আজও স্বপ্নে যা ফিরে ফিরে আসে।
প্রচন্ড গরমে একেবারে ঘেমে নেয়ে গিয়ে ঘুম থেকে ধড়ফড় ক'রে উঠে বসলাম বিছানায়। দ্রুত শ্বাস পড়তে লাগলো। প্রায় দমবন্ধ অবস্থায় বুকে হাত চাপা দিয়ে বসে রইলাম খাটের ওপর। সামনে কেউ নেই। বুকের বাঁ দিকটা ব্যাথা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ চুপ ক'রে বসে থেকে মনে মনে দ্রুতগতিতে ইষ্ট নাম জপতে লাগলাম। এই বুঝি প্রাণ বেরিয়ে যায়। বুকে কষ্ট হচ্ছিলো যদিও কিন্তু মনের কোণে একটা গভীর বিশ্বাস ছিল যে মাথার ওপর দয়াল ঠাকুর আছে আমার। এই কষ্টের মধ্যে ভিতরে ভিতরে কে যেন গেয়ে উঠলো, 'দয়াল আছে আর আমি আছি, ভাবনা কি আর আছে আমার।'
একটু ধাতস্থ হ'তেই বিছানা থেকে নেবে ঠাকুরঘরে এসে ঠাকুরের সামনে বসলাম। নির্নিমেষ চেয়ে রইলাম দয়ালের মুখের দিকে। স্পষ্ট দেখলাম সারা মুখে মিষ্টি এক অপূর্ব হাসি ছড়িয়ে দয়াল আমার দিকে চেয়ে হাসছে আর বলছে, 'ডর কিস বাত কি? ম্যায় হু না!' তারপরেই মনে হ'লো দয়াল বলছে, "ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক মনেতে রাখিস জোর, মাথায় আছেন দয়াল ঠাকুর, ভাবনা কিবা তোর।"
সত্যিই তো ভাবনা কিসের আমার। যার জীবনে আছে দয়াল, কি করতে পারে তাকে ভয়াল। ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঝাপসা হ'য়ে গেল দু'চোখ, আপনা আপনি বন্ধ হ'য়ে এলো চোখ আর চোখ গড়িয়ে নেবে এলো জলের ধারা। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটা। কেন যে এত স্বপ্ন দেখি!?
এখনও তেমন গরম পড়েনি। মার্চ মাসের প্রথম দিক। ফুল স্পীডে ফ্যান চললে ঠান্ডা লাগে, গায়ে হালকা একটা চাদর দিতে হয়। কখন যে রাতের অন্ধকার কেটে দিনের আলো ফুটে উঠে সকাল গড়িয়ে বিকেল হ'য়ে এলো টেরই পেলাম না। সারাদিন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো রাতে ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটা। এখন বিকেল চারটে বাজে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় বসে নিজের ঘরে একটা লেখালেখির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ছুটির দিন, ঘর ভর্তি লোক। ছেলে, বৌমা, মেয়ে, জামাই, ভাইপো, ভাগ্নে সবাই আছে। আমি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ ক'রে লেখালেখির কাজে ডুবে আছি। একাকী ঘরে কখন যে কান্না ভেজা গলায় বেরিয়ে এলো, 'দয়াল সেদিন যদি তুমি আমায় না বাঁচাতে তাহ'লে কি যে ভয়াবহ পরিণতি হ'তো আমার জীবনে তা আমি জানি না। কিন্তু কল্পনার চোখ দিয়ে তার ভয়াবহতা ভাবলেই বা স্বপ্নে ভেসে উঠলেই আজও আমি প্রায় মৃত্যুর কোলে ভেসে পড়ি। তুমি আছো তাই আমি আজও বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, বারবার মিষ্টি হাসি হেসে আমায় তোমার কোলে তুলে নাও বলেই আমি হৃদযন্ত্র বিকল না হ'য়ে সবল হৃদয়ে বেঁচে আছি আজও দয়াল!'
কিন্তু বারবার মনে প্রশ্ন জাগে ঘটনাটা কেন মনে পড়ে যায় বারেবারে দয়াল!? কোনও উত্তর ডিভাইন ডিক্টেশান হ'য়ে ভেসে আসে না শয়নে-স্বপনে-জাগরণে। শুধু কে যেন বলে ওঠে মন মাঝারে, 'ঘটনাটা মনে পড়ে এইজন্য, আজও অযাচিত তাঁর দয়ার কথা বলনিনে তো কাউকে!?' হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম! কে যেন প্রচন্ড জোরে সত্তা ধ'রে টান দিল। 'তাই তো! এই অভূতপূর্ব দয়ার কথা তো বলা হয়নি কাউকে! এতবড় দয়ার ঘটনা বারবার ভেসে আসা সত্ত্বেও কেন বলা হ'লো না কাউকে!?' বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হ'য়ে আসে আমার কন্ঠ। এটাকে কি সাড়া পাওয়া বলে!? ঠাকুরের কাছে জোর হাতে প্রণাম ক'রে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
তাই আজ এত বছর পরে প্রায় ৪০/৪৫ বছর আগের এক সন্ধ্যাবেলার ঘটনা এখানে তুলে ধরছি। তুলে ধরছি স্বপ্ন আমায় ফিরিয়ে দিল দয়ালের যে দয়ার কথা তাই-ই এইখানে এই ঠাকুর কাহিনীতে।
তখন আমার বয়স ২৫/২৬ বছর হবে। প্রতিদিনের মতো বিকেলবেলায় শরীর চর্চা ক'রে স্নান সেরে ঠাকুরের প্রার্থনার শেষে ভরপেট টিফিন খেয়ে ফিটফাট হ'য়ে সাজুগুজু ক'রে সন্ধ্যেবেলায় বেড়িয়েছি আড্ডা মারতে। তখন যেখানে আড্ডা মারতাম সেই জায়গাটা ছিল একটা তিন রাস্তার মোড়। ঠিক মোড়ের এক কোণায় ছিল একটা বিরাট বটগাছ। আর বটগাছের পাশে ছিল পাশাপাশি শিবের আর শনির মন্দির। সেই বটগাছের নীচে বেদী বাঁধানো জায়গায় আমরা বন্ধুরা আড্ডা মারতাম দল মিলে সকাল সন্ধ্যে। পাশে ছিল রিক্সা স্ট্যান্ড। সেই রিক্সাস্ট্যান্ডের রিক্সাচালক ভাইদের আর বন্ধুদের নিয়ে বসার জায়গাটা বাঁধিয়েছিলাম আমরা সবাই মিলে। আর গাছের নীচে পাশের ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় একটা ছোট্ট ঘর তৈরি করা হয়েছিল যাতে বৃষ্টির সময় সেই ঘরে আশ্রয় নিতে পারি। আর সেইখানেই বটগাছের পিছনে যাদের বাড়ি (এখন বিরাট ফ্ল্যাট হ'য়ে গেছে সেই বাড়ি) সেই বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়ালের একেবারে কোণায় আমাদেরই বন্ধুদের একজন একটা গুমটি ঘর বসিয়েছিল। সেখানে নানারমকম চানাচুর, বাদাম, লজেন্স, বিস্কুট, সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি জিনিসে ভরা থাকতো গুমটি ঘরটি। ধীরে ধীরে বেশ জমে উঠেছিল দোকানটা। আর মোড়ের মাথায় রাস্তার আর একপাশে দু'দিকে দু'টো ছিল চায়ের দোকান। চায়ের দোকানে, গুমটি ঘরে, রিক্সাস্ট্যান্ডে, মন্দিরে মোড়ের মাথায় সবসময় সকাল বিকাল সন্ধ্যে রাত ভিড় লেগেই থাকতো। আর, সেখানেই ছিল আমাদের উঠতি বয়সের প্রায় দশ বারোজনের একটা আড্ডার দল। অন্যান্য আরও আমাদের ছোটো ও বড়ো গ্রুপের আড্ডা বসতো সেই চায়ের দোকানে।
আজ আর সেখানে সেই পুরোনো দিনের প্রাণমন মাতানো আড্ডা নেই, নেই সেই সরল হৃদয়ের কোলাহল কিন্তু নোতুন সাজে সেই পুরোনো মন্দির আছে, আছে বটগাছ, আছে অটোরিক্সার দাপটে প্রায় উঠে যাওয়া একটা দু'টো রিক্সা স্মৃতিকে আঁকড়ে ধ'রে। আর আছে পাশে একটা চায়ের দোকান নোতুন সাজে ফাস্ট ফুডের দোকান হ'য়ে। আজ যখন এই বয়সে ঐ মোড়ের মাথার পাশ দিয়ে যাই তখন ভেসে ওঠে পুরোনো দিনের অনেক ছবি। বন্ধুবান্ধবদের মুখগুলি ভেসে ওঠে একের পর এক। বন্ধুদের মধ্যে কারও সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ নেই। অহেতুক ইগোর লড়াইয়ে সব আজ বিচ্ছিন্ন; যে যার মত একেলা একেলা কাটায় সময়, শুধু দিনগত পাপক্ষয়।
আমার বন্ধুদের অনেকেই এখন নেই। বন্ধু শুদ্ধ মারা গেল ট্রেন এক্সিডেন্টে, সকলেই বলে সুইসাইড করেছে নাকি সে। এক ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে ছিল ছোট্ট সংসার। রিটায়ার করার অনেক বছর পর নাকি সাংসারিক ঝামেলায় সুইসাইডের পথ বেছে নিয়েছিল। সত্যি মিথ্যে আমার জানা নেই। বন্ধু পীযুষ মারা গেল কিডনি সমস্যায়। বিপ্লব ডিউটি থেকে ফেরার পথে সাইকেল থেকে পড়ে গেছিল রাস্তায়। চোট লেগেছিল কনুইয়ে। সেই চোট ধীরে ধীরে কয়েক বছর পর তাকে নার্ভের সমস্যায় একেবারে শয্যাশায়ী ক'রে দিয়েছিল। তারপর হঠাৎ একদিন না ফেরার দেশে চলে গেল চিরদিনের জন্য। সমীর ব্যবসায় প্রচন্ড মার খেয়ে তাদের বাড়ি বিক্রি ক'রে দিয়ে কোথায় যে চলে গেল হঠাৎ জানতেই পারলাম না। অনেকবছর পর ওরই এক ছোটোবেলার বন্ধুর সাথে রাস্তায় দেখা হওয়ায় জানতে পেরেছিলাম এখন ও নাকি গুজরাতে থাকে। এমনিভাবেই আর এক বন্ধু হীরু তার পুরোনো বাড়ি ফ্ল্যাট হ'য়ে যাওয়ায় সেখানে একটা ফ্ল্যাটে থাকে মেয়ে আর বৌকে নিয়ে। অনেকবার বলেছিল ওর ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্যে। আমার আর যাওয়া হ'য়ে ওঠেনি ব্যক্তিগত ও চাকুরীগত নানা অবাঞ্ছিত অসুবিধার কারণে। আমার একেবারে ছোটোবেলার বন্ধু অমল চাকুরী সূত্রে চলে গেছিল উত্তরপ্রদেশে মির্জাপুরে হিন্ডালকো (হিন্দুস্থান অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিতে পারচেজ ডিপার্ট্মেন্টে) কারখানায় চাকরী নিয়ে। দেখতে খুব সুন্দর ছিল। দারুণ ক্রিকেটার ছিল। স্টাইলিস্ট লেফট হ্যান্ড ব্যাটসম্যান ও স্পিন বোলার ছিল। আমরা একসঙ্গেই ক্রিকেট খেলতাম। দু'জনে ছিলাম একেবারে বিপরীত চরিত্রের। ও ছিল শান্ত প্রকৃতির আর আমি ছিলাম দূরন্ত। তাই ও ছিল স্পিন বোলার আর আমি ছিলার পেস বোলার। ও ছিল টেকনিক্যালি সিরিয়াস ব্যাটসম্যান আমি ছিলাম মারকাটারি, ধর তক্তা মার পেরেক মানসিকতার। রেনুকুটে সেখানে ও চাকরী পেয়েছিল এই খেলার সুবাদেই। আমাকে ও অনেকবার ডেকেছিল কিন্তু আমার যাওয়া হ'য়ে ওঠেনি নানা কারণে। এখানে এলে আমরা সারাদিন কাটাতাম একসঙ্গে। তারপর চাকরী রিটায়ারের পর চলে এসেছিল কলকাতায়। এখানে ভদ্রকালীতে যে বাড়ি ছিল সেই বাড়ি ফ্ল্যাট হ'য়ে যাওয়ায় সে দমদম অঞ্চলে ফ্ল্যাট কিনে চলে যায়। তারপর আবার হঠাৎ ফিরে যায় সেই পুরোনো মির্জাপুর রেনুকুটে। সম্ভবত সেখানে বৌয়ের চাকরীর ব্যাপারেই তাকে ফিরে যেতে হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনও যোগাযোগ ক'রে উঠতে পারিনি আজ পর্যন্ত। আজও মনে পড়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার ঘটনাটা।
সে অনেকদিন আগের ছোটবেলার কথা। তখন কত বয়স ঠিক মনে নেই। তবে সম্ভবত ১০-১২ বছর বয়স হবে। আমরা বিকেলে আমাদের বাড়ির সামনের খেলার মাঠে খেলছিলাম। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়ের ভিড়ে আমরাও ছিলাম। তখন বিকেলবেলা বাচ্চা বুড়োর ভিড়ে গমগম করতো খেলার মাঠ। তখনও কেউ কাউকে চিনি না। মাঠে খেলতে খেলতে একটা লাট্টু পেয়েছিলাম। একই সঙ্গে দু'জনের চোখ পড়েছিল লাট্টুটার দিকে। সেই নিয়ে শুরু হয়েছিল কাড়াকাড়ি। কে নেবে লাট্টূটা। কাড়াকাড়িতে ও আমাকে লাট্টুটা দিয়ে দিল। তারপর আর কিছু না ব'লে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনটা আমার খারাপ হ'য়ে গিয়েছিল। এখনও স্পষ্ট মনে আছে আজ থেকে ৬০বছর আগের ঘটনা। আমি দৌড়ে গেলাম ওর দিকে। পেছন থেকে ওর হাত ধ'রে ওকে ডাকলাম। ও ঘুরে দাঁড়ালো। আমি ওর হাতে লাট্টূটা দিয়ে বললাম, এইটা তুমি নাও। এইটা তোমার লাট্টূ। ও মিষ্টি হেসে আমাকে বললো, না, না ওটা তুমি রাখো। ও অপূর্ব সুন্দর ছিল। আর ঐ সুন্দর মুখে মিষ্টি হাসিটা যেন আমাকে জয় ক'রে নিল এক মুহূর্তে। আমি ওকে জড়িয়ে ধ'রে বললাম, আজ থেকে আমরা দু'জনে বন্ধু। তুমি লাট্টূটা নিলে আমি খুব আনন্দ পাবো। ও তখন বললো, তাহ'লে এটা আমাদের দু'জনের লাট্টূ। সেই থেকে রোজ বিকেলে ও মাঠে এলে লাট্টূটা নিয়ে আসতো। আর এমনিভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল আমাদের বন্ধুতে। যা আজও ৬০বছর ধ'রে অটুট। কিন্তু সেই বন্ধুর সঙ্গে আজ দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। কথাগুলো মনে পড়লে বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। বিষন্নতায় ভরে যায় মন। ভয় লাগে প্রাণপাখি বুঝি যায় বেরিয়ে।
আরও অনেকেই ছিল বন্ধু। তাদের মধ্যে আনি ছিল সুপুরুষ স্ট্রং। কিন্তু হঠাৎ অজানা এক জ্বরে চলে গেল ওপারে। জ্বর এমন বাড়তে লাগলো যে হাসপাতালে বরফ চাপা দিয়েও সে জ্বর কন্ট্রোলে আনা যায়নি। প্রচন্ড প্রাণবন্ত তাপস মৃত্যুর কিছুদিন আগে ভ্যাগাবন্ডের মতো ঘুরে বেড়াতো। কোথায় কোথায় যে চলে যেত হঠাৎ হঠাৎ বাড়ির কাউকে কিছু না ব'লে তা জানা যেত না, পরে হঠাৎ একদিন এসে হাজির হ'তো। সেও চলে গেল হঠাৎ ক'রে কাউকে কিছু না জানিয়ে একেবারে চিরদিনের জন্য আর হঠাৎ ক'রে ফিরে আসবে না বলে। খুব ভালো গানের গলা ছিল ওর। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দেখেছিলাম শ্রীরামপুরে রেললাইনের ওপর একা একা বসে আছে শীতের দুপুরে। একদিন শ্রীরামপুরে লেবার কমিশনারের অফিসে গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে। স্টেশনে ট্রেন থেকে নেবে লাইন পার হওয়ার সময় তাপসকে রেললাইনের ওপর ওরকম একা বসে থাকতে দেখে অবাক হ'য়ে গিয়েছিলাম! সেদিন কোনও কথা বলার সুযোগ বা সময় ছিল না হাতে। কিন্তু তারপর হঠাৎ একদিন শুনেছিলাম তার আর না থাকার কথা। এই লেখা লেখা পর্যন্ত কমল আর শ্যামলের খবর কিছুই জানি না। কমল সবসময় দুখী দুখী মুখ ক'রে থাকতো। দেখা হ'লে 'কেমন আছিস' জিজ্ঞেস করলেই করুণ মুখে বলতো, 'ভালো নেই রে'। আর তারপরেই একটা ভালো না থাকার কাহিনী বলতো। আমিও বাধ্য শ্রোতার মতো শুনে যেতাম ওর ভালো না থাকার গল্প। একদিন কমলকে বলেছিলাম, চল ঘুরে আসি। নিয়ে গেছিলাম দূর্গাপুর জ্যাঠাতুতো দিদির বাড়ি। ঘর থেকে বেরোতে চাইতো না, ঘরকুনো ছিল। যেতে যেতে তাৎক্ষণিক দু'একটা লাইন লিখে ওকে গানের সুরে তাতিয়ে রাখার জন্য বলেছিলাম, 'মোরা দু'জনাতে যাই। কোনখানে? ঐ বনে। কিসের টানে? কে জানে। বনে কি আছে? ব'নে? বনে বাঘ আছে, ভাল্লুক আছে, আছে ভাম বিড়াল! তোর আর আমার মতো।' ব'লেই হেসে উঠতাম। হো হো ক'রে হেসে উঠতো কমলও। জানি না তারা আদৌ আছে কি নেই এই নশ্বর পৃথিবীতে। মনে পড়ে গেল আর এক বন্ধু রূপকের কথা। সেও অমলের মতো রেনুকুট হিন্ডালকো কারখানায় কাজ করতো টাইম কিপার হিসেবে। অমলকে ঐ নিয়ে গিয়েছিল রেনুকুটে। শুনেছি রূপক জীবনে নাকি প্রচুর টাকা কামিয়েছিল। রিটায়ারের পরও কোথায় নাকি কাজ করেছে। আবার কিসব টেলিফিল্মেও নাকি টাকা ইনভেষ্ট করেছিল। তারপর হঠাৎ কঠিন অসুখে রোগে ভুগে চলে যায় একদিন।
খুব কাছের বন্ধুরা ক্যারিয়ার তৈরীর সময়ে অহং প্রাবল্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দীর্ঘদিন কাটিয়ে একে একে চলে যায় এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আর আজও যারা আছে তাদের সম্পর্কে কিছুই জানি না আজ আর। একটা চিনচিনে ব্যাথা বুকের মাঝে কামড় বসিয়ে যায় মাঝে মাঝেই।
যাই হ'ক এখন আসি সেই স্বপ্নে ভেসে ওঠা আজ থেকে ৪০/৪৫ বছর আগে ঘটা ঘটনার কথায়।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও সন্ধ্যেবেলায় বেড়িয়েছি আড্ডা মারবো ব'লে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি সেই মোড়ের মাথায় যেখানে আমরা বন্ধুরা আড্ডা মারি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎ কারও ডাকে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা ম্যাটাডোরের ভিতর থেকে কে যেন ডাকছে। দাঁড়িয়ে দেখলাম ড্রাইভারের সিটে বসে আছে গোপাল। আমার ছোটোবেলার আর এক বন্ধু। আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। ওরাও পাঁচ ভাই আর আমরাও পাঁচ ভাই ছিলাম। খুব যাতায়াত ছিল উভয়ের বাড়িতে উভয়েরই ছোটোবেলায়। আমাদের দুইবাড়ির মাঝে একটা ছোট প্লট ফাঁকা ছিল। আমরা ছোটোবেলায় সেখানে সবাই মিলে ক্রিকেট খেলতাম, ফিস্ট করতাম। তারপর একদিন ফাঁকা জমিতে বাড়ি উঠে গেল। খুব সুন্দর বাড়ি হ'লো। লোক এলো। বাড়ির ছেলে একদিন ডাক্তার হ'লো। গোপালরাও চলে গেল নিজেদের বাড়ি ক'রে। সেখানেও বাড়ির মালিক এসে গেল। হাইকোর্টের এডভোকেট। এখন সব অতীত। হাইকোর্টের এডভোকেট মারা গেল। ফাঁকা জমিতে তৈরি হওয়া বাড়ির মালিক মারা গেল। চারপাশ ভরে গেল নিস্তব্ধতায়। গোপাল্রাও বাড়ি ক'রে চলে গেছিল অন্য জায়গায়। তবে পথেঘাটে দেখা হ'তো।
যাই হ'ক সেই ম্যাটাডোর গাড়িতে বসে থাকা গোপালের ডাকে সেই গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। বসলাম ওড় পাশের সিটে। ও সারাদিনের শেষে বাড়িতে ফিরছিল। যাবার পথে আমায় আসতে দেখে গাড়ি থামিয়ে আমায় ডেকে নিল। গোপাল জানে আমি কোথায় আড্ডা মারি। আর ও যাবেও ঐ রাস্তা দিয়ে বাড়িতে। এইখান থেকেই শুরু হল নিয়তি। ঠাকুরের কাছে জেনেছিলাম নিয়তি মানে নিয়ে যায়। হঠাৎ গ্রামের অন্ধকার ফাঁকা রাস্তায় কবরখানার পাশ দিয়ে বিশাল তেঁতুল গাছের নীচ দিয়ে যাবার সময় যেমন দুষ্ট আত্মা ভর করে ঠিক তেমনি সন্ধ্যায় ঐ ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির মধ্যে থেকে নেবে এসে নিয়তি যেন আমার ঘাড়ে এসে বসলো। তারপর আমাকে নিয়ে চললো তার পূর্বনির্ধারিত ডেরায়। আমি গাড়িতে উঠেই গোপালকে বললাম, তুই সর আমি চালাবো। গোপাল হাসতে হাসতে বললো, 'ধুর তুই কি চালাবি? তুই চালাতে পারিস নাকি? তুই পাশে বস, আমি তোকে মোড়ের মাথায় নাবিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যাবো।' আমি নাছোড়বান্দার মতো তাকে জোড়াজুড়ি করতে লাগলাম গাড়ি চালাবো ব'লে। তখন বুঝিনি নিয়তি তার খেলা শুরু ক'রে দিয়েছে আমার শরীরে-মনে। সেইসময় হিন্দমোটরের অ্যাম্বাসাডার গাড়ি কনভয় ড্রাইভাররা নিয়ে যেত বাই রোড অন্যান্য রাজ্যে। সেখানে অনেক জানাশোনা ও বন্ধুবান্ধবও গাড়ি চালাতো। সেই সূত্রে কখনও সখনও গাড়ি একটু আধটু চালাতাম। সেই কনফিডেন্সেই স্টিয়ারিং হাতে নিলাম। তখন ভর সন্ধ্যে। রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে লোক চলাচল করছে। গোপাল সরে এসে পাশের সিটে আমার গা ঘেঁষে বসলো আর পা রাখলো ব্রেকে। আমি বললাম ব্রেক থেকে পা সরা। ও বললো, তুই চালা আমি ব্রেকে পা দিয়ে আছি। আমি হেসে বললাম, আমার ওপর ভরসা নেই? যাই হ'ক আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম। গাড়ি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠলো। ধীরে ধীরে ক্লাচ ছেড়ে এক্সেলেটার দাবাতেই গাড়ি এগিয়ে চললো ধীরে ধীরে সামনের দিকে। তারপর কখন যে গাড়িটা স্বাভাবিক গতি ছাড়িয়ে জোরে ছুটে চললো বুঝতেই পারলাম না। রাস্তায় লোকজনের ভিড়। সেই ভিড় কাটিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে দ্রুতগতিতে। গাড়ির গতি দেখে লোকজন সরে যাচ্ছে রাস্তা ধারে। আর পিছন থেকে ভেসে আসছে মাঝে মাঝেই চিৎকার, গালাগালি। গোপাল ব'লে উঠলো, বাপী, গাড়ি আস্তে চালা, স্পীড কমা। আমায় তখন কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে! পাটা ভারি হ'য়ে গেছে। এক্সেলেটর থেকে পা উঠছে না। গাড়ি এগিয়ে চলেছে বিদ্যুৎ গতিতে। আর কিছু দূর গেলেই সেই মোড়, যেখানে আমি আড্ডা মারি। দেখতে দেখতে এসে গেছে মোড়। গাড়ি সোজা রাস্তা ছেড়ে বাঁক নেবে বাদিকে। মোরের মাথায় মানুষে জটলা। ঠিক মোড়ের মাথায় ঢোকার মুখে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। গাড়ি প্রায় ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে। এক্সেলেটার থেকে কে যেন পা সরিয়ে দিল। ব্রেক চাপতে গিয়ে ব্রেক পেলাম না। কারণ ব্রেকের ওপর পা রেখেছিল গোপাল। সেও ঘটনার ভয়াবহতায় পাথর হ'য়ে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিল ব্রেক চাপার কথা। আমি স্টিয়ারিং ঘোরালাম। প্রচন্ড গতিতে গাড়ি টার্ন নিল বাঁদিকে। মোড়ের মাথায় জমা হওয়া মানুষ গাড়ির গতি দেখে ছিটকে যেতে লাগলো। গাটড়ি পুরোপুরি বাঁক নিতে পারলো না। ছুটে চললো বটগাছের কোণায় যেখানে গুমটি দোকান আছে সেদিকে। আমি অসহায়ের মতো দেখলাম দোকানের সামনে ক্রেতার ভিড় আর গুমটি দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে আছে রবিন। বন্ধুর দোকান ও চালাতো। সেইদিকে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলেছে ম্যাটাডোর। আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম আমার গাড়ি সোজা গিয়ে ধাক্কা মারছে সেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ও দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা গুমটিতে। আমি ভয়ে আঁতকে শিউড়ে উঠলাম নিশ্চিত ভয়াবহ পরিণতি দেখে। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য আমি দ-য়া-ল ব'লে চেঁচিয়ে উঠলাম আর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাটাডোর গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারলো গুমটিতে। গাড়ি স্থির হ'য়ে দাঁড়িয়ে গেল। প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় নেশাগ্রস্থের মতো গাড়ির দরজা খুলে নেবে এলাম ভয়ঙ্কর বীভৎস এক দৃশ্য দেখবো ব'লে। গাড়ি থেকে নেবে দেখলাম দোকানের সমস্ত কাঁচের জার মাটিতে ভাঙাচোড়া অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, লজেন্স, চানাচুর, ঝুড়িভাজা, মুড়ি, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি যা যা দোকানে ছিল সব রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার অসবের কোনদিকে নজর নেই। শুধু ভাবছি গাড়িটার সামনের দৃশ্যটার কথা। গাড়ীটা গুমটিকে চেপ্টে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনার চোখে দেখছি দোকানের সামনে দাঁড়ানো ছোটোবড় ক্রেতা আর দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা রবিনের কথা। গাড়িটা গুমটিটাকে একেবারে দেওয়ালে ঠেসে চেপ্টে দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম সামনে ও দোকানে কেউ নেই। পাশ দিয়ে হঠাৎ কার ডাকে চমকে উঠলাম। দেখলাম পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রবিন। হাসিমুখে বলছে জোর বেঁচে গেছি বাপীদা। কারও কিছু হয়নি। আমি আকাশের চেয়ে অস্ফুটে ব'লে উঠলাম, দয়াল!!!!! চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো জলের ধারা। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিলাম। জটলা হওয়ার আগেই কপট গাম্ভির্যে গম্ভীর গলায় গোপালকে বললাম, গোপাল তুই গাড়িতে ওঠ, গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যা। আমি বাকীটা সামলে নেব। গোপাল প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিল। কি জানি পাব্লিকের মতিগতি কোনদিকে ঘুরে যায়। তাই সে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ব্যাক ক'রে সামনে রাস্তা দিয়ে চলে গেল। আর জটলা ক'রে থাকা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ওখানে যত রিক্সাচালক ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে নিমেষে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা বোতল, টিন, কাগজের ঠোঙা, খাবার সমস্ত কিছু সরিয়ে ফেলে রাস্তা পরিস্কার ক'রে ফেলা হ'লো। বোঝায় গেল না কয়েক মিনিট আগে ভয়ঙ্কর এক দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হ'য়ে গেল। তারপর রবীনকে বুকে জড়িয়ে ধ'রে বললাম কোনও চিন্তা না করতে। রবিন বললো, আমি বেঁচে গেছি এইটাই আমার ভগবানের দয়া। গাড়িটা যখন টার্ন নিচ্ছে তখন দেখলাম গাড়িটা দোকান লক্ষ্য ক'রেই প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছে। তাই দেখে আর কিছু না ভেবেই চিৎকার ক'রে সবাইকে সরে যেতে বলে রাস্তার পাশে ঝাঁপ দিলাম। আর তখনি প্রচন্ড গতিতে এসে ধাক্কা মারলো দোকানটাতে। আমি লজ্জায় চুপ ক'রে মনে মনে ঠাকুরকে ডাকতে লাগলাম। আজ এই যৌবনে প্রমাণ পেলাম দয়ালকে যে ধ'রে রাখে তাকে কেউ মারতে পারে না। রবীন দোকানে হাত দিয়ে হেসে বললো, গুমটিটা নড়বড়ে ছিল বাপীদা, গাড়ির ধাক্কায় একেবারে সেট হ'য়ে গেছে। গুমটির কাছে গিয়ে দেখলাম সত্যিই প্রবল ধাক্কায় গুমটিটা একেবারে দেওয়ালের সঙ্গে মজবুত হ'য়ে সেঁটে গেছে। দয়ালের দয়ায় সব মধুরেণ সমাপয়েৎ হ'লেও রবীনের মনটা খারাপ দেখে বুঝলাম ওর অনেক লস হ'য়ে গেছে। কিন্তু মুখ ফুটে সে আমাকে কিছু বললো না। আমি বললাম, রবীন আমি আছি, তুমি চিন্তা ক'রো না। পরেরদিন আমি রবীনকে ১০০০হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলাম দোকানটাকে নোতুনভাবে সাজাতে।
তারপরে বেশ কিছুদিন আমাকে ঐ ঘটনা আচ্ছন্ন ক'রে রেখেছিল। ঘুমের মধ্যে তেড়ে আসতো শয়তান ম্যাটাডোর। ঘটনার স্বাভাবিক বীভৎস পরিণতি যা হওয়ার কথা ছিল তা ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠতো। ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠতো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতার ক্ষতবিক্ষত দেহ আর পা ঝুলিয়ে বসা রবীনের মর্মান্তিক দৃশ্য! নীচের অংশটুকু একেবারে থেঁতলে পেষ্ট হ'য়ে গেছে গুমটির কাঠের দেওয়ালে। দু' পায়ের পাতা দুটো পড়ে রইছে নীচে। আর কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশটা গুমটির দেওয়ালে বিস্কুট চানাচুড়ের শেলফের সাথে সেঁটে রইছে। যেন ঘুমিয়ে আছে রবীন। ঘুমোতে পারতাম না। ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসতাম ভয়ে ভয়ঙ্কর এক অপরাধ বোধ আর পুলিশ, জেল হাজতের কথা ভেবে। পুলিশ কাকে অ্যারেষ্ট করতো!? আমাকে নাকি গোপালকে!? নাকি দু'জনকেই!?
সেদিন থেকে আজও এই প্রায় ৫০বছর ঐ ঘটনা মনে পড়ে আর খালি মনে হয় হে দয়াল! সেদিন যদি তুমি না থাকতে আজ আমার কি করুণ দশা হ'তো? তখনি মনে পড়ে দয়াল তোমার কথা। তুমি বলেছিলে, "আমি তোদের প্রতিমুহূর্তে কত ছোট বড় ঘটনা থেকে যে রক্ষা ক'রে চলেছি তার সীমা পরিসীমা নেই।' আর মনে পড়ে তোমার প্রিয় শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের একটি সংলাপ। যা তুমি প্রায়ই বলতে; সেটি হ'লো,
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"
( লেখা ২৫শে মার্চ'২০২৩)