Powered By Blogger

Saturday, December 31, 2022

আচার্যদেবের পবিত্র দীক্ষাদান কর্মসূচি

শ্রদ্ধেয় ইষ্টপ্রাণ দাদা ও ভক্তিমতি মায়েরা ।

( যদিও লেখাটা বড় তবুও অনুরোধ রইলো লেখাটা কষ্ট ক'রে পড়ার জন্য। বিশেষ একটা বিষয় নিয়ে বাংলার সৎসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে লেখা। নোতুন বছরের শুরুতেই তাই লেখাটা পোষ্ট করলাম গুরুভাইবোনেদের উদ্দেশ্যে)

একটা খবর জানতে পারলাম পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্যদেব 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের আচার্য রূপে অভিষিক্ত হওয়ার পর এই প্রথম ও এই শেষ আগামী নোতুন বছর ২০২৩-এর জানুয়ারি মাসের সম্ভবত ১০ তারিখ ( অন্য সূত্রে ২৩শে জানুয়ারী ) আসামের শিলচরের বরাক ভ্যালিতে আসছেন পবিত্র দীক্ষাদান কর্মসূচি নিয়ে। থাকবেন তিনদিন। তারপর ফিরে যাবেন ১৩ তারিখ দেওঘরে। এর মধ্যে একদিন পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্যদেব স্বয়ং দীক্ষা দেবেন।
পুজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের এই পরম পবিত্র শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী সৎসঙ্গ জগতের সমস্ত গুরুভাইবোনেদের জানাবার জন্য বলেছেন, সঙ্গে আরো বলেছেন সারা ভারত থেকে দাদা ও মায়েরা যেন মানুষ নিয়ে আসেন এই পবিত্র কর্মযজ্ঞে।
শ্রীশ্রীআচার্যদেব এরপরে আর দীক্ষা দেবেন না। তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী আসামের বুকেই সংঘটিত হবে। আসামবাসী হিসেবে প্রতিটি সৎসঙ্গীর আজ এক বিরাট আনন্দের সময়! পরমপিতার অজচ্ছল অমৃত আশিসধারা ১০ই জানুয়ারি'২৩ নেবে আসতে চলেছে সমগ্র আসামবাসীর জীবনে। এই আশীস লাভে ধন্য হবে আসামের প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি জীবন। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সৎসঙ্গের এই ইতিহাস।
খবরটা কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে আর কতটা অতিরঞ্জিত তা আমার জানা নেই। এ সম্পর্কে আপাতত ঠাকুরবাড়ি থেকেও কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি 'সৎসঙ্গ' অফিশিয়াল পেজে। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে খবরটা জানতে পারলাম। আর জানতে পারলাম নিচের পোষ্টটা থেকে। শিলচর থেকে প্রকাশিত 'যুগশঙ্খ' পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে।
যাই হ'ক আমরা সৎসঙ্গী মাত্রেই অবহিত আছি সারা দেশব্যাপী তাঁর ১০০ দিনের দীক্ষা পরিক্রমার বিষয়ে। আবার সেই পরম পবিত্র দিন নেবে আসতে চলেছে বিরাট কর্মসূচি নিয়ে শিলচরের পবিত্র মাটিতে। পরম সৌভাগ্য আসাম তথা শিলচরবাসীদের। একটা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হ'তে চলেছে শিলচরবাসী।
আর এটাও যদি সত্যি হয় যে এটাই আচার্যদেবের শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী তাহ'লে একটা অব্যক্ত বেদনা এই খবর জানার পর থেকে বুকের মধ্যে পাকিয়ে পাকিয়ে উঠেছে যা বলতে না পারলে দম বন্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকার সামিল। আমার মনের বেদনা আমি আমার এই লেখার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করলাম নিতান্তই নিজেকে হালকা করার উদ্দেশ্যে। এই বেদনা একান্তই আমার বেদনা। আমি কাউকে এর দায় নিতে বলি না; এই লেখার দায় আমার একারই। এজন্য মতের অমিল হ'তে পারে কিন্তু আমি চাই না এই নিয়েও প্রতিবারের মতো মতান্তর থেকে মনান্তর হ'ক।
একদিন বলা হ'তো "আজকে বাংলা যা ভাবে অবশিষ্ট ভারতবর্ষ ভাবে আগামীকাল।" মহামতি গোখলের এই কথা আজ সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে খানাখন্দে আটকে উল্টে গিয়ে হ'য়ে গেছে 'আজকে অবশিষ্ট ভারতবর্ষ যা ভাবে আগামীকাল বাংলা তা ভাবে।' এক্ষেত্রেও হয়তো বা তাই হ'লো। হয়তো এইজন্যই বললাম কারণ খবরটা যদি সত্য হয় তাহ'লে বাংলা এই ভাবনা ভাবাতে ব্যর্থ হ'লো আচার্যদেবের মনে প্রাণে যে তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী বাংলার বুকেই হ'ক। বাংলা ভাবার আগেই আসাম এগিয়ে গেছে বাংলাকে পিছনে ফেলে তাদের করার তীব্র স্রোতে ভেসে আচার্যদেবের মনে এই তৃষ্ণা জাগাতে। মহামতি গোখলের কথা আজ উল্টো হ'য়ে গেছে এই কথা আজ আবার প্রমাণিত হ'লো। সব বিষয়ে সব ক্ষেত্রে বাংলা আজ পিছনে। বাংলার সৎসঙ্গীদের আজ ভাবার সময় এসেছে। শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে আজ বাংলাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তরতরিয়ে অন্যান্য রাজ্য নীরবে নিঃশব্দে মসৃণ গতিতে মাখনে ছুরি চালাবার মতো।
আজ থেকে ৭৫ বছর আগে এই বাংলা একবার পরম চরম সুযোগ থেকে বঞ্চিত হ'য়েছিল বাঙালীর দূরদর্শিতার অভাবে। আর তার ফলে চিরদিনের জন্য আরও একবার দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রকে তাঁর প্রিয় জন্মভুমি বাংলা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। সেদিন বাংলা বোঝেনি যে কতবড় সর্বনাশ সে ক'রে বসলো। নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মেরে বাবু বাঙালি সেদিন প্রমাণ করেছিল সে কতখানি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা প্রকৃতপক্ষে অসাড় এক নির্বোধ জীব। সেদিনটা ছিল স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সাল। দেশবিভাগের কারণে 'সৎসঙ্গ' তার পাবনায় স্থিত ১.৫ কোটি টাকার সম্পত্তি হারিয়েছিল। পূর্বপাকিস্তান সরকার সেইসময় ঠাকুরের সমস্ত সম্পত্তি দখল ক'রে নেয়। পরিবর্তে সেইসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ৬০০০হাজার বিঘা জমি দান করতে চেয়েছিলেন মানবজাতির কল্যানার্থে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সময় পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় সেই ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দেওয়ার ব্যাপারে রাজী ছিলেন না। পরিবর্তে তিনি ৮০০ বিঘা জমি দিতে চেয়েছিলেন সৎসঙ্গকে। যেহেতু ৮০০ বিঘা জমি ঠাকুরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না তাই শ্রীশ্রীঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ৮০০ বিঘা জমি দানের প্রস্তাব খারিজ ক'রে দেন। শ্রীশ্রীঠাকুর তৎকালীন বিহার তথা বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরে বাংলাদেশের পাবনার হিমাইতপুর আশ্রমের মতন পুনরায় আজকের বিশাল 'সৎসঙ্গ' আশ্রম নোতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। পিছনে পড়ে রইলো দুর্ভাগ্যের তকমা নিয়ে বর্তমান ভারতের বিদগ্ধ রাজ্য বহু মনীষী, সন্ত, মহাপুরুষদের বিচরণ ক্ষেত্র খন্ডিত বাংলা 'পশ্চিমবঙ্গ'। সেইসময়ের একজনও বাঙ্গালী বিদগ্ধ মনীষী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে বাংলার বুকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেননি। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের দরবারে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬০০০ হাজার বিঘা জমি প্রদানের যৌক্তিকথার পক্ষে ওকালতি বা মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসেননি। ফলে শ্রীশ্রীঠাকুর অবহেলায় অবলীলায় ৮০০ বিঘা জমি উপেক্ষা ক'রে চলে গেলেন দেওঘরের রুখোশুকো অথচ সহজ সরল, শান্ত প্রাণ অধ্যুষিত লাল মাটির দেশে। ইচ্ছে করলেই সেই ৮০০বিঘা জমি তিনি তৎকালীন বাংলা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে রেখে দিতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। একবারও কেউ ভেবে দেখলো না ৮০০বিঘা জমির লোভ ত্যাগ করা যায় কোন শক্তিতে!? কেন তিনি পিছন ফিরে পর্যন্ত তাকালেন না, কেন তিনি একটিবারের জন্য বিবেচনা করলেন না সেই ৮০০ বিঘা জমির দিকে!? কেউ ছাড়তো সরকারী ৮০০বিঘা জমির লোভ!? কে ছিল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? কি ছিল তাঁর পরিকল্পনা? পানাগড় তথা বাংলার দুর্ভাগ্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান পানাগড় তথা বাংলার বুকে গড়ে উঠলো না। বঞ্চিত হ''লো বাংলা, বাংলার পানাগড়, পানাগড়ের মাটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র তথা বাণিজ্যক্ষেত্র হ'য়ে ওঠা থেকে।
একবার 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বাংলার বুকে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ধর্ম মহাসভা ও মহোৎসব করার। বাংলার সৎসঙ্গীরা নানা কারণে পারেননি শ্রীশ্রীবড়দার সেই ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরণ করতে। আজ শ্রীশ্রীবড়দা অমরধামে যাত্রা করেছেন। তাঁর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। একদিন নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে বড়দার ইচ্ছা এ বিশ্বাস আমার অটূট আছে। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ, প্রস্তুতি, যোগান ইত্যাদি নানান ব্যাপার হয়তো সবসময় অনুকূলে থাকে না। আর তাই হয়তো করা সম্ভব হ'য়ে ওঠে না। যেমন শ্রীশ্রীঠাকুরের বহু বিস্ময়কর স্বপ্ন, ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। হয়নি হয়তো সেই একই কারণে। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের দুর্বলতা।
একইরকমভাবে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের শ্রীশ্রীআচার্যদেবের শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচীও আসামের বরাকের সৎসঙ্গীদের জন্য নোতুন বছরে বিশেষ উপহার। যে উপহার পাওয়ার জন্য লালায়িত হ'য়ে আমি এই লেখা লিখছি। যদি এই খবর সত্য হয় তাহ'লে আমাদের বাংলার সৎসঙ্গীদের আজ ভাবার সময় এসেছে। বাংলা যেন আর নিজেদের দুর্বলতার কারণে বঞ্চিত না হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরকে আমরা বাঙালিরা বাংলায় আশ্রয় দিতে পারিনি। অখন্ড বাংলা, খন্ড বাংলা কোনও বাংলায় তিনি থাকতে পারেননি, থাকার জায়গা পাননি। জায়গা বা আশ্রয় হয়েছে বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যে। এ আমাদের চিরদিনের লজ্জা, অমার্জনীয় অপরাধ। আর বিশ্বের কাছে বাঙালীর এই লজ্জা শত প্রায়শ্চিত্তেও কোনওদিনই মোছার নয় যদি না তিনি আবার বাংলার বুকে নেবে আসেন। শ্রীশ্রীবড়দার ইচ্ছাও এখনও আমরা পূরণ ক'রে উঠতে পারিনি বাংলার সৎসঙ্গীরা। হয়তো নিশ্চয়ই আমরা একদিন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারবো। কিন্তু শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে আমাদের বাংলার সৎসঙ্গীদের হৃদয় নিংড়ানো আকুল প্রার্থনা হ'ক বাংলার বুকেই হ'ক তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী। উঠুক বাংলার বুকে দীক্ষার ঝড়, তুফান। গোটা রাজ্যের সৎসঙ্গী সমাজ ভেঙ্গে পড়ুক এই দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে। সারা বিশ্বে ধর্মজগতে সৃষ্টি হ'ক দীক্ষাদানের ইতিহাস!
আর বাংলার বুক থেকে মুছে যাক দয়ালকে বাংলায় আশ্রয় না দেওয়ার লজ্জা কলঙ্ক। একই সংগে পূরণ হ'ক পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দার স্বপ্ন ইচ্ছা।
শেষে শুধু অশ্রুভেজা চোখে কান্নামিশ্রিত ভাঙ্গা গলায় বলতে চাই, শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা অন্তত এই এক জায়গায় মিথ্যে হ'য়ে যাক! অনেক আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম ঠাকুর দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বুক থেকে উঠবে না। বাংলার বাইরে থেকে সৎসঙ্গের আন্দোলন শুরু হবে।" তাই আজ সত্য হ'য়ে উঠছে বাংলার বাইরে রাজ্যে রাজ্যে। আজ আর মনে পড়ে না, জানি না কোথায় কোন বইয়ে আছে ঠাকুরের এই কথা। রেফারেন্স দিতে আজ আমি অপারগ। তাই আমি বাংলার সৎসঙ্গীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, আমার এই কথা ভুল প্রমাণিত হ'ক। আর বাংলার বুক থেকে উঠুক ঝড়। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের উপস্থিতিতে মানুষে মানুষে ঢেকে যাক বাংলার আকাশ বাতাস। আর সেই আকাশের মেঘের বুকে ভেসে উঠুক আমার দয়াল প্রভুর মিষ্টি মধুর হাসি।
হে দয়াল বাংলার সৎসঙ্গীদের আকুল হৃদয় নিংড়ানো এই প্রার্থনা তুমি পূরণ ক'রো।---প্রবি।

Friday, December 30, 2022

দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র ও আচার্য পরম্পরা। (৪)

(পরবর্তী ও শেষ অংশ)

আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা দয়ালদেশে চলে গেলেন। সঙ্গে আমাদেরও দয়ালদেশের চাবিকাঠি দিয়ে ব'লে গেলেন, নামের তরীতে চ'ড়ে বস। নামের তরীতে চড়ে ভবসাগর পার হ'য়ে যা আর চলে যা দয়ালের সাথে দয়ালের দেশে। সাথে রেখে গেলেন আমাদের সামনে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তাঁরই সুযোগ্য জ্যেষ্ঠাত্মজ বাকসিদ্ধ পুরুষ বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি গুরুভাই গুরুবোন নিয়ে এতবড় বিশাল সৎসঙ্গ পরিবার। সেই পরিবারের অভিভাবক ছিলেন আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা। তাঁর মহাপ্রয়ানে এতটুকু টলে উঠলো না সৎসঙ্গ পরিবার! মহা নক্ষত্রের যে পতন হ'লো, সৃষ্টি হ'লো মহাশূন্যর তা বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলো না শোকে কাতর কোটি কোটি সৎসঙ্গী! মাখনে ছুরি চলার মতো বিরাট বিশাল সৎসঙ্গ পরিবারের ভয়ংকর ভার মসৃণভাবে এসে পড়লো শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাঁধে ! আচরণসিদ্ধ পুরুষ বাবাইদাদা প্রতিক্রিয়াহীন সহজ স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে দিয়ে সবার হৃদয়ে আচার্যের আসনে অধিষ্ঠিত হ'লেন। বর্তমান সৎসঙ্গের আচার্যদেব হ'লেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।
আচরণসিদ্ধ পুরুষ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আচরণের মধ্যে দিয়ে সবাইকে বললেন, তোমাকে যদি কেউ গালি দেয়, তোমাকে যদি কেউ ঢিল মারে তখন তুমি ভেবে দেখো ঠাকুরকে গালি দিলে, ঠাকুরকে ঢিল মারলে ঠাকুর কি করতেন? তুমি যদি মিত্রকে বিপদের সময় পাঁচ টাকা দাও তাহ'লে তুমি শত্রুকে দশ টাকা দিও। তুমি সবার মধ্যে উঠতে বসতে চলতে ফিরতে হাটে মাঠে ঘাটে যেখানে যাবে, যার সঙ্গে কথা বলবে সেখানে তার সঙ্গে তোমার প্রিয়পরমের, তোমার ইষ্টের কথা ব'লো, গল্প ক'রো, সবার মাঝে তোমার প্রিয়কে বিতরণ ক'রো।
তিনি বললেন,
প্রিয় বিতরণ করে যেইজন
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
তিনি আমাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি পরিবেশের মোকাবিলা প্রসঙ্গে আরো বললেন, "ঠাকুরকে যখন তাঁর জীবদ্দশায় এবং এখনও চরম অপমান, অশ্রদ্ধা, কুৎসা, নিন্দা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে ও হচ্ছে তাহ'লে আমরা তাঁর সন্তান হ'য়ে অপমান, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করবো না?" আচার্যদেব আমাদের হাসিমুখে সব অপমান, বিরুদ্ধ প্রচার, কুৎসা সহ্য করতে শেখাচ্ছেন। তিনি বললেন, "ঠাকুরকে কেন ধরেছি? একটা হ'লো ঠাকুর তোমাকে ভালো লাগে তাই তোমাকে ধরেছি, আর একটা হ'লো তোমার মতো হবো ব'লে তোমাকে ধরেছি।"
আচার্যদেব নিজের জীবন দিয়ে আচরণ ক'রে ক'রে আমাদের প্রতিমুহূর্তে শেখাচ্ছেন কেমন ক'রে ঠাকুরের মতো হ'য়ে উঠবো। আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে দেখলে আজ কোটি কোটি সৎসঙ্গী ঠাকুরকে জীবন্ত অনুভব করে; তাঁর মধ্যে ঠাকুরকে দেখতে না পাওয়ার স্বাদ পূরণ করে। আচার্য পরম্পরা না থাকলে এবং আচার্যদেব আমাদের সামনে না থাকলে আজ ঠাকুর তাঁর তামাম বইয়ের মধ্যে হারিয়ে যেতো। লাইব্রেরীতে বইয়ের তাকে, ঘরের ড্রয়িং রুমের আলমারিতে, শো কেসে, টেবিলে, আনাচে কানাচে যত্রতত্র পড়ে থাকতো বইগুলি অবহেলায় ধুলোয় ঢেকে। এখন আর বই পড়ার ধৈর্য্য, অভ্যাস বা সময় কারোও নেই। আমাদের ভাগ্য ভালো এবার দয়াল ঠাকুর দয়া ক'রে তাঁর ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান রেখে গেছেন বিশ্বের সামনে! ঠাকুরের বাণীগুলি আমরা আচার্য পরম্পরায় আচার্যদেবের মধ্যে জীবন্ত দেখতে পায়। আচার্যদেব যেন ঠাকুরের চলমান বাণী! তাঁর কাছ থেকে জেনে নিই ঠাকুরের হাজার হাজার ছড়া, বাণী, সত্যানুসরণের অন্তর্নিহিত অর্থ। আজ আচার্যদেব না থাকলে আমরা কোটি কোটি সৎসঙ্গীরা মন্দিরে মন্দিরে পারস্পরিক কলহে জড়িয়ে ছিন্নভিন্ন হ'য়ে যেতাম। আচার্যদেব না থাকলে পোঙ্গা পন্ডিতদের দ্বারা ঠাকুরের বাণীর ভুল ব্যাখ্যা তামাম সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতো, ভুল পথে চালিত করতো। আচার্যদেব না থাকলে আজ আমরা না বুঝে, না জেনে লক্ষী ছাড়া নারায়ণ নিয়ে মেতে থাকতাম। আচার্যদেব না থাকলে আজ দেওঘর শ্মশান হ'য়ে থাকতো। ট্যুরিষ্ট স্পটের মতো ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের উপস্থিতি ছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার উৎসব অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের পদধূলি পড়তো না। সারা দেশ তথা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ রোগ শোক অভাব অনটন নানা সমস্যায় জর্জরিত দিশেহারা সৎসঙ্গীকুল উদভ্রান্তের মতো সমাধানের আশায়, মুক্তির আশায় ছুটে আসার কোনও জায়গা পেতো না।
আচার্য পরম্পরার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন শ্রীশ্রীঠাকুরের "এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়া" বাণী! আজ আমরা বুঝতে পারছি আচার্যদেবকে দেখে। আচার্যদেব না থাকলে, আচার্য পরম্পরা না থাকলে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই অমোঘ বাণী আজ মূর্ত হ'য়ে উঠতে পারতো না। আজ সৎসঙ্গ জগতে সৎসঙ্গ পরিবারের বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গী আচার্যদেবের এক আদেশে শৃঙ্খলার সঙ্গে যে কোনও কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। তিনি নিজে আচরণের মাধ্যমে আমাদের ইষ্টের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার তুক শেখাচ্ছেন। শত্রুমিত্র সবাইকে ভালোবাসতে শেখাচ্ছেন।
ইষ্টের সঙ্গে শত হাজার কোলাহলের মাঝে একাত্ম কি ক'রে হওয়া যায় সেই প্রসঙ্গে একদিন আমায় বললেন,
"আমার এখানে চারিদিকে কত মানুষ আছে। আমি যদি সবার দিকে সবার কথায় মাথা ঘামায় তবে দশবার জন্ম নিলেও আমি ঠাকুরের কাজ করতে পারবো না। আপনাকে অর্জুনের মতো হ'তে হবে, লক্ষ্যভেদের দিকে নজর রাখতে হবে" ইত্যাদি আরো অনেক কথা।
শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে আচার্য পরম্পরায় প্রকট হ'য়ে উঠছেন ক্রমশঃ। শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে রূপে, গুণে, রসে আজ উদ্ভাসিত, বিদ্যমান! শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই বলতেন,
এইবার করিবো লীলা অতি চমৎকার!
আমিই বুঝিতে নারি অন্যে কি বা ছাড়।"
সত্যি সত্যিই লীলা হ'য়ে চলেছে দেওঘরের বুকে! পিতাপুত্রের লীলা। আচার্য পরম্পরার লীলা। সেই লীলা যে দেখেছে সেই মজেছে! মজেছে আচার্যদেবের মাঝে শ্রীশ্রীঠাকুরের সেই ভুবনভোলানো রূপে, অসীম গুণে, টইটম্বুর রসে!
প্রবি।
( লেখা ১৭ই ডীসেম্বর'২০২২ )

দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র ও আচার্য পরম্পরা। (৩)

(পরবর্তী অংশ)

আর এই একই শিক্ষা আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা দিয়ে গেছিলেন তাঁরই জেষ্ঠ্যাত্মজ পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদাকে। আর তা সযত্নে নিজের জীবনে বহন ক'রে ৮৯বছর ধ'রে আচরণের মধ্যে দিয়ে একই শিক্ষা আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন শত্রুমিত্র সবাইকে বুকে টেনে নিয়ে ইষ্টকর্মে এগিয়ে যেতে। তিনি আমাদের সময় নষ্ট না করতে বারবার অনুরোধ করেছেন। মিথ্যে প্রবন্ধে আর ঘুমিয়ে থাকতে বারণ করেছেন। জেগে ওঠার আহবান জানিয়ে আমাদের সাবধান করেছেন শেষের সেদিন ভয়ংকর ব'লে। দুঃখ কষ্টের হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিতে দয়াল প্রভু তমসার পার থেকে আবির্ভুত হয়েছেন ভোরের সূর্যের মতন আমাদের জন্য আর তাই আমরা যেন জেগে উঠি ব'লে বারবার তিনি আমাদের জনে জনে ডেকে বলেছেন। 'দয়াল এসেছেন, আর ভয় নেই, আর ভয় নেই' ব'লে সবাইকে সাহস যুগিয়েছেন, আশা জাগিয়েছেন, ভরসা দিয়েছেন আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা নিজের জীবনের প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে আচরণের মধ্যে দিয়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের প্রাণে প্রাণে। সমাজের দিকে দিকে বিশ্বজুড়ে যে ঘোর কলিযুগের অনাচার, অত্যাচারের ঘন অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে প্রভুর আগমনে সেই অন্ধকার দূর হ'য়ে সূর্য উঠছে তা চোখ মেলে দেখবার জন্য আমাদের ব'লে গেছেন, বলেছেন আমরা মুক্তি পথের যাত্রী। আমাদের আর সময় নষ্ট করার সময় নেই। বিবাদ বিসম্বাদ ভুলে আমাদের এখন এগিয়ে চলার সময়। দয়াল এবার এসেছেন, আর আমাদের পথ হারানোর ভয় নেই, দয়াল এবার নিজে বিবর্ধনের পথ দেখাবার জন্য এসেছেন; সেই পথ অমৃতময় পথ! আর কিসের ভয়!? তিনি নিজে আচরণ ক'রে ব'লেছেন, সেই অমৃতময় পথে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে এক হ'য়ে চলতে হবে দয়ালের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। আমরা যে নানারকমের বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি, বন্দী হ'য়ে আছি বৃত্তি-প্রবৃত্তির নাগপাশে সেই নাগপাশের বন্দীদশা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দেবে সেই অমৃতময় চলন। সেই অমৃতময় চলন তিনি নিজে আচরণ ক'রে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন বিশ্বের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের। সেই চলন, সেই আচরণ যে দেখেছে কাছ থেকে সে জানে, যে মিশেছে তাঁর সঙ্গে সে জানে, যে কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে সে জানে। সেই অমৃতময় চলনের স্পর্শে কত শত প্রাণ যে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয়, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পেয়েছে তার হিসেব নেই, নেই লেখাজোকা। বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে ভেদ ক'রে দয়ালের প্রতি যে প্রেম, যে ভালোবাসা সেই প্রেম, সেই ভালোবাসা দিয়ে শত্রুমিত্র সবার হৃদয়কে, সবার অস্তিত্বকে ভাসিয়ে দেওয়ার ব্রতে নিমজ্জিত হ'তে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আকুল হৃদয়ে আমাদের ব'লে গেছেন। তিনি সৎসঙ্গীদের আচার্যদেব। তাই তিনি আমাদের দয়ালের প্রতি আকুল হ'য়ে সবাইকে নিয়ে ইষ্টপ্রতিষ্ঠার কাজে একসাথে চলতে বলেছেন। আর ভববন্ধন থেকে মুক্তি ব'লে যদি কিছু থাকে এইখানেই মুক্তি আছে ব'লে তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আচার্যদেবের কাছে আমরা প্রতিমুহূর্তে সৎসঙ্গীরা এই শিক্ষা পেয়েছি।
এমনিভাবে ৮৯বছর জুড়ে তিনি আমাদের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের সামনে দয়ালকে ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন ভালোবাসার আচরণের উদাহরণ হ'য়ে দাঁড়িয়েছেন। অবহেলায় সময় নষ্ট না ক'রে দয়ালের অভয় চরণ ধ'রে এগিয়ে চলার যে উদাহরণ আচার্যদেব আচরণ ক'রে সৃষ্টি ক'রে গেলেন তা ইতিহাসের বুকে অমর হ'য়ে থাকবে। বিশ্বজুড়ে কর্মের প্লাবন বইয়ে দিয়েছেন আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা। ৮৫বছর বয়সে তিনি সারা দেশের ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীদের ইষ্টকর্মে উদ্বুদ্ধ করতে ভারতবর্ষের সমস্ত কেন্দ্রে দীর্ঘপথ গাড়িতে ক'রে কঠিন যাত্রা করেছেন আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ব্যবস্থা করা প্লেন যাত্রাকে উপেক্ষা করে। যাত্রাপথে তিনি সমস্ত কেন্দ্র মন্দির পরিদর্শন করেছেন, সৎসঙ্গী কর্মীদের সাথে দেখা করেছেন, গল্প করেছেন, সবার সুখদুঃখের খোঁজ নিয়েছেন, ইষ্টকাজে উৎসাহিত করেছেন আবার এগিয়ে গেছেন ক্লান্তিহীন শ্রান্তিহীন পরবর্তী লক্ষ্যপথের উদ্দেশ্যে। বার্ধ্যকে এসেও ইষ্টপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ এক রহস্যময় যৌবন যাত্রা! যা অনুপ্রাণিত করেছে কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে বিশ্বজুড়ে! ইষ্টপ্রতিষ্ঠার পথে এ এক আচরণসিদ্ধ প্রচেষ্টার রক্তিম ইতিহাস! আমাদের উৎসাহিত করতে, উত্তেজনায় টগবগ ক'রে ফুটতে কত অজস্র গান রচনা করেছেন তিনি, দিয়েছেন সুর! তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'শেষের সেদিন ভয়ংকর' আমাদের রক্তে, বোধে চেতনার প্লাবন আনে। আমাদের ঠিক-ভুল, সত্য-মিথ্যা, নকল-আসল আচরণ করতে ও ধরতে শিখিয়েছেন। তাই তিনি আমাদের আচার্যদেব!
একবার শৈশবে রাস্তার ধারে খেলা করার সময় শ্রীশ্রীদাদাকে দেখিয়ে কেষ্টদাকে বলেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর, "কেষ্টদা আমার সৎসঙ্গের প্রকৃত আন্দোলন শুরু হবে আমার তৃতীয় পুরুষ (3rd Generation) থেকে।" দিকে দিকে প্রাণে প্রাণে সে আন্দোলন সত্য হ'য়ে ফুটে উঠেছে আজ বিশ্বজুড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই আচরণসর্ব্বস্ব নীরব আন্দোলন যে না দেখেছে, যে না অনুভব করেছে বা করছে, যে উপলব্ধি করেনি তার মতো দুর্ভাগ্য আর নেই। শ্রীশ্রীদাদা আচরণসিদ্ধ পুরুষ। তাই তিনি আচার্য।
প্রবি।
ক্রমশঃ
( লেখা ১৬ই ডিসেম্বর'২০২২ )

দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র ও আচার্য পরম্পরা। (২)

(পরবর্তী অংশ)
শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান আদরের বড়খোকা পরম ভক্ত সৎসঙ্গীদের চোখের মণি সকলের আদরের শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী সৎসঙ্গের আচার্যদেব। শ্রীশ্রীবড়দার মহাপ্রয়ানের পর আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীদাদার মহাপ্রয়ানের পর বিশ্বজুড়ে সকল কোটি কোটি সৎসঙ্গীর প্রাণভোমরা শ্রীশ্রীবাবাইদাদা বর্তমান সৎসঙ্গের আচার্যদেব। আর এইভাবেই আচার্য পরম্পরা চলবে আগামী দশ হাজার বছর কিম্বা যতদিন না তিনি আবার আসছেন ততদিন পর্যন্ত।
শ্রীশ্রীঠাকুরই যে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে পরমপিতা পুরুষোত্তম, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে সদ্গুরু, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে পরমাত্মা আর বাকী সব জীবাত্মা, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে ঈশ্বর, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে নারায়ণ, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে অবতারী পুরুষ, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে এক ও একমাত্র আরাধ্য, শ্রীশ্রীঠাকুরই যে রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের নবরূপ এইসমস্ত কিছু নিজের জীবন দিয়ে আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা হাতে কলমে ক'রে করিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন, শিখিয়েছেন নিখুঁত আচরণের মধ্যে দিয়ে। শ্রীশ্রীআচার্যদেব সারা জীবন কঠিন কঠোর তীব্র অসহ্য জ্বালা যন্ত্রণাময় করার স্রোতের মধ্যে দিয়ে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। নিজে আচরণ ক'রে ক'রে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন যে শ্রীশ্রীঠাকুরই জীবন্ত ঈশ্বর, বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক, সৃষ্টিকর্তা আর নিজের জীবন দিয়ে প্রতিমুহূর্তে আচরণ ক'রে হাতে কলমে ক'রে করিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন কেমন ক'রে তাঁকে ভালোবাসবো, কেমন ক'রে তাঁকে মাথায় নিয়ে চলবো, কেমন ক'রে শয়নে স্বপনে জাগরণে শ্রীশ্রীঠাকুরকে জীবন সর্বস্ব ক'রে চলবো। শ্রীশ্রীআচার্যদেব বড়দা হ'লেন লিভিং ডেমোনেষ্ট্রেটর অফ লাভ টু ঠাকুর! আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন জীবন্ত সত্যানুসরণ! শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর জীবন্ত চলমান রূপ! শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর।
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী "
ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা,
ডাকলে তুমি কাছে আসো নইলে থাকো দূরেই খাড়া।----এই বাণীর জীবন্ত জ্বলন্ত রূপ হ'লেন আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা। যে যে নামেই তাঁকে সম্বোধন করুক না কেন তিনি সবসময় নিজেকে ঠাকুরের কুকুর ব'লে মনে করতেন। তিনি বলতেন, তোরা আমাকে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীপিতৃদেব যে নামেই ডাক না কেন আমি হলাম ঠাকুরের কুকুর।
কেমন ক'রে ঠাকুরকে ভালোবাসবো, কেমন ক'রে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে সবসময় ঠাকুরময় হ'য়ে থাকবো, কেমন ক'রে শত হাজার বাধা বিপত্তি ঝড়ঝঞ্ঝা ষড়যন্ত্র, শয়তানী ইত্যাদির মধ্যেও পাহাড়ের মতো অবিচল অটল হ'য়ে কঠোর কোমল রূপে দাঁড়িয়ে থাকবো শত্রুমিত্র সকলকে বুকে স্থান দিয়ে ঠাকুরকে খুশী করবার তীব্র তাগিদে তা আচরণ ক'রে ক'রে দেখিয়েছেন তিনি আমাদের, শিখিয়ে গেছেন জীবনভর অসহ্য কষ্ট যন্ত্রণা বুকে নিয়ে নীরবে। তিনি আচরণসিদ্ধ পুরুষ আর তাই তিনি আচার্য।
আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন সৎসঙ্গের প্রথম আচার্য।
প্রবি।
ক্রমশঃ
( লেখা ১৬ই ডিসেম্বর'২০২২)

দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র ও আচার্য পরম্পরা। (১)

পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বিশ্বের বিস্ময়ের বিস্ময় মহাবিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়! শ্রীশ্রীঠাকুর অসীম বিশ্বব্রহ্মান্ডের যাবতীয় যা কিছুর সসীম হ'য়ে রক্তমাংসের সীমার মাঝে স্থান নিয়ে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি ঈশ্বরের মহিমা বর্ণনা করার সময় শুধু কথার স্রোতে ভাসেননি। করার স্রোতে ভাসতে ভাসতে তিনি কথার স্রোত বইয়েছেন। তিনি যা করেছেন তাই বলেছেন, তিনি যা করেননি কখনও তা তিনি বলেননি। তাঁর কথা করা কথা ও করার কথা। তাঁর ২৫হাজার বাণী ও সমস্ত কথোপকথনের মূর্ত রূপ স্বয়ং তিনি ! তাঁর ৮১বছরের জীবনে প্রতিদিনের জীবন চলনায় তাঁর ব'লে যাওয়া সমস্ত কথা, বাণীর প্রতিফলন ঘটেছে! তাই এবারে তাঁর রূপ পূর্ণিমার চাঁদের রূপ! তাঁর এবারের রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের ব'লে যাওয়া "পূর্ণজ্ঞান দিলাম না, খুব শিগগিরি আসছি"-র পূর্ণজ্ঞানের রূপ!
আর, আচার্যদেব কে? কেন তিনি আচার্য? কেন আচার্য পরম্পরা?
প্রবি।
ক্রমশঃ

প্রবন্ধঃ মিলনের আবেদন ও বাস্তব।

একটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগল। ভাঙ্গনের যাবতীয় কারণ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরী হয়েছিল আজ থেকে ৫৪বছর আগে সেই সমস্ত যাবতীয় বিতর্ক একপাশে সরিয়ে রেখে মিলনের জন্য আকুল আবেদন।

লেখাটার মধ্যে মিলনের একটা সহজ সরল ভাব, আকুতি ও আবেগ লক্ষ্য করলাম। ভাবলাম ভাব, আকুতি ও আবেগ ভাল কিন্তু ভেসে যাওয়া ভাল নয়। মিলনের উদ্যোগ কে নেয়? কার নেওয়া উচিত? ভাঙ্গনকারীকেই উদ্যোগ নিতে হয় জোড়া লাগাবার জন্য। তাই না?
তাই ভাঙ্গন ধরাবার আগে সতর্ক থাকতে হয়। কথায় আছে বলার আগে ও করার আগে ভেবে ব'লো ও ক'রো। ভাবিয়া বলিও বা করিও কথা বা কাজ, বলিয়া বা করিয়া আর ভাবিও না। আগুন জ্বালানো সহজ কিন্তু দাবানলের সৃষ্টি হ'লে তা নেভানো কঠিন। তখন সুযোগসন্ধানীরা সেই সুযোগ নেয়। এই অস্থির সময়ে বন্ধু সেজে ঢূকে পড়ে অন্দরমহলে আর ভেতরে ভেতরে খোকলা ক'রে দেয় অন্তরমহল। কান দিয়ে ঢুকে একেবারে খাদ্যনালীতে পৌঁছে গিয়ে বিষ ঢেলে বিষাক্ত ক'রে নষ্ট ক'রে দেয় পেটের যাবতীয় কলকব্জা। হজম শক্তি নিঃশেষ ক'রে দেয় চিরতরে। অন্দরমহলে ঢুকে গিয়ে জ্বালানি ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র যাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সহজেই। তাই সতর্ক থাকতে হয় প্রতিদিন প্রতিরাত প্রতিক্ষণে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে।

এবার প্রশ্ন,
বিতর্কিত বিষয় গুলি কি ক'রে সরিয়ে রেখে একসঙ্গে কাজ করবো? বিতর্কিত বিষয় সরিয়ে রেখে শিয়া সুন্নি, মহাযান হিনযান, ক্যাথলিক প্রোটেষ্ট্যান্ট ইত্যাদি মতাবলম্বীরা একসঙ্গে কাজ করতে পেরেছে বা পারছে? দু'টো মাথা দুটো মত একসঙ্গে কাজ করবে কি ক'রে? কে কার মতকে সরিয়ে রেখে কে কার মতকে নিয়ে কাজ করবে? মত মাথাতে তো এক হ'তে হবে কাজ করতে গেলে তাই নয় কি? শ্রীশ্রীঠাকুর কি বললেন,
"মত মাথাতে একই হ'য়ে দু'টি লোকও ইষ্টনেশায়
চলে যদি দক্ষ তালে রুখবে কে তায় ভরদুনিয়ায়?

এখানে কোন মত, কার মতকে সামনে রেখে দু'টি লোক এক হবে?
শ্রীশ্রীঠাকুর আবার বললেন,
এক আদেশে চলে যারা
তাদের নিয়ে সমাজ গড়া।

এখানে দু'টো, তিনটে দলের সমষ্টি লোকজন কোন দলের কার আদেশ মেনে নেবে? তিনটে দলের মধ্যে আদেশ দানের ক্ষেত্রে কে প্রধান হবে?

আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
আদর্শকে ঘায়েল ক'রে চুক্তি রফায় বাধতে দল
যতই যাবি পড়বি ঘোরে হাতে হাতেই দেখবি ফল।
এখানে তিনটে দলের প্রত্যেকেই মনে করে তাদের একটা আদর্শ আছে। একটা আদর্শকে মাথায় নিয়ে তারা চলছে। কিসের উদ্দেশ্যে চুক্তি রফার ভিত্তিতে তারা দল বাধবে? দল বাধতে গেলেই আদর্শ ঘায়েল হবে না? আর এর ফলে কি হবে তা তো শ্রীশ্রীঠাকুর আগাম বলেই দিয়েছেন তবুও দল বাধতে কেন যাবে?

যাই হ'ক কেউ বৃহত্তর স্বার্থে স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে শত যোজন দূর। বাস্তব বড় কঠিন। তার ওপর যখন এক তরফ থেকে অন্য তরফের প্রতি বিরামহীন মিথ্যা ও কুৎসা প্রচার এবংগালাগালি, নিন্দা, অপমান, অশ্রদ্ধা প্রদর্শন চলতেই থাকে তখন এইসমস্ত অসার স্বপ্ন দর্শন আর মুঠো ক'রে বালি ধ'রে রাখা সমার্থক।
তাই অসহায় আমি বলি, যাদের ঠাকুরের কৃষ্টিকে নিখুঁত আচরণে বহন ক'রে নিয়ে যাবার কথা ছিল, ছিল প্রধান ভূমিকা তারা যখন বহন করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন ঠাকুরের বাণী," বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপন হাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার ওপর ন্যস্ত করো, ভাল হবে।

আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী
"তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য ক'রতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ ক'রো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে"

আমৃত্যু অনুসরণ ক'রে চলতে চাই এই বাণী। শ্রীশ্রীবড়দা তাঁর নিজের ওপর প্রিয়জনদের কাছ থেকে ক্রমাগত হ'য়ে চলা অনেক সীমাহীন অন্যায় সহ্য করেছেন মুখ বুজে, কোনওদিন প্রতিরোধ করেননি, টুঁ শব্দট পর্যন্ত করেননি। ধ্যানস্থ থেকেছেন ঠাকুরের ইচ্ছাপূরণে, ঠাকুরের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-কে চোখের মণির মতো অতন্দ্র প্রহরী সেজে রক্ষা করতে। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে স্থুল শরীরে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন মুখ বুজে সমস্ত সহ্য ক'রে প্রতিকূল পরিস্থিতি পরিবেশে মাথা ঠান্ডা রেখে ধীর স্থির হ'য়ে শান্ত চিত্তে দৃঢ পদক্ষেপে মাথা উঁচু ক'রে অজুর্নের মতো নিখুঁত লক্ষ্যে ধ্যনস্থ হ'য়ে অবিচল ভাবে ঠাকুরের ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে যাওয়ার এক অভুতপূর্ব আচরণসিদ্ধ শিক্ষার নমুনা! সেই একই শিক্ষার উত্তরসূরি হ'য়ে শ্রীদাদাও মুখ বুঝে চিরদিন আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে হ'য়ে চলা সীমাহীন জঘন্য প্রচার, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপমান, অশ্রদ্ধা সব সহ্য ক'রে আমাদের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছেন। তবুও কুৎসাকারীদের প্রতি একটাও শব্দ খরচ করেননি। অকারণ একবুক যন্ত্রণা নিয়ে এ পৃথিবী থেকে চলে গেছেন নিজের কাজ ক'রে নীরবে, নিঃশব্দে হাসি মুখে আনন্দকে সাথী ক'রে পরমপিতার ওপর সব কিছু ন্যস্ত ক'রে দিয়ে।

আর আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি শান্ত, ধীর, স্থির বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে। তিনি আমাকে একবার বলেছিলেন, "শ্রীশ্রীঠাকুরকে যখন চিরকাল নাজেহাল হ'তে হয়েছে আর আমরা তাঁর সন্তান হ'য়ে নাজেহাল হবো না?

কি সহজ সরল অকপট উক্তি!!!!! জয়গুরু।
প্রবি।
( লেখা ২৮শে ডিসেম্বর'২০২২)

উপলব্ধিঃ চাওয়া পাওয়া।

স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটা, মিছিলের প্রতিকুলে হাঁটা যে কি কঠিন তা একমাত্র ভুক্তভোগী মাত্রেই জানে। আর তা জীবনের সর্বক্ষেত্রেই। ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই। আর এখানেই সংঘাত।

এই সংঘাতময় জীবন নিয়েই পথ চলা।
প্রতারণার মুখোমুখি আমরা তখনই হই, আঘাত পাই যখন আমরা ভালোবাসার মহাসমুদ্র, প্রেমের আধার ঈশ্বরের মূর্ত রূপ জীবন্ত রক্তমাংসের পরমাত্মাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে বা অন্য কিছু জড়িয়ে নিয়ে বাঁচতে চাই। কাউকে প্রত্যাশাহীন আঁকড়ে ধরা তখনি সম্ভব হয় যখন আমরা পরম দয়ালকে প্রত্যাশাহীন ভালোবাসি। তবে আমার উপলব্ধি আমার নিজের জন্য; তাঁর কাছে কোনও আশা প্রত্যাশা বা চাওয়া পাওয়া নেই, কোনোদিন ছিলও না। তাই জীবনে চরম আঘাত, অপমান ছাড়া কোনোদিনও জাগতিক কিছুই পাইনি। স্রোতের বিরুদ্ধে, মিছিলের প্রতিকুলে হাঁটতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত পদযুগল। তবুও হেঁটে চলেছি।

আশা প্রত্যাশা, চাওয়া পাওয়া ছিল। হ্যাঁ ছিল, নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সেই যেদিন থেকে এই আশা প্রত্যাশা, চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারটা বোধের ঘরে ধরা পড়েছিল সেদিন থেকে আশা প্রত্যাশা, চাওয়া পাওয়া যা কিছু ছিল সব অন্যের জন্য ছিল; নিজের জন্য কোনওদিনই কিছু ছিল না। তবে জীবনে যখনই চরম কঠিন কষ্টের মধ্যে পড়ে বিষম হাবুডুবু খেয়েছি তখন দেখেছি একটা অদৃশ্য হাত এসে সামনে উপস্থিত হয়েছে। উদ্ধার পেয়েছি। অলৌকিকভাবে উদ্ধার পেয়েছি! যার ব্যাখ্যা জীবনের মহাসমুদ্রে নেই। সেটাকে চাওয়া পাওয়া বা আশা প্রত্যাশা বলা যেতে পারে। কিন্তু ঐ বিষম কষ্ট ভুলতে চাই কিন্তু পারি না। তাই দয়ালের কাছে প্রার্থনা জানাই আর যেন ঐ অসহ্য কষ্ট বাকী জীবনে না পাই এবং অন্য কেউ না পায়। এটাও হয়তো আমার চাওয়া বা আশা প্রত্যাশা।

আর, অর্থ-মান-যশ ইত্যাদি জীবনে কোওদিনই পাইনি কিন্তু অন্যের জন্য যখনই দয়ালের চরণে প্রার্থনা করেছি বিশ্বের নবম আশ্চর্যের মতো তা পূরণ হ'তে দেখেছি! দু'চোখ ভ'রে জল এসেছে। এই-ই ছিল আমার জীবনের চরম পরম চাওয়া পাওয়া, আশা প্রত্যাশা। প্রার্থনায় অন্যের দুঃখ কষ্ট সমস্যা দুর হ'তে দেখে আনন্দ হয়েছে, দয়ালের মায়াময় চোখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে নীরবে একাকি ডুবে গেছি অনাবিল আনন্দে। কাউকে বলতে পারিনি, পারিনি শেয়ার করতে। আজও সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে।

এছাড়া আর আমি কোনওদিন কিছু চাইনি আর পাইওনি দয়ালের কাছে।
প্রবি।

কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটি ২

চারদিকে যা চলছে তা কবিগুরুর দেখানো পথেই চলছে। তাঁর কথায় বলতে পারি,
"আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে।"
কবিগুরুর একনিষ্ঠ ভক্ত শিষ্য বলেই না তাঁর কথা মেনে চ'লে বিষ পান ক'রে আনন্দে গেয়ে উঠি,
"আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান
প্রাণেরও আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ
আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান।"
একেই বলে কোয়ান্টিটি মা কোয়ান্টিটি! আর কোয়ালিটি দাদা কোয়ালিটিই। ঠাকুরই তো বলেছেন দোয়ারে দীক্ষা দিতে, বাকীটা ঠাকুর বুঝে নেবেন। কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটিতে উদ্ভিন্ন হ'তে সময় লাগবে বৈকি! কি আর করা যাবে? তাই অন্যের চরকায় তেল না দিয়ে নিজের চরকায় নিজে তেল দাও না বাবা; তাইলেই তো হয়। নিজের চরকা যে তেলের অভাবে জং পড়ে ঝুরঝুরে হ'য়ে ঝ'রে পড়ে যাচ্ছে সেদিকে একটু নজর দাও না বাবা তাহ'লে যে চরকাটা বেঁচে যায়; তাই নয় কি? যার যা ইচ্ছা তাই করুক। যার যাকে ভালো লাগে লাগুক। ঠাকুর ছেড়ে যার যার প্রতি প্রেম জাগে জাগুক।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"বাসতে ভাল এসেরে তুই বাসলি ভাল কা'রে,
প্রতিদানেও তাই পাবি তুই মজলি নিয়ে যারে।"
এই দৃশ্য আমরা হামেশাই দেখতে পাই মন্দিরে মন্দিরে।
যাই হ'ক, শ্রীশ্রীআচার্যদেব বললেন, "প্রদীপের নীচে অন্ধকার থাকে থাকুক। সেইটা প্রদীপের অন্ধকার; শিখার নয়। শিখা আলো দেখাচ্ছে সামনে।" প্রদীপের নীচের অন্ধকার তো আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য প্রদীপের আলো। সেই আলো সামনে আলোকিত ক'রে পথ দেখাচ্ছে। যার ইচ্ছা সেই আলো দেখে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে আর যার প্রদীপের নীচের অন্ধকারের দিকে লক্ষ্য সে সেই অন্ধকারে গহীন গহ্বরে ডুবে যাবে। তাঁর শেষের সেদিন ভয়ংকর অন্ধকার। দয়ালের ভয়াল রূপের বিরাশী সিক্কার এক বিশাল থাপ্পড় অপেক্ষা করছে তার জন্য। তাই ওসব দেখাদেখি ছেড়ে আসুন ততক্ষণ দেখি নিজেকে কোয়ালিটি সৎসঙ্গী ক'রে তুলতে পারি নাকি। একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েন দাদা ও মায়েরা।
শ্রীশ্রীদাদার লিখে যাওয়া গানের কথা স্মরণ ক'রে লেখা শেষ করছি।
শ্রীশ্রীদাদা বললেন,
"ওরা যা বলে বলুক, ওরা যা করে করুক
তোমার পথে চরণ আমার টলবে না।" ---প্রবি।


Thursday, December 29, 2022

ফিরে দেখা ২০২০ (২)

ফিরে দেখা ২০২০ (১)-তে লিখেছিলাম বর্তমানে আমি কোন প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে আছি? এবং কিসে আমার সময় কাটে?

এখন আমার সমস্ত সময় কাটে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট বিস্ময় ও সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবন দর্শন ও তাঁর মিশন নিয়ে। একেবারে সেই ছোটোবেলা থেকে আজ পর্যন্ত বহু বিষয়ের উপর দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে চলেছি আর দেখেছি যা যা ছবি, যে যে ঘটনার হয়েছি মুখোমুখি, লাভ করেছি যে তিক্ত অভিজ্ঞতা, হয়েছে উপলব্ধি সেই একই রকম ভাবে পুরুষোত্তমের জীবন দর্শন বুঝতে বুঝতে ও তাঁর মিশন নিয়ে চলতে চলতে দেখেছি সেই একই ভয়ংকর অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামির জবরদস্ত নোংরা ছবির হয়েছি মুখোমুখি, লাভ করেছি তিক্ত অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি হয়েছে নানা নয় ছয়ের মাদারি কা খেল! দেখেছি কি অবলীলায় অবহেলায় একে অপরের প্রতি অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি, নেমকহারামির নোংরা তাস খেলতে! দেখেছি আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠার লোভে সহজ সরল সাধারণ গুরুভাইবোনের সঙ্গে তাদের সহজতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে অকৃতজ্ঞ, বেঈমান, নেমকহারামদের অনায়াস অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি, নেমকহারামি! আর এর জন্যে অবশ্যই সহজ সরল গুরুভাইবোনেরাও দায়ী। তাদের দুর্বলতা তারা কিছু বলতে ভয় পায়। অনেক গুরুভাইবোন আছে 'আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার! বহু সহজ সরল বেকুব গুরুভাইবোন উদার মানসিকতার ভঙ্গীতে "বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপন হাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভালো হবে" বাণীর একনিষ্ঠ পূজারী! এই বাণীকে সামনে রেখে নিরাপদে সৎসঙ্গ জগত ভ্রমণ করে! এরা নাকি শান্তশিষ্ট খুব ভালো মনের মানুষ; ঝামেলা টামেলা পছন্দ করে না। আবার অনেক গুরুভাইবোন এই বাণীর অজুহাতে জেনেশুনে অন্যায়কারীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব থাকে শুধু তাকে খুশি করার জন্যে! আর বেশীরভাগ না ঘরকা, না ঘাটকা; তারা ঝোলের লাউ অম্বলের কদু সমান! তারা ধর্মেও আছে আবার জিরাফেও আছে! এরা এতসব ঠাকুর দর্শনের গভীরতার ধার ধারে না। বাপ ঠাকুরদা, মা ঠাকুমার আমল থেকে শুনে এসেছে গুরু একটা ধরতে হয় তাই তারা পারের কড়ি হিসাবে গুরু ধরেছে। কিম্বা সাত ঘাটের জল খেয়ে দিনশেষে দিনগত পাপ ক্ষয় করতে বিধ্বস্ত শরীরে-মনে এসেছে একটু শান্তি খুঁজে পেতে। তারা ঠাকুরের ওইসব দর্শন টরশন বোঝে না; ঠাকুর কেন এসেছেন তা তারা জানার, বোঝার, শোনার ধার ধারে না। ঠাকুরের মিশন ফিশন জানে না, জানার চেষ্টা করে না। আর বই টই ওসব ফালতু কথা, অত সময় নেই যে পড়াশুনা করবে। সারাজীবন পড়াশুনার ধারে কাছে গেলাম না, পড়াশুনার সুযোগ পেলেও বৃত্তি-প্রবৃত্তির বিশৃঙ্খল টানাপোড়েনে পড়াশুনা করা হ'লো না, আর পড়াশুনা করলেও ওসব ঠাকুরের বইটই পড়ার সময় ও ধৈর্য নেই। আর এইসব অবগুণের সুযোগ নিয়ে অকৃতজ্ঞ, বেঈমান আর নেমকহারাম ধান্দাবাজরা যারা ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে অর্থ, মান, যশ কামানোর জন্য এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার ও আত্মস্বার্থ প্রতিষ্ঠার দোকান খুলে বসেছে তারা নির্দ্বিধায় অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামির ব্লেড চালায় সহজ সরল বেকুব সাদাসিধে গুরুভাইবোনের সরলতার সুযোগ নিয়ে। এরা, এইসমস্ত মানসিকতার ভন্ড ধান্দাবাজ সুযোগসন্ধানী কপট ভক্তমন্ডলী ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে, মন্দিরে মন্দিরে ভাবের ঘুঘু হ'য়ে ভক্ত সেজে! আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠার নেশায় এরা বদ্ধ পাগল, উন্মাদ। এরা এখন দিকে দিকে কেন্দ্র-মন্দিরে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে আমি-আমি , আমি প্রধান, আমি প্রধান কলরবে ব্যস্ত! অথচ ২০২০ কি শিক্ষা দিয়ে গেল!? কে শিক্ষা দিয়ে গেল!? কাকে শিক্ষা দিয়ে গেল!?
পরবর্তী 'ফিরে দেখা ২০২০ (৩)'-এ চলুন দেখা যাক কি, কে, কাকে শিক্ষা দিয়ে গেল।
ক্রমশঃ
( লেখা ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ )

ফিরে দেখা ২০২০ (১)

এখন রাত দুটো। ২৯শে ডিসেম্বর'২০, আজ বুধবার। বিষময় দু'হাজার বিশ শেষ হ'তে আজ নিয়ে আর তিনদিন বাকী। চোখে ঘুম আসছে না। চারপাশ নিস্তব্ধ, নিঝুম! বাড়ির সবাই স্বাভাবিক নিয়মেই গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে। আমি আছি বসে নিরালায় নিভৃতে জমাট বাঁধা আঁধার রাতে ঘরে একাকি। নিস্তব্ধ নিথর অন্ধকার মধ্য রাত আমায় জানান দেয় বিষময় দু'হাজার বিশের ভয়াবহ দিনগুলি ফিরে দেখার। বিশ্বজুড়ে করোনার ভয়াবহতা গোটা বছরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দ বানিয়ে দিলেও নিজের ব্যক্তিগত জীবনে এই ভয়াবহতার কোনও টের পাইনি! মাঝে একবার জ্বর হয়েছিল আর স্বাভাবিক নিয়মেই তা কয়েকদিন থাকার পর জ্বর কমার ওষুধ সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক আর ভিটামিন খেয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আজ রাতদুপুরে একাকি নামমাত্র নাইট ল্যাম্প জ্বলা নিরালা নিঝুম অন্ধকার ঘরে ঠাকুরের ফটোর সামনে বসে চলে যাওয়া বিষময় দিনগুলি ভেসে উঠলো একে একে; মন চলে গেল ফিরে দেখার দেশে। ভেসে উঠলো চোখের সামনে তিন মূর্তি! বেঈমান, নেমকহারাম আর অকৃতজ্ঞ!!! মনে হ'লো,
অকৃতজ্ঞ, বেঈমান আর নেমকহারাম কি হওয়া যায়? নাকি অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামি রক্ত বাহিত মারণ রোগের জীবাণু!? অকৃতজ্ঞ-বেইমান-নেমকহারাম কি জন্মভ্রস্ট? প্রশ্নগুলি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল অনবরতঃ কয়েকদিন ধ'রে। কিন্তু লেখার জন্যে পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। লিখবো লিখবো ক'রে লেখা হ'য়ে উঠছিল না আবোল তাবোল কথার ভিড়ে। কোন প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাপারটাকে দেখবো, বুঝবো, বিশ্লেষণ করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কার ওপর দাঁড়াবো? রাজনীতি? শিক্ষানীতি? ধর্মনীতি? ছোটবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত শিক্ষা, ক্রীড়া, শরীরচর্চা, অভিনয়, রাজনীতি ও ধর্ম একের পর এক প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে আসতে আসার পথের দু'পাশে লেখার শুরুতে উল্লেখিত প্রশ্নগুলি সম্বন্ধে যা যা দেখেছি, বুঝেছি সব বুকের ও মাথার মাঝে রেখে দিয়েছি। এখন জাবর কাটার মত দেখা ও বোঝাগুলিকে উগলে নিয়ে দেখতে গিয়ে মনে হ'লো, যে প্ল্যাটফর্মের ওপর বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি নিজের সেই প্ল্যাটফর্মের অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামী নিয়ে জাবর কাটা যেতে পারে।
আমার বর্তমান প্ল্যাটফর্ম কি?
ক্রমশঃ
( লেখা ৩০শে ডিসেম্বর ২০২০ )

নাম একমাত্র বাঁচার পথ।

নাম ছাড়া বাঁচার আর দ্বিতীয় পথ নেই। নেই কোনও উপায়। ঠাকুর সর্বদাই আছেন আপনার আমার সাথে। আছেন নামের মধ্যে দিয়ে। নাম আর নামী অভেদ। যতবার নাম করবেন ততবার জানবেন দয়াল আপনার সাথে আছেন। আপনি আমি দেখতে পাচ্ছি না। অনুভব করতে পারছি না। আমাদের উপলব্ধি নেই। সেই শক্তি আমাদের নেই। আমরা সময় নষ্ট করেছি ও ক'রে চলেছি এখনও। আমাদের সৎসঙ্গীদের মহাভাগ্য আমাদের মাথার ওপর আচার্যদেব আছেন, আছেন বাবাইদাদা, আছেন অবিনদাদা! ভয় কি আমাদের! দয়ালের অপূর্ব লীলা চলছে এবার পিতাপুত্রের মধ্যে দিয়ে। দয়ালকে অসহায় ক'রে দেবেন না আপনাকে বাঁচাতে, আপনার পরিবারকে রক্ষা করতে, বর্দ্ধনার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সাবধান! দয়ালকে আয়ের উপকরণ করবেন না। দয়ালকে টেকেন ফর গ্রান্টেড করবেন না। মানুষের মাঝে দয়ালকে পৌঁছে দিন অকপটভাবে। আত্মপ্রতিষ্ঠা, অহংকার, কপটতা, ধান্দাবাজী ত্যাগ ক'রে দয়ালকে নিয়ে বাঁচুন ও বাঁচান। দয়াল আপনার দিকের তাকিয়ে আছেন। আছেন আচার্যদেব পরম্পরায়। তাদের কথা, তাদের নির্দেশ, তাদের আশীর্বাদ উপেক্ষা করবেন না, অবহেলা করবেন না, করবেন না অশ্রদ্ধা অবজ্ঞা অনাদর!

আর যদি তাদের মানতে না পারেন তাহ'লে ঠাকুরকে নিয়ে ঠাকুর ঠাকুর দয়াল দয়াল ভণ্ডামির খেলা বন্ধ করুন যদি বাচতে ও পরিবারের সবাইকে বাচাতে চান। লখীন্দরের বাসর ঘরের কায়দায় চুলের সরু ফাঁকের মত বৃত্তি-প্রবৃত্তির সরু ফুটো দিয়ে শয়তান কাল নাগিনীর বিষাক্ত নিশ্চিত মরণ থেকে বাঁচুন ও বাঁচান। দয়ালের পরিবর্তে আপনার জীবনে ও আপনার পরিবারে ভয়ালকে আসার সুযোগ দেবেন না। এখনও সময় আছে। নিজে সতর্ক হ'ন, সবাইকে সতর্ক করুন। অহংকার, ভণ্ডামি, ধান্দাবাজী, আত্মপ্রতিষ্ঠার মোহ মায়াজাল ত্যাগ ক'রে এই কঠিন মহামারীর নিদারুণ সময়ে দয়ালকে মাথায় নিয়ে আচার্যদেবের নির্দেশ, বাবাইদাদার আহবান, অবিনদাদার ভরসাদীপ্ত কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন ক'রে দয়াল প্রতিষ্ঠায় মাতাল হ'ই। তিনারা সবসময় ব'লে চলেছেন, মাভৈ! শুধু নাম! নাম! আর নাম!
প্রবি। ( ৩০শে এপ্রিল ২৯২১ )

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪

'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৩' লেখা শেষ করেছিলাম এই ব'লে যে, অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মণি মানিক্য নিয়ে হাজির হবো 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪' লেখায় আর সেই অভিজ্ঞতার আয়নায় দেখে নেবো নিজের ইষ্টপ্রাণতার চরিত্র কতটা ফর্সা আর কতটা কালো। তাই এসেছি অভিজ্ঞতা ভাগ ক'রে নিতে।
অভিজ্ঞতা **
বহুদিন ধ'রে মাঝেমাঝেই ইউরিনাল সমস্যা কষ্ট দিচ্ছিল আমার সহধর্মিণীকে। একটা জ্বালা জ্বালিয়ে মারছিল তাকে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক সবরকম চিকিৎসা সত্ত্বেও অনেকদিন পরপর মাঝেমধ্যে এই সমস্যা লেগেছিল এঁটেল পোকার মত। বহুদিন ভালো থাকে আবার হয়। যখন হয় তখন জ্বালা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে তীব্র হ'তে থাকে ফলে জল খেতে হয় প্রচুর আর জল খাওয়ার কারণে বারবার বাথরুমে যাওয়ার নতুন বিরক্তি যোগ হয় জীবনে। এমতাবস্থায় ঠাকুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম দুজনে শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে নিবেদন করবো ব'লে। যথারীতি ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে নির্দিষ্ট সময় ভোরবেলা বাবাইদাদাকে স্ত্রী তার সমস্যার কথা নিবেদন করলে বাবাইদাদা হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং একজন ডাক্তারকে বললেন ব্যাপারটা দেখবার জন্য। সেই ডাক্তারের নির্দেশমতো হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখানো হ'লে তিনি সব শুনে অল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার নির্দেশ দিলেন। সেইমত দেওঘরের কেয়ার ডায়াগনস্টিক থেকে ইউ এস জি অফ হোল আবডোমেন পরীক্ষা করিয়ে সন্ধ্যাবেলা আবার ডাক্তারবাবুকে দেখানো হ'লো। তিনি দেখে বললেন, ইউরিনাল ট্র্যাকে কোনও সমস্যা নেই এবং আরও কিছু পরীক্ষা করার কথা লিখে দিলেন এবং হোয়াটস আপে রিপোর্ট পাঠাবার কথা বলে দিলেন। আমরা সৎসঙ্গ হাসপাতালের ফ্রি মেডিসিন কাউন্টার থেকে বিনামূল্যে ঔষধ নিয়ে ফিরে এলাম। সেদিন দেখেছিলাম কত মানুষ হাসপাতালের সেই মেসিসিন কাউন্টার থেকে ফ্রিতে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে! আমার স্ত্রীর জন্য প্রেসক্রিপশন করা একটা যে ওষুধ ফ্রিতে নিয়েছিলাম সেই ওষুধের দাম ছিল প্রায় ৩০০টাকা।
দেওঘর থেকে পরদিন ফিরে এসেছিলাম বাড়ি। তারপর বাবাইদাদা নির্দেশিত হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা আর ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ইউ টি অফ ওষুধ সেবন করতে লাগলো এবং তারপর ডাক্তারের নির্দেশিত বাকি সব পরীক্ষা ক'রে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হ'লো হোয়াটস আপ ক'রে দেওঘরে ডাক্তারের কাছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পরও কোনও উত্তর পেলাম না। তারপর ফোন করলেও ফোন ধরলেন না ডাক্তারবাবু। চিন্তায় পড়ে গেলাম! কি করবো কিছু বুঝলাম না।
এভাবে কেটে গেছিল কয়েকমাস। অনেকবার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও উত্তর না পাওয়ায় ভাবলাম লোকাল কোনও ডাক্তারকে দেখানোর কথা। এরমধ্যে ডাক্তারবাবুর দেওয়া ওষুধ যেটা হাসপাতাল থেকে ফ্রিতে নেওয়া হয়েছিল সেটাও শেষ হ'য়ে গেছিল। এর মধ্যে আর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা আবার দেখা দেওয়ায় আর ডাক্তারবাবুর কোনও উত্তর না পেয়ে পুনরায় কয়েকমাস পর আবার দেওঘর গেলাম শেষ লক ডাউন ঘোষণার আগে ১২ই মার্চ'২০২০। ১৩ই মার্চ ভোরবেলা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার শ্রীচরণে অসুখের কথা বিস্তারিত নিবেদন করলে তিনি হিমালয় কোম্পানি ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু দেওঘর থেকে ফিরে এসে ওষুধের জন্য নেটে খুঁজলে এবং লোকাল ওষুধের দোকানে চাইলে দেখা গেল হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ আউট অফ মার্কেট! হিমালয় কোম্পানি ওষুধ মার্কেট থেকে তুলে নিয়েছে! কিন্তু অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি আছে। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবো সেটা খাওয়া যাবে কিনা। আবারও ডাক্তারবাবু ব্যস্ততার কারণে কিম্বা হয়তো অন্য কোনও অসুবিধার কারণে হোয়াটস আপের উত্তর না দেওয়ায় ও ফোন কল রিসিভ না করায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করণীয়।
মনটা মানছিল না বাবাইদাদা নির্দেশিত ওষুধ না পাওয়ায়। আর এর মধ্যে দেওঘরে যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ঘরে বসেই ঠাকুরের ফটোর কাছে নিবেদন করলাম সমস্যার কথা এবং বাবাইদাদাকে ফটোর মাধ্যমেই জানালাম বর্তমান পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে আমাদের এলাকায় নতুন একজন ডাক্তার এলেন। তিনি একদিন বাড়িতে এসে আমার অসুস্থ বৌদিকে দেখে গেছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আমার স্ত্রীর পরিচয় হয় এবং একদিন তাঁকে দেখাতে তাঁর চেম্বারে গেলেন। তিনি পুরোনো রিপোর্ট দেখলেন এবং নতুন কিছু পরীক্ষা করার নির্দেশ দিলেন তারপর সব রিপোর্ট দেখার পর প্রথমেই তিনি যে ওষুধের নাম প্রেসক্রাইব করলেন তার নাম হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০! সেটা দেখে আমার স্ত্রী স্তম্ভিত হ'য়ে গেলেন এবং ডাক্তারকে বললেন এই ওষুধের আউট অফ মার্কেটের কথা। তখন ডাক্তারবাবু শুনে কোম্পানির নাম চেঞ্জ করে দিয়ে অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি প্রেসক্রাইব করলেন! আর পুনর্নোভা কন্টিনিউ করার নির্দেশ দিলেন! শেষমেশ বাবাইদাদার দেওয়া ওষুধের সমাধান হ'লো! এরকমভাবে যে সমস্যার সমাধান হ'তে পারে তা আজও বিস্ময়করভাবে ঘোর বিস্ময়! যার কোনও ব্যাখ্যা নেই! একে কি বলবো!? কাকতালীয়!? নাকি সত্যি সত্যিই প্রার্থনা তাঁর কাছে পৌঁছে যায়!? আমি জানি না; আমার কপট প্রার্থনার অত জোর নেই।
শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নির্দেশ মত সেই পুনর্নোভা ও ক্রেনবেরি ৩০০ খেয়ে স্ত্রী সুস্থ হ'য়ে উঠলো। মাঝে একজন ভালো মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের সাথে পরিচয় হওয়ায় এবং তাকে সমস্যার কথা জানানোয় তিনি প্রথমে স্ত্রীকে ফ্রসফময়সিন ট্রমেতামল পাউডার দিয়ে বললেন জলে গুলে রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে। আর অন্ততঃ তিনঘন্টা পর বাথরুমে যেতে বলে দিলেন। এতে যদি ইনফেকশন থাকে তাহলে সব বেরিয়ে যাবে। তারপরে দু'দিন পর যেতে বললেন তখন ওষুধ দেবেন এখন কোনও ওষুধ দেবেন না। সেইমত স্ত্রী তার কাছে দু'দিন পর গেলে সেই মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার স্ত্রীর কাছে জেনে নেওয়া পুনর্নোভা আর ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খেয়ে যেতে বললেন এবং সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিলেন!
আজ স্ত্রী ঠাকুরের অপার দয়ার পরশে ও বাবাইদাদার আশীর্বাদ, নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে চলার জন্য এবং শ্রীশ্রীঠাকুর ও বাবাইদাদার কাছে প্রার্থনা হেতু হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার জন্য ভালো আছে।
কিন্তু আজ বড় মনে পড়ে সেই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুর কথা! কেন এমন হয়!? কেন বাবাইদাদার নির্দেশ আহত হয়!? চিকিৎসাজনিত ব্যস্ততা, কাজের চাপ, সংসারের চাপ ও জীবনে চলার পথে অন্যান্য কারণ মানুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ শূন্য ক'রে তোলে!? ইষ্টপ্রাণতায় ঘাটতি দেখা দেয়!? এই কারণে কি 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য' হ'য়ে ওঠা হয় না!?
কিন্তু সবচেয়ে যেটা আশ্চর্য করেছিল আমায় সেটা হ'লো দ্বিতীয়বার বাবাইদাদাকে যখন অসুখের কথা নিবেদন করা হয়েছিল তখন তিনি পুনরায় সেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেননি বা নির্দেশ দেননি! তিনি নিজেই ক্রেনবেরি ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করেছিলেন। এবং সেইমত পরবর্তী ঘটনা বিস্তার লাভ করেছিল যা আজও রহস্যময়!!!!
এমনিভাবেই দেখে নেব পরবর্তী অভিজ্ঞতা কি বলে! কি বলে 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য বলেই তুমি সকলের জন্য' এই বাণী অভিজ্ঞতার আয়নায়! কার জীবনে কতটা প্রকট হ'য়ে উঠেছে এই বাণীর মর্মার্থ! আসুন দেখে নিই 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য- ৫' কি বলে!
ক্রমশঃ
লেখা ২৪শে অক্টোবর'২০২০ )

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৩

'তুমি শুধু প্রভুর জন্য'-২ লেখার শেষে লিখেছিলাম আসুন ঠাকুরের বাণীর শেষ লাইন "তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য আর তাই তুমি সকলের জন্য" আমাদের জীবনে কতটা প্রভাব রেখেছে তা পরবর্তী 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য'-৩ আর্টিকেলে দেখে নিই!
ঠাকুরের বাণীর শব্দ, লাইন ধ'রে ধ'রে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে কি দেখবো? আমি, আমরা কি সত্যিই একমাত্র প্রভুর জন্য হ'তে পেরেছি!? আমি, আমরা কি সত্যি সত্যিই সকলের জন্য!? যদি আমি একমাত্র প্রভুর জন্যে হ'য়ে থাকি , প্রভু ছাড়া যদি আর আমার কেউ না থেকে থাকে, প্রভু যদি আমার একমাত্র লক্ষ্য বা আদর্শ হয়, প্রভুই যদি আমার একমাত্র আশ্রয় হ'য়ে থাকে তাহলে কি আমি আমরা সকলের জন্যে হতে পেরেছি!? আর আমি যদি সকলের জন্যে হ'য়ে থাকি বা হ'তে পেরে থাকি তাহলে আমি নিশ্চয় প্রভুর জন্যে হ'তে পেরেছি।
আমি কি সত্যি সত্যিই প্রভুর জন্যে হ'তে পেরেছি!? বারবার একই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে! কেন? খেতে থাকে এইজন্যে যে লড়াইটা নিজের সঙ্গে নিজের। বিবেকের মুখোমুখি! বিবেক নামক আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখে নেওয়া যাক মুখ কতটা কালো আর কতটাই বা ফর্সা! সেই যে কোন ছোটবেলায় ৫বছর বয়সে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির যে মূল মরকোচ সেই মরকোচ অর্থাৎ যাকে আমরা বীজনাম বলি সেই সর্বোচ্চ বীজনাম পেয়েছি আর ১২ বছর বয়সে পেয়েছি পূর্ণ দীক্ষা অর্থাৎ জানতে পেরেছি বাঁচাবাড়ার পথ, গ্রহণ করেছি বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার সর্বোচ্চ নিয়ম-নীতি। এই ৬৬ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি সেই অভিজ্ঞতার আলোর আয়নায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখে নিতে চেয়েছি আমার গুরু, আমার প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার দয়াল, আমার ঠাকুরের 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য আর কারো জন্য নও, তুমি ঈশ্বরের জন্য বলেই তুমি সবার জন্য'' বাণী কতটা আমার জীবনকে করতে পেরেছে আলোকিত! নাকি ৬৬ বছরের দীর্ঘ সফরটায় অন্ধকারে ভরা!
ছোটবেলায় ঠাকুরবাড়ি যেতাম মা-বাবার হাত ধ'রে। তখন আজকের মত এত উন্নত ও বিস্তৃতি লাভ করেনি। স্মৃতিবাহী চেতনা এত স্ট্রং ছিল না বা এখনও নয় যে সেই সময়ের ঘটনা মনে থাকবে বা ছবি মনে পড়বে! আবছা ভাবে কিছু কিছু মনে পড়ে বা ভেসে ওঠে! যেমন ঠাকুরের আবছা হালকা অস্পষ্ট ছবি ভেসে ওঠে কখনো সখনো। তারপরে যখন বড় হ'লাম, সামান্য বুদ্ধি হ'লো, বাবা মারা গেল ৭৯ সালে তখন মায়ের সঙ্গে সরাসরি এক মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হ'লাম যে মন্দিরের সঙ্গে আমার বাবা-মা যুক্ত ছিল। যুক্ত ছিল একেবারে গোড়ার সময় থেকে ওতপ্রোতভাবে। এই মন্দিরের একেবারে গোড়ায় ছোটখাটো মন্দির নির্মাণকাজের সময় আমাদের বাড়ির নির্মাণ কাজের জন্য আনা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হয়। সেই থেকে বাবা-মায়ের পিছন পিছন ছিলাম ঠাকুরের কাজে। পরবর্তী ৭৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে সেই মন্দিরে যাওয়া শুরু ও সরাসরি সামনে থেকে মন্দিরের কাজ পরিচালনায় যুক্ত হ'ই। আর সেই ৭৯ সাল থেকে আজ ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর মন্দির পরিচালনা, বিভিন্ন কেন্দ্র মন্দিরের সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান ও উৎসবে যোগদানের মধ্যে দিয়ে বহু গুরুভাইবোন-এর সান্নিধ্যে আসি। আর সেই আসার মধ্যে দিয়ে বহু নামী- দামী-অনামী, প্রতিষ্ঠিত-অপ্রতিষ্ঠিত গুরুভাইবোন শুধুমাত্র প্রভুর জন্য নাকি অন্য আরও কারও জন্যে সেই অভিজ্ঞতা লাভ করি ও উপলব্ধি হয়! সেই মনে থাকা কিছু কিছু ঘটনা তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে দেখে নেবো আমরা কে কতটা সত্যি সত্যিই প্রভুর জন্যে হ'তে পেরেছি, কে কতটা 'ছাড়োরে মন কপট চাতুরী-----------' গানের লাইনের সঙ্গে একাত্ম হ'য়ে গানের লাইনের অন্তর্নিহিত অর্থকে জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি!
অভিজ্ঞতা *
সালটা ছিল ২০১৮। একবার শরীর খারাপ লাগার জন্যে এক ডাক্তারের কাছে চেক আপে গিয়েছিলাম। জায়গাটার নাম ও ডাক্তারের নাম উহ্য রাখলাম। কারণ মূল কথাটা আমার বলার মূল উদ্দেশ্য অন্য কিছু উদ্দেশ্য নয়। স্ত্রীকে নিয়ে যখন ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম দেখলাম ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে আরও কয়েকজন পেশেন্ট বসে আছে। ডাক্তারের চেম্বার তার বাড়ির মধ্যেই। নামকরা হার্টের ডাক্তার। ডাক্তারবাবু শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত ও ঋত্বিক মানুষ।
মাঝেমাঝেই বুকে একটু ব্যাথা করে। সেই ব্যথা গ্যাস অম্বলের জন্য নাকি ঘুমানোর দোষে জানি না। আর এটাও জানি না সত্যি সত্যিই বুকের ব্যথা নাকি অন্য কিছু। যাই হ'ক ডাক্তারের চেম্বারে বাইরে যেখানে পেশেন্টদের বসার জায়গা সেখানে গিয়ে যখন উপস্থিত হ'লাম তখন অন্য পেশেন্টদের জিজ্ঞেস ক'রে জানলাম ডাক্তারের কম্পাউন্ডার চেম্বারের ভিতরে আছে, বাইরে এলে তার কাছে নাম লেখাতে হবে। যাই হ'ক বাইরে বসার জায়গায় অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর কম্পাউন্ডার বাইরে বের হলো, তাকে বললাম নাম লেখাবার কথা। সে আমাকে অপেক্ষা করতে ব'লে আবার ভিতরে চলে গেল। আবার কিছুক্ষণ পর বাইরে বেরিয়ে আমার নাম লিখে নিলো আর বললো তিনশো টাকা দিতে এবং বাকী সবাইকে টাকা বের ক'রে রাখতে ব'লে আবার চেম্বারে ঢুকে গেল। আমার কাছে বড় নোট থাকায় আমি তাকে বললাম টাকা ভাঙিয়ে দিতে। সে টাকা ভাঙিয়ে দিয়ে আর অন্যদের কাছে ভিজিট সংগ্রহ ক'রে চলে গেল আবার ভিতরে। আমার একটা জিনিস দেখে খুবই অবাক লাগলো যে চেম্বারে আসার সময় থেকে এই ডাক্তারের ভিজিট দেওয়া পর্যন্ত কম্পাউন্ডার-এর ব্যবহার অদ্ভুত! চোখেমুখে কথাবার্তায় একটা কর্কশ বিরক্তি ভাব ঝরে পড়ছে! ভিজিট চাওয়ার ধরণ ও নোট ভাঙানি নিয়েও তার বিরক্তি প্রকাশ ছিল বেশ অপমানজনক! তবুও খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম ব্যাপারটাকে। যাই হ'ক বাইরে অপেক্ষা করছি আর যেহেতু আমি নতুন তাই পাশের পুরোনো পেশেন্টদের সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পর কম্পাউন্ডার বাইরে বেরিয়ে এসে অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় ধমকে উঠলো চুপ ক'রে থাকার জন্য ও কোনও কথা না বলার জন্যে! নিজেকে খুব অপমানিত ও ছোট ব'লে মনে হ'লো! কম্পাউন্ডারের রাফ এন্ড টাফ ব্যবহারে নিজেকে মনে হ'লো আমি যেন একটা রাস্তার লোক! নিজেকে সংযত রেখে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে কম্পাউন্ডারকে বললাম, আপনি ওরকম ভাবে কথা বলছেন কেন!? কম্পাউন্ডার হিন্দি ভাষী তাই হিন্দিতে বললো, গলা উঁচা নেহি, গলা নিচা করো। ইঁহা বাত করনা মানা হ্যায়। আমি অবাক হ'য়ে বললাম, ম্যায়নে তো উঁচা গলামে বাত নেহি কি! আপ ঝুটমুট হামে ধমকি দে তে হো! কম্পাউন্ডার আরো কর্কশ স্বরে মুখ বিকৃত ক'রে বললো, মু বন্ধ করো আউর চুপ করকে আপনা জায়গা মে বৈঠ যাও। আমি অবাক বিস্ময়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, এ আমি কোথায় এসেছি!? ডাক্তারখানা নাকি গুন্ডাখানা!? আমি তার ব্যবহারে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললাম! মনে মনে ভাবলাম এই ব্যবহার যদি আমার রাজ্যে আমার এলাকায় হ'তো!? তারপর বললাম, আপ আইসা ব্যবহার করতে হ্যাঁয় কি লাগতা হ্যাঁয় কি ম্যায় আদমি নেহি হুঁ!
এরকম যখন কথা হচ্ছে তখন পর্দার ওপাশ থেকে ডাক্তারবাবুর গলা ভেসে এলো। চেম্বারটা মাঝখানে পর্দা দিয়ে পার্টিশন দেওয়া। পর্দার ওপাশে ডাক্তারবাবু বসেন আর একপাশে পেশেন্টদের বসার জায়গা। শুনতে পেলাম ডাক্তারবাবু কম্পাউন্ডারের নাম নিয়ে কর্কশ গলায় বলছেন, কৌন ইতনা বহেস কর রহা হ্যাঁয়! রূপীয়া ওয়াপস দে কে নিকাল দো! কম্পাউন্ডার পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল আর একটু পড়েই বাইরে বেরিয়ে ৩০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ধমকে বললো, নিকলো।
আমি স্তম্ভিত হ'য়ে গেলাম ডাক্তারের ব্যবহারে আর কথা শুনে! এও সম্ভব!? স্ত্রীকে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলাম। দরজার বাইরে খুলে রাখা জুতো পড়তে পড়তে অপমানে লজ্জায় চোখে জল এসে গেল! জল এলো অকারণ অপমানে! জল এলো স্ত্রীর সামনে অপমানিত হওয়ায়! জল এলো এই বয়সে অপমানিত হওয়ায়! চোখে জল এলো, বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেল এই ভেবে, ডাক্তার কোনও কিছুই শুনলো না, জানলো না, শোনার ও জানার চেষ্টাই করলো না কি ব্যাপার, কার দোষ অথচ ভেতর থেকেই পেশেন্টের মুখ না দেখেই চেম্বার থেকে বিনা চিকিৎসায় বের ক'রে দেবার নির্দেশ দিল! মাথা নিচু ক'রে অপরাধীর মত রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে মনে হ'লো অকারণ অপমানিত হ'লাম অথচ কিছুই বলতে পারলাম না স্থান মাহাত্ম্যর খাতিরে কিন্তু এই ঘটনা যদি আমার রাজ্যে আমার এলাকায় হ'তো!!!!!!!!
ডাক্তার এমন হয়!? আজ পর্যন্ত কোনও ডাক্তার তাঁর চেম্বার থেকে পেশেন্তকে তা সে যতই নটরিয়াস হ'ক না কেন চিকিৎসা না ক'রে বের ক'রে দেওয়ার মত ক্ষমার অযোগ্য ঘৃণ্য অপরাধ করেছে!? তার উপরে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সৎনামে দীক্ষিত নামী প্রতিষ্ঠিত মানুষ, ডাক্তার মানুষ, তার উপরে ঋত্বিক মানুষ এমন চরিত্রের হয়!? এমন ব্যবহার!? চিকিৎসার আগেই পেশেন্টের কাছ থেকে ভিজিট নিয়ে তাকে অপেক্ষায় রেখে পরবর্তী সময়ে কম্পাউন্ডারের অন্যায়কে স্বীকৃতি দিয়ে পেশেন্টকেই যার বয়স প্রায় ৬৫ বছরের উপর তাকে (তার উপরে হার্টের পেশেন্ট) অপমান ক'রে তাড়িয়ে দিলেন!?
এমন মানুষ ঋত্বিক!? এমন মানুষ ঠাকুরের সৎনাম প্রদান করে!? এমন মানুষ আবার সৎসঙ্গ মেডিক্যাল সেমিনারে, বিভিন্ন সৎসঙ্গ উৎসবে ঠাকুরের বাঁচা-বাড়া সম্পর্কিত বিষয়ে গুরুগম্ভীর ভাষণ দেয়!? এমন মানুষ ঠাকুরের প্রেমের কথা বলে!?
এমন মানুষ কি প্রভুর জন্যে উৎসর্গকৃত প্রাণ!? এমন মানুষ কি 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য' বাণীর উজ্জ্বল উদাহরণ!? এমন মানুষ কি '------------ তুমি সকল মানুষের জন্য' হ'তে পারে!? এমন মানুষ সত্যিই কি 'ছাড়ো রে মন কপট চাতুরী' গান থেকে শিক্ষা লাভ ক'রে কপট মুক্ত হ'য়ে সৎসঙ্গের মিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৎসঙ্গের পতাকা কাঁধে নিয়ে মানুষকে, সমাজকে ঠাকুরের স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা-বাড়ার পথ ব'লে দেবার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে!!!!?
কি বলেন সৎসঙ্গীবৃন্দ!?
আসুন মহাঅষ্টমীর শুভ লগ্নে পরবর্তী 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪' লেখায় দেখে নিই নিজেকে নিজের বিবেকের আয়নায় আর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বের ক'রে আনি অভিজ্ঞতা- উপলব্ধির মণি মানিক্য আর শুধরে নিই নিজের স্বভাব-চরিত্রকে।
অভিজ্ঞতা **
ক্রমশঃ
( ২১শে অক্টোবর'২০২০ )

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য--২

তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য---১' এ আমি লেখা শেষ করেছিলাম শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী
"You are for the Lord
Not for other
You are for the Lord
And so for others.
(তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য
অন্য কারও জন্যে নয়
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই
তুমি সবার জন্য।)
------বাণীর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন বিশ্লেষণ ক'রে বাণীর আয়নায় নিজের মুখ, নিজের চরিত্র দেখবো! দেখবো মুখ বা চরিত্র নির্মল নাকি মলপূর্ণ!
এখন দেখা যাক বাণী কতটা চরিত্রগত হয়েছে আর কতটা হয়নি। বাণীতে প্রথমেই আছে 'তুমি প্রভুর জন্য'! তা সত্যিই কি আমি প্রভুর জন্য হয়েছি!? ঠাকুর বলছেন, 'তুমি প্রভুর জন্য, কারও জন্য নও'! এ কথার অর্থ আমি একমাত্র আমার প্রভুর জন্য অন্য কারও জন্য নই। প্রথমতঃ প্রভু কে? কাকে প্রভু বলি?
প্রভু হ'লেন একমাত্র ব্রহ্মাণ্ডের পর ব্রহ্মান্ড কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি যেখান থেকে হ'য়ে থাকে যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় সেন্ট্রাল জোন বলা হয় সেই সেন্ট্রাল জোন অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির উৎস মুখ যাকে আমরা সমস্ত কারণের কারণ পরম কারুণিক বলি অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা বলি, বলি ঈশ্বর, বলি গড, বলি আল্লা, বলি সবার পিতা পরমপিতা সেই তিনি যখন মানুষের মাঝে মানুষ রূপে নেবে আসেন আমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার এক নিখুঁত ও সম্পূর্ণ পথ দেখিয়ে দিতে সেই তিনি হ'লেন আমার প্রভু! আমার দয়াল! তাঁকেই একমাত্র প্রভু নামে আমি সম্বোধন ক'রে থাকি। এছাড়া মানুষের মাঝে অন্য কেউ সে যেই হ'ক না কেন, যতবড় মহাত্মা, যতবড় মহাপুরুষ বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ হ'ক না কেন কেউই প্রভু নন, প্রভু ডাকের পাত্র নন। পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের মাঝে এক ও একমাত্র প্রভু হ'লেন প্রভু রাম, প্রভু কৃষ্ণ, প্রভু বুদ্ধ, প্রভু যীশু, প্রভু মোহাম্মদ, প্রভু চৈতন্য, প্রভু রামকৃষ্ণ এবং সেই প্রভুর সর্বশেষ রূপ হ'লেন প্রভু অনুকূল! এছাড়া কেউই প্রভু নয়।
তাহলে আমার প্রভু কে? অর্থাৎ আমার প্রভু অর্থাৎ আমার ঈশ্বর, আমার প্রিয়পরম, আমার পরমপিতা, আমার সৃষ্টিকর্তা কে?
আমার প্রভু হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! বর্তমান যে শেষ রূপকে আমি আমার দয়াল, আমার ঠাকুর, আমার পরমপিতা, আমার ঈশ্বর, আমার গড, আমার আল্লা ব'লে ডাকি সেই তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন আমার এক ও একমাত্র প্রভু! এ ছাড়া আমার জীবনে রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ হ'লেন এক ও একমাত্র প্রভু! বাকী কেউই প্রভু নয়।
আচ্ছা তাহলে আমরা যাকে তাকে প্রভু ব'লে ডাকি কেন?
যাকে তাকে প্রভু ব'লে ডাকা বা সম্বোধন করা সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।। আবার অজ্ঞানতাও বিরাট একটা ব্যাপার বটে। যা ধর্ম জগৎকে ঘিরে ফেলেছে। আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডকে অক্টোপাশের মত যা পেঁচিয়ে নিয়েছে! আর তখনই কাঁচের টুকরোকে হীরে ব'লে বোধ হয়! তবে অনেক ক্ষেত্রে এই প্রভু ডাকার মধ্যে আবার ভালবাসার ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন আমার প্রভু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! তিনিই আমার এক ও একমাত্র প্রভু! কিন্তু সেই যে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রথম যেদিন সামনাসামনি দেখলাম বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো! ইচ্ছে হ'লো প্রভু ব'লে ডেকে উঠি! যেন আমার প্রভু, আমার ঠাকুর জীবন্ত লীলা করছেন শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে! কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম! শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, "তোরা আমায় যে যে নামেই ডাক না কেন আমি হ'লাম ঠাকুরের কুকুর!" তখন আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান, ঠাকুরের আদরের বড়খোকাকে বড়দা নামে ডাকতাম! এখনও ডাকি। কেউ কেউ ভালোবেসে শ্রীশ্রীবড়দাকে পিতৃদেব বলেও সম্বোধন করতেন। এগুলি তীব্র ভালোবাসার প্রভাব! কিন্তু বড়দার কথায় আমরা সম্বিৎ ফিরে পেলাম। কে কাকে কি ব'লে ডাকবে সেটা তার ব্যক্তিগত ভালোবাসাময় অনুভূতির উপর নির্ভর করে। তবে ব্যক্তিগত সম্বোধন কখনও সমষ্টিগততে রূপ নেয় না। সমষ্টিগতভাবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের তিনি পরম আদরের শ্রীশ্রীবড়দা!
তারপরে দেখলাম আচার্যদেব শ্রীশ্রীঅশোকদাদাকে! সালটা সম্ভবত ১৯৯০। মায়ের ক্যানসার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রার্থনা জানাতে গিয়েছিলাম ঠাকুরবাড়ি শ্রীশ্রীবড়দা চরণে! সেসময় শারীরিক কারণে শ্রীশ্রীবড়দা শুধুমাত্র দর্শন দিতেন। নিবেদন যা কিছু শ্রীশ্রীদাদাকে করতে হ'ত। মাকে নিয়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রণাম করলাম। দেখলাম বড়দা ঘরের মধ্যে খাটের উপরে হাত জোড় ক'রে ভক্তমন্ডলীর দিকে চেয়ে বসে আছেন! মনে মনে বড়দাকে মায়ের অসুখের ব্যাপারটা জানালাম। তারপর প্রণাম ক'রে যখন বর্তমান আচার্যদেবের বাড়ির পাশ দিয়ে আসছিলাম তখন একজন গুরুভাই সেখানে বসে থাকা শ্রীশ্রীদাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল তাঁকে নিবেদন করতে। আজ আর তেমন ক'রে মনে পড়ে না কে সেদিন আমাদের শ্রীশ্রীদাদাকে নিবেদন করার কথা বলেছিল, কে দেখিয়ে দিয়েছিল বসে থাকা অবস্থায় শ্রীশ্রীদাদাকে! তবে সেদিন এটা অনুভব হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার কাছে যখন মনে মনে মায়ের কথা নিবেদন করেছিলাম তখন বড়দার সেই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি যেন পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল শ্রীশ্রীদাদার কাছে! সেই দৃষ্টি আজও মনে পড়ে, ভুলতে পারি না! মনে হয় যেন প্রভুর দৃষ্টি!
কিন্তু যখন মাকে নিয়ে শ্রীশ্রীদাদার চরণপ্রান্তে এসে বসেছিলাম ঐ শীতের সকালের ঝ'রে পড়া মিষ্টি রোদ্দুরে তখন শ্রীশ্রীদাদার মুখের দিকে চেয়ে সমস্ত শরীর শিউড়ে উঠেছিল, গভীর ভালোবাসায় ব'লে উঠতে চেয়েছিল মন, প্রভু! প্রভু!! প্রভু!!! কি এক অদ্ভুত অনুভূতি শরীর-মন-হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম সেদিন যা কখনোই কাউকেই বোঝানো সম্ভব নয়! কিন্তু দাদাকে যখন মায়ের অবস্থার কথা নিবেদন করেছিলাম, কথা বলছিলাম তখন সারাক্ষণ দাদা বলেই সম্বোধন করেছিলাম! অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কে যেন বলছিল, প্রভু!!!!!! সেদিন মনে হয়েছিল যেন আমার প্রভু, আমার ঠাকুর, আমার দয়াল লীন হ'য়ে আছে শ্রীশ্রীদাদার অবয়বে! পরবর্তীতে শ্রীশ্রীদাদাকে কেউ কেউ বড়দাদা ব'লে সম্বোধন করতে শুরু করে সেই একই কারণ থেকে তা হ'লো সেই ভালবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! প্রভু-দাদা-বড়দাদা সব একাকার হ'য়েও আলাহিদা সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে!!!!!!! কিন্তু তিনি আমাদের বিশ্বজুড়ে সব সৎসঙ্গীর আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা বা শ্রীশ্রীবড়দাদা!
আবার যখন সেই ২০১৫ সালের সম্ভবত সেপ্টেম্বর কি অক্টোবর মাসে ঠাকুরবাড়ি গিয়েছিলাম মেয়ের চাকুরী সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সেদিন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চরণপ্রান্তে ব'সে নিবেদন করার সময় সাক্ষাৎ যেন আমি আমার প্রভুকে চাক্ষুস করেছিলাম শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে! এ কোনও বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জিত কোনও আবেগ নয়! আমি ভালোমতোই জানি আবেগ ভালো কিন্তু আবেগে ভেসে যাওয়া ভালো নয়! কিন্তু সেদিনের পর থেকে দেওঘরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার আগের দিন ১৩ই মার্চ'২০ সকালবেলায় শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চরণপ্রান্তে ব'সে নিবেদন করা পর্যন্ত আমি ভুলবো না সেই ভুবনভোলানো রূপ, সেই মিষ্টি কথা, মিষ্টি হাসি! কি অপূর্ব সুন্দর দেখতে! যে দেখেনি তাকে শুধু ব'লে বোঝানো যাবে না যে স্বয়ং আমার প্রভু যেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে অবস্থান করছেন! হ্যাঁ! অবস্থান করছেন! করছেন জীবন্ত!!!!!!! কিন্তু সেই ২০১৫ থেকে ২০২০-র মার্চ মাস পর্যন্ত যতবার দেওঘর গেছি, কলকাতার অমরধাম গেছি ততবারই তাঁর সান্নিধ্যে কথা বলার সময় অন্তর বলেছে প্রভু! প্রভু!! প্রভু!!! কিন্তু সম্বোধন করেছি 'দাদা' ব'লে! কিন্তু কোথায় যেন দাদা আর প্রভু একাকার হ'য়ে গেছে! একে কি বলবো? পাগলামি? ভাবাবেগ? না! একেই বলে তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ! ভালোবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! এই তীব্র অকৃত্রিম ভালোবাসা ঠাকুরকে ঘিরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে! এই ভালোবাসা, এই 'প্রভু' ডাকের তীব্র ইচ্ছা বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! কিন্তু তবুও বাবাইদাদাকে ডেকে উঠি দাদা ব'লে; কোথায় যেন সূক্ষ্ম অতি সূক্ষ্ম একটা তফাৎ থেকে যায়!
আর অবিনদাদা নিয়ে কি আর বলবো! এই অল্প বয়সে সম্ভবত তখন বয়স ১৮বছর (২০১৮ সাল) ঐ বয়সে একদিন শীতের সকালে প্রার্থনার পর আলো আবছায়ায় শ্রীশ্রীঠাকুরের স্নানকুন্ডের পিছনে কারও জন্যে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সেইসময় ঐ ফাঁকা নির্জনস্থানে শীতের ভোরের আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হ'য়েছিলাম তা আজও জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে! প্রকৃতির কি অপূর্ব রূপ! ঝিরঝির ক'রে হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে! একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে অবিনদাদা বাইকে একটা হাত রেখে! সেদিন ঐ শুভ মুহূর্তে এগিয়ে গিয়েছিলাম ছেলেমেয়েকে নিয়ে। কারণ সেদিন বাবাইদাদা শারীরিক কারণে দর্শন দেননি, এবং পরদিনও দেবেন না। খবর নিয়ে জেনেছিলাম রাতেই তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। অথচ পরেরদিন সকাল ১১টায় ট্রেনের টিকিট কাটা আছে। চলে যেতে হবে দেওঘর ছেড়ে। দুদিনের জন্য আসা। মনটা খারাপ হ'য়ে গিয়েছিল এই ভেবে এই প্রথমবার ফিরে যেতে হবে বাবাইদাদাকে নিবেদন না করেই। আর সারা রাত এবং সকাল সকাল সেই ঠাকুর আঙিনায় ঠাকুরের স্নানকুন্ডের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম অবিনদাদার কথা! যদি দেখা পায় তাহলে তাঁকেই নিবেদন করবে ছেলেমেয়ে তাদের কথা। আর ঘটেও গেল তাই! কি অবিশ্বাস্য ব্যাপার? কাউকে ব'লে বোঝানো দুস্কর! বললে বলবে সবটাই কাকতালীয়! হাঁটতে হাঁটতে যখন যাচ্ছি ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঠিক সেইসময় একটা বাইক স্নানকুন্ডের পাশ দিয়ে গিয়ে পিছনে একটা গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালো! আমি বুঝতে পারিনি কে গেল! মেয়ে আমার একঝলক দেখেই বললো, বাবা! বাবা! অবিনদাদা যাচ্ছে! যেন মনে হ'লো আমাদের জন্যেই বুঝিবা এই ভোরে অতি ভোরে দেখা দেবেন ব'লে এসে দাঁড়ালো অবিনদাদা! সেই সকালে অবিনদাদার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ছেলেমেয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত সমস্যা নিবেদন করলো তখন অবিনদাদার মধ্যে দেখেছিলাম অবিশ্বাস্য কনফিডেন্স! মেয়ে এডুকেশন সেক্টরে চাকরি করে। আর এই সেক্টরে কাজ করার কথা স্বয়ং বাবাইদাদা নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে যখনই চাকরি পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনও সমস্যা সামনে আসে মেয়ে বাবাইদাদাকে নিবেদন ক'রে থাকে। এবারও ছিল চাকরির সংস্থা পরিবর্তনের বিষয়। মেয়ের কাছ থেকে সেই চাকরি ও কোম্পানি সংক্রান্ত সমস্ত কথা শুনে তাকে নতুন জায়গায় জয়েন করার কথা বললেন কিন্তু সেই একই প্রশ্নে ছেলেকে এক্সিস্টিং কোম্পানিতে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন, কোম্পানি পরিবর্তন করতে নিষেধ করলেন অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে! বললেন, যা হবে এখানেই হবে। পরবর্তী সময়ে কি অবিশ্বাস্যভাবে মিলে গিয়েছিল সেই কথা। যা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়! যে কোম্পানিতে ছেলেকে জয়েন করতে মানা করেছিলেন অবিনদাদা পরবর্তী সময়ে সেই কোম্পানির প্রোজেক্ট চলে যাওয়ায় যাদের নেওয়া হয়েছিল হয় তাদের অন্য রাজ্যে ট্রান্সফার হ'তে হবে নতুবা চাকরিতে রিজাইন দিতে হবে! অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হ'য়ে গিয়েছিলাম সেদিন! কথা গিয়েছিল হারিয়ে!!
সেদিনও ঐ অতি প্রত্যুষে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অবিনদাদার কথা শুনতে শুনতে মনের ভিতর থেকে কে যেন ব'লে উঠতে চেয়েছিল 'প্রভু' ব'লে! পরে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম ক'রে উঠে দাঁড়ালাম। অবিনদাদা যার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি এসে পড়ায় বাইক চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম কেন এমন হয় বারবার!? এমন হওয়ার পিছনে অন্য কি রহস্য আছে জানি না আর এই জানার মত অতবড় মাপের ভক্তও নই। শুধু বলতে পারি সেই ইষ্টের প্রতি, প্রভুর প্রতি তীব্র ভালোবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! আর ভালোবাসার রঙের ছিটে গিয়ে পড়ে প্রিয়পরমের প্রিয়ের জীবনে! পরমুহূর্তেই মনে পড়ে গেল ঠাকুরের বাণী,
"ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর
রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।"
তাই জীবন যদি শুধু প্রভুর জন্যে, একমাত্র প্রভুর জন্যে হয় তাহলে এমন তীব্র উপলব্ধি, এমন জ্বলন্ত অনুভূতি ডেবলপ করে!!!!!!!!
তাহলে আসুন ঠাকুরের বাণীর শেষ লাইন "তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য আর তাই তুমি সকলের জন্য" আমার জীবনে কতটা প্রভাব রেখেছে তা পরবর্তী 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য'-৩ আর্টিকেলে দেখে নিই!
ক্রমশঃ।
( লেখা ১৫ই অক্টোবর' ২০২০ )

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য!-১

You are for the Lord
Not for others
You are for the Lord
And so for others.
এই বাণী কার? পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। এই বাণীর অর্থ কি?
এই বাণীর অর্থ:
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য অন্য কারো জন্য নও,
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই তুমি সবার জন্য।
এখন প্রশ্ন জাগে মনে,
আমি কার দীক্ষা নিয়েছি? আমার আরাধ্য দেবতা কে? কে আমার প্রভু?
মন বলে, আমি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রদত্ত সৎ নামে দীক্ষা নিয়েছি। আমার আরাধ্য দেবতা এক ও একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর তিনিই আমার প্রভু।
আচ্ছা সেই যে কোন ছোটবেলায় ৫বছর বয়সে নাম আর ১২বছর বয়সে পূর্ণ দীক্ষা হয়েছিল তা এই এত বছর ধ'রে কত ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে জীবন কি এই বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছে? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত মন নিজের কাছে নিজে নানা সময়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে! এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে স্বাভাবিকভাবেই আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হয় আমার ভিতরের আমি!
আমার ভিতরে যে আরও একটা আমি আছে অর্থাৎ যাকে বলি বিবেক সেই বিবেক আমাকে চাঁছাছোলা নির্দয়ভাবে জিজ্ঞেস করে, আরে বয়স তো অনেক হ'লো! জীবনসূর্য পাট-এ যেতে বসেছে! উপরিউক্ত বাণীর মর্মার্থ বোঝার আগে বলো দেখি হে ঠাকুরভক্ত! দীক্ষা নিয়েছো মানে কি?
আমতা আমতা ক'রে বললাম, দীক্ষা নিয়েছি মানে জীবনে সফল ও বড় হওয়ার জন্য দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন আছে আর সেই সফলতার সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশঃ উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তর পেরিয়ে উচ্চতম অবস্থায় পৌঁছবার জন্য নিখুঁত অসীম দক্ষতা লাভের প্রয়োজন আর সেই প্রয়োজনকে বাস্তবায়িত করার জন্য একটা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়মকে, একটা নীতিকে জীবনে গ্রহণ করেছি। আর সেই নিয়ম বা নীতি একটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে ঘিরে আবর্তিত হ'য়ে চলেছে! সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিই আমার জীবনে জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ! আমি সেই মানুষটির চরণে নিজেকে সঁপে দিয়েছি তাঁর চলনপূজায় মগ্ন হবো ব'লে। আমার ভালোবাসার উৎস সেই মানুষটির নাম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! আমার অস্তিত্বকে রক্ষা করা ও সুন্দর ক্রমবৃদ্ধির পথে চালিত করার নামই দীক্ষা গ্রহণ বা নিয়মনীতি গ্রহণ ও পালন!
মনের মধ্যে যেন কথার তুফান উঠেছে! আপন মনে কে যেন ব'লে চলেছে, দীক্ষা নেওয়ার কথায় মানুষের কোথায় যেন ইগোতে বাধে, বকোয়াস কুসংস্কার ব'লে বোধ হয়। অথচ এই অতি বোদ্ধারাই দিন শেষে গিয়ে গুরুর বদলে গরুর ল্যাজ ধ'রে বৈতরণী পার হ'তে চায়! আবার ইয়ং পড়াশুনাজানা ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা সমাজ কো বদল ডালোর নামে নানা মনভোলানো ভুল অসম্পূর্ণ চটজলদি সমাধানের সস্তা রঙিন স্বপ্ন দেখানো মতবাদে ভরপুর রাজনৈতিক দলের সদস্য হ'তে দ্বিধা করে না! সেখানে উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবন বিধ্বংসী মারণ নেশায় মেতে ওঠার জন্য নাম লেখাতে মরিয়া হ'য়ে ওঠে! সেখানে রাজনৈতিক গুরুর জীবন কতটা সুন্দর, কতটা সুশৃঙ্খল, কতটা জ্ঞানে সমৃদ্ধ, কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জীবনের অধিকারী, কতটা সৎ, কতটা বৃত্তিপ্রবৃত্তির অধীশ্বর, কতটা প্রেমময়-ভালোবাসাময় জীবনের অধিকারী ইত্যাদি সেসব দেখার ধার ধারে না। এটাই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়তি, ভাগ্যের পরিহাস! তারা এতটাই মানবতার জয়গানে মাতাল যে প্রকৃত মানবতার গান তারা শুনতে পায় না, দেখতে পায় না প্রকৃত মানবতার পূজারী মানুষরূপী জীবন্ত ঈশ্বরকে! কারণ তাদের কাছে ঈশ্বর শব্দটাই এলার্জি! অথচ এরাই আবার গঙ্গা জলে স্নান ক'রে 'মা মা ব'লে, বাবা বাবা' ব'লে কপালে সিঁদুর লেপে কারণসুধা সহযোগে ঈশ্বরের নামে চোখের জল ফেলে, কুম্ভীরাশ্রু! এরাই আবার যৌবনে বা যৌবন শেষে তাবিজ-মাদুলি, লালনীল সুতো, শেকড় বাকর, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি নির্ভর হ'য়ে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে দিনের শেষে যন্ত্রণাময় সংসার জীবন কাটায়। এরা বিপদতারিণীর পূজা ক'রে নিজের জীবনের হাজারো ভুল থেকে উদ্ভূত বিপদকে জীবন থেকে সংসার থেকে তাড়াতে চায়! এরা জীবনে রিপুতাড়িত হ'য়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে ডুবে থাকা উচ্শৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী হ'য়ে রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই যেখানে বিপদে পড়ে সেখানেই ভাবে ঈশ্বরকে স্মরণ করলেই ঈশ্বর আমার বাপের চাকর হ'য়ে তৎক্ষণাৎ তড়িঘড়ি ছুটে আসবে কোলে তুলে নিতে! এটাই এদের বিশ্বাস! এটাই এদের ঘরের সংস্কার! এটাই এদের জীবনের সংস্কৃতি! এইভাবেই এরা স্বামীস্ত্রী পুত্রকন্যা বাঁচেবাড়ে, বাঁচতে চায়, বাড়তে চায়!
আচ্ছা এরজন্যে ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষেরা কি দায়ী নয়? ভন্ড কপট ধর্মব্যবসায়ী ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের নিয়ে শব্দ খরচ ও সময় খরচ করার মত সেই পর্যাপ্ত সময় ও এনার্জি আর আমার নেই। একটুকুও যা সময় ও এনার্জি অবশিষ্ট আছে তাতে বলতে পারি আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী ঈশ্বরপ্রেমী ভক্ত ঈশ্বরের সাম্রাজ্য সৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক! সবচেয়ে বড় বেঈমান! সবচেয়ে বড় নেমখারাম! অকৃতজ্ঞ! আমিই ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় প্রেমিক, বড় পূজারী, বড় ভক্ত ঈশ্বরের বারবার মানুষ রূপে মানুষের মাঝে আসাকে নানা ধর্মীয় রীতিনীতি ও কথার কূটকচালির মধ্যে গুলিয়ে দিয়েছি যাতে মানুষ ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে চিনতে না পারে আর চিনলেও তাঁর বিভিন্নরূপ নিয়ে বা একই রূপের মাঝে বিকৃত-অবিকৃত পরিবেশনের ধুয়ো তুলে বহুধা বিভক্ত হ'য়ে যায়! এর থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ পবিত্র ঈশ্বর অবিশ্বাসী নাস্তিক, এমনকি ভন্ড কপট ধর্ম জগতের তামাম ভক্তকূল! আমি, হ্যাঁ আমি পাক্কা একটা ধর্ম জগতের আস্ত ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বরাহনন্দন!
যাই-ই হ'ক, মনের মধ্যে অনেক কথার তুফান ওঠে ও উঠবে আর সেই তুফানে আলোচনার পথ মেইন লাইন ছেড়ে কর্ড লাইনে যাতে চলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সতর্কতার সিগন্যালস্বরূপ আবার ফিরে আসি যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই আলোচনায়।
আমার ঠাকুর, আমার প্রিয়পরম, আমার এক ও একমাত্র ইস্টদেবতা, আমার গুরু, আমার জীবন্ত ঈশ্বর, আমার ভগবান, গড বা আল্লা বা সৃষ্টিকর্তা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমায় বললেন,
তুমি একমাত্র ঈশ্বরের জন্যে, অন্য কারও জন্যে নও
আর তুমি ঈশ্বরের জন্যে বলেই তুমি সকলের জন্যে।
এখন এখান থেকে আমি কি শিখলাম? আমি কি কিছু শিখেছি? সেই যে কত ছোটবেলায় ঠাকুর নির্দেশিত সময়ে নাম ও দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছি আজ জীবন সায়াহ্নে এসে এই বাণী সম্বন্ধে কিছু কি উপলব্ধি হয়েছে বা অভিজ্ঞতা লাভ করেছি?
এই বাণীর প্রতিটি শব্দ আর লাইন ধ'রে ধ'রে যদি আমি এগিয়ে যায় বা বিশ্লেষণ করি তাহ'লে কি দেখতে পাবো? আসুন পরবর্তী 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য-২' আর্টিকেলের আয়নায় নিজের মুখ দেখি! দেখি কতটা নির্মল নাকি মলপূর্ণ মুখ!
ক্রমশঃ।
( লেখা ১৩ই অক্টোবর'২০২০ )

কবিতা/গানঃ গেয়ে যায় গান।

আমি মুসাফির
ঘুরে বেড়ায় পথে পথে,
দীনদুঃখীদের কান্না আমি
এনেছি বহু দেশ হ'তে।
বিনিদ্র রজনী কেটে গেছে কত
দেখেছি তাদের জীবন,
তাই তো আমার হৃদয় কাঁদে
হে যুগপুরুষোত্তম।
তোমার হৃদয়ে তাদেরি সুখ
তাদেরি ব্যথা বেদনা;
কেমনে আমি বোঝাবো বলো
সহজ নহে এ দ্যোতনা।
তাই আমি গেয়ে যায় গান
তাদেরি কান্না, তাদেরি দুঃখ
তাদেরি হাসি তাদেরি সুখ
লিখে লিখে দিন রাত্রি
জুড়াবো আমার প্রাণ।
তাই---- আমি গেয়ে যাই গান।
( লেখাটা অনেক আগের)

কবিতা/গানঃ জীবনের গান।

এ জীবনে আর কতদিন রবো,
জীবন প্রদীপ নিভে গেলে পরে
জীবনের কথা আর কবে কবো।
তোমার আমার ব্যর্থ হবে এ জীবন'
যদি জীবনের গান না গাই।
বৃথাই হবে এ জনম
কালরাত্রির টের যদি না পায়।।
আমি রবো না-কো আর ঘরে
তুফান হ'য়ে ছুটবো আমি
ঝঞ্ঝা ক্ষুব্ধ তীরে।
গেয়ে যাবো গান
আর লিখে যাবো সবি;
মরণের পাশে রেখে যাবো শুধু
প্রভু! তোমার জীবনের ছবি।
তাই ভাইসব গেয়ে যাও
জীবনের জয়গান,
আমার সুরে মিলিয়ে এ সুরা
করো সবে এ সুধাপান।

(লেখা অনেক আগের)

কবিতা/গানঃ রাখবো মান।

জীবনে কত কিছু পেলাম
পেলাম না শুধু জীবন।
জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে
দেখি পলকা এ জীবন।
আমার এ হৃদয় কেঁদে কেঁদে ফেরে
খুঁজে যায় বলিষ্ঠ জীবন
তবু নাহি মেলে।
এ জীবনে হ'লো না মহান কাজ সারা
হ'লো না সমাপন জীবনের জয়গান গাওয়া।
তাই আমি গেয়ে যাবো
আমার পরাজিত জীবনের গান
মরণ তুমি ডেকো না আমায়
রাখবো আমি ঐ মহাজীবনের মান।


(লেখাটা অনেক আগের)

Thursday, December 22, 2022

কবিতাঃ তুমি প্রভু তুমি মহান।

আপনারে নেতা বলে নেতা সে নয়
লোকে যারে নেতা বলে নেতা সে হয়।
নেতা বলে আমি ন্যাতা দ্যাখ আমারে চেয়ে
লোকে বলে চিমসা পেটে জমেছে চর্বি
আমাপা খেয়ে খেয়ে।
নেতা বলে আমারে দেখে লাগে না তোর ভয়!?
যাক ভোট পাকাবো ঘোট দেখবি ক্ষয় কারে কয়।
লোকে বলে দ্যাবতা তুমি গোর লাগি পায়
ভুল যদি কিছু ব'লে থাকি ক্ষ্যামা তাই চায়।
আজ আমি রাজা দিব ভোট তোমারে
কাল তুমি হবে রাজা তখন কে চেনে কারে?
জিতলেও তুমি নেতা হারলেও তুমি
নেতায় নেতায় নেতাতুতো ভাই
তলেতে তলেতে যোগ তব পদ চুমি।
আঁটি হ'য়ে রবো পড়ে আমে দুধে যাবে মিলে
নেতায় নেতায় নেশাতে ডুবে আমারে খাবে গিলে।
তাই বলি নেতা তোমায় শতকোটি পেন্নাম
আভুমি সালাম তোমায় তুমি প্রভু তুমি মহান।---প্রবি।


(রচনা ১৩ই মে শুক্রবার ২০২২)

জিনিসের দাম ও আম আদমি।

হ্যাঁ! ভাবুন, একটু ভাবুন।
যখন যেমন তখন তেমন চলুন।
এখন আলুর দাম বেশী যত পারবেন কষ্ট ক'রে আলুর চেয়ে কম দামী সব্জি (?) খান। সর্ষের তেল বাদ দিয়ে কষ্ট ক'রে সময়ানুযায়ী কম দামী (?) তেল খান, কম খান। জিনিসের দাম জিনিসের দাম ব'লে চেঁচায় আমরা কিন্তু বাজারে কোনও জিনিস পড়ে থাকে না। একশ্রেণী আছে যারা দরদাম করে না আমাপা বাঁ হাতি পয়সা আছে বাজারে গিয়ে শুধু ব্যাগ দিয়ে বলে 'ঐটা দে'। আর এক শ্রেণী আছে যারা ফুটানি দেখাতে তা পকেটে ডান হাতি বা বাঁ হাতি যে হাতেরই রোজগার থাকুক দরদাম করতে লজ্জা পায়। বুক শালা ২০ ইঞ্চি কিন্তু শ্বাস নিয়ে দম বন্ধ ক'রে কষ্ট ক'রে বুক ফুলিয়ে ৫৬ ইঞ্চি ক'রে বুক টান টান ক'রে চলতে চায় হাটে বাটে বাজারে। আবার এর সংগে কিছু গরীবও হাত মিলিয়ে ধারদেনা ক'রেই হ'ক আর পরিশ্রমের পয়সা গাবিয়ে দিয়েই হ'ক মাল কিনে নেয় বাজারে ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়ে। মরে কারা? মরে আমার আপনার মত গলা চোষা আম আদমী। যারা প্রতিদিন জিনিসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গলা ফাটাবে আবার মাথা নীচু ক'রে সেই দামী সব্জি কিনে খাবে। বললে বলবে, তাহ'লে কি করবো? কি খাবো? তবুও যে সব্জীর দাম বেশী সেই সব্জীই কিনে খাবে। অনেক আছে কম দাম হ'লে নাক সিটকায়। ব্র্যান্ডের চকমা দেখায়। যদিও ব্যান্ডের মূল্য আছে তথাপি বর্তমানে এই হতভাগা চোরা দেশে কোনও মূল্য নেই।
তাই বলি, আসুন দামী তা সে সব্জী, তেল, নিরামিষ আমিষ খাবার, ফল ইত্যাদি যাই-ই হ'ক খাওয়া সময়িক বয়কট করুন আম জনতা দেখুন দাম কোথায় এসে নাবে।
এছাড়া গরীবের পোড়া দেশে গরীব আম আদমীর অন্য উপায় নেই। আসুন একেই বিপ্লব প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ার করুন।
এই যে রেশনে বিনে পয়সায় চাল গম দিচ্ছে সেই চাল গম নিয়ে বাজারে ১০টাকায় বিক্রি ক'রে দিচ্ছে একশ্রেণী (সংখ্যায় তারা যদিও কম, তবে খুব কম নয়) আর সেই চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকায়!!!!!! কারা কিনছে রেশনের বিনে পয়সার চাল তিরিশ টাকায়? ক্রেতা আছে তাই বিক্রি হচ্ছে না? ক্রেতা না থাকলে রেশনের বিনে পয়সার চাল ১০ টাকায় কিনতোই বা কোন দোকানদার বিক্রেতা? আবার সেই ১০ টাকা দিয়ে কম দামে কেনা রেশনের চাল যে বেশী দামের চালের সংগে মিশিয়ে দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না তাই-ই বা কে দেখতে যাচ্ছে? আর খোলা বাজারের চাল রেশনে চাল গম ফ্রি দেওয়া সত্ত্বেও সবচেয়ে কম দামের ভালো চাল ৪৯ টাকা আর তাই কিনে খাচ্ছে মানুষ আর অম্ল ঢেঁকুর তুলে বলছে শালা সেদিনের ৩০ টাকার চাল ৪৯ টাকা হ'য়ে গেল!? কেন হ'লো? লোকে তো রেশনে বিনি পয়সার চাল পাচ্ছে তাহ'লে বাজারে দাম কমছে না কেন? ৩০ টাকার চাল বেড়ে ৪৯ টাকা হয় কি ক'রে? উত্তর আছে?
উপায় কি এখন? গরীবের পোড়া দেশে গরীব আম আদমীর অন্য উপায় নেই। আসুন কেনা বয়কট কিম্বা কম কেনা একেই বিপ্লব প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ার করুন।
আবার রেশন ব্যবস্থাও অদ্ভুত। যারা এ পি এলের যোগ্য তারা বি পি এল তালিকাভুক্ত হ'য়ে বসে আছে আর যারা সত্যি সত্যিই বি পি এল তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য তারা এ পি এল হ'য়ে বসে আছে। আবার কতজন যাদের কার্ডও নেই। তাদের নিয়ে কারও হেলদোল নেই। আর কত রকমের যে কার্ড আছে তার ইয়ত্তা নেই। এক একটা কার্ডে এত চাল গম পাচ্ছে এক একজন যে মাসে তা ফুরোচ্ছে না বাজারে বিক্রি ক'রে দিচ্ছে। সবার জন্য কেন যে এক রকমের কার্ড হয় না তা বোঝা দায়। ৬-৮ রকমের কার্ড আছে। যখন বিনা পয়সায় দিচ্ছো তখন এত রকমের কার্ড কেন? গরীব বড়লোক যাচাই ক'রে নেবার ব্যবস্থা করো। আর প্রকৃত সত্যি সত্যিই যাদের দরকার নেই তারা নিও না। আর একটু চালের কোয়ালিটি ভালো দিলে আমার মনে হয় খোলা বাজারে দাম ঊর্ধ্বগতি হ'তে পারবে না। আবার বিনে পয়সায় চাল গম দিলে বলবে, এই চাল খাওয়া যায় নাকি? শালা গ্যাস ফুরিয়ে যাবে সেদ্ধ হ'তে হ'তে। আবার গমের বেলায় বলবে শালা গম তো নয় যম। আটা মাখলে ফেটে ফেটে যায় রুটি! কোনদিকে যাব? তবে সরকারকে এটাও ভেবে দেখতে হবে, যে চাল দিচ্ছে আম জনতার জন্য তা দেশের শাসক শ্রেণী নেতানেত্রী খাচ্ছে কিনা। 'আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়' ব'লে একটা কথা আছে। আসল কথাটা হ'লো, একটু বেশী না সামান্য একটু ভাবলেই হয়। আর যদি চাল ফোটাতে গ্যাস ফুরিয়ে যায় তাহ'লে গ্যাসের দামটা তো কমিয়ে দাও প্রভু। একদিকে দেবে যেমন অন্যদিকে ঘুরিয়ে মারছো কেন মালিক? যাই হ'ক এটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় জিনিসের দাম।
অতএব আসুন, যে জিনিসের দাম বেশী সেই জিনিস খাওয়া বয়কট করুন তা সে কর্তা বা গিন্নি কিম্বা ছেলেমেয়ে যেই প্রতিবাদী হ'ক তাঁর বিরুদ্ধে সংসারের একজন রুখে দাঁড়ান, বোঝান তাকে সমগ্র অবস্থা।
এছাড়া গরীবের পোড়া দেশে গরীব আম আদমীর অন্য উপায় নেই। আসুন একেই বিপ্লব প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ার করুন।
আর কে কাকে বোঝাবে? আর বোঝাবেন বা কি? যদিও এখন সারা বছরই সমস্ত তা সে যে সব্জি হ'ক আর যাই হ'ক বাজারে পাওয়া যায়। আর তাই জিভের স্বাদ পাল্টাতে শীতকালে ভাগাড়ে চাষ হওয়া অ্যায়সা বড়া ফুলকপি যেমন কিনে খাই আমরা ৪০টাকা দামে যে ফুলকপি গরুতে পর্যন্ত খায় না ছিবড়ে ব'লে ঠিক তেমনি অফ সিজনে গরমের সময় চিমসে মারা শুঁটকী ফুলকপি বাঁধাকপি চড়া দামে কিনে দ্বিধাকরি না; উলটে ওই শুঁটকি ফুল বা বাঁধাকপি হাতে ঝুলিয়ে হেলতে দুলতে আনতে গর্বে বুক ফেটে যায়; এমনই আমাদের জিভের লালসা আর স্ট্যাটাস! আবার শীত পড়তে না পড়তেই অর্থাৎ শীতের শুরুতেই খেতে হবে শীতকালীন সব্জী, ফলমূল ইত্যাদি তা সে যত হাই দাম হ'ক! ঠিক তেমন অন্য সিজনের বেলায়ও।
যাই হ'ক যদি সবাই যে জিনিসের দাম অগ্নিমূল্য সেই জিনিস কিছুদিন খাওয়া একেবারে ত্যাগ করে কিম্বা কম কেনে পরিমানে, তুলনামূলক কম দামের অন্য জিনিস তা সে সব্জি হ'ক, ফল হ'ক, ভোজ্যতেল হ'ক, আমিষ নিরামিষ খাবার হ'ক কেনে, খায়, অভ্যাস ক'রে তাহ'লে হয়তো এই পোড়ার দেশে সবাই মিলে যদি একটু নিরুপায় হ'য়ে পেটে সাময়িক তালা লাগায়, বিলাসিতা ও আমাপা বিলাসিতা ত্যাগ করে তাহ'লে হয়তো পরিবর্তন হ'লেও হ'তে পারে। তবে একেবারে কেনা বন্ধ রাখলে ভালো কেননা যেমন ধরুন এক আঁটি লাল শাকের দাম দশ টাকা কিম্বা একটা লেবুর দাম দশ টাকা সেই শাকের আঁটি বা লেবুর বিক্রয় মূল্য এতটাই বাড়িয়ে রাখা হবে ক্রয় মূল্য থেকে যে তাদের সব শাকের আঁটি বা লেবু বিক্রি না হ'লেও ক্রয়মূল্য ও লাভ কম হ'লেও উঠে যাবে। পরের দিন দেখা যায় সেই না বিক্রি হওয়া শাকের আঁটি ফেলে দেওয়া হয়েছে গরু খাচ্ছে, দামী পচা লেবু গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায় নর্দমায়।
তাই আসুন, কেনা বন্ধ করুন। অকারণ বেশী কেনার অভ্যাস ত্যাগ করুন। কম কিনুন। তুলনামূলক কমদামী জিনিস ক্রয় করুন। সিজনের শুরুতে কেনা বন্ধ করুন। এছাড়া গরীবের পোড়া দেশে গরীব আম আদমীর অন্য কোনও উপায় নেই।
আসুন একেই বিপ্লব প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ার করুন।
বললাম এই জন্যে যদিও জানি কোনও আশা নেই তবুও আশায় মরে চাষা। আমি একজন মরা চাষা।----প্রবি। (১৩ই মে শুক্রবার' ২০২২)

Wednesday, December 21, 2022

কবিতাঃ ভুলের পাহাড়!

ভুলের পাহাড় পড়ছে ভেঙে, পড়ছে ভেঙে মাথার ওপর
দিগন্ত কাঁপিয়ে আসছে ধেয়ে, আসছে ধেয়ে কালো প্রহর!
ভুলের কাঁটার পাহাড় মুকুট হ'য়ে বসছে গেঁথে মাথার 'পরে
দয়াল! বাঁচাও তুমি, বাঁচাও আমায়; যাবোই আমি এবার মরে।
আমার ভুলে ক্ষত আমি অন্যের ভুলে বিক্ষত;
জীবন আমায় দেখায় ভয়; বলে,
'আসছে দেখো ওই ঘোর আপদ-বিপদ শতশত!'
এমনি সময় হা রে রে রে ক'রে ঝড় ঝঞ্ঝা আসলো ভীষণ তেড়ে
দয়াল প্রভু! দয়াল আমার! তুমি ছাড়া আর নেই যে কেউ আমার
বরাভয় হাতে দাঁড়াও তুমি আমার পাশে, আমার হৃদয় পাড়ে
ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলির দাও দুয়ার ভেঙে, দূর করে দাও আঁধার।
প্রভু! দূর ক'রে দাও আঁধার! থাকবো আমি তোমার চরণ তলে পরে।
প্রবি।

( আজকের দিনে ২০১৮ সালে লেখাটা লিখেছিলাম। লেখাটা চোখে পড়লো তাই পোষ্ট করলাম আবার নিজেকে নিজের ভুলের আয়নায় ফিরে দেখার জন্য।)

Monday, December 19, 2022

কবিতাঃ ভালো বাসা!

তোমায় যদি বাসি-ই ভালো সবাইকে কেন পারি না ভালোবাসতে!
তোমার মধুর হাসির ঝলকে ঝলকিত আমি তবু পারি না কেন হাসতে!!
তোমার আলোয় আলোকিত আমি তবুও ঝরে না কেন আলো আমার অঙ্গে!
তোমার চলনে মজিনু আমি তবে কেন তব চলন চলে না মোর সঙ্গে!?
তোমার প্রেমে পাগল আমি তবুও পারি না আমি বিলাতে প্রেম!
তোমার হাতে হাত রেখে চলছি পথ তবে কেন পারি না ধরতে হাত অন্যের!?
তোমারে বেসেছি ভালো কিন্তু থাকি খারাপ বাসায়
ভালো বাসায় থাকলে পরে তবে অন্যেরে ভালোবাসা যায়।
ভালো বাসায় থাকলে পরে মুখেতে সদা মধু হাসি ঝরে
ভালো বাসায় আছে খাঁটি প্রেম থাকলে সেথায় হৃদয়ে উপচে পড়ে।
ভালো বাসায় আছে এক মজবুত-শক্ত হাত যেথায় আছে বরাভয়!
যে হাতে রাখলে হাত অন্যেরে জোগায় শক্তি, জাগায় ভক্তি, বলে,
ওরে ক্ষয় নাই, নাই ক্ষয়! আছে হেথায় পরম নিশ্চিন্ত এক আশ্রয়!!
এসো হেথায়, ছুটে এসো, চলে এসো, চলে এসো দলে দলে
জীবন খুঁজে পাবে হেথায়, যেথায় ফোটে পারিজাত ফুল আর
অমৃতবৃক্ষে অমৃত ফল ফলে!
ভালো বাসায় আছে খাঁটি ভালোবাসা আছে হাসির রত্নমালা
খুঁজে নাও সেই ভালো বাসা আর খুঁজে নাও সেই অমৃত হালা!


(রচনা ২০শে ডিসেম্বর'২০১৮)

হিজাব।

"মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ হ'য়ে মাথায় হিজাব প'ড়ে নামাজ পড়েন"!!
-----------------বিজেপি নেতা রাজু।
ব্রাহ্মণ হ'য়ে নামাজ পড়ার জন্য ভুল, অন্যায়, অপরাধ, দোষ কোথায়!?
হজরত মোহাম্মদ কি শুধু মুসলমানদের জন্য নেবে এসেছিলেন?
শ্রীরামচন্দ্র কি শুধুমাত্র হিন্দুদের ঈশ্বর?
নামাজের সূরা পাঠ করার কি শুধু মুসলমানরাই অধিকারী?
নামাজ পাঠ অমুসলিমদের জন্যে নিষিদ্ধ? পাপ?
গীতা পাঠ কি শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
ব্রাহ্মণ হ'লে কোরাণ পাঠ করা যাবে না, নামাজ পড়া যাবে না এই কথা হিন্দুদের
কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে?
গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোরআন, চৈতন্য চরিতামৃত, কথামৃত, সত্যানুসরণ ইত্যাদি গ্রন্থে নিবদ্ধ বাণী কি আলাদা আলাদা (ধর্ম নয়) মতের ঈশ্বরের বাণী!?
এইসব গ্রন্থ কি অন্য মতের অনুগামীদের কাছে নিষিদ্ধ?
হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্ঠান, বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্ম নয় মত। সব মতের কি আলাদা আলাদা ঈশ্বর?
প্রত্যেক মতে আছে 'ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়" তাহ'লে এতগুলো মতের বা জাতের এতগুলো জীবন্ত ঈশ্বর কেন!? তাঁরা কি আলাদা? তাঁরা কি পরস্পর বিরোধী?
ঈশ্বর বিশ্বাসী ও ধর্ম বিশ্বাসীরা কি মনে করেন ঈশ্বর স্বয়ং বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্যে শুধু নেবে আসেন?
তাঁর বলাগুলি কি শুধু তাঁর অনুগামী বা তাঁর সৃষ্ট মতাবলম্বীদের জন্যে?
এখন উত্তর কি?
----------------------প্রবি।
(রচনা ২০শে ডিসেম্বর ২০১৮)

কবিতাঃ হে অদ্ভুত জীব!

দু'হাত পেতে শুধু নিলে আর নিলে
নীল শৃগালের মত; ফিরিয়ে কি দিলে!?
শুধুই পেয়ে গেলে পাওয়ার দিনে
আর যেদিন দেওয়ার এলো দিন
সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিলে!
আজ আত্মমদগর্বে গর্বিত তুমি তোমার সাফল্যে!
ভুলে গেলে ফেলে আসা ব্যর্থতার কাঁটায় ভরা
যন্ত্রণা বিদ্ধ দিনগুলি বালখিল্য আচরণে!
আর হ'লে বিস্মৃত তুমি হে নরাধম
ঈশ্বরের কাছে মাথা ঠোকার মুহুর্তগুলি!
বাঃ বন্ধু! বাঃ! এই না হ'লে মানুষ বলে?
শুধুই চেয়ে গেলে জীবনভর
আর যখন দুঃখের রাত কেটে সুখের সূর্য ওঠে
কোনও এক সুন্দর সকালে তখন
দুঃখের দিনের সখাকে ক'রে দিলে পর!
বন্ধু! হাভাতের দিনে হাত পেতে চেয়ে চেয়ে
মুখে ফেনা তুলে ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে
মৃত্যু যখন একমাত্র সাথী
ঠিক তখনি একদিন দেখলে ভাতের মুখ
সূর্য স্নাত ভোরের কোমল আলোর মত
দিলো ভরিয়ে জীবন দিয়ে ভরপুর সুখ!
আকাশ থেকে নেবে আসা রথে চড়ে আসা
অদৃশ্য এজ রাজভিখারির হাতের স্পর্শ
তোমাকে ক'রে দিল উৎফুল্ল!
সেদিন থেকে ফেনিল সমুদ্রের জলরাশির মত
সাদা ভাতের ডালি ঢেকে দিয়েছিল জীবন তোমার!
আর ঠিক তখনি করলে মনমানি!
ভুলে গেলে সেই হাভাতের দিনগুলির
নির্মম পরিহাস, বুক ভরা দীর্ঘ নিশ্বাস!
জীবনভর পাতা হাত আর করলে না উপুর
জীবন সূর্য সকাল কেটে হ'লো দুপুর;
বাকী আছে আর সাঁঝবেলা
এবার ওপারে যেতে হবে চুকিয়ে এ পারের খেলা!
এবারেও প্রতিবারের মতো পাতবে তুমি হাত
দিন শেষে দেখবে চেয়ে নির্ম্মম এক সত্য
শেষের সেদিন ভয়ংকর আপন যারা তারা
উত্তাল জীবন সমুদ্রে সবাই আছে মত্ত
নেই কেউ তোমার পাশে, কেউ দিচ্ছে না সাথ!
যেদিন রাজভিখারী এলো তোমার দ্বারে
ভরদুপুরে তোমার দরজায় কড়া নাড়ে
সেদিন তুমি তাঁরে দাওনি কিছুই
দিয়েছিলে তাঁরে ফিরিয়ে শূন্য হাতে
দরজায় পড়েছিল ঘা বারংবার
আর তুমি ড্যাম কেয়ার!
ঘুমিয়ে ছিলে নিশ্চিন্তে নরম বিছানার 'পরে
বৃত্তি রসে মাতাল তুমি শুনেও শোনোনি তাঁরে!
শোননি সেদিন সে ডাক যে ডাক তোমায় বাঁচাবে বলেই
ডেকেছিল বারংবার আর পেতেছিল তাঁর বরাভয় হাত
নিশ্চিত ভয়ঙ্কর বিপদ বা মৃত্যুর ছোবল থেকে।
হে অদ্ভুত জীব!
আর তুমি! সেদিনের কাঙাল তুমি!
ফেলে আসা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে
লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা দিনগুলির তুমি!
আজ ভুলতে চাও তুমি সেদিনের উলঙ্গ তোমাকে!
আর ভুলতে চাও তাঁর উজার ক'রে দেওয়া দয়াকে!
ঠিক আছে তবে তাই-ই হ'ক।
( ২০শে ডিসেম্বর' ২০২১)

কবিতাঃ খুঁজে নাও তাঁরে?

অর্থ চাই, মান-যশ চাই না।
অর্থ চাই অনর্থ ঠেকাতে।ধর্ম চাই, ফুল-চন্দন দিয়ে পুজো চাই না।
ধর্ম চাই ধর্মের নামে অধর্ম মারতে।
চাই শিক্ষা, কুশিক্ষা চাই না।
শিক্ষা চাই ব্যবহারিক শিক্ষার প্রসার ও মুখ শিক্ষার অবসান ঘটাতে।
ধন চাই, ধনতৃষ্ণা চাই না। ধন চাই ধনের অপপ্রয়োগ ঠেকাতে।
কাম চাই, কামুকতা চাই না। কাম চাই কামের সার্থকতা শেখাতে।
চাই ক্রোধ, চাই না ধ্বংস। নিয়ন্ত্রিত ক্রোধ চাই ক্রোধীকে বাগে আনতে।
চাই লোভ, চাই না লালসা।
লোভ চাই শরীরের প্রয়োজন মেটাতে ও
চাই ভারসাম্য নষ্টের লালসা খতম করতে।
মোহ চাই, নিশ্চয়ই চাই। চাই না অজ্ঞান, অবিদ্যা মোহ নামে।
মোহ চাই প্রকৃত মোহের চেতনা জাগাতে।
মদ চাই, চাই না আত্মমদমত্ততা।
মদ চাই আত্মমদমত্ততাকে ইষ্টমদমত্ততায় ঘুরিয়ে দিতে
আর আমি যে পরমপিতার সন্তান, শক্তির তনয়
সে কথা বোঝাতে মাথা উঁচু ক'রে বুক টানটান ক'রে
দৃপ্ত ভঙ্গিতে তোমার আমার সবার মাঝে;
তাই-ই তো এ জীবনের সার্থকতা।
আর মাৎসর্য? চাই তবে অন্যের ক্ষতির জন্যে নয়।
মাৎসর্য চাই জীবাত্মার স্তর পেরিয়ে মহাত্মায় উন্নীত হ'য়ে
পরমাত্মায় বিলীন হ'তে।
এও কি সম্ভব? সম্ভব, সম্ভব সব সম্ভব।
কিছুই নেই বা নয়, না বা হয় না
এই কথা এই দুনিয়ায় অসম্ভব!
তাই চাই গুরু।
গুরু চাই, চাই না গুরু হ'তে। 
গুরু চাই গরুর গুরুগিরি ছোটাতে।
গুরু চাই, চাই না গুরুর নামে গরু।
গুরু চাই গরুর হাত থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে।
গুরু চাই, চাই না গুরুপাক হ'তে।
গুরু চাই গুরুমুখ হওয়ার শিক্ষা পেতে!
গুরু চাই, গুরুর গুরুত্ব বুঝতে ও বোঝাতে।
কোথায় পাবো তাঁরে!?
তমসার পর অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষ ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভুত
বারেবারে তোমার আমার সর্বজীবের তরে!
মানুষের মাঝে মানুষ মায়ের গর্ভে
রক্তমাংসের জীবন্ত ঈশ্বর রূপে!
খুঁজে নাও তাঁরে। 
সেই-ই গুরুরূপী জীবন্ত ঈশ্বরে।
---প্রবি।

(রচনা ১৯শে ডিসেম্বর'২১)

Saturday, December 17, 2022

কবিতাঃ আশ্বাস বাণী!

তথাগতর ধ্যানে মগ্ন,
তথায় যাবো ব’লে।
হৃদয়বাণী পড়ে ঝ’রে
আকাশবাণীর মত
মনের মাঝে ঝিরঝিরিয়ে
মেঘমল্লার হ’য়ে---------
‘ফিরে চল মন, নিজ নিকেতনে’!!
নিগূঢ় রাত্রির নিস্তব্ধতার কলতান
গ্রাস করে ধ্যানস্থ আমায়;
নিয়ে যায় তথাগত সারথী হ’য়ে
হাত ধ’রে তথায় ‘নিজ নিকেতনে’!
নিকষ কালো অন্ধকার ফসফরাস হ’য়ে
আছড়ে পড়ে তথাগতর গায়!
সম্মোহিত আমি চলে যাই
হিমেল হাওয়ায় ভেসে
পিছু পিছু রাত্রির অন্ধকারকে
গায়ে মেখে নিশ্চিন্তে পরম নির্ভরতায়!
চলার পথে যেতে যেতে দেখি সেথায়
নীলাভ সেই আলোর মাঝে দাঁড়ায় এসে
ষড় রিপুর প্রথম রিপু,
স্বপ্নপরীর বেশে!
আলোর নাচন চোখের তারায়
অধরেতে কাঁপন ধরায়
মিষ্টি হেসে বলে আমায়,
‘যাচ্ছো কোথায়? এসো হেথায়!
হৃদ মাঝারে রাখবো তোমায়!
জীবন খুঁজে পাবে সেথায়!!!!!!
মন ছনছন, প্রাণ উচ্চাটন,
দেহের মাঝে টনটনানি!
পুরুষ হৃদয়, অশান্ত আমার
বিবেক করে টানাটানি;
আর তখন প্রথম রিপু বলে আমায়,
‘নপুংসক বন্ধু তুমি!
থাক, তোমায় আমি চিনি’।
অপমানে সত্তা আমার দিশেহারা।
মধুর হেসে সারথী বলে,
‘বীরভোগ্যা বসুন্ধরা’!
এমনিভাবে চলার পথে একে একে
রিপুরা সব আসে বন্ধুর বেশে
রামধনু রঙ মাখিয়ে গায়!
আর মধুর হেসে বরাভয় হাতে
প্রতিবার বলে ‘বীরভোগ্যা বসুন্ধরা’
সারথী আমায়!
তথাগতর ধ্যানে মগ্ন রিপু তাড়িত আমি।
‘বিশ্বাস, নির্ভরতা আর আত্মত্যাগ’
বসুন্ধরা ভোগে জীবন মাঝে জেনো
এই তিন বীরত্ব নেয় ভাগ;
আর শোনো বলি তোমায়,
হলাহল ভরা এই বিশ্ব মাঝে
অমৃতময় জীবন খুঁজে
পাবে হেথায়!
শুনি সারথীর আশ্বাস বাণী!
প্রকাশ বিশ্বাস।
( রচনা ১৮ই ডিসেম্বর'২০১৮)

কবিতা/গানঃ নেই আর অন্য।

এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!
তোমার নামে প্রাণ আমার বন্য!
তোমার নাম কেবলি আমার অন্ন!

তোমার নামে প্রাণে প্রাণে
জাগে শিহরণ,
তোমার নামে ওঠে প্রাণে
নামের অনুরণন!
তোমার নামে প্রাণে, মধুরতা আনে!
তুমি আমার-ই!
এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!

মনের মাঝে উঠল বেজে
নামের গুঞ্জন,
প্রাণে প্রাণে নামের পরশ
হৃদয় অনুরঞ্জন!
নবরুপে তুমি, আমার জীবন স্বামী
তুমি সবার-ই!
এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!

তোমার দয়ার পরশ পেয়ে
প্রাণ হ’ল আকুল!
তোমার দরশন লাগি
হৃদয় আমার ব্যাকুল!
তোমার নাম আর তুমি,
অভেদ জানি;
আমি তোমার-ই!!
এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!

জীবন জুড়ে আছো তুমি
আমার জীবন স্বামী!
জীবন খুঁজে পাবো হেথায়
তুমি অন্তর্যামী!
আমার জীবন বীণার মাঝে
তোমার সুর যে বাজে
রিনিঝিনি-ই-ই!!!!
এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!
প্রকাশ বিশ্বাস।
( রচনা ১৮ই ডিসেম্বর'২০১৪ )

( হে হে হে হে কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা সুরে এই গান)

কবিতাঃ ভোট! জোট!! ফোট!!!

দ্বোরগোড়ায় ভোট তাই কোর কমিটির বৈঠক;
বৈঠকে উপস্থিত নেতানেত্রী থেকে প্রশান্ত কিশোর!
এই সেই মমতার তৃণমূল?
যেদিন সিপিএমের অন্ধকার ভেদ ক'রে ফুটিয়েছিল আলোর ফুল,
এনেছিল নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে বাংলার আকাশে ভোর!?
সেদিন কোথায় ছিল প্রশান্ত কিশোর?
সেদিন যারা দিয়েছিল বুদ্ধি, জুগিয়েছিল শক্তি,
জীবন বাজি রেখে ভেঙ্গেছিল সিপিএমের ৩৫ বছরের অচলায়তন
আজ তারা ব্রাত্য?
আজ পিছনে ঠেলে ফেলে সেইদিনের যুবক প্রৌঢ
কারা দিচ্ছে কিশোরের বুদ্ধির পিছনে দৌড়!?
কাজ করছে কাদের স্বার্থ!?
আজ রাজনীতির লড়াইয়ে কর্পোরেটের ছোঁয়া!
আসছে ভোট লাগছে সব ধোঁয়া ধোঁয়া!
আসছে ভোট ভাঙছে দল বাঁধছে জোট!
সবাই সবাইকে বলছে দলে কেউ নয় অপরিহার্য;
ফোট! শালা ফোট!!!!!!-----প্রবি।
( রচনা ১৮ই ডিসেম্বর' ২০২০)

Tuesday, December 13, 2022

কবিতাঃ প্রার্থনা

তুমি যদি দিলে ধরা তবে চিরদিনের জন্য কেন নয়?
নয় কেন প্রতি ক্ষণে প্রতি পলে? নয় উদয়াস্ত জীবন মাঝে
শয়নে স্বপনে জাগরণে? তোমায় পেয়েও যদি না পাই,
না দাও ধরা চিরতরে তবে কিসের জন্য বাঁচা আর
কার জন্যেই বা মরা? তোমায় নিয়ে বাঁচি, তোমায়
নিয়েই মরি এই-ই তো মনের ইচ্ছা; মনের ইচ্ছা মনেই
মরে মরণ -তরণ ঐ নাম জপে এই-ই কি তোমার সদিচ্ছা?
তোমার ইচ্ছা তোমারি আমার ইচছা আমার
তোমার ইচ্ছায় জ্বলে আলো আমার ইচ্ছায় আঁধার।
তোমার ইচ্ছায় আছে দিশা মুক্তির আমার বন্দী দশা
তোমার আছে অমৃতের স্বাদ আমার আছে বিষের নেশা।
তোমায় বাসি ভালো তোমার কাছে ফিরেফিরে আসি তাই
জীবন মাঝে হাজারো ভুল! আছে হাজারো অন্যায়!
তবুও আমার যা আছে তাই দিয়েই
তোমার মাঝে তুমি হয়েই থাকতে আমি চাই
আর প্রার্থনা এই,
বৃত্তি সুখের উল্লাসে যেন তোমাকে আর না হারায়।
প্রবি।

(রচনা ১৪ই ডিসেম্বর '২০১৮)

Monday, December 12, 2022

প্রবন্ধঃ ঈশ্বর কোথায়? ঈশ্বর কে?

ঈশ্বর বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী প্রায় সকলের এক কথা, ঈশ্বর কোথায়? ঈশ্বরকে তো দেখিনি, দেখাও যায় না। তাহ'লে কিভাবে ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে তা বিশ্বাস করবো? রামকৃষ্ণ মঠের মহারাজরা বলেন, শুনেছি-----আমি বই পড়িনি, আর পড়ার একটা বিশেষ ধৈর্য্যও নেই, কারণ ঘোর কলিযুগের প্রোডাক্ট তো তাই, ------- স্বামী বিবেকানন্দও নাকি বলেছেন, ঈশ্বরকে অনুভব না করা পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্বে যেন বিশ্বাস না করা হয়। অর্থাৎ ঈশ্বরকে অনুভব করো তারপর ঈশ্বরকে বিশ্বাস করো। বেদ অধ্যয়ন আমি করিনি। তবে শুনেছি কিম্বা কোথাও পড়েছি; কোথায় পড়েছি এখন অবশ্য মনে নেই। বেদে নাকি আছে 'আমি কে?' এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে একদিন তুমি তোমার ভিতরেই ঈশ্বরকে খুঁজে পাবে; বুঝতে পারবে তুমিই সে। তুমিই সেই পরাৎপর ব্রহ্ম অর্থাৎ শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠ সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্ম, পরমেশ্বর।  রামকৃষ্ণ মঠের এক মহারাজের লেখা পড়ছিলাম ইশ্বর যে আছেন, ঈশ্বরের যে অস্তিত্ব আছে তার প্রমাণ হ'লো আমার অস্তিত্ব। 

এখন প্রশ্ন হ'লো তাহ'লে ঠাকুর রামকৃষ্ণ কে? তিনি কি পরমাত্মা? তিনি কি পুরুষোত্তম? তিনি কি পরমপিতা? তিনি কি সদগুরু? তিনিই কি সৃষ্টিকর্তা? তিনি কি জীবন্ত ঈশ্বর? তাহ'লে আমি কে? আমি যদি ঈশ্বর হবো, ঈশ্বরের অস্তিত্ব হবো তাহ'লে প্রভু রামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই বা কে? কে দেবে উত্তর?  বিবেকানন্দ প্রথম জীবনে যে কথা বলেছিলেন সেই কথা কি তিনি রামকৃষ্ণকে পাওয়ার পর শেষ জীবনেও বলেছিলেন? তিনি ঈশ্বরকে অনুভব না করা পর্যন্ত ঈশ্বরকে না বিশ্বাস করার কথা যে বলেছেন তা তিনি ঈশ্বরকে কিভাবে অনুভব করেছিলেন? তিনি কি ঠাকুর রামকৃষ্ণকে দেখে, ঠাকুরের সঙ্গ ক'রে ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়েছিলেন, ঈশ্বরকে অনুভব করেছিলেন ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছিলেন? নাকি বেদ, বেদান্ত পড়ে, নিজের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজতে খুঁজতে একদিন নিজের ভেতরেই ঈশ্বরের সন্ধান পেয়েছিলেন? বিবেকানন্দ কি সনাতন ধর্ম তথা হিন্দু ধর্মের এবং বেদ-বেদান্তের প্রচার করেছিলেন? নাকি শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রচার করেছিলেন? আমেরিকায় তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেখানে তিনি কোন বিষয়কে হাইলাইটস করেছিলেন? ঠাকুর রামকৃষ্ণ নাকি সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম? কেন মহারাজরা আজও বিবেকানন্দ আর বেদ-বেদান্তের কথায় ব'লে বেড়ান? কেন ধর্মজগতের ধর্মগুরুরা খালি নানা তাত্ত্বিক কথার প্যাচাল পাড়েন? কেন রামভক্ত, কৃষ্ণভক্ত, বুদ্ধ বা যীশুভক্ত, রসুল, মহাপ্রভু বা রামকৃষ্ণ ভক্তরা তাঁদের আরাধ্য দেবতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রূপের মধ্যে তাঁদের আরাধ্য দেবতাকে দেখতে পান না? 

যাই-ই হোক আমার বেদ, বেদান্ত, পুরাণ, উপনিষদ ইত্যাদি গ্রন্থ পড়া হয়নি, পড়া হয়নি একটু আধটু পুরুষোত্তমদের মুখ নিঃসৃত কথামৃত ছাড়া আর কোনও ধর্মগ্রন্থ। আর পড়ার মতো ধৈর্য্যও নেই। আমি ভালো পাঠক, ভালো সাধক, ভক্তও নই। শুধু ভাবি আমার সামনে যখন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা রক্তমাংসসংকুল জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমাত্মা সদগুরু  শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra আছেন তখন আমার কি আর দরকার বেদ, বেদান্ত ইত্যাদি পড়ার? কি দরকার নিজের ভেতরে ঈশ্বরকে খুঁজতে যাওয়ার? তিনারাই তো জীবন্ত বেদ, বেদান্ত, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোরান, সত্যানুসরণ সহ তাঁর ২৫হাজার বাণী ও হাজারো প্রশ্ন উত্তর সহ কথোপকথন। তিনারাই তো জীবন্ত ঈশ্বর। তাঁদের উপস্থিতিই তো আমার কাছে জীবন্ত ঈশ্বর। তাঁদের মুখনিঃসৃত অমৃত কথা আমার জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি, ঈশ্বরকে অনুভব করার সহজ সরল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এক-অদ্বিতীয় উপায়। আমার মন, আমার প্রাণ, আমার হৃদয় বলে, 

'রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপভু, রামকৃষ্ণ, অনুকূল রূপে

সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছো ঈশ্বর? 

তাঁদের প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

তাহ'লে কেন আমি কঠিন পথ অনুসরণ করবো? কেন আমি "মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন" সেই পথ অনুসরণ করবো না? কেন আমি জেনে শুনে পরিক্ষিত সত্য সেই সহজ সরল পথ ছেড়ে অজানা অদেখা কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম পথ অকারণ বেছে নেব? কেন আমি রামচন্দ্র থেকে ঠাকুর অনুকূল পর্যন্ত জীবন্ত ঈশ্বরকে আট আটবার কাছে পেয়েও বনে জংগলে, পাহাড়ে পর্বতে, হাজারো দেবদেবী, ধর্মগুরু ও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে, আমার নিজের অন্তরে বেমতলব খুঁজতে যাবো!? 

ঈশ্বর কোথায়? ঈশ্বর কে? এই প্রশ্নের উত্তরে যখন ঈশ্বর ভক্ত পূজারি বলে, ঈশ্বর তোমার অন্তরে। অন্তরে তাঁকে খোঁজ। আর প্রশ্ন করো নিজেকে 'আমি কে? আমি কে?' তখন মন-প্রাণ-হৃদয় বিদ্রোহী হ'য়ে বলে ওঠে, ধ্যাৎ তোর অন্তর আর অন্তরে খোঁজা। গুলি মেরেছে 'আমি কে? আমি কে? জানা। 

আমি বোকা, আমি মূর্খ, আমি অশিক্ষিত, আমি হাবলা-ক্যাবলা তাই আমি আর ঈশ্বরকে খুঁজতে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা ইত্যাদি কোথাও যাই না। নিজের অন্তরে ও কোনও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজতে যাই না, জানতেও চাই না ও যাইও না 'আমি কে?'। কোথাও গিয়ে ও নিজেকে জানতে চেয়ে এই অল্প ক'দিনের জন্য আসা পৃথিবীতে সময় নষ্ট করতে চাই না। কারণ আমি হাজার বছর বাঁঁচবো না যে সময় নষ্ট করবো। 

আমি পেয়েছি, আমি জেনেছি আমার প্রিয়পরম ঈশ্বরকে। আমার জীবন সার্থক। 

-----প্রবি।

Tuesday, December 6, 2022

উপলব্ধিঃ সাদা পোশাক ও আমরা।

একসঙ্গে অনেকে সাদা ধুতি আর ফতুয়া পড়লে একটা শান্ত সৌম্য ভাব আসে, সুন্দর লাগে। পরিবেশের ওপর তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু সাদা পোশাকের মর্যাদা রক্ষা না হ'লে সাদা পোশাক তার গৌরব হারায়। এখন সাদা পোশাক প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ'রে ফেলেছে। সবাই সাদা পোশাকে সুসজ্জিত হ'য়েই মারণ যজ্ঞের ছক কষে। ফলে গেরুয়া পোশাকের মতো সাদা পোশাকও এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। গেরুয়া পোশাকের আর আগের মতো জৌলুশ নেই। যে গেরুয়া পোশাক ছিল ত্যাগের প্রতীক সেই পোশাক আজ ত্যাগের ওপর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। আর এঁকে দেওয়ার কাজটা একশ্রেণীর গেরুয়াধারীরা নিজেরাই করেছে। ঠিক তেমনি যেখানে যত নোংরামো সেখানে তত একশ্রেণীর সাদা পোশক। -----প্রবি।

( ২৫শে নভেম্বর'২২)

আমার দয়াল ঠাকুর ও আচার্যদেব। (২)

যাই হ'ক, শারীরিক মানসিক নিরাময়ের প্রক্রিয়া শুরু হ'লো তখন থেকে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সান্নিধ্যে ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে। কিন্তু তখনও তিনি আচার্য হননি। আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা তখনও বর্তমান। অথচ বাকসিদ্ধ পুরুষের মতো অলৌকিক ঘটনা সব ঘটতে লাগলো আমাদের পরিবারের প্রত্যেকের জীবনে। ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী তাদের পড়াশুনা, চাকরী, সংসার ইত্যাদি যখনি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয় তখনি ছুটে চলে যেতো শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে আর সমাধান নিয়ে চলে আসতো তারা। কি অদ্ভুত! তাঁর প্রতিটি পরামর্শ, প্রতিটি কথা, প্রতিটি সমাধান মুক্ত করতো আমাদের সংকট থেকে! আজও জানি না কি ক'রে কোন অলৌকিক উপায়ে তা সম্ভব হ'তো!
একবার একটা অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। চাকরী সংক্রান্ত সমস্যায় সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হওয়ায় ছেলেমেয়ে উভয়েই দৌড়ে গেছিল ঠাকুরবাড়ি শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে। সালটা ছিল সম্ভবত ২০১৬। ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে জানতে পেরেছিলাম আগের দিন শ্রীশ্রীবাবাইদাদা কলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন বিশেষ শারীরিক কারণে। মনটা ভেঙে গেল ছেলেমেয়ের। আমাদেরও মনটা বিষন্ন হ'য়ে গেল।
পরদিন ভোরবেলা শীতের ভোর কুয়াশা ঢাকা আকাশ চারপাশ। পুষ্পবৃষ্টির মত হালকা শিশির কণা চোখেমুখে ঝ'রে পড়ছে! প্রার্থনা শেষে আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম যেখানে আচার্যদেব বসতেন সেইখানের উদ্দেশ্যে। স্ত্রী অনেক আগে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। আমরা ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। গত রাত থেকে প্রার্থনা করছিলাম আমরা সবাই শ্রীশ্রীবাবাইদাদার দেখা যদি না পাই দয়াল অন্তত যেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদার দেখা পাই। কিন্তু অবিনদাদা তখন কোথাও দর্শন দিত না।
তখন আমরা চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে যাচ্ছি। স্নানকুন্ডের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি হঠাৎ মেয়ে আমার বললো, বাবা, বাবা অবিনদাদা যাচ্ছে। চেয়ে দেখলাম সত্যি সত্যিই অবিনদাদা শ্রীশ্রীবড়দা বাড়ির দিক দিয়ে এসে আমাদের পাশ দিয়ে বাইক চালিয়ে স্নানকুন্ডের পিছনে বাইক থামিয়ে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ কোথাও নেই! ফাঁকা চারপাশ। ভোরের কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। ফাঁকা জায়গায় অবিনদাদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর তখনি মনে হ'লো যেন দয়াল আমাদের গতরাতে এবং সকালের প্রার্থনা শুনেছে! আর কোনও কিছু না ভেবে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঐ ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অবিনদাদার সামনে হাজির হলাম। হাতজোড় ক'রে প্রণাম ক'রে ঠাকুরবাড়ি আসার কারণ ও শ্রীশ্রীবাবাইদাদার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরলাম। বললাম, আপনি যদি ওদের সমস্যার কথা শোনেন। হাসিমুখে অবিনদাদা ছেলেমেয়ে উভয়ের কাছে সমস্যার কথা জানতে চাইলে দু'জনেই তাদের অন্য কোম্পানিতে চাকরী পাওয়ার কথা জানিয়ে জানতে চাইলো সেখানে জয়েন করবে কিনা।
প্রথমে মেয়ের কথা শুনে তাকে নোতুন কোম্পানী ও বর্তমানে যেখানে কাজ করে সেই কোম্পানি সম্পর্কে, কাজ সম্পর্কে, বেতন সম্পর্কে একের পর এক এত ডিটেইলসে আলোচনা করলেন তা দেখে আমি হতভম্ব হ'য়ে গেলাম! মনে মনে অবাক হ'য়ে ভাবছিলাম অবিনদাদার বয়সের কথা আর নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছিলাম, অবিনদাদার মাত্র ১৬বছর বয়স। এই বয়সে কোম্পানী সম্পর্কে, চাকুরী সম্পর্কে এত জ্ঞান!? এত পরিণত? মন বললো, ১৬বছরের একজন পরিণত কিশোর নয়, যুবক নয় একজন লোক! অনেকক্ষণ কথা বলার পর মেয়েকে নোতুন কোম্পানীতে জয়েন করার আশীর্বাদ করলেন। তারপর বাবা যখন আসবে তখন জয়েন ক'রে এসে বাবাকে জানিয়ে আশীর্বাদ নিতে বললেন। তারপর ছেলেকে হেসে জিজ্ঞেস করলেন ওর সমস্যা কি? ছেলেরও ছিল নোতুন কোম্পানিতে চাকরীর অফার। ছেলের কাছে সব শুনে ছেলেকে সরাসরি না ক'রে দিল। বললো, এখন পকেটে যা ঢুকছে তা ভালোলাগছে না? আরো চাই? তারপর টাকার লোভে নোতুন জায়গায় গিয়ে ৬মাস পরে যদি বের ক'রে দেয় তখন কি হবে? জিজ্ঞেস করলো ছেলেকে। তার থেকে বরঞ্চ এখানেই থাক। এখানেই প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধি সব হবে। ঠিক আছে? আরো অনেক কথা, অনেক উদাহরণ, অনেক ঘটনা তুলে ধ'রে দীর্ঘ আলোচনার শেষে ছেলেকে বললো, কি কিছু বুঝলি? ছেলে মাথা নেড়ে খুশী মনে সম্মতি জানালো। তারপরে বললো, আর কিছু? তাহ'লে আসি? আমরা খুশী মনে তাঁকে প্রণাম ক'রে সরে দাঁড়ালাম। আর ঠিক তখনি একজন বন্ধু এলে তাকে এনফিল্ড বাইকের পিছনে বসিয়ে চোখের নিমেষে চলে গেলেন। আমরা অবাক বিস্ময়ে তাঁর যাওয়ার পথে দিকে চেয়ে রইলাম।
ছেলেমেয়ের সে কি আনন্দ! যাক আসা বৃথা হয়নি। দয়াল ঠাকুর প্রার্থনা শুনেছেন। একটা দুশ্চিন্তা ও অস্বস্তির চাপ মাথা থেকে নেবে গেল দু'জনের। মনে পড়ে গেল, দয়াল ঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "আজও লীলা ক'রে গৌর চাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।" আজ আরো একবার প্রমাণ হ'লো এই বাণীর সত্যতা! প্রমাণ হ'লো সৎসঙ্গে আচার্যদেবের লীলা! ভেসে উঠলো আচার্য পরম্পরার প্রথার মধ্যে দিয়ে পিতাপুত্রের লীলার জ্বলন্ত ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সংকেত!
ছেলেমেয়ের আনন্দে আমারও আনন্দ হ'তে লাগলো। সারাক্ষণ কে যেন মনের মধ্যে এসে ব'লে যেতে লাগলো, আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আছেন দেওঘরে কিন্তু বর্তমানে যাকে নিবেদন করা হয় তিনি নেই এখন দেওঘরে, তিনি কলকাতায় অথচ সমাধান দিলেন ১৭বছরের একটি অত্যাশ্চর্য ছেলে, যাকে সৎসঙ্গীরা অবিনদাদা ব'লে ডাকেন। কেন তিনি কুয়াশা ঢাকা অত ভোরে বাইক চালিয়ে ঠিক আমাদের সামনে এলেন!? আর আশেপাশে কেন কেউ ছিল না সেখানে অত ভোরে!? আর কেনই বা কথা শেষ ক'রেই একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলেন আবার যে পথ দিয়ে এসেছিলেন সেই পথ ধ'রে!? কে উত্তর দেবে এর?
যাই হ'ক পরবর্তীতে যা হয়েছিল সেটা ব'লে এই লেখা শেষ করবো। মেয়ের নোতুন কাজের জায়গায় সবকিছু মেয়ের ফেভারে ছিল। ছেলেও তার পুরোনো জায়গায় র'য়ে গেল এবং সেখানেই ধীরে ধীরে নিজের জমি শক্ত হতে লাগলো। আজও ২০২২ সালে এই লেখা পর্যন্ত সে ঐ কোম্পানিতে আছে অবিনদাদার কথামতো 'এইখানেই তোর সব হবে' বাস্তবায়িত হওয়ার মধ্যে দিয়ে।
কিন্তু সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যের, যে কোম্পানিতে যাওয়ার ব্যাপারে অবিনদাদা নিষেধ করেছিলেন সেই কোম্পানিতে যে প্রোজেক্টের জন্য ছেলেকে চাকরী অফার করেছিল সেই প্রোজেক্ট ঠিক ছয় মাস পর কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চ'লে যায়। ফলে যারা ব্যাঙ্গালোরে যাবার জন্য রাজী তারা যেতে পারে আর যারা যাবে না বা যেতে পারবে না তাদের জন্য কলকাতায় কোনও জায়গা নেই। অতএব পশ্চাদদেশে পদাঘাত। ছেলের ক্ষেত্রে যা হ'য়ে দাঁড়াত সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা। যেটা অবিনদাদা আগেই জানতো। ভাগ্যিস সেদিন ছেলেমেয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিল ঠাকুরবাড়ি নোতুন চাকরীতে জয়েন করবে কিনা তার অনুমতি ও আশীর্বাদ নিতে! ভাগ্যিস সেদিন ঐ প্রচন্ড কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোরে বর্তমান আচার্যদেব আশ্রমে নেই জেনেও অজানা এক টানে আমরা স্বামীস্ত্রী, পুত্রকন্যা সহ চারজনে হেঁটে চলেছিলাম নাম করতে করতে আর মনে মনে বলছিলাম, হে দয়াল! তুমি দয়া করো! বাবাইদাদা নেই, দয়া ক'রে তুমি অবিনদাদার সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও।
কোথায় জানি ঠাকুরের কোন গ্রন্থে পড়েছিলাম, বিশ্বাস আর আকুল প্রার্থনা সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। সেদিন দয়াল দয়া ক'রে অবিনদাদার মধ্যে দিয়ে ঐ অতি প্রত্যুষে এসে দেখা দিয়ে সমস্যা সমাধান ক'রে দিয়ে গেলেন। ভাগ্যিস অবিনদাদার আদেশ মতো ছেলে পুরোনো কোম্পানীর চাকরী ছেড়ে নোতুন কোম্পানীর লোভনীয় অফার গ্রহণ করেনি। অবিনদাদার নির্দেশ আদেশ উপেক্ষা ক'রে যদি সেদিন ঐ অফার গ্রহণ করতো তাহ'লে হয় ছেলেকে চাকরী বাঁচাতে বাংলা ছেড়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হ'তো অন্য রাজ্যে; নতুবা, চাকরী ছেড়ে বসে থাকতে হ'তো ঘরে। দয়াল সেদিন পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আচরণের মধ্যে দিয়ে দয়া ক'রে বাঁচিয়ে দিলেন, রক্ষা করলেন পুত্রের বর্তমান চাকরী ও পিতামাতার সঙ্গে পুত্রের বিচ্ছেদ।
কে এই শ্রীশ্রীঅবিনদাদা? শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কি অন্তর্যামী!?
জানি না আমি। তবে একটা কথা বলে যাই, যদিও অলৌকিকতা ব'লে কিছু নেই। যতদিন না তুমি ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছো ততদিন তোমার কাছে অলৌকিক। আর যে মুহূর্তে তুমি ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছো তখনি তা হ'য়ে যাচ্ছে লৌকিক। যখনই জানাটা হাতের মুঠোয় এসে যাচ্ছে তখনি সেটা হ'য়ে যাচ্ছে বাস্তব। আর যতক্ষণ জানতে পারছো না ততক্ষণ তা অলৌকিক, অবাস্তব বা কাকতালীয়।
কিন্তু এ ছাড়া এমন এমন ঘটনা আজও ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। আমার দয়াল ঠাকুরের কয়েকটা পছন্দের কোটেশান আছে যা তিনি প্রায়ই বলতেন। তার মধ্যে একটা শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের অংশ। ঠাকুর প্রায়ই রহস্য ক'রে বলতেন, " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosopy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"
আজও আমার ভোরের কথাটা মনে পড়লে (আর মনেও পড়ে সবসময়) কেমন জানি রহস্যময় এক জগতে চলে যায় শরীর মন। এ জোর ক'রে কাউকে বিশ্বাস করানো যায় না। কুয়াশা ঢাকা সেই শীতের ভোর! চারিদিক আবছা আলো আঁধারে ঢাকা প্রকৃতি! মাথার ওপরে বেশ ঝ'রে পড়ছে ঝিরঝিরিয়ে কুয়াশা! চোখেমুখে এসে লাগছে কুয়াশার সেই হালকা জলের ছিটা। এক হাত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না! চারপাশটা ফাঁকা! নিস্তব্ধ! আর কেনই বা কেউই নেই তাও জানি না। আমরা পরিবারের চারজন ফাঁকা রাস্তা দিয়ে উদভ্রান্তের মতো হেঁটে চলেছি। কেন চলেছি, কি জন্য চলেছি, কার জন্যে চলেছি এই অতি প্রত্যুষে পাঠক বিশ্বাস করুন আমরা কেউ জানি না। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি! মনে হচ্ছিল কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐ ঠাকুরের সুইমিং পুলের দিকে। আর তারপরেই ঐ অতি প্রত্যুষে আলোআঁধার পরিবেশে ঘটেছিল ঘটনাটা! হঠাৎ কুয়াশার ঘন আচ্ছরণ ভেদ ক'রে সামনে এসে হাজির হয়েছিল সেই বিশাল এনফিল্ড বাইক আর বাইকের ওপর সওয়ারি। একে কি বলবো পাঠক জানি না। বিশ্বাস করা আর না করা আপনাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমরা সেদিন দয়াল ঠাকুরের দয়ায় সাক্ষাৎ প্রমাণ পেয়েছিলাম ঠাকুরের প্রায় সময় রহস্য ক'রে বলা শেক্সপিয়ারের সেই 'হ্যামলেট' নাটকের অংশ বিশেষ, " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।" যা আজও আমাদের রোমাঞ্চিত করে! যখনই মনে সন্দেহ, অবিশ্বাস মুহূর্তের জন্য বিন্দুমাত্র হানা দেয় তখনি যেন মনে দয়াল মিষ্টি হেসে রহস্য ক'রে বলছেন তাঁর প্রিয় কোটেশানটা।
ক্রমশঃ
( ২৭শে নভেম্বর' ২০২২)

17