আমিষ-নিরামিষ প্রসঙ্গে বহু বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য তুলে ধরা যেতে পারে। আমিষ-নিরামিষ কোনটা মানব শরীরের পক্ষে উপযুক্ত, কোনটা জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে সার্থকতা লাভের জন্য অধিক দরকারী ও সহযোগী, বিশেষ ক'রে আধ্যাত্মিক জগতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ঈশ্বরানুভূতির পক্ষে সাহায্যকারী সে সম্পর্কে বিজ্ঞানগত ভাবে বহু ব্যাখ্যা আছে এবং এই আমিষ-নিরামিষ খাদ্য বায়োলজিক্যালি মানব শরীরের পক্ষে না বিপক্ষে সৃষ্টির নিয়মেই প্রযোজ্য সে ব্যাপারে The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর নানারকমভাবে বহু বিশদে বলা আছে। এ ব্যাপারে গবেষণার মানসিকতা নিয়ে পড়াশুনা করা গেলে তার জন্য উপকৃত হবে মানুষই।
আমরা প্রত্যেকেই ইদানীং এই বিষয়ে নানা আলোচনায় জানতে পেরেছি যে বিবেকানন্দ কখনই আমিষ খেতেন ব'লে আমিষ খাওয়াকে জীবনের পক্ষে, শরীর ধারণের পক্ষে, খাওয়ার পক্ষে বৈধ খাদ্য বলে সীলমোহর দিয়ে যাবার জন্য ওকালতি করেননি। খাওয়া ও না-খাওয়া সবটাই ব্যক্তিগত ব্যাপার। জিভের স্বাদের ব্যাপার। এই জিভের স্বাদের জন্যই মানুষের নিজের সংযমের কাছে নিজের হারজিতের ব্যাপার নিহিত। এখানে আমিষ-নিরামিষ প্রসঙ্গে নিরামিষের পক্ষ নিয়ে অহেতুক লড়াই করা মানে নিজেকে অন্যের চেয়ে একটু আলাদা, স্বতন্ত্র মানসিকতা, বড় ব'লে প্রতিষ্ঠা করা।
শ্রীশ্রীবিবেকানন্দ আমিষ খেতেন। তা তিনি কখনোই লুকোননি। সেই সময়ে অমোঘ লীলা দাসেদের মতো বিবেকানন্দের প্রতি ঘোর ইর্ষাকাতর নীচ মনোবৃত্তির মানুষ ছিল না? তিনি কি জানতেন না তাঁর এই মাছ খাওয়া একদিন তাঁর প্রতি ঈর্ষাকাতর নীচ মানুষদের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার অস্ত্র হ'য়ে দাঁড়াবে? নাকি তিনি বেকুব ছিলেন? কই তিনি তো লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করেননি। তিনি তো ইচ্ছে করলে নাই পারতেন আমিষ খাওয়া নিয়ে নিজের স্বীকারোক্তি দিতে? ইচ্ছে করলে এই বিষয় নিয়ে চুপ ক'রে পাশ কাটিয়ে যেতে পারতেন। কি দরকার ছিল নিজের মাছ খাওয়া সম্পর্কে লিখে রেখে গিয়ে এইরকম নীচ মানসিকতাসম্পন্ন পরশ্রীকাতর ইর্ষাকাতর অমোঘ লীলা দাসেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যাওয়ার? ছিল কি? একটু ভেবে দেখুন পাঠক। কারণ তিনি নিজেই বলেছেন, চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। আর এই সরলতাই কি এই ঘোর কলিযুগে ভন্ড সাজা সাধুদের কাছে তাঁর কাল হ'য়ে দাঁড়ালো? আমাদের মনে রাখতে হবে,
হাতি চলে বাজার মে কুত্তা ভোঁকে হাজার
সাধুও কো দুর্ভাবন নেহী যব ঘেরে সংসার।
আশ্চর্যের বিষয় এই আমিষ খাওয়া বিবেকানন্দই কিন্তু সমগ্র বিশ্বকে ধর্ম ও ঈশ্বর বিষয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যা অমোঘ লীলা দাসেদের মতো তথাকথিত নিরামিষভোজী সাজা সাধু, ভন্ড সাধুদের পক্ষে হাজার বার জন্মে সাধনা করলেও হবে না। কারণ এটা বায়োলজিক্যালি ব্যাপার, রক্তের ব্যাপার, জন্মজন্মান্তরের সাধনার ব্যাপার। বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার।
সেই ১৮৯৩ সালে শিকাগো শহরে ধর্মমহাসভার সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ১৩৩ বছর পরও অমোঘ লীলা দাস ও তার প্রভু প্রভুপাদের মত গোটা বিশ্বের তথাকথিত প্রচার সর্ব্বস্ব বালখিল্য নিরামিষ আহার প্রেমী একজন ঈশ্বরানুরাগী ব্যাক্তিও বিবেকানন্দের পায়ের নখের যোগ্য হ'য়ে উঠতে পারেননি সারা বিশ্ববাসীর কাছে। কেন? কারণ শ্রীশ্রীবিবেকানন্দের গুরু বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর বিশ্বপ্রেমী পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের বিশ্বপ্রেম ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব বোধের শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন তিনি। সর্বজীবে ছিল তাঁর প্রেম। ষঢ় রিপুর যিনি অধীশ্বর তাঁর শ্রীচরণপ্রান্তে ছিল তাঁর আশ্রয়। বিবেকানন্দ ছিলেন ঈশ্বরকোটি পুরুষ। তাই তাঁর তাঁর গুরুর মতো সবার প্রতি ছিল প্রেম।
আর অমোঘ লীলা দাস ও তাঁর প্রভু প্রভুপাদরা হ'লেন জীবকোটি মানুষ। ঈশ্বর আরাধনায় জীবকোটি ও ঈশ্বরকোটি দুই ধরণের মানুষই থাকেন। কিন্তু জীব জগত জীবন কারণের পরমকারুণিক যিনি তাঁর জীবন্ত উপস্থিতিকে চেনা, উপলব্ধি করা জীবকোটি মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সে কাজ ঈশ্বরকোটি মানুষের। তাই জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দিয়ে যাওয়া কথামতো যে তিনি বারবার এসেছেন আর সেই আসার মধ্যে একটা রূপ যে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ তা চেনা জীবকোটি মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
তাই তারা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণই যে শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নবরূপ তা চিনতে পারেনি। কারণ তারা শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে তথাকথিত মাতামাতি করেছেন; তাঁকে প্রকৃত ভালোবেসে জীবনে গ্রহণ করেননি এবং তাঁর বলে যাওয়া কথার আরাধনা অর্থাৎ প্রকৃত অধ্যায়ন, অধ্যাপনা, গবেষণা করেননি। আত্মপ্রতিষ্ঠায় মদমগ্ন হ'য়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের আসনে নিজে ব'সে গিয়ে স্বঘোষিত সাজা ভগবান হ'য়ে গেছেন। বসে গেছেন অধ্যাত্মবাদের দেশ ভারতবর্ষকে যে দেশে ঈশ্বর স্বয়ং সবচেয়ে বেশিবার জন্মগ্রহণ করেছেন সেই দেশের মানুষকে তাদের বালখিল্য ধর্ম ও ঈশ্বর জ্ঞান দিতে।
তাই আমিষ-নিরামিষ নিয়ে কোন্দলে না গিয়ে আলোচনা সমালোচনা করার চাইতে আসুন মূল আলোচনা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীবিবেকানন্দকে নিয়ে কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনা করা ও ঘৃণা, বিদ্ধেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে গর্জে উঠি।
( লেখা ১৬ই জুলাই, ২০২৩ )
No comments:
Post a Comment