Powered By Blogger

Wednesday, August 31, 2022

কবিতাঃ স্বর্গ বরণ!

জীবন খুঁজে পেয়েছো নাকি বন্ধু!?
চলছো ঠাটেবাটে হাঁকডাক দিয়ে এঁকেবেঁকে!
কোথায় চলেছো বন্ধু!? দেশকে করতে উদ্ধার?
নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত!?
সময় পাও না পিছন ফিরে তাকাবার?
কিসের পানে চলেছো ছুটে, কিসের টানে হ'য়ে মুটে?
মুটের জীবন কি খুবই সুখের? মোট ব'য়ে বেড়াও ঘুরে?
জীবনকে দিচ্ছ বেজায় ফাঁকি, রাখছো না কিছু আর বাকি!
রিপুর হাড়মজ্জা খাচ্ছো চুষে জীবন থালায় ঠুকে ঠুকে
জোয়ান বুড়ো তামাম ছুঁড়ো আর জীবন যাচ্ছে বেঁকে ঝুঁকে!
একেই কি বলে জীবন!? সকাল সন্ধ্যে দুপুর বিকেল
হাতে নিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির রাইফেল লম্প দিয়ে ঝম্প মেরে
ছোটাও গুলি, মুখে মারিতং জগৎ বুলি! 
দেশ ও মানুষের কি হ'লো উদ্ধার!?
আয়নায় নিজেকে দেখো আর শোনো 
বিবেকের বাণী সারাৎসার!
বিশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী তুমি! বৃত্তি দ্বারা চালিত!
রিপুর টানে দিশেহারা তুমি 
দেশকে দেখাও দিশা, হ'য়ে রিপু তাড়িত!?
জীবন জুড়ে তোমার ভুলভুলাইয়ার ভুলের জালে 
ঝুল, ঝুল ভুলের কালো ঝুল!
জীবন তোমার ক্ষতবিক্ষত তবুও 
ঝুল ঝেড়ে শুধরে নিচ্ছো না ভুল।
তাই বন্ধু তোমায় বলছি শোনো! 
জীবন নিয়ে ক'রো না হেলাফেলা।
দু'দিনের জন্য জীবন তোমার 
জীবন নিয়ে ক'রো না বন্ধু খেলা।
চলার পথে হাত ধ'রে কেউ 
বলবে না তোমায় কোথায় তোমার ভুল
ভুলের রাজা স্বয়ং তোমায় শেখাবে বাঁচা-বাড়ার রুল!?
আবার বলি বন্ধু তোমায়, 
যদি জীবন পেতে চাও-----
জীবননাথকে স্মরণ করো, 
বন্ধু জীবননাথকে করো গ্রহণ
জীবন খুঁজে পাবে সেথায়, 
আমি নিশ্চিত বলছি তোমায়
জীবননাথকে মাথায় নিয়ে 
জীবন ও সংসার মাঝে স্বর্গকে ক'রে নাও বরণ।

-----------প্রবি। ( লেখা ৩১আগষ্ট'২০১৯)

প্রবন্ধঃ নিউটনের গতিসূত্র -৩ ও আমরা সৎসঙ্গীরা।

নিউটনের তৃতীয় সূত্র সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।

তৃতীয় সুত্রঃ প্রত্যেক ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে ।

ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া কি ?

"ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া বলতে এখানে প্রয়োগ কৃত দুইটি বলের কথা বলা হয়েছে। বল দুইটি অবশ্যই সমান কিন্তু বিপরীতমুখী । যতক্ষণ ক্রিয়া বল থাকবে ততক্ষণ প্রতিক্রিয়া বল থাকবে । ক্রিয়া বল থেমে গেলে প্রতিক্রিয়া বল ও থেমে যাবে । যেখানেই বল প্রয়োগ করা হবে সেখানেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার প্রয়োগ অসংখ্য । রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় এখানে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া । নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পাড়ে নামা,  মাটির ওপর দাড়িয়ে থাকা ইত্যাদি আরো অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে বিদ্যমান। 

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ

রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করি ক্রিয়া বল। আবার মাটি পা কে বল প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া বল। ফলে এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

ভূমির উপর দাঁড়িয়ে থাকার সময় শরীরের সমস্ত ওজন মাটিতে ক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। অপর দিকে মাটি শরীরকে প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে । ফলে আমরা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকি।"

এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেন আমি নিউটনের সূত্র নিয়ে এলাম?

প্রায় সময়ে দেখছি আমাদের কিছু সৎসঙ্গী গুরুভাই বেছে বেছে ঠাকুরের বাণী পোস্ট করছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। তাদের মানসিকতা ঠাকুরকে কতটা আঘাত করছে তা তারা ধর্তব্যের মধ্যে আনে না। তারা একটা অদ্ভুত মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পায় এই পরস্পরকে ঠাকুরের বাণী প্রয়োগ করার মধ্যে দিয়ে আক্রমণ করতে! ধরিয়ে দিলেও, বুঝিয়ে দিলেও, ব'লে ও মনে করিয়ে দিলেও তারা সেইসবের ধার ধারে না। ঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে নিচ্ছে একে অপরকে আক্রমণ চালাবার জন্য! এমনভাবে তারা বাণীগুলো পোস্ট করছে এমনকি হোয়াটস আপ করছে নিজেদের পরিচিত সরল সাদাসিধে গুরুভাইবোনদের মধ্যে ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ঘৃণার বাতাবরণ তৈরীর ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে তখন মনে হয় ঠাকুরের বলা, "ছাড়ো রে মন কপট চাতুরী........" গানের কথা! চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাই ব্যাথায় নীল হ'য়ে যাওয়া ঠাকুরের করুণ মুখখানি! তাঁর আদরের সোনার সৎসঙ্গীদের তাঁর বাণী নিয়ে এমন আচরণ তাঁকে আশংকিত ক'রে তোলে তাদের ভবিষ্যৎ  জীবনের জন্য! বারবার ঠাকুরের সাবধান বাণী স্মরণ করিয়ে দিলেও তাদের মনোজগতে কোনও দাগ কাটে না, তোলে না মৃদু সামান্যতম ঢেউ! তাহলে তারা কি জন্মভ্রষ্ট!?!?

ঠাকুরের বাণী কার বা কাদের জন্য?

ঠাকুর একবার প্রথিতযশা সৎসঙ্গীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আমি যে এত কথা কই, এত বাণী দিয়েছি এই সমস্ত কার জন্য?"

তার উত্তরে তাঁর পার্ষদ, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভক্তমণ্ডলী বলেছিলেন, "এই সমস্ত বাণী মানুষের জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য, জগতের জন্য, মানবজাতির জন্য!"

তা শুনে শ্রীশ্রীঠাকুরের মন আনন্দে উৎফুল্ল হ'য়ে ওঠেনি। বরং তিনি তখন শ্রীশ্রীবড়দাকে ডেকে বলেছিলেন, "হ্যাঁ রে বড়খোকা এরা কি কয়?

শ্রীশ্রীবড়দা তখন বলেছিলেন, কি বাবা?

ঠাকুর তখন বড়দাকে বলেছিলেন, হ্যাঁ রে আমি নাকি, এরা কয়, হাজার হাজার ছড়া, বাণী দিয়েছি? তা এই ছড়া, বাণী ইত্যাদি এগুলো কার জন্যে?

শ্রীশ্রীবড়দা তখন হাঁটু গেড়ে হাত জোড় ক'রে ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে বলেছিলেন, বাবা! এই সব বাণী, এই সব ছড়া, এইসব যা যা কিছু আপনি বলেছেন সব আমার জন্যে! 

এই কথা শুনে ঠাকুর আনন্দে উৎফুল্ল হ'য়ে ব'লে উঠেছিলেন, "ওই দ্যাখেন, শোনেন, শোনেন, বড়খোকা কি কয়!? এই সব বাণী ওর জন্য!

প্রায় সময়ে ঠাকুর বলতেন, বড়খোকা একমাত্র আমার মনের কথা কইতে পারে, বুঝতে পারে! আমি ওর মধ্যে আমারে দেখতে পাই!

তাই, আমরা যখন কথায় কথায় ঠাকুরের বাণী অন্যের উদ্দেশ্যে অন্যকে আঘাত দিতে ব্যবহার করি তখন সেই আঘাত ঠাকুরের বুককে বিদীর্ণ ক'রে আবার আমার কাছেই ফিরে আসে বুমেরাং হ'য়ে আমার জীবনকে বিদীর্ণ করবে ব'লে! আর তখন ঠাকুরের দু'চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ব্যথার অশ্রুধারা! বেরিয়ে আসে এইজন্য যে আমার জীবন, আমার বাঁচা-বাড়া বিদীর্ণ হ'লো ব'লে, ক্ষতবিক্ষত হ'লো ব'লে!

ঠাকুরের হাজার হাজার ছড়া, বাণী, কথোপকথন ইত্যাদি সব যদি আমার না হ'লো, আমার জীবনকে বৃদ্ধির পথে চালিত না করলো, আমার চরিত্রকে গঠন না করলো, পারিপার্শ্বিকের কাছে উদাহরণ হ'য়ে না দাঁড়ালো তাহ'লে কিসের আমার তাঁকে গ্রহণ!? কিসের আমার তাঁকে আমার জীবনের জীবন দেবতা ব'লে ঢাক পেটানো!? কিসের জন্য তাঁকে নিয়ে, তাঁর জন্মদিন নিয়ে এত লোকদেখানো ভক্তি ভালোবাসার উদ্গীরণ!? শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মদিন পালন কি আর বারো মাসের তের পার্বণের মত আর একটা পার্বন পালন!? মূর্তিপূজার মত আর একটা ফটোপুজার প্রচলন!?

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে আমরা যারা অন্যকে আক্রমণ করার জন্য বুকের মধ্যে, মনের অভ্যন্তরে নোংরা ঘৃণ্য অভিসন্ধি লুকিয়ে রাখি; লুকিয়ে রেখে সবার মাঝে তাকে অপদস্ত করি, করার চেষ্টা করি, নিজেকে পরিচ্ছন্ন, নির্দোষ, ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গী হিসেবে তুলে ধরার কায়দাকানুন দেখায় তারা যেন ভুলে না যায় বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকারের সেই বাক্সের মধ্যে একজন মানুষকে ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে চারপাশ থেকে তরবারি দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় ক'রে দেওয়ার পরও মানুষটির নিশ্চিন্তে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসার ম্যাজিকটার কথা! আমরা যেন ভুলে না যায়, এই বিশ্ববিখ্যাত মানুষটা জাদুকর পি সি সরকার ঠাকুরের কাছে এসে তাঁর চরণপ্রান্তে বসতেন, ঠাকুরের সঙ্গ করতেন, কত গল্প করতেন! মনোবিজ্ঞানের গভীর থেকে গভীরতম আলোচনায় নিভৃতে নিমগ্ন হ'তেন দু'জনে! আমাদের চক্রফটো তৈরি করেছিলেন এই বিখ্যাত মানুষটি ঠাকুরের পরামর্শে ঠাকুরের নির্দেশে আমাদের মতন সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষদের নামধ্যান করার সুবিধার জন্য! তা সেই বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর যে ঠাকুরের কাছে আসতেন, ঠাকুরের সঙ্গে জাদুর নানা রহস্যময় জগত নিয়ে আলোচনা করতেন, তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন মানুষকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বিশ্বকে জয় করার জন্য তা কতজন ভারতীয় জানেন, জানেন কতজন বাঙালি!? সেই বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকার (সিনিয়র)-এর পরবর্তী প্রজন্মই জানেন না তো অন্য কে জানবে!!!!!!!! এমনই প্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন ঠাকুর! ঠাকুর জাদুকর পি সি সরকারকে ভুতের রাজা ব'লে ডাকতেন!

ঠাকুরের সেই অতি প্রিয় ভুতের রাজার সেই বাক্সের ম্যাজিক যদি আনন্দ, বিস্ময়ের এমন চরম অদ্ভুত রহস্যময় হয় তাহ'লে ঠাকুরের ম্যাজিক তাঁর হাজার হাজার ছড়া, বাণীর একটা দুটো বাণী নিয়ে যারা আমরা অন্যকে আক্রমণ করি তারা যেন মনে রাখি সেই বাণীর প্রতিউত্তরে আরও হাজার বাণী আছে যা ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়ার মত প্রয়োগ করা যেতে পারে! ঠাকুরের সেই ছড়া, বাণীর ম্যাজিক কত গভীর কত রহস্যময় তা আমাদের মতন অধম মানুষের পক্ষে বোধগম্য নয়। যতই ঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে অন্যকে আক্রমণ ক'রে আনন্দ পাই না কেন শেষমেশ জয়ের মালা পড়ে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে আসবে সেই আক্রান্ত গুরুভাইবোন বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকারের বিখ্যাত ম্যাজিক তরবারির আক্রমণের পর আক্রমণে অক্ষত মানুষের মতন!

তাই আসুন, স্মরণ করি শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম আত্মজ ঠাকুরের পরমপ্রিয় বড়খোকা সৎসঙ্গ জগতের চোখের মণি সবার বড়ভাই এ যুগের পরমভক্ত হনুমান শ্রীশ্রীবড়দার ঠাকুরকে বলা, "বাবা! এই সব বাণী, এই সব ছড়া, এইসব যা যা কিছু আপনি বলেছেন সব আমার জন্যে!" আমরা যেন কোনও বাণী পোস্ট করার সময় ঐ বাণীর বক্তব্য বিষয়ের মধ্যে নিজের চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষ্য করি আর নিজেকে সংশোধনের মাধ্যমে ঠাকুরের মনের মত ক'রে গড়ে তুলি! নয়তো আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার কথামত ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আমারও 'শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর'!!!!!---------প্রবি। 

(লেখা ৩১শে আগষ্ট '২০২০)।