Powered By Blogger

Monday, April 22, 2024

প্রবন্ধঃ ভালো লাগা ও হতাশা, অবসাদে ডুবে যাওয়া।

যত পড়ি তত ভালো লাগে। তত শিহরণ জাগে শরীরে-মনে-প্রাণে। কেমন একটা ঘোর লাগা ভাবের মধ্যে ডুবে যাই যেন আমি। পরমুহুর্তে ডুবে যাই ঘোর হতাশায়, অবসাদে।

প্রথমবার ঠাকুরকে দেখে শ্রদ্ধেয় শীর্ষেন্দুদার যা মনে হয়েছিল,
"দীক্ষা গ্রহণ মানেই তো মাথা নোয়ানো, নিজের স্বাধীন ব্যক্তি-সত্তাকে বিসর্জন দেওয়া এবং খানিকটা ছোটো হয়ে যাওয়া। যদি অন্যের হাত ধরেই আমাকে চলতে হয় তবে আর আমার ছোটো হয়ে যাওয়া রইল কোথায়? এই সব ছেলেমানুষি দ্বিধাদ্বন্ধ তখন প্রবল"।

শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হওয়া প্রসঙ্গে যে কথা শ্রদ্ধেয় শীর্ষেন্দুদার মনে হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে মনে একটা প্রশ্ন জাগে,
শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহত্যাগের পরে সেই মনে হওয়া কথা অর্থাৎ মাথা নোয়ানো, স্বাধীন ব্যক্তি-সত্তাকে বিসর্জন দেওয়া, ছোটো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সেই ছেলেমানুষি দ্বিধাদ্বন্ধ কি পুনরায় ফিরে এসেছিল?
পথের দিশা/Pather Disha-এর টাইম লাইনে বিখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে প্রকাশিত পোষ্টে আমার উপরে লিখিত কমেন্টের উত্তরে আমাকে একজন জানিয়েছেন যে শ্রদ্ধেয় শীর্ষেন্দুদা কিছুদিন আগে দেওঘরে গিয়েছিলেন ও শ্রীশ্রীদাদার সাথে দেখা করেছিলেন এবং বর্তমান আচার্দেবের সঙ্গে প্রীতিমুখর আলোচনা করেছিলেন। এর সমর্থনে কয়েকজন ফোনও করেছেন আমায়।

যাই হ'ক এই কথার সত্যতা থাকতে পারে আমি অস্বীকার করছি না। আর শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত ও সঙ্গ করা অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিই পরবর্তী সময়ে ঠাকুরবাড়ি এসেছেন, পূর্ববর্তী আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীদাদার সঙ্গে দেখা করেছেন, প্রীতিমুখর আলোচনা করেছেন এবং এখনও অনেকে আসেন। তাঁদের নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই না, ইচ্ছাও নেই। তাঁদের ঠাকুরবাড়ি আসা ও আচার্যদেবের সঙ্গে দেখা করা ও প্রীতিমুখর আলোচনা করা সম্পর্কে আমার জানা থাকলেও জানার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার কোনওদিন ছিল না ও বর্তমানেও নেই।

শ্রীশ্রীঠাকুরের একজন সাধারণ অখ্যাত অপরিচিত সাধারণ দীক্ষিত হিসেবে সেই ১৯৬৯ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহত্যাগের পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমার একটাই শুধু আগ্রহ শ্রীশ্রীঠাকুরের সময়ের প্রীতিমুখর আলোচনার পরিবেশের যে অবনমন হয়েছিল তাঁর চলে যাওয়ার পর থেকে এবং তার যে ট্র্যাডিশান, বিষাক্ত বাতাস আজও বহে চলেছে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ ক'রে তা কি বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে বা হচ্ছে এবং পুনরায় প্রীতিমুখর আলোচনা ও সম্পর্কের পরিবেশ রচিত হয়েছে সেই সমস্ত বিতর্কিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গদের পুনরায় আগমনের ফলে? তাঁদের বিতর্কিত অবস্থান গ্রহণ ও বক্তব্য প্রকাশ্য পরিবেশনের কারণে সৎসঙ্গ সমাজ যে খন্ড খন্ড হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বুক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে তা কি তাঁদের ও তাঁদের দ্বারা ব্রেণ ওয়াশ হওয়া সৎসঙ্গীদের এবং মূল কেন্দ্রের সৎসঙ্গীদের উপলব্ধি হয়েছে? বা তাঁদের নিজেদের জীবনের, চরিত্রের, চলন বলনের, আচার আচরণের, কথাবার্তার, চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের ক্ষতবিক্ষত বুকের যে ক্ষরণ হ'য়ে চলেছে তা কি বন্ধ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা হয়েছে বা হচ্ছে? তাঁরা কি তাঁদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত বা এই জীবন থেকে চলে যাবার আগে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ শ্রীশ্রীঠাকুরের রক্ত ক্ষরণ বন্ধের কোনও বিন্দুমাত্র দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন?

শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা তো সবাই সমাজে স্ব স্ব মহিমায় মহিমান্বিত ও প্রতিষ্ঠিত তাঁরা তো শ্রীশ্রীঠাকুরের অজচ্ছল দয়ায় প্লাবিত হয়েছে তার প্রতিদান স্বরূপ কি ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের এক ও অদ্বিতীয় ইষ্ট, গুরু, আচার্য শ্রীশ্রীঠাকুরকে? তাঁরা তো শ্রীশ্রীঠাকুরের বীজমন্ত্র বহনকারী, শ্রীশ্রীঠাকুর মিশন, জীবন দর্শন প্রচারকারী মহান আত্মা তাঁরা শ্রীশ্রীঠাকুরের বীজমন্ত্র বহন ক'রে, শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন, জীবন দর্শন প্রচার ক'রে কি বপন করেছেন ও এখনও ক'রে চলেছেন? বিষবৃক্ষ নাকি অমৃতবৃক্ষ??? কোনটা? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমি আজও বেঁচে আছি সেই ১৯৬৯ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর থেকে আজ এই ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৪ বছর ধ'রে একজন সাধারণ, অতি সাধারণ, অখ্যাত, অপরিচিত নগন্য দীক্ষিত হিসেবে।

সেই ৫ বছর বয়সে নাম পাওয়া ও ১২ বছর বয়সে দীক্ষা নেওয়ার পর থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রবীণ খ্যাত কর্মী, ঋত্বিক যাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৭০বছরে তাঁদের ( নাম উল্লেখ করতে চাই না) প্রত্যেককেই ১৯৬৯ সালের পর থেকে ঘটা ঘটনার মূল কারণ সহজ সরল্ভাবে জানতে চেয়েছি একজন সাধারণ অতি সাধারণ অখ্যাত দীক্ষিত হিসেবে কিন্তু পাইনি। তাঁদের যাদের সঙ্গেই কথা বলেছি দীর্ঘ ৫৪বছর ধ'রে তাঁদের প্রত্যেকের শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে, শ্রীশ্রীঠাকুরের বীজমন্ত্র, শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন ও জীবন দর্শন সম্পর্কে সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি সমৃদ্ধ কথা, বক্তৃতা আমাকে মুগ্ধ করতো, বিস্মিত করতো, পুলকিত ক'রে তুলতো, শিহরণ জাগাতো মনে-প্রাণে-হৃদয়ে আর তাই তাঁদের প্রতি গভীর আকুলতা, বিশ্বাস, ভরসা ও নির্ভরতা ছিল অসীম এই ৫৪বছর ধ'রে বুকের ভেতর পুষে রাখা আমার নিজের কাছে সমাধানহীন এই প্রশ্নের নিখুঁত অকপট উত্তর পাওয়ার। কিন্তু সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ জ্ঞান, বোধ, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধির অধিকারী এইসমস্ত মহান দীক্ষিত ভক্তদের কাছে এই সহজ সরল প্রশ্নের কোনও উত্তর পাইনি। যা পেয়েছি তা আমার বোধ, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সঙ্গে মেলেনি। হ'তে পারে আমার শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে, শ্রীশ্রীঠাকুরের বীজমন্ত্র, মিশন ও জীবন দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান, বোধ, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি সীমিত। হ'তেই পারে। কিন্তু উত্তরে লজিক থাকতে হবে।

আমার কথা আমি জানালাম। আমার কোনও ইগো, গোঁড়ামি নেই, যা আছে তা শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টের স্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য। এছাড়া আর কিছুই নেই। সেই স্কুল জীবন থেকে আজ পর্যন্ত আমার বক্তব্যের যে উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি সেই বক্তব্য পাঠক গ্রহণ করতে পারেন আবার বর্জনও করতে পারেন। গ্রহণ ও বর্জন পাঠকের ব্যক্তিগত। জয়গুরু।
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী।
#প্রকাশবিশ্বাস
( লেখা ৩রা নভেম্বর, ২০২৩ )

No comments:

Post a Comment