Powered By Blogger

Tuesday, April 30, 2024

প্রবন্ধঃ প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত।

 এই প্রচন্ড গরমে যখন মানুষ হাঁসফাঁস করছে তখন মাঝে মাঝেই যখন তখন কারেন্ট চলে যাচ্ছে। সেদিন রাত আটটায় যখন বাড়ির দিকে আসছি তখন দেখলাম রাস্তায় সি এস সি-র গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওভার হেড লাইনে কাজ হচ্ছে। আর একদিন দেখলাম ট্রান্সফরমারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইলেক্ট্রিকের লোকজন, জোর কদমে কাজ চলছে। এই গরমে সবার বাড়িতেই দিনরাত বিরামহীন ফ্যান চলছে, চলছে এ সি। আর সঙ্গে চলছে সি এস সি ও বিদ্যুৎ পর্ষদের বিরামহীন মেইটেন্যান্সের কাজ। পাওয়ার কঞ্জিউম বেড়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝে লোড শেডিং-এর কারণে কঞ্জিউমারদের মানসিক চাপ ও মেইন্টেন্যান্স ডিপার্ট্মেন্টের কাজের চাপ বেড়ে গেছে দশগুণ। হঠাৎ কোনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতেই পারে যখন তখন প্রাকৃতিক কারণে। সেটা সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষ ঘটনা। কিন্তু গরম বা বর্ষার আগে রুটিন চেক আপ হ'লে ভালো হয়। তখন ভাবি যে দেশে স্বয়ং ঈশ্বর ৮ - ৮ বার জন্মেছেন সেই দেশ কেন এত পিছনে। সেই দেশ শুধু মুখের কথার হাই হ'য়ে রইলো "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লভে।" কবে নেবে? যাক সেসব বিষয়। ঈশ্বর বারবার মানুষ রূপে ভারতে জন্ম নেওয়ার পরও কেন আজ ভারতের এই দশা আর কি করেই বা ভারত একদিন জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লাভ করবে তা নিয়ে একদিন আলোচনা করবো। এখন আসি আজকের ভিডিওর বিষয়ে। 

গরমের কথা যখন উঠলোই তখন গরম নিয়ে একটা আলোচনার আসর বসানো যাক এই গরমের মধ্যেই। এই গরমে কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও পেট ব'লে কথা, কিছু তো খেতে হবে। তবে যারা রান্না ঘরে এই গরমে থাকে তাদের কষ্ট অবর্ণনীয়। এই অবর্ণনীয় কষ্ট বড়লোকেদের নেই। তাদের জন্য আছে গরমকালে এ সি আর ঠান্ডাকালে রুম হিটার। অবর্ণনীয় কষ্ট গরীব, সাধারণ মানুষদের। 

যাই হ'ক আলোচনা গরমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক। এই গরমে যারা খাওয়ার তারা তেলে ঝালে ঝোলে খাচ্ছে ও খাবে। আর অনেকে আছে এই গরমে ভাতে জল ঢেলে দিয়ে খাচ্ছে। পান্তাভাত আর জলভাতের মধ্যে তফাৎ আছে। গরম ভাতে জল ঢেলে ঠান্ডা ক'রে খেলেই তাকে পান্তাভাত বলে না। ভাতকে জলে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। নতুবা নয়। আমরা শহুরে লোকেরা প্রায়ই পান্তাভাত খাওয়া ভুলে গেছি। গ্রামে এখনও জলভাত বা পান্তাভাত এই গরমে এখনও সমান জনপ্রিয় ও আদরণীয়। পান্তাভাত গ্রাম বাংলার একটা জনপ্রিয় খাবার। রাতে ভাত বেঁচে গেলে বা রেঁধে সেই ভাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া হয়। পরদিন সেই জলে ভিজিয়ে রাখা ভাত কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খায় গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষ। অনেকেই আবার আলু ভর্তা,বেগুন ভর্তা,ডাল ভর্তা,শুটকি ভর্তা, সরিষার তেল, শুকনা মরিচ পোড়া ইত্যাদি দিয়ে পান্তাভাত খায়।

 
এই পান্তাভাত খেতে তথাকথিত শহুরে লোকেরা বা হঠাৎ বড়লোকেরা তা শহরেই হ'ক বা গ্রামেই হ'ক লজ্জা বোধ করে। 
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, বাবা জগন্নাথের কিন্তু নিত্য পান্তা না হলে চলে না। বাচ্চা যদি বাপের অনুবর্ত্তণ করতে লজ্জাবোধ করে, তাহলে যা হবার তা হবে। আমাদের মা জগৎজননী দুর্গা দৈ-পান্তা খেয়ে প্রতি বৎসর বিজয়ার দিন বিদায় নেন। আর আমাদের পান্তা খেতে লজ্জা।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে পান্তাভাতের জল খেতে 
বলেছিলেন। বলেছিলেন ওটা খাবি। ওতে যথেষ্ট ভিটামিন আছে। পান্তাভাতের জল খেলে মানুষ মোটা হ'য়ে যায়। দেখিস না পন্ডিতের মা পান্তাভাত খেয়ে কেমন মোটা হ'য়ে গেছে। 
শ্রীশ্রীপ্রফুল্লদা ভীষণ ভয় ও বড় দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। তাঁর প্রতিমুহুর্তের এই নার্ভাসনেসের কথা জানালে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে একবেলা পান্তা ভাত খেতে বলেছিলেন। বলেছিলেন সকালে ইষ্টভৃতি ইত্যাদি ক'রে খালি পেটে পান্তা ভাত খেতে। আর নাম করতে বলেছিলেন।যারা নার্ভের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রফুল্লদাকে ঠাকুরের দেওয়া এই ফর্মুলা প্রয়োগ ক'রে দেখতে পারেন।  
 
আমরা গরম ভাতের মধ্যে জল ঢেলে দিয়ে চটকে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়াকে পান্তাভাত বলি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। পান্তাভাত খাওয়ার মধ্যে দিয়ে যদি শরীরে ভিটামিন সাপ্লাই না হয় তাহ'লে সে পান্তাভাত খাওয়া বৃথা। 
*পান্তাভাতের ফর্মূলা শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে দিয়েছিলেন।
আমরা যাকে বলি *পান্তাভাত* , ঠাকুর বলতেন ' *আমানি* '। আসুন আমরা সেই আমানি সম্পর্কে জেনে নিই। আর এই ' *আমানি* ' কেমন করে বানাতে হবে তা-ও বলে দিয়েছিলেন দয়াল ঠাকুর। 
ভাত রান্না করে মাটির হাঁড়িতে রাখতে হবে। সেই ভাতে এবার পরিষ্কার ভাল জল ঢালতে হবে এমন করে যাতে ভাতের ১ ইঞ্চি (১কড়) ওপর অবধি জল থাকে। সবশেষে,পরিষ্কার সাদা কাপড় দিয়ে হাঁড়ির মুখ ঢেকে বেঁধে দিতে হবে। অন্য কোনও ঢাকনা দেওয়া চলবে না।এই অবস্থায় (সাধারণ তাপমাত্রায়) ১৬-১৮ ঘন্টা রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ' *আমানি* '। উপকারী ইষ্টের (ছত্রাক)দল জল আর ভাতে মিশে এবং বৃদ্ধি পেয়ে নানারকম ভিটামিন তৈরি করে বলে তা খাওয়া স্বাস্থ্যকর। খাদ্যরসিক ও পুষ্টিবিশারদ ঠাকুর ' *আমানি* ' কে বলতেন--' *সর্বরোগ হরহরি'।* 
এই ফর্মুলা অনুযায়ী এই গরমকালটা দেখতে পারেন, শরীর ঠান্ডা থাকবে, সুস্থ থাকবে, কাজে উৎসাহ পাবেন।
পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এর আয়রন দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড়কে শক্ত করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে, অর্থাৎ লাল হ'য়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। আবার এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও সাহায্য করে। আরো অনেক কাজে সাহায্য করে। বিভিন্ন রোগ বিশেষত ক্যানসার প্রতিরোধে এই পান্তাভাত সাহায্য করে। কিন্তু পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে বঞ্চিত হ'তে হয়।

জুন-জুলাই মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে যাবে। ফলে বাড়বে দিনের দৈর্ঘ্য ও গরমের তীব্রতা। 
যাই হ'ক এইসময় সৎসঙ্গীরা ও অদীক্ষিত যারা দেখছেন ও শুনছেন এই ভিডিও তারা এই গরমে 'আমানি' খেতে পারেন ঠাকুরের ফর্মুলা মেনে। প্রকৃতির গরমের হাত থেকে  শরীরকে ঠান্ডা রাখার ও বাঁচার উপায় ও পথ্য হ'লো পান্তাভাত।
এবার আসুন দেখি প্রবৃত্তির গরম থেকে বাঁচার উপায় কি?
অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি- প্রবৃত্তির কারণে আমাদের উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুতাড়িত জীবনও গরম হ'য়ে ওঠে। এর হাত থেকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করার, বাঁচার ও বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র উপায় বা মেডিসিন হ'লো বিধাতার হাত।

অনিয়ন্ত্রিত, উচশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ষড় রিপুর উৎপাতের 
কারণে জীবন অতিষ্ঠ হ'য়ে ওঠে। ফলে, সংসার, সমাজ, দেশ অনিয়ন্ত্রিত রিপুতাড়িত উন্মত্ত জীবনের কারণে ধ্বংস হয়। একজন রিপুজ্বরে ভয়ংকর আক্রান্ত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা জীবনের জন্য গোটা সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো হ'য়ে যায়, সমাজ আক্রান্ত হয়, দেশ ঘোর অন্ধকারে ডুবে যায়, মানব সভ্যতা তলিয়ে যায়। এইরকম একজনই যথেষ্ট। ছোটোবেলা থেকে আজ অবধি যতদিন মা বেঁচে ছিলেন ততদিন একটা কথা শুনেছি মায়ের মুখে যা আজ আমাকে পীড়া দেয় মায়ের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ এত দেরীতে বোঝার জন্যে। মা বলতেন, "একে নষ্ট করে সবে দুঃখ পায়, আর একে ভালো করে সবে সুখ পায়।"
 
আজ, Passion parvading attachment মানুষ অর্থাৎ বৃত্তি-ভেদী অনুরাগ সম্পন্ন মানুষের অভাবে ব্যক্তিজীবন, সমষ্টিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবন ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে। সংসারে, পরিবারে, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব জুড়ে গ্রাস ক'রে ফেলেছে অশান্তি। এর থেকে মুক্তির কোনও দ্বিতীয় উপায় নেই যদি না মানুষ প্রবৃত্তির ভয়ানক উগ্র তাপ থেকে নিজেকে
রক্ষা করে, মুক্ত করে। 
গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন বাংলা নববর্ষে বৈশাখ মাসে আদিম উপাদান আমানির মাংগলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, যেমন প্রকৃতির ভয়ংকর উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন হয় আমানির জল, পান্তাভাত। 
ঠিক তেমনি রিপুতাড়িত মানুষ উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুর মোহে বৃত্তি- প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে বিধ্বস্ত হ'য়ে যখন গরম হ'য়ে ওঠে শরীর-মন-আত্মা তখন এই প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে দরকার হয় বিধাতা নির্দেশিত বিধির হাত। তখন সংসারে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ জীবন্ত ঈশ্বরকে ঘরে আবাহন করার জন্য, মঙ্গলের মূর্ত প্রতীককে ঘরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। জীবন্ত ঈশ্বরের উপস্থিতি ও তাঁর বিধিকে আবাহন করতে হয় ব্যক্তি জীবনে, সংসার জীবনে। 
আসুন দেখে নিই প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত এই দুইয়ের মিল কোথায়। 
১) গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন পান্তাভাত ঠিক তেমনি প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে বাঁচতে দরকার হয় জীবন্ত ঈশ্বর মূর্ত মঙ্গল বিধাতার হাত।
২) 
আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ, তথাকথিত শহুরে মানুষেরা পান্তাভাত খেতে লজ্জা বোধ করে। ঠিক তেমনি এই ধরণের মানুষ যারা, অর্থাৎ আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ তারা জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত ধরতেও লজ্জা বোধ করে। 
৩) আর যারা পান্তাভাতের নামে পান্তাভাতের পরিবর্তে গরমভাতে জল ঢেলে জলভাত খায়  ঠিক তেমনি কিছু মানুষও  বিধাতা ও তাঁর নির্দেশিত বিধির হাত ধরার পরিবর্তে আকাশের ভগবান, মাটির ভগবান, কথা বলতে না-পারা বোবা ভগবানের হাত ধরে। 
৪) পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে যেমন বঞ্চিত হয় মানুষ, ঠিক তেমনি যারা বোবা ভগবানের বা আকাশের ভগবানের অদৃশ্য হাত ধরার চেষ্টা করে এবং জীবন্ত ঈশ্বরের দেওয়া মত কোনও নির্দেশ পালনের, বিধি পালনের কোনও ব্যাপার থাকে না। পূজার নামে, ভক্তির নামে যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা করা যায়, নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তি পূরণের, নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য পূজা করা যায়। যাকে প্যাশনেট অর্থাৎ প্রবৃত্তিমুখী ভক্তি বলা হয়, সেইরকম বাঁচা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত না ধরার ফলে, বিধাতার বিধি না মানার ফলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়, বঞ্চিত হয় রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে।    
৪) জলভাত খাওয়া মানুষ যেমন জলভাতের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা, শুটকি ভর্তা, শুটকি পোড়া, শুটকি ভাজা, শুকনো পোড়া লঙ্কা, সর্ষের তেল ইত্যাদি দিয়ে আয়েস ক'রে তামসিক জলভাত খায় ঠিক তেমনি বোবা ভগবান বা আকাশের ভগবানের হাত ধরা মানুষও বোবা ভগবানের পূজার সঙ্গে সঙ্গে আমিষ জাতীয় তামসিক খাবার খায়।
৫) গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত নয় আগের দিন রাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া পান্তাভাত যাকে আমানি বলে সেই আমানি পরের দিন আমিষ-নিরামিষ সহযোগে খাওয়া আর জীবন্ত ঈশ্বরের হাত ধরার সাথে সাথে তামসিক আমিষ আহার কিংবা রাজসিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করা সমার্থক। স্বর্গীয় পবিত্র খাদ্য আমানির সঙ্গে অর্থাৎ পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে তামসিক উগ্র খাবারের সংমিশ্রণে আমানির যে পুষ্টি, যে গুণাগুণ তা শরীরে গিয়ে ব্যহত হয়, পুরোপুরি পুষ্টি লাভ হয় না, শরীর বঞ্চিত হয়। 
ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর, বিধাতার বাণী 'শ্রীবিগ্রহের মন্দির ভেবে যত্ন করিস শরীরটাকে' এই যে বিধান তা মাথায় রেখে শরীর বিধানকে রক্ষা করার ব্যাপারটা এবং একই সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে গ্রহণ ক'রেও জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার যে বিধান সেই বিধান অর্থাৎ দীক্ষা নেবার সময় আমাকে যে যজন, যাজন ও ইষ্টভৃতি করার বিধান দিয়েছেন আবার স্বস্তয়নী যারা গ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে পাঁচটা নিয়ম মেনে চলার কথা যে বলা হয়েছে সেইসবগুলি না মানার ফলে ফলাফল থেকে যায় জিরো। জীবন বঞ্চিত হয় দয়ালের দয়া থেকে, আশীর্বাদ থেকে।

তাই পান্তাভাত যাকে ঠাকুর আমানি বলতেন সেই নিয়মমত তৈরী পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে সাত্ত্বিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করলে যেমন পান্তাভাতের মধ্যে দিয়ে নানারকম ভিটামিন ও সমস্ত গুণাগুণ শরীরে প্রবেশ করার ফলে শরীর পুষ্ট হয়, শরীর মোটা হয় ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর যাকে আমরা ইষ্টদেবতা বলি তাঁকে জীবনে গ্রহণ ও তাঁর বিধি তাঁর নির্দেশ ও নিদেশ পালন করার ফলে মানুষের জীবনে নিশ্চিত উন্নতি হয় আর সমস্ত রকম বিপদ আপদ, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু রোধ হয়। যা আকাশের ভগবান বা বোবা ভগবানে হাজার লক্ষবার পুজো করলেও কিছু হয় না। 
জীবন্ত ঈশ্বর হলেন শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্ব্বশেষ The greatest wonder, greatest phenonomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।

আর, জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার বিধি হ'লো তাঁদের জীবন চলনা; তাঁদের চরিত্র, তাঁদের চলা-বলা, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি। 

পান্তাভাত যাকে আমানি বলেছেন ঠাকুর, যে ফর্মুলা দিয়েছেন তিনি, সেই আমানির সংগে যে সাত্ত্বিক নিরামিষ খাদ্য যেমন লঙ্কা, লেবু, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা ইত্যাদি সহযোগে সহজ পাচ্য যে আহার গ্রহণ সেইরুপ জীবন্ত ঈশ্বরকে আদর্শ হিসেবে মাথার ওপর নিয়ে তাঁর বলে যাওয়া ও দেখিয়ে দিয়ে যাওয়া যে নিয়ম সেগুলি পালন করার মধ্যে দিয়ে শরীরে-মনে-আত্মায় মানুষ শক্তিমান হ'য়ে দেবতা হ'য়ে ওঠে। একেই বলে যজন অর্থাৎ নিজে পালন করা। এবং নিজে পালন করার পর তা অন্যের কাছে বলা, অন্যকে অনুপ্রাণিত ক'রে তোলা, তাকে বলে যাজন, আর 
দিন শুরুর আগেই নিজে কিছু খাওয়ার আগে জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য বাস্তবভাবে তাঁকে খুশী করার জন্য তাঁর সেবা আগে করা, তাঁর দৈনন্দিন যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য বাস্তবভাবে অর্ঘ্য তুলে রাখা, একে বলে ইষ্টভৃতি। আর এই সেবা যেন অপ্রত্যাশী সেবা হয়, কোনও কিছুর প্রত্যাশায়, লোভে যেন এই সেবা না হয়। Don;t tempt thy lord, তোমার প্রভুকে প্রলুব্ধ ক'রো না। এই সেবা যেমন অপ্রত্যাশী হয় ঠিক তেমনি যেন আগ্রহে উচ্ছল হ'য়ে যেন এই সেবা হয়, এই সেবা স্বতঃ স্বেচ্ছ সেবা যেন হয়, এই সেবা অনুরাগ উদ্দীপি সেবা যেন হয় অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি তীব্র ভালোবাসায়, প্রেমে, অস্খলিত নিষ্ঠায়, আসক্তিতে, টানে যেন হয়। আমার তোমাকে ভীষণ ভালোলাগে তাই তোমায় ভালোবাসি, তোমাকে না ভালোবেসে পারি না তাই ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসলেও ভালোবাসি আবার না ভালোবাসলেও ভালোবাসি। তিরস্কার, শাসন করলেও তোমায় ভালোবাসি। আমার মুখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার চোখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার কান বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যঙ্গ বলে তোমায় ভালোবাসি। কেটে টুকরো টুকরো ক'রে খন্ড খন্ড ক'রে ফেলে দিলেও প্রতিটি খন্ড বলবে আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তমায় ভালোবাসি। 

আমানি যেমন সর্বরোগ হরহরি ঠিক তেমনি জীবন্ত বিধাতা শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর বিধি সমস্ত সমস্যার সমাধানকারী।
তাই প্রকৃতির এই তীব্র গরমে আপনারা ঠাকুরের ফর্মুলায় আমানি গ্রহণ করুন শরীরে ভিটামিন সমৃদ্ধ হ'য়ে সর্বরোগ থেকে মুক্ত হ'তে, ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে  যারা গ্রহণ ক'রেছেন তারা তাঁর দেওয়া বিধি বিধান যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আর স্বস্ত্যনী, সদাচার মেনে সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন।
ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অকারণ মিথ্যা ভয়, দুর্বলতা দূরে সরিয়ে, পূজা সম্পর্কে সমস্ত ভুল জবরজং কর্মকান্ড থেকে, জটিলতা থেকে, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হ'য়ে সহজ সরলভাবে তিনি যা বলেছেন তাই-ই করুন। পারলে দু'বেলা প্রার্থনা করুন, না পারলে একবেলা করুন, তাও না পারলে সপ্তাহে একদিন করুন তাঁর জন্মবার শুক্রবারে, তাও না পারলে ঘরে মোবাইলে সকাল-সন্ধ্যা তাঁর প্রার্থনা শুনুন, সময়ে শুনুন, না-পারলে অসময়ে শুনুন। অতি প্রত্যুষে ইষ্টভৃতি করুন, না-পারলে যখন উঠবেন তখন করুন, কিন্তু করুন, দিনের শুরুতে তাঁকে না খাইয়ে নিজে খাবেন না আগে, যা আপনার সামর্থ্য সেইখান থেকে তাঁকে আগে খেতে দিন। এঁকে বলে ইষ্টভৃতি। তাঁকে আরো আরো বেশী দেওয়ার জন্য আপনার সামর্থ্য বাড়ান। সামর্থ্য বাড়লে তাঁরও সেবার অর্ঘ্য বাড়িয়ে দিন। তাই এই ইষ্টভৃতিকে আবার বলে সামর্থীযোগ। সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন আপনার বাড়ি দেওঘরে। ঠাকুরবাড়ি আপনার নিজের বাড়ি। আর আপনার বাড়ি আপনার কর্মস্থল। কর্মস্থল থেকে যেমন মানুষ বাড়ি ফেরে ঠিক তেমনি আপনার বাড়ি অর্থাৎ কর্মস্থল থেকে এই বোধে আপনার বাড়ি যাবেন অর্থাৎ ঠাকুর বাড়ি যাবেন যখনি সময় পাবেন, অন্তত বছরে দু'বার নাহ'লে একবার। আর যেটা আপনার বাড়ি ভাবছেন সেটা আপনার বাড়ি নয় সেটাও ঠাকুরের বাড়ি। আপনি সেই বাড়ির কেয়ারটেকার মাত্র। এই বোধ নিয়ে চলুন। আর চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে, শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ও ভোজনে এমনকি বাথরুমে যেখানেই যান, যেখানেই থাকুন, যার সঙ্গে থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন মনে মনে নামের সঙ্গে থাকুন অর্থাৎ নাম করতে থাকুন। জানবেন যতবার নাম করছেন ততবারই আপনার সঙ্গে ঠাকুর থাকছেন। নাম আর নামী অভেদ। নাম করা মানেই ঠাকুরের সঙ্গে থাকা। এছাড়া তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকার আর দ্বিতীয় কোনও উপায় বা পথ নেই। আর যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকবেন ততক্ষণ শয়তান আপনার থেকে দূরে থাকবে, দয়ালের ভয়াল রূপের ভয়ে আপনার গা ঘেঁষবে না। নাম করতে পারছেন না, ভালো লাগছে না, ভুলে যাচ্ছেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি সাথ দিচ্ছে না, হতাশা, অবসাদ লাগছে, ডুবে যাচ্ছেন কোনও ব্যাপার না চেষ্টা করুন, 'ইয়েস আই ক্যান' ব'লে ঝাঁকানি দিয়ে উঠে দাঁড়ান, দাঁড়াবার চেষ্টা করুন, একবারে না হ'লে না হ'ক, দশবার চেষ্টা করুন। মনে পড়লেই নাম করুন, ভুলে যাচ্ছেন বারবার? ঠিক আছে কোনও ব্যাপার না। মনে পড়লেই নাম করুন, অভ্যাস করুন, একদিন দেখবেন সব ঠিক হ'য়ে যাবে। স্বতঃ অনুজ্ঞা পাঠ করুন। উঠতে বসতে, চলতে-ফিরতে, কাজ করতে করতে, রান্না করতে করতে দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত যখনই সময় পাবেন আবৃত্তি করুন স্বতঃ অনুজ্ঞা। জোরে জোরে আবৃত্তি করুন, আস্তে আস্তে আবৃত্তি করুন, নিজের কানে নিজে শুনুন, বলুন বারবার আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী। আমি অমানী, আমানী, আমি অমানী। শুয়ে শুয়ে বলুন, বসে বসে বলুন, হাঁটতে হাঁটতে বলুন, খেতে বসে বলুন, পায়খানায় বলুন, গান গেয়ে উঠুন "আমি অক্রোধী আমি অমানী ইত্যাদি ব'লে। শক্ত ক'রে দয়ালের হাত ধ'রে থাকুন হনুমানের বাচ্চার মত। হনুমানের বাচ্চা যেমন তার মাকে শক্ত ক'রে জড়িয়ে ধ'রে রাখে তেমনি ক'রে ঠাকুরকে জড়িয়ে ধ'রে থাকুন, ধ'রে থাকুন তাঁর হাত। তিনি আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরবেন না। তিনি সমস্ত ব্রহ্মান্ডটাই ধ'রে আছেন, আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরতে যাবেন না। তাই বলে জগন্নাথের হাত নেই। তিনি আপনাকে ধ'রে আছেন কি নেই তা ভুলে যান, আপনি তাঁকে ধরে আছেন কিনা সেটা দেখুন। আপনার ধরা এতটূকু আলগা হ'লেই শয়তানের ছোবল নিশ্চিত।

তাঁকে দু'হাতে আঁকড়ে ধ'রে থাকুন 
দেখবেন প্রকৃতির তীব্র গরমে আমানির জলে যেমন শরীর ঠান্ডা হ'য়ে যায়, ভিটামিনে ভরপুর হ'য়ে সমস্ত রোগ হরণ ক'রে নেয় আমানি রুপী হরি। ঠিক তেমনি বৃত্তি-প্রবৃত্তির গরমে যখন শরীর-মন-আত্মা জর্জরিত হ'য়ে উঠবে তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বিধি এই যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আপনাকে সমস্ত সমস্যা মুক্ত ক'রে ঠান্ডা ক'রে দেবে। 
ইষ্টকে আপনার মধ্যে ও আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে এবং পারিপারশ্বিকের ভিতর প্রতিষ্ঠা করুন আর সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন। জানবেন, 
সর্ব্ব সমস্যার সমাধান 
জানিস ইষ্টপ্রতিষ্ঠান। 
আপনাদের সবার মঙ্গল প্রার্থনা ক'রে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে। জয়গুরু। 

No comments:

Post a Comment