Powered By Blogger

Wednesday, May 1, 2024

উপলব্ধিঃ সবসে বড়া ক্ষমতা---------

আচ্ছা এই যে করোনার গ্রাফ বেড়ে গেল তাড়াতাড়ি, রাতারাতি বদলে গেল রাজ্য তথা দেশের পরিস্থিতি এটা কেন হ'লো? এর জন্য কি বা কে দায়ী? 
মনে  জাগে এর জন্যে কি ভোট দায়ী? তাহ'লে আগাম কেন ব্যবস্থা নেওয়া হ'লো না? কেন আগের থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দেশের বা রাজ্যের চিকিৎসক মহল, বিচার ব্যবস্থা কেউ না কেউ বা সবাই মিলে দূরদৃষ্টি দিয়ে গম্ভীর মারণ বিষয়কে গম্ভীরভাবে পর্যালোচনা করলো না!? আর এরকম কঠিন জটিল অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপদ্ধর্ম হিসেবে যদি ভোট না ক'রে রাষ্টপতি শাসন জারি করা হ'তো তাহ'লে কি ভুল হ'তো? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ'য়ে এলে পরে রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে ভোট করা যেত। অবশ্য হাওয়া ব'লেও একটা কথা আছে। দেশের জনগণের প্রানের চেয়ে কি ভোট বেশী গুরুত্বপূর্ণ? হাওয়ার মূল্য বেশী? তবুও মনে হয় রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে করোনা মুক্ত পরবর্তী নিরাপদ সময়ে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সরকারের বিগত বছরগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতার উপর দাঁড়িয়ে পুংখানুপুংখ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভোট যজ্ঞ সম্পন্ন করা যেত এবং জনগণকেও যুগোপযোগী পরিণত মানসিকতা অর্জন ও প্রকাশ করার সময় ও সুযোগ দেওয়া যেত। আজ দেশের হাইকোর্ট ও সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিচ্ছে সেই রায় কি তারা ভোটের পূর্বে আগাম সতর্কতা হিসেবে দিতে পারতো না? আজ তাদের চোখ খুললো? আজ যে কথা বলছে আদালত সেই কথা বা সেই পরামর্শ কি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারতো না? তাহ'লে কি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের মত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরামর্শ দাতার অভাব!? তাহ'লে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে পরামর্শ দাতা হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের অংশগ্রহণ সংবিধানে সংযুক্ত করা হ'ক। যে ভারত ২০২০ সালে গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিল, করোনা মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিল, বিভিন্ন দেশকে করোনার ভ্যাক্সিন সরবরাহ করেছিল সেই দেশ ভারতকে আজ এই অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ এমনকি ছোট দেশ বাংলাদেশও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গোটা বিশ্বের কাছে আজ ভারতের মাথা হেট করে দিল! বাচ্চা ছেলের মত আজ আচরণ করলো ভারত! ভারতের নেতৃবৃন্দ আজ প্রমাণ ক'রে দিল তারা আজ কতটা ক্ষমতালোভী, মানুষের জীবনের চেয়ে ক্ষমতা অনেকবেশি দামী! সমস্ত দলের নেতৃবৃন্দ আজ প্রমাণ করলো তাদের দূরদৃষ্টি কতটা ঠুনকো, কতটা অগভীর, কতটা দূর্বল, কতটা ভাঙাচোরা জীবনের অধিকারী তারা। তারা সবাই মিলে প্রমান দিলো, দি হোল থিং ইজ দ্যাটস আ মায়া সবসে বড়া রুপাইয়া নেহী, সবসে বড়া ক্ষমতা!!!!!!!
( রচনা ১লা মা, ২০২১ )

প্রবি সমাচার ১

আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বারবার বলছি সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের দয়াল ছাড়া আপনার সামনে আর কেউ নেই, কিছু নেই। শুধু দয়াল, দয়াল আর দয়াল। মনে রাখবেন দয়াল ছাড়া অন্য কোনও দেবদেবী নির্ভরতা দয়ালের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গের ও বেইমানীর অন্যতম প্রধান কারণ। কোনও দেবদেবীর মধ্যে দয়ালকে দেখতে যাবেন না; যদি দেখতে ইচ্ছে হয় দয়ালের মধ্যে তেত্রিশ কোটি হ'ক আর তেত্রিশহাজার কোটিই হ'ক যত ইচ্ছা হ'ক আর যত বার হ'ক দেশ বিদেশের সব দেবদেবীকে দেখবেন, দেখতে পারেন। যারা দূর্বল, যারা অবিশ্বাসী, যারা কিছুই করে না ফোকটে পেতে চায়, যারা ধান্দাবাজ, যারা কপট, যারা মুখে মারিতং জগতের প্রতিনিধি, যারা লোভী, যারা ভন্ড, যারা ষোলো আনি বৃত্তি-প্রবৃত্তির পূজারি, যারা ঠাকুরকে ভাঙ্গিয়ে খায়, যারা মুখে ঠাকুর ঠাকুর আর কাজে করে চুরি পুকুর, যারা ঠাকুরের জন্য অর্থ প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও ব্যয় করে না আর করলেও নামের মোহে আত্মপ্রতিষ্ঠার কারণে করে, যারা কেন্দ্র, আচার্য মানে না ও আশীর্বাদের ধার ধারে না অথচ ঠাকুর নিয়ে মেতে থাকার নাটক অভিনয় করে এমনতর সৎসঙ্গী কিন্তু সৎসঙ্গী নয়। দুনিয়ার অমূর্ত ভগবান আর যত বাবাজীদের মাঝে আসনে দিনদুনিয়ার মালিক পরমপিতা পুরুষোত্তম সৃষ্টিকর্তা জীব জগতের জীবনের কারণ পরম কারুণিক রক্ত মাংস সংকুল জীবন্ত ইশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনূকূল চন্দ্রকে রাখবেন না।


করোনা মহামারীর এই ভয়ংকর বিপদের দিনে উপরিউক্ত অনুভব ও উপলব্ধি সকলের সুবিধার জন্য শেয়ার করলাম। মানতেও পারেন, নাও মানতে পারেন। সকলের সুবিধার জন্য এবং সবসময়ের জন্য যদি নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে আনন্দময় পরিবেশে বাচতে ও বাচাতে চান প্রিয়জনকে তাহ'লে উপরিউক্ত অনুভব ও উপলব্ধি মাথায় নিয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।


১) ইষ্টভৃতি করুন, আগ্রহের সঙ্গে আকুল হ'য়ে করুন আর নাম, নাম, নাম অনবরত নাম করুন।
২) আচার্যদেবের নির্দেশ মানুন।
৩) কপটতা ত্যাগ করুন।
৪) ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ করবেন না।
৫) ইষ্ট ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার কাজ কিছু করুন আর না-ই করুন ঠাকুর যা পছন্দ করেন না,
যে কাজে ব্যথা পান সে কাজ করবেন না, বলবেন না।
৬) নেগেটিভ সঙ্গ ত্যাগ করুন তা সে সৎসঙ্গী হ'ক আর যেই-ই হ'ক। বরং একলা থাকুন।
৭) প্রতিমুহুর্ত নিজে ঠাকুর মুখী থাকার অভ্যাস করুন ও পরিবারকে অভ্যাস করান।
৮) টিভিতে অনবরত প্রচারিত করোনা খবর দেখা বন্ধ করুন।
৯) ইউ টিউবে বাবাইদাদার স্পিচ শুনুন।
১০) সদাচার পালন করুন, সহজপাচ্য বাড়ির খাবার খান।
( লেখা ১লা মে, ২০২১ )

উপলব্ধিঃ দ্রষ্টাপুরুষ!

বর্তমান ভারতের অবস্থা আবারও প্রমাণ করলো দ্রষ্টাপুরুষ ছাড়া মানুষ তথা দেশ এক পাও নির্ভুল নিখুঁত চলতে পারে না। স্বাধীনতার আগে ও পরে এবং ৭৪ বছর ধ'রে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের নেতৃবৃন্দ নিজেরা ভুল পথে চ'লে এবং দেশের আম জনতাকে চালিয়ে দেশের কোমর ও জনগণের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। সেই ভাঙার জ্বলন্ত উদাহরণ সদ্য সমাপ্ত দেশের পাচ রাজ্যের নির্বাচন। সেই যে দেশ ভাগ হ'য়েছিল ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি আর অদূরদর্শীতার কারণে তার ট্রাডিশন সমানে ব'য়ে চললো বর্তমান নির্বাচন পর্যন্ত আর ব'য়ে যাবে এমনিভাবেই বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জীবনের উপর দিয়ে। আরও কত ভবিষ্যৎ কষ্ট যন্ত্রণা যে অপেক্ষা করছে তার সীমা পরিসীমা নেই!
এই যে আজ আবার করোনা ভাইরাস তীব্র ভয়ংকর হ'য়ে ঝাপিয়ে পড়লো দেশবাসীর ওপর এর জন্যে দায়ী কি বা কে?
ঠাকুর বললেন,
"দুর্দ্দশাতে কাবু যখন বৃত্তিও কাবু তা'য়,
বাচার টানে মানুষ তখন বিধির পথে ধায়,
বিধির পথে পুষ্টি পেয়ে চিত্ত সবল হ'লে
বৃত্তি-ধন্দার স্বার্থ নিয়ে আবার ছুটে চলে,
এমনি ক'রে ওঠা-পড়ায় মরণমুখে ধায়,
ইষ্ট-উৎসর্জ্জনে কিন্তু সবই পাল্টে যায়।" (৫৯ অনুশ্রুতি ১ খন্ড)
আমরা ২০২০তে দেখেছি চিন থেকে আগত করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর আক্রমণে দেশ তথা গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত হ'তে। আমরা দেখেছি কি ভয়াবহ ভয় ও নিদারুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে মানুষ পরিবার পরিজনকে হারিয়ে না খেয়ে না ঘুমিয়ে ঘর ছাড়া বাড়ি ছাড়া হ'য়ে দিন কাটিয়েছে। আমরা দেখেছি অর্থনৈতিক কি দুঃসহ যাতনার মধ্যে দিন কেটেছে সাধারণ ফেরিওয়ালা, বাড়ি বাড়ি কাজ করা, দোকানে দোকানে হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে কাজ ক'রে দিন আনে দিন খাওয়া থেকে শুরু ক'রে অফিসে কাছারিতে, কলে-কারখানায় কাজ করা এবং ছোটো-বড় ও অতি বড় ব্যবসায়ী ইত্যাদি সমস্ত স্তরের মানুষদের। দেখেছি রাষ্ট্রনেতা থেকে শুরু ক'রে পথের ভিখিরি, দারিদ্র্য সীমার নিচে থেকে শুরু ক'রে বড়লোক অতি বড়লোক পর্যন্ত কি শারীরিক মানসিক আত্মিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছে, দুর্দ্দশাতে কাবু হয়েছে, হয়েছিল কাহিল ও ঘায়েল। সেই চরম দুর্দ্দশার সময়ে বাচার জন্য, দেশবাসীকে বাচাবার জন্য দেশনেতারা বিভ্রান্ত, উদভ্রান্ত! তারা জানে না এই অবস্থায় কি করণীয় ও কিভাবে নিজে বাঁচবে ও বাচাবে। তখন যা উপযুক্ত যুক্তিযুক্ত বিজ্ঞান ও ধর্ম্ম সম্মত মনে হয়েছে তাই করেছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আবার সেই পদক্ষেপের বিরদ্ধাচরণ হয়েছে তীব্রভাবে কিন্তু নিজেরা বিরুদ্ধবাদীরা কোনও সলিউশন দিতে পারেনি সেই কঠিন সময়ে। তবু্ও বিশ্বের মধ্যে ভারত দেরীতে হ'লেও চরম গরম বিরুদ্ধতার মধ্যেও নিজের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে দ্রুত সামলে নেবার চেষ্টা করেছে। করোনার বিষাক্ত ছোবলের হাত থেকে বাচার জন্য দ্রুত সবরকম প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ ক'রে নিজে বেচে থেকে অন্যকে বাচাবার ধর্ম্ম পালন করেছে। ঠাকুরের বলা অনুযায়ী বাচার তাগিদে মোটামুটি বৃত্তি-প্রবৃত্তির লাগাম টেনে বিধির পথে চ'লে করোনার মারণ থাবাকে রুখে দিয়েছিল। ঠাকুর আরও বলেছিলেন, "অন্যে বাচায় নিজে থাকে ধর্ম্ম ব'লে জানিস তাকে"---ধর্ম্মের এই মূল অর্থকে রক্ষা করেছিল।
কিন্তু আমরা পরক্ষণেই কি দেখলাম?
ভারত যখন তৎপরতার সঙ্গে করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য বিধির পথে চলা শুরু করলো এবং বিধির পথে চ'লে পুষ্টি পেয়ে সফলতা হাসিল ক'রে চিত্তকে সবল করলো তখন সেই সফলতার আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার বৃত্তি ধন্দার স্বার্থ নিয়ে আবার ছুটে চললো, ছুটে চললো লাগামহীন বেলেল্লাপনা ভাবে। আর সেই ছুটে চলা শুরু হ'লো ক্ষমতা দখলের লোভে নির্বাচনের নামে! নির্বাচনে আমরা কি দেখেছি? নির্বাচনের প্রচার কর্মকান্ডে যা যা হয়েছে সবই আমরা আমাদের নিজস্ব এলাকায় এলাকায় দেখেছি ও শুনেছি এবং টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে বিভিন্ন জায়গার প্রচার অভিযানের মিছিল মিটিংয়ের ছবি দেখেছি ও ভাষণ শুনেছি। আর সেই লাগামছাড়া অবস্থার সুযোগ নিতে দ্বিধা করেনি করোনা নামক বিষাক্ত সাপ! এক ছোবলে ছবি ক'রে দিতে দেরি করেনি করোনা। বিষাক্ত কালনাগিনীর গলা শক্ত হাতে মুঠোয় চেপে ধরার পর সামান্য আলগা হ'তেই ভয়ংকর ফোস শব্দে ফণা তুলে মাথা ঘুরিয়েই বসিয়ে দিল বিষাক্ত ছোবল করোনা নাম্নী কালনাগিনী। আর তারপরে যা হবার তা-ই হ'লো। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
আশ্চর্যের যেটা তা হ'লো এই পরিণতির আন্দাজ করতে না পারা। আর আন্দাজ করতে পেরেও যদি আগাম সাবধানতা অবলম্বন ক'রে না থাকে তাহ'লে ধ'রে নিতেই হবে পহেলে ক্ষমতা বাদ মে জনতা! তো ভাড় মে যায় জনতা। ভোট শেষ এখন করোনা মোকাবিলায় দেশ!
তাই আমরা দেখতে পেলাম ঠাকুরের বাণীর কি অদ্ভুত মিল পরিস্থিতির সঙ্গে!!!! ঠাকুরের কথা অনুযায়ী এমনিভাবেই ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে জেনে-বুঝেই এগিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু আজ যদি নেতানেত্রীদের জীবনে একজন দ্রষ্টাপুরুষ থাকতো যাকে আমরা ইষ্ট বলি অর্থাৎ মঙ্গলের মূর্ত রুপ বলি যিনি বহু বহু দূরের জিনিস দেখতে পান বা সবটা দেখতে পান এমন একজন যদি থাকতো তাহ'লে আজ ভারতের বর্তমান এই কঠিন অবস্থা হ'তো না। শিবাজীর জীবনে যেমন রামদাস ছিল আর অর্জুনের ছিল স্বয়ং জীবন্ত ইশ্বর শ্রীকৃষ্ণ। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। চন্দ্রগুপ্তের পিছনে যেমন চাণক্য ছিল কিন্তু দেশপ্রেমিক বীর রানাপ্রতাপের পিছনে কেউ ছিল না, ছিল না প্রবল প্রতাপান্বিত রাবণের পিছনে কেউ। বিরাট সাম্রাজ্যের অধীশ্বর, বিশাল শক্তিশালী, অর্থবল, লোকবল, অস্ত্রশস্ত্র-এ বলীয়ান দুর্যোধনের পিছনে কেউ ছিল না। এদের সবার ইতিহাস সবারই জানা। তাই ঠাকুরের বলা অনুযায়ী যদি দেশনেতাদের পিছনে কোনও দ্রষ্টাপুরুষ থাকতো তাহলে আজ আমার দেশের এই করুণ অবস্থা হ'তো না। ঠাকুরের বলা অনুযায়ী ইষ্ট উৎসর্জনায় সব বদলে যেত অর্থাৎ উন্নতি বা বিস্তার অভিমুখী সৃষ্টিতে দেশের সব কিছু বদলে যেত। কিন্তু তা হ'ল না। কলিযুগ ব'লেই বোধহয় হ'তে নেই। এই যুগ 'অন্যে মারে নিজে বাচে অধর্ম ব'লে জানিস তাকে' যুগ। ( রচনা ১লা মে, ২০২১ )

Tuesday, April 30, 2024

প্রবন্ধঃ প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত।

 এই প্রচন্ড গরমে যখন মানুষ হাঁসফাঁস করছে তখন মাঝে মাঝেই যখন তখন কারেন্ট চলে যাচ্ছে। সেদিন রাত আটটায় যখন বাড়ির দিকে আসছি তখন দেখলাম রাস্তায় সি এস সি-র গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওভার হেড লাইনে কাজ হচ্ছে। আর একদিন দেখলাম ট্রান্সফরমারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইলেক্ট্রিকের লোকজন, জোর কদমে কাজ চলছে। এই গরমে সবার বাড়িতেই দিনরাত বিরামহীন ফ্যান চলছে, চলছে এ সি। আর সঙ্গে চলছে সি এস সি ও বিদ্যুৎ পর্ষদের বিরামহীন মেইটেন্যান্সের কাজ। পাওয়ার কঞ্জিউম বেড়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝে লোড শেডিং-এর কারণে কঞ্জিউমারদের মানসিক চাপ ও মেইন্টেন্যান্স ডিপার্ট্মেন্টের কাজের চাপ বেড়ে গেছে দশগুণ। হঠাৎ কোনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতেই পারে যখন তখন প্রাকৃতিক কারণে। সেটা সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষ ঘটনা। কিন্তু গরম বা বর্ষার আগে রুটিন চেক আপ হ'লে ভালো হয়। তখন ভাবি যে দেশে স্বয়ং ঈশ্বর ৮ - ৮ বার জন্মেছেন সেই দেশ কেন এত পিছনে। সেই দেশ শুধু মুখের কথার হাই হ'য়ে রইলো "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লভে।" কবে নেবে? যাক সেসব বিষয়। ঈশ্বর বারবার মানুষ রূপে ভারতে জন্ম নেওয়ার পরও কেন আজ ভারতের এই দশা আর কি করেই বা ভারত একদিন জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লাভ করবে তা নিয়ে একদিন আলোচনা করবো। এখন আসি আজকের ভিডিওর বিষয়ে। 

গরমের কথা যখন উঠলোই তখন গরম নিয়ে একটা আলোচনার আসর বসানো যাক এই গরমের মধ্যেই। এই গরমে কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও পেট ব'লে কথা, কিছু তো খেতে হবে। তবে যারা রান্না ঘরে এই গরমে থাকে তাদের কষ্ট অবর্ণনীয়। এই অবর্ণনীয় কষ্ট বড়লোকেদের নেই। তাদের জন্য আছে গরমকালে এ সি আর ঠান্ডাকালে রুম হিটার। অবর্ণনীয় কষ্ট গরীব, সাধারণ মানুষদের। 

যাই হ'ক আলোচনা গরমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক। এই গরমে যারা খাওয়ার তারা তেলে ঝালে ঝোলে খাচ্ছে ও খাবে। আর অনেকে আছে এই গরমে ভাতে জল ঢেলে দিয়ে খাচ্ছে। পান্তাভাত আর জলভাতের মধ্যে তফাৎ আছে। গরম ভাতে জল ঢেলে ঠান্ডা ক'রে খেলেই তাকে পান্তাভাত বলে না। ভাতকে জলে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। নতুবা নয়। আমরা শহুরে লোকেরা প্রায়ই পান্তাভাত খাওয়া ভুলে গেছি। গ্রামে এখনও জলভাত বা পান্তাভাত এই গরমে এখনও সমান জনপ্রিয় ও আদরণীয়। পান্তাভাত গ্রাম বাংলার একটা জনপ্রিয় খাবার। রাতে ভাত বেঁচে গেলে বা রেঁধে সেই ভাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া হয়। পরদিন সেই জলে ভিজিয়ে রাখা ভাত কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খায় গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষ। অনেকেই আবার আলু ভর্তা,বেগুন ভর্তা,ডাল ভর্তা,শুটকি ভর্তা, সরিষার তেল, শুকনা মরিচ পোড়া ইত্যাদি দিয়ে পান্তাভাত খায়।

 
এই পান্তাভাত খেতে তথাকথিত শহুরে লোকেরা বা হঠাৎ বড়লোকেরা তা শহরেই হ'ক বা গ্রামেই হ'ক লজ্জা বোধ করে। 
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, বাবা জগন্নাথের কিন্তু নিত্য পান্তা না হলে চলে না। বাচ্চা যদি বাপের অনুবর্ত্তণ করতে লজ্জাবোধ করে, তাহলে যা হবার তা হবে। আমাদের মা জগৎজননী দুর্গা দৈ-পান্তা খেয়ে প্রতি বৎসর বিজয়ার দিন বিদায় নেন। আর আমাদের পান্তা খেতে লজ্জা।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে পান্তাভাতের জল খেতে 
বলেছিলেন। বলেছিলেন ওটা খাবি। ওতে যথেষ্ট ভিটামিন আছে। পান্তাভাতের জল খেলে মানুষ মোটা হ'য়ে যায়। দেখিস না পন্ডিতের মা পান্তাভাত খেয়ে কেমন মোটা হ'য়ে গেছে। 
শ্রীশ্রীপ্রফুল্লদা ভীষণ ভয় ও বড় দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। তাঁর প্রতিমুহুর্তের এই নার্ভাসনেসের কথা জানালে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে একবেলা পান্তা ভাত খেতে বলেছিলেন। বলেছিলেন সকালে ইষ্টভৃতি ইত্যাদি ক'রে খালি পেটে পান্তা ভাত খেতে। আর নাম করতে বলেছিলেন।যারা নার্ভের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রফুল্লদাকে ঠাকুরের দেওয়া এই ফর্মুলা প্রয়োগ ক'রে দেখতে পারেন।  
 
আমরা গরম ভাতের মধ্যে জল ঢেলে দিয়ে চটকে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়াকে পান্তাভাত বলি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। পান্তাভাত খাওয়ার মধ্যে দিয়ে যদি শরীরে ভিটামিন সাপ্লাই না হয় তাহ'লে সে পান্তাভাত খাওয়া বৃথা। 
*পান্তাভাতের ফর্মূলা শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে দিয়েছিলেন।
আমরা যাকে বলি *পান্তাভাত* , ঠাকুর বলতেন ' *আমানি* '। আসুন আমরা সেই আমানি সম্পর্কে জেনে নিই। আর এই ' *আমানি* ' কেমন করে বানাতে হবে তা-ও বলে দিয়েছিলেন দয়াল ঠাকুর। 
ভাত রান্না করে মাটির হাঁড়িতে রাখতে হবে। সেই ভাতে এবার পরিষ্কার ভাল জল ঢালতে হবে এমন করে যাতে ভাতের ১ ইঞ্চি (১কড়) ওপর অবধি জল থাকে। সবশেষে,পরিষ্কার সাদা কাপড় দিয়ে হাঁড়ির মুখ ঢেকে বেঁধে দিতে হবে। অন্য কোনও ঢাকনা দেওয়া চলবে না।এই অবস্থায় (সাধারণ তাপমাত্রায়) ১৬-১৮ ঘন্টা রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ' *আমানি* '। উপকারী ইষ্টের (ছত্রাক)দল জল আর ভাতে মিশে এবং বৃদ্ধি পেয়ে নানারকম ভিটামিন তৈরি করে বলে তা খাওয়া স্বাস্থ্যকর। খাদ্যরসিক ও পুষ্টিবিশারদ ঠাকুর ' *আমানি* ' কে বলতেন--' *সর্বরোগ হরহরি'।* 
এই ফর্মুলা অনুযায়ী এই গরমকালটা দেখতে পারেন, শরীর ঠান্ডা থাকবে, সুস্থ থাকবে, কাজে উৎসাহ পাবেন।
পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এর আয়রন দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড়কে শক্ত করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে, অর্থাৎ লাল হ'য়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। আবার এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও সাহায্য করে। আরো অনেক কাজে সাহায্য করে। বিভিন্ন রোগ বিশেষত ক্যানসার প্রতিরোধে এই পান্তাভাত সাহায্য করে। কিন্তু পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে বঞ্চিত হ'তে হয়।

জুন-জুলাই মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে যাবে। ফলে বাড়বে দিনের দৈর্ঘ্য ও গরমের তীব্রতা। 
যাই হ'ক এইসময় সৎসঙ্গীরা ও অদীক্ষিত যারা দেখছেন ও শুনছেন এই ভিডিও তারা এই গরমে 'আমানি' খেতে পারেন ঠাকুরের ফর্মুলা মেনে। প্রকৃতির গরমের হাত থেকে  শরীরকে ঠান্ডা রাখার ও বাঁচার উপায় ও পথ্য হ'লো পান্তাভাত।
এবার আসুন দেখি প্রবৃত্তির গরম থেকে বাঁচার উপায় কি?
অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি- প্রবৃত্তির কারণে আমাদের উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুতাড়িত জীবনও গরম হ'য়ে ওঠে। এর হাত থেকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করার, বাঁচার ও বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র উপায় বা মেডিসিন হ'লো বিধাতার হাত।

অনিয়ন্ত্রিত, উচশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ষড় রিপুর উৎপাতের 
কারণে জীবন অতিষ্ঠ হ'য়ে ওঠে। ফলে, সংসার, সমাজ, দেশ অনিয়ন্ত্রিত রিপুতাড়িত উন্মত্ত জীবনের কারণে ধ্বংস হয়। একজন রিপুজ্বরে ভয়ংকর আক্রান্ত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা জীবনের জন্য গোটা সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো হ'য়ে যায়, সমাজ আক্রান্ত হয়, দেশ ঘোর অন্ধকারে ডুবে যায়, মানব সভ্যতা তলিয়ে যায়। এইরকম একজনই যথেষ্ট। ছোটোবেলা থেকে আজ অবধি যতদিন মা বেঁচে ছিলেন ততদিন একটা কথা শুনেছি মায়ের মুখে যা আজ আমাকে পীড়া দেয় মায়ের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ এত দেরীতে বোঝার জন্যে। মা বলতেন, "একে নষ্ট করে সবে দুঃখ পায়, আর একে ভালো করে সবে সুখ পায়।"
 
আজ, Passion parvading attachment মানুষ অর্থাৎ বৃত্তি-ভেদী অনুরাগ সম্পন্ন মানুষের অভাবে ব্যক্তিজীবন, সমষ্টিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবন ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে। সংসারে, পরিবারে, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব জুড়ে গ্রাস ক'রে ফেলেছে অশান্তি। এর থেকে মুক্তির কোনও দ্বিতীয় উপায় নেই যদি না মানুষ প্রবৃত্তির ভয়ানক উগ্র তাপ থেকে নিজেকে
রক্ষা করে, মুক্ত করে। 
গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন বাংলা নববর্ষে বৈশাখ মাসে আদিম উপাদান আমানির মাংগলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, যেমন প্রকৃতির ভয়ংকর উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন হয় আমানির জল, পান্তাভাত। 
ঠিক তেমনি রিপুতাড়িত মানুষ উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুর মোহে বৃত্তি- প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে বিধ্বস্ত হ'য়ে যখন গরম হ'য়ে ওঠে শরীর-মন-আত্মা তখন এই প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে দরকার হয় বিধাতা নির্দেশিত বিধির হাত। তখন সংসারে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ জীবন্ত ঈশ্বরকে ঘরে আবাহন করার জন্য, মঙ্গলের মূর্ত প্রতীককে ঘরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। জীবন্ত ঈশ্বরের উপস্থিতি ও তাঁর বিধিকে আবাহন করতে হয় ব্যক্তি জীবনে, সংসার জীবনে। 
আসুন দেখে নিই প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত এই দুইয়ের মিল কোথায়। 
১) গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন পান্তাভাত ঠিক তেমনি প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে বাঁচতে দরকার হয় জীবন্ত ঈশ্বর মূর্ত মঙ্গল বিধাতার হাত।
২) 
আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ, তথাকথিত শহুরে মানুষেরা পান্তাভাত খেতে লজ্জা বোধ করে। ঠিক তেমনি এই ধরণের মানুষ যারা, অর্থাৎ আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ তারা জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত ধরতেও লজ্জা বোধ করে। 
৩) আর যারা পান্তাভাতের নামে পান্তাভাতের পরিবর্তে গরমভাতে জল ঢেলে জলভাত খায়  ঠিক তেমনি কিছু মানুষও  বিধাতা ও তাঁর নির্দেশিত বিধির হাত ধরার পরিবর্তে আকাশের ভগবান, মাটির ভগবান, কথা বলতে না-পারা বোবা ভগবানের হাত ধরে। 
৪) পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে যেমন বঞ্চিত হয় মানুষ, ঠিক তেমনি যারা বোবা ভগবানের বা আকাশের ভগবানের অদৃশ্য হাত ধরার চেষ্টা করে এবং জীবন্ত ঈশ্বরের দেওয়া মত কোনও নির্দেশ পালনের, বিধি পালনের কোনও ব্যাপার থাকে না। পূজার নামে, ভক্তির নামে যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা করা যায়, নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তি পূরণের, নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য পূজা করা যায়। যাকে প্যাশনেট অর্থাৎ প্রবৃত্তিমুখী ভক্তি বলা হয়, সেইরকম বাঁচা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত না ধরার ফলে, বিধাতার বিধি না মানার ফলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়, বঞ্চিত হয় রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে।    
৪) জলভাত খাওয়া মানুষ যেমন জলভাতের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা, শুটকি ভর্তা, শুটকি পোড়া, শুটকি ভাজা, শুকনো পোড়া লঙ্কা, সর্ষের তেল ইত্যাদি দিয়ে আয়েস ক'রে তামসিক জলভাত খায় ঠিক তেমনি বোবা ভগবান বা আকাশের ভগবানের হাত ধরা মানুষও বোবা ভগবানের পূজার সঙ্গে সঙ্গে আমিষ জাতীয় তামসিক খাবার খায়।
৫) গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত নয় আগের দিন রাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া পান্তাভাত যাকে আমানি বলে সেই আমানি পরের দিন আমিষ-নিরামিষ সহযোগে খাওয়া আর জীবন্ত ঈশ্বরের হাত ধরার সাথে সাথে তামসিক আমিষ আহার কিংবা রাজসিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করা সমার্থক। স্বর্গীয় পবিত্র খাদ্য আমানির সঙ্গে অর্থাৎ পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে তামসিক উগ্র খাবারের সংমিশ্রণে আমানির যে পুষ্টি, যে গুণাগুণ তা শরীরে গিয়ে ব্যহত হয়, পুরোপুরি পুষ্টি লাভ হয় না, শরীর বঞ্চিত হয়। 
ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর, বিধাতার বাণী 'শ্রীবিগ্রহের মন্দির ভেবে যত্ন করিস শরীরটাকে' এই যে বিধান তা মাথায় রেখে শরীর বিধানকে রক্ষা করার ব্যাপারটা এবং একই সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে গ্রহণ ক'রেও জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার যে বিধান সেই বিধান অর্থাৎ দীক্ষা নেবার সময় আমাকে যে যজন, যাজন ও ইষ্টভৃতি করার বিধান দিয়েছেন আবার স্বস্তয়নী যারা গ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে পাঁচটা নিয়ম মেনে চলার কথা যে বলা হয়েছে সেইসবগুলি না মানার ফলে ফলাফল থেকে যায় জিরো। জীবন বঞ্চিত হয় দয়ালের দয়া থেকে, আশীর্বাদ থেকে।

তাই পান্তাভাত যাকে ঠাকুর আমানি বলতেন সেই নিয়মমত তৈরী পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে সাত্ত্বিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করলে যেমন পান্তাভাতের মধ্যে দিয়ে নানারকম ভিটামিন ও সমস্ত গুণাগুণ শরীরে প্রবেশ করার ফলে শরীর পুষ্ট হয়, শরীর মোটা হয় ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর যাকে আমরা ইষ্টদেবতা বলি তাঁকে জীবনে গ্রহণ ও তাঁর বিধি তাঁর নির্দেশ ও নিদেশ পালন করার ফলে মানুষের জীবনে নিশ্চিত উন্নতি হয় আর সমস্ত রকম বিপদ আপদ, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু রোধ হয়। যা আকাশের ভগবান বা বোবা ভগবানে হাজার লক্ষবার পুজো করলেও কিছু হয় না। 
জীবন্ত ঈশ্বর হলেন শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্ব্বশেষ The greatest wonder, greatest phenonomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।

আর, জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার বিধি হ'লো তাঁদের জীবন চলনা; তাঁদের চরিত্র, তাঁদের চলা-বলা, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি। 

পান্তাভাত যাকে আমানি বলেছেন ঠাকুর, যে ফর্মুলা দিয়েছেন তিনি, সেই আমানির সংগে যে সাত্ত্বিক নিরামিষ খাদ্য যেমন লঙ্কা, লেবু, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা ইত্যাদি সহযোগে সহজ পাচ্য যে আহার গ্রহণ সেইরুপ জীবন্ত ঈশ্বরকে আদর্শ হিসেবে মাথার ওপর নিয়ে তাঁর বলে যাওয়া ও দেখিয়ে দিয়ে যাওয়া যে নিয়ম সেগুলি পালন করার মধ্যে দিয়ে শরীরে-মনে-আত্মায় মানুষ শক্তিমান হ'য়ে দেবতা হ'য়ে ওঠে। একেই বলে যজন অর্থাৎ নিজে পালন করা। এবং নিজে পালন করার পর তা অন্যের কাছে বলা, অন্যকে অনুপ্রাণিত ক'রে তোলা, তাকে বলে যাজন, আর 
দিন শুরুর আগেই নিজে কিছু খাওয়ার আগে জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য বাস্তবভাবে তাঁকে খুশী করার জন্য তাঁর সেবা আগে করা, তাঁর দৈনন্দিন যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য বাস্তবভাবে অর্ঘ্য তুলে রাখা, একে বলে ইষ্টভৃতি। আর এই সেবা যেন অপ্রত্যাশী সেবা হয়, কোনও কিছুর প্রত্যাশায়, লোভে যেন এই সেবা না হয়। Don;t tempt thy lord, তোমার প্রভুকে প্রলুব্ধ ক'রো না। এই সেবা যেমন অপ্রত্যাশী হয় ঠিক তেমনি যেন আগ্রহে উচ্ছল হ'য়ে যেন এই সেবা হয়, এই সেবা স্বতঃ স্বেচ্ছ সেবা যেন হয়, এই সেবা অনুরাগ উদ্দীপি সেবা যেন হয় অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি তীব্র ভালোবাসায়, প্রেমে, অস্খলিত নিষ্ঠায়, আসক্তিতে, টানে যেন হয়। আমার তোমাকে ভীষণ ভালোলাগে তাই তোমায় ভালোবাসি, তোমাকে না ভালোবেসে পারি না তাই ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসলেও ভালোবাসি আবার না ভালোবাসলেও ভালোবাসি। তিরস্কার, শাসন করলেও তোমায় ভালোবাসি। আমার মুখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার চোখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার কান বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যঙ্গ বলে তোমায় ভালোবাসি। কেটে টুকরো টুকরো ক'রে খন্ড খন্ড ক'রে ফেলে দিলেও প্রতিটি খন্ড বলবে আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তমায় ভালোবাসি। 

আমানি যেমন সর্বরোগ হরহরি ঠিক তেমনি জীবন্ত বিধাতা শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর বিধি সমস্ত সমস্যার সমাধানকারী।
তাই প্রকৃতির এই তীব্র গরমে আপনারা ঠাকুরের ফর্মুলায় আমানি গ্রহণ করুন শরীরে ভিটামিন সমৃদ্ধ হ'য়ে সর্বরোগ থেকে মুক্ত হ'তে, ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে  যারা গ্রহণ ক'রেছেন তারা তাঁর দেওয়া বিধি বিধান যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আর স্বস্ত্যনী, সদাচার মেনে সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন।
ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অকারণ মিথ্যা ভয়, দুর্বলতা দূরে সরিয়ে, পূজা সম্পর্কে সমস্ত ভুল জবরজং কর্মকান্ড থেকে, জটিলতা থেকে, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হ'য়ে সহজ সরলভাবে তিনি যা বলেছেন তাই-ই করুন। পারলে দু'বেলা প্রার্থনা করুন, না পারলে একবেলা করুন, তাও না পারলে সপ্তাহে একদিন করুন তাঁর জন্মবার শুক্রবারে, তাও না পারলে ঘরে মোবাইলে সকাল-সন্ধ্যা তাঁর প্রার্থনা শুনুন, সময়ে শুনুন, না-পারলে অসময়ে শুনুন। অতি প্রত্যুষে ইষ্টভৃতি করুন, না-পারলে যখন উঠবেন তখন করুন, কিন্তু করুন, দিনের শুরুতে তাঁকে না খাইয়ে নিজে খাবেন না আগে, যা আপনার সামর্থ্য সেইখান থেকে তাঁকে আগে খেতে দিন। এঁকে বলে ইষ্টভৃতি। তাঁকে আরো আরো বেশী দেওয়ার জন্য আপনার সামর্থ্য বাড়ান। সামর্থ্য বাড়লে তাঁরও সেবার অর্ঘ্য বাড়িয়ে দিন। তাই এই ইষ্টভৃতিকে আবার বলে সামর্থীযোগ। সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন আপনার বাড়ি দেওঘরে। ঠাকুরবাড়ি আপনার নিজের বাড়ি। আর আপনার বাড়ি আপনার কর্মস্থল। কর্মস্থল থেকে যেমন মানুষ বাড়ি ফেরে ঠিক তেমনি আপনার বাড়ি অর্থাৎ কর্মস্থল থেকে এই বোধে আপনার বাড়ি যাবেন অর্থাৎ ঠাকুর বাড়ি যাবেন যখনি সময় পাবেন, অন্তত বছরে দু'বার নাহ'লে একবার। আর যেটা আপনার বাড়ি ভাবছেন সেটা আপনার বাড়ি নয় সেটাও ঠাকুরের বাড়ি। আপনি সেই বাড়ির কেয়ারটেকার মাত্র। এই বোধ নিয়ে চলুন। আর চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে, শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ও ভোজনে এমনকি বাথরুমে যেখানেই যান, যেখানেই থাকুন, যার সঙ্গে থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন মনে মনে নামের সঙ্গে থাকুন অর্থাৎ নাম করতে থাকুন। জানবেন যতবার নাম করছেন ততবারই আপনার সঙ্গে ঠাকুর থাকছেন। নাম আর নামী অভেদ। নাম করা মানেই ঠাকুরের সঙ্গে থাকা। এছাড়া তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকার আর দ্বিতীয় কোনও উপায় বা পথ নেই। আর যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকবেন ততক্ষণ শয়তান আপনার থেকে দূরে থাকবে, দয়ালের ভয়াল রূপের ভয়ে আপনার গা ঘেঁষবে না। নাম করতে পারছেন না, ভালো লাগছে না, ভুলে যাচ্ছেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি সাথ দিচ্ছে না, হতাশা, অবসাদ লাগছে, ডুবে যাচ্ছেন কোনও ব্যাপার না চেষ্টা করুন, 'ইয়েস আই ক্যান' ব'লে ঝাঁকানি দিয়ে উঠে দাঁড়ান, দাঁড়াবার চেষ্টা করুন, একবারে না হ'লে না হ'ক, দশবার চেষ্টা করুন। মনে পড়লেই নাম করুন, ভুলে যাচ্ছেন বারবার? ঠিক আছে কোনও ব্যাপার না। মনে পড়লেই নাম করুন, অভ্যাস করুন, একদিন দেখবেন সব ঠিক হ'য়ে যাবে। স্বতঃ অনুজ্ঞা পাঠ করুন। উঠতে বসতে, চলতে-ফিরতে, কাজ করতে করতে, রান্না করতে করতে দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত যখনই সময় পাবেন আবৃত্তি করুন স্বতঃ অনুজ্ঞা। জোরে জোরে আবৃত্তি করুন, আস্তে আস্তে আবৃত্তি করুন, নিজের কানে নিজে শুনুন, বলুন বারবার আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী। আমি অমানী, আমানী, আমি অমানী। শুয়ে শুয়ে বলুন, বসে বসে বলুন, হাঁটতে হাঁটতে বলুন, খেতে বসে বলুন, পায়খানায় বলুন, গান গেয়ে উঠুন "আমি অক্রোধী আমি অমানী ইত্যাদি ব'লে। শক্ত ক'রে দয়ালের হাত ধ'রে থাকুন হনুমানের বাচ্চার মত। হনুমানের বাচ্চা যেমন তার মাকে শক্ত ক'রে জড়িয়ে ধ'রে রাখে তেমনি ক'রে ঠাকুরকে জড়িয়ে ধ'রে থাকুন, ধ'রে থাকুন তাঁর হাত। তিনি আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরবেন না। তিনি সমস্ত ব্রহ্মান্ডটাই ধ'রে আছেন, আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরতে যাবেন না। তাই বলে জগন্নাথের হাত নেই। তিনি আপনাকে ধ'রে আছেন কি নেই তা ভুলে যান, আপনি তাঁকে ধরে আছেন কিনা সেটা দেখুন। আপনার ধরা এতটূকু আলগা হ'লেই শয়তানের ছোবল নিশ্চিত।

তাঁকে দু'হাতে আঁকড়ে ধ'রে থাকুন 
দেখবেন প্রকৃতির তীব্র গরমে আমানির জলে যেমন শরীর ঠান্ডা হ'য়ে যায়, ভিটামিনে ভরপুর হ'য়ে সমস্ত রোগ হরণ ক'রে নেয় আমানি রুপী হরি। ঠিক তেমনি বৃত্তি-প্রবৃত্তির গরমে যখন শরীর-মন-আত্মা জর্জরিত হ'য়ে উঠবে তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বিধি এই যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আপনাকে সমস্ত সমস্যা মুক্ত ক'রে ঠান্ডা ক'রে দেবে। 
ইষ্টকে আপনার মধ্যে ও আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে এবং পারিপারশ্বিকের ভিতর প্রতিষ্ঠা করুন আর সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন। জানবেন, 
সর্ব্ব সমস্যার সমাধান 
জানিস ইষ্টপ্রতিষ্ঠান। 
আপনাদের সবার মঙ্গল প্রার্থনা ক'রে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে। জয়গুরু। 

Sunday, April 28, 2024

স্বপ্নে স্বর্গলোকে আমি।

একদিন ভোর রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে দেখলাম, আমি চলে গেছি স্বর্গলোকে। সেখানে পৌঁছে একেবারে মোহিত হয়ে গেলাম। চতুর্দিকে যেদিকে তাকায় একটা অদ্ভুত মাদকতা। মাদকতাময় পরিবেশে ভরে গেল মনপ্রাণ। কি ঝকঝকে চারপাশটা। এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝলমলে পরিবেশ যে মাথাটা বোঁ ক'রে ঘুরে গেল। একটা নিখুঁত পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে চারপাশ। সমস্তটাই গণিত আর সুখময় কাব্যের চরম সংমিশ্রণের এক চোখ ধাঁধানো বহির্প্রকাশ। যা শুধু অনুভবের ব্যাপার, উপলব্ধি ও নির্বাক দর্শনের ব্যাপার। যা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা বৃথা। তবুও বলবো যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর দৃশ্য!!!!!! ছবির মত যেন সব টাঙ্গানো রয়েছে চারপাশে। যেন কোনও শিল্পী বসে বসে এঁকেই চলেছে তাঁর রঙ আর তুলি নিয়ে পাহাড় পর্ব্বত, নদনদী, ঝরণা, গাছপালা, বুনো লতাগুল্ম, পশুপাখি, ফড়িং প্রজাপতি, কত রকমের যে সুন্দর সুন্দর নানা রঙের কত পাখি আর তাদের কলকাকলিতে ঝমঝম ভরা প্রকৃতির দৃশ্য, কে যেন এ সব এঁকে চলেছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মত! আর দূর থেকে ঐ যে দূরে এঁকে বেঁকে চলে গেছে যে নদী, সেখান থেকে ভেসে আসছে সেই নদীর অবিরত ব'য়ে যাওয়া অস্ফুট কলকল ধ্বনি! মাথার ওপরে ভেসে চলেছে পেঁজা তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ, মেঘের স্তুপ! চারপাশটা ঠান্ডা ছায়াছায়াময়! সূর্যদেবতা যেন পরম মমতায় তাঁর তেজকে নিয়ন্ত্রণ ক'রে নরম আলো ছড়িয়ে মায়াময় ক'রে তুলেছে স্বর্গটা! একটা হাল্কা ঠান্ডা বাতাস যেন তার মনোরম সুখময় শালটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছে বারবার!  কত সুন্দর সুন্দর নারীপুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে! শরীরের পোশাক-আশাকে সলজ্জ মার্জিত ভাব যা স্বর্গকে গৌরবান্বিত ক'রে তুলেছে। সেখানে শিল্পীর আঁকা নারীর শরীরে ঝ'রে পড়ছে সম্মান-শ্রদ্ধার উজ্জ্বল এক মাতৃভাব, অপূর্ব এক দৈবীভাব, দৈবীমায়া!  ঝলমলে হাসিখুশীতে ভরা নারীপুরুষ উভয়ের চোখমুখ! কোনওরকম উৎকণ্ঠা, হতাশা, অবসাদ, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অশ্লীলতা, রাগ, দ্বেষ, হিংসা, নীচতা কোনও কিছুর চিহ্ন মাত্র নেই চোখেমুখে, চলাফেরায়, শরীরী ভঙ্গিতে! অদ্ভুত শান্ত, সৌম্য, ধীর, স্থির, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে সমস্ত শরীর জুড়ে। সদাহাস্যময়! মিষ্টি হাসির ঢেউ ভেসে আসছে পাশে গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা জনাকীর্ণ স্থান থেকে! মিষ্টি সুরে কে যেন গাইছে রাগ ভৈরব! আলোআঁধারিতে ঘেরা ভোরের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে আসা সেই সুর নেশাগ্রস্থ ক'রে আমায় হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় দেবদেউলে। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত স্বর্গে বিচরণ করতে করতে চলে এলাম পরমপিতার দরবারে। 


সেই দরবারে পৌঁছে আমি দেখতে পেলাম সেখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে। সেখানে বহু নামী-অনামী, দামী-অদামী, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, ধনী-দরিদ্র, আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু বহু রকমের মানুষের মিলনস্থল। আমি একপাশে ফাঁকা জায়গা দেখে চুপ ক'রে বসে পড়লাম। দেখলাম দয়াল ঠাকুর পরমপিতা মৃদু হাসি হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছেন। গরীব-বড়লোক, পন্ডিত-মূর্খ, সাধু-শয়তান, ধার্মিক-অধার্মিক সবাই বসে আছেন তাঁর সামনে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখছে দয়াল ঠাকুরকে, দেখছে পরমপিতার অপূর্ব স্নিগ্ধ শান্ত মিষ্টি হাসিতে ভরা মুখমন্ডল, একটা স্বর্গীয় দ্যুতি যেন ঝড়ে পড়ছে সমস্ত বরতনু দিয়ে! চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মোহিত হ'য়ে গেলাম! মনে পড়ে গেল আমারই লেখা গানের লাইন, 

চোখ যেন নয় হীরে তা চোখের অন্তরে, 
চোখের তারায় মমতা রাশি রাশি ঝ'রে পড়ে,২
নয়নে নয়ন মেলে পরাণে ঝড় তোলে,২
ও, মন হারিয়ে যায় রে মন হারিয়ে যায়,
বন্ধুরে তোর পাখনা উড়িয়ে দিয়ে আয় রে,
উড়িয়ে দিয়ে আয়!

মনে হচ্ছে আমি যেন, তাঁর সামনে গেয়ে চলেছি একটার পর একটা শুধু তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে, 
মণিমুক্তো পড়ে ঝ'রে ঝ'রে। 
ঐ চোখের পানে চেয়ে চেয়ে 
প্রাণ পাখি বলে এবার যাবো উড়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে! 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
চোখ সাগরে ডুবে যে যায়। 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
এবার বুঝি ডুবেই যে যায়! 
কে আছো ভাই বাঁচাও আমায় 
ঐ চোখের মাঝে আমার সত্ত্বা হারাই। 
চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
মরি আমি বিষম খেয়ে 
ঐ চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
হাবুডুব খেতে খেতে 
এই জন্ম আমার হারিয়ে গেল, 
ঐ চোখের মাঝে আমার নোতুন জন্ম হ'লো।

আপন মনে গান গাইতে গাইতে চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। দেখলাম পরপর সবাই সারি সারি বসে আছে শৃঙ্খলিত ভাবে। কেউ কথা বলছে না। সবাই শুনছে দয়ালের কথা বাধ্য ছাত্রের মত। শুধু ভেসে আসছে ঐ নিস্তব্ধতা মাঝে দয়ালের মধুর মিষ্টি কন্ঠস্বর আর যার সঙ্গে কথা বলছে তার করুণ নিম্ন কন্ঠস্বর। করুণ কেন!? ঐ সামনে বসা ভক্তদেরএকটা করুণ ক্রন্দন ধ্বনি যেন শুনতে পাচ্ছি আমি। মনে হ'লো মর্তে তাদের কৃত অপরাধ কবুল করছে পরম দয়ালের কাছে। মানুষের প্রতি নির্মম অত্যাচার, অন্যায়, অপরাধ, দয়ালের প্রতি ও দয়ালের আত্মজদের প্রতি অশ্লীল গালাগালি, অপমান, মিথ্যে নোংরা অপবাদ, চরিত্রে কলঙ্ক লেপন, দয়ালের ভক্তদের উপর, সৎসঙ্গীদের উপর কুৎসা ও গালাগালি ক'রে ব্যক্তিগত আক্রমণ মৃত্যুর পরেও তাদের উপর ভয়ংকর ভারী হ'য়ে বুমেরাং হ'য়ে ফিরে এসে তাদের আত্মাকে ক'রে চলেছে বীভৎস বলাৎকার! তা তাদের করুণ চেহারা ও ভয়ার্ত কথাবার্তায় উঠেছে ফুটে। আর পরম দয়াল পরম মমতায় তাদের দিকে স্নেহ ঝরা দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে! মনে মনে ভাবলাম এখন তো এরা মর্তে নেই, দেহরূপে নেই তাহ'লে এদের কষ্ট কিসের, কষ্ট কোথায়? তাহ'লে কি এদের আত্মা কাঁদছে?  ক্ষতবিক্ষত আত্মা কি ক্ষতের যন্ত্রণায় কাঁদছে? তাহ'লে কি আত্মা তার চলমান গতিময়তা হারিয়ে বাঁধা পড়ে গেছে গন্ডীতে? ব'সে ব'সে মনে মনে ভাবলাম, নদী যেমন বইয়ে যেতে যেতে তার মূল গতি পথ হারিয়ে খালে এসে আটকে যায় এবং স্বাভাবিক স্রোত হারিয়ে বদ্ধ পচা জলে পরিণত হয় সারা শরীরে অজস্র ক্ষত আর দূর্গন্ধ নিয়ে ঠিক তেমনি তাদের দেহ থেকে আত্মা তার গতি হারিয়ে বেরিয়ে এসে দূর্বল পচা গলা অস্তিত্ব নিয়ে দয়ালের কাছে কেঁদে চলেছে তার হারানো শক্তি ফিরে পাবার জন্য। অবাক হ'য়ে ভাবলাম দেহ ছাড়ার পরও আত্মা কষ্ট পায়, যন্ত্রণা পায়? পায় দেহ থাকা অবস্থায় পাওয়া কষ্ট যন্ত্রণার দশগুণ!? সামনে যারা বসেছিল তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাদের চোখ দিয়ে এক তীব্র যন্ত্রণার রক্তের ধারা গাল বেয়ে ঝ'রে পড়ছে। আর হাতে পায়ে মাথায় মুখে সর্বাঙ্গে ঘা। এমন কেন এদের চেহারা!? অবাক হ'য়ে বোকার মতো স্থির হ'য়ে ব'সে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু অন্তরে অস্থিরতার ঝড় ব'য়ে চলেছে। 

এই চারপাশের সমস্ত বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যের মাঝে আরও একটা জিনিস দেখে বিস্মিত হ'লাম, পরমপিতার দরবারে যারা বসে আছেন তাদের মধ্যে যাদের আমি আমার ছেড়ে আসা পৃথিবীতে পন্ডিত বুদ্ধিজীবী ব'লে জানতাম, যাদের কথা, আচার, ব্যবহার ও কলমের ডগা দিয়ে ঝলকে ঝলকে পান্ডিত্য ঝ'রে পড়তে দেখেছি, যাঁদের তাঁর বার্তাবাহী ব'লে জানতাম, এবং ঈশ্বর আরাধনা ও ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও শব্দের মালা গেঁথে গেঁথে কথার সাগরে ভাসতে ভাসতে ও ভাসাতে ভাসাতে বাগ্মীপ্রবর হ'য়ে বিরাট ভক্তের পরিচিতি লাভ করতে দেখেছিলাম যাঁদের সেইসমস্ত বুদ্ধিজীবী, পন্ডিত, জ্ঞানী, ইষ্টপ্রাণ, বাগ্মীপ্রবর ভক্তবলয়দের স্থান স্বর্গলোকের দেবদেউলে দয়ালের দরবারে সবার পিছনে! বসে আছে কেমন একটা কাঁচুমাচু মুখ ক'রে। চোখেমুখে একটা অপরাধী অপরাধী ভাব। যেন বিরাট কোনও অপরাধ ক'রেছে আর সেই অপরাধ বোধ নিয়ে বসে আছে মাথা নীচু ক'রে। যারা অপরাধ করলো, অন্যায় করলো তারা সামনে বসে আছে, সামনে ব'সে তাদের কৃত অপরাধের জন্য কান্না করছে, পাপমুক্ত হবার জন্য কাতর ক্ষমা প্রার্থনা করছে, ভিক্ষে চাইছে অনুতপ্ত হৃদয়ে, আর, যারা আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে ইষ্টপ্রেমের, ইষ্টপ্রাণতার, ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার প্রচারের তুফান তুলেছে মন্দিরে, ঘরে, উৎসবে, কলমের ডগায় তারা আজ অনেকেই পিছনে বসে আছে কেন!? যাঁরা মর্তলোকে এত ঢাকঢোল পেটালো তারা আজ দয়ালের দরবারে সবার পিছনে!? কেন? তারা অনেকেই দয়ালের বীজনাম বহন করেছে, বীজনাম মানুষকে বিলিয়েছে, এমনও শুনেছি দয়াল তাদের মুখ দিয়ে কথা বলতেন, তাদের মুখ দিয়ে খেতেন। একজনকে দেখেছি তিনি এমনিতে রসগোল্লা খান না, খেতে দিলেও তিনি খেতে চাইতেন না। কিন্তু যেহেতু দয়াল রসগোল্লা খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন তাই তিনি যজমানরা রসগোল্লা দিলে বিনা আপত্তিতে খেয়ে নিতেন, কারণ তিনি খেতেন না, তার মুখ দিয়ে দয়াল স্বয়ং খেতেন। কি পবিত্র নিখাদ ভক্তি! তাঁকেও দেখলাম একেবারে দয়ালের দরবারের চৌকাঠের পিছনে বসে আছেন, বসে আছেন ভগ্ন হৃদয়ে। তাহ'লে রসগোল্লা খাওয়ার ব্যাপারটা ছিল আসলে নাটক!? প্রত্যেকের মুখ বিবর্ণ। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কেমন যেন কুঁকড়ে আছে শরীরটা। মনটা খারাপ হ'য়ে গেল দেখে। এ বড় অন্যায়? পরমপিতার দরবারে পরমপিতার এ কেমনতর বিচার!? অসহিষ্ণু হ'য়ে উঠলো মন। মেনে নিতে পারলাম না। অসহিষ্ণু মন আবারও ব'লে উঠলো, না, এ বড় অন্যায়। এ ভীষণ অন্যায়!! ভাবলাম পরমপিতাকে জিজ্ঞেস করি। অস্থির আমি উঠে দাঁড়ালাম কিছু বলবো ব'লে। ঠিক তক্ষুনি শ্রীশ্রীদাদার 'শেষের সেদিন' কবিতাটা যেন ভেসে এলো কানে, কে যেন দীপ্ত বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে আবৃত্তি করছে,
ফাঁকি দিয়ে ঘুরিস ভবে
প্রবঞ্চনায় ভুলিয়ে লোকে
কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে
আত্মপ্রতিষ্ঠারই ঝোঁকে,
এমনি করেই বেলা গেল
সন্ধ্যা-ছায়ায় ভরল ঘর,
এখনও তুই চেতন হারা ?
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

নিত্য অহংমত্ত যারা
গেছে চলে এমন কত –
কেরদানিতে কাঁপিয়ে ধরা
চলত যারা অবিরত,
গুরুগিরীর মোহে ছুটিস
গরুর মতন নিরন্তর,
তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

পিছু পিছু চলছে যারা
নিত্য নিয়ে মাথায় তোরে
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভাবিস
অনন্তকাল রাখবি ধরে ?
ডুববি যখন শুনবি ওদের
অভিশাপের কলস্বর।
হাতটি ধরার থাকবেনা কেউ;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ইষ্ট ছেড়ে ইষ্ট সেজে
ছড়িয়ে বাহার ভাবিস নাকি
বাহার দেখে ভুলবে বিধি,
পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি ?
সত্ত্বা জুড়ে জাগছে ভাঙ্গন,
জাগছে ঐ প্রলয় ঝড়
পারিস যদি ফের এখনও;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ঈশের বিষাণ উঠল বেজে,
কাল-ফণী তোর মাথার প'রে,
মরণ তোরে করছে তাড়া
বাঁচবি এবার কেমন করে ?.
দ্রোহ-লোভের বাঁধন ছিড়ে
ইষ্ট পথে ঝাঁপিয়ে পড়
নইলে গতি কুম্ভীপাকে;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

আবৃত্তিটা শেষ হ'তেই মাথার পাশে রাখা মোবাইলে অ্যালার্ম বেজে উঠলো জোরে। ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটা ছিটকে চলে গেল। বিছানায় উঠে বসলাম। চুপ ক'রে চোখ বন্ধ ক'রে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর জানালা খুলে বাইরের দিকে চেয়ে দেখলাম রাতের আঁধার কেটে ধীরে ধীরে ভোরের সূর্যের ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। ভোর হচ্ছে। একটা শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ। চারপাশ ফাঁকা। এক ঝলক ভোরের তাজা ঠান্ডা বাতাস চোখেমুখে এসে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। সম্মোহিতের মতো আমি চোখ বন্ধ করলাম। মনে মনে ভাবলাম স্বপ্নের কথা। তারপর যখন চোখ খুলে ঠাকুরের ফটোর দিকে চেয়ে রইলাম। দেখলাম, দয়াল ঠাকুর আমার দিকে চেয়ে মিট মিট ক'রে হাসছে, আর, যেন খুব মৃদু হাল্কা স্বরে বলছেন, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তে করলে রে চলবে না। ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না। আগে সাহসী হও, বীর হও, অকপট হও তবে জানা যাবে ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার তোমার হয়েছে।" বুকের ভেতরটা কে যেন খামচে ধরলো হঠাৎ। ব্যথা হ'তে লাগলো। চোখ ভ'রে গেল জলে। গাল বেয়ে নেমে এলো জলের ধারা। বুকটা চেপে ধ'রে অনুতপ্ত হৃদয়ে চেয়ে রইলাম দয়ালের সেই বরাভয় চোখের দিকে।

মনে পড়লো তাঁর কথা, "আমার গায়ে মশা মাছিও বসে, তাহ'লে কি তারাও আমার সঙ্গে স্বর্গে যাবে?" 
মাথাটা নীচু ক'রে নিলাম। ভাবলাম ভাগ্যিস জিজ্ঞেস করিনি স্বপ্নে দয়ালকে, কেন এই অন্যায় বিচার। ভাগ্যিস বিচারের ভার আপন হাতে নিইনি। তবুও একটা অপরাধ বোধ খোঁচা মারতে লাগলো বুকে, মনে হ'তে লাগলো, মুখে জিজ্ঞেস না করলেও মনের মধ্যে তো উঠেছিল তার বিচারের প্রতি অবিশ্বাসের প্রশ্ন!! অপরাধ বোধে চোখটা জলে ঝাপসা হ'য়ে এলো। দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো নীচে মাটিতে। জয়গুরু।  

Saturday, April 27, 2024

প্রবন্ধঃ প্রফুল্লদার 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ের লেখা প্রসঙ্গে।

শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা তাঁর 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ে ১১০ নম্বর পাতার ১২৯ নম্বর সংখ্যার 'চাই একজন বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ' শিরোনামে লিখেছেন,

"ঠাকুরের একদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আমার রোজই মনে পড়ে। আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে। আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে।
আমি জিজ্ঞেস ক'রেছিলাম, আপনি সেই ধরণের মানুষ কাউকে পেয়েছেন?
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, না।


অনেকের সম্বন্ধে যেমন তিনি উচ্ছসিত প্রশংসা ক'রে গেলেন তেমনি উপযুক্ত মানুষ না পাওয়ার জন্য তিনি দুঃখ ক'রে গেলেন আজীবন। এ সত্যকে যারা অস্বীকার করেন, তাঁরা নিজেদেরকে এবং ঠাকুরকে প্রতারণা করেন। টাকা সৎসঙ্গে যতই আসুক না কেন তা কিন্তু ঠাকুরের দৃষ্টিতে মূল্যবান নয়কো। টাকায় হাত লাগার ফলে ঠাকুরের একদিন দারুণ অস্বস্তি হ'তে থাকে। বারবার হাত ধোন আর বলেন, এ হ'লো Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা।


এই হ'লো প্রফুল্লদার লেখা 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ের শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখনিঃসৃত কথামৃত।


এই যে বিষয়বস্তু এ সবই প্রফুল্লদার মাথার মধ্যে যা জমা ছিল সেখান থেকে একটা একটা ক'রে তথ্য বের ক'রে এনে এই বই ছাপা হয়েছে। ছাপা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর আগে ১৯৯১ সালে। আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার ২২ বছর পরে। আর, তখন শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন। ১৯৯৪ সালে শ্রীশ্রীবড়দা দেহ রাখেন। অর্থাৎ প্রফুল্লদা শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন এই বিযয় নিয়ে ঠাকুরের সঙ্গে কখনো কোনদিনই আলোচনা করেননি এবং শ্রীশ্রীবড়দা বই প্রকাশের সময় ও তারও পরে ৪ বছর সশরীরে থাকা সত্বেও তাঁব সঙ্গে কোনদিনই আলোচনা করেননি।


স্মৃতির ঘর থেকে বের ক'রে আনা গয়না সব সময় খাঁটি সোনার গয়না হয়না। সবসময় দোষমুক্ত বা ত্রুটিমুক্তো সঠিক ঘটনা হয় না। মস্তিষ্কে ধ'রে রাখা তথ্য অর্থাৎ স্মৃতি সবসময় ত্রুটিমুক্ত হয় না, কিছু না কিছু মূল ঘটনার থেকে তফাৎ থাকে। আর সেই সামান্য তফাৎ-ই বিশাল সমস্যার সৃষ্টি করে, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, ইতিহাস বিকৃত হ'য়ে যায়। উদাহরণস্বরুপ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্ত শ্রীম অর্থাৎ মহেন্দ্রলাল গুপ্তের লেখা শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত ৫ খন্ড বই। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা হওয়া ও কথাবার্তার পর বাড়ি ফিরে এসে রাতে স্মৃতি থেকে আহরণ ক'রে ক'রে সব ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তাঁর নিজের কথায় আমরা জানতে পারি, "বাড়ি ফেরার পর স্মৃতি থেকে সব কিছু লিখে রাখতাম। মাঝে মাঝে সারা রাতও জেগে থাকতে হত...মাঝে মাঝে টানা সাত দিন বসে থেকে লিখতে হত। গানগুলিকে স্মরণে আনতে হত, কোন ক্রমে সেগুলি গাওয়া হয়েছিল, সেগুলিও মনে করতে হত, সমাধি ও অন্যান্য সব ঘটনার কথা মনে করতে হত।" এর থেকে 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত' গ্রন্থের জন্ম রহস্য বোঝা যায়। তাই সেখানে কিছু কিছু অসঙ্গতি থাকলেও থাকতে পারে। এছাড়া আরও অনেকের অনেক গ্রন্থ আছে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের ওপরে। যেগুলির বক্তব্য সম্পর্কেও প্রামাণিকতা দাবী করে। যেমন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের বাউল বেশে বর্ধমানের রাস্তায় ঘুরে বেড়াবার কথা আছে যা ঠাকুর রামকৃষ্ণ কখনোই বলেননি।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের বেলায় আমরা দেখতে পাই, শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে বসেই তাঁর অনুলেখকরা তাঁর কথা সঙ্কলিত ক'রে রেখেছেন। তাই সেখানে কোনও প্রশ্ন নেই। আর তর্কের খাতিরে সবাই সব জায়গায় সব বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। এটা সবার গণতান্ত্রিক বাক স্বাধীনতা। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের রচনার ক্ষেত্রেও তুলেছে নানা অশ্লীল বিতর্ক।

এখন আসুন একটু দেখে নিই শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রফুল্লদা কি বলতে চেয়েছেন তাঁর এই গ্রন্থে।


প্রফুল্লদার কথানুযায়ী, উপযুক্ত মানুষ না পাওয়ার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর যে দুঃখ ক'রে গেছেন আজীবন এ কথা সত্যি। শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা সম্পর্কে ঠাকুর বলেছেন, আপনার মত একটা ভাঙাচোরা মানুষ নিয়ে এত কান্ড করলেম, একটা গোটা মানুষ পেলে আমি গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে পারতেম। তাঁর দেহরূপে থাকাকালীন একবার বিজ্ঞানের ওপরে একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের ঘটনায় রাশিয়ার ৫ বিজ্ঞানীর বিরাট অবদানের কথা পত্রিকা পড়ে ঠাকুরকে জানানো হ'লে তিনি দুঃখ ক'রে উদাস সুরে বলেছিলেন, আমি যদি পেতেম বিজ্ঞানীদের------। এইসব কথা থেকে বোঝা যায় তাঁর মনের অভ্যন্তরে গভীরে মানুষের অভাবে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ের বহু স্বপ্ন পূরণ না হবার অসহনীয় যন্ত্রনা চাপা ছিল। সারাজীবন তিনি মানুষ ভিক্ষা করেছিলেন।


কিন্তু এই যে প্রফুল্লদা আরও লিখলেন, "এ সত্যকে অর্থাৎ বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন মানুষ ঠাকুর পাননি এই সত্য যারা অস্বীকার করেন, তাঁরা নিজেদেরকে এবং ঠাকুরকে প্রতারণা করেন।" এই কথা কারা অস্বীকার করেছেন? শ্রীশ্রীঠাকুরের কোনও প্রধান ভক্ত মন্ডলী কি অস্বীকার করেছেন? তাহ'লে এই কথা ভরা যৌবনে না ব'লে শেষ বয়সে এসে তাঁর মতন ঋষিতুল্য মানুষের একথা অযথা বলার কারণটা কি ছিল? যদি অস্বীকার ক'রে থাকেন কেউ তাহ'লে তিনি সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষ। তাঁব পরিচিত কেউ অস্বীকার করেছেন কি? আর ঠাকুরের সঙ্গে প্রতারণা করার যে কথাটা তিনি বলেছেন সেটা ঠিক। তিনি দীর্ঘ সময় ঠাকুরের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। ১৯৩৯ সাল থেকে তিনি আশ্রমে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের তিরোধান ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঠাকুরের লীলাসঙ্গী। এই দীর্ঘসময় পর্যন্ত তিনি এই প্রতারণার বিষয়টি চাক্ষুস করেছেন, বহু অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, করেছেন অনুভব, হয়েছে চূড়ান্ত উপলব্ধি। কিন্তু সেই দীর্ঘ যাত্রাপথে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে সৎসঙ্গীদের যন্ত্রণাময় প্রতারণা করার চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও উপলব্ধি তিনি প্রকাশ ক'রে যাননি বলিষ্ঠভাবে কোথাও। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি ঠাকুর যে একটাও বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ পাননি সেই কথা ব'লে গেলেন দৃঢ় চিত্তে। কিসের তিনি ইংগিত দিয়ে গেলেন?

আর, টাকা যে Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা এ কথা তো শ্রীশ্রীঠাকুরের ক্ষেত্রে সত্যি। এই যে তিনি হাত পেতে টাকা ভিক্ষে করতেন, এই আমাকে দিতে পারিস ব'লে, কিন্তু সেই টাকা তিনি নিজের হাত দিয়ে কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেননি। কিন্তু এই যে সৎসঙ্গের আজ বিশ্বজুড়ে বিশাল ব্যাপ্তি সেই বিশাল ব্যাপ্তির পিছনে টাকা ছাড়া কিছুই হ'তো না। টাকা অর্থাৎ অর্থ তখনই Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা হয় যখন অর্থ তার অর্থ ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। অর্থ শক্তিহীন হ'য়ে পড়ে ও অনর্থের কারণ হয় তখনি। এইটাও ঠাকুরেরই কথা। অর্থ আমার ও আমার পারিপার্শ্বিকের বাঁচা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক হ'য়ে উঠুক। অর্থ যেন জীবনকে ও পরিবেশকে কলুষিত করতে না পারে, বিষাক্ত করতে না পারে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বাঁচা ও বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম ও ইশ্বর সাধনা ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। জন্ম নিতেও টাকা লাগে, বাঁচার জন্যও টাকা লাগে এবং মৃত্যুতেও টাকা লাগে। সবেতেই টাকা অপরিহার্য, টাকা ছাড়া দুনিয়া অচল। আবার টাকায় সমাজ ও সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম মূল কারণ। সেইজন্যই ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, কামিনী কাঞ্চন থেকে তফাৎ তফাৎ থাক। তফাৎ থাকতে বলা মানে কামিনী-কাঞ্চনকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেলে দিতে বলেননি। বলেছেন, কচু পাতায় টলটলে জল ও পাঁকাল মাছের মত চকচকে থাকতে ঐ কচু পাতা ও পাঁকে থাকা সত্ত্বেও। জীবন ও পৃথিবীকে সুন্দর স্বর্গ ক'রে তোলার এক ও অদ্বিতীয় হাতিয়ার হ'ক কামিনী-কাঞ্চন। আর এই-ই হ'ল জ্ঞান।


যাই হ'ক, এই যে ঠাকুর যে একটাও বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ পাননি সেই কথা প্রফুল্লদা ব'লে গেলেন তা এই কথা ঠাকুর তাঁর সমগ্র জীবনে ২৪ হাজার বাণী ও অসংখ্য কথোপকথন সমৃদ্ধ বইয়ের কোথাও ব'লে গেছেন? কেন প্রফুল্লদাকে আলাদা ক'রে শেষ বয়সে এসে এই কথাটা ব'লে বই ছাপাতে হ'লো? তাঁর 'আলোচনা প্রসঙ্গে'-র ২৩ খন্ডের কোনও খন্ডের কোথাও বা অন্য কোনও বইয়ে বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ না পাওয়ার কথা ব'লে গেছেন? যদি ব'লে গিয়ে থাকেন তাহ'লে শেষ বয়সে এসে আলাদা ক'রে এই কথা আবার বলার কি দরকার ছিল? এই প্রশ্ন কি তিনি তাঁর দীর্ঘ ৩৯ বছর ধ'রে ঠাকুরের সঙ্গে সঙ্গ
করা কালীন কখনও করেছিলেন? করলে সেটা 'আলোচনা প্রসঙ্গে' ২৩ খন্ডের কোন খন্ডে আছে? আর না করলে কেন করেননি? আর আজই বা সেটা কেন তুলে ধরলেন আবার? কিসের ও কার উদ্দেশ্যে?

আর বলি, বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন মানুষ যদি ঠাকুর না পেয়ে থাকেন তাহ'লে ঠাকুরই বা কেন শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে এত কথা ব'লে গেলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত?


শ্রীশ্রীঠাকুর শেষ বয়সে একদিন মানিকপুর থেকে ঘুরে এসে তাঁর শুভ্র শয্যার ওপর বসেছেন। মনটা বেশ ফুরফুরে তাঁর। বেশ আনন্দ হাসিখুশী লাগছে তাঁকে। একজন তাঁকে তামাক সেজে এনে দিলেন। তিনি খোশ মেজাজে তামাক টানছেন। বড়দা ও কাজলদাদাও এসে বসলেন ঠাকুরের চৌকির সামনে। তামাক টানতে টানতে ঠাকুর চারিদিকে তাকাচ্ছেন আর কি যেন খুঁজছেন। দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে ক্যালেন্ডার আর তাঁর কয়েকটা ফটো। সেই ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠাকুর তন্ময় হ'য়ে গেলেন। ঘরে তখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পর তন্ময়তার ঘোর কাটিয়ে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ ক'রে ফটোর দিকে তাকিয়ে চিনতে না পেরে ধরা গলায় শ্রীশ্রীবড়দাকে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ফটোটা কার রে? শ্রীশ্রীবড়দা বলেছিলেন, ওটা আপনার ফটো, আপনার যৌবনের ফটো। শ্রীশ্রীঠাকুর অস্বীকার ক'রে ব'লে উঠেছিলেন, না, এটা তো আমার ফটো নয়, এটা তোর ফটো মনে হয়। শ্রীশ্রীবড়দা আপত্তি করলেন, ঠাকুরকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে ঐটা ঠাকুরেরই ফটো। কিন্তু ঠাকুরকে বোঝানো গেল না, ঠাকুর ফটোর দিকে তাকিয়ে পুনরায় জোর দিয়ে ব'লে উঠেছিলেন, উঁহু, না, না, এটা তো তোরই ফটো। শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরের জোর দিয়ে বলার ধরণ, দৃঢ়তা দেখেই চুপ ক'রে গেলেন, আর কোনও কথা বললেন না। শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখের ওপর কখনোই শ্রীশ্রীবড়দা দু'বার কথা বলতেন না। শ্রীশ্রীঠাকুর যা বলতেন, সেইসময় চুপ ক'রে থাকতেন। মুখের ওপর কখনোই কোনোদিন কথা বলেননি শ্রীশ্রীবড়দা।


তাই এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা বুঝতে পারলাম, শ্রীশ্রীঠাকুর সেদিন গভীর তন্ময়তার মধ্যে ডুবে গিয়ে কথা বলার মধ্যে দিয়ে উপস্থিত সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ও তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র ও পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দা এক ও অভিন্ন।


আর একবার, শ্রীশ্রীঠাকুর বাণী দিচ্ছেন হঠাৎ একজন প্রশ্ন করলেন, এত বাণী ব'লে লাভ কি? কেউ তো কিছু পালনই করে না। কার জন্য এসব? এই কথা শুনেই ঠাকুর চুপ ক'রে গেলেন। মনটা তাঁর খারাপ হ'য়ে গেল। ভারাক্রান্ত হ'য়ে উঠলো পরিবেশ। যিনি বাণী লিখছিলেন তাঁকে ঠাকুর জিজ্ঞেস করলেন, "আমি যে এতসব কথা কই কার জন্য?" ঠাকুরের প্রশ্ন শুনে অনুলেখক উত্তর দিলেন, "আজ্ঞে মানবজাতির কল্যাণের জন্য।" তারপর যে আসে তাকেই জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কেউ বলে জগতের কল্যানের জন্য। কেউ বা বলে মানুষকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনও উত্তরই ঠাকুরকে খুশী করতে পারলো না। এই ঘটনার অনেক পরে যখন শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরকে রোজকার প্রণাম করতে এলেন তখন ঠাকুরকে বড়দা প্রণাম নিবেদন করতেই ঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে জিজ্ঞেস করলেন, "হ্যাঁরে বড় খোকা, এরা কি কয়? শ্রীশ্রীবড়দা উৎসুক কন্ঠে বললেন, কি বাবা? শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, আমি যে এত কথা কই কার জন্যে?" শোনা মাত্রই শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, "আজ্ঞে, আমার জন্যে।" মুহুর্তে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখ চোখ আনন্দে ঝলমল ক'রে উঠলো। হাসি ছড়িয়ে পড়লো তাঁর সারা মুখে। এক অনির্বচনীয় আনন্দ তাঁকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আনন্দে তাঁর বরতনু কাঁপতে লাগলো। এক স্বর্গীয় সুখে ব'লে উঠলেন দয়াল, ঐ দ্যাখ বড়খোকা কি কয়। বড়খোকা কি কয়?


শ্রীশ্রীবড়দাই একমাত্র দয়াল ঠাকুরের মনের কথা বুঝতে পারতেন।


শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার এক বছর আগে 1968 সালের শেষ বসন্তের এক বিকেলে শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এলে ঠাকুর তাকে বললেন, বড়খোকা তুই এখানে আমার বিছানায় ব'স, আমি পেছনের ঘরে যাব।
শ্রীশ্রীবড়দা তখনই প্রতিবাদ ক'রে ব'লে উঠেছিলেন। "না, না বাবা! এটা তোমার বিছানা আর তুমি এখানেই থাকো। শ্রীশ্রীঠাকুর এর উত্তরে সেদিন শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন, "না, তুই এখানে ব'স। তারপর অশ্রুসজল চোখে আদরসোহাগ কন্ঠে জোর ক'রে বলেছিলেন, তুই-ই তো আমি। আমি এখন পেছনের ঘরে যাব। আমি আর শারীরিকভাবে সামলাতে পারছি না।

এই কথা ও দৃশ্যের মর্মবেদনা বোঝে সেই, প্রাণ বোঝে যার, অনুভব করতে পারে সেই, শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্য প্রাণ কাঁদে যার, শ্রীশ্রীঠাকুর আর তাঁর আদরের বড়খোকা শ্রীশ্রীবড়দার
গভীর সম্পর্ক বোঝে সেই উপলব্ধি হয় যার।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"এই শোন মনি, বড়খোকা হল তোদের বড়দা। ওর কিছু হওয়া মানে তোদের হওয়া, নাকি কইস? ঐ যে কুকুর, বাড়ী, গাড়ী যা' যা' দেখিস, ও-সব কিছুই ও আমার কাছে চায় না। আমি ওকে কই রাখতি। আমার কথা শুনেই ও চলে। দ্যাখ, আমি যদি ওর উপর Sincere না হই, তবে তোদের উপর হই কেমন ক'রে? যারা শুনবার চাই, তুই ঠিকমত কইস।"
"পরমপিতা যদি বাঁচিয়ে জীইয়ে রাখেন, তবে বড় খোকাই সব দেখাশুনা করবে, সব কিছু পরিচালনা করবে, সে তোমাদের কমিটির ভিতর থেকে হউক, কিংবা বাইরে থেকেই হোক।"
"বড়খোকার বাইরের রূপ দেখে ওর স্বরূপ বোঝা কঠিন। ও বড় সাচ্চা। কেউ যদি ওর ভিতরে ঢুকতে পারে, বুঝে নেবে কেইসা মাল।"
"বড়খোকা শুধু যে আমার Son by birth(ঔরস জাত সন্তান)তাই নয়, Son by culture(কৃষ্টিজাত সন্তান)-ও বটে। সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।"
"যদি আমার কিছু হ'য়ে যায়, আমি না বাঁচি, তবে বড়খোকা রইল, তা'কে মাথায় নিয়ে তোরা সবাই চলিস। তা'র আদেশ ও নির্দ্দেশ মত সবাই যেন চলে"
"বড়খোকার সাথে সবাই'র যা' সম্বন্ধ, আমার সাথেও তাই। ওর সাথে থাকা মানেই আমার সাথে থাকা। আমার মনের কথা বললাম, অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে।"
"বড়খোকা যা' বলবে শুনবি, আমিই বড়খোকা। বড়খোকার সাথে থাকা মানেই আমার সাথে থাকা।"
"আমাকে প্রণাম ক'রে যে বড়খোকাকে প্রণাম করে না তার প্রণাম আমি নিই না।

তাই আবার বলি,
শ্রীশ্রীবড়দাকে তিনি নিজের বিছানায় বসতে ব'লে বলেছিলেন, "তুই এখানে আমার বিছানায় ব'স, আমি একটু পিছনের ঘরে গিয়ে বসি। বড়দা বসতে না চাইলে ঠাকুর তাঁকে জোর ক'রে বসতে ব'লে বলে উঠেছিলেন, না, তুই এখানে ব'স। তুই-ই তো আমি।"
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "হনুমানজীর পূজা না করলে রামজীর পূজা সম্পূর্ণ হয় না।

ঠিক তেমনি আজ সৎসঙ্গীদের বুঝতে হবে শ্রীশ্রীবড়দার পূজা না করলে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পূজা সম্পূর্ণ হয় না। শ্রীশ্রীঠাকুরের যে মন্দিরে ও বাড়িতে শ্রীশ্রীবড়দার মূর্তি বা ফটো নেই সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর নেই। যে মন্দিরে ও বাড়িতে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রণাম ক'রে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রণাম করা যায় না সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর ভক্তের প্রণাম নেন না ও শ্রীশ্রীঠাকুর থাকেন না। কারণ যেখানে তাঁর পরম ভক্তের স্থান নেই, সম্মান নেই, ভালোবাসা নেই সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থান নেই, সম্মান নেই, ভালোবাসা নেই। সেখানে অপমানকারী অশ্রদ্ধাকারী ভন্ডদের ঘরে ও মূর্খদের ঘরে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকেন না।




আর, এই যে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা 'স্মৃতি তীর্থে' বই ছাপিয়ে লিখে রেখে গেলেন, "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে। আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলোট পালোট ক'রে দিতে পারে।" এখান থেকে আমরা কি বুঝতে পারি?

এতক্ষণ আমি যে যে ঘটনাগুলি তুলে ধরলাম সেই ঘটনাগুলি থেকে কি আমরা বুঝতে পারি না শ্রীশ্রীঠাকুরের কথার সত্যতা? শ্রীশ্রীঠাকুর তো নিজের মুখেই "বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত" পাবার কথা বলে গেছেন ও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তাঁর কথা "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে"-এই কথার মধ্যে দিয়েই। তাহ'লে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার "আপনি সেই ধরণের মানুষ কাউকে পেয়েছেন?" এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, না। তাহ'লে কি শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই পরস্পর বিরোধী কথা বলেছিলেন? শ্রীশ্রী ঠাকুর বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন একটাও মানুষ খুঁজে পাননি অথচ তিনি এবার সাথীহীন এসেছিলেন ধরাধামে? শ্রীশ্রী ঠাকুর বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন একটাও মানুষ খুঁজে পাননি অথচ তিনি শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে নানা ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এতকিছু ইংগিতপূর্ণ কথা ব'লে গেলেন? কি উদ্দেশ্যে? সেই গবেষণাও কি সৎসঙ্গীদের করা উচিত নয়? শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে ভক্তিতে গদগদ হ'য়ে গবেষণা ক'রে গেলেই হবে? তাঁর প্রধান ও পরম ভক্ত সম্পর্কে কোনও গবেষণা হবে না? শ্রীশ্রীঠাকুরের যারা অনুলেখক ও বড় বড় প্রথিতযশা উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত জ্ঞানী বিদগ্ধ ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা আছেন তাঁরা শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন? তাঁরা কি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান, বড় আদরের বড়খোকা, শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই, ত্রেতা যুগের হনুমান, দ্বাপর যুগের অর্জুন, কলি যুগের আনন্দ, ম্যাগডালিন, আবুবকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ইত্যাদির সম্মিলিত রূপ শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে গবেষণা ক'রে দেখবেন না শ্রীশ্রীবড়দা সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ কিনা? আমি নাহয় ছেড়ে দিলাম শ্রীশ্রীবড়দার কথা কিন্তু কে সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ যার কথা শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছিলেন, "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে" এই কথা তলিয়ে দেখবেন না শ্রীশ্রীঠাকুরের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত প্রথিতযশা ভক্তেরা? তলিয়ে দেখবেন না এই কথার সত্যতা? তলিয়ে দেখবেন না আদৌ শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছিলেন কিনা, যে তিনি একজনও বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত পাননি এই কথা সত্য কিনা?

কে সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ তা কি তিনি নিজের মুখে ব'লে যাবেন ঠাকুর নাকি ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের নানা ইংগিতপূর্ণ কথার মধ্যে দিয়ে আমাদের খুঁজে নেওয়ার জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি, চেতনা জাগ্রত করার আজীবন যে শিক্ষা ও তুক দিয়ে গেছিলেন তার সাহায্যে আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে? শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা যে তাঁর পূর্ব গুরুদেব শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন তা'কি ঠাকুর সরাসরি তাঁকে বলেছিলেন, 'আমি রামকৃষ্ণ'? নাকি নানা রহস্যময় ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, নানা বিস্ময়কর ইংগিতপূর্ণ কথার মধ্যে দিয়ে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে খুঁজে পেয়েছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে তাঁর অসীম তৃষ্ণা আর যোগসিদ্ধ বলে?


এরকমভাবেই শ্রীশ্রীঠাকুরের সব বড় বড় ভক্তেরা তাঁদের পূর্ব পূর্ব রূপের ইষ্টদেবতাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁদের ইষ্টদেবতার প্রতি গভীর ভালোবাসা, টান ও যোগসিদ্ধির বলে। তাই বিশ্বের কোনা কোনা থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে।

আর, যেখানে প্রফুল্লদা লিখেছেন 'স্মৃতি তীর্থে' গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে।" একজন মানুষ কি করতে পারে তারও প্রমাণ আমরা দেখতে পেয়েছি শ্রীশ্রীবড়দার জীবনে, পেয়েছি শ্রীশ্রীদাদার জীবনে, পাচ্ছি বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার জীবনে। শ্রীশ্রীঠাকুর যেন জীবন্ত খেলা করছেন বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন ভক্ত শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চলা, বলা, আচার, আচরণ, কথাবার্তার ধরণ, চাউনি, অঙ্গুলি হেলন, শরীরীভঙ্গী ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে।


আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা "দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে" কথার প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পেয়েছি অভূতপূর্ব বিস্ময়কর যুবক শ্রীশ্রীঅবিনদাদার "কি করবো আর কতটুকু করতে পারবো তা জানি না কিন্তু যাবার আগে আর্ধেক পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়ে যেতে চাই" এই অপূর্ব বিস্ময়কর কথার মধ্যে। বাকী আর্ধেক পৃথিবী নাড়িয়ে দেওয়া না-হয় পরবর্তী সময়ের নেতৃত্বের উপর থাকবে।

যাই হ'ক, চেষ্টা করলাম শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রফুল্লদার 'স্মৃতি তীর্থে' গ্রন্থের কথার ওপর দাঁড়িয়ে উত্তর দেবার। সঠিক বেঠিক সেটা বুঝে নেবার দায়িত্ব তামাম সৎসঙ্গীদের।

প্রবন্ধঃ আমি অসহায়! আমি কনফিউজড!!

২০২০তে অসুস্থ হ'য়নি, অসুস্থতা বোধ করিনি। শারিরীক-মানসিক কোনও দিক দিয়ে দূর্বলতা বোধ করিনি, দূর্বল হ'য়নি। একবার মনে হ'য়েছিল বুঝি জ্বর এসেছে, গা-হাত-পা ব্যথা ব্যথা করছে ও আরো অন্যান্য সিম্পটম। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে করতে প্যারাসিটামল এবং অন্যান্য ওষুধ খেয়েই আর সবসময়ের মত নর্মাল জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবারে কেন জানি অসুস্থতা বোধ করছি! বিরক্ত বোধ করছি। টিভি খুলতে আর ইচ্ছে করে না। মনে হচ্ছে টিভির ভিতর দিয়ে করোনা স্প্রে ক'রে দিচ্ছে টিভি সঞ্চালকেরা! চ্যানেলগুলি যেন করোনা প্রচারে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিয়েছে কে কত তীব্রতার সংগে ভয়ংকরভাবে কন্ঠে ও শরীরী ভাষায় ভয়ের বাতাবরণ তৈরি ক'রে টি আর পি রেট বাড়াতে পারে। যদিও সত্য অপ্রিয়। কিন্তু হঠাৎ ক'রে প্রচারের তীব্রতা সত্যতা সম্পর্কে চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। ব্যাপারটা কি তাহলে 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'-র মতন নাকি সত্যিই কোনও রহস্য আছে এর পিছনে। প্রতিটি চ্যানেল বলছে লাফিয়ে লাফিয়ে নাকি বাড়ছে করোনা। আর বিশেষজ্ঞরা নাকি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ হ'য়ে লড়ছে! সাবধান ক'রে দিয়েছিল অগ্রিম কিন্তু ভোট কারিগররা নাকি শোনেনি, পাত্তা দেয়নি!

২০২০-র কথা মনে পড়লো! ২০২০তে যে সময় সারা পৃথিবী করোনা নামক অজানা জীবানুর ধাক্কায় বেসামাল হ'য়ে পড়েছিল সেদিন করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের তামাম চিকিৎসক মহল অসহায় হ'য়ে পড়েছিল। বিশ্বের শাসককুল এমনকি তাবড় তাবড় পরমাণু শক্তিধর ও আধুনিক বিজ্ঞানের শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর প্রধানরা অসহায় হ'য়ে পরস্পর পরস্পরের কাছে ভিক্ষার জন্য হাত পেতে ছিল। তখন আমরা কতকিছু দেখেছি! দেখেছি কাসর ঘন্টা বাজিয়ে শব্দ থেরাপি! দেখেছি স্কুল কলেজ, দোকানপাট, হাটবাজার, অফিসকাছাড়, বাস ট্রেন সমস্ত কিছু বন্ধ হ'তে! দেখেছি সমস্ত ক্লাব, প্রতিষ্ঠান থেকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষ নানারকম খাদ্যসামগ্রী, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গরীবদের পাশে দাঁড়িয়েছে! কিন্তু এখন!?

এই ভয়াবহ সময়ে যখন করোনা দেশের ব্রহ্মতালুতে ছোবল মেরে দিয়েছে সেই বিষে জ্বর্জরিত সময়ে ভোট পুজোয় উদ্দাম উত্তাল উত্তাপে করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেতে উঠেছে রাজ্য তথা দেশ পরিচালনার অভিভাবকবৃন্দ! সত্যি দেশের অভিভাবকবৃন্দ! কি বিচিত্র এই দেশ!! ( রচনা ২৭শে এপ্রিল, ২০২১ )