Powered By Blogger

Friday, June 9, 2023

খোলা চিঠিঃ মহাবিশ্ব জাগতিককে

প্রিয় মহাবিশ্ববাবু, 

রামকৃষ্ণ মিশনের মতো পিতৃদত্ত নাম পালটে ছদ্মনাম নিয়েছেন আর রেখেছেন মহাবিশ্ব জাগতিক। তা এরপরও মহাবিশ্বের রহস্যময় রকমসকম বোধগম্য হচ্ছে না!? এ এক আশ্চর্য বিষয়।

যাক, তা এই বিশাল অপূর্ব বিশেষ জন্মদিন পালন দেখে গাত্রদাহ হচ্ছে? কেন গাত্রদাহ হচ্ছে? বিশাল ব্যাপার দেখে হিংসা হচ্ছে? কেন হিংসা হচ্ছে? এ তো স্বাভাবিক, অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা কর্মযজ্ঞ। এ এমন কি দেখছেন আপনি? আগামী দিন আসছে দেওঘরে ও বিশ্বজুড়ে ঠাকুরবাড়ির কর্মযজ্ঞের ব্যাপকতা দেখে উৎসবের মেজাজের তীব্রতায় আপনারা ভেসে যাবেন। ঠাকুরের কথা সত্য হ'তে চলেছে মহাবিশ্বদাদা। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, ঠাকুর বলেছেন, একদিন আসছে মানুষ জসিডি স্টেশনে নেবে সেখানেই প্রণাম ক'রে চলে যাবে। জসিডি স্টেশনের আশেপাশেই গড়ে উঠবে বিশাল বিশাল ঠাকুরবাড়ির রেপ্লিকা! সেটা দেখেই দইয়ের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হবে দাদা। সেটা সত্যি হ'তে চলেছে।

আচার্যদেবের এই জন্মদিন তার উজ্জ্বল সঙ্কেত। এত হিংসা? আর থাকতে না পেরে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিতে হ'লো? আপনি ফেসবুকে পোষ্ট দিলেনঃ "একজন ঠাকুরের মায়ের জন্মোৎসব পালন করছেন, আর একজন নিজের !!!"

এর পরেও বলবেন আপনি মহাবিশ্ব জাগতিক একজন ঠাকুরের ভক্ত, সাধক!? ফেসবুকে পোষ্ট ক'রে কোটি কোটি ভক্তের সেন্টিমেন্টে আঘাত করতে ঠাকুর শিখিয়েছিলেন নাকি আপনাদের? ঠাকুরকে যখন বিশ্বগুরু প্রচার ক'রে উৎসব হ'য়েছিল তখন কি ঠাকুর নিজের উৎসব নিজে করেছিল? নাকি ভক্তমন্ডলী করেছিল? আর যদি ভক্তমন্ডলী করেছিল তার ডিসঅ্যাডভান্টেজ যেমন ছিল তেমনি অ্যাডভান্টেজও তেমনি ছিল। আর আপনার পোষ্ট অনুযায়ী একজন কে নিজের জন্মদিন নিজে পালন করছে তাঁর নামটা তো বলুন; সবাই জানুক। রেখেঢেকে কথা বলছেন কেন? বাপের ব্যাটার মতো জামার কলার তুলে বলুন। ওঃ জামা ত পড়েন না, পাঞ্জাবী পড়েন। অবশ্য পাঞ্জাবীরও কলার আছে। পারলে বেশ উঁচু কলারওয়ালা পাঞ্জাবী তৈরী ক'রে পড়বেন। তবে মনে হবে, বাপকা বেটা সহিস কা ঘোড়া কুছ নেহী তো থোড়া থোড়া।

যাই হ'ক, যার জন্মদিন পালন হয়েছে সে কি নিজের জন্মদিন নিজে পালন করেছেন নাকি আমরা কোটি কোটি ঠাকুরের শিষ্য করেছি? আর যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছেন তিনি কে? আরে দাদা, তাঁর নামটা তো বলুন। ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন ক'রে যিনি এতবড় মহান কাজ করছেন তাঁর নামটা প্রকাশ্যে বলতে এত দ্বিধাদ্বন্ধ কেন? লজ্জা? নাকি প্রচারবিমুখতার মহান নিদর্শন? আর যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছেন তিনি কি আপনাকে বলেছেন, তিনি যে ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছে সেটা ফলাও ক'রে ফেসবুকে প্রচার করতে? তাও আবার অন্যের জন্মদিনের সঙ্গে তুলনা টেনে? তা আপনারা তো যিনি ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করছে তাঁরও জন্মদিন পালন করতে পারেন। পারেন নাকি? তা করছেন না কেন? কেউ বাধা দিয়েছেন? নাকি বাধা দিচ্ছেন? আপনারাও তাঁর জন্মদিন পালন করুন, ঠাকুরের মায়ের জন্মদিন পালন করুন, তাঁর পরিবারের সবার জন্মদিন পালন করুন, আপনারও করুন। এটা তো আনন্দের। আমরা তো আনন্দ চাই। চাই নাকি? এই কষ্ট যন্ত্রণায় ভরা জীবনে যেনতেনপ্রকারেণ আনন্দ করুন, আনন্দের রসদ খুঁজে নিন। তবে মাথায় রাখবেন আনন্দ করার মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের মনের মতো হ'য়ে উঠুন। আমাদের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা বলেছেন, "হৈ চৈ করে সব করা ভালো, কিন্তু তাঁর মনের মত হয়ে উঠেছি কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন!! চন্দন গাছের তলায় বাস করি, অথচ গায়ে চন্দনের গন্ধই হল না, চলবে?"

এই হলেন আমাদের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। যিনি প্রতিমুহুর্তে আমাদের নিখুঁত ঠাকুরের মানুষ হ'য়ে ওঠার প্রেরণা দিচ্ছেন, শিক্ষা দিচ্ছেন।

এইযে আমাদের সকলের পরিবারে পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন পালন করি__________আগে খুব একটা এইসব জন্মদিন পালনের খুব একটা চল পরিবারে ছিল না; আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা এইসব জন্মদিন পালন করে, পালন করার চেষ্টা করে, সঙ্গে আরও অনেক কিছু অনুষ্ঠান পালন করার কমবেশি চেষ্টা করে________তা সেইসব জন্মদিন কি আমরা ঠাকুরকে নিয়ে সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে দিয়ে করি? করি না। যদিও বা কেউ করি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমার প্রিয়জন যারা যতই তাদের বলি না কেন ঠাকুরের সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জন্মদিন পালন করতে তথাপি তারা আমার মন রাখতে জন্মদিন উপলক্ষ্যে সৎসঙ্গ নামকা ওয়াস্তে ক'রে পরদিনই কুত্তার ল্যাজের মতো বেঁকে গিয়ে রোল মোগলাই বিরিয়ানি ইত্যাদি ইত্যাদির মাধ্যমে ইয়ংদের নিয়ে গানাবাজানা সহ হৈ হৈ ক'রে জমজমাট জন্মদিন পালন করতে। সেইটাই তাদের কাছে হয় মোক্ষম জন্মদিন পালন আর ঠাকুরের সৎসঙ্গটা হয় ঐ বুড়োবুড়ি সহযোগে চু কিতকিত খেলা। আর সেই বিষাক্ত চু কিতকিত রোগ আপনাদের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে।

তাই মহাবিশ্বদাদা, এবার বুঝতে পেরেছেন আচার্যদেবের কেন প্রয়োজন? আপনি আমি দু'জনেই ঠাকুরের দীক্ষিত কিন্তু আপনার আমার মধ্যে এইযে বোধের তফাৎ, উপলব্ধির তফাৎ, জ্ঞানের তফাৎ, ভালোবাসার তফাৎ, প্রেমের তফাৎ, অভিজ্ঞতার তফাৎ তা ঐ আচার্যদেবের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির কারণেই। এইজন্যেই বলে আচার্যদেবের প্রয়োজনীয়তা। শ্রীশ্রীআচার্যদেব আমাদের বললেন, জন্মদিন বা অন্য কোনও দিনে আনন্দ কর, হৈ চৈ কর, কিন্তু মনে রেখো ঠাকুরের মনের মতো হ'য়ে উঠে হৈ চৈ কর। যেটা নিজে হাতেকলমে ক'রে অন্যকে করতে উৎসাহিত করছেন, উদ্দীপ্ত করছেন। সুশৃঙ্খল এক চোখ ধাঁধানো নীরব জমায়েত। এই যে প্রচন্ড গরমে এত লক্ষ লক্ষ মানুষ অথচ কোনও হৈচৈ নেই, নেই কোনও হুল্লোড়, চেঁচামেচি, বিশৃঙ্খলা! প্রচন্ড গরম উপেক্ষা ক'রে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসছে ঠাকুরের পাদপীঠ তলে শুধুমাত্র জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত তাঁর রাতুল চরণে নিবেদিত প্রাণ একটা ঈশ্বরকোটি মানুষের টানে। এই জন্মদিন পালন করার পিছনে অনেক বড় বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপার আছে যা অল্পমস্তিষ্কের বোঝার বিষয় নয়। অল্পমস্তিষ্কের যারা তারা চিরদিনই সবকিছুর মধ্যে নেগেটিভ ব্যাপার দেখে থাকে কারণ তারা জন্মাবধি নেগেটিভ অরবিটের মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছে তাই তাদের পজিটিভ শক্তি বায়োলজিক্যাল মেকআপের মধ্যেই নেই। তাই তাদের করারও কিচ্ছু নেই। এটা তাদের দুর্ভাগ্য। আর এই দুর্ভাগ্য নিয়েই তারা ইহকাল ত্যাগ করে দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করা সত্ত্বেও। তাই দয়াল ঠাকুর বললেন,
"তুমি যা'ই দেখ না কেন, অন্তরের সহিত সর্ব্বাগ্রে তার ভাল্টুকুই দেখার চেষ্টা কর, আর এই অভ্যাস তুমি মজ্জাগত ক'রে ফেল। তোমার মন যত নির্ম্মল হবে, তোমার চক্ষু তত নির্ম্মল হবে, আর জগৎটা তোমার নিকট নির্ম্মল হ'য়ে ভেসে উঠবে।

তোমার নজর যদি অন্যের কেবল কু-ই দেখে, তবে তুমি কখনই কাউকে ভালবাসতে পারবে না। আর, যে সৎ দেখতে পারে না সে কখনই সৎ হয় না।"----শ্রীশ্রীঠাকুর।
অলমিতি বিস্তারেন।
ইতি,
প্রবি।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী।
( লেখা ২রা জুন'২০২৩ )

No comments:

Post a Comment