পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নামে তৈরী একটা পেজে অবিনদাদার উদ্দেশ্যে এক মায়ের তাঁর স্বামীর অ্যালার্জি নিরাময়ের কাতর প্রার্থনা জানিয়ে একটা পোষ্ট দেখলাম। তিনি লিখছেন, পুজনীয় অবিনদাদা আমার স্বামীর অ্যালার্জি ভালো ক'রে দাও। বুঝলাম অ্যালার্জির সমস্যা তীব্র। বোঝার চেষ্টা করলাম কঠিন সমস্যাটা ও মানসিক কষ্টের অবস্থাটা। আর সেইভাবেই চেষ্টা করলাম সর্বাঙ্গীণ আলোচনা করার।
প্রথমতঃ পোষ্ট পড়ে বুঝলাম অজ্ঞতা, ভারসাম্যহীন ভক্তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নৌকা ডুবলে যেমন মানুষ খড়কুটো ধ'রে বাঁচতে চায় ঠিক তেমনি সমস্যা জর্জরিত মানুষ সামনে যা পায় তাই ধ'রে নিস্তার পেতে চায়। এদের কাছে কারও কোনও গুরুত্ব নেই। যখন যাকে সামনে পায়, নোতুন কিছু দেখে তা'তেই ঢলে পড়ে, নির্ভর করে, বিশ্বাস করে। এই ঢলে পড়া, নির্ভরতা, বিশ্বাস সাময়িক, ঠুনকো। তারপর কিছুদিন গেলেই আবার নোতুনের চমকে চমকিত হয় এরা। তা' সোনাই হ'ক আর সোনার মতো চকচকে ইমিটেশনই হ'ক যাই-ই হ'ক। কোথাও এরা স্থির নয়। সবেতেই ফোকটে আর চটজলদি পাওয়ার প্রলোভন। এদের জীবনে মূল ব'লে কিছু নেই, মূলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, এরা পরগাছার মতো শুধু অন্যের রস শুষে খায়। শয়তানের কোলেই হ'ক আর ভগবানের কোলে ব'সেই হ'ক এরা রস শুষে খায়। যেনতেনপ্রকারেন নিজেরটা পেলেই হ'লো।
এইরকমের বহু পোষ্ট দেখি ফেসবুকে ও পেজগুলিতে।
তা' নিজের প্রোফাইলেই হ'ক আর অন্য কোনও পেজেই হ'ক। নিজের প্রোফাইল ছাড়া অবিনদা নামাঙ্কিত অন্য কোনও পেজে যখন দেখি এইধরণের পোষ্ট তখন ভাবি ঐ পেজের অ্যাডমিন যারা তাদের ভুমিকা কি? কেন তারা নীরব? তারা কি দায়িত্ব নিয়েই নিয়েছে এই পেজের মাধ্যমে অবিনদাকে প্রেম, ভক্তি, ভালোবাসা ও মুশকিল আসানকারী হিসেবে দেখাবার অছিলায় সৎসঙ্গ বিরোধীদের কাছে অবিনদার ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার রসদ তুলে দেবে ব'লে? সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ তাদের মূর্খতার কারণে না বুঝে এমন ধরণের পোষ্ট করতেই পারে শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাকে বিপদতারণ দেবতা মনে ক'রে। কিন্তু পেজের অ্যাডমিনরা কেন তাদের দায়িত্ব পালন করে না? কেন তারা অবিনদার নামে এত পেজ খুলে বসে আছে? ভক্তির হাউই বাজির ফোয়ারা ছোটাতে? তারা যখন অবিনদাদার প্রতি ভক্তির তুফান তুলে ভালোবাসার নাউ ভাসিয়েছে তো সেই নাউয়ে ডুবন্ত মানুষকে তুলে নিক! তাদের রেস্কিউ করুক, পরিচর্যা করুক, গাইড করুক, সঠিক পথ দেখাক! তাই নয় কি? নাকি চুলকানি রোগের মতো একটা পেজ খুলে বসে ভালোবাসা চুলকাতে বসে গেলাম।?
যাই হ'ক হয় অ্যাডমিনরা দায়িত্ব সচেতন হ'ক আর না হয় পেজ বন্ধ ক'রে দিক। অহেতুক অবিনদাকে নিয়ে বিরোধীদের কুৎসা করার সুযোগ ক'রে দেবেন না যদি অবিবদাদাকে আপনারা ইয়ং জেনারেশন ভালোবাসেন।
এবার আসি পোষ্টের ব্যাখ্যায়।
একেই বলে বিচ্যুতি ও ব্যভিচারী ভক্তি। আবেগ ভালো আবেগে ভেসে যাওয়া ভালো না। শ্রীশ্রীঅবিনদাদা স্বপ্নে পাওয়া কোনও ঢোল কোম্পানির মলম বেচেন নাকি যে তিনি মলম দিয়ে রোগ সারিয়ে দেবেন? নাকি তাঁর উপর ভর হয় যে তিনি ঝাড়ফুঁক ক'রে, গায়ে হাতের ঝালর বুলিয়ে রোগ সারিয়ে দেবেন? শ্রীশ্রীঅবিনদাদা বলেছেন নাকি ঠাকুরকে বাদ দিয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে? নাকি আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন ঠাকুর থেকে ঠাকুর বংশধর বড়ো হ'য়ে উঠুক সৎসঙ্গীদের কাছে? এইভাবেই আমরা তাঁদের বিরক্তির কারণ হ'য়ে উঠি। তাঁরা মুখ বুঝে এইসব বালখিল্য ভক্তদের ভালোবাসার যন্ত্রণা সহ্য করেন, সহ্য করেন কুৎসাকারীদের গালাগালি। এইসমস্ত ব্যভিচারী ভক্তির ফলে সুযোগসন্ধানী বিরোধীরা ফোকটে পেয়ে যাওয়া মেঘ না চাইতেই জলের মতো পেয়ে যায় ঠাকুরবাড়ির কুৎসা করার মালমশালা। এইরকম বালখিল্য ভক্তকুলের ব্যভিচারী ভালোবাসার জন্যেই ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা করার সুযোগ পেয়ে এসেছে বিরোধীরা।
এটা আমরা যেন মাথায় রাখি, ভুলে না যায় যে দীক্ষাটা আমরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নিয়েছি, শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নিইনি। শ্রীশ্রীআচার্যদেব বা শ্রীশ্রীঅবিনদাদা আমাদের ইষ্ট বা গুরু নন। একশ্রেণীর সৎসঙ্গীদের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উদ্দেশ্যে এসব প্রকাশ্যে প্রার্থনার প্রচার যেমন সৎসঙ্গীদের মধ্যে ভুল বার্তা পৌঁছায় ঠিক তেমনি সৎসঙ্গীদের ঠাকুর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। না বুঝে, না জেনে, না মেনে ঠাকুরবাড়ি না গিয়ে, আচার্য সঙ্গ না ক'রে, মন্দিরের সঙ্গে কিংবা ইষ্টপ্রাণ ও আচার্য কেন্দ্রিক গুরুভাইবোনেদের সঙ্গে সঙ্গ না করার ও যোগাযোগ না রাখার ফলে আমরা নিজেরা তো ঠাকুর থেকে দূরে সরে গেছি আর একশ্রেণীর সৎসঙ্গীদের ঠাকুরের ও ঠাকুরবাড়ির পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তাদের অপছন্দের এরকম প্রার্থনা প্রকাশ্যে ক'রে চলেছি। ফলে অন্যান্য গুরুভাইবোনেরা ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত হ'য়ে ঠাকুর থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এবং ঠাকুরের দয়া থেকে যারা এমন ভুল বিকৃত প্রার্থনা করছেন এবং যারা সরে যাচ্ছেন তারা সবাই বঞ্চিত হচ্ছেন।
আর এই নিজেদের দোষের কারণে ঠাকুরের দয়া থেকে যখন বঞ্চিত হচ্ছেন তখন ঠাকুরের ওপর সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ছে আর অবিশ্বাসের জন্ম হচ্ছে।
আপনি আপনার সমস্যা নিয়ে কিম্বা যার হয়েছে তাকে নিয়ে বরং যথাশীঘ্র সম্ভব ঠাকুরবাড়ি যান। ঠাকুরবাড়ি গিয়ে আচার্যদেবের কাছে সমস্যা নিবেদন করুন। আচার্যদেব যা যা ব'লে দেবেন তা মন দিয়ে শুনুন আর অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করুন ঠাকুরের প্রতি গভীর বিশ্বাস আর নির্ভরতা নিয়ে। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার দর্শন ও প্রণাম করুন। তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। আচার্যদেবের অনুপস্থিতিতে তাঁর কাছে আপনার সমস্যা নিবেদন করুন। পথ পাবেন, পথ পাবেন, নিশ্চিত পথ পাবেন।
আর অ্যালার্জি রোগের ক্ষেত্রে যেটা করণীয় সেটা করুন।
করণীয় যা তা হ'লো সকালে প্রতিদিন ইষ্টভৃতি নিষ্ঠার সঙ্গে ঠাকুরকে নিবেদন করুন, তারপর তা যথাস্থানে পাঠিয়ে দিন মাসান্তে। প্রতিদিন ঠাকুরকে ভক্তি ভ'রে ফুল জল নিবেদন করুন তারপর সেই জল আলাদা গ্লাসে ঢেলে ভক্তিভরে পান করুন। পেলে প্রতিদিন থানকুনি পাতা খান। দু'বেলা প্রার্থনা করুন। না পারলে অন্তত শুক্রবার করুন। সবসময় খুব খুব নাম করুন। সব কাজের মধ্যে নামময় হ'য়ে থাকুন। সাত্ত্বিক নিরামিষ রান্না খান। ধুলোবালি, ওষুধ, রাসায়নিক যুক্ত প্রসাধন সামগ্রী এবং যে সব বস্তু ব্যবহারে এলার্জি হয় সেগুলি ডিটেক্ট করুন এবং সেসব থেকে দূরে থাকুন। পরিস্কার পরিছন্ন থাকুন। পাতলা জামাকাপড় পড়ুন। খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি ও ভিটামিন-ই আছে যেসব খাবারে সেসব খাবার খান। দই খান। আমিষ খাবারে চিঙি মাছ, বেগুন, ইলিশ মাছ ইত্যাদি খাবার বর্জন করুন।
সর্বোপরি আবার বলি, আগে ডাক্তার দেখান। ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চলুন। নিষ্ঠার সঙ্গে ইষ্টভৃতি করুন। নাম করুন, খুব নাম করুন, নামের তীব্রতা বাড়ান। নামের আগুনের তীব্রতায় শরীরের সমস্ত জার্ম জ্বলেপুড়ে শেষ হ'য়ে যাক। ঠাকুরবাড়ি আসুন, ঠাকুর পরিবারের বংশধরদের দর্শন করুন, আলাপ করুন। ঠাকুরবাড়ির পরিবারের কারও গায়ে প্রাণ গেলেও আঁচড় পড়তে দেবেন না। এ পাপ, মহাপাপ। গ্যারান্টি চিরকালীন নিরাময় হ'য়ে যাবেন।
আশা করি ইয়ং জেনারেশন আমার অভিপ্রায় বুঝবেন।
জয়গুরু।
প্রবি।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী,
হুগলী।
( ১৯শে মে'২০২৩ )
No comments:
Post a Comment