যুগ। লিখেছি, লিখি নিজের মনের আনন্দে, তাগিদে; দেখতে যাইনি ও যাই না কে পড়লো, না-পড়লো, যাইনি ও যাই না কোথাও লেখা দিতে।
এবার আসি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতা প্রসঙ্গে। এই কবিতার বিষয়বস্তু আমাকে আজ থেকে ৫০বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে গেল, ঠিক যেন টাইম মেশিনে বসিয়ে। আর, তাই তুলে ধরলাম এখানে ল্যাপটপের বুকে। এবার কবিতাটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। শ্রদ্ধেয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটা নীচে পোষ্ট করেছি। আর, আমি আমার ভাবনাটা কবিতার আকারে এখানে তুলে দিলাম।

এতগুলি যুগ পেরিয়ে গেল,
মানুষ তবুও অবুঝ রয়ে গেল
কিছুতেই বুঝদার হ’তে চায় না।
এখনো বুঝতে চায় না ‘আকাশ’ শব্দটার মানে
সীমানাহীন কোনও বারোয়ারী সম্পত্তি নয়।
মানুষ শব্দটাতে কোনও ভবঘুরে বা ভাদাইম্মা নেই
নিখুঁত 'বাদ'-এর কোনও বোদ্ধা এই বিশ্ব সংসারটা চালাচ্ছেন না।
'বাদ'গুলো সব ইউটোপিয়া
যারা এই ইউটোপিয়ায় বিভোর হ’য়ে থাকে
তারা নিজের অন্তরের মলিন আত্মাটির
কান্না শুনতে পায় না।
তারা অলীক স্বপ্নবিলাশী।----প্রবি।



Saturday, January 13, 2024

কবিতাঃ কাঁপে মহাকাল

প্রভু, তোমায় দেখে জুড়ায় মন
কাঁপে তনু থরথর প্রতিক্ষণ;
তুমি থেকো প্রভু মোর হৃদয় জুড়ে
রবো না আর তব চরণ ছেড়ে
জীবন মাঝে দূরে দূরে।

প্রভু, ভাবি এক হ'য়ে যায় আর এক
পরিশেষে বলি,
নিজেকে নিজে একবার দ্যাখ।
তোর ভাবা আর করার আগে
কে যেন সাজিয়ে রেখেছে তোর
সুন্দর জীবনের এক ম্যাপ!

মনের মাঝে ঝড় উঠেছে ! কিসের ঝড়?
ইষ্টপ্রতিষ্ঠার বাহানায় অর্থ-মান-যশ
কামানোর ঝড়?
মন, অর্থের লোভে দয়ালের কাছে আসো?
আসো মান-যশের লোভে?
দয়াল আমার কাঁদেন ব'সে
মারবে ছোবল শয়তান শেষে।

হে জীবন, বাঁচবে কতদিন? আদি অনন্তকাল?
ইষ্টের চেয়ে অর্থ হ'লো বড়?
মান-যশ তোমায় করলো বেসামাল?
জানি মন, অর্থ ছাড়া হয়না কিছু
তা' যেমন সত্য,
ইষ্ট আমার জীবন দাঁড়া, জীবন মেরু
এ কথা সত্যের সত্য, মহাসত্য।

তাই মন, ইষ্টকে ক'রো না ঘায়েল
শুনতে কি পাও না তুমি
মোহন বাঁশির সুরে বাজে 
ঐ রিমঝিম রিমঝিম পায়েল!?
বলে, আয়, আয়, ছুটে চলে আয়,
অলীক মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে
ছিন্ন ক'রে যত মোহজাল 
ছুটে আয় আমার বুকের মাঝে,
আমার ভয়ে কাঁপে মহাকাল
হেথায় জীবন খুঁজে পাবি।




কবিতাঃ মা তুমি ভেবেছো কি?

 

মা তুমি ভেবেছো কি?
জীবনে পেয়েছো কি?
জীবনে হারালেই বা কি?
জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে
তা’ কখনো ভেবেছো কি?

জীবন জুড়ে বাড়িগাড়ী
ষড় রিপুর মারামারি
অর্থ মান আর যশের
কেবল কাড়াকাড়ি!
তুমি এই পেয়েছ
তোমার এই জীবনে
হারালে কি তা
ভাবো মনে মনে!!
এসো বন্ধু তুমি
এসো এইক্ষণে
পিছন ফিরে আর
থেকো না আলোর পানে!!

জীবনে পেয়েছো কি?
জীবনে হারালেই বা কি?
জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে
তা’ কখনো ভেবেছো কি?

জীবনে বাঁচাবাড়া
সত্তার বয়ে চলা
ভালবাসা নিয়ে
শুধু আনন্দে থাকা।
তুমি এই হারিয়েছ
তোমার এই জীবনে
আর কি পাবে তা
এই জীবন গেলে?
এসো বন্ধু তুমি
এসো এই চরণতলে,
জীবন খুঁজে হেথায়
পাবে সযতনে!!!

জীবনে পেয়েছো কি?
জীবনে হারালেই বা কি?
জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে
তা’ কখনো ভেবেছো কি?

(লেখা ১৪ই জানুয়ারি'২০১৫)

উপলব্ধিঃ ৮

বিবেকানন্দের জন্মদিন পালনে কলকাতার রাস্তায় রক্তপাত!

ঠাকুর! তুমি কি শুনতে পাও বিবেকানন্দের আর্তনাদ!?

"প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি তারিখ ভারতে জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। এই দিনটিতে স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতিবছর স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে জাতীয় যুব দিবস পালন করা হবে।

এ বিষয়ে ভারত সরকারের মুখপত্রে বলা হয়েছে।
'এটি অনুভূত হয় যে, স্বামীজির দর্শন এবং জীবন ও কর্মপদ্ধতি যা তিনি অনুসরণ করতেন তা ভারতীয় যুবদের জন্য অনুকরণীয়।'

এই দিন, সমগ্র ভারত জুড়ে যুব বয়সীরা তাদের আত্মিক মূল্যবোধের উম্মেষ ঘটানোর লক্ষ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।"
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ।

ভারত সরকারের মুখপত্রে যা বলা আছে সেই বলা অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগেঃ
ভারতের যুবরা কি বিবেকানন্দের দর্শন, জীবন ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে?
অন্তত মুখপত্রে বলা অনুযায়ী বলাগুলি কি অনুকরণ করে?

অনুসরণ মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিলেও দিতে পারে কিন্তু অনুকরণ যদি করে তাহ'লে গোল বাধলেও বাধতে পারে শুধু নয়, অবশেষে বেধেই যায়। অনুকরণ করার ফল যা হবার তাই হয়; যার নিদর্শন আজকের যুবসমাজের দেশজুড়ে কর্মকান্ড!
মনে আরও প্রশ্ন ভিড় ক'রে আসে--------

স্বামীজীর দর্শন, জীবন ও কর্মপদ্ধতি কি ছিল বা কাকে ঘিরে ছিল? স্বামীজি কাকে অনুসরণ করতেন?
স্বামীজি কি কাউকে অনুকরণ করতেন?
স্বামীজীর কেন্দ্র কি বা কে ছিল?
স্বামীজি কি বা কাকে পরিপূরণ করতেন?
স্বামীজি কিসের বা কার স্পর্শে স্বামীজি হয়েছিলেন?
বিবেকানন্দ কি স্বামীজীর নাম ছিল?
কেন তাঁর নাম বিবেকানন্দ হ'লো?
কেন বা কার স্পর্শে পিতৃদত্ত নাম নরেন্দ্রনাথ ছেড়ে বিবেকানন্দ হ'লো?
তিনি সারা জীবন মূলত কার কথা বা কিসের কথা ব'লে গেছিলেন?
স্বামীজীর দর্শন বা জীবনের কেন্দ্রে কি বা কে ছিলেন?
স্বামীজীর বাণী কার সান্নিধ্যে, কার স্পর্শে এমন পরিশীলিত হ'য়েছিল?
স্বামীজি আধা জ্ঞানে জগৎ কাঁপিয়েছিলেন; যদি পূর্ণ জ্ঞান পেতেন তাহ'লে কি করতেন?
স্বামীজি কি পূর্ণ জ্ঞান পেয়েছিলেন?
স্বামীজীর আত্মিক মূল্যবোধের উন্মেষ কার সংস্পর্শে হ'য়েছিল?
স্বামীজীর আত্মিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটানোর লক্ষ্যে কার শিক্ষা, কার সংস্কৃতি, কার কৃষ্টি এক এবং একমাত্র মুখ্য ভুমিকা নিয়েছিল?
স্বামীজি কার দর্শন, কার জীবন, কার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করতেন?
ভারতের যুবরা কাকে, কার শিক্ষা, কার কৃষ্টি, কার দর্শন, কার সংস্কৃতি জীবনে গ্রহণ করবে? কাকে অনুসরণ করবে?

ভারতের যুবরা অনুসরণকারী বিবেকানন্দকে জীবনে গ্রহণ করবে, তাঁকে অনুসরণ করবে নাকি বিবেকানন্দ যাকে অনুসরণ করতেন সেই ঠাকুর রামকৃষ্ণকে জীবনে গ্রহণ করবে, তাঁকে অনুসরণ করবে?

স্বামীজি ঠাকুর রামকৃষ্ণকে জীবনে গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু যুবরা কাকে জীবনে গ্রহণ করবে? স্বামীজিকে নাকি ঠাকুর রামকৃষ্ণকে?

স্বামীজীর পরিচয়ে কি রামকৃষ্ণের পরিচয়? নাকি রামকৃষ্ণের পরিচয়ে স্বামীজীর পরিচয়?

যাই হ'ক এমনই নানা প্রশ্ন মন মাঝারে ঝড় তোলে মাঝে মাঝেই। যুবসমাজ আজ দিশেহারা শুধু নয় মানুষ মাত্রই আজ দিশেহারা। কেন?

আদর্শহীন জীবন আর যাই করুক স্বপারিপার্শিক বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথ দেখাতে পারে না। তাই বিবেকানন্দের জন্মদিনে কলকাতা আজ রক্তস্নাত। স্বামিজিকে যদি শ্রদ্ধা করতে হয়, সম্মান করতে হয়, তাঁর কথা অনুসরণ করতে হয় তাহ'লে সর্বপ্রথম আমাদের যে কাজ তা করতে হবে। কি সেই কাজ? আমাদের ঠাকুর রামকৃষ্ণকে জীবনে গ্রহণ করতে হবে, তাঁর ব'লে যাওয়া কথাগুলি জানতে হবে, জেনে মানতে হবে, নিজের জীবনে তা' গেঁথে নিতে হবে। তবেই সার্থক হবে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন। নতুবা সবই হবে ফুটো কলসিতে জল ঢালা কাজের মত।

এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের নবরুপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের কথা স্মরণ করা যেতে পারে,
"আমার বিবেকানন্দী রামকৃষ্ণ ভালো লাগে না। আমি চাই রামকৃষ্ণী বিবেকানন্দ।"
No photo description available.
All reactions

কবিতা/कविता दया (2)



दया (2)
ओ दयाल!
मैं कहां जाऊं, किस्को बोलू,
मैं किसे करू बात.
परेशानी से दीन गुजरे.
किसे फेलाता विख की हाथ.
अरे दयाल! मुझे बचाओ।
मृत्यु तक मैं करुंगा तेरा काम.
ना छोरुंगा तेरा साथ।
ज़ब तक चंद सूरोज है
अरे दयाल! हां यह मेरी वाडा है.----- प्रबी
(লেখা ১৪ই জানুয়ারি'২০২২)

ছোটো ভাবনা ছোটো চিন্তা ১

 

প্রবন্ধঃ বিবেকানন্দ ও তাঁর জন্মদিন পালন।

কাল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন গেল। তাঁর জন্মদিন পালন হ'লো সরকারী, বেসরকারিভাবে, পালন করে বিভিন্ন ক্লাব ও রাজনৈতিক দলগুলি। পালন করা হয়েছে বিভিন্ন ক্লাবে, হলঘরে, পার্কে, প্রতিষ্ঠানে, সরকারী ভবনে, রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, নর্দমার ধারে। পালন হয়েছে, সারা বছর পার্কে, রাস্তার ধারে খোলা আকাশের তলায় ঝড়-জল-বৃষ্টি ও পাখির গু মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচুটাকে ঐ অবস্থায় জন্মদিনের দিন গলায় মালা পড়িয়ে, তোতাপাখির মতো অন্তসারশূন্য নীতি কথার স্রোতে ভাসিয়ে, দলীয় স্লোগান তুলে, রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে। তারপর ছড়ানো ছিটানো ভাত খেয়ে-ই উড়ে যাওয়া কাকের মতো সবাই চলে যায় যে যার মতো; একলা সেই সারা বছর রোদ-জল-ঝড়ে মাথায় পাখির গু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবার সেই মহান বক্তার বক্তৃতাতে কথার স্রোতে ভাসিয়ে ঝড় তোলা 'বী----র সন্ন্যাসী' সো-য়া-মি বিবেকানন্দ!

কিন্তু তিনি সারাজীবন কি কষ্ট-অপমান-লাঞ্ছনা ইত্যাদি মাথায় নিয়ে ভারত তথা বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে কি ব'লে গেছিলেন যে, আমি মারা যাবার পর আমার স্ট্যাচু বানিয়ে যেখানে সেখানে খোলা আকাশের তলায় রাস্তার মোড়ে, নর্দমার ধারে, পার্কে আমার মূর্তি বসিয়ে আমার জন্মদিন পালন ক'রো? তিনি কি ঈশ্বর বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর ও তাঁর পরমপ্রেমময় গুরু শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে কি ব'লেছিলেন তা'কি বক্তারা জানে, জানলেও চরিত্রে তাঁর প্রতিফলন আছে কিংবা স্কুলে, কলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি-বেরসকারি উদ্যোগে, রাজনৈতিক দলগুলির কর্মশালায় তার চর্চা হয়? হয় না। ঐসব কল্পনা করা বিলাসিতা মাত্র।

যাই হ'ক, এটা কার ভুল বা দোষ? কাল শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য, বিবেকানন্দের অনুগামী এবং অন্যান্য যারা যারা সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করেছিল বা বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা, সেমিনার করেছিল তাঁর ফটোর সামনে মুখোমুখি কিংবা তাঁকে পিছনে রেখে, পশ্চাদদেশ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে, বসে, কেউ কেউ চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে ব'সে জন্মদিন পালন করেছেন তারা কি একসময়ের ঘোরতর নাস্তিক, ঈশ্বর অবিশ্বাসী, যুক্তিবাদী, বাস্তববাদী নরেন্দ্রনাথ পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দে রূপান্তরিত ঘোরতর ঈশ্বর বিশ্বাসী সন্ন্যাসী মানুষটির গুরুদেব পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের জন্মদিন পালন বা তাঁকে নিয়ে আলোচনা, সেমিনার করেন? যারা ঈশ্বরবিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী স্বামী বিবেকানন্দের সমাজ সভ্যতা নিয়ে গরুর জাবর কাটার মতো মুখস্ত বিদ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আলোচনা সভায়, সেমিনারে তাঁর কথা নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করেন, বক্তব্যের আড়ালে নিজেকে জাহির করে ' বিবেকানন্দকে নয় আমায় দ্যাখ' মানসিকতায় তারা কি স্বামী বিবেকানন্দের গুরুর খবর রাখেন, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু সম্পর্কে কি ব'লে গেছেন, কে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, তাঁর ওপর তাঁর গুরুদেবের কি ভয়ংকর প্রভাব তার বিন্দুমাত্র জানেন?
জানি না। কিন্তু আমরা সমাজ, সভ্যতা ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে ব'লে চিন্তায় কাতর হ'য়ে বালখিল্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখছি, সিনেমা, নাটক তৈরী করছি, গান বাঁধছি, গান গাইছি, কবিতা আবৃত্তি করছি, পথেঘাটে স্লোগান তুলছি, বক্তৃতা দিচ্ছি, অন্যকে দোষ দিচ্ছি, অন্যের ত্রুটি ধরছি, সমালোচনা করছি, গালাগালি করছি, নিজে অসত্য কথা বলছি, মিথ্যা আচরণ করছি, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতীদের সামনে উলঙ্গ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি আর যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলছি,যুব সমাজ ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে, উচ্ছৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল আচরণ করছে। দোষ দিচ্ছি শুধু তাদের আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু নিজের চরিত্রের দিকে তাকিয়ে আমি দেখছি না যে আমার নিজের চরিত্রে কাপড় ঢাকা নেই, একেবারে উলঙ্গ চরিত্র। আর যারা আমার বক্তব্য শুনছে তারা জানে যে আমার চরিত্রে কাপড় নেই, তবুও তারা হারিয়ে ফেলেছে নিজের ভেতরের সেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে, যে নিসংকোচে, নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে বলবে, হে বক্তা, হে বিবেকানন্দ প্রেমী, তুই ল্যান্টা, তোর কাপড় কোথায়?

কেন আমরা কেউ শপথ নিচ্ছি না এই পবিত্র দিনে যে, এই শিশুটিকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে" এই নিষ্পাপ শিশুদের বাঁচাতে হবে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতার করাল গ্রাস থেকে? কেন আওয়াজ তুলছি না বন্ধ করতে হবে পথেঘাটে, কবিতায়, গল্পে, সাহিত্যে, সিনেমায়, মোবাইলে অশ্লীল রগরগে খুল্লমখুল্লা যৌন ছবি, রীল, বিজ্ঞাপন? কি হবে বালখিল্য লোকদেখানো মহাপুরুষদের জন্মদিন পালন ক'রে? এক্কেবারে কচি অবস্থায় তো খোলামেলা যৌন দৃশ্য দেখে দেখে শেষ হ'য়ে গেছে ও যাচ্ছে কচি জীবন যৌবন বিয়ের বহু পূর্বে! যৌন বিষয় ঘরে ঢুকে পড়েছে, ঢুকে পড়েছে বেডরুমে, পড়ার টেবিলে, বইয়ের ভাঁজে শৈশব, কৈশোর, যৌবনেই মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। যেমন, গুরুমস্তিস্ক বা সেরিব্রাম অর্থাৎ মস্তিস্কের অগ্রে , লঘুমস্তিস্ক বা সেরিবেলাম ও সুষুম্নাশীর্ষক (যাকে মেডুলা বলে) অর্থাৎ মস্তিষ্কের পশ্চাদে। হামলে পড়েছে শিশুদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন অংশে। মোবাইলের মাধ্যমে যৌন দৃশ্য, হিংসার দৃশ্য, ঘৃণার দৃশ্য রগড়ে, দুমড়ে মুচরে বলাৎকার ক'রে ক'রে শেষ ক'রে দেওয়া শিশু, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতীদের মস্তিষ্কে ঢূকবে আর মহান সন্ন্যাসীর জীবনের ত্যাগ, সংযম, আদর্শের কথা????? তাহ'লে কি লাভ এই জন্মদিন পালনের মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দকে এবং সমস্ত মহান মনিষীদের অপমান করার?

তাহ'লে এ পথেই কি ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে?
দেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে কি বলেন বিদ্ধজনেরা?

May be an image of 1 person, monument and text

Friday, January 12, 2024

কবিতা कविता / दया! (१)

दया करो मेरे बाप! अरे दयाल!
अगे अंधेरा घनोघोर अंधेरा!
और मै अकेला चला अगे बेखेयाल.
पीछे भयाल भय! नेही है कोई सहारा!
दया करो दयाल! मेरा बाप!
मेरा जिबन की ध्रुबतारा!------प्रबी

খোলা চিঠিঃ বাংলাদেশের সাহিত্যিক বন্ধুকে খোলা চিঠি। (৪)

আপনাকে এই চিঠিটা লিখতে একটু দেরী হ'লো। এরপরে আর একটা শেষ চিঠি লিখবো আপনাকে। আশা করি এই মোট পাঁচটা চিঠির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম আপনাকে শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে, বুঝতে কিঞ্চিৎ সাহায্য করবে। কিঞ্চিৎ বললাম এইজন্যে যে, শ্রীশ্রীঠাকুরের সমগ্র জীবন দর্শন, তাঁর অগুন্তি সৃষ্টি যা ২৫হাজার বাণী, জীবনের সব দিকের সব বিষয় নিয়ে অন্তহীন অভূতপূর্ব বর্ণনা সম্বলিত অজস্র গ্রন্থ-এর ষোলোআনির এক আনির ষোলোভাগের একভাগও যদি বাকী জীবনে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে পড়ার সৌভাগ্য হয় তাহ'লে আপনিও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর মতো আফসোস ক'রে অশ্রুসজল চোখে বলতে বাধ্য হবেন, হে ঠাকুর! আমি কেন জীবনে আমার প্রথম উপন্যাস রচনা করার আগে আপনার কাছে এলাম না।

আর একজন লেখকের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না; তিনি রামায়ণ মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনীর বিশ্লেষণ করেছিলেন। পরে যখন সেই সব বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়েছিলেন তখন স্তব্ধবাক্ হ'য়ে গিয়েছিলেন। বিস্ময়ে হতবাক হ'য়ে দুঃখ ক'রে শুধু বলেছিলেন, আমার সমস্ত রচনা বই ছাপা হ'য়ে বেরিয়ে গেছে এখন আমি কি করবো ঠাকুর! আমি কখনো এমনভাবে ভাবিইনি আপনি যে অ্যাঙ্গেল থেকে বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন। এখন আর ফিরাবো কি ক'রে? এতে অনেক ক্ষতি হ'য়ে যাবে সমাজের। নিজের সাহিত্যকর্মে নিজেই লজ্জিত হ'য়েছিলেন।

তাই বন্ধু! হয়তো আমি আপনার বন্ধু না; তবুও ফেসবুক বন্ধু হিসেবেই বলছি, আপনি যেদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের অমৃত সৃষ্টির স্বাদ পাবেন সেদিন আপনি আমাকে না ভালোবেসে পারবেন না। আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো।

যাই হ'ক, আর কত উদাহরণ দেব?
১) কেন নেতাজীর ব্রিটিশ আমলের দোর্দন্ডপ্রাতাপ ব্যরিষ্টার বাবা ও অসামান্য প্রতিভাময়ী মা ও বড়ভাই, বড়ভাইয়ের স্ত্রী ঠাকুরের দীক্ষা নিয়েছিলেন? কেন নেতাজী দেশের স্বাধীনতার উত্তাল ডামাডোলের মাঝে বিরাট দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বারবার তিনবার ঠাকুরের কাছে ছুটে এসেছিলেন? এসে কেন দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করতেন? কেন তিনি সময়ের অভাবে ঠাকুরের কাছে এসে থাকতে পারেন না ব'লে গভীর দুঃখ প্রকাশ করতেন, আফসোস করতেন। কেন ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ নেতাজী তাঁর বুঝ্রুকি ধরতে পারলেন না?

২) কেন হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জন সংঘ-এর প্রতিষ্ঠাতা ( ভারতের শক্তিশালী সংগঠন RSS তথা একক বৃহৎ রাজনৈতিক বর্তমান সরকারে আসীন দল বিজেপি) ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশভাগের আগে ১৯৩৯ সালে একজন সাধারণ ধর্মগুরু আপনার মতে 'বুজ্রুক, বোগাস' ঠাকুরের কাছে সর্বনাশা ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কিভাবে আটকানো যায় তার পরমার্শ করতে এসেছিলেন? এবং শ্রীশ্রীঠাকুর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ভারত ভাগ বানচালের যে অভ্রান্ত তুক, যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করতে ব্যর্থ হ'য়েছিলেন এবং দেশভাগের পর আবার দেওঘরে এসে লজ্জায় অশ্রুসজল চোখে অনুতপ্ত কন্ঠে স্বীকার করেছিলেন ঠাকুরের নিখুঁত দূরদর্শিতার কথা এবং তা পালনে ব্যর্থ হওয়ার কথা। কেন? কেন ভারতীয় পন্ডিত ও নেতা ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঠাকুরের বুজরুকি ধরতে পারলেন না, যা আপনি পারলেন!?

৩) কেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাসিক 'পথের পাঁচালি'-র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৯ সালের ৩০শে জুলাই পাবনা হিমাইতপুর আসেন এবং ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ঠাকুরের বিজ্ঞান ভিত্তিক মতাদর্শ দেখে, শুনে তিনি আপ্লূত হৃদয়ে ঠাকুরের দীক্ষা প্রার্থনা করেন এবং দীক্ষা নেন? বিজ্ঞানী শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য তাঁকে ঠাকুরের 'কথাপ্রসঙ্গে, চলার সাথী, নারীর নীতি ইত্যাদি থেকে কিছু কিছু অংশ পড়ে শোনালে কেন আবেগ আপ্লূত হ'য়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেছিলেন,

"বহু মানুষের সাধনার কথা শুনেছি কিন্তু এমন অভূতপূর্ব অনুভূতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা জীবনে কখনো শুনিনি। চেষ্টা ক'রে এ ভাব ও ভাষা আয়ত্ব করা যায় না। আপনারা ঠাকুরের এই অপূর্ব সাহিত্য জনসমক্ষে তুলে ধরেন না কেন? এর স্বাদ অনন্য।"

হে সাহিত্যিক ফেসবুক বন্ধু! আপনি একজন উচ্চমার্গের সাহিত্যিক বলেই ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবন সাধনার মধ্যে বুজরুকি ধরতে পেরেছিলেন ২০ বছর বয়সে যে কৃতিত্ব এখনও ব'য়ে চলেছে আপনার জীবনে। তাঁর সমস্ত কিছু 'বোগাস বো' ব'লে উড়িয়ে দিলেন। আর মূর্খ নিম্নমার্গের সাহিত্যিক বলেই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ঠাকুরের বুজরুকি ধরতে পারেননি। এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। আপনি মহান! আপনি শ্রেষ্ঠ!!

৪) কেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাথে সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় সাহিত্য রচনায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, আমি তো এমন ক'রে সাহিত্য রচনার কথা আগে কোনোদিন ভেবে দেখিনি। ঠাকুর এই বয়সে আপনার বলা মতন মিলনাত্মক ও জীবনমুখী সাহিত্য কি আর রচনা করতে পারবো? অশ্রুসজল চোখে ভেজা গলায় আরো বললেন, ঠাকুর আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস লেখার আগে কেন আপনার কাছে এলাম না?

আশ্রম থেকে ফিরে যাবার পর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হ'য়ে মিলনাত্মক উপন্যাস 'বিপ্রদাস' রচনা করেছিলেন। আর এই উপন্যাসই ছিল শরৎচন্দ্রের জীবনের শেষ উপন্যাস।

হে সাহিত্যিক বন্ধু! শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কি মুর্খ ও পাগল ছিলেন যে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন ক'রে ও তাঁর সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে নিজের ভুলের স্বীকারোক্তি ক'রে নিজের সমগ্র জীবন দর্শন বদলে ফেলে শেষ উপন্যাস 'বিপ্রদাস' রচনা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকেই জীবনের অন্তিম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছিলেন? কেন তিনি আপনার মতো ঠাকুরকে 'বোগাস বো, যত্তসব বুজরুকি' ব'লে উড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন না এবং নিজস্ব চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী সাহিত্য রচনায় রত রইলেন না? বলতে পারেন এর কারণ কি?

৫) দেশবন্ধুর মতো মানুষ কেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে ইষ্টপদে গ্রহণ করেছেন সেই কৌতুহলেই ১৯২৫ সালের ২৩শে মে মহাত্মাজী পাবনা আশ্রমে পরিদর্শনে এসে আশ্রমের সমস্ত বিভাগ ঘুরে দেখে বিস্ময়ে স্তম্বিত হ'য়ে বলেছিলেন আমি স্বপ্নে যে ভারতবর্ষের ছবি দেখি সেই ভারত ইতিমধ্যেই এই আশ্রমের বুকে গড়ে উঠেছে! তারপর শ্রীশ্রীঠাকুরের মায়ের গভীর ভালোবাসায়, স্নেহে ও প্রখর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মা সম্পর্কে মহাত্মাজী বলেছিলেন, 'I have never seen such a masterful woman of such wonderful personality in my life' (এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী জীবনে আমি কখনও দেখি নাই।)। কেন বলেছিলেন তিনি এই কথা? কেন মহাত্মাজীর মতো মানুষ শ্রীশ্রীঠাকুরের বুজ্ররুকি ধরতে পারলেন না? যা আপনি পারলেন!

হে সাহিত্যিক মহোদয়! এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী্র সন্তান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে কেন The greatest phenomenon of the world বলা হয় তা তাঁকে বুঝরুক বোগাস বলার আগে মহাত্মাজীর মতো কৌতূহল ভরে একবার ভেবে দেখবেন না?

এরপর আর একবার মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুর অসুস্থ শুনে কলকাতায় তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুরকে বলেছিলেন, "আপনার আশ্রম থেকে ফিরে আসার পর একদল লোক এসে আপনার খুব নিন্দা করল, আবার একদল লোক খুব প্রশংসা করল। অথচ উভয় দলেই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ রয়েছেন"।

হে সাহিত্যিক! আপনি বিশিষ্ট ( যেহেতু আপনি লেখালেখি করেন ) ধ'রে নিয়েই বলছি, আপনি মহাত্মাজীর দ্বিতীয় দলের সদস্যদের মধ্যে পড়েন। খুব আনন্দ পাবো এবং আপনিও সীমাহীন স্বর্গীয় আনন্দ পাবেন যেদিন আপনি মহাত্মাজীর বলা প্রথম দলের বিশিষ্টদের মতো একজন বিশিষ্ট সদস্য হবেন।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস।
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
ক্রমশঃ

Thursday, January 11, 2024

কবিতাঃ একদিন--------

একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি নষ্ট বীজে নষ্ট চারাগাছ না জন্মায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি লজ্জা পথ রোধ ক'রে না দাঁড়ায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অহংকার প্রাচীর হ'য়ে পথ রোধ না করে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অজ্ঞানতার অন্ধকার চোখ চেপে না ধরে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি শরীরে ঘুণপোকা জমাট বাসা না বাঁধে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি মানসিক অবসাদে মৃত্যু চেপে না বসে কাঁধে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অতি লোভে বুদ্ধিভ্রষ্ট না হয়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি কামিনী কাঞ্চনে অস্তিত্ব না হয় লয়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অন্তহীন দুর্বুদ্ধিতে হিতাহিত জ্ঞান না হারায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অল্প সময়ের জন্য আসা সময় না শেষ হ'য়ে যায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে বন্ধু তোমায়
সেদিন পাবে তুমি হেথায় আমায়;
একদিন আসতেই হবে ঘুরে এই পথে
এই পথেই যে আছে তোমার ঘর।
একদিন আসতেই হবে এই পথে এই ঘরে
যেখানে আছে বসে তোমার জীবনস্বামী
অশ্রুভেজা চোখে বলছে ডেকে তোমায়
দিন মাস বছর যায় যাক ঘুরে থাকবো আমি 
বন্ধু, শবরীর মতো পথ চেয়ে তোমার অপেক্ষায়
এইখানেতে তোর হারিয়ে যাওয়া জীবন খুঁজে পাবি।
(লেখা ১২ই জানুয়ারি'২০১৯ )






উপলব্ধিঃ ছানাকাটা আমি।

আমি কোন পক্ষে? সত্যের পক্ষে নাকি মিথ্যের পক্ষে? ন্যায়ের পক্ষে নাকি অন্যায়ের পক্ষে? তুমি কোন পক্ষে সৎসঙ্গী? আমার সম্পর্কে আমি বলতে পারি আমি না মিথ্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে, না অন্যায়ের সমর্থন ক'রে অর্থ সম্পদ কামাতে পারলাম না সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে, ন্যায়ের সমর্থন ক'রে অর্থ-মান-যশের অধিকারী হ'তে পারলাম, নিজে প্রতিষ্ঠিত হ'তে পারলাম। সারাজীবন অন্যের মই হ'য়ে কাটিয়ে দিলাম। শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদাকে বলেছিলাম, এবার নিজের মই নিজে হবো। কিন্তু তাও হ'তে পারলাম ক'ই? কথা রাখতে পারলাম না। সালটা সম্ভবত ২০১৬-১৭ হবে, তখন তিনি ঠাকুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে শ্রীশ্রীবড়দা বাড়িতে ঢোকার যে রাস্তা সেই খানে ঠাকুরবাড়ি থেকে বেরোবার গেটের পাশে যে গেট দিয়ে ঢুকে বিশাল ফাঁকা জায়গা সেখানে দর্শন দিতেন। যখনই সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছি তখনি বাধা পেয়েছি। মিথ্যাচারী, অন্যায়কারীর কাছ থেকে যে বাধা পেয়েছি তার হাজার গুণ বেশী বাধা বা অসহযোগিতা পেয়েছি তথাকথিত সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো মানুষের কাছ থেকে, সৎসঙ্গীদের কাছ থেকে। তারা না সত্যের পক্ষে, না মিথ্যের পক্ষে; নিজের বিশ্বাস, নিজের বোধ, নিজের বুদ্ধির পক্ষে অটুটভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একটা দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে দিয়ে তারা জীবন কাটাচ্ছে। একেই বলে বোধহয় তথাকথিত ভক্তি, প্রেম, ভালোবাসা সর্বোপরি শিক্ষা। আর আমার অবস্থা এখন না ঘরকা, না ঘাটকা! না ঠাকুরকে ঠাকুরের চাওয়া মতন ভালবাসতে পারলাম, না তাঁকে ভুলতে পারলাম! না তাঁকে সুখী করতে পারলাম, না নিজে সুখী হ'তে পারলাম! একটা ছানাকাটা অবস্থা।
( লেখা ১২ই জানুয়ারি'২০২৩)

উপলব্ধিঃ রামকৃষ্ণীয় বিবেকানন্দ!

আজ শ্রীশ্রীবিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিন। তাঁর পবিত্র জন্মদিনে স্মৃতির পাতা থেকে আনা মূল্যবান কিছু অনুভূতি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করছি। যাতে আজকের পরম পবিত্র দিনে বিবেকানন্দের চরণে নিখুঁত নির্ভুল অকপট ভক্তি অর্ঘ্য অর্পন ক'রে পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর সদগুরু শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের একনিষ্ঠ প্রকৃত ভক্ত হ'তে পারি।

একবার রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু সন্ন্যাসী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন ও প্রণাম শেষে ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। সেই সময় তাঁরা ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনায় বিবেকানন্দ প্রসঙ্গ বারবার টেনে আনছিলেন এবং সারাক্ষণ তাঁরা ঠাকুরের সঙ্গে বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনায় মগ্ন হ'য়ে রইলেন। শ্রীশ্রীঠাকুর চুপ ক'রে ধৈর্য ধ'রে দীর্ঘসময় তাঁদের কথা শুনছিলেন। দীর্ঘসময় আলোচনায় সন্ন্যাসীরা একবারও শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করায় শ্রীশ্রীঠাকুর খুব অস্বস্তি বোধ করছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভালো লাগছিল না সন্ন্যাসীদের কথা। তখন শ্রীশ্রীঠাকুরকে এই অস্বস্তির কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি শুধু বলেছিলেন, "আমার বিবেকানন্দীয় রামকৃষ্ণ ভালো লাগে না; আমার ভালো লাগে রামকৃষ্ণীয় বিবেকানন্দ।"

অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর বলতে চেয়েছিলেন, বিবেকানন্দের পরিচয়ে রামকৃষ্ণের পরিচয় নয়; রামকৃষ্ণের পরিচয়ে বিবেকানন্দের পরিচয়। এটা যেন রামকৃষ্ণের শিষ্যরা ভুলে না যায়। প্রত্যেকেই যেন বিবেকানন্দের মতো রামকৃষ্ণ অন্তপ্রাণ পরম ভক্ত হ'য়ে উঠতে পারে।
সেই বিবেকানন্দীয় রামকৃষ্ণ ট্রাডিশান সমানে চলেছে। আমরা যেন রামকৃষ্ণীয় বিবেকানন্দ সংস্কারে সংস্কৃত হ'ই।

সেই পরমপুরুষ পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের পরম একনিষ্ঠ ভক্ত রামকৃষ্ণ অন্তপ্রাণ শ্রীশ্রীবিবেকানন্দের জন্মদিনে তাঁর রাতুল শ্রীচরণে আভুমি প্রণাম জানাই। আমরা যেন সবাই পরমভক্ত বিবেকানন্দের মতো হ'তে পারি।
( লেখা ১২ই জানুয়ারি'২০২৩ )
All reac

Wednesday, January 10, 2024

কবিতাঃ অসৎ ও অসত্য।

কর্মযোগী পুরুষ তুমি কর্ম নিয়েই থাকো;
কর্ম তোমার ধ্যান জ্ঞান কর্ম নিয়েই বাঁচো!
কর্ম মাঝে তুফান ওঠে কথার তুফান বটে!
ধর্মহীন কর্ম জেনো পুতুল কিন্তু বিকিকিনির হাটে।


ধর্মযোগী পুরুষ তুমি ধর্ম নিয়েই থাকো;
ধর্ম তোমার ধ্যান জ্ঞান ধর্ম নিয়েই বাঁচো!
ধর্ম মাঝে তুফান ওঠে ভক্তির তুফান বটে!
কর্মহীন ধর্ম জেনো প্রসব করে কিন্তু অশ্বডিম্ব ঘটে!


কর্মযোগী মারছে ঝাঁপ কর্ম নিয়ে ফাটিয়ে ঢাক
কর্মমাঝে মারছে ঘাই কর্ম কর্ম মারছে হাঁক!
ধর্ম ধর্ম জিগির তুলে ধর্মযোগী ছুটিয়ে ঘোড়া
দেশটাকে ক'রে টুকরো টুকরো করছে শেষে কানা খোঁড়া!
কর্ম-ধর্মের মনভুলানী বাদাম তুলে করতে চাইছো বাজিমাৎ!?
ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে হবেই হবে নিশ্চিত কুপোকাত।


এমনিভাবেই কর্মযোগী কর্ম করে, ধর্মযোগী ধর্ম;
কর্মধর্ম বিভেদ মাঝে যায় হারিয়ে আসল কথা মর্ম!
কর্মই ধর্ম ব'লে হাঁক পারে যে কর্মযোগী
কর্ম করার অহংকার তার মজ্জাগত, সে রোগী!
ধর্ম ধর্ম ব'লে যারা কর্মের নামে করছো খালি হট্টগোল
অনুষ্ঠানের নামে তোরা ধর্মটাকে চিতায় তোল!


কর্ম মাঝেই ধর্ম আছে আর ধর্ম মাঝে কর্ম
জেনো এ পরম সত্য!
বাঁচা-বাড়া আছে যেথায় তাহাই কর্ম, তাহাই ধর্ম!
এ নেই যেখানে তাহাই অসৎ, তাহাই অস
(লেখা ১১ই জানুয়ারি'২০১৯)

All react

কবিতাঃ অনুকূল প্রেমময়!

জীবনটা যখন ওঠে হাঁপিয়ে
সংসার কোলাহল মাঝে;
শত জ্বালা-যন্ত্রণা, বাধা বন্ধন ডিঙ্গিয়ে
মনে হয় মিশে যাই প্রকৃতি মাঝারে।
ছুটে যাই-------
ছুটি কাটাই।
বনে-বনান্তরে, শহরে-নগরে,
গ্রামে-গঞ্জে, পাহাড়ে-সমুদ্রে,
কতশত তীর্থক্ষেত্রে;
ছুটি কাটাই----
স্থলে-জলে-অন্তরীক্ষে।।
তবুও------
বুক জুড়ে হাহাকার;
হিংসা, ঘৃণা, নীচতা আর
কপটতা, নিন্দা, অবিশ্বাস
বেইমানী, হানাহানি, কানাকানি
ভরা বিষাক্ত নিশ্বাস।
শোক, তাপ, জ্বালা, ব্যথা, অপমান,
দুঃখ, গ্লানি, মান-অভিমান;
ঘরে-বাইরে নেই সুখ-শান্তি
মধুরতা হারিয়ে পৃথিবী আজ ক্ষেত্র অশান্তির।
ছুটে যাই-----
স্থলে-জলে-অন্তরিক্ষে;
ছুটি কাটাই-----
অশান্তি, অসংহতি, অমৈত্রী নিয়ে মনোভাব বক্ষে।
আকাশে-বাতাসে ভয় বিভীষিকা
কে জ্বালাবে বলো জীবনের দীপশিখা!?
মানুষে মানুষে শুধু মারামারি
সে পুরুষ হ'ক আর নারী
জীবনের চলার পথে-----
অর্থ, মান আর যশের কাড়াকাড়ি!
সে পুরুষ হ'ক আর নারী!
ছুটি কাটাই------
দিশেহারা মোরা উদভ্রান্ত বক্ষে।
ছুটে যাই-----
স্থলে-জলে-অন্তরিক্ষে।।
তাই তো বলি-----
এসো হিন্দু, এসো মুসলমান,
শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান;
এসো ব্রাহ্মণ, এসো চন্ডাল,
পাপীতাপী এসো যত মূর্ত শয়তান।
এসো সাম্যবাদী, যত ধর্ম বিরুদ্ধবাদী,
যুক্তি, বিজ্ঞান আর যত মতবাদী।
এসো ধার্মিক, অহঙ্কারী, অজ্ঞানী পন্ডিত;
এসো দেশপ্রেমিক আর জনপ্রতিনিধি
এসো বিশ্বের যত সাম্রাজ্য আর জীবনবাদী।
এসো-------- এ-----সো,
ছুটে এসো, চলে এসো
এসো বিশ্বের কোটি কোটি।
এসো কামুক, এসো ক্রোধী
মোহাচ্ছন্ন, পরশ্রীকাতর, হিংস্র, লোভী।
এসো শাক্ত, এসো শৈব,
এসো ব্রাহ্ম, এসো যত বৈষ্ণব,
এসো বিশ্বের কোটি কোটি।
বুক ফাটো ফাটো ক'রে এসো
ভালোবাসার তীরে এসো
প্রেম নগরে এসো
ভালোবাসার সমুদ্রে স্নান করি এসো।
ছুটে এসো- চলে এসো
ভালোবাসার সমুদ্র ঐ ডাকছে শোনো।
শোনো-------- শো-------নো----।
আলোময়! রূপময়! মধুময়!
ভালোবাসার সুধা হাতে সুধাময়!
ওই-যে চেয়ে আছে রসরাজ রসময়!
জীবনের প্রতিকূলে অনুকূল প্রেমময়!!
প্রেমময়----------! প্রেম-------ময়------!!---প্রবি।
May be an image of 1 person, temple and text that says 'তিনি এক ও অদ্বিতীয়'

কবিতাঃ খুঁজে নাও প্রেমের খনি।

"ঋত্বিক করার পর ঠাকুর দাদা (শ্রীশ্রী দাদা) আমায় একটা ঋত্বিক বই দিয়েছিলেন। সেই বইয়ে 'শোন ঋত্বিক ' বলে একটা বানীতে বলেছেন, যে দীক্ষিত হল তার সবরকম খোঁজ খবর নেওয়ার কথা। আপনারা যাদের দীক্ষা দিলেন তাদের সবরকম খবর রাখেন। অন্তত ১০০ জনের খবর রাখেন। সপ্তাহে একবার করে জিজ্ঞাসা করেন--কী রে কেমন আছিস?"------------~পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।


ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেটেছে বহুদিন
----- এবার ফিরিয়ে দে তোর সুদ সহ ঋণ।
দেওঘরের দেবঘর থেকে কি নিদেশ আসে ভেসে!
প্রতিধ্বনিত হ'য়ে ফেরে গ্রামেগঞ্জে, শহরেবন্দরে,
স্থলে, জলে, আকাশে বাতাসে।
উদোম হ'য়ে ছুটছো তুমি বৃত্তি স্বার্থের টানে
দয়াল প্রভু আছেন চেয়ে তোমার মুখপানে।
ফেরো তুমি, ফেরাও তোমার মুখ
দুঃখ জ্বালা ঘুচে যাবে আনন্দকে খুঁজে পাবে
কপট চাতুরী মাঝে পাবে না তুমি সুখ।
যজমান যেথায় থাকে দুঃখে, থাকে অবসাদে
সেথায় তুমি থাকবে না কিন্তু আনন্দ প্রসাদে।
যতই তুমি দয়ালের নামে মারো লম্ফ ঝম্প
দয়ালের মুখ রইবে গম্ভীর, হবে মলিন,
যদি না জাগে যজমানের জীবনে উন্নয়নের কম্প।
শোনো ঐ আহ্বান! ভালোবাসার মহাসিন্ধুর
ওপার থেকে ভেসে আসা আহ্বান ধ্বনি!
অবিনের বিন বাজে রাত্রদিন ছুটে এসো,
ছুটে এসো ত্বরা করি, খুঁজে নাও প্রেমের খনি।
( লেখা ২৮শে ডিসেম্বর'২০২৩)

May be an image of 2 people, beard, people smiling and turban

কবিতাঃ স্বাগত নববর্ষ ২০২৪

হে মন!
এসো শপথ নিই প্রতিজ্ঞা করি নববর্ষে
আনন্দ সাগরে ভাসাইবো জীবন নৌকা
বাঁচিব-বাড়িব মিলেমিশে দয়ালের স্পর্শে।
দয়ালের স্পর্শে ফুল হ'য়ে ফুটিবো আমি
ঝরিবো প্রভুর চরণতলে; সুঘ্রানে ভরিয়া
তুলিবো আকাশ বাতাস নামের ঝঙ্কার তুলে।
করিলাম শপথ খুঁজে নিলাম পথ এই নববর্ষে
যাবো ভালোবাসা ছড়াইয়া ছড়াইয়া দুয়ারে দুয়ারে
ঘুরিয়া ঘুরিয়া হাসি আনন্দে উদ্বেলিত বক্ষে।

হে মন,
চলো ফিরে যাই প্রভুর নিকেতন
দয়ালের প্রাণে লাগে ব্যথা এমন কথা,
পায় কষ্ট, দুঃখ এমন ব্যবহার, আচরণ
আজি নববর্ষে নিলাম শপথ করিবো না অযথা।
পুরাতন বছর শেষে প্রবেশিনু যখন নোতুন বর্ষে
বিস্ময় জাগে প্রাণে আরও একটি বছর
দিয়েছে দয়া করি দয়াল তাঁরই কাজেরই তরে;
শপথ করিলাম এইক্ষণে মনেমনে আজি হ'তে
এ জীবন করিলাম সমর্পণ আজি এ পূণ্যপ্রভাতে
হে দয়াময় প্রভু আমার তোমারি চরণতলে।
তোমার সেবার দিও অধিকার, দিও শক্তি, দিও ভক্তি
দিও প্রেম, ভালোবাসা, দিও অপার তোমাতে আসক্তি
করিতে পারি যেন তোমারি সেবা পরাণ খুলে।
হে দয়াল! রাখো তোমার ঐ রাতুল চরণযুগল
রাখো দয়া করি প্রভু এই অধমের বুকে।
(লেখা ১লা জানুয়ারি'২০২৪)


May be an image of 1 person and text
All re