Powered By Blogger

Wednesday, May 1, 2024

উপলব্ধিঃ দ্রষ্টাপুরুষ!

বর্তমান ভারতের অবস্থা আবারও প্রমাণ করলো দ্রষ্টাপুরুষ ছাড়া মানুষ তথা দেশ এক পাও নির্ভুল নিখুঁত চলতে পারে না। স্বাধীনতার আগে ও পরে এবং ৭৪ বছর ধ'রে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের নেতৃবৃন্দ নিজেরা ভুল পথে চ'লে এবং দেশের আম জনতাকে চালিয়ে দেশের কোমর ও জনগণের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। সেই ভাঙার জ্বলন্ত উদাহরণ সদ্য সমাপ্ত দেশের পাচ রাজ্যের নির্বাচন। সেই যে দেশ ভাগ হ'য়েছিল ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি আর অদূরদর্শীতার কারণে তার ট্রাডিশন সমানে ব'য়ে চললো বর্তমান নির্বাচন পর্যন্ত আর ব'য়ে যাবে এমনিভাবেই বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জীবনের উপর দিয়ে। আরও কত ভবিষ্যৎ কষ্ট যন্ত্রণা যে অপেক্ষা করছে তার সীমা পরিসীমা নেই!
এই যে আজ আবার করোনা ভাইরাস তীব্র ভয়ংকর হ'য়ে ঝাপিয়ে পড়লো দেশবাসীর ওপর এর জন্যে দায়ী কি বা কে?
ঠাকুর বললেন,
"দুর্দ্দশাতে কাবু যখন বৃত্তিও কাবু তা'য়,
বাচার টানে মানুষ তখন বিধির পথে ধায়,
বিধির পথে পুষ্টি পেয়ে চিত্ত সবল হ'লে
বৃত্তি-ধন্দার স্বার্থ নিয়ে আবার ছুটে চলে,
এমনি ক'রে ওঠা-পড়ায় মরণমুখে ধায়,
ইষ্ট-উৎসর্জ্জনে কিন্তু সবই পাল্টে যায়।" (৫৯ অনুশ্রুতি ১ খন্ড)
আমরা ২০২০তে দেখেছি চিন থেকে আগত করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর আক্রমণে দেশ তথা গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত হ'তে। আমরা দেখেছি কি ভয়াবহ ভয় ও নিদারুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে মানুষ পরিবার পরিজনকে হারিয়ে না খেয়ে না ঘুমিয়ে ঘর ছাড়া বাড়ি ছাড়া হ'য়ে দিন কাটিয়েছে। আমরা দেখেছি অর্থনৈতিক কি দুঃসহ যাতনার মধ্যে দিন কেটেছে সাধারণ ফেরিওয়ালা, বাড়ি বাড়ি কাজ করা, দোকানে দোকানে হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে কাজ ক'রে দিন আনে দিন খাওয়া থেকে শুরু ক'রে অফিসে কাছারিতে, কলে-কারখানায় কাজ করা এবং ছোটো-বড় ও অতি বড় ব্যবসায়ী ইত্যাদি সমস্ত স্তরের মানুষদের। দেখেছি রাষ্ট্রনেতা থেকে শুরু ক'রে পথের ভিখিরি, দারিদ্র্য সীমার নিচে থেকে শুরু ক'রে বড়লোক অতি বড়লোক পর্যন্ত কি শারীরিক মানসিক আত্মিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছে, দুর্দ্দশাতে কাবু হয়েছে, হয়েছিল কাহিল ও ঘায়েল। সেই চরম দুর্দ্দশার সময়ে বাচার জন্য, দেশবাসীকে বাচাবার জন্য দেশনেতারা বিভ্রান্ত, উদভ্রান্ত! তারা জানে না এই অবস্থায় কি করণীয় ও কিভাবে নিজে বাঁচবে ও বাচাবে। তখন যা উপযুক্ত যুক্তিযুক্ত বিজ্ঞান ও ধর্ম্ম সম্মত মনে হয়েছে তাই করেছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আবার সেই পদক্ষেপের বিরদ্ধাচরণ হয়েছে তীব্রভাবে কিন্তু নিজেরা বিরুদ্ধবাদীরা কোনও সলিউশন দিতে পারেনি সেই কঠিন সময়ে। তবু্ও বিশ্বের মধ্যে ভারত দেরীতে হ'লেও চরম গরম বিরুদ্ধতার মধ্যেও নিজের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে দ্রুত সামলে নেবার চেষ্টা করেছে। করোনার বিষাক্ত ছোবলের হাত থেকে বাচার জন্য দ্রুত সবরকম প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ ক'রে নিজে বেচে থেকে অন্যকে বাচাবার ধর্ম্ম পালন করেছে। ঠাকুরের বলা অনুযায়ী বাচার তাগিদে মোটামুটি বৃত্তি-প্রবৃত্তির লাগাম টেনে বিধির পথে চ'লে করোনার মারণ থাবাকে রুখে দিয়েছিল। ঠাকুর আরও বলেছিলেন, "অন্যে বাচায় নিজে থাকে ধর্ম্ম ব'লে জানিস তাকে"---ধর্ম্মের এই মূল অর্থকে রক্ষা করেছিল।
কিন্তু আমরা পরক্ষণেই কি দেখলাম?
ভারত যখন তৎপরতার সঙ্গে করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য বিধির পথে চলা শুরু করলো এবং বিধির পথে চ'লে পুষ্টি পেয়ে সফলতা হাসিল ক'রে চিত্তকে সবল করলো তখন সেই সফলতার আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার বৃত্তি ধন্দার স্বার্থ নিয়ে আবার ছুটে চললো, ছুটে চললো লাগামহীন বেলেল্লাপনা ভাবে। আর সেই ছুটে চলা শুরু হ'লো ক্ষমতা দখলের লোভে নির্বাচনের নামে! নির্বাচনে আমরা কি দেখেছি? নির্বাচনের প্রচার কর্মকান্ডে যা যা হয়েছে সবই আমরা আমাদের নিজস্ব এলাকায় এলাকায় দেখেছি ও শুনেছি এবং টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে বিভিন্ন জায়গার প্রচার অভিযানের মিছিল মিটিংয়ের ছবি দেখেছি ও ভাষণ শুনেছি। আর সেই লাগামছাড়া অবস্থার সুযোগ নিতে দ্বিধা করেনি করোনা নামক বিষাক্ত সাপ! এক ছোবলে ছবি ক'রে দিতে দেরি করেনি করোনা। বিষাক্ত কালনাগিনীর গলা শক্ত হাতে মুঠোয় চেপে ধরার পর সামান্য আলগা হ'তেই ভয়ংকর ফোস শব্দে ফণা তুলে মাথা ঘুরিয়েই বসিয়ে দিল বিষাক্ত ছোবল করোনা নাম্নী কালনাগিনী। আর তারপরে যা হবার তা-ই হ'লো। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
আশ্চর্যের যেটা তা হ'লো এই পরিণতির আন্দাজ করতে না পারা। আর আন্দাজ করতে পেরেও যদি আগাম সাবধানতা অবলম্বন ক'রে না থাকে তাহ'লে ধ'রে নিতেই হবে পহেলে ক্ষমতা বাদ মে জনতা! তো ভাড় মে যায় জনতা। ভোট শেষ এখন করোনা মোকাবিলায় দেশ!
তাই আমরা দেখতে পেলাম ঠাকুরের বাণীর কি অদ্ভুত মিল পরিস্থিতির সঙ্গে!!!! ঠাকুরের কথা অনুযায়ী এমনিভাবেই ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে জেনে-বুঝেই এগিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু আজ যদি নেতানেত্রীদের জীবনে একজন দ্রষ্টাপুরুষ থাকতো যাকে আমরা ইষ্ট বলি অর্থাৎ মঙ্গলের মূর্ত রুপ বলি যিনি বহু বহু দূরের জিনিস দেখতে পান বা সবটা দেখতে পান এমন একজন যদি থাকতো তাহ'লে আজ ভারতের বর্তমান এই কঠিন অবস্থা হ'তো না। শিবাজীর জীবনে যেমন রামদাস ছিল আর অর্জুনের ছিল স্বয়ং জীবন্ত ইশ্বর শ্রীকৃষ্ণ। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। চন্দ্রগুপ্তের পিছনে যেমন চাণক্য ছিল কিন্তু দেশপ্রেমিক বীর রানাপ্রতাপের পিছনে কেউ ছিল না, ছিল না প্রবল প্রতাপান্বিত রাবণের পিছনে কেউ। বিরাট সাম্রাজ্যের অধীশ্বর, বিশাল শক্তিশালী, অর্থবল, লোকবল, অস্ত্রশস্ত্র-এ বলীয়ান দুর্যোধনের পিছনে কেউ ছিল না। এদের সবার ইতিহাস সবারই জানা। তাই ঠাকুরের বলা অনুযায়ী যদি দেশনেতাদের পিছনে কোনও দ্রষ্টাপুরুষ থাকতো তাহলে আজ আমার দেশের এই করুণ অবস্থা হ'তো না। ঠাকুরের বলা অনুযায়ী ইষ্ট উৎসর্জনায় সব বদলে যেত অর্থাৎ উন্নতি বা বিস্তার অভিমুখী সৃষ্টিতে দেশের সব কিছু বদলে যেত। কিন্তু তা হ'ল না। কলিযুগ ব'লেই বোধহয় হ'তে নেই। এই যুগ 'অন্যে মারে নিজে বাচে অধর্ম ব'লে জানিস তাকে' যুগ। ( রচনা ১লা মে, ২০২১ )

No comments:

Post a Comment