যাই হ'ক যিনি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে ল্যান্ডফোন ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে মোবাইল ফোন হিসেবে তুলনা করেছেন তিনি কি মানসিকতা নিয়ে এ কথা বলেছেন তাও আমি জানি না। কাউকে ছোটো করার মানসিকতা নিয়ে বলেছেন নাকি কথার মধ্যে যে সত্যতা আছে সে সম্পর্কে উনার বোধ অনুযায়ী বলেছেন সেটা উনি বলতে পারবেন। তবে সব কথার মধ্যে কাউকে ছোট করার খুঁত না খুঁজে কথার মধ্যে কতটা আপাত অপ্রিয় সত্য আছে তা খুঁজে দেখা যেতে পারে। এটা ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে।
আমরা সৎসঙ্গীরা জানি ও মানি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ। এবং শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ এবং পরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দু'জনেই সেই বিষয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। তিনি যে যুগ অনুযায়ী আসেন এবং সেইমতো নিজেকে প্রকাশ করেন, কখনো অর্ধচন্দ্র আবার কখনো বা পূর্ণচন্দ্র রূপে সেকথাও তিনি বারবার বলে গেছেন। এবার যদি বলি, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ অর্ধচন্দ্ররূপ তাহ'লে কি তাঁকে ছোটো করা হবে? তাহ'লে দৃশ্যমান অর্ধেক চাঁদকেও অর্ধচন্দ্র বলা যাবে না তাহ'লে চাঁদের পরিপূর্ণতাকে অস্বীকার করা হবে। কথাটা কি যুক্তিগ্রাহ্য হ'লো? হ'লো না। কারণ দৃশ্যমান আর্ধেক চাঁদের আড়ালে পূর্ণচন্দ্র বিরাজমান।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভুকে যদি বলি যুগ অনুযায়ী অর্ধচন্দ্ররূপ প্রকাশিত জীবন্ত ঈশ্বর আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যুগানুযায়ী পূর্ণচন্দ্র রূপ জীবন্ত ঈশ্বর তাহ'লে কে ছোটো কে বড় হ'লো? শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণই তো শ্রীশ্রীমহাপ্রভু আবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই তো শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ এই বোধ নেই বলেই আমরা বালখিল্য জীবকোটি মানুষ, অল্প জ্ঞানী, অজ্ঞানী মানুষ, উপলব্ধিহীন মানুষ, সাধনাহীন মানুষ, বৃত্তি-প্রবৃত্তি বৃত্তে ঘেরা মানুষ, রিপু তাড়িত অস্থির মানুষ রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের মধ্যে ভেদাভেদ করেছি আর ধর্মাত্মা সেজে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভেদ সৃষতি ক'রে মারামারি, হানাহানি করেছি ধর্মের নামে, ঈশ্বর ভক্ত সেজে।
তাই, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আবার খুব শীগ্র আসবেন বলেই নিজেকে প্রকাশ করেননি, প্রকাশ করেননি সময় হয়নি বলেই, সময় ও যুগ অনুযায়ী সামান্য অভূতপূর্ব কথার রত্নমালার মাধ্যমে চকিত এক দিব্য আলোর ঝলকানি দিয়ে ও পূর্ণরূপে আগমনের ইঙ্গিত দিয়েই চলে গেছিলেন। আর এবারে পূর্ণরূপ কি, পূর্ণচন্দ্র কি, পূর্ণজ্ঞান কি তা যারা তাঁর সমগ্র ২৪হাজার বাণী, বিভিন্ন বিষয়ে নানা গ্রন্থে হাজারো প্রশ্নের সমাধান সহ উত্তরের কথোকথনের গ্রন্থাবলীতে গবেষণারত তারাই জানেন ল্যান্ডফোন আর মোবাইল ফোনের তুলনার অন্তর্নিহিত অর্থ। দুটো ফোনেই কথা বলা যায়। মনের কথা, জরুরী কথা সব আদান প্রদান করা যায়। শুধু একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসে আর একটা চলতে ফিরতে উঠতে বসতে যে কোনও জায়গায় গিয়ে কথা বলা যায়। আর এর সঙ্গে চলাফেরার মধ্যে দিয়ে আরো নানারকম ফিচারের মাধ্যমে পৃথিবীকে হাতের মুঠোর মধ্যে আনা যায়। এ হ'লো যুগ অনুযায়ী ল্যান্ডফোন আর মোবাইল ফোনের আধুনিকতার উদাহরণ। যা সমঝদারকে লিয়ে কাফি হোতা হ্যায়, বোঝে সে যার প্রাণ বোঝে। আবাল বালখিল্য ভক্তের যা বোঝার কথা নয়।
আমি এরকমই বুঝি এই ল্যান্ডফোন আর মোবাইল ফোনের তুলনার অর্থ। এটা নিয়ে এত কচলাকচলি, ঘাঁটাঘাঁটি ও বিতর্ক সৃষ্টি করার কোনও অর্থই হয় না। তাই বন্ধ হ'ক অকারণ বিতর্ক। সহজ সরলভাবে ভাবা হ'ক বিষয়ের গভীরতা ও মর্মার্থ। অকারণ জল ঘোলা ক'রে ঘোলা জল পান করিয়ে অন্তর বিষাক্ত করার কোনও দরকার নেই সরলমতি ভক্তদের মনে-প্রাণে। আর যদি তা সত্ত্বেও চলতে থাকে, চালাতে থাকে এই বিতর্ক কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুই দিকের দীক্ষিতদের মাঝে তাহ'লে তাদের জন্য শেষের সেদিন ভয়ংকর।
কিন্তু যে বলেছে সে কি বুঝে বলেছে তা আমি জানি না ও জানার দরকারও নেই। আমার এই বোধ কেউ গ্রহণ করতেও পারে আবার বর্জনও করতে পারে। জয়গুরু।
( লেখা ১৫ই জুলাই, ২০২৩ )
No comments:
Post a Comment