আর
প্রচারের যুগের কথা বলেছেন আমার সমালোচক। তাকে আমার বলতে ইচ্ছে করে গোয়েবলসের যুগটা কি ছিল? তখন
প্রচারের জোর যদি থাকতে পারে তাহ'লে আজকের উন্নত
বিজ্ঞানের দিনে শুধু কি এই প্রচারের সুযোগ ও জোর নরেন্দ্র মোদীর একার ছিল? কেন্দ্রীয়
UPA
সরকার এবং শতাব্দী
প্রাচীন কংগ্রেস দল, বামপন্থী দল, দেশের
অন্যান্য সমস্ত লম্ফঝম্প করা
দলগুলির প্রচারের জোর ছিল না? রাজনীতির আকাশে হঠাৎ ধূমকেতুর মত উদীয়মান সততার প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত
গরীবের মসীহা কেজরিওয়ালের প্রচারের জোর
কি কম ছিল? দিল্লীর বুকে ঝড় তুলে কংগ্রেসের মুখ ও
মুখোসের খেলার নিপুন কারীগর
হ’য়ে আমজনতাকে বোকা বানিয়ে কংগ্রেসের প্রতি মানুষের ঘৃণাকে মূলধন ক’রে
নিশ্চিত বিজেপি ঝড়কে আটকে দিয়ে সরকার গঠন করা ও পরমূহুর্তে লোকসভা ভোটের অংক মাথায় রেখে সরকার থেকে নাটক
ক’রে বেরিয়ে আসা এই সমস্ত কিছুর মূল ‘প্রচার’-এর
জোর কি রকম ভয়ংকর ছিল নিশ্চয়ই তা জানা আছে? ভারতের প্রতিটি লোকসভা
নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রচারের রঙ, ঢং,
তেজ কিরকম ভয়ংকর উগ্র
ছিল তা-কি স্মরণে আছে? নির্বাচনী মেলায় প্রত্যেক দল টক,
ঝাল, মিষ্টি, নোনতা
নানারকমের প্রচারের চাটনী নিয়ে বসে আমজনতার কাছে বিক্রি করবে বলে, যার
চাটনি আমজনতার কাছে যত ভালো লাগে সেই চাটনির বিক্রি হয় তত বেশী। সমাজতন্ত্রীরা স্বাধীনতার পরবর্তী কোন
নির্বাচনী প্রচারে কাঁচ কে কাঁচ আর হীরেকে
হীরে বলে সততার পূজারী হ’য়ে জনগনের কাছে প্রচার চালিয়েছে আর নির্বাচন পরবর্তী সরকারে এসে তা’
বাস্তবায়িত করেছে? দেশকে
নেতৃত্ব দেবার একবারের জন্য হ’লেও
বা কিছুদিনের জন্য হ’লেও যে সুযোগ বামপন্থীরা পেয়েছিল ভারতবর্ষের বুকে সেই সুযোগ নানা
চাকচিক্য যুক্তির অজুহাতে বামপন্থীরা নেয়নি বা
নিতে পারেনি। পারেনি বললে ভুল হবে জ্যোতিবাবুকে সেই সুযোগ নিতে দেয়নি হীনমন্যতার বশবর্তী হ’য়ে
দলীয় নেতারা। যা ঐতিহাসিক ভুল ব’লে স্বীকৃত হ’য়ে আছে। অথচ এই জ্যোতিবাবুর যোগ্যতা,
দক্ষতা ও দুরন্ত নেতৃত্বেই দীর্ঘ সময়ের চূড়ান্ত
ক্ষমতার স্বাদ, সীমাহীন আরাম বিলাসীতার স্বাদ চেটেপুটে
খেয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সাম্যবাদ ও
সমাজতন্ত্রবাদে বিশ্বাসী গরীবের মসীহা বামপন্থী
নেতৃবৃন্দ। অথচ এই সাম্যবাদীরা ব্যক্তি মানে না, এদের
কাছে সমষ্টির মূল্য মুখ্য আর ব্যক্তির মূল্য
গৌণ! অথচ জ্যোতিবাবু কিম্বা প্রমোদ দাশগুপ্তর
পরে প্রশাসক আর সংগঠক হিসাবে আর কেঊ ব্যক্তি হিসাবে সমষ্টির উর্ধ্বে
উঠে আসেননি! কিছুটা 'একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদিগড়'-এর
মত অনিল বিশ্বাস ব্যক্তি হিসাবে নিজের গুরুত্ব দলের
মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
অথচ ক্ষমতার মাখন পুরোপুরি চেটেপুটে ভোগ করেছেন সমষ্টিবাদের তাত্ত্বিক
আমেজে আফিমের নেশার মত মৌজ হ'য়েছিলেন যারা, তাঁরা।
আবার জনগণের কাছে অর্থনীতি, সমাজনীতির
নানা রঙের বেলুন ফাটিয়ে, নিজেরা পদার্থ আর
অন্যেরা অপদার্থ হিসাবে তুলে ধ'রে লোকসভা ভোটে বড় সংখ্যায় আবির্ভুত হ’য়েও
চাটুকারিতার চুড়ান্ত নিদর্শন হিসাবে কেন্দ্রিয় সরকারে অংশগ্রহণ না ক’রে
পিছিয়ে এসেছে সেই একই নানা রঙ বেরঙের কথার ফানুস উড়িয়ে, যুক্তির ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে এই
সাম্যবাদীরা। নির্বাচনে অংশ নেবে, জনগণ নিজের রাজ্যের উন্নতির আশায়
নির্বাচনে নির্বাচিত করবে আর নির্বাচিত প্রতিনিধি
সরকারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে অথচ শুধু নিজের সংকীর্ণ স্বার্থে
জনগণের কাছে সেই নানা অযৌক্তিক যুক্তির পশরা সাজিয়ে সে সুযোগ নেবে না, সে
দায়িত্ব নেবে না ; খালি সাংসদের তকমা, সুযোগ
সুবিধা আরাম বিলাসিতা ক্ষমতা
সব ভোগ করবে! ধন্য
সাম্যবাদ আর সাম্যবাদের পূজারী পুরোহিতবর্গ!!!!!
No comments:
Post a Comment