প্রবি সমাচার ২০
পিতা ও তাঁর সন্তান।
পিতা তাঁর সব সন্তানকেই ভালোবাসেন। তাঁর ভালোবাসার মধ্যে বাছবিচার নেই। হয়তো আব্বা আব্বা, ফাদার ফাদার, ড্যাডি ড্যাডি, পিতাজী পিতাজী, বাবা বাবা ব'লে জপমালা জপতে থাকা পুত্রকন্যাকে নিয়ে একটু বেশী চিন্তা করেন, বেশী ভাবেন আর ঐটাকে আমরা ভাবি বেশী ভালোবাসেন; হয়তো বাসেন। কারণ পিতার দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশী ঐ বেকুব পুত্রকন্যার জন্য, বেকুব পুত্রের, বেকুব কন্যার শেষের সেদিন ভয়ঙ্করের জন্য পিতার কান্না, কষ্ট বেশী। কারণ পিতা তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা ভাবের ঘুঘু কর্ম্মহীন পুত্রকন্যার মধ্যে জীবিত নেই এটাই পিতার অন্তহীন যন্ত্রণা। পিতা তাঁর সব পুত্রকন্যাকেই ভালোবাসেন। সমান ভালোবাসেন। তাঁর ভালোবাসায় কখনও কোনও খামতি থাকে না। থাকে না পক্ষপাতিত্য। কিন্তু পিতা পুত্রকে কন্যাকে ভালোবাসলে কি হবে? কি লাভ? পুত্রকন্যা কি পিতাকে ভালোবাসে? ভালোবাসে তাঁর চলনকে। তাঁর ইচ্ছাকে? পুত্রকন্যা কি পিতার মনের বাসনা কি, পিতা কি চায় তাদের কাছে তা জানে? পুত্রকন্যা তো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, ব্যস্ত নিজের কর্মহীন স্বপ্নের জগতের মধ্যে, অলীক মায়ার মাঝে! পিতার দিকে তাদের তাকাবার সময় নেই, সময় নেই পিতার কথা শোনার। এমনিভাবেই দিনে দিনে এক জড় পদার্থে পরিণত হ'য়ে দুঃখকষ্টের জগতের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে পুত্রকন্যা। আর সেই অন্তহীন মৃত্যুর পথে অন্ধের মত ছুটে চলা পুত্রকন্যার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে চলেছেন পিতা! সেই পুত্রকন্যা ভাবছে পিতা আমাদের মধ্যে আছে, জীবিত আছে।
পিতা জীবিত আছে তাঁর কর্ম্ম পাগল পুত্রকন্যার মধ্যে, জীবিত থাকে সেই পুত্রকন্যার মধ্যে যে পিতার চরণ পুজোর পরিবর্তে পিতার চলন পুজোর কথা বলে চলেছে নিরন্তর বুক ফাটো ফাটো ক'রে, নিজে পিতার চরণ পুজো ক'রে এসেছে অকপটভাবে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এবং পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী সবাইকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ক'রে তুলেছে ও তুলছে জীবনভর। পিতা জীবিত থাকেন সেই পুত্রকন্যার মধ্যে নিরন্তর।
মনে পড়ে গেল বিশ্বের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ছড়াঃ
"কর্ম্ম নাই চিন্তা সৎ
পাথর পেছল নরক পথ।"
"চলনহারা চরণ পূজা
বন্ধ্যা পূজা সে জানিস।"
তাই আসুন অকপটভাবে পরমপিতার কর্ম্ম করার মধ্যে দিয়ে ,তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার মধ্যে দিয়ে তাঁকে আমাদের জীবনে, আমাদের পরিবারে জীবিত রাখি। আর ঘরকে ক'রে তুলি স্বর্গ! আর নিজের জীবনকে করি তাঁর পূজার বেদী। তখন আর নেই কোনও ভয়, মহাভয়, নেই কোনও দুঃখ কষ্ট নারকীয় জীবন যন্ত্রণা।
( লেখা ৫ই জুন' ২০২১)
No comments:
Post a Comment