সত্যিই দেবতা রুষ্ট হয় কিনা জানি না। কারণ এরকম কোনও অভিজ্ঞতা আমার নেই। তবে এটা নিশ্চিত মদ খেলে, বিষ খেলে, আমিষ খেলে আমার অস্তিত্ব, আমার জীবন, আমার ভবিষ্যৎ, আমার সংসার, আমার পরিবার সব নষ্ট হয়, ধ্বংস হয়। আর তা কোনও মা তো দূরের কথা সৃষ্টিকর্তার বাপেরও রক্ষা করার ক্ষমতা থাকে না।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
"যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি
তা' করলে রে চলবে না,
ভালো ছাড়া মন্দ করলে
পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
এছাড়া দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।"
তাই এই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত শরীর যন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য যা দরকার তাই-ই করা হ'লো ধর্ম ও ঈশ্বর আজ্ঞা পালন।
এমন খাদ্য খেলে, এমন মানসিক-শারীরিক আচার-আচরণে লিপ্ত হ'লে আমার যা হবার তাই-ই হয়। শরীরও একটা যন্ত্র। রক্ত-মাংস-হাড় ইত্যাদি সলিড ও তরল নানা যন্ত্রপাতি ও লিকুইড দিয়ে তৈরী সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ উন্নত সৃষ্টি শরীর যন্ত্র। যা বিশ্বের কোনও অহঙ্কারী জ্ঞানী-বিজ্ঞানী পন্ডিতের বাপের বাপ মহাজ্ঞানী-বিজ্ঞানীরা তৈরী করতে পারেনি আর পারবেও না। মহান বিজ্ঞানীরা পুরুষের পশ্চাদ্দেশে জরায়ু তৈরী ক'রে বাচ্চা জন্ম হয়তো একদিন দিয়ে দেবে কিন্তু বাচ্চা তৈরীর উপাদান সেই স্পার্ম আর ওভাম সংগ্রহ করতে হবে সেই ঈশ্বরের সৃষ্টি নারী পুরুষের থেকে। আছে নাকি এমন মহাবিজ্ঞানী যিনি সৃষ্টিকর্তাকে চ্যালেঞ্জ ক'রে আর্টিফিশিয়াল স্পার্ম আর ওভামও তৈরী ক'রে ফেলবে? সময় বলবে? দেখা যাক? আর যদি তাও হয় তিনি হবেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা, মনুষ্যরূপধারী পরমকারুণিক জীবন্ত ঈশ্বর।
অজ্ঞ মানুষ, ভীতু মানুষ, দূর্বল মানুষ, বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ তো তাই করে যখন সেই অবগুণগুলির প্রশ্রয় ও পোষণ পায় প্রতিষ্ঠিত মন্দির-দেবালয়গুলি থেকে। সাধারণ মানুষের দোষ কোথায়? দেশের শাসক ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলি মানুষের অনিয়ন্ত্রিত-উচ্ছৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল বৃত্তি-প্রবৃত্তিগুলিকে পোষণ দেওয়ার যখন পৃষ্ঠপোষক হ'য়ে ওঠে, ঈশ্বর ও ধর্ম পালন করা নিয়ে যথেচ্ছার করার লাইসেন্স দেয়, কোনও বাধা দেয় না বা ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে, জীবন ও জীবনের নৈতিক মূল্যবোধ ও মূল্যের বোধ সম্পর্কে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করে না তখন এই ধরণের ধ্বংসাত্মক ঘটনা চলতেই থাকবে সনাতন ধর্মের নাম দিয়ে।
তাই মা কালী ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে বা মায়ের কোনও অস্তিত্ব থেকে থাকে তাহ'লে সেই মাকেই আগে দায়িত্ব নিতে হবে যারা মাকে আয়ের উপকরণ ক'রে নিয়েছে, যারা অসদাচারী জীবনের অধিকারী তাঁরা মায়ের পূজারী হ'য়ে সেই অসদাচারী হাত দিয়ে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে, মাকে অখাদ্য কুখাদ্য খাবার মায়ের ঠোঁটে লাগিয়ে দিচ্ছে, মদের বোতল ছুঁয়ে দিচ্ছে, ছিপি খুলে মায়ের মুখে ও সর্ব্বাঙ্গে ছিটিয়ে দিচ্ছে, মায়ের সামনে মায়ের সন্তানকে বলি দিয়ে সেই সন্তানের রক্ত ছিটিয়ে দিচ্ছে মায়ের চোখেমুখে সর্বাঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে আগে মা রুষ্ট হ'ক, কুপিত হ'ক যারা অখাদ্য কুখাদ্য খাবার এগিয়ে দিচ্ছে মায়ের মুখে ছুঁইয়ে প্রসাদ ক'রে দেবার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে। মা বা সেই দেবতা যাদের উদ্দেশ্যে মন্দিরে নারীকে উৎসর্গ ক'রে পুরুষের যৌন লালসা মেটাবার জন্য দেবতার ভোগের যৌন প্রসাদ তৈরী ক'রে নিত মায়ের বা দেবতার মহা ভক্তেরা সেরকম কোনও দেব দেবতা যদি আজও থেকে থাকে বা তাদের মন্দির যদি থেকে থাকে এখনও সেই দেবদেবতাকেই এইসব ঘৃণ্য নারকীয় জীবন বিধ্বংসী অধর্মীয় কর্মকান্ডের দায় নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে নির্ম্মম নৃশংস ব্যবস্থা নেবার। আর যদি তাই না হয় মা রূষ্ট হবেন এসব ছেঁদো কথায় ভবি ভুলবার নয়, এসব কথা সবটাই বকোয়াস।
নতুবা সরকার, প্রশাসন ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানের ধর্মাত্মাদের যৌথ উদ্যোগে কড়া কঠোর আইনি শাসনের প্রতিষ্ঠা করতে হবে এই সমস্ত জীবন, সমাজ, সভ্যতা বিধ্বংসী অধর্মীয় আচার আচরণ ও দুরাত্মাদের বিরুদ্ধে।
আর যদি কিছুই না হয় তবে চলুক যা চলছে, বিন্দাস চলুক। কারণ কিছুই হবার নয়। প্রায় সমস্ত মহাপুরুষরা, নররূপী জীবন্ত ঈশ্বরেরা এই নারকীয় ভগবান বা ঈশ্বর পূজার বা আরাধনার বিরুদ্ধে হাজার বছর ধ'রে ব'লে এসেছেন ও বলে চলেছেন কিন্তু নৈব নৈব চ!
তাই, শক্তির সাধক কি ভক্তির সাধক, প্রেমের সাধক কি কামের সাধক, লোভের বা ভোগের সাধক কি ত্যাগের সাধক, ক্রোধের সাধক কি প্রীতির সাধক এককথায় রিপুর সাধক বা বৃত্তি-প্রবৃত্তির সাধক হ'ক আর যেই-ই সাধকই হ'ক না কেন আমাদের ভক্তদের সাধনার ইচ্ছাটা আমাদেরই ব্যক্তিগত, আমাদের ইচ্ছার ডানা মেলে আমরা উড়বোই, আমরা মায়ের পুজায় মাল, মাংস প্রসাদ দেব ও সেই প্রসাদ ভক্তি ভরে খাব, তারপর ল্যান্টো হ'য়ে নাচবো উছৃঙ্খল নারীপুরুষ একসঙ্গে; কারণ আমরা মায়ের সন্তান, আমরা স্বাধীন; কারও কিছু বলার আছে? এ আমাদের সনাতন ধর্মের বা হিন্দু ধর্মের অধিকার। হাজার বছর ধ'রে চলে আসা এই অধিকারে হাত দেওয়া মানে ধর্মের ওপর হাত দেওয়া, ধর্মকে কলঙ্কিত করা, লাঞ্ছনা, অপমান, অশ্রদ্ধা করা। এর থেকে তফাৎ, তফাৎ, তফাৎ থাক।
( লেখা ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ )
No comments:
Post a Comment