Powered By Blogger

Friday, June 9, 2023

প্রবন্ধঃ হে সৎসঙ্গী

হে সৎসঙ্গী! তুমি কি সত্যিই সৎসঙ্গী?

যদি তাই-ই হয় তবে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের 'নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি না করার কথা, সবাইকে ভালোবাসার কথা, বন্ধুর চেয়ে শত্রুর পাশে বেশী ক'রে থাকার কথা' বারবার বলা সত্ত্বেও তা অমান্য করো কেন?
কেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদার বলা 'দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাস্টবিন মন; সেই মনকে পরিস্কার কর' এই কথা বারবার বলা সত্বেও পরিস্কার করো না কেন?
শ্রীশ্রীবিঙ্কিদাদার কাউকে খাটো না করার কথা, জীবন থেকে দূরে সরিয়ে না দেবার কথা, সবাইকে সামনে এগিয়ে দেবার কথা বারবার বলা সত্ত্বেও মন্দিরে মন্দিরে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে একে অপরকে খাটো করার, দূরে সরিয়ে দেওয়ার, সামনে এগোতে না দেবার নোংরা খেলা বন্ধ হয় না কেন?
ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি সদস্যের বলা সবাইকে আপন ক'রে নেওয়ার কথা, সবার গুণের চর্চা করার কথা, সবাইকে বাড়িয়ে তোলার কথা, মিথ্যে মিথ্যে ক'রে হ'লেও প্রশংসা করার কথা সৎসঙ্গীদের রপ্ত হয় না কেন?
কেন এর উলটো চলনে চলি? সবটাই কি বায়োলজিক্যাল ডিফেক্ট? নাকি আত্মপ্রতিষ্ঠার পাগলামি?
যে পুরোনো, বহু পুরোনো তাকেও দেখি যা আর যে নোতুন তাকেও দেখি একই। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আর সংখ্যায় তা নগন্য। আর যে নোতুন দু'দিন যেতে না যেতেই ভালো মানুষের অভিনয় শেষে ভোল পাল্টে সাদা পোশাক আর সাইডে কালো ব্যাগ ঝুলিয়ে আঙ্গুল তুলে নম্রতার বদলে ইতিমধ্যেই শক্ত হ'য়ে কথা বলতে অভ্যস্ত হ'য়ে গেছে। আর, রপ্ত করেছে পুরোনোদের প্রতি অশ্রদ্ধা, অপমান করার মহৎ গুণাবলী। যখন ছিল সে অ-সৎসঙ্গী তখন ছিল ভালো সম্পর্ক, নম্র আর সৎসঙ্গী হওয়ার পরে হ'য়ে গেছে কালো ও শক্ত। এর থেকে ভালো ছিল সৎসঙ্গী না হওয়া। অন্তত নারী-পুরুষ পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরের সম্পর্ক নষ্ট হ;'তো না। ডি পি ওয়ার্ক্সের মাধ্যমে যখন পুরোনোদের কাছে ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদা তখন সারাদিন কাঞ্চনের পিছনে ছুটে চলা কালকের যোগী ভাত কে বলে অন্ন দু'দিনের নোতুন সৎসঙ্গীও কাঞ্চনের ঝঙ্কারে মন্দির দখল ক'রে গরীব নোতুন ও পুরোনো সৎসঙ্গীকে বলছে, এই পোশাক পড়েছো কেন? এই পোশাক পড়া চলবে না, প্রসাদ নিতে আসলে ইষ্টভৃতি করে কিনা জিজ্ঞাসা ক'রে বলছে অর্ঘ্য প্রস্বস্তি দেখাও, ওকে গাইতে দিও না, ওকে বলতে দিও না, অমুক জায়গার সৎসঙ্গে যাচ্ছো কেন? ওখানে ঠাকুরবাড়ির অনুমতি নেই, নেই রেজিস্ট্রেশন! স্বস্ত্যয়নী ও সাধারণ দীক্ষিতদের মধ্যে ডিভিশান ক্রিয়েট ক'রে স্বস্ত্যয়নীদের বড় ভক্তের তকমা লাগিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ও ঠাকুর ভোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ আর স্বস্ত্যয়নীর মধ্যে আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাঃ সৎসঙ্গী! বাঃ! তোমরাই ঠিক বুঝেছো ঠাকুরকে, ঠাকুরের "মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর' বাণীর মর্মার্থকে। এই বাণীর মূল অর্থ হ'লো, সৎসঙ্গে এসে সৎসঙ্গী হ'য়ে চটজলদি বুঝে যাও 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর' আর সেইভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে সহজ সরল বেকুব সৎসঙ্গী লোকবলকে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসা বাড়াও। মাল্লু কামাও। ভাঁড় মে যায় ঠাকুর আর ঠাকুরের বাণী। আর সৎসঙ্গে এসে হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে আর সাপ ব্যাঙের গল্প শুনিয়ে চটজলদি ঠাকুরের সৎসঙ্গ শেষে আড্ডার আসর বসাও।
ডিপি ওয়ার্কসের মাধ্যমে বহু পুরোনো অপমানে জর্জরিত অভিমানী সৎসঙ্গী যখন ফিরে আসে ঘরে তখন তা ফলাও ক'রে ফেসবুকে ছাপাও। ভালো কথা। কিন্তু সে যদি বলে ফিরিয়ে দাও আমার বিগত বছরগুলি তখন কি হারিয়ে যাওয়া দশ, বিশ, পঞ্চাশ বছর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে? তাহ'লে যা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় তা ছিনিয়ে নিই কেন? শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুরবাড়ির পূজনীয় সদস্য-সদস্যারা কি তা করতে বলেন?
পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নির্দেশ, যেখানে ঠাকুরের নাম পৌছোয়নি সেখানে সেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলন করো। বাস্তবে যেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছে বহু আগেই কোনও কোনও ইষ্টপ্রাণ অকপট ভক্তের ঐকান্তিক আগ্রহে ও ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টায়, আনুগত্য, কৃতিসম্বেগ আর ক্লেশসুখপ্রিয়তায় সেখানে সৎসঙ্গের আন্দোলনকে ভেঙ্গে দেওয়ার, নিভিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত সারা গায়ে কাঞ্চনের গন্ধে মোহিত আত্মপ্রতিষ্ঠায় মাতাল সৎসঙ্গীরাই কিছু দীক্ষা লোভী হীনমন্য ঋত্বিকের সহযোগীতায়। কেন? এর বিচার বা প্রতিকার কোথায়?
এরপরও কি বলবো, হ্যাঁ! আমরা ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গী?

No comments:

Post a Comment