Powered By Blogger

Thursday, May 16, 2024

প্রশ্নের উত্তরঃ "বাবা আই = বাবাই"

বিশ্বজিৎ এর বিশ্বরূপ দর্শন ও বিশ্বজয়!! (৫) আর্টিকেলে শ্রীশ্রীবাবাইদাদা সম্পর্কে আমার জানা একটা তথ্য পরিবেষণ করেছিলাম। সেখানে একজন ইষ্টপ্রাণ গুরুভ্রাতা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার সম্পর্কে ঐ রকম তথ্য পরিবেষণের কারণে তার তীব্র আপত্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। আমার জানা বিষয়ে ভুল থাকতেই পারে। কোনও তথ্য সম্পর্কে কারও আপত্তি থাকতেই পারে কিন্তু সেই আপত্তি যেন তথ্য পরিবেশকের প্রতি রাগ, ঘৃণা, তাচ্ছিল্য, অপমানে পর্যবসিত না হয়। আর অবশ্যই যেন আপত্তির পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তিপূর্ণ মতবাদ থাকে। আর আমরা কেন কোনও তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে জানার মনোভাব নিয়ে মত বিনিময় করি না? অহং মত্ততাই বিনাশের কারণ।

যাই হ'ক এখানে প্রথমে আমি ঐ পাঠকের (Debangshu Sharma) মন্তব্যটা তুলে দিলাম। পরে পাঠকের এই মন্তব্যের উত্তরে আমার ঐ তথ্য সম্পর্কে বিশ্লেষণ মূলক যে উত্তর আমি দিয়েছিলাম তা' আমি আমার সমস্ত বন্ধুদের জন্য এখানে তুলে দিলাম।

* Debangshu Sharma. দাদা জয়গুরু জানবেন। পূজ্যপাদ বাবাইদাদার নামের এরকম funny পরিবেষন আগে শুনিনি। পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রী বড়দা বেশির ভাগ কথা বাঙলাতেই বলতেন হঠাৎ বাবা আই এটা তো হিন্দীর মত শোনায়। পৃ বাবাইদাদার জন্ম 1968 সালে এবং পরমদয়াল তখনও নরলীলা করছেন পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা তখন বলছেন বাবা অর্থাৎ পরমদয়াল আই মানে এসেছেন। বাঃ । যুক্তি ছন্নছাড়া। পরমদয়াল বলেছেন যদি আমরা তাঁর কথামতো চলি তবে দশ হাজার বছর তাঁর আসা লাগবে না____এর পর বাবা আই। দাদা এই সৎসঙ্গ পরমদয়ালের সাধের এখানে আমরা তাঁকে মাথায় নিয়ে জীবনবৃদ্ধির সাধনা করি দয়া করে অন্যের কাছে উপহাসাস্পদ করে তুলবেন না।

* Prakash Biswas. আপনিও আমার 'জয়গুরু জানবেন'। আপনি লিখেছেন বাবাইদাদার নামের এরকম funny পরিবেষণ আগে শোনেননি। তার মানে শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছেন আর অনেক কিছুই জানেন। আচ্ছা আপনি শ্রীশ্রীবড়দার খুব ঘনিষ্ট তাই না? বড়দার সঙ্গে সবসময় থাকতেন ঘরে বাইরে? বড়দা কখন কোথায় কি বলতেন সব আপনি বড়দার সঙ্গে থেকে থেকে শুনতেন? আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি শ্রীশ্রীবড়দার ছায়া সঙ্গী ছিলেন। ধরেই নিলাম আপনি বড়দার ছায়া সঙ্গী ছিলেন তাহ'লে এটা নিশ্চয়ই জানেন আপনার কথানুযায়ী “শ্রীশ্রীবড়দা বেশীরভাগ সময়ই বাংলা ভাষায় কথা বলতেন” তাহ'লে আমার জিজ্ঞাস্য----- যেহেতু আপনি ‘বেশীরভাগ’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন----- শ্রীশ্রীবড়দা বেশীরভাগ বাংলা বললেও কমভাগ তাহ'লে অন্য ভাষায় কথা বলতেন, তাই তো? তা সেই বেশীরভাগ বাংলা ছাড়া কমভাগ কোন ভাষায় কথা বলতেন তা আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই? কি তাই তো? নিশ্চয়ই হিন্দিতে বলতেন না; তাই না? তা’হ’লে কি কোনও গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় কমভাগ কথা বলতেন? আর “বড়দা বেশীরভাগ বাংলায় কথা বলতেন'” কথাটা কি মানানসই হ'লো? শ্রীশ্রীবড়দা তো বাঙালি ছিলেন নাকি? তা' বাংলায় কথা বলবেন এতে আর বিতর্ক কোথায়? বেশীরভাগ কেন বলছেন ? সব সময় বাংলায় বলতেন এটা কেন বলছেন না? বাংলায় কথা বলতেন এটা তো understood!? 'বাবা আই' কথাটা হিন্দির মত শুনতে বলেই আর বড়দা বাংলা বলতেন বলেই এই 'বাবা আই' কথাটা বলা তাঁর পক্ষে অসম্ভব; তাই তো? আপনার এই কথাটা তাহ'লে খুব যুক্তিপূর্ণ? আপনার কথামত শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ১৯৬৮তে জন্মেছেন তাহ'লে তখন পর্যন্ত কতবছর শ্রীশ্রীবড়দা দেওঘরে অবস্থান করছেন আর দেওঘর তখন বিহার বর্তমানে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মধ্যে পড়ছে আর ওখানকার ভাষা কি ছিল? আমার যদি ভুল না হয় বাবাইদাদার জন্ম সময় পর্যন্ত বড়দার দেওঘরের বুকে অবস্থানের সময় ২২বছর আর দেওঘরের সরকারী ভাষা ছিল হিন্দি আর ইংরাজি। এই দীর্ঘ ২২বছরে বড়দার মুখ দিয়ে একটা হিন্দি শব্দ (আপনার কথা অনুযায়ী হিন্দি শব্দ, অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষা হ’তে পারে) বেরিয়ে আসা কি খুবই আশ্চর্য্যের? আর বড়দা কি কখনো হিন্দি বলেননি? তাহ’লে আপনার যুক্তি অনুযায়ী ‘কমভাগ’ হিন্দি ভাষা প্রয়োগ না হওয়ার কোনও যুক্তিপূর্ণ কারণ আছে কি?

আপনি লিখেছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদা যখন জন্মেছেন তখনও পরমদয়াল নরলীলা করছেন আর এই সময় শ্রীশ্রীবড়দার বলা 'বাবা আই' অর্থাৎ বাবা এসেছেন কথাটা অযৌক্তিক ও ছন্নছাড়া তাই তো দেবাংশুবাবু? আচ্ছা দেবাংশুবাবু আজ আপনি যে বাবাইদাদাকে দেখছেন সেই বাবাইদাদার সঙ্গে ঠাকুরের কোনও সাদৃশ্য খুঁজে পান? খুব মোটাভাবে বলি ঠাকুরের মুখের সঙ্গে বাবাইদাদার মুখের আশ্চর্য মিল আর কারও মধ্যে খুঁজে পান? আজকের এই আশ্চর্য মুখের মিল কি সেদিন সেই ছোট্ট শিশুর মুখের মধ্যে আর কেউ খুঁজে পেয়েছিল? পেয়েছিল কিনা জানি না। শ্রীশ্রীবড়দা পেয়েছিলেন। আপনি লিখেছেন "পরমদয়াল বলেছেন, যদি আমরা তাঁর কথামতো চলি তবে দশ হাজার বছর তাঁর আসা লাগবে না____এর পর বাবা আই"? এই কথা ঠাকুর কোথায় বলেছেন তা’ আমার জানা নেই। তিনি আর আগামী দশ হাজার বছরের মধ্যে আসবেন না এমন সরাসরি নিজের সম্পর্কে কথা নিজে বলেছেন তা আমার জানা নাই থাকতে পারে। কারণ এত বিশাল তাঁর সাহিত্য ভান্ডার তার কোথাও হয়তো মটকা মেরে পড়ে আছে এই অমোঘ বাণী যা আমার নজরে পড়েনি । না পড়াই স্বাভাবিক। তাই আমি আপনার এই কথার বিরোধিতা করবো না। তবে যেটা আমি জানি, যেটা আমি লিখেছি আমার ঐ লেখায়, সেটা বলি, ঠাকুর বলেছেন, "যা দিয়ে গেলাম আগামী দশ হাজার বছর আর কিছু লাগবে না"। সেটাকে আমরা ঘুরিয়ে অন্তর্নিহিত অর্থ ক’রে নিই যে অর্থাৎ তিনি আর আগামী দশ হাজার বছর আসবেন না। কেন? কারণ কি? এখন ঘোর কলির যুগ চলছে। এই যুগ পরিবর্তন হ'য়ে প্রবেশ করবে আর একটা যুগে অর্থাৎ সত্য যুগে। অর্থাৎ যুগ পরিবর্তনের একটা নীল নকশা চাই। এই যে পরিবর্তন তার সূচনা শুরু হ'য়ে গেছে ঠাকুরের আবির্ভাবের মধ্যে দিয়ে অর্থাৎ ঠাকুরের ব'লে যাওয়া জন্ম বিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞান অর্থাৎ বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার যে বিজ্ঞান সেই বিশেষ জ্ঞানের মধ্যে দিয়ে। এই জন্ম বিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানের যে নীল নকশা ঠাকুর দিয়ে গেছেন এর পরে আর কিছু লাগবে না আগামী দশ হাজার বছর। কিন্তু যেটা লাগবে সেটা হ'ল এই, যে Transitional period-এ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এখান থেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য, এই ঘোর কলি যুগ থেকে সত্য যুগে মানবজাতি তথা গোটা সৃষ্টিকে প্রবেশ করানোর জন্য লাগবে শুধু মহান নেতৃত্ব। আর এই নেতৃত্বটাই দেবেন ঠাকুর স্বয়ং। আর তা’ তাঁর কথামত রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকেই তিনি নেতৃত্ব দেবেন। যেমন তিনি থাকাকালীন শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে সুপ্ত ছিলেন, যেমন এখন আছেন শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে, আগামীতে শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে সুপ্ত থেকে তিনি দেবেন সেই মহান নেতৃত্ব। রেতঃ শরীরে তিনি যে সুপ্ত থাকবেন আর ঠিক সময়েই আত্মপ্রকাশ করবেন তার জন্য চাই উপযুক্ত শ্রেষ্ঠ আধার। আর সেই ভয়ংকর তেজের আধারকেই দেখতে পেয়েছিলেন এ যুগের পরমভক্ত হনূমান ঠাকুরের কুকুর জগন্নাথের সেই চকা আঁখির দৃষ্টির অধিকারী শ্রীশ্রীবড়দা তাঁর তৃতীয় এবং ঠাকুরের চতুর্থ পুরুষ সেই ছোট্ট শিশুর মুখের মধ্যে আর তাই তিনি সেই মুখ দর্শন করেই আনন্দের আতিশয্যে চকিতে বলে ফেলেছিলেন,"বাবা আই" অর্থাৎ বাবা এসেছে।

এই যে ছোট্ট শিশুর মুখের মধ্যে শ্রীশ্রীবড়দা তাঁর প্রিয়পরমের মুখাবয়ব দেখতে পেয়ে আনন্দে ব’লে ফেলেছিলেন ‘বাবা আই’ যা আজও দেওঘরের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ায় আমার এই অকৃত্রিম সহজ সরল লেখার মধ্যে আপনি ছন্নছাড়া যুক্তি দেখতে পেলেন, দেখতে পেলেন Funny পরিবেষণ ও উপহাসের বস্তু কিন্তু দুর্ভাগ্য দেখতে পেলেন না সেই Transitional period- এর Transcendental condition কে। দেখতে পেলেন না ঠাকুরের প্রতি শ্রীশ্রীবড়দার অকৃত্রিম ভালোবাসার তীব্র অনুভূতির বহির্প্রকাশ। দেখতে পেলেন না পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার অন্তহীন আকুলতা, দেখতে পেলেন না স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির নাড়ীর অন্তঃসলিলা টানের তীব্র কম্পন। দেখতে পেলেন না পিতাকে কোনোদিনই না হারানোর আকুল ব্যথা, দেখতে পেলেন না সন্তানের বুকের মধ্যে পিতার জন্য জমে থাকা ভালোবাসার পাহাড়, দেখতে পেলেন না ভগবানের জন্য ভক্তের কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া বিয়োগ ব্যথার প্রেমাশ্রু। ঠাকুরকে বা ঠাকুর সম্পর্কে কোনও কথা বলার সময় সর্বসমক্ষে শ্রীশ্রীবড়দা কোনোদিনই বাবা বলেননি; বলতেন, ঠাকুর আর সেই ঠাকুর সম্পর্কে শ্রীশ্রীবড়দার বোধ কতটা গভীর, কতটা তীব্র, কতটা মর্মবিদারক, কতটা প্রশ্নশূন্য সেটা ঠাকুরের তিরোধানের পর তাঁর রচিত ‘তোমার রঙ্গে হৃদয় আমার রাঙা............” গানটার মধ্যে অনুভূত হয়। সেই গানটা এতটাই মর্মস্পর্শী, এতটাই হৃদয় বিদারক যে এই গানটা যে কেউ গাইতে পারে না, যার তার জন্য নয়। অনুভূতির উচ্চ মার্গে যে পৌছোয়নি তার পক্ষে এই গান গাওয়া সম্ভব নয় আর তাই এই জন্যই এখন আর এই গান সম্ভবত সৎসঙ্গে গাওয়া হয় না। আপনি জানেন কিনা জানি না, ধরে নিচ্ছি হয়তো জানেন হনুমানের রামের বিয়োগ ব্যথার কথা। প্রভু রামই যে শ্রীকৃষ্ণ সেটা ভক্তপ্রবর শ্রীশ্রীহনূমান জানতেন। হনূমানজী বলেছিলেন, “শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদঃ পরমাত্মনি। তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ”। তাই রামের প্রতি তাঁর তীব্র টান শ্রীকৃষ্ণকে বাধ্য করেছিল রাম রূপে দর্শন দানে। হনুমানের সেই মিলনের তীব্র টান, সেই সুরত কে বুঝবে দাদা? আপনি না আমি? তাই সেই টানের আচমকা এক হ্যাঁচকা টানে ছোট্ট শিশুর মুখে আজকের ঠাকুর ভক্ত হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা দেখতে পেয়েছিলেন বাবার মুখাবয়ব!!! আর তাই হঠাৎ চকিতে বলে উঠেছিলেন, “বাবা আই”। এখানে শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে তাৎক্ষণিক ভগ্নাংশ ঘটিত সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি পরিবেশ অনুযায়ী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছিল। তখন সেই সময় মুখের ভঙ্গী কেমন হবে , শরীর কি ভাষায় কথা বলবে, মুখের ভাষায় বা তখন কি হবে , গলার স্বরের মাত্রা কতটা উচ্চ বা নিম্নগ্রামে বাঁধা থাকবে সবটাই তাৎক্ষণিক ঘটনার ঘনঘটার উপর নির্ভর করে। দাদা এমন কোনও পরিস্থিতির কখনো সম্মুখীন হয়েছেন? আচমকা প্রতিক্রিয়া কখনো ভেবে চিনতে হয়না, যুক্তির ধার ধারে না। সেখানেও যারা যুক্তি খোঁজে সেই যুক্তিই ছন্নছাড়া আরও ভালোভাবে বললে ভালো হয় লক্ষ্মীছাড়া।
আচ্ছা দেবাংশুবাবু আপনি কোনওদিন শোনেননি আপনার পরিবারের মধ্যে বা অন্য কোথাও ‘অমুকে একেবারে অমুকের মত দেখতে হয়েছে’? অমুক এসেছে? মানুষের মনের মধ্যে যখন কোনও কারণে চূড়ান্ত আনন্দ হয় তখন সেই আনন্দের অভিব্যক্তি কিভাবে প্রকাশ পাবে তাৎক্ষণিক সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি ও পরিবেশের ঘটনাবলির উপর নির্ভর করে।

আপনি লিখেছেন সৎসঙ্গ পরমদয়ালের সাধের। এখানে আপনারা ঠাকুরকে মাথায় নিয়ে জীবনবৃদ্ধির সাধনা করেন তাই অনুরোধ করেছেন দয়া করে যেন সৎসঙ্গকে অন্যের কাছে উপহাসাস্পদ ক’রে না তুলি। আপনার কাছে বাবাইদাদা সম্পর্কে করা আমার উক্তি উপহাস ব’লে মনে হয়েছে। আপনি বাবাইদাদাকে এত ভালোবাসেন যে আমার এই কথায় আপনার এতটা গাত্রদাহ হ’লো? এতটা উত্তেজিত হ’য়ে পড়লেন যে ‘Funny, ছন্নছাড়া, উপহাস ইত্যাদি নানা বিশেষণ সহযোগে আক্রমণে নেবে পড়লেন? আপনি ইংরেজিতে funny শব্দ ব্যবহার করেছেন। Funny-র অনেক মানে হয়। ‘ছন্নছাড়া , উপহাস’ ইত্যাদির মত Funny-র বদলে বাংলা শব্দ লিখলে আমার বুঝতে সুবিধে হ’তো আপনি কতটা নীচে নেবেছেন উত্তেজিত হ’য়ে। আমি বাবাইদাদা সম্পর্কে কোনও অসম্মানজনক কটূক্তি করেছিলাম কি যে পুরো লেখার মধ্যে কোনও পজিটিভ কিছুই পেলেন না, পেলেন একেবারে তীব্র নেগেটিভ? আর গায়ের ঝাল মিটিয়ে নিলেন মন ভরে। শ্রীশ্রীঠাকু্র, শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীবাবাইদাদার জন্য আপনার প্রেম এত গভীর , এত তীব্র , ঠাকুরকে মাথায় নিয়ে সৎনামের পাল মাথায় তুলে দিয়ে সৎসঙ্গের ছত্রছায়ায় জীবনবৃদ্ধির সাধনা এতটাই গতিময় হ’য়ে উঠেছে যে অনুভূতি ও উপলব্ধির উচ্চ চূড়ায় ব’সে নিম্নের সব কিছু শশ্মান ব’লে মনে হচ্ছে , বোধ হচ্ছে সবেতেই ঘোর কালো অন্ধকার। হ্যাটস অফ আপনাকে জীবনবৃদ্ধির সাধকপুরুষ! প্রিয়জনের প্রিয়র বর্ণনা ও প্রশংসায় যার গাত্রদাহ হয় সেখানে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগে প্রিয়কে ভালোবাসার নয়তো প্রিয় সাধনার সম্মন্ধে।
শেষ।
( লেখা ১৭ইমে, ২০১৭)

বিচিত্রা ২

ডিম খাচ্ছো খাও, পেট কাটতে কেন যাও!?
বাঁচতে যদি চাও, বাঁচিয়ে রেখে খাও।।
যার দেখানো পথে শুরু হ'ল পথ চলা
তার পিঠেই মারো ছুরি, ধরো টিপে গলা!?
দিনের শেষে যখন আঁধার নামবে দু'চোখে
দেখবে তুমি পড়ে আছো ঘরের এককোণে
নড়া নেই চড়া নেই, নেই চলা, নেই বলা 
একা পচা গলা যেন একটা মাংস পিন্ডের দলা।
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা আর ইষ্টস্বার্থরক্ষা
নয় যার তার কর্ম, একে তাকে ধোঁকা দিয়ে
ক'রো না ইষ্টের নামে নক্কা ছক্কা!!
হিংসা যদি তুমি না ছাড়তে পারো
তবে বন্ধু "হিংসাকে হিংসা করো"।।
প্রেম প্রেমকে ডেকে আনে যেমন
হিংসা হিংসাকে ডাকে তেমন।
তাই গুরুভাই সাবধান!
ইষ্টপ্রেমে দু'হাত তুলে হও মাতাল!
রসাতলে যায় যাক চারপাশ, যাক পাতাল!!
প্রেমে গভীরতা নেই, বোধ জাগে কি?
তাহ'লে কি হ'লো?
তাই মুখে রাধা রাধা বলো।
All react

Tuesday, May 14, 2024

বিচিত্রা ১

"যদি সাধনায় উন্নতি লাভ করতে চাও,
তবে কপটতা ত্যাগ কর"।-----
শ্রীশ্রীঠাকুর।

"প্রিয় বিতরণ করে যেইজন
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর"।-----শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

"কপটতার ধার ধারী না,
আত্মপ্রতিষ্ঠা আর আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠাই
আমার জীবনের লক্ষ্য হউক।"------ইষ্টপ্রাণতার উপাসক।

"সংহতিতে ভাঙন ধরাও,
লন্ডভন্ড ক'রে দাও,
ছেদক ছড়িয়ে দাও,
ইষ্টকে আয়ের উপকরণ ক'রে নাও
আর লুটেপুটে খাও।"------জীবনবৃদ্ধি সাধনার সাধক।

তোমার দেখানো পথেই চলবো
তোমার বুকে লাথি মেরে।
বাঃ! বন্ধু বাঃ!!
বন্ধু! পুরুরা আজও আছে;
কিন্তু আলেকজান্ডাররা আজ আর নেই।
সত্যকে স্বীকার করার সৎ সাহস নাই
অথচ ইষ্টপ্রতিষ্ঠার ডঙ্কা বাজায়!?
মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা!?
বাহবাঃ! বাহবাঃ!! আহা কি মজা!!!
কপট বাপের আকাট পোলা!
চোরের মায়ের বড় গলা!!
ধার ক'রে চলবো
আর রাজার হালে থাকবো!!
চেহারায় দারোগা আর চরিত্রে রোগা!!
অনিষ্টের বর্ম পড়ে ইষ্টের নিশান উড়ায়!
সত্যের মুখে কালি মাখিয়ে মিথ্যার মিশন ছড়ায়!!
মনকে ক'রে নিয়ে সাথী
বিবেকের বুকে মারো ক'ষে লাথি!
দয়াল একপাশে অন্যপাশে ভয়াল!
অমৃতের পুত্র আমি জেনো বিষ কয়াল!!
পৃথিবীর যেখানে শেষ সেখানে 'সৎসঙ্গ' শুরু।
ঠাকুরের বলাগুলি বলার জন্যে,
করার জন্যে নয় গুরু!?
ঠাকুর আমার আয়ের উপকরণ;
তাই ঠাকুর আমার দারু।
দারুর নেশায় মত্ত আমি
ধার ধারি না কারু।
পুরোহিতের মন্ত্রঃ ওঁ প3 নমঃ!
প3=প্রণাম, প্রণামী, প্রসাদ!!
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা আর ইষ্টস্বার্থরক্ষা?
ভাই গুরু; লোহে গরম হ্যায়, 
লাগা দো হাতোড়া!!

( লেখা ১৫ই মে, ২০১৭)










































All reactions

Monday, May 13, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে তৈরী মিম ও সৎসঙ্গীরা।

 সম্প্রতি একটা পোষ্ট ভীষণভাবে ভাইরাল হ'য়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংগীতশিল্পী লীর ( পুরো নাম মনে নেই)-র গানের অনুষ্ঠান মঞ্চে অপ্রকৃতিস্থ নাচের ভংগীতে প্রবেশের দৃশ্যের সঙ্গে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে মিম বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।


সোশাল মিডিয়ায় মমতার ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করা নিয়ে পোষ্টদাতার বিরুদ্ধে নোটিস জারি করলো কলকাতা পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও সোশাল মিডিয়ায় ঐ একই ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেখা গেল। গায়ক লীর ( পুরো নাম মনে পড়ছে না) গানের অনুষ্ঠান মঞ্চে এই অদ্ভুত এক  ভঙ্গিমায় প্রবেশের দৃশ্য উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। সেটাকে নিয়ে মিম বানানো হয়েছে। এর আগে আরও অনেককে নিয়ে এই একই নাচের ভঙ্গিতে পোষ্ট মুখ পালটে পালটে দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা আধুনিক সভ্যতার অঙ্গ। ব্যঙ্গ ক'রে কথা বলা, ছবি আঁকা ইত্যাদি সব উর্ব্বর মস্তিষ্কের প্রোডাক্ট। এই সংস্কৃতি ছোটোলোকদের জন্য নয়, ছোটলোকেরা, মূর্খেরা এর মর্মার্থ বুঝবে না। এইসব উচ্চমার্গের জ্ঞানী, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপার।
আর, উচ্চমার্গের ব্যাপার উচ্চমার্গে অবস্থানকারী কোনও কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তির গায়ে বুমেরাং হ'য়ে যখন ফিরে আসে তখন তাদের ইজ্জতে লাগে। আর তখনি 'টেক অ্যাকশান' ব'লে রেড অ্যালার্ট জারী হ'য়ে যায়। তার আগে বা পরে কোনও সম্মানীয় বিখ্যাত জনপ্রিয় ব্যাক্তিদের নিয়ে কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরী ক'রে কুৎসা, নিন্দা, চরিত্র হনন হ'লে প্রশাসন সক্রিয় হওয়া দূরের কথা ঐ ব্যাপারে নাক গলায় না, তখন সেটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার, শিল্পের ব্যাপার, উচ্চমার্গের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ব্যাপার।

এর আগে একবার প্রয়াত প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ আর প্রখ্যাত রেডিও জকি, অভিনেতা এবং উপস্থাপক মীরকে নিয়ে এরকম একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ আহত হয়েছিলেন তাঁর দূর্বলতাকে নিয়ে ক্যারিকেচার করার জন্য। কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যক্তিগত আঘাত লাগা অনেকের পছন্দ হয়নি, তারা মীরের পক্ষ অবলম্বন করেছিল।

কারও ব্যক্তিগতভাবে আঘাত লাগতেই পারে, সে এর জন্য মানসিক ব্যালান্স হারাতেই পারে কিন্তু যার জন্যে সে আঘাত পেল বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হ'লন ভিতরে ভিতরে সে ব্যাপারে কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরিকারীর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোনও হেলদোল। সে সৃষ্টির নেশায় মশগুল। তা সে সৃষ্টি বা অনাসৃষ্টি যাই-ই হ'ক।

এই সমস্ত উচ্চমার্গের শিল্পকলা যেমন মিম, ক্যারিকেচার, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র এগুলি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটিদের মুখের আদল, বিশেষ কোনো লক্ষ্যনীয় অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে ক্যারিকেচারের মাধ্যমে যে সৃষ্টি হয় তা নিছক নির্মল হাসির উদ্রেক করার জন্য করা হ'য়ে থাকে। এখন এর উন্নত রূপ মিম। এরকম কার্টুন আমরা আগে প্রতিটি সংবাদপত্রে আগে দেখতে পেতাম। চন্ডী লাহিড়ী, কুট্টি ইত্যাদি ব্যক্তিত্বদের কার্টুন আমরা দেখেছি। যেমন, একজন মোটা ও অন্যজন মুটকি গায়কগায়িকার কার্টুন বানিয়ে তা'তে ক্যাপশান ছিল "গান ধরেছে মোটা, তান ধরেছে মুটি, কে গাইছে, কেমন গাইছে? গাইছে মোটামুটি" এরকম বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মজার কার্টুন দেখেছি সেই কুট্টি নাকি চন্ডীলাহিড়ীর কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র তা আজ আর মনে নেই। আর একটা ছিল, ঘোড়ার গাড়ি চড়ে আসা যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সময় গাড়োয়ানের সেই বিস্ময়কর মজার হাসি ও আনন্দের ব্যাংগত্মক উক্তি, " ইশ-স-স-স আস্তে আস্তে কন, ঘোড়ায় শুনবো আর হাসবো। আস্তে কন, আস্তে কন দাদা!" 
যাই হ'ক, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার, মিম মানুষের নিছক মজার বিষয়, হাসির বিষয় হ'লেও এর আড়ালে যে নিষ্ঠূর মানসিক সফিস্টিকেটেড যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে সেটা আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বোঝা সম্ভব নয়। আবার অনেকে হয়তো এতে যন্ত্রণা পান না, আনন্দ পান। এই পাওয়া না-পাওয়া, সহ্য করা বা না-করতে পারা কিংবা এই মাধ্যমকে নিজের ফেভারে কাজে লাগানো ইত্যাদি মানসিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। আর নেগেটিভ ভাবে হ'লেও এই শিল্পকলা জনপ্রিয়তার প্রতিফলনে কাজ করে।

যাই হ'ক মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি কে কিভাবে এই কার্টুন কাণ্ড বা মিমকে গ্রহণ করবেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সোশাল মিডিয়ায় মমতাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেখে নোটিস জারি কলকাতা পুলিশের এটাও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। কারও ভাবমূর্তি, কারও চেহারা নিয়ে যদি মজা করা স্বাধীনতা হয় তাহ'লে রাষ্ট্রপ্রধানের ভাবমূর্তি নিয়ে, চেহারা নিয়ে, চরিত্র নিয়ে মজা মস্করা করা শিল্পের নামে সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এটাও তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। আবার প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজীর পোষ্টাদাতাকে প্রশংসা করা সেটাও তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁর উচ্চ মানসিকতার ব্যাপার বা সহ্য শক্তির ব্যাপার কিংবা এই ধরণের পোষ্টকে প্রশ্রয় দানের ব্যাপার বা রাজনৈতিক ফয়দা লাভে সঠিক বা বেঠিক সিদ্ধান্ত যে কোনও একটা হ'তে পারে আর তা একান্তই ব্যক্তিগত।

এখন প্রশ্ন, পোস্ট ঘিরে কেন অতি সক্রিয় কলকাতা পুলিশ? কেন নীরব মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন সরব প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ভিডিওটি দেখে অনেকেই খুবই আনন্দিত এবং একই সঙ্গে দুঃখিত।

যাই হ'ক, কিছুদিন আগে The greatest wonder, greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়েও এই নাচের ভিডিওর ওপর মিম করা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীদের পক্ষ থেকে বা 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও প্রতিবাদ আসেনি। যদিও হিন্দু ভগবান বা ঈশ্বরের ওপর বা কোনও ধর্ম গুরুর ওপর কুতসা হ'লে কোনও প্রতিবাদ দেখা যায় না হিন্দুদের পক্ষ থেকে। হয়তো একটু বসন্তের হাওয়ার মত মৃদু নড়ে উঠে আবার স্থির হ'য়ে যায়। এটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিচয় বলা হ'য়ে থাকে। আবার বিভিন্ন ইউটীউবের ভিডিওয় দেখা যায় এই হিন্দুরাই আবার হিন্দু ধর্মগুরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রচন্ড উগ্রতার সঙ্গে বিরোধীতায় সামিল। তবে সেখানেও সৎসঙ্গীরাও প্রচন্ড মাত্রায় সহনশীল। তবে এ সহনশীলতা অনন্ত, অসীম যা আবার অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিপদের কারণ হ'য়ে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে রসুলের ওপর কটুক্তি রসুল ভক্তেরা সহ্য করতে পারে না। এটা রসুলের প্রতি, তাদের প্রিয়পরমের প্রতি ভক্তির পরিচয়, ভালোবাসার পরিচয়, প্রেমের পরিচয়। রসুলকে নিয়ে কোনরকম কটু কথা, অসম্মানজনক, অশ্রদ্ধাজনক কোনওরকম উক্তি তারা শুনতে রাজী নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কখনও কখনও এই যে তীব্র ভক্তি, রসুলকে নিয়ে কখনও কখনও এই তীব্র ভক্তি, তীব্র অসহিষ্ণুতা ভয়ের ও ক্ষতির কারণ হ'য়ে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত তীব্র সহিষ্ণুতা ও তীব্র অসহিষ্ণুতা দু'টোই ঈশ্বর বা ভগবান বা পুরুষোত্তমের প্রতি অপমান ও দুঃখের বিষয়।
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও। সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। বীর হও, সাহসী হও কিন্তু তাই ব'লে হিংস্র হ'য়ে বাঘ, ভাল্লুক সেজে ব'সো না। তেজ মানে ক্রোধ নয়কো, বরং বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা। অন্যায় ক'রো না, কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দিও না। নিজের প্রতি অন্যায়কে সহ্য কর, কিন্তু অন্যের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ ক'রো" ইত্যাদি নানাভাবে তিনি মূল কথা ব'লে গেছেন। 

কিন্তু এই যে তিনি প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বারবার ব'লে গেছেন সেই ভালোবাসার কথা, প্রেমের কথার মধ্যে তিনি প্রতিবাদের কথাও ব'লে গেছেন। ব'লে গেছেন বিভিন্ন রকম ভাবে, ছড়ার মাধ্যমে, কথোপকথনের মাধ্যমে ব'লে গেছেন। সেই মূল কথার মধ্যে তিনি এও বলে গেছেন প্রেম ভালোবাসা যদি থাকে একটা প্রতিবাদও তো থাকবে। তিনি বলছেন যে বিদ্রোহ ভালো না, বিপ্লব ভালো, অমৃতবর্ষী বিপ্লব, বাঁচা ও বাড়ার বিপ্লব, ভালোবাসার বিপ্লব, প্রেমের বিপ্লব, তো সেই প্রতিবাদ মিষ্টি ভাবে হ'তে পারে, দৃঢ়তার সঙ্গে, বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার সঙ্গে যেটাকে  মানে তেজকে অনেকে ক্রোধ মনে করে, তা নয়, তেজ আর ক্রোধ এক নয়, বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার কথা ঠাকুর যে বললেন, সেই বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার সঙ্গে, যারা ঠাকুরকে নিয়ে মিম তৈরী করেছে, ওরকম একটা নাচের ভঙ্গিতে যে মঞ্চে প্রবেশ করছে তাঁর শরীরের মধ্যে বিশ্বব্রহ্মান্ডের যিনি মালিক, সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর যিনি তাঁকে যিনি নাচ করছেন তাঁর শরীরের সংগে সেঁটে দিয়ে ম্যাচ খাইয়ে, ঠাকুরের মুখাব্যব তার মুখের মধ্যে বসিয়ে দিয়ে মিম তৈরী করা হচ্ছে। সেটার বিরুদ্ধে মিষ্টি ভাবে হলেও বলা যেতে পারে, আমার ভালো লাগছে না, আমার পছন্দ হয়নি এটা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে, গাম্ভীর্যের সঙ্গে এই মিষ্টি প্রতিবাদটুকু করা যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই যে মূল কথা বলে গেছেন, এই মূল কথার মধ্যে যে প্রেম, ভালোবাসা তার সঙ্গে বারবার বলেছেন এই যে হিংসা করো না, হিংসাকে হিংসা করো, সেই হিংসা করার মধ্যে প্রেম থাকে, ভালোবাসা থাকে, দৃঢ় মজবুত চরিত্র থাকে, একটা প্রতিবাদী কন্ঠ থাকে, একটা ভয়ংকর ভালোবাসার একটা তীব্র বহির্প্রকাশ থাকে, যে বহির্প্রকাশের মধ্যে তারও বাঁচাবাড়ার কথা থাকে, তুমিও বাঁচো, আমিও বাঁচি। আমরাও বাঁচি, তুমিও বাঁচো কিন্তু তোমার স্বভাব, তোমার কথা বলা, তোমার চরিত্র, তোমার অপমান, অশ্রদ্ধা করার অভিসন্ধি তা বন্ধ করো। এ কথাও বলা যেতে পারে মিষ্টি বলিষ্ঠ ভাবে কোনরকম শারীরিক বা মানসিক আঘাত না করেও। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই কথার প্রতিফলনও দেখা যায় না সৎসঙ্গী বা অন্য কারও মধ্যে।
অতএব হয় ক্যারিকেচার, কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র বা মিম ইত্যাদির মাধ্যমে এই আনন্দ, মজা বা দুঃখ, যন্ত্রণা উভয়ই মেনে নাও নতুবা উন্নতমানের শিল্পসৃষ্টির মাধ্যমে নিছক আনন্দ, মজা পাওয়ার নামে কিংবা নির্মল হাসির উদ্রেক করার জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটিদের মুখের আদল, বিশেষ কোনো লক্ষ্যনীয় অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে কার্টূন বা ব্যাঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরীর মাধ্যমে যে যন্ত্রণাদায়ক সৃষ্টি হয় তা বন্ধ হ'ক। নতুবা সব সহ্য হ'ক। সব সহ্য হ'ক। মানে, ভাঁড় মে যায় অন্যের দুঃখ, যন্ত্রণা, আঘাত। নিপাত যাক আনন্দ ও মজা লাভের বিরোধীরা।

তাই সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর!!! ঐ যে পুরুষোত্তম ঠাকুর রামকৃষ্ণ ব'লে গেছেন বাংলা বর্ণমালায় তিনটে বর্ণ আছে। ঐ তিনটে শ, ষ ও স-এর মূল প্রকৃত অর্থ সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। আসুন আমরাও সহ্য করি।

Sunday, May 12, 2024

প্রবি সমাচার ১৩

"হুগলির দাউদ ইব্রাহিম' হুব্বা শ্যামলের জীবন এবার পর্দায় নিয়ে আসছেন ব্রাত্য বসু! গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের ভূমিকায় অভিনয় করতে চলেছেন বাংলাদেশের অভিনেতা মোশারফ করিম।"
এইটা সংবাদপত্রের হেডিং, আমার নয়।
খবরটা কি সত্যি!? হুব্বা শ্যামলরাও তাহ'লে চলচিত্রের বিষয় হ'তে পারে!? হয়তো পারে। ব্রাত্য বসুর মতন স্বনামধন্য নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা যখন হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছেন তাহ'লে তখন নিশ্চয়ই হুব্বা শ্যামলের মধ্যে কিছু আছে তা নাহ'লে হুব্বাকে নিয়ে কেউ ভাবতে যাবে কেন তাও আবার ব্রাত্য বসুর মত সেন্সেটিভ শিল্পী মানুষ, মন্ত্রী মানুষ। ব্রাত্য বসু তো আর হুব্বা শ্যামলের মতো হুব্বা নয়। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা (?) অভিনেতা ব'লে কথা ব্রাত্য বসু! ব্রাত্য বসু তো আর ব্রাত্য নন সমাজের কাছে।
যাই হ'ক ব্রাত্য বসুর সুবিধার জন্য জানিয়ে রাখি এই হুগলিতে অনেক ডনের আবির্ভাব ঘটেছে হুব্বা শ্যামলের আগে এবং তারা তাদের সময়ের সেরা গ্যাংস্টার। সবার নাম এই মুহূর্তে মনে নেই। অনেকদিন এইসব খবরের কোনও চর্চা নেই টিভি রেডিওতে বা মানুষের মুখে মুখে। হঠাৎ ব্রাত্য বসুর দৌলতে এদের মতো মানুষদের চর্চা আবার সামনের সারিতে চলে এলো! তাই যে কটা নাম এইমুহুর্তে মনে পড়ছে ব্রাত্য বসুর জন্য জানিয়ে রাখি। যদি শিল্প সৃষ্টির কোনও কাজে লাগে। হুব্বা শ্যামলের জীবনের সঙ্গে জড়িত বিশেষ কোনও সিচুয়েশনের জন্য কাজে লাগে।
প্রথমে বলি, কোন্নগড়ে হুব্বা শ্যামলের আগে যে ত্রাস ছিল সে টারজান নামে ছিল খ্যাত! কোন্নগড়ের আর এক প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ক্ষমতাধর মানুষের নাম রমেশ! কোন্নগড়ের আগের স্টেশন হিন্দমোটরে ছিল নব্বই দশকের ত্রাস নির্মল! এই নির্মলের প্রতিপক্ষ আর এক ভয়াবহ ভয় ছিল নারান সাহা। হিন্দমোটরের আগের ষ্টেশন উত্তরপাড়া। সেই উত্তরপাড়ার গড ফাদার ছিল নিমাই নাগ! এমনিভাবে উঠে আসবে একের পর নাম হুগলির ইতিহাসের পাতা থেকে। ব্রাত্য বসুর পক্ষে রসদের অভাব হবে না। শুধু অনুরোধ রইলো তাদের নিয়েও আগামীতে ছবি তৈরি করুন পরিচালক ব্রাত্য বসু। এদের জীবনেও অনেক নাটকীয় ওঠাপড়া আছে। আছে অনেক সুখ দুঃখের গল্প এবং তাদের কারও কারও জীবনেও আছে মূল্যবোধের অনালোকিত ছোঁয়া!!!!
আর এছাড়া টেলিভিশন মিডিয়ার কাছে অনুরোধ মনে হয় এবিপি আনন্দই হবে, আপনাদের সান্ধ্যকালীন যে আলোচনার আসর বসে সেই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনেদের মধ্যে একদিনের অনুষ্ঠানে ব্রাত্য বসুও ছিলেন। সেদিনের সিপিএমের ৩৪বছরের রাজত্বের অবসানের জন্য সান্ধ্য আলোচনা সভায় নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ব্রাত্য বসুর (সেদিন কোনও দলের নেতার স্বীকৃতি ছিল না তার) হৃদয় নিংড়ানো অপূর্ব দরদ উত্তোলিত অত্যন্ত স্পর্শকাতর বক্তব্য যদি সেই অনুষ্ঠান আয়োজক আবার তুলে ধরেন অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি সেই বক্তব্য লিখে রেখেছিলাম কিন্তু আজ সেই লেখা কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না প্রয়োজনের সময়! সেই ভাষণ শুনে অত্যন্ত আবেগপ্রবন হ'য়ে পড়েছিলাম। খুব ইচ্ছা হয়েছিল সেদিন ব্রাত্য বসুকে জড়িয়ে ধরার, তার স্পর্শ পাবার। কিন্তু তা আর হ'য়ে ওঠেনি, হ'য়ে ওঠেনি ইচ্ছাপূরণ। যদি কেউ পারেন প্লিজ আমায় দেখাবেন একবার অন্তত একবার! আমি মিলিয়ে দেখে নিতে চাই সেদিনের সেই আলোচনার টেবিলের খোলামেলা সহজ সরল সৎ আদর্শ প্রাণ ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আজকের তৃণমূল প্রার্থী ও নেতা-অভিনেতা পরিচালক ব্রাত্য বসুর সঙ্গে!!!!!
কিন্তু আজ মনে হয় ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আর এই দেখা হওয়া যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনি সম্ভব নয় হুগলী জেলার আরও নামী দামী গ্যাংস্টারদের নাম মনে রাখা। একটু কষ্ট করলেই নাম মনে এসে যাবে যদিও কিন্তু এই যাদের নাম আমি এখানে দিলাম তাদের প্রতি একটু ব্রাত্য বাবু সুবিচার করবেন এই অনুরোধ রইলো।
( লেখা ১৩ই মে, ২০২১ )

কবিতাঃ তুমি প্রভু, তুমি মহান।

আপনারে নেতা বলে নেতা সে নয়
লোকে যারে নেতা বলে নেতা সে হয়।
নেতা বলে আমি নাতা দ্যাখ আমারে চেয়ে
লোকে বলে চিমসা পেটে জমেছে চর্বি
আমাপা খেয়ে খেয়ে।
নেতা বলে আমারে দেখে লাগে না তোর ভয়!?
যাক ভোট পাকাবো ঘোট দেখবি ক্ষয় কারে কয়।
লোকে বলে দ্যাবতা তুমি গোর লাগি পায়
ভুল যদি কিছু ব'লে থাকি ক্ষ্যামা তাই চায়।
আজ আমি রাজা দিব ভোট তোমারে
কাল তুমি হবে রাজা তখন কে চেনে কারে?
জিতলেও তুমি নেতা হারলেও তুমি
নেতায় নেতায় নেতাতুতো ভাই
তলেতে তলেতে যোগ তব পদ চুমি।
আঁটি হ'য়ে রবো পড়ে আমে দুধে যাবে মিলে
নেতায় নেতায় নেশাতে ডুবে আমারে খাবে গিলে।
তাই বলি নেতা তোমায় শতকোটি পেন্নাম
আভুমি সালাম তোমায় তুমি প্রভু তুমি মহান।
( লেখা ১৩ই মে। ২০২২ )

Thursday, May 9, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে জীবন্ত ঈশ্বর তা প্রমাণ করতে শাস্ত্রের দ্বারস্থ হ'তে হবে কেন? তাঁর প্রশান্ত মহাসাগরের মত বিশাল অভূতপূর্ব সাহিত্য ভান্ডার কি যথেষ্ট নয় তিনি কে? শাস্ত্র অধ্যয়ন করার চেয়ে তাঁর বিশাল সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করলে কি প্রকৃত শিষ্য হওয়া যায় না? প্রায় সময়ই প্রায় সবাইকে দেখি সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের ঠাকুরত্ব বা ঈশ্বরত্ব তুলে ধরে তাঁদের বক্তৃতায়, লেখায়। তার মানে দাঁড়ালো ঐ শ্লোক যদি স্বীকৃতি দেয় তিনি ঈশ্বর তবে তিনি ঈশ্বর নতুবা তাঁর ২৪ হাজার বাণী ও হাজারো বিষয়ের ওপর কথোপকথন সমৃদ্ধ যে বিশাল অভূতপূর্ব ব্যাখা পূর্বক সাহিত্য সেই সাহিত্যের, সেই আলোচনার, সেই ব্যাখ্যার কোনও মূল্য নেই। অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের মানব জীবনের জন্য দীর্ঘ ৮০বছরের অভূতপূর্ব রহস্যময় জীবনের অবদানের কোনও মূল্য নেই। ইদানীং প্রায় সবাইকে দেখি তাঁদের বক্তৃতায়, লেখায় বেদ, পুরাণ, মহাভারত ইত্যাদি থেকে শ্লোক উদ্ধৃত ক'রে ঠাকুর বিরোধী সমালোচকদের কাছে, নিন্দুকদের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ঈশ্বর, ভগবান। তিনি ঈশ্বর কি ঈশ্বর নন তার প্রমাণের কি দরকার? যারা বিকৃত প্রশ্ন ক'রে ক'রে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক জুড়ে তাদের বালখিল্য অসাড় প্রশ্ন, তার উত্তরে শাস্ত্রের শ্লোক, মহাভারত গ্রন্থের কোন খন্ডে কি বলা আছে, কোন মনিষী কি বলেছেন সেসব তুলে ধ'রে প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাবার কোনও দরকার নেই। প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড দেখে বোঝা যায় তারা আই কিউ লেবেলের কোন স্তরে বিচরণ করে। তাই বালখিল্য প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের ও বটতলার ইউটিউবারের উত্তর দেওয়ার অর্থ নিজেকে ওদের লেবেলে নাবিয়ে আনা ও শ্রীশ্রীঠাকুরকে অপমান করা। আর যদি প্রশ্নের পিছনে যুক্তি থাকে তাহ'লে নিশ্চয়ই উত্তর দিন। আর, তিনি ঈশ্বর কিনা তা প্রমাণ দিতে হবে তা ঠাকু্র তো নিজেই চাননি। তার চেয়ে তিনি যা যা ব'লে গেছেন সেই বলে যাওয়া কথাগুলির ওপর অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা হ'ক, চর্চা হ'ক, গবেষণা হ'ক, তলিয়ে দেখা হ'ক করার বা আচরণের ভিতর দিয়ে, এইটাই তো ছিল তাঁর চাওয়া, তাই নয় কি? তিনি যা বলে গেলেন সেই বলে যাওয়া কথাগুলিকে যখন আমি জানলাম তখন সেই জানাগুলিকে নিয়ে
Exmine ও experiment-এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া হ'ক, তারপর যে ফল বেরিয়ে আসবে সেটাই হবে আমার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি, আর তাই-ই জ্ঞান। আর সেই জ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়েই তো দুনিয়াকে রুল করবো, তাই নয় কি? জ্ঞানই তো শক্তি। জ্ঞানই তো সেই ডানা যার সাহায্যে আমি স্বর্গ ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে সেখানে পৌঁছে যাবো এবং স্বর্গ ব'লে ও রামরাজ্য বলে যদি কিছু থাকে বা ছিল সেই স্বর্গে যাবার জন্য, সেই রামরাজ্য পুনরায় গড়ে তোলার জন্য তার প্রাণপাত করবো। তাই নয়কি? ঈশ্বরকে একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ বলে। আর বিশ্বের কোনও পন্ডিত বা মহাপন্ডিতকে বলে না। তাঁরা যে কোনও একটা দিককে পরিপূরণ করতে পারে কিন্তু সবটা পারে না। জীবন্ত ঈশ্বরকে অন্তর্যামী বলা হয়, কিন্তু অন্তর্যামী আখ্যা তাঁর মহিমাকে, তাঁর বিশালত্বকে খাটো করে, ছোটো ক'রে দেখা হয়। অন্তর্যামী একটু চেষ্টা করলেই যে কেউ হ'তে পারে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মায়েরা তাঁদের সন্তানের ক্ষেত্রে স্বভাবগত ভাবেই অন্তর্যামী। কারণ সে ১০মাস তার শরীরের মধ্যেই তাকে লালনপালন করেছে তারপর জন্মের পর নিজের হাতে তাকে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ ক'রে ক'রে বড় ক'রে তুলেছে দীর্ঘ কষ্টকর পথ পাড়ি দিয়ে। তাই সেই মা স্বভাবগতভাবেই স্বভাবসিদ্ধ অন্তর্যামী। এরকম যে কেউ একটু চেষ্টা করলেই যে কোনও বিষয়ে অব্জার্ভেশনের মধ্যে দিয়ে অন্তর্যামী হ'তে পারে। কিন্তু ইচ্ছে করলেও, শত চেষ্টা করলেও, হাজারবার পন্ডিত মহাপন্ডিত হ'য়ে জন্মালেও তাঁরা সর্ব্বজ্ঞ হ'তে পারবে না। ঈশ্বর অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর এক ও একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ, এ ছাড়া আর কেউ সর্ব্বজ্ঞ নয়। এইযে সর্ব্বজ্ঞত্ব বীজের অধিকারী যিনি তাঁকে Fullfiller the best অর্থাৎ সর্ব্বোত্তম পরিপূরণকারী আর, অন্তর্যামীদের, মহাত্মাদের Fullfiller the great অর্থাৎ মহাপরিপূরণকারী বলা হয়। তাই যিনি ঈশ্বর, সর্ব্বজ্ঞ, যিনি পরমাত্মা তাঁর বিচার করবেন, তাঁর স্বীকৃতি দেবেন যিনি অন্তর্যামী, মহাত্মা? যিনি Fullfiller the great তিনি বিচার করবেন Fullfiller the best-এর!? সন্তান বিচার করবেন পিতার? যারা জীবাত্মা, যারা অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষায় কটু কথা, নোংরা কথা বলছে তারা বিচার করবে পুরুষোত্তম পরমপিতার? পিতার পিতৃত্ব যেমন পিতার পরিচয় ঠিক তেমনি ঠাকুরের ঠাকুরত্ব বা ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব ঠাকুরের বা ঈশ্বরের পরিচয়। যেমন শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের সমগ্র জীবনটাই তাঁর বাণী। শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর এরা সবাই হলেন জীবন্ত চলমান শাস্ত্র। তাঁরা জীবন্ত ঈশ্বর ও জীবন্ত বেদ। এই বিষয়টা বুঝতে হ'লে Examine ও Experiment-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে মানুষকে।
Exmine ও experiment-এর মধ্যে তফাৎ কি?"examine বলতে বোঝায় কোনো কিছু যেমন আছে বা সেটা নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তিত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা। experiment বলতে বোঝায় কিছু পরিবর্তন করা, (সাধারণত একটি নির্দিষ্ট উপায়ে) এবং সেই পরিবর্তনগুলির প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা।" শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে হ'লে, বুঝতে হ'লে, জানতে হ'লে এরকমভাবে সৎসঙ্গীদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে নলেজ অর্থাৎ জ্ঞান করায়ত্ত হবে। ঠাকুর কে তা চিনতে, বুঝতে ও জানতে পারবে।



শ্রীশ্রীঠাকুর Knowledgeকে ভেঙে Know আর Ledge ক'রে বললেন Know মানে জানা আর Ledge মানে To draw near অর্থাৎ নিকটে আনা। অর্থাৎ যেটা জানলাম অর্থাৎ একটা Clue পেলাম সেটাকে examine ক'রে ক'রে experiment-এর মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অর্থাৎ বাস্তবভাবে গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, গবেষণা করতে করতে যে অজানাটা আমার নিকটে এলো অর্থাৎ আমার কাছে জানাটা সম্পূর্ণরূপে সুক্ষ ভাবে ( Ins and outs) ধরা দিল, উন্মুক্ত হ'লো ফলে একটা অভিজ্ঞতা হ'লো, হ'লো বিরাট উপলব্ধি আর সেই যে বিরাট অভিজ্ঞতা, বিরাট উপলব্ধি হ'লো সেইটাই হ'লো সেই বিষয়ে (সম্পূর্ণ ) জ্ঞান অর্থাৎ
( Complete) Knowledge. Knowledge itself complete. তাই আলাদা ক'রে কমপ্লিট শব্দ ব্যবহার করতে হয় না, তবুও আমরা করি অভ্যাসবশত।

ঈশ্বর কলঙ্কিত হন তখনি যখন শাস্ত্র দিয়ে তাঁকে ও তাঁর কথাকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ঈশ্বর তো প্রতিষ্ঠত হয়েই আছেন। কে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করবে? জীবন্ত ঈশ্বর তিনি নিজেই যে জীবন্ত বেদ, তিনিই যে জীবন্ত শাস্ত্র এ কথা ভুলে যায় মানুষ। আটবারের মধ্যে ৬ বারই এসেছেন তিনি ভারতে তথাপি তাঁর মুখের কথা ও তাঁর নিখুঁত জীবন চলনার পরিবর্তে তাঁর সৃষ্ট সন্তান দ্বারা রচিত শাস্ত্রজ্ঞান দিয়ে তাঁকে পরিমাপ করতে হবে, তাঁকে স্বীকৃতি দিতে হবে এর থেকে অপমান ও লজ্জার আর কিছু নেই সৃষ্টিকর্তার।

জ্ঞানী, পন্ডিত, মহাপন্ডিত, যোগী, ধ্যানী, মহাত্মা অনেকেই শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনেছিলেন, বুঝেছিলেন কিন্তু পরমাত্মা ব'লে গ্রহণ করেননি তাঁকে। এর জন্য অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটা দু'টো উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হ'য়ে যাবে ব্যাপারটা। যেমন বিদ্যাসগরের কাছে স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর গিয়েছিলেন তাঁকে দেখতে, কথা বলতে। কিন্তু বিদ্যাসাগর অতি সাধারোন রামকৃষ্ণের গভীর জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হ'য়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে জীবনে গ্রহণ করেননি। আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এক জীবনে দু'দুবার জীবন্ত ঈশ্বরের উপস্থিতির সন্ধান পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে গ্রহণ করতে পারেননি। একজন শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, অনুজন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। আর, যারা শ্রীশ্রীঠাকু্রের সংস্পর্শে এসেছেন, সঙ্গ করেছেন, তাঁর সম্পর্কে বড় বড় জ্ঞান গম্ভীর ভাষণ দিয়েছেন, উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন যা ঠাকুর থাকাকালীন হয়েছে এবং এখনও চলছে কিন্তু জীবনে তাঁকে গ্রহণে অসমর্থ হয়েছে এমন বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন। তাদের পোঁছে কে? তাঁদের জ্ঞান যে অসাড় দিনের শেষে সেটা প্রমাণ হয়।


আমি তাঁর এমনই শিষ্য তাঁকে বোঝার জন্য আমাকে শাস্ত্রের দ্বারস্থ হ'তে হবে। কেন? মহাভারতের কোন শ্লোকে ভীষ্ম কি বলেছে সেই রেফারেন্স দিয়ে আমাকে খুঁজতে হবে তিনি পুরুষোত্তম কিনা, তিনি জীবন্ত ঈশ্বর কিনা? কেন? শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে কোন বেদ, কোন শাস্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছে? সাধারণ মানুষের কথা ছেড়ে দিলাম তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা অহংকারী বেদজ্ঞ, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতরা তাঁকে অপদস্ত করেছেন। তিনি যতবার এসেছেন ততবার তিনি লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছেন, তিনি যতবার এসেছেন তাঁকে হত্যা করার জন্য ততবার চেষ্টা করা হয়েছে। কোন শাস্ত্র গ্রন্থ, কোন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত তাঁকে রক্ষা করার গার্ড ওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছিলেন?

আর, একটা কথা আছে ব্যতিক্রম। আ্রর ব্যতিক্রম ব্যতিক্রম। বড় বড় শাস্ত্রজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজের মাথারা, তথাকথিত শিক্ষিতরা তাঁকে সমস্ত যুগেই তাঁদের পুঁথিগত বিদ্যার ওপর ভর ক'রে বই পড়ে মোটা মোটা বই হ'য়ে তাঁকে পরীক্ষা করতে চেয়েছে। তাঁদের জ্ঞানের কাছে পরাস্ত হ'য়েও শুধুমাত্র সূক্ষ্ম ও অনমনীয় ইগো বোধের কারণে তারা তাঁকে গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি যতবার এসেছেন ততবার কোনও তথাকথিত জ্ঞানী, পন্ডিত, বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি তাঁর পরম ভক্ত হননি। তাঁর পরম ভক্ত হয়েছে সাধারণ, অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। প্রহ্লাদ, হনূমান, অর্জুন, আনন্দ, মেরী ম্যাগডালিন, সেন্ট পল, ওমর, আবু বকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ এবং সর্বশেষ শ্রীশ্রীবড়দা কেউই সমাজের উচ্চপর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত কোনও বিজ্ঞাপিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না প্রথম দিকে। তাঁরা সবাই ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ পর্যায়ের মানুষ। কেউই তাঁরা সমাজের বিখ্যাত ব্যাক্তি ছিলেন না। শুধুমাত্র প্রভুর প্রতি অস্খলিত, অচ্যুত, অটুট ও প্রশ্নাতীত ভক্তি, ভালোবাসা, প্রেম, নিষ্ঠা দিয়ে, নিজের জীবন সম্পূর্ণ রূপে প্রভুর পায়ে উৎসর্গ ক'রে দিয়ে প্রভুর স্বপ্ন, প্রভুর ইচ্ছাকে একমাত্র তাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের ইচ্ছা ক'রে নিয়ে সারাজীবন নিজের জীবনের সমস্ত ব্যক্তিগত স্বপ্ন, ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে পাশে সরিয়ে রেখে জীবন কাটিয়ে দিয়েছিল। তাই আজ আজ যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি মানুষের বুকে দাগ তাঁরা এঁকে দিয়েছেন। তাঁরাও হ'য়ে গেছেন প্রভুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে ভগবান। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা, প্রেমের দাগ এঁকে দিয়েগেছেন। তাই মানুষ আজও কলি যুগের শেষে এসেও প্রহ্লাদ, হনূমান, অর্জুন, আনন্দ, উপগুপ্ত, মেরী ম্যাগডালিন, ওমর, আবু বকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ও শ্রীশ্রীবড়দা ভোলেনি। তাঁরা প্রভুর পাশে তাঁদের স্থান ক'রে নিয়েছেন।


আর, আমি কোন গ্রন্থ পড়বো? কোন গ্রন্থকে আগে প্রাধান্য দেব? ধর্ম জগতে যদি আমি বিচরণ করি, ঈশ্বর আরাধনার সঙ্গে যদি নিজেকে যুক্ত রাখি তাহ'লে আমি কোন গ্রন্থ আগে পড়বো? ঈশ্বরের গ্রন্থ আগে পড়বো নাকি তাঁর ভক্তদের গ্রন্থ আগে পড়বো? যখন ঈশ্বর মানুষ রূপে এসে নিজের মুখে বাঁচা-বাড়ার কথা ব'লে গেলেন সেগুলি পড়বো নাকি পুরাণ, বেদ, উপনিষদ পড়বো? শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের সমগ্র জীবনটাই উৎকৃষ্ট বাণী। তাঁর সমগ্র জীবনকে অনুসরণ ক'রে চললে কোন শাস্ত্র গ্রন্থই পড়ার দরকার পড়ে না। তারপর শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতা, শ্রীশ্রীবুদ্ধের ত্রিপিটক, শ্রীশ্রীযীশুর বাইবেল, শ্রীশ্রীমহম্মদের কোরান,শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর চৈতন্য চরিতামৃত, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃত এবং সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শুধুমাত্র সত্যানুসরণ গ্রন্থ (২৪হাজার বাণী ও কথোপকথন সমৃদ্ধ সমগ্র গ্রন্থের কথা বাদ দিলাম,) পাঠ করলেই পরম সত্যকে জানা যায় এবং অনুসরণ ক'রে চললে জীবন শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত পরম সার্থকতায় ভরে যায়। সাধারণ মানুষের জন্য আর কিছু লাগে না। আর যারা উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাবিদ, গবেষক তাঁদের কথা বাদ দিলাম তাঁরা তাঁদের মতো পড়ুক, জানুক, বুঝুক তামাম শাস্ত্র গ্রন্থ কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরকে পরীক্ষা করার নামে সাধারণ আম ভক্তকূলকে যেন বিভ্রান্ত না করেন। তাই বুঝি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র গান গেয়ে বললেন,

আমি বেদ বিধি ছাড়ি বেদনা হারি
হরিনাম সদা গাহিরে
হয় হোক মম লক্ষ জনম
তাহে কোনো ক্ষতি নাই রে।।
ঘনাম্বু নিন্দিত শান্ত সুনীল

মূর্তি যেন ভুলি নাকো তিল
নিত্য নৃত্য করে যেন মোর
চিত্ত যমুনা পুলিনে রে।।
সন্ধা আমার বন্ধা হোক

তাহে নাহি কোনো শোক
তর্পণ জল অর্পণ বিনা
রোধুক পিতৃ লোক
ঘোষুক জগতে নিন্দা খ্যাতি

তোষুক রোধুক স্বজন জ্ঞাতি
আমি কিছুতেই বিমল ভাতি
ভুলিতে নারিব ভাইরে।।

ক্ষুব্দ পরান চাহে গোবিন্দ নামামৃতে সদা ভাসিতে
মুগ্ধ মানসে আত্ম ভুলিয়ে হরি হরি বলে নাচিতে হরি বোল_ _ _
চাহে নাকো আর শৌর্য বীর্য
চাহে না পরান বিশাল রাজ্য
ধর্ম অর্থ কাম সকলি ত্যাজ্য
মোক্ষের মুখে ছাইরে।।


শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তিনি কি বলতে চাইলেন এখান থেকে পরিস্কার হ'য়ে যায়।



এখন প্রশ্ন হ'তে পারে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাহ'লে কে?



তিনি কি মুনি? ঋষি? সাধক? ধর্মগুরু? দীক্ষাগুরু? পন্ডিত? মহাত্মা? মহাপুরুষ? কবি? সাহিত্যিক? শিল্পী? গীতিকার? গায়ক? নাট্যকার? অভিনেতা? শিক্ষাবিদ? চিন্তাবিদ? গণিতজ্ঞ? শিক্ষক? ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ, ডাক্তার? বিজ্ঞানী? জ্যোতিষী? সমাজসেবী? সমাজ সংস্কারক? বিপ্লবী? নেতাজী? দেশপ্রেমী? মানবপ্রেমী? কি তিনি? কে তিনি?

মাঝে মাঝে ঠাকুরকেই জিজ্ঞেস করি কে তুমি ঠাকুর!?
তুমি মানুষ? তুমি দেবতা?? তুমি ঈশ্বর???

আমার প্রশ্নের উত্তরটা আমিই দিচ্ছি! আমার বোধ বুদ্ধি দিয়ে তাঁকে স্টাডি ক'রে যা বুঝেছি তাই আমি এখানে তুলে ধরছি। তা' কারও ভালো লাগতে পারে, নাও লাগতে পারে। তা'তে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। যারা শুনছেন তারা গ্রহণ করতে পারেন আবার বকোয়াস ব'লে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে বড় ডাস্টবিন কিন্তু আমাদের মন। ডাস্টবিনে ফেলার আগে মনের ডাস্টবিন পরিষ্কার ক'রে আমার কথাগুলিকে সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে বিচার ক'রে তারপর যদি মনে হয় ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ!
তিনি হ'লেন একজন বিস্ময়। বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়!
তিনি হ'লেন আদর্শ। আদর্শের আদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ!
তিনি হ'লেন পুরুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ! উত্তম পুরুষ!! পুরুষোত্তম!!!

তিনি হ 'লেন তমসার পার অচ্ছেদ্যবর্ণ ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভুত মহান পুরুষ!

শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন একজন নেতা। নেতার নেতা বিশ্বনেতা! ওয়ার্ল্ড লিডার!

শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিপ্লবী! হ্যাঁ বিপ্লবী! তিনি হ'লেন অমৃতবর্ষী বিপ্লবের দিশারী!

তিনি হ'লেন বাঁচা-বাড়ার অনুকূল ভাবধারায় সারা দেশ তথা বিশ্বকে ভাসিয়ে দেওয়ার পথিকৃৎ!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বিশ্বজুড়ে সমস্ত মত ও পথের সর্ব্বোত্তম পরিপুরণকারী!

তিনি হ'লেন একজন বৈদ্য। বৈদ্যের বৈদ্য পরম বৈদ্য!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানী পরম বিজ্ঞানী!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন শিক্ষক, টিচার! ওয়ার্ল্ড টিচার!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন শেষের শুরু! যেখানে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার শেষ অর্থাৎ কাব্য, দর্শন, সাহিত্য, আইন, প্রকৌশলবিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদি শেষ সেখান থেকে শুরু তাঁর বলা!

তিনি হ'লেন কারণপুরুষ। সমস্ত কারণের কারণ পরমকারুণিক তিনি!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হলেন আত্মা। সমস্ত আত্মার আত্মা পরমাত্মা!

জীবাত্মা মহাত্মায় পরিণতি লাভ ক'রে অবশেষে যে পরমাত্মায় লীন হ'য়ে যায় সেই পরমাত্মা হলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!

তিনি হ'লেন সবার স্বামী। জীবনস্বামী! জীব জগৎ জীবন কারণ করুণাময় স্বামী!

শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন গুরু। গুরুর গুরু মহাগুরু! পরমগুরু! বিশ্বগুরু! জগতগুরু!

এই বিশ্বে যত ধর্মের যত দেবদেবী আছে সমস্ত দেবদেবীর আধার হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! যেমন সূর্য আর সূর্যের কিরণ!

শ্রীশ্রীঠাকুর যদি হন সূর্য তেত্রিশ কোটি দেবদেবী হ'লো তাঁর কিরণ!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন ব্রহ্মা! তিনিই হ'লেন বিষ্ণু! তিনিই জীবন্ত মহেশ্বর!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বাইবেলে কথিত In the beginning there was sound, and sound was GOD!- এর সেই সাউন্ড! অর্থাৎ একই সঙ্গে শব্দ ও শব্দের প্রাণ হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!

শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনের মূল মরকোচ!
তিনিই ভগবান! তিনিই ঈশ্বর!! তিনিই আল্লা!!! তিনিই গড!!!!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন স্বয়ং রক্তমাংসসংকুল জীবন্ত নারায়ণ!
তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন সেই ওঙ্কার ধ্বনি!
তিনি হ'লেন ওঙ্কার ধ্বনির প্রাণ যে রাধাস্বামী সেই রাধাস্বামী হ'লেন তিনি!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই হলেন বিশ্বজুড়ে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে আবির্ভুত মুনি, ঋষি, যোগী, ধ্যানী ও লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সাধক ও ভক্তকুলের আরাধ্য জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর যুগোপযোগী নবরূপে আবির্ভুত কলিযুগের শেষ অবতার অর্থাৎ স্বয়ং অবতারি পুরুষ!!!
তিনি হ'লেন ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তার মনুষ্য রূপে আট আটবার আবির্ভুত রূপের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় পূর্ণ রূপ!

তিনি সর্বশক্তিমান! তিনি সর্বব্যাপী! সর্বভূতে বিরাজমান!
তিনি সর্বনিপুণ! তিনি সর্বজ্ঞ! সর্ববেত্তা! সর্ববিদ্যাবিশারদ!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সমস্ত অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব!
তিনি সমস্ত উৎসের উৎস পরম উৎস!
তিনি হ'লেন সমস্ত গন্তব্যের পরম গন্তব্য স্থল!
তিনিই হ'লেন ডিভাইন ডিক্টেশন-এর কলাকার!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই মুনি ঋষি যোগী ধ্যানী যখন ধ্যানস্থ অবস্থায় যে আকাশবাণী প্রাপ্ত হয়, সাড়া পায়, ঈপ্সিত বস্তু লাভ করে সেই আকাশবাণী, সেই সাড়া বা সেই ঈপ্সিত বস্তুর দানকারী ব্যক্তি!
তিনিই ওঙ্কার ধ্বনি! তিনিই ব্রহ্ম! পরম ব্রহ্ম! তিনিই কুল অর্থাৎ এই মহাকাশে যত লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আমাদের যে ব্রহ্মান্ড সেই ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আরও একটা ব্রহ্মান্ড, তার বাইরে আরও একটা, আরও একটা, আরও একটা এমনিভাবে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড সমূহ ( যা বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন মাত্র) নিয়ে অন্তহীন বিশাল যে ব্যাপ্তি, যে বিস্তৃতি, যে কুল সেই কুলের যিনি মালিক, যিনি সৃষ্টিকর্তা, যিনি----সেই যখন 'ছিল না'-র অস্তিত্ব ছিল, অর্থাৎ সেই যখন কোনও কিছুই ছিল না তখনও তিনি ছিলেন অর্থাৎ ছিল সেই অস্তিত্ব অর্থাৎ সাউন্ড বা শব্দ 'ওঙ্কার', শব্দের প্রাণ 'রাধাস্বামী' আর সেই তিনি অর্থাৎ 'রাধাস্বামী' হ'লেন রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত কুলমালিক, পরব্রহ্ম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!!!

তিনিই একমাত্র উপাস্য! তিনিই পূজ্য!
তিনিই এক ও একমাত্র আরাধ্য দেবতা! ঈশ্বর! আল্লা! গড বা যে যে নামেই তাঁকে ডাকুক না কেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই রহস্যময় অস্তিত্ব!!!!!!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অখন্ডমন্ডলাকারে ব্রহ্মাণ্ডের পর ব্রহ্মান্ড জুড়ে যিনি পরিব্যাপ্ত তাঁর জীবন্ত রূপ!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বজুড়ে মানুষের বন্ধ চোখ জ্ঞানের কাঠি দিয়ে খুলে দেবার এক ও একমাত্র নিখুঁত মানুষ!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই চেতন পুরুষ যিনি স্বর্গ-মর্ত-পাতাল তিন লোক জুড়ে চেতনার নিদর্শন স্বরূপ পরিব্যাপ্ত!

শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা কোটি কোটি ব্রহ্মার উৎপত্তি স্থল! যেখান থেকে জন্ম নিয়েছে কোটি কোটি ব্রহ্মা ও ব্রহ্মান্ড!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই নারায়ণ আর নারায়ণ মানে হ'লো বিশাল বিস্তৃতি! অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই বিশাল বিস্তৃতি! আর নারায়ণের নাভিপদ্ম বা নাভিদেশ মানে সেই বিশাল বিস্তৃতির মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্রবিন্দু! আর সেই মধ্য বা কেন্দ্রবিন্দুকে বিজ্ঞানে বলা হয় সেন্ট্রাল জোন! যেখান থেকে সব কিছুর সৃষ্টি! চরম পরম উৎস! শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই চরম পরম উৎস!!! সেই সেন্ট্রাল জোন। সেই চরম পরম উৎসের, সেই সেন্ট্রাল জোনের আধার!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই বাইবেলে কথিত রক্তমাংসসঙ্কুল 'ঈশ্বর পুত্র' হ'য়েও ঈশ্বর! সর্বশক্তিমান পরমকারুণিক সর্ব্বানুস্যুত ব্যাপ্ত প্রাক প্রথমবাক সর্ববস্বর্গ সর্ব্বহৃদয় প্রাণনপরিমল অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর! জীবন্ত রক্তমাংস সঙ্কুল নররূপী ঈশ্বর! সৃষ্টিকর্তা!!
সেই চরম পরম উৎস রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত ঈশ্বরকে জানাই আভুমি হৃদয় কম্পিত শত-লক্ষ-কোটিকোটি প্রণাম!

Wednesday, May 8, 2024

কবিতা ও জিজ্ঞাসাঃ জয় পুরুষোত্তমের জয়।

বন্ধু, ভাবছো তুমি,
তুমি চালাক বাকি সবাই বোকা?
শেষের দিনে দেখতে পাবে,
নিজেকে নিজেই দিয়েছো ধোঁকা!
"তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই, 
শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর!" 
বলেন একথা শ্রীশ্রীদাদা। 
এসো আমরা বলি,
'আমার খেয়াতে আছে মাঝি, 
শেষের সেদিন খুব সুন্দর!!'
রাম রূপে বিষ্ণু এলো, কৃষ্ণ রূপে শ্রীরাম, 
ভাই, নানা রূপে কৃষ্ণ এলো যুগে যুগে তাই আরাম।
জয় শ্রীরাম বলো, জয় শ্রীকৃষ্ণ বলো,
জয় শ্রীবুদ্ধ বলো ভাই,
নামের মত অমৃত আর কিছুই নাই!!
জয় শ্রীযীশু বলো, জয় শ্রীমহম্মদ বলো    
জয় শ্রীমহাপ্রভু বলো ভাই!
সবাই মিলে এসো বন্ধু তাঁর নামগান গাই!!
জয় শ্রীরামকৃষ্ণ বলো, জয় শ্রীঅনুকূল বলো,
জয় শ্রীপুরুষোত্তম বলো ভাই,
রাধাস্বামী, রাধাস্বামী ব'লে সবাই মেতে ওঠো ভাই! 
তাই সার কথা বলি, বন্ধু, বাঁচতে যদি চাও
কলি যুগে এ নাম ভিন্ন আর 
বাঁচার উপায় কিন্তু নাই।
আজ ভাবি,
ঈশ্বর যদি মানুষের রূপ ধ'রে মানুষের মাঝে নেবে না আসতেন তাহ'লে তথাকথিত ঈশ্বরপ্রেমীদের অন্তরে লুকিয়ে থাকা পাষন্ডতার ভয়ঙ্কর রূপ পৃথিবীর বুকে তান্ডব সৃষ্টি ক'রে দিত যা ঈশ্বর শিবের তাণ্ডবকে ম্লান ক'রে দিত। বাঁচা-বাড়ার যে মূল বুনিয়াদ মনুষ্যত্ব তাই ধ্বংস হ'য়ে যেত।
তাই প্রশ্ন জাগে মনে, ঈশ্বরের প্রকৃত শত্রু কে? শয়তান কে? কে শয়তান?
উত্তর: যে আলোর মাঝে অন্ধকার এনে দেয় সে শত্রু!
তথাকথিত ঈশ্বরপ্রেমী আস্তিক যে সর্বনাশের পৃষ্টপোষক ও পথপ্রদর্শক এক কথায় সেই নাস্তিক, সেই শয়তান।!!
তাহ'লে প্রশ্ন: সৎসঙ্গের শত্রু কে বা কারা?
উত্তর: যারা সৎসঙ্গী অথচ সৎসঙ্গের আদর্শ জানে না, আচার্য্য বা কেন্দ্র নির্দেশ মানে না, ইষ্টের ইচ্ছে, স্বপ্ন, লক্ষ্য ও বুকের ব্যথা কি জানে না ও ধার ধারে না, আত্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং অর্থ লিপ্সা মুখ্য ও প্রধান যাদের তারাই সৎসঙ্গের শত্রু!
বন্ধু, সবাই মিলে এসো বলি, জয় পুরুষোত্তমের জয়।























Tuesday, May 7, 2024

প্রবন্ধঃ সন্তান থাকুক মোর দুধে ভাতে।

পৃথিবীর সব মায়েরাই তার ছোট্ট সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধ'রে গালে কপালে চুমু খেতে খেতে অশ্রুসিক্ত চোখে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা ক'রে বলে, আমার সন্তান থাকুক দুধে ভাতে। আমার সন্তান থাকুক দুধে ভাতে। পৃথিবীর গরীব-বড়লোক, মূর্খ-জ্ঞানী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সৎ-অসৎ, সতী-অসতী সব মায়েদের এই একই চাওয়া। সে আকাশের ভগবান, বোবা ভগবান, অমূর্ত ভগবান আর রক্তমাংসের জীবন্ত ভগবান বা ঈশ্বর যেই হ'ক না কেন। এই চাওয়ায় কোনও ভেজাল নেই, এই চাওয়ায় নেই কোনও ধর্মীয় বা জাতের পরিচয়। হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সব ধর্মের, সব জাতের মায়েদের একটাই পরিচয় সে 'মা'। এই একই কথা বাবাদের ক্ষেত্রেও।

মেয়েরা যেমন চেনা পরিবেশ, চেনা মানুষ, চেনা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসে সম্পূর্ণ অচেনা এক মানুষের হাত ধ'রে অচেনা পরিবেশ, অচেনা মানুষজন, অচেনা বাড়িতে অচেনা এক নোতুন ঘরে; তারপরে ধীরে ধীরে স্বামী নামক অচেনা মানুষটির হাত ধ'রে অচেনা পরিবেশ, অচেনা বাড়িঘর, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ নামক অচেনা মানুষজন সবাইকে চেনা ক'রে নেয়, আপন ক'রে নেয়, তারপরে সংসারের সমস্ত কাজের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়ে হাসি মুখে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের সকল সদস্যের জন্য হাসি মুখে অক্লান্ত পরিশ্রম করে । তারপর একদিন ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদে মায়ের ঘর ছেড়ে আসা সেই মেয়েই সংসার সমুদ্র পাড়ি দিতে দিতে একদিন নিজেই 'মা'-এর আসন গ্রহণ করে এবং অবশেষে একদিন সেই নতুন সংসারের সে সর্ব্বময় কর্ত্রী হ'য়ে ওঠে।

যেদিন সেই মেয়েটি 'মা' হয় তখন সেই মা আমৃত্যু তার সেই ছোট্ট সন্তানের জন্ম থেকে ধীরে ধীরে বড় হওয়া, অনেক বড় হওয়া পর্যন্ত একটা কথায় ভাবে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে 'সন্তান থাকে যেন মোর দুধে ভাতে।' ঠিক যেমন তার মা তাকে নিয়ে ভাবতো। এর জন্য কোনও কষ্টকেই কষ্ট ব'লে মনে হয়না মায়েদের। সন্তানের একটু হাসি মুখ দেখলেই সমস্ত কষ্ট, যন্ত্রণা, জ্বর, রোগ, সারাদিন না খেয়ে থাকা, অভাব, অনটন, কত বিনিদ্র রাত ইত্যাদি সব সব ভুলে যায়, শিশুর হাসি মাখা মুখ দেখলেই মায়েদের শান্তি, আর কিচ্ছু চায় না মায়েরা সন্তানের কাছে।

ঠিক এই একই চাওয়া বাবাদেরও। বাবারা সন্তানের জন্য, সন্তানের মঙ্গলের জন্য, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পাহাড় ভেঙ্গে আনতেও পিছপা হয় না। কত কষ্ট, কত পরিশ্রম, কত ক্লান্তি, কত অপমান, কত অবহেলা, কত অন্যায়, কত আঘাত, কত না ঘুমানো রাত মুখ বুঝে সহ্য করে সন্তানের জন্য, সন্তানের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দেবার জন্য, সন্তানের ভালো থাকার জন্য, সন্তানের পড়াশুনার জন্য, সন্তানকে বড় ক'রে তোলার জন্য সব কষ্ট সহ্য করে।

এই সন্তানকে ঘিরেই নিজেদের কত চাওয়া, কত ইচ্ছা, কত স্বপ্নকে ভ্রুণের মধ্যেই হত্যা করে বাবা-মা। হত্যা করে শুধুমাত্র 'সন্তান থাকুক মোর দুধে ভাতে, থাকবে মোর দুধে ভাতে' এই চিন্তায়। একমাত্র নির্ভেজাল অকপট এই চিন্তায়। কত বিনিদ্র রাত যে কেটে যায় সন্তানের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে; তার হিসাব কে রাখে? রাখে কি কেউ? সন্তান কি জানে তা? নাকি বোঝে তা? শুধু জানে একজন! সে জন আমার দয়াল প্রভু।

সত্যি সত্যিই কি বোঝে না সন্তান? নাকি বুঝেও কিছুই করার থাকে না? কেন বোঝে না সন্তান? যে সন্তান পড়াশুনা ক'রে প্রতিষ্ঠিত সে কেন বোঝে না? প্রতিষ্ঠিত পুত্র সন্তান কেন বোঝে না বাবা-মায়ের কষ্টের দিনগুলির কথা? কেন বোঝে না বয়সকালে বাবা-মায়ের মনের কথা, অন্তরের ব্যথা? প্রতিষ্ঠিত পুত্র, উচ্চশিক্ষিত পুত্র বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়ীর প্রতি জামাইয়ের দায়িত্ব পালনে অতিমাত্রায় সচেতন থাকে কিন্তু নিজের পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে ততোধিক উদাসীন হয়। কেন? কিসের জন্য? বাবা-মা কি এইজন্যই নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছিল যে তাদের প্রাণাধিক পুত্র বড় হ'লে লেখাপড়ায় দড় হ'য়ে বিয়ের পর তাদের ভুলে যাবে? কিংবা স্ত্রীর বাপের বাড়ির টাকার জোরে তাদের পুত্র শ্বশুরবাড়ির কেনা গোলাম হবে আর বাবা-মাকেই ভুলে যাবে? নিজের জন্মদাতা মা-বাবার চেয়ে বড় হ'য়ে দাঁড়াবে শ্বশুর শাশুড়ী?

ঠিক তেমনি মেয়েদের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটে। প্রতিষ্ঠিত, উচ্চ লেখাপড়া জানা কিংবা সাধারণ ঘরের কন্যা সন্তান বিয়ের পরেও বাপের বাড়ির প্রতি, নিজের বাবা-মায়ের প্রতি যে রকম দরদী থাকে, কর্তব্যপরায়ণ হয় তেমনটি কেন হয় না নিজের শ্বশুরবাড়ি ও শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি? কেন স্বামীস্ত্রী দু'জনেই নিজের নিজের পিতামাতা ও পরস্পরের পিতামাতা ও পরিবারের প্রতি একইরকম দায়িত্বশীল সুন্দর মানসিকতার অধিকারী হয় না?


এই বিকৃত মানসিকতার জন্য দায়ী কে?

আজ সারা বিশ্বে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মধ্যে কয়েক লক্ষ ছোট্ট শিশুর দীক্ষিত পিতামাতা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে এবং এছাড়া অদীক্ষিতরাও যাতে উপকৃত হয় সেই উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। যারা আমার এই লেখা পড়ছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ আসুন একবার সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে দেখে নিই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য প্রকৃত কে দায়ী।

কবি সুকান্ত অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে লিখেছিলেন,
"চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।"

আমিও ব'লে যাই,
যাবার হয়েছে সময়; চলে যাবো যে কোনও একদিন
আমার ফুলের মতো ছোট্ট ছোট্ট দেবদূতদের ছেড়ে।
যাবো চলে অন্ধকার আগুন পৃথিবী আর
বিষাক্ত নিশ্বাসে ভরা আকাশের তলে
আমার ছোট্ট শিশুদের ফেলে।
তাই যাবার আগে ব'লে যাই,
শিশুর ভবিষ্যৎ সুদিন রাখা আছে জেনো নিশ্চিত
শিশুদের মা-বাবাদের কোলে।

প্রশ্নটা ছিল কে দায়ী?
শিশুর প্রথম স্কুল তার মা। তারপর বাবা ও পারিবারিক অন্যান্য সদস্যরা এবং পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। শিশুর বাবা-মা যদি তাদের নিজেদের জীবন যাপন, চালচলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ, চিন্তাভাবনা ইত্যাদির মধ্যে খারাপ দিকগুলিকে পরিবর্তন না করে তাহ'লে শত শাসন, শত নীতিকথা, শত শিক্ষা, শত মতবাদ তাদের শিশুদের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ বাবা-মায়ের প্রতিদিনের প্রতিমুহুর্তের শরীরের ও চোখমুখের ভালো বা মন্দ ভাষা শিশুর কাঁচা মাথায় ছাপ রেখে যায়। ছোট্ট শিশুরা নকল প্রিয়। তারা তার চারপাশের সব কিছুকে খুব দ্রুত নকল করতে পারে। তাই খুব সাবধান থাকতে হয় বাবামায়েদের শিশু জন্মের পর থেকেই। বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে, যদি শিশুকে শরীরে-মনে ও আত্মায় ছোট্ট থেকে মহান আত্মায় উত্তীর্ণ করতে চায় তাহ'লে প্রথমে নিজেদের জীবনের যত বদ অভ্যাস, কু অভ্যাস, কুসংস্কার, অসৎ চিন্তা, ভাবনা, কর্ম ত্যাগ করতে হবে, ষড়রিপুকে নিজের কন্ট্রোলে রেখে সচেষ্ট হ'তে হবে মহাত্মায় উত্তীর্ণ হওয়ার। ষড়রিপু অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য যেন মা-বাবাকে কন্ট্রোল ক'রে রাস্তার কুত্তার মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে না পারে গলায় তাদের বকলেস পড়িয়ে। আর, শৈশব থেকে শিশু যদি তা দেখতে দেখতে বড় হয় সেই বকলস পড়ে নেবে নিজের গলায় নিজের অজান্তে কিচ্ছু না বুঝেই।

তাই, শিশু সন্তানকে যদি ভবিষ্যতে আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখতে চায় মা-বাবা তাহ'লে মা-বাবার জীবনে আদর্শ গ্রহণ করা দরকার। সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরকে যাকে পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমকারণ, সদগুরু, সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী, সর্বব্যাপী বলা হয় তাঁকে জীবনে গ্রহণ করা দরকার এবং গ্রহণ করার পর লোকদেখানো ফুল, ধুপ-ধুনো দিয়ে জীবন্ত আদর্শের চরণপূজা করা নয় তাঁর চলনপুজা করার দরকার। তাবিজ, মাদুলি, আংটি, পাথর, লালসুতো, কালোসুতো, লোহা, শেকড় বাকড় ইত্যাদি নির্ভর ক'রে সন্তানকে জন্মের পর থেকেই মানসিকভাবে দূর্বল মানুষে পরিণত ক'রে বড় করা নয়। কারণ আমরা দেখেছি দুই হাতের পাঁচ পাঁচ দশ আঙ্গুলে আংটি, হাতে তাবিজ আর কব্জিতে লাল সুতো, কোমরে কালো সুতোয় লোহা বাঁধা দূর্বল শিশু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির গোলকধাঁধায় ঘুরতে ঘুরতে শরীরে-মনে দূর্বল হ'য়ে বড় হ'য়ে উঠছে আর সেই বোঝার ভারে নিজের জীবন হারিয়ে শেষ হ'য়ে যাচ্ছে হতাশা, অবসাদে জর্জরিত হ'য়ে। শিশু বড় হওয়ার পর বৃহত্তর পরিবেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে, চাকুরি ক্ষেত্রে, সামাজিক, পারিবারিক ক্ষেত্রে ভয়ংকর চাপ নিতে না পেরে হয় মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়ে পাগলাগারদে আশ্রয় নিচ্ছে, পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে নতুবা বিষাদগ্রস্থতায় আক্রান্ত হ'য়ে অকাল মৃত্যুকে আলিঙ্গন ক'রে নিচ্ছে। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজে জ্যোতিষী, আংটি, মাদুলী, তাবিজ, লালসুতো, কালোসুতো, বোবা ভগবান, অমূর্ত ভগবানের ওপর নির্ভরশীল কুসংস্কারাচ্ছন্ন দূর্বল মানুষ হ'য়ে অন্য মানুষকে ইষ্টকে ধ'রে বেঁচে থাকার কথা, বেড়ে ওঠার হাস্যকর পথ দেখাচ্ছে। দেখাচ্ছে আমাদের সৎসঙ্গীরাই। মায়েদের মনে রাখতে হবে, নিজের সন্তানকে সেইরকম আত্মবিশ্বাস হারানো, অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী ও নির্ভরশীল মানুষ ক'রে গড়ে তোলা নয়। আমি একদিকে জীবন্ত ইশ্বরকে গ্রহণ করেছি, তাঁর চলনপূজার কথা বলছি, আবার অন্যদিকে বোবা ভগবানের আরাধনা করি, পাথর বসানো আংটি, তাবিজ, মাদুলি, লালসুতো, কালোসুতো, কোমরে লোহা ধারণ করি, এমন মানুষ থেকে মায়েরা যেন সাবধান থেকে দূরে রাখে তোদের সন্তানকে শৈশব থেকেই। কোনও অবস্থায় সন্তান যেন মানসিক দুর্বলতার শিকার না হয় সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে মায়েদের। সন্তানকে জন্মের পর থেকে পাথর বসানো আংটি, তাবিজ, মাদুলি, লালসুতো, কালোসুতো, কোমরে লোহা ধারণ ও বোবা ভগবান, অমূর্ত ভগবানে নির্ভরশীল গড়ে যেন মায়েরা না তোলেন।
জীবন্ত ইশ্বরকে ধ'রে সেই জীবন্ত ঈশ্বরের চলনপুজা অনুযায়ী নিজে শিক্ষিত হ'য়ে নিজে ক'রে ও সন্তানকে করিয়ে একেবারে আধো কথার সময় থেকেই জীবন্ত আদর্শে অর্থাৎ জীবন্ত ইশ্বরে অনুপ্রাণিত ক'রে তোলা দরকার এবং যথাসময়ে পাঁচ বছর বয়সেই জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ সদগুরু পরমপিতার সৎনাম দিয়ে দেওয়া দরকার। তারপর পাঁচ থেকে দশবছরের মধ্যেই যা কিছু সন্তানের ভিত তৈরী ক'রে দিতে হবে। নতুবা সেই প্রবাদ 'কাঁচায় না নুইলে বাঁশ পাকায় করে ট্যাঁসট্যাঁস'-এর মতো হবে। পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ভিত তৈরীর সময়। সেই সময়ের মধ্যে ভিত যদি তৈরী না হয়, তৈরী না হয় কাঁচা জমিতে সময়ে তখন পাকা জমিতে শত শাসন, লক্ষ সাধু কথা, কীর্তন, গুরুর হাজার আশীর্বাদ, ভালোবাসা, কড়া শাসন, কোনও জ্ঞান-বিজ্ঞান, নীতিকথা, তত্ত্বকথা, কোনও মহাত্মার আশীর্বাদ ইত্যাদি কোনও কাজে আসবে না। সময়ে যদি তাদের ভিত তৈরী ক'রে না দেওয়া যায় তাহ'লে পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে ও উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুর দাপাদাপিতে বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া সন্তান তখন আর পাড়ে উঠে আসতে পারবে না। যদিও বা আসে কখনও কোনোদিন তবে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে সব কিছু হারিয়ে ও সময় হারিয়ে উঠে আসবে পঙ্গু হ'য়ে।
তাই মাকে-বাবাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য তৈরী হ'তে হবে আগে। ত্যাগ করতে হবে জীবনের সব অলীক মায়ার মোহন বাঁশীর ডাক । সন্তানের সুন্দর জীবন যদি চায় বাবা-মায়েরা তবে ত্যাগ করতে হবে সমস্ত রকম ভারসাম্যহীন ভোগ বিলাসিতা। ত্যাগ করতে হবে মদ, সিগারেট ইত্যাদি সমস্ত রকম জীবন ধ্বংসকারী নেশা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে। হে সন্তানের পিতামাতা, যদি তুমি সন্তানের মঙ্গল চাও তাহ'লের নিজের জীবনের ভুল, ত্রুটি, দোষ, ব্যবহার, অন্যায় ও ব্যর্থতা দিয়ে ভরা দিনগুলিকে ভাবো তোমার ছোট্ট সন্তানের নিষ্পাপ, সরল মুখের দিকে চেয়ে ওদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সেইভাবে তুমি ওকে গড়ে তোলও যাতে তোমার জীবনের সব ভুল, ত্রুটি, দোষ, ব্যবহার, অন্যায় ও ব্যর্থতা ইত্যাদি অবগুণ যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। উদাসীন থেকো না। সন্তান কিন্তু তোমারি আয়না। তুমি যা ক'রে রেখেছো ও করছো তার সমস্ত কিছুর প্রতিফলন তোমার সন্তানের মধ্যে দেখতে পাবে। সন্তান বড় হ'লে দেখতে পাবে শিশু বয়সে সন্তানের প্রতি তোমার অবহেলা, উদাসীনতা, তাচ্ছিল্যের ছাপ। সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত বাৎসল্যও কিন্তু তাচ্ছিল্য একথা বলেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। প্রতিটি সংসারে প্রচন্ড অবহেলায় বড় হচ্ছে ছোট্ট নির্মল শিশু। বাবা-মায়েদের নিজেদের লাগামছাড়া বৃত্তি-প্রবৃত্তি পূরণের ঘৃণ্য মানসিকতার কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে ছোট্ট শিশু। জন্মের পর থেকেই ছোট্ট শিশুর ওপর চাপিয়ে মায়েরা-বাবারা নিজেদের বিশৃঙ্খল ইচ্ছা ও চাহিদা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন শিক্ষা। ছোট্ট শিশুর সারল্য আর অসহায়ত্বকে হাতিয়ার ক'রে দাবিয়ে রেখে নিজেদের বুকের আর মনের নোংরা গরল ঢেলে দিচ্ছো তাদের মনে-প্রাণে ছোট্ট জীবনে, আর বনসাই ক'রে রেখে দিচ্ছো ঘরের কোণে জান্তে বা অজান্তে শুধুমাত্র নিজেদের ইগোকে স্যাটিশফাই করতে।

মায়েদের কাছে অনুরোধ, ছোট্ট শিশুকে রেখো না বনসাই ক'রে।

বনসাই ক'রে রেখেছো যারে
চার দেওয়ালের বদ্ধ ঘরে
সেই শিশু বটের বোবা বেদনা কে বুঝিতে পারে?
ড্রয়িংরুমের বাড়াও শোভা
অতি আধুনিকা আর বিরাট শিক্ষিতা তুমি
খেয়ালখুশির জাহাজে চড়ে!
বনসাই ক'রে রেখেছো যারে তুমি
তোমার ড্রয়িং রুমের ছোট্ট টেবিলে
ঘরের শোভা বাড়াবে ব'লে
সে যে যেতে চায় ছুটে খোলা আকাশের তলে
মাটির 'পরে চায় মাটিরে করিতে চুমি!
তা কি বুঝিতে পারো তুমি?
সে যে জড়াতে আকাশেরে চায়
শাখে শাখে পাতায় পাতায়
ক্লান্ত শ্রান্ত পথিকেরে চায় দিতে শান্তি
কলকাকলিতে ভরা ডালে ডালে যারা
গুঞ্জনে গুঞ্জনে তোলে তান জাগায় প্রাণ
সুরে সুরে আনে ক্রান্তি সেই তাদেরি দিতে চায়
অসহায় বনসাই তার বুকের 'পরে বসার আসনখানি!
কিন্তু পারে না বনসাই ক'রে রাখার কারণে।
ঠিক তেমনি তোমার ছোট্ট শিশুটিরে
ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলির ছোট্ট নীড়ে
জানালার ধারে রেখেছো দাঁড় করায়ে
বাহিরের জগত হ'তে দূরে অনেক দূরে
একাকি অনেক খেলনার ভিড়ে!
জানালা দিয়ে দৃষ্টি যায় ছুটে দূরে অনেক দূরে
সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা ফ্ল্যাট বাড়ি আর
নারিকেল সুপারি গাছের মাথার পরে
নীচে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আপন মানুষটিরে
হাত দিয়ে ডেকে বলে, ডাদু, ঐ নাকেল গাছ!
দাদু মাথা নেড়ে হাত বাড়িয়ে কাল্পনিক
কোলে তুলে বলে, যাবে নাকি ডাদুভাই
ঐ নাকেল সুপুরি গাছের তলে?
'আচ্চি দাঁড়াও' ব'লে জানালা থেকে যায় নেবে নীচে শিশু
অতঃপর কিছু সময় কেটে যায় ভেসে আসে কান্নার স্বর
'ডাদু ডাদু' বোল সাথে অবশেষে চাপা পড়ে যায়
থেমে যায় স্বর বনসাই হ'য়ে অন্ধকার ঘরের কোণে!

তাই বলি,
মা তুমি ভেবেছো কি?
জীবনে পেয়েছো কি?
জীবনে হারালেই বা কি?
জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে
তা’ কখনো একবার ভেবেছো কি?
জীবন জুড়ে বাড়িগাড়ী
ষড় রিপুর মারামারি
অর্থ মান আর যশের
কেবল কাড়াকাড়ি!
তুমি এই পেয়েছ
তোমার এই জীবনে
হারালে কি তা
ভাবো মনে মনে!!
এসো তুমি, এসো এইক্ষণে
পিছন ফিরে আর থেকো না,
তাকাও আলোর পানে!!
জীবনে বাঁচাবাড়া, সত্তার বয়ে চলা
ভালবাসা নিয়ে শুধু আনন্দে বেঁচে থাকা।
তুমি এই হারিয়েছ তোমার এই জীবনে
আর কি পাবে তা এই জীবন গেলে?
এসো মা তুমি এসো পরমপিতার চরণতলে,
জীবন খুঁজে হেথায় পাবে সযতনে!!!

তাই মায়েদের আরও বলি,
মা! তুমি সাবধান!!
মা! ভবিষ্যৎ ভয়ংকর!
ভয়ংকর চারপাশ!
আগুন হ'য়ে উঠছে ক্রমশ পৃথিবী!
জঞ্জালে জঞ্জালে ভরে গেছে বিশ্ব,
ভরে গেছে জঞ্জালের দুর্গন্ধে আকাশ বাতাস!
যেটাকে তুমি সভ্যতা মনে করছো, মনে করছো
ঝাঁ চকচকে সমাজ তা আসলে সুগন্ধী ছড়ানো
নকশী কাঁথায় ঢাকা এক দলিত গলিত শব জঞ্জাল।
যার তীব্র দুর্গন্ধকে চাপা দিয়ে রেখেছে মৃগনাভি
আর সুগন্ধী জুঁই ফুলের নির্যাস।
কবি সুকান্ত বলেছিলেন,
চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ।
তা' জঞ্জাল সরেছে কি? সরেনি।
আরো আরো জঞ্জালে ভরে গেছে চারপাশ।
গাদ্দা! বহুত গাদ্দা!!
আরো বেড়েছে! আরো জমেছে জঞ্জাল!
বাড়তে বাড়তে জমতে জমতে পাহাড় প্রমাণ
জঞ্জালে আজ নাভিশ্বাস উঠছে পৃথিবীর!
সেই পাহাড় প্রমাণ জঞ্জালে বিশ্বের সব চাপা পড়া শিশু
আজ চেয়ে আছে জুলজুল নিষ্পাপ চোখে পরম বিশ্বাসে
তাদের একমাত্র বিশ্বস্ত পরম আশ্রয় মায়ের মুখের দিকে!
মা! বিশ্ব শিশুর বাসযোগ্য হয়েছে কি? হয়নি।
কেন হয়নি? কে দেবে উত্তর?
কত আন্দোলন, কত পট পরিবর্তন তো দেখলে মা।
কত দেশপ্রেমী, কত নেতা-অভিনেতার দেখলে রংগ তামাশা,
দেখলে বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, বিপ্লব,
দেখলে কত স্বপ্ন যন্ত্রণা বুকে নিয়ে হেঁটে গেছে রাজপথ।
বিশ্বকে বাসযোগ্য করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কি?
রাখতে পেরেছে কি নবজাতকের কাছে কবি তাঁর দৃঢ অংগীকার?
পেরেছে কি তাঁর দেহের রক্তে করতে শিশুকে আশীর্বাদ?
কেন পারেনি? দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়েছে কেড়ে তাঁর জীবন।
মা হয়েছে কি তাঁর স্বপ্ন পূরণ?
হয়েছে কি মায়েদের আশা পূরণ?
দুরারোগ্য ব্যাধি সুকান্তর শরীর শুধু নয়
মনুষ্যত্বের বুনিয়াদকে খোকলা ক'রে দিয়েছে।
সময়ের অপেক্ষা শুধু হুড়মুড় ক'রে
ভেঙে পড়ার, লুপ্ত হওয়ার।
মা! তুমি খুঁজে নাও সত্ত্বর,
খুঁজে নাও তোমার শিশুর ভবিষ্যৎ বাসযোগ্য ঘর,
খুঁজে নাও সেই পৃথিবী।
যেখানে শিশু বাঁচবে, বেড়ে উঠবে,
বেড়ে উঠবে সসম্মানে, আত্মবিশ্বাসে,
বুকের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা মহাশক্তিকে জাগিয়ে নিয়ে
"মহাশক্তি ঘুমায় তোর হৃদয়ে তুই কেনরে মরার মত?
এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে।
কঠিন, নির্ম্মম, ভয়ংকর, ভয়াল নোংরা পৃথিবীতে
'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে
গান উদাত্ত বলিষ্ঠ কন্ঠে গাইতে গাইতে হেঁটে চলে যাবে'
সুকান্তর অসমাপ্ত কাজ করতে পূরণ
হেঁটে যাবে ক্ষুধায় অন্ন না পেলেও,
তৃষ্ণায় জল না পেলেও
রোগে পথ্য না পেলেও
আগুন পৃথিবীর বুকের ওপর দিয়ে
হতাশা অবসাদকে পায়ে দ'লে
অবহেলায় অবলীলায় ভয় দুর্বলতা
আর কুসংস্কারকে পায়ে দ'লে
'হও ধরমেতে বীর, হও করমেতে বীর,
হও উন্নত শির নাহি ভয়'
আহ্বান ধ্বনি মাথায় নিয়ে।
এমনভাবে তৈরি করো তাকে
যাতে সে তা যত হাজারো সমস্যার দুঃসহ চাপ হ'ক না কেন
হাসি মুখে মাথায় নিয়ে
হাসতে হাসতে চলে যেতে পারে বীরের মত।
কথায় আছে 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'।
বসুন্ধরা সেই-ই ভোগ করতে পারে
যে বীর আর বীর সেই যার মধ্যে আছে
নির্ভরতা, সাহস আর আত্মত্যাগ।
নিয়ে যাও তোমার সন্তানকে সেই অমরধাম!

যেখানে মৃত্যু নেই, নেই রোগ, শোক, গ্রহদোষ
আর বুদ্ধি বিপর্যয় আর দারিদ্রতার নির্ম্মম কষাঘাত
নেই অকাল মৃত্যু,আছে সেথা জীবন আর জীবন
যেথা জীবন খুঁজে পাবে, পাবে জীবনে
বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য
নির্ভরতা, সাহস আর আত্মত্যাগ -এর পরম আশ্রয়।
সেই আশ্রয় এক ও একমাত্র আমার দয়ালের রাতুল চরণতল,
দাও বসিয়ে সেথায়, লক্ষণরেখায়,
অর্থ, মান, যশ আর প্রতিষ্ঠা সব সব পাবে,
পাবে সুখ, শান্তি জীবনে ঐ লক্ষণরেখা গন্ডির মাঝে।
স্বপ্ন হবে পূরণ তোমার, 'সন্তান মোর থাকুক দুধে-ভাতে।'
আজ এই পর্যন্ত। সবাই আনন্দে থাকুন, খুব আনন্দে এই প্রার্থনা জানিয়ে আজকের মত নিচ্ছি বিদায়। জয়গুরু।

কবিতাঃ হৃদ মাঝারে রাখো যদি------

হিংসা মুক্ত হ'ক মন।
আনন্দের হাট বসুক সবার হৃদয়ে।
এসো বন্ধু! হাতে হাত ধরি, 
সেই হাটে বেচাকেনা করি!
আনন্দ ছাড়া জীবন রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে।
এসো বন্ধু! হাতে রাখো হাত।
ঘরে ঘরে আনন্দের করি চাষ।
সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন,
এসো মানুষকে বাঁচাও।
বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়াও।
ঠাকুরের সৎনামে জগৎ মাতাও।
চুপচাপ বিষ্ণুর পাদপদ্মে দাও ঝাঁপ।
সৎসঙ্গী ভাইবোনেরা আমার,
কোনও কিছুর ভয়ে মরে যেও না।
ভয় ও দুর্বলতা ব'লে জীবনে কিছু রেখো না।
দয়াল আছে আর তুমি আছো
ভাবনা কি আর আছে তোমার?
ভয়!? কিসের ভয়!? কাকে ভয়!? কেন ভয়!? 
পৃথিবীর সবথেকে বড় ডাস্টবিন হল মানুষের মন
এটাকে পরিষ্কার রাখলে
পৃথিবীও পরিষ্কার থাকবে।
অবিনদাদার এ কথা স্মরণ ক'রে
মনকে করো পরিষ্কার,
করো ডাস্টবিন মুক্ত মন।
তুমি নাম পেয়েছ! ভয় কি?
তোমার সঙ্গে নামের নামী আছেন! 
নাম আর নামী অভেদ! 
নাম করো, খুব নাম করো, 
বিপদ ভয়ে পালাবে,
সমস্যা মুখ লুকোবে।
ভীতুরা মরার আগে হাজারবার 
নিজে মরে ও সবাইকে মারে। 
সৎসঙ্গী! নেগেটিভ কথা বলা, কথা শোনা 
বন্ধ করো, বন্ধ করো দৃশ্য দেখা। 
পজিটিভ কথা ভাবো, বলো, শোনো,
দেখো পজিটিভ, করো পজিটিভ
দয়ালের মুখের দিকে চেয়ে, 
দয়ালের কথা স্মরণ ক'রে 
তাঁর নাম করতে করতে
করার বাদাম তুলে পাড়ি দাও অজানার পথে।
ভয় কি! দয়াল আছে। আছে মাথার ওপর,
দয়ালের দয়া বুঝবে সেদিন 
হৃদ মাঝারে রাখো যদি বেঁধে তাঁরে।।









Monday, May 6, 2024

প্রবন্ধঃ লোকসভা ভোট ও প্রতিনিধি নির্বাচন!

২০১৯ এর লোকসভা ভোট শুরু হ'য়ে গ্যাছে। পঞ্চম দফা ভোট শেষ। এখনও দু'দফা ভোট বাকী। সব পক্ষই নেবে পড়েছে ময়দানে তাদের অনুকূলে ভোট টানার জন্যে। আজ রাজনৈতিক দল ও নেতাদের কাছে জনগণ সাক্ষাৎ ঈশ্বর! এই সময়ে নেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় ও আদরের জিনিস হ'লো আম জনতা তা' সে গরীব-বড়লোক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মূর্খ-পন্ডিত, জমিদার-জমাদার যাই-ই হ'ক না কেন!

দেশের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: সাধারণ নির্বাচন। সাধারণ নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভবিষ্যৎ, মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা নির্ভর করে সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের উপর। The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukul Chandra-এর 'রাজনীতি ও রাষ্ট্র' সম্পর্কে বলা বহু কথা ও বাণীর মধ্যে এই প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পর্কে এই স্বল্প পরিসরে তাঁর বলা মাত্র দুটি বাণী তুলে ধরলাম। অতি সরল ও সহজ ভাষায় তিনি বললেন,

"আদর্শতে নয়কো রত
সার্থকযুক্ত নয় জীবন,
শুভাশুভ বুদ্ধিহারা
ব্যর্থ তাহার নির্বাচন।"
"যুগগুরু আর পূর্ব্বতনে
শ্রদ্ধানতি যার মলিন
এমন জনায় প্রতিনিধি
নয়কো করা সমীচীন।"
----------------শ্রীশ্রীঠাকুর।

এই দুই বাণী থেকে সহজেই বোঝা যায় কোন গুণ বৈশিষ্ট্যের অভাব হ'লে কোন প্রার্থীকে জনগণের নির্বাচন করা উচিত আর কোন প্রার্থীকে নির্বাচন করা উচিত নয়। বিশেষ ক'রে পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শ্রীচরণাশ্রিত অনুরাগী ভক্তগণের আগ্রহ থাকা উচিত এই প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর কি বলেছেন তা জানার ও বাস্তবায়িত করার।

যাই হ'ক,
এই সময়ে বিভিন্ন ভাবে ঘরে-বাইরে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে আম আদমি তার মনের কথা আম আদমী সম্পর্কে প্রকাশ করে। তার-ই প্রতিফলন এই কবিতাটা।

সেলাম! তোমায় সেলাম!!!
হায় জনতা...............
তোমার প্রতি দারুণ অভিমানে জানি না সে কোনজন
অশ্লীল চার অক্ষরে তোমায় বিদ্ধ ক’রে
চ’লে গেছিল বৃন্দাবন;
নির্বাচনের প্রতি তীব্র অনীহায়।
দশকটা ছিল সত্তর, যারা আজকের মত
পরিবর্তনটা চেয়েছিল উত্তেজিত মস্তিষ্ক
আর বৃথা আড়ম্বরযুক্ত কল্পনায় অতি সত্বর!
তাদেরই একজন,
ছিল যার দিশাহীন নিজেরই জীবন!
চলে গেছিল বৃন্দাবন!!!
কি ছিল তার স্লোগান!?
“..................জনগণ
রইলো তোর নির্বাচন
চললাম আমি বৃন্দাবন”!

কি ছিল তার মনে?
তোমার প্রতি দারুণ অভিমানে!?
তোমার প্রতি অবিশ্বাস নাকি ঘৃণা
বা অন্য কোন প্রয়াস?
যে প্রয়াসে ওঠে নাভিশ্বাস!!
তুমি ক্ষমতা বদলের নির্ণায়ক
আর নির্বাচনের নিশ্বাস, তবুও
হায়! জনতা তোমাতে নেই বিশ্বাস!!
তুমি ধৈর্য্যের প্রয়োজনে নাকি
অধৈর্য্যে মাথা নাড়াও!
আর যখন নেই কোন প্রয়োজন
ধৈর্য্য আর শান্তির পতাকা ওড়াও!!
তোমার অপার দয়ায় জেনো
মাথা তুলে দাঁড়ায় কেন্নো! তারপর?
মাড়ায় অবলীলায় মাথা তোমার
ধর্ষণে করে সত্তা ছিন্নভিন্ন!
হায়! জনতা তবুও তুমি ধন্য!
তুমিই নিয়েছো নাকি খুঁজে তাঁরে
তোমারে বাঁচাবার তরে
স্বভাবে যে অসভ্য আর বন্য!
লেখাপড়াই দড় হ’লেই কিম্বা হ’লে গণ্যমান্য
তাঁকে ভাবো ভালো!
শিক্ষার প্রতিফলন যে চরিত্রে, স্বভাবে, আচরণে
তা’তে ফেলোনি কোনদিন আলো!
আদর্শ আর ইষ্ঠহীন জীবন যার
তাঁরে সিংহাসন দাও বারবার!!
আর, আঠেরোই পেয়ে ভোটাধিকার
ভেবেছো বুঝেছো তোমরা সবকিছু সবার!
যা বোঝেনি যৌবন পেরিয়ে বার্ধ্যকে আসা
জনতার দরবার!
জনতা তুমি নাকি চাটনি ভালোবাসো!
যার যেমন চাটনি তেমন কাঁদো হাসো!
নির্বাচনী মেলায় বসে হরেক রকম চাটনি,
ঝাল নোনতা টক মিষ্টি বানায় নেতা-নেত্রী!
যার চাটনি যত ভালো তাকেই গ্রহণ করো,
ভালো-মন্দ কি আছে তার ভিতরে না ফেলে আলো!
জনতা তুমিই ঈশ্বর, তুমি মহান।
তোমার স্পর্শে মূহুর্তে শয়তান হ’য়ে যায় ভগবান
আর ভগবান হয় শয়তান!
জনতা তুমিই ঈশ্বর! তুমি মহান!
তাই সেলাম তোমায় সেলাম।।
( লেখা ৭ই মে, ২০১৯ )

Sunday, May 5, 2024

কবিতাঃ মতান্তর হয় হ'ক।

মতের অমিল হয় হ'ক 
মনের মিলনে যেন না পড়ে ছেদ, 
থাকে অমলিন! না থাকে কোনও খেদ,
মতান্তর স্বাভাবিক, নান্তর ডেকে আনে 
কিন্তু পরিণতি অস্বাভাবিক।
মতান্তরে থাকে জোশ, আমিত্বের আস্ফালন, 
হারায় হুঁশ! এটা স্বাভাবিক। কিন্তু জীবন মাঝে 
যদি থাকে দয়াল, 
জীবন খুঁজে পায় পথ, থাকে খুশ!
জীবন খুঁজে পাবে পথ 
যতই থাকুক আমিত্বের ছোবল! 
মতান্তরে হবে না মনান্তর 
যদি সদা বলো মুখে অকপটে 
'হরি বোল! হরি বোল!!
জীবন মাঝে আছে দয়াল 
ভয় কি মোদের আর? 
মতান্তরের তুফান উঠুক 
শক্ত হাতে হাল ধরেছি, 
দয়ালকে নিয়ে পণ করেছি 
একসাথে বাইবো মোরা দাঁড়!!
এইখানেতেই জীবন আছে, 
জীবন মাঝে আলো আছে; 
সেই আলোতেই জীবন খুঁজে পাবি! 
মতান্তরেই পথ আছে যদি দয়াল সাথে যাবি!!
দয়াল আমার বড়ই দয়াল 
সেথায় জীবন খুঁজে পাবি! 
মতান্তরে নাই দোষ মাঝে দয়াল যদি থাকে 
কিন্তু মনান্তরে জীবন হারাবি দয়াল সেথায় কাঁদে!
এসো বন্ধু! হাতটি ধরো! 
একসাথে হাতে হাত রাখি! 
নামের বাদাম তুলে দিয়ে পরাণ খুলে বলি, 
এসো বন্ধু! এসো সবাই,
হেথায় জীবন খুঁজে পাবি!

আবার বলি বন্ধু, মতান্তর হয় হ'ক,
মনে যেন না থাকে কোনও ক্ষোভ! 
দয়ালের দয়ায় সব যায় মিটে, 
মনান্তর হয়না জেনো মোটেই 
দয়ালের দয়ার প্রতি যদি থাকে লোভ!
(লেখা ৫ই মে, ২০১৯)

























কবিতা/গানঃ দয়াল আর ভয়াল।

তাঁতি খাচ্ছিলে তুমি তাঁত বুনে
কাল হ'লো তোমার এঁড়ে বাছুর কিনে।
এঁড়ে উঠবে যখন বেড়ে, জেনো
তোমার ঘুম নেবে তখন কেড়ে।

তখন যদি বলো
এমন কেন আমার হ'লো!?
লাগছে না ভালো কিছুই শালা
মনটা বলছে সব ছেড়েছুঁড়ে পালা।

মুখ দিয়ে যদি এমন অশুভ কিছু বলো
দেখবে মনে হবে,
কে যেন বলছে আড়াল থেকে
সময় হয়েছে যাবার, এবার চলো।
দয়াল তোমায় কিন্তু সেদিন
যদি ভাবো এমন রাতদিন
যাবে চলে, মা অন্নপূর্ণার মত ছেড়ে।

এটা জেনো তুমি নিশ্চিত
দয়াল হবে যেদিন বঞ্চিত
তোমার বিশ্বাসের ঘর হবে যখন ফাঁকা
দেখবে সবাই দিচ্ছে তোমায় ধোঁকা।
ধোঁকা খেয়ে শেষে হবে কিন্তু নিমেষে
তুমি আস্ত একটা হদ্দ বোকা গাধা।

তাই তো বলি,
এঁড়ে যত ইচ্ছে উঠুক বেড়ে
নিক সে তোমার রাতের ঘুম কেড়ে
হাসি মুখে নিও কিন্তু সব মেনে
এইভেবে, যাচ্ছো তুমি হ'তে
সফল একজন বেনে।
আখেরে লাভ তো হ'লো তোমারি
দিনের শেষে হবে তুমি একজন মস্ত ব্যাপারী।
যতই হ'ক না কেন খাটনি
দিনের শেষে খাবে তুমি চাটনি
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সেদিন ব'লো
আঃ! কি আরাম যে আজ হ'লো!
এটাই দয়ালের দয়া, একেই বলে আশীর্বাদ,
বুঝবে সেদিন তুমি, এর কি মিষ্টি মধুর স্বাদ!
তাই তুমি যত খুশী খাও চাটনি, কিন্তু
মনে রেখো দয়াল সাথে সেদিন
যেন হয় না কোনও বেইমানি।

সেদিন কিন্তু শয়তান পিছন পিছন
আসবে মারতে ছোবল,
মনে রেখো কেবল,
তোমায় চাইবে করতে বেসামাল
বিত্ত বৈভব সেদিন তোমায় করবে যখন সেলাম।
সেদিন শয়তানকে ব'লো তুমি হেসে
লাভ হবে না হেথায় এসে
তুমি যাও বন্ধু সেথায়
তুমি পাবে খোরাক যেথায়
হেথায় মাথার পরে আমার
আছে বসে দয়াল
চাও যদি তুমি করতে আমার ক্ষতি
দেখবে তুমি তাঁর রূপ ভয়াল।

Saturday, May 4, 2024

প্রবি সমাচার ৩

নির্বাচন শেষ হ'লো, শেষ হ'লো গণনা, শেষ হ'লো অপেক্ষা ; রাজ্য শাসন কে করবে, কার হাতে থাকবে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা সেই জানার অপেক্ষার হ'লো শেষ, হ'লো সেই প্রশ্নের অবসান।
কিন্তু যার শেষ হ'লো না, কোনদিনই হয় না তা হ'লো নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী হিংসা, মারামারি-কাটাকাটি।
এই নির্বাচনে প্রতিবারের মত এইবারও প্রকট হ'য়ে উঠেছিল হিন্দু মুসলমানের সম্পর্ক, হিন্দু ধর্ম্ম ও মুসলমান ধর্ম্মের প্রসঙ্গ যার শুরু হ'য়েছিল সেই যে ব্রিটিশ চলে গিয়েছিল দেশ ছেড়ে আজ থেকে ৭৪বছর আগে তখন থেকে। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ডিভাইড অ্যান্ড রুল তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন ক'রে ও দেশকে দু'ভাগে ভাগ ক'রে দিয়ে চলে গিয়েছিল ব্রিটিশ আর সেই তখন থেকে ব্রিটিশের পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরে সুযোগসন্ধানীরা তার সুযোগ নিয়ে ছাই চাপা আগুনের মত ধিকি ধিকি ক'রে জ্বালিয়ে রেখে চলেছে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ডিভাইড অ্যান্ড রুল তত্ত্ব নিজেদের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখতে। আর সেই থেকে দুই টুকরো দেশ ভারত ও পাকিস্তান আর বর্তমানে আরও এক টুকরো ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ পান ক'রে চলেছে ব্রিটিশদের দ্বারা সেই ভাগ ক'রে সমস্যা সমাধানের বিষাক্ত বিষ।
সেই সময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দেশের তৎকালীন প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের কাছে দেশভাগের ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে তাঁর সাবধান বাণী পৌঁছে দিয়ে বলেছিলেন, " Dividing compromise is the hatch of animosity." (ভাগ ক''রে সমাধান করার অর্থ তা দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো।) যার প্রমাণ আজ ৭৪ বছর ধ'রে প্রতিমুহুর্তে পেয়ে চলেছি। কিন্তু ঠাকুরের কথার কোনও পাত্তা দেয়নি সেই সময়ের দেশের নেতৃবৃন্দ। কারও পক্ষে এই ভয়ংকর শত্রুতার তা বন্ধ করা আর বোধহয় সম্ভব নয় যতদিন না উভয় সম্প্রদায়ের সুচিন্তিত সৎ প্রকৃত ধর্ম্মপ্রাণ মানুষ জেগে ওঠে।
এই লেখাটা লিখলাম এইজন্যে যে দুই বন্ধুর মধ্যে (একজন হিন্দু আর একজন মুসলমান) আলোচনা হচ্ছিল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে। মুসলিম বন্ধু তার হিন্দু বন্ধুকে জিজ্ঞেস করছিল নানা প্রশ্ন। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দর্শন কি, তাঁর ও সৎসঙ্গীদের ধর্ম্ম কি, তিনি অবতার কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। পুরোটা পড়লাম ভালো লাগলো। ভালো লাগলো মুসলিম ভাইয়ের প্রশ্নগুলো, খুব সুচিন্তিত গভীর প্রশ্ন। ভালো লাগলো ধীর স্থিরভাবে দেওয়া হিন্দু তথা সৎসঙ্গী ভাইয়ের উত্তরগুলো। মনটা ভ'রে গেলো! প্রভূত আনন্দ পেলাম। সঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছিল যৌবনের দিনগুলির কথা। ঠাকুর নিয়ে, ঠাকুরের দর্শন নিয়ে, ঠাকুরের মিশন নিয়ে, ঠাকুরের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বলা মতামত নিয়ে কত প্রশ্ন যে কতজন করতো উত্তর দিতে দিতে হাঁপিয়ে যেতাম। ছোটোবেলা থেকে কোনদিনই কোনও প্রশ্ন করিনি কাউকে। মা বাবাকে দেখে দেখে ঠাকুরকে ভালবাসতে শিখেছিলাম। ঠাকুরকে ভালো লাগতো খুব। ঠাকুরের অপূর্ব মিষ্টি চেহারা আর ভুবন ভোলানো হাসি ছড়ানো মুখের ছবি দেখতে দেখতে সম্মোহিত হ'য়ে যেতাম। বই পড়ার অভ্যাস ছিল। বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা উপন্যাস পড়তাম। ইয়াং ফ্লেমিং-এর লেখা জেমস বন্ড বড্ড টানতো, ভালো লাগতো আগাথা ক্রিসটি, কোনান ডয়েল এবং অন্যান্য দেশী ও বিদেশী গোয়ান্দা কাহিনী ভালো লাগতো পড়তে। অনেক বই পড়তাম। অনেক ছোটোবেলায় বই-এর ফাঁকে লুকিয়ে গোগ্রাসে গিলতাম ডিটেকডিভ দীপক কুমারের ছোট্ট চটি বই। এখন আর অত মনে নেই। তবে একজনের নাম আজও মনে আছে, মনের মধ্যে গেঁথে আছে। তাঁর নাম সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। প্রথম দিকের তাঁর প্রায় সব উপন্যাস পড়া আছে কিন্তু শেষের দিকে আর পড়িনি, পড়তে ইচ্ছে হয়নি। ততদিনে জ্ঞানের রত্নভান্ডারের সন্ধান পেয়ে গেছি। মা প্রায়ই বলতেন, "সত্যানুসরণ ছোট্ট বইটা পড়ে দেখ না, কত বই পড়িস, এই ছোট্ট বইটা তো পড়ে দেখতে পারিস, এতে হাতি আছে না ঘোড়া আছে পড়ে তো দেখতে পারিস। ভালো না লাগলে পড়বি না।" মায়ের কথা মনে পড়ে গেল, আজ মাঝে মাঝে বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে। মায়ের সেই কথা শুনতাম আর হেসে বলতাম হ্যাঁ হ্যাঁ পড়বো, নিশ্চয়ই পড়বো। কিন্তু পড়া আর হ'য়ে উঠতো না। তারপর বাড়িতে আলোচনা পত্রিকা আসতো। মা বলতেন, "আলোচনা পত্রিকাটা একটু উল্টে পাল্টে দেখ, ভালো লাগবে। অনেক কিছু জানতে পারবি।" দিন চলে যেত কিন্তু পড়বো পড়বো ক'রে আর পড়া হ'য়ে উঠতো না।
কিন্তু হঠাৎ একদিন হাতে তুলে নিলাম 'সত্যানুসরণ' বইটা, উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম 'আলোচনা' পত্রিকাটা। তারপরেই যা হবার হ'য়ে গেল। প্রশ্ন করা হ'য়ে গেল চিরদিনের মত বন্ধ। প্রশ্ন শুনতেও আর ইচ্ছা করতো না। তর্ক করতে এলে বা করতে গেলে মাথা যেত গরম হ'য়ে। তাও বন্ধ হ'য়ে গেল। তর্ক করতে ইচ্ছে করতো না কারও সঙ্গে। বন্ধ হ'য়ে গেল সবার সব লেখা গল্প উপন্যাস পড়া। প্রিয় ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই পড়াও বন্ধ হ'য়ে গেল চিরতরে। সত্যানুসরণ আর আলোচনা পত্রিকায় প্রকাশিত অনুলেখক কেষ্টদা, প্রফুল্লদা, রেবতীদা, মণিলালদা, দেবীদা, আতপেন্দ্রদাদের সংগৃহীত ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন দেশবিদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিদিনের কথোপকথন পড়তে পড়তে কি যে হ'লো এর ব্যাখ্যা লিখে বোঝাতে পারবো না। এটা সম্পূর্ণ উপলব্ধির ব্যাপার। আর এই যে অনুলেখক যাঁদের নাম লিখলাম তাঁরা কি অসীম দক্ষতায় যে The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukul Chandra-এর জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথোপকথন কি নিখুঁত দক্ষতায় তৎক্ষণাৎ তৎপরতার সঙ্গে ডায়েরিতে ধ'রে রাখতেন তা এক অসীম বিস্ময়!!!! স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ, আবহাওয়া, প্রকৃতির বর্ণনা এবং ঠাকুরের ওঠা, বসা, চলা, কথা বলা, তাঁর উপস্থাপনা, তাঁর ব্যাখা ও বিশ্লেষণ, তাঁর হাসি, তাঁর আনন্দ, তাঁর মজা, তাঁর দুঃখ, তাঁর কষ্ট, তাঁর আফসোস, তাঁর দেশ ও দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, তাঁর ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিয়ে দুশ্চিন্তা, তাঁর মায়া মমতা, তাঁর রাগ, তাঁর ভর্তসনা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিটি মুহুর্তের নিখুঁত ভঙ্গি উঠে এসেছে তাঁদের মহাশক্তিশালী কলমে! প্রফুল্লদার ২২খন্ড 'আলোচনা প্রসঙ্গ' গ্রন্থে দুনিয়ার এমন কিছু নাই যা ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন জনের কথোপকথনের সময় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উঠে আসা বিষয় লিপিবদ্ধ হয়নি। মানুষের সমস্ত সমস্যা সমাধানের দিক নির্দেশ দিয়ে গেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর যা ছাপার আকারে লিপিবদ্ধ করা আছে প্রফুল্লদার 'আলোচনা প্রসঙ্গ' ২২ খন্ড ও অন্যান্য অনুলেখক দ্বারা সংকলিত গ্রন্থ রাজিতে। বহু মানুষের উপস্থিতিতে কথোপকথন অতি দ্রুততার সঙ্গে কি ক'রে লিখতেন তা ভাবলে আজও রহস্য লাগে। ঠাকুরের অসীম দয়া না হ'লে এরকম প্রতিটি মুহূর্তের উপস্থিতি নিখুঁত ধ'রে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আর কি অসীম শক্তিশালী কলমের ধার তাঁদের তা যারা না পড়বে তা বিশ্বাস করা অসম্ভব তাদের পক্ষে। ইচ্ছে করলে এই মহামানবেরা তাঁদের কলমের শক্তি দিয়ে অকল্পনীয় অসাধারণ অভূতপূর্ব মেধাকে কাজে লাগিয়ে বহু সাহিত্য সৃষ্টি ক'রে যেতে পারতেন কিন্তু তাঁরা তা করেননি। করেননি কারণ তাঁরা এবার এসেছিলেন শুধু নয় তাঁদের নাবিয়ে আনা হয়েছিল, ঠাকুর স্বয়ং তাঁদের নাবিয়ে এনেছিলেন এবারে তাঁর ব'লে হাজার হাজার ছড়া, বাণী, গান, কবিতা, কথোপকথন ইত্যাদি ধ'রে রাখার জন্য!!!! তাঁরা তাঁদের জীবনকে জীবন্ত ঈশ্বরের কাজে উৎসর্গ ক'রে গেছেন।
যাক এত কথা লিখলাম তার একটাই কারণ; সৎসঙ্গী গুরুভাই আর মুসলিম ভাইয়ের কমেন্ট পড়তে পড়তে মনে হ'লো নিজের জীবনের কথা আর তাই লিখলাম এই লেখা। কারও কথোপকথন যখন নিজের জীবনের কথা মনে পড়িয়ে দেয় তখন সেই কথোপকথন সার্থক হয়। তাদের উভয়ের কথোপকথন, মুসলিম ভাইয়ের নানা প্রশ্ন পড়তে পড়তে আমার নিজের জীবনের কথা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরের বাণী মনে পড়ে গেল,
"প্রশ্ন তোমার অস্ত যাউক
রহুক যুক্তি সরে
তোমার আজ্ঞা করবো পালন
মরণ স্তব্ধ ক'রে।"
তাই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র ক'রে নির্বাচনোত্তর ও নির্বাচনপূর্ব মুসলমান সম্প্রদায়কে নিয়ে ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ মুসলিম ভাইকে তার জানার তীব্র আগ্রহ, ইচ্ছা, ক্ষুধা ও অনুসন্ধিৎসা দেখে তাই আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, জানা, আরও জানা, আরও আরও জানার প্রকৃত আগ্রহ বই পড়া আর সৎ সঙ্গের মধ্যে দিয়েই জন্মায়। তাই একটাই বইয়ের নাম আমার মুসলিম ভাইকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'ইসলাম প্রসঙ্গে' বইটা শুধু পড়তে বলবো। সেখানে ঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন বিজ্ঞানী শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য ও মৌলবী মহম্মদ খলিলর রহমন দাদা। সেই বহু জটিল ও কঠিন প্রশ্ন ও তার যথাযথ ফাঁকহীন উত্তর জানার মধ্যে দিয়ে ইসলামের সার্ব্বজনীন স্বরূপ ও রসুলের প্রতি অস্খলিত অটুট অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রেমের উদ্বোধন হ'তে পারে আমার মুসলিম ভাইটির; যা বর্তমান জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যুব সমাজের অস্তিত্ব রক্ষা ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য একান্তই প্রয়োজন।
তাই কথাগুলি বললাম। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। ( লেখা ৪ই মে, ২০২১ )

প্রবি সমাচার ৪

মানুষের মনের মধ্যে কত রকমের যে ঢেউ-এর ওঠা পড়া চলে তার সীমা পরিসীমা নেই। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ-এর মত মন সমুদ্র যখন উত্তাল থাকে বৃত্তি-প্রবৃত্তির লাগামছাড়া টানে তখনই ঘটে বিপত্তি। এই রিপু তাড়িত পাগলা মনে, বিকৃত মনে যখন শিক্ষা সংস্কৃতির লাগাম পড়ে, এই মন যখন উল্টে নম অর্থাৎ নত হয় কোনও জীবন্ত আদর্শ বা জীবন্ত ঈশ্বরের চরণে তখন মন সবকিছুতে সুন্দর দেখে। বিশ্রীর মাঝেও লাগাম টেনে খুঁজে নেয় সুন্দরকে। পুরুষোত্তম রামকৃষ্ণ একটা সুন্দর সহজ কথা বলেছেন, মনের মধ্যে খারাপ যাই-ই আসুক, না করলেই হ'লো।

কিন্তু মানুষ রিপুতাড়িত পাগলা মনের ঘানিতে প'ড়ে পিষ্ট হ'তে হ'তে শরীরে-মনে ক্ষতবিক্ষত জীবন কাটাচ্ছে। আবার এই মন দিয়েই মানুষ প্রতিটি রিপুকে যথাযথ প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির কাজে মগ্ন থেকে রিপুকে সঠিক পথে উপভোগ করছে। প্রতিটি রিপুই আমার জীবনকে ভোগ করার জন্য। কোনটাই আমার অস্তিত্ব বিরোধী নয়। প্রতিটি রিপু আমার অস্তিত্বকে আমি যতদিন বাঁচবো ততদিন পোষণ দেওয়ার জন্য ঈশ্বর আমি যেদিন ভ্রূণ আকারে মাতৃ জঠরে আবির্ভূত হ'য়েছিলাম তখনি সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মাতৃজঠর থেকে এই পৃথিবীতে পা রাখার পর ধীরে ধীরে বড় হ'তে হ'তে সঠিক পরিচালনার অভাবে এই রিপুরা তাদের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে আমাদের ইচ্ছেটা আমাদের-ই এই স্লোগান তুলে আমার জীবনের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যেমন ইচ্ছা তেমন চালাতে শুরু করেছে। তখন আমরা লাগামছাড়া বিশৃঙ্খল উচ্ছৃঙ্খল রিপু দ্বারা তাড়িত হ'য়ে ছয় রিপুর বৃত্তে পিষ্ট হ'তে হ'তে চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বক এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে চালিত করছি। এক কথায় সৃষ্টিকর্তা আমি আসার সময় আমার সাথে ছয়জন চাকর দিয়ে আমায় পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন আমাকে দেখভাল করার জন্য, আমাকে সাহায্য করার জন্য যাতে আমি এই পৃথিবীতে অল্পদিনের জন্য আসা মেহমান হিসেবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে প্রকৃষ্ট পন্থায় ভোগ করতে পারি ও এই জীবনকে, জীবনের আসাকে সার্থক ক'রে তুলতে পারি।
কিন্ত আমরা তা পারলাম না, পারছি না। প্রত্যেকেই শরীরে মনে আত্মায় কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি। আর এই ব্যর্থ ও আনুন্দ বঞ্চিত হ'য়ে চলে যাওয়ার জন্য আমি নিজে দায়ী। হয়তো প্রথম জীবনে যতদিন মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম ততদিন আমার মা-বাবা আমায় সঠিক রাস্তায় সঠিক ভাবে না চালানোর জন্য আমার জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিন্তু যেদিন আমি বড় হয়েছি, ভালোমন্দ জ্ঞান হয়েছে তখন এই ক্ষতবিক্ষত জীবনকে নতুন ক'রে বাকী জীবন চালাবার জন্য পথের সন্ধান করিনি কিম্বা সন্ধান পেলেও তা গ্রহণ করিনি। বরং আরো জাহান্নামের পথে জীবন গাড়িকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। আর তার ফল যা পাবার আমি পেয়েছি ও পেয়ে চলেছি। আর আমার পরবর্তী বংশধর তার খেসারত দেবে যতদিন না নিজে নিজেকে জাহান্নামের গাড্ডা থেকে তুলে আনে।

তাই যদি এখনও যে কয়দিন বাঁচবো, যে ক'দিন বাঁচার আশা আছে আসুন কখনো না হওয়ার চেয়ে ও একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হ'লেও কিছুটা হ'লেও মনের গলায় লাগাম পড়ায়, মনকে নিয়ন্ত্রণ করি, শাসন করি আর মনকে উল্টে নম করি অর্থাৎ নমন করি, নত করি জীবন্ত ঈশ্বরের চরণ তলে চলন পুজো করবো ব'লে। দেরীতে হ'লেও বাকী জীবন জীবন্ত ঈশ্বরের চরণ তলে বসে চরণ পুজো নয় তাঁর চলনকে পুজো করি ও বাকী জীবন উপভোগ করি আর নিজের অভিজ্ঞতা উপলব্ধি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ব্যয় করি অস্খলিত অকপট ভাবে।
( লেখা ৪ই মে, ২০২১ )

Friday, May 3, 2024

গানঃ আশা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে

আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে
আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে
প্রাণে প্রাণে প্রভু আছে
প্রাণ সখা মধু হাসে।
আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে।

আজকে মোদের বড়ই সুখের দিন
আজকে মোদের বড়ই সুখের দিন
আজ বৃত্তির বাঁধন ছিঁড়ে প্রভুর হয়েছি অধীন
আজ রিপুর বাঁধন ছিঁড়ে প্রভুর হয়েছি অধীন
আহা হয়েছি অধীন।

আজ এলাম ফিরে প্রভুর ঘরে
থাকবো প্রভুর চরণ ধ'রে
এলাম মোরা ফিরে ঘরে
চলবো মোরা চরণ ধরে
ভরবো জীবন চলন সুরে
নোতুন দিনের কথা ভাসে
মনে নোতুন দিনের কথা আসে
মনে ভাসে, ফিরে আসে।

আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে
আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে
প্রাণে প্রাণে প্রভু আছে
প্রাণ সখা মধু হাসে।
আহা কি আনন্দ মনেতে প্রাণেতে।

প্রবন্ধঃ বাংলা ও বাঙ্গালিঃ বাংলা পক্ষকে প্রবি।

বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়। ঘটি বাঙ্গাল বাঙালি নিয়ে তাঁর মিলেমিশে থাকার কথা ভালো লাগলো, ভালো লাগে আরও অন্যান্য বিষয়ে তাঁর বক্তব্য।
বাংলা পক্ষকে একজন বাঙালি হিসেবে কিছু মনের কথা তুলে ধরছি এই ভিডিওর মাধ্যমে।

বাংলা দেশে জন্ম মার, এ বাংলায় জন্ম আমার
দু'বাংলায় দু'জনার জন্ম ছিন্ন হ'ইলো বন্ধন কার?
এ পারেতে রাম রহে ওপারেতে রহিম
ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরে সর্ব্বনাশা একি দিন।

গঙ্গা আর পদ্মার পাড়ে এক খন্ড জমি আছে
দুই দিকের দুই নদীর ঢেউ রাম রহিমের চোখে নাচে।
একই আশা একই ভাষা হৃদয় জুড়ে ভালোবাসা
এপারেতে রাম কাঁদে ওপারেতে রহিম একা।

এপার বাংলা ওপার বাংলা আমার তোমার একই বাংলা
ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরে সর্ব্বনাশা একি খেলা।
গঙ্গা আর পদ্মার হাওয়া এপার ওপার বাংলায় নাচে
মায়ের ছেলের হৃদয় আশঙ্কাতে কেন কাঁপে?

জল্ভরা নয়ন দেখেছিলাম মায়ের
নাড়ীর টান ওপারেতে জীবন কাটে এপারে
স্মৃতিকথায় হৃদয় কাঁপে জল ভরে চোখে।
এপারেতে বৈধব্য বেশ ওপারেতে কৈশোর নাচে।

এর আগেও একবার বাংলা পক্ষকে ইস্কনের সাধু অমোঘ লীলা দাসের শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবিবেকানন্দকে অপমান করার জন্য ও হিন্দুধর্মের সম্পর্কে ঘৃণা, আক্রোশ, বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘৃণ্য ক্ষমাহীন অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলাম। জানি না সেই চিঠি তাঁরা পড়েছেন কিনা। কারণ কোনও সাড়া পাইনি। হয়তো চোখে পড়েনি কিংবা চোখে পড়লেও হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ব'লে মনে করেনি। পড়লে ভালো না পড়ে থাকলেও কোনও আপত্তি বা অসুবিধা নেই। আমার বক্তব্য আমি জানিয়েছি। এখানেও আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরছি বাংলা পক্ষের উদ্দেশ্যে তাঁদের বাংলা রাজ্য, বাংলা ভাষা ও বাঙালী কৃষ্টি-সংস্কৃতির পক্ষে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পূর্বের ঐ চিঠির মত এখানেও কয়েকটি আমার একান্তই মনের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে।

বাংলা চিরকাল বঞ্চিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের কথা ছেড়ে দিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ ৭৬বছর হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার সময় থেকেই বাংলা ও বাঙ্গালীকে বঞ্চিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হ'তে হয়েছে। দেশ স্বাধীনতায় বাঙালীদের অবদান দেশ মনে রাখে না। মনে রাখে না বাঙ্গালীই। মাঝে মাঝে একটু রাজনৈতিক কারণে কিংবা জন্মদিন টন্মদিনের কারণে একটু বাংলা ও বাঙালি ব'লে একটু স্মৃতির অম্ল ঢেঁকুর তোলে তারপর আবার সেই জে কে স্টীল। দেশভাগে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বাংলা ও পাঞ্জাবের, বাঙালী ও পাঞ্জাবীর। আর কারও কোনও রাজ্যের রাজ্যবাসীর এমন নির্ম্মম নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক প্রাণঘাতী রক্তক্ষয়, জীবনক্ষয়, সম্পদ ক্ষয় হয়নি, হ'তে হয়নি বাস্তুহারা। এর জন্যে যার বা যে জাতের হাত বা প্ররোচনা থাকুক না কেন, দায়ী দেশী-বিদেশী যে বা যারাই হ'ক না কেন এর জন্য প্রধান দায়ী ছিল বাংলার জন্য বাঙ্গালীরাই। দেশ স্বাধীনতার সময়েও বাঙালী বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে ছিল। কোনও বাঙালী যখনই বৃহত্তর কোনও মঙ্গল কার্যে এগিয়েছে তখনই পিছন থেকে ছুরি মেরেছে বাঙালি। অসযোগীতার হাত বাড়িয়ে ভন্ডুল ক'রে দিয়েছে মঙ্গল যজ্ঞ বাঙালি। সৃজনশীল বাঙ্গালীকে টিকতে দেয়নি বাঙালী বাংলার বুকে। বাংলার সমস্ত মনীষীি অপদস্ত হয়েছে বাংলার বুকে বাঙ্গালীর দ্বারাই। মহাপরিপূরণকারী বাঙ্গালীকে অশ্রদ্ধা অপমান অসম্মান করেছে বাঙালি। আর তা চেয়ে চেয়েও দেখেছে বাঙালি। ধর্ম একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে ও করেছিল সেইসময়। ধর্মপ্রাণ ঈশ্বরবিশ্বাসী বাঙালী যারা তাঁরাই ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে মানতে চাননি, স্বীকৃতি দেননি। তা অন্যরা মানবে না এটা হ'তেই পারে। ধর্ম মানে না ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী প্রতিষ্ঠিত প্রাজ্ঞ, বিদ্বান, পন্ডিত বাঙালী উপেক্ষা করেছে, অবহেলা করেছে, অবজ্ঞা করেছে তাঁদের অর্থাৎ বাঙালী পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বরকে। তারা ওসব জীবন্ত ঈশ্বর টিশ্বর, ভগবান টগবান, পুরুষোত্তম টোত্তম মানে না, ধার ধারে না। আর যারা প্রাজ্ঞ, বিদ্বান, পন্ডিত বাঙালী ধর্ম ঈশ্বর মানে তো ধর্মের নামে অসাড় কিছু ক্রিয়াকলাপ মানে যার সঙ্গে চরিত্র গঠনের কোনও সম্পর্ক নেই, আর ঈশ্বর বা ভগবান মানলেও ঐ আকাশের ঈশ্বর বা ভগবান, বোবা বা অমূর্ত ভগবান মানে।

তাই এই ধর্মের দেশে তিনি যতবার এসেছেন ততবার তিনি অপমানিত ও লাঞ্ছিত হ'য়েছেন ধর্ম্ম ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী বাঙালীদেরদের হাতে এবং সবচেয়ে দুঃখের, অপমানের ও লজ্জার বিষয় অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছেন এখনও হ'য়ে চলেছেন ধর্ম্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী বাঙালীদের হাতে। বিশেষ ক'রে বাংলার বুকে The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে থাকতে দেয়নি, টিকতে দেয়নি, সাহায্য করেনি তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশে দেশনেতারা ও তৎকালীন ও বাংলার বিশিষ্ট বাঙ্গালিরা। এবং এ বাংলায় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু থাকার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি এ বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা এমনকি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা থেকে চলে আসার পর এ বাংলায় ঠাকুরের থাকার ও তাঁর ওপারের স্বাধীতার সময়ের দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিশাল আশ্রমকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাংলায় পান্ডুয়ায় ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দিতে রাজী হয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিধান চন্দ্র রায়ের মানসিকতা ছিল তা কেটে ৮০০ বিঘে প্রদান করার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর সেই প্রস্তাব বাতিল ক'রে দেন, কারণ তাঁর যে স্বপ্ন ছিল তা রুপায়িত করতে ৮০০বিঘা যথেষ্ট বিবেচিত ছিল না তাঁর কাছে। ১৯৪৭ সালে যখন তিনি ওপার বাংলায় তাঁর বিশাল আশ্রম যার তৎকালীন মূল্য ছিল দেড় কোটি টাকা সেই বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে খালি হাতে চলে এসেছিলেন তখন এ বাংলায় ৮০০ বিঘা জমি তাঁর কাছে কোনও মূল্য ছিল না? কেন? ১ বা ২ বিঘা জমি নয় ৮০০ বিঘা জমি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন!? কেন? যখন তাঁকে নিয়ে এখনও এপাড় বাংলা ও ওপাড় বাংলার বুকে বাঙ্গালীরা অকথ্য কুকথ্য অশ্লীল ভাষায় প্রতিদিনই ফেসবুকে গালাগালি ক'রে চলেছে, ক'রে চলেছে নানারকম দৃষ্টিকটু অশ্লীল ছবি পোষ্ট, মিমস ইত্যাদি। মিম বানানোর জন্য নাকি সৃজনশীল বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হয়। মিম ভালমত বোঝার মাধ্যমে আপনার চিন্তাশীলতার গভীরতা যেমন প্রকাশ পায় তেমনি যিনি meme বানাচ্ছেন তার চিন্তাধারা এবং বুদ্ধির পরিচয়ও পাওয়া যায়। মিমের মাধ্যমে Sence of humour বা হাস্যরস ধারণা করা যায়। মিম এখন জনপ্রিয় বিষয় যা জাগতিক কিংবা দৈনন্দিন বিষয় থেকে শুরু করে সমালোচনামূলক জীবন এবং বিশ্বের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার উপর তৈরী করা হয়। যাই হ'ক, কাউকে আঘাত ক'রে, মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে, মিথ্যে অপবাদ দিয়ে, কুৎসা ক'রে, কারও চরিত্র হনন ক'রে মিম তৈরী করাকে যদি সৃজনশীল সৃষ্টি আখ্যা দেওয়া হয়, চিন্তাশীলতার গভীরতা ব'লে ধরা হয়, উৎকৃষ্ট Sence of humour বা হাস্যরস ধারণা ব'লে তকমা দেওয়া হয় তাহ'লে তার ফলে যদি সমাজ, সভ্যতার বিকাশ ব্যাহত হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষা ও রুচির মান নষ্ট হয়, বোধের মৃত্যু ঘটে, বুদ্ধি বন্ধ্যা হ'য়ে যায়, ব্যক্তিত্ব বিনষ্ট হয়, সস্তা ও হালকা মানসিকতার অধিকারী হ'য়ে ওঠে, মানুষের সিরিয়াস চিন্তা করার শক্তি নষ্ট হয়, ভারসাম্যহীন চরিত্র গড়ে ওঠে, শুধু নিম্নমানের প্রবৃত্তিমুখী রিপুতাড়িত হাস্যরসের মধ্যে ডুবে থেকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্রেন সেলকে কোলাপ্সড ক'রে দেওয়া হয় আর এটাই যদি বাক স্বাধীনতার নামে উচশৃঙ্খলতার প্রশ্রয় দেওয়া হয় আর তা' যদি সমাজের পন্ডিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞ এককথায় প্রাজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত হয় ও সাংবিধানিক অধিকার হয় তাহ'লে মানব সভ্যতা ধ্বংস অনিবার্য। সেদিন এমন একদিন আসবে ঠাকুরের কথায় মনুষ্বত্বের মুল বুনিয়াদ লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। মনুষত্বের মূল বুনিয়াদ নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে চারপাশের ঘটনা তার প্রমাণ। আম আদমী থেকে অসাধারণ আদমী সবাই চুপ। মহাভারতের কৌরবের রাজসভার মহাবলী প্রাজ্ঞ ভীষ্মদের কানে আঙ্গুল, চোখে আঙ্গুল, মুখে আঙ্গুলের যুগ ফিরে এলো বুঝি!

যাই হ'ক বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ট বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ৬০০০ হাজার বিঘার পরিবর্তে ৮০০ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন! কারণ তিনি নিজের জন্য এই জমি কখনো চাননি। ওপার বাংলায় পাবনা হিমায়েতপুর গ্রামে বিশাল জনবসতি তিনি গড়ে তুলেছিলেন পারিপার্শ্বিক সহ সবাইকে নিয়ে বাঁচা-বাড়ার উদ্দেশ্যে। যা তৎকালীন প্রায় সমস্ত দেশবরেণ্য দেশনেতারা দেখে এসেছিলেন। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সম্ভবত শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল আশ্রম ও তাঁর বহুমুখী বিশাল কর্মকান্ড সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলেই তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অন্ধকারে ছিলেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর এ বাংলা ছেড়ে চলে গেলেন তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খন্ডের দেওঘরে। আজ বর্ধমানের পান্ডুয়ায় যদি গড়ে উঠতো ৬০০০ হাজার বিঘের ওপর শ্রীশ্রীঠাকুরের নব বৃন্দাবন আশ্রম তাহ'লে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থান ও বাংলার পরিচিতি বিশ্বের দরবারে কোথায় পৌঁছে যেত তা অকল্পনীয়। কিন্তু সেদিন তা বুঝতে চায়নি সমাজের অন্ধ মহাপন্ডিত, মহাজ্ঞানী, মহাবীর রথী মহারথী আজকের বুদ্ধিজীবী ভীষ্মরা। সেদিনও ছিল ও আজও ঘুমিয়ে আছে মহাত্মা ভীষ্মেরা। অথচ ১৯৪৭ সালের তিন বছর পরেই ১৯৫০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডঃ বিধান চন্দ্র রায়কে প্রবল প্রতিদ্বন্ধী কম্যুনিষ্ট নেতা মহম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে জয়ী করাবার জন্য শ্রদ্ধেয় প্রবল পরাক্রমী বালকৃষ্ণ কাপুর দা যিনি পূর্বে ছিলেন প্রভু রাম ভক্ত ও হনূমান ভক্ত পরে শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত হলেন সেই ভক্তপ্রবর বাল্কৃষ্ণ কাপুরদা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে বিধান চন্দ্র রায়ের আপত্তি ও বিরক্তি সত্ত্বেও শুধুমাত্র ঠাকুরের নির্দেশকে বাস্তবায়িত করবার তাগিদেই নিজের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও বিশাল সৎসঙ্গী মহলে প্রচার করতে থাকেন। সেদিন বালকৃষ্ণ কাপুরদাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে অফিসে ডেকে শ্রদ্ধেয় ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের বলা, "Why are you creating problems in my campaign? I do not need your help." ( আমার নির্বাচনী প্রচারে তোমরা অসুবিধা সৃষ্টি করছো কেন? তোমাদের কোনও সাহায্যের আমার প্রয়োজন নেই।) এই কথা বলার উত্তরে সেদিন শ্রদ্ধেয় বালকৃষ্ণ কাপুরদা ঘুরে দাঁড়িয়ে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, "I am not here to serve you, but to follow the order of my Lord and I shall do so to fulfil fis command, whether you like it or not." ( আমি আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমি এখানে আসিনি। এসেছি গুরুর আদেশ পালন করার জন্য। এবং তাঁর সেই আদেশকে পূর্ণ করার জন্য আমার যা যা করণীয় আমি তাই তাই করবো, তা আপনি পছন্দ করুন বা নাই-ই করুন।) ভোটের রেজাল্ট বেরোলে দেখা যায় মাত্র ৪০০ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। বাংলার নবরূপকার হলেন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। বালকৃষ্ণকাপুরদা যখন দেওঘরে ফিরে আসেন নির্বাচন শেষে তখন শ্রীশ্রীঠাকুর কাপুরদাকে দেখেই আনন্দে হাসতে হাসতে ব'লে উঠেছিলেন, "ঐ দ্যাখ কিং মেকার আসছে, বাংলা বেঁচে গেল। সেদিন সৎসঙ্গীদের ভোট যদি যুক্ত না হ'তো বাংলার পরিণতি কি হ'তো তা একমাত্র জীবন্ত বিধাতাই জানতেন। শ্রীশ্রীঠাকুর কিন্তু বাংলার বুকে থাকতে না পারার, পান্ডূয়ায় ৬০০০ হাজার বিঘা জমি না পাওয়ার যন্ত্রণা মনে রাখেননি। বিধান চন্দ্র রায়কে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। কিন্তু সেদিনও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় শ্রীশ্রীঠাকুরকে বুঝতে পারেননি।

কিন্তু বাঙালী যারা আজও শ্রীশ্রীঠাকুরের কুৎসা করেন, ঠাকুরকে নোংরা গালাগালি করেন, নিন্দা, অপবাদ, অপমান, অশ্রদ্ধা করেন তারা এরকম অনেক অনেক অপ্রকাশিত ঘটনা আছে যা জানেন না। তাদের শুধু একবার ভেবে দেখতে বলবো আছে কেউ এমন ব্যক্তিত্ব, আছে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আছে কোনও ধর্মীয় নেতা বা সাধারণ কোনও কেউ যিনি ৮০০ বিঘা জমি পাওয়ার কথা ছেড়ে দিলাম বিনা পয়সায় এক কাঠা জমি যদি পান ছেড়ে দেবেন? আছেন কেউ? অথচ শ্রীশ্রীঠাকুরকে গালাগালি ক'রে যাবেন এর পরেও বাংলার বুকে বাঙ্গালীরা। ইদানীং নোতুন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে একশ্রেণীর নিকৃষ্ট বাচ্চা থেকে বুড়ো স্বঘোষিত গেরুয়াধারী সনাতনী নামধারী বাঙালীকে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা, অপমান, অশ্রদ্ধা করতে ও অপবাদ দিতে। অবাক কান্ড! স্বঘোষিত সনাতনীদের হঠাৎ এই গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। ভালোই হয়েছে সবাই দেখুক স্বঘোষিত সনাতনী হিন্দু বাঙ্গালীদের আচরণ। আরও অবাক লাগে যখন ঠাকুর রামকৃষ্ণের কিছু বাঙালী দীক্ষিত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত এবং অদীক্ষিত বাঙালী ঠাকুর রামকৃষ্ণের হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে সীমাহীন অশ্লীল কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মত গালাগালি করে। এর মধ্যে কিছু কৃষ্ণপ্রেমীদের মন্তব্য আপনারা আমার ভিডিওগুলির মন্তব্যে দেখতে পাবেন। আর, ঠাকুর সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ না জেনে, না পড়ে, গবেষণা না ক'রে শুধু কুৎসিত লোকের পাল্লায় পড়ে কুৎসিত মানসিকতায় রটানো রসালো ঘৃণ্য মুখের কথা শুনে শুনে একই গালাগালি ক'রে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ।


যাই হ'ক, বাঙালী কখনোই ঐক্যবদ্ধ ছিল না। বাঙালী কখনোই শিক্ষা, সাহিত্য, ধর্ম্ম ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাসী ও আস্থাশীল ছিল না। বাঙালী কখনোই নিজের মানব সম্পদ অর্থাৎ বাঙালীর অভূতপূর্ব মস্তিষ্কের সম্মান শ্রদ্ধা করেনি। সাধারণ বাঙালী ও অসাধারণ বাঙালী মস্তিষ্কের অধিকারীরা কখনোই অন্য বাঙালী অসাধারণ মস্তিষ্কের কদর করেনি। নিজেকে নিয়েই ছিল তাঁরা ব্যস্ত। বাঙালি নিজ কৃষ্টি, নিজ সংস্কৃতি, নিজ ঐতিহ্যের প্রতি ছিল উদাসীন ছিল, পাশ্চাত্যের প্রতি প্রেমে মশগুল। বাঙ্গালীর কাছে বাঙ্গালি মনীষী, তাদের দর্শন, তাঁদের সাহিত্য, তাঁদের মতবাদ, তাঁদের চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির চেয়ে অবাঙালী ও বিদেশী মনিষী, বিদেশী সাহিত্য, বিদেশী দর্শন, বিদেশী মতবাদ, বিদেশী চিন্তা-ভাবনা বেশী গ্রহণযোগ্য ছিল। যা আজও আছে। এতে একটা আলাদা আভিজাত্য বোধ করতো বুদ্ধিজীবী বাঙালী। যা আজও করে। ঐ বিদেশী ভাষা ইংরাজী ভাষার মতো। যা এখন ভয়ঙ্করভাবে গ্রাস করে ফেলেছে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে অজগর বা অক্টোপাশের মতো বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে বাঙালী অভিভাবকদের মনেপ্রাণে, একেবারে মস্তিষ্কের ব্রহ্মতালুতে ছোবল মেরে দিয়েছে।


এই যে বাঙ্গালীর কাছে বাঙ্গালি মনীষী, তাদের দর্শন, তাঁদের সাহিত্য, তাঁদের মতবাদ, তাঁদের চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির চেয়ে অবাঙালী ও বিদেশী মনিষী, বিদেশী সাহিত্য, বিদেশী দর্শন, বিদেশী মতবাদ, বিদেশী চিন্তা-ভাবনা বেশী গ্রহণযোগ্য ছিল সেটা কোন বাঙালীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল? সাধারণ বাঙালী? নাকি বুদ্ধিজীবী খ্যাত অসাধারণ বাঙালী? সাধারণ বাঙালী চিরকাল না ঘরকা, না ঘাটকা। এরা ঐ রুপোর কাঠি আর সোনার কাঠির যাদুতেই বশীভূত। বুদ্ধিজীবীদের ইমিটেশন সোনার রঙের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় এরা জেগে ওঠে আবার রুপোলি রঙের নকল রুপোলি কাঠির ছোঁয়ায় এরা ঘুমিয়ে পড়ে। এরা বুঝতেই পারে না এদের সোনার কাঠি ছুঁইয়ে ঘুম ভাঙ্গানো হয়নি, এদের নকল ইমিটেশন সোনার কাঠি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে আবার যখন দরকার পড়েছে মিথ্যে রুপোলি রঙের নকল রুপোর কাঠি বানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। এদের শেখানো হয়েছে জনগণের বাণীই ঈশ্বরের বাণী। এরা নিজেদের মৌরসী পাট্টা জমিয়ে রাখার স্বার্থে, ক্ষমতা দখলের স্বার্থে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে, জীবন্ত ঈশ্বরকে কলঙ্কিত ক'রে, কালিমালিপ্ত ক'রে সীমাহীন ভাঙাচোরা, রিপু তাড়িত বৃত্তি- প্রবৃত্তিতে আপাদমস্তক ডুবে থাকা কুসংস্কারাছন্ন ধর্ম্মভীরু, মূর্খ, বোকা, সহজ, সরল, সাধারণকে তাদের বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে সুড়সুড়ি দিয়ে বুঝিয়েছে তাদের কথায় ঈশ্বরের কথা, তাদের বাণীই ঈশ্বরের বাণী অর্থাৎ জনগণের কথায় ঈশ্বরের কথা, জনগণের বাণী ঈশ্বরের বাণী। এছাড়া ঈশ্বর ব'লে কিছু নেই, নেই তাঁদের কোনও জীবনীয় বাণী, নেই কোনও বাঁচা-বাড়ার মতবাদ। ধর্ম ও ঈশ্বর সবটাই আফিম। বিদেশী মনিষীরাই এক ও একমাত্র দ্রষ্টাপুরুষ। তাঁদের কথার মধ্যেই আছে মুক্তির পথ। তাঁরাই একমাত্র শেষ কথা জানে ও জানে নিখুঁত। এ ছাড়া বাকী সব বকোয়াস। বাঙালী কখনোই নিজের ঘরের সম্পদকে, নিজের বাগানের ফুলকে দেশ বা রাষ্ট্রগঠনের কাজে, সমাজ গঠনের কাজে এবং রাজনৈতিক কাজে গুরুত্ব, সম্মান দেয়নি সে যে যতবড়ই বুদ্ধিজীবী তাত্ত্বিক বাঙালী নেতা হ'ক না কেন। চোখের সামনে রত্ন বাঙালী রত্ন বাঙ্গালীকে করেছে উপহাস, উপেক্ষা, অস্বীকার। বাঙালী মত্ত ছিল "আজ বাংলা যা ভাবে কাল গোটা ভারত তা ভাবে" এই অহংকারে। তাই আজ গোটা ভারত যা ভাবে বাংলা তা কালও ভাবতে পারে না। বাঙালী বাঙালী মাতব্বরদের কারণে নিজেদের মধ্যে লড়াই ক'রে বাঙালী সত্ত্বাকে, বাঙালী ঐক্যকে, বাঙালী একপ্রাণকে, বাঙালী এক হৃদয়কে, বাঙালী এক মনকে, বাঙালী এক শরীরকে দ্বিখন্ডিত করেছে হিন্দু আর মুসলমান বাঙালী ক'রে দিয়ে, হিন্দু আর খ্রীষ্টান বাঙালী ক'রে, মুসলমান আর খ্রীষ্টান বাঙালী ক'রে দিয়ে। এমনিভাবে সমস্ত বাঙ্গালীর ঐক্যের শরীরকে ভেঙে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়েছে নানান সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংখ্যালগিষ্ঠ ধর্ম্মের নামে নানান মতের হাতুড়ি দিয়ে। ধর্ম্ম যে বহু হয়না সব যে মত হয় বাঙালী মাতব্বর নেতৃত্ব বোঝেনি; না বুঝে এমন সর্ব্বনাশা মৃত্যু ডেকে এনেছে নিজেদের জন্য নিজেরাই। নতুবা বুঝেও ইচ্ছাকৃতভাবে বুঝতে চায়নি শয়তানী মনোবৃত্তির কারণে। ফল ভোগ করতে হয়েছে আম জনতার। আম জনতাকে ফল ভোগ করতে হবে, যতদিন না এদের ফাঁদ থেকে আম জনতা মুক্ত হবে।

তাই, বাংলা পক্ষের যারা বাঙালী জাগো ব'লে মহান যজ্ঞ শুরু করেছেন তাঁদের বলি, আপনারা আপনাদের বলিষ্ঠ সংগঠন দিয়ে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার মনিষী, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদির ওপর দাঁড়িয়ে অবাঙ্গালীদের বোঝান আপনারা বাংলার বুকে আছেন, বাংলা আপনাদের কর্মস্থল, আর কর্মস্থল মন্দির তুল্য, স্বর্গ সমান। এই বাংলার মাটি আপনাদের অন্ন রোজগারের মাটি, এই মাটি আপনাদের মা অন্নপূর্ণা। এই মাটিকে শুধু বৈধ বা অবৈধ যে উপায়েই হ'ক অর্থ রোজগারের পথে শুধু বলাৎকার ক'রে ক'রে মাকে ক্ষতবিক্ষত করবেন না। বাংলার এই মন্দির সমান, স্বর্গ সমান, মা অন্নপূর্ণা সমান বাংলার মাটিকে আপনারা সম্মান করুন, পূজা করুন, ভক্তি করুন, শ্রদ্ধা-সম্মান করুন বাংলা ভাষা, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম সবকিছুকে আপন ক'রে নিন। এর জন্যে নিজের ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি কোনও কিছুকেই ত্যাগ করতে হবে না, ছাড়তে হবে। মা অন্নপূর্ণা আপনাদের এই কর্ম্মস্থল বাংলায় আপনাদের ঘরে ঘরে অক্ষুণ্ণ থাকবে, স্থির থাকবে। হরিহরের গোয়াল ঘরের কারণে ঘর থেকে একদিন মা অন্নপূর্ণা যেমন একদিন হরিহরের গৃহ ত্যাগ ক'রে চলে গেছিল ঠিক তেমনি যেন আপনাদের অপমানে অশ্রদ্ধায় অসম্মানের কারণে ক্রোধান্বিত হ'য়ে বেরিয়ে না যান মা অন্নপূর্ণা আপনাদের ঘর থেকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। উনাদের বোঝান আপনারা যে অর্থ বাংলার বুক থেকে রোজগার ক'রে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের নিজের রাজ্যে তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন বাংলার মাটির কাছে। তাদের বোঝান আপনাদের পরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বাংলায় জন্ম নিচ্ছে ও এই বাংলার মাটিতেই মিশে যাচ্ছে কিন্তু আপন ক'রে নিতে পারেনি এই বাংলাকে, বাংলার মাটিকে। বছরের পর বছর বাংলার বুকে থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা শিখতে পারেননি এখনো ভালো ক'রে। কারণ আপনারা বাংলাকে গোরুর বাট থেকে দুধ দুইয়ে নিয়ে যাবার মত দুধ দুইয়ে দুইয়ে বাট থেকে রক্ত বের ক'রে দিচ্ছেন কিন্তু গরুকে মায়ের মতো বুকে ক'রে লালন পালন করেননি, করছেন না।


তাই বাংলায় থেকেও বাঙ্গালীর সঙ্গে একটা বিরাট দূরত্ব নিয়ে অবস্থান করছেন। যা যে কোনও মুহুর্তে অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। এই বাংলায় আপনাদের কত সন্তানসন্ততি বাঙালির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, তাদের পরবর্তী সন্তানসন্ততি না ঘরকা, না ঘাটকা হ'য়ে দিশাহীন হয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে এই জটিল পরিবেশে। ভিতরে ভিতরে তারা মায়ের দিকে যাবে না বাবার দিকে যাবে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে হতাশ হয়ে অবসাদ্গ্রস্থ হ'য়ে পড়ছে। বুঝতে পারছে না কে ঠিক, কে বেঠিক। কখনো কখনো তারা পথ খুঁজে না পেয়ে উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তায় ভুল ক'রে বসছে ও নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ ক্ষতির কারণ হ'য়ে দাঁড়াচ্ছে। আপনাদের এসব ভাবতে হবে। হ্যাঁ, ভাবতে হবে। বাংলা ও বাঙালিকে যখন বাঁচাতে নেমেছেন তখন আপনাদের আরও আরও গভীরে ডুব দিয়ে ভাবতে হবে, নতুবা বাংলার বুকে এর আগের সব হটকারী আন্দোলনের মত, সব সব গোড়া কেটে আগায় জল দেবার ব্যর্থ আন্দোলনের মতো আজ নয়তো কাল মুখ থুবড়ে পড়তে হবে, হবেই হবে। উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তার ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন অসিদ্ধির আন্দোলন। আপনারা মানুন আর নাই মানুন। এর আগে বাংলার বুকে বহু রাজনৈতিক আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে, ব্যর্থ হয়েছে ও অন্তসারশূন্য আন্দোলন ব'লে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই, আপনারাও আপনাদের আন্দোলনের গভীরতা নিয়ে ভাবুন, আন্দোলনের মুখকে ঠিক রাখুন, ডিরেইল্ড হ'তে দেবেন না, সব বাঙালি যাতে আপনাদের পাশে থাকে, আপনাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য বুঝতে তাই করুন। বাঙ্গালীকে আর বৃথা অসাড় স্বপ্ন দেখাবেন না। বাঙালি উদ্দেশ্যহীন, দিশাহীন, লক্ষ্যহীন, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলনে বলাৎকার হ'তে হ'তে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। চটজলদি, ভাসাভাসা মিথ্যে কপট অবাস্তব বৃত্তি-প্রবৃত্তির সুড়সুড়ি আন্দোলন দেখে দেখে অভ্যস্ত বাঙালী এখনো প্রকৃত আন্দোলন দেখেনি। আন্দোলন কা'কে বলে এই বাংলার বাঙালী দেখবে, তবে এই বাংলা থেকে নয়। আন্দোলন উঠবে বাংলার বাইরে থেকে অন্য রাজ্য থেকে। সেই আন্দোলনের শীর্ষভাগে থাকবে বাঙালী, খাঁটি বাঙালী, যার মধ্যে দিয়ে ব'য়ে যাচ্ছে এখনো খাঁটি আর্য রক্ত। সেই খাঁটি আর্য রক্ত ব'য়ে যাওয়া খাঁটি বাঙালী কেমন ক'রে সব বাঙালী, অবাঙালী, হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি সব মতের সব জাতের সব দলের মানুষদের নিয়ে নিখুঁত চলতে হয় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শকে মাথায় নিয়ে তা দেখিয়ে দেবে। যেমন স্বাধীনতার সময় আমরা একবার দেখতে পেয়েছিলাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে সারা ভারতবর্ষের সমস্ত জাত ও ধর্মের মানুষদের আজাদ হিন্দ ফৌজের ফৌজি হিসেবে। শুধু অপেক্ষা সেদিনের।

তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত আবেদন এই ভিডিওর মধ্যে দিয়ে আপনাদের এই প্রচেষ্টা সঠিক পদ্ধতিতে এগিয়ে চলুক সার্থকতার দিকে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে হাসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে যাতে বিগত দিনগুলির মত আপনাদের আন্দোলনও ব্যর্থ হ'য়ে আর একটা সংখ্যা না বাড়ায়। যাতে আপনাদের আন্দোলনের সারবত্তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে ও দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে। ঐ যে রবীন্দ্রনাথের গানঃ
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল--
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান ॥
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ--
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা--
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন--
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান ॥


আবার ঐ যে আর একটা গান আছে কাজী নজরুল ইসলামের,
মোরা একি বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।
মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ॥
এক সে আকাশ মায়ের কোলে
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান॥
এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,
এক সে মায়ের বক্ষে ফলে একই ফুল ও ফল।
এক সে দেশের মাটিতে পাই
কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই,
মোরা এক ভাষাতে মাকে ডাকি, এক সুরে গাই গান॥
চিনতে নেরে আঁধার রাতে করি মোরা হানাহানি,
সকাল হলে হবে রে ভাই ভায়ে ভায়ে জানাজানি।
কাঁদব তখন গলা ধরে,
চাইব ক্ষমা পরস্পরে,
হাসবে সেদিন গরব ভরে এই হিন্দুস্থান॥


আবার আছে,
নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান
নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান
দেখিয়া ভারতে (বাংলায়) মহা জাতিরও উত্থান
জগজন মানিবে বিস্ময়
জগজন মানিবে বিস্ময়।


তাই আসুন সবাই মিলে গেয়ে উঠি, বলি,
ও ও ও মন হারিয়ে যায় রে
মন হারিয়ে যায়।
বন্ধুরে তোর পাখনা উড়িয়ে দিয়ে আয় রে
উড়িয়ে দিয়ে আয়।
বাংলা মায়ের চরণ তলে
এসো সবাই পরাণ খুলে২
মিলেমিশে থাকি সবাই,
হাসি হাসি, নাচি নাচি, বাঁচি-বাড়ি
গান গেয়ে যাই।
জয়গুরু।