Powered By Blogger

Wednesday, June 14, 2023

অভিজ্ঞতাঃ রোগীর মৃত্যু ও ডাক্তার নিগ্রহ (৩)

উত্তরপাড়া হাসপাতালে এসে পৌঁছলো আমাদের এম্বুলেন্স। ইমারজেন্সিতে পৌঁছেই শুনলাম রোগী ভর্তি নেওয়া হবে না, রি-কনস্ট্রাকশন চলছে তাই এডমিশন হবে না। কি করবো, কোথায় যাবো ভেবে মাথা খারাপ হ'য়ে যাচ্ছে। মাথা কাজ করছে না। ভাইপোরা অফিসে কথা বলছে কিন্তু কোনও লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। অফিস থেকে জানালো কোনও বেড খালি নেই। নার্সদের ব্যবহারে মনটা আরো খারাপ হ'য়ে গেলো। পেশেন্ট যে তীব্র জ্বরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে সে সম্পর্কে কোনও হেলদোল নেই! কথাবার্তায় নেই কোনও মিষ্টতা, আন্তরিকতা! এদিকে এখনো পর্যন্ত কোনও ট্রিটমেন্ট হয়নি সেই সকাল থেকে। জ্বরের তীব্রতায় অচৈতন্য হ'য়ে পড়ে আছে পেশেন্ট; এম্বুলেন্সে শুয়ে আছে। আমার বড় বৌদি ও আমার বউ তার পাশে বসে আছে। মাথায় জলপট্টি দিয়ে চলেছে রোগীর মাথায়। সকালে বাড়িতে ডাক্তার আসা থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ঘন্টা দশ বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছে রোগী, ঘুরে মরছে এম্বুলেন্সে পথে পথে। অবশেষে একটু কথা কাটাকাটি, তর্ক-বিতর্ক শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি করিয়ে নিলো কিন্তু বেড পাওয়া গেল না। নিরুপায় বশতঃ তাই মেনে নেওয়া হ'লো। সবাইকে বললাম একটু যতটা সম্ভব মানিয়ে নিতে, নিজেকে সংযত হ'তে। মনে মনে বললাম, এটাই বাস্তব, এটাই বর্তমান যুগে স্বাভাবিক ব্যাপার। এর থেকে বেশী ভালো কিছু সরকারি হাসপাতালে আশা করা আর মূর্খের স্বর্গে বাস করা সমার্থক। তাই মনকে আবার বললাম, সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো।
মাটিতে রাখা হ'লো রোগীকে। তবে আর জি কর হাসপাতালের সঙ্গে উত্তরপাড়া হাসপাতালের গুণগত একটা তফাৎ চোখে পড়লো। তা হ'লো আর জি করে মাটিতে বাড়ির চাদর বিছিয়ে রোগীকে শুইয়ে দেওয়া হয় আর উত্তরপাড়া হাসপাতালে রোগীকে মাটিতে শোয়াবার জন্য একটা গদি মত বিছানা দেওয়া হয়েছিল যার উপর চাদর বিছিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল পেশেন্টকে। তারপর শুরু হ'লো চিকিৎসা। এই প্রথম রোগীকে দেওয়া হ'লো চিকিৎসা পরিষেবা।
বরফ জল দিয়ে মুছে দেওয়া হ'লো চোখ মুখ কপাল ও সারা শরীর।
ক্রমশঃ
( লেখা ১৫ই জুন' ২০১৯ )

No comments:

Post a Comment