Powered By Blogger

Saturday, April 6, 2024

প্রবন্ধঃ সৎসঙ্গ আন্দোলন এবং বাংলা ও বাঙালি।

ঐ বাংলাও অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ বাংলা ও বাঙ্গালী তথা মানবজাতীর গর্ব The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-কে বাংলায় স্থান দেয়নি ও ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি তাঁকে তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশে। আর, এই বাংলাও অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ স্থান দেয়নি শ্রীশ্রীঠাকুরকে। দেশভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন প্রথিতযশা মুখ্যমন্ত্রী ও ডাক্তার শ্রীবিধানচন্দ্র রায় তাঁকে আশ্রয় দেয়নি এই বাংলায়। তিনি The greatest phenomenon of the world SriSriTHakur Anukul Chandra-কে চিনতে পারেননি। ওপার বাংলা থেকে চলে এসেও এই বাংলায়ও জায়গা পাননি ইনারই মূখ্যমন্ত্রীত্ব কালে ইনারই জন্য।
দুই বাংলায় বাংলার মানুষ শ্রেষ্ঠ বাঙালি তথা মানবজাতির শ্রেষ্ঠ মানব শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে স্থান দেয়নি, প্রকারান্তরে একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের তাবড় তাবড় কোনও নেতা শ্রীশ্রীঠাকুরের দুর্দিনে সেইসময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
দেশভাগের সময় যখন ঠাকুর সেই সময়ের দেড় কোটি টাকারও বেশী সম্পত্তি সাজানো বিরাট আশ্রম ছেড়ে চলে আসেন এক কাপড়ে তখন দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন ক'রে ঠাকুরকে ৬০০০হাজার বিঘা জমি পানাগড়ে দিতে চেয়েছিলেন নূতন ক'রে আবার আশ্রম গড়ে তোলার জন্য কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ৮০০ বিঘার বেশী জমি দিতে রাজী হননি। ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের জন্য যেহেতু ৮০০ বিঘা জমি যথেষ্ট নয় তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বিধানচন্দ্র রায়ের ৮০০বিঘা জমির প্রস্তাব বাতিল ক'রে ঐ জমি না নিয়ে খালি হাতে ফিরে যান তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ডের রুখোশুকো লালমাটির দেশ দেওঘরে। একেবারে শূন্য থেকে আবার শুরু করেন তাঁর কষ্টের যন্ত্রণার সংগ্রাম মধ্যবয়সে এসে। যা আজ সারা বিশ্বের তীর্থস্থান ও দ্রষ্টব্যস্থান। ভিটেমাটি ছেড়ে আসার মর্মান্তিক যন্ত্রণা এবং নোতুন ক'রে শূন্য থেকে শুরু করা কি কষ্ট যন্ত্রণার সেটা তারাই বোঝে যারা এই অবস্থার শিকার হয়েছিলেন। তার ওপর সেদিন ঠাকুরের সঙ্গে ছিল প্রায় দুই শতাধিক অনুগামী। সেদিন যদি বিধান রায় দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতেন আর ঠাকুরকে চিনতে পারতেন তাহ'লে আজ বাংলা সত্যি সত্যিই সোনার বাংলা হ'য়ে উঠতো। পানাগড় আজ সারা বিশ্বের তীর্থক্ষেত্র হ'তো। অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হ'য়ে উঠতো বাংলা। যা জীবনে আর কোনওদিনও হবে না।
অথচ ঠাকুর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে জেতাবার জন্য সুদূর দেওঘর থেকে তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের পথে নাবিয়ে ছিলেন। এই প্রচার কার্যের জন্য বিধান চন্দ্র রায় অন্যের কান ভাঙ্গানো কথায় ক্ষিপ্ত হ'য়ে রেগে গিয়েছিলেন সৎসঙ্গীদের ওপর। বলেছিলেন প্রচার বন্ধ করতে। কিন্তু ঠাকুরের একনিষ্ঠ কর্মী কোটি কোটি টাকার মালিক শ্রদ্ধেয় শ্রীবালকৃষ্ণ কাপুরদা বলেছিলেন, আপনার জন্য আমি পথে নাবিনি। আমি নেবেছি আমার গুরুদেব শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আদেশ পালন করতে। আপনাকে জেতাবার জন্য ঠাকুর আমাদের সৎসঙ্গীদের আপনার পক্ষে প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে প্রবল প্রতিদ্বন্ধী মহম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে মাত্র ৪০০ ভোটের ব্যবধানে বিধানচন্দ্র রায় জিতেছিলেন। সেদিন যদি সৎসঙ্গীরা ঠাকুরের নির্দেশে পথে না নাবতেন তাহ'লে বাংলার ইতিহাস অন্যরকম হ'তো। যেটা আলোচনার দরকার পড়ে না। সমঝদার কে লিয়ে ইসারা কাফি হোতা হ্যাঁয়। পরে বিধানচন্দ্র রায় অনুতপ্ত হ'য়েছিলেন। কিন্তু দুঃখ এটাই তাঁর জন্যই আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের বাংলার পানাগড়ে স্থান হ'লো না। অথচ শ্রীশ্রীঠাকুর তা মনে রাখেনি।
শ্রদ্ধেয় বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মানুষ যখন চিনতে পারেননি ঠাকুরকে তখন এই বাংলার বালখিল্য জনগণ আর কোনও দিনই চিনবে না। আর চেনার দরকারও নেই। কারণ ঠাকুর নিজেই ব'লে গেছেন আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলা থেকে উঠবে না, বাংলার বাইরে থেকে উঠবে। আর সেটা যার দেখার চোখ আছে সে দেখতে পারছে। বাঙ্গালীর দেখার দরকার নেই। বাঙ্গালী রাজনীতিতেই মত্ত থাকুক।
আমার মতে এতে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অপমান করা হয়। বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মহাত্মাও শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে পারেননি। শ্রীশ্রীঠাকুর সেই বিধানচন্দ্র রায়ের দেওয়া দয়ার দান গ্রহণ করেননি। তিনি চলে যান তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খন্ডের রুখোশুকো লালমাটির দেশ দেওঘরে। একবারও ঠাকুরের সমালোচকরা ভেবে দেখে না মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের দেওয়া ঐ ৮০০বিঘা জমি ইচ্ছা করলেই ঠাকুর গ্রহণ করতে পারতেন। যা কিনা অন্য যে কোনও মানুষ, রাজনৈতিক দল বা ধর্মপ্রতিষ্ঠান কুকুরের মতো লকলকে লম্বা জিভ বের ক'রে চেটে দিত অবলীলায় ৮০০বিঘার পরিবর্তে ৮ বিঘা দিলেই।
আর, সেই The greatest phenomenon of the world SriSriTHakur Anukul Chandra-কে পশ্চিমবঙ্গের মহান বাঙালি কুৎসা করে, গালাগালি দেয়, নোংরা নোংরা ট্রোল করে ফেসবুক মিডিয়া জুড়ে। আর তা ভীষ্মের মতো সমাজের গণ্যমান্যরা উপভোগ করে কিনা জানি না তবে কোনও প্রতিবাদ করে না, কোনও আওয়াজ তোলে না সর্বস্তরের 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার বিশিষ্ট বাঙ্গালিরা।
আর, আজও ০৮/০৭/২৩ শনিবার আবার প্রমাণ হ'লো শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ডাকা একাডেমিক মিটে বাইরের রাজ্যের ছেলেমেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো! আসাম রাজ্যের ছেলেমেয়েরা এর আগে দু'দুবার এরকম মিট করেছিলো শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সাথে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দু'বার প্রায় ৭০-৮০ জনের মতো টিচার ও স্টুডেন্ট নিয়ে তারা দেওঘরে গিয়েছিল। এবারেও স্টুডেন্ট ও টিচার মিলিয়ে তারা এসেছিলো অনেকে। ত্রিপুরা থেকেও এসেছিল বহু ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক। উড়িষ্যাও পিছিয়ে ছিল না। অন্যান্য রাজ্য থেকেও এসেছিল কমবেশি অনেকেই। বারবার অবিনদাদার মুখে উঠে এসেছিল আসাম, ত্রিপুরা ও উড়িষ্যা রাজ্যের নাম। কিন্তু কৃষ্টি-সংস্কৃতির পীঠস্থান বাংলার কথা একবারও মুখে আনেননি শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।
তাই, একথা জোর দিয়ে বলতে পারি ক'জন বাঙালি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের গ্রন্থ পড়েছেন হাতে গুনে বলা যেতে পারে। সৎসঙ্গীরা বিশেষ ক'রে পড়াশুনাজানা বাঙালি ছেলেমেয়েরা যেখানে পড়ে না ঠাকুরের গ্রন্থ সেখানে অদীক্ষিত ছেলেমেয়েরা ঠাকুরের স্টাডি করবে এটা ভাবা বাতুলতা মাত্র। যারা বাংলার বুদ্ধিজীবী তারা বাইরের দেশের কবির কবিতা পড়েন, সাহিত্যিকের সাহিত্য পড়েন, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা গ্রন্থ পড়েন আর পাণ্ডিত্যের ঢেঁকুর তুলে জাহির করেন আমি অমুক কবির কবিতা, অমুক সাহিত্যিকের সাহিত্য, অমুক লেখাকের লেখা পড়েছি এবং তা টিভিতে, মঞ্চে, ফেসবুকে আউড়ান কিন্তু বিশ্বের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুরের লেখা পড়ার ক্ষেত্রে তাদের এলার্জী হয়। তাঁদের একবারও মনে কৌতুহল জাগে না যে মানুষটা ১৩৫ বছরের মধ্যে প্রায় সারা বিশ্বকে গ্রাস ক'রে ফেলেছে, ভারতের এমন কোনও গ্রাম, শহর, জেলা, রাজ্য নেই যেখানে শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দির গড়ে ওঠেনি, তাঁর প্রায় ২৫হাজার বাণী ও কথোপকথন সহ বহু গ্রন্থ যা জীব, জগত, জীবন কারণের এমন কোনও দিক নেই যা তিনি ব'লে যাননি সেগুলি একটু উল্টে পাল্টে দেখি। আমার এখনো মনে আছে যৌবনে যখন একটু আধটু কয়েকজন লেখক সাহিত্যিকের লেখাটেখা পড়তাম তারমধ্যে অন্যতম প্রিয় লেখক ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য আনন্দবাজার অফিসে ছূটে যেতাম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু একবারও দেখা হয়নি। কোনও না কোনও কাজে তিনি সেই সময়টায় বাইরে থাকতেন। অন্য অনেকের সঙ্গে দেখা হ'তো। আজ আর মনে পড়ে না তেমন ক'রে কারও নাম। শুধু আজও মনে আছে এরকম একটা দিনে গিয়ে যখন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দেখা পায়নি তখন দেখলাম পাশের টেবিলে বসে আছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একটু কিন্তু কিন্তু ক'রে গিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ালাম। হাত জোড় ক'রে নমস্কার ক'রে বললাম আসার কারণটা। তখন তিনি জানালেন শীর্ষেন্দুবাবু এখন নেই এবং দেখিয়ে দিলেন তিনি কোন জায়গায় বসেন। একটা চেয়ার টেনে পাশে বসতে বলেছিলেন। তখন তাঁকে জানিয়েছিলাম তাঁর কোন কোন উপন্যাস পড়েছি এবং শীর্ষেন্দুবাবু আমার প্রিয় লেখক সেই কথাটাও জানিয়েছিলাম। তারপর তাঁর সঙ্গে লেখা নিয়ে কথা হয়। তিনি অনবরত লেখা ও পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারপর যখন কথায় কথায় অভ্যাস মতো ঠাকুরের গ্রন্থের কথা এনেছিলাম, বলেছিলাম ঠাকুরের অপূর্ব সৃষ্টির কথা তখন তিনি শুধু শুনেছিলেন, মুখে কিছু বলেননি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তিনি কোনও আগ্রহ পাচ্ছেন না আমার বালখিল্য কথায়। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে নমস্কার জানিয়ে চলে এসেছিলাম। তারপর আর কোনওদিন যাইনি। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ যার টানে যেতাম তাঁর সঙ্গে কোনওদিনও দেখা না হওয়া একটা কারণ হ'লেও পরবর্তীতে ঠাকুরের 'আলোচনা প্রসঙ্গে' পড়ার পর আর শুধু শীর্ষেন্দুবাবুর নয় আর কোনও লেখকের কোনও লেখা পড়ার আগ্রহ আর হয়নি এই বয়স পর্যন্ত। এই যে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যে ঠাকুরের গ্রন্থ পড়েন না বা পড়লেও সহজে স্বীকার করেন না তার কারণটা সহজেই অনুমেয়; ১) ঠাকুর গেঁয়ো যোগী তাই ভিখ পায় না, ২) ঠাকুরের গায়ে ধর্ম ও ঈশ্বরের গন্ধ, ৩) ঠাকুরের গ্রন্থ পড়লে পাঠকের চরিত্রে ও বৃত্তি-প্রবৃত্তির ল্যাজে পা পড়বে। এই হচ্ছে বাঙালি বুদ্ধিজীবীর তাঁর গ্রন্থ না পড়ার বালখিল্য পান্ডিত্যের অহংকার।
অন্যদিকে, অন্য ভাষাভাষীর ছাত্রছাত্রীরা যারা জীবনে বাংলা পড়েনি, বাংলা জানে না তারা ঠাকুরের প্রতি উদগ্র আগ্রহে, গভীর ভালোবাসায় বাংলা ভাষা শিখে ঠাকুরের বিভিন্ন গ্রন্থ প'ড়ে সেখান থেকে বিজ্ঞানের ওপর ঠাকুরের ব'লে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় সংগ্রহ ক'রে নিজের নিজের জ্ঞানভান্ডার বাড়িয়ে তুলছে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য।
তাই ভাবি, কেন ঠাকুর বলেছিলেন, 'আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার মাটি থেকে উঠবে না, বাংলার বাইরে থেকে উঠবে।' এই সবই কি তাঁরই কথার নিদর্শন?
( লেখা ১০ই জুলাই, ২০২৩ )

No comments:

Post a Comment