Powered By Blogger

Tuesday, April 23, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীহনুমানজী কি শ্রীশ্রীবড়দা?

প্রশ্নঃ আপনি আচার্য পরম্পরা ও শ্রীশ্রীবড়দাকে নিয়ে বিরোধীদের বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে, এবং প্রশ্নকর্তাদের প্রশ্নের উত্তরে কয়েকটা ভিডিও করেছেন। বিরোধীদের প্রচার, প্রশ্নকর্তাদের আপনার বিরুদ্ধে গালাগালি, প্রশংসা ও নানা কৌতুহলী প্রশ্ন এবং বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়ে অনুরোধ চোখে পড়েছে। আবার সম্প্রতি আপনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে দু'টো পোষ্ট করেছেন হনূমান আর বড়দাকে পাশাপাশি রেখে। এই পোষ্ট নিয়ে জল ঘোলা হ'য়ে চলেছে। কমেন্টের মধ্যে দিয়ে তা দেখতে পেলাম। একটা বিতর্কিত পোষ্ট। এমন একটা পোষ্ট যা মানুষ সহজে মেনে নেবে না। রাম ভক্তদের মনে, হনুমানের ভক্তদের মধ্যে অনেকের ভাবে আঘাত লাগতেই পারে। বিশ্বাস আহত হ'তে পারে। হনুমানের সঙ্গে বড়দার তুলনা, এক আসনে বসিয়ে দেওয়া সেটা ভক্তদের মধ্যে বেমানান লাগতেই পারে। আপনাদের সৎসঙ্গীরাও মেনে নিতে পারছে না সেটা; এখানে এই পোষ্টের কমেন্টে তার প্রমাণ। এটা স্বাভাবিক। আপনাকে জিজ্ঞাস্য, আচ্ছা আপনি এরকম বিতর্কিত পোষ্ট করেন কেন? আপনি প্রমাণ করতে পারবেন হনুমানই বড়দা। এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। আর, এই বিতর্কের অবসান আপনিই করতে পারেন। আপনি তো আপনার ভিডিওতে এরকম বহু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আপনার বক্তব্য রেখেছেন। অযথা জল ঘোলা হওয়ার আগেই এই বিষয়েও আপনি ভিডিওর মাধ্যমে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন। আশা করবো যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আপনি বিতর্কের অবসান ঘটাবেন।


উত্তরঃ শ্রীশ্রীহনুমান সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরঃ
আসুন প্রথমে একটু শ্রীশ্রীহনুমানের পরাক্রম নিয়ে কথা বলি। হনূমানজীর ভয়ংকর পরাক্রম দেখে স্বয়ং প্রভু রামচন্দ্র চিন্তায় পড়ে গেছিলেন। এবং যুদ্ধ করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু হনুমানজী প্রভুর কথায় সম্মত হন নি। সীতামাকে রাবণের কাছ থেকে উদ্ধার ক'রে প্রভুকে সুখী করার পণ করেছিলেন ভীষ্মের প্রতিজ্ঞার মতো। এবং যখন রাবণকে বেঁধে আনা হয়েছিল তখন প্রভু রামচন্দ্র মাপ করলেও পরম পূজনীয় শ্রীশ্রীহনুমানজী প্রভুর আদেশ অমান্য করেছিলেন এবং লক্ষ্মীমাতা সীতামায়ের কেশ স্পর্শ করেছিল যে দু'হাত সেই দুই হাত তিনি ভীম গর্জনে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। একই রকম প্রচন্ড প্রতাপ, ভয়ংকর তেজ আমরা দেখতে পেয়েছি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পরম ও প্রধান ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভয়ংকর ক্লান্তীহীন, নিদ্রাহীন যুদ্ধ করেছে ষড়যন্ত্রকারী বিরোধী সৎসঙ্গীদের সঙ্গে। এরকম Adherence নিষ্ঠা আমরা দেখতে পেয়েছি প্রত্যেকটি প্রধান শিষ্যের মধ্যে প্রভুর০ স্বপ্ন পূরণের জন্য।


যাই হক, প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের উপর শ্রীশ্রীহনুমানের Adherence অর্থাৎ অনুরাগ অর্থাৎ ভালোবাসা, প্রীতি, বন্ধুত্ব, পছন্দ, প্রণয়, আকর্ষণ, আসক্তি, টান ছিল অসীম, অভূতপূর্ব। প্রভু রামচন্দ্র যুদ্ধ না ক'রে সমুদ্রের ধার থেকে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। লোকক্ষয় চাননি। কিন্তু সীতামাকে রাবণ নিয়ে গেছে এটা হনুমানের কাছে বিষের মত লাগতো। রাবণ বাঁচুক মরুক সেদিকে হনুমানের কোনও দৃষ্টি ছিল না। মায়ের উদ্ধার চাই। প্রভুর তৃপ্তি চাই। হনূমান এটা বুঝেছিলেন, মা সীতাকে না এনে দিলে প্রভুর মনে শান্তি নেই। সীতামাকে যেমন করেই হ'ক এনে দিতেই হবে। ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠার ও ইষ্টকর্ম করার জন্য মানুষের দূরদৃষ্টি (Farsightedness), বুদ্ধিমত্তা (Intellegence), আয়ু (Longevity) সবই বেড়ে যায়। Passion ( বৃত্তি-প্রবৃত্তি) গুলিও Controlled (নিয়ন্ত্রণ) হয়। তাই হনুমানও সীতামাকে উদ্ধার করার জন্য যা যা করার ও যেখানে যেখানে যাবার সব করেছিল। এই যে প্রবল পরাক্রমী রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক'রে সীতামাকে উদ্ধার করেছিল তার পিছনে ছিল হনুমানের Alertness (সতর্কতা), Sharpness (তীক্ষ্ণতা), Promtitude (ক্ষিপ্রতা) এবং সর্বতোমুখী দৃষ্টি ও তৎপরতা। এগুলি অসম্ভবভাবে হনুমানের চরিত্রে developed হয়েছিল বলেই হনূমান সীতামাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এই যে হনূমানজী দংগল সৃষ্টি করেছিলেন সীতামাকে উদ্ধার করার জন্য ঐ দুঃসাধ্য কাজ করা হনুমানজীর পক্ষে সম্ভব হ'তো না যদি না প্রভু রামচন্দ্রের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা না থাকতো, পরিবেশের প্রতি সেবা দেবার মনোভাব না থাকতো। হনুমান কর্ম করেছিল তাই সে evolve (বিকাশ লাভ) করেছিল। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, By following and achieving he becomes great অর্থাৎ প্রভুকে অনুসরণ ক'রে কার্য্য সমাধা ক'রে হনূমান মহান হয়ে গেলেন। Behaviour এর মধ্যে অর্থাৎ ব্যবহারের মধ্যে ভক্তি না থাকলে তা evolve করে না, বিকাশ লাভ করে না। হনূমান ছিলেন বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন ভক্ত তাই সে প্রবলপরাক্রান্ত রাবণের সাম্রাজ্যে গিয়ে সব তছনছ ক'রে ওলোটপালোট ক'রে দিয়েছিল। এই যে প্রভু রামের প্রতি হনুমানের তীব্র টান সেটা তাঁর জিনের মধ্যেই নিহিত আছে। কারণ একবার দেওঘর কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সংস্কৃত শাস্ত্রের অধ্যাপক পন্ডিত শ্রীছেদীলাল ঝা শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে বসেছিলেন সেইসময় একটা বিড়াল সামনে দিয়ে নির্ভয়ে চলে যাচ্ছিল, আর তার বাচ্চাটা মায়ের পিছন ম্যাও ম্যাও ক'রে যাচ্ছিল। তা দেখে অধ্যাপক ছেদিলাল ঝা বলেছিলেন, "বিল্লিকা বাচ্চা হামকো বহুত আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়।" কারণ মা তার বাচ্চাকে রক্ষা ক'রে চলে সবসময়। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই একটা বড় হনূমান ঠাকুর বাংলার বড়দালান থেকে লাফ দিয়ে সামনে খড়ের ঘরের উপর এসে পড়লো। তারও কোলে একটা বাচ্চা। হনুমানের বাচ্চাটি মা হনুমানকে পেটে-পিঠে জোরে আঁকড়ে ধ'রে আছে। নিরালা নিবেশের সামনে কিছুক্ষণ থাকার পর হনুমানটি আবার লাফ দিয়ে বড়মার ঘরের ছাদে উঠে চলে গেল। তাই দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, মেরেকো হনুমানকা বাচ্চা জাদা আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়।" কারণ বিড়ালের মাকে সবসময় তার বাচ্চার ওপর নজর রাখতে হয় বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু হনুমানের বাচ্চাটি তার মাকে আঁকড়ে ধ'রে আছে আর নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই বলি, বাচ্চার টান মায়ের প্রতি যত হয় তত ভালো।

এই কথার মধ্যে দিয়ে ঠাকুর সক্রিয় ভক্তের নমুনা দেখালেন আমাদের সামনে। আর দেখালেনও রহস্যজনকভাবে অধ্যাপক পন্ডিত ছেদিলালজীর "বিল্লিকা বাচ্চা হামকো আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়" কথার জবাবে তাৎক্ষণিক হনুমানের আগমনের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ ঐ সময় হনুমানের আসার কি দরকার ছিল? সমঝদারোকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যাঁয়। আমরা দেখতে পেলাম কেন ত্রেতাযুগে হনূমান ছাড়া অন্য কোনও জীব প্রভু রামের পরম ও প্রধান ভক্ত হ'লো না। এর একটা তাৎপর্য, আছে Significance আছে। আছে মেসেজ, সিগন্যাল। সৃষ্টিকর্তা পরমপিতা পুরুষোত্তম পরম দয়ালের প্রতি টানের একটা উদাহরণ সৃষ্টি ক'রে রেখেছেন। উদাহরণ চরিত্রগত ক'রে প্রকৃতির বুকে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে রেখে দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা দয়ালের টান স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সৃষ্টির সবার প্রতি থাকেই। কিন্তু তাঁর সন্তানের টান, নিষ্ঠা কেমন হওয়া উচিত তার একটা মজবুত শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তিনি রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্ট জীব হনুমানের মধ্যে। তাই হনূমান প্রভু রামের শ্রেষ্ঠ পরম ও প্রধান ভক্ত। সেই উদাহরণ যেন মানুষ অনুসরণ ক'রে ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের ভিত মজবুত করে।

হনূমান যা করতেন সব প্রভু রামচন্দ্রের জন্য। এছাড়া তাঁর অন্য কোনও কাজ ছিল না। রাবণের মৃত্যুবাণ চুরি করবার জন্য তিনি রাবণের বাড়ি বামুন সেজে পুজো করতে গেছিলেন। রামচন্দ্রকে সুখী করতে, রামচন্দ্রের মুখে হাসি ফোটাতে, রামচন্দ্রের ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য হনুমানজী পাপ-পূণ্য, ইহকাল-পরকাল, স্বর্গ-মোক্ষ ঈশ্বরলাভ কোনও কিছুরই ধার ধারতো না। রামচন্দ্রকে নিয়ে মাতাল হয়ে, তাঁকে নিয়েই কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন প্রচন্ড কর্ম্মোৎসবের মধ্যে দিয়ে। প্রভু রামচন্দ্রকে খুশী করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত সুখ, ব্যক্তিগত সুবিধা, ব্যক্তিগত উন্নতি সব ভুলে গেল।


ঠিক তেমনি আমরা শ্রীশ্রীবড়দার জীবন যদি দেখি আমরা দেখতে পাবো শ্রীশ্রীহনুমানজীর কার্বন কপি। শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রীতির জন্য, শ্রীশ্রীঠাকুরের তৃপ্তির জন্য, বেপরোয়াভাবে কর্ম্মপাতাল হ'য়ে ওঠাটাই ছিল শ্রীশ্রীবড়দার এক ও একমাত্র লক্ষ্য। এই বেপরোয়া মনোভাব মানুষ দেখেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্য শ্রীশ্রীবড়দা কোনও কিছুর সঙ্গে, কারও সঙ্গে যে বা যাই-ই হ'ক কোনও কম্প্রোমাইস করেননি। শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা আছে "ইষ্টের চেয়ে থাকলে আপন ছিন্ন ভিন্ন তাঁর জীবন।" তিনি বলেছেন, ইষ্টের প্রতিষ্ঠা ও ইষ্টের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রকৃত ভক্ত প্রয়োজনে পিতামাতা, ভাইবোন, স্ত্রীপুত্রকন্যা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কারও সাথে বা কোনও কিছুর সাথে আপোষ করে না। শ্রীশ্রীঠাকুর ছাড়া আর সব কিছুর জন্য তিনি আপোষ করেছেন কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও ঠাকুরের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ব্যহত হয় এমন ক্ষেত্রে কোনও কিছুর সঙ্গে বা কারও সঙ্গে আপোষ করেননি। তাঁর এই নীরব আপোষহীন সংগ্রাম আমরা দেখেছি তাঁর শেষদিন পর্যন্ত। তিনি ঠাকুরের জন্য নিজেকে স্যাক্রিফাইস করেছেন কিন্তু ঠাকুরকে স্যাক্রিফাইস হ'তে দেননি। জীবন দিয়ে লড়ে গেছেন ভয়ংকর শয়তানী প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে। প্রভুর জন্য শ্রীশ্রীবড়দার আন কমপ্রোমাইজিং অ্যাটিটিউড যা শ্রীশ্রীহনুমানজীর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এই জন্য তিনি তৎকালীন তথাকথিত বড় বড় সাজা সৎসঙ্গী ভক্তমন্ডলী অনেকের বিরাগভাজন ছিলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "শয়তানের হাতে যতরকম ভেল আছে, তার চাইতে বেশি ভেল না থাকলে শয়তানকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে হবে। শয়তান যেমন মানুষগুলিকে বিভ্রান্ত ক'রে তার সেবায় লাগায়, আমরা তেমনি শয়তানকে বিভ্রান্ত করে পরমপিতার সেবায় লাগাবো।" এই যে ঠাকুরের কথা এই কথা বাস্তবায়িত হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার জীবনে ও শ্রীশ্রীহনুমানের জীবনে। ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীশ্রীবড়দার ভুমিকা আজ গবেষণার বিষয়।

বর্তমানে ‘সৎসঙ্গ’-এর পাঁচ হাজারের অধিক কেন্দ্র রয়েছে; এইগুলি সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, সৎসঙ্গ উপযোজনা কেন্দ্র ও ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ব্রহ্মদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমিরিকাতেও ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রগুলো। ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত প্রদেশে গড়ে উঠেছে ‘সৎসঙ্গ বিহার’। চার মহানগরেই ‘সৎসঙ্গ বিহার’ স্থাপিত হয়েছে। এই বি-শা-ল কর্মকান্ড যেমন সৎসঙ্গ ফিল্যান্ত্রপি, আনন্দবাজার, সৎসঙ্গ রসৈষণা মন্দির, সৎসঙ্গ ভেষজ মন্দির, সৎসঙ্গ দ্যুতদীপ্তি হাসপাতাল, সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজ, অমরদ্যুতি বেদ মন্দির ( সৎসঙ্গ লাইব্রেরী), বেদ ভবন, সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ অমরদ্যুতি মহাবিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বীণাপানি বিদ্যামন্দির, কলাবিভাগ, অতিথি ভবন, মেমোরিয়া, যতি আশ্রম, সৎসঙ্গ প্রেস, পশুপালিনী চিড়িয়াখানা, উপাসনা (মাতৃ-মন্দির গৃহ) ইত্যাদি ঠাকুরের দেহ রাখার আগেই নীরবে, নিভৃতে গড়ে উঠেছিল দেশভাগের আগেই বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুরের পবিত্র মাটিতে। ঠিক তেমনি নীরবতা ও নিঃশব্দতাকে আশ্রয় ক'রে আবার সমস্ত কিছু নুতন ক'রে গড়ে উঠেছে দেওঘরের বুকে এবং এগিয়ে গেছে ঠাকুর পরবর্তী নানা কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে! যা আজো একই ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নেতৃত্বে। এই যে নীরবতা ও নিস্তব্ধতা এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত অসীম দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা, অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনা, গালাগালি!!!!! যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সাধারণ শিষ্যবৃন্দের অগোচরে! কি পাহাড় প্রমাণ শারীরিক-মানসিক বাধা ও সীমাহীন বিরোধীতার সম্মুখীন হ'তে হয়েছিল ও মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরকে এবং শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন ও শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর থেকে শ্রীশ্রীবড়দার দেহ রাখার দিন পর্যন্ত। সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সৎসঙ্গীদের! ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, আর তা ব্যতিক্রম! আর সেই পাহাড় প্রমাণ বাধার ট্র্যাডিশন ব'য়ে চলেছিল মুখ বুঁজে দৃঢ়তার সঙ্গে কঠিন-কঠোর ও কোমল মনোভাবে শ্রীশ্রীবড়দা। ঠাকুরের জীবদ্দশায় শুরু হ'য়েছিল পরিকল্পিতভাবে শ্রীশ্রীবড়দাকে অমান্য করার গোপন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা আর তা রূপ নিয়েছিল ভয়ঙ্করভাবে একেবারে ঠাকুরের শেষের দিকে!! যাতে শ্রীশ্রীবড়দা সৎসঙ্গের হাল ধরতে না পারে। মানসিক যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত করেছিল শ্রীশ্রীবড়দাকে। আর এই যন্ত্রণা দিয়েছিল তৎকালীন তথাকথিত বড় বড় ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা। যাতে এই ঠাকুর সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেঙে যায়, ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দা তা বুঝতে দেননি বিশ্বজুড়ে তামাম সৎসঙ্গীদের। শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঠাকুরের প্রাণের প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'কে যে আগে রক্ষা করার দরকার সেই গ-ভী-র বোধ থেকে 'সৎসঙ্গ'কে রক্ষা করার জন্য অনন্ত-অসীম বাধার পাহাড় ঠেলে কঠিন-কঠোর ও কোমল শরীরে-মনে ও হৃদয়ে কুকুরের মত পাহারা দিয়ে গেছেন! অ্যাটলাসের মত পিঠে ক'রে ব'য়ে নিয়ে গেছিলেন 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে দিনরাত একাকার ক'রে। ঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও ঠাকুরের স্বার্থপ্রতিষ্ঠায় বড়দা ছিলেন নিষ্ঠাবান ও আপোষহীন! রাত দু'টোর সময় উঠে প্রাতঃকৃত্য সেরে শুরু হ'তো তাঁর আশ্রম পরিচালনার কাজ। চলতো সেই কাজ সারাদিন। রাত দশটায় নিয়ম ক'রে শুয়ে পড়তেন আর উঠতেন মাঝ রাত দু'টোয়। কোনও অবস্থায় বড়দা দুর্বল হতেন না বা নড়ে যেতেন না। ঠাকুরের বলা "নিষ্ঠা, আনুগত্য, কৃতি-সম্বেগ, ক্লেশ-সুখ-প্রিয়তা"-র মূর্ত প্রতীক হ'য়ে উঠেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা! যেমন শাসনে কঠিন ও কঠোর ছিলেন ঠিক তেমনি শুধু মানবদরদী ছিলেন তা নয় সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের প্রতি ছিল তাঁর সমান দরদ ও ভালোবাসা! আর এই এতবড় প্রতিষ্ঠানকে নিখুঁতভাবে পরিচালনার জন্য তাঁর কঠিন-কঠোর মুখাবয়ব ও তাঁর চখা আঁখি অর্থাৎ জগন্নাথের চোখ এবং তাঁর শান্ত গম্ভীর গলার স্বর ছিল কপট ধান্দাবাজদের কাছে একেবারে ভয়ঙ্কর বজ্রপাতের মত!!! তাই তারা তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারতো না, পিছন থেকে চালাতো ছুরি! শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর স্বার্থপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে শ্রীশ্রীবড়দা ধান্দাবাজ, কপট সৎসঙ্গীদের মোকাবিলায় এতটাই ফ্যানাটিক ও আনকম্প্রমাইজিং ছিলেন যে সেই সময় সৎসঙ্গীদের অনেকেই শ্রীশ্রীবড়দাকে ভুল বুঝেছিলেন! যার রেশ এখনও ব'য়ে চলেছে! এইটাই সৎসঙ্গীদের দুর্ভাগ্য! দুর্ভাগ্য কারণ বিষধর সাপের বিষের জ্বালা যে কি ভয়ঙ্কর হ'তে পারে তা যে সেই সাপের ছোবল খায়নি সে বুঝবে না! প্রবল প্রতাপান্বিত শক্তিমান প্রতিষ্ঠিত বড় বড় সৎসঙ্গীদের পাহাড়প্রমাণ বিরোধীতার পরিস্থিতির মোকাবিলা ক'রে জীবন অতিবাহিত করেছেন তেমন অভিজ্ঞতা কি সাধারণ সৎসঙ্গীদের আছে না হয়েছে!? কোয়ান্টিটি আর কোয়ালিটি এক নয়! কোয়ান্টিটি কখনও কোয়ালিটির মর্মব্যথা বুঝবে না, বুঝতে পারে না! ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী শ্রীশ্রীবড়দাকে আজীবন অপমানিত হ'তে হয়েছে তাঁকে মেনে নিতে না পারা কপট ভক্তমণ্ডলীর কাছে। যে কোনও প্রতিটি শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতির সংগঠনের ক্ষেত্রে মূল লোকের অবর্তমানে ক্ষমতা দখলের লোভে এরকম টালমাটাল ভয়ংকর অবস্থা তৈরী হয়েছে, হচ্ছে ও আগামীতেও হবে। শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে প্রায় সময় ধান্দাবাজ সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতো ও অপবাদ দিত। এই নালিশ শুনতে শুনতে বিরক্ত হ'য়ে ঠাকুর একদিন শ্রীশ্রীবড়দাকে বেত দিয়ে প্রচন্ড মেরেছিলেন এবং বড়দা ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে সেই মার হজম করেছিলেন, একটুও নড়েননি যাতে মারার সময় ঠাকুরের শরীরে এতটুকু কষ্ট না হয়। এবং মারের শেষে ঠাকুরের হাতে মারার সময় যে ঝাঁকুনি লেগেছিল তাঁর ফলে তাঁর হাতে যে কষ্ট, ব্যথা হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দা নিজের ব্যথা ভুলে ঠাকুরের হাত টিপে দিয়েছিলেন, মালিশ ক'রে দিয়েছিলেন শরীর। শ্রীশ্রীঠাকুর অশ্রুসজল চোখে তখন দুঃখ ক'রে বলেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দাকে, "তোর একটাই দোষ তুই আমার সন্তান!" তাই শ্রীশ্রীবড়দার জীবন ও শ্রীশ্রীবড়দা কে বোঝা ঈশ্বরকোটি মানুষ ছাড়া সম্ভব নয়! আর সম্ভব সামান্য হ'লেও হ'তে পারে যদি বোঝার অন্ততঃ চেষ্টা করে! তখন অনেক বড় বড় ভক্ত ছিলেন তাঁরা কি শ্রীশ্রীবড়দার জীবন বুঝতে পারেননি? নাকি বুঝতে চাননি? সেই চেষ্টা সেইসময় শ্রীশ্রীঠাকুরের নামকরা প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গীদের অনেকেরই ছিল না। অহংকার তাদের এত প্রবল ছিল যে তারা অনেকেই সরাসরি ও অনেকে সঙ্গে থেকে পিছন থেকে শ্রীশ্রীবড়দার কাছা টেনে ধরার চেষ্টা করতো কাঁকড়ার চরিত্র নিয়ে।

শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রীতির জন্য, শ্রীশ্রীঠাকুরের তৃপ্তির জন্য, বেপরোয়াভাবে কর্ম্মমাতাল হ'য়ে নিরাশীনির্ম্মম ভাবে সামনে দাঁড়িয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন, শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট বিশাল সৎসঙ্গ আশ্রম, কোটি কোটি শিষ্য, বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কেন্দ্র, মন্দির রক্ষা করার, বাড়িয়ে তোলার নেতৃত্ব দিয়েছে জীবনকে বাজি রেখে জ্বালা যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হ'তে হ'তে। আর যারা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে ছিল, সাজানো বাগানে ভক্ত সেজে ফুল তোলার বদভ্যাস বহন করে চলেছিল, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতার অধিকারী হ'য়ে চুলকে ঘা করার অভ্যাস নিয়ে, পিছন থেকে ল্যাং মেরে সামনে এগিয়ে যাবার গোপন এজেন্ডা নিয়ে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার চেষ্টা করেছিল আর নেপোয় মারে দই খাওয়ার স্বভাবকে অবলম্বন ক'রে জীবন অতিবাহিত করবে ভেবেছিল তারা হনুমানের মত একইরকম Alertness (সতর্কতা), Sharpness (তীক্ষ্ণতা), Promtitude (ক্ষিপ্রতা) এবং সর্বতোমুখী দৃষ্টি ও তৎপরতা নিয়ে চলা ঈশ্বরকোটি পুরুষ প্রয়োজনে ভয়ংকর কঠিন সীমাহীন কোমল শ্রীশ্রীবড়দাকে বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি শ্রীশ্রীবড়দাকে তিনি ইষ্টের জন্য কতটা ভয়ংকর হ'তে পারেন। তাবড় তাবড় শ্রীশ্রীঠাকুরের ভক্তরা শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে সেদিন হনুমানজির মতো Untottering ও Unrepelling অর্থাৎ অটুট এবং অপ্রতিরোধ্য একাগ্রতা ও নিষ্ঠা লক্ষ্য করতে পারেনি তাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি টান না থাকার কারণে। হনুমানজির যে জন্মগত প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য প্রভুর প্রতি টান যে টানের কথা আমরা শুনেছি এর আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখে "মেরেকো হনুমানকা বাচ্চা বহুত আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়" সেই তীব্র টানের অভূতপূর্ব নিষ্ঠা নোতুন রূপে আমরা দেখতে পেয়েছি শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে নিজেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর বলার মধ্যে দিয়ে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা, ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইলে থাকো দূরে খাঁড়া।"

ভগবানের প্রতি ভক্তের টান কেমন হবে প্রকৃতির বুকে তার একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একমাত্র উদাহরণ যেমন হনূমান। ঠিক তেমনি প্রকৃতির বুকে কুকুরের মত প্রভু ভক্ত জীবজগতে আর কেউ নেই। সেই প্রভু ভক্তের উদাহরণ শ্রীশ্রীবড়দা।

ভগবান মায়ের প্রতি সন্তানের Untottering ও Unrepelling টানের প্রমাণ তাঁর সৃষ্ট জীব হনুমানের মধ্যে দিয়ে ভক্তদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাই সত্য যুগের পরে ত্রেতা যুগে জীবন্ত ঈশ্বর প্রভু রামচন্দ্র তাঁর প্রধান ভক্তের নমুনা হনুমানজীকে সামনে তুলে ধ'রে সমগ্র মানব কুলকে মেসেজ দিয়েছিলেন। আবার এবার এসে নোতুন রূপে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে এসে মেসেজ দিলেন যে, প্রভুর প্রতি প্রেম-ভালোবাসা কেমন হবে, Unrepelling adeherence, অচ্যুত অনুরাগ, নিষ্ঠা, একাগ্রতা কেমন হবে, untottering concentration অটুট একাগ্রতা, বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা কেমন হবে প্রকৃতির বুকে জীবেদের মধ্যে তার একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একমাত্র উদাহরণ কুকুর। কুকুরকে আপনি একদিন যদি খাবার দেন, একটা বিস্কুট দেন তাহ'লে সে আর আপনার থেকে কোনওদিনও যাবে না। আপনি লাথি মেরে তাড়িয়ে দিলেও যাবে না। দূরে সরে যাবে আর জুলজুল চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আপনি ডাকলে কাছে যাবে নইলে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আপনাকে জীবন দিয়ে রক্ষা করবে নিজের জীবনের বিনিময়ে।

আসলে ত্রেতা যুগে জীবন্ত ঈশ্বর প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রবল পরাক্রমী মহাপ্রাণ ইষ্টপ্রাণ মহান ভক্ত পরম ভক্ত বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত কৃষ্টিজাত সন্তান ছিলেন শ্রীশ্রীহনুমান আর সেই হনুমানের একই রকম চরিত্র নিয়ে, বৈশিষ্ট্য নিয়ে কলি যুগে নোতুন রূপে উপস্থিত হলেন শ্রীশ্রীবড়দা প্রভু রামচন্দ্রের নোতুন রূপে আবির্ভূত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর একইসঙ্গে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান হ'য়ে ।

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে নিজের চরিত্রে রূপ দিয়েছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা। আপনারা যারা আমার কথা শুনছেন তারা সৎসঙ্গ জগতে দ্বিতীয় ইষ্টপ্রাণ ভক্তের নাম বলুন যিনি নিজের জীবনে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণীকে প্রতিষ্ঠা করেছেন? নিজেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর বলেছেন? একটা নাম বলুন। আমি কাউকেই ছোটো বা বড় করছি না এখানে। শুধু গবেষকের দৃষ্টিতে দেখতে চাইছি যখন তাঁর চারপাশের ভক্তমন্ডলী তাঁকে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীপিতৃদেব আবার অনেক ধান্দাবাজ শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অমরেন্দ্রনাথ ব'লে রাজনৈতিক দলের মত উৎসবের সময় ফেস্টুন বানিয়ে এনে তৈল মর্দন ক'রে কল্কে পেতে চেয়েছিলেন সেদিন বড়দার প্রচন্ড চন্ডাল রাগ দেখতে পেয়েছিল সেই ধান্দাবাজ ভক্ত ও সৎসঙ্গীরা। সেদিন শ্রীশ্রীবড়দা তাদের বলেছিলেন, তোরা আমাকে বড়দা ডাক আর পিতৃদেব যে নামেই ডাক আমার তা'তে কিছুই আসে যায় না, আমি জানি আমি কি। আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর। আর ঐ তৈল্মর্দনকারী ধান্দাবাজ যে শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অমরেন্দ্রনাথ আখ্যা দিয়েছিল সেদিন সে দেখেছিল শ্রীশ্রীবড়দার হনুমানের মতো ভয়াল বিধ্বংসী রূপ।

শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিষ্ঠা 'সৎসঙ্গ' কে রক্ষা করার জন্য, তাঁর মিশনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার জন্য, কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে এক সূত্রে মালার মতো বেঁধে রাখার জন্য হনূমানজীর মতো ভয়ংকর পরাক্রম প্রচন্ড প্রতাপ, ভয়ংকর তেজ, Adherence অর্থাৎ অনুরাগ অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা, প্রীতি, বন্ধুত্ব, পছন্দ, প্রণয়, আকর্ষণ, আসক্তি, টান নিষ্ঠা নিয়ে শ্রীশ্রীবড়দা ক্ষতবিক্ষত বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন কঠিন কঠোর কোমল নেতৃত্বে ঠান্ডা মাথায় ধীর স্থির ভাবে বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তায় প্রচন্ড বিরোধীতাকে মোকাবিলা ক'রে। শ্রীশ্রীবড়দা প্রীতিপূর্ণ নিরোধের মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের মিশন 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'-র রথকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রতিটি কঠিন মুহূর্ত ও অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দিনগুলিতে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত! তাঁর তেজে সেদিন ঝলসে গিয়েছিল, জ্বলে পুড়ে খাক হ'য়ে গিয়েছিল সেদিন শয়তানের মিষ্টি হাসির শয়তানী। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার নমুনা! সৎসঙ্গ আজ এই অল্পসময়ের মধ্যে পারিপার্শ্বিক সবাইকে নিয়ে বাঁচা-বাড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন!


আজ আমরা দেওঘরে যাই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি দীক্ষিত অদীক্ষিত মানুষ দেওঘরের নব বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শনে, যাই শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে সমস্যা জর্জ্জরিত হৃদয়ে সমাধানের আশায়। আজ আশ্রম সংলগ্ন অঞ্চল থাকা, খাওয়া ও প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসার বিরাট ক্ষেত্র হ'য়ে উঠেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোকের আসা যাওয়া। কিন্তু আজ যদি বড়দা না থাকতো তাহ'লে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত সৎসঙ্গ শ্রীশ্রীঠাকুর যাওয়ার সাথে সাথে। আর আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা যদি না রেখে যেতেন শ্রীশ্রীবড়দা তাহ'লে ঘুমন্ত বিষধর সাপেরা শ্রীশ্রীবড়দার অবর্তমানে রক্তবীজের ঝাড়েরা শেষ ক'রে দিত বিশ্বজুড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের সোনার 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান সোনার সৎসঙ্গী সেজে। শক্তিমত্তা ও কূটনীতিজ্ঞান এই দুইয়ের সার্থক সমাবেশ দেখা গিয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার চরিত্রে, সমগ্র জীবনে তাই তিনি হনুমানজীর মতোই অপরাজেয় হ'য়ে উঠেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্নপূরণে, ইচ্ছাপূরণে। শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দা দু'জনেই তাঁদের প্রভুর প্রতি তাঁদের সমস্ত passions & complexes নিয়ে অর্থাৎ সমস্ত বৃত্তি নিয়ে actively interested অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে অন্তরাসী হ'য়ে উঠেছিল বলেই তাঁরা উভয়েই Powerful Man হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যারা যারা ছিটকে গেছে তাঁদের মধ্যে ঠাকুরের প্রতি passion uninterested থাকার কারণে অর্থাৎ আবেগ আগ্রহহীন, প্রবৃত্তি আলগা থাকার কারণে তাঁরা ছিটকে গেছিল। তাঁদের মধ্যে individuality ব'লে, ব্যক্তিত্ব ব'লে কিছু ছিল না। শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে Inviduality অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব ছিল কারণ তাঁরা Ideal-এ অর্থাৎ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রে Completely intregrated সম্পূর্ণরূপে সংহত ছিল, Ideal-এ attracted ছিল, আদর্শের প্রতি আকর্ষিত ছিল। শ্রীশ্রীহনুমান আর শ্রীশ্রীবড়দা দু'জনেরই ছিল Passion-parvading attachment অর্থাৎ বৃত্তি-ভেদী অনুরাগ। যে বৃত্তি প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ও প্রভু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে Fulfill করেনি, পরিপূরণ করেনি সেই বৃত্তির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না তাঁদের। আর যে বৃত্তি কোনও না ভাবে প্রভুকে Fulfill করছে, প্রভুর ইচ্ছে, স্বপ্নকে পরিপূরণ করছে, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও প্রশ্ন ছিল না, তা করেছেই।
শ্রীশ্রীহনুমানজীর মধ্যে যে গুণাবলী ছিল, সেই মহৎ অভূতপূর্ব গূণাবলী নিয়ে হনুমানজী ছিলেন একজন প্রবল পরাক্রমী ইষ্টপ্রাণ পরম ভক্ত ইশ্বরকোটি মানুষ। তিনি প্রভু রামচন্দ্রের একনিষ্ঠ বৃত্তি ভেদী টান সম্পন্ন পরম ভক্ত মানুষ। সেই অঞ্চলে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে হনূমান, বাঁদর ছিল সেই কারণেই ৫০০০ হাজার বছর আগের ঘটনা কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হ'তে হ'তে প্রভু রামচন্দ্রের পরম ভক্তকে হনূমান রূপে দেখানো হয়েছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "শয়তানের হাতে যতরকম ভেল আছে, তার চাইতে বেশি ভেল না থাকলে শয়তানকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে হবে। শয়তান যেমন মানুষগুলিকে বিভ্রান্ত ক'রে নিজের সেবায় লাগায়, আমরা তেমনি শয়তানকে বিভ্রান্ত করে পরমপিতার সেবায় লাগাবো।"
আমরা দেখেছি শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দা উভয়েই শয়তানকে বিভ্রান্ত ক'রে সমগ্র পরিবেশকে উদ্বুদ্ধ ক'রে ইষ্টের সেবায় লাগিয়েছিলেন।

তাই প্রতিটি সৎসঙ্গীকে বলবো দেওঘর যখন যাবেন তখন একবার শ্রীশ্রীবড়দার ঘরের সামনে গিয়ে তাঁর ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে দু'ফোটা চোখের জল ফেলে প্রণাম জানিয়ে আসবেন। সালটা সম্ভবত ৯২-৯৩ হবে দেওঘরে শ্রীশ্রীরাঙ্গামায়ের কাছে গিয়েছিলাম। শ্রীশ্রীরাঙ্গামায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, সেদিন রাঙ্গামা কথায় কথায় শুধু অশ্রুসজল চোখে বলেছিলেন, তোদের বড়দা আরও অনেকদিন থাকতো যদি এত আঘাত না পেত। তাই চোখের জলে শ্রীশ্রীবড়দার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফটোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলবেন,

তোমায় নইলে বড়দা
আমার দয়ালের প্রেম হত যে মিছে।
তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর
তুমি তাই এসেছ নীচে।

কারণ আজ যদি সৎসঙ্গী সত্য না জানে, শ্রীশ্রীঠাকুরের উপস্থিতিতে ও অবর্তমানে শ্রীশ্রীবড়দার ওপর যে অত্যাচার হয়েছে ও এখনো হ'য়ে চলেছে তা' নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বুকে যে অসহনীয় যন্ত্রণা, সেই যন্ত্রণা যদি সৎসঙ্গী অনুভব না ক'রে, শ্রীশ্রীবড়দার যন্ত্রণাবিদ্ধ অবদানের কথা ও আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরার গুরুত্ব না বোঝে তাহ'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের লীলাস্থান দেওঘরে ঘুরতে আসা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে ও সমস্যা মুক্ত হওয়ার জন্য যতই দেওঘরে আসুক না কেন তা তীর্থস্থানে আসা পর্যটকের মত অসাড় হবে।

No comments:

Post a Comment