Powered By Blogger

Sunday, April 30, 2023

প্রবন্ধঃ আমার সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য।

ফেসবুকে একটা লেখা পড়লাম। লেখাটা পড়ে মনটা ভারাক্রান্ত হ'য়ে গেল। আহত মনে ভেসে উঠলো কয়েকটা কথা। তাই লিখলাম এখানে। এখানে লেখার আরও একটা কারণ আছে। যখনই অপ্রিয় সত্য তুলে ধরি, নিজেদের ত্রুটিকে তুলে ধরি কারও লেখায় কমেন্টের মধ্যে দিয়ে তখনি দেখি হয় লেখাটা ডিলিট ক'রে দিয়েছে নতুবা ফিল্টারে চলে গেছে। সত্য জানতে দিতে চায় না। তা এরা কারা? এরা আবার নাকি সৎসঙ্গী!!!!!!!!! এরাই আবার দয়ালের জয়ঢাক পেটায় দিনরাত!! সত্যি সৎসঙ্গী! কি বিচিত্র এই সৎসঙ্গ সমাজ!!

যাই হ'ক, ফেসবুকে এক অল্প বয়সী সৎসঙ্গী মায়ের ক্যান্সারে মৃত্যুর খবর পড়ে মনটা ভূমিকম্পের মতো একটু দুলে উঠলো। সেখানে সেই মায়ের উদ্দেশ্যে লেখা কথাগুলি ছুঁয়ে গেল অন্তরকে। ব্যথায় ভরে উঠলো মনটা। ভারাক্রান্ত মনে ব্যথাহত হৃদয়ে কম্পিউটারে কি বোর্ডে আঙ্গুল রাখলাম। তারপর লিখে চললাম মনে যা যা ভেসে উঠলো শব্দ রূপে তাই।

সেই ফেসবুকে লেখা "তোর সব যন্ত্রণা হয়তো কমে গেছে" সম্পর্কে বলতে চাই সত্যিই কি ইহকাল ছেড়ে চলে গেলেই সব যন্ত্রণা কমে যায়? কত অতৃপ্তি, কত যন্ত্রণা নিয়ে চলে যাওয়া! আর "ভয় পাবিনা ঠাকুর আছেন তো" সম্পর্কে বলতে ইচ্ছে করে, ইহকালেই যখন ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে চলে গেলাম, ঠাকুর ছিলেন কিনা তার প্রমাণ পেলাম না তখন পরকালেও ভয় তো থাকবেই আর ঠাকুর আছেন এ বিশ্বাস কি করে করি?

আর, সেই মায়ের করুণ আর্তি সৎসঙ্গী দাদা ও মায়েদের উদ্দেশ্যে লেখা থেকে বলি, "আমি বেঁচে থাকতে চাই দাদা। আমার জন্য একটু ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করবেন তো"---- এই লেখার মধ্যে বাঁচার আকুতি, আকুল প্রার্থনা আর সৎসঙ্গীদের কাছে সাহায্যের তীব্র প্রত্যাশা ফুটে ওঠে। তা সেই মায়ের বাঁচার তীব্র আশা ঠাকুর পূরণ করলেন না কেন? ঠাকুর তো অকাল মৃত্যু অনুমোদন করেননি। ঠাকুর তো নিজেই বলেছেন, "আমি ইচ্ছে করলে কুষ্টি ওলোটপালোট ক'রে দিতে পারি।" তা ঠাকুর কি ৪২০ কথা বলেছিলেন? দয়াল কি তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের সাথে চিটিংবাজি কথাবার্তা বলেছিলেন?
আর, ঐ মা'টি নিয়মিত সৎসঙ্গে, মাতৃ সম্মেলনে যোগদান করতো। তা' সৎসঙ্গী দাদারা ও মায়েরা কি ঐ ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের জন্য দয়ালের কাছে অকপট আকুল প্রার্থনা জানিয়েছিল? জানিয়েছিল কি সৎসঙ্গে, কি মাতৃ সম্মেলনে সমবেতভাবে কিম্বা প্রত্যেকেই বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে? মা'টি নিজে এবং মা'টির আপনজন কি দয়ালের কাছে আকুল প্রার্থনায় আত্মসমর্পণ করেছিল সম্পূর্ণরূপে এবং বান্ধব তৈরি করেছিল পরিবেশে?

এমন অনেক প্রশ্ন মনে এসে মনটাকে ঝুঁটি ধ'রে নাড়া দিয়ে গেল। তাই একজন গোঁড়া সৎসঙ্গী হিসেবে কথাগুলি তুলে ধরলাম। কেউ অন্যরকম কিছু মনে করবেন না। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ আমার একান্তই নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। নিজের চরিত্রটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উলটে পালটে দেখে নেবার লড়াই।

এখানে শুধু ঘটনাটাকে সামনে রেখে মনের ভাব শেয়ার করলাম মাত্র। ভালো খারাপ দুই-ই লাগতে পারে। ভালো লাগলে খুশি হবো আর খারাপ লাগলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।

"ক্যান্সার রোগের ওষুধ আবিস্কার হয়নি তাই কিছু করার নেই"--এ ধরণের কথা পড়ে মনটা যেমন বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হ'লো ঠিক তেমনি বিদ্রোহী হ'য়ে উঠলো। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, অনেক রোগেরই তো উন্নত চিকিৎসা ও মেডিসিন আছে, আবিস্কার হয়েছে তা সেই সেই রোগের রোগী কি সবাই বাঁচে না বেঁচেছে? কোনও রোগের মেডিসিন থাকলেও রোগী যে বাঁচে তার কোনও গ্যারান্টি আছে? শুধু চিকিৎসা আর মেডিসিনে রোগী বাঁচে না। ঠাকুর থাকাকালীন দুরারোগ্য ক্যান্সারও সেরে গেছে সৎসঙ্গ আশ্রমে তার ইতিহাসও আছে। সেই রোগীর জন্য ঠাকুর নিজের ফর্মূলায় প্যারিমোহনদাকে ওষুধ তৈরীর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেই ওষুধ সেবন ক'রে ক্যান্সার রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হ'য়ে গিয়েছিলেন। তখন হাউজারম্যানদা ঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ঠাকুর আপনি বলুন, এই দুরারোগ্য ক্যান্সার যার কোনও ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি সেই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে কেমন ক'রে ক্যান্সার রোগী মুক্তি লাভ করলো? এই মুক্তি কি আপনার ওষুধের গুণে নাকি আপনার একান্ত অজচ্ছল দয়ায়? দয়াল ঠাকুর হেসে বলেছিলেন, তা আমি জানি না। আপনারাই নিরখ পরখ ক'রে দেখেন কেমন ক'রে কিভাবে কিসে কি হ'লো, এই অসম্ভব সম্ভব হ'লো। তাঁর দয়ায় আজও কত যে অঘটন ঘটে তার ঠিক ঠিকানা নেই।

আর, তখনি মনে পড়ে গেল শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের সংলাপ; যা দয়াল প্রায় সময়ই আওড়াতেন।
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"

আর "তাঁর মনের মতো ভক্ত আমরা হ'তে পারিনি" এই কথা ঐ পোষ্টটিতে পড়ে মনে হ'লো এ কথা সত্য হ'লেও দয়াল ঠাকুর নিজের ত্রুটিকে ঢেকে রেখে পাশ কাটানো এসব অপৌরুষেয় কথা পছন্দ করতেন না। তিনি সবসময় বলতেন, আমি যদি জানতেম সমস্যা নিরাময়ের উপায় নেই তাহ'লে আমার কোনও দুঃখ হ'তো না। কিন্তু আমি যখন জানি মানুষকে এই নিশ্চিত বিপদ থেকে উদ্ধার করবার উপায় আছে আর তা জানা সত্বেও যখন তাকে বাঁচাতে পারি না, উদ্ধার করতে পারি না তখন আমি ভাবি এর জন্যে আমিই দায়ী, আমি ব্যর্থ পিতা।

দয়াল আমাদের বাঁচাবার জন্যেই তো মানুষ রূপে আমাদের মাঝে এসেছিলেন কিন্তু আমরা তাঁকে সন্দেহমুক্ত মনে জীবনে গ্রহণ করেছি? যারা আমরা তাঁকে মানিনি, মানিনা, ঈশ্বরের জীবন্ত রূপ তো দূরের কথা তাঁর অস্তিত্বকেই মানি না তাঁদের কথা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমরা যারা আকাশের ঈশ্বর বা অমূর্ত ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা কি সত্যি সত্যিই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি? নাকি ভয় আর give & take policy-তে বিশ্বাস করি? আর আমরা যারা ঈশ্বরের জীবন্ত রক্তমাংসের রূপকে বিশ্বাস করি তাঁরা কি তাঁর জীবন্ত উপস্থিতিকে সত্যিই বিশ্বাস করি যে রক্তমাংসের রূপে উপস্থিত তিনিই এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা নিরাকারের সাকার রূপ? আর যারা আমরা তাঁর নিরাকারের সাকার রূপকে মানি বিশ্বাস করি তারা কি তাঁর পরবর্তী রূপকে মানি, স্বীকার করি, তাঁর চরণাশ্রিত হ'ই? আর যারা আমরা নানা গুরুর চরণাশ্রিত সেই গুরুরা কি কখনো বলেছেন তাঁর শিষ্যদের যে আমি সেই 'এক ও অদ্বিতীয়' নই? আর যেদিন সেই 'এক ও অদ্বিতীয়' নিরাকার ঈশ্বর সাকার রূপে নেবে আসবেন, নেবে আসবেন এই ধরাধামে মানুষ রূপে সেইদিন আমরা সবাই সেই জীবন্ত রক্তমাংসের 'এক ও অদ্বিতীয়' রূপের কাছে গুরু শিষ্য সবাই আশ্রয় গ্রহণ করবো; এই কথা কি বলেছেন? আর, সেই সৃষ্টিকর্তা পরমকারুণিক, পরম সত্ত্বা, পরম অস্তিত্ব, পরম উৎস মানুষ রূপে নেবে আসার পর এত হাজার বার, লক্ষ বার, কোটি বার বলা সত্ত্বেও কি সমস্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী নারীপুরুষ তাঁদের কথা কর্ণপাত করেছে? তাঁদের ব'লে যাওয়া কথা, বিধান মানা তো দূরের কথা বিশ্বাসই করেনি তাঁদের কথা। আর বিশ্বাস করলেও ভয়ে, দূর্বলতায় আধা বিশ্বাস করেছে জোর ক'রে দ্রৌপদীর মতো। ফলস্বরূপ যা হবার তাই-ই হয়েছে।

অমূর্ত-মূর্ত ঈশ্বরকে নিয়ে আমাদের নারীপুরুষের প্রতিদিনের আচার আচরণ, আমাদের জীবনে, আমাদের ঘরে ঘরে ধর্মীয় কার্যকলাপ, ঈশ্বর পূজার ধরণ ধারণ, বিকৃত বীভৎস পূজা পদ্ধতি, আমাদের ঠাকুর ঘর ইত্যাদি বলে দেয় আমি কেমন ঈশ্বর বিশ্বাসী ও ঈশ্বর পূজারী! আমার জীবনই, আমার চলনই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রকাশ, অভিব্যক্তি। আর প্রকাশ অনুযায়ী পাওয়াও তেমনি। তাই বাঁচা-মরা আমার হাতে। দয়া্দুমার'হাত উজাড় ক'রে দিয়েই রেখেছেন। দয়ালের কাছ থেকে আমার নেওয়ার অক্ষমতা, দয়ালের উপর আমার অবিশ্বাস, আমার অনির্ভরতা, আমার স্বার্থপর মানসিকতা, দয়ালের সঙ্গে আমার ভণ্ডামি, আমার চালাকি, আমার মিথ্যাচার, আমার ঠগবাজি, দয়ালের সঙ্গে আমার বেইমানি, নেমকহারামী, ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ ক'রে আমার রোজগারের ধান্দা, ইষ্টপ্রতিষ্ঠার অছিলায় আমার আত্মপ্রতিষ্ঠা, আমার না-ক'রে পাওয়ার বুদ্ধি, আমার দুর্ব্যবহার, অন্যকে ঠকিয়ে বোকা বানিয়ে নিজের আখের গোছানো, আমার দুশ্চরিত্র, আমার উগ্রতা, আমার অনিয়ন্ত্রিত রিপু ইত্যাদি আমার দুর্ভাগ্যকে ডেকে আনে। তখন দয়াল আমাকে বাঁচাতে পারেন না তাঁর ইচ্ছা থাকলেও। কারণ তিনি প্রকৃতি। দয়ালের বলায় আছে, "তুমি যেমন প্রকৃত হবে, প্রকৃতি তোমায় তেমনতর উপাধি নিশ্চয় দেবেন এবং নিজের ভেতরে তেমন অধিকারও দেবেন।"

তাই পরিশেষে বলি, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য আমার হাতে।

Friday, April 28, 2023

প্রবন্ধঃশুধুই কথার খই!!!!

যখনই কোনও ভালো ভালো কথা শুনি ভালো লাগে! একটা অপার আনন্দে ভরে ওঠে মনটা। তখন শরীরে কোনও ভর অনুভূত হয় না! হালকা পাখির পালকের মত নিজেকে লাগে শরীরে-মনে! কিন্তু পরমুহূর্তেই একটা অবসাদ ঘিরে ফেলে মনটাকে! নিজেকে তখন অসহায় মনে হয়। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। কিছুই এবং কাউকেই ভালো লাগে না তখন। বদ্ধ খাঁচার এক অসহায় যন্ত্রণাবিদ্ধ জীব মনে হয় নিজেকে! উপলব্ধি করতে পারি তখন খাঁচা বন্দি পশুপাখির যন্ত্রণা! কথায় আছে, ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখোনি! অর্থাৎ ঘুঘু পাখির আনন্দে বিচরণই দেখেছো কিন্তু তাঁর ফাঁদে পড়ার যন্ত্রণা দেখোনি! ঠিক তেমনি আনন্দ আর আরামই ভোগ ক'রে এসেছো কিন্তু দুঃখ কষ্ট ভোগ করোনি! ভালো ভালো কথা শোনার পরে যে মানসিক অবস্থা হয় সেই অবস্থা দ্রুত উধাও হ'য়ে সূর্যকে মেঘ ঢেকে ফেলার মত দ্রুত অবসাদ মনকে ঢেকে ফেলে! শুধু মনে হয় সবাই কি মনের বিশ্বস্ত অনুচর, বিবেকের হন্তারক!? তখন অসহায় বিধ্বস্ত আমি ঠাকুরের কাছে এসে বসি! কিছুক্ষণ চুপ ক'রে বসে থাকার পর মনে ঠাকুরের কথা ভেসে ওঠে, "বিবেককে অবলম্বন করো, আর মনের অনুসরণ ক'রো না--------উদারতা তোমাকে কখনও ত্যাগ ক'রবে না।" তখন নিস্তব্ধ নিথর পরিবেশে মন ব'লে ওঠে, তাই তুমি এত উদার দয়াল!!
ভালো ভালো কথা শুনে আসছি সেই ছোটবেলা থেকে, এখনও শুনছি!! আর যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন শুনতেই থাকবো!!! আর যেদিন থাকবো না সেদিনও চলতে থাকবে ভালো ভালো কথার ঢাক পেটানো!!!! কথাটা রূঢ় শোনালো কি!? মন কি বাত বললাম! ছোটবেলা থেকে যা দেখে আসছি আজ পর্যন্ত তাই-ই বললাম। অন্যদের কথা ছেড়ে দিলাম; এই যে ভালো ভালো কথা আমরা সৎসঙ্গীরা বলি, যাজনের নামে বলি, ব'লে বেড়ায়, যা বলি তা নিজে মানি তো!? করি তো!? নিজের আচরণে ফুটিয়ে তুলি তো! নিজের চরিত্রে তার প্রতিফলন হয় তো!? আমি ঠাকুরের প্রাণের সৎসঙ্গের ঠাকুরের স্বপ্নের সোনার সৎসঙ্গী হ'য়ে উঠতে পেরেছি নাকি ওঠার চেষ্টা করেছি বা করছি!? নাকি ঠাকুরের বলা মত তাত্ত্বিক আমেজে শুধু ডুবেই থাকি!? ডুবে ডুবে জল খাই!? ভালো ভালো কথা শুধু বলার জন্য!? লোকের কাছে ভালো মানুষ, জ্ঞানী মানুষ সাজার জন্য!? করার জন্য নয়!? এই রোগ সবার মধ্যে! সৎসঙ্গীদের মধ্যেও!?
কে যেন ব'লে উঠলো, কেন সৎসঙ্গীরা কি ভিনগ্রহের মানুষ!? পৃথিবী নামক গ্রহের নয়!? জানি না এটাকে সাড়া পাওয়া বলে কিনা! যাই হ'ক এইজন্যই বোধহয় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বিবেকানন্দের বলা Man making education কথাটাকে খোসা ছাল ছাড়িয়ে একেবারে উলঙ্গ ক'রে দিয়ে সরাসরি বললেন, Character making education! যার অভাবে গোটা বিশ্ব আজ হ'য়েছে নিঃস্ব, পৃথিবী হয়েছে আজ রোগী! সৎসঙ্গীদের মধ্যেও ঠাকুরের বলে যাওয়া এই চরিত্র গঠনের শিক্ষার অভাব কি আজ করোনার মত ভয়ঙ্কর প্রকট!?
সৎসঙ্গীরা ১% কি সত্যিই ঠাকুরের প্রাণের সৎসঙ্গী হ'য়ে উঠতে পেরেছে নাকি ওঠার চেষ্টা আদৌ শুরু করেছে সেই ঠাকুরের সময় থেকে আজ ঠাকুরের ১৩২ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও!? পরমপ্রেমময়ের ছাতার তলায় আমরা সৎসঙ্গীরা কি প্রেমের আধার হ'য়ে উঠতে পেরেছি নাকি আধার নাবিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছি!? সৎসঙ্গীরা কি একে অন্যকে সত্যি ভালোবাসি!? নাকি নতুন নতুন প্রেমময়ের প্রেমের সাগরে ভাসতে ভাসতে কিছুদিন পরেই ঠাকুরের কথা শুনতে শুনতে চোখকান খুলে যাবার পর নিজের অজান্তে আবার প্রেমস্রোতের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হ'য়ে সেই হিংসার ঘোর অন্ধকারের চোরাস্রোতে ডুবে গেছি!? রিপু তাড়িত ছুটে বেড়াচ্ছি পাগলা ঘেয় কুকুরের মতন!? এর জন্য কে দায়ী!? আমি? আমার স্বভাব? প্রথম থেকেই আমার আত্মপ্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা লাভের লোভ!? সচেতনভাবেই আমার বৃত্তি-প্রবৃত্তি পূরণের আকাঙ্খার চোরাস্রোত!? নাকি পুরোনো কপট নষ্টপ্রাণ সঙ্গীর সংশ্রব ও প্রভাব!? বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!
এছাড়া আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা প্রতিবাদের খড়্গ অস্ত্র হাতে বাড়া! এর প্রবণতা ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে প্রবল। তারা জানেই না বা জানার আদৌ চেষ্টা করেনা যে, ঠাকুরের সেই লক্ষণের গন্ডির মত একটা ইচ্ছের গন্ডি আছে! আর সেই ইচ্ছের গন্ডির মধ্যে থেকেই ঠাকুরের ইচ্ছের হাত ধ'রে আমাদের হাঁটতে হবে, চলতে হবে! আর ঠাকুরের সেই ইচ্ছের গন্ডির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে ঠাকুরের ইচ্ছের হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তি দ্বারা জারিত ইচ্ছের দ্বারা প্রভাবিত হ'য়ে হাঁটতে থাকি তাহ'লে মা সীতার যা হ'য়েছিল তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ভয়ানক আমারও ভবিষ্যৎ! তখন তো একটা রাবণ ছিল, আর ছিল পরম শিবভক্ত শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ আর এই ঘোর কলিযুগের রাবণ হাজার হাজার ঘরে ঘরে আর শয়তানভক্ত বর্ণহীন!
কে কাকে কোথায় কি বললো, কি নিন্দা করলো, কি সমালোচনা আর অপমান, অশ্রদ্ধা করলো আমার প্রিয়পরমের, সেদিকে তাকাবার সময় আছে নাকি সৎসঙ্গীদের এই কঠিন সময়ে!? আমার প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জীবদ্দশায় সীমাহীন লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিন্দিত হয়েছেন আর তার সাধের 'সৎসঙ্গ'কে কতরকম ভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হয়েছে, আক্রমণ করা হয়েছে তাঁর আশ্রমের উপর, পরিবারের উপর তখন ঠাকুর কি করেছিলেন, ঠাকুর পরিবার কি করেছিলেন!?
আমরা কিসের যাজন আর কার, কিসের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামবো!? মাথার ঘায়ে তো কুকুর পাগল!!!!! কান পেতে নিজের বিবেকের কথা শুনেছি কখনও নাকি মনের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছি!? সবাই তো চারদিকে শুধুই বলেই যাচ্ছে; শুধুই গরম কড়াইয়ে কলাই ফোটার ফট ফটাফট ফট আওয়াজ!!! বলা চরিত্রে ফুটে উঠছে কই!? শুধুই কথার খই আর খই, খই আর খই!!!!!
তাই হ'ক যাজন! হ'ক প্রতিবাদ!! চরিত্র গঠন-ই হ'ক যাজন, চরিত্র গঠন-ই হ'ক প্রতিবাদ!!!
(লেখা ২৮শে এপ্রিল'২০২০)

Monday, April 24, 2023

আহ্বানঃ রেখো তাঁর মান।


সৎসঙ্গী বন্ধু!
চলে যাবার আগে ব'লে যেতে চাই একটা কথা।
যদি থাকে তোমার ক্ষমতা তবে তোমার ও তোমার আশেপাশের অসহায় গরীব ছোট্ট শিশুর প্রতি রেখো মমতা। শিশুরা লিটল অনুকূল! বাড়িয়ে তোমার হাত দিও সাথ, দিও তাদের কুল।

শিশুর শৈশব চলে গেলে তা আর ফিরে পাবে না। শিশুরা ঈশ্বরের দূত। তাদের মধ্যে ঈশ্বর বর্তমান। তাদের ভালোবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়। 
তোমার বাড়ির ও আশেপাশের শিশুদের ভালোবেসো। তাদের ভালোবাসলে ঈশ্বর তোমায় ভালবাসবেন। শিশুর শৈশব চলে গেলে তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসার সুযোগ হারাবে।

প্রতিটি শিশুর মধ্যে তোমার দয়াল ঠাকুর বর্তমান। তাদের নিষ্পাপ সরল মুখের দিকে চেয়ে দেখো দেখতে পাবে সেথায় তোমার দয়ালকে। এসো বাকী জীবন তাদের নিয়ে আনন্দ করি।

অসহায় সহায় গরীব ধনী শিশুদের মধ্যে কোনও বিভাজন হয় না। শিশু শিশুই। তাদের ভালোবেসে, খাইয়ে, তাদের দিয়ে যে মজা, যে তৃপ্তি, যে আনন্দ সে ভালোবাসা, সে মজা, সে তৃপ্তি, সে আনন্দ শিশুদের বাদ দিয়ে স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বরকে ভালোবেসে, খাইয়েও নেই। শিশুরা সব লিটল ঈশ্বর! লিটল অনুকূল! যে শিশুদের ভালোবাসে সে জীবন্ত ঈশ্বর অনুকূলকে ভালোবাসে। যে শিশুদের ভালোবাসে না সে জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও ঠাকুর অনুকূলকে ভালোবাসে না। আর যে জীবন্ত ঈশ্বরকে ভালোবাসে না সে শিশুদের ভালোবাসে না, ভালবাসতে পারে না। তা সে যতই বহিঃরঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বর প্রেমিক বা শিশু প্রেমিক হ'ক। সে ঈশ্বর বা শিশু প্রেম সমস্ত ভন্ডামি, লোকদেখানো স্বার্থসিদ্ধির চালাকি। যে জীবন্ত ঈশ্বরকে ভালোবাসে, জীবন্ত ঈশ্বরে সমর্পিত যার প্রাণ সে শিশুদের ভালোবাসবেই বাসবে; ভালো না বেসে পারে না। শিশু অন্ত প্রাণ তাঁদের। শিশুদের মধ্যেই তাঁরা তাঁদের আরাধ্য জীবন্ত ঈশ্বরকে অনুভব করে। জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি শর্তহীন তীব্র অটুট, অচ্যুত, অস্খলিত ভালোবাসা তাঁদের এমন শিশু প্রেমিক ক'রে তোলে। প্রকৃত জীবন্ত ঈশ্বর প্রেমিক প্রকৃত শিশু প্রেমিক তথা মানব প্রেমিক হ'য়ে ওঠে। তখন তাঁদের প্রাণ প্রেমময়ের স্পর্শে প্রেমময় প্রাণময় হ'য়ে ওঠে। অনেকে আছে মানুষে অরুচি পশু পাখি প্রেমে মাহির! অন্তরে নেই প্রেম ভালোবাসা ঝলমলে বাহির! সৎসঙ্গী বন্ধু! তুমি তেমন হয়ো না। তুমি যে ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গী! হে সৎসঙ্গী! ঠাকুর সৎসঙ্গীদের সোনার সৎসঙ্গী বলতেন। তুমি রেখো তাঁর মান।







উপলব্ধি ৩৫ঃ ঠাকুরের বাণী ও আমরা।

একটা জিনিস অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করছি তা হ'লো ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিতরা কি সৎসঙ্গে দাঁড়িয়ে, কি ফেসবুকে ঠাকুরের বাণী আউড়ে বা পোষ্ট ক'রে যেমন ইচ্ছা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন যেন মনে হচ্ছে এক একজন ঠাকুরের হাজার হাজার বাণী, ছড়া, ঠাকুরের আলোচনার উপর বিরাট গবেষণা ক'রে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। ঠাকুরকে এরা এত সস্তা ক'রে দিয়েছে ও দিচ্ছে যে ঠাকুর সম্পর্কে সমাজের এলিটেরা আগ্রহ প্রকাশ করেন না। সৎসঙ্গগুলিতে যারা সামনে বসেন সাদা জামা কাপড় পড়ে (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) তাদের চিন্তাভাবনা, চালচলন, কথাবার্তা, ধ্যানধারণা এতটাই নিম্নমানের, এতটাই বেমানান, এতটাই লোক দেখানো, এতটাই কপট যে সমাজের শিক্ষিত রুচিশীল বংশমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ মাত্রই সতর্কতার সংগে সম্মানজনকদূরত্ব পালন করে। যদিও এলিটদের এই ধরণের মানসিকতা সমর্থন যোগ্য নয়, নয় গ্রহণযোগ্য তথাপি এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে সৎসঙ্গে যেভাবে (উদাহরণ স্বরূপ) ব্যাঙ আর সাপের গল্প শুনিয়ে ঠাকুর দর্শনের সস্তা মহিমা গাওয়া হয়, যেভাবে 'সন্ধ্যা প্রার্থনা' শব্দের জ্ঞানগর্ভ ভুল ব্যাখা করা হয়, যেভাবে তাঁর ছড়ার 'না' আর 'হয়না'র বিকৃত ব্যাখ্যা করা হয় তা'তে সমাজের শিক্ষিত সম্প্রদায় 'সৎসঙ্গ'- এ থাকা তো দূরের কথা আসতেই চায় না। এরকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যেতে পারে যা সৎসঙ্গীরা সৎসঙ্গে দাঁড়িয়ে না বুঝেই, না জেনেই বুক বাজিয়ে বলে। ঠাকুরের কথা মাথায় রেখেই কোয়ান্টিটির সংগে কোয়ালিটির কথাটাও মাথায় রাখতে হবে সৎসঙ্গীদের, সৎসঙ্গ আয়োজকদের।
ব্যাপারটা কেন এমন আর কোথায় বা এর সমাধান? ঠাকুরের বাণীর মানে বুঝতে হ'লে বাণীর গভীরে যেতে হবে। দাঁড়ি, কমা, ইনভার্টেড কমা ইত্যাদির মানে বুঝতে হবে। প্রতিটি শব্দের মানে বুঝতে হবে। বাণীর জন্ম ইতিহাস ও বাণী নিয়ে কখন, কোথায় কি বিরোধ হয়েছে, কি প্রশ্ন উঠেছে, কি আলোচনা হয়েছে আর সেই বিরোধ নিয়ে, সেই প্রশ্ন নিয়ে ঠাকুরের সংগে আলোচনা কি হয়েছে, ঠাকুর কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেই বিষয়ে জানা থাকতে হবে। ঠাকুরের 'সত্যানুসরণ' গ্রন্থের ব্যাখ্যা শ্রীশ্রীবড়দা ছাড়া কারও পক্ষে যে সম্ভব নয় তা সৎসঙ্গের শ্রদ্ধেয় গুণী পরম ভক্ত মাত্রই জনেন। শ্রীশ্রীবড়দা জীবন্ত ও চলন্ত সত্যানুসরণ। যেমন ইচ্ছা নিজের মত ঠাকুরের বাণী, ঠাকুরের বলা ইত্যাদির ব্যাখ্যা করলে হবে না। আমাদের মনগড়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী ঠাকুর বাণী বা ছড়া দেননি, কোনও আলোচনা করেননি। আর বাণী, ছড়া, ঠাকুরের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করে, কটূক্তি করে আবার শুভানুধ্যায়ী কেউ কেউ কষ্ট পায়, দুঃখ পায়। কটূক্তি, বিরূপ মন্তব্য ঠাকুর জীবিত থাকতে ঠাকুরকে বহু সহ্য করতে হয়েছে এখনও হচ্ছে সেগুলির কোনও গুরুত্ব শিক্ষিত সমাজের কাছে বিন্দুমাত্র নেই। কিন্তু কে কষ্ট পেয়েছে, কে দুঃখ পেয়েছে তা দেখতে গেলে চলবে না। কারণ ঠাকুরের বাণী বোঝা তো দূরের কথা ঠাকুর সম্পর্কেই জানে না যারা তাদের আবার কিসের দুঃখ আর কিসের কষ্ট প্রকাশ আর তা নিয়ে কিসের মাথাব্যাথা? কিসের দায়? মন্তব্য প্রকাশ করার আগে সাবধানে পা ফেলতে হবে। ঠাকুরের বাণী পড়ার বা শোনার ইচ্ছা নেই, বোঝার ক্ষমতা নেই, জানার ইচ্ছা বা চেষ্টা নেই, শোনার মানসিকতা নেই অথচ বাণী নিয়ে একটা যে কোন মত প্রকাশে বাহাদুরি দেখাতেই হবে এমন বালখিল্য মানসিকতা নিয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অঙ্গনে এসে নিজেকে ছোটো ও খেলো না করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই বুদ্ধি যদি না থাকে তাহ'লে নিজের পাঁঠা নিজে ল্যাজে কাটবে নাকি মাথায় কাটবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো কিছু আসে যায় না।

যাই হ'ক, এবার বলি ঠাকুরের বাণী, ছড়া, দর্শন পোষ্ট করার আগে সে সম্পর্কে ভালো ক'রে পড়ুন, বাণী, ছড়া ইত্যাদির অন্তর্নিহিত অর্থ জেনে নিন, বুঝে নিন তারপরে পোষ্ট করুন। তারপরে ঠাকুরের বাণী বা ছড়া বা তাঁর বলার ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করার বা আলোচনার সময় ঠাকুরের বাণী প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। সব জায়গায় সব বাণী প্রয়োগ করলে চলবে না। ঠাকুরের আলোচনা, বাণী, ছড়া বেশিরভাগ সময়েই স্থান, কাল, পাত্র অনুযায়ী এবং স্থান, কাল, পাত্রের উপর নির্ভর ক'রেই সৃষ্টি হয়েছে।

তাই গুরুভাইবোনেদের কাছে অনুরোধ এই বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকুন। অন্যথায় মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। যদিও ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন 'The greatest phenomenon of the world'. বিশ্বের Phenomenon-রা ঠাকুরকে সহজেই চিনে নেন আর শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন। তবুও আমাদের সাধারণ সৎসঙ্গীদের তাঁর শিষ্য ও অনুগামী হিসেবে একটা মিনিমাম দায়িত্ব থেকে যায় আর তা পূরণ করতে যেন আমরা ভুল না করি।
(লেখা ২৫শে এপ্রিল'২০১৮)

 

উপলব্ধিঃ গভীর বিশ্বাস।

"গভীর বিশ্বাসে সবই হ'তে পারে। বিশ্বাস কর, ---সাবধান অহঙ্কার, অধৈর্য্য ও বিরক্তি না আসে---যা চাও তাই হবে।"----শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

হ্যাঁ, গভীর বিশ্বাস হ'লে যা চাও তাই পাবে। বিশ্বাস গভীর করো। চেষ্টা করো, সফল হবেই হবে। প্রাপ্তি ঘটবেই ঘটবে। তাঁর দরবারে দেড় হ্যায় লেকিন অন্ধের নেহী হ্যায়। তাই অহঙ্কার ক'রো না, অধৈর্য্য হ'য়ো না আর বিরক্তি এনো না। তাঁর দয়া আসছে, ঐ আসছে! নাম করো, শুধু নাম আর নাম। নাম করতে ভুলে যাচ্ছো? কৈ বাত নেহি। ভুলে গেলে মনে পড়লেই গভীর বিশ্বাসে নাম করো। আবার করো, বারবার করো। মেকানিক্যালি যন্ত্রের মত করো আর অন্তর দিয়েই করো তাঁকে ভালোবেসে করো, নাম করো আর নাম করো। প্রাপ্তির ঘর পূর্ণ হবেই হবে।
(৮ই এপ্রিল'২০২২)

উপলব্ধিঃ অমৃতস্য পুত্রা!

আমার মন ভালো নেই। খুব কাছের একজন মানুষকে হারালাম। কাল করোনা কেড়ে নিয়ে গেল প্রিয় মানুষটাকে। সবসময় সবার জন্য চিন্তা হয়। বয়স বেড়ে চলেছে। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা জীবনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ভাবতে পারিনি এমন কিছু নিজেদের কারও জন্য ঘটতে পারে। শুধু এ'কথা ব'লতে পারি সব গুরুভাইবোনদের সবসময় যেন ঠাকুরকে মাথায় নিয়ে চলে। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি সৎসঙ্গীদের কোনও ভয় নেই। আমাদের ঠাকুর আছে আর আছে ঠাকুরের নীতি বিধি। সদাচার মেনে চলো, সবাইকে চলতে ব'লো। সবাই সবাইকে ব'লো সবাই যেন প্রথমে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে তার উপরে কাপড়ের মাস্ক পড়তে। অফিসে গিয়ে এবং রাতে বাড়িতে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে স্যানিটেজর লাগিয়ে তারপরে মুখের মাস্ক যেন খোলে। তারপরে মাস্ক যেন ধুয়ে ফেলে। আর সার্জিক্যাল মাস্ক যেন চেঞ্জ করে। বাড়ির বাইরে প্রয়োজনে বেরোলে সবাই এইভাবে বেড়িও। আর ইষ্টভৃতি করতে ভুলো না। আকুতি নিয়ে ক'রো। আবেগ ভরে ক'রো। ভালোবেসে ক'রো। প্রাণ উজার ক'রে, হৃদয় দিয়ে ক'রো। প্রত্যাশা বিহীন ক'রো। মনে ক'রো তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয়জনকে অতি প্রত্যুষে নিজেকে কিছু খেতে দেওয়ার আগে বাস্তব অর্ঘ্য নিবেদন ক'রছো। এর সঙ্গে বলি নাম, নাম, নাম শুধু নাম আর নাম, নাম আর নাম ক'রো শয়নে, স্বপনে জাগরণে। করোনার ভয়, মহাভয় কেটে যাবে। কারও কিছু হবে না। সত্য, সত্য, সত্য; তিন সত্য। ঠাকুর যা যা বলেছেন তাই ক'রো, অন্যকে বাচার কথা ব'লো। এই স্বভাব অভ্যাসে পরিণত ক'রে তোলো। তোমার চরিত্রই তোমার যাজন। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "যজন, যাজন ইষ্টভৃতি করলে কাটে মহাভীতি।" আমাদের সামনে মাথার ওপর রেত শরীরে প্রতীক গুরু রুপে শ্রীশ্রীআচার্যদেব আছেন! আছেন শ্রীশ্রী বাবাইদাদা! আছেন শ্রীশ্রী অবিনদাদা! আর কি চাই!? আমাদের সৎসঙ্গীদের মত এত ভাগ্যবান পৃথিবীতে আর কে আছে? মাথার ওপর এতবড় নিরাপদ ছাদ আর কার আছে? আমরা ভালো আছি, ভালো থাকবো। মনকে দূর্বল হ'তে দেবে না। ঘরের পরিবেশকে সবসময় পজিটিভ রাখো। মন ভেঙ্গে দেয়, দূর্বল ক'রে দেয়, অসুস্থ ক'রে দেয় এমন মানুষ, এমন পরিবেশ থেকে দূরে থাকো। প্রয়োজনে একলা থাকো, নেগেটিভ মানুষ থেকে দূরে থাকো তা সে যেই-ই হ'ক, গুরুভাইবোন হ'ক আর না হ'ক। ড্রিংক্স আর ধূমপান ধ'রো না, ক'রো না, ধ'রলে ছেড়ে দাও আর পেট ঠিক রেখো। যথাসম্ভব বাইরের খাবার খেয়ো না। মনের ওপর আর পেটের ওপর অযথা চাপ দিও না।
এছাড়া ১) মাস্ক প'ড়ো ২) হাত সাবান দিয়ে বারবার ধোও ৩) স্যোশাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন ক'রো। ৪) সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলো। ৫) ভ্যাক্সিন নাও। উষ্ণ গরম জলে লেবু টিপে সকালে ও রাতে খেয়ো। এইপর্যন্ত বললাম। আর কি বলবো। শেষে বলবো দীক্ষার সময় যে নাম পেয়েছিলে সেই নাম স্মরণ ক'রো সবসময়। অভ্যাস করো নামের, ভুলে যাবে আবার করবে, ভুলে যাবে আবার করবে; এইভাবে একদিন দেখবে ভয় ব'লে আর কিছু নেই সামনে! অভ্যাস করো স্বভাব পরিবর্তনের। আর কিছু বলার নেই, বলার মত মনের অবস্থা নেই, তাই ব'লে ভেবো না ভেঙ্গে পড়েছি। ভালো থেকো সবাই।
অবশেষে বলি, সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যুর হার ১% -এরও কম। এর থেকে সুখবর আর কিছু নেই। আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। মাভৈঃ! শ্রীশ্রীঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীরা চলো এগিয়ে চলি। অমৃত পথের যাত্রী আমরা!! অমৃতের পুত্র আমরা! হ্যাঁ! আমরা, আমরাই পারি করতে বিশ্বজয়!
(লেখা ২৯শে এপ্রিল'২০২১)

প্রবন্ধঃ কর, হও, পাও আর লাভ করো সুন্দর জীবন।

একবার যদি এরকম ভালোবাসা এসে যায় তাহ'লে কি ক'রে সংসার চলবে, কি ক'রে সমস্যা থেকে মুক্ত হবো, কি ক'রে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবো, কি ক'রে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবো তার জন্য আর চিন্তা করতে হয় না। ভুতের মত কে যেন প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে সামনে হাজির হ'য়ে যাবে। বিপদের সময় একটা অদৃশ্য হাত এসে তোমাকে সযত্নে কোলে তুলে নেবে।
বন্ধু! আমার কথা মেনে একবার বিশ্বাস ক'রে কষ্ট ক'রে আকুল আগ্রহ নিয়ে প্রত্যুষে, পারলে অতি প্রত্যুষে বিছানা থেকে নাবার আগে কিছু মুখে দেবার আগেই আর না পারলে সকালে কোনও কাজ শুরু করার আগে ইষ্টভৃতি করো আর চলতে ফিরতে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে একটু নাম ক'রে দেখো, আর রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নির্জনে একাকী একটু চোখ বুঝে তাঁর সামনে বসো আর মধ্যরাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহ'লে নিশুতি রাতে তাঁর সামনে এসে বসো আর চোখ বুঝে আজ্ঞা চক্রে মন ন্যস্ত ক'রে তাঁর নাম করতে থাকো তুমি যতক্ষণ পারো এবং পরবর্তী সময়ে দেখো ধীরে ধীরে কেমন ম্যাজিকের মতো সব যা ছিল কাল অসম্ভব, যা মনে হ'তো অবাস্তব, গাঁজাখুরি আর অবৈজ্ঞানিক তা আজ সব তোমার ফেভারে হ'য়ে যাচ্ছে, হাতের মুঠোয় চলে আসছে, সব হ'য়ে যাচ্ছে সম্ভব, হ'য়ে যাচ্ছে সব বাস্তব আর বৈজ্ঞানিক। অদ্ভুত এক রহস্য। কুল কিনারা পাবে না। ঠাকুর সবসময় শেক্সপিয়ারের একটা কথা বলতেন যেটা তাঁর অন্যতম প্রিয় কোটেশন ছিলঃ "There are more things in heaven and earth, Horratio, than are dreampt of in your philosophy" অর্থাৎ " স্বর্গ আর পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"
বন্ধু! হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি যে যেখানে আছো বন্ধু আমার তোমরা তোমার ইষ্টদেবতার উদ্দেশ্যে যা বললাম করো, বিশ্বাস ক'রে দেখো আর তোমার শিশু সন্তানকে তার ছোট্ট বয়স থেকে ধীরে ধীরে রপ্ত করাও। দেখবে, শয়তানি শক্তির বাপের কোনও ক্ষমতা হবে না তোমায় স্পর্শ করে। শয়তান ভবিষ্যতে তোমার সন্তানের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চিন্তে চোখ বুঝে শেষ জীবন কাটাতে পারবে। বন্ধু! কর, হও, পাও।
(লেখা ১৫ই অক্টোবর'২০২২)

উপলব্ধিঃ বন্ধু!

ছোটোবেলাটা সত্যিই আনন্দের, মজার ছিল। কোনও দায় ছিল না, ছিল না কোনও দায়িত্ব। এখন বড় হওয়ার মজা টের পাচ্ছে সবাই। তবুও বলি বড় হওয়ার মজাটা চেটেপুটে নাও। ছোটোবেলার কথা মনে ক'রে সময় নষ্ট ক'রো না। ঠাকুরকে নিয়ে ঠাকুর থেকে শক্তি শুষে নিয়ে নিজেকে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে এগিয়ে যাও তাঁর নাম স্মরণ করতে করতে। পিছন ফিরে দেখতে যেও না। দ্যাখো সামনে আলো, আলো আর আলো! ভুবন জোড়া আলোর রোশনাই। শালা সব পাবে। ঠাকুরকে বলো, ঠাকুর আমি তোমার, তোমার, একান্তই তোমার। এ জীবনে বাকী দিনগুলিতে ঠাকুরকে বলো, ঠাকুর তুমি আমার ঘরে থাকো, আমার ঘরে থাকো, আমার ঘরে থাকো!!!!!!!
(লেখা ২৬শে ফেব্রুয়ারী'২০২৩)

প্রবন্ধঃ নূপুর শর্মার বক্তব্য ও আমরা সৎসঙ্গীরা।

ঈশ্বর, আল্লা, গড ইত্যাদি সব তো সেই এক ও অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা পরমপিতার উদ্দেশ্যেই উচ্চারিত নাম! আর সেই এক ও অদ্বিতীয় নামের নামী পুরুষ হ'লেন সেই রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তাঁরা তো সবাই পুরুষোত্তম প্রেমিক পুরুষ। তাঁদের জীবন তো প্রেমের আধার মহাসমুদ্র! তাহ'লে তাঁদের প্রত্যেকের অনুগামীদের মধ্যে কেন এত অপ্রেম, কেন এত হিংসা, দলাদলি!? সেই কবে থেকে তো তাঁরা প্রেমের বাঁশী বাজিয়ে চলেছেন! তবে বিশ্বজুড়ে কেন তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে এত হিংসার হুহুঙ্কার!? কেন!? কেন!!?? কেন!!!???
তবে কি মহপ্রলয়, ধ্বংস আসন্ন?
যাই হ'ক আমি প্রভু রাম, প্রভু বুদ্ধ, প্রভু যীশু, প্রভু মহম্মদ-এর পরস্পর অনুগামীদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর শিষ্যরা কেন এরকম পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অপ্রেম জনিত কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তো প্রেমময়! শুধু প্রেমময় নন, পরমপ্রেমময়!! তবু্ও সৎসঙ্গীদের মধ্যে এত প্রেমের অভাব কেন? শুধু তাই-ই নয়; বহু অতি উৎসাহী ইয়ং সৎসঙ্গী ফেসবুকে ধর্ম, রাজনীতি, খেলা, সিনেমা ইত্যাদি নানা বিষয়ে এমনকি অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও সেই সেই বিষয়ের পোষ্টের উপর আলোচনা চলাকালীন হাসিঠাট্টা মস্করার ছলে তালজ্ঞান হারিয়ে নিম্ন রুচির পরিচয় দেয়, কুৎসা করে, এমনকি ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল কথাও বলে!!!! এমনকি স্বঘোষিত বালখিল্য সনাতনী হিন্দুদের দ্বারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পর্কে করা কুৎসাতেও তারা প্রভাবিত হয় ; এমনি এরা সৎসঙ্গী!!!!!! তাহ'লে কি আমাকে ধ'রে নিতে এই নব্য অতি আধুনিক উৎসাহী আবেগসর্বস্ব যুবক সৎসঙ্গীরা ঠিক আর আমার মত ঠাকুরের প্রবীণ সৎসঙ্গীরা বেঠিক ও ভুল!? ঠাকুর কি বলেছিলেন এই কোন্দল সম্পর্কে? এক ভক্ত বলেছিলেন, "ঠাকুর এত দল আর দলাদলি, বিভেদ আপনি ব'লে দিন আমায় আমি কোন দল করবো।" প্রত্যুত্তরে ঠাকুর বলেছিলেন, "কোন্দল ক'রো না মণি, কোন্দল ক'রো না।"
সম্প্রতি আমরা কি দেখলাম? সাংসদ নূপুর শর্মার হজরত মহম্মদের প্রতি কটুক্তি করা নিয়ে, তার বক্তব্যে গোটা দেশ তথা মুস্লিম বিশ্ব তোলপাড়। এর পিছনে কতটা রাজনীতি আর কতটা নবির প্রতি প্রেম সেটা সহজেই অনুমেয়। তথাপি নবীর প্রতি অসম্মান অপমান আজ সুযোগসন্ধানী চক্রান্তকারীই হ'ক আর প্রেমিক অনুগামীই হ'ক সবাই আজ এক সুরে আবদ্ধ। অথচ যখন বাংলাদেশে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাঙা হয়, যখন ধর্মীয় কোন্দলে হিন্দু বিতারণের কাজ কি বাংলাদেশে, কি পাকিস্তানে, কি কাশ্মীরে হয় বা অন্য কোনও রাজ্যে বা দেশে হয় তখন মুসলমানরা মানবতার খাতিরে ক্ষোভ প্রকাশ করে না। কোনও মুসলিম কান্ট্রি প্রশ্ন তোলে না আর এক মুসলিম দেশের ওপর। ওপার বাংলায় যখন দূর্গাপুজার সময় কোরান আর হনুমান বিতর্কে মারধর হ'লো, বাড়িঘর ভাঙ্গা হ'লো, বিতাড়ন হ'লো তখন কেউ মুখ ফুটে কোনও বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করলো না তা সে হিন্দু মুসলমান তা সে যে বুদ্ধিজীবিই হ'ক আর সরকারী প্রশাসন হ'ক।
আবার নূপুর শর্মার সমর্থনে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে বেরিয়ে পড়েছে আর এক দল। এর মধ্যে অনেক সৎসঙ্গী নূপুর শর্মা আর তার সমর্থনে নেবে পড়া দলেদের ফেসবুকের লড়াই পালটা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে অশ্লীল কটুক্তির মধ্যে দিয়ে!!! ভাবলেও অবাক লাগে এরা সৎসঙ্গী!? নাকি সৎসঙ্গী নামে চক্রান্তকারী!? নাকি সৎসঙ্গী নামের এরা কলঙ্ক!? আশ্চর্যের বিষয় এই সমস্ত সৎসঙ্গীরা জানেই না হজরত মহম্মদ কে এবং হজরত মহম্মদের সঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কি সম্পর্ক! কিসের ভিত্তিতে নূপুর শর্মাকে সমর্থন? দেবাদিদেব মহাদেবকে অপমান করেছে বলেই নূপুর শর্মা হজরত মহম্মদকে অপমান অশ্রদ্ধা করবে!? কটুক্তি করবে!? এই নূপুর শর্মার মহাদেব ভক্তি? এই তার রুচি" এই তার শিক্ষা"এই তার প্রতিবাদের ভাষা!? তিনি কি ভুলে গেছেন তিনি জনপ্রতিনিধি তার একটা মন্তব্যে বিশ্ব জুড়ে আগুন লেগে যেতে পারে? সেদিন কোথায় ছিলেন নূপুর শর্মা যেদিন তাঁর দেবাদিদেব মহাদেব শিবলিঙ্গে কনডোম পড়িয়ে মজা লুটেছিল এক হিন্দু নারী ও এক শ্রেণীর হিন্দুরা!? সেদিন নূপুর শর্মার ধর্মীয় বোধে ঘা লাগেনি? ব্যথা পাননি? আহত হননি নূপুর শর্মা?

যাই হ'ক আমি এখানে নূপুর শর্মাকে নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি; আমি বসেছি সরাসরি আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের সঙ্গে খোলাখুলি খোলামেলা আলোচনা করতে।

আমার সৎসঙ্গী ভাইবোন! এই স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাদের কি করণীয়? আর এই আমি সৎসঙ্গীও কি হজরত মহম্মদকে অপমান অশ্রদ্ধা করবো? আমি কটুক্তি করবো!? এই আমি সৎসঙ্গী!? আমাদের ঠাকুর কি আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন!? তাঁর ২৫ হাজার বাণী আর কথোপকথন লিপিবদ্ধ বিভিন্ন গ্রন্থে এ সম্পর্কে কি করণীয় ব'লে যাননি? আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা আমাদের দেখিয়ে দিয়ে যাননি এরকম সময় উপস্থিত হ'লে আমাদের কী করণীয়? বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা প্রতিদিন হাতে কলমে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন না? আর শ্রীশ্রীঅবিনদাদা প্রতিদিন আমাদের দর্শন দিয়ে কি শেখাচ্ছেন এই অল্প নবীন বয়স থেকেই তা নবীনেরা শিখছে না!? একটি ২২বছরের তরুণের কি অভূতপূর্ব জীবন আমাদের নবীন সৎসঙ্গীদের চোখের সামনে; তবুও তাঁকে দেখে শিখছে না!? তাহ'লে নবীন সৎসঙ্গীরা কি করতে দেওঘরে যায় এবং শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সাথে দেখা করে!?

আর, বাংলাদেশে ও দেওঘরে ঠাকুরের ওপর, ঠাকুরের আশ্রমের ওপর কি প্রকার কতরকম অত্যাচার, কটুক্তি, কুৎসা, বদনাম, নিন্দা, হিংস্র আক্রমণ হয়েছে, হ'য়ে চলেছে তার ধারণা আছে এই ধরণের নবীন ও প্রবীন সৎসঙ্গীদের? এইরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কি করণীয় তার ধারণা আছে কি বাণের জলে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মত আবেগে ভেসে চলা সৎসঙ্গীদের?

এর উত্তরে বলতে হ'লে এককথায় বলতে পারি, আসুন হয় প্রকৃত সৎসঙ্গী হ'ন নতুবা সৎসঙ্গী পরিচয় থেকে বিরত থাকুন। প্রকৃত সৎসঙ্গী হ'তে গেলে প্রথমে জানুন কে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? আর কিই বা সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে শ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও রামকৃষ্ণের সঙ্গে।

আর, নূপুর শর্মা এবং আরো অনেক ঘটনা যেমন হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের আচরণ, হিন্দু দেবদেবীর প্রতি মুসলমানদের অবমাননা, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে কটুক্তি, হানাহানি ইত্যাদি নানা বিষয়ে সৎসঙ্গীদের কি অবস্থান হওয়া উচিত এবং কেমন চরিত্রের হ'য়ে ওঠা উচিত সে সম্পর্কে উদাসীন নিষ্ক্রিয় থেকে ফেসবুকে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে কথার ফোয়ারা তোলা আর নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিষ্ক্রিয় আন্দোলনের নামে ডুবে ডুবে জল খাওয়া বন্ধ করুক নবীন ও প্রবীণ সৎসঙ্গীরা সঙ্গে কোনওদিন কিছু না করা ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়ানো সৎসঙ্গীরা।

শেষ একটা কথায় বলবো, হে সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন! তোমারা ভুলে যেও না একথা যে তুমি সৎসঙ্গী! তুমি হিন্দু হও, মুসলমান হও, বৌদ্ধ হও, খৃষ্টান হও, শিখ হও, জৈন হও আর যে যে সম্প্রদায়েরই হও না কেন আর যে দেশের যে নাগরিকই হও না কেন সর্বাগ্রে মনে রেখো তুমি সৎসঙ্গী! সৎসঙ্গী!! সৎসঙ্গী!!!
( ১৪ই জুন'২০২২)

Sunday, April 23, 2023

কবিতাঃ দিলে দাও, না দিলে ব'লে দাও।

দিলে দাও আর না দিলে ব'লে দাও, যতই কাঁদো পাবে না।
আমার কিছুই চাই না, চাই শুধু তোমার সেবার সুযোগ আর অধিকার।
না দিলে বলো এ জন্মে হবে না পাওয়া আর। আমার কিছু চাই না,
চাই শুধু সাধারণ অতি সাধারণ রোগ মুক্ত, শোকহীন জীবন।
চাই গ্রহ দোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় আর দারিদ্রতা মুক্ত সহজ সরল
আড়ম্বরহীন জীবন। 
আর তা চাই আমার আপনজন, প্রিয়জনদের জীবনে।
আমার কিছু চাই না, 
শুধু চাই দুবেলা অতি সাধারণ মোটা দাগের খাবার।
যা পাবো তা জানি ও মানি এটাই আমার আছে ভাগ্যে, 
আর যা পাই না তা ধরেই নিই তা নেই আমার ভাগ্যে। 
এ আমার মোটেই দুর্ভাগ্য নয়,
এ আমার সৌভাগ্য যে দু'মুঠো দু'বেলা যাই-ই খাই যতটুকু খাই
পেট ভরে যাচ্ছে তা'তে। 
কারণ আমি জানি খাবারের জন্য জীবন নয়,
জীবনের জন্য খাবার। 
তাই দিলে ভালো, না দিলে ব'লে দাও
এখনও সময় আসেনি পাবার। 
আমার কিচ্ছু চাই না,
শুধু চাই, হ্যাঁ চাই, হে দয়াল তোমার কাছে চাই,
চোখ খুলে প্রতিদিন যেন দেখতে পাই এক সুন্দর ঝলমলে সকাল,
শুনতে পাই প্রিয়জনের হাসি মুখের কলরোল,
শুখা পেটে হ'লেও লাগবে তা ভালো।
ভেসে আসে যেন আমার চারপাশের ছোট্ট ছোট্ট সোনামা,
সোনাবাবাদের নীরোগ সুস্থ অমলিন আদরমাখা 
মুখের মিষ্টি মধুর বোল।
আমার প্রিয় আপনজন সবাই 
ভালো আছে জানলেই আমি সুস্থ থাকি,
খালি পেটেও মনে হয় আমি ভরপেট খেয়ে আছি।
নইলে তাদের ভালো না থাকা বা অসুস্থতার খবর শুনলে
ভরা পেটে সুস্থ শরীরেও আমি দুর্বল অসুস্থ হ'য়ে যাই।
রক্তের চাপ বেড়ে যায় হঠাৎ আর আমি হ'য়ে পড়ি বেহাল।
আমার তখন বড় কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট হয় দয়াল!
চোখের সামনে ভেসে আসে দৃশ্য সব ভয়াল।
চারপাশে আছে যত নেগেটিভ বাতাস 
এমন শক্তি দাও যাতে তুলে দিতে পারি 
নামের কঠিন দুর্ভেদ্য দেওয়াল আমার চারপাশে।
নামের ভেলায় চড়ে নাম করতে করতে চলে যাবো সবাইকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তাদের রোগ শোক দুঃখ কষ্ট হরণ ক'রে লুটিয়ে দেবো তোমার পায়
আর, ব'লে যাবো তাদের নামময় জীবনের কথা আর শান্তির ঠিকানা।
দিলে দাও নইলে ব'লে দাও আমার এ আবেদন হবে না অনুমোদন।
শবরীর মতো পারবো না থাকতে অন্তহীন অপেক্ষাতে।
হে দয়াল! শবরীর মতো নিও না কঠিন পরীক্ষা আমার,
আমি পারবো না জন্মজন্মান্তরেও শবরীর মতো হ'তে নিষ্ঠার আধার,
আমায় ক্ষমা করো দয়াল! জনম জনম আমি পুজিব শবরীরে
বুকে নিয়ে রাঙা চরণ তোমার।
কিন্তু কোনওকালে আমি পারবো না হ'তে শবরী;
সহজ সরল অকপট স্বীকারোক্তি এ আমার।
(লেখা ৭ই এপ্রিল'২০২৩)

গল্পঃ শয়তান ম্যাটাডোর!

আজও স্বপ্নে যা ফিরে ফিরে আসে।
প্রচন্ড গরমে একেবারে ঘেমে নেয়ে গিয়ে ঘুম থেকে ধড়ফড় ক'রে উঠে বসলাম বিছানায়। দ্রুত শ্বাস পড়তে লাগলো। প্রায় দমবন্ধ অবস্থায় বুকে হাত চাপা দিয়ে বসে রইলাম খাটের ওপর। সামনে কেউ নেই। বুকের বাঁ দিকটা ব্যাথা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ চুপ ক'রে বসে থেকে মনে মনে দ্রুতগতিতে ইষ্ট নাম জপতে লাগলাম। এই বুঝি প্রাণ বেরিয়ে যায়। বুকে কষ্ট হচ্ছিলো যদিও কিন্তু মনের কোণে একটা গভীর বিশ্বাস ছিল যে মাথার ওপর দয়াল ঠাকুর আছে আমার। এই কষ্টের মধ্যে ভিতরে ভিতরে কে যেন গেয়ে উঠলো, 'দয়াল আছে আর আমি আছি, ভাবনা কি আর আছে আমার।'

একটু ধাতস্থ হ'তেই বিছানা থেকে নেবে ঠাকুরঘরে এসে ঠাকুরের সামনে বসলাম। নির্নিমেষ চেয়ে রইলাম দয়ালের মুখের দিকে। স্পষ্ট দেখলাম সারা মুখে মিষ্টি এক অপূর্ব হাসি ছড়িয়ে দয়াল আমার দিকে চেয়ে হাসছে আর বলছে, 'ডর কিস বাত কি? ম্যায় হু না!' তারপরেই মনে হ'লো দয়াল বলছে, "ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক মনেতে রাখিস জোর, মাথায় আছেন দয়াল ঠাকুর, ভাবনা কিবা তোর।"

সত্যিই তো ভাবনা কিসের আমার। যার জীবনে আছে দয়াল, কি করতে পারে তাকে ভয়াল। ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঝাপসা হ'য়ে গেল দু'চোখ, আপনা আপনি বন্ধ হ'য়ে এলো চোখ আর চোখ গড়িয়ে নেবে এলো জলের ধারা। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটা। কেন যে এত স্বপ্ন দেখি!?

এখনও তেমন গরম পড়েনি। মার্চ মাসের প্রথম দিক। ফুল স্পীডে ফ্যান চললে ঠান্ডা লাগে, গায়ে হালকা একটা চাদর দিতে হয়। কখন যে রাতের অন্ধকার কেটে দিনের আলো ফুটে উঠে সকাল গড়িয়ে বিকেল হ'য়ে এলো টেরই পেলাম না। সারাদিন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো রাতে ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটা। এখন বিকেল চারটে বাজে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় বসে নিজের ঘরে একটা লেখালেখির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ছুটির দিন, ঘর ভর্তি লোক। ছেলে, বৌমা, মেয়ে, জামাই, ভাইপো, ভাগ্নে সবাই আছে। আমি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ ক'রে লেখালেখির কাজে ডুবে আছি। একাকী ঘরে কখন যে কান্না ভেজা গলায় বেরিয়ে এলো, 'দয়াল সেদিন যদি তুমি আমায় না বাঁচাতে তাহ'লে কি যে ভয়াবহ পরিণতি হ'তো আমার জীবনে তা আমি জানি না। কিন্তু কল্পনার চোখ দিয়ে তার ভয়াবহতা ভাবলেই বা স্বপ্নে ভেসে উঠলেই আজও আমি প্রায় মৃত্যুর কোলে ভেসে পড়ি। তুমি আছো তাই আমি আজও বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, বারবার মিষ্টি হাসি হেসে আমায় তোমার কোলে তুলে নাও বলেই আমি হৃদযন্ত্র বিকল না হ'য়ে সবল হৃদয়ে বেঁচে আছি আজও দয়াল!'

কিন্তু বারবার মনে প্রশ্ন জাগে ঘটনাটা কেন মনে পড়ে যায় বারেবারে দয়াল!? কোনও উত্তর ডিভাইন ডিক্টেশান হ'য়ে ভেসে আসে না শয়নে-স্বপনে-জাগরণে। শুধু কে যেন বলে ওঠে মন মাঝারে, 'ঘটনাটা মনে পড়ে এইজন্য, আজও অযাচিত তাঁর দয়ার কথা বলনিনে তো কাউকে!?' হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম! কে যেন প্রচন্ড জোরে সত্তা ধ'রে টান দিল। 'তাই তো! এই অভূতপূর্ব দয়ার কথা তো বলা হয়নি কাউকে! এতবড় দয়ার ঘটনা বারবার ভেসে আসা সত্ত্বেও কেন বলা হ'লো না কাউকে!?' বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হ'য়ে আসে আমার কন্ঠ। এটাকে কি সাড়া পাওয়া বলে!? ঠাকুরের কাছে জোর হাতে প্রণাম ক'রে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।

তাই আজ এত বছর পরে প্রায় ৪০/৪৫ বছর আগের এক সন্ধ্যাবেলার ঘটনা এখানে তুলে ধরছি। তুলে ধরছি স্বপ্ন আমায় ফিরিয়ে দিল দয়ালের যে দয়ার কথা তাই-ই এইখানে এই ঠাকুর কাহিনীতে।

তখন আমার বয়স ২৫/২৬ বছর হবে। প্রতিদিনের মতো বিকেলবেলায় শরীর চর্চা ক'রে স্নান সেরে ঠাকুরের প্রার্থনার শেষে ভরপেট টিফিন খেয়ে ফিটফাট হ'য়ে সাজুগুজু ক'রে সন্ধ্যেবেলায় বেড়িয়েছি আড্ডা মারতে। তখন যেখানে আড্ডা মারতাম সেই জায়গাটা ছিল একটা তিন রাস্তার মোড়। ঠিক মোড়ের এক কোণায় ছিল একটা বিরাট বটগাছ। আর বটগাছের পাশে ছিল পাশাপাশি শিবের আর শনির মন্দির। সেই বটগাছের নীচে বেদী বাঁধানো জায়গায় আমরা বন্ধুরা আড্ডা মারতাম দল মিলে সকাল সন্ধ্যে। পাশে ছিল রিক্সা স্ট্যান্ড। সেই রিক্সাস্ট্যান্ডের রিক্সাচালক ভাইদের আর বন্ধুদের নিয়ে বসার জায়গাটা বাঁধিয়েছিলাম আমরা সবাই মিলে। আর গাছের নীচে পাশের ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় একটা ছোট্ট ঘর তৈরি করা হয়েছিল যাতে বৃষ্টির সময় সেই ঘরে আশ্রয় নিতে পারি। আর সেইখানেই বটগাছের পিছনে যাদের বাড়ি (এখন বিরাট ফ্ল্যাট হ'য়ে গেছে সেই বাড়ি) সেই বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়ালের একেবারে কোণায় আমাদেরই বন্ধুদের একজন একটা গুমটি ঘর বসিয়েছিল। সেখানে নানারমকম চানাচুর, বাদাম, লজেন্স, বিস্কুট, সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি জিনিসে ভরা থাকতো গুমটি ঘরটি। ধীরে ধীরে বেশ জমে উঠেছিল দোকানটা। আর মোড়ের মাথায় রাস্তার আর একপাশে দু'দিকে দু'টো ছিল চায়ের দোকান। চায়ের দোকানে, গুমটি ঘরে, রিক্সাস্ট্যান্ডে, মন্দিরে মোড়ের মাথায় সবসময় সকাল বিকাল সন্ধ্যে রাত ভিড় লেগেই থাকতো। আর, সেখানেই ছিল আমাদের উঠতি বয়সের প্রায় দশ বারোজনের একটা আড্ডার দল। অন্যান্য আরও আমাদের ছোটো ও বড়ো গ্রুপের আড্ডা বসতো সেই চায়ের দোকানে।

আজ আর সেখানে সেই পুরোনো দিনের প্রাণমন মাতানো আড্ডা নেই, নেই সেই সরল হৃদয়ের কোলাহল কিন্তু নোতুন সাজে সেই পুরোনো মন্দির আছে, আছে বটগাছ, আছে অটোরিক্সার দাপটে প্রায় উঠে যাওয়া একটা দু'টো রিক্সা স্মৃতিকে আঁকড়ে ধ'রে। আর আছে পাশে একটা চায়ের দোকান নোতুন সাজে ফাস্ট ফুডের দোকান হ'য়ে। আজ যখন এই বয়সে ঐ মোড়ের মাথার পাশ দিয়ে যাই তখন ভেসে ওঠে পুরোনো দিনের অনেক ছবি। বন্ধুবান্ধবদের মুখগুলি ভেসে ওঠে একের পর এক। বন্ধুদের মধ্যে কারও সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ নেই। অহেতুক ইগোর লড়াইয়ে সব আজ বিচ্ছিন্ন; যে যার মত একেলা একেলা কাটায় সময়, শুধু দিনগত পাপক্ষয়।

আমার বন্ধুদের অনেকেই এখন নেই। বন্ধু শুদ্ধ মারা গেল ট্রেন এক্সিডেন্টে, সকলেই বলে সুইসাইড করেছে নাকি সে। এক ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে ছিল ছোট্ট সংসার। রিটায়ার করার অনেক বছর পর নাকি সাংসারিক ঝামেলায় সুইসাইডের পথ বেছে নিয়েছিল। সত্যি মিথ্যে আমার জানা নেই। বন্ধু পীযুষ মারা গেল কিডনি সমস্যায়। বিপ্লব ডিউটি থেকে ফেরার পথে সাইকেল থেকে পড়ে গেছিল রাস্তায়। চোট লেগেছিল কনুইয়ে। সেই চোট ধীরে ধীরে কয়েক বছর পর তাকে নার্ভের সমস্যায় একেবারে শয্যাশায়ী ক'রে দিয়েছিল। তারপর হঠাৎ একদিন না ফেরার দেশে চলে গেল চিরদিনের জন্য। সমীর ব্যবসায় প্রচন্ড মার খেয়ে তাদের বাড়ি বিক্রি ক'রে দিয়ে কোথায় যে চলে গেল হঠাৎ জানতেই পারলাম না। অনেকবছর পর ওরই এক ছোটোবেলার বন্ধুর সাথে রাস্তায় দেখা হওয়ায় জানতে পেরেছিলাম এখন ও নাকি গুজরাতে থাকে। এমনিভাবেই আর এক বন্ধু হীরু তার পুরোনো বাড়ি ফ্ল্যাট হ'য়ে যাওয়ায় সেখানে একটা ফ্ল্যাটে থাকে মেয়ে আর বৌকে নিয়ে। অনেকবার বলেছিল ওর ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্যে। আমার আর যাওয়া হ'য়ে ওঠেনি ব্যক্তিগত ও চাকুরীগত নানা অবাঞ্ছিত অসুবিধার কারণে। আমার একেবারে ছোটোবেলার বন্ধু অমল চাকুরী সূত্রে চলে গেছিল উত্তরপ্রদেশে মির্জাপুরে হিন্ডালকো (হিন্দুস্থান অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিতে পারচেজ ডিপার্ট্মেন্টে) কারখানায় চাকরী নিয়ে। দেখতে খুব সুন্দর ছিল। দারুণ ক্রিকেটার ছিল। স্টাইলিস্ট লেফট হ্যান্ড ব্যাটসম্যান ও স্পিন বোলার ছিল। আমরা একসঙ্গেই ক্রিকেট খেলতাম। দু'জনে ছিলাম একেবারে বিপরীত চরিত্রের। ও ছিল শান্ত প্রকৃতির আর আমি ছিলাম দূরন্ত। তাই ও ছিল স্পিন বোলার আর আমি ছিলার পেস বোলার। ও ছিল টেকনিক্যালি সিরিয়াস ব্যাটসম্যান আমি ছিলাম মারকাটারি, ধর তক্তা মার পেরেক মানসিকতার। রেনুকুটে সেখানে ও চাকরী পেয়েছিল এই খেলার সুবাদেই। আমাকে ও অনেকবার ডেকেছিল কিন্তু আমার যাওয়া হ'য়ে ওঠেনি নানা কারণে। এখানে এলে আমরা সারাদিন কাটাতাম একসঙ্গে। তারপর চাকরী রিটায়ারের পর চলে এসেছিল কলকাতায়। এখানে ভদ্রকালীতে যে বাড়ি ছিল সেই বাড়ি ফ্ল্যাট হ'য়ে যাওয়ায় সে দমদম অঞ্চলে ফ্ল্যাট কিনে চলে যায়। তারপর আবার হঠাৎ ফিরে যায় সেই পুরোনো মির্জাপুর রেনুকুটে। সম্ভবত সেখানে বৌয়ের চাকরীর ব্যাপারেই তাকে ফিরে যেতে হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনও যোগাযোগ ক'রে উঠতে পারিনি আজ পর্যন্ত। আজও মনে পড়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার ঘটনাটা।
সে অনেকদিন আগের ছোটবেলার কথা। তখন কত বয়স ঠিক মনে নেই। তবে সম্ভবত ১০-১২ বছর বয়স হবে। আমরা বিকেলে আমাদের বাড়ির সামনের খেলার মাঠে খেলছিলাম। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়ের ভিড়ে আমরাও ছিলাম। তখন বিকেলবেলা বাচ্চা বুড়োর ভিড়ে গমগম করতো খেলার মাঠ। তখনও কেউ কাউকে চিনি না। মাঠে খেলতে খেলতে একটা লাট্টু পেয়েছিলাম। একই সঙ্গে দু'জনের চোখ পড়েছিল লাট্টুটার দিকে। সেই নিয়ে শুরু হয়েছিল কাড়াকাড়ি। কে নেবে লাট্টূটা। কাড়াকাড়িতে ও আমাকে লাট্টুটা দিয়ে দিল। তারপর আর কিছু না ব'লে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনটা আমার খারাপ হ'য়ে গিয়েছিল। এখনও স্পষ্ট মনে আছে আজ থেকে ৬০বছর আগের ঘটনা। আমি দৌড়ে গেলাম ওর দিকে। পেছন থেকে ওর হাত ধ'রে ওকে ডাকলাম। ও ঘুরে দাঁড়ালো। আমি ওর হাতে লাট্টূটা দিয়ে বললাম, এইটা তুমি নাও। এইটা তোমার লাট্টূ। ও মিষ্টি হেসে আমাকে বললো, না, না ওটা তুমি রাখো। ও অপূর্ব সুন্দর ছিল। আর ঐ সুন্দর মুখে মিষ্টি হাসিটা যেন আমাকে জয় ক'রে নিল এক মুহূর্তে। আমি ওকে জড়িয়ে ধ'রে বললাম, আজ থেকে আমরা দু'জনে বন্ধু। তুমি লাট্টূটা নিলে আমি খুব আনন্দ পাবো। ও তখন বললো, তাহ'লে এটা আমাদের দু'জনের লাট্টূ। সেই থেকে রোজ বিকেলে ও মাঠে এলে লাট্টূটা নিয়ে আসতো। আর এমনিভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল আমাদের বন্ধুতে। যা আজও ৬০বছর ধ'রে অটুট। কিন্তু সেই বন্ধুর সঙ্গে আজ দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। কথাগুলো মনে পড়লে বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। বিষন্নতায় ভরে যায় মন। ভয় লাগে প্রাণপাখি বুঝি যায় বেরিয়ে।

আরও অনেকেই ছিল বন্ধু। তাদের মধ্যে আনি ছিল সুপুরুষ স্ট্রং। কিন্তু হঠাৎ অজানা এক জ্বরে চলে গেল ওপারে। জ্বর এমন বাড়তে লাগলো যে হাসপাতালে বরফ চাপা দিয়েও সে জ্বর কন্ট্রোলে আনা যায়নি। প্রচন্ড প্রাণবন্ত তাপস মৃত্যুর কিছুদিন আগে ভ্যাগাবন্ডের মতো ঘুরে বেড়াতো। কোথায় কোথায় যে চলে যেত হঠাৎ হঠাৎ বাড়ির কাউকে কিছু না ব'লে তা জানা যেত না, পরে হঠাৎ একদিন এসে হাজির হ'তো। সেও চলে গেল হঠাৎ ক'রে কাউকে কিছু না জানিয়ে একেবারে চিরদিনের জন্য আর হঠাৎ ক'রে ফিরে আসবে না বলে। খুব ভালো গানের গলা ছিল ওর। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দেখেছিলাম শ্রীরামপুরে রেললাইনের ওপর একা একা বসে আছে শীতের দুপুরে। একদিন শ্রীরামপুরে লেবার কমিশনারের অফিসে গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে। স্টেশনে ট্রেন থেকে নেবে লাইন পার হওয়ার সময় তাপসকে রেললাইনের ওপর ওরকম একা বসে থাকতে দেখে অবাক হ'য়ে গিয়েছিলাম! সেদিন কোনও কথা বলার সুযোগ বা সময় ছিল না হাতে। কিন্তু তারপর হঠাৎ একদিন শুনেছিলাম তার আর না থাকার কথা। এই লেখা লেখা পর্যন্ত কমল আর শ্যামলের খবর কিছুই জানি না। কমল সবসময় দুখী দুখী মুখ ক'রে থাকতো। দেখা হ'লে 'কেমন আছিস' জিজ্ঞেস করলেই করুণ মুখে বলতো, 'ভালো নেই রে'। আর তারপরেই একটা ভালো না থাকার কাহিনী বলতো। আমিও বাধ্য শ্রোতার মতো শুনে যেতাম ওর ভালো না থাকার গল্প। একদিন কমলকে বলেছিলাম, চল ঘুরে আসি। নিয়ে গেছিলাম দূর্গাপুর জ্যাঠাতুতো দিদির বাড়ি। ঘর থেকে বেরোতে চাইতো না, ঘরকুনো ছিল। যেতে যেতে তাৎক্ষণিক দু'একটা লাইন লিখে ওকে গানের সুরে তাতিয়ে রাখার জন্য বলেছিলাম, 'মোরা দু'জনাতে যাই। কোনখানে? ঐ বনে। কিসের টানে? কে জানে। বনে কি আছে? ব'নে? বনে বাঘ আছে, ভাল্লুক আছে, আছে ভাম বিড়াল! তোর আর আমার মতো।' ব'লেই হেসে উঠতাম। হো হো ক'রে হেসে উঠতো কমলও। জানি না তারা আদৌ আছে কি নেই এই নশ্বর পৃথিবীতে। মনে পড়ে গেল আর এক বন্ধু রূপকের কথা। সেও অমলের মতো রেনুকুট হিন্ডালকো কারখানায় কাজ করতো টাইম কিপার হিসেবে। অমলকে ঐ নিয়ে গিয়েছিল রেনুকুটে। শুনেছি রূপক জীবনে নাকি প্রচুর টাকা কামিয়েছিল। রিটায়ারের পরও কোথায় নাকি কাজ করেছে। আবার কিসব টেলিফিল্মেও নাকি টাকা ইনভেষ্ট করেছিল। তারপর হঠাৎ কঠিন অসুখে রোগে ভুগে চলে যায় একদিন।

খুব কাছের বন্ধুরা ক্যারিয়ার তৈরীর সময়ে অহং প্রাবল্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দীর্ঘদিন কাটিয়ে একে একে চলে যায় এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আর আজও যারা আছে তাদের সম্পর্কে কিছুই জানি না আজ আর। একটা চিনচিনে ব্যাথা বুকের মাঝে কামড় বসিয়ে যায় মাঝে মাঝেই।

যাই হ'ক এখন আসি সেই স্বপ্নে ভেসে ওঠা আজ থেকে ৪০/৪৫ বছর আগে ঘটা ঘটনার কথায়।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও সন্ধ্যেবেলায় বেড়িয়েছি আড্ডা মারবো ব'লে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি সেই মোড়ের মাথায় যেখানে আমরা বন্ধুরা আড্ডা মারি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎ কারও ডাকে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা ম্যাটাডোরের ভিতর থেকে কে যেন ডাকছে। দাঁড়িয়ে দেখলাম ড্রাইভারের সিটে বসে আছে গোপাল। 
আমার ছোটোবেলার আর এক বন্ধু। আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। ওরাও পাঁচ ভাই আর আমরাও পাঁচ ভাই ছিলাম। খুব যাতায়াত ছিল উভয়ের বাড়িতে উভয়েরই ছোটোবেলায়। আমাদের দুইবাড়ির মাঝে একটা ছোট প্লট ফাঁকা ছিল। আমরা ছোটোবেলায় সেখানে সবাই মিলে ক্রিকেট খেলতাম, ফিস্ট করতাম। তারপর একদিন ফাঁকা জমিতে বাড়ি উঠে গেল। খুব সুন্দর বাড়ি হ'লো। লোক এলো। বাড়ির ছেলে একদিন ডাক্তার হ'লো। গোপালরাও চলে গেল নিজেদের বাড়ি ক'রে। সেখানেও বাড়ির মালিক এসে গেল। হাইকোর্টের এডভোকেট। এখন সব অতীত। হাইকোর্টের এডভোকেট মারা গেল। ফাঁকা জমিতে তৈরি হওয়া বাড়ির মালিক মারা গেল। চারপাশ ভরে গেল নিস্তব্ধতায়। গোপাল্রাও বাড়ি ক'রে চলে গেছিল অন্য জায়গায়। তবে পথেঘাটে দেখা হ'তো।
যাই হ'ক সেই ম্যাটাডোর গাড়িতে বসে থাকা গোপালের ডাকে সেই গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। বসলাম ওড় পাশের সিটে। ও সারাদিনের শেষে বাড়িতে ফিরছিল। যাবার পথে আমায় আসতে দেখে গাড়ি থামিয়ে আমায় ডেকে নিল। গোপাল জানে আমি কোথায় আড্ডা মারি। আর ও যাবেও ঐ রাস্তা দিয়ে বাড়িতে। এইখান থেকেই শুরু হল নিয়তি। ঠাকুরের কাছে জেনেছিলাম নিয়তি মানে নিয়ে যায়। হঠাৎ গ্রামের অন্ধকার ফাঁকা রাস্তায় কবরখানার পাশ দিয়ে বিশাল তেঁতুল গাছের নীচ দিয়ে যাবার সময় যেমন দুষ্ট আত্মা ভর করে ঠিক তেমনি সন্ধ্যায় ঐ ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির মধ্যে থেকে নেবে এসে নিয়তি যেন আমার ঘাড়ে এসে বসলো। তারপর আমাকে নিয়ে চললো তার পূর্বনির্ধারিত ডেরায়। আমি গাড়িতে উঠেই গোপালকে বললাম, তুই সর আমি চালাবো। গোপাল হাসতে হাসতে বললো, 'ধুর তুই কি চালাবি? তুই চালাতে পারিস নাকি? তুই পাশে বস, আমি তোকে মোড়ের মাথায় নাবিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যাবো।' আমি নাছোড়বান্দার মতো তাকে জোড়াজুড়ি করতে লাগলাম গাড়ি চালাবো ব'লে। তখন বুঝিনি নিয়তি তার খেলা শুরু ক'রে দিয়েছে আমার শরীরে-মনে। সেইসময় হিন্দমোটরের অ্যাম্বাসাডার গাড়ি কনভয় ড্রাইভাররা নিয়ে যেত বাই রোড অন্যান্য রাজ্যে। সেখানে অনেক জানাশোনা ও বন্ধুবান্ধবও গাড়ি চালাতো। সেই সূত্রে কখনও সখনও গাড়ি একটু আধটু চালাতাম। সেই কনফিডেন্সেই স্টিয়ারিং হাতে নিলাম। তখন ভর সন্ধ্যে। রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে লোক চলাচল করছে। গোপাল সরে এসে পাশের সিটে আমার গা ঘেঁষে বসলো আর পা রাখলো ব্রেকে। আমি বললাম ব্রেক থেকে পা সরা। ও বললো, তুই চালা আমি ব্রেকে পা দিয়ে আছি। আমি হেসে বললাম, আমার ওপর ভরসা নেই? যাই হ'ক আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম। গাড়ি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠলো। ধীরে ধীরে ক্লাচ ছেড়ে এক্সেলেটার দাবাতেই গাড়ি এগিয়ে চললো ধীরে ধীরে সামনের দিকে। তারপর কখন যে গাড়িটা স্বাভাবিক গতি ছাড়িয়ে জোরে ছুটে চললো বুঝতেই পারলাম না। রাস্তায় লোকজনের ভিড়। সেই ভিড় কাটিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে দ্রুতগতিতে। গাড়ির গতি দেখে লোকজন সরে যাচ্ছে রাস্তা ধারে। আর পিছন থেকে ভেসে আসছে মাঝে মাঝেই চিৎকার, গালাগালি। গোপাল ব'লে উঠলো, বাপী, গাড়ি আস্তে চালা, স্পীড কমা। আমায় তখন কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে! পাটা ভারি হ'য়ে গেছে। এক্সেলেটর থেকে পা উঠছে না। গাড়ি এগিয়ে চলেছে বিদ্যুৎ গতিতে। আর কিছু দূর গেলেই সেই মোড়, যেখানে আমি আড্ডা মারি। দেখতে দেখতে এসে গেছে মোড়। গাড়ি সোজা রাস্তা ছেড়ে বাঁক নেবে বাদিকে। মোরের মাথায় মানুষে জটলা। ঠিক মোড়ের মাথায় ঢোকার মুখে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। গাড়ি প্রায় ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে। এক্সেলেটার থেকে কে যেন পা সরিয়ে দিল। ব্রেক চাপতে গিয়ে ব্রেক পেলাম না। কারণ ব্রেকের ওপর পা রেখেছিল গোপাল। সেও ঘটনার ভয়াবহতায় পাথর হ'য়ে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিল ব্রেক চাপার কথা। আমি স্টিয়ারিং ঘোরালাম। প্রচন্ড গতিতে গাড়ি টার্ন নিল বাঁদিকে। মোড়ের মাথায় জমা হওয়া মানুষ গাড়ির গতি দেখে ছিটকে যেতে লাগলো। গাটড়ি পুরোপুরি বাঁক নিতে পারলো না। ছুটে চললো বটগাছের কোণায় যেখানে গুমটি দোকান আছে সেদিকে। আমি অসহায়ের মতো দেখলাম দোকানের সামনে ক্রেতার ভিড় আর গুমটি দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে আছে রবিন। বন্ধুর দোকান ও চালাতো। সেইদিকে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলেছে ম্যাটাডোর। আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম আমার গাড়ি সোজা গিয়ে ধাক্কা মারছে সেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ও দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা গুমটিতে। আমি ভয়ে আঁতকে শিউড়ে উঠলাম নিশ্চিত ভয়াবহ পরিণতি দেখে। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য আমি দ-য়া-ল ব'লে চেঁচিয়ে উঠলাম আর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাটাডোর গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারলো গুমটিতে। গাড়ি স্থির হ'য়ে দাঁড়িয়ে গেল। প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় নেশাগ্রস্থের মতো গাড়ির দরজা খুলে নেবে এলাম ভয়ঙ্কর বীভৎস এক দৃশ্য দেখবো ব'লে। গাড়ি থেকে নেবে দেখলাম দোকানের সমস্ত কাঁচের জার মাটিতে ভাঙাচোড়া অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, লজেন্স, চানাচুর, ঝুড়িভাজা, মুড়ি, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি যা যা দোকানে ছিল সব রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার অসবের কোনদিকে নজর নেই। শুধু ভাবছি গাড়িটার সামনের দৃশ্যটার কথা। গাড়ীটা গুমটিকে চেপ্টে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনার চোখে দেখছি দোকানের সামনে দাঁড়ানো ছোটোবড় ক্রেতা আর দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা রবিনের কথা। গাড়িটা গুমটিটাকে একেবারে দেওয়ালে ঠেসে চেপ্টে দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম সামনে ও দোকানে কেউ নেই। পাশ দিয়ে হঠাৎ কার ডাকে চমকে উঠলাম। দেখলাম পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রবিন। হাসিমুখে বলছে জোর বেঁচে গেছি বাপীদা। কারও কিছু হয়নি। আমি আকাশের চেয়ে অস্ফুটে ব'লে উঠলাম, দয়াল!!!!! চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো জলের ধারা। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিলাম। জটলা হওয়ার আগেই কপট গাম্ভির্যে গম্ভীর গলায় গোপালকে বললাম, গোপাল তুই গাড়িতে ওঠ, গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যা। আমি বাকীটা সামলে নেব। গোপাল প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিল। কি জানি পাব্লিকের মতিগতি কোনদিকে ঘুরে যায়। তাই সে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ব্যাক ক'রে সামনে রাস্তা দিয়ে চলে গেল। আর জটলা ক'রে থাকা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ওখানে যত রিক্সাচালক ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে নিমেষে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা বোতল, টিন, কাগজের ঠোঙা, খাবার সমস্ত কিছু সরিয়ে ফেলে রাস্তা পরিস্কার ক'রে ফেলা হ'লো। বোঝায় গেল না কয়েক মিনিট আগে ভয়ঙ্কর এক দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হ'য়ে গেল। তারপর রবীনকে বুকে জড়িয়ে ধ'রে বললাম কোনও চিন্তা না করতে। রবিন বললো, আমি বেঁচে গেছি এইটাই আমার ভগবানের দয়া। গাড়িটা যখন টার্ন নিচ্ছে তখন দেখলাম গাড়িটা দোকান লক্ষ্য ক'রেই প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছে। তাই দেখে আর কিছু না ভেবেই চিৎকার ক'রে সবাইকে সরে যেতে বলে রাস্তার পাশে ঝাঁপ দিলাম। আর তখনি প্রচন্ড গতিতে এসে ধাক্কা মারলো দোকানটাতে। আমি লজ্জায় চুপ ক'রে মনে মনে ঠাকুরকে ডাকতে লাগলাম। আজ এই যৌবনে প্রমাণ পেলাম দয়ালকে যে ধ'রে রাখে তাকে কেউ মারতে পারে না। রবীন দোকানে হাত দিয়ে হেসে বললো, গুমটিটা নড়বড়ে ছিল বাপীদা, গাড়ির ধাক্কায় একেবারে সেট হ'য়ে গেছে। গুমটির কাছে গিয়ে দেখলাম সত্যিই প্রবল ধাক্কায় গুমটিটা একেবারে দেওয়ালের সঙ্গে মজবুত হ'য়ে সেঁটে গেছে। দয়ালের দয়ায় সব মধুরেণ সমাপয়েৎ হ'লেও রবীনের মনটা খারাপ দেখে বুঝলাম ওর অনেক লস হ'য়ে গেছে। কিন্তু মুখ ফুটে সে আমাকে কিছু বললো না। আমি বললাম, রবীন আমি আছি, তুমি চিন্তা ক'রো না। পরেরদিন আমি রবীনকে ১০০০হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলাম দোকানটাকে নোতুনভাবে সাজাতে।

তারপরে বেশ কিছুদিন আমাকে ঐ ঘটনা আচ্ছন্ন ক'রে রেখেছিল। ঘুমের মধ্যে তেড়ে আসতো শয়তান ম্যাটাডোর। ঘটনার স্বাভাবিক বীভৎস পরিণতি যা হওয়ার কথা ছিল তা ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠতো। ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠতো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতার ক্ষতবিক্ষত দেহ আর পা ঝুলিয়ে বসা রবীনের মর্মান্তিক দৃশ্য! নীচের অংশটুকু একেবারে থেঁতলে পেষ্ট হ'য়ে গেছে গুমটির কাঠের দেওয়ালে। দু' পায়ের পাতা দুটো পড়ে রইছে নীচে। আর কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশটা গুমটির দেওয়ালে বিস্কুট চানাচুড়ের শেলফের সাথে সেঁটে রইছে। যেন ঘুমিয়ে আছে রবীন। ঘুমোতে পারতাম না। ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসতাম ভয়ে ভয়ঙ্কর এক অপরাধ বোধ আর পুলিশ, জেল হাজতের কথা ভেবে। পুলিশ কাকে অ্যারেষ্ট করতো!? আমাকে নাকি গোপালকে!? নাকি দু'জনকেই!?

সেদিন থেকে আজও এই প্রায় ৫০বছর ঐ ঘটনা মনে পড়ে আর খালি মনে হয় হে দয়াল! সেদিন যদি তুমি না থাকতে আজ আমার কি করুণ দশা হ'তো? তখনি মনে পড়ে দয়াল তোমার কথা। তুমি বলেছিলে, "আমি তোদের প্রতিমুহূর্তে কত ছোট বড় ঘটনা থেকে যে রক্ষা ক'রে চলেছি তার সীমা পরিসীমা নেই।' আর মনে পড়ে তোমার প্রিয় শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের একটি সংলাপ। যা তুমি প্রায়ই বলতে; সেটি হ'লো,
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"
( লেখা ২৫শে মার্চ'২০২৩)

উপলব্ধি ৪৩

কে দায়ী?
অনেকদিন ধ'রেই দেখতে পাচ্ছি ফেসবুকে কিছু মানুষ শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে কটু অশালীন মন্তব্য ক'রে যাচ্ছে। ঠাকুরের দীক্ষিত কেউ কিছু পোষ্ট করলেই সেই পোষ্টে এসে "গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল"-এর মত পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। এদের উদ্দেশ্যই থাকে ঠাকুর বিষয়ক পোষ্টে সূচ হ'য়ে ঢুকে ফাল হ'য়ে বেরোবার মত কমেন্টের মধ্যে প্রবেশ করো আর তারপর উত্তর দিলেই মনের সুখে ঠাকুরের বাপবাপান্ত ক'রে ছাড়ো। ঠাকুরকে অপমান, লাঞ্ছনা করবো, যেনতেনপ্রকারেন কুৎসা করবো। এদের মধ্যে আবার কিছু আছে যারা পৈতৃক সম্পত্তির মতো হিন্দু ধর্মকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ভাবে। হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করবার সোল এজেন্সি এরা নিয়ে নিয়েছে "গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল"-এর মত। এরা মনে করে সনাতন হিন্দু ধর্মের এরাই মাইবাপ! এদের ছাড়া হিন্দু ধর্ম অক্সিজেন পাবে না, অচিরেই ধ্বংস হ'য়ে যাবে। তাই 'সনাতন হিন্দু ধর্ম, হিন্দু ধর্ম' ক'রে এরা ছুঁচোর কীর্তনের মত ঢাক পেটায়। ঢাক পেটায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের বিরুদ্ধে গায়ের ঝাল মিটিয়ে বিরাট ঢাক বাদকের মত, ঐ ব্যাঙ মায়ের মত। ব্যাঙ মায়ের গল্প আমরা জানি। ব্যাঙ মা তার বাচ্চাদের ঘরে রেখে বাইরে গেছে খাবার সংগ্রহের জন্যে। ঘরে বাচ্চারা একা। আর ঠিক এই সময় ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক হাতি। ঘরের গর্তের মধ্যে দিয়ে সেই বিশাল শরীরের হাতিকে যেতে দেখে বাচ্চারা কুপোকাত। কোনোদিন এতবড় জন্তু তারা দেখেনি। পোকামাকড় যা এনে মা খাইয়েছে তাই দেখেছে আর দেখেছে বড় জীব বলতে মাকেই। এই বি-শা-ল শরীরের জীবকে দেখে তারা বুঝে উঠতেই পারছে না আসলে এটা কি!!! তাই তারা ভয়ে অন্ধকার গর্তের গভীরে ঢুকে গিয়ে মায়ের অপেক্ষায় ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সবাই একসঙ্গে জড়াজড়ি ক'রে জড়োসড় হ'য়ে বসে রইলো। তারপর একসময় মা এসে যখন তার ছেলেমেয়েদের কোনও সাড়া না পেয়ে গর্তের ভিতরে গিয়ে এই অবস্থা দেখলো তখন মা ব্যাঙ অবাক হ'য়ে জিজ্ঞেস করলো ছেলেমেয়েদের কি হয়েছে; কেন এমন করছে তারা তা' জিজ্ঞেস করলো। তখন ছেলেমেয়েরা মাকে দেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হ'য়ে মাকে ঘটনার কথা জানালে মা তাদের জিজ্ঞেস করলো, কতবড় জন্তু? আমার থেকেও বড়? ছেলেমেয়েরা বললো, না মা তোমার থেকে অনেক বড়। কত বড়? এত বড়? বলেই মা নিজের শরীরকে ফোলাতে লাগলো। ছেলেমেয়েরা বললো, না, না মা! আরো বড়!! এর থেকেও বড়? ব'লে আরো ফোলাতে লাগলো ব্যাঙ মা! ছেলেমেয়েরা বললো, আ-রো বড়। এইভাবে মা ফোলায় আর ছেলেমেয়েরা বলে, আ-রো, আ-রো আ-রো ব-ড়-ওওও!!!!!! মা ব্যাঙ তার শরীর ফোলাতে ফোলাতে অবশেষে একসময় ফটাস ক'রে ফেটে মরে গেল। এই হয়েছে তথাকথিত হিন্দু ধর্ম, সনাতন হিন্দু ধর্ম ও বিভিন্ন ধর্মবাদীদের অবস্থা। তারা কুয়োর মধ্যে থেকে আকাশ দেখা ব্যাঙের মত কুয়োর বাইরের বিশাল অন্তহীন আকাশের বুকে ঘাই মারতে আসে!!!!!! ধর্মের নামে পচা ডোবার মত সংকীর্ণ ও অধর্মীয় দমবন্ধ গণ্ডির মধ্যে হাবুডুব খাওয়া ও আবদ্ধ থাকা অন্ধ, কালা, বোবা ধার্মিক তমসার ওপার থেকে ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভূত অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষ পরমাত্মাকে যায় ধর্ম শেখাতে!!!!! আর এই যে তথাকথিত হিন্দু ধর্ম, সনাতন হিন্দু ধর্মের ঢাক পেটানোর নামে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে কুৎসা, অপমান, নিন্দা, অশ্লীল গালাগালির ঢাক পেটায় এই ঢাক পেটানোর অগ্রণি ভুমিকায় আছে একশ্রেণীর বাঙালী হিন্দু!!!!!! আর এদের কুৎসার জবাব দিতে গিয়ে এদের সংগে নিজের অজান্তেই তর্কে জড়িয়ে যায় ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীরা। সোনার সৎসঙ্গী বললাম কারণ ঠাকুর সৎসঙ্গীদের তাই বলতেন, সেই চোখেই দেখতেন। আবার নিজেদের মধ্যেও সৎসঙ্গীরা একে অপরের সংগে কোন্দলে জড়িয়ে যান। ঠাকুরকে একবার একজন ভক্ত নিজেদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া করা নিয়ে দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, 'ঠাকুর আপনি ব'লে দিন কোন দলে যাবো?' উত্তরে ঠাকুর ব্যথাতুর কন্ঠে বলেছিলেন, 'কোন্দলে যেও না মণি, কোন্দলে যেও না।' তাই বলি,
যখন দেখি কোনও গুরুভাই তাঁর সন্তানের জন্মদিনে শ্রীশ্রীঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' আয়োজন করেছে তখন ভাবি, বাঃ! এমন সংস্কৃতি, শিক্ষা দেখে ছোটোবেলা থেকে আগামী প্রজন্ম বড় হচ্ছে!! আর এই দেখে আশায় বুক বাঁধতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে ক'রে বাঁচতে, নতুন ক'রে স্বপ্ন দেখতে যখন দেখি The greatest phenomenon of the world SriSriThakur-এর বিরুদ্ধে নাগ-নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস আর সেই বিষাক্ত নিশ্বাসের মাঝে বাবামায়ের হাত ধ'রে আজকের ছোট্ট শিশুরা বুক ভরে নিচ্ছে নিঃশ্বাস আর তাই দেখে মনে হয় 'মরিতে চাহি না আমিও এই সুন্দর ভুবনে'।
যাক যে কথা বলতে চাই ঠাকুরের সুন্দর সুন্দর লেখা, ছবি পোষ্টের মাঝে এই ঢাক পেটানো কদর্য মনের মানুষেরা এমনকি ঠাকুরের দীক্ষিত মানুষেরা যারা ঠাকুর পরিবার নিয়ে, ঠাকুর আত্মজ নিয়ে যখন নোংরা কমেন্ট করে তখন যারা তার বিরোধিতায় রিঅ্যাক্ট করে তাদের কাছে সবিনয়ে জানতে ইচ্ছে করে, এত রিঅ্যাক্ট করার কোনও দরকার আছে কি? এক ফোঁটা চনা যেমন এক কড়াই দুধ কেটে দেবার জন্যে যথেষ্ট ঠিক তেমনি এত সুন্দর পোষ্টের মাঝে এরকম নোংরা মানসিকতায় ভরপুর বিকৃত মানুষের কমেন্ট নিয়ে আলোচনা পরিষ্কার মনকে কি নোংরা ক'রে তোলে না? এই সমস্ত জন্ম বিকৃত মানুষের সংগে কেউ ঝগড়া, তর্কে যায়!? এ তো আলোচনায় চনা ফেলে দেবার জন্য একেবারে উপযুক্ত লোক তা' বুঝেও বুঝি না? এদের কমেন্ট ব'লে দেয় এরা মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত, চরম হতাশাগ্রস্ত সীমাহীন নেগেটিভ মানসিকতয় ভরপুর রক্তদোষে দুষ্ট মানুষ! এদের রক্তে অশ্রদ্ধার চাষ হয়। অশ্রদ্ধা অসম্মান বাহিত রক্তে এদের জন্ম। এরা জন্মদুষ্ট। এরা পরিবেশগতভাবেও দুষ্ট! ছোটোবেলা থেকে নরক সদৃশ পরিবেশের এরা প্রোডাক্ট!!!!!! জন্মগত ও পরিবেশগত উভয়দিক থেকে বিকৃতির ভাইরাসে আক্রান্ত এরা। তাই এদের সংগে আলোচনায় গিয়ে ঠাকুরকেই ছোটো করা হয়, অপমান করা হয়, করা হয় সুন্দর পোষ্টের শ্রাদ্ধ। জন্ম বিকৃত ও রক্তদোষে দুষ্টদের ধর্মের কথা শোনাতে কেউ যায় !? আমরা কি শুনিনি সেই প্রবাদ, "চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি"!? আমরা সবাই জানি বিশ্বের কত রথী মহারথীরা ঠাকুরের সংস্পর্শে এসে ঐ প্রবাদের মত---- "হাতি ঘোড়া গেল তল আর মশা বলে কত জল"---- তলিয়ে গেল আর ঐ জন্মদোষে দুষ্ট মানুষেরা বলে কিনা কোথায় জল? সাঁতার কাটতে এসেছে নর্দমার কীট মহাসমুদ্রের বুকে!!!!!! এর জন্যে দায়ী কে? দায়ী আপনি। দায়ী আমি। কেন এদের কথার উত্তর দিই আমরা? কেন এদের সংগে কথা বলি? এদের মত মানুষ তো সৃষ্টির প্রথম থেকেই ছিল! এই সমস্ত মানুষ তো আজকে শুধু যে তাঁকে অপমান, লাঞ্ছনা করছে তা'তো না!!!!!!! যতবার তিনি এসেছেন ততবার এরা পিছন পিছন এসেছে তাঁকে অপমান, অশ্রদ্ধা করতে। এ তো একজন্মের ব্যাপার নয়!!! এরা এই জন্মে এসে যে ঠাকুরকে গালাগালি করছে তা নয় এরা জন্মজন্মান্তর জীবন্ত ঈশ্বরকে গালাগালি করবার জন্যেই জন্মেছে ও জন্মাবে। এমনই অভিশপ্ত জীবন এদের! এদের আত্মা বন্দী হ'য়ে আছে জন্মজন্মান্তর অভিশপ্ত হ'য়ে! জানি না এদের মুক্তি কিভাবে হবে বা কবে হবে? ঠাকুরই জানেন এদের সম্পর্কে। এদের ঠাকুর সম্পর্কে বলা মানে "উলুবনে মুক্তো ছড়ানো"। এরা হ'লো সেই "অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী"। তাই এরা ফাঁকা কলসীর মত আওয়াজ বেশী করে। যত প্রবাদের জন্ম হয়েছে সব এই সমস্ত মানুষের চরিত্রের ওপর ভিত্তি ক'রে। তাই এদের মত মানুষের সংগে কথা বলা তো দূরের কথা মুখ দর্শন পর্যন্ত না করা শ্রেয়। সাবধান থাকতে হবে এই সমস্ত মানুষ থেকে। নইলে এরা সুযোগ পেলেই আমার, আপনার ও আমার, আপনার ঠাকুরের গায়ে গু লেপটে দেবে। এরা হাতে গু দলা পাকিয়ে খেলা করে আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন মহাত্মা শুধু নয় কখন স্বয়ং পরমাত্মার গায়ে গুয়ের দলা ছুঁড়ে মারবে!!!!!!! আর এর জন্যে দায়ী থাকবেন ও থাকবো আপনি, আমি।
তাই আবার বলি, মুখ যেমন মনের আয়না, যেমন প্রবাদ আছে Morning shows the day, উঠন্তো মুলো পত্তনেই চেনা যায় এই প্রবাদ্গুলির অন্তর্নিহিত অর্থ যেমন, ঠিক তেমনি কোনও ব্যক্তির কমেন্ট ও পোষ্ট করা বিষয়বস্তু আর বিষয়বস্তুর ভাষা, তার উপস্থাপনা, তার ধরণ দেখে একজনের জীবনের মান, রুচি, বোধ, শিক্ষা, জ্ঞান ইত্যাদি বোঝা যায়, বোঝা যায় তার জীবনে এসবের গভীরতা। তাই সমঝদারোকে লিয়ে ইসারা যেমন কাফি হোতা হ্যায়, যেমন একটা ভাত টিপলেই সব ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা বোঝা যায় ঠিক তেমন এই ক্ষেত্রেও, এই ঘৃণ্য মানুষগুলোর জীবনের ক্ষেত্রেও এই কথাগুলি প্রযোজ্য মনে ক'রে নিজেকে আলোচনা থেকে সরিয়ে নিতে হয়। অকারণ পাগলের সাথে কথা ব'লে নিজেকেই পাগল প্রমাণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। মেথরের সাথে ঝগড়া করলে লোকে আপনাকে, আমাকেই বলবে 'গুয়ে দা'। কারণ মেথরের সর্বাঙ্গে গু লেগে থাকাটা তার কাজের ধরণের মধ্যেই পড়ে। এতে না ওর কোনও গন্ধ লাগে না কোনও কষ্ট বা অস্বস্তি হয়। এসব সত্ত্বেও তাকে আমরা সমাজের বন্ধু বলি। এবার আপনি, আমি যদি তার সংগে ঝগড়া করতে যাই আর সে যদি আপনার, আমার গায়ে গুয়ের ডাব্বা উপুর ক'রে ঢেলে দেয় তাহ'লে মেথরকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করবে না, করবে আপনাকে, আমাকে নিয়ে আর শেষে অকারণ নাম হ'য়ে যাবে 'গুয়ে দা'। এতে মেথরের কোনও দোষ নেই। দোষ যে তার সঙ্গে যে গায়ে প'ড়ে গুয়েদাদা, গুয়েদিদি হ'তে চেয়েছে বা চায়। তাই যে 'গুয়েদি' বা গুয়েদা তাকে গুয়ের ডাব্বার কাছে থাকতে দিন না, কেন অকারণ ডাকাডাকি ক'রে 'গুয়েদাদা' ও 'গুয়েদিদি' কে কুঞ্জবনে আনতে চাইছেন বা চাইছি!? জোর ক'রে কাউকে কুঞ্জবনে আনতে পারবো? নাকি গায়ে 'গু' লাগা অবস্থায় কুঞ্জবনে আনবো আর এনে কুঞ্জবনকে 'গুয়েবন' ক'রে তুলবো!? প্রবাদ্গুলি তো এমনি এমনি হয়নি দাদারা আমারঃ "পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কিনা খায়"!!!!!!!! তাই যে যেমন তাকে তাই থাকতে দিই আমরা আর তাই খেতে দিই আর ছেড়ে দিই ঠাকুরের উপর। বিচারের ভার ঠাকুর নিজের হাতে নিতে বারণ করেছেন। আপনি, আমি তাকে একবার কি দু'বার সত্যের সন্ধান দিতে পারি ব্যস ঐ পর্যন্ত। বরং ঠাকুর যা চান তাঁর মতো 'হ'য়ে ওঠা' তাই করি আসুন আমরা। ঠাকুর বলতেন, "তোমাকে দেখে চিনবে তোমার ঠাকুর কেমন!" ঠাকুর কি আপনাকে আমাকে বলেছেন নাকি ভুল ভাবে মুভ করতে!? জানেন তো ঠাকুর কি বলতেন সবসময়? বলতেন।
"মরম না জানে ধরম বাখানে এমন আছয়ে যারা,
কাজ নাই সখি তাদের লইয়া বাহিরে থাকুক তারা।"
তাই যারা বাইরে থাকুক আর যারা ঠাকুর ঘরে থাকতে চায় তারা ঠাকুর ঘরে থাকুক।
আপনারা সবাই ভালো থাকুন। জয়গুরু।
( লেখা ১৪ই জুন'২০১৮)

Saturday, April 22, 2023

চিঠিঃ লিটন রেজা,

( রক্তাক্ত বাংলা পেজে প্রকাশিত লেখার উত্তরে এই লেখা।)

Liton Reza কিসের জোরে ভারতের সকল বাংলা এরিয়া দখল করবেন জানতে পারি কি? Ahsan Ullah Abm কিসের জোরে চাইবেন অখন্ড বাংলাদেশ! বলতে পারেন কি? আপনিই বলছেন স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও ডিগ্রিধারী মূর্খ বাঙ্গালদের বোধ জন্মালো না! একটা কথা জেনে রাখুন দাদা লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষ আর শিক্ষিত মানুষের মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক! আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো সংগে সংগে মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল। প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে খুশী হব।
কিসের জোরে আপনি নিজেদের বিশ্বের ৩৫কোটি বাংলাভাষী মানুষের প্রতিনিধি, অভিভাবক বলছেন !?
কিসের ভিত্তিতে, কিসের অধিকারে বলছেন এই ৩৫ কোটি মানুষের ভালমন্দ দেখার, বোঝার এবং উপলব্ধি করার অধিকার আপনাদের আছে?
দিল্লীর অপশাসন থেকে মুক্ত হ'য়ে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার যে কথা বলছেন সেই স্বাধীনতার, সেই বেঁচে থাকার রুপরেখাটা কি বলবেন Ahsanদাদা? ভারতের কোন ব্রাম্মণ্য শাসক গোষ্ঠির কথা বলছেন আপনি?
আমাদের ভালো থাকার তত্ত্বের কথা বলছেন, সেই তত্ত্বের মধ্যে কাদের ভালো থাকার কথা বলছেন ঠিক বুঝলাম না! বাঙ্গালীদের কথা নিশ্চয়ই বলছেন? কেননা ৩৫কোটি বাংলাভাষী মানুষের কথা আপনি আগেই বলেছেন। এই ৩৫কোটি বাঙ্গালীর মধ্যে মুসলমান বাঙালি আছেন, হিন্দু বাঙ্গালী আছেন, খ্রিষ্টান বাঙ্গালী আছেন ইত্যাদি কত বাঙালি আছেন! এঁদের মধ্যে ব্রাম্মণ্য শাসক গোষ্ঠী নেই বা কোন প্রতিনিধি নেই?
ভালো থাকার জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে কিসের প্রকৃত সংগ্রাম করব আমরা তা যদি পরিষ্কার ক'রে বলতেন তাহ'লে বোধের ঘর একেবারে clear হ'য়ে যেত।
কোন কর্মের ভাষায় সুবে বাঙ্গালার জনতাকে কৌশলে উৎসাহিত করব, সাহস দেব সেটা পরিষ্কার ক'রে বললে ভালো হয়।
এই যে এত জায়গা আমরা জয় করেছি বলছেন, এবং ঠিক সেইভাবে নিজ জ্ঞাতি-গোষ্ঠিকেও উদ্ধার করতে পারবেন বলছেন এই বিষয়ে একটু সবিস্তারে পরবর্তী কলমে যদি বলেন, "কাদের কিভাবে আমরা জয় করেছি এবং কাদের কিভাবে আমরা উদ্ধার করব" তাহ'লে খুব ভালো হয়!
আর ডিগ্রীধারী লেখাপড়াজানাওয়ালারা মূর্খ কিনা জানি না তবে এটা জানি লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ আর শিক্ষিত মানুষের মধ্যে আবার বলছি আসমান-জমিন ফারাক! তাঁরা যেমন বোঝেন না আবার বুঝেও না বোঝার ভান আর না-বুঝে বোঝার ভান করেন। কিন্তু তরুণ-তরুণী, শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা ইতিমধ্যে যে কাজটি শুরু ক'রে দিয়েছে বলছেন সেই কাজটি কি সবিস্তারে বললে ভালো হয় আর সেই শুরুটাও কি তাঁরা শিক্ষিত হয়ে শুরু করেছেন? কেননা আজ এই বয়স পর্যন্ত অনেক লড়াই, অনেক সংগ্রাম সরাসরি যুক্ত থাকার মধ্যে দিয়ে শুরু হ'তে দেখেছি এবং দেখেছি অবধারিত সলিল সমাধি হ'তে!

এবার শেষ প্রশ্ন, আমরা আগে বাঙ্গালী না-কি আগে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান ইত্যাদি?????????????? সম্প্রদায় নিরপেক্ষ রাষ্ট্র না-কি ধর্ম্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র??????????????? কোনটা??????

(২২শে এপ্রিল' ২০১৪)

April 22, 2019
April 22, 2019
April 22, 2019
April 22, 2019
April 22, 2014
Learn More
April 21, 2014