Powered By Blogger

Saturday, January 8, 2022

সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনদের প্রতি,

আজ বছরের শেষ দিন। ২০২১ চলে গিয়ে আসবে নতুন বছর ২০২২। জানি না নতুন বছর আমাদের জন্য কি নিয়ে হাজির হচ্ছে। পরমপিতার শ্রীচরণে সকল গুরুভাইবোনের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করি।

যাই ' নতুন বছরকে স্বাগত আর এই বছরের শেষ দিনকে বিদায় জানাতে আসুন আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা নিজের সঙ্গে নিজে মুখোমুখি বসি, বিবেকের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলি।

আচ্ছা, ঠাকুরের বাণীটা যেন কি আছে? "এক আদেশে চলে যারা তাদের নিয়েই সমাজ গড়া।" তা এই বাণীটা পড়া আছে? কিম্বা পড়া থাকলেও বা শোনা থাকলেও বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থটুকু বোধগম্য হয়েছে কি প্রশ্নদাতা বা পোষ্টদাদাদের; যে প্রশ্নকর্তা বা পোষ্টদাদারা পূর্ব বর্তমান আচার্যদেবের ছবি রাখা নিয়ে বালখিল্য কথার ফুলঝুড়ি ছড়াচ্ছেন ফেসবুকে?

আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা দেহ রাখতে না রাখতেই, ইহলোক ছেড়ে অমরধামে যেতে না যেতেই আর শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আচার্যপদে অভিষিক্ত 'তে না 'তেই কার ফটো থাকবে আর কার ফটো থাকবে না সেই নিয়ে কুটকচাল শুরু 'য়ে গেল!? আমরা ঠাকুর ধরেছিলাম এইসব কূটকচাল করার জন্য নাকি তাঁকে আমার এই ক্ষণিকের জীবনে আত্মস্থ করার জন্য!? কার ফটো থাকবে আর কার ফটো থাকবে না তা নিয়ে এত মাথা ঘামাবার কি আছে!? আর আপনি আমিই বা কে এইসব অকারণ বিতর্কিত প্রশ্ন তুলে অদিক্ষিত তথা দীক্ষিত সমাজে বিতর্ক তৈরী করার!? আপনি, আমি কার আদেশ মেনে চলবো!? আপনার আদেশ, আপনার নির্দেশ বা নিদেশ কিম্বা পরামর্শ মেনে আমি বা আমরা চলবো নাকি আমার আদেশ, আমার নিদেশ নির্দেশ এবং পরামর্শ মেনে আপনি বা আপনারা চলবেন!?,নাকি আচার্যদেবের আদেশ, নিদেশ, নির্দেশ পরামর্শ মেনে চলবো!? আপনার, আমার আমাদের মনে এইধরণের বিষাক্ত প্রশ্ন ওঠার জায়গা থাকে কখন?

উত্তর একটাইঃ যখন মস্তিষ্ক অলস থাকে। আর কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।

আর শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর থেকে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীবড়দা দেহ রাখার পর শ্রীশ্রী দাদা এবং শ্রীশ্রীদাদা দেহ রাখার সঙ্গে সংগেই এইরকম একই ধরণের বিতর্কিত বিষাক্ত প্রশ্নের উত্থাপনের ট্রাডিশন শয়তানের কারখানায় সমানে প্রোডাক্ট 'য়ে চলেছে এবং আগামীদিনেও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ক্ষেত্রেও এই একই জন্ডিস প্রশ্ন উঠে আসবে এবং পরবর্তী সময়ে এই জন্ডিস প্রশ্ন ব্যপক 'য়ে গাঢ় আকার ধারণ করবে এইসমস্ত আমার, আপনার আমাদের অলস মস্তিষ্কের শয়তানের কারখানায় উত্থাপিত বিষাক্ত প্রশ্নের জন্য। আর তার জন্য দায়ী থাকবো আমরা তাঁর সোনার চার অক্ষর বালখিল্য সৎসঙ্গীরা।

আচ্ছা! নিজেকে বিবেকের আয়নায় যদি দাঁড় করায় তবে কি দেখবো? সত্যি সত্যিই কি আমি বা আপনি, আমরা, আপনারা ঠাকুর ঠাকুরের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কিছু করি? নিজের নিজের এলাকায় কি আমায় সৎসঙ্গী 'লে কেউ চেনে নাকি সৎসঙ্গ সমাজে বৃহত্তর সামাজিক পরিবেশে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অনুগামী বা শিষ্য 'লে আমার কোনও পরিচিতি আছে? কিম্বা আমার বাহ্যিক পরিচিতির সঙ্গে আমার অন্তরের যে পরিচিতি তার মিল আছে?

আচ্ছা বলুন তো, এই যে শীতের মরশুম এসেছে, চলছে এবং একদিন চলেও যাবে। এই সময়ে আমরা সৎসঙ্গীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি পরিবার পরিজনের সঙ্গে। আমরা কত সৎসঙ্গী আছি, আমার পরিচিত বহু সৎসঙ্গী আছে যারা ভীষণ ঘুরতে ভালোবাসে এবং কথায় কথায় ঘুরতে বেড়িয়ে যায় কাছেপিঠে, দূরে! কথায় কথায় হোটেল রেষ্টুরেন্ট 'রে বেড়াচ্ছে কিম্বা অর্ডার 'রে জোমাটোকে দিয়ে বাড়িতে আনিয়ে নিচ্ছে নানারকম ফাস্ট ফুড মুখোরোচক খাবার। জানি না এত আনন্দ, ফুর্তি, টাকাপয়সা কোথা থেকে আসে; তাও আবার লক ডাউনে আর্থিক ছোবল নাকি ভীষণভাবে মেরেছে মানুষ জনের ব্রহ্মতালুতে অথচ কতজন বাড়ির পাশে আড়শি নগরটুকুও দেখেনি অর্থাৎ বটতলা যাবারও ক্ষমতা নেই বা গুড়কাঠিও খাওয়ারও ক্ষমতা নেই জুলজুল চোখে চেয়ে থাকা শিশুটির।

কিন্তু যদি বলি, ঠাকুরের জন্য আমরা কি করেছি? ঠাকুরকে নিয়ে আমরা কি আনন্দ করেছি বা ঠাকুর আনন্দ পায়, মজা পায়, খুশী হয়, শিশুর সারল্য নিয়ে খিলখিল 'রে হেসে ওঠে এমন কি কাজ বা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি এই শীতের মরশুমে? তাঁর তৃপ্তির জন্য, তাঁর প্রতিষ্ঠা তাঁর স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য ' পয়সা খরচ করেছি? বুকে হাত দিয়ে আসুন আমরা সৎসঙ্গীরা বলি দেখি 'হ্যাঁ আমি করেছি! আমি করছি! হ্যাঁ! আমার এই শীতে ঠাকুরকে নিয়ে এই এই প্ল্যান আছে!'

ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে আর সেই ব্যতিক্রম একজন উত্তর মেরুতে 'লে অন্যজন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করি। আর তাইতেই সৎসঙ্গের সূর্য বিশ্বব্যপী মধ্যগগনে জ্বলজল করছে!

তাই বলি, আসুন কোথায় কার ফটো থাকবে আর থাকবে না, থাকা উচিত কি উচিত নয় ঐসব মৃত্যু বা পাপ বা ধ্বংস চিন্তায়, বালখিল্য বাকসর্বস্ব মুখে মারিতং জগত আলোচনায় নিজেকে ডুবিয়ে না রেখে বর্তমান আচার্যদেবের আপাতত যেটুকু নির্দেশ আমাদের জন্য আছে তাই আসুন আগে জানি তারপর তা একমাত্র ইষ্টকর্ম 'লে মনে 'রে পালন করি। আনন্দে ফুর্তিতে চূড় 'য়ে থাকার পর দিনশেষে শয়তানের ছোবল খাওয়ার পর যেন না বলি, 'ধ্যাত, ঠাকুর 'রে কিছু হয় না, হয়ওনি। ঠাকুর ফাকুর 'লে কিচ্ছু নেই।'

অথচ ঠাকুর বাড়ির কি করা উচিত আর কি করা উচিত না, ঠাকুর পরিবারের দাদাদের কি অবস্থান নেওয়া উচিত আর উচিত না সেই সমস্ত বিষয়ে কূ্টকচাল আলোচনায় ঘরে ঘরে, মন্দিরে মন্দিরে, রাস্তাঘাটে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে, সিগারের ধোঁয়া উড়িয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দিয়ে চলি আমরা তথাকথিত সৎসঙ্গীরা তারপর আবার বাঁচার তাগিদে আংটি, পাথর, লাল সুতো, কালো সুতো, তাবিজ মাদুলি, জলপড়া, তেলপড়া, ম্যাগ্নেটিক বেল্ট, বটতলা, বেলতলার ঠাকুর, নানা দেবদেবীর মূর্তি, অমুক বাবা তমুক বাবা, অমুক মহারাজ, তমুক মহারাজ, জ্যোতিষী পন্ডিতজীর দরজায় দরজায় হত্যে দিয়ে মরি নিজেকে বা প্রিয়জনকে বাঁচাতে পাগলের মত!

আর যারা ঠাকুর পাগল সৎসঙ্গী তাঁরা ঐসব চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে না। থাকে শুধু মাতালের মতো ইষ্টনেশায় চুড় 'য়ে, আচার্যদেবের নির্দেশের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থেকে।

যাই ', বর্তমান আচার্যদেব পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নির্দেশ নিদেশ পালনের মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের বাণী "এক আদেশে চলে যারা তাদের নিয়েই সমাজ গড়া" বাণীটুকু আমরা মেনে চলে আসুন জীবনকে সার্থক 'রে তুলি, দয়ালের মুখে আনন্দের হাসি ফোটায় আর শয়তানের মুখের ওপর দরজা বন্ধ 'রে দিয়ে বলি, থাক তুই আমার মন মন্দিরের বাহিরে।

আর, বছরের শেষ দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বলি উচ্চকন্ঠে,

জয়গুরু 'লে দে না ঝাঁপ

মরণ দুয়ারে পড়লো ঝাপ।

জয়গুরু।

----প্রবি। ৩১/১২/২০২১ ( শুক্রবার)