Powered By Blogger

Sunday, April 28, 2024

স্বপ্নে স্বর্গলোকে আমি।

একদিন ভোর রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে দেখলাম, আমি চলে গেছি স্বর্গলোকে। সেখানে পৌঁছে একেবারে মোহিত হয়ে গেলাম। চতুর্দিকে যেদিকে তাকায় একটা অদ্ভুত মাদকতা। মাদকতাময় পরিবেশে ভরে গেল মনপ্রাণ। কি ঝকঝকে চারপাশটা। এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝলমলে পরিবেশ যে মাথাটা বোঁ ক'রে ঘুরে গেল। একটা নিখুঁত পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে চারপাশ। সমস্তটাই গণিত আর সুখময় কাব্যের চরম সংমিশ্রণের এক চোখ ধাঁধানো বহির্প্রকাশ। যা শুধু অনুভবের ব্যাপার, উপলব্ধি ও নির্বাক দর্শনের ব্যাপার। যা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা বৃথা। তবুও বলবো যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর দৃশ্য!!!!!! ছবির মত যেন সব টাঙ্গানো রয়েছে চারপাশে। যেন কোনও শিল্পী বসে বসে এঁকেই চলেছে তাঁর রঙ আর তুলি নিয়ে পাহাড় পর্ব্বত, নদনদী, ঝরণা, গাছপালা, বুনো লতাগুল্ম, পশুপাখি, ফড়িং প্রজাপতি, কত রকমের যে সুন্দর সুন্দর নানা রঙের কত পাখি আর তাদের কলকাকলিতে ঝমঝম ভরা প্রকৃতির দৃশ্য, কে যেন এ সব এঁকে চলেছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মত! আর দূর থেকে ঐ যে দূরে এঁকে বেঁকে চলে গেছে যে নদী, সেখান থেকে ভেসে আসছে সেই নদীর অবিরত ব'য়ে যাওয়া অস্ফুট কলকল ধ্বনি! মাথার ওপরে ভেসে চলেছে পেঁজা তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ, মেঘের স্তুপ! চারপাশটা ঠান্ডা ছায়াছায়াময়! সূর্যদেবতা যেন পরম মমতায় তাঁর তেজকে নিয়ন্ত্রণ ক'রে নরম আলো ছড়িয়ে মায়াময় ক'রে তুলেছে স্বর্গটা! একটা হাল্কা ঠান্ডা বাতাস যেন তার মনোরম সুখময় শালটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছে বারবার!  কত সুন্দর সুন্দর নারীপুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে! শরীরের পোশাক-আশাকে সলজ্জ মার্জিত ভাব যা স্বর্গকে গৌরবান্বিত ক'রে তুলেছে। সেখানে শিল্পীর আঁকা নারীর শরীরে ঝ'রে পড়ছে সম্মান-শ্রদ্ধার উজ্জ্বল এক মাতৃভাব, অপূর্ব এক দৈবীভাব, দৈবীমায়া!  ঝলমলে হাসিখুশীতে ভরা নারীপুরুষ উভয়ের চোখমুখ! কোনওরকম উৎকণ্ঠা, হতাশা, অবসাদ, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অশ্লীলতা, রাগ, দ্বেষ, হিংসা, নীচতা কোনও কিছুর চিহ্ন মাত্র নেই চোখেমুখে, চলাফেরায়, শরীরী ভঙ্গিতে! অদ্ভুত শান্ত, সৌম্য, ধীর, স্থির, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে সমস্ত শরীর জুড়ে। সদাহাস্যময়! মিষ্টি হাসির ঢেউ ভেসে আসছে পাশে গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা জনাকীর্ণ স্থান থেকে! মিষ্টি সুরে কে যেন গাইছে রাগ ভৈরব! আলোআঁধারিতে ঘেরা ভোরের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে আসা সেই সুর নেশাগ্রস্থ ক'রে আমায় হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় দেবদেউলে। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত স্বর্গে বিচরণ করতে করতে চলে এলাম পরমপিতার দরবারে। 


সেই দরবারে পৌঁছে আমি দেখতে পেলাম সেখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে। সেখানে বহু নামী-অনামী, দামী-অদামী, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, ধনী-দরিদ্র, আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু বহু রকমের মানুষের মিলনস্থল। আমি একপাশে ফাঁকা জায়গা দেখে চুপ ক'রে বসে পড়লাম। দেখলাম দয়াল ঠাকুর পরমপিতা মৃদু হাসি হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছেন। গরীব-বড়লোক, পন্ডিত-মূর্খ, সাধু-শয়তান, ধার্মিক-অধার্মিক সবাই বসে আছেন তাঁর সামনে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখছে দয়াল ঠাকুরকে, দেখছে পরমপিতার অপূর্ব স্নিগ্ধ শান্ত মিষ্টি হাসিতে ভরা মুখমন্ডল, একটা স্বর্গীয় দ্যুতি যেন ঝড়ে পড়ছে সমস্ত বরতনু দিয়ে! চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মোহিত হ'য়ে গেলাম! মনে পড়ে গেল আমারই লেখা গানের লাইন, 

চোখ যেন নয় হীরে তা চোখের অন্তরে, 
চোখের তারায় মমতা রাশি রাশি ঝ'রে পড়ে,২
নয়নে নয়ন মেলে পরাণে ঝড় তোলে,২
ও, মন হারিয়ে যায় রে মন হারিয়ে যায়,
বন্ধুরে তোর পাখনা উড়িয়ে দিয়ে আয় রে,
উড়িয়ে দিয়ে আয়!

মনে হচ্ছে আমি যেন, তাঁর সামনে গেয়ে চলেছি একটার পর একটা শুধু তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে, 
মণিমুক্তো পড়ে ঝ'রে ঝ'রে। 
ঐ চোখের পানে চেয়ে চেয়ে 
প্রাণ পাখি বলে এবার যাবো উড়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে! 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
চোখ সাগরে ডুবে যে যায়। 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
এবার বুঝি ডুবেই যে যায়! 
কে আছো ভাই বাঁচাও আমায় 
ঐ চোখের মাঝে আমার সত্ত্বা হারাই। 
চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
মরি আমি বিষম খেয়ে 
ঐ চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
হাবুডুব খেতে খেতে 
এই জন্ম আমার হারিয়ে গেল, 
ঐ চোখের মাঝে আমার নোতুন জন্ম হ'লো।

আপন মনে গান গাইতে গাইতে চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। দেখলাম পরপর সবাই সারি সারি বসে আছে শৃঙ্খলিত ভাবে। কেউ কথা বলছে না। সবাই শুনছে দয়ালের কথা বাধ্য ছাত্রের মত। শুধু ভেসে আসছে ঐ নিস্তব্ধতা মাঝে দয়ালের মধুর মিষ্টি কন্ঠস্বর আর যার সঙ্গে কথা বলছে তার করুণ নিম্ন কন্ঠস্বর। করুণ কেন!? ঐ সামনে বসা ভক্তদেরএকটা করুণ ক্রন্দন ধ্বনি যেন শুনতে পাচ্ছি আমি। মনে হ'লো মর্তে তাদের কৃত অপরাধ কবুল করছে পরম দয়ালের কাছে। মানুষের প্রতি নির্মম অত্যাচার, অন্যায়, অপরাধ, দয়ালের প্রতি ও দয়ালের আত্মজদের প্রতি অশ্লীল গালাগালি, অপমান, মিথ্যে নোংরা অপবাদ, চরিত্রে কলঙ্ক লেপন, দয়ালের ভক্তদের উপর, সৎসঙ্গীদের উপর কুৎসা ও গালাগালি ক'রে ব্যক্তিগত আক্রমণ মৃত্যুর পরেও তাদের উপর ভয়ংকর ভারী হ'য়ে বুমেরাং হ'য়ে ফিরে এসে তাদের আত্মাকে ক'রে চলেছে বীভৎস বলাৎকার! তা তাদের করুণ চেহারা ও ভয়ার্ত কথাবার্তায় উঠেছে ফুটে। আর পরম দয়াল পরম মমতায় তাদের দিকে স্নেহ ঝরা দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে! মনে মনে ভাবলাম এখন তো এরা মর্তে নেই, দেহরূপে নেই তাহ'লে এদের কষ্ট কিসের, কষ্ট কোথায়? তাহ'লে কি এদের আত্মা কাঁদছে?  ক্ষতবিক্ষত আত্মা কি ক্ষতের যন্ত্রণায় কাঁদছে? তাহ'লে কি আত্মা তার চলমান গতিময়তা হারিয়ে বাঁধা পড়ে গেছে গন্ডীতে? ব'সে ব'সে মনে মনে ভাবলাম, নদী যেমন বইয়ে যেতে যেতে তার মূল গতি পথ হারিয়ে খালে এসে আটকে যায় এবং স্বাভাবিক স্রোত হারিয়ে বদ্ধ পচা জলে পরিণত হয় সারা শরীরে অজস্র ক্ষত আর দূর্গন্ধ নিয়ে ঠিক তেমনি তাদের দেহ থেকে আত্মা তার গতি হারিয়ে বেরিয়ে এসে দূর্বল পচা গলা অস্তিত্ব নিয়ে দয়ালের কাছে কেঁদে চলেছে তার হারানো শক্তি ফিরে পাবার জন্য। অবাক হ'য়ে ভাবলাম দেহ ছাড়ার পরও আত্মা কষ্ট পায়, যন্ত্রণা পায়? পায় দেহ থাকা অবস্থায় পাওয়া কষ্ট যন্ত্রণার দশগুণ!? সামনে যারা বসেছিল তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাদের চোখ দিয়ে এক তীব্র যন্ত্রণার রক্তের ধারা গাল বেয়ে ঝ'রে পড়ছে। আর হাতে পায়ে মাথায় মুখে সর্বাঙ্গে ঘা। এমন কেন এদের চেহারা!? অবাক হ'য়ে বোকার মতো স্থির হ'য়ে ব'সে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু অন্তরে অস্থিরতার ঝড় ব'য়ে চলেছে। 

এই চারপাশের সমস্ত বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যের মাঝে আরও একটা জিনিস দেখে বিস্মিত হ'লাম, পরমপিতার দরবারে যারা বসে আছেন তাদের মধ্যে যাদের আমি আমার ছেড়ে আসা পৃথিবীতে পন্ডিত বুদ্ধিজীবী ব'লে জানতাম, যাদের কথা, আচার, ব্যবহার ও কলমের ডগা দিয়ে ঝলকে ঝলকে পান্ডিত্য ঝ'রে পড়তে দেখেছি, যাঁদের তাঁর বার্তাবাহী ব'লে জানতাম, এবং ঈশ্বর আরাধনা ও ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও শব্দের মালা গেঁথে গেঁথে কথার সাগরে ভাসতে ভাসতে ও ভাসাতে ভাসাতে বাগ্মীপ্রবর হ'য়ে বিরাট ভক্তের পরিচিতি লাভ করতে দেখেছিলাম যাঁদের সেইসমস্ত বুদ্ধিজীবী, পন্ডিত, জ্ঞানী, ইষ্টপ্রাণ, বাগ্মীপ্রবর ভক্তবলয়দের স্থান স্বর্গলোকের দেবদেউলে দয়ালের দরবারে সবার পিছনে! বসে আছে কেমন একটা কাঁচুমাচু মুখ ক'রে। চোখেমুখে একটা অপরাধী অপরাধী ভাব। যেন বিরাট কোনও অপরাধ ক'রেছে আর সেই অপরাধ বোধ নিয়ে বসে আছে মাথা নীচু ক'রে। যারা অপরাধ করলো, অন্যায় করলো তারা সামনে বসে আছে, সামনে ব'সে তাদের কৃত অপরাধের জন্য কান্না করছে, পাপমুক্ত হবার জন্য কাতর ক্ষমা প্রার্থনা করছে, ভিক্ষে চাইছে অনুতপ্ত হৃদয়ে, আর, যারা আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে ইষ্টপ্রেমের, ইষ্টপ্রাণতার, ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার প্রচারের তুফান তুলেছে মন্দিরে, ঘরে, উৎসবে, কলমের ডগায় তারা আজ অনেকেই পিছনে বসে আছে কেন!? যাঁরা মর্তলোকে এত ঢাকঢোল পেটালো তারা আজ দয়ালের দরবারে সবার পিছনে!? কেন? তারা অনেকেই দয়ালের বীজনাম বহন করেছে, বীজনাম মানুষকে বিলিয়েছে, এমনও শুনেছি দয়াল তাদের মুখ দিয়ে কথা বলতেন, তাদের মুখ দিয়ে খেতেন। একজনকে দেখেছি তিনি এমনিতে রসগোল্লা খান না, খেতে দিলেও তিনি খেতে চাইতেন না। কিন্তু যেহেতু দয়াল রসগোল্লা খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন তাই তিনি যজমানরা রসগোল্লা দিলে বিনা আপত্তিতে খেয়ে নিতেন, কারণ তিনি খেতেন না, তার মুখ দিয়ে দয়াল স্বয়ং খেতেন। কি পবিত্র নিখাদ ভক্তি! তাঁকেও দেখলাম একেবারে দয়ালের দরবারের চৌকাঠের পিছনে বসে আছেন, বসে আছেন ভগ্ন হৃদয়ে। তাহ'লে রসগোল্লা খাওয়ার ব্যাপারটা ছিল আসলে নাটক!? প্রত্যেকের মুখ বিবর্ণ। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কেমন যেন কুঁকড়ে আছে শরীরটা। মনটা খারাপ হ'য়ে গেল দেখে। এ বড় অন্যায়? পরমপিতার দরবারে পরমপিতার এ কেমনতর বিচার!? অসহিষ্ণু হ'য়ে উঠলো মন। মেনে নিতে পারলাম না। অসহিষ্ণু মন আবারও ব'লে উঠলো, না, এ বড় অন্যায়। এ ভীষণ অন্যায়!! ভাবলাম পরমপিতাকে জিজ্ঞেস করি। অস্থির আমি উঠে দাঁড়ালাম কিছু বলবো ব'লে। ঠিক তক্ষুনি শ্রীশ্রীদাদার 'শেষের সেদিন' কবিতাটা যেন ভেসে এলো কানে, কে যেন দীপ্ত বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে আবৃত্তি করছে,
ফাঁকি দিয়ে ঘুরিস ভবে
প্রবঞ্চনায় ভুলিয়ে লোকে
কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে
আত্মপ্রতিষ্ঠারই ঝোঁকে,
এমনি করেই বেলা গেল
সন্ধ্যা-ছায়ায় ভরল ঘর,
এখনও তুই চেতন হারা ?
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

নিত্য অহংমত্ত যারা
গেছে চলে এমন কত –
কেরদানিতে কাঁপিয়ে ধরা
চলত যারা অবিরত,
গুরুগিরীর মোহে ছুটিস
গরুর মতন নিরন্তর,
তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

পিছু পিছু চলছে যারা
নিত্য নিয়ে মাথায় তোরে
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভাবিস
অনন্তকাল রাখবি ধরে ?
ডুববি যখন শুনবি ওদের
অভিশাপের কলস্বর।
হাতটি ধরার থাকবেনা কেউ;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ইষ্ট ছেড়ে ইষ্ট সেজে
ছড়িয়ে বাহার ভাবিস নাকি
বাহার দেখে ভুলবে বিধি,
পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি ?
সত্ত্বা জুড়ে জাগছে ভাঙ্গন,
জাগছে ঐ প্রলয় ঝড়
পারিস যদি ফের এখনও;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ঈশের বিষাণ উঠল বেজে,
কাল-ফণী তোর মাথার প'রে,
মরণ তোরে করছে তাড়া
বাঁচবি এবার কেমন করে ?.
দ্রোহ-লোভের বাঁধন ছিড়ে
ইষ্ট পথে ঝাঁপিয়ে পড়
নইলে গতি কুম্ভীপাকে;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

আবৃত্তিটা শেষ হ'তেই মাথার পাশে রাখা মোবাইলে অ্যালার্ম বেজে উঠলো জোরে। ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটা ছিটকে চলে গেল। বিছানায় উঠে বসলাম। চুপ ক'রে চোখ বন্ধ ক'রে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর জানালা খুলে বাইরের দিকে চেয়ে দেখলাম রাতের আঁধার কেটে ধীরে ধীরে ভোরের সূর্যের ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। ভোর হচ্ছে। একটা শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ। চারপাশ ফাঁকা। এক ঝলক ভোরের তাজা ঠান্ডা বাতাস চোখেমুখে এসে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। সম্মোহিতের মতো আমি চোখ বন্ধ করলাম। মনে মনে ভাবলাম স্বপ্নের কথা। তারপর যখন চোখ খুলে ঠাকুরের ফটোর দিকে চেয়ে রইলাম। দেখলাম, দয়াল ঠাকুর আমার দিকে চেয়ে মিট মিট ক'রে হাসছে, আর, যেন খুব মৃদু হাল্কা স্বরে বলছেন, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তে করলে রে চলবে না। ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না। আগে সাহসী হও, বীর হও, অকপট হও তবে জানা যাবে ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার তোমার হয়েছে।" বুকের ভেতরটা কে যেন খামচে ধরলো হঠাৎ। ব্যথা হ'তে লাগলো। চোখ ভ'রে গেল জলে। গাল বেয়ে নেমে এলো জলের ধারা। বুকটা চেপে ধ'রে অনুতপ্ত হৃদয়ে চেয়ে রইলাম দয়ালের সেই বরাভয় চোখের দিকে।

মনে পড়লো তাঁর কথা, "আমার গায়ে মশা মাছিও বসে, তাহ'লে কি তারাও আমার সঙ্গে স্বর্গে যাবে?" 
মাথাটা নীচু ক'রে নিলাম। ভাবলাম ভাগ্যিস জিজ্ঞেস করিনি স্বপ্নে দয়ালকে, কেন এই অন্যায় বিচার। ভাগ্যিস বিচারের ভার আপন হাতে নিইনি। তবুও একটা অপরাধ বোধ খোঁচা মারতে লাগলো বুকে, মনে হ'তে লাগলো, মুখে জিজ্ঞেস না করলেও মনের মধ্যে তো উঠেছিল তার বিচারের প্রতি অবিশ্বাসের প্রশ্ন!! অপরাধ বোধে চোখটা জলে ঝাপসা হ'য়ে এলো। দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো নীচে মাটিতে। জয়গুরু।  

No comments:

Post a Comment