Powered By Blogger

Friday, October 28, 2022

শাহরুখের কলকাতা শো।

 St. Xavier's College-এ

শাহরুখের কলকাতা শো।

'হ্যাপি নিউ ইয়ার' ফিল্মের ব্যপক ব্যবসায়িক সাফল্যের সেলিব্রেশনেই শহরে এসেছে টিম নিউ ইয়ার৷ কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ফুর্তিতে ব্যস্ত বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ কিং খান!! 

দুষ্কৃতীর তান্ডব আর সন্ত্রাসের আগুনে

বাংলার মাটি যখন উত্তপ্ত, রক্তাক্ত

ঠিক তখন বাংলার অ্যাম্বাসাডর

শাহরুখ কিং খান  ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’

ফিল্মের প্রচারে কলকাতার

সেন্ট জেভিয়ার্সে ফুর্তিতে মত্ত!!

বাংলার গ্রামে যখন মানুষ হয় ঘরছাড়া

কিশোরের পেটে লাগে গুলি, 

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে 

কিং খানের উষ্ণ স্পর্শে

উত্তেজনার পারদ চড়ে

ফোটে কিশোর কিশোরীর মুখে 

আনন্দের উদ্দাম বুলি! 

ভাঁড় মে যায় বাংলার গ্রামে দুষ্কৃতীর তান্ডব আর 

সন্ত্রাসের আগুন, রক্ত, গুলি আর হামলা। 

আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা!! 

আহা!!!!! আমার সোনার বাংলা

আমি তোমায় বড় ভালোবাসি!!

(লেখা ২৯শে অক্টোবর '২০১৪)

প্রবন্ধঃ জওহরলাল নেহরু সম্পর্কে।

জহরলাল নেহেরুকে মুছে ফেলা অত সহজ নয়। তিনি ছিলেন অসাধারণ বক্তা। ভারতবর্ষের ইতিহাস ও সমাজ সর্ম্পকে ছিল তার অগাধ জ্ঞান। তার লেখনি অতি চমৎকার। গণতন্ত্র প্রিয় এই মানুষটির বিজ্ঞানের প্রতি ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আধুনিক ভারত নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছিলেন।------কবিতা সরকার। (২৮শে অক্টোবর'২০১৪)

কবিতা সরকার আপনার লেখাটা সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ! তাই লেখাটা শেয়ার করলাম ও আমার মনের মধ্যে বহুদিনের চাপা থাকা কয়েকটা মনের কথা লিখলাম। 

আপনার কথাটা ঠিকই। কোনও ভুল নেই। অবশ্যই তিনি অসাধারণ বক্তা ছিলেন, ছিলেন পন্ডিত। আর  তাই তাঁর নামের আগে 'পণ্ডিত' বিশেষণটি ব্যবহৃত হয় এখনও। তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের পরিচয় তিনি রেখে গেছেন তাঁর "Letters from a Father to his Daughter, The Discovery of India, Glimpses of World History, Mahatma Gandhi" ইত্যাদি বিভিন্ন রচনার ওপর! এটাও সত্য বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জন্য তাঁকে  'Jawaharlal Nehru — Builder of Modern Science and Promoter of Scientific Temper' আখ্যাও দেওয়া হয়েছে! আধুনিক ভারত নির্মাণের জন্য তিনি সচেষ্টও হয়েছিলেন এ কথাও সত্যি এবং এই সমস্ত কিছুর চেয়েও বড় সত্যি তাঁর বাগ্মিতা, জ্ঞান, পান্ডিত্য, বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা ও আধুনিক ভারত নির্মাণের স্বপ্ন দিয়ে তৈরী আর স্মৃতি দিয়ে ঘেরা এক খন্ড ভারত 'ভুমি'-র সঙ্গে তিনি রেখে গেছেন 'নেতাজী' সম্পর্কিত এক  বিতর্কিত বিষয় সহ এক গভীর দগদগে ভয়ংকর দেশভাগের ঘা যা আজ স্বাধীনতার ৬০বছর পরও প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রশ্ন তোলে, ‘এগিয়ে চলার পথে শুরুতেই এমন এক মহাজ্ঞানী মহানজনের হাত ধরার পরও কেন অখন্ড ভারতের মানবজাতির আজ এই করুণ অবস্থা? আর কতদিন ভোগ করবে এই ভাগের বিষের জ্বালা অখন্ড ভারতের টুকরো টুকরো হ'য়ে যাওয়া দেশের সাধারণ নিরীহ মানুষ !? আর কতদিন চলবে এই করুণ দেশভাগের রক্তাক্ত অস্থিরতা !? আর কতদিন চলবে এই সাম্প্রদায়িক হানাহানি, ধর্মীয় উন্মত্ততা!?’ আমরা তো ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ মিলে সব এক ছিলাম! কত আক্রমণ তো এই অখন্ড ভারতের বুকে হয়েছে, তারপরেও ভারত অখন্ড থেকেছে! কত রক্ত মিলেমিশে এক হয়ে ফুলের মালা হ'য়ে ঝরে পড়েছে অখন্ড ভারতবর্ষের গলায়! স্বাধীনতার সময়ের এত এত মহাজ্ঞানী, মহান পন্ডিত, মহান আত্মাদের সম্মিলিত অবস্থান সত্ত্বেও কেন এমন হ'ল যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ, শ্রেষ্ট, সর্বোৎকৃষ্ট, প্রধান, চূড়ান্ত 'আর্য্য ভারতবর্ষ'-কে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়ে গেল ব্রিটিশের ঘৃণ্য নীতি 'Divide & Rule' !!!!???? 

কি কারণে এমন হ'ল?????? কে দেবে এর উত্তর?????? ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো ল্যাংড়া খোঁড়া ক'রে দিয়ে গেল যে ব্রিটিশ তাদের নোংরা নীতি দিয়ে তাদেরও আজ ল্যাংড়া খোঁড়া হ'তে আর যদিও বিশেষ কিছু বাকি নেই! কিন্তু আমার অখন্ড ভারতবর্ষের আজকের এই করুন অবস্থার দায় কার? এই প্রশ্ন কি উঠবে না? ওঠা কি অপরাধ, অন্যায়? আজ অখন্ড ভারতবর্ষের খন্ড খন্ড ভুমি ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পরস্পরের বিরুদ্ধে পরস্পরের যে শ্ত্রুতার ডিম ফুটছে, ফুটে চলেছে অহরহ সেই দায় কার !? আমরা তো আম চাষার দল, আমরা না হয় আগাম বুঝতে পারিনা, দেখতে পারি না, চিনতে পারিনা, ধরতে পারিনা আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুর্তিমান বিপদকে, ভবিষ্যৎ শয়তানকে!!! কিন্তু সেই মহাজ্ঞানী মহাজন যাদের হাত ধরে তামাম অখন্ড ভারতের আম চাষার দল বাঁচতে চেয়েছিল, ভরসা করেছিল এই বলে 'বাড়িয়ে দাও তোমার, তোমাদের হাত , আমরা তোমার, তোমাদের হাত ধরে বাঁচতে চাই-ই",  বেঁচেছিল কি বা বেঁচে আছে কি মহাজ্ঞানীদের হাত ধ’রে চলা অখন্ড ভারতের ও খন্ড খন্ড ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ ভুমির আম চাষার দল????? দেশের সেই মহাজ্ঞানী, মহাপন্ডিত, মহান আত্মা, মহান দেশপ্রেমিকরা চিনতে, বুঝতে, জানতে, ধরতে পেরেছিল কি সেই দেশভাগের ভবিষ্যৎ বিপদকে, মুর্তিমান রক্তচোষা শয়তান বাদুড়কে???? কেন পারেনি? না-কি চিনতে, ধরতে, জানতে, বুঝতে চায়নি? কোনটা? যদি না পেরে থাকে, নাই পারতে পারে, তাহ'লে সেই ভয়ঙ্কর বিপদ সম্পর্কে তো আগাম সাবধান ক'রে দিয়েছিল The greatest phenomenon of the world The living Ideal, The great seer Sri Sri Thakur Anukul Chandra. তাঁর সৃষ্ট Satsang-এর পক্ষ থেকে সেই সময়ের দেশোদ্ধারের মহান যোদ্ধাদের, মহান জ্ঞানীদের কাছে পাঠানো তাঁর message-এ কি ছিল? শ্রী শ্রী ঠাকুরের পক্ষ থেকে সৎসঙ্গের তৎকালীন সম্পাদক নিজের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন দেশের প্রধান নেতাদের হাতে সেই message! দ্রষ্টাপুরুষের সেই সাবধানবাণী আজ পড়লে বিস্ময়ে চমকে উঠতে হয়, শিউরে ওঠে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ! এক লাইনের এক সংক্ষিপ্ত বাণী, "DIVIDING COMPROMISE IS THE HATCH OF THE ANIMOSITY' (ভাগ ক’রে সমাধান করা মানে তা’ দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো!) মহাজ্ঞানী মহাজনদের মত সমজদারোকে লিয়ে এই ঈশারা কি কাফি ছিল না!! এ ছাড়াও শ্রী শ্রী ঠাকুর ব্রিটিশদের এই 'Divide & Rule' ঘৃণ্য নীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সেই সময় সাম্প্রদায়িক বসতি প্রতিস্থাপনের যে মোক্ষম অস্ত্রের সন্ধান দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে এবং দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে , দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সময় দেশ স্বাধীনের উন্মত্ত নেশায় 'Divide & Rule' কে মোকাবিলা করার জন্য দ্রষ্টাপুরুষ শ্রী শ্রী ঠাকুরের সেই মোক্ষম অস্ত্রকে সেই মহাজ্ঞানী মহাজনদের মনে হয়েছিল ভোঁতা ফালতু অস্ত্র ও দ্রষ্টাপুরুষের ঐ মেসেজকে মনে হয়েছিল Baseless message!!!!!!!!!!!!!!! কেন? কেন মহাজ্ঞানী মহাজনরা চিনতে পারলেন না দ্রষ্টাপুরুষকে!? অজ্ঞানতা না-কি ইচ্ছাকৃত!?  

পরিণতি আজকের ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ আর রক্তাক্ত ভুমি!!!!!!!!!!!!! শত্রুতার ডিম ফুটে চলেছে নিরন্তর!!!! ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসছে শত্রতার ডিম ফুটে রক্ত বীজের ঝাড় রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেবে বলে!!!! আরও কত ভাগ ও রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে কোথায় এর শেষ কেউ জানে না!!!! 

এর পরেও বলব আমরা মহাজ্ঞানী, মহান আত্মা!!!!!!


(লেখা ২৯শে অক্টোবর '২০১৪)

প্রবন্ধঃ কালীপুজো ও দীপাবলী।

কালীপুজো ও দীপাবলী এখন সব মিলেমিশে একাকার হ'য়ে গ্যাছে। আর এই একাকার বহুবছর আগেই হ'য়েছে। তবে কালীপূজা আর দীপাবলির মধ্যে একটা সূক্ষ্ম তফাৎ আছে। সেটা হচ্ছে কালিপুজো মূলতঃ হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে প্রচলিত আর দীপাবলি সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হ'লেও এখন দেশ-কাল-ধর্ম ভেদে ভারতে দীপাবলি ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র মানবজাতির মধ্যে। আর এরকম বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক ধর্মীয় মেলবন্ধন স্থান ভেদে দেখা যায়। যদিও হিন্দু বাঙালি কালীপুজো উপলক্ষে অমাবস্যার রাতকে আলোর সাজে আবাহন করে। কিন্তু দীপাবলি উপলক্ষে যে আলোর সাজ সে সম্পর্কে উপলব্ধি বা ধ্যান ধারণার অভাব আছে বাঙালি হিন্দুর মধ্যে এখনও। আর, তার কারণও বাঙালি হিন্দুদের মূর্তিপূজা আর মূর্তিপূজার প্রতি প্রাচীন কাল থেকে এই উপলব্ধি বা ধ্যান-ধারণার অভাব বাঙালি হিন্দুদের তীব্র। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জন্ম থেকে বড় হয়েছে মূর্তি পূজার উপর ভিত্তি ক'রে। তাদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বর ভগবান রামের প্রতি আকর্ষণ তীব্র নয়। তীব্র কথাটা বললেও মনে হবে আকর্ষণ কিছুটা হ'লেও আছে। বলতে দ্বিধা নেই আকর্ষণ নেই বললেই চলে। আলোর সাজ অনেক কারণেই প্রচলিত হ'য়ে আছে ভারতে। আর এখন যে-কোনও কারণেই আলোর রোশনাই, বাজির ধূমধুমা হ'য়ে থাকে। কিন্তু মূলতঃ ভারতে আলোর সাজ অর্থাৎ দীপাবলীর উৎস ভগবান শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের দীর্ঘ ১৪বছর বনবাস শেষে যুদ্ধজয়ের পর মা সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসার পর প্রভু ও প্রভু পত্নীকে বরণ ক'রে নেবার অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় ক'রে রাখার জন্য আলো দিয়ে সাজানো হ'য়েছিল, মুড়ে দেওয়া হ'য়েছিল গোটা অযোধ্যা আর তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল ধীরে ধীরে অযোধ্যার সীমানা ছাড়িয়ে দূরে, বহুদূরে। কিন্তু এই রেশের প্রচন্ডতা বা তীব্রতা ছিল বা আছে মূলতঃ প্রভু রামের জন্মভূমি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর এগুলি হয়েছে  আঞ্চলিক মানসিকতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে। আর তাই বাংলায় কালীপূজার তীব্রতা দীপাবলির থেকে বেশী স্বাভাবিক কারণেই। 

এই যে প্রভু রামকে নিয়ে আঞ্চলিক প্রাধান্যতার মানসিকতা অর্থাৎ না ক'রে পাওয়ার বিলাসিতার প্রাধান্যতা মূর্তি পূজার মত বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানব জীবনে পুরুষোত্তম প্রভু রামের জীবনকে আদর্শ হিসাবে ছড়িয়ে না দিয়ে, মানব জীবনে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন না করিয়ে মূর্তি পূজার মত পূজার চল সৃষ্টি ক'রে তাঁর চলন পূজার পরিবর্তে ধূপ-ধুনো-আরতি-ফুল-চন্দনে প্রভু রামের চরণ পূজার প্রচলন করানোর ফলে। একইভাবে মূর্তি পূজার অন্তর্নিহিত অর্থকে অনুধাবন না ক'রে নিষ্ক্রিয় ভক্তি-ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে কামনা-বাসনা পূরণ করার লোভে ও লক্ষ্যে মূর্তি পূজার রমরমা আজ বাংলা তথা গোটা ভারত জুড়ে আর তার ছোঁয়া সংক্রামক ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছে ও পড়ছে আনাচে-কানাচে বিশ্বজুড়ে! 

মূর্তি পূজার অন্তর্নিহিত অর্থকে অনুধাবন করার কথা বলছিলাম। এক্ষেত্রে অনুধাবন বললেও অত্যুক্তি হ'য়ে যাবে। অনুধাবন করার ইচ্ছেই নেই, আছে তীব্র ফুর্তির মানসিকতা আর না ক'রে ফোকটে জমিদারী মানসিকতায় সবকিছু পাওয়ার বাসনা। এই তীব্র ফুর্তির মানসিকতা ও না ক'রে পাওয়ার মানসিকতা মূর্তি বা জীবন্ত ঈশ্বর উভয়কেই আয়ের উপকরণ বানিয়ে গড়ে উঠেছে। আর এই যুগ যুগ ধ'রে বংশ পরম্পরায় ছোট থেকে ঘরে-বাইরে এই জটিল দুর্বোধ্য পরিবেশে বড় হ'তে হ'তে বাঙালী আজ কাঙালী বাঙালীতে পরিণত হয়েছে। 

তাই বাংলার বুকে আজ যুগ যুগ ধ'রে মূর্তি পূজার অন্তর্নিহিত অর্থকে বলাৎকার ক'রে সমস্যা জর্জরিত জীবনে দ্রুত সমস্যা মুক্ত হওয়ার জন্য এবং ধর্ম বেওসায়ীদের বেওসার রমরমা বজায় রাখার জন্য সাথে পূজাকে কেন্দ্র ক'রে আনন্দ লাভ করার জন্য, মজা নেওয়ার জন্য কিংবা নির্ভেজাল ফুর্তির উদ্দেশ্যে মূর্তি পূজা হ'য়ে চলেছে।

অন্যান্য পূজার মত কালী পূজার আরাধনাও ঠিক তেমনি। তাই হিন্দু বাঙালি ভয়ে বা ভক্তিতে হ'ক, ফুর্তিতে হ'ক, বুঝে বা না-বুঝেই হ'ক, পাওয়ার আশা নিয়ে বা নির্ভেজাল আনন্দ নিয়েই হ'ক এই কালীপূজার দিনে যেমন আলো দিয়ে অমাবস্যার অন্ধকার দূর ক'রে ঘর সাজায়, বাহিরকে করে আলোকিত ঠিক তেমনি দীপাবলিও তাই। তফাৎ শুধু জীবন্ত ঈশ্বর আর কল্পনার ঈশ্বর বা মূর্তি পূজার। জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ দীপাবলি যাঁকে ঘিরে সেই প্রভু রামের প্রতি হিন্দু বাঙালি বিশেষত অবাঙালীর ভক্তি-ভালোবাসা-বিশ্বাস-নির্ভরতা সবই সেই মূর্তির চরণ পূজার মত। আর সেই দীপাবলির রাতেও কালীপূজার মত আলোর সাজ আর আলোর বাজি ও শব্দবাজির মাতামাতিও একই কারণে একই অর্থ বহন করে। তাই কালীপূজার রাত আর দীপাবলির রাত আমার কাছে একইরকম প্রচলিত ভাবনা নিয়ে আবির্ভুত হয়, ধরা দেয় না অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে! তার কারণ সমাজপতিরা তাদের কর্তব্য-দায়িত্ব পালন করেনি অথচ সমাজের মাথায় ব'সে পতিগিরি ক'রে গ্যাছেন। আর এই মনোভাব সমস্ত সম্প্রদায়ের সমস্ত সমাজপতি ও ধর্মীয় নেতাদের। 

তাই জীবন্ত ঈশ্বর বারবার মানব শরীরে আসার পরেও এবং মূর্তি পূজা এবং জীবন্ত ঈশ্বরের মধ্যে স্পষ্ট তফাৎ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও সমাজপতি বা ধর্মীয় নেতাদের কারণে তাঁরা বা তাঁদের বলাগুলি মূর্তিপূজা বা তথাকথিত গুরুপূজার নীচে চাপা পড়ে গ্যাছে। আর তার পরিণতি অবশ্যম্ভাবী ধ্বংস।

(লেখা ২৯শে অক্টোবর '২০১৯)

কবিতাঃ যবনিকা টানো।

হে দয়াল! সবার অন্তরাত্মা শুদ্ধ হ'ক!
বন্ধ হ'ক যত কূটকচাল, হিংসা, 
পরস্পর আসুরিক চিৎকার।
ঘরেবাইরে, মাঠে ময়দানে, 
অফিসে, কলে-কারখানায়,
রেডিওতে, টিভিতে জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে 
সব জায়গায়।
স্বামিস্ত্রী, পুত্রকন্যা, মালিক-কর্মচারী,
ঘোষক-ঘোষিকা, নেতা-নেত্রী
যে যেখানে আছে তাদের সবার
শান্ত হ'ক, স্থির হ'ক মন।
বন্ধ হ'ক চিৎকার চেঁচামেচি, 
আগুন নিয়ে খেলা
আর বন্ধ হ'ক জারি মৃত্যুর সমন!
সময়ের মিথ্যে আর অসৎ 
গাড়িতে চড়ে বসেছি সবাই!
জানি না কেন চলেছি আমরা! 
গন্তব্য কোথায়!?
মিথ্যে আর অসৎ গাড়ি কোথায় যায়
তোমরা যারা গাড়ির চালক কেউ কি জানো!?
হে দয়াল! সবার অন্তরাত্মা শুদ্ধ হ'ক
নয়তো উন্মাদের উন্মাদনার যবনিকা টানো।

(লেখা ২৭শে অক্টোবর '২০২১)

প্রবন্ধঃ হ'ক Behavioral Conversion; Religious Conversion নয়।

অবিভক্ত ভারতবর্ষে Most Indian Muslims are Hindu converts. 

ধর্মান্তরিত করা বা হওয়া যাকে conversion বলা হয়, এই conversion প্রথা তা হিন্দুধর্ম থেকে মুসলিম বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধধর্ম কিম্বা মুসলিম ধর্ম থেকে হিন্দু বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া; ঠিক তেমনি খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধধর্ম থেকে হিন্দু বা মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া বা করা আল্লা বা গড বা ঈশ্বরের রাজ্যে পাপ মহাপাপ। ধর্ম ত্যাগ ক'রে অন্য ধর্ম গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে কখনও আর যাই-ই হ'ক প্রকৃত খাঁটি ধার্মিক হওয়া যায় না। নিজ ধর্মমত ত্যাগ না ক'রেও অন্য ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। যেমন ঈশ্বর, আল্লা বা গড এক এবং অদ্বিতীয় আর সেই এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বর যখন মানুষের রূপ ধ'রে বারবার মানুষের বাঁচা বাড়ার জন্য যুগে যুগে নেবে আসেন রক্তমাংসের জীবন্ত ঈশ্বর হ'য়ে তখন সেই যুগে যুগে নেবে আসা জীবন্ত ঈশ্বরদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। সেই তিনি অর্থাৎ এক এবং অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর তাঁর পূর্ববর্তী রূপকে অধিকার করেই পরবর্তী রূপে আবির্ভূত হন। ঠিক তেমনি প্রকৃত খাঁটি হিন্দু, প্রকৃত খাঁটি মুসলমান, প্রকৃত খাঁটি খ্রিষ্টান, প্রকৃত খাঁটি বৌদ্ধ ইত্যাদির মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। যত বিরোধ ভেজালের মধ্যে। কারণ প্রকৃত খাঁটি ধার্মিক কারও শত্রু না, কোনও ধর্ম্মের, কোনও সম্প্রদায়ের শত্রু না। শত্রু তারাই যারা converted এবং যারা ধর্ম্মের নামে ধার্মিকের আলখাল্লা প'ড়ে ধার্মিক সেজে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতা নিয়ে।

The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra- এর কাছে এসে জেনেছি, শিখেছিঃ 

শ্রীশ্ৰীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধর্মান্তরিত করা পছন্দ করতেন না, ঘৃণা করতেন। তাঁর আদর্শ ছিল জীবন্ত ঈশ্বরের পূর্ববর্তী রূপকে অধিকার ক'রে পরবর্তী যে রক্তমাংসের রূপের আবির্ভাব হয় এই মর্তধামে সেই পরবর্তী বর্তমান রূপকে দীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করার অর্থ ধর্মান্তরিত করা নয়। জীবন্ত ঈশ্বরের বর্তমান রূপকে দীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করার অর্থ Behavioral Conversion; কখনোই তা Religious Conversion নয়। এর জন্য কাউকে কোনও সম্প্রদায়ের কাউকে তা সে  মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি যেই-ই হ'ক না কেন তাকে বর্তমান যুগ পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য জীবনে গ্রহণ করতে তার ধর্ম্ম ত্যাগ করতে হয় না বা পূর্ব্বপুরুষের চেতনধারাকে ত্যাগ করতে হয় না। বরং তা আরও আরও পুষ্ট হ'য়ে প্রকৃত বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার ক্রমবৃদ্ধির পথে তরতরিয়ে এগিয়ে চলে। জীবন সুন্দর হয়, পরিবার-পরিবেশ সুন্দর হয়, জগত স্বর্গ হ'য়ে ওঠে।

(লেখা ২৮শে অক্টোবর '২০২১)

Wednesday, October 26, 2022

মেহবুবার ঔদ্ধত্ব ও ভারত!

খবরে প্রকাশ "১৪ মাস বন্দি থাকার পর কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি গত শুক্রবার ১৫ই অক্টোবর'২০ প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নতুন করে সংগ্রামের ডাক দেন।

এদিন মেহবুবা বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের পতাকা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় পতাকা তুলবেন না। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনেও লড়বেন না। খবর দ্য ডন ও এনডিটিভির।"

খবরটা কি সত্যি!? যদি না হয় তাহ'লে মঙ্গল। এইধরণের ভুল (?) খবর

দেশের দশের ক্ষতি করে। তেমন ক্ষতি করে যদি সত্যি হয় এই খবর।

খবর অনুযায়ী এই হ'লো স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিকের ঔদ্ধত্ব! এই ঔদ্ধত্ব ৭৪বছর ধ'রে ভারতকে ল্যাংড়া ক'রে রেখেছে! কোমর ভেঙে দিয়েছে ফারুক, ওমর আবদুল্লা আর মেহবুবা মুফতির যৌথ শক্তি স্বাধীনতার পর থেকে দেশি-বিদেশি শক্তি ও পূর্বের ভারত সরকারের মদতে! আর বর্তমান সরকারও নিয়েছে ধীরে চলো নীতি!!!!!!

জম্মু কাশ্মীরে স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরও জাতীয় পতাকার অপমান হয় এই ভারতের জম্মু কাশ্মীরে! ভারত কি সত্যিই স্বাধীন!? মেহবুবা মুফতি সত্যি সত্যিই বাপ কা বেটি! দীর্ঘ ৭৪ বছর ধ'রে মেহবুবা মুফতি আর ফারুক আবদুল্লাহ প্রমাণ ক'রে দিয়েছে এরা দুজনেই বাপ কা বেটি-বেটা, সহিস কা ঘোড়া কুছ নেহি তো থোড়া থোড়া! বাপ কৌন!? পাকিস্তান, চীন ইয়া ব্রিটেন!? পাকিস্তান দেশভাগের পর থেকে ক্রমাগতভাবে ভারতকে চুলকে যাচ্ছে এদের মদতে! চীন দখল ক'রে রেখেছে ভারতের মাটি লাদেখের কিছু অংশ যাকে আকসাই চীন বলা হয়! আর এই দুই নেতা-নেত্রী বাহবা দিয়েছে! ফারুক স্বপ্ন দেখছে চীনের মদতে আবার ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনবে ভারতে কনফিডেন্টলি চীনের সহায়তার কথা বলে ভারতের মাটিতে ব'সে! সত্যি!? কোনও ভয় ব'লে কিছু নেই! 

আজ পর্যন্ত কোনও ভারত সরকার দেশকে অপমান করার সাহস দেখায় এমন মানুষকে ভয় দেখাতে পারেনি! পারেনি প্যান্টে পেশাব করাতে। কংগ্রেস, সিপিএম সহ সমস্ত কেন্দ্র বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' এই ঘৃণ্য মনোভাবে! ব্রিটেন ২০০ বছর ভারতকে ভোগ করার পর আজও সেই প্রভাব রয়ে গেছে ভারতের ওপর! তাই এ ব্যাপারে কোনও কড়া মন্তব্য করে না! আরে বাবা! ২০০ বছর তো তোরাই শাসন করেছিস, চীন তো করেনি! তাই ব্রিটেনের থেকে যায় সত্যের পাশে দাঁড়াবার নৈতিক দায়িত্ব। তাই না!? কিন্তু স্বাধীন ভারতকে (?) দীর্ঘসময় শাসন করা ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস কোনদিনই ঘরেবাইরে কোনও দেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি এবং আজও চুপ! এখনও পর্যন্ত মুখে সেলটেপ লাগিয়ে বসে আছে মেহবুবার ঘৃণ্য উক্তির পরেও!!!!!! আর বাকী বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবস্থানের কথা আর নাই বা আলোচনা করলাম।

এই আমার ভারত! এই আমার আত্মমর্যাদাহীন ভিখিরি ভারত! ৭৪ বছর ধ'রে সামনে পিছনে লাথি খেয়ে চলেছে ঘরেবাইরে আমার ল্যাংড়া ল্যাংগোট পড়া ভারত! ভারত ল্যাংড়া ভারত, ল্যাংগোট পড়া ভারত কেন!? কারণ আজও বিশ্ব রাজনৈতিক চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়া ভারতের বীর সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজী তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি দেশের নেতা ও কোনও রাজনৈতিক দল ও ভারত সরকারের কাছে! আজও ভারতের বীর সন্তান ব্রিটিশের কাছে যুদ্ধ অপরাধী!!!!!!!!!! এই তকমা আজও উইড্রো করেনি রাষ্ট্রসংঘ আর উইড্রো করার দাবী করেনি কোনও ভারত সরকার!!!!!!  শুরু যার মিথ্যের ওপর, অসততার ওপর তার পক্ষে যাই-ই হ'ক মাথা উঁচু ক'রে, শিরদাঁড়া সোজা রেখে কথা বলা যায় না। আর এতেই প্রমাণ হয় ভারত ল্যাংড়া ও ল্যাংগোট পড়া ভারত! তাই মেহবুবা মুফতি  ও ফারুক, ওমর আব্দুল্লারা জম্মু কাশ্মীর কে নিজেদের জমিদারী সম্পত্তি মনে করে। আর পাকিস্তান, চীন শুধু চুলকে যায় দশকের পর দশক অবলীলায় অবহেলায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে! আর ভারত বুড়ো আঙ্গুল চুষে খালি ভাবতে থাকে কি করবো! কি করবো!!

জানি না কবে ল্যাংড়া ভারত নিজের পায়ে দাঁড়াবে! জানি না কবে ল্যাংগোট ছেড়ে প্যান্টশার্ট পড়ে বীর নেতাজীর মত মাথা উঁচু ক'রে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করবে ভারত, হ্যাঁ, আমি সাহসী! আমি বীর! আমি শক্তিমান! আমি পরিণত!-----------প্রবি।

( লেখা ২৬শে অক্টোবর ২০২০)

কবিতাঃ ইচ্ছা! ছোট্ট ইচ্ছা!!

হে দয়াল! তুমি আমার ঘরে এসো
থেকো না দাঁড়িয়ে বাইরে
এসো তুমি আমার ঘরের ভেতরে
মনের গভীরে আমার হৃদয় মাঝারে!
দয়াল! যদি দিলেই ডাক----
জানি বাড়িয়েই আছো তোমার হাত
তবুও বলি মূর্খের মতন দয়াল
বাড়িয়ে দাও তোমার বরাভয় হাত!
নাও তুলে আমায় কেটে যাক অন্ধকার রাত।
দয়াল! যদি দিলেই চরণতলে আশ্রয়
তবে দাও প্রশ্রয় তোমায় নিয়ে আছে যত স্বপ্ন অপূরণ
মনের গভীরে তা করি পূরণ।
আমি এক অসহায় যাত্রী একা
জানি তুমি আছো পাশে, আছো সর্বদা!
তবুও মনে হয় এই বিশাল হিংস্র মানুষের জংগলে
আজ আমি বড় একা, বড় একা!
দাও বাড়িয়ে দয়াল তোমার হাত
আমার মাথার 'পরে তোমার আশীর্বাদ পড়ুক ঝ'রে
নিশিদিন আমি চাই না হতাশা,
চাই না যেতে হতাশায় কুড়ে কুড়ে মরে।
আমি অক্রোধী, আমি অমানি, আমি নিরলস
কামলোভজিৎ বশী ইত্যাদি ব'লে ব'লে
কেঁদেছি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত
তবুও পাইনি মুক্তি; গলা টিপে ধরে রাতদিন
সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কালো মজবুত হাত!
দয়াল! নই আমি উপযুক্ত তোমার শিষ্য হবার!
যদিও স্কুলে গেলেই যে ছাত্র বলে না,
আর দীক্ষা নিলেই যে শিষ্য হয় না
তোমার এ বাণী জানা আছে আমার।
দয়াল! কঠিন এই পথ! কঠিন এই যন্ত্রণা!
সইতে হবে সব চোয়াল চেপে হাসিমুখে
জন্মজন্মান্তরের না থাকলে জীবনে সাধনা;
-----এ কথা আমি জানি। এ কথা আমি মানি।
দয়াল! তবুও দাও একবার যাবার আগে
অন্ধকার ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলির বন্ধ দরজা খুলে
তোমার ইচ্ছা পুরণ ক'রে আলোর তরী বেয়ে
দয়াল প্রভু যাবো আমি তোমার ধামে চলে।
এইটুকু ইচ্ছা, ছোট্ট ইচ্ছা আমার
দাও তুমি প্রভু পূরণ করে!

( লেখা ২৬শে অক্টোবর ২০২১)

Wednesday, October 19, 2022

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা ও আমরা বাঙালি!

বাংলাদেশের কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদ উৎসবের পুজো প্যান্ডেলে দুর্গা মূর্তি ভাঙচুর ও মারদাঙ্গার মত দুঃখজনক ঘটনা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙ্গা, লুটপাট, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একবার দু'বার নয় বারবার ধর্মের নামে মানুষে মানুষে নৃশংস হানাহানি কোনওদিনই বন্ধ হবার নয়। হবেও না। কারণ কোনও দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কেউই চায় না হিন্দু-মুসলমানের এই নির্ম্মম বর্বরোচিত হিংস্র মারামারি বন্ধ হ'ক। যদি চাইতো তাহ'লে বলা হ'তো না এইসব ঘটনা যে দেশে ঘটছে সেইসব ঘটনা সেইদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার!! যদি চাইতো তাহ'লে ধর্মের নামে নারকীয় বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হানাহানির মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষ ভাগ হ'তো না আর ভাগ হওয়ার ৭৫ বছর পরেও এবং বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হওয়ার ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক নারকীয় অভিজ্ঞতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের কুমিল্লায় দূর্গা মন্ডপ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হিংস্র আক্রমণ হ'তো না। যদি চাইতো তাহ'লে এ বাংলা এবং ও বাংলায় সমাজ সচেতন হিন্দু-মুসলমান এলিট সম্প্রদায় প্রতিবাদে সরব হ'তো! চুপ ক'রে থাকতো না। যদি চাইতো তাহ'লে ও বাংলার হিন্দু ভাইবোনেরা যখন পুজোর সময় চক্রান্তের শিকার তখন এ বাংলার হিন্দু ভাইবোনেরা পুজোর আনন্দে মত্ত থাকতো না! যদি চাইতো তাহ'লে ঘটনা ঘটে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি চ্যানেল সোচ্চার হ'তো প্রতিবাদে; বহু পড়ে মিডিয়া চিরাচরিতভাবে লোকদেখানো সরব হ'তো না। খবর যে প্রশাসনের কাছে, মিডিয়ার কাছে ছিল না, থাকে না তা নয় ছিল, থাকে কিন্তু খবর চেপে রাখা হয়েছিল। মিডিয়া, প্রশাসন ও উদ্যোক্তারা সব ব্যস্ত ছিল 'এইসব ঘটনা সেই দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়' এবং 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়। প্রশ্ন আসতেই পারে তখন কি করা যেত? কিছু করি আর না করি, তাতক্ষণিক নীরব প্রতিক্রিয়া দেওয়া যেতেই পারতো। আর এখন চলছে নেতানেত্রীদের পারস্পরিক নির্লজ্জ চাপান উতোর! সহজ সরলভাবে নৃশংস নারকীয় ঘটনার নিন্দা করতে পারে না কোনও দল, কোনও নেতানেত্রীবৃন্দ!! কেন!? কোথায় হাত বাঁধা থাকে!? কার কাছে এমন কি মাথা বিক্রি হ'য়ে যায় যে সামান্য প্রতিবাদটুকু করতে দশ বার ভাবতে হয়, ডাইনে বাঁয়ে তাকাতে হয়, অন্তরাত্মা কাঁপতে থাকে অলীক ভয়ে!?

যাই হ'ক, দেশ স্বাধীন হওয়া ও ভাগ হওয়ার আগে ও পরে সেই যে বিশ্বের তথাকথিত সভ্য উন্নত জাত ব'লে পরিচিত বৃটিশ নিজেদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখতে অন্তরস্থিত লুকোনো নোংরা বিষ উগলে দিয়েছিল ভারতবর্ষ ছেড়ে যাবার আগে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ডিভাইড এন্ড রুল (ভাগ করো ও শাসন করো) প্রয়োগের মাধ্যমে আর সেই উগ্র নীল বিষে সর্বাঙ্গ জর্জরিত একটা দেশ ভেঙ্গে তিন টুকরো হওয়া তিন দেশের মানুষ আজ পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে চলেছে দেশভাগের পর থেকে। সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে আর চলবেও আগামী দিনে। কোনদিনও এই ধর্মীয় হানাহানি বন্ধ হবে না। কারন, এই ভাগে নেতৃত্ব দিয়েছিল দেশের সেইসময়ের ভীষ্মরা! আর তাকে সযত্নে লালন পালন ও পোষণ দিয়ে চলেছে সেইসময়ের ভীষ্মদের উত্তরসূরি আজকের ভীষ্মেরা!!! এই প্রসঙ্গে দেশভাগের অশনিসংকেত আগাম বুঝতে পেরেই The greatest phenomenon of the world SriSri Thakur Anukulchandra বলেছিলেন, "Dividing compromise is the hatch of animosities." অর্থাৎ "ভাগ ক'রে সমাধান করার অর্থ তা দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো।" আজ তা প্রমাণিত।
সেদিন হিন্দু-মুসলিম ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল ক্ষমতা দখলের লোভে। তারপর আবার ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হ'য়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। এ ভাগ হওয়ারই কথা ছিল ন্যায্য দাবীতে। এ ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। তথাকথিত সভ্য ও উন্নত জাত বৃটিশ দ্বারা তৈরি তৎকালীন পাকিস্তান নামক একটা দেশের ভৌগলিক ম্যাপ যে অদ্ভুত বিকৃত হ'তে পারে তা গোটা বিশ্ব দেখেছে ও হজম করেছে। তাই সময় যত গড়িয়েছে ততই প্রকট হ'য়ে উঠেছে পশ্চিম আর পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থান ভিত্তিক ক্ষমতা দখল ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এবং জোর ক'রে উর্দু ভাষা চাপানো ও বাংলা ভাষা রক্ষার লড়াই। আর স্বাভাবিকভাবেই জন্ম হয়েছিল জোর ক'রে বৃটিশের মদতে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পুর্বের জুড়ে দেওয়া অংশ বাংলাদেশের।


ফলস্বরুপ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করে থাকে। বাংলাদেশে ধারণা করা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা প্রায় ৪,০০,০০০ নারী ধর্ষিত হয় ও হত্যা করা হয়।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ পরিবারের বহুসংখ্যক মেয়েদের ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়ে যুদ্ধ চলাকালীন নিজেদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে। আজও যা বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অসহায় নারীদের যন্ত্রণাদায়ক ভয়ার্ত করুণ কান্না কান পাতলে শোনা যায়! সেইসব ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক ভয়ার্ত দিনগুলির কথা আজ ভুলে গিয়েছে বাঙালি! যদি ঢাকা সেনানিবাসকে অসহায় অত্যাচারিতা ৪,০০,০০০ লক্ষ মায়েদের যন্ত্রণার স্মৃতি সৌধ ক'রে রাখতো বাংলাদেশ সরকার তাহ'লে হয়তো কিছুটা আজকের প্রজন্ম সেই স্মৃতি সৌধ দেখে চোখের জল ফেললেও ফেলতে পারতো। কিন্তু না! তা হয়নি!
সেই কান্না কি শুধু বাঙ্গালী হিন্দু নারীদের ছিল? প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ যে সেদিন প্রাণ হারিয়ে ছিল তারা কি শুধু হিন্দু বাঙালি ছিল? মুসলমানরা মুসলমানদের নির্ম্মম হত্যা করেনি সেদিন? মুসলমান নারীদের যৌনদাসী ক'রে বেঁধে রেখে নৃশংস পশুসুলভ যৌন উপভোগ ক'রে পরিশেষে হত্যা করেনি সেদিন ইসলাম ধর্ম্মের অনুসারী নৃশংস পাকিস্তানী মুসলমান সেনা? ভুলে গেছে সেদিনের নির্ম্মম অত্যাচারের কথা ওপারের মুসলমান বাঙালি ও মুসলমান বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজ!? সেদিন প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে নির্ম্মমভাবে হত্যা করা হয়নি!? কেন করা হয়েছিল!? করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে যাতে বাংলাদেশ মস্তিষ্ক শূন্য হ'য়ে যায়! তারই কি প্রমাণ আজকের বাংলাদেশ!? সত্যি কি বাংলাদেশ মস্তিষ্ক শূন্য হ'য়ে গেছে!?
সেদিন বাংলাদেশের মানুষের চরম ভয়ংকর দুঃখের দিনে জাতিসংঘের নীরবতা, অবহেলা ও নিস্পৃহতা ছিল অবাক ক'রে দেবার মত! সঙ্গে আমেরিকা, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, শ্রীলঙ্কা, আরব বিশ্ব, ইরান ইত্যাদি দেশের সেদিন বাংলাদেশের নারকীয় বিপদের দিনে পাশে না থাকা ও সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করা বুঝিয়ে দিয়েছিল কোনও দেশের সরকারের চরিত্র কি! কিন্তু সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা ক'রে, বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে এবং উপরিউক্ত সমস্ত দেশের পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থানকে তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে সমস্তরকম ভাবে সাহায্যের হাত উজাড় ক'রে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
আর আজও বাংলাদেশের নির্ম্মম ঘটনায় রাষ্ট্রসংঘ ও বিশ্বের উন্নত সমস্ত দেশ সেই ট্রাডিশন ব'য়ে চলেছে সযত্নে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যায় রাষ্ট্রসংঘ নামক পক্ষপাত বিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় পুতুল প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজন কি!?
ঠিক তেমনি আজকের বাংলাদেশে গত ১৩ই অক্টোবর'২১ হিন্দু বাঙালিদের উপর কি আক্রমণ হ'লো তাতে কারও কিছু আসে যায় না। যদি যেত তাহ'লে তার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যেত। এমন ঘটনা বহু বছর ধরেই চলে আসছে মাঝে মধ্যে। সব দেশের সব সরকারের একটাই চিন্তা, মানসিকতা, 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।' আর আমরা তাই দেখেছি ও দেখছিও। সেই যে মহাভারতের যুগে দেখেছিলাম, কৌরবের ভরা রাজসভায় দ্রৌপদীকে যখন বস্ত্র হরণ করা হচ্ছিল দুর্যোধনের নেতৃত্বে দুঃশাসনের দ্বারা তখন সেই ভরা রাজসভায় শৌর্য বীর্য ও জ্ঞানের অধিকারী ভীষ্মের মত দেশের মহা শক্তিশালী বীরেরা চুপ ক'রে মাথা নীচু ক'রে বসেছিল! আর আজও সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে! আজও বাংলাদেশের নির্ম্মম দুঃখজনক ঘটনায় দুই দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও এলিট সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গেরা চুপ ক'রে আছে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মনে ক'রে! বুদ্ধিজীবীদের কলমে আজ আর প্রতিবাদের ভাষা শব্দ হ'য়ে কবিতা, গান, গল্প,, প্রবন্ধ ইত্যাদিতে ঝরে পড়ছে না! তাদের গলায় প্রতিবাদ সুর হ'য়ে পড়ছে না আজ ঝ'রে!! ক'দিন আগেও দেখেছি দেশজুড়ে কত সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ, ভাংচুর, মৃত্যু! কিন্তু আজ সব চুপ! সবাই হিসেব নিকেশ করছে, অংক কষছে একটা ছোট্ট অথচ সাধারণ কথা ব'লতে 'এ অন্যায়, এ অমানবিক'। কারণ বাংলাদেশে হিন্দুধর্মের ওপর আঘাত, দুর্গা মূর্তি ও অন্যান্য মন্দির ভাঙার ঘটনা সেই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার; এ দেশের নয়!!!!
আর সব যখন থেমে যাবে, শান্ত হ'য়ে যাবে অশান্তির নারকীয় ঝড় তখন সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর উঠবে দিকে দিকে অবস্থানুযায়ী প্রতিবাদের ঝড়!!!! আর ঠিক এক সপ্তাহ পর শুরু হয়েছে সেই নিয়ম ক'রে সর্বস্তরে অল্পবিস্তর প্রতিবাদ। আর দেরীতে হ'লেও প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের প্রথম কথা, হিংসার বদলা যেন হিন্দুদের হিংসা দিয়ে না হয়!!!!! ওয়াও!!! সাবাস বুদ্ধিজীবী! সাবাস!! এদের কথায় কোথায় যেন উদারতার ভঙ্গির আড়ালে একচক্ষু হরিণের মত পক্ষপাতিত্বের উগ্র বিষ নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে ঝ'রে পড়ে!
যাই হ'ক, তাই বলি এই সাম্প্রদায়িক হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি, খুন, জখম, ধর্ষণ যদি বন্ধ না করা যায়, যদি হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সবাই মিলেমিশে নাই থাকতে পারি এক দেশে একসঙ্গে তাহ'লে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকার ও সমস্ত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্য সংখালঘু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মারামারি, রক্তপাত, হত্যা, লুটতরাজ, মৃত্যু ইত্যাদি বন্ধ হ'ক আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে ধর্ম অনুযায়ী যার যার ঘরে তার তার ফিরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। মুসলমানেরা ফিরে যাক তাদের ইসলামিক দেশে। হিন্দুরা ফিরে আসুক তাদের হিন্দু ঘরে। খ্রিষ্টান ফিরে যাক তার ঘরে। এমনভাবে হিংসার বাতাবরণের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হ'য়ে মরার মত পারস্পরিক সন্দেহ নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে যে যার ঘরে নাহয় বাস করলো আর মরলে মরলো নিজেদের ধর্মের লোকের হাতে! তবুও তো প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত না মরেও সন্দেহ অবিশ্বাস নিয়ে মরার মত কেন্নো হ'য়ে বেঁচে থাকতে হবে না।
আর যদি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে উদারতার ভঙ্গীতে এই প্রস্তাব ঘৃণ্য ব'লে মনে হয় তাহ'লে তিন দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ধর্মীয় আধ্যাত্মিক জগতের গুরুকুল সমাজ সচেতন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, সমস্ত বিভাগের শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কের অধিকারী মানব আপনারা সবাই মিলে চিরকালীন সমস্যার একটা পথ বের করুন। আর যদি না পারেন তাহ'লে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আসা একটা বোধের কথা বলতে পারি। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত।
হে ধর্মীয় ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ!
আপনারা যদি সত্যি সত্যিই অকপটভাবে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধর্ম মানেন ও পালন করেন, ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ও ঈশ্বরের জীবন্ত উপস্থিতি বিশ্বাস করেন অর্থাৎ বিশ্বাস করেন যে, তিনি মানুষ রূপে মানুষের মাঝে মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য এই পৃথিবীর বুকে নেবে আসেন এবং আসেন বারেবারে তাহ'লে তাঁর নেবে আসার জীবন্ত রূপকে কপটতা আর ভন্ডামি ত্যাগ ক'রে স্বীকার করুন, ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থকে মানুন। জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে বেঈমানি, নেমকহারামি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। জীবন্ত ঈশ্বর কোনও সম্প্রদায়ের একক পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সাধারণ মানুষ, ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ও উপলব্ধিবান মানুষের সঙ্গে ফারাক আছে।
তাই জীবন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ও উপলব্ধিবান ঈশ্বরকোটি পুরুষ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ঈশ্বর বারবার নেবে এসেছেন মানুষের মাঝে মানুষ রূপে কিন্তু মানুষ সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামীরা সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে নিজেদের সম্প্রদায়ের কিম্বা অনুগামীদের একক সম্পত্তি ব'লে মনে করেছেন এবং সেইভাবে তাঁকে প্রচার করেছেন। কক্ষনো তারা বলেননি যে ঈশ্বর যুগে যুগে মানুষ রূপে এসেছেন সমস্ত মানুষের জন্য এবং এসে পরিস্কার ক'রে তাঁর স্বরুপ উদ্ঘাটিত ক'রে বলেছেন, যতবার প্রয়োজন হবে ততবারই তিনি যুগে যুগে আসবেন এমনকি একযুগেও তিনি প্রয়োজনভিত্তিক বারবার আসবেন, আর আসবেন তাঁর সৃষ্ট বিশ্বের ৮০০ কোটি সন্তানের জন্য এবং বহুবার এসেছেনও। কিন্তু আপনারা তাঁর অনুগামীরা তা মানেননি বা মানতে চাননি। ফলে জীবন্ত ঈশ্বরের আসাকে কেন্দ্র ক'রে বারেবারে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের। এমনকি তাঁর এক একটা রূপকে কেন্দ্র ক'রে বিভিন্ন দল, উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে নিয়ে তৈরী দল, উপদলের মধ্যে হয়েছে মর্মান্তিক সংঘাত! যেমন হয়েছে তাঁর বারেবারে আসা রূপকে নিয়ে বিভিন্ন রূপের অনুগামীদের মধ্যে ধর্মীয় নারকীয় বীভৎস সংহার! যেমনটা আমরা দেখতে পাই হিন্দু-মুসলমান, মুসলমান-খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টান-হিন্দু ইত্যাদি ইত্যাদি সংঘাত ও সংহার। আজ যদি আমরা প্রতিটি সম্প্রদায় নিজ নিজ সম্প্রদায়কে অক্ষুন্ন রেখে নিজ নিজ ধর্ম মতকে পালন ক'রে জীবন্ত ঈশ্বরের রূপ শ্রীশ্রীরামচন্দ্রকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে গ্রহণ করতাম, শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীবুদ্ধকে জীবনে গ্রহণ করতাম আর এমনিভাবে তাঁর নব নবরূপ যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণকে ও বর্তমান সর্বশেষ রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে গ্রহণ ক'রে তাঁকে মাথায় ব'য়ে নিয়ে তাঁর যুগোপযোগী নির্দেশ মত চলতাম তাহ'লে আজ তাঁর সৃষ্ট এই স্বর্গভুমিতে এমন ভয়ংকর নরক কুন্ড রচনা হ'তো না। আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ এমন ভয়ংকর হিংস্র বীভৎস কুটিল জীবে পরিণত হ'তাম না।
আমরা হিন্দুরা যারা পুরুষোত্তম প্রভু রামকে মানি তারা পুরুষোত্তম প্রভু কৃষ্ণকে মানলেও পুরুষোত্তম প্রভু বুদ্ধকে মানি না, আবার পুরুষোত্তম প্রভু বুদ্ধকে মানলেও পুরুষোত্তম প্রভু যীশু ও পুরুষোত্তম প্রভু মহম্মদকে মানি না ঠিক এমনিভাবেই পুরুষোত্তম প্রভু রামকৃষ্ণকে মানলেও রামকৃষ্ণের মধ্যে মহাপ্রভুকে উপলব্ধি করতে পারি না। একই কথা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ক্ষেত্রেও। রামকৃষ্ণকে মানলেও তিনিই যে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তা মানি না। এরকম গোঁড়া একগুঁয়ে অবিশ্বাসী মনোভাব জীবন্ত ঈশ্বরের প্রায় সব অনুগামীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাঁরা যে একজনই বারবার নতুন রূপে যুগে যুগে যুগের প্রয়োজনে যুগ অনুযায়ী আমাদের বাঁচাতে, পথ দেখাতে আসেন তা আমরা ধান্ধাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানি না! সমস্ত সম্প্রদায়ের ধর্মব্যবসায়ীরা জীবন্ত ঈশ্বরকে তাঁদের আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে আম আদমীর ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অজ্ঞানতা, দুর্বলতা ও ভীরুতাকে মূলধন ক'রে।
আসুন, যদি নিজেদের রক্ষা করতে চাই, বাঁচাতে চাই, মনুষত্বের ভিতকে নষ্ট ক'রে সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে না চাই তাহ'লে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ পূর্ববর্তী জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশূ, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ পুরুষোত্তমকে মাথায় নিয়ে পরবর্তী বর্তমান সর্বশেষ জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে গ্রহণ করি ও কোথায় বিশ্বের ৮০০ কোটি মনুষ্য জীবনের সামগ্রিক জটিল সমস্যার সমাধান সে সম্পর্কে তিনি তাঁর হাজার হাজার বাণীর মধ্যে যা যা ব'লে গেছেন তাঁর সেই ব'লে যাওয়া নির্দেশ গুলি শুনি, জানি, পড়ি ও পালন করি। পরমপিতার সংস্কার ছাড়া বাকী সব বন্ধনকে ছিন্ন ক'রে তাঁর আলোর দিকে ছুটে চলি।
আর যদি ধর্ম জগতের, আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ হ'য়েও তা না মানি, তাঁর বারবার আসাকে অস্বীকার ও অমান্য করি এবং তাঁর বিভিন্ন রূপের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করি, একমেবাদ্বিতিয়ম জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তমের নির্দেশ ও নিদেশ অস্বীকার করি, জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের মাঝে মানুষ হ'য়ে নেবে আসা সত্ত্বেও তাঁকে অস্বীকার ক'রে তার সঙ্গে বেঈমানি নেমকহারামী ক'রে নিজে গুরুর আসন অলংকৃত ক'রে রাখি তাহ'লে ধ্বংস অনিবার্য এবং সেই ভয়ংকর ঘন অন্ধকার পূর্ণ দুর্যোগের দিন ক্রমশঃ আগত এবং তার অশনি সঙ্কেত আমরা প্রতিদিনই টের পাচ্ছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের তা সে হিন্দু , মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ যে সম্পদায়ের প্রজন্ম হ'ক না কেন জেনেশুনে বিষ পান করার মত আমরা জেনেশুনে তাদের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর কবর খুঁড়ছি।
আর যদি তাই হয় তাহ'লে তাই স্বাগতম!
No photo description available.
( লেখা ১৯শে অক্টোবর' ২০২১)

প্রবন্ধঃ মূল উদ্দেশ্য কি?

কোরান হনুমান মূর্তির পায়ের কাছে ছিল। কে রেখেছিল? জানা নেই। হিন্দু রেখেছিল? জানা নেই। মুসুলমান রেখেছিল? জানা নেই। তাহ'লে কে রেখেছিল? উত্তরঃ কিছু দুষ্কৃতিকারী। কেন রেখেছিল? উত্তরঃ ঘটে যাওয়া নির্ম্মম শোচনীয় করুণ ঘটনাবলী ঘটার জন্য রেখেছিল। গীতা কে পোড়ালো? মুসলমান? হিন্দু? উত্তরঃ কিছু দুষ্কৃতিকারী। তাহ'লে কোরান মূর্তির পায়ের কাছে কে বা কারা রেখেছিল? এরা কি মুসলমান? এরা না মুসলমান, না হিন্দু, না খ্রিষ্টান, না বৌদ্ধ, না কোনও ধর্মাবলম্বী। এরা দুষ্কৃতিকারী। এরা নরাধম। দুষ্কৃতিকারীদের কোনও জাত বা পরিচয় নেই। কোনও ধর্ম বা কোনও সম্প্রদায়ের পরিচয়ে তাদের পরিচয় নয়। তাদের একটাই পরিচয় তারা দুষ্কৃতিকারী। এদের বিরুদ্ধে কেন কোনও কঠিন, কড়া, নির্ম্মম পদক্ষেপ নেওয়া হয় না? উত্তর কি? উত্তরঃ ধর্মকে রক্ষা করার জন্য, সভ্যতাকে, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাকে বজায় রাখার জন্য কঠোর ক্ষমাহীন পদক্ষেপ নেওয়ার মত নিরাশী নির্ম্মম সৎ কোনও ধর্মগুন্ডা প্রশাসক নেই। আর এই নরাধম দুষ্কৃতিকারীদের কার্যকলাপে তাহ'লে কেন সাধারণ 'মানুষ' পক্ষে বিপক্ষে প্রভাবিত হয়!? আর তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে তামাম সাধারণ মানুষের ওপর। কেন? কেন মুষ্ঠিমেয় দুষ্কৃতিকারীর জন্য সমগ্র সম্প্রদায় কলঙ্কিত হয়!? সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ঘৃণার বাতাবরণ তৈরী হয়!? সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা বাধে!? এই মুষ্ঠিমেয় দুষ্কৃতিকারী বজ্জাত বেজাতের দল কি ক'রে এত শক্তিশালী হয়!? সব সম্প্রদায়ে এরা তো সংখ্যালঘু!? নাকি!? তাহ'লে এদের এত শক্তি, এত সাহস, এত পরাক্রম কি ক'রে সম্ভব!? প্রকাশ্যে এরা কি ক'রে সভ্যতা বিরোধী, ধর্ম বিরোধী, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিরোধী, ঈশ্বর ও ঈশ্বরের বিধান বিরোধী চড়া উঁচু গলায় মৃত্যু উপত্যকা বানাবার আওয়াজ তোলে!? কে বা কারা এদের মদতদাতা!? তাহ'লে ধরে কি নিতে হবে সংখ্যাগুরুরাই এদের পিছনে আত্মগোপন ক'রে থাকে!? আর প্রশাসন এই সংখ্যালঘুদের পৃষ্টপোষক!? তাহ'লে সব সম্প্রদায়ের আম আদমীর কোনও মূল্য নেই!? আম আদমী ভেড়ার পালের মত কিম্বা বলীর পাঁঠার মত!? পেছনে লাঠি উঁচিয়ে হ্যাট হ্যাট ক'রে যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবার মত!? কেন!? কেন!? কেন!?
 
কারণ, কোরাণ বা গীতা বা বাইবেল ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা তামাম সাধারণ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটা পবিত্র 'বই' মাত্র! বইয়ের মর্ম্মবাণী পালন করার জন্য নয়, নয় চরিত্রগত ক'রে তোলার! শুধু সাজিয়ে গুছিয়ে ধূপ ধুনো দিয়ে কুলুঙ্গির গহ্বরে রেখে দাও! ব্যাস! এর বাইরে আর কিছুই নয়। তাই আজ আমাদের, এই ধর্মভীরু ভাঙাচোরা মূর্খ মানুষ জাতের নির্ম্মম করুণ শোচনীয় অবস্থা।
 
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সত্যানুসরণ গ্রন্থে বলা বাণী স্মরণ করা যেতে পারে। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বই পড়ে বই হ'য়ে যেও না। তার essence (সার)-কে মজ্জাগত ক'রতে চেষ্টা কর। Pull the husk draw to the seed. (তুষটা ফেলে শস্যটা নিতে হয়)।"

এই একটা বাণীর মধ্যে ধর্মগ্রন্থ পায়ে রাখা, আগুনে পোড়ানো ইত্যাদির মানসিকতা বা প্রতিক্রিয়ার মূল অর্থ নিহিত আছে। আমরা কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি খ্রিষ্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুরুষোত্তমদের ব'লে যাওয়া বাণী সম্বলিত এইসমস্ত গ্রন্থের মূল এসেন্সকে মজ্জাগত করেছি নাকি বই পড়ে বই হ'য়ে গেছি? আসলে গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেখবো কেউ এইসব বই পড়েই দেখিনি!
আমার মা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সত্যানুসরণ' গ্রন্থ সম্পর্কে বলতেন, বইটা একবার পড়েই দ্যাখ না ভিতরে কি আছে। বাঘ আছে না ভাল্লুক আছে, হাতি আছে না ঘোড়া আছে কি আছে পড়েই দ্যাখ না একবার!

আমরা পড়িইনি। আর পড়লেও মানে বুঝিনি। মানে বুঝলেও পালন করিনি, করিনি চরিত্রগত। শুধু আমিত্ব ফলানো আর অর্থ-মান-যশ কামানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

( লেখা ১৯শে অক্টোবর ২০২১)

Saturday, October 15, 2022

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪

 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৩' লেখা শেষ করেছিলাম এই ব'লে যে, অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মণি মানিক্য নিয়ে হাজির হবো 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪' লেখায় আর সেই অভিজ্ঞতার আয়নায় দেখে নেবো নিজের ইষ্টপ্রাণতার চরিত্র কতটা ফর্সা আর কতটা কালো। তাই এসেছি অভিজ্ঞতা ভাগ ক'রে নিতে।

অভিজ্ঞতা **

বহুদিন ধ'রে মাঝেমাঝেই ইউরিনাল সমস্যা কষ্ট দিচ্ছিল আমার সহধর্মিণীকে। একটা জ্বালা জ্বালিয়ে মারছিল তাকে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক সবরকম চিকিৎসা সত্ত্বেও অনেকদিন পরপর মাঝেমধ্যে এই সমস্যা লেগেছিল এঁটেল পোকার মত। বহুদিন ভালো থাকে আবার হয়। যখন হয় তখন জ্বালা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে তীব্র হ'তে থাকে ফলে জল খেতে হয় প্রচুর আর জল খাওয়ার কারণে বারবার বাথরুমে যাওয়ার নতুন বিরক্তি যোগ হয় জীবনে। এমতাবস্থায় ঠাকুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম দুজনে শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে নিবেদন করবো ব'লে। যথারীতি ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে নির্দিষ্ট সময় ভোরবেলা বাবাইদাদাকে স্ত্রী তার সমস্যার কথা নিবেদন করলে বাবাইদাদা হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং একজন ডাক্তারকে বললেন ব্যাপারটা দেখবার জন্য। সেই ডাক্তারের নির্দেশমতো হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখানো হ'লে তিনি সব শুনে অল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার নির্দেশ দিলেন। সেইমত দেওঘরের কেয়ার ডায়াগনস্টিক থেকে ইউ এস জি অফ হোল আবডোমেন পরীক্ষা করিয়ে সন্ধ্যাবেলা আবার ডাক্তারবাবুকে দেখানো হ'লো। তিনি দেখে বললেন, ইউরিনাল ট্র্যাকে কোনও সমস্যা নেই এবং আরও কিছু পরীক্ষা করার কথা লিখে দিলেন এবং হোয়াটস আপে রিপোর্ট পাঠাবার কথা বলে দিলেন। আমরা সৎসঙ্গ হাসপাতালের ফ্রি মেডিসিন কাউন্টার থেকে বিনামূল্যে ঔষধ নিয়ে ফিরে এলাম। সেদিন দেখেছিলাম কত মানুষ হাসপাতালের সেই মেসিসিন কাউন্টার থেকে ফ্রিতে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে! আমার স্ত্রীর জন্য প্রেসক্রিপশন করা একটা যে ওষুধ ফ্রিতে নিয়েছিলাম সেই ওষুধের দাম ছিল প্রায় ৩০০টাকা। 


দেওঘর থেকে পরদিন ফিরে এসেছিলাম বাড়ি। তারপর বাবাইদাদা নির্দেশিত হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা আর ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ইউ টি অফ ওষুধ সেবন করতে লাগলো এবং তারপর ডাক্তারের নির্দেশিত বাকি সব পরীক্ষা ক'রে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হ'লো হোয়াটস আপ ক'রে দেওঘরে ডাক্তারের কাছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পরও কোনও উত্তর পেলাম না। তারপর ফোন করলেও ফোন ধরলেন না ডাক্তারবাবু। চিন্তায় পড়ে গেলাম! কি করবো কিছু বুঝলাম না। 


এভাবে কেটে গেছিল কয়েকমাস। অনেকবার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও উত্তর না পাওয়ায় ভাবলাম লোকাল কোনও ডাক্তারকে দেখানোর কথা। এরমধ্যে ডাক্তারবাবুর দেওয়া ওষুধ যেটা হাসপাতাল থেকে ফ্রিতে নেওয়া হয়েছিল সেটাও শেষ হ'য়ে গেছিল। এর মধ্যে আর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা আবার দেখা দেওয়ায় আর ডাক্তারবাবুর কোনও উত্তর না পেয়ে পুনরায় কয়েকমাস পর আবার দেওঘর গেলাম শেষ লক ডাউন ঘোষণার আগে ১২ই মার্চ'২০২০। ১৩ই মার্চ ভোরবেলা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার শ্রীচরণে অসুখের কথা বিস্তারিত নিবেদন করলে তিনি হিমালয় কোম্পানি ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু দেওঘর থেকে ফিরে এসে ওষুধের জন্য নেটে খুঁজলে এবং লোকাল ওষুধের দোকানে চাইলে দেখা গেল হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ আউট অফ মার্কেট! হিমালয় কোম্পানি ওষুধ মার্কেট থেকে তুলে নিয়েছে! কিন্তু অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি আছে। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবো সেটা খাওয়া যাবে কিনা। আবারও ডাক্তারবাবু ব্যস্ততার কারণে কিম্বা হয়তো অন্য কোনও অসুবিধার কারণে হোয়াটস আপের উত্তর না দেওয়ায় ও ফোন কল রিসিভ না করায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করণীয়।

মনটা মানছিল না বাবাইদাদা নির্দেশিত ওষুধ না পাওয়ায়। আর এর মধ্যে দেওঘরে যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ঘরে বসেই ঠাকুরের ফটোর কাছে নিবেদন করলাম সমস্যার কথা এবং বাবাইদাদাকে ফটোর মাধ্যমেই জানালাম বর্তমান পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে আমাদের এলাকায় নতুন একজন ডাক্তার এলেন। তিনি একদিন বাড়িতে এসে আমার অসুস্থ বৌদিকে দেখে গেছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আমার স্ত্রীর পরিচয় হয় এবং একদিন তাঁকে দেখাতে তাঁর চেম্বারে গেলেন। তিনি পুরোনো রিপোর্ট দেখলেন এবং নতুন কিছু পরীক্ষা করার নির্দেশ দিলেন তারপর সব রিপোর্ট দেখার পর প্রথমেই তিনি যে ওষুধের নাম প্রেসক্রাইব করলেন তার নাম হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০! সেটা দেখে আমার স্ত্রী স্তম্ভিত হ'য়ে গেলেন এবং ডাক্তারকে বললেন এই ওষুধের আউট অফ মার্কেটের কথা। তখন ডাক্তারবাবু শুনে কোম্পানির নাম চেঞ্জ করে দিয়ে অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি প্রেসক্রাইব করলেন! আর পুনর্নোভা কন্টিনিউ করার নির্দেশ দিলেন! শেষমেশ বাবাইদাদার দেওয়া ওষুধের সমাধান হ'লো! এরকমভাবে যে সমস্যার সমাধান হ'তে পারে তা আজও বিস্ময়করভাবে ঘোর বিস্ময়! যার কোনও ব্যাখ্যা নেই! একে কি বলবো!? কাকতালীয়!? নাকি সত্যি সত্যিই প্রার্থনা তাঁর কাছে পৌঁছে যায়!? আমি জানি না; আমার কপট প্রার্থনার অত জোর নেই।

শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নির্দেশ মত সেই পুনর্নোভা ও ক্রেনবেরি ৩০০ খেয়ে স্ত্রী সুস্থ হ'য়ে উঠলো। মাঝে একজন ভালো মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের সাথে পরিচয় হওয়ায় এবং তাকে সমস্যার কথা জানানোয় তিনি প্রথমে স্ত্রীকে ফ্রসফময়সিন ট্রমেতামল পাউডার দিয়ে বললেন জলে গুলে রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে। আর অন্ততঃ তিনঘন্টা পর বাথরুমে যেতে বলে দিলেন। এতে যদি ইনফেকশন থাকে তাহলে সব বেরিয়ে যাবে। তারপরে দু'দিন পর যেতে বললেন তখন ওষুধ দেবেন এখন কোনও ওষুধ দেবেন না। সেইমত স্ত্রী তার কাছে দু'দিন পর গেলে সেই মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার স্ত্রীর কাছে জেনে নেওয়া পুনর্নোভা আর ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খেয়ে যেতে বললেন এবং সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিলেন!

আজ স্ত্রী ঠাকুরের অপার দয়ার পরশে ও বাবাইদাদার আশীর্বাদ, নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে চলার জন্য এবং শ্রীশ্রীঠাকুর ও বাবাইদাদার কাছে প্রার্থনা হেতু  হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার জন্য ভালো আছে।

কিন্তু আজ বড় মনে পড়ে সেই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুর কথা! কেন এমন হয়!? কেন বাবাইদাদার নির্দেশ আহত হয়!? চিকিৎসাজনিত ব্যস্ততা, কাজের চাপ, সংসারের চাপ ও জীবনে চলার পথে অন্যান্য কারণ মানুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ শূন্য ক'রে তোলে!? ইষ্টপ্রাণতায় ঘাটতি দেখা দেয়!? এই কারণে কি 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য' হ'য়ে ওঠা হয় না!? 

কিন্তু সবচেয়ে যেটা আশ্চর্য করেছিল আমায় সেটা হ'লো দ্বিতীয়বার বাবাইদাদাকে যখন অসুখের কথা নিবেদন করা হয়েছিল তখন তিনি পুনরায় সেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেননি বা নির্দেশ দেননি! তিনি নিজেই ক্রেনবেরি ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করেছিলেন। এবং সেইমত পরবর্তী ঘটনা বিস্তার লাভ করেছিল যা আজও রহস্যময়!!!! 

এমনিভাবেই দেখে নেব পরবর্তী অভিজ্ঞতা কি বলে! কি বলে 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য বলেই তুমি সকলের জন্য' এই বাণী অভিজ্ঞতার আয়নায়! কার জীবনে কতটা প্রকট হ'য়ে উঠেছে এই বাণীর মর্মার্থ! আসুন দেখে নিই 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য- ৫' কি বলে! 

ক্রমশঃ

( লেখা ২৪শে অক্টোবর' ২০২০)

Friday, October 14, 2022

তুমি শুধু প্রভুর জন্য--২

 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য---১' এ আমি লেখা শেষ করেছিলাম শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী 

"You are for the Lord 

Not for other 

You are for the Lord

And so for others.

(তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য

অন্য কারও জন্যে নয়

তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই

তুমি সবার জন্য।)

------বাণীর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন বিশ্লেষণ ক'রে বাণীর আয়নায় নিজের মুখ, নিজের চরিত্র দেখবো! দেখবো মুখ বা চরিত্র নির্মল নাকি মলপূর্ণ!


এখন দেখা যাক বাণী কতটা চরিত্রগত হয়েছে আর কতটা হয়নি। বাণীতে প্রথমেই আছে 'তুমি প্রভুর জন্য'! তা সত্যিই কি আমি প্রভুর জন্য হয়েছি!? ঠাকুর বলছেন, 'তুমি প্রভুর জন্য, কারও জন্য নও'! এ কথার অর্থ আমি একমাত্র আমার প্রভুর জন্য অন্য কারও জন্য নই। প্রথমতঃ প্রভু কে? কাকে প্রভু বলি? 


প্রভু হ'লেন একমাত্র ব্রহ্মাণ্ডের পর ব্রহ্মান্ড কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি যেখান থেকে হ'য়ে থাকে যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় সেন্ট্রাল জোন বলা হয় সেই সেন্ট্রাল জোন অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির উৎস মুখ যাকে আমরা সমস্ত কারণের কারণ পরম কারুণিক বলি অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা বলি, বলি ঈশ্বর, বলি গড, বলি আল্লা, বলি সবার পিতা পরমপিতা সেই তিনি যখন মানুষের মাঝে মানুষ রূপে নেবে আসেন আমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার এক নিখুঁত ও সম্পূর্ণ পথ দেখিয়ে দিতে সেই তিনি হ'লেন আমার প্রভু! আমার দয়াল! তাঁকেই একমাত্র প্রভু নামে আমি সম্বোধন ক'রে থাকি। এছাড়া মানুষের মাঝে অন্য কেউ সে যেই হ'ক না কেন, যতবড় মহাত্মা, যতবড় মহাপুরুষ বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ হ'ক না কেন কেউই প্রভু নন, প্রভু ডাকের পাত্র নন। পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের মাঝে এক ও একমাত্র প্রভু হ'লেন প্রভু রাম, প্রভু কৃষ্ণ, প্রভু বুদ্ধ, প্রভু যীশু, প্রভু মোহাম্মদ, প্রভু চৈতন্য, প্রভু রামকৃষ্ণ এবং সেই প্রভুর সর্বশেষ রূপ হ'লেন প্রভু অনুকূল! এছাড়া কেউই প্রভু নয়। 


তাহলে আমার প্রভু কে? অর্থাৎ আমার প্রভু অর্থাৎ আমার ঈশ্বর, আমার প্রিয়পরম, আমার পরমপিতা, আমার সৃষ্টিকর্তা কে? 

আমার প্রভু হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! বর্তমান যে শেষ রূপকে আমি আমার দয়াল, আমার ঠাকুর, আমার পরমপিতা, আমার ঈশ্বর, আমার গড, আমার আল্লা ব'লে ডাকি সেই তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন আমার এক ও একমাত্র প্রভু! এ ছাড়া আমার জীবনে রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ হ'লেন এক ও একমাত্র প্রভু! বাকী কেউই প্রভু নয়।


আচ্ছা তাহলে আমরা যাকে তাকে প্রভু ব'লে ডাকি কেন?

যাকে তাকে প্রভু ব'লে ডাকা বা সম্বোধন করা সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।। আবার অজ্ঞানতাও বিরাট একটা ব্যাপার বটে। যা ধর্ম জগৎকে ঘিরে ফেলেছে। আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডকে অক্টোপাশের মত যা পেঁচিয়ে নিয়েছে! আর তখনই কাঁচের টুকরোকে হীরে ব'লে বোধ হয়! তবে অনেক ক্ষেত্রে এই প্রভু ডাকার মধ্যে আবার ভালবাসার ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন আমার প্রভু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! তিনিই আমার এক ও একমাত্র প্রভু! কিন্তু সেই যে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রথম যেদিন সামনাসামনি দেখলাম বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো! ইচ্ছে হ'লো প্রভু ব'লে ডেকে উঠি! যেন আমার প্রভু, আমার ঠাকুর জীবন্ত লীলা করছেন শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে! কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম! শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, "তোরা আমায় যে যে নামেই ডাক না কেন আমি হ'লাম ঠাকুরের কুকুর!" তখন আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান, ঠাকুরের আদরের বড়খোকাকে বড়দা নামে ডাকতাম! এখনও ডাকি। কেউ কেউ ভালোবেসে শ্রীশ্রীবড়দাকে পিতৃদেব বলেও সম্বোধন করতেন। এগুলি তীব্র ভালোবাসার প্রভাব! কিন্তু বড়দার কথায় আমরা সম্বিৎ ফিরে পেলাম। কে কাকে কি ব'লে ডাকবে সেটা তার ব্যক্তিগত ভালোবাসাময় অনুভূতির উপর নির্ভর করে। তবে ব্যক্তিগত সম্বোধন কখনও সমষ্টিগততে রূপ নেয় না। সমষ্টিগতভাবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের তিনি পরম আদরের শ্রীশ্রীবড়দা!


তারপরে দেখলাম আচার্যদেব শ্রীশ্রীঅশোকদাদাকে! সালটা সম্ভবত ১৯৯০। মায়ের ক্যানসার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রার্থনা জানাতে গিয়েছিলাম ঠাকুরবাড়ি শ্রীশ্রীবড়দা চরণে! সেসময় শারীরিক কারণে শ্রীশ্রীবড়দা শুধুমাত্র দর্শন দিতেন। নিবেদন যা কিছু শ্রীশ্রীদাদাকে করতে হ'ত। মাকে নিয়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রণাম করলাম। দেখলাম বড়দা ঘরের মধ্যে খাটের উপরে হাত জোড় ক'রে ভক্তমন্ডলীর দিকে চেয়ে বসে আছেন! মনে মনে বড়দাকে মায়ের অসুখের ব্যাপারটা জানালাম। তারপর প্রণাম ক'রে যখন বর্তমান আচার্যদেবের বাড়ির পাশ দিয়ে আসছিলাম তখন একজন গুরুভাই সেখানে বসে থাকা শ্রীশ্রীদাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল তাঁকে নিবেদন করতে।  আজ আর তেমন ক'রে মনে পড়ে না কে সেদিন আমাদের শ্রীশ্রীদাদাকে নিবেদন করার কথা বলেছিল, কে দেখিয়ে দিয়েছিল বসে থাকা অবস্থায় শ্রীশ্রীদাদাকে! তবে সেদিন এটা অনুভব হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার কাছে যখন মনে মনে মায়ের কথা নিবেদন করেছিলাম তখন বড়দার সেই  আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি যেন পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল শ্রীশ্রীদাদার কাছে! সেই দৃষ্টি আজও মনে পড়ে, ভুলতে পারি না! মনে হয় যেন প্রভুর দৃষ্টি!


কিন্তু যখন মাকে নিয়ে শ্রীশ্রীদাদার চরণপ্রান্তে এসে বসেছিলাম ঐ শীতের সকালের ঝ'রে পড়া মিষ্টি রোদ্দুরে তখন শ্রীশ্রীদাদার মুখের দিকে চেয়ে সমস্ত শরীর শিউড়ে উঠেছিল, গভীর ভালোবাসায় ব'লে উঠতে চেয়েছিল মন, প্রভু! প্রভু!! প্রভু!!! কি এক অদ্ভুত অনুভূতি শরীর-মন-হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম সেদিন যা কখনোই কাউকেই বোঝানো সম্ভব নয়! কিন্তু দাদাকে যখন মায়ের অবস্থার কথা নিবেদন করেছিলাম, কথা বলছিলাম তখন সারাক্ষণ দাদা বলেই সম্বোধন করেছিলাম! অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কে যেন বলছিল, প্রভু!!!!!! সেদিন মনে হয়েছিল যেন আমার প্রভু, আমার ঠাকুর, আমার দয়াল লীন হ'য়ে আছে শ্রীশ্রীদাদার অবয়বে! পরবর্তীতে শ্রীশ্রীদাদাকে কেউ কেউ বড়দাদা ব'লে সম্বোধন করতে শুরু করে সেই একই কারণ থেকে তা হ'লো সেই ভালবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! প্রভু-দাদা-বড়দাদা সব একাকার হ'য়েও আলাহিদা সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে!!!!!!! কিন্তু তিনি আমাদের বিশ্বজুড়ে সব সৎসঙ্গীর আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা বা শ্রীশ্রীবড়দাদা!


আবার যখন সেই ২০১৫ সালের সম্ভবত সেপ্টেম্বর কি অক্টোবর মাসে ঠাকুরবাড়ি গিয়েছিলাম মেয়ের চাকুরী সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সেদিন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চরণপ্রান্তে ব'সে নিবেদন করার সময় সাক্ষাৎ যেন আমি আমার প্রভুকে চাক্ষুস করেছিলাম শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে! এ কোনও বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জিত কোনও আবেগ নয়! আমি ভালোমতোই জানি আবেগ ভালো কিন্তু আবেগে ভেসে যাওয়া ভালো নয়! কিন্তু সেদিনের পর থেকে দেওঘরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার আগের দিন ১৩ই মার্চ'২০ সকালবেলায় শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চরণপ্রান্তে ব'সে নিবেদন করা পর্যন্ত আমি ভুলবো না সেই ভুবনভোলানো রূপ, সেই মিষ্টি কথা, মিষ্টি হাসি! কি অপূর্ব সুন্দর দেখতে! যে দেখেনি তাকে শুধু ব'লে বোঝানো যাবে না যে স্বয়ং আমার প্রভু যেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে অবস্থান করছেন! হ্যাঁ! অবস্থান করছেন! করছেন জীবন্ত!!!!!!! কিন্তু সেই ২০১৫ থেকে ২০২০-র মার্চ মাস পর্যন্ত যতবার দেওঘর গেছি, কলকাতার অমরধাম গেছি ততবারই তাঁর সান্নিধ্যে কথা বলার সময় অন্তর বলেছে প্রভু! প্রভু!! প্রভু!!! কিন্তু সম্বোধন করেছি 'দাদা' ব'লে! কিন্তু কোথায় যেন দাদা আর প্রভু একাকার হ'য়ে গেছে! একে কি বলবো? পাগলামি? ভাবাবেগ? না! একেই বলে তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ! ভালোবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! এই তীব্র অকৃত্রিম ভালোবাসা ঠাকুরকে ঘিরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে! এই ভালোবাসা, এই 'প্রভু' ডাকের তীব্র ইচ্ছা বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! কিন্তু তবুও বাবাইদাদাকে ডেকে উঠি দাদা ব'লে; কোথায় যেন সূক্ষ্ম অতি সূক্ষ্ম একটা তফাৎ থেকে যায়! 


আর অবিনদাদা নিয়ে কি আর বলবো! এই অল্প বয়সে সম্ভবত তখন বয়স ১৮বছর (২০১৮ সাল) ঐ বয়সে একদিন শীতের সকালে প্রার্থনার পর আলো আবছায়ায় শ্রীশ্রীঠাকুরের স্নানকুন্ডের পিছনে কারও জন্যে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সেইসময় ঐ ফাঁকা নির্জনস্থানে শীতের ভোরের আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হ'য়েছিলাম তা আজও জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে! প্রকৃতির কি অপূর্ব রূপ! ঝিরঝির ক'রে হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে! একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে অবিনদাদা বাইকে একটা হাত রেখে! সেদিন ঐ শুভ মুহূর্তে এগিয়ে গিয়েছিলাম ছেলেমেয়েকে নিয়ে। কারণ সেদিন বাবাইদাদা শারীরিক কারণে দর্শন দেননি, এবং পরদিনও দেবেন না। খবর নিয়ে জেনেছিলাম রাতেই তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। অথচ পরেরদিন সকাল ১১টায় ট্রেনের টিকিট কাটা আছে। চলে যেতে হবে দেওঘর ছেড়ে। দুদিনের জন্য আসা। মনটা খারাপ হ'য়ে গিয়েছিল এই ভেবে এই প্রথমবার ফিরে যেতে হবে বাবাইদাদাকে নিবেদন না করেই। আর সারা রাত এবং সকাল সকাল সেই ঠাকুর আঙিনায় ঠাকুরের স্নানকুন্ডের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম অবিনদাদার কথা! যদি দেখা পায় তাহলে তাঁকেই নিবেদন করবে ছেলেমেয়ে তাদের কথা। আর ঘটেও গেল তাই! কি অবিশ্বাস্য ব্যাপার? কাউকে ব'লে বোঝানো দুস্কর! বললে বলবে সবটাই কাকতালীয়! হাঁটতে হাঁটতে যখন যাচ্ছি ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঠিক সেইসময় একটা বাইক স্নানকুন্ডের পাশ দিয়ে গিয়ে পিছনে একটা গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালো! আমি বুঝতে পারিনি কে গেল! মেয়ে আমার একঝলক দেখেই বললো, বাবা! বাবা! অবিনদাদা যাচ্ছে! যেন মনে হ'লো আমাদের জন্যেই বুঝিবা এই ভোরে অতি ভোরে দেখা দেবেন ব'লে এসে দাঁড়ালো অবিনদাদা! সেই সকালে অবিনদাদার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ছেলেমেয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত সমস্যা নিবেদন করলো তখন অবিনদাদার মধ্যে দেখেছিলাম অবিশ্বাস্য কনফিডেন্স! মেয়ে এডুকেশন সেক্টরে চাকরি করে। আর এই সেক্টরে কাজ করার কথা স্বয়ং বাবাইদাদা নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে যখনই চাকরি পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনও সমস্যা সামনে আসে মেয়ে বাবাইদাদাকে নিবেদন ক'রে থাকে। এবারও ছিল চাকরির সংস্থা পরিবর্তনের বিষয়। মেয়ের কাছ থেকে সেই চাকরি ও কোম্পানি সংক্রান্ত সমস্ত কথা শুনে তাকে নতুন জায়গায় জয়েন করার কথা বললেন কিন্তু সেই একই প্রশ্নে ছেলেকে এক্সিস্টিং কোম্পানিতে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন, কোম্পানি পরিবর্তন করতে নিষেধ করলেন অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে! বললেন, যা হবে এখানেই হবে। পরবর্তী সময়ে কি অবিশ্বাস্যভাবে মিলে গিয়েছিল সেই কথা। যা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়! যে কোম্পানিতে ছেলেকে জয়েন করতে মানা করেছিলেন অবিনদাদা পরবর্তী সময়ে সেই কোম্পানির প্রোজেক্ট চলে যাওয়ায় যাদের নেওয়া হয়েছিল হয় তাদের অন্য রাজ্যে ট্রান্সফার হ'তে হবে নতুবা চাকরিতে রিজাইন দিতে হবে! অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হ'য়ে গিয়েছিলাম সেদিন! কথা গিয়েছিল হারিয়ে!! 


সেদিনও ঐ অতি প্রত্যুষে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অবিনদাদার কথা শুনতে শুনতে মনের ভিতর থেকে কে যেন ব'লে উঠতে চেয়েছিল 'প্রভু' ব'লে! পরে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম ক'রে উঠে দাঁড়ালাম। অবিনদাদা যার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি এসে পড়ায় বাইক চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম কেন এমন হয় বারবার!? এমন হওয়ার পিছনে অন্য কি রহস্য আছে জানি না আর এই জানার মত অতবড় মাপের ভক্তও নই। শুধু বলতে পারি সেই ইষ্টের প্রতি, প্রভুর প্রতি তীব্র ভালোবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!! আর ভালোবাসার রঙের ছিটে গিয়ে পড়ে প্রিয়পরমের প্রিয়ের জীবনে! পরমুহূর্তেই মনে পড়ে গেল ঠাকুরের বাণী, 

"ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর

রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।"


তাই জীবন যদি শুধু প্রভুর জন্যে, একমাত্র প্রভুর জন্যে হয় তাহলে এমন তীব্র উপলব্ধি, এমন জ্বলন্ত অনুভূতি ডেবলপ করে!!!!!!!!


তাহলে আসুন ঠাকুরের বাণীর শেষ লাইন "তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য আর তাই তুমি সকলের জন্য" আমার জীবনে কতটা প্রভাব রেখেছে তা পরবর্তী 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য'-৩ আর্টিকেলে দেখে নিই!

ক্রমশঃ।

( লেখা ১৫ই অক্টোবর'২০২০)

তুমি শুধু প্রভুর জন্য!-১

You are for the Lord

Not for others

You are for the Lord 

And so for others.


এই বাণী কার? পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। এই বাণীর অর্থ কি?

এই বাণীর অর্থ: 

তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য অন্য কারো জন্য নও, 

তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই তুমি সবার জন্য।


এখন প্রশ্ন জাগে মনে, 

আমি কার দীক্ষা নিয়েছি? আমার আরাধ্য দেবতা কে? কে আমার প্রভু?

মন বলে, আমি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রদত্ত সৎ নামে দীক্ষা নিয়েছি। আমার আরাধ্য দেবতা এক ও একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর তিনিই আমার প্রভু।


আচ্ছা সেই যে কোন ছোটবেলায় ৫বছর বয়সে নাম আর ১২বছর বয়সে পূর্ণ দীক্ষা হয়েছিল তা এই এত বছর ধ'রে কত ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে জীবন কি এই বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছে? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত মন নিজের কাছে নিজে নানা সময়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে! এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে স্বাভাবিকভাবেই আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হয় আমার ভিতরের আমি! 


আমার ভিতরে যে আরও একটা আমি আছে অর্থাৎ যাকে বলি বিবেক সেই বিবেক আমাকে চাঁছাছোলা নির্দয়ভাবে জিজ্ঞেস করে, আরে বয়স তো অনেক হ'লো! জীবনসূর্য পাট-এ যেতে বসেছে! উপরিউক্ত বাণীর মর্মার্থ বোঝার আগে বলো দেখি হে ঠাকুরভক্ত! দীক্ষা নিয়েছো মানে কি? 

আমতা আমতা ক'রে বললাম,  দীক্ষা নিয়েছি মানে জীবনে সফল ও বড় হওয়ার জন্য দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন আছে আর সেই সফলতার সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশঃ উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তর পেরিয়ে উচ্চতম অবস্থায় পৌঁছবার জন্য নিখুঁত অসীম দক্ষতা লাভের প্রয়োজন আর সেই প্রয়োজনকে বাস্তবায়িত করার জন্য একটা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়মকে, একটা নীতিকে জীবনে গ্রহণ করেছি। আর সেই নিয়ম বা নীতি একটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে ঘিরে আবর্তিত হ'য়ে চলেছে! সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিই আমার জীবনে জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ! আমি সেই মানুষটির চরণে নিজেকে সঁপে দিয়েছি তাঁর চলনপূজায় মগ্ন হবো ব'লে। আমার ভালোবাসার উৎস সেই মানুষটির নাম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! আমার অস্তিত্বকে রক্ষা করা ও সুন্দর ক্রমবৃদ্ধির পথে চালিত করার নামই দীক্ষা গ্রহণ বা নিয়মনীতি গ্রহণ ও পালন! 


মনের মধ্যে যেন কথার তুফান উঠেছে! আপন মনে কে যেন ব'লে চলেছে, দীক্ষা নেওয়ার কথায় মানুষের কোথায় যেন ইগোতে বাধে, বকোয়াস কুসংস্কার ব'লে বোধ হয়। অথচ এই অতি বোদ্ধারাই দিন শেষে গিয়ে গুরুর বদলে গরুর ল্যাজ ধ'রে বৈতরণী পার হ'তে চায়! আবার ইয়ং পড়াশুনাজানা ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা সমাজ কো বদল ডালোর নামে নানা মনভোলানো ভুল অসম্পূর্ণ চটজলদি সমাধানের সস্তা রঙিন স্বপ্ন দেখানো মতবাদে ভরপুর রাজনৈতিক দলের সদস্য হ'তে দ্বিধা করে না! সেখানে উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবন বিধ্বংসী মারণ নেশায় মেতে ওঠার জন্য নাম লেখাতে মরিয়া হ'য়ে ওঠে! সেখানে রাজনৈতিক গুরুর জীবন কতটা সুন্দর, কতটা সুশৃঙ্খল, কতটা জ্ঞানে সমৃদ্ধ, কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জীবনের অধিকারী, কতটা সৎ, কতটা বৃত্তিপ্রবৃত্তির অধীশ্বর, কতটা প্রেমময়-ভালোবাসাময় জীবনের অধিকারী ইত্যাদি সেসব দেখার ধার ধারে না। এটাই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়তি, ভাগ্যের পরিহাস! তারা এতটাই মানবতার জয়গানে মাতাল যে প্রকৃত মানবতার গান তারা শুনতে পায় না, দেখতে পায় না প্রকৃত মানবতার পূজারী মানুষরূপী জীবন্ত ঈশ্বরকে! কারণ তাদের কাছে ঈশ্বর শব্দটাই এলার্জি! অথচ এরাই আবার গঙ্গা জলে স্নান ক'রে 'মা মা ব'লে, বাবা বাবা' ব'লে কপালে সিঁদুর লেপে কারণসুধা সহযোগে ঈশ্বরের নামে চোখের জল ফেলে, কুম্ভীরাশ্রু! এরাই আবার যৌবনে বা যৌবন শেষে তাবিজ-মাদুলি, লালনীল সুতো, শেকড় বাকর, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি নির্ভর হ'য়ে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে দিনের শেষে যন্ত্রণাময় সংসার জীবন কাটায়। এরা বিপদতারিণীর পূজা ক'রে নিজের জীবনের হাজারো ভুল থেকে উদ্ভূত বিপদকে জীবন থেকে সংসার থেকে তাড়াতে চায়! এরা জীবনে রিপুতাড়িত হ'য়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে ডুবে থাকা উচ্শৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী হ'য়ে রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই যেখানে বিপদে পড়ে সেখানেই ভাবে ঈশ্বরকে স্মরণ করলেই ঈশ্বর আমার বাপের চাকর হ'য়ে তৎক্ষণাৎ তড়িঘড়ি ছুটে আসবে কোলে তুলে নিতে! এটাই এদের বিশ্বাস! এটাই এদের ঘরের সংস্কার! এটাই এদের জীবনের সংস্কৃতি! এইভাবেই এরা স্বামীস্ত্রী পুত্রকন্যা বাঁচেবাড়ে, বাঁচতে চায়, বাড়তে চায়!


আচ্ছা এরজন্যে ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষেরা কি দায়ী নয়? ভন্ড কপট ধর্মব্যবসায়ী ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের নিয়ে শব্দ খরচ ও সময় খরচ করার মত সেই পর্যাপ্ত সময় ও এনার্জি আর আমার নেই। একটুকুও যা সময় ও এনার্জি অবশিষ্ট আছে তাতে বলতে পারি আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী ঈশ্বরপ্রেমী ভক্ত ঈশ্বরের সাম্রাজ্য সৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক! সবচেয়ে বড় বেঈমান! সবচেয়ে বড় নেমখারাম! অকৃতজ্ঞ! আমিই ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় প্রেমিক, বড় পূজারী, বড় ভক্ত ঈশ্বরের বারবার মানুষ রূপে মানুষের মাঝে আসাকে নানা ধর্মীয় রীতিনীতি ও কথার কূটকচালির মধ্যে গুলিয়ে দিয়েছি যাতে মানুষ ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে চিনতে না পারে আর চিনলেও তাঁর বিভিন্নরূপ নিয়ে বা একই রূপের মাঝে বিকৃত-অবিকৃত পরিবেশনের ধুয়ো তুলে বহুধা বিভক্ত হ'য়ে যায়! এর থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ পবিত্র ঈশ্বর অবিশ্বাসী নাস্তিক, এমনকি ভন্ড কপট ধর্ম জগতের তামাম ভক্তকূল! আমি, হ্যাঁ আমি পাক্কা একটা ধর্ম জগতের আস্ত ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বরাহনন্দন! 


যাই-ই হ'ক, মনের মধ্যে অনেক কথার তুফান ওঠে ও উঠবে আর সেই তুফানে আলোচনার পথ মেইন লাইন ছেড়ে কর্ড লাইনে যাতে চলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সতর্কতার সিগন্যালস্বরূপ আবার ফিরে আসি যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই আলোচনায়। 

আমার ঠাকুর, আমার প্রিয়পরম, আমার এক ও একমাত্র ইস্টদেবতা, আমার গুরু, আমার জীবন্ত ঈশ্বর, আমার ভগবান, গড বা আল্লা বা সৃষ্টিকর্তা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমায় বললেন, 

তুমি একমাত্র ঈশ্বরের জন্যে, অন্য কারও জন্যে নও

আর তুমি ঈশ্বরের জন্যে বলেই তুমি সকলের জন্যে।


এখন এখান থেকে আমি কি শিখলাম? আমি কি কিছু শিখেছি? সেই যে কত ছোটবেলায় ঠাকুর নির্দেশিত সময়ে নাম ও দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছি আজ জীবন সায়াহ্নে এসে এই বাণী সম্বন্ধে কিছু কি উপলব্ধি হয়েছে বা অভিজ্ঞতা লাভ করেছি?


এই বাণীর প্রতিটি শব্দ আর লাইন ধ'রে ধ'রে যদি আমি এগিয়ে যায় বা বিশ্লেষণ করি তাহ'লে কি দেখতে পাবো? আসুন পরবর্তী 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য-২' আর্টিকেলের আয়নায় নিজের মুখ দেখি! দেখি কতটা নির্মল নাকি মলপূর্ণ মুখ! 

ক্রমশঃ।

(লেখা ১৩ই অক্টোবর'২০২০)

Thursday, October 13, 2022

তফাৎঃ শ্রীশ্রীঠাকুর ও সৎসঙ্গী।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে দীক্ষিত অনুগামীদের তফাৎ কি?

১) শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন করার মানুষ আর আমরা দীক্ষিত অনুগামীরা কথার মানুষ। 

২) শ্রীশ্রীঠাকুর ভাসতেন করার স্রোতে আর আমরা দীক্ষিতরা ভাসি কথার স্রোতে।

৩) শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের জীবনে যা যা করেছেন তাই-ই বলেছেন, যা করেননি তা কখনো বলেননি আর আমরা কিছুই তো করিইনি যদি কিছু সামান্য করেছি তো গলা ফাটিয়ে বলেছি আর যা করিনি সে সম্পর্কে বেশী বেশী বলেছি আর সুযোগ পেলেই ঠাকুরের বাণী শুনিয়ে নিজেকে অন্যের কাছে পন্ডিত সাজিয়েছি। 

৪) শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন প্রেমিক পুরুষ আর আমরা দীক্ষিত নারীপুরুষ অনুগামীরা অনুগামীদের সহ্য করতে পারি না।

৫) শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন ব্যথাহারী আমরা ব্যথাদানকারী।

৬) শ্রীশ্রীঠাকুর কোনোদিন কাউকে মানুষ তো দূরের কথা সৃষ্টির একটি তৃণ কণাকেও কখনো আঘাত দেননি আর আমরা দীক্ষিত দাদামায়েরা প্রতিনিয়ত ঘরে বাইরে একে অপরকে কটু কথার প্রহার ক'রে চলেছি আর ক'রে চলেছি প্রকাশ্যে বাচ্চাবুড়ো ওপেন মিডিয়ায়। 

৭) শ্রীশ্রীঠাকুর সাধু সাজতে বারণ করেছিলেন, কোনো কিছু নকল করতে বারণ করেছিলেন আর বলেছিলেন অকপট হ'তে কিন্তু আমরা আজ সাদাকাপড়ে আবৃত সাধু সেজে বসেছি আবার কেউ কেউ বা মন্দিরে কেন্দ্রে ঠাকুর স্টাইলে বসে ঠাকুর স্টাইলে 'করা লাগে, বলা লাগে, ধরা লাগে' সুরে প্রবচন দিয়ে চলেছি আর হয়েছি আপাদমস্তক কপট!

৮) শ্রীশ্রীঠাকুর ইষ্টপ্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বলী দিতে বলেছিলেন আর আমরা তার সোনার সৎসঙ্গীরা আত্মপ্রতিষ্ঠার উন্মাদনায় দিকে দিকে মন্দিরে মন্দিরে মত্ত হ'য়ে রয়েছি।

৯) শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন মানব প্রেমী আর আমরা দীক্ষিত অনুগামীরা কামিনীকাঞ্চন প্রেমী।

১০) শ্রীশ্রীঠাকুরের আয় ছিল মানুষ আর ব্যয় ছিল ভালোবাসা আর আমাদের আয়ের লক্ষ্য কামিনী কাঞ্চন আর ব্যয় অন্যের সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা করা ও পরের দোষ দেখা।


আরও অনেক আছে। তবুও আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখে সোনার সৎসঙ্গী! এরপরেও তিনি আমাদের ফেলে দেননি, ছেড়ে দেননি, দূরে সরিয়ে দেননি বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমৃত্যু আমাদের এখনও রেখে চলেছেন আমরা কালের গহবরে হারিয়ে যাবো ব'লে। এইজন্যই তিনি বোধহয় দয়াল।

প্রবি।

(লেখা ২৬শে সেপ্টেম্বর' ২০২২)

হ্যাপ্পি আনভার্জিনিটি!

Mahmud Ganiun Hasan (mgh reza)

(১১ই অক্টোবর' ২০১৪)

হ্যাপ্পি আনভার্জিনিটি!


এভাবেই নাকি এখন টীনএজ মেয়েরা বান্ধবীর ভার্জিনিটি লষ্ট কে কন্গ্রেট্স করে|

দেখছিলাম 'সিক্সটীন' নামক কলকাতার একটি আর্ট মুভি|
তাদের আর দশটা আর্ট মুভির মতো এখানেও ছিল রগরগে দৃশ্য আর এক তৃতীয়াংশ ইংরেজী সংলাপ! infact all these resons, i like to watch those movies..

কাহিনি একটু বলি,
মেয়েটির সব বান্ধবী তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে| তাকে সবাই মিস্ ভার্জিন বলে খ্যাপাতো| বারবার তার বয়ফ্রেন্ড ব্যর্থ হয়ে তাকে ত্যাগ করার পর তাদের খ্যাপানো আরো বেড়ে গেল|

অতপর একদিন সে রাজি হলো..

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

Mahmud Ganiun Hasan (mgh reza)

আপনার উপরে লেখা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য "...............বাস্তবে যা ঘটে তা তো দেখাতেই হবে" ফেসবুকে পড়লাম। তা বাণিজ্যিক ছবিতেই হ’ক আর আর্ট ছবিতেই হ’ক রগরগে ঘটনার দৃশ্য বাস্তবে কতটা এবং কিভাবে দেখাবে? বাস্তবের অন্দরমহলের স্বামীস্ত্রীর রাতের বিছানার দৃশ্য ছবির নকল স্বামীস্ত্রীর স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে (?) বিছানার দৃশ্য কিভাবে দেখাবে? বাস্তবের রাতের বিছানার দৃশ্য ছবিতে কি দেখানো খুবই প্রয়োজন? বাস্তবের রাতের বিছানার দৃশ্য কি স্বামীস্ত্রী ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় বা জানতে পারে? তাহ’লে বাস্তবের রাতের চারদেওয়ালে ঢাকা সেই দৃশ্যকে ছবিতে এনে খোলা আকাশের নীচে আমজনতার কাছে তুলে ধরার যৌক্তিকতা কোথায়? বাস্তবে কি এই ঘটনা তা’ দাবী করে? তাহ’লে তা’ বাস্তব হ’ল কিভাবে? পন্ডিতসমাজের এই কার্যকলাপ দেখে সবটাই ঘেঁটে ‘ঘ’ হ’য়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে যদি একটু স্পষ্ট ক'রে আপনার ভাবনা প্রকাশ করেন তো ব্যাপারটা বা ধারণাটা পরিষ্কার হয় নতুবা ধোঁয়াশায় চোখ চুলকায় যে! আর লাভ ছাড়া যারা মেধার মূল্য দেয় না তাদের কাছে সমাজ সভ্যতা কৃষ্টি সংস্কৃতির কোন মূল্য নেই, এটা চিরন্তন সত্য। বলতে রুচিতে বাধলেও তাদের ভাষায় যদি বলি তো বলতে হয় 'ভাড় মে যায়' সমাজ সভ্যতা কৃষ্টি সংস্কৃতি। তাদের জীবন দর্শনই হ'ল মাছ-মাংস সাথে আকন্ঠ মাল খাও, মাল্লু কামাও আর ডুবে থাকো মৈথুনে! পঞ্চমকারে সিদ্ধপুরুষ তারা। নমস্য প্রাতঃস্মরণীয় তারা! তা' আপনি কি তাদের জীবন দর্শন সমর্থন করেন বা তাদের জীবন দর্শনে প্রভাবিত? যার যা ইচ্ছা করুক, যেমন ইচ্ছা চলুক জীবন দর্শনে বিশ্বাসী আপনি? সত্যিই তো "আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই, ইচ্ছের ডানা মেলে উড়বই" তা’ ওড়ো! কি আর করা যাবে! তবে খেয়াল রাখতে হবে, যদিও এই ওড়ার সময় তা খেয়াল থাকে না, ডানা কেটে জটায়ু হ'য়ে না পড়ে থাকি! যদিও জটায়ুর ডানা কাটা গেছিল সমাজ সভ্যতা বিরোধী মহান লড়াই-এ।

আর সত্যজিৎ যুগের পরবর্তী সময়ে প্রকৃত আর্ট ফিল্ম কোথায়????????????? বাস্তবতার অজুহাতে নিজের অবদমিত ‘র’ বৃত্তি প্রবৃত্তিকে ঢেকে রাখা যায় না। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই তা’ প্রকাশ হ’য়ে পড়ে। সত্যজিৎ রায়দের ছবিতে বাস্তবও visualize হতে দেখেছি, এটা যেন আমরা ভুলে না যায়। সৃষ্টির উদ্দেশ্য যদি শুধুমাত্র টাকা কামানো হ'য়ে থাকে তাহ'লে তাকে বা তাদের আর যাই বলা যাক সমাজ সভ্যতার পূজা বা পূজারী বলা যাবে না। এটা ভুলে গেলে বা এড়িয়ে গেলে চলবে না যে দর্শক, শ্রোতা তৈরী বা চোখ কান তৈরী করা কবি, লেখক, শিল্পী, নাট্যকার, গায়ক, সুরকার, অভিনেতা, পরিচালকদের সামাজিক মহান দায়িত্ব! ‘র’ দর্শক বা শ্রোতাদের তৈরী করতে হয়না। তারা তৈরী হয়েই আছে। এতে তাদের পুরোপুরি দোষ নেই। ‘র’ দর্শক বা শ্রোতাদের জন্য ‘র’ সৃষ্টির প্রয়োজন এই দাবিকে সামনে রেখে, এই দাবীর অজুহাতকে হাতিয়ার ক’রে এই ব্যখ্যার মুখোসের আড়ালে বা এলিট সম্প্রদায়ের মানুষের মুখোসের আড়ালে বৃত্তি প্রবৃত্তির সুড়সুড়ি খাওয়া নিজের ‘র’ মুখকে ঢেকে রাখা যায় না। নীল শেয়ালের গল্প যেন আমরা ভুলে না যায়। আবার এই ‘র’ সৃষ্টির ফলে যখন প্রভাবিত যুবসমাজ কোনও বিশৃঙ্খল বা উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে তখন সমাজের এই সমস্ত পর্দার পিছনের কুশিলবেরা বা স্রষ্টারা অর্থাৎ তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত বিদ্ধৎকূল এই সমস্ত বিপথে চালিত যুবসমাজের দিকেই সমাজ সভ্যতা নষ্ট করার জন্য আঙ্গুল তোলে, কাঠগড়ায় তোলে। তাই বলতে ইচ্ছে করে, সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ আর এই দেশের লেখাপড়াজানাওয়ালা এলিট সম্প্রদায়!!!!!!!!!!!!!!!!!   প্রবি। 

(উত্তর ১৩ই অক্টোবর' ২০১৪)



Tuesday, October 11, 2022

কবিতাঃ সুখ হরিয়ালি!

দাও সুখ হরিয়ালি দয়াল!
আমি শবরির মত আছি বসে
এক বুক আশা নিয়ে বুকে!
দয়া করো দয়াল!
জীবন যাচ্ছে চলে অস্তাচলে
আশা নিয়ে আছি বেঁচে
তোমার নামের বাদাম তুলে
সুখ সাগরে কাটবো সাঁতার
বুকে নিয়ে সুখ হরিয়াল!
দয়া করো, করো দয়া অপার দয়াল!
আমি শবরির মত এত কষ্ট, এত অপেক্ষা---
যে অপেক্ষায় যায় চলে যৌবন,
শারীরিক মানসিক আত্মিক হয় অবনমন
-----তা পারি না সহিতে, বহিতে।
জানি অপেক্ষার ফল মিঠা তবুও
শালা পারি না করিতে গ্রহণ, করিতে বর্জন
পারি না খেয়ে বিষ বা অন্যকোনও ভাবে
কিম্বা মনে মনে হতাশায় মরিতে।
মন বলে, শালা ব'লে পালাবি কোথায়?
ধরবো ওই মোড়ের মাথায়
জেনো পৃথিবী গোল, ক'রোনা গন্ডগোল।
ঠিক তেমনি পালিয়ে কোথায় যাবে তুমি?
পড়বে ফাঁকে সেদিন যেদিন
ফেটে চৌচির হ'য়ে যাবে স্বর্গ, মর্ত, পাতাল;
ফেটে দু'ভাগ হবে পাপের ভুমি!
মনকে বলি, মন বুঝছো না তুমি!
আছো প'ড়ে বুকে নিয়ে নরক চুমি!
আর আমি আছি পথ চেয়ে শবরী হ'য়ে
বড় আশা বুকে নিয়ে দয়ালের তরে।
হে দয়াল! চাহিনি ও চাহিনা কিছুই!
মন শালা যত টানুক পিছু।
যদি চেয়ে থাকি কিছু তা তোমায়!
তোমাতে সুখ! তোমাতেই শান্তি!
তোমাতেই দূর হয় যত কষ্ট, ক্লান্তি!
দাও, দাও দয়াল! আমায় অপার অসীম শক্তি!
হরিয়ালি সুখে হরিয়াঈ চিরদিন থাকে যেন ভক্তি।
করো গ্রাস আমাকে কালো গহবরের মত
শরীরে মনে আত্মায় হ'য়ে এক আকার
হাতে নিয়ে তোমার পূজার উপাচার
পারি যেন সারাতে সবার মনের ক্ষত!

(লেখা ১১ই অক্টোবর' ২০২১)

Monday, October 10, 2022

অভিজ্ঞতাঃ ধিক্কার। জানাই ধিক্কার।

অনেকদিন ধ'রে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিলাম। একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হ'লো। দেখছিলাম আমার কিছু ফেসবুক বন্ধু এবং অন্য অনেক ফেসবুক পাঠক লেখা পছন্দ না হলেই কিম্বা স্বার্থে অকারণ ঘা লাগলেই (নিজের থেকে নিজের উপরে নিয়ে নেয় যা আমাকে অবাক করে) আমার লেখায় খোঁচা মেরে অপমানজনক মন্তব্য করে। মন্তব্যের উত্তরে যখন আমি মন্তব্য করি তখন আবার নিজের ঐ খোঁচা মারা কমেন্ট ডিলিট ক'রে দেয়; কেন? এরকম অনেক ফেসবুক বন্ধু বা গুরুভাইদের দেখছি অপমানজনক খোঁচা মেরে চিমটি কেটে পরে কমেন্ট ডিলিট ক'রে দেয় যাতে আম পাঠক বা আম সৎসঙ্গী বুঝতে না পারে। সাধারণ আম পাঠকের কথা ছেড়ে দিলাম কিন্তু সৎসঙ্গীর চরিত্র এমন হ'তে বলেছিল নাকি ঋত্বিকরা দীক্ষা দেবার সময়? আমি শুধু বলতে পারি, জ্ঞানের খোঁচা মারলে, আর ঐ আমার পোষ্ট করা বিষয় সম্পর্কে কিম্বা সৎসঙ্গ জগৎ সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান থাকলে বাপের বেটার মত মুখোমুখি হবেন, কমেন্টের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না। আর সৎসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলি আলোচনার মুখোমুখি হ'য়ে বাপ কা বেটা সহিস কা ঘোড়ার মতন অন্তত নিজের পরিচয় দেবেন  আর তা না হ'লে কাউকে অপমানজনক খোঁচা দিয়ে চিমটি কেটে নিজেকে ঠাকুরের কাছে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। আমার বিচারের ফাঁকফোকর আছে সেই ফাঁকফোকর দিয়ে গলে বেরিয়ে যাবেন নিশ্চিত কিন্তু ঠাকুরের বিচার ভয়ঙ্কর, সাবধান। ঠাকুরের পরিষ্কার বলা আছে, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।" খোঁচা মারুন, চিমটি কাটুন, অপমান করুন, গালাগালি দিন, সমালোচনা করুন কিন্তু গিদরের মত লেজ তুলে পালাবেন না। আম সৎসঙ্গী দেখুক, জানুক, বুঝুক কে বা কি বা কোনটা ঠিক বা বেঠিক। এমন সৎসঙ্গীদের ঠাকুর সোনার সৎসঙ্গী বলেছিলেন নাকি!? প্রায়ই এমন গুরুভাইদের মুখোমুখি হ'ই। হয় ফেসবুকে এসে ফাঁপা ভিত্তিহীন উপলব্ধিহীন অর্থহীন খাপছাড়া প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পার না হয়েই মন্তব্য করার অছিলায় জ্ঞানের পাঠশালা খুলে বসবে আর সেগুলি হজম করতে হবে। এটা সৎসঙ্গীদের মধ্যে ভয়ংকরভাবে প্রকট হ'য়ে উঠেছে। সবাই জ্ঞানের খাতা খুলে বসেছে। আর নাহয় অন্যকে, পরস্পর পরস্পরকে খোলাখুলি গালিগালাজ অপমান করছে। যুক্তিতে, জ্ঞানে, তত্ত্ব ও তথ্য মূলক আলোচনায় না পেরে, পোষ্ট করা বিষয়ের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে না পেরে বিরাট পান্ডিত্যের ধ্বজা উড়িয়ে প্রতিপক্ষকে তার লেখার বিষয় সম্পর্কে না জেনে, আদ্যপান্ত না পড়ে, না বুঝেই মন্তব্য ক'রে দিচ্ছে। আবার কখনো বা রেগে উন্মাদ হ'য়ে  জন্ম বিকৃত আখ্যা দিয়ে দিচ্ছে আর পরমুহূর্তে ভালো মানুষের মত ভাব ক'রে ভন্ড, কপট ঈশ্বর প্রেমিক হ'য়ে পড়ছে। তারা খেয়ালই করছে না অদীক্ষিত মানুষেরা কি ভাবছে। সবটাই গিয়ে ঠাকুরের উপর পড়ছে এই বোধ কারও নেই। আরে ভুল হতেই পারে, আমারও ভুল হয়, প্রত্যেকের ভুল হয়। নানা চড়াই উৎরাই এলোমেলো ঘটনা ও নানারকম কালো সাদা ও রঙ্গীন কথার ভিড়ে মানুষের ভুল হতেই পারে। আমারও নানা সময়ে হয়েছিল। এবং যেটার ভুল বুঝতে পেরেছি সেটা স্বীকার ক'রে নিয়েছি, সংশোধন ক'রে নিয়েছি ও ক্ষমা চেয়েছি। উদাহরণ তুলে ধ'রে এখানেও বলতে পারি, শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে সজনীকান্ত দাস তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা 'শনিবারের চিঠি' সাহিত্য পত্রিকায় এত কুৎসা ক'রে এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে পরে যখন তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদনার কাজে যুক্ত হন তখন তাঁর নাম আর নামী  আনন্দবাজার পত্রিকার জনপ্রিয়তা একসঙ্গে জড়িয়ে গেলে মানুষ ভাবতো 'শনিবারের চিঠি' আনন্দবাজার পত্রিকার একটা অংশ। আমারও সেই ভুল হয়েছিল। সেই ভুলের জন্য আমি আগেও ক্ষমা চেয়েছি আজও এই লেখার মধ্যে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে। এতটাই সজনীকান্ত দাস আর আনন্দবাঝার পত্রিকার জনপ্রিয়তা ও নাম একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যে আজও অসতর্কভাবে 'শনিবারের চিঠি' প্রসঙ্গ এলেই সজনীকান্ত দাসের সঙ্গে সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার কথা অসাবধানবশত এসে যায় মুখে।  

 
যাই হ'ক সবাই এতবড় ঠাকুর প্রেমী এক একজন যে তারা খেয়াল করছে না ছেলে খারাপ কাজ করলে আম পাবলিক বাপ-মাকে টেনে আনে বাপ-মায়ের দোষ না থাকলেও। ঠিক তেমনি এইটাও যেন আম সৎসঙ্গীর মাথায় থাকে অদীক্ষিত মানুষ ওপেন মিডিয়ার এই সমস্ত ঠাকুর সম্পর্কিত পোষ্ট দেখছে, পড়ছে, জানছে আর কোমর ক'ষে নেবে পড়ছে ঠাকুরের কুৎসা করতে আর এই রোগ বাংলা ও বাঙালির মধ্যেই সর্বাধিক প্রকট এবং তা' বহু আগে থেকেই। বোদ্ধা বাংলার যোদ্ধা  বাঙ্গালী কোনোদিনই বাংলার রত্নদের, বিশ্বশ্রেষ্ঠ বাংলার সন্তানদের স্বীকৃতি দেয়নি। দিয়েছে কখনও? যখন বহির্বাংলা ও  বহির্বিশ্বের এলিট সমাজ সেই রত্নদের গলায় রত্নহার পড়িয়েছে তখন। তখন বাংলার বুকে পড়েছে শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনের চুলকানির হুড়োহুড়ি। কে কত আগে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাবে তার শুরু হ'য়ে যায় প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ইত্যাদির ভিড়ে নাভিশ্বাস ওঠে সেই রত্নের।  

The greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বেলায় এই বাংলার বুক থেকে উঠেছিল অকথ্য কুৎসার ঝড়। সেই ঝড়ে সামিল হয়েছিল বাংলার সব স্তরের কম বেশী কৃতী সন্তানেরা।  আর সেই সময় এই সরস কুৎসার নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলার সবচেয়ে অগ্রণী সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাস তার একসময়ের সম্পাদনায় পরিচালিত 'শনিবারের চিঠি' সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে দিয়ে। তখন 'শনিবারের চিঠি' ছিল আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের একসময়ের হট সাহিত্য পত্রিকা আর শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন তাঁর 'শনিবারের চিঠি' র হট আইটেম। প্রতি শনিবার বেরোতো সজনীকান্ত দাসের 'শনিবারের চিঠি' সাহিত্য পত্রিকায়। আর আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাস তাঁর একসময়ের সম্পাদনায় পরিচালিত 'শনিবারের চিঠি' সাহিত্য পত্রিকায় ছদ্মনামে লেখা লেখক সেই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলের মহান জীবনকে বলাৎকার ক'রে ক'রে জনপ্রিয়তার চূড়ায় বসে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করতো ও রোজগার করতো। বাংলার বুকে বাঙ্গালিরা রসিয়ে রসিয়ে চা বিস্কুট খেতে খেতে, চাটনির মত চাটতে চাটতে সেদিন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে খোরাক করতো যা আজও বাংলার বুকে পথে ঘাটে, মাঠে ময়দানে, পাড়ায় পাড়ায় ঐ খোরাকের ট্রাডিশান ব'য়ে নিয়ে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষাভাষীর মানুষ মহান বাঙ্গালী। আর তাই দেখে অবাক হয়েছিল এবং এখনও হয় দেশবিদেশের অন্য ভাষাভাষীর মানুষ। তাই বোধহয় ঠাকুর বলেছিলেন আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বাইরে থেকে উঠবে। আর তাই-ই যেন সত্য হ'য়ে উঠছে দিনে দিনে ক্রমশ অতি দ্রুতবেগে। হায়! বাঙ্গালী! ধিক! ধিক্কার জানাই তোমায়।

(লেখা ১০ই সেপ্টেম্বর'২০১৭)

কবিতাঃ ম্যায় হু না!

আহা! রূপ তো নয় রূপের সাগর!
স্বর্গ থেকে কে নেবে এলে তুমি ভাসিয়ে চরাচর!!
রূপ সাগরে মন ডুব দিতে চায় নেই যে ঘাট ফাঁকা
পাড়ে আমি থাকি বসে দেখি তোমায়
তুমি স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি একা!!!!!
চোখে তোমার যাদুর ছোঁয়া মিষ্টি বাঁকা ঠোঁটের হাসি!
মন বলে শুধু তোমার কাছে আসি!!
বরাভয় হাতে বলছো আমায়, মাভৈ! ম্যায় হুঁ না!
আমার কাছে এসো তুমি কিসের তোমার ভাবনা!?----প্রবি।

( লেখা১০ই সেপ্টেম্বর' ২০১৯)

Friday, October 7, 2022

কার অনুসারিঃ ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারী"?

গগনদার "শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী" বক্তব্যের উত্তরে আমার লেখা "ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারী" সম্পর্কে দু'এক কথা।

ঠাকুর সবার উপর কি উপর না, কে কার উপর আর কে কার নীচে এই কথা বলবার জন্য আমার এই লেখা নয়। চেষ্টা করেছি অপটু হাতে বিশ্লেষনমূলক গবেষনা সমৃদ্ধ ক'রে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টাকে তুলে ধরার। যদি সফল হ'ই, সবার ভালো লাগে তা' সম্ভব হয়েছে একমাত্র তাঁর ইচ্ছায় ও আশীর্বাদে। 

ঠাকুর সবার উপর এটা আন্ডারস্টূড; আর সেটা একমাত্র সৎসঙ্গীদের কাছেই, সকলের কাছে নয়। ঠাকুর যে সবার উপর, ব্যাপক অর্থে এর মূল এসেন্স পেতে গেলে বা মানবজাতীর কাছে এই কথার মূল এসেন্স তুলে ধরতে বা পৌঁছে দিতে গেলে গভীর সাধনালব্ধ পরম ভক্তের প্রয়োজন, প্রয়োজন গভীর ত্রুটিহীন নিখুঁত তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ আলোচনার এবং বাকসিদ্ধ প্রচারকের। 

আর এখানে আমি যে বিষয়টা লিখতে বা তুলে ধরতে চেয়েছি কিম্বা আমি আমার লেখার মধ্যে দিয়ে যা যা বলতে চেয়েছি তা বুঝতে গেলে আগে লেখাটা (ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারীঃ ১ ও ২ ) পুরো পড়ার অনুরোধ রইলো। পরবর্তী পদক্ষেপে মন্তব্য করা যাবে। সৎসঙ্গী বলেই সৎসঙ্গীর কাছে এই দাবীটা করলাম। যদিও লেখাটা দীর্ঘ আর পড়া সময়সাপেক্ষ্য। তবে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের কাছে দীর্ঘ বা হ্রস্ব লেখা কোনও ম্যাটার করে না, তার কাছে ম্যাটার করে মহাসমুদ্রের গভীর বুকে ডুব দিয়ে শুক্তি খোঁজা ও তুলে আনা এবং সেই শুক্তির বুকে মুক্তো খুঁজে বের করা। তাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ এবং যাদের পড়ার অসীম ধৈর্য ও জানার অনুসন্ধিৎসা আছে তাদের কাছে বিশেষভাবে আমার অনুরোধ আমি কোনও পক্ষ অবলম্বন ক'রে লেখাটা লিখিনি; আমি শুধু সত্যানুসন্ধানে অতীত ও বর্তমানে ঘটে চলা ঘটনাগুলির পোষ্টমর্টেম করেছি মাত্র। একজন সৎসঙ্গী হিসাবে পোষ্টমর্টেম ক'রে ঘটনার শরীরের গভীরে যা যা দেখতে পেয়েছি অর্থাৎ শ্রদ্ধা-অশ্রদ্ধা, ঘৃণা-ভালোবাসা, সত্য-মিথ্যা, কপটতা-অকপটতা, নিন্দা-প্রশংসা, কুৎসা-সুখ্যাতি, অপমান-সম্মান, সুখ-দুঃখ, পরিশ্রম-বিলাসিতা, দেওয়া-নেওয়া, নিষ্ঠা-ভন্ডামি, প্রেম-শত্রুতা সবগুলিকে চেষ্টা করেছি লেখায় যত্ন ক'রে তুলে আনতে। এই কাজটা একজন লেখক হিসাবে আমি গবেষণামূলক লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র আমার সাধ্যমত বোধবুদ্ধি দিয়ে আর এই দীর্ঘ লেখার সম্পূর্ণ ক্রেডিট গগনদার, একমাত্র গগনদার; বিন্দুমাত্র আমার ক্রেডিট নেই। গগনদার পোষ্ট "শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী" আমাকে উৎসাহিত ও উত্তেজিত এবং অনুপ্রাণিত করেছে এই লেখা লিখতে। গগনদার কাছে এই বিষয়ে লেখা লিখতে পেরে আমি ঋণী কিন্তু জানি না এই ঋণ শোধ করবো কিভাবে। লেখার বিষয়বস্তু গ্রহণ ও বর্জন পাঠকের ব্যক্তিগত; গ্রহণ করতেও পারেন এবং বর্জন করতে পারেন, সেই স্বাধীনতা সম্পূর্ণ পাঠক সমাজের, সেখানে আমার কোনও হাত নেই, কোনও বক্তব্যও নেই। যার যার দেখা, বিশ্বাস, নির্ভরতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান, নিষ্ঠা ইত্যাদি তার তার নিজস্ব। জয়গুরু।

(লেখা ৭ই অক্টোবর'২০১৭)

প্রবন্ধঃ কার অনুসারিঃ ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারী। (২)

পরবর্তী ও শেষ অংশ।

এরপরে এলো ‘সৎসঙ্গ’ আকাশ জুড়ে আরও বড় দিগন্তব্যাপী কালো ঝড়। ঠাকুরের মহাপ্রয়ানের পর বাঁধভাঙ্গা জলের মত চক্রান্তের বি-শা-ল বি-শা-ল ঢেউ আছড়ে পড়লো ‘সৎসঙ্গ’ আকাশে, বড়দার বুকে।  ব্রহ্মা গঙ্গাকে মর্তে প্রবাহিত হ’তে বললে গঙ্গা রেগে গিয়ে যখন মর্তলোককে ভাসিয়ে দেবে ব’লে ঠিক করলো, ঠিক সেই সময় ভগীরথের আরাধনায় তুষ্ট হ’য়ে শিব শান্ত হ’য়ে গঙ্গাকে তাঁর জটাজালে আবদ্ধ করেন এবং পরম স্নেহে গঙ্গাকে মর্তভুমিতে বইয়ে দিয়ে মর্তলোককে রক্ষা করেন। ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীরা যখন ঠাকুরের অনুপস্থিতির সুযোগে ঠাকুরের প্রাণের ‘সৎসঙ্গ’-কে ভেঙে টুকরো টুকরো ক’রে দেবার নোংরা খেলায় মেতে উঠলো ইষ্টপ্রাণতার দোহাই দিয়ে তখন সৎসঙ্গীদের আরাধনায় ঠাকুরের অন্তর কেঁপে উঠলো আর সেই মুহূর্তে তাঁর কথামত রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত হ’য়ে উঠলেন তিনি শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে। আর বড়দা শিবের মত শান্ত ধীর স্থির হয়ে ষড়যন্ত্রকে তাঁর বলিষ্ঠ হাতে মোকাবিলা ক’রে পরম যত্নে ও ভালোবাসায় ঠাকুরের প্রাণের অধিক প্রিয় ‘সৎসঙ্গ’-কে বিশ্ববাসীর মুক্তির জন্য বিশ্বভুমিতে ভাসিয়ে দিলেন আর তার সুবাস পৌঁছে যেতে লাগলো বিশ্বের ঘরে ঘরে। মূল কেন্দ্র বিরোধী বিরুদ্ধবাদী চক্রান্তকারীদের ঘৃণ্য নানা চক্রান্ত, সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা, অপমান ইত্যাদি এতটুকু বড়দাকে তাঁর লক্ষ্য থেকে টলাতে পারেনি। পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা ও সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা, ইষ্টভৃতির মন্ত্র পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে অকারণ বিতর্ক তৈরি ক’রে ঠাকুরের পরম ভক্ত সেজে বড়দার প্রতিপক্ষ হ’য়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে মরীয়া হ’য়ে উঠলো কতিপয় বৃত্তি প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা ভন্ড, কপট ভক্তের দল। সেই সময়ের প্রথম সারির অন্যতম প্রধান পার্ষদদের নানা চক্রান্তে অস্থির হ’য়ে উঠলো দুই দেশের ঠাকুরের পুণ্যভূমি। ঠাকুর পরিবারের অনুপস্থিতি ও বড়দার মত কঠিন ও কোমল এবং আপোষরফাহীন ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বল উপস্থিতির অভাবে চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের মাটিতে সফল হ’লেও ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরের মাটিতে বড়দার প্রবল ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতিতে ঝাড়ে-মূলে মূল কেন্দ্র থেকে উৎখাত হ’য়ে যায়। যার রেশ এখনও ব’য়ে নিয়ে চলেছে ধান্দাবাজ রক্তবীজের দল।  

আজকের দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে ঠাকুর পরবর্তী ‘সৎসঙ্গ’-এর যে অকল্পনীয় প্রচার ও প্রসার, এর পিছনে মূল কেন্দ্র ও দেশ বিদেশের দিকে দিকে বহু ইষ্টপ্রাণ জীবন উৎসর্গীকৃত সৎসঙ্গীর অবদানের মূল্যায়ন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে ক্রমাগত ছেদহীন কুৎসা, নিন্দা, অপমান, অপবাদ, বেইমানী, নেমকহারামি, অকৃতজ্ঞতা, চরিত্রহনন ইত্যাদি সত্ত্বেও তাঁর নিরলস, ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন, নিখুঁত, নির্ভুল, আপোষরফাহীন নেতৃত্ব প্রমাণ করে ঠাকুর কেন এবার তাঁর প্রধান ভক্তকে সন্তান রূপে নিয়ে এসেছিলেন! কেন ঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে তাঁর কৃষ্টিজাত ও ঔরসজাত সন্তান ক’রে নিয়ে এসেছিলেন! বিরোধীরা মিষ্টি মিষ্টি ক’রে হাসি মুখে ঠাকুর প্রেমী সেজে যখন ইষ্টকথা বলে তখন দিনের আলোর মত ঝলমল ক’রে চোখেমুখে ফুটে ওঠে, ‘শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি”! এবং ঠাকুরের বিশেষ বিশেষ বাণীগুলি যেগুলি নিজের বৃত্তি প্রবৃত্তির সঙ্গে খাপ খায় সেগুলিকে বেছে বেছে হাতিয়ার ক’রে বাণীগুলির অন্তর্নিহিত অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা ক’রে সাধারণ সীমাহীন ভাঙাচোরা ভক্তকুলকে বোকা বানিয়ে যখন সেই অবৈধ কেন্দ্রের প্রধান হ’য়ে  মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসে এবং ইষ্টকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে চুটিয়ে অর্থ ,মান, যশ ইত্যাদি কামায়, কিন্তু শেষের সে দিন যে ভয়ঙ্কর এই সত্যকে তারা মানতে চায় না, উপেক্ষা করে তখন স্পষ্ট বোঝা যায় কেন ঠাকুর এবার বলেছিলেন,”যা দিয়ে গেলাম, আগামী ১০ হাজার বছরের মধ্যে কিছু লাগবে না”। কি দিয়ে গেলেন ঠাকুর যার জন্য আগামী ১০ হাজার বছর কিছু লাগবে না? ঠাকুরের অন্তহীন সাহিত্য ভান্ডার এবং আচার্য পরম্পরা! যার মধ্যে দিয়ে তিনি স্বয়ং তাঁর বাণীর মধ্যে বলা রেতঃ শরীরে লীলা করবেন। ঠাকুরের অন্তকালের অব্যবহিত পরেই “হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দে রে দে রে------গন্ডার মেরে ভান্ডার লুটি মনের আনন্দে রে” ব’লেই ছুপা রুস্তমেরা লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে বেরিয়ে এলো খোলা ময়দানে যাদের উত্তরসূরিরা এখনও “ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন” দেখার মত বালখিল্য স্বপ্ন দেখে ইষ্টপ্রতিষ্ঠার, ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার। আর, তখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার হ’য়ে যায় কেন ঠাকুর এবার বলেছিলেন, 

“ইষ্ট গুরু পুরুষোত্তম,

প্রতীক, গুরু বংশধর 

রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে 

জ্যান্ত তিনি নিরন্তর”।  

এই সমস্ত সাপের খোলস ছাড়ার মত মুখের মুখোশ খুলে যাওয়া পরম শক্ত  ভক্তরা ঠাকুর মানে, কিন্তু ঠাকুর পরিবার ও ঠাকুর পরিবারের বড়মা ও বড়দা, অশোকদাদা, বাবাইদাদা, অবিনবাবু কাউকে মানে না। এইসমস্ত ভক্তদের দেখে প্রমাণ হয় যে কেন ঠাকুর কেষ্টদাকে বলেছিলেন, “কেষ্টদা, মন্দিরের আশেপাশে কুৎসিত লোকের আনাগোনা বেশী, সাবধান থেকো তা থেকে”!

এই বাণী কতটা যে জীবন্ত তা’ আজ প্রমাণিত। প্রমাণিত ঠাকুরের জীবিত কালে, অন্তকাল সময়ে, ঠাকুর পরবর্তী সময়ে এবং আজও বিভিন্ন কেন্দ্র মন্দিরে।      

তাই যখন দেখি আজও সেই ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে কামিয়ে নেওয়া, বাগিয়ে নেওয়ার ট্র্যাডিশান সমানে চলেছে বিজ্ঞাপিত ইষ্টপ্রাণ ভক্তদের মধ্যে তখন ভাবি শ্রীশ্রীবড়দা যদি না থাকতো তাহ’লে এই বিশাল সৎসঙ্গ পরিবারের কি হ’ত! ঠাকুর যদি শ্রীশ্রীবড়দাকে নিজের আত্মজ ক’রে প্রথম সন্তান রূপে না আনতেন তাহ’লে কি হ’ত ভাবলেই পরম শ্রদ্ধায়, নির্ভরতায়, নিশ্চিন্ত মানসিকতায় অজান্তে মাথা নত হ’য়ে আসে তাঁর শ্রীরাঙ্গা চরণে এই ভেবে এই না হ’লে ‘পুরুষোত্তম’! এই না হ’লে জীবন্ত ঈশ্বর! আমাদের মানবজাতির ভাবনা চিন্তার ডায়মেনশান যেখানে শেষ সেখান থেকে তাঁর শুরু মাত্র। তাই তিনি নিজের লাঠি নিজেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কারও ওপর ভর দিয়ে বা নির্ভর ক’রে তিনি চলবেন না ব’লে। এইবারের তাঁর আসা যুগ পরিবর্তনের এক ট্রাঞ্জিশানাল পিরিয়ডে। তাই তিনি আঁটঘাঁট বেধেই এসেছিলেন। তিনি সব জানতেন কে, কখন, কোথা দিয়ে, কোন সময়ে পিছন থেকে ছুরি মারবে আর সেই ছুরি মারাকে কিভাবে, কাকে দিয়ে, কখন, কোন মুহূর্তে প্রতিহত করতে হবে। তিনি নিজে যেমন মানুষের গোল বা লক্ষ্য বা গন্তব্য স্থল ঠিক তেমনি সেই গোলে বা লক্ষ্যে বা গন্তব্য স্থলে পৌঁছনোর তিনিই সেই ব্রিজ হ’য়ে বিরাজ করেন; যে ব্রিজের উপর দিয়ে মানুষকে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে হয়। তিনি যখন মানুষের  রূপ ধ’রে মানুষের মাঝে নেবে আসেন তখন তিনিই তাঁর রুপকে খন্ডিত ক’রে বিশেষ ভাবে পরম শ্রেষ্ঠ ভক্ত রূপে সঙ্গে ক’রে নাবিয়ে নিয়ে আসেন নিখুঁত, নির্ভূল, নির্বিগ্নে, নিষ্কণ্টক ভাবে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য, তাঁর কাজকে, মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য, পূর্ণ রূপ দেবার জন্য। এখানে কারও মাতব্বরি চলবে না সে যেই হ’ক আর যতবড় ব্যক্তিত্বই হ’ক। এমনিভাবেই তিনি নিজের কাজের জন্যই শ্রীশ্রীবড়দাকে নিজের ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক’রে সঙ্গে ক’রে নিয়ে এসেছিলেন এইবার।

তাই, যদি আমাদের ঠাকুরের মনের মত হ’য়ে উঠতে হয়, ঠাকুরের ইচ্ছা পূরণ করতে হয়, ঠাকুরের পথে চলতে হয়, ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণ করতে হয় তাহ’লে ঠাকুরকে ভালবাসতে হবে ঠাকুরকে জীবনে প্রথম ও প্রধান ক’রে, ঠাকুরের কাছে সারেন্ডার করতে হবে নিজেকে। আর ঠাকুরকে ভালোবাসবো কিভাবে, ঠাকুরের কাছে সারেন্ডার করবো নিজেকে কিভাবে, ঠাকুরের মিশনকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো, কিভাবেই বা ঠাকুরের স্বপ্ন কে পূরণ করার পথে শত সহস্র বাধার পাহারকে ডিঙ্গিয়ে, লজ্জা-ঘৃণা-ভয়কে উপেক্ষা ক’রে, নিন্দা-কুৎসা-অপমান-অপবাদকে আমল না দিয়ে, দুঃখ-কষ্ট-জ্বালা-যন্ত্রণাকে নীরবে নিভৃতে স’য়ে নিয়ে ইষ্টের স্বার্থকে রক্ষা করা ও তাকে প্রতিষ্ঠা করার পথে জীবনকে উৎসর্গ করবো তা’ শিখে নিতে হবে এই সমস্ত কিছুকে যিনি পেরিয়ে এসেছেন নিজের জীবনকে ঠাকুরের জীবনবৃদ্ধির যজ্ঞে উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে তাঁর কাছে, তাঁকে অনুসরণ করার মধ্যে দিয়ে। তিনি হ’লেন ঠাকুরের আত্মজ, পরম আদরের বড়খোকা ও আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় চোখের মণি শ্রীশ্রীবড়দা। শ্রীশ্রীবড়দাকে যে ভালোবাসে না সে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভালবাসতে পারে না, পারে নি। কারণ ইতিহাস তার সাক্ষী। শ্রীশ্রীরামচন্দ্র দীর্ঘ বনবাস শেষে যখন অযোধ্যায় ফিরে এসেছেন তখন তিনি রাজ্যবাসীর সঙ্গে তাঁর সঙ্গে যারা এতদিন দুঃখ-কষ্টের সাথী ছিলেন তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। সবাইকে একে একে পরিচয় করানোর সঙ্গে সঙ্গে যখন শ্রীশ্রীরামচন্দ্র হনূমানের সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন হনূমানের দিকে তাকিয়ে রামচন্দ্র আর কিছু বলতে পারলেন না। শুধু তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি হনূমানকে জড়িয়ে ধ’রে অঝোর ধারায় শুধু কাঁদতে লাগলেন। তাঁর পর সবার উদ্দেশ্যে অশ্রুসজল কন্ঠে হনূমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, যে হনূমানকে ভালোবাসে না বা ভালোবাসবে না সে আমাকেও ভালোবাসে না। প্রভু রামচন্দ্র গভীর অন্তর্নিহিত অর্থ সমৃদ্ধ বক্তব্যের সারবস্তুর যা বোঝাবার একটা ছোট্ট কথায় বুঝিয়ে দিলেন। বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীবড়দাকে বুঝতে হ’লে, শ্রীশ্রীবড়দার প্রতি ঠাকুরের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হ’লে, ঠাকুরের হৃদয়ের কোন জায়গায় বড়দার স্থান তা’ বুঝতে হ’লে ঠাকুরের সঙ্গে বড়দার প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের সম্পর্কের ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে, কিসে ঠাকুরের হয় আনন্দ, কিসে আসে ঠাকুরের তৃপ্তি, কিসে ঠাকুরের জাগে ছন্দ, কিসে পায়  ঠাকুর স্বস্তি, এই পুরো ব্যাপারটা; আর এই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন একমাত্র এ যুগের পরম ভক্ত হনূমানরূপী শ্রীশ্রীবড়দা। তাই প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দকে বাদ দিয়ে যেমন ঠাকুর রামকৃষ্ণকে ভাবা যায় না, যায় না মহাবীর হনুমানকে বাদ দিয়ে পুরুষোত্তম শ্রীরামকে এবং অর্জুন ছাড়া শ্রীকৃষ্ণ যেমন অসম্পূর্ণ ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীবড়দা ছাড়া ঠাকুরের পাশে আর কাউকে মানায় না। পরম ভক্ত মহাত্মা যিনি তিনি পরমাত্মায় লীন হ’য়ে যায় অবশেষে। ভক্ত ভগবানে মার্জ ক’রে দিয়ে ভগবানে বিলীন হ’য়ে যায়।

তাই এই দীর্ঘ লেখার শেষে একটা কথায় বলতে পারি, গগনদা যে কথা বলতে চেয়েছেন সেই কথার অর্থ স্বরূপ এটাই বলা যায় শ্রীশ্রীবড়দাকে অনুসরণ না করলে ঠাকুরের স্বার্থ রক্ষা ও স্বার্থপ্রতিষ্ঠার পথে যে হাজার বাধা, পথের বাঁকে বাঁকে শয়তান কিলবিসের মারাত্মক ছোবল, বৃত্তি প্রবৃত্তির রকমারি হাতছানি ইত্যাদিকে চিনতেই পারবো না, জানতে বা বুঝতেই পারবো না এবং তাকে মোকাবিলা করার কৌশল শিখতে পারবো না। ঠাকুর প্রতিষ্ঠার পথে, কেন্দ্র ও মন্দিরগুলিতে ঠাকুরকে জীবন্ত ক’রে রাখতে সংঘ আচার্য শ্রীশ্রীবড়দার আশীর্বাদ ও অভিজ্ঞতা ছাড়া এক পাও এগোতে পারবো না, সফল হ’তে পারবো না। যারা শ্রীশ্রীবড়দার জীবনকে অনুসরণ ক’রে ঠাকুর প্রতিষ্ঠা  ও ঠাকুরের স্বার্থপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে চলে তারা সত্যি সত্যিই আসল সৎসঙ্গী।                                   

শেষ।

(লেখা ৭ই অক্টোবর' ২০১৭)

প্রবন্ধঃ কার অনুসারিঃ ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারী ( ১ )

গগনদার পোষ্টটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা বিতর্ক দানা বাঁধায় স্বাভাবিকভাবেই নজরটা গিয়ে পড়লো পোষ্টটাতে। দেখলাম এবং বুঝলাম বিতর্কের বিষয় একটা শব্দ চয়নকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। শব্দটা ‘অনুসারী’। বিষয়ঃ “শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী”। অনুসারী শব্দের মানে যদি করি তাহ’লে যেটা পায় তাহ’লো অনুসরণকারী, অনুযায়ী। তাহ’লে এখানে বিতর্কটা কোন জায়গায় ও কি নিয়ে? বিতর্কঃ আমরা ঠাকুর অনুসারী না বড়দা অনুসারী?  যদি বলা হয় আমরা ঠাকুর অনুসারী। তাহ’লে ভুল বা ঠিকটা কোথায়? ভুলের প্রশ্নতো এখানে আসেই না, অর্থহীন। আমরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্য, অনুগামী ও ভক্ত। ঠাকুরকেই আমরা কায়মনোবাক্যে অনুসরণ ক’রে চলি। অর্থাৎ দেহে, মনে ও কথায় অর্থাৎ সর্বোতভাবে ঠাকুরকেই শয়নে, স্বপনে ও জাগরণে মেনে চলার অর্থই হ’লো তাঁর অনুসারী হওয়া। এই অর্থে ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য মাত্রই অনুকূলচন্দ্রের অনুসারী তা’ সে ঠাকুর সৃষ্ট মূল কেন্দ্র ‘সৎসঙ্গ দেওঘর’-এর সঙ্গে যুক্ত শিষ্যবর্গ হ’ক বা অন্যান্য ব্যক্তি দ্বারা সৃষ্ট ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিষ্যবর্গই হ’ক। আর এখানে বলে রাখা ভালো বৈধ শিষ্য বা অবৈধ শিষ্য এই বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা আলোচনার বিষয়। এখানে এই আলোচনার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন প্রসঙ্গবহির্ভূত। এই বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে দীক্ষিত-অদীক্ষিত আম জনতার কাছে, তামাম দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে এককথায় ব্যাপক অর্থে সমস্ত শিষ্য মাত্রই ‘ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অনুসারী ও সৎসঙ্গী কারণ বহির্বিশ্ব সৎসঙ্গের আভ্যন্তরীণ বিষয় সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন। 

কিন্তু গগনদা যেটা বলতে চেয়েছেন সেই বক্তব্য বিষয়কে যদি বর্তমান জটিল সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটু গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা করা যায় তাহ’লে কি দেখা যাবে?    

গগনদা বলেছেন, শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী। প্রথম কথা হচ্ছে ‘বড়দা অনুসারী’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে? ‘বড়দা অনুসারী’ মানে বড়দা অনুসরণকারী। প্রশ্ন হচ্ছে, বড়দাকে অনুসরণ করবো কেন? আমার ইষ্ট বা মঙ্গল বা আদর্শ কে? ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যদি আমার ইষ্ট বা মঙ্গল বা জীবন্ত আদর্শ হয় তাহ’লে বড়দাকে অনুসরণ করার কথা আসে কোথা থেকে? আমার গোল বা লক্ষ্য কে? ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র না-কি বড়দা? ঠাকুর যদি আমার গোল হয় তাহ’লে ঠাকুরকে অনুসরণ ক’রে চলাই আমার জীবনের এক ও একমাত্র কর্ম। আমরা তো বড়দাকে অনুসরণ করার জন্য ঠাকুরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিনি, সৎসঙ্গের পতাকার তলায় আসিনি। এসেছি কি? তাহ’লে গগনদার এই কথার অর্থ কি? 

উপরিউক্ত কথাকে যদি মেনে নিই তাহ’লে গগনদার পোষ্টের বিরোধিতা ক’রে সুকৃতি সুন্দরদার বলা “আমরা সবাই ঠাকুর অনুসারী কেউই বড়দা অনুসারী ন’ই” কথাটা ঠিক। তাহ’লে গগনদার কথাটা কি ভুল বা বেঠিক? আসুন, দেখা যাক গগনদার বিশ্বাস “শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী” কথাটার যদি পোষ্টমর্টেম করা যায় তাহ’লে কি পাওয়া যায়। গগনদার বক্তব্যকে যদি তত্ত্ব ও তথ্য সহযোগে সংশ্লেষণী ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে সমুদ্রমন্থনের মত মন্থন করা যায় তাহ’লে সমুদ্রমন্থনে অমৃতের ভান্ড উঠে আসার মত ঠাকুরের ১৯৪৬ সালে দেশত্যাগের পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলী ও ১৯৬৯ সালে দেহত্যাগের পরবর্তী সময়ে সৎসঙ্গ কেন্দ্রের উপর ও শ্রীশ্রীবড়দার উপর ঘটে যাওয়া দুঃখ ও অপমানজনক ঘটনাবলি মন্থনে গগনদার বক্তব্যের গভীরে অন্তঃসলিলার মত শ্রীশ্রীবড়দার জীবনের যে চলনামৃত বয়ে যাচ্ছে সেই অমৃতের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে যা’ কিনা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে যে সত্যিই কি শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারী হওয়া উচিত কি উচিত নয়।  

১৯৪৭ সালের দেশভাগের যে পটভূমি ব্রিটিশের চক্রান্তের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল ভারতের মাটিতে তার আঁচ দেশভাগের অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ঠাকুর আর তার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় দেশভাগকে রুখতে। অনেক আগে থেকেই তিনি তাঁর অতীন্দ্রিয় শক্তির বলে দেশভাগের চক্রান্ত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ভয়ংকর আঁচ পেয়েছিলেন এবং সেইমত তিনি চেষ্টা করেছিলেন দেশভাগ রুখতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ফর্মুলাও তিনি দিয়েছিলেন তৎকালীন দেশবরেণ্য নেতৃবর্গকে কিন্তু কে কার কথা শোনে। সবাই সবার ধান্দায় মত্ত তখন। দেশভাগের চক্রান্তের ডামাডোলের মধ্যে তীব্র মানসিক চাপে দিন দিন ঠাকুরের শরীর খারাপ হ’তে থাকে; ফলস্বরুপ হাওয়া বদলের জন্য তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন আশ্রমের বিশিষ্ট জনেরা।        

এই সময় থেকেই অর্থাৎ দেশভাগের চক্রান্ত  ও ঠাকুরের মানসিক যন্ত্রণা কিছু কপট ধান্দাবাজ সৎসঙ্গীকে উৎসাহিত ক’রে তোলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়। তারা বুঝতে পারে ঠাকুর শরীর খারাপের কারণে হাওয়া বদলের জন্য সপরিবারে দেশত্যাগ করলে এই শুনশান ঠাকুর পরিবারহীন বাংলার মাটিতে এই সুযোগে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে ঠাকুরের নামে বেকুব আম সৎসঙ্গীকে বোকা বানিয়ে ইষ্টের সুড়সুড়ি দিয়ে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসা যাবে। আর শুরুও হ’য়ে যায় সেই ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’ পরিকল্পনা। সব ভক্তরুপী শকুনরা অপেক্ষা করতে থাকে চেটেপুটে খাওয়ার কখন সেই মোক্ষম দিনটা আসবে। এইজন্য একদিকে শুরু হ’য়ে যায় তলে তলে নানারকম ষড়যন্ত্র। ঘুঁটি সাজানো শুরু হ’য়ে যায় পরিকল্পিতভাবে। আর অন্যদিকে হাওয়া বদলের কারণে দেওঘরের বুকে স্থানান্তরিত সৎসঙ্গের পরবর্তী কার্যধারা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে থাকে ঠাকুরের নির্দেশে বড়দার প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে। তখনই দূরদৃষ্টির অধিকারী ধান্দাবাজ সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীবড়দার প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের সময়কালে বুঝতে পেরে যায় ভয়ংকর কঠিন এক বাধার সম্মুখীন হ’তে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের। আর সে ভয়ঙ্কর বাধার পাহাড় হ’য়ে সামনে দাঁড়াবে ঠাকুরের আত্মজ ও আদরের প্রথম ও জেষ্ঠ্য সন্তান এ যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা। তাই ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল ‘মৃদুনি কুসুমাদপি, বজ্রাদপি কঠোরানি’ অর্থাৎ একদিকে ফুলের মত নরম, সুন্দর অন্যদিকে বজ্রের চেয়েও কঠিন এ হেন চরিত্রের অধিকারী শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠাকারীরা সুবিধা করতে পারবে না জেনেই পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের শুরু হ’য়ে গেল ধীরে ধীরে সুকৌশলে শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধী অভিযান। এই অভিযান শুধু বাংলাদেশের বুকেই সীমাবদ্ধ ছিল না খোদ দেওঘরের বুকেও ধীরে ধীরে ডালপালা বিস্তার লাভ করছিল এবং ছড়িয়ে পড়ছিল এ পার বাংলা তথা দেশ বিদেশের কতিপয় জায়গায়। 

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল দেওঘরের বুকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে হ’য়ে চলেছিল নতুন ক’রে আশ্রম  গড়ে তোলার রাজসূয় যজ্ঞ। সঙ্গে চলছিল ঠাকুরের হাজার হাজার বাণীর ঠাকুরের জীবদ্দশায় বই আকারে প্রকাশের অমানুষিক কাজ। ছিল ক্রমবর্ধমান ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আসার চাপ। চলছিল দেশ বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আশ্রমে ঠাকুর দর্শনে আসা-যাওয়া। আরও কত কত কাজ হ’য়ে চলেছিল দেওঘর আশ্রমের বুকে। ঠাকুরের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশে বড়দার তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে হ’য়ে চলেছিল একে একে ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণ!!!! ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৯ এই ২৩ বছর ঠাকুরের কুকুর হ’য়ে ঠাকুরের পায়ে পায়ে লেগে থেকে সৎসঙ্গ জগতের সকলের চোখের মণি ঘোর কলি যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা মগ্ন হ’য়ে ছিলেন বাধার পাহাড়কে বলিষ্ট দু’হাতে সরিয়ে দিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে অটল, অটুট, অচ্যুত, অস্খলিত থাকার ভীষ্মের মত ভীষণ প্রতিজ্ঞা বুকে নিয়ে ঠাকুরের ইচ্ছা, ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এক কঠিন ব্রত, অবদমিত সংকল্প নিয়ে অটুট, অচ্যুত ও অস্খলিত মনোভাবে!     

এমনিভাবে যখন এগিয়ে চলেছিল সৎসঙ্গের আন্দোলন ‘নূতন বৃন্দাবন’ দেওঘরের বুকে নানা বাধা-বিপত্তি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদ-আপদ ইত্যাদি অজস্র প্রতিকূল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করতে করতে সেই সময় একদিন ঠাকুর বেঁচে থাকাকালীন ঠাকুরের সামনে দিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম ক’রে একদল কপট ধান্দাবাজ অসৎ ভক্ত ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে ‘বন্দে পুরুষোত্তমম’ ধ্বনি দিয়ে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে বেরিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছিল ইষ্টের জীবিত অবস্থায় ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার নামে আত্মস্বার্থরক্ষা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠার মিশন কি চতুরতায় চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় অর্থনীতিতে কালো টাকা ও সাদা টাকার সমান্তরালভাবে অন্তর্ভুক্তির মত! আর এটা সম্ভব হয় কখন? যখন ঠাকুরের বাকী অনুগামীরা ঠাকুর সম্পর্কে থাকে উদাসীন, অজ্ঞ, বেকুব, ভীতু ও দুর্বল এবং হয় অবিশ্বাসী, ফাঁকিবাজ, কপট, ক্যালাস, অতিবোদ্ধা ও অতিচালাক। সেই সময়টা চলছিল বড়দা বিরোধিতার চরম যুগ। ঠাকুরের কাছে চলেছিল ভন্ড, কপট কেষ্ট দাসের মত অর্থ, মান, যশের বদ্ধ পাগল, ভন্ড, কপট ভক্তদের শ্রীশ্রীবড়দার নামে নানা মিথ্যে অভিযোগ। ঠাকুরের মুখ চেয়ে ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে নিবেদিত প্রাণ হ’য়ে অসীম ধৈর্য ও সহ্য শক্তি বুকে নিয়ে সমস্ত কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছিলেন শেষ জীবনে ঠাকুরকে স্বস্তি, শান্তি দেওয়ার একমুখী বাসনায় ঠাকুরের আদরের বড়খোকা, আমাদের সৎসঙ্গ জগতের অতি প্রিয়, চোখের মণি এ যুগের অর্জুন শ্রীশ্রীবড়দা। দ্বাপর যুগে যেমন শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত অর্জুন লক্ষ্যে স্থির থেকে অটল অটুটভাবে প্রতিপক্ষকে ছারখার ক’রে দিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের আদেশকে মাথায় নিয়ে ঠিক তেমনি এ যুগে শ্রীশ্রীবড়দা রূপে অর্জুন পুনরায় আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠাকারীদের ষড়যন্ত্রের নিবিড় জালকে ছিন্নভিন্ন ক’রে ঠাকুরের ‘আশ্রয় দাও প্রশ্রয় দিও না’ আদেশকে মাথায় নিয়ে ঠাকুরের মিশনের পতাকাকে উর্ধে তুলে ধ’রে সারা বিশ্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। দেহ ত্যাগের আগে ঠাকুর দেখে গেছিলেন, জেনে গেছিলেন, বুঝে গেছিলেন যে এই বিশাল সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসাবে তীব্র প্রতিকূল পরিস্থিতির দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা শয়তানী ঝড়, তুফানকে উপেক্ষা ক’রে অনায়াস ভঙ্গীতে অবহেলায় অবলীলায় ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষা বিরোধী শত্রু  শক্তির মোকাবিলা ক’রে একটা স্তম্ভের মত নিজের শক্তিতে অটল হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তাঁর বড় আদরের বড়খোকা, ‘সৎসঙ্গ’ জগতের সবার অতি প্রিয় শ্রীশ্রীবড়দা। ঠাকুর সেদিন শ্রীশ্রীবড়দার পাহাড়ের মত টানটান হ’য়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা চখা আঁখি আর অবয়ব দেখে এবং বজ্রের মত কঠিন ও কুসুমের মত কোমল হৃদয় ও মন দেখে শান্তিতে চিরনিদ্রায় চলে গেছিলেন এই ভেবে যে তাঁর অনেক দুঃখ, অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রণা, নিন্দা, অপবাদ, অপমান, বদনাম, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা পারিপার্শ্বিক সহ বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার বড় সাধের বিশ্বজুড়ে এক ও একমাত্র পীঠস্থান বিশাল ‘সৎসঙ্গ’-কে রক্ষা করা ও আরো থেকে আরোতর ক’রে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উপযুক্ত বিশাল বলিষ্ঠ শক্তিশালী কাঁধ তিনি রেখে যাচ্ছেন দেওঘরের পুণ্যভূমিতে; রেখে যাচ্ছেন তাঁর মিশনকে সামনে রেখে, তাঁর রেখে যাওয়া আগামী মানব সভ্যতা গঠনের নীল নকশাকে মাথায় নিয়ে আগামী পৃথিবী রচনার সূচনার কারিগরকে। ঠাকুর একবার তাঁর প্রধান পার্ষদদের সকলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আচ্ছা এই যে আমি হাজার হাজার না-কি বাণী দিয়েছি, এই সব কার জন্য?” তখন সেই সময়ের প্রধান পার্ষদ তথা ভক্তমন্ডলীবর্গ বলেছিলেন, “এই সমস্ত দেশবাসীর জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য, মানবজাতির জন্য।“ ঠাকুর কিন্তু এই উত্তরে খুশী হননি। তখন তিনি পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে দেখে ডেকে বলেছিলেন, “হ্যাঁরে বড়খোকা, এরা কি কয়?” বড়দা বললেন, “কি বাবা?” ঠাকুর বললেন, এই যে আমি এত হাজার হাজার না-কি বাণী দিয়েছি এই সমস্ত কার জন্য?” তখন বড়দা হাতজোড় ক’রে হাঁটুগেড়ে বসে বলেছিলেন, “এই সমস্ত বাণী আমার জীবনের জন্য।“ এই কথায় ঠাকুর সেদিন শিশুর মত উল্লসিত হ’য়ে সবাইকে বলে উঠেছিলেন, “দেখেন, দেখেন বড়খোকা কি কয়?, বড় খোকা কি কয়?” সেদিন ঠাকুর তাঁর আদরের বড়খোকা তথা সৎসঙ্গীদের শ্রীশ্রীবড়দার কথায় খুব খুশী হয়েছিলেন। আনন্দাশ্রু বেরিয়ে এসেছিল তাঁর সেদিন দু’চোখ দিয়ে। আমাদের সংসারেও এমন হয়;  যখন আমাদের সন্তানেরাও আমাদের মনের কথা বুঝে নিয়েই বলতে পারে আমরা কি চাইছি। আর সেই আনন্দ যে পেয়েছে সেই একমাত্র বুঝতে পারবে ঠাকুরের আনন্দের পারদের মাত্রা। কিন্তু সচরাচর আমাদের সংসারে তা’ হয় না। আর তাই ঠাকুর আর ঠাকুরের বড় আদরের বড়খোকার সম্পর্কের রসায়ন বোঝে সে সাধ্য কার? তিনি নিজে না বোঝালে, বোঝে কোন জন? আর বুঝতে গেলেও চাই সেই আধার, চাই পরমাত্মামুখী শুদ্ধ জীবাত্মা। কথায় আছে, ‘বোঝে, প্রাণ বোঝে যার।‘ সেই প্রাণ কই? যে প্রাণ শুনতে পায় ঠাকুরের ইচ্ছা পূরণের জন্য বড়দার অন্তরের নিরন্তর কান্না? যারা ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’ স্বপ্নে বিভোর হ’য়ে ঠাকুরের ‘দেশত্যাগ এবং দেহত্যাগ’-এর সঙ্গে সঙ্গেই লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরেছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হ’য়ে অর্থ, মান, যশের অধিকারী হবে ব’লে তারা শুনতে পাবে ঠাকুরের ‘অনুকূল রাজ্য’ গঠনের কান্না? তারা শুনতে পাবে বড়দার ঠাকুরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার অন্তর উৎসারিত কান্না? তারা শুনতে পায় মহাশ্মশানের ওপার থেকে ভেসে আসা শয়তান কিল্ভিসের মৃত্যুর মহাসঙ্গীত।

যাই হ’ক, এই হলেন আমাদের শ্রীশ্রীবড়দা। ঠাকুরের সমস্ত বলাগুলি, বাণীগুলি বড়দার জীবনের জন্য। শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যেই মূর্ত হ’য়ে উঠেছে সমস্ত বাণী। সত্যানুসরণের জীবন্ত রূপ বা চলমান সত্যানুসরণ হলেন আমাদের সকলের চোখের মণি শ্রীশ্রীবড়দা। তাই বড়দার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে ‘সত্যানুসরণ’-এর বিশ্লেষণ যা’ আর কারও পক্ষে সম্ভব হ’য়ে ওঠেনি। তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে, বিশাল পান্ডিত্যের অধিকারী হ’য়ে, বই পড়ে বই হ’য়ে যে ‘সত্যানুসরণ’-এর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করা যায় না তা’ টের পেয়েছেন ঠাকুরের দীক্ষিত-অদীক্ষিত বহু পন্ডিতবর্গ। 

ঠাকুরের বাণী, ঠাকুরের ‘সত্যানুসরণ’ বুঝতে হ’লে ঠাকুরের প্রতি Surrendered   (আত্মসমর্পিত) হ’তে হয়। অর্থাৎ ঠাকুরের কথা অনুযায়ী “Surrender (আত্মসমর্পণ) করলাম মানে আমি তাঁকে নিলাম। কেন নিলাম তাঁকে? Only to love and serve him অর্থাৎ কেবলমাত্র তাঁকে ভালোবাসা এবং সেবার জন্য তাঁকে নিলাম।“ ঠাকুর বললেন, Surrender কথাটার মধ্যে আছে ‘Sur’ যার মানে হ’ল ‘above’ অর্থাৎ উপরে আর  ‘render’ কথার মানে হ’ল ‘to give’ অর্থাৎ দেওয়া। ঠাকুর বললেন, ইষ্টের উপরে নিজেকে ন্যস্ত করতে হয়, নিবেদন করতে হয় অর্থাৎ সর্বোতভাবে  ইষ্টের হ’তে হয়। 

এইরকমভাবে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় শ্রীশ্রীবড়দা নিজেকে ঠাকুরের উপরে ন্যস্ত করেছিলেন, নিজেকে নিবেদন করেছিলেন অর্থাৎ সৎসঙ্গ জগতে শ্রীশ্রীবড়দা সর্বোতভাবে ঠাকুরের হ’য়ে উঠেছিলেন। শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরকে কেবলমাত্র ভালোবাসা ও সেবার জন্য জীবনে গ্রহণ করেছিলেন। আর তাই শ্রীশ্রীবড়দার চোখমুখ দিয়ে, সর্বাঙ্গ দিয়ে ছিটকে বেরোতো ঠাকুরের প্রতি একান্ত অনুরাগ। শ্রীশ্রীবড়দার জগন্নাথের মত চখা আঁখির দিকে মুখ তুলে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারতো না কেউ। 

এইরকম জীবন্ত চলমান ‘সত্যানুসরণ’ শ্রীশ্রীবড়দা আমাদের চোখের সামনে ছিলেন বলেই সমস্ত রকম শয়তানী কর্মকান্ডকে নিরাশি নির্মম ভাবে পায়ে দ’লে এগিয়ে চলা পৃথিবী জুড়ে ব্যাপ্ত বিশাল বিখ্যাত ‘সৎসঙ্গ’ প্রতিষ্ঠানকে আমরা আজ অনুভব করতে পারছি, উপলব্ধি করতে পারছি কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দার মূল্যায়ন করতে পারছি না। কেন? এই কেন উত্তরই লুকিয়ে আছে গগনদার “শ্রীশ্রীবড়দার অনুসারীরা আসল সৎসঙ্গী” কথাটার মধ্যে।

ক্রমশঃ।

(লেখা ৭ই অক্টোবর' ২০১৭)