Powered By Blogger

Monday, March 5, 2018

কে তুমি!!!!! (৩)

  
পূর্ব প্রকাশের পর।

প্রণাম জানাই তোমার শ্রীচরণে।
অবিনদাদার প্রশ্নের উত্তরে আমি মেয়েকে দেখিয়ে বললাম, 'ও বাবাইদাদাকে ওর চাকরীর সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিল। ও যেখানে কাজ ক'রে সেখানে যেতে আসতে ছ’ঘন্টা সময় লাগে। ক্লান্ত হ'য়ে পরে। বাবাইদাদা সব শুনে মেয়েকে আশীর্বাদ ক'রেছিলেন। বলেছিলেন, সব ঠিক হ'য়ে যাবে। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে, নির্ভর করতে। বাবাইদাদার আশীর্বাদের পরেই 'ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড' থেকে সেখানে জয়েন করার জন্য অফার এসেছে। পরের মাসের পয়লা আগস্ট থেকে জয়েন করতে বলেছে। তাই এসেছিল বাবাইদাদাকে জানাতে সেখানে জয়েন করবে কিনা। কিন্তু এসে জানতে পারলো বাবাইদাদা দর্শন দেবেন না। তাই আপনি যদি............... বলেই চুপ করে গেলাম। শুধু মেয়েকে বললাম, 'তুই বল।‘ মেয়ে চোখের জল মুছে বললো, 'আমি এখন যেখানে কাজ করি সেখানে যেতে আসতে ছ’ঘন্টা লাগে। খুব কষ্ট হয়। বাবাইদাদাকে কষ্টের কথা সব জানিয়েছিলাম। আমি আর পারছি না। যেতে আসতে ৩ঘন্টা +৩ঘন্টা= ৬ঘন্টা লেগে যায়। বাবাইদাদা সব শুনে বলেছিলেন, ‘এইভাবে কন্টিনিউ করলে জীবনীশক্তি ক’মে যাবে।‘ তখন আমি বলেছিলাম, আপনি আশীর্বাদ করুন যেন আমি কাছাকাছি পেয়ে যায়।‘ বাবাইদাদা বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, পেয়ে যাবি।‘ বাবাইদাদা আশীর্বাদ করেছিলেন আর তারপরেই আমি কোনও যোগাযোগা না করা সত্ত্বেও ‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড’ থেকে অফার এসেছে সেখানে জয়েন করবার জন্য। তাই আমি জয়েন করবো কিনা বাবাইদাদাকে জানাতে এসেছিলাম; কিন্তু বাবাইদাদার.........‘ এই পর্যন্ত ব’লে মেয়ে আমার চুপ ক’রে গেল। তারপর বললো, ‘আমি জয়েন করবো?’ তখন অবিনদাদা মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন চাকরী সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। মেয়ে ‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড’ সম্পর্কিত বিষয় ও কাজের বিবরণ, ডিপার্টমেন্ট, পজিশান, মাহিনা, বাড়ি থেকে দূরত্ব, যেতে আসতে সময় ইত্যাদি সব একে একে যেমন যেমন অবিনদাদা জানতে চাইলেন ঠিক তেমনি তেমনি মেয়ে তাঁর কাছে তুলে ধরলো। আমি আর আমার ছেলে ওদের কথার মাঝে পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনলাম। আমি অবাক হ’য়ে মনে মনে ভাবছিলাম এই অল্প বয়সে একজন কত পরিণত হ’লে, কত মেধার অধিকারী হ’লে চাকুরী সংক্রান্ত এত নিখুঁত আলোচনা করতে পারে! কত আত্মমগ্ন ধীরস্থির হ’লে, কত শারীরমানস ও আত্মিকতায় মিশে জমাট ক্ষীর হ’লে তাঁর চেয়ে বয়সে বড় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা দিশেহারা একজন চাকুরিরতা মেয়েকে সহজ নিখুঁত সমাধান দিতে পারে তা’ নিজের চোখে, নিজের কানে না দেখলে, না শুনলে বিশ্বাস হ’ত না! মেয়ের মুখে পরপর সব শুনে অবিনদাদা মেয়েকে হেসে বললেন, ‘আপনি ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ডে জয়েন করুন। পরে সময়মত একবার এসে বাবাকে জানিয়ে আশির্বাদ নিয়ে যাবেন।‘ মেয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অনেকদিন পর মেয়েকে এমন নির্মল হাসি হাসতে দেখে আমার মন আনন্দে ভরে উঠলো। তারপর হাসতে হাসতে ছেলের দিকে তাকিয়ে অবিনদা বললেন, ‘তোর কি হয়েছে?’ ছেলে একবার আমার দিকে আর একবার অবিনদার দিকে তাকালো, কি করবে বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছিলো। আমি ছেলেকে হাত ধ’রে কাছে টেনে নিলাম। বললাম, অবিনদাদাকে বল তোর কথা। ছেলে সাহস ক’রে তার বর্তমানে যেখানে চাকরী করে সেই ফ্রেঞ্চ মাল্টিন্যাশানাল সারভিসেস অ্যান্ড বিজনেস কন্সাল্টিং করপোরেশানের কথা জানিয়ে অন্য আর এক আমেরিকান মাল্টিন্যাশানাল করপোরেশান আই টি সেক্টরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করায় অবিনদা বললেন, ‘কেন এখন যেখানে আছিস সেখানে কি খারাপ আছিস? কোনও অসুবিধা হচ্ছে? উত্তরে ছেলে যা বললো তা হ’লো,
এখন যেখানে চাকরী করছে সেই চাকরিটা বাবাইদাদার আশীর্বাদে পেয়েছিল। চাকরিটা পাবার পর কিছুদিন খুব অসুবিধা হয়েছিল, চাকরিতে টিকে থাকাটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কেউ কো-অপারেট করতো না। একা একা বসে থাকতো। কাজ না বুঝতে পারলে কেউ এগিয়ে এসে কাজ বুঝতে সাহায্য করতো না। ভুল না হ’লেও বলতো ভুল হয়েছে আর সামান্য ভুল হ’লে বড় ক’রে দেখাতো। কাজ যাতে না বুঝতে পারে, না করতে পারে তার জন্য পুরোনো কর্মীরা সবসময় সচেষ্ট থাকতো। সারাদিন কাজ ক’রেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণিত হ’তো না, আর যারা কিছু করতো না, শুধু ম্যানেজারের ঘরে বসে থাকতো, ফাইফরমাশ খাটতো তারা হাইলাইট হ’তো। এমন অবস্থায় মানসিক বিপর্যস্ত হ’য়ে ঠাকুরবাড়ি ছুটে এসেছিল বাবাইদাদার কাছে। বাবাইদাদার কাছে নিবেদন করেছিল সমস্যার কথা। বাবাইদাদা তখন ছেলেকে বলেছিলেন, ‘যারা কাজ করে, যারা কাজে যোগ্য তাদের ম্যানেজারের দয়ার দরকার হয় না; ফেবার তাদের দরকার হয় যারা অযোগ্য ও অদক্ষ, যারা কাজে ফাঁকি দেয়। তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সেই কাজ তুমি মন দিয়ে ক’রে যাও। অন্য কোনও দিকে মন দিতে যেও না। তোমার কাজ শুধু তোমার কাজ মন দিয়ে করা আর সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।‘ তারপর থেকে বাবাইদাদার নির্দেশ মতো শুধু কাজের দিকেই মন দিয়েছে ছেলে; আর, তার পুরস্কার স্বরূপ বাবাইদাদার আশীর্বাদে পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে ‘Employee of the year’ নির্বাচিত হয় এবং পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কৃত হয়। পরে কাজের ফলস্বরুপ উন্নতিও হয়। পরবর্তী সময়ে সেই কথা বাবাইদাদাকে নিবেদন করে এবং পুরস্কৃত অর্থ ঠাকুর প্রণামী হিসাবে ফিলান্থ্রপি অফিসে জমা দেয়। বাবাইদাদা খুব খুশী হন।

ছেলের সমস্ত কথা মন দিয়ে শোনার পর অবিনদা ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহ’লে কর্মস্থল পরিবর্তন করার দরকার কি? শোন, এখন পকেটে যা ঢুকছে তা’তে কি ভালো লাগছে না? ওখানে জয়েন করার কিছুদিন পরে বের ক’রে দিলে ভালো হবে? একূল, ওকূল দুকূল যাবে নাকি? এখন যেখানে করছিস বা যেখানে যেতে মন চাইছে যেখানেই থাক বা যা না কেন কোম্পানির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়, যাতে পরে কোনও অসুবিধা না হয়। যদি যেতে হয় তাহ’লে কোম্পানিকে ব’লে যাওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে ঐ কোম্পানিকে বলা উচিত এখন আমি যেতে না পারলেও ভবিষ্যতে আমি যোগাযোগ করবো। শোন, এখন এখানেই মন দিয়ে কাজ কর।‘ তারপরে প্রায় একই রকম এক ঘটনার কথা তুলে ধ’রে বললেন, ‘আমার এক পরিচিত মাইক্রো সফটে কাজ করে। গুগুল আরও বেশী টাকার অফার দিয়ে তাকে তাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে বলে। তখন ও মাইক্রো সফট কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে সে কথা জানায়। মাইক্রো সফট তাকে আরও বেশী টাকা দেবে ব’লে জানায়। তখন সেই কথা সে গুগুলকে বলে এবং স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে যা পাচ্ছে তার বেশী দাবী করে। গুগুল তখন তাকে পরবর্তী সময়ের জন্য ভেবে দেখবে ব’লে জানায়। এক্ষেত্রে সে উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তুই এখন যা পাচ্ছিস তাই নিয়ে আনন্দের সঙ্গে এখানেই কাজ কর। সময়মত সব হবে। ঠিক আছে?‘

এইকথা শুনে ছেলে আমার খুশী হ’য়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আমি বিস্ময়ে হতবাক হ’য়ে শুধু চেয়েছিলাম অবিনদার মুখের দিকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে ফিরে চললাম। আমাদের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবিনদাদার বয়সী একজনকে আসতে দেখলাম। তারপরে অবিনদা তাকে বাইকে বসিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে কৃত্রিম পাহাড়ি ঝর্ণার পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে চলে গেল। আমরা তিনজনে হাঁটতে লাগলাম বাবাইদাদা যেখানে বসেন, দর্শন দেন সেদিকের উদ্দেশ্যে কারণ ঐখানে আমার স্ত্রী গেছে খোঁজ নিতে। একটু এগোতেই সামনে দিয়ে আমার স্ত্রীকে আসতে দেখলাম। সামনে আসতেই সে বললো, ‘না, বাবাইদাদা আজ বসেননি, আগামী কয়েকদিন বসবেন না।‘ আবার একটা জোর চমকের ধাক্কা খেলাম! মনে মনে ভাবলাম, ‘ঠাকুর তুমি এত, এত দয়াময়!!!!!!” ছেলেমেয়ে তাদের মাকে অবিনদাদার সঙ্গে দেখা ও কথা হওয়ার ঘটনাটা বলবার জন্য হামলে পড়লো। আর আমার মনের মধ্যে পথ চলতে চলতে জেগে উঠলো অনেক প্রশ্ন! ‘এমনও হয়?
কে তুমি!? কে তুমি!?

ক্রমশঃ
প্রকাশ  বিশ্বাস।


কে তুমি!!!!!!! (২)


পূর্ব প্রকাশের পর।

প্রণাম জানাই শ্রীচরণে তোমার।

ঘড়িতে তখন ভোর সাড়ে চারটে। কিন্তু তখনও অন্ধকার। মেঘলা আকাশ। ঝিরঝির ক'রে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। সেন্টিনারির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেয়ে আছি বাইরের দিকে। মনের ভিতরটা বড় অস্থির হ'য়ে রয়েছে। হালকা বাতাস বইছে। চোখে মুখে এসে বাতাস তার ঠান্ডা হাত বুলিয়ে যেন শুষে নিচ্ছে দুশ্চিন্তাযুক্ত ক্লান্তির মেঘ! মনে হ'ল যেন আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম ঐ বৃষ্টিঝরা আলোআঁধারি ভোরের আকাশে প্রভু যেন বাতাস হ'য়ে এসে কানে কানে ব'লে গেলো, 'চিন্তা কিস বাত কি? হাম হ্যাঁয় না!' আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়েছিলাম রাস্তা ও আশপাশের গাছগাছালি, বাড়িঘর ও আকাশের দিকে। কখন যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছেলেমেয়ে বুঝতে পারিনি। ওদের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। 'বাবা! কি হবে!? বৃষ্টি যে প'ড়েই চলেছে।' উৎকণ্ঠা গলায় জড়িয়ে কথা বললো মেয়ে। আমি চেয়ে দেখলাম মেয়ে আমার খুবই চিন্তিত। কারণ আজ যদি সকালে বেরোতে না পারি তাহ'লে কাল বাড়ি ফিরে যাবার দিন। খালি হাতে ফিরে যেতে হবে এবার ঠাকুরবাড়ি থেকে! ছেলে বললো, 'বাবা প্রার্থনার সময় হ'য়ে গেছে আর বাইরেও ঝিরঝির ক'রে বৃষ্টি পড়ছে, আজকে আর যাওয়া যাবে না। ঘরে চলো।' আমি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানিয়ে ঘরে প্রবেশ ক'রে বিছানার উপর বসে পড়লাম। আর তার কিছুক্ষণ পরেই ভেসে এলো ঠাকুরবাড়ির সমবেত প্রার্থনা। সত্যি বলতে কোনও লজ্জা নেই, প্রার্থনায় মন বসছিল না; শুধু মনে মনে বলছিলাম, 'ঠাকুর! বৃষ্টি থামিয়ে দাও। প্রার্থনার শেষে যেন মন্দিরে যেতে পারি।' একসময় প্রার্থনা শেষ হ'লে আমরা বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু আকাশ বাদল মেঘে ঢেকে আছে। আমরা সবাই ঘরে তালা দিয়ে মন্দিরে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম এই ভোরের বৃষ্টিভেজা রাস্তায় লোক সমাগম কম। আমরা আশ্রমের গেট পেরিয়ে সোজা হেঁটে চললাম। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কার কাছে যাচ্ছি কিছুই জানা নেই কারণ বাবাইদাদা তো আজ দর্শন দেবে না। মন্ত্রমুগ্ধের মত এক অমোঘ টানে আমরা তিনজনে এগিয়ে চলেছি। স্ত্রী সঙ্গে নেই। সে অনেক আগেই প্রার্থনা শেষ হতেই বেরিয়ে পড়েছে বাবাইদাদা বসবেন কিনা তা জানবার জন্যে। আশা, যদি বসেন। মেমোরিয়ার পাশ দিয়ে যাবার সময় ছেলে বললো, 'বাবা কাল একটা স্বপ্ন দেখলাম।' সঙ্গে সঙ্গে মেয়েও বিস্ময়ে ব'লে উঠলো, 'তুই দেখেছিস! আমিও স্বপ্ন দেখেছি! তুই আগে বল, তারপরে আমি বলবো।' ছেলে ব'লে চললো তার স্বপ্নের কাহিনী। প্রথমে আমি তার স্বপ্নে দেখা গল্পে মন দিতে পারছিলাম না। মন পড়ে রয়েছিল অন্য এক জায়গায়; শুধু মন বলছিল, 'ঠাকুর! কি হবে! কি করবো ঠাকুর!' হঠাৎ মনটা আটকে গেল এক জায়গায়। ছেলে আমাকে মেমোরিয়ার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলছে, 'বাবা! এই জায়গায়! এই জায়গায়!' মুখ ঘুরিয়ে বললাম, 'কি এই জায়গায়? ছেলে বললো, 'এই যে এতক্ষণ বললাম, তুমি শোনোনি?' আমি একটু লজ্জিত হ'য়ে বললাম, 'না, মানে ইয়ে.........।' ছেলে বললো, 'ও বুঝেছি।' আমি বললাম, 'বল না কি বলছিলি। আমি একটু অন্যমনস্ক হ'য়ে গেছিলাম। তাই......, এই জায়গায় কি হয়েছে? ছেলে বললো, কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম, ঠিক এই মেমোরিয়ার পাশ দিয়ে আমি বাবাইদাদার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছি। বাবাইদাদা আমাকে খুব বকছে। জোরে ধমক দিয়ে বলছে, 'কোথাও যেতে হবে না। এখন যেখানে আছো সেখানেই থাকো। চুপ ক'রে মুখ বুঝে সেখানেই কাজ করো মন দিয়ে। কেন এখানে কি ভালো লাগছে না? এখানে কি হয়েছে? এখন কোথাও চেঞ্জ করার দরকার নেই।'
আমি এই কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হ'য়ে গেলাম। ছেলে কি বলছে! উৎসাহে, আনন্দে, বিস্ময়ে আমি আবার শুনতে চাইলাম স্বপ্নের বিষয়। ছেলে আবার বললো স্বপ্নে দেখা ঘটনা। বললো, আমি বারবার নানাভাবে কোম্পানি চেঞ্জ করার মনোভাব প্রকাশ করায় বাবাইদাদা রেগে গেলেন। আমি চুপ ক'রে গেলাম। তারপর পিঠে তাঁর হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে খুব নিচুস্বরে মিষ্টি ক'রে বললেন, 'এখানেই থাক, কোথাও এখন যাবার দরকার নেই; যা হবার এখানেই হবে, ভালো হবে।' বাবাইদাদার কোমল হাতের স্পর্শে শরীরে শিহরণ খেলে গেল। মনে হ'ল হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ যেন বইয়ে গেল শরীরের শিরায় শিরায় এক লহমায়। চমকে মুখ তুলে তাকালাম বাবাইদাদার মুখের দিকে। দেখলাম স্মিথহাস্যে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর হাসিতে ঝরে পড়ছে হাজার চাঁদের আলোর ঝর্ণা! আর তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল। এক নিশ্বাসে কথাগুলি ব'লে থামলো ছেলে আমার। আমি অবাক হ'য়ে শুনছিলাম কথাগুলি। মনে মনে ভাবলাম একেই কি বলে, Divine dictation!? তারপর আর কিছু ভাবতে পারলাম না। মনে মনে খুব খুশী হ'লাম। যাক ঠাকুর মুখ তুলে অন্তত চেয়েছে। আজ আর কিছু হ'ক আর না হ'ক, বাবাইদাদার দর্শন পাই আর নাই পাই, চাকরীর ব্যাপারে ছেলে আমার সিদ্ধান্ত পেয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত হীনতায় আর আমার ছেলেকে ভুগতে হবে না বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার হাত থেকে ছেলে আমার বেঁচে গেল। ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। চলতে চলতে দু'হাত জোর ক'রে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালাম। আর তখনই কানের পাশ দিয়ে বইয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে ভর ক'রে কে যেন ব'লে গেলো, 'যার জীবনে যত ভুল কম, তার জীবনে তত সুখ বেশী।'
আমরা তখন ঠাকুর, বড়মা, বড়দা প্রণাম ক'রে চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছি বাবাইদাদা যেখানে দর্শন দেন সেখানের উদ্দেশ্যে যদি হঠাৎ দর্শন দেন এই আশায়। তখন যেতে যেতে মেয়েকে বললাম, 'তুই কি স্বপ্ন দেখেছিস?' মনের মধ্যে লাড্ডূ ফুটে চলেছে অনবরত যদি এমন কিছু মেয়ের বেলায় হয় এই লোভে। মেয়ে তার ভাইয়ের কথা শুনে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে বললো,'বাবা! আমাকেও বাবাইদাদা বলেছে, কিন্তু আমাকে বকেনি।' 'কি বলেছে বল, বল!' আমার আর ধৈর্য ধরলো না। আমি মেয়েকে ব'লে উঠলাম। মেয়ে আনন্দে যা বললো তা'তে মাথা ঘুরে গেল। বাবাইদাদা দুজনকেই তাদের সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। যদি বিশ্বাস করি তাহ'লে যে সমাধান তিনি সামনে উপস্থিত থেকে দিতেন সেই সমাধান তিনি দিয়েছেন স্বপ্নে! এর থেকে আর কি বড় আশীর্বাদ হ'তে পারে আমাদের জীবনে বাস্তবে! মেয়ে বলতে লাগলো, 'আমি বাবাইদাদাকে নতুন কাজের জায়গায় জয়েন করার অফার গ্রহণ করবো কিনা জিজ্ঞেস করলাম। বাবাইদাদা ঐ নতুন কোম্পানী সম্পর্কে জানতে চাইলেন বিস্তারিত। আমি 'ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড' সম্পর্কে, কাজের সম্পর্কে সব বললাম। সব শুনে তিনি সম্মতি দিলেন ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড'-এ জয়েন করতে।'
আমি চুপ ক'রে শুনছিলাম কথাগুলি। আমরা কথা বলতে বলতে চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছি। একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যেন চলেছি আমি। এও কি সম্ভব! এইভাবেও কি সমাধান পাওয়া যায়! চারপাশে ঠান্ডা একটা বাতাস ব'য়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস মন প্রাণ দেহ সব জুড়িয়ে দিচ্ছে। ভোরের আলো তখনও মেঘলা আকাশের জন্য ফুটে উঠতে পারছে না। একটা হালকা অন্ধকারের চাদর যেন গোটা আশ্রমটাকে ঘিরে রেখেছে। চারপাশের গাছগাছালি ঘিরে আলোআঁধারি ঠান্ডা নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন রুপকথার রাজ্যে নিয়ে এসেছে আমাদের। মনে হচ্ছে আমি যেন স্বর্গের বুকে হেঁটে বেড়াচ্ছি। আমি হাটছি না, আমায় যেন কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই ঘোর লাগা অবস্থাটা যেন চেপে বসছে ক্রমশঃ। আমার এইরকম চলা দেখে ছেলে বললো, 'বাবা, তোমার শরীর খারাপ লাগছে?' আমি থতমত খেয়ে ব'লে উঠলাম, 'না, না।' ঠিক সেই সময় হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা এনফিল্ড বাইক হুশ ক'রে বেরিয়ে গেল। মেয়ে সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, 'বাবা! বাবা! অবিনদাদা গেল, অবিনদাদা গেল।' আমি কথাটা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। বলে উঠলাম, 'কোথায়!? কোথায়!? দেখলাম, বাইকটা আমাদের যাওয়ার পথের উল্টো দিকের সামনের গোশালার পাশ দিয়ে ফোয়ারার দিক দিয়ে এসে আমাদের পাশ দিয়ে গিয়ে চলে গেল। তারপর রাস্তার বাঁ পাশের ভিতরের ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। আমি বললাম, 'ঠিক দেখেছিস তো?' ছেলে তার উত্তরে সম্মতি জানিয়ে বললো, 'হ্যাঁ বাবা, অবিনদাদাই গেলো।' মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম রাস্তার ভিতরের ঐ ফাঁকা জায়গায় গাছের নীচে বাইকটা দাঁড় করিয়ে বাইকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবিনদাদা; মনে হ'লো কারও জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তখন দ্বিধাগ্রস্থ। অবিনদাদার কাছে যাবো কি যাবো না, কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মনে মনে ভাবলাম, ঠাকুর তুমি এত দয়াময়! তুমি কি আমার প্রার্থনা শুনেছো! বাড়ি থেকে আসার সময় এবং এখানে এসে গতকাল বাবাইদাদার শরীরের কারণে দর্শন না দেওয়ার কথা জানতে পেরে যা ভেবেছিলাম, ঠাকুরের কাছে যা প্রার্থনা করেছিলাম এইটা কি তারই ইঙ্গিত!!!!! মনে মনে ভাবছি, যাবো, কাছে যাবো? এই ভোরের আলোআঁধারির চাদরে ঢেকে থাকা মেঘলা আকাশের নির্জন ফাঁকা জায়গায় অবিনদাদা দাঁড়িয়ে আছেন একেলা, কাছে পিঠে কেউ নেই, রাস্তা দিয়েও কেউ যাচ্ছে না। আমি অবাক হ'য়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম অবিনদাদার দিকে চেয়ে। মনে মনে একটা লজ্জাও লাগছিল; কি জানি তিনি কি মনে করছেন। একটা রহস্যময় পরিবেশ যেন মুহূর্তে তৈরী হ'য়ে গেলো। মনের মধ্যে তোলপাড় হ'তে লাগলো, এত ভোরে কেন তিনি এখানে, কেন তিনি!? 'এখন কি করবো' এইকথা ছেলেমেয়েদের বলাতে তারাও বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে, কি বলবে। দেখলাম, অবিনদাদা স্থির দাঁড়িয়ে আছে ঐ গাছের আলোআঁধারি ছায়ায়। একবার দেখলাম, মুখ ঘুরিয়ে যেন আমাদের দিকে তাকালো। আমি আর কোনওকিছু না ভেবেই অনেকটা নেশাগ্রস্থের মত ছেলেমেয়েদের নিয়ে হেঁটে চললাম অবিনদাদার দিকে। যা হবে হ'ক। ঠাকুরের এইটাই ইচ্ছা। 'তাঁর ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা' এইভেবে এগিয়ে গেলাম ছেলেমেয়েদের নিয়ে; কাছে গিয়ে আভূমি প্রণাম করলাম। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ' এরা আমার ছেলেমেয়ে। বাবাইদাদার কাছে এসেছিলাম ছেলেমেয়ের চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে কি করবে সেই সম্পর্কে আশীর্বাদ নিতে। কিন্তু এসে শুনলাম বাবাইদাদা শরীরের কারণে দর্শন দিচ্ছেন না। তাই কি করবো বুঝতে পারছি না। ছেলেমেয়ে খুব হতাশ হ'য়ে পড়েছে, খুব চিন্তাগ্রস্থ, তাই আপনার কাছে এলাম।' অবিনদাদা বললেন, 'হ্যাঁ, বাবার শরীরটা একটু খারাপ, তাই ক' দিন দর্শন দেবেন না।' তারপর খুব মিষ্টি ক'রে ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন, 'কি হয়েছে?'
অবিনদাদার মুখের হাসির দিকে চেয়ে মনে হ'ল, এই আলোআঁধারি মাঝে হাজার সুর্যের জ্যোতিঃ যেন ঝরে পড়ছে। মুহূর্তে যেন অন্ধকার কেটে আলোয় ঝলমল ক'রে উঠলো চারপাশ!!!!!!
ক্রমশঃ
প্রকাশ বিশ্বাস।

কে তুমি!!!!! (১)

প্রণাম জানাই তোমার শ্রীচরণে।
আজ ৫ই জানুয়ারি শুক্রবার তোমার জন্মদিন। আজকের এই পবিত্র দিনে তোমার মহিমার কথা না স্মরণ ক'রে পারলাম না। মনে পড়ে যায় একটা গানের কলিঃ "আর তো তোমায় রাখতে নারি এমন সঙ্গোপনে চতুর্দিকে গন্ডি কেটে আঁধার ঘরের কোণে।" সেদিনটার কথা মনে পড়ে। গত ২০১৬ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকের ঘটনা। প্রতিবারের মত সেদিনও গেছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে পূজনীয় বাবাইদাদার শ্রীচরণে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে। ঠাকুরবাড়ি গিয়ে জানতে পারলাম বাবাইদাদা প্রতিদিনের মত প্রাতঃকালীন প্রার্থনা শেষে তাঁর নির্দিষ্ট স্থানে দর্শন দিচ্ছেন না শারীরিক কারণে। একটু হতাশ হ'য়ে পড়লাম। দু'দিনের জন্য ঠাকুরবাড়ি যাওয়া। ছেলে ও মেয়ের চাকুরী সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত কঠিন বিষয় ছিল বাবাইদাদার দর্শন, মতামত, অনুমতি ও আশীর্বাদ পাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ চাকরী জীবনের প্রথম থেকেই ছেলে ও মেয়ের উভয়ের চাকরী সংক্রান্ত যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বর্জন পূজনীয় বাবাইদাদার নির্দেশ মতই হ'য়ে এসেছে। এবারের ঠাকুরবাড়িতে শ্রীশ্রীঠাকুর,শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা, আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীবাবাইদাদা দর্শন, প্রণাম ও আশীর্বাদ গ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল ছেলেমেয়ের চাকুরীর সমস্যা সমাধান ও ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্র সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়।

যাই হ'ক, প্রথমদিন সকালে জানতে পারলাম বাবাইদাদার দর্শন সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ আছে তখন মনটা খারাপ হ'লেও পরেরদিনের অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধে রইলাম যদি দর্শন হয় আর মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানালাম আমার ছেলেমেয়ের অসহায় অবস্থার কথা। একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি না যেতে পারি তাহ'লে ফিরে গিয়ে ছেলেমেয়ে কি করবে সেই কথা ভেবে চিন্তিত হ'য়ে পড়লাম আর আমার চেয়েও বেশী চিন্তাগ্রস্থ হ'য়ে পড়লো ছেলেমেয়ে। আমি মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলাম ঠাকুর একটা উপায় ক'রো অন্তত অবিনদাদার দর্শন পাইয়ে দাও। প্রসঙ্গান্তরে ব'লে রাখি এইবার যখন ঠাকুরবাড়ি আসবো ব'লে ঠিক করেছিলাম তখন মনে ইচ্ছা হয়েছিল একবার যদি এবার অবিনদাদার দর্শন পেতাম ও কথা বলতে পারতাম; সেইমত ঠাকুরের কাছে প্রার্থনাও জানিয়েছিলাম। তাই এবার যখন জানতে পারলাম শারীরিক কারণে বাবাইদাদার দর্শন ও প্রণাম বন্ধ তখন প্রথমদিন কেটে যাবার পর দ্বিতীয় দিনের অপেক্ষায় বসে রইলাম। সময় আর কাটতে চায় না। মেঘলা আকাশ। মাঝে মাঝে ঝিরঝির ক'রে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তেমন কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। সারাদিন প্রার্থনা, ঠাকুর, বড়মা, বড়দা প্রণাম, আচার্য সান্নিধ্য, ফিলান্থ্রফি অফিসের কাজ, সকালের জল খাবার, দুপুরের প্রসাদ গ্রহণ, সান্ধ্য প্রার্থনা, মায়ের প্রণাম, সন্ধ্যাবেলায় চপ ও মুড়ি খাওয়া এবং রাতের প্রসাদ গ্রহণ ইত্যাদি পর্ব সারার মধ্যে দিয়ে প্রথমদিন শেষ হ'লো। রাতে চোখে ঘুম এলো না। সারা রাত শুয়ে শুয়ে ভাবলাম কালকের দিন শেষ হ'লেই পরশু সকালে গাড়ি ধরতে হবে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য। তাহ'লে কি খালি হাতে ফিরে যেতে হবে!? ছেলে মেয়ে একবার জিজ্ঞেস করলো, 'বাবা, তাহ'লে কি করবো? কাল তো বাবাইদাদা দর্শন দেবেন না।' আমি কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। বাস্তবিক আমার কাছে কোনও উত্তর ছিল না। আমি বললাম, 'শুয়ে শুয়ে ঠাকুরের নাম কর। ঠাকুরকে বল। আর বাবাইদাদার কথা স্মরণ ক'রে বাবাইদাদাকে যা সামনে দেখা হ'লে বলতি তাই মনে মনে বাবাইদাদাকে নিবেদন কর। তারপরে নাম করতে করতে শুয়ে পড়।" ছেলেমেয়ে কি করলো বুঝলাম না। স্ত্রী মনমরা হ'য়ে বসে আছে। আমি বললাম, 'শুয়ে পড়ো, কাল যা হবার হবে।'
তারপরে সবাই শুয়ে পড়লো। আমি ঠাকুরের নাম করতে করতে শুয়ে রইলাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। মাঝ রাতে বৃষ্টি এলো। বেশ জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির খরশাণ ধারা রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও রহস্যময় ক'রে তুলছে। বিছানা থেকে উঠে বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে নিস্তব্ধ বারান্দায় শরীরে রোমাঞ্চ জাগে। বাইরে রাস্তার দিকে তাকালাম। আলো ঝলমলে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যাচ্ছে রাতের ভারী ট্রাক রাস্তা কামড়ে। ঠাকুরবাড়ি থেকে ভেসে এলো মধুর শব্দে ঘড়িতে দুটো বাজার সংকেত। ঢং ঢং ক'রে বেজে উঠলো ঘড়ি। বৃষ্টি ভেদ করে ছুটে চলা গাড়ির আওয়াজ মাঝে মাঝে রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে। হেড লাইটের তীব্র আলোয় বৃষ্টি ধারার তীব্রতা বোঝা যায়। দূরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালাম। বললাম, ঠাকুর জানি না কাল কি হবে। এমন বৃষ্টি যদি চলতে থাকে তাহ'লে আর সকালে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বেরোনো যাবে না আর কোনও সুযোগও পাবো না হয়তো কাউকে দর্শন করার। তুমি দয়া ক'রো। বৃষ্টি যেন থেমে যায় ভোরে। তারপরে ধীরে ধীরে ঘরে ফিরে এলাম। আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বৃষ্টির মিষ্টি মধুর নেশাধরা শব্দ যেন ঘুম পাড়ানিয়া গান হ'য়ে চোখের তারায় নেমে এলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙল' এল্যার্মের শব্দে। চোখ মেলে চেয়ে দেখলাম ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটে। একে একে সবাই উঠে পড়লাম তৈরি হবো ব'লে।
ক্রমশঃ

ভুল! ভুল! ভুল!

আজ যা মনে হয় ঠিক
কাল হয়ে যায় তা ভুল! ভুল! ভুল!
‘পরশু’ আসে চুপিসারে
দিতে পশ্চাতে ভুলের মাসুল।
মাসুলের শূলে দগ্ধ জীবন
দগ্ধ একাল ওকাল পরকাল;
আকাশে বাতাসে পোড়া গন্ধ,
পোড়া, জীবনের সন্ধ্যা সকাল।
জীবন মাঝে ভুলের হলাহল
শূল্য মাংস হ’য়ে ফোটায় হূল;
জীবনের যত ভুল শুধরে নিতে
আছে না-কি কোথাও কোনও স্কুল?
চারিদিকে যত যত্রতত্র
আছে আদর্শ স্কুল বিদ্যালয়;
বেচারাম করে সেথা
শিক্ষা বেচা কেনা
টাকার দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে কিশলয়।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুলের বেসাতি
করে পোঙ্গা পন্ডিতের দল;
আদর্শহীন জীবন সেথা
আদর্শের চোঙা ফুঁকে
করে ভুলের উৎকট কোলাহল।
সেথা হ’তে আসে বেরিয়ে
যমের দালাল কিন্তু নেতা
দেশ ও দশের উদ্ধারে
হয় সে মুক্তি যজ্ঞের হোতা।
এমনিভাবেই ভুলের বিষে
হয়ে আছে নীল বিশ্ব ভুবন
হে নীলকণ্ঠ! এসো ত্বরা করি
বাঁচাতে ও বাড়াতে তোমার সৃষ্ট
জনজীবন, করি বিষ গলাধঃকরণ।।

রেখো মান!!!!


ওঠো! জাগো!! উত্থিত হও সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা বিরুদ্ধ 
লেখা, ছবি ইত্যাদির বিরুদ্ধে যা কিছু বিষয় অন্যায্য;
ভুলে যেও না জীবন একটাই, ভুলে যেও না তুমি আর্য!
ওঠো! জাগো! আর থেকো না ঘুমিয়ে; মনে রেখো
সেই আর্য যে পূজে জীবন্ত ঈশ্বর, পূজে না পুতুলে।
অমূর্ত ভগবানে রাখে না আস্থা আর্য, রাখে আস্থা
রক্তমাংসের আদলে। ওঠো! জাগো! বুঝে নাও
কে সে? তুমি আর্য! বহে রক্ত মহান তোমার ধমনীতে।
যে রক্তে ব’য়ে আসে স্বয়ং ঈশ্বর জীবন্ত হ’য়ে ধরণীতে!
ওঠো! জাগো! বলো, তুমি শক্তির তনয়! তুমি ঈশ্বর সন্তান!
আর্যকৃষ্টি তোমার কৃষ্টি, সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ অবদান!
ওঠো! জাগো! হে আর্য! হে ঈশ্বর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ সন্তান!
ভুলে গেছো তুমি আর্যস্থান তোমার পিতৃস্থান!?
ওঠো! জাগো! হে আর্য! হে পরমপিতার পুত্র!
আর্যকৃষ্টির যে বা যা আনে ব্যাঘাত হানো আঘাত
খুঁজে নিয়ে সূত্র। ওঠো! জাগো হে আর্য! জাগাও
আর্যজাত! দিক হ’তে দিগন্তে আলো হ’য়ে জ্বলো
আর জ্বালাও প্রদীপ আর্যবাদ। বলো, দ্বারেদ্বারে
ঘুরে ফিরে বারেবারে, রক্তমাংসের আদল নিয়ে
এসেছেন ঈশ্বর স্বয়ং ধরাতলে বারবার আটবার!
রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু হ’য়ে মহম্মদ, চৈতন্য আর রামকৃষ্ণ
বেশে; অবশেষে হ’য়ে অনুকূল অবতার! অনুকূল রূপে
এসেছেন ধরায় করিতে বশ নয় বধ ছলে, বলে আর কৌশলে!
হে আর্য সন্তান! তুমি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সন্তান! বিনতি আমার
রেখো তুমি তাঁর মান এ’ ধরাতলে।
প্রবি।

কবিতা কী?


কবিতা কী?
একটি ফিসফিস।
কিসের ফিসফিস?
দুর্বোধ্যতার নাকি অবদমিত কামুকতার
হিসহিস!?
একটি চীৎকার।
কিসের চীৎকার?
তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকার
অম্ল উদ্গার নাকি কাম কামনার শীৎকার!?
ভাবনার ঘোরপাক, ভিতর থেকে বাইরে।
কি সেই ভাবনা যা ঘোরপাক খায়?
ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়?
কি প্রসব করে? অশ্বডিম্ব নাকি সোনার ডিম?
কবিতা কী?
একটি হাসি, একটি দীর্ঘশ্বাস।
কি সেই হাসি? ম্লান নাকি আনন্দ উদ্দাম!?
হতাশা নাকি ব্যর্থতার নিঃশ্বাস?
একটি প্রতিধ্বনি, অতিক্রম ক'রে যায়.........
কি সেই প্রতিধ্বনি?
মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসা সঙ্গীত,
তমসার পার অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষের
ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভাবের সংকেত?
নাকি মিথ্যে ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে
ইউটোপিয়ার সন্ধানে ঘুরে মরার অনন্তকালের
সেই হাতছানি? যা অতিক্রম ক'রে যায়
মৃত্যুর পর মৃত্যু! মৃত্যুর পর মৃত্যু
অন্তহীন মৃত্যু!
শুধুই মৃত্যুর কালো গহ্বর!
যেখানে জীবনের লেশ মাত্র নেই!!
অতিক্রম ক'রে যায় কি? থামলে কেন?
অতিক্রম শেষে কবিতার গন্তব্য কি?
অশেষ দুঃখ নাকি সুখ?
অনন্ত জীবন নাকি মৃত্যু?
নাকি শুধুই অতিক্রম আর অতিক্রম,
অন্তহীন গন্তব্যহীন অতিক্রম!?
প্রবি।

খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে............


খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে 
ক্ষুদ্র (মানব) শিশু হীনমনে।
প্রলয় ধ্বংস তব পুতুল খেলা
গরজনে বিশু গরজনে।
শীর্ণ দেহ আবাসে
তুমি মগ্ন বৃত্তি বিলাসে!
ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে
গরজনে বিশু গরজনে।
দীক্ষা শিক্ষা শাদি খেলনা তব হে উদাসী
পড়িয়া আছে ফাটা পায়ের কাছে জ্ঞান রাশি।
অনিত্য তুমি হে অনুদার
সুখে-দুখে ব্যভিচার!
হাসিছ খেলিছ তুমি রিপু সনে
গরজনে বিশু গরজনে।
প্রবি।