Powered By Blogger

Monday, June 12, 2023

উপলব্ধি ৪২

সেই ট্রাডিশান...............।
হায়! আমরা বাঙালি!!!! বাঙালির অবদান!!!! পড়ছিলাম বাঙালির অবদানের কথা। পড়ছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কথা! ভাবছিলাম বাংলা ও বাঙালির কথা!

সেই যে ব্রিটিশরা দেশটাকে দু'টুকরো ক'রে দিয়ে সময়মত চলে গেল পিছনে সুতো বেঁধে দিয়ে পুতুল নাচাবে ব'লে আজও প্রকারান্তরে নাচিয়ে চলেছে। ব্রিটিশ বুঝতে পেরেছিল সময়মতো যদি চ'লে না যায়, ঘুঁটি সাজাতে দেরী হয়, আর নেতাজীর হাতে দেশটা চ'লে যায় তাহ'লে ২০০ বছর ধ'রে শাসন করা গোলাম দেশটাকে আর বাগে রাখতে পারবো না উল্টে এতবড় সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ভারতবর্ষ একদিন বিশ্বের প্রভু হ'য়ে ব্রিটিশ কেন বিশ্বের সমস্ত দেশের উপর প্রভুত্ব করবে আর ব্রিটিশকে দিতে হবে তার গুনাগার। কারণ সত্যি সত্যিই ব্রিটিশ ছিল জহুরী দেশ আর তাই সে সোনার দেশ আর সোনার দেশের সোনার সন্তানকে চিনতে ভুল করেনি। চট জলদি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চলে যাবার আর দেশ ভাগ ক'রে দিয়ে যাবার আর সেই দেশভাগের সময়েই আরও ভাগের বীজ বপন ক'রে দিয়ে গিয়েছিল অদভুত এক দেশের সৃষ্টি ক'রে দিয়ে। যাতে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতটাকে চিরদিনের মত পঙ্গু ক'রে দেওয়া যায়। কোনোদিন যাতে মাথা তুলে দাঁড়ালেও অর্ধেক মাথা তুলে দাঁড়ায়। আর তা সম্ভব হ'লেও হবে পৃথিবীর ঐ অদভুত দেশটার মধ্যে থেকে আর অর্ধেক থেকে যাবে চিরদিন অন্য খন্ড দেশটার মধ্যে। যাতে জাতটা কোনোদিন এক হ'তে না পারে। বাঙালি সত্ত্বার মধ্যে ঘৃণ্য ধর্ম সত্ত্বার বীজ বপন ক'রে দাও আর দাও প্রবল ধর্মীয় সুড়সুড়ি! 

আচ্ছা, এই রকম সত্যি আমরা চেয়েছিলাম নাকি! আর্ধেকেই সন্তুষ্ট!!!!! এই বাঙালি সত্ত্বাকে ধর্মের নামে দু'টুকরো ক'রে দেওয়াই ছিল ঘরে-বাইরে দেশভাগের চক্রান্তকারিদের চক্রান্তের মধ্যে আসল চক্রান্ত!!!!! পৃথিবীতে এমন অদভুত দেশ 'পাকিস্তান' যার অর্ধেক অংশ পূর্বদিকে ভারত দিয়ে ঘেরা মাঝখানের ছোট্ট এক টুকরো আর অর্ধেক অংশ পশ্চিমে!!!!! কেন এমন অদভুত প্যারালাইজড দেশের জন্ম দিয়েছিল দেশের শাসক ও বুদ্ধিমান ব্রিটিশরা!? মহাত্মা গান্ধী, জওহর লাল নেহুরু ইত্যাদি দেশের অন্য তাবড় তাবড় দেশনেতারা কি এই অদভুত দেশের জন্মের পিছনের রহস্য বুঝতে পারেননি? ধরতে পারেননি? নাকি সব বুঝেও চুপ ক'রে ছিল!? তাঁরাও কি ভেবেছিলেন নাকি ভারতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান খাঁটি আর্য রক্ত সমৃদ্ধ জাত বাঙালীকে থামিয়ে দেবার এই উপযুক্ত সময়!? ভাবলে আজও অবাক লাগে কিভাবে শাসন করতো পাকিস্তানি শাসকরা তাদের পূর্ব দিকের অংশটাকে!!!!???? জলপথ, স্থলপথ, আকাশপথ কোন পথ ব্যবহার করতো তারা!? কিভাবে করতো!? কোন ঘুরপথে তারা এই আজকের বাংলাদেশটাকে শাসন করতো। কিভাবে সেদিন মেনে নিয়েছিল এই অদভুত ভাগের রসায়ন দেশের নেতারা!? কেন মেনে নিয়েছিল!? কেন সেদিন কেউ এই অদভুত বিকলাঙ্গ দেশের জন্মের বিরোধিতা করেনি!? ব্রিটিশরা সেদিন বুঝেশুনেই এই অদভুত ভাগের রসদ যুগিয়েছিল। ব্রিটিশরা জানতো এইভাবে বেশিদিন ধ'রে রাখা যাবে না কোনও জমি। একদিন হাতছাড়া করতেই হবে স্বাধীনতার দাবীতে। আর সেদিন হবে ভারত মায়ের আরও একটুকরো। এদিক দিয়ে অবশ্যই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী থাকতে হবে বাঙালি জাতিকে।

যাই হ'ক, সেদিন তারা এই ঘৃণ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল ব'লেই আজকের আর্ধেক হ'লেও অর্থাৎ পুরো বাংলা না হ'লেও বিশ্বের মানচিত্রে বাংলা তথা বাঙালি তার জায়গা ক'রে নিয়েছে। বিশ্বের মানচিত্রে যদিও এর বহু বহু আগেই বহু ক্ষেত্রেই বাঙালি তার পদচিহ্ন রেখে গেছে। আর এই পদচিহ্নের খোঁজ রাখতো ব্রিটিশরা। সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব পোষণ করবো আর সেই দেশের, সেই দেশের অধিবাসীর নাড়ীনক্ষত্রের খোঁজ রাখবো না তা আবার হয়!? এ কি পাড়ার পাগলা দাশু নাকি যে পাঁচিল টপকে আম পাড়তে যাবো আর পাগলা কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হবো!? তাই তারা জানতো এই বাঙালি জাতির খোঁজ আলেকজান্ডারও পেয়েছিল আর ফিরে গিয়েছিল। ব্রিটিশ ভালোভাবেই জানতো এই জাতটার মধ্যে এখনও বিশুদ্ধ আর্য রক্তের ধারা ব'য়ে চলেছে! তাই সাধু সাবধান!! সেই সাবধান হ'য়েই হিসেব ক'রে তারা পা রেখেছিল এই ভারতবর্ষে। আর শেষ করতে চেয়েছিল অতি সুকৌশলে এই জাতটাকে। আর শেষ করতে গিয়ে তারা যেটা বপন ক'রে দিয়ে গিয়েছিল নিজেদের অজান্তে এই আর্য রক্ত ধারায় সমৃদ্ধ বাঙালি জাতটার রক্তে সেটা হ'লো স্বাধীনতার বীজ! এই স্বাধীনতার বীজের সন্ধান, মুক্তির গন্ধ পেতে দেরী হয়নি এই চতুর বুদ্ধিমান জাতটার! দেশ ভাগ হওয়ার সংগে সঙ্গেই পেয়ে গিয়েছিল সেই গুপ্তধনের সন্ধান, পেয়ে গিয়েছিল ফুলের মধুর গন্ধ যা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি অতি চতুর ব্রিটীশ জাত। বাঙালি চতুর কিন্তু অতি চতুর নয়; যদিও কারও কারও মধ্যে সেই অতি চতুরের রঙ লেগেছে ও লেগে চলেছে। সেই মুক্তির গন্ধে মাতাল হয়েছিল বাঙালি আর দূর থেকে বসে দেখছিল ব্রিটিশ আর হাসছিল তাদের দূরদৃষ্টি 'আবার ভাগ'-এর তত্ত্ব সফল হচ্ছে দেখে। কিন্তু তারা মুহূর্তের আনন্দে অন্ধ হ'য়ে গেছিল, দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায়নি ৭১ এর সেই দৃশ্য যে, ঐ সেই 'বাঙালি' জাতটা--------- যে জাতটার মাথাগুলিকে তারা গুঁড়িয়ে দিয়ে জাতটাকে ধর্মের প্রবল সুড়সুড়িতে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়েছিল আর ভেবেছিল 'সব শেষ'---------আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে, 'নেতাজী'র মত আবারও কোনও নেতাজীর আবির্ভাব হবে আর জাতটাকে নিয়ে যাবে একেবারে বিশ্বের মানচিত্রে! জ্বলজ্বল করবে বিশ্বের মানচিত্রে ঐ জাতটার দেশের পতাকা তাদের দেশের পতাকার মতই। 
দূরদৃষ্টি অবশ্যই ছিল; না থাকলে কি তারা সেই ইউরোপ থেকে এশিয়া মহাদেশে এসে ২০০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করতে পারে? কেউ পারে কি? পারলেও ২০০ বছর? কোনও গুণ না থাকলে কি এটা সম্ভব? সেই ভারতবর্ষের মধ্যেই ছিল পাকিস্থান আর বাংলাদেশ। সেই যে 'ভাগ করো আর শাসন করো'-র বিষাক্ত বিষ ঢেলে গেল, বপন ক'রে দিয়ে গেল ঘৃণ্য বীজ মানুষের মনে আজও সেই ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে আর চলবেও অনন্তকাল বংশ পরম্পরায়। আর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই বিষাক্ত বিষের তীব্রতা। তাই আমরা বুঝেই হ'ক আর না বুঝেই হ'ক, ইচ্ছাকৃতই হ'ক আর অনিচ্ছাকৃতই হ'ক আজও সেই ব্রিটিশের গোলামী ক'রে চলেছি চিন্তায়, ভাবনায়, কর্মে আর চলবোও। আজও বাঙালী বাঙালী নয়! বাঙালী আজও মনে করে প্রথমত সে হিন্দু, সে মুসলমান, বা সে খ্রিষ্টান ইত্যাদি তারপর সে বাঙালী। বাঙালীর বহু অবদানের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম অবদান হ'লো এই 'নাচ মেরা বুলবুল' সংস্কার! কতকাল এমন চলবে তা জানি না। যেদিন নেতাজিকে ব্রিটিশরা তাদের ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম হিসাবে টারগেট করেছিল সেদিনই ভারতবর্ষের ভাগ্যবিধাতা অলক্ষ্যে কেঁদে উঠেছিল 'সব শেষ' ব'লে। ব্রিটিশের সেই অদৃশ্য সুতোর টান 'নাচ মেরা বুলবুল' এখনও সমানে ব'য়ে চলেছে বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের ধমনীতে, রাজনীতিকদের শিরায় শিরায় এস ওয়াজেদ আলির সেই বিখ্যাত কথার মত "সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে।"
( লেখা ১২ই জুন' ২০১৮ )

No comments:

Post a Comment