Powered By Blogger

Thursday, April 18, 2024

খোলা চিঠিঃ শ্রীকুমার মুখার্জীদাকে। (২)

আপনার সঙ্গে এর আগে আমার অনেকবার আলোচনা হয়েছে আপনার বিতর্কিত মন্তব্যকে ভিত্তি ক'রে। এবারও আপনার লেখা পড়লাম। প্রতিবারের মতো এবারও আপনার লেখাকে ভিত্তি ক'রে আমার এই মন্তব্য।

আপনার লেখা বিষয়বস্তুর হেডিংঃ
|| বিকৃতির বদলে অবিকৃত প্রতিষ্ঠার চিরন্তন এই সংগ্রাম ||

শ্রীকুমারদা, এই বিকৃতির বিরুদ্ধে অবিকৃতির সংগ্রাম ঠাকুরের শেষ অধ্যায় থেকে শুরু হয়েছে এবং দেহ রাখার পর ৫৪ বছর ধ'রে চলছে এবং আগামীদিনেও চলবে। দীর্ঘ ৫৪বছর এই মনগড়া তথাকথিত বিকৃতির বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অবিকৃতির ধুয়ো তুলে সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করার যে সংগ্রাম সেই ব্যর্থ সংগ্রামের অন্তরালে কারা, কাদের অঙ্গুলি হেলনে এই ব্যর্থ প্রয়াস হ'য়ে চলেছে তা কমবেশি সবাই জানলেও কখনও তার ছিটেফোঁটা আভাস সৎসঙ্গী সমাজ মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' থেকে কোনোদিনও পায়নি। কিন্তু সবাই জানে এ লড়াই ছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম আত্মজ, প্রথম সন্তান, আদরের বড়খোকা কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের চোখের মণি শ্রীশ্রীবড়দা্র বিরুদ্ধে লড়াই। কেন এই লড়াই? কিসের এই লড়াই? প্রকৃতই কি বিকৃতির বিরুদ্ধে অবিকৃতির লড়াই নাকি ক্ষমতা দখলের লড়াই বা অন্য আরও কিছু? এর বিন্দুমাত্র আভাস আজ পর্যন্ত (৫৪ বছর ধ'রে) শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' থেকে পাওয়া যায়নি ও যায়না। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' ছাড়া আরও অনেকেই ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তৈরী করেছেন। আর প্রত্যেকেই মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের পান্ডব আর কৌরবের যুদ্ধে পাণ্ডবদের একঘরে ক'রে কৌরব পক্ষে সামিল হওয়ার মতো শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-এর বিরুদ্ধে আজ জোটবদ্ধ। আজ বর্তমান কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সম্মিলিত শক্তিতে সমৃদ্ধ কৌরবদের বিরুদ্ধে এককভাবে অবস্থান রত পাণ্ডবদের মতো শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' আজ জোটবদ্ধ সুযোগসন্ধানী শক্তির বিরুদ্ধে এককভাবে অবস্থানরত। মহাভারতের যুদ্ধে জোটবদ্ধ অশুভ শক্তির পরিণতি আর কৃষ্ণাশ্রয়ী শুভ শক্তির পরিণতি কি ছিল তা আমরা সবাই জানি। সময় সবসে বড়া বলবান। সময় সব কিছুর উত্তর দিচ্ছে ও আরও দেবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইচ্ছে ক'রে চোখ বন্ধ ক'রে রাখলে সত্য মিথ্যা হ'য়ে যাবে না। আর গোয়বলস-এর ভক্ত সেজে গোয়েবলস থিয়োরির প্রয়োগ ক'রে ঠাকুরের দরবারে কোনও লাভ হবে না। ৫৪বছর তার প্রমাণ। শুধু তিন নম্বর ছাগল ছানার মতো একবার এদিক আর একবার ওদিক লাফিয়ে লাফিয়েই জীবন শেষ হ'য়ে যাবে; বাটে আর মুখ দেওয়া হ'য়ে উঠবে না।


এবার আসি আপনার লেখার পরবর্তী বিষয়ে।
আপনি ডবল স্ট্যান্ডার্ড কমেন্ট করেছেন সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করার জন্য। আপনি একবার লিখেছেন প্রবেশ করতে দেয়নি। আবার পর মুহুর্তেই লিখেছেন প্রবেশ করতে দিয়েছে। একবার লিখেছেন চ্যানেল পরিচালনা করার অপরাধে ইষ্টপ্রাণ, সৎ, শিক্ষিত ছাত্র যুবদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরমুহুর্তে লিখছেন ফোন ক্যামেরা ইত্যাদি জমা রাখার শর্তে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে; অর্থাৎ ফোন, ক্যামেরা সহ ঠাকুরবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কোনটা ঠিক? চ্যানেল করার অপরাধে ঢুকতে দেওয়া হয়নি নাকি ফোন, ক্যামেরা সহ ঢুকতে দেওয়া হয়নি? কোনটা? মানুষকে বিভ্রান্ত করার খেলা বা কৌশল রাজনীতিবিদদের মতো ভালোই রপ্ত করেছেন। এরপরও বলবেন আপনি অবিকৃত সৎসঙ্গী?


আপনি তো উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তা আপনি জানেন না প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের একটা নিজস্ব বিধিনিষেধ আছে, আছে নিজস্ব নিয়ম কানুন, আইন শৃঙ্খলা? আপনাদের সংগঠনের কোনও নিয়ম শৃঙ্খলা বিধিনিষেধ নেই? প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকরা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ মেনে কাজ করবে না? যে কেউ যখন তখন প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে যাবে? ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রম ব'লে বাবার জমিদারী হ'য়ে যাবে ভক্তদের? শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-এর কোনও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থাকবে না? সৎসঙ্গ-কে বাজারি প্রতিষ্ঠান ক'রে গড়ে তুলেছিলেন নাকি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? নাকি বলেছিলেন আমার তৈরী 'সৎসঙ্গ' কে আমার ভক্তপ্রাণ প্রহ্লাদদের জন্য প্রবেশ দ্বার বাজারি অর্থাৎ অবারিত ক'রে রাখবি? এই আপনাদের অবিকৃত প্রচারের নমুনা? এই আপনাদের শৃঙ্খলার শিক্ষা? এই আপনাদের ইষ্টপ্রাণতা? এই আপনার ও আপনাদের ইষ্টপ্রাণ, সৎ, শিক্ষিত ছাত্র যুবদের ঠাকুরের সৎসঙ্গী হিসেবে পরিচিতি? প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে চলতে বললেই তা হ'য়ে যাবে আপনার মন্তব্য মতো "ওপরওয়ালার তুঘলকি' আদেশ নামা"!? আপনার ঘরে আপনি রাস্তার যাকে তাকে অপরিচিত যে কাউকে ঢুকতে দেন? বাড়ির কোনও প্রাইভেসি নেই? নিয়ম শৃঙ্খলা নেই? হয়তো বা এই কালচারেই অভ্যস্ত তাই সবেতেই সব জায়গাতেই এই কালচার প্রয়োগ করতে চান!
আপনার কমেন্ট ঠাকুরের বাণীর জ্বলন্ত রূপ। ঠাকুর বললেন, "লেখাপড়ায় দড় হ'লেই শিক্ষা তারে কয় না, অভ্যাস ব্যবহার সহজ জ্ঞান নইলে শিক্ষা কিছুই না।"
আপনি লিখেছেন, ইষ্টপ্রাণ সৎ শিক্ষিত ছাত্র যুবদের কি অপরাধ? আপনি আগের স্তবকে লিখেছেন তাদের ভেতরে ঢুকতে দিয়েছে। এই স্তবকে লিখেছেন ঠাকুরবাড়ি/ ইষ্টস্থানে প্রবেশ করা থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে? এরকম গিরগিটির মতো রূপ বদলানো কথা কেন? আপনি নিজেই যেখানে নিজের কথার টুইষ্ট করছেন, কথার জাগলারী করছেন, কথা ১৮০ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিচ্ছেন, মুহুর্তে গিরগিটির চেয়েও দ্রুত কথার রঙ বদল করছেন আপনার বিশ্বস্ত MW (Master Within You Tube) চ্যানেলের দৃঢ বিশ্বাসী বিজ্ঞান মনস্ক, জিজ্ঞাসু, যুক্তিবাদী ছেলেরা সাধারণ সৎসঙ্গীদের কাছে কতটা আকর্ষণের তা আপনার লেখা প্রমাণ ক'রে দেয়। কে বা কারা আপনার বিশ্বাসী যাদের জানতে দেওয়া হচ্ছে না? কি জানতে দেওয়া হচ্ছে না? কে জানতে দিচ্ছে না? ঘোলা জলে ল্যাটা মাছ ধরার মতোন ঘোলাটে কথা বলছেন কেন? স্পষ্ট বলুন, পরিস্কার বলুন কে দিচ্ছে না? কিভাবে দিচ্ছে না? কেন ঠাকুরকে, ঠাকুরের দর্শনকে বুঝতে সৎসঙ্গীদের, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন? ঠাকুরের সমস্ত বই তো ছাপিয়ে বেরিয়ে গেছে পড়াশুনা করুক না তারা, আপনার বিশ্বস্ত ইষ্টপ্রাণ, সৎ, শিক্ষিত ছাত্র, যুবরা। অসুবিধা কোথায়? চ্যানেল তৈরী ক'রে তারা অবিকৃত প্রচার করুক না! বাধা দিয়েছিল নাকি 'সৎসঙ্গ'? আর কে করলো, না করলো, ঠাকুরবাড়ি কি করল্‌ না করলো সেদিকে কেন ৫৪ বছর ধ'রে পড়ে রইছেন? ঠাকুরের সত্যানুসরণ নিশ্চয়ই পড়া আছে? আপনি করুন না। আপনি ক'রে দেখান না। ঠাকুর কি এই শিক্ষা দিয়ে গেছিল আপনাদের? শুধু অন্যের ফুটো খুঁজে বের করার, অন্যের গন্ধ শোঁকার, অন্যের নোংরা ঘাঁটার, অন্যের পিছনে বাঁশ দেওয়ার, অন্যের নিন্দা করার, ঘৃণ্য সমালোচনা করার মত যত অবিকৃত শিক্ষা দিয়ে গেছিলেন নাকি আপনাদের আপনার লেখা অনুযায়ী "বিশ্ব শিক্ষক শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র"?


আপনি লিখেছেন "এই 'মহাশক্তিধর' সংঘের এতো ভয়-------"? আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই তো ঠাকুরবাড়ি বালখিল্য বিড়াল মাসীদের ভয়ে একেবারে থরহরি কম্প!!!!!! আরে মহা ইষ্টপ্রাণদাদা আপনি ও আপনার ইষ্টপ্রাণ, সৎ, শিক্ষিত ছাত্র, যুবরা তো আপনার ও আপনাদের পথপ্রদর্শকদের সাথে আছে নাকি!? আমি তো বুঝতে পারছি না আপনাদের চিন্তা কিসের? আপনার মহামূল্যবান কমেন্ট "ইস্টের (শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র) জীবন ও মতাদর্শের যুক্তিসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্ব-মানবতার ঐক্য, ভারতের নবনির্মাণ ও সমাজ-বিপ্লবের প্রশ্নে ব্যপক প্রচার ও অবিকৃত প্রতিষ্ঠা হোক"- এই সমস্ত তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা বড় বড় কথা অনুযায়ী ঠাকুরবাড়ি যদি না চায় তা তাহ'লে আপনারা মহাপ্রাণ ভক্তরা করুন না? শ্রীশ্রীঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্রের বংশধরেরা তো আছেন, আছেন শ্রীশ্রীঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র শ্রদ্ধেয় পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদাদা, তাঁদের নেতৃত্বে হ'ক না বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রচার ও অবিকৃত প্রতিষ্ঠা! আপনার ও আপনাদের কথামতো শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম পুত্র শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে বিকৃত প্রচার করছে তাঁদের বংশধরেরা, তা তাঁদের বিকৃত প্রচার করতে দিন না, ভয় কি? আপনাদের বিরুদ্ধে তো কোনও প্রচার করছে না, করেছে? দেখাতে পারবেন আজ পর্যন্ত ৫৪ বছর ধ'রে একদিনের জন্যও আপনাদের কারও বিরুদ্ধে প্রচারের প্রমাণ? আপনাদের কথা অনুযায়ী তাঁরা করছে ঠাকুরের বিকৃত প্রচার। তা করুক না! আর আপনারা শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে, শ্রীশ্রীবড়দার পরিবারের বিরুদ্ধে ৫৪ বছর ধ'রে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যাচ্ছেন খোলাখুলি। আপনারা তো আছেন? ঠাকুর তো আপনাদের ওপর ভরসা ক'রে আছেন, আপনাদের রুখবে কে এই ভর দুনিয়ায়? আপনাদের ঠাকুর প্রেমের অপ্রতিরোধ্য গতিকে আটকাবে কে? কার বাপের সাধ্যি? আপনি লিখেছেন, "তাঁরা অর্থাৎ শ্রীশ্রীবড়দার বংশধরেরা ঠাকুরকে বেঁধে রাখছে 'সংঘের-এর (আমি 'সৎসঙ্গ' বুঝি আপনার বা আপনাদের মতো কোনও 'সংঘ' বুঝি না।) গন্ডীর মধ্যে", তাঁরা বেঁধে রাখছে "নিজের স্বার্থ চাহিদার মতো করে, তাঁর বিশুদ্ধতাকে বর্জন করে, নিজেদের সুবিধাকে চরিতার্থ করে তাঁরই এক মিথ্যা স্বনির্মিত "বিকল্প-পরম্পরা"-র ধারাকে তুলে ধরতে"---তা তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করুক না? আপনার বা আপনাদের কি?? আপনাদের এত গাত্রদাহ হচ্ছে কেন তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না? আর বুঝতে পারলেও বুঝতে চাইছি না প্রণম্য কারও কারও গায়ে নিশ্চিত আঘাত লেগে যাবে এই কষ্টে। আপনারা ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে কানে কানে বিষ না ঢেলে ইষ্ট প্রতিষ্ঠার কাজ করুন না? এইভাবে তো ৫৪বছর ধ'রে চেষ্টা চালিয়ে গেলেন ঠাকুরের কোনও কাজ না ক'রে মানুষকে বোকা বানিয়ে, ব্রেন ওয়াশ ক'রে। কি লাভ হ'লো একবারও ভেবে দেখেছেন? পরমপ্রেমময়ের ঘরে, পরমপ্রেমময়ের পতাকার তলায় হিংসার চাষ, কুশিক্ষার চাষ, মানুষকে নিন্দা, ঘৃণা, সমালোচনা করার একেবারে হাইব্রিড চাষ, মিথ্যের চাষ, নীচ, কুটিল ও বিকৃত মানসিকতার চাষ ক'রে চলেছেন বছরের পর বছর। মানুষের মাঝে ঠাকুরের জীবন দর্শন, বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার কথা তুলে না ধ'রে শুধু 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট ক'রে আমাদের মতন সাধারণ সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা বৃত্তি প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা রিপু তাড়িত জীবনের অধিকারী মানুষদের অজ্ঞানতা, ভীরুতা, দূর্বলতাকে হাতিয়ার ক'রে অল্পবয়সীদের কানে গরম তরল সীসা ঢালার মতো ভয়ঙ্কর বিষাক্ত বিষ ঢেলে চলেছেন নিজেকে বিরাট পন্ডিত সাজিয়ে আর ভাবছেন ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করছেন? নিজেকে একবার বিবেকের আয়নায় দেখুন। দেখতে পাবেন কুৎসিত রূপ! যদি অবশ্য বিবেক ব'লে কিছু থেকে থাকে আদৌ। আপনি এক কাজ করুন MW You Tube-মতো হাজার হাজার চ্যানেল খুলুন আর কোমর কষে নেবে পড়ুন জীবন বাজি রেখে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-কে ধ্বংস করার জন্য, 'সৎসঙ্গ'-এর বিজয় রথকে থামানোর জন্য। দেখা যাক এই যুদ্ধে কার জয় আর কার পরাজয় হয়। আর দেখে যাক এই ঘৃণ্য নোংরা লড়াই শ্রীশ্রীঠাকুরের কনিষ্ঠ সন্তান পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদাদা স্বচক্ষে জীবিত থাকতে থাকতে নির্বিকারভাবে; যেমন দেখে গেছেন পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবিবেকদাদা। কিন্তু কেউই প্রতিবাদ করেননি; চুপ ক'রে দেখে চলেছেন আর বাড়তে দিয়েছেন ও দিয়ে চলেছেন তথাকথিত বিকৃতির বিরুদ্ধে ফাঁপা অবিকৃতির লড়াইকে।


আপনার যেমন মনে পড়ে যাচ্ছে আজ থেকে ২৭-২৮ বছর আগের কথা ঠিক তেমনি আমারও মনে পড়ে যাচ্ছে পুরোনো দিনের অনেক ঘটনার কথা। আমি কিন্তু এইসব ঘটনার কথা কোনোদিন তুলে ধরিনি। কিন্তু আজ বাধ্য হ'য়ে আমিও একটা, শুধু একটা পুরোনো দিনের ঘটনা তুলে ধরছি। সময়টা তখন সদ্য সদ্য ঠাকুর দেহ রেখেছেন। ১৯৬৯ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ঠাকুর দেহ রাখতে না রাখতেই শুরু হ'য়ে গেল বিভাজনের ঘৃণ্য খেলা। এই খেলার খেলোয়ার কারা? আর দর্শকই বা কারা? এই খেলায় ময়দান কাঁপাতে নেবে পড়েছিল সেই সময়ের ঠাকুরের প্রধান পার্ষদ তথা ঋত্বিকরা আর দর্শক ছিল আম সৎসঙ্গী? সেদিন সৎসঙ্গীদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ ছিল না। ভেদাভেদ, সন্দেহ, হিংসা, নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনা, অশ্রদ্ধা, অসম্মান, বড়কে ও শ্রেষ্ঠজনকে না-মানা ইত্যাদি ভয়ঙ্কর ইষ্টবিরোধী বিষাক্ত বীজ বপন করেছিল সেদিন সাধারণ সৎসঙ্গীদের মধ্যে সেদিনের প্রথম সারির মহাপ্রাণ ভক্তেরা, যা আজ বিষাক্ত মহীরূহতে পরিণত হয়েছে। ইষ্টস্বার্থ থেকে, সমষ্টিস্বার্থ থেকে সেদিন প্রধান হ'য়ে উঠেছিল অনিষ্টস্বার্থ ও ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ। সেদিন আমার মা-বাবার ঋত্বিকের সেদিন কি ভূমিকা ছিল তার আমি ছিলাম সাক্ষী। শুধু সাক্ষী নয়, উনার সঙ্গে হয়েছিল আমার যুক্তির দীর্ঘ লড়াই। এক তরুণের সঙ্গে এক ইষ্টপ্রাণ প্রবীণের ছিল যুক্তির লড়াই। সেদিন তিনি আমার যুক্তিনির্ভর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুরোপুরি সম্পর্ক ছেদ করেছিলেন। নামটা এখানে উহ্য রাখলাম। ঋত্বিকের ইজ্জৎ রক্ষার্থে তাঁর নাম আমি এখানে প্রকাশ করলাম না। তবে এটুকু বলি, তিনি ছিলেন ঠাকুরের একজন যতি ঋত্ত্বিক। ১৯৪৮ সালের ১২ই অক্টোবর, মঙ্গলবার, বিজয়া দশমীর দিন ঠাকুর প্রণামের পর মূলত যে ছ'জন কর্মীকে ঠাকুর যতি ঋত্বিক বানিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেই যতি ঋত্বিক যিনি আমার বাবা-মাকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি সেসময় যেসব বিতর্কিত বিষয় উত্থাপন করেছিলেন প্রচার পুস্তিকাসহ সেগুলি আমার যুক্তিযুক্ত ব'লে মনে হয়নি। আমি চেষ্টা করেছি সেগুলি আনবায়াসড হ'য়ে বোঝার। কিন্তু আজও এইবয়সে মনে হয়নি বা হয়না সেসব কথা বা প্রচারপত্রের কোনও যুক্তি আছে ব'লে। এখানে আমি সেসব বিষয় তুলে ধ'রে আমার লেখাকে কলুষিত করতে চাই না। শুধু এটূকু বলি, একজন যতি ঋত্ত্বিকের আচরণ যদি এমন হয়, যজমান ধরার জন্য ময়দানে নেবে পড়ে তাহ'লে আমার মতোন ঠাকুর সাধনায় বালখিল্য মুখে মারিতং জগত সৎসঙ্গী দিয়ে কি হবে? সেদিন তিনি কেন, কার জন্যে বা কার নির্দেশে সেদিনের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা আমি জানি না। তবে সেদিনও মনে হয়েছিল আর আজও এই দীর্ঘ বছর পরে মনে হয় আমরা সৎসঙ্গী নামধারী আজব জীবেরা ঠাকুর প্রেমের নামে ভন্ডামি ক'রে প্রতিমুহুর্তে ঠাকুরকে কষ্ট, ব্যথা দিইনি তো বা এখনও দিচ্ছি নাতো? এমন আলোচনার টেবিলে বসা অনেকের সঙ্গেই হয়েছে। আপনার সঙ্গেও হয়েছে। আলোচনা ঘুরে গেছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে।


তাই আমিও আপনার মতো বলি, সেদিন যে চরিত্র দেখেছিলাম আজও চরিত্রের সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে। আজ আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে তা। আগামীতে আরও আরও হবে যা নোতুন কুরুক্ষেত্রের রূপ নেবে। সেদিন প্রমাণ হবে সত্যিকারের বিজয় কার বা কাদের হয়। সেদিনের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কারা পান্ডব আর কারা কৌরব সেদিনের ইতিহাস তা তুলে ধরবে তা যতই আপনি যুক্তি তর্কের জাল বিছান না কেন। সেই জালে ধরা পড়ে সত্য মিথ্যার সমাধান হ'য়ে যাবে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে আর শুরু হবে নোতুন সৃষ্টি রচনা। আপনি ও আপনারা চালিয়ে যান 'সৎসঙ্গ'-এর বিরুদ্ধে, বিকৃতির বিরুদ্ধে অবিকৃত প্রতিষ্ঠার চিরন্তন আপনাদের মরণপণ হিংসার সংগ্রাম।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস।
শেষ।
( ১৮ই এপ্রিল, ২০২৩ )

No comments:

Post a Comment