Powered By Blogger

Friday, June 30, 2023

প্রবন্ধঃ হেগে মরা আর হেঁটে মরা।

এই সমাজে যার যা ইচ্ছা সে তাই করছে। 'আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই, তাই ইচ্ছের ডানা মেলে উড়বই'-এই দর্শন আজ যুব সমাজের পথ চলার প্রধান সাথী। আর এই দর্শনের উপর জোর প্রচার চলছে নানাভাবে, নানাঢঙে। ছবিও তৈরী হচ্ছে এর উপর, যার জন্য আরও আকৃষ্ট হ'য়ে পড়ছে যুবক, যুবতী; এমনকি বালক,বালিকারাও। আদর্শহীন সমাজ আজ ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে এই দর্শনের স্রোতে ভেসে চলেছে। চারিদিকের লাল নীল আলোর ঝলকানিতে অল্প বয়সীদের তো বটেই তিন কুল গিয়ে চার কুলে ঠেকা জীবনও যাচ্ছে ঝলসে। কান্ডারি বিহীন জীবন বলি হচ্ছে সেই সমাজের চোরাগলিতে। যারা জীবনে আদর্শ গ্রহণ করেনি তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু যারা জীবনে আদর্শ গ্রহণ করেছে, সে যাকেই গ্রহণ করুক আর মেনে চলুক, তাদের জীবন যখন কান্ডারি বিহীনদের মত সর্বনাশের গভীর খাদে মুখ থুবড়ে গিয়ে পড়ে তখন মনে হয় এমন কেন হ'ল? এমন হওয়ার তো কথা ছিল না। আর, যারা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার মানুষের মাঝে মানুষের রুপ নিয়ে নেবে আসা শ্রেষ্ট রুপকে জীবনে গ্রহণ করে, এমনকি তাঁর যে যুগানুযায়ী নতুন রূপ, ঘোর কলি যুগের অবতীর্ণ শেষ সর্বশ্রেষ্ট যে রূপ সেই রুপকে জীবনে গ্রহণ করেছে আর গ্রহণ করার পরেও তাদের জীবনের উপর যখন ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার নেবে আসে তখন মন ভারাক্রান্ত হ'য়ে প্রশ্ন করে, কেন এমন হ'ল? কোথায় ভুল? কোথায় ফাঁক?, কোথায় ত্রুটি? কে যেন হঠাৎ ব'লে উঠল, লক্ষ্মীন্দরের কি হয়েছিল জানো তো? লোহার বাসর ঘরও তাকে বাঁচাতে পারেনি। একটা চুলের মত সরু ফুটো তার জীবনের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল, নাবিয়ে এনেছিল বেহুলার জীবনে ঘুটঘুটে অন্ধকার! একটু চুপ ক'রে থেকে কে যেন আবার বলল, সাবধান! ভুসোমাল দিয়ে তৈরি তোমার জীবন চলনায় কিন্তু হাজার ফুটো আর সেই ফুটো দিয়ে ঢুকে পড়ছে হাজার হাজার কালনাগিনীর বাচ্চা। তা থেকে সাবধান হও। নতুবা শিয়রে সমন নিয়ে অপেক্ষা করছে শয়তান কিলবিসের দূত। অন্তিম পরিণতি ভয়ংকর। কাউকে দোষারোপ ক'রে লাভ হবে না। মানব বন্ধন ক'রে কোনও লাভ হবে না, মিছিল, মিটিং ক'রে লাভ হবে না, সমবেদনা প্রকাশের জন্যও অন্তিম সময়ে একজনকেও পাবে না। কারণ তুমি মুখে গান গেয়েছো, 'ছাড়ো রে মন কপট চাতুরী, বদনে বল হরি হরি' আর উপরে ভক্ত সেজে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গান গাইতে গাইতে মনে মনে তোমার পাশের সৎসঙ্গী গুরুভাইকে, তোমার প্রতিবেশীকে, তোমার বন্ধুকে, তোমার পরিবারের কাছের জনদের বলেছো, 'দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা, ......বাঁশটা দেবো সোজা'।
তুমি ঠাকুর ধরেছো কিন্তু ঠাকুর মানোনি, ঠাকুরের কথা মানোনি, ঠাকুরের পরিবার পরিজন মানোনি, ঠাকুরের ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান জেষ্ঠ্যাত্মজকে মানোনি, অপমান, বিদ্রূপ, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, কুৎসা যা নয় তাই তাঁর বিরুদ্ধে করেছো, সংঘ আচার্য্যের অপমানকর চরম নোংরা বিরোধিতা করেছো, ঠাকুরকে নিয়ে উদারতার ভঙ্গিতে ব্যবসা করেছো, প্রতিমুহুর্তে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে সীমাহীন ভাঙাচোরা বেকুব মানুষদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গেছো আর অর্থ, মান, যশ ভোগ করার বাসনায় মৌরসি পাট্টা জমিয়ে আয়েস ক'রে বসে, চর্ব্য, চষ্য, লেহ্য, পেয় খেয়ে ভেবেছো এমনিভাবেই কেটে যাবে চিরটাকাল? ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব? ফাঁকি দেখে নয় সামাল? তাই বলি,
"তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো, ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর তার ফলও পাবে ঠিক তেমনি"।
'যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি, তা করলে কিন্তু চলবে না’
ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না'।
তাই বলি, কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না। সাবধান, 'শেষের সেদিন ভয়ংকর', যেদিন ঘরের বিছানার সামনের জানালায় পৃথিবীটা হঠাৎ থেমে যাবে, আর, হেগে হেগে মরতে হবে বিছানায়। ভুলে গেছো সাবধান বাণী? "হেগে মরার চেয়ে হেঁটে মরা ভালো"।
( লেখা ২০শে জুন'২০১৬ )

ভক্তবলয়ঃ ঠাকুর প্রেমী ভারত তথা বিশ্বরত্নদের নাম।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারিলালনন্দ, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক, বিজ্ঞানী কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য, বিজ্ঞানী শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়, জাদুকর পি, সি, সরকার, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি হেমচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইত্যাদি এরা সব ছিলেন ঠাকুর প্রেমী।
আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত হার্পার এন্ড ব্রাদার্স পাবলিশিং কোম্পানির তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৬১) ইউজিন এক্সম্যান, দার্শনিক এডমান্ড স্পেনসার, রে আর্চার হাউজারম্যান, অভিনেতা ও সমাজসেবী মিস মিকি, প্রফেসর রবার্ট (বব) কামিং, চেকোশ্লোভাকিয়ার অধিবাসী ডাক্তার ও ইউএনও-এর মেডিকেল সদস্য ক্যারেল পডলিশক ইত্যাদি পণ্ডিত বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বরা ছিলেন ঠাকুরের পাগল ভক্ত।
আসামের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ, বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিনোদানন্দ ঝা, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার শৈলকুমার মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, নরেন্দ্র দেব, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জী, আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক চপলাকান্ত ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, সংগীতশিল্পী নির্মলেন্দু ভট্টাচার্য্য ইত্যাদি ইত্যাদি কত নাম বলবো ব"লে শেষ হবে না; শ'য়ে শ'য়ে ভারতের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ছুটে ছুটে আসা এই সমস্ত ভারতরত্নরা ছিলেন ঠাকুর অনুগামী।
পরবর্তীতে আরও ভারত তথা বিশ্বরত্নদের নাম তুলে ধরবো।---প্রবি।

Sunday, June 25, 2023

প্রবন্ধঃ জাতের নামে বজ্জাতি ও একাকারকারীরা।

অন্যের ছোঁয়া বা রান্না খেতে পারা আর না খেতে পারার মধ্যে একই গুরুর শিষ্য হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। একই গুরুর শিষ্য হ'লেই যে একসঙ্গে খেতে হবে তার কোনও যুক্তি বেই, অযৌক্তিক। একসঙ্গে খেতে পারা আর না-পারার সঙ্গে জাত যাওয়া আর না-যাওয়া ব্যাপার বিষয়টা সম্পূর্ণ জাতের নামে বজ্জাতি ব্যাপার। এটা কোনও উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণের ব্যাপার নয়। একসঙ্গে খাওয়া আর অন্যের ছোঁয়া খাবার খাওয়া আর না-খাওয়ার মধ্যে সদাচারের বিষয় প্রধান। ব্যাপারটা হাইজিনিক অর্থাৎ clean, especially in order to prevent disease. এটা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। উঁচু জাত নীচু জাত ব'লে কোনও কথা নেই। প্রধান কথা জীবনচলনা। এই জীবনচলনার মধ্যেই সদাচারের ব্যাপার নিহিত। সদাচার অর্থাৎ যে আচার অর্থাৎ যে আচরণ, যে অনুষ্ঠান আমার সদ অর্থাৎ অস্তিত্বকে রক্ষা করে এবং ক্রমবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাই সদাচার।

আর, এই সদাচার শারীরিক-মানসিক ও আত্মিক সদাচার। এই তিন দিকের সমন্বয়ে সদাচার পালন সম্পূর্ণতা লাভ করে। এই সদাচার পালনের মধ্যে দিয়ে একজনের জীবনে শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে এক উচ্চ অবস্থা গড়ে ওঠে। প্রতিটি স্নায়ু, প্রতিটি কোষ সাড়াপ্রবণ হ'য়ে ওঠে। রক্তের মধ্যে চৌম্বক শক্তির জাগরণ ঘটে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে তার প্রকাশ বা বিচ্ছুরণ ঘটে। এইখান থেকে বর্ণ অর্থাৎ কালার অর্থাৎ রঙের সৃষ্টি। কোন রঙে তুমি রাঙিয়ে নিয়েছো তোমাকে সেটাই হ'লো জাত। এই জাত থেকেই জাতির সৃষ্টি। এর মধ্যে ঘৃণার শিক্ষা নেই। একজন নিষ্ঠাবান শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সদাচার পরায়ণ মানুষ এই সাধনার পথে চলতে চলতে যে সন্তান উৎপন্ন করে সেই সন্তানের রক্তের মধ্যে সেই গুণাবলী থাকে, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে পিতার সাধনার কম্পন থাকে অর্থাৎ সেই সন্তানও পিতা যে রঙ্গে রাঙ্গিয়ে আছে সেই রঙের আধার হয় আর তখন তাকে সেই বর্ণের লোক বলা হয়। এটা সে পায় উত্তরাধিকার সূত্রে, রক্তের কারণে। আবার একইভাবে এর উল্টোটাও ঘটে অসদাচারী, অসংস্কৃত, ব্যাভিচারী রঙ্গে রাঙ্গিয়ে থাকা ব্যক্তির রক্তের বা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে।

কিন্তু যদি সে তার জীবনে এই সাধনার ব্যাঘাত ঘটায় অনুশীলনের অভাবে তাহ'লে তার পতন ঘটে যদিও তার রক্তের মধ্যে সেই গুণাবলী সুপ্ত আকারে থাকে। আস্তে আস্তে সেই গুণাবলী অর্থাৎ উন্নত জাতের ফলন যাকে পেডিগ্রি বলা হয় তা বংশপরম্পরায় অনুশীলনের অভাবে কিংবা বিবাহ বিভ্রাটের কারণে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়। এই হ'লো জাতের ব্যাপার। এখানে যে কেউ নিজেকে বিহিত অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নতির পথে চালিত ক'রে নিজের জীবনকে উন্নত করতে পারে। উপরে তুলে নিয়ে যেতে পারে। এখানে ছোটো জাত, উঁচু জাত ব'লে কোনও ঘৃণ্য কথা নেই। স্বার্থপর ধান্দাবাজ মানুষ এই ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে নিজের মৌরসি পাট্টা বজায় রাখার জন্য।

তাই, এই বিজ্ঞান সম্মত সদাচার পালন অস্তিতের রক্ষা ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়। একজন উচ্চবর্ণের পুরুষ বা নারী যদি অসদাচারী, ব্যভিচারী হয়, নোংরা, অপরিস্কার ও অপরিছন্ন, ধ্বংসাত্মক খাদ্যখানা ও চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে সেক্ষেত্রে তার হাতেও খাওয়া বা সংস্পর্শ নিষিদ্ধ। কারণ সে একটা নেগেটিভ অরবিটের মধ্যে থাকে সবসময়। ফলে তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গে যে জীবাণু থাকে, রক্তে যে টক্সিন বইয়ে যায় এবং ক্রমাগত তার শরীর থেকে যে নেগেটিভিটির বিচ্ছুরণ হয় তা সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে বা কাছাকাছি আসার ফলে বা তার হাতে তৈরী খাবার খাওয়ার ফলে আরেকজনের মধ্যে সংক্রামিত হয় অর্থাৎ সেই জীবাণু বা নেগেটিভ ফোর্স অন্যজনের মধ্যে সংক্রামিত হয়, প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি মা যদি অসদাচারী, নোংরা, অপরিস্কার থাকে সেক্ষেত্রেও নিজের সন্তানকেও নিজের হাতে খাওয়ানো উচিত নয় এমনকি বুকের দুধ পর্যন্ত শিশুর ক্ষেত্রে তার জীবন সংশয় হ'য়ে উঠতে পারে।

সুতরাং আমাদের লড়াইটা জাতের বিরুদ্ধে নয় কারণ জাত ব'লে অর্থাৎ কোয়ালিটি ব'লে যদি কিচ্ছু না থাকে তাহ'লে সৃষ্টিই ধ্বংস হ'য়ে যাবে। লড়াইটা আসলে জাতের নামে বজ্জাতির বিরুদ্ধে, বিকৃতির বিরুদ্ধে, ব্যাভিচারী চলনের বিরুদ্ধে, মৌরসী পাট্টা বজায় রাখার বিরুদ্ধে, উদারতার ভঙ্গিতে সাম্যের নামে সব একাকার ক'রে খিচুড়ি বানিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে।

Friday, June 23, 2023

প্রবন্ধঃ বাবা ও মেয়ে!

"জন্ম দিলেই হয়না মাতা, মা হওয়া নয় কো সহজ কথা" কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য, জন্মের কারন পুরুষ হলেও বাবা ডাকের অধিকারী সব পুরুষ নয়। আমরা যারা কন্যা জন্মের পক্ষ নিয়ে লেখালেখি করি তাদের লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে কন্যা জন্মের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী বাবারুপী এক দরিন্দার ছবি সে কিন্তু বাবা নয় অথচ আমাদের লেখার মধ্যেকার সেই কল্পনার মেয়ে তার বাবাকে অর্থাৎ বাবারুপী সেই দরিন্দাকে বাবা বলে ডাকে আর ডাকে খুব মিষ্টি ভাবে! আর ওই বাবা ডাকের মধ্যে যে আন্তরিকতা ফুটে ওঠে সেই আন্তরিকতার ছোঁয়া গভীর! এই দরিন্দারা কি এর মূল্য বোঝে তাহ'লে এত আন্তরিক আবেদন কেন? কেন আমাদের লেখার মধ্যেকার কল্পনার কন্যার সেই মুখ অগ্নিমুখ হ'য়ে উঠবে না অসত্যের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে। যদিও দরিন্দার বুকে পিতৃভাবের লেশমাত্র জাগে না তথাপি দরিন্দার বুকে যদি পিতৃভাব জাগাতে হয় তা হ'লে আমাদের লেখার মধ্যেকার কন্যাকেও অগ্নিপথে হাঁটতে হবে অগ্নিমুখ হ'য়ে। এটা জেনে রাখুন, যাকে তাকে বাবা বা মা ডাক ডাকের পবিত্রতা ও শুদ্ধতা নষ্ট করে। তাই,
"অপাত্রে করিলে দান দাতা গ্রহীতা দুইই ম্লান"।

আর এই সংসার বা সমগ্র সমাজে এই দরিন্দাদের দাপট থাকতে পারে কিন্তু সমাজ বা সংসার তাদের অধীন নয় এটা যেন আমরা মনে রাখি যারা কন্যা জন্মের পক্ষে সওয়াল করি। এই দরিন্দাদের জন্য এই পৃথিবী কঠিন ব্যাধিতে ভুগছে এই কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য, কন্যা জন্ম মানে 'জটিল দায়গ্রস্থ ব্যাধি' নয় এই কথাটাও পুরুষ সমাজ জানে, মানে, অনুধাবন করে আর ঠিক তেমনি আরো সত্য এই দরিন্দাদের পর এই ব্যাধির জন্য সমান দায়ী নারীপুরুষ উভয়েই। আমরাও আমাদের কাজ করিনি, করিনা। এই দরিন্দারা সংখ্যায় লঘিষ্ঠ এদের নিয়ে এত গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন থাকা। অন্ধকার যেমন আছে তেমনি আলোও আছে। অন্ধকারের আলাদা কোনও অস্তিত্ব নেই। আলো নেই তাই অন্ধকার। আলো জ্বললেই অন্ধকার দূর হ'য়ে যায়। অন্ধকার আলোকে গ্রাস করতে পারে না, আলো অন্ধকারকে গিলে ফেলে। তাই লেখার মধ্যে আলো জ্বালান, আলোর দিক তুলে ধরুন অন্ধকার ব'লে কিছু থাকবে না। অন্ধকারকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কারন যার অস্তিত্ব নেই তার কিসের এত চর্চা, এত গুরুত্ব, এত আলোচনা!? আসুন আলোর সন্ধান করি, আলোর চর্চা করি, আলোকে তুলে ধরি! সূর্যের আলোর মত ছড়িয়ে পড়ুক সেই আলো মানব সমাজে! দরিন্দা রূপী সেই অন্ধকার আলোর বন্যায় ভেসে যাক, মুছে যাক, মিটে যাক চিরতরে!!!!!!!!
( লেখা ২৪শে জুন'২০১৯ )

Thursday, June 22, 2023

প্রবন্ধঃ ভালোবাসা ও আদর্শের প্রয়োজন

নারী-পুরুষের ভালোবাসা ও আদর্শের প্রয়োজন।

পুরুষ তার অসংযত ভালোবাসার জন্য ইতিহাসের বুকে বহু অঘটন ঘটিয়েছে। এই সমস্ত অঘটনের পিছনে ভালোবাসার থেকে বেশী ছিল যৌন আকর্ষণ-উন্মাদনা। এর জন্য দায়ী বিধাতার দেওয়া অসহায় নারীর রূপ, শরীরের যৌন আবেদন। আর দায়ী ভালোবাসার নামে পুরুষের কপট উচ্ছৃঙ্খল চরিত্র, বিশৃঙ্খল জীবন। রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরে মরা পুরুষ নারীকে ভালোবাসার নামে করেছে নারীর সঙ্গে ছলনা। এর জন্যে নারীও কম দায়ী নয়। নারীও তার রূপকে হাতিয়ার ক'রে শরীরী আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে পুরুষকে করেছে উত্তেজিত, করেছে লালায়িত। স্বাভাবিকভাবে পুরুষ বহুগামী। নারী একগামী। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। এক নারীতে পুরুষ সন্তুষ্ট নয়। বহুগামী পুরুষকে রিজেক্ট করার শক্তি নারীর আছে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই শক্তি সে কাজে লাগায় না। আর লাগালেও পুরুষ তার পুরুষালী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নারীর পিছনে তার বালখিল্য বীরত্ব ফলায়।

আর, নারীর জন্য যে পুরুষ জীবন বাজী রাখে নারীকে লাভ করার জন্য নারীর সে কথা মনে থাকে না, মনে রাখে না। সেই পুরুষকে সে তার রূপ, যৌবন ও শরীরী যৌন আকর্ষণ দিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণের স্বার্থে কাছে ধ'রে রাখার চেষ্টা করে যেখানে ভালোবাসার বিন্দুমাত্র গন্ধ থাকে না। ফলে পুরুষ আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। আবার নারীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যে নারী পুরুষের জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ ক'রে পুরুষের সঙ্গে অজানার পথে পাড়ি দেয় সেখানে পুরুষ সেই ত্যাগের মূল্যও দেয়নি, দেয় না; সে তার ব্যক্তিগত যৌন স্বার্থ পূরণে থাকে মত্ত।
এর জন্যেই ছিল সমাজে নারীর পর্দা প্রথার প্রচলন, নানা বিধিনিষেধ শুধুমাত্র নারীকে উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল পুরুষের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং ছিল উভয়ের বিশেষতঃ পুরুষের জীবনে জীবন্ত সর্ব্বশ্রেষ্ট ইষ্ট বা আদর্শ গ্রহণ প্রথা।

আসলে নারী-পুরুষের ভালোবাসা-টাসা কিছুই না, ভালোবাসার নামে পুরোটাই ইনফ্যাচুয়েশান। নারী-পুরুষ উভয়ে ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে। থাকে শুধু ভালোবাসার নামে তীব্র শরীরী আকর্ষণ। অজ্ঞাত থাকে কারণ উভয়েই আদর্শহীন ইষ্টহীন জীবনের অধিকারী। তাই তারা ভালোবাসার মধ্যে ভালোতে বাস করার অর্থ ও পথ খুঁজে পায় না। ফলে নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়ের ভালোতে বাস করার মধ্যে দিয়ে যে ভালোবাসা সেই জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়।
এই জ্ঞান লাভের জন্যই ভালোবাসাময় জীবন্ত সর্ব্বশ্রেষ্ট ইষ্ট বা আদর্শ এককথায় জীবন্ত ঈশ্বরের প্রয়োজন হয়।---প্রবি।

Wednesday, June 21, 2023

প্রবি সমাচার ২৩

ঠাকুরের চাওয়া ও আমরা সৎসঙ্গীরা।
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী, ছড়া, কথোপকথন পোষ্ট করা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেন। কেউ পোষ্ট করেন ঠাকুরের বাণী বা ছড়া মুখে মুখে শোনা থেকে, কেউ পোষ্ট করেন অসম্পূর্ণ, কেউ করেন উল্টে পাল্টে শব্দ পরিবর্তন ক'রে শোনা কথার ওপর ভিত্তি ক'রে। কেউ বা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি বাদ দিয়ে। কারও বা অজস্র বানান ভুলে ভরা পোষ্ট, (হয়তো বা তা কখনো কখনো কম্পিউটারের ওপর দখল না থাকার কারণে হয়) কারও কারও পোষ্টে ইনভার্টেড কমা বা ঠাকুরের নাম থাকে না। মনে হয় লেখাটা যিনি পোষ্ট করছেন তার!!!! আর আম সাধারণ সৎসঙ্গী ভাবেও তাই। অথচ যিনি পোষ্ট করেন তিনি এমনভাবে----ইচ্ছাকৃতই হ'ক আর অনিচ্ছাকৃতই হ'ক-----পোষ্ট করেন যেন মনে হয় লেখাটা তারই!!! ধরিয়ে দিলেও নিজেকে শুধরে নেয় না। আবার সরাসরি অন্যের লেখা নিজের ব'লে দ্বিধাহীন চিত্তে অবলীলায় অবহেলায় চালিয়ে দেওয়ার মত ঘৃণ্য কাজও করে কেউ কেউ। আসল লেখকের নাম ছেপে লেখককে ক্রেডিট দেয় না, সংগৃহীত কথাও লেখে না। কখনো কখনো কেউ কেউ পোষ্টের শেষে 'সূত্র' লিখে চালিয়ে দেয় তবুও লেখার ওপরে লেখকের নাম দেয় না!!! অনেকে আছে রেফারেন্স দেয় না।
এরফলে অনেকের মতে বিভিন্ন সুযোগ সন্ধানী কুচক্রী সৎসঙ্গ বিরোধী মানুষ, জনগোষ্ঠী সুযোগ পেয়ে যায় নিজেদের ইচ্ছেমত যা খুশী লিখে সেখানে ঠাকুরের ফটো বসিয়ে সাধারণ সৎসঙ্গী ও আম জনতাকে বিভ্রান্ত করার।
যাই হ'ক কথাটা একশত ভাগ সঠিক। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের লেখা পোষ্ট করা সম্পর্কে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা আমাদের প্রত্যেকের উচিত। উচিত তীক্ষ্ণ ও তৎপরতার সঙ্গে সজাগ থাকা। আমরা যেন ব্যাপারটা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখি ও যতটা সম্ভব চেষ্টা করি।
তবে এটাও ঠিক, একশত বারের অধিক হাজারবার, লক্ষ-কোটি বার সঠিক যে, ঠাকুরের কথার তা সে বাণী, ছড়া, কথোপকথন যাই-ই হ'ক তার একটা স্মেল আছে, আছে তাল, লয়, ছন্দ আর মাদকতার পরম্পরা!!!!! বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! তাই এই পরম্পরা সম্পর্কে যে অল্পবিস্তর স্টাডি করে, যার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, ঠাকুরকে যে বুঝেছে, ঠাকুরের জীবন সম্পর্কে যে জানে, ঠাকুর দর্শন, ঠাকুরের মিশন, ঠাকুরের আসার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, গন্তব্যস্থল সম্পর্কে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে, আছে তাঁর নির্দেশিত পথে একটু হ'লেও পবিত্র অকপট চলা তাকে বোকা বানানো, ঠকানো সম্ভব নয়। তবে অল্পবিস্তর স্টাডিকে, বিন্দুমাত্র ধারণাকে, সামান্যতম জ্ঞানকে, একটু হ'লেও চলাকে তাঁকে ভালোবেসে আরো গভীরতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেলে তথাকথিত আবাল জনগোষ্ঠী কিছু করতে পারবে না, বিন্দুমাত্র দাগ কাটতে পারবে না। তবে হ্যাঁ ঠাকুরের কাজে বাধার সৃস্টি করে মাত্র আর ঠাকুরকে সীমাহীন কষ্ট দেওয়া হয়; এছাড়া এইসমস্ত জনগোষ্ঠী ঝড়ের আগেই তুষের মত উড়ে যাবে এবারের দয়ালের ভয়াল রূপের কাছে!!!!
তাই সৎসঙ্গীদের ঐ দেখা হ'লেই মেকী, শুকনো, কথার কথা, কর্ম্ম বিহীন, আবেগ সর্বস্ব, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু 'জয়গুরু' বলার সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু ফেসবুকে বিপ্লব করা থেকে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী কোথায় কি বললো না বললো, ঠাকুরকে কে কোথায় কি বিকৃত করলো না করলো, কে কোথায় গালাগালি, কুৎসা করলো এসব নিয়ে ঠাকুরের ভাবনা চিন্তা করার অবসর ছিল না। এই পৃথিবীকে রক্ষা করা, পৃথিবীর সবাইকে রক্ষা করাই ছিল তাঁর বুকের ব্যাথা, আমাদের সবার ভালো থাকা, সুস্থ থাকা নিয়েই ছিল তাঁর যত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জীবনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আমাদের জন্য শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারেননি। শুধু শঙ্কায়, আতঙ্কে তাঁর দিন কেটেছে আমাদের নিরাপত্তা, আমাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য। আমরা কেউ তাঁকে একদিনের জন্য শান্তি দিতে পারিনি।
আমাদের জন্যই, আমাদের বাঁচাবার জন্য ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই তিনি এসেছিলেন বারবার। কিন্তু আমরা তা বুঝিনি, ফিরে তাকায়নি তাঁর দিকে।
তাই, আমাদের সৎসঙ্গীদের ঠাকুর যা চান তাই হ'তে হবে। এছাড়া আর কিছু তাঁর চাওয়া ছিল না আমাদের কাছে।
( ২২শে জুন' ২০২১ )

Tuesday, June 20, 2023

উপলব্ধি ৪৫

পরিবেশ, বৃক্ষরোপন ও আমরা।

আকাশ কালো মেঘের চাদরে ঢেকে গেছে। এই বুঝি নাবলো অঝোর ধারায়! এখন বৃষ্টি নাবলেই ভয় জাগে। এই বুঝি প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে তছনছ হ’য়ে যাবে চারপাশ। ভেঙে পড়বে বড় বড় গাছ বাড়ীর ওপর, পথের ওপর, ইলেকট্রিক তার, পোস্টের ওপর। গাছ আজ এক ভয়ের ব্যাপার অথচ এই গাছ আমাদের দেয় অক্সিজেন! আবার সেই গাছ হ’য়ে দাঁড়ায় যন্ত্রণার কারণ! কেন!? আসুন একটু পিছন ফিরে দেখা যাক।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে নেওয়া হয়েছিল নানা কর্মদ্যোগ। প্রতি বছর এই দিনটি (৫ই জুন) বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য জল, স্থল, বায়ু সমস্ত কিছুকে দূষণ মুক্ত করার প্রয়াসে বিশ্বজুড়ে নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে ও আগামীতেও হবে নানা পদক্ষেপ। যেমন কলে কারখানায় নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস, গাড়ির কালো ধোঁয়া, প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার, নদীর জলে নোংরা ক্ষতিকর বর্জ্য, পাহাড় কাটা, গাছ কাটা ইত্যাদি নানা বিষয় আজ পরিবেশ দূষণের ভয়ংকর কারণ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিশ্বজুড়ে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বৃক্ষরোপণ একটা কর্মসুচী। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে গাছ লাগানোর একটা কর্মসুচী ছিল এলাকায়। টিভিতেও দেখেছি নানা অনুষ্ঠানের ছবি। সেদিন বেড়িয়েছিলাম একটা কাজে। গন্তব্যস্থল খড়দা। আমরা কয়েকজন যাচ্ছিলাম ২৪ তারিখের (২৪/০৬/১৮) ‘বিশেষ সৎসঙ্গ’ সম্পর্কিত আলোচনার জন্য। যাওয়ার সময় দেখলাম পথের ধারে বৃক্ষরোপণের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে আমার পরিচিত কয়েকজনকে দেখতে পেলাম। যাওয়ার সময় তাদের সংগে চোখাচোখি হ’ল। ভদ্রতাবশতঃ দাঁড়িয়ে দু’এক কথা বললাম। পাশে একজায়গায় দেখলাম কিছু গাছের চারা জড়ো ক’রে রাখা রয়েছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলার পর বিদায় জানিয়ে চলে এলাম। একটা টোটো ধ’রে এগিয়ে চললাম রিষড়া ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে মনে হ’লো বৃক্ষরোপণের উপকারিতা ও অপকারীতার কথা।
এই বিষয়ে চারপাশের যত্রতত্র বৃক্ষরোপণ মনকে বিব্রত ক'রে তোলে। প্রত্যেক বছর কালবৈশাখীর দাপটে তছনছ হ'য়ে যায় শহুরে সভ্যতা। অন্ধকারে ডুবে যায় শহর, গ্রাম, জনপদ। কেন? দেখা যায় লাইটপোস্টের ঠিক নীচে বা রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে গাছ লাগানো হয়েছে বা আপনা থেকেই মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। তারপর সেই গাছ বড় হ’তে হ’তে লাইটপোস্ট এবং ইলেকট্রিক লাইনের তার ঢেকে দিয়েছে। গাছের পাতা বা ডালপালা ভেদ ক’রে সেই লাইটপোস্টের আলো এসে পড়ে না আর রাস্তায়। অল্পবয়সী উঠতি ছেলেরা মোড়ে মোড়ে যৌবনের উচ্ছ্বাসে, উৎসাহ ও উদ্দীপনার আতিশয্যে, আবেগে বট অশ্বত্বের চারা লাগিয়ে শিবের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে ধূমধাম ক’রে শিবপূজার আয়োজন করছে আর তারপর সেই চারা জল, আলো ও বাতাস পেয়ে ধীরেধীরে মাথা ছাড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার জন্য উঠছে বেড়ে। চারিদিকে ডালপালা ছড়িয়ে সে জানান দিচ্ছে তার বিরাটের উপস্থিতি, বিশালত্বের মহিমা! তারপর দেখা গেল চোখের পলকে সবার অগোচরে সে ঢেকে ফেলেছে মাথার উপরে বিরাট আকাশ, আশেপাশের বাড়িঘর পড়ে গিয়েছে ঢাকা, ইলেকট্রিকের তারের উপর দিয়ে, ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে মোটা মোটা ডাল। অক্টোপাশের মত তার ডালপালা দিয়ে ঘিরে ফেলেছে লাইটপোস্টের মাথা! যান চলাচলের ব্যস্ত রাস্তার পাশে ধর্মের নামে ঈশ্বরের সুড়সুড়িতে শিব কালী শনির মূর্তি বসিয়ে তার পিছনে বট অশ্বত্বের গাছ পুঁতে রাতারাতি ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে মন্দির বানিয়ে ফেলেছে আর সেই গাছ একদিন বিরাট মহীরুহ হ’য়ে ধর্মীয় আখড়া বা জাগ্রত মা বা বাবা বা শনিদেবতার পীঠস্থান হ’য়ে গেল! এই যে যেখানে সেখানে জনবহুল রাস্তার ধারে ধারে, মোড়ে মোড়ে, অলিতে গলিতে, লাইটপোস্টের নীচে, ইলেকট্রিক ট্রান্সফর্মারের পাশে ধর্মের নামে, অক্সিজেনের নামে অপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো হয় আর তার ফলে যখন ধীরেধীরে বেড়ে ওঠা সেই প্রকান্ড গাছ প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ে রাস্তার উপর, লাইটপোস্টের উপর, ইলেকট্রিক তার ছিঁড়ে যখন আছড়ে পড়ে রাস্তার মাঝখানে, কোনও বাড়ীর উপরে তখন চতুর্দিকের অন্ধকারময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি পরিবেশের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রতিনিয়ত ঝড়ের রাতের ভয়ঙ্কর বিপদজনক দৃশ্য, মনে পড়ে যায় দুঃখজনক, বেদনাদায়ক চোখের জলে ভেসে যাওয়া মায়ের কোল হারানো, স্ত্রীর মাথার সিঁদুর হারানো অন্তহীন ঘটনাবলী।
কেন এর কোনও সমাধান হয় না? কেন হয় না এই অব্যবস্থার কোনও সুরাহা? সমাধান বা সুরাহা হ’তে গেলেই আসবে নানা বাধা। ধর্মীয় বাধা, পরিবেশবিদদের বাধা, সরকারি বাধা, পাড়ার দাদাদের বাধা! হাজার বাধায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘন্টার ঘন্টা অন্ধকারে বন্দী জীবন। বিদ্যুতের অভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা আলো নেই, জল নেই। প্রচন্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ধর্মের দোহাই দিয়ে ধান্দাবাজ ধর্মব্যবসায়ীরা এবং অন্ধ কুসংস্কারছন্ন ভীরু, মূর্খ, দুর্বল হৃদয়ের ঈশ্বর বিশ্বাসী ধর্মীয় বালখিল্য মানুষেরা এই যত্রতত্র গাছ লাগানোর যে প্রোগ্রাম নিয়ে চলেছে কিম্বা তাকে সমর্থন ক’রে এই অরাজকতার ও অজ্ঞানতার সংস্কৃতিকে পুষ্ট ক’রে চলেছে আজ তা’তে মানুষের জন্য লেখা থাকে ভবিষ্যৎ চরম যন্ত্রণা। এই ধর্মীয় বাধা থেকে মুক্তির উপায় নেই কারণ এই বাধার জন্মদাতা স্বয়ং ঈশ্বর বিশ্বাসী অজ্ঞ, মূর্খ, ভীরু এবং শারীরিক ও মানসিক দুর্বল মানুষ!
পরিবেশবিদদের আবার পরিবেশ রক্ষার বিরাট দায় আছে। যখন তখন যেমন তেমন গাছ কাটা চলবে না। অভিযোগ এলেই হ’লো অমনি তড়িঘড়ি গাছ রক্ষার আন্দোলনে নেবে পড়বে! সরকারী দপ্তরের বাধা তা’তে যোগাবে অক্সিজেন! আর এই আইনি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ময়দানে নেবে পড়ে কায়েমী স্বার্থরক্ষার দালালরা।
আর পাড়ার দাদাদের বাধা? একদিন ছেলের সংগে গিয়েছিলাম এক ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কম্পিটারের কিবোর্ড কিনতে। একটা ফ্ল্যাটের নীচে দোকান। পাশাপাশি তিনটে দোকান। ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানের সামনে যখন দাঁড়ালাম জিনিস কিনতে তখন দেখতে পেলাম রাস্তার ধারে ঠিক ফ্ল্যাটের সামনে একটা বড় গাছ। গাছের ডালপালা চারতলা ফ্ল্যাটের সামনের চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। একটা ডাল বেঁকে অদভুত ভাবে দোকানের সামনে রাস্তার উপরে রয়েছে। সবচেয়ে অবাক লাগলো যেটা দেখে তা হ’লো গাছটা লম্বা উঠে গিয়ে সামনের তিনতলার ফ্ল্যাটের বারান্দার সামনে ডালপালা ছড়িয়ে ফ্ল্যাটটার ঠিক সামনের দিকটা ঢেকে দিয়েছে; ফলে না নীচ থেকে ফ্ল্যাটের উপরের সামনের অংশ দেখা যায়, না উপরের বারান্দা থেকে নীচে রাস্তার কিছু দেখতে পাওয়া যায়! একটা অদভুত পরিবেশ! কৌতুহলবশত দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা এরকমভাবে গাছ যে ঢেকে দিয়েছে বিল্ডিং- এর সামনের অংশটা এর জন্য আপনারা কেউ কিছু বলেন না? দোকানদার সাবধানী ভঙ্গীতে যা বললো তা’তে যা বোঝা গেল তা’ হ’লো এই গাছটা লাগিয়েছে এখানকার ছেলেরা। তারা এই গাছটার একটা ডালও ভাঙতে বা কাটতে দেয়নি আর দেবেও না। আমি বললাম, তাহ’লে আপনারা পৌরসভায় জানান। আমাকে এর উত্তরে দোকানের ভিতর থেকে একজন বললেন, আস্তে বলুন দাদা। তারপর বললো, মিউনিসিপ্যালিটি অফিস থেকে এসেছিল গাছ কাটতে কিন্ত এলাকার দাদারা তা কাটতে দেয়নি!
আমি অবাক হ’য়ে ভাবলাম, এমনও আবার হয় নাকি! পৌরসভারও হাত বাঁধা!? তাদের কোনও অধিকার ও ক্ষমতা নেই শহরকে সুন্দর ক'রে রাখতে ও মানুষকে স্বস্তি দিতে!? বিদ্যুৎ পর্ষদ বা সিইএসসি তাহ’লে কি করতে আছে!? তারা কি করে বা করছে!? ইলেকট্রিক অফিসের কোনও দায়বদ্ধতা নেই!? লাইটপোস্ট, ট্রান্সফর্মার, ইলেকট্রিক তার সবকিছুকে গাছ ঢেকে দিচ্ছে শহরের সর্বত্র অবলীলায় অবহেলায় অথচ কোনও হেলদোল নেই ইলেকট্রিক ডিপার্ট্মেন্টের!? আগাম কোনও পরিকল্পনা নেই!? সরকার কেন অন্ধ!? কেন তারা শহর সৌন্দর্য্যের মিনিমাম যে শর্ত তার জন্য মাথা খাটায় না!? বা খাটালেও (যদি খাটায়) তাহ’লে তৎপরতার সঙ্গে তা কেন বাস্তবায়িত করে না!? তারপর যখন ঝড় তুফানে সব ওলটপালোট হ’য়ে যায়, অন্ধকারে ডুবে যায় শহর গ্রাম তখন শুরু হ’য়ে যায় মানুষের নারকীয় যন্ত্রণা সংগে টিভিতে কাগজে জ্ঞানের আস্ফালন!!!!!
কিছুক্ষণ পর অবাক হওয়ার ঘোর কেটে গেলে কেনাকাটা শেষে দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম আর উপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঐ উপরের ডালপালায় ঘেরা বারান্দার ফাঁক দিয়ে একজন মানুষের আবছা মুখ দেখা যাচ্ছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে নীচে রাস্তার দিকে তাকাবার! কিন্তু জানি তা সম্ভব হচ্ছে না! এই অসম্ভব কাজের যারা জনক তারা হ’লো পাড়ার দাদা। এই হ’লো পাড়ার দাদাদের গাছ কাটার বাধা!!!!!!!! কেন!? কেন বাধা!?
এই এত বাধার পাহাড় ঠেলে জানি না কবে কখন সচেতনতার সূর্য উঠবে আম আদমি আর প্রশাসকদের। হয়তো ঈশ্বর জানেন।
( লেখা ২০শে জুন'২০১৮)

খোলা চিঠিঃ আমার ফেসবুকের কমিউনিস্ট বন্ধুরা শুনছেন?

এই বিজ্ঞাপনটা কি সত্য ও সত্যি কি এর খবর!?

পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্টরা আপনারা কি সত্যি সত্যিই দেশের শত্রু আর বিদেশ রাশিয়া, চীনের বন্ধু!? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! বিশ্বাস হয় না! কিন্তু বহু ঘটনাবলী বিশ্বাস করতে, ভাবতে বাধ্য করছে! কেন!? কেন এমন খবর কমুনিষ্টদের গায়ে কালি ছেটায়!? আপনারা দেশের স্বার্থে দলের স্বার্থে মুখ খুলুন, কিছু বলুন, চুপ ক'রে থাকবেন না। গণশক্তির সত্যতার সতীত্ব রক্ষা করুন। কমিউনিস্ট পার্টি করতে গেলে, কমিউনিস্ট দর্শনে বিশ্বাসী হ'তে গেলে কমিউনিস্ট হ'তে গেলে, কমিউনিস্ট মতবাদে বিশ্বাসী হ'তে গেলে কমিউনিস্ট কান্ট্রি-র দালালি করতে হবে!? স্বাধীনভাবে এই দর্শন, এই মতবাদকে অনুসরণ করা যায় না!? রাশিয়া, চীন ইত্যাদি কমিউনিস্ট কান্ট্রি-র গোলামী করতে হবে!? আমার দেশে সাম্যবাদ তত্ত্বে পন্ডিত কোনও তাত্ত্বিক নেতা নেই যিনি ভারতীয় কমিউনিস্টদের, সাম্যবাদীদের আদর্শ হ'তে পারেন, দেখাতে পারেন পথ!? তাহলে কি ধ'রে নেব ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও তাদের অনুগামীরা বিদেশি প্রোডাক্ট, মৌলিকত্ব দাবি করার কোনও অধিকার নেই ভারতীয় কমিউনিস্টদের!? পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের মাটিতে সব চীনের, রাশিয়ার কমিউনিস্ট!? ভারতীয় কমিউনিস্ট ব'লে কেউ নেই, কিছু নেই বা থাকতে নেই ভারতের মাটিতে!? পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা তথা ভারতের সব কমিউনিস্টরা আমদানিকৃত প্রোডাক্ট!? তাহলে নির্ভেজাল ভারতের মাটিতে, ভারতের আবহাওয়ায় জন্ম ও লালিত-পালিত কোনও কমিউনিস্ট দলের ও সদস্যের অস্তিত্ব নেই!? সত্যি সত্যিই নেই!? এমন কেউ কমিউনিস্ট নেই যারা যে কোনও দেশের যে কোনও মতবাদের তা সে কমিউনিস্ট হ'ক আর না হ'ক বা অন্য কোনও মতবাদের অনুসারি ও অনুগামী হ'ক সেই অনুসারী ও অনুগামীদের ভারতের মাটিতে আক্রমণের, নাশকতার সমুচিত জবাব দেবে মাথা উঁচু ক'রে ভারতীয় হ'য়ে!? যদি কোনও কমিউনিস্ট এর উত্তর দেন বাধিত থাকবো। অপেক্ষায় রইলাম। ফেসবুকে আমার সাম্যবাদ তত্ত্বে বিশ্বাসী অনেক বন্ধু আছেন তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ আসুন আমাকে পথ দেখান, আমি জানতে চাই, আমায় জানতে ও বুঝতে সাহায্য করুন। আমার এই লেখা এড়িয়ে যাবেন না আমার ফেসবুকের কমিউনিস্ট বন্ধুরা! আমি দেশকে ভালবাসি, ভালোবাসি আমার দেশের মানুষকে আর তাই চাই দেশকে বাঁচাতে ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে, চাই সত্য জানতে!!!!!! কেউ জানাবেন কি!? কেন ভারতের কমিউনিস্টরা রাশিয়ার হাত ধ'রে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার পর রাতারাতি হাত ছেড়ে দিয়ে কমিউনিস্ট দেশ চীনের শরণাপন্ন হ'লো!? তাহ'লে চীনের কমিউনিস্টদের দ্বারা অনুপ্রাণিত নকশালরা সেদিন কি দোষ করেছিল!? কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, শিল্পী, পরিচালক-পরিচালিকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ইত্যাদি সমস্ত স্তরের কমিউনিস্ট পন্ডিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে অনুরোধ ও প্রার্থনা আসুন আপনার মতামত দিন।-----------প্রবি।
( লেখা ২০শে জুন'২০২০ )

(যে কন্টেণ্টের ওপর ভিত্তি ক'রে লেখাটা ছিল বর্তমানে দেখলাম সেই কন্টেন্টটা ডিলিট ক'রে দেওয়া হয়েছে।)

Monday, June 19, 2023

প্রবন্ধঃ চাষা আর লুটেরা ও 'বেকুব আমি'! (৩)

চাষা চাষ করছিল মনের আনন্দে, চাষ করাতেই তার আনন্দ, এই চাষের বিনিময়ে তার একটা জিনিসই পাওনা বা মনোবাসনা তা হ'লো আনন্দ! নির্ভেজাল আনন্দ!! এই আনন্দের সঙ্গে তাকে তার প্রাপ্যাটুকু দিলেই তার তৃপ্তি! কিন্তু লুট তার আত্মসম্মানবোধকে নির্দয়ভাবে বলাৎকার করে! আর সেই যে চাষের জন্য অভিযান সেই অভিযানের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সমুদ্র মন্থনের মত অনেক কিছু উঠে আসার সাথে সাথে বিষ ও অমৃত উঠে আসার মত সাফল্য ও ব্যর্থতার স্মৃতি, দুঃখ আনন্দের স্মৃতি, আরাম ও কষ্টের স্মৃতি ইত্যাদির মত কত শত স্মৃতি ভেসে ওঠে মানসচক্ষে! সময় ও সুযোগ মত স্মৃতি রোমন্থনের অভিযানের ফসল তুলে ধরার ইচ্ছা রইল। এখন আসি "চাষা ও লুটেরা এবং বেকুব আমি" (২) বর্ণিত পূর্বকথিত তৃতীয়বারের পৌরসভা নির্বাচনে 'বেকুব আমি'-র মহিলা ওয়ার্ডের জেতা প্রার্থীর বৈচিত্র্যময় সফরে নেপোয় মারে দই-এর কাহানী।

সেবারটা ছিল ২০১১ তৃতীয়বারের জন্য বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পৌরসভা দখলের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে 'বেকুব আমি'-র মহিলা ওয়ার্ড-এর প্রার্থী কে হবে এই ছিল বিচার্য বিষয়। যেহেতু দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে প্রায় নিশ্চিত জয়ী ওয়ার্ড-এর প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছিল সেইহেতু সেই প্রার্থীর পুনরায় টিকিট পাওয়া নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। নিশ্চিত জয়ের প্রবল হাওয়া সত্ত্বেও পরাজয় ঘটেছিল অন্তর্দ্বন্ধের কারণে। সেই অন্তর্দ্বন্ধের রেশ তীব্র হ'য়ে উঠেছিল তৃতীয়বারের নির্বাচনে সেই নিশ্চিত জয়ী ও পরিকল্পিতভাবে পরাজয়ী প্রার্থীর পুনরায় টিকিট পাওয়া নিয়ে। দ্বন্ধ এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে প্রার্থীর নাম নির্বাচন নিয়ে প্রবল বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছোয়। অথচ যার নাম নির্বাচনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বাদবিতণ্ডা অপমান চলছে 'বেকুব আমি'-র বিরুদ্ধে সেই প্রার্থী কিন্তু সেই মিটিংয়ে অনুপস্থিত। ব্যাপারটা যেন অনেকটা সেই প্রবাদের মত, "যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপ্রতিবেশির ঘুম নেই"!
যাই হ'ক মিটিং যখন শেষ হ'লো তখন রাত বারোটা। চিৎকার চেঁচামেচি শেষে যখন সবাই চলে গেল তখন প্রার্থীকে ফোন ক'রে জানিয়ে দিল ওয়ার্ড সভাপতি যে চূড়ান্ত সভায় তাঁর নামই চূড়ান্ত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। মনে মনে তখন 'বেকুব আমি' ভাবলো, সত্যি সভাপতি! কি অদ্ভুত চরিত্র! কথাটা বললাম এইজন্য, যখন চূড়ান্ত বাদবিতণ্ডা চলছে প্রতিবাদীদের কণ্ঠে তখন নিশ্চুপ হ'য়ে বসেছিল সভাপতি। বিগত দীর্ঘ পরপর আয়োজিত মিটিংয়ে আলাপ আলোচনায় স্থির হ'য়েছিল যার নাম সকলের উপস্থিতিতে তখন প্রতিবাদীরা সেদিন কোনও ঝামেলা করেনি, তোলেনি কোনও প্রশ্ন অথচ বাদবিতন্ডার সময় সেই বিষয়ে কেউ দৃষ্টিপাত করলো না বিন্দুমাত্রও! আর যতক্ষণ তীব্র বিরোধিতা চলছিল, আর পারদ চড়ছিল চড়চড় ক'রে প্রার্থীর নাম বাদ যাবার সম্ভাবনা নিয়ে ততক্ষণ সভাপতি অদ্ভুত দক্ষতায় ভারসাম্য বজায় রেখে চলছিল দু'পক্ষের মাঝে অর্থাৎ যে পক্ষ জিতবে সেইদিকেই হেলে পড়বে! আর হ'লোও তাই! অর্থাৎ 'বেকুব আমি'-র যুক্তির কাছে হার মেনে বিরোধীরা হৈচৈ শেষে চলে যাবার পর সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের সংবাদটা জানিয়ে দিল তড়িঘড়ি প্রার্থীকে যুদ্ধ জয়ের সেনাপতির মত? 'বেকুব আমি' গন্ধ পেয়ে গেল আগাম তেলের! কিন্তু চুপ ক'রে গেলাম না বোঝার ভান ক'রে।

বেকুব আমির যুক্তিটা কি ছিল? যুক্তিটা ছিল যেহেতু প্রার্থী পরীক্ষিত, জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত, সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হ'লেও সে পরাজয় জনগণদ্বারা প্রত্যাখ্যাত পরাজয় নয়, সেই পরাজয় দলীয় অন্তর্দ্বন্ধের কারণে তাই সেই প্রার্থীকে বাতিল ক'রে নতুন কোনও মুখকে এনে পুনরায় ওয়ার্ড প্রতিপক্ষের হাতে উপহার বা ভেট হিসেবে তুলে দেওয়ার মত রাজনৈতিক অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণ আর জেনেশুনে বিষ করেছি পান একই রকম! আর যেখানে রাজ্য জুড়ে তীব্র ঝ'রো হাওয়া মিউনিসিপ্যালিটিতে ক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক দলের অনুকূলে! তাই মিলেমিশে কাজ করলে খুব সহজেই জয়লাভ করা যাবে কোনও এক্সট্রা এফর্ট দেওয়ার দরকার পড়বে না। আর যদিও বা অন্তর্দ্বন্দ্ব বজায় থাকে তাহলে ঝড়ের তীব্রতার গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে ও সেই গতিবেগের আত্মতুষ্টিতে না ভুগে অতন্দ্র প্রহরীর মত চোখকান খোলা রেখে একটু এক্সট্রা এফর্ট দিয়ে চাষাদের চাষ করা প্রচন্ড পরিশ্রমের ফসল ঘরে বা গোলায় তুলে আনতে হবে লুটেরাদের লুট করার পরিকল্পনাকে আন্তরিকভাবে ছলে-বলে-কৌশলে সবরকম ভাবে মোকাবিলা ক'রে।

যাই হ'ক যুক্তিটা ছিল এইরকম। আর পরবর্তীতে ঠিক সেইভাবে পথ চলে চাষা তার রক্তঘাম ঝরা পরিশ্রমের ফসল লুটেরাদের আক্রমণ ছলে-বলে-কৌশলে প্রতিহত ক'রে নিশ্চিন্তে, নির্ভিগ্নে ঘরে তুলে আনতে পেরেছিল। যদিও উত্তরপাড়া অঞ্চলে বরাবরই শান্তিতেই ভোট হয়। আর এই ওয়ার্ডে তো সবাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মীরা একসঙ্গে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচনী কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। এটা উত্তরপাড়ার চিরকালীন ঐতিহ্য। উত্তরপাড়া বিধানসভা বা পৌরসভার নির্বাচনে লড়াই যা হয় ভিতরে ভিতরে তা পরস্পর নিজেদের দলের মধ্যেই হ'ক আর প্রতিপক্ষের সঙ্গেই হ'ক। মোকাবিলা যা কিছু রাজনৈতিকভাবেই হয়। এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। উত্তরপাড়া রাজনৈতিক আঙিনায় রোল মডেল হ'তে পারে। আর এরজন্য রাজনৈতিক শাসকবৃন্দ এই রোল মডেলকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে রাজ্য বা দেশজুড়ে সমস্ত এলাকায় কাজে লাগাতে পারে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তাদের অন্ততঃ এই কথাটা আন্তরিকভাবেই মনে রাখতে হবে ও রক্ষা করতে হবে। আর ঠিক এই পদ্ধতিতেই উত্তরপাড়া-কোতরং মিউনিসিপ্যালটির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের এই মহিলা ওয়ার্ডের প্রার্থী তৃতীয়বারের নির্বাচনে প্রথম দুবারের ব্যর্থতার পর জয়লাভ করেছিল। কিন্তু কি ছিল সেই ফল্গুধারা-র মত ব'য়ে চলা আক্রমণের চোরাস্রোতে!

নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের মধ্যে একটা অংশ 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'-র মত প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। প্রচার কাজকে ব্যাহত করার জন্য যা যা উপায় অবলম্বন করার দরকার তাই তাই গ্রহণ করেছিল, গ্রহণ করেছিল হাসিমুখে কোনরকম সরাসরি বিরোধে না গিয়েই! আমি আছি তোমার সঙ্গে কিন্তু থেকেও কোথায় জানি নেই! আমি আছি তোমার সঙ্গে, আছি শয়নে-স্বপনে-জাগরণে তোমার সঙ্গে কিন্তু আছি তোমার মাথার ফোঁড়া হয়ে! আমি আছি তোমার সঙ্গে, আছি সর্বক্ষণ তোমার সাথেসাথে পাছেপাছে কিন্তু আছি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরামর্শের নামে মেইন লাইন থেকে ডিরেইল্ড ক'রে কর্ড লাইনে চালিত করতে, আর তা হাসিমুখেই তোমার লড়াইয়ের সাথী হ'য়ে! আমি আছি তোমার সঙ্গে, আছি তোমার প্রতিটি কথাতেই 'হ্যাঁ হ্যাঁ' হয়েই কিন্তু দিনের শেষে কার্যক্ষেত্রে 'না না' হ'য়ে! আমি আছি তোমার সঙ্গে, আছি প্রতিটি গৃহীত সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হ'য়ে কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার ক্ষেত্রে আমি আছি কুম্ভকর্ণ হ'য়ে! আমি আছি তোমার সঙ্গে, আছি প্রতিটি প্রোগ্রামের সাথী হ'য়ে, কিন্ত আছি আমি সেই প্রোগ্রামকে ব্যর্থ করার ঘোর চক্রান্তে ফল্গুধারা-র চোরা স্রোত হ'য়ে!

কিন্তু এতসব সত্ত্বেও 'বেকুব আমি'-দের বেকুবী (?) কর্মকান্ডের তীব্রতা সেইসমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা ক'রে ক্রিয়ার বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া তত্ত্বে না গিয়ে নীরবে স্লো বাট স্টেডি কাজের মাধ্যমে উত্তর দেওয়ার তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিল জয়!
তারপরে এসেছিল ধীরে ধীরে সেইদিন, 'চাষা চাষ করে আনন্দে আর লুটেরা লুট করে পরমানন্দে আর বেকুব আমি'-র আঁটি হ'য়ে পড়ে থাকা কথার বাস্তবরূপ!

প্রার্থী জিতে আসার কয়েকদিন পরেই বেনো জলের মত কমিশনার তথা পার্টি অফিস নতুন মুখে ভরে গেল! এমনভাবে তারা কথা বলতে লাগলো, মিশতে লাগলো জেতা প্রার্থীর সঙ্গে যেন মনে হ'লো বহুদিনের পুরোনো পরিচিত রাজনৈতিক কর্মী! শরীরী ভাষা, মুখের বোল বোঝাতে চাইলো যেন সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে জয়ী মহিলা প্রার্থীর এরাই ছিল সর্বক্ষণের যোদ্ধা! 'ম' 'ম' করতে লাগলো অফিস ঘর সুযোগ সন্ধানীদের ভিড়ে কি এক অজানা গন্ধে! ক'দিন আগেই যে অফিস ঘর ছিল হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনের জীবনকে বাজি রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লাশকাটা ঘর সেই ঘর আজ মধুমক্ষী-তে ভরে গেছে! প্রমোটিং আর কন্ট্রাকটিং কাজের সঙ্গে যুক্ত লোক আজ সামনের সারিতে কমিশনারকে ঘিরে! কেবা প্রাণ আগে করিবেক দান তার শুরু হ'য়ে গেছে প্রতিযোগিতা! বাইকের পিছনে বসে ছুটে চলেছে কমিশনার। নতুন আগত প্রত্যেকেই দু'চাকা নিয়ে রেডি অনুরোধ করার আগেই বাড়ি থেকে মিউনিসিপ্যাল অফিস কিংবা পার্টি অফিস আবার পার্টি অফিস থেকে ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থান হ'য়ে আবার বাড়ী নিয়ে যাবার জন্য।

এমনিভাবেই চলতে লাগলো দিন! শুরু হ'লো নতুন খেলা! পার্টি তথা কমিশনারের অফিস স্থানান্তরের প্রক্রিয়া! গত দুটো টার্মে যে ঘর থেকে কাজকর্ম পরিচালিত হয়েছিল সেই ঘরকে আর উপযুক্ত ব'লে মনে হ'লো না জয়ী প্রার্থীর! আসলে কারণটা ছিল অন্য। পুরোনো গুরুত্বপূর্ণ চাষাদের কাজ শেষ, চাষ শেষে ফসল ঘরে তোলা হ'য়ে গেছে এখন আর জমি চাষের দরকার নেই, দরকার আবার পরবর্তী নির্বাচনের আগে তাই গুরুত্বহীন ক'রে দিতে হবে চাষাকে আর ভেঙে দিতে হবে পুরোনো সেট আপ! কারণ এখন আর, "মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর" তত্ত্বের কোনও মূল্য নেই, এখন মূল্য 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর' তত্ত্বের! কারণ কাল কে দেখেছে, পরবর্তী সময় আমার জন্য কি এই সুযোগ আর নিয়ে আসবে দ্বিতীয়বার!? তাই সময় নষ্ট করা বেকুবী! বেকুবী পিছন ফিরে দেখা! কে পিছনে থাকলো, কে পিছনে প'ড়ে গেল সেদিকে তাকাবার সময় নেই! মনে রাখতে হবে সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না? যা করার, যা কামাবার কামিয়ে নাও, করে নাও সময়ের সদ্ব্যবহার। আর তার জন্য সাজাতে হবে ঘর, মজবুত ঘর যাতে অন্ততঃ ৫ বছর টেকে সেই ঘর!

একেই বলে চতুর আমি আর বেকুব আমি-র ফারাক। বেকুব আমি চিরকাল বেকুব আর চতুর আমি চিরকাল চতুর! বেকুব আমি বেইমানি আর অকৃতজ্ঞতার ঢোল পেটায় আর চতুর আমির কানে সেই ঢোলের শব্দ প্রবেশ করে না! সে কান দিয়ে দ্যাখা আর চোখ দিয়ে শোনাকে রপ্ত ক'রে নেয় রাতারাতি কমিউনিস্টদের কামিয়েনিস দর্শনে পোক্ত হবার জন্য!

যাই হ'ক এটা নতুন কিছু নয়, এই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে কমবেশী আর চলবেও ধ্বংসের শেষ দিন পর্যন্ত সে যেই আসুক না কেন মসনদে। তাই বোধহয় বলে, যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ! ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়! তাই বলি, ঠগ বাছার কোনও দরকার নেই আর মসনদে বসলেই যে রাবণ হ'য়ে যায় এমন বিরুদ্ধ কথায় বিশ্বাস হারাবারও কোনও প্রয়োজন নেই কারণ মনে রাখতে রাবণের পরে বিভীষণ কিন্তু সিংহাসনে বসেছিল! হে বেকুব আমি! সমঝদার কে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যায়!

কিন্তু যে পাকা ধানটা লুট ক'রে নিয়ে গেল লুটেরা সে সম্পর্কে একটু আলোকপাত করি। নির্বাচনে জিতে আসার কিছুদিনের মধ্যে পার্টি অফিস তথা কমিশনারের অফিস একেবারে ভেঙে গেল আর অফিস স্থানান্তরিত হ'লো কমিশনারের বাড়িতে তারপর বেশ কিছুদিন বাড়িতে বসে কাজ চালাবার পর পুনরায় অফিস চলে এলো বাড়ির বাইরে সম্পূর্ণ অন্য এক জায়গায়। পরিষ্কার হ'য়ে গেল অফিস স্থানান্তরের কারণ! বোঝে সে প্রাণ বোঝে যার!ততোদিনে নিজের মত ক'রে গড়ে উঠেছে অফিস, নতুনদের নিয়ে নতুন টিম! পুরোনো 'বেকুব আমি' রা যারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারলো না তারা তলিয়ে গেল তলানিতে! যদিও টার্গেট ছিল বিশেষ 'বেকুব আমি'!

যাই হ'ক, বাড়ি থেকে যখন কাজ হচ্ছিল তখন প্রয়োজনে প্রথম প্রথম যেতে হ'তো 'বেকুব আমি'-কে কমিশনারের বাড়ি। সেখানে যেটা সবচেয়ে বিস্মিত করেছিল তা হ'লো, যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর প্রার্থিপদের বিরুদ্ধে এবং নির্বাচনে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তলে তলে অপারেশন চালিয়েছিল এবং প্রথমবারের নির্বাচনেও প্রার্থীকে হারাবার জন্য অন্তর্ঘাতে জড়িত ছিল একেবারে মিষ্টি মুখে মাখনে ছুরি চালাবার মত সেই 'চতুর আমি' হ'য়ে উঠেছে জয়ী প্রার্থী অর্থাৎ নির্বাচিত কমিশনারের খাস লোক, প্রিয়জন তার ভালো মানুষীর মিষ্টি মুখোশটাকে কাজে লাগিয়ে! স্তম্ভিত হ'য়ে গেল 'বেকুব আমি' ঐ পরমানন্দে লুট করার লুটেরাকে ভয়ঙ্করভাবে কমিশনারের বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে সক্রিয় অবস্থায় কমিশনারের গৃহের অফিসে কমিশনারের একেবারে কাছের লোক হ'য়ে যাওয়া দেখে! তারও কিছুদিন পর 'বেকুব আমি' বোবা হ'য়ে গেল সম্পূর্ণভাবে এই খবর শুনে যে, মিউনিসিপ্যাল অফিসে কমিশনারের সুপারিশে ছেলেটির চাকরি হ'য়ে গ্যাছে! খবর শোনার পর মনে হয়েছিল, সত্য বন্ধু! কি বিচিত্র এই মানুষ আর মানুষের চরিত্র! আর বিবেক বলেছিল, হে বেকুব আমি! তুমি বেকুব ব'লে কি সবাই বেকুব হবে!? আর চাকরি তো সবারই দরকার! যাক একটা বেকার ছেলের তো চাকরি হ'লো। মনে আনন্দ হ'লো ছেলেটার চাকরীটা হওয়াতে।

সেই যে 'বেকুব আমি' চাটুকার, সুযোগ সন্ধানী, নেপোদের ভিড়ে ঠেলা খেতে খেতে পিছনে হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেল আত্মসম্মানবোধের প্রাবল্য-এ, সেই পিছনে হারিয়ে যাওয়া সেই প্রাক নির্বাচনে মান-সম্মান হারানো, প্রচন্ড পরিশ্রমে লড়াই ক'রে ঘরে-বাইরে বিরোধীদের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা প্রার্থী পদ ও ওয়ার্ড ছিনিয়ে আনা 'বেকুব আমি'-টার দিকে প্রার্থী একবারও ফিরে তাকালো না 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর' তত্ত্বে, দর্শনে মুগ্ধ, আপ্লুত হ'য়ে! দেখতে দেখতে চলে গেল পাঁচ পাঁচটা বছর। এসে গেল পরবর্তী চতুর্থ বারের নির্বাচন। আর সেই চতুর্থবারের নির্বাচনে আবার এলো ন্যাড়া বেলতলায় বারবার যায়-এর মত 'বেকুব আমি'-র পুনরায় যোগদান!!!!!!!!!!!!
'বেকুব আমি' কেন এমন বেকুবী করলো!?
ক্রমশঃ
( ১৯শে জুন'২০২০ )

প্রবন্ধঃ নাটক ও নায়ক!

সেই বিভ্রান্তির Tradition সমানে ব'য়ে চলেছে বাংলায়: কি করবে বাংলা ও বাঙালি?
এই বাংলায় আমরা দেখেছি কম্পিউটার টেকনোলজির প্রথমে বিরোধিতা পরে, অনেক পরে বঙ্গবাসীর কম্পিউটার নির্ভরতা! ফলে পিছিয়ে পড়ে বাংলা ও বাঙালি। একদিন ইংরেজী শিক্ষার বিরুদ্ধেও ছিল অভিযান এই বাংলায়। কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চলেছিল সেই সময়ে রমরমিয়ে! কেউ বাধা দেয়নি সেদিন! অথচ বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোতে ছিল ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে অভিযান! সেদিনের সেই পন্ডিত মহাত্মারা কি আজ সেই কথা ভেবে লজ্জা পান? একবারও কি আপনারা ভেবে দেখেন আপনাদের অদূরদর্শী পদক্ষেপের জন্য কেন সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে? কেন আপনাদের পাপের বোঝা জনগণ ব'য়ে বেড়াবে? পরে অনেক পরে আবার ফিরে আসে সেই বাতিল ক'রে দেওয়া ইংরেজি!
ঠিক তেমনি আজ হিন্দি শিক্ষার বিরোধিতা বাংলা ভাষার স্বার্থে! সত্যিই কি তাই? সেই ট্র্যাডিশন কি ফিরে ফিরে আসে বারবার!? ভবিষ্যৎ বাংলা ও বাঙালি প্রজন্ম কি হিন্দি ভাষা না জানার জন্য সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে উপকৃত হয়েছে নাকি এখন হচ্ছে কিংবা আগামী দিনে হবে? এর গ্যারান্টি দিতে পারবেন তারা যারা হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে কট্টর পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
মনে প্রশ্ন জাগে নিজের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা শিক্ষা কি কোনও ভাষার বা কোনও জাতির অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করতে পারে? স্বাধীনতার পর হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে না নেওয়ায় দক্ষিণ ভারতীয়দের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার পরবর্তী ৭০ বছরে কি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কোনও সমস্যার জন্ম হয়েছিল? যদি সমস্যার জন্ম হ'য়ে থাকে কাদের জন্য হয়েছিল আর কারা তার জন্য খেসারত দিয়েছিল?
দেশের চিন্তাশীল বাঙালি-অবাঙালি ব্যক্তিত্বের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, সংগঠিত অনেক মানুষ একসঙ্গে একসুরে কোনও কথা বললেই তা ঠিক এবং ত্রুটিহীন ও চিরকালীন সত্য একথা কোন মহাপুরুষ বলে গেছেন এবং কোথায় , কোন কালে, কোন দেশে বলে গেছেন? সংগঠিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ সবসময় কি আম আদমির স্বার্থে নেওয়া হয়েছে? আম আদমির স্বার্থে কি দেশভাগ হয়েছিল? দেশভাগ কি হিন্দু-মুসলমানের বৃহত্তর স্বার্থে হয়েছিল?
আচ্ছা, হিন্দি তো আমাদের রাষ্ট্রভাষা! সেই রাষ্ট্রভাষা হিন্দির বিরুদ্ধে বাংলার কি কোনও আপত্তি ছিল হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হওয়ার জন্যে স্বাধীনোত্তর ভারতে? সেদিন কি কোনও বাংলার বুকে আন্দোলন হয়েছিল হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা না করার জন্য? নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি হওয়ার পক্ষে কি মত দেননি? সেটা কি মিথ্যে প্রচার ছিল? নাকি তিনি ভুল বলেছিলেন? হিন্দিভাষীদের পক্ষে দালালি করে ছিলেন? তাহ'লে রাষ্ট্রভাষা হিন্দি শিখতে আপত্তি কোথায়?
এটা কি সত্যি নয় হিন্দির মত এত সহজ সরল ভাষা আম আদমির পক্ষে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভারতের আর কোন ভাষা আছে? 'ধরতা হ্যায়, করতা হ্যায়, কোথায় যাতা হ্যায়, কোথা থেকে আতা হ্যায়, তখন থেকে বোলতা হ্যায় সংকীর্ণ গলিতে রিকশা মত ঢুকাও তবুও তুমি রিকশা ঢুকাইয়া এখন ওদিক থেকে ষাঁড় আতা হ্যায় এখন কি করে রিকশা ঘুরাইয়েগা? এখন কি করেগা করো আমি রিকশা থেকে নেহি নামেগা' ইত্যাদি এরকম আধা বাংলা আধা হিন্দিতে রান্না ঘরের, অন্দর মহলের মায়েরা পর্যন্ত মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, আদান প্রদান করতে পারে হিন্দিভাষীদের সঙ্গে এমনই সহজ সরল ভাষা হিন্দি ভাষা যা সব ভারতীয়ই কমবেশি বলতে পারে ও বুঝতে পারে তাহ'লে সেই ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক হ'লো না কেন? কেন হবে না? কোন যুক্তিতে হবে না? ভারত যদি আমার দেশ হয় আর তার যদি একটা রাষ্ট্রভাষা থাকে তা হ'লে কেন সেই রাষ্ট্রভাষা শিখবো না? আমি আমার রাজ্যের বাইরে পা রাখবো না, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা পালন করবো না বলে আমার রাজ্যের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে কুয়োর ব্যাঙের মত জীবন যাপনে বাধ্য করবো? সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জীবন যাপনে বাধা সৃষ্টি করবো? ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে নিজের আর কোন ভাষা আছে যা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য?
'এই ভাষা ওদের ভাষা' ব'লে বিষোদগার করতে শুনি প্রতিবাদীদের! প্রশ্ন জাগে, ওদের বলতে হিন্দি ভাষা কাদের ভাষা? ভারত রাষ্ট্রের জন্য কোনও রাষ্ট্রভাষার দরকার নেই?! আর যদি রাষ্ট্রভাষার প্রয়োজনই হয় আর সেই ভাষা রাষ্ট্রের জনগণ না শেখে, না জানে, না বোঝে তাহ'লে রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ জাগবে আর কিভাবে!? আমার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা শিখতে লজ্জা করে? গাত্রদাহ করে?! আমার একটা দেশ আছে, দেশের একটা ভাষা আছে সেই ভাষা আমার শেখার দরকার নেই!? তাহ'লে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের পরস্পরের মধ্যে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম কি। এটা কি বোবার দেশ! হাত পা নাড়িয়ে হাঁ হুঁ ক'রে মত প্রকাশ করবে? নিজের ভাষার বাইরে অন্য ভাষা শিখতে আপত্তি কোথায়? তাও আবার রাষ্ট্রভাষা শিখতে আপত্তি হবে কেন? এই মাতৃভাষার প্রতি অতি প্রেম কি প্রকারান্তরে অপ্রেম ডেকে আনছে না? অতি প্রগতি যেমন দুর্গতির কারণ হ'য়ে উঠেছে ঠিক তেমনি অতি প্রেম অপ্রেমের কারণ হ'য়ে উঠছে দেশ জুড়ে! মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা কাউকে জোর ক'রে শেখাতে হয়? যে মাতৃভাষাকে ভালোবাসে সে অন্য ভাষাকে সমান মর্যাদা দেবে ও ভালোবাসবে। অন্য ভাষাকে ঘৃণা করতে শেখাবে না।
আচ্ছা, উচ্চ শিক্ষিত বাঙালিরা তো বাংলায় কথা বলে না, সবসময় পরস্পরের মধ্যে অফিসে-বাড়িতে, ক্লাবে-পার্টিতে, স্কুলে-কলেজে প্রায় সর্বত্রই ইংরেজিতে কথা বলেন! সেখানে বাংলা উপেক্ষিত! সেইখানে বাংলার সর্বত্র ইংরেজি স্কুল মিডিয়ামের ছড়াছড়ি! W.B. Board ছাড়াও এখন এখানে এই বাংলায় আরও অনেক বোর্ডের দ্বারা ইংরেজী মাধ্যমে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা হয়। সব ইংরেজি মিডিয়াম! এখন তো প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র। বাংলা তো তাদের কাছে গৌণ হয়েই গেছে মূখ্য হ'য়ে উঠেছে ইংরেজি ভাষা আর সেই স্কুলেই শিখছে হিন্দি ভাষা! সেখানে কেন এই মানসিকতার প্রতি প্রতিবাদীদের কোনও প্রতিবাদ বা মতামত ও সুপরামর্শ নেই? নাকি বিদেশী ভাষা ইংরেজীর প্রতি দাস সুলভ মনোভাব? ২০০ বছরের মেরুদন্ড ভেঙে পদানত হ'য়ে বেঁচে থাকার অভ্যাসে অভ্যস্ত ভিখিরি মানসিকতা? অথচ নিজের দেশের রাষ্ট্রভাষা শেখার ক্ষেত্রে বিপ্লবী মনোভাব? ইংরেজি মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা হিন্দি শিখবে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নেবে, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, দাপিয়ে বেড়াবে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় স্বচ্ছল ভঙ্গিতে আর আমাদের বাংলা ভাষার ছেলেমেয়েরা মার খাবে, পিছিয়ে পড়বে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা হিন্দি না জানার জন্য!? সেই ইংরেজি ভাষাকে বাংলা মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সুরসূরিতে আটকে দেবার একই প্রক্রিয়ায় হিন্দি ভাষাকেও আটকে দেবে 'হিন্দি ভাষা ওদের ভাষা' আওয়াজ তুলে!?
রাষ্ট্রভাষাকে না শেখার, না মানার বিপ্লবী মানসিকতার পিছনে কোন গোপন এজেন্ডা আছে? বাংলা ভাষার প্রতি প্রেম কোন সংকীর্ণ ও বিচ্ছিন্ন মনোভাবের জন্ম দিচ্ছে? কেন দিচ্ছে? কারা দিচ্ছে? রাষ্ট্রভাষাকে না মানা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, রাষ্ট্র বিরোধীতার সমান! তাহ'লে বাংলা ভাষাকে উগ্র ভালোবাসার পিছনে কি অন্য কোনও ছক, অন্য কোনও ষড়যন্ত্র আছে কিংবা ভয়ঙ্কর কোনও ভবিষ্যৎ বিপদ নেবে আসার অপেক্ষায়? এইভাবে কি কোনও ভাষাকে আটকানো যায় নাকি বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে কোনও ভাষাকে বাঁচাবার জন্য অক্সিজেন যোগান দেওয়া যায়!? বাংলা ভাষার প্রতি আন্দোলনকারীদের এত প্রেম সন্দেহের জন্ম দেয়! এখনো পর্যন্ত বহু বহু বহু হিন্দু বাঙালিরা জানেই না বাংলার মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদিরাও বাঙালি! যদি জিজ্ঞেস করা হয় ওরা কি! বাঙালি? উত্তর ভেসে আসে, না ওরা মুসলমান! ওরা খ্রিষ্টান! ওরা বৌদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি! একইরকম ভাব বা ধারণা মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদিদের ক্ষেত্রেও।
তা বাংলা ভাষার প্রতি যাদের এত তীব্র প্রেম তারা এইসব ছোটখাটো ভিত্তিহীন বাংলা প্রেম, ভালোবাসা বাদ দিয়ে বৃহত্তর প্রেম, ভালোবাসার আন্দোলন করলেই তো পারে! তাতে বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে। এই ভারত থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এক হ'য়ে এবং আরও অন্য বাংলা ভাষাভাষী যেমন ত্রিপুরা, অসম ইত্যাদি অঞ্চলকে জুড়ে নিয়ে বৃহত্তর বাংলা দেশের জন্ম দিক না! দেখা যাক সেখানে হিন্দু বাঙালি, মুসলমান বাঙালি, খ্রিষ্টান বাঙালি ইত্যাদি সব সম্প্রদায়ের বাঙালি এক হ'য়ে মিলেমিশে থাকতে পারে কিনা!!! বাংলাদেশে এখন হিন্দু বাঙালির সংখ্যা ৭% নেবে এসেছে! সেটা কি এই বাংলার বিপ্লবী বাংলা প্রেমীদের জানা আছে? কেন সেখানে দিন দিন হিন্দু বাঙালির সংখ্যা কমে আসছে? সে সম্পর্কে কি কোনও বক্তব্য আছে এপার বাংলার বাংলা ভাষা প্রেমীদের? আবার এই বাংলায় মুসলমান বাঙালির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে! কেন? কোনটা আগে? বাংলার বাঙালি নাকি হিন্দু বাঙালি, মুসলিম বাঙালি ইত্যাদি বাঙালি আগে? কোন পরিচয়টা সঠিক ও খাঁটি-নির্ভেজাল পরিচয়? বাঙালির কোন পরিচয়টা আগে? কোন পরিচয়টা বহন করা উচিত? বাংলার এলিট বা সিভিল সোসাইটি কি বলেন?
ভাঙার রাজনীতি কি আম আদমির জন্য ভালো ও মঙ্গলজনক? ভারত ভাগ হ'লো কিসের জন্যে? আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে নাকি ক্ষমতা দখলের লোভে? হিন্দু-মুসলমান কার লাভ হলো? আগে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে মিলেমিশে ছিল না? ওই যে বিখ্যাত গান "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম-----------" মনে পড়লেই চোখে জল আসে! এখন কেন হিন্দু বাঙালি আর মুসলমান বাঙালি পরস্পর পরস্পরকে বাপ বাপান্ত করে? এই শিক্ষায় শিক্ষিত হ'লো কি করে বাঙালি! বাঙালি বাঙালি আগে নাকি হিন্দু আগে, মুসলমান আগে?! কোনটা? কে বা কারা এই বিচ্ছেদের মানসিকতার বীজ বপন করলো? আর কারা-ই বা এই বিষকে বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে? আর কারাই বা বাঙালিকে ভাগ ক'রে দিল হিন্দু-মুসলমান ট্যাগ লাগিয়ে?
তাই বলি, বাংলা ভাষার প্রতি এত প্রেম, এত ভালোবাসা, এত দরদ তা বাঙালির প্রতি কোথায় সেই প্রেম, ভালোবাসা ও দরদ!? বাঙালি যে দিন দিন টুকরো টুকরো হ'য়ে যাচ্ছে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ইত্যাদি নামে সেদিকে খেয়াল আছে বাংলা ভাষা প্রেমীদের!? বাংলা ভাষার প্রতি এত তীব্র প্রেম বাঙালি প্রেমের ক্ষেত্রে ভাটা পরে কেন!? কেন গৌণ ও গুরুত্বহীন হ'য়ে পড়ে!? কেন বাংলা ভাষী হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু বাঙালি ও মুসলমান বাঙালি উভয়ে উভয়কে বিষ নজরে দেখে, শত্রুতার চোখে দেখে!? এ কোন শিক্ষা!? কোন সংস্কৃতি!? কে আমদানি করলো বাংলার বুকে এই শিক্ষা?
এরপরও বাংলা ভাষার প্রতি এই কপট প্রেমের বন্যা!? বাঙালি জাতটাই (হিন্দু-মুসলমান উভয়ে) যেখানে মারামারি, কাটাকাটি, হিংসায় খতম হ'য়ে যাবে একদিন সেখানে হিন্দি ভাষাকে আটকে রেখে, শিখতে না দিয়ে বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর নাটক, বাঁচানোর অভিনয়ে অভিনীত নায়কের গোপন এজেন্ডার উদ্দামতা এ যে গোড়া কেটে আগায় জল ঢালা!?
তাহ'লে রাষ্ট্রভাষার দরকার নেই? রাষ্ট্রভাষা সংস্কৃত হ'তে পারে ও পারতো কিন্তু এখন কি তা আর সম্ভব? জানি না। সেটা ভেবে দেখতে পারেন প্রকৃত সমাজ সচেতন সমাজ প্রেমী সমাজ সংস্কারকরা। আর রাষ্ট্রভাষার যদি দরকার না হয় তা হ'লে ভারত রাষ্ট্রেরও দরকার নেই, কি বলেন প্রতিবাদী ভাষা প্রেমীরা?
আর কত নাটক দেখবো হে ঈশ্বর!!!!!!!!!
( ১৯শে জুন'২০১৯ )

খোলা চিঠি Kazi Faizal Hossain কে ।

মিঃ কাজি ফয়জল হোসেন আপনার মন্তব্য পড়লাম। পড়ে ভাবলাম আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আর এই ভুল ভবিষ্যতে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। একটা ভুল থেকেই হাজার ভুলের সৃষ্টি হয়। তাই মনে হ'ল আপনার সঙ্গে একটু কথা বলি। আর তাই আপনাকে আমি এই খোলা চিঠি লিখলাম। আমি একজন জন্মসূত্রে না হ'লেও পিতামাতার সূত্রে ভারতীয় হ'য়েও বাংলাদেশী। আমার পিতৃপুরুষ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মানুষ। নির্মম, ঘৃণ্য দেশভাগের কারণে ঘরবাড়ি সমস্ত কিছু ছেড়ে দেশভাগের আগেই পশ্চিমবাংলা তথা ভারতে চলে আসতে হয়। তারপর থেকে আজও এই দেশেই বাস করছি। বাপ-মা-ঠাকুর্দা-দাদু ইত্যাদি আজ আর তারা কেউ নেই। আছে শুধু স্মৃতি। তাও কালের নিয়মে তা হ'য়ে যাচ্ছে ঝাপসা। যাই হ'ক হামিমদার লেখার উপরে আপনার লেখা কমেন্ট পড়লাম। আর তাই মনে হ'ল দু'এককথা আপনার সঙ্গে শেয়ার করি। তাই আপনাকে লিখতে বসে গেলাম আর নিজের লোক মনে ক'রে খোলা চিঠির মাধ্যমে আপনাকে তা জানিয়ে দিলাম।
আপনাকে কে বললো বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবমাননা সবচেয়ে ভারতের লোকজন করে? যদি তাই হয় তাহ'লে কোন দেশের লোকজন কম অবমাননা করে সেটা তো বললেন না? 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের ভিক্ষা' এই কথা যদি ভারতের কেউ কেউ ব'লে থাকে তাহ'লে তার দায় ভারতের ১৩০কোটি লোকের উপরে বর্তায় বুঝি? আপনার বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করে, গালিগালাজ করে তাহ'লে তার দায়ও বুঝি বাংলাদেশের প্রায় ১৬কোটি জনগণের উপর বর্তায়? এটা কোন জাতীয় শিক্ষিত লোকের চিন্তাধারা তা বুঝলাম না।জানি না আপনার বয়স কত আর জানি না আপনি সেই ভয়ংকর নির্মম বেদনাদায়ক ৭১সালের ইতিহাসের সাক্ষী আছেন কিনা।সেদিন ভারতের মানুষের মনে বাংলাদেশের উপরে পাকিস্তানী সেনার নৃশংস বর্বরোচিত আচরণের কি তীব্র প্রভাব পড়েছিল, ভারতের আকাশে বাতাসে ও ভারতের পার্লামেন্টে কি ভয়ানক ঝড় উঠেছিল, কংগ্রেস সরকার ও বিরোধীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ইন্দিরা গান্ধীর যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুলা সমর্থন ইন্দিরা গান্ধীর উপর কোন স্তরে পৌছেছিল, বাংলাদেশ সম্পর্কে গৃহীত ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্তের উপর আন্তর্জাতিক চাপ কতটা ইন্দিরা গান্ধী দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছিল, ভারতের জনগণ ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে দাঁড়িয়ে ইন্দিরা গান্ধীর হাতকে কতটা মজবুত করেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি তা' আপনি মিঃ কাজি ফয়জল সম্ভবত জানেন না। সেদিন এপার বাংলার ষোলোর যৌবন বাংলাদেশের সমর্থনে পথে পা রেখেছিল কাজি সাহেব শুধুমাত্র মানুষ হিসাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবার মানবিকতার কারণে। সেদিনের ইন্দিরা গান্ধীর সাহসী ভুমিকার জন্য আজও গর্ব অনুভব করি। গর্ব অনুভব করি এমন এক নেত্রীর জন্য যার হৃদয় সেদিন কঠোর-কোমলের এক অপূর্ব সমন্বয় বিশ্বের সামনে উদ্ভাসিত হয়েছিল। কাজিবাবু মায়ের হৃদয় কি ও কেমন হ'তে পারে আমরা সেদিন ভারতীয়রা টের পেয়েছিলাম। আপনার কথামত অর্থাৎ আপনি যা লিখেছেন সেইমত কিছু শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষও সেদিনের ভারতের ভুমিকা সম্পর্কে এই ধরণের কথা বলে যা' সত্যিই দেশবাসী হিসাবে আপনাদের মনে লাগে। এই ধরণের কথা কখনোই কাম্য নয়। আর এই ধরণের কথা কোনও সচেতন ভারতীয় সমর্থনও করে না। এই ধরণের মানুষ সব দেশেই, সব কালেই, সব স্থানেই রয়েছে, আর রয়েছে যুগ যুগ ধরে। তাই ব'লে দেশের বৃহত্তম অংশ সেই মনোভাব পোষণ করে সেই ভুল কথা আপনাকে কে বললো? এগুলি আপনার রাগের কথা। এমন রাগ আপনাদের কিছু বাংলাদেশী সম্পর্কে আমাদেরও হয়। তাই ব'লে সেই রাগ বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষের উপর বর্তায় না।
আর যে দেশ আপনাদের উপর চরম নির্মম অত্যাচার করলো, মায়েদের উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে নির্দয়ভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে খেলো, শিশুদের উপর,মানবিকতার উপর চরম সীমাহীন বলাৎকার করলো আর যেই দেশ মায়ের মত বুক দিয়ে আগলে রেখে, পিতার মত মাথার উপর ছাতা হ'য়ে থেকে, ভাইয়ের মত পাশে দাঁড়িয়ে, বোনের মত স্নেহ-মমতায় ভরিয়ে দিয়ে, বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রমাণ দিল আমি শত্রু নয় সেই দুই দেশকে একই পাল্লায় তুলে কাজিবাবু আপনি বা আপনারা ওজন মাপেন, বিচার করেন?
কয়েকজন অবিবেকী, মনুষ্যত্বহীন, বোধহীন, চেতনাহীন, জ্ঞানহীন মানুষের বালখিল্য বক্তব্যের জন্য ভারতের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন? একবারও মনে পড়লো না সেইদিনের ভারতের কথা যারা আপনাদের সবচেয়ে প্রয়োজনের দিনে পাশে দাঁড়িয়েছিলো? এমন মানুষ পৃথিবীর কোন প্রান্তে নেই বলবেন কাজিবাবু?
তাহ'লে এটাকে কি বলবো? অকৃতজ্ঞ ও বেইমান????????
তবে একটা কথা বলি, ঐ যে অতুল্প্রসাদ সেনের একটা গান আছে না, "বল বল বল সবে, শতবিণা বেনু রবে ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ট আসনও লভে।" প্রকারান্তরে কথাটা সত্যি হয়েই গেল নাকি? আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট সবাইকে হারিয়ে বিশ্বের সেমিফাইনালের চার দলের তিনটে দলই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলে অতীতে একটা দেশই ছিল। আমার, আপনার, সবার ভারতবর্ষ!!!!!!!!!!
যাইহ'ক আমার নমস্কার জানবেন ও ভালো থাকবেন।

হামীম ফারুক is feeling angry.
· Dhaka, Bangladesh ·

বাংলাদেশের যে তরুণ পাকিস্তানের খেলা দেখে হাততালি দেয়, সে হয়তো ১৯৭১ এ এদেশে পাকিস্তানীদের নির্মমতা দেখেনি। কিন্তু বাংলাদেশের যে সব জ্ঞানপাপী খেলার ভেতরে রাজনীতি মেশাবেন না বলে পাকিস্তানের সাফল্যে খুশিতে আটখানা হয়ে পড়ে তাদের কি বলবো !!
( লেখা ১৯শে জুন'২০১৭ )

Friday, June 16, 2023

কবিতাঃ রাগ-অনুরাগ!!

যত গণ্ডগোল মত প্রকাশের ভঙ্গীতে।
সংযম নিরুদ্দেশ! তোমরা দেখেছো কি কেউ তাকে?
একই কথা একটু অন্যভাবে, অন্যভঙ্গিতে বলা যেতে পারে?
"লাশ না, পলাশ....................."মন্দাক্রান্তা শাবাশ!
এমনিভাবেই.........
কলম! ঝরুক ঝরঝর ঝর্ণা, প্রেমবৃষ্টি!
চাই না এই অসহ্য গরমে তোমার অগ্নিবৃষ্টি।
কবি! আবার মনে পড়ে গেল,
'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন??????'
বন্ধু! তেজ ভালো, ভালো রাগ।
যদি থাকে সাথে সোহাগ।
কবি! কেন প্রতিবাদ? কেন প্রতিরোধ?
যদি অসুরক্ষিতই হয় ঐ নিরোধ!
কবি! এত অভিমান! এত রাগ!
অভিমানের চেয়ে রাগ ভালো,
রাগের চেয়ে অনুরাগ!
( লেখা ১৯ই জুন'২০১৭ )

উপলব্ধি ৪৪ দায় কার!? কার দায়!?

ধর্মের নামে যুগ যুগ ধ'রে যে অধর্মগুলি হ'য়ে চলেছে, যাদের দ্বারা হ'য়ে চলেছে সেই অধর্মীয় আচরণ বা কর্মকান্ডগুলি তাদের কাছে ধর্মীয় আচরণ বলেই তারা মনে করে শুধু তাই নয় সেই আচরণগুলিই আজ ধর্মীয় আচরণ বলে সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা আমার কাছে ধর্ম তা অন্যের কাছে অধর্ম বলে মনে হয়। যেমন ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমার কাছে জীবন্ত ঈশ্বর, পরমপিতা আবার ঠিক তেমনি কারও কাছে ঠাকুর প্রতিকূলচন্দ্র জীবন্ত ঈশ্বর বা পরমপিতা। এক্ষেত্রে কি করণীয়? কিছু বললেই তো ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত লেগে যাবে! তাই না? তাহ’লে আঘাত লেগে যাবার ভয়ে কিছুই বলা যাবে না!? যেমন পশু বলি। পশু বলির বিরুদ্ধে কত মহাত্মাই তো কত কথা বলে গেছেন তা কি সাধারণ মানুষ মেনেছে? নাকি ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত লাগার ভয়ে মহাত্মারা বলা থেকে বিরত ছিলেন? ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের তান্ত্রিকের হাত থেকে ছোট্ট ছাগ শিশুকে মায়ের কাছে বলির হাত থেকে বাঁচাবার জন্য তীব্র আকুতি, কষ্ট, যন্ত্রণা, কান্নার কথা কে না জানে! তথাপি ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্যরা শকুন্তলা মায়ের কিম্বা শ্মশানকালী ইত্যাদি মায়ের পূজায় ছোট্ট ছাগ শিশু হাতে লাইনে দাঁড়ায় বলি দেবার জন্য! কেন? এটা বললে কি অন্যের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত লেগে যাবে? নেপালের গাধীমাই মন্দিরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ পশু বলি হয় ; সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য! সেটা সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ লোকের ধর্ম বিশ্বাস!? সেই নারকীয় পিশাচী ধর্মীয় আচরণ, রীতিনীতির বিরুদ্ধে কেউ নেই বলবার বা প্রতিবাদ করার? আর বিরুদ্ধে বললেই অন্যের ধর্মের বিশ্বাসে তা হবে আঘাত!? সম্প্রতি রামনবমী উপলক্ষ্যে যে ঘটনাগুলি আসানসোল তথা সারা রাজ্য জুড়ে সংগঠিত হ’লো সে সম্পর্কে কি বলা যাবে? অস্ত্র হাতে যারা মিছিল করলো তারা ধর্ম পালন করেছে আবার যারা নিরস্ত্র অবস্থায় মিছিল করেছে তারাও ধর্মীয় উৎসব পালন করেছে। কোনটা ধর্ম আর ধর্মীয় উৎসব পালন তার ধার ধারছে কে? আমার কাছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা যদি অশোভন, অধর্মীয়, নীতি বিগর্হিত হয় তাহ’লে অন্যের কাছে তা বীরপূজা। এবং এই বীরপূজার সমর্থক পন্ডিত সমাজও। এখন প্রশ্ন ক্ষতি বা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কে বা কারা। ক্ষতি বা সমস্যা যদিও গোটা সমাজ বা মানবজাতির তথাপি সমস্যা বা ক্ষতি সাধারণ আম আদমির। আম আদমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইচ্ছায় হ’ক আর অনিচ্ছায় হ’ক এই ক্ষতি বা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। এই ক্ষতি বা সমস্যা সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী তাদের অন্যায় বা অপরাধের দায় প্রশাসনের কিন্তু আম আদমি যে এই ক্ষতি বা সমস্যার শিকার; তার দায় কার? তার দায় কে নেবে? এই যে ধর্মের নামে পূজাপাঠ, পশুবলি, হাতে তাবিজ-মাদুলি-পাথর-আংটি-লালনীল সুতোর বাঁধন-অস্ত্রমিছিল ইত্যাদির যুগ যুগ ধ'রে বোঝা ব'য়ে চলেছে আম আদমী মানসিক দুর্বলতার শিকার হ'য়ে; এর দায় কার?
( লেখা ১৭ই জুন'২০১৮ )


Wednesday, June 14, 2023

অভিজ্ঞতাঃ রোগীর মৃত্যু ও ডাক্তার নিগ্রহ (৩)

উত্তরপাড়া হাসপাতালে এসে পৌঁছলো আমাদের এম্বুলেন্স। ইমারজেন্সিতে পৌঁছেই শুনলাম রোগী ভর্তি নেওয়া হবে না, রি-কনস্ট্রাকশন চলছে তাই এডমিশন হবে না। কি করবো, কোথায় যাবো ভেবে মাথা খারাপ হ'য়ে যাচ্ছে। মাথা কাজ করছে না। ভাইপোরা অফিসে কথা বলছে কিন্তু কোনও লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। অফিস থেকে জানালো কোনও বেড খালি নেই। নার্সদের ব্যবহারে মনটা আরো খারাপ হ'য়ে গেলো। পেশেন্ট যে তীব্র জ্বরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে সে সম্পর্কে কোনও হেলদোল নেই! কথাবার্তায় নেই কোনও মিষ্টতা, আন্তরিকতা! এদিকে এখনো পর্যন্ত কোনও ট্রিটমেন্ট হয়নি সেই সকাল থেকে। জ্বরের তীব্রতায় অচৈতন্য হ'য়ে পড়ে আছে পেশেন্ট; এম্বুলেন্সে শুয়ে আছে। আমার বড় বৌদি ও আমার বউ তার পাশে বসে আছে। মাথায় জলপট্টি দিয়ে চলেছে রোগীর মাথায়। সকালে বাড়িতে ডাক্তার আসা থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ঘন্টা দশ বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছে রোগী, ঘুরে মরছে এম্বুলেন্সে পথে পথে। অবশেষে একটু কথা কাটাকাটি, তর্ক-বিতর্ক শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি করিয়ে নিলো কিন্তু বেড পাওয়া গেল না। নিরুপায় বশতঃ তাই মেনে নেওয়া হ'লো। সবাইকে বললাম একটু যতটা সম্ভব মানিয়ে নিতে, নিজেকে সংযত হ'তে। মনে মনে বললাম, এটাই বাস্তব, এটাই বর্তমান যুগে স্বাভাবিক ব্যাপার। এর থেকে বেশী ভালো কিছু সরকারি হাসপাতালে আশা করা আর মূর্খের স্বর্গে বাস করা সমার্থক। তাই মনকে আবার বললাম, সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো।
মাটিতে রাখা হ'লো রোগীকে। তবে আর জি কর হাসপাতালের সঙ্গে উত্তরপাড়া হাসপাতালের গুণগত একটা তফাৎ চোখে পড়লো। তা হ'লো আর জি করে মাটিতে বাড়ির চাদর বিছিয়ে রোগীকে শুইয়ে দেওয়া হয় আর উত্তরপাড়া হাসপাতালে রোগীকে মাটিতে শোয়াবার জন্য একটা গদি মত বিছানা দেওয়া হয়েছিল যার উপর চাদর বিছিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল পেশেন্টকে। তারপর শুরু হ'লো চিকিৎসা। এই প্রথম রোগীকে দেওয়া হ'লো চিকিৎসা পরিষেবা।
বরফ জল দিয়ে মুছে দেওয়া হ'লো চোখ মুখ কপাল ও সারা শরীর।
ক্রমশঃ
( লেখা ১৫ই জুন' ২০১৯ )

কবিতাঃ কুৎসিত ভুবনে মাভৈ! ভয় নাই।

হে দয়াল! হে আমার দয়াময়! তমসার পার হ'তে
অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষ তুমি ইষ্ট প্রতীকে আবির্ভুত!
তবুও কেন জীবন মাঝে এত অন্ধকার!?
কেন চরাচর জুড়ে এত দুঃখ কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণা অপার!?
হে প্রভু! তুমি কোথায়? তুমি নেই তাই আলো নেই,
নেই রূপ-রস-গন্ধ! সুর নেই, তাল নেই,
নেই কোনও ছন্দ! তুমি নেই তাই হাওয়া নেই, ছাওয়া নেই,
নেই আসা যাওয়া! তোমার ধামেতে তোমাতে আমাতে
নেই যোগাযোগ, নেই তোমায় চাওয়া পাওয়া!
হে দয়াল! হে আমার দয়াময়!
কোথায় সেই আলোময়, রুপময়, রসময় চরাচর!?
কোথায় সেই ধাম যে ধামে আছে আঃ রাম! আরাম!
যা চেয়েছি জীবনভর!?
চারিদিকে ঘরে-বাইরে শুধু রিপুর বিকৃত উল্লাস!
রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে উৎকট ধ্বনি, খাল্লাস!
সেই যে কবে কবি ব'লে গেছে,
চারিদিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস!
আজও সেই ট্রাডিশান আরও ভয়ংকর রূপে
চলেছে ব'য়ে, আসছে নির্ম্মম ক্ষমাহীন নিষ্ঠুর ধেয়ে
চরাচর জুড়ে, ভাঙ্গেনি কবির বিশ্বাস!
কেউ নেই কোথাও যারে বলি বাঁচাও............
দেশ জুড়ে শুধু সকাল সন্ধ্যে দত্যি দানবেরা বলে,
হাঁউ মাউ কাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ!
মাঝে মাঝে তাই ভাবি, হে দয়াল!
বাঁচিতে চাহি না আমি এই কুৎসিত ভুবনে
দানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে না চাই।
পরমূহুর্তে দয়ালের দু'চোখে জ্বলে ওঠে আলো!
নীলাভ স্বপ্নিল মায়াময় স্নিগ্ধ নরম আলো ছড়িয়ে
বরাভয় হাত তুলে দয়াল বলে আমায়,
মাভৈ! ভয় নেই, ভয় নেই, আমি আছি ভয় নেই!
জরা নেই, মৃত্যু নেই, নেই দুঃখ কষ্ট!
জ্বালা নেই, যন্ত্রণা নেই, নেই অকালমৃত্যু যত!
আয় ছুটে আয় আয়রে সবাই
জীবন খুঁজে পাবি হেথায়
তোর জীবন মাঝে জ্বলবে আলো
অপার আনন্দে ভাসবি সেথায়।
( লেখা ১৫ই জুন। ২০২১ )

Tuesday, June 13, 2023

প্রবন্ধঃ চাষা আর লুটেরা ও বেকুব আমি! (১)

চাষা চাষ ক'রে আনন্দে আর লুটেরা লুট করে পরমানন্দে! আর 'বেকুব আমি'!?
'বেকুব আমি' আঁটি হ'য়ে পড়ে থাকে তলানিতে!
কথাটা বললাম অনেক রাগ আর ক্রোধকে বুকের মধ্যে চেপে রেখে! ভাবছিলাম আর অবাক হ'য়ে যাচ্ছিলাম এই ভেবে যে আমি কি সহিষ্ণুতার অভ্যাস যোগ করছি! ঐ যোগাভ্যাস চলাকালীন মনে হচ্ছিল এটা কি ঐ প্রত্যুষে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' "আমি অক্রোধী, আমি অমানি, আমি নিরলস, কাম-লোভজিৎ বশী----" ইত্যাদি ইত্যাদি পাঠের ফল!? আবার এটাও মনে হচ্ছিল, কথায় কথায় এত রাগের-ই বা কি আছে? একটু সয়ে বয়ে চললেই তো হয়! আসলে মনে হয় জগত সংসারটাই এডজাস্টমেন্টের! তাই কে যেন ভিতর থেকে বলে উঠলো, কুল ডাউন বন্ধু! কুল ডাউন!
যাই হ'ক, এবার আর হেঁয়ালি না ক'রে বলেই ফেলি ঘটনাটা।
আমার ও আমার পরিবারের রেশন কার্ড না থাকার কারণে রেশন তোলার সুযোগ পাওয়ার জন্য উত্তরপাড়া কোতরং মিউনিসিপ্যাল অফিসে অফিসের নির্দেশানুসার ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম। কিছুদিনপর কাল অফিস থেকে ফোন এসেছিল রেশন কুপন নেওয়ার জন্য আজ দুপুর ১২টার সময় অফিসে প্রমাণপত্র সহ যেতে হবে। ফোন কে করেছিলেন জানি না তবে যিনি করেছিলেন তার কথা বলার মধ্যে ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া! কথা ব'লে খুব ভালো লাগছিল! অবাক হ'য়ে গিয়েছিলাম কোনও অফিস থেকে কেউ এত ধৈর্য্য নিয়ে আন্তরিকভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে বলতে পারে! আসলে অভ্যস্ত ন'ই বলেই এই অবাক হওয়ার ব্যাপার!
যাই হ'ক সেই ফোনের নির্দেশমত গিয়েছিলাম মিউনিসিপ্যাল অফিসে। সেখানে পৌঁছে গেটের বাইরে দুই হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম আর নির্দিষ্ট ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। আমিও সেইমত গিয়ে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস ক'রে জানলাম সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছে। এক এক ক'রে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাবে। দাঁড়াবার বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বেরিয়ে এসে জেনে নিলেন সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছেন কিনা। লাইনে দাঁড়ানো সবাই প্রত্যুত্তরে হ্যাঁ বললাম। লাইনে দাঁড়িয়ে গরম লাগছিল। ছেলেকে বললাম একটু লাইনে দাঁড়াতে। ছেলে লাইনে দাঁড়ালে আমি গিয়ে সিঁড়ির সামনে রোড মিনিস্টারের ঘরের সামনে ফ্যানের নিচে জিতে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম চারপাশ। চারপাশের অফিস কর্মচারী ও অফিসে বিভিন্ন কাজে আসা সব মানুষের মুখে মাস্ক! এর আগে যখন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন পাশ দিয়ে 'সরুন' ব'লে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক লাগানো একজনের শরীরী ভাষা এমন ছিল যেন মনে হচ্ছিল, 'আমি অছ্যুৎ'!!!!!!! মনে মনে ভাবলাম, সত্যি করোনা! কি মহান তোমার শক্তি! রাতারাতি সবাই সবাইয়ের কাছে আজ অছ্যুৎ! সবাই সবাইকে চলছে এড়িয়ে, দূরত্ব বজায় রেখে চলছে আদানপ্রদান!!!!! ভালোই হয়েছে, নিরাপত্তা হয়েছে সুনিশ্চিত! বিশেষ ক'রে নারীদের! আর সবচেয়ে যেটা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আজ পৃথিবীর সব মানুষকে করোনা তুমি পেরেছো করতে রামভক্ত হনুমান! যারা হয়নি হনুমান অফিসে, পথেঘাটে, হাটেবাজারে তারা নিশ্চিত শয়তান কিলবিসের অনুচর!!!!!!!!!!
এরকম নানা উল্টোপাল্টা উদ্ভট ভাবনা ভাবছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর দেখছিলাম এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেকশনের দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম লোকটা ঢুকছে কিনা। কারণ আমার লাইনের নম্বর ছিল ৬ । মনে মনে ভাবলাম হয়তো এখনও শুরু হয়নি কাজ। যাই হ'ক এর মধ্যে অনেকেই ভিতরে ঢুকছে ও বেরুচ্ছে। কে কি জন্য ঢুকছে তা অবশ্য জানার উপায় নেই, জানারও ইচ্ছা নেই। এরকম একজনকে দেখলাম সঙ্গে একজনকে নিয়ে গটমট করতে করতে ঢুকে পড়লো ভিতরে। তারপর কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো হাতে কাগজ নিয়ে। পাশ দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেবে যাওয়ার সময় হাতে ধরা খোলা কাগজটা ভালো ক'রে লক্ষ্য করলাম কিন্তু কাগজটা কিসের তা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম কাগজটা কি! ইতিমধ্যে দরজা খুলে একজন বেড়িয়ে এসে লাইনের সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে ভিতরে যেতে বললো এবং তারপর কিছুক্ষণ পরপর এক একজন লোক ভিতরে গিয়ে কিছু সময় পরে হাতে রেশন কুপন নিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। লাইনের প্রথম লোকটি যখন বেরিয়ে এলো তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার হাতের কাগজ আর ঐ লাইনে না দাঁড়িয়ে পরে এসে ভিতরে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজ একইরকম দেখতে। লোকটিকে জিজ্ঞেস করাতে আমাকে কাগজ অর্থাৎ কুপন দেখিয়ে বললো যে সে কুপন পেয়েছে। কুপনটা দেখে চিনতে পারলাম আগের লোকটার হাতের কাগজটাকে। যা বোঝার বুঝে গেলাম। তারপরে আমার সময় যখন এলো তখন ভিতরে গিয়ে যখন নিজের ও পরিবারের কুপন হাতে পেলাম তখন হাতের কুপন আর ঐ এসেই লাইনে না দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢুকে কাগজ হাতে বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজটা যে একই অর্থাৎ ঐ লোকটা লাইনে না দাঁড়িয়েই যে প্রভাব খাটিয়ে কুপন নিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে গেল সেই বিষয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত হ'য়ে গেলাম আর তখন নিজেকে নিজের আরও একবার মনে হ'লো শালা! 'বেকুব'! নইলে শাসকগোষ্ঠীর হ'য়ে জীবন নিংড়ানো 'বেকুব তুমি' লাইনে দাঁড়িয়ে থাকো আর নেপোয় পিছন থেকে এসে দই মেরে দিয়ে চলে গেল! তারপরে নিজেকে নিজেই বললাম, এটা কি কোনও অস্বাভাবিক আশ্চর্যের ঘটনা নাকি স্বাভাবিক সাধারণ ঘটনা! কে ঠিক আর কে ভুল? 'বেকুব আমি' নাকি ঐ চালাক চতুর নেপোয় মারে দই গাই!?
চারপাশে তাকাতে তাকাতে মুখের মুখোশটা খুলে প্রশ্ন শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে একবুক নিঃশ্বাস নিলাম। জানি না কি নিঃশ্বাস নিলাম! করোনা জীবাণু মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি নেপোদের ছেড়ে যাওয়া কৃষ্টি মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি ফ্রেশ-------; জানি না।
যাই হ'ক আমি যখন ছেলেকে সরিয়ে নিজে এসে লাইনে দাঁড়ালাম তখন দেখলাম লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেকের মুখে মাস্ক। চেয়ারম্যানের ঘরের পাশ দিয়ে একজন মহিলাকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখলাম, দেখলাম মুখে মাস্ক নেই, হাতে কাগজের বান্ডিল নিয়ে আমার পাশ দিয়ে পাশের একটা অফিস ঘরে ঢুকে পড়লো। দেখে চিনতে পারলাম। আমারই এলাকায় থাকে, বছর কয়েক হয়েছে বাইরে থেকে এসে এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছে। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল কিন্তু আমায় চিনতে পারলো না।চিনতে না পারার কারণ হ'তে পারে মাস্ক। কিন্তু এত সামনাসামনি আমাকে চিনতে না পারার মত কোনও কারণ ছিল না। আমাকে শুধু যে চেনে তাই নয়, প্রথম যখন এখানে বাইরে থেকে এসেছিল তখন আমিই ছিলাম এলাকায় রাজনীতিতে যুক্ত ও রাজনৈতিক লোকেদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। তারপর ধীরে ধীরে একে একে পরিচিত হ'তে হ'তে আজকের এই অবস্থান। পার্টির কারও কারও মুখে শুনেছিলাম, "এসেই ছক্কা মেরে দিয়েছে! এলাম দেখলাম আর জয় করলাম-এর মত তলে তলে কাজ যা হাসিল করার ক'রে নিয়েছে, নেপোয় মারে দই-এর মত!" যা শুনেছিলাম তা আজ প্রমাণ হ'লো! চক্ষু কর্ণের বিবাদ দূর হ'লো। মহিলা এসেই নেতাদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্যে দিয়ে মহিলা কর্মী থেকে নেত্রী হ'য়ে মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে একটা চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দেখলাম অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে আবার চলে গেল পাশ দিয়ে পরিচিত মহিলাটি! মনে মনে ভাবলাম, এটা সম্পূর্ণ মেয়েটির ক্রেডিট! যেভাবেই হ'ক নতুন এসেই দলের পুরনোদের টপকে আজকের দিনে চাকরি হাসিল করা যোগ্যতা না থাকলে সম্ভব নয়। যোগ্যতা অবশ্য অবশ্যই আছে। সেই যোগ্যতাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছে! এ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলে সিনিয়র বা পুরনোদের কিংবা ভালো পরিশ্রমী যোগ্য ও দক্ষ সৎ কর্মীদের কোনও গুরুত্ব নেই! সস্তা চাটুকারীতে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত ব্যাপারস্যাপার খুবই সহজলভ্য এখানে!!
পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় মেয়েটার গন্তব্যপথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পুরোনোদিনের ছবিগুলো মনের মধ্যে ছবির মত একের পর এক ভেসে উঠতে লাগলো!!!!!
ক্রমশঃ
( লেখা ১৪ই জুন'২০২০ )

প্রবন্ধঃ রোগীর মৃত্যু ও ডাক্তার নিগ্রহ: ২

এম্বুলেন্স ছুটে চলেছে তার সাইরেন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে যেন মরণ সংকেত জানান দিয়ে চলেছে আশেপাশের সবাইকে। ভালো লাগে না এই তীব্র আওয়াজ। এক তো ভীষণ তীব্র তদুপরি আওয়াজটা বুকের মধ্যে ভয়ের ভয়ঙ্কর হাতুড়ি পিটিয়ে যায়! চারিদিকে গরম হলকার মাঝে দিয়ে আমরাও ছুটে চলেছে পিছন পিছন বাইকে। মনে হচ্ছে বোধহয় আমরাও অসুস্থ হ'য়ে পড়বো এই তীব্র গরমে আর যানজটে। সহিষ্ণুতার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ছুটে চলেছি আমরা অসহায় জীবের মতো! মনে পড়লো ঠাকুরের কথা, সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। যেতে যেতে চারপাশের সবকিছু দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ভেসে উঠলো আর জি কর হাসপাতালের ছবি। ডাক্তারদের ব্যবহার খুব ভালো লাগলো। দেখলো, প্রেসক্রিপশন করলো খুব আন্তরিক ভাবেই পরামর্শ দিলো কিন্তু তাৎক্ষণিক হাই টেম্পারেচার নাবাবার কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ হ'লো না কেন!? ভাবলাম, কি জানি ভর্তি না করাবার কারণেই হয়তো চিকিৎসা হ'লো না! বেড না পাওয়া, নোংরা মাটিতে বাড়ির চাদর বিছিয়ে সেখানে সেরিব্রাল অপারেশন ও প্যারালাইজড পেশেন্টকে শুয়ে রাখা, ইনফেকশন হওয়ার ভয়, বিড়ালের যত্রতত্র সর্বসময় সর্বময় উজ্জ্বল উপস্থিতি, ডাক্তারের সৎ পরামর্শ ইত্যাদি ইত্যাদির কারণে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার জন্য পেশেন্টকে নিয়ে আসার কারণে হয়তো চিকিৎসার সুযোগ ঘটেনি! এ তো রোগীর পরিবারের একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত! এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারদের কি ত্রুটি বা ভূমিকা থাকতে পারে!? সত্যিই তো আমরা তো পেশেন্টকে মাটিতে ফেলে রাখতে পারলাম না। এইভাবেই কেটে গেছিল কয়েক ঘন্টা বিনা চিকিৎসায় প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাওয়া পেশেন্টকে নিয়ে।

একে কি বলবো? তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম? পরিস্থিতি আর পরিবেশের কারণে বিভ্রান্ত? ভয়, মৃত্যুভয়? ডাক্তারদের সৎ পরামর্শে প্রভাবিত? আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো! কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটা মাথায় বারবার এতসব প্রশ্নের মাঝেও খোঁচা মারছিল তা হ'লো, তাহলে 'ইমারজেন্সি' ও 'ইমারজেন্সি ওয়ার্ড' শব্দের অর্থ কি!!!!!!!?

এইভাবে চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে এলাম নিজের এলাকায় উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালে।
ক্রমশঃ
( ১৩ই জুন' ২০১৯)

প্রবন্ধঃ রোগীর মৃত্যু ও ডাক্তার নিগ্রহ!

নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনা আজ আর নতুন বা আশ্চর্যের কিছু নয়। বাংলা আর বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি আজ বহুদিন আগেই খিচুড়ি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। টিভিতে যখন দেখি এই বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সবাই তাদের বিভিন্ন মতামতের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেবে পড়েছে ময়দানে তখন ভাবি এই তো কয়েকদিন আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র ক'রে কত অপ্রীতিকর, অসুস্থ ঘটনা ঘটে গেল সেই অসুস্থ সংস্কৃতিরই তো ক্রমাগতির প্রতিফলন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের এই দুঃখজনক ঘটনা! তা নয়কি!? ঈশ্বরের কাছে ডাক্তারের দ্রুত সুস্থতা প্রার্থনা করি। প্রার্থনা করি এই ভয়ঙ্কর ভাঙনের ধ্বংসকৃষ্টি থেকে বাংলাকে রক্ষা করার।
কিন্তু কে রক্ষা করবে? ঈশ্বর কেন রক্ষা করবে? ঈশ্বরের কি দায় পড়েছে? ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা; তাই? কে মানে? এই ভাঙন ও ধ্বংসের কৃষ্টি-সংস্কৃতির যারা জনক ও যারা অনুগামী তারা মানে? নাকি যারা এই কৃষ্টি-সংস্কৃতির প্রতিবাদে সামিল তারা মানে? যারা মানে তারা ঈশ্বরের সীন-আনসীন যে অস্তিত্বই মানুক না কেন তাঁদের চরিত্র, তাঁদের জীবন, তাঁদের বৈশিষ্ট্য, তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, কথা মানে না। নিজেদের স্বার্থেই ঈশ্বরের উপস্থিতিকে, সে জীবন্ত ঈশ্বর হ'ক আর বোবা-অমূর্ত ঈশ্বর হ'ক, ব্যবহার করে। আর যারা প্রগতিবাদী ও অতি প্রগতিবাদী তারা কোনও ঈশ্বরতিশ্বর মানে না, বিশ্বাস করে না। তাই ঈশ্বর নিরুপায়!
তাহ'লে ডাক্তার বা রোগীকে কে রক্ষা করবে?
ডাক্তার নিগ্রহের এই অমানুষিক ঘটনার পিছনের কারণ কি?
আসুন দেখা যাক ঘটনা পর্যালোচনা করে। কারণ হিসেবে যা জানা যায় তা হ'ল বৃদ্ধের চিকিৎসায় গাফিলতি, দেরিতে চিকিৎসা শুরু এবং ইনজেকশন প্রয়োগের পর মৃত্যু। আর এই মৃত্যুই ডেকে আনে গন্ডগোল ও এই মর্মান্তিক পরিণতি। এই যে অসহিষ্ণুতা এর উৎস কি? খবরে যা জানা যায় তাতে মনে হয় এই অসহিষ্ণুতার জন্ম হয় দেড় ঘন্টা রোগীকে নিয়ে হয়রানি ও চিকিৎসা না হওয়া। পরবর্তীতে মৃত্যু এই অসহিষ্ণুতার স্ফুলিঙ্গকে দাবানলে পরিণত করে। আম আদমির মানসিক অস্থিরতা আজ আর নতুন কিছু বিষয় নয়, মানসিক চরম অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতার বারুদের স্তূপের ওপর বসে আছে রাজ্য তথা দেশ! পক্ষ-বিপক্ষ সে যে বা যাই হ'ক!
এই ধরণের ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী? ডাক্তার? রোগীর লোকজন? প্রশাসন? সরকার? শাসন বা সমাজব্যবস্থা? অসহিষ্ণুতা? অস্থিরতা? ইত্যাদি ইত্যাদি?
জানি না; আমি জানি না। শুধু একটা অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি।
গত রবিবার জামাই ষষ্ঠীর পরের দিন সকালে গুরুভাইদের সঙ্গে বসে জামাই ষষ্ঠীর দিন শনিবার ৮ই জুন'১৯ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্র দ্বারা পরিচালিত 'বিশেষ সৎসঙ্গ' নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। সেই সময় স্ত্রী এসে জানালো আমার বৌদির জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে! ১০৪ ডিগ্রির উপরে জ্বর! প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি আমার বৌদি গত দু'বছর ধরে বিছানায় শায়িত। প্যারালাইজড। পিয়ারলেস হসপিটালে সেরিব্রাল অপারেশন শেষে আজ বিছানায় শায়িত বৌদি আর পিয়ারলেসের চূড়ান্ত চিকিৎসা খরচায় আর্থিক পঙ্গুতার কারণে শায়িত আজ দাদা ও ভাইপো। এই অবস্থায় ডাক্তারকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বড়দা ও বড় বৌদি যান ডাক্তারকে ডাকতে। চেম্বারে ব্যস্ততার কারণে তিনি অসম্মত হন, রোগীকে নিয়ে আসতে বলেন। তাঁকে জানানো হয় রোগীর অবস্থার কথা। অনুরোধ করা হয় আসার জন্য। অনুনয় বিনয় শেষে তিনি আসতে রাজি হন। তিনি আসেন, রোগী দেখেন এবং হাসপাতালে ভর্তি করে দেবার পরামর্শ দিয়ে চলে যান। কোনও চিকিৎসায় করলেন না। এলেন, দেখলেন ও চলে গেলেন। মুহূর্তে ঘটে গেল আসা, দেখা ও চলে যাওয়ার ব্যাপারটা। এই উপস্থিতি স্বরূপ ভিজিট ৫০০টাকা!
তারপর এম্বুলেন্সে ক'রে নিয়ে যাওয়া হ'লো আর জি কর হাসপাতালে। বাইরে প্রচন্ড গরম। দাবদাহে জ্বলে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক-পিঠ! কপালে জল পট্টি দিতে দিতে নিয়ে যাওয়া হ'লো বৌদিকে। হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার দেখলেন, পাঠিয়ে দিলেন ছ'তলায়, লিফটে ক'রে নিয়ে যাওয়া হ'লো সেখানে। সেখানেও ডাক্তার দেখলেন কিন্তু কোনও বেড খালি না থাকায় মাটিতে রাখার কথা বলায় ভাইপো দ্বিধাগ্রস্থ হওয়ায় একজন জুনিয়ার ডাক্তার মাটিতে রাখলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন। বরং উত্তরপাড়া এলাকার সরকারী হাসপাতালে রাখার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সিনিয়ার ডাক্তার রোগীকে মাটিতে রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা একান্তই পেশেন্টের বাড়ির লোকেদের, সে কথা জানিয়ে বললেন যে, তাঁরা বলবেন না রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালের অবস্থা দেখে মন চাইলো না এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাটিতে পেশেন্টকে ফেলে রাখার। এত নোংরা চারিদিকে দেখে অবাক হ'য়ে যেতে হয় এ আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি! মনে মনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আজ ৭০ বছর পার হ'য়ে গেল দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ পর্যন্ত মিনিমাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আশা করতে পারে না রাজ্যের মানুষ হাসপাতালগুলিতে!? এই নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র বিড়াল ঘুরে বেড়ানো পরিবেশে ফেলে রেখে আরও সংক্রামিত ক'রে মেরে ফেলার চেয়ে বাড়িতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুস্থ পরিবেশে মরা ভালো। তখন মনে হ'লো আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর হাসপাতালগুলিতে সাডেন ভিজিট করার কথা! তাহ'লে সেই ভিজিটগুলো কি লোকদেখানো ছিল!? নাকি সেই সৎ উদ্যোগ কায়েমী স্বার্থ রক্ষাকারীদের অসুবিধার কারণ হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল!? আর তার ফল স্বরূপ একেবারে খুব কাছের লোকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে কানে ফুরফুর দিয়ে দিয়ে সেই সৎ উদ্যোগ থেকে সুকৌশলে সরিয়ে এনেছিল!? কোনটা?
যাই হ'ক আমরা চিন্তা ভাবনা ক'রে ঠিক করলাম এখানে পেশেন্টকে ফেলে রেখে কুকুর বিড়ালের মাঝে ইনফেকশনে আক্রান্ত হ'য়ে মেরে ফেলার চেয়ে নিজের এলাকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায় ভালো।
আমরা আবার রওনা দিলাম এম্বুলেন্স ভাড়া ক'রে উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে অসুস্থ বৌদিকে নিয়ে। অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা বৌদির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না! প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছে আমরা নিজেরাই ঝলসে যাবো সেখানে সেন্সলেস বৌদিকে শরীরের ভিতরের এবং বাইরের প্রকৃতির অসহ্য তীব্র দাবদাহে সহ্য করতে হচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এ মাথা থেকে ও মাথা, ও মাথা থেকে সে মাথায় ছুটে চলার অন্তহীন কষ্ট!!!!!!
ক্রমশঃ
( লেখা ১৩ই জুন' ২০১৯ )

প্রবন্ধঃ চলার পথে।

কথায় আছে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। কুয়োর ব্যাঙ সব যুগেই ছিল, আছে ও থাকবে। কুয়োর ব্যাঙ কথাটা তো বাস্তব; তাই নয় কি? কুয়োর মধ্যে থাকার ভাগ্য নিয়ে যারা এসেছে তাদের খোলা আকাশের বিশালতা দেখার সৌভাগ্য কোনও জন্মেও হবে না কারণ এই জন্মেও কুয়োর ব্যাঙেদের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনও ইচ্ছে বা চেষ্টাও নেই বিন্দুমাত্র বরং নিজেকে আরও আরও কুয়োর থেকেও ছোট্ট গর্তে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আয়োজনে তারা ব্যস্ত! তাই স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি এরা সেই কুত্তা যারা হাতি চলে গেলে পিছন থেকে ঘেউ ঘেউ ক'রে ভোঁকতে থাকে। 'কুয়োর ব্যাঙ', 'চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী', 'হাতি চলে বাজারমে কুত্তা ভোঁকে হাজার' ইত্যাদি ইত্যাদি কথা, প্রবাদগুলি এই ধরণের বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। তাই এদের কথা, ব্যবহার, গালাগালি প্রমান করে এরা বায়োলজিক্যালি ডিফেক্টিভ প্রোডাক্ট! তাই এদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া মানে সেধে গায়ে গু লাগানো। এদের এদের মত থাকতে দিন। যার জন্য যে পরিবেশ সে সেই পরিবেশে বেঁচে থাকে, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সেফটি ট্যাঙ্কের পোকাকে সেফটি ট্যাংকেই থাকতে দিন , বাইরের পরিষ্কার জলে এরা ছটফটিয়ে হাঁফিয়ে মারা যাবে। চলার পথে আপনি আপনার লক্ষ্যে অবিচল থাকুন। এরা, এই ধরণের নেগেটিভ মানসিকতার মানুষেরা মানুষকে নিজেদের দিকে টানতে চায়, চায় একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা দূর করতে। ফলে ব্যর্থ হ'য়ে আরও যন্ত্রণায় জড়িয়ে পাগল হ'য়ে যায় আর আচার্যদেবের কথা মত এদের শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর হ'য়ে ওঠে। ঠাকুরকে নিয়ে যারা কুৎসা, গালাগালি করছে তারা জৈবি সংস্থিতির কারণেই তা করছে। তারা তা করুক, আপনি বা আপনারা আপনার, আপনাদের চলার পথে ঠাকুর যা করতে বলেছেন আচার্যদেব সেই বলাগুলি যেভাবে ক'রে ও যেভাবে চলে আমাদের চলার পথ দেখাচ্ছেন সেই পথে চলুন আর সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন। জয়গুরু।
( লেখা ১৩ই জুন, ২০১৯ )

Monday, June 12, 2023

উপলব্ধি ৪২

সেই ট্রাডিশান...............।
হায়! আমরা বাঙালি!!!! বাঙালির অবদান!!!! পড়ছিলাম বাঙালির অবদানের কথা। পড়ছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কথা! ভাবছিলাম বাংলা ও বাঙালির কথা!

সেই যে ব্রিটিশরা দেশটাকে দু'টুকরো ক'রে দিয়ে সময়মত চলে গেল পিছনে সুতো বেঁধে দিয়ে পুতুল নাচাবে ব'লে আজও প্রকারান্তরে নাচিয়ে চলেছে। ব্রিটিশ বুঝতে পেরেছিল সময়মতো যদি চ'লে না যায়, ঘুঁটি সাজাতে দেরী হয়, আর নেতাজীর হাতে দেশটা চ'লে যায় তাহ'লে ২০০ বছর ধ'রে শাসন করা গোলাম দেশটাকে আর বাগে রাখতে পারবো না উল্টে এতবড় সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ভারতবর্ষ একদিন বিশ্বের প্রভু হ'য়ে ব্রিটিশ কেন বিশ্বের সমস্ত দেশের উপর প্রভুত্ব করবে আর ব্রিটিশকে দিতে হবে তার গুনাগার। কারণ সত্যি সত্যিই ব্রিটিশ ছিল জহুরী দেশ আর তাই সে সোনার দেশ আর সোনার দেশের সোনার সন্তানকে চিনতে ভুল করেনি। চট জলদি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চলে যাবার আর দেশ ভাগ ক'রে দিয়ে যাবার আর সেই দেশভাগের সময়েই আরও ভাগের বীজ বপন ক'রে দিয়ে গিয়েছিল অদভুত এক দেশের সৃষ্টি ক'রে দিয়ে। যাতে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতটাকে চিরদিনের মত পঙ্গু ক'রে দেওয়া যায়। কোনোদিন যাতে মাথা তুলে দাঁড়ালেও অর্ধেক মাথা তুলে দাঁড়ায়। আর তা সম্ভব হ'লেও হবে পৃথিবীর ঐ অদভুত দেশটার মধ্যে থেকে আর অর্ধেক থেকে যাবে চিরদিন অন্য খন্ড দেশটার মধ্যে। যাতে জাতটা কোনোদিন এক হ'তে না পারে। বাঙালি সত্ত্বার মধ্যে ঘৃণ্য ধর্ম সত্ত্বার বীজ বপন ক'রে দাও আর দাও প্রবল ধর্মীয় সুড়সুড়ি! 

আচ্ছা, এই রকম সত্যি আমরা চেয়েছিলাম নাকি! আর্ধেকেই সন্তুষ্ট!!!!! এই বাঙালি সত্ত্বাকে ধর্মের নামে দু'টুকরো ক'রে দেওয়াই ছিল ঘরে-বাইরে দেশভাগের চক্রান্তকারিদের চক্রান্তের মধ্যে আসল চক্রান্ত!!!!! পৃথিবীতে এমন অদভুত দেশ 'পাকিস্তান' যার অর্ধেক অংশ পূর্বদিকে ভারত দিয়ে ঘেরা মাঝখানের ছোট্ট এক টুকরো আর অর্ধেক অংশ পশ্চিমে!!!!! কেন এমন অদভুত প্যারালাইজড দেশের জন্ম দিয়েছিল দেশের শাসক ও বুদ্ধিমান ব্রিটিশরা!? মহাত্মা গান্ধী, জওহর লাল নেহুরু ইত্যাদি দেশের অন্য তাবড় তাবড় দেশনেতারা কি এই অদভুত দেশের জন্মের পিছনের রহস্য বুঝতে পারেননি? ধরতে পারেননি? নাকি সব বুঝেও চুপ ক'রে ছিল!? তাঁরাও কি ভেবেছিলেন নাকি ভারতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান খাঁটি আর্য রক্ত সমৃদ্ধ জাত বাঙালীকে থামিয়ে দেবার এই উপযুক্ত সময়!? ভাবলে আজও অবাক লাগে কিভাবে শাসন করতো পাকিস্তানি শাসকরা তাদের পূর্ব দিকের অংশটাকে!!!!???? জলপথ, স্থলপথ, আকাশপথ কোন পথ ব্যবহার করতো তারা!? কিভাবে করতো!? কোন ঘুরপথে তারা এই আজকের বাংলাদেশটাকে শাসন করতো। কিভাবে সেদিন মেনে নিয়েছিল এই অদভুত ভাগের রসায়ন দেশের নেতারা!? কেন মেনে নিয়েছিল!? কেন সেদিন কেউ এই অদভুত বিকলাঙ্গ দেশের জন্মের বিরোধিতা করেনি!? ব্রিটিশরা সেদিন বুঝেশুনেই এই অদভুত ভাগের রসদ যুগিয়েছিল। ব্রিটিশরা জানতো এইভাবে বেশিদিন ধ'রে রাখা যাবে না কোনও জমি। একদিন হাতছাড়া করতেই হবে স্বাধীনতার দাবীতে। আর সেদিন হবে ভারত মায়ের আরও একটুকরো। এদিক দিয়ে অবশ্যই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী থাকতে হবে বাঙালি জাতিকে।

যাই হ'ক, সেদিন তারা এই ঘৃণ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল ব'লেই আজকের আর্ধেক হ'লেও অর্থাৎ পুরো বাংলা না হ'লেও বিশ্বের মানচিত্রে বাংলা তথা বাঙালি তার জায়গা ক'রে নিয়েছে। বিশ্বের মানচিত্রে যদিও এর বহু বহু আগেই বহু ক্ষেত্রেই বাঙালি তার পদচিহ্ন রেখে গেছে। আর এই পদচিহ্নের খোঁজ রাখতো ব্রিটিশরা। সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব পোষণ করবো আর সেই দেশের, সেই দেশের অধিবাসীর নাড়ীনক্ষত্রের খোঁজ রাখবো না তা আবার হয়!? এ কি পাড়ার পাগলা দাশু নাকি যে পাঁচিল টপকে আম পাড়তে যাবো আর পাগলা কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হবো!? তাই তারা জানতো এই বাঙালি জাতির খোঁজ আলেকজান্ডারও পেয়েছিল আর ফিরে গিয়েছিল। ব্রিটিশ ভালোভাবেই জানতো এই জাতটার মধ্যে এখনও বিশুদ্ধ আর্য রক্তের ধারা ব'য়ে চলেছে! তাই সাধু সাবধান!! সেই সাবধান হ'য়েই হিসেব ক'রে তারা পা রেখেছিল এই ভারতবর্ষে। আর শেষ করতে চেয়েছিল অতি সুকৌশলে এই জাতটাকে। আর শেষ করতে গিয়ে তারা যেটা বপন ক'রে দিয়ে গিয়েছিল নিজেদের অজান্তে এই আর্য রক্ত ধারায় সমৃদ্ধ বাঙালি জাতটার রক্তে সেটা হ'লো স্বাধীনতার বীজ! এই স্বাধীনতার বীজের সন্ধান, মুক্তির গন্ধ পেতে দেরী হয়নি এই চতুর বুদ্ধিমান জাতটার! দেশ ভাগ হওয়ার সংগে সঙ্গেই পেয়ে গিয়েছিল সেই গুপ্তধনের সন্ধান, পেয়ে গিয়েছিল ফুলের মধুর গন্ধ যা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি অতি চতুর ব্রিটীশ জাত। বাঙালি চতুর কিন্তু অতি চতুর নয়; যদিও কারও কারও মধ্যে সেই অতি চতুরের রঙ লেগেছে ও লেগে চলেছে। সেই মুক্তির গন্ধে মাতাল হয়েছিল বাঙালি আর দূর থেকে বসে দেখছিল ব্রিটিশ আর হাসছিল তাদের দূরদৃষ্টি 'আবার ভাগ'-এর তত্ত্ব সফল হচ্ছে দেখে। কিন্তু তারা মুহূর্তের আনন্দে অন্ধ হ'য়ে গেছিল, দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায়নি ৭১ এর সেই দৃশ্য যে, ঐ সেই 'বাঙালি' জাতটা--------- যে জাতটার মাথাগুলিকে তারা গুঁড়িয়ে দিয়ে জাতটাকে ধর্মের প্রবল সুড়সুড়িতে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়েছিল আর ভেবেছিল 'সব শেষ'---------আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে, 'নেতাজী'র মত আবারও কোনও নেতাজীর আবির্ভাব হবে আর জাতটাকে নিয়ে যাবে একেবারে বিশ্বের মানচিত্রে! জ্বলজ্বল করবে বিশ্বের মানচিত্রে ঐ জাতটার দেশের পতাকা তাদের দেশের পতাকার মতই। 
দূরদৃষ্টি অবশ্যই ছিল; না থাকলে কি তারা সেই ইউরোপ থেকে এশিয়া মহাদেশে এসে ২০০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করতে পারে? কেউ পারে কি? পারলেও ২০০ বছর? কোনও গুণ না থাকলে কি এটা সম্ভব? সেই ভারতবর্ষের মধ্যেই ছিল পাকিস্থান আর বাংলাদেশ। সেই যে 'ভাগ করো আর শাসন করো'-র বিষাক্ত বিষ ঢেলে গেল, বপন ক'রে দিয়ে গেল ঘৃণ্য বীজ মানুষের মনে আজও সেই ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে আর চলবেও অনন্তকাল বংশ পরম্পরায়। আর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই বিষাক্ত বিষের তীব্রতা। তাই আমরা বুঝেই হ'ক আর না বুঝেই হ'ক, ইচ্ছাকৃতই হ'ক আর অনিচ্ছাকৃতই হ'ক আজও সেই ব্রিটিশের গোলামী ক'রে চলেছি চিন্তায়, ভাবনায়, কর্মে আর চলবোও। আজও বাঙালী বাঙালী নয়! বাঙালী আজও মনে করে প্রথমত সে হিন্দু, সে মুসলমান, বা সে খ্রিষ্টান ইত্যাদি তারপর সে বাঙালী। বাঙালীর বহু অবদানের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম অবদান হ'লো এই 'নাচ মেরা বুলবুল' সংস্কার! কতকাল এমন চলবে তা জানি না। যেদিন নেতাজিকে ব্রিটিশরা তাদের ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম হিসাবে টারগেট করেছিল সেদিনই ভারতবর্ষের ভাগ্যবিধাতা অলক্ষ্যে কেঁদে উঠেছিল 'সব শেষ' ব'লে। ব্রিটিশের সেই অদৃশ্য সুতোর টান 'নাচ মেরা বুলবুল' এখনও সমানে ব'য়ে চলেছে বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের ধমনীতে, রাজনীতিকদের শিরায় শিরায় এস ওয়াজেদ আলির সেই বিখ্যাত কথার মত "সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে।"
( লেখা ১২ই জুন' ২০১৮ )

Saturday, June 10, 2023

কবিতাঃ দয়াল ভয়াল।

দয়াল! আর একবার তুমি হও ভয়াল!
শুধু আর একবার!!
তান্ডব নৃত্যে লন্ডভন্ড হ'ক স্বর্গ-মর্ত-পাতাল!
হ'ক আরও একবার দক্ষযজ্ঞ!
নেবে আসুক ঘোর অন্ধকার,
বিষাক্ত বিষে হ'ক চারপাশ ছারখার!
দেখি শা.. কোন দেবতা বাঁচায়! 
প্রবি।
( লেখা ১০ই জুন'২৩ )

প্রবি সমাচার ২২

দিনের শেষে।

কথায় কথায় মানুষ বলে, আপন থেকে পর ভালো কিন্তু দিনের শেষে যখন সুর্য্যিমামা পাটে যায় তখন সেই লাল আভার মাঝে বিদায়বেলার যে বিষণ্ণতা আকাশের বুকে ছড়িয়ে থাকে তখন সুর্য্যিমামার সেই বিদায়বেলার, সব কিছু ছেড়ে চলে যাবার মন খারাপ করা ব্যথা ভরা বিষন্নতা মাঝে নিজেরও মনে বিষন্নতার মেঘ ঘনীভূত হয়! মনে হয় তখন, পর থেকে ঘর ভালো। মনে পড়ে তখন ঘরের কথা! কত ছোটোবেলার স্মৃতি ভেসে ওঠে তখন বিদায়বেলায়। একা! সম্পূর্ণ একা তখন আমির আমার মাঝে সাক্ষী থাকে শুধু দয়াল। সঙ্গীও শুধু সেই দয়াল! মনে পড়ে বাবাইদাদার কথা, "শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে সেই দয়াল! মাঝে অনেকের আসা যাওয়া চলতে থাকে কিন্তু সুর্যের আলোর মত নিরবচ্ছিন্ন থাকে শুধু সেই একজন! দয়াল! দয়াল!! পরমপিতা দয়াল!!!" যাকে ঝলসানো যৌবনের ঝলসানো উত্তাপে চিনতে পারিনি, জানতে পারিনি, বুঝতে পারিনি। তাই একে একে ছেড়ে চলে গ্যাছে সবাই। কিন্তু ছেড়ে যাননি তিনি আর তাই তাঁকে আমল দিইনি। বিষন্নবেলার স্মৃতির মত সব থাকতো আঁকড়ে আমায় যদি তিনি থাকতেন সাথে, তাঁর জীবন্ত উপস্থিতি থাকতো জীবনের প্রতি পলে পলে। হে দয়াল! ক্ষমা ক'রো!
( লেখা ১০ই জুন'২৩)

প্রবি সমাচার ২৩

করোনা ও শান্তি।

করোনা শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে, যে কোনও কারণেই হ'ক হৈ চৈ, অকারণ হৈ চৈ, সীমাহীন উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল হৈ চৈ পছন্দ না করা মানুষের কাছে কিম্বা লাগামছাড়া ড্যামকেয়ার মনোভাবাপন্ন মানুষের জন্য পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য, শান্তি পাওয়ার জন্য, পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য কি আশীর্ব্বাদ? করোনা কি অসহায় শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে শান্তির দূত? করোনা কি শান্তিতে বাঁচার জন্য, শান্ত উত্তেজনাহীন ভিড়মুক্ত পথেঘাটে, ট্রেনেবাসে চলার জন্য, লোকালয় মাঝে একটু নিরালায় নিভৃতে থাকার জন্য পরশ পাথর? পৃথিবী জুড়ে ভয়ংকর অশান্তির মাঝে একটু শান্তির প্রলেপ? জানি না ঠিক; হয়তো বা।
No photo description available.
All reaction

Friday, June 9, 2023

প্রবন্ধঃ হে সৎসঙ্গী

হে সৎসঙ্গী! তুমি কি সত্যিই সৎসঙ্গী?

যদি তাই-ই হয় তবে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের 'নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি না করার কথা, সবাইকে ভালোবাসার কথা, বন্ধুর চেয়ে শত্রুর পাশে বেশী ক'রে থাকার কথা' বারবার বলা সত্ত্বেও তা অমান্য করো কেন?
কেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদার বলা 'দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাস্টবিন মন; সেই মনকে পরিস্কার কর' এই কথা বারবার বলা সত্বেও পরিস্কার করো না কেন?
শ্রীশ্রীবিঙ্কিদাদার কাউকে খাটো না করার কথা, জীবন থেকে দূরে সরিয়ে না দেবার কথা, সবাইকে সামনে এগিয়ে দেবার কথা বারবার বলা সত্ত্বেও মন্দিরে মন্দিরে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে একে অপরকে খাটো করার, দূরে সরিয়ে দেওয়ার, সামনে এগোতে না দেবার নোংরা খেলা বন্ধ হয় না কেন?
ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি সদস্যের বলা সবাইকে আপন ক'রে নেওয়ার কথা, সবার গুণের চর্চা করার কথা, সবাইকে বাড়িয়ে তোলার কথা, মিথ্যে মিথ্যে ক'রে হ'লেও প্রশংসা করার কথা সৎসঙ্গীদের রপ্ত হয় না কেন?
কেন এর উলটো চলনে চলি? সবটাই কি বায়োলজিক্যাল ডিফেক্ট? নাকি আত্মপ্রতিষ্ঠার পাগলামি?
যে পুরোনো, বহু পুরোনো তাকেও দেখি যা আর যে নোতুন তাকেও দেখি একই। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আর সংখ্যায় তা নগন্য। আর যে নোতুন দু'দিন যেতে না যেতেই ভালো মানুষের অভিনয় শেষে ভোল পাল্টে সাদা পোশাক আর সাইডে কালো ব্যাগ ঝুলিয়ে আঙ্গুল তুলে নম্রতার বদলে ইতিমধ্যেই শক্ত হ'য়ে কথা বলতে অভ্যস্ত হ'য়ে গেছে। আর, রপ্ত করেছে পুরোনোদের প্রতি অশ্রদ্ধা, অপমান করার মহৎ গুণাবলী। যখন ছিল সে অ-সৎসঙ্গী তখন ছিল ভালো সম্পর্ক, নম্র আর সৎসঙ্গী হওয়ার পরে হ'য়ে গেছে কালো ও শক্ত। এর থেকে ভালো ছিল সৎসঙ্গী না হওয়া। অন্তত নারী-পুরুষ পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরের সম্পর্ক নষ্ট হ;'তো না। ডি পি ওয়ার্ক্সের মাধ্যমে যখন পুরোনোদের কাছে ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদা তখন সারাদিন কাঞ্চনের পিছনে ছুটে চলা কালকের যোগী ভাত কে বলে অন্ন দু'দিনের নোতুন সৎসঙ্গীও কাঞ্চনের ঝঙ্কারে মন্দির দখল ক'রে গরীব নোতুন ও পুরোনো সৎসঙ্গীকে বলছে, এই পোশাক পড়েছো কেন? এই পোশাক পড়া চলবে না, প্রসাদ নিতে আসলে ইষ্টভৃতি করে কিনা জিজ্ঞাসা ক'রে বলছে অর্ঘ্য প্রস্বস্তি দেখাও, ওকে গাইতে দিও না, ওকে বলতে দিও না, অমুক জায়গার সৎসঙ্গে যাচ্ছো কেন? ওখানে ঠাকুরবাড়ির অনুমতি নেই, নেই রেজিস্ট্রেশন! স্বস্ত্যয়নী ও সাধারণ দীক্ষিতদের মধ্যে ডিভিশান ক্রিয়েট ক'রে স্বস্ত্যয়নীদের বড় ভক্তের তকমা লাগিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ও ঠাকুর ভোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ আর স্বস্ত্যয়নীর মধ্যে আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাঃ সৎসঙ্গী! বাঃ! তোমরাই ঠিক বুঝেছো ঠাকুরকে, ঠাকুরের "মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর' বাণীর মর্মার্থকে। এই বাণীর মূল অর্থ হ'লো, সৎসঙ্গে এসে সৎসঙ্গী হ'য়ে চটজলদি বুঝে যাও 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর' আর সেইভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে সহজ সরল বেকুব সৎসঙ্গী লোকবলকে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসা বাড়াও। মাল্লু কামাও। ভাঁড় মে যায় ঠাকুর আর ঠাকুরের বাণী। আর সৎসঙ্গে এসে হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে আর সাপ ব্যাঙের গল্প শুনিয়ে চটজলদি ঠাকুরের সৎসঙ্গ শেষে আড্ডার আসর বসাও।
ডিপি ওয়ার্কসের মাধ্যমে বহু পুরোনো অপমানে জর্জরিত অভিমানী সৎসঙ্গী যখন ফিরে আসে ঘরে তখন তা ফলাও ক'রে ফেসবুকে ছাপাও। ভালো কথা। কিন্তু সে যদি বলে ফিরিয়ে দাও আমার বিগত বছরগুলি তখন কি হারিয়ে যাওয়া দশ, বিশ, পঞ্চাশ বছর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে? তাহ'লে যা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় তা ছিনিয়ে নিই কেন? শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুরবাড়ির পূজনীয় সদস্য-সদস্যারা কি তা করতে বলেন?
পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নির্দেশ, যেখানে ঠাকুরের নাম পৌছোয়নি সেখানে সেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলন করো। বাস্তবে যেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছে বহু আগেই কোনও কোনও ইষ্টপ্রাণ অকপট ভক্তের ঐকান্তিক আগ্রহে ও ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টায়, আনুগত্য, কৃতিসম্বেগ আর ক্লেশসুখপ্রিয়তায় সেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলনকে ভেঙ্গে দেওয়ার, নিভিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত সারা গায়ে কাঞ্চনের গন্ধে মোহিত আত্মপ্রতিষ্ঠায় মাতাল সৎসঙ্গীরাই কিছু দীক্ষা লোভী হীনমন্য ঋত্বিকের সহযোগীতায়। কেন? এর বিচার বা প্রতিকার কোথায়?
এরপরও কি বলবো, হ্যাঁ! আমরা ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গী?

উপলব্ধিঃ ভাবতে গেলে কুল পাবি না।

বন্ধু! বেশী ডাকার ক্ষমতা যে অর্জন করে সে বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে দয়ালের আঘাত কত মিষ্টি, কত মধুর, কত আলোময়, রসময়, মধুময়, রূপময় আর কত বড় আশীর্বাদ; জীবনের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পাওনা। উপর উপর দেখেই সব ছাড়তে বা মতামত দিতে ঠাকুর বারণ করেছেন। ঠাকুর বলেছেন, যত ডুববে তত বেমালুম হবে। তাই ডুব দিন। আর বেমালুম হ'লে আঘাত সহ্য করার মতো অটোমেটিক আধার তৈরী হ'য়ে যায়। তখন শুধু ক্ষীর সমুদ্রে ভাসা। নতুবা সব শুধু কথার কথা, কথার স্রোতে ভাসা আর এঁড়ে তর্ক। তাই ভাবা ছেড়ে দিন। ঐ যে কি একটা গান আছে না,

"ও তুই ভাবতে গেলে কুল পাবি না,
ভাবনা হবে শুধুই সার
পর লুটে পর তাঁর চরণতলে
যে করবে এই ভব পার।"

প্রবন্ধঃ ইষ্টভৃতি ও ইষ্টভৃতির হিসাব।

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মতিথি পালনকে কেন্দ্র ক'রে নিন্দাবৃষ্টিতে সৎসঙ্গ জগত ভাসিয়ে দিতে চাইছে একশ্রেণীর মানুষ। তারা সৎসঙ্গী সেজে এবং কিছু সৎসঙ্গী আছে না বুঝেই নিন্দুকের প্রচারে প্রভাবিত হ'য়ে জন্মানুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচার ক'রে চলেছে। তারা ইস্টভীতির ( শব্দটাও জানে না ) হিসাব চাইছে, বলছে পাবলিকের নাকি অধিকার আছে হিসাব চাইবার। তারা বালখিল্য পোঙ্গা পন্ডিতের মতো বলছে, হিসাব দিতে সমস্যা কোথায়?

প্রথমে সেইসমস্ত বালখিল্য পোঙ্গা পন্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আগে তো শব্দটা ঠিক ক'রে জানুন ও লিখুন; তারপর না হয় হিসাব চাইবার ধৃষ্টতা দেখাবেন। শব্দটা ইস্টভীতি নয়। শব্দটা ইষ্টভৃতি। ইষ্টভৃতি মানে ইষ্টকে ভরণ-পোষণ, ইষ্টকে পূরণ। ইষ্টকে অর্থাৎ মঙ্গলকে, মঙ্গল শব্দের জীবন্ত প্রতিমূর্তিকে বাস্তব সেবা দান। আগে শব্দটা জানুন, শব্দের মানে জানুন ও বুঝুন তারপর কমেন্ট করবেন। শব্দটাই জানেন না যেখানে সেখানে এর মানে বুঝবেন কি ক'রে? বোঝাই যায় যারা হিসাব চাইছেন তারা কিছু জানেন না, কিছু করেন না অথচ এই বিষয়ে মন্তব্য করবেন একেবারে পোঙ্গা পন্ডিতের মতন। কে পাবলিক? কোন পাবলিক? ইষ্টভৃতি পাবলিকের বাপের টাকা যে পাবলিক হিসাব চাইবে? আপনারা যারা ইষ্টের অর্ঘ্যের হিসাব চাইছেন তারা সৎসঙ্গী নন। সৎসঙ্গী হ'তে পারেন না। সৎসঙ্গী হ'লে হিসেব চাইতেন না, পাবলিকের কথা তুলতেন না, ইস্টভীতি বলতেন না, ট্রাস্টি বোর্ডের কথা আনতেন না। সৎসঙ্গী সেজে সৎসঙ্গীদের মনের মধ্যে সন্দেহের বিষ ঢেলে বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আপনারা। আর ভেবেছেন প্রায় দশ কোটি পূরণের লক্ষ্যে ছুটে চলা সৎসঙ্গী তা বুঝতে পারে না বা পারবে না? তারা চারঅক্ষর গান করা আম সৎসঙ্গী?

আপনারা এটা জেনে রাখুন বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নির্দেশে চলা শ্রীশ্রীঠাকুরের শৃঙ্খলিত, সভ্য, সুশিক্ষিত শিষ্যকুল। দেওঘর মূল কেন্দ্রের সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের "এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়া" বাণীর মূর্ত রূপ। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের অঙ্গুলি হেলনে, চোখের ইশারায়, ইঙ্গিতে, আদেশমাত্রই বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ইয়ং জেনারেশন, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ নারীপুরুষ নীরবে আত্মবলিদান দিতে পারে ভয়ঙ্করের জীবন্ত রূপ হ'য়ে। শিবের তান্ডব নৃত্য সম্বন্ধে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল আছেন আপনারা। দক্ষ রাজার যজ্ঞভুমি শিবের প্রলয় নৃত্যে ধ্বংস হ'য়ে গিয়েছিল, ধ্বংস হ'তে বসেছিল সৃষ্টি। নিশ্চয়ই জানা আছে। শান্ত, সৌম্য, সুন্দর, ধ্যানস্থ শিবের আসন টলে উঠেছিল দক্ষের অশ্রদ্ধায় ভরা অসম্মানজনক অন্যায় আচরণে। দক্ষ রাজার যজ্ঞকুন্ড থেকে উত্থিত অগ্নি দেবতা বা ক্ষিতি, অপ, বায়ু, আকাশ ইত্যাদি অন্যান্য আমন্ত্রিত দেবতার বাপের সাহস বা ক্ষমতা হয়নি শিবের ক্রোধকে শান্ত করে, তান্ডব নৃত্যকে থামায়। থামায় দেবাদিদেব মহাদেবের মহানভক্ত নন্দীভৃঙ্গীর ও দলবলের সুশৃঙ্খল সৌন্দর্যমন্ডিত ভয়াল নৃত্যকে। তাই সাবধান! ভেবে কথা বলুন, ভেবে কথার ঢিল ছুঁড়ুন।

যাই হ'ক, শুনুন ইস্টভীতি আর ইষ্টভৃতি শব্দের মানে আকাশপাতাল তফাৎ। আর, পাবলিকের কথা বলেছেন, পাব্লিকের কোনও অধিকার নেই সৎসঙ্গীদের ইষ্টভৃতির হিসাব চাওয়ার। ইষ্টভৃতি করবে সৎসঙ্গীরা আর হিসেব চাইবে হরিদাস পাল পাবলিক? এটা জেনে রাখুন সৎসঙ্গী পাবলিক নয়। সৎসঙ্গীরা ইষ্টরক্ষা, ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষাকারী ইষ্টপ্রাণ নিরাশিনির্ম্মম ইষ্টের অবিনাশী যোদ্ধা, ধর্ম্ম রক্ষা ও বাঁচাবাড়ার রক্তবীজের ঝাড়। আর, হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা বলেছেন যারা তারা জেনে রাখুন সমস্যা এইটাই যে অনধিকার চর্চা। আপনারা অনধিকার চর্চা করছেন। এটা বালখিল্য পাবলিকের চুলকানি স্বভাব।

আর, ধরেই যদি নিই যারা হিসাব চাইছেন তারা সৎসঙ্গী, ইষ্টভৃতি করেন তাহ'লে এটা জানিয়ে দিই আপনি সৎসঙ্গী হওয়ার ও ইষ্টভৃতি করার যোগ্য নন। সৎসঙ্গী হ'লে ইষ্টভৃতি অর্ঘ্যকে টাকা বা পয়সা বলতেন না। ইষ্টভৃতি সৎসঙ্গীদের স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ-উদ্দীপী, আগ্রহ-উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী। সৎসঙ্গীরা ইষ্টভৃতিকে অশ্রদ্ধা উদ্রেককারী শব্দ টাকা বলে না, বলে অর্ঘ্য।

আর, আমরা ঠাকুরের ভরণ পোষণের দায় দায়িত্ব নিতেও পারি, না-নিতেও পারি। তাঁকে কিছু খেতে দিতেও পারি, না-দিতেও পারি। তিনি আমাদের কাছে কোনও জোরজবরদস্তি বা বলপ্রয়োগ করেননি। আমাদের জাগতিক পিতামাতার দায়দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা জীব, জগৎ, জীবন, কারণের যে উৎস অর্থাৎ আমাদের সবার পরমপিতার জীবন্ত রূপের ভরণ-পোষণের দায়দায়িত্বও গ্রহণ করি; গ্রহণ করি আমাদের জীবন চোঁয়ানো রক্তঘাম ঝরা সৎ পথের পরিশ্রমের বিকল্প রূপ অর্থ দিয়ে বাস্তব সেবার মাধ্যমে। আমরা যারা আমাদের পিতামাতাকে দেবতাজ্ঞানে প্রতিমুহূর্তে বাস্তব সেবার মাধ্যমে পুজা করি তারাই একমাত্র ইষ্টকে নিবেদিত ইষ্টভৃতির মর্ম বুঝি। এছাড়া কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ইষ্টভৃতির মর্মার্থ। রিপুতাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে জারিত মানুষের পক্ষে ইষ্টভৃতির অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা বা সেইসমস্ত মানুষকে বোঝানো আর সূচের মধ্যে দিয়ে হাতি গলানো বা হিমালয় পাহাড়কে কাঁধে ক'রে ব'য়ে আনা সমার্থক। আর আশ্চর্য ও দুঃখ এটাই, সেই ইষ্টভৃতির হিসাব চাইবে এইসমস্ত বালখিল্য অজ্ঞানী পাবলিক।

আমরা সৎসঙ্গীরা আমাদের পাঠানো অর্ঘ্যের কোনও হিসাব চাই না। আমরা ঠাকুরের নিদেশমতো ঠাকুরের বলা নির্দিষ্ট জায়গায় ইষ্টভৃতি পাঠিয়ে দিই। আপনি কি জানেন এক একজন সৎসঙ্গী আছে তারা কত ক'রে ডেইলি ইষ্টভৃতি করে? মাথা ঘুরে যাবে জানলে। সেই বিশাল পরিমাণ ইষ্টভৃতির টাকা কি পাবলিকের বাপের টাকা নাকি সৎসঙ্গীদের জীবন চোঁয়ানো রক্ত, ঘাম ঝড়ানো সৎপথের রোজগারের টাকা? আমার সৎ পরিশ্রমের রোজগারের টাকাপয়সা দিয়ে আমি গাঁজা খাব না মদ খাব, বেশ্যাবাড়ি যাবো কি উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল ভাবে উড়িয়ে দেব নাকি আমার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ জীবন্ত ইষ্টকে দেব সেটা কে ঠিক ক'রে দেবে? পাবলিক? সেটা আমার ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে পড়ে, পাবলিকের হিসাব চাইবার অধিকারের মধ্যে পড়ে না। যেখানে সরকারের হিসাব চাইবার অধিকার নেই সেখানে পাবলিকের অধিকার তো হাস্যকর মূর্খের মতো দাবী। এ ভয়ংকর স্বৈরাচারী অনধিকার চর্চা।

যাই হ'ক আমার পাঠানো ঠাকুরের অর্ঘ্য কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমার দেখার কোনও দরকার নেই, আমরা সেই শিক্ষাতে অভ্যস্ত। আমরা সৎসঙ্গীরা জানি ঠাকুর সব দেখছেন আর তার হিসাবও তিনি রাখেন। আর যদি আপনি সৎসঙ্গী না জেনে ব'লে থাকেন তাহ'লে এবার জেনে নিয়ে নিজের ভোঁতা ধারণা পালটে ফেলুন, অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসুন আর ঠাকুরকে জানুন, পড়ুন, বুঝুন, জীবনকে করুন সার্থক ও সফল। আর যদি মনে করেন এসব ফালতু কথা আপনি ইষ্টভৃতি করেন তাই তার হিসেব চাইবেন তাহ'লে কাল থেকে ইষ্টভৃতি বন্ধ ক'রে দিন। আপনার অশ্রদ্ধার অপমানের অবিশ্বাসের ইস্টভীতির চারআনা পয়সাও ঠাকুর গ্রহণ করেন না। আপনাকে কেউই বলেনি আপনাকে আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইষ্টভৃতি করতে। ইষ্টভৃতি কি তা আমি উপরে পরিস্কার বলে দিয়েছি; আবারও বলছিঃ ইষ্টভৃতি সৎসঙ্গীদের তার ইষ্টের উদ্দেশ্যে, তার জীবনদেবতার উদ্দেশ্যে, তার ভালোবাসাময় প্রিয়পরমের উদ্দেশ্যে স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ-উদ্দীপী, আগ্রহ-উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী। এই ব্যক্তি স্বাধীনতায়, ব্যক্তি অধিকারে কেউ মাতব্বরি করবার ধৃষ্টতা দেখাবেন না।
অলমিতি বিস্তারেন।
( লেখা ২রা জুন'২৩ )

খোলা চিঠিঃ মহাবিশ্ব জাগতিককে

প্রিয় মহাবিশ্ববাবু, 

রামকৃষ্ণ মিশনের মতো পিতৃদত্ত নাম পালটে ছদ্মনাম নিয়েছেন আর রেখেছেন মহাবিশ্ব জাগতিক। তা এরপরও মহাবিশ্বের রহস্যময় রকমসকম বোধগম্য হচ্ছে না!? এ এক আশ্চর্য বিষয়।

যাক, তা এই বিশাল অপূর্ব বিশেষ জন্মদিন পালন দেখে গাত্রদাহ হচ্ছে? কেন গাত্রদাহ হচ্ছে? বিশাল ব্যাপার দেখে হিংসা হচ্ছে? কেন হিংসা হচ্ছে? এ তো স্বাভাবিক, অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা কর্মযজ্ঞ। এ এমন কি দেখছেন আপনি? আগামী দিন আসছে দেওঘরে ও বিশ্বজুড়ে ঠাকুরবাড়ির কর্মযজ্ঞের ব্যাপকতা দেখে উৎসবের মেজাজের তীব্রতায় আপনারা ভেসে যাবেন। ঠাকুরের কথা সত্য হ'তে চলেছে মহাবিশ্বদাদা। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, ঠাকুর বলেছেন, একদিন আসছে মানুষ জসিডি স্টেশনে নেবে সেখানেই প্রণাম ক'রে চলে যাবে। জসিডি স্টেশনের আশেপাশেই গড়ে উঠবে বিশাল বিশাল ঠাকুরবাড়ির রেপ্লিকা! সেটা দেখেই দইয়ের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হবে দাদা। সেটা সত্যি হ'তে চলেছে।

আচার্যদেবের এই জন্মদিন তার উজ্জ্বল সঙ্কেত। এত হিংসা? আর থাকতে না পেরে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিতে হ'লো? আপনি ফেসবুকে পোষ্ট দিলেনঃ "একজন ঠাকুরের মায়ের জন্মোৎসব পালন করছেন, আর একজন নিজের !!!"

এর পরেও বলবেন আপনি মহাবিশ্ব জাগতিক একজন ঠাকুরের ভক্ত, সাধক!? ফেসবুকে পোষ্ট ক'রে কোটি কোটি ভক্তের সেন্টিমেন্টে আঘাত করতে ঠাকুর শিখিয়েছিলেন নাকি আপনাদের? ঠাকুরকে যখন বিশ্বগুরু প্রচার ক'রে উৎসব হ'য়েছিল তখন কি ঠাকুর নিজের উৎসব নিজে করেছিল? নাকি ভক্তমন্ডলী করেছিল? আর যদি ভক্তমন্ডলী করেছিল তার ডিসঅ্যাডভান্টেজ যেমন ছিল তেমনি অ্যাডভান্টেজও তেমনি ছিল। আর আপনার পোষ্ট অনুযায়ী একজন কে নিজের জন্মদিন নিজে পালন করছে তাঁর নামটা তো বলুন; সবাই জানুক। রেখেঢেকে কথা বলছেন কেন? বাপের ব্যাটার মতো জামার কলার তুলে বলুন। ওঃ জামা ত পড়েন না, পাঞ্জাবী পড়েন। অবশ্য পাঞ্জাবীরও কলার আছে। পারলে বেশ উঁচু কলারওয়ালা পাঞ্জাবী তৈরী ক'রে পড়বেন। তবে মনে হবে, বাপকা বেটা সহিস কা ঘোড়া কুছ নেহী তো থোড়া থোড়া।

যাই হ'ক, যার জন্মদিন পালন হয়েছে সে কি নিজের জন্মদিন নিজে পালন করেছেন নাকি আমরা কোটি কোটি ঠাকুরের শিষ্য করেছি? আর যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছেন তিনি কে? আরে দাদা, তাঁর নামটা তো বলুন। ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন ক'রে যিনি এতবড় মহান কাজ করছেন তাঁর নামটা প্রকাশ্যে বলতে এত দ্বিধাদ্বন্ধ কেন? লজ্জা? নাকি প্রচারবিমুখতার মহান নিদর্শন? আর যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছেন তিনি কি আপনাকে বলেছেন, তিনি যে ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছে সেটা ফলাও ক'রে ফেসবুকে প্রচার করতে? তাও আবার অন্যের জন্মদিনের সঙ্গে তুলনা টেনে? তা আপনারা তো যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছে তাঁরও জন্মদিন পালন করতে পারেন। পারেন নাকি? তা করছেন না কেন? কেউ বাধা দিয়েছেন? নাকি বাধা দিচ্ছেন? আপনারাও তাঁর জন্মদিন পালন করুন, ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করুন, তাঁর পরিবারের সবার জন্মদিন পালন করুন, আপনারও করুন। এটা তো আনন্দের। আমরা তো আনন্দ চাই। চাই নাকি? এই কষ্ট যন্ত্রণায় ভরা জীবনে যেনতেনপ্রকারেণ আনন্দ করুন, আনন্দের রসদ খুঁজে নিন। তবে মাথায় রাখবেন আনন্দ করার মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের মনের মতো হ'য়ে উঠুন। আমাদের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা বলেছেন, "হৈ চৈ করে সব করা ভালো, কিন্তু তাঁর মনের মত হয়ে উঠেছি কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন!! চন্দন গাছের তলায় বাস করি, অথচ গায়ে চন্দনের গন্ধই হল না, চলবে?"

এই হলেন আমাদের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। যিনি প্রতিমুহুর্তে আমাদের নিখুঁত ঠাকুরের মানুষ হ'য়ে ওঠার প্রেরণা দিচ্ছেন, শিক্ষা দিচ্ছেন।

এইযে আমাদের সকলের পরিবারে পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন পালন করি__________আগে খুব একটা এইসব জন্মদিন পালনের খুব একটা চল পরিবারে ছিল না; আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা এইসব জন্মদিন পালন করে, পালন করার চেষ্টা করে, সঙ্গে আরও অনেক কিছু অনুষ্ঠান পালন করার কমবেশি চেষ্টা করে________তা সেইসব জন্মদিন কি আমরা ঠাকুরকে নিয়ে সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে দিয়ে করি? করি না। যদিও বা কেউ করি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার প্রিয়জন যারা যতই তাদের বলি না কেন ঠাকুরের সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জন্মদিন পালন করতে তথাপি তারা আমার মন রাখতে জন্মদিন উপলক্ষ্যে সৎসঙ্গ নামকা ওয়াস্তে ক'রে পরদিনই কুত্তার ল্যাজের মতো বেঁকে গিয়ে রোল মোগলাই বিরিয়ানি ইত্যাদি ইত্যাদির মাধ্যমে ইয়ংদের নিয়ে গানাবাজানা সহ হৈ হৈ ক'রে জমজমাট জন্মদিন পালন করতে। সেইটাই তাদের কাছে হয় মোক্ষম জন্মদিন পালন আর ঠাকুরের সৎসঙ্গটা হয় ঐ বুড়োবুড়ি সহযোগে চু কিতকিত খেলা। আর সেই বিষাক্ত চু কিতকিত রোগ আপনাদের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে।

তাই মহাবিশ্বদাদা, এবার বুঝতে পেরেছেন আচার্যদেবের কেন প্রয়োজন? আপনি আমি দু'জনেই ঠাকুরের দীক্ষিত কিন্তু আপনার আমার মধ্যে এইযে বোধের তফাৎ, উপলব্ধির তফাৎ, জ্ঞানের তফাৎ, ভালোবাসার তফাৎ, প্রেমের তফাৎ, অভিজ্ঞতার তফাৎ তা ঐ আচার্যদেবের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির কারণেই। এইজন্যেই বলে আচার্যদেবের প্রয়োজনীয়তা। শ্রীশ্রীআচার্যদেব আমাদের বললেন, জন্মদিন বা অন্য কোনও দিনে আনন্দ কর, হৈ চৈ কর, কিন্তু মনে রেখো ঠাকুরের মনের মতো হ'য়ে উঠে হৈ চৈ কর। যেটা নিজে হাতেকলমে ক'রে অন্যকে করতে উৎসাহিত করছেন, উদ্দীপ্ত করছেন। সুশৃঙ্খল এক চোখ ধাঁধানো নীরব জমায়েত। এই যে প্রচন্ড গরমে এত লক্ষ লক্ষ মানুষ অথচ কোনও হৈচৈ নেই, নেই কোনও হুল্লোড়, চেঁচামেচি, বিশৃঙ্খলা! প্রচন্ড গরম উপেক্ষা ক'রে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসছে ঠাকুরের পাদপীঠ তলে শুধুমাত্র জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত তাঁর রাতুল চরণে নিবেদিত প্রাণ একটা ঈশ্বরকোটি মানুষের টানে। এই জন্মদিন পালন করার পিছনে অনেক বড় বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপার আছে যা অল্পমস্তিষ্কের বোঝার বিষয় নয়। অল্পমস্তিষ্কের যারা তারা চিরদিনই সবকিছুর মধ্যে নেগেটিভ ব্যাপার দেখে থাকে কারণ তারা জন্মাবধি নেগেটিভ অরবিটের মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছে তাই তাদের পজিটিভ শক্তি বায়োলজিক্যাল মেকআপের মধ্যেই নেই। তাই তাদের করারও কিচ্ছু নেই। এটা তাদের দুর্ভাগ্য। আর এই দুর্ভাগ্য নিয়েই তারা ইহকাল ত্যাগ করে দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করা সত্ত্বেও। তাই দয়াল ঠাকুর বললেন,
"তুমি যা'ই দেখ না কেন, অন্তরের সহিত সর্ব্বাগ্রে তার ভাল্টুকুই দেখার চেষ্টা কর, আর এই অভ্যাস তুমি মজ্জাগত ক'রে ফেল। তোমার মন যত নির্ম্মল হবে, তোমার চক্ষু তত নির্ম্মল হবে, আর জগৎটা তোমার নিকট নির্ম্মল হ'য়ে ভেসে উঠবে।

তোমার নজর যদি অন্যের কেবল কু-ই দেখে, তবে তুমি কখনই কাউকে ভালবাসতে পারবে না। আর, যে সৎ দেখতে পারে না সে কখনই সৎ হয় না।"----শ্রীশ্রীঠাকুর।
অলমিতি বিস্তারেন।
ইতি,
প্রবি।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী।
( লেখা ২রা জুন'২০২৩ )