Powered By Blogger

Wednesday, May 13, 2015

তিয়াসাকে খোলা চিঠি.....................(৪)




তিয়াসা, নরেন্দ্র মোদী গুজরাটে দাঙ্গা লাগিয়েছেন তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও একথা ভাবতে অবাক লাগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী প্রচার মঞ্চে তাঁকে প্রকাশ্যে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন! সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা মুক্তিপ্রাপ্ত নির্দোষ ব্যক্তিকে প্রকাশ্য জনসমাবেশে দোষী সাব্যস্ত করা, জনগণের কাছে ঘৃণ্য অপরাধী ঘোষণা করা আইনি অপরাধ কিনা, আদালত অবমাননা কিনা তা আমার জানা নেই, এ ব্যাপারে আইনি বিশেষজ্ঞরাই তা’ বলতে পারবেন। আর যদি মনে হয়, রায় ভুল  সমস্ত রাজনৈতিক দল সুপ্রিম কোর্টের সেই ভুল রায়ের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন বা অন্য কোন প্রতিবাদ সংগঠিত করতে পারেন, অবশ্য পারেন কিনা তাও আমার জানা নেই। যদি না পারেন তাহ'লে নরেন্দ্র মোদীর দোষ কোথায়??????

কিন্তু
দেশভাগের সময় যে ভয়ংকর দাঙ্গা ইংরেজরা লাগিয়ে দিয়েছিল সুকৌশলে ‘Divide & Rule’-এর ঘৃণ্য পাশা খেলায় তার দায় কি শুধু ইংরেজদেরই, সেই সময়ের রাজনৈতিক দলগুলির কি কোনও দায় ছিল না?  পশ্চিমবঙ্গের মরিচঝাঁপির ঘটনা কি গুজরাটের আস্ত দাঙ্গার চেয়ে কম? ভারতবর্ষে আর কোনও সরকারের আমলে এই রকম ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেনি?  দেশে গরীব আছে বলে, মানুষ না খেয়ে আছে বলে নরেন্দ্র মোদীর প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাবার কথা ভাবা কি অপরাধ!?  সার্বিক উন্নতির সঙ্গে দারিদ্রতা মোচনের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে এ কথা কি অস্বীকার করা যায়?  তাহ’লে বামপন্থীরা যে প্রযুক্তিবিদ্যাকে রাজ্যে ঢূকতে দেবে না বলে পণ করেছিল সেই পদক্ষেপ কি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে, প্রগতির ক্ষেত্রে ঠিক ছিল? সাম্যবাদীরা ৩৪বছর একটা রাজ্য শাসন করার পরও জঙ্গলমহলে পিঁপড়ের ডিম খেয়ে বেঁচে থাকেনি মানুষ!? এ-কে কি সাম্যবাদী, সমাজতন্ত্রীদের চোখে বাঁচা বলে?  জহরলাল নেহরুতো সমাজতন্ত্রের পূজারী ছিলেন এবং পরবর্তী কংগ্রেস দলও সেই পথ অনুসরণ করে গেছে তাতে ৬৭বছরেও কি সমাজতন্ত্রের কোন ছোঁয়া ভারতীয় সমাজ জীবনে লেগেছে বলে কি মনে হয়!?  এর সঙ্গে কি এটাই প্রমাণ হয় না,  ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’?  এত রাগ একটা মানুষের ওপর!? অথচ এই মানুষটাই কি আজ দারিদ্র্যের একেবারে নীচুতলা থেকে উঠে আসেনি!?  কত পথ পরিক্রমা শেষে এই মানুষটা আজ দেশের সর্বোচ্চ সিংহাসনে এসে বসলো তাকি আমরা ভেবে দেখেছি?  ভেবে দেখেছি কি আমরা কি কি গুণের অধিকারী লে একজন মানুষের এমন বর্ণময় উত্থান হয়!? আজ এই মানুষটাই সাম্যবাদীদের চোখে বুর্জোয়া না কি বলে তা হ'য়ে গেল!? একজন মানুষ সম্পর্কে এ হেন মানসিকতা ঈর্ষা ও হীনমন্যতার পরিচয় দেয়। এই শিক্ষার Tradition স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই আমরা পেয়েছি আমাদের জাতীয় নেতাদের কাছ থেকেই। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও আমাদের নেতারা ভেবে দেখেনি কি কি গুণের অধিকারী হলে একটা দেশ সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এই ভারতবর্ষ নামক দেশটাকে জয় করলো ও ২০০বছর শাসন করলো! শুধু দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করার নেশায় ও অজুহাতে এবং ক্ষমতা ও সিংহাসন দখলের লোভে বিদেশীদের তাড়াতেই ব্যস্ত হ’য়ে পড়েছিল। আর, নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় তোলার সময়তো চলে যায়নি আমার সমালোচক বন্ধু!

তিয়াসা, সমস্তটাই কথার ঝিকিমিকি আর তাত্ত্বিক আমেজে আফিমের মত ডুবে থাকার নেশা।
সাম্যবাদীরা যেমন ধর্মকে আফিম বলে ঠিক তেমনি সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদও আফিমের মত। ধর্মের অন্তর্নিহিত মূল অর্থকে না বুঝে যেমন আম ধার্মিক আফিমের নেশার মত বুঁদ হয়ে ধর্মাচরণ করে ঠিক তেমনি সাম্যবাদীরা ধর্মের নামে ধর্মের বাহ্যিক আনুষ্ঠানিক বিকৃত ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপকে ধর্ম মনে ক’রে সবজান্তা সমস্যা সমাধানকারীর মত ধর্মকে জীবনের গোড়া থেকেই বাদ দেওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে আফিমের নেশার মত! ধর্মের ধ্বজা হাতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি সেজে যেমন ধার্মিক বা ধর্মীয় নেতা ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অজ্ঞানতা, দুর্বলতা, ভয়কে মূলধন ক’রে আফিমরুপী ধর্মের বাহ্যিক বিকৃত ক্রিয়াকলাপে বুঁদ ধার্মিককে, ঈশ্বর বিশ্বাসীকে, ধর্মকে, ঈশ্বরকে বলাৎকার ক’রে চলেছে আবহমান কাল ধ’রে, ঠিক তেমনি সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রী নেতা গরীবের একচেটিয়া স্বঘোষিত মসীহা হ’য়ে গরীবের গরিবিকে, দরিদ্রের দারিদ্রতাকে, অজ্ঞানতাকে, অশিক্ষাকে মূলধন ক’রে গরিবকে, দরিদ্রকে, সাধারণ মানুষকে, সরল-সাধাসিধা ভাঙ্গাচোরা মানুষকে সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদের তাত্ত্বিক আমেজে ডুবিয়ে রেখে, অবাস্তব কথার ঝিকিমিকিতে আফিমের মত নেশাগ্রস্ত ক’রে তুলে গরীব মানুষ, সাধারণ মানুষের অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে আরও তাতিয়ে দিয়ে, ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যকে ভেঙ্গে চূড়মার ক’রে দিয়ে,  জাতের নামে বজ্জাতির মূলে কূঠারাঘাত না ক’রে জাতের বুকেও কুঠারাঘাত ক’রে গরীব মানুষকে, দরিদ্র মানুষকে, সরল-সাধাসিধা ভাঙ্গাচোরা বেকুব মানুষকে, সাম্যবাদকে, সমাজতন্ত্রবাদকে বলাৎকার ক’রে চলেছে! কেউ কারও থেকে কম যায় না! এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায় দেখ!

তিয়াসাকে খোলা চিঠি.....................(৩)




আর প্রচারের যুগের কথা বলেছেন আমার সমালোচক। তাকে আমার বলতে ইচ্ছে করে গোয়েবলসের যুগটা কি ছিল? তখন প্রচারের জোর যদি থাকতে পারে তাহ'লে আজকের উন্নত বিজ্ঞানের দিনে শুধু কি এই প্রচারের সুযোগ ও জোর নরেন্দ্র মোদীর একার ছিল? কেন্দ্রীয় UPA সরকার এবং শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দল, বামপন্থী দল, দেশের অন্যান্য সমস্ত লম্ফঝম্প করা দলগুলির প্রচারের জোর ছিল না?  রাজনীতির আকাশে হঠাৎ ধূমকেতুর মত উদীয়মান সততার প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত গরীবের মসীহা কেজরিওয়ালের প্রচারের জোর কি কম ছিল? দিল্লীর বুকে ঝড় তুলে কংগ্রেসের মুখ ও মুখোসের খেলার নিপুন কারীগর হয়ে আমজনতাকে বোকা বানিয়ে কংগ্রেসের প্রতি মানুষের ঘৃণাকে মূলধন রে নিশ্চিত বিজেপি ঝড়কে আটকে দিয়ে সরকার গঠন করা ও পরমূহুর্তে লোকসভা ভোটের অংক মাথায় রেখে সরকার থেকে নাটক করে বেরিয়ে আসা এই সমস্ত কিছুর মূলপ্রচার’-এর জোর কি রকম ভয়ংকর ছিল নিশ্চয়ই তা জানা আছে?  ভারতের প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রচারের রঙ, ঢং, তেজ কিরকম ভয়ংকর উগ্র ছিল তা-কি স্মরণে আছে?  নির্বাচনী মেলায় প্রত্যেক দল টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা নানারকমের প্রচারের চাটনী নিয়ে বসে আমজনতার কাছে বিক্রি করবে বলে, যার চাটনি আমজনতার কাছে যত ভালো লাগে সেই চাটনির বিক্রি হয় তত বেশী। সমাজতন্ত্রীরা স্বাধীনতার পরবর্তী কোন নির্বাচনী প্রচারে কাঁচ কে কাঁচ আর হীরেকে হীরে বলে সততার পূজারী হয়ে জনগনের কাছে প্রচার চালিয়েছে আর নির্বাচন পরবর্তী সরকারে এসে তাবাস্তবায়িত করেছে? দেশকে নেতৃত্ব দেবার একবারের জন্য হলেও বা কিছুদিনের জন্য হলেও যে সুযোগ বামপন্থীরা পেয়েছিল ভারতবর্ষের বুকে সেই সুযোগ নানা চাকচিক্য যুক্তির অজুহাতে বামপন্থীরা নেয়নি বা নিতে পারেনি। পারেনি বললে ভুল হবে জ্যোতিবাবুকে সেই সুযোগ নিতে দেয়নি হীনমন্যতার বশবর্তী হয়ে দলীয় নেতারা। যা ঐতিহাসিক ভুল বলে স্বীকৃত হয়ে আছে। অথচ এই জ্যোতিবাবুর যোগ্যতা, দক্ষতা ও দুরন্ত নেতৃত্বেই দীর্ঘ সময়ের চূড়ান্ত ক্ষমতার স্বাদ, সীমাহীন আরাম বিলাসীতার স্বাদ চেটেপুটে খেয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদে বিশ্বাসী গরীবের মসীহা বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। অথচ এই সাম্যবাদীরা ব্যক্তি মানে না, এদের কাছে সমষ্টির মূল্য মুখ্য আর ব্যক্তির মূল্য গৌণ! অথচ জ্যোতিবাবু কিম্বা প্রমোদ দাশগুপ্তর পরে প্রশাসক আর সংগঠক হিসাবে আর কেঊ ব্যক্তি হিসাবে সমষ্টির উর্ধ্বে উঠে আসেননি! কিছুটা 'একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদিগড়'-এর মত অনিল  বিশ্বাস ব্যক্তি হিসাবে নিজের গুরুত্ব দলের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। অথচ ক্ষমতার মাখন পুরোপুরি চেটেপুটে ভোগ করেছেন সমষ্টিবাদের তাত্ত্বিক আমেজে আফিমের নেশার মত মৌজ হ'য়েছিলেন যারা, তাঁরা।
 
আবার জনগণের কাছে অর্থনীতি, সমাজনীতির নানা রঙের বেলুন ফাটিয়ে, নিজেরা পদার্থ আর অন্যেরা অপদার্থ হিসাবে তুলে ধ'রে লোকসভা ভোটে বড় সংখ্যায় আবির্ভুত য়েও চাটুকারিতার চুড়ান্ত নিদর্শন হিসাবে কেন্দ্রিয় সরকারে অংশগ্রহণ না রে পিছিয়ে এসেছে সেই একই নানা রঙ বেরঙের কথার ফানুস উড়িয়ে, যুক্তির ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে এই সাম্যবাদীরা। নির্বাচনে অংশ নেবে, জনগণ নিজের রাজ্যের উন্নতির আশায় নির্বাচনে নির্বাচিত করবে আর নির্বাচিত প্রতিনিধি সরকারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে অথচ শুধু নিজের সংকীর্ণ স্বার্থে জনগণের কাছে সেই নানা অযৌক্তিক যুক্তির পশরা সাজিয়ে সে সুযোগ নেবে না, সে দায়িত্ব নেবে না ; খালি সাংসদের তকমা, সুযোগ সুবিধা আরাম বিলাসিতা ক্ষমতা সব ভোগ করবে!  ধন্য সাম্যবাদ আর সাম্যবাদের পূজারী পুরোহিতবর্গ!!!!!