Powered By Blogger

Wednesday, May 31, 2023

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে?(২)

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে? (১)-এ প্রশ্নটা করেছিলাম।
লিখেছিলাম: শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে!?

মুনি? ঋষি? সাধক? ধর্মগুরু? দীক্ষাগুরু? পন্ডিত? মহাত্মা? মহাপুরুষ? কবি? সাহিত্যিক? শিল্পী? গীতিকার? গায়ক? নাট্যকার? অভিনেতা? শিক্ষাবিদ? চিন্তাবিদ? গণিতজ্ঞ? শিক্ষক? ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ, ডাক্তার? বিজ্ঞানী? জ্যোতিষী? সমাজসেবী? সমাজ সংস্কারক? বিপ্লবী? নেতাজী? দেশপ্রেমী? মানবপ্রেমী?

কে তুমি ঠাকুর!?
মানুষ? দেবতা?? ঈশ্বর???
আমার প্রশ্নের উত্তরটা আমিই দিলাম!

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ!
তিনি হ'লেন একজন বিস্ময়। বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়!
তিনি হ'লেন আদর্শ। আদর্শের আদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ!
তিনি হ'লেন পুরুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ! উত্তম পুরুষ!! পুরুষোত্তম!!!
তিনি হ 'লেন তমসার পার অচ্ছেদ্যবর্ণ ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভুত মহান পুরুষ!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন একজন নেতা। নেতার নেতা বিশ্বনেতা! ওয়ার্ল্ড লিডার!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিপ্লবী! হ্যাঁ বিপ্লবী! তিনি হ'লেন অমৃতবর্ষী বিপ্লবের দিশারী!
তিনি হ'লেন বাঁচা-বাড়ার অনুকূল ভাবধারায় সারা দেশ তথা বিশ্বকে ভাসিয়ে দেওয়ার পথিকৃৎ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বিশ্বজুড়ে সমস্ত মত ও পথের মহাপরিপুরণকারী!
তিনি হ'লেন একজন বৈদ্য। বৈদ্যের বৈদ্য পরম বৈদ্য!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানী পরম বিজ্ঞানী!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন শিক্ষক, টিচার! ওয়ার্ল্ড টিচার!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন শেষের শুরু! যেখানে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার শেষ অর্থাৎ কাব্য, দর্শন, সাহিত্য, আইন, প্রকৌশলবিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদি শেষ সেখান থেকে শুরু তাঁর বলা!
তিনি হ'লেন কারণপুরুষ। সমস্ত কারণের কারণ পরমকারুণিক তিনি!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হলেন আত্মা। সমস্ত আত্মার আত্মা পরমাত্মা!
জীবাত্মা মহাত্মায় পরিণতি লাভ ক'রে অবশেষে যে পরমাত্মায় লীন হ'য়ে যায় সেই পরমাত্মা তিনি!
তিনি হ'লেন সবার স্বামী। জীবনস্বামী! জীব জগৎ জীবন কারণ করুণাময় স্বামী!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন গুরু। গুরুর গুরু মহাগুরু! পরমগুরু! বিশ্বগুরু! জগতগুরু!
এই বিশ্বে যত ধর্মের যত দেবদেবী আছে সমস্ত দেবদেবীর আধার হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! যেমন সূর্য আর সূর্যের কিরণ!
শ্রীশ্রীঠাকুর যদি হন সূর্য তেত্রিশ কোটি দেবদেবী হ'লো তাঁর কিরণ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন ব্রহ্মা! তিনিই হ'লেন বিষ্ণু! তিনিই জীবন্ত মহেশ্বর!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বাইবেলে কথিত In the beginning there was sound, and sound was GOD!- এর সেই সাউন্ড! অর্থাৎ একই সঙ্গে শব্দ ও শব্দের প্রাণ হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনের মূল মরকোচ!
তিনিই ভগবান! তিনিই ঈশ্বর!! তিনিই আল্লা!!! তিনিই গড!!!!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন স্বয়ং রক্তমাংসসংকুল জীবন্ত নারায়ণ!
তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন সেই ওঙ্কার ধ্বনি!
তিনি হ'লেন ওঙ্কার ধ্বনির প্রাণ যে রাধাস্বামী সেই রাধাস্বামী হ'লেন তিনি!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই হলেন বিশ্বজুড়ে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে আবির্ভুত মুনি, ঋষি, যোগী, ধ্যানী ও লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সাধক ও ভক্তকুলের আরাধ্য জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর যুগোপযোগী নবরূপে আবির্ভুত কলিযুগের শেষ অবতার অর্থাৎ স্বয়ং অবতারি পুরুষ!!!
তিনি হ'লেন ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তার মনুষ্য রূপে আট আটবার আবির্ভুত রূপের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় পূর্ণ রূপ!

তিনি সর্বশক্তিমান! তিনি সর্বব্যাপী! সর্বভূতে বিরাজমান!
তিনি সর্বনিপুণ! তিনি সর্বজ্ঞ! সর্ববেত্তা! সর্ববিদ্যাবিশারদ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সমস্ত অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব!
তিনি সমস্ত উৎসের উৎস পরম উৎস!
তিনি হ'লেন সমস্ত গন্তব্যের পরম গন্তব্য স্থল!
তিনিই হ'লেন ডিভাইন ডিক্টেশন-এর কলাকার!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই মুনি ঋষি যোগী ধ্যানী যখন ধ্যানস্থ অবস্থায় যে আকাশবাণী প্রাপ্ত হয়, সাড়া পায়, ঈপ্সিত বস্তু লাভ করে সেই আকাশবাণী, সেই সাড়া বা সেই ঈপ্সিত বস্তুর দানকারী ব্যক্তি!
তিনিই ওঙ্কার ধ্বনি! তিনিই ব্রহ্ম! পরম ব্রহ্ম! তিনিই কুল অর্থাৎ এই মহাকাশে যত লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আমাদের যে ব্রহ্মান্ড সেই ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আরও একটা ব্রহ্মান্ড, তার বাইরে আরও একটা, আরও একটা, আরও একটা এমনিভাবে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড সমূহ ( যা বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন মাত্র) নিয়ে অন্তহীন বিশাল যে ব্যাপ্তি, যে বিস্তৃতি, যে কুল সেই কুলের যিনি মালিক, যিনি সৃষ্টিকর্তা, যিনি----সেই যখন 'ছিল না'-র অস্তিত্ব ছিল, অর্থাৎ সেই যখন কোনও কিছুই ছিল না তখনও তিনি ছিলেন অর্থাৎ ছিল সেই অস্তিত্ব অর্থাৎ সাউন্ড বা শব্দ 'ওঙ্কার', শব্দের প্রাণ 'রাধাস্বামী' আর সেই তিনি অর্থাৎ 'রাধাস্বামী' হ'লেন রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত কুলমালিক, পরব্রহ্ম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!!!
তিনিই একমাত্র উপাস্য! তিনিই পূজ্য!
তিনিই এক ও একমাত্র আরাধ্য দেবতা! ঈশ্বর! আল্লা! গড বা যে যে নামেই তাঁকে ডাকুক না কেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই রহস্যময় অস্তিত্ব!!!!!!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অখন্ডমন্ডলাকারে ব্রহ্মাণ্ডের পর ব্রহ্মান্ড জুড়ে যিনি পরিব্যাপ্ত তাঁর জীবন্ত রূপ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বজুড়ে মানুষের বন্ধ চোখ জ্ঞানের কাঠি দিয়ে খুলে দেবার এক ও একমাত্র নিখুঁত মানুষ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই চেতন পুরুষ যিনি স্বর্গ-মর্ত-পাতাল তিন লোক জুড়ে চেতনার নিদর্শন স্বরূপ পরিব্যাপ্ত!
শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা কোটি কোটি ব্রহ্মার উৎপত্তি স্থল! যেখান থেকে জন্ম নিয়েছে কোটি কোটি ব্রহ্মা ও ব্রহ্মান্ড!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই নারায়ণ আর নারায়ণ মানে হ'লো বিশাল বিস্তৃতি! অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই বিশাল বিস্তৃতি! আর নারায়ণের নাভিপদ্ম বা নাভিদেশ মানে সেই বিশাল বিস্তৃতির মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্রবিন্দু! আর সেই মধ্য বা কেন্দ্রবিন্দুকে বিজ্ঞানে বলা হয় সেন্ট্রাল জোন! যেখান থেকে সব কিছুর সৃষ্টি! চরম পরম উৎস! শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই চরম পরম উৎস!!! সেই সেন্ট্রাল জোন। সেই চরম পরম উৎসের, সেই সেন্ট্রাল জোনের আধার!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই বাইবেলে কথিত রক্তমাংসসঙ্কুল 'ঈশ্বর পুত্র' হ'য়েও ঈশ্বর! সর্বশক্তিমান পরমকারুণিক সর্ব্বানুস্যুত ব্যাপ্ত প্রাক প্রথমবাক সর্ববস্বর্গ সর্ব্বহৃদয় প্রাণনপরিমল অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর! জীবন্ত রক্তমাংসসঙ্কুল নররূপী ঈশ্বর! সৃষ্টিকর্তা!!
সেই চরম পরম উৎস রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত ঈশ্বরকে জানাই আভুমি হৃদয় কম্পিত শত-লক্ষ-কোটিকোটি প্রণাম!
---------প্রবি।
( লেখা ২১শে মে'২০২০ )

Tuesday, May 30, 2023

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরের সর্বশ্রেষ্ঠ লীলা: শ্রীশ্রীবড়দা ও পিতা পুত্রের লীলা!

শ্রীশ্রীঠাকুরের জেনারেশন কি করেছেন আর করেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেক বাঙালি তথাকথিত বালখিল্য ভক্ত! সেটা জন্ডিস চোখ, খোল ভর্তি কান, মল ভর্তি মন আর হৃদয় দিয়ে দেখতে, শুনতে, জানতে আর বুঝতে এ জীবনে আর পারা সম্ভব নয় যারা তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের। শ্রীশ্রীঠাকুর সব কিছু দিতে পারেন বলে একশ্রেণীর তথাকথিত শক্ত ভক্তের দল শুয়োরের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ ক'রে ছুটে এসে জিরাফের মত গলা উঁচিয়ে আর ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে ফেসবুকের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিচ্ছে আর প্রশ্ন তুলছে শ্রীশ্রীঠাকুরের জেনারেশনের ভূমিকা নিয়ে যে তাঁদের প্রচারের কি আছে!? তা' শ্রীশ্রীঠাকুর কি দিয়েছেন যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাদের তখন জাদু সম্রাটের ম্যাজিকের মত "গিলি গিলি ওকাস ফোকাস! ভ্যানিশ" অবস্থা প্রাপ্ত হয়!!!!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর আমার জন্য, আমাদের জন্য কি দিয়েছেন সেটা বোঝা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়, বোধ বুদ্ধির গন্ডির বাইরে! শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জীবদ্দশায় মানবজাতির বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা সর্বোপরি সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য যা দিয়ে গেছেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়: শ্রীশ্রীবড়দা!!!! জীবন ও সৃষ্টিকে রক্ষা করা ও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর 25হাজার বাণী ও বিভিন্ন বিষয়ে সীমাহীন কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে সমস্ত সমস্যা সমাধানের তুক দিয়ে গেছেন। এইসমস্ত দিয়ে যাওয়া কৃষ্টি সংস্কৃতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দিয়ে যাওয়া হ'লো তাঁর একইসঙ্গে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত পরম আদরের সন্তান বড়খোকা; সৎসঙ্গ জগতের চোখের মণি এ যুগের হনুমান, অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ রূপে বিশ্ববাসীর সর্বজনশ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীবড়দা!!!!!!! আর এবারের এই শেষ কলিযুগে শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রেষ্ঠ লীলা পিতাপুত্রের লীলা!!!!! পিতাপুত্রের লীলার মধ্যে সেই তাঁর বারবার ব'লে যাওয়া "আজও লীলা করে গৌরচাঁদ রাই, কোনও কোনও ভাগ্যবান দেখিবারে পায়" এই চিরন্তন সত্য প্রমাণিত হ'য়ে চলেছে!!!!! বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান ও সর্বশ্রেষ্ঠ লীলা: শ্রীশ্রীবড়দা ও পিতা পুত্রের লীলা!!!!!! ভাগ্যবান ভক্তেরাই সেই লীলা দেখতে পায়! বাকিরা 3 নম্বর ছাগল ছানার দশা পায়!!
আচ্ছা ঠাকুর নিজেই কি প্রচার চাইতেন? তাহ'লে তাঁর জেনারেশন কেন চাইবেন তাঁরা কি করছেন বা কি করেছেন তার প্রচার হোক!? এইবোধটুকুই যাদের নেই তারা শ্রীশ্রীঠাকুরের জেনারেশনের বিরুদ্ধাচরণ করতে নেবে পড়েছেন বালখিল্য বীর সৈনিকের মত! আর এর সিংহ ভাগে জ্বলজ্বল ক'রে বিরাজ করছে চিরকালের পরনিন্দা পরচর্চায় পটু কাঁকড়ার জাত বাঙালী!!!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর যখন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, যখন গোটা ভারত তথা বিশ্ব তাঁকে নিয়ে মাতাল তখন গোটা বিশ্বের বিস্ময়কর কাঁকড়ার জাত বাঙালি সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বকে নিয়ে, তাঁর পরবর্তী জেনারেশনকে নিয়ে কুৎসা, নিন্দা, অপমান, অশ্রদ্ধা, গালাগালি ক'রে চলেছে ক্রমাগত!!!!! ঈশ্বর স্বয়ং যখন মানুষ রূপে আবির্ভুত হন আর সেই রূপ ধারণ করেন বাংলার বুকে বাঙালি হ'য়ে তখন বাঙালী জাতি হিসাবে রক্তের শুদ্ধতা ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবি থেকে সরে এসে বিশ্বের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠ কুলাঙ্গার হিসাবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত বাংলা তথা তথাকথিত বাঙালি!!!! এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে সেই স্বাধীনতার সময় থেকে! পূর্ববাংলা বর্তমানে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্থাৎ ওপার বাংলার মাটিতে ঠাকুরের ঠাঁই যেমন হয়নি, ওপার বাংলার বাঙালি যেমন ঠাকুরকে ধরে রাখতে বা পরবর্তী সময়ে ঠাকুরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি ও পারেনি ঠিক তেমনি এই বাংলার বুকেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশভাগের সময় এই বাংলা ও বাঙালিও আশ্রয় দেয়নি The greatest phenomenon of the world SriSriThaur Anukulchandra-কে! তাঁকে চলে যেতে হয়েছে ওপার বাংলা, এপার বাংলা থেকে দূরে বিহার বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের পাহাড়ি রুখসুখো লাল মাটিতে! এর পরেও বাংলা ও বাঙালি বড় বড় কথা ব'লে নিজেকে বিশ্বের দরবারে বড় করে তুলে ধরতে চায়!
এই যে ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবার নিয়ে অদীক্ষিত ও দীক্ষিত বাঙালি কুলাঙ্গারদের টক অম্ল ঢেঁকুর সহ বমনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে তাতে কি হয়েছে? তাতে কি শ্রীশ্রীঠাকুরের রথ কুলাঙ্গার বাঙালিরা থামাতে পেরেছে না পারছে? যারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে, শ্রীশ্রীঠাকুরের পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে অশ্লীল বাক্যবাণ- এ তাঁদের ক্ষতবিক্ষত ক'রে চলেছেন তারা শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর পরবর্তী জেনারেশনকে চোখে দেখেছেন সামনাসামনি? সঙ্গ করেছেন কোনোদিন? কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে!? চিল কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত দিয়ে কান আছে কি নেই তা দেখে না নিয়ে বকনা বাছুরের মত পেছন তুলে তুলে লাফাতে লাফাতে তো চিলের পিছনে দৌড়োচ্ছেন সেই বালখিল্য সমালোচকদের দল!!!!! করবেন আর কি? পরের মুখে ঝাল খেয়ে খেয়ে চিরকাল চালিয়ে আসা বা১৯ঙালির জীবনের শেষ সময় তো ঘনিয়ে এলো! শ্রীশ্রীঠাকুর নিয়ে প্রেম ভালোবাসার বন্যা ছোটাচ্ছেন আর একদল; অথচ Direct observation ব'লে একটা কথার ওপর ঠাকুর যে জোর দিয়েছেন সেটা জানেন না!!!!!! জানলেও ফলো করেন না। এই তো ঠাকুর প্রেম!!!!!!! লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের পরবর্তী জেনারেশনের কাছে ছুটে যাচ্ছেন; ছুটে যাচ্ছেন রোগ, শোক, ব্যাধি থেকে মুক্ত হ'তে, সমস্যা জর্জরিত জীবনে চলার পথে দিশা পেতে, পড়াশুনা-চাকরি- ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে পরামর্শ নিতে, মৃত্যুভয় থেকে উদ্ধার পেতে, পারিবারিক সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে, জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে তুক পেতে, সন্তান বিপথগামী, স্বামীস্ত্রীর ঝগড়া, বিচ্ছেদ, ভাড়াটিয়ার বাড়ি-ঘর দখল, পাড়ার মাস্তানদের মস্তানী, জমিবাড়ি ভাগাভাগি সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ে পীড়িত হ'য়ে ছুটে আসে ঘোর অন্ধকারে আলোর সন্ধান পেতে তারা সবাই চার অক্ষর আর এইসমস্ত নিন্দুক নিকৃষ্ট কুলাঙ্গার বাঙালি একমাত্র চালাক.......!!!!!!!
এইজন্যই বোধহয় অন্তর্যামী ও সর্বজ্ঞ শ্রীশ্রীঠাকুর দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বাইরে থেকে হবে, বাংলা থেকে হবে না!"
একি অভিশাপ নাকি পরোক্ষ আশীর্বাদ!!!!!!!! তাঁর মুখের কথা ফলবেই তবুও সান্তনা বাঙালি হিসাবে যে তিনি একথা ঠিক যে 'বাংলা' বলেছেন কিন্তু বাঙালি বলেননি!!!!!!!
যাক সময় থাকতে নিজেদেরকে শুধরে নিন এটুকুই বলতে পারি নতুবা শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর!!!!!
কথায় আছে, কখনো না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হওয়াও ভালো। বাংলা ও বাঙালি এই প্রবাদের উদাহরণ হ'য়ে উঠুক।
(লেখা ৩০শে মে ২০১৯)

উপলব্ধি ৪০

চটি চুরির মাহাত্ম্য।

কত রকম চুরির কথা যে শুনি তার ইয়ত্তা নেই। ঘরে বাইরে ছোটোখাটো চুরি তো হামেশাই লেগে আছে আর সংগে আছে পুকুর চুরি। পুকুর চুরি যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হ’তো বর্তমানে সত্যি সত্যিই সেই ব্যাপক অর্থ ছাড়িয়ে বাস্তবে বাস্তবিকই পুকুরও চুরি হ’য়ে যাচ্ছে নীরবে, নির্বিবাদে সরকারী বেসরকারি কারও কোনও বাধা ছাড়াই। আর একদিন সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছে আকাশ ঢেকে ফেলা বহুতল অট্টালিকা! একদিন যেখানে দেখা যেত আকাশ থেকে আসা সূর্যের সোনালি আলোর ঝিকিমিকি হঠাৎ সেখানে দেখা যায় আকাশ নিরুদ্দেশ! দিনের আলোতেও সেখানে খেলা করে অন্ধকার; আবছা আলো আঁধারে বুক ভরে আর নেওয়া হয় না অক্সিজেন। চতুর্দিকে কার্বণডাই অক্সাইড বিতরণের কারবার তা সে যে দলই সরকারে আসুক না কেন। আর যদি কেউ বাধা দেয়ও তারও পিছনে থাকে লেনদেনের হিসাব নিকাশ। তবে বর্তমানে খুল্লমখুল্লা প্রশাসন ও সরকারী নাকের ডগায় যে অনন্ত অসীম চুরি হচ্ছে সেই চুরিকে পুকুর চুরি বললে অপমান করা হবে সেই চুরিকে সমুদ্র চুরি বললেও কম বলা হবে। সম্ভবত প্রবাদ্গুলির জন্মের পিছনে বিরাট কাহানী আছে নতুবা সেই কবে কোনকালে যে “মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার” প্রবাদের জন্ম হ’য়েছিল যার সন, তারিখ বা স্রষ্টার নামও কেউ জানে না অথচ সেই প্রবাদের এরকম জীবন্ত রূপ দেখা যায় এখন অহরহ জলভাতের মতো। সত্যি যারা এই সমুদ্র চুরির জনক তারা সত্যিই প্রাতঃস্মরণীয়! কেননা চুরির সমাজে তারা জাতে কুলীন ব্রাহ্মণ! তারা “মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার” প্রবাদের মূর্ত রূপ! তারা চোরের জাতের কৌলিন্য রক্ষায় সচেতন ও বদ্ধপরিকর। পারদর্শী জাত শিকারি যেমন ছোটোখাটো নিরীহ বা বড় কোনও হিংস্র অথচ সহজ বধ্য কোনও পশু বধ করে না ঠিক তেমনি ছোটোখাটো চুরি ক’রে হাত গন্ধ করে না তারা অর্থাৎ এই কুলীন চোরেরা । যেমন জাত শিকারি বধ করে এমন পশু যে পশু ভয়ংকর হিংস্র আর যার গায়ের চামড়া গুলিতে ভেদ করতে পারে না বা অস্ত্রের আঘাতে বধ করতে সুবিধা হয় না এমনই কঠিন আর মোটা চামড়া দিয়ে মোড়া অর্থাৎ গন্ডার বধ করে তারা। ঠিক তেমনি তারা অর্থাৎ এই কুলীন চোরেরা জাত শিকারির গন্ডার শিকারের মত লুট করে টাকার ভান্ডার বা ব্যাংক। তা সে এ কে ৪৭ দেখিয়েই হ’ক আর লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক লোন নিয়েই হ’ক! সেই গন্ডারকে বধ করতে হ’লে নিখুঁত নিশানায় তাকে নাসিকার উপরে খড়্গ বরাবর দু’চোখের মাঝামাঝি কপালে গুলি ক’রে মারতে হয় নতুবা তাকে মারা কঠিন ও অসম্ভব। এই চুরির কৌলীন্য রক্ষায় পারদর্শী কুলীন চোরেরা ঐরকম পারদর্শী শিকারির মতন টাকার ভান্ডার লুট ক’রে নেয় প্রশাসন বা সরকার সবার নাকের ডগা ও চোখের সামনে দিয়েই। এখন প্রবাদ আর বাস্তব মুখোমুখি একাকার।
যাই হ’ক চুরির কথা বলতে গিয়ে যে কথা বলতে চেয়েছিলাম এই রকম অজাত, কুজাত, উঁচু জাত আর নিচু জাতের চুরির কথা শুনতে শুনতে ঘরে বাইরে চটি চুরির কথাও হামেশাই শুনতে পাই। শুনেছি ও দেখেছি ঘরের বাইরে বারান্দায় চটি বা জুতো রেখে রাতে ঘরের দরজা বন্ধ ক’রে শুয়ে পড়ার পর ভোরে উঠে দেখেছি বারান্দায় চটি বা জুতো নেই। প্রথমে মনে হয়েছিল চোরে চুরি ক’রে নিয়ে গেছে পরে দেখা গেল বাড়ীর বাইরে রাস্তার ধারে নতুন জন্ম নেওয়া বাচ্চা কুকুরটার কান্ড। দাঁত শিরশিরানির কারণে চটি নিয়ে যেত প্রায়ই রাতে। বাইরে চটি রাখা রীতিমতো মাথারযন্ত্রণার কারণ হ’য়ে দাঁড়িয়েছিল। যাই হ’ক এই চটি চুরিও হয়েছে রাতে বারান্দা থেকে। চোর চুরি করতে এসে কখনো কিছু চুরি করতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যাবে না ব’লে আবার কখনো বা চুরির অন্যান্য জিনিসের সংগে ভালো নতুন মজবুত চটিও সংগে নিয়ে চলে গেছে। এছাড়া চটি চুরি হ’তে দেখেছি মন্দিরে মন্দিরেও। এখন যেকথা বলবো সেটা বলতে ইচ্ছে না করলেও বলতে হচ্ছে এই কারণে তা নাহ’লে উপলব্ধি বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে প্রায় সময়ই শুনতে পায় চটি না পাওয়ার কথা। সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষে দেখা যায় চটি পাওয়া যাচ্ছে না। হয় ভুল ক’রে প্রায় একইরকম দেখতে হওয়ায় পাল্টাপাল্টি হ’য়ে গেছে আর না হয় কেউ নিজেরটা রেখে ইচ্ছাকৃত ভাবেই হ’ক আর অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যমনস্ক হ’য়ে হ’ক অন্যের চটি পড়ে চলে গেছে। কখনো দেখা গেছে যে চটি নিয়ে গেছে সে অন্যেরটা যেমন নিয়ে গেছে সংগে হয় নিজেরটাও নিয়ে গেছে কিম্বা খালি পায়ে এসে অন্যের চটি পড়ে চলে গেছে। একজনকে দেখেছিলাম সৎসঙ্গে নিজের নতুন চটি না পাওয়ায় অন্যের নতুন চটি পড়ে চলে গেছিল। পরে জানতে পেরে যার যার চটি তাকে আনিয়ে দিয়েছিলাম। এই চটি চুরি একটা সমস্যা বটে যা হয়তো বা মানসিক অসুস্থতা। আমারও একবার হ’য়েছিল দেওঘরে প্রসাদ গ্রহণ কেন্দ্র আনন্দবাজারের সামনে থেকে। নতুন চটি সিড়ির নীচে রেখে গিয়েছিলাম প্রসাদ নিতে, ফিরে এসে আর পাইনি। তখন ওখান থেকে খালি পায়ে হেঁটে ফিরে যেতে হ’য়েছিল সেন্টিনারি বিল্ডিং পর্যন্ত যেখানে উঠেছিলাম। তখন পরিবারের সবাই মিলে ফিরে যেতে যেতে পথে একজনের সাথে চটি চুরি নিয়ে আলোচনাকালে যে কথা হয়েছিল সেই কথা মনে পড়ে গেল যখন গত ১৩ই মে ’১৮ রবিবার ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্রের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মাতৃ সম্মেলনে অনুষ্ঠান শেষে এক মা যখন তার চটি খুঁজে পেলেন না তখন। সবাই চলে গেলে অনুষ্ঠান স্থল যখন ফাঁকা হ’য়ে গেল তখন দেখা গেল একটিমাত্র চটি পড়ে আছে যেটা ঐ মায়ের নয়। চটিটা পুরোনো কিন্তু মোটামুটি অবস্থায় আছে। ঐ চটিটা সৎসঙ্গ যেখানে হয়েছিল সেখানে একটা জায়গায় রেখে দিলাম যদি পড়ে সন্ধান পাওয়া যায় এই ভেবে। তখন দেওঘরে চটি চুরি সংক্রান্ত যে কথা আলোচনা হয়েছিল সেই কথা মনে পড়ে এবং সেই কথা ঐ মাকে বলেছিলাম। সেই কথা শুনে মা হাসি মুখে বাড়ি চলে গেল। মাকে কি বলেছিলাম যে কথায় ঐ মাটি হাসি মুখে বাড়ি চলে গেছিল?
ঐ মাকে বলেছিলাম, এই যে চটি চুরি হ’য়ে যায় এই চটি চুরির একটা মঙ্গল দিক আছে। তা হ’ল আপনার চটি যদি চুরি হ’য়ে থাকে বা যে আপনার চটি চুরি ক’রে নিয়ে গেছে সে আপনার চটি নিয়ে যাবার সংগে সংগে আপনার আজ পর্যন্ত সমস্ত পাপ তাপ দুঃখ ব্যাথা বেদনা সব চুরি ক’রে সংগে নিয়ে গেছে। সে আপনার জীবনে মঙ্গল হ’য়ে এসে দাঁড়িয়েছিল; আপনি তার মঙ্গলের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করুন। চটি চুরি মানে আমার শুদ্ধ ও পবিত্র জীবনের শুরুয়াৎ। চটি চুরি আর্থিক লোকসান বটে নিশ্চয়ই তারও চেয়ে বড় কথা যেটা, তা হ’লো খালি পায়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরে যাওয়া যা খুবই কষ্ট সাপেক্ষ। তবে নতুন ক’রে জন্ম লাভের সময় তো একটু কষ্ট ভোগ করতেই হবে নতুবা জন্ম হবে কেমন করে? পুরাতন গ্লানি সব মুছে ফেলে যদি এমনভাবে তাঁর দয়ায় নতুন জন্ম লাভ হয় তাহ’লে যাক সামান্য চটির মায়া মোহ! চুরিও যে মঙ্গল ব’য়ে আনে তাতো জানা ছিল না। কত কিছুই তো জানি না তা’তে কি? নাহয় এই চটি চুরির পিছনের মঙ্গল কাহানীও জানা ছিল না, চটি চুরির কারণে তা’ জানা হ’য়ে গেল।
এতসব গল্প শেষে যখন মাটি হাসি মুখে চলে গেল তখন মনে হ’লো সত্যিই কি মাটি খুশী হ’লো! আর যারা পাশে দাঁড়িয়ে শুনলো এই আলোচনা তারা কি ভাবে নিল কথাগুলি? উল্টা বুঝলি রাম হ’য়ে গেলো নাতো? আচ্ছা যারা পাপের আকর হ’য়ে বসে আছে তারা ভাবতেই পারে তাদের চটি, জুতো যদি চুরি হয় তারাও কি তাহ’লে এই পাপের বোঝা থেকে মুক্তি পাবে? এই মুক্তির কামনায় তারা আবার পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিজের চটি নিজেই চুরি করাবে নাতো? উন্নতি আর দুর্নীতি যেমন হাত ধরাধরি ক’রে চলছে বর্তমান ভারতের রাজনীতির আকাশে ঠিক তেমনি সীমাহীন ও অন্তহীন পাপ কাজ আর পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় স্বরূপ এই চটি চুরির নতুন ফর্মুলা আবার নতুন ধর্মাচরণ হ’য়ে দাঁড়াবে নাতো পাপীতাপী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে।
সত্য বন্ধু! কি বিচিত্র এই দেশ আর এই দেশের মানুষ!!!!!!!
( লেখা ৩০শে মে'২০১৮)

Monday, May 29, 2023

কবিতাঃ সাবধান হও।

শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর' সময়ে হও সাবধান।
ভবিষ্যৎ কে পাও ভয়; করো নাম অবিরাম।।
তোমার আজকের দুর্দশা অতীতের কর্মফল।
আজকে ঠাকুরের সঙ্গে বেইমানি, নেমকহারামী?
করছে অপেক্ষা ভবিষ্যতে এর ভয়ঙ্কর ফল।
ভাবছো ব'সে কানে কানে মন্ত্রণা ক'রে 
দিচ্ছো যন্ত্রণা আমারে? তোমারে বধিবে যে, 
গোকুলে বাড়িছে সে; এখনো আছে সময়
পারো যদি চিনে নাও তাহারে।
সাবধান গুরুভাই! সাবধান!! 
চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। 
বার্ধক্য আর বিছানা হাতছানি দিয়ে ডাকছে; 
বলছে ফিসফিসিয়ে,'কাছে আয়, কাছে আয়।'
মন্ত্রণা ক'রে যন্ত্রণা দিতে ঘরে গিয়ে 
ভাঙনের বিষ্ঠা এলে ঢেলে। 
দিনের শেষে রাতে যবে ঘরে একলা হবে 
দেখো ভেবে আঁধার ঘরে কি বপন ক'রে এলে!
দয়ালের কাজ করবে ব'লে 
দল বেঁধে সবাই হ'চ্ছো জড়ো। 
আস্তিনের তলায় আছে 
'মরো, মারো, বাঁচাকে অবলুপ্ত করো' 
তত্ত্বের ভয়ঙ্কর অস্ত্র লুকানো!
সব ভুলে গেলে পুরানো দিনের কথা!? 
হাত ধ'রে যে নিয়ে এলো একে একে সবারে 
যারা ছিল আঁধারে তারা সবে মিলে 
ব্যথা দিলে দয়ালেরে!?
যতই আসুক ঝড় তুফান,
ব'য়ে যাক পাগলা বাতাস!
বুকের গভীরে আছে দয়াল আমার,
ভয় কি? করি না হা হুতাশ।
ধর্ম আছে কোথায়? ঈশ্বর কে?
ধর্ম আছে ভালোবাসায়, প্রেমে।
ঈশ্বর পরমপ্রেমময় যে।
মনে রেখো বন্ধু এই সারকথা
ডুব দাও সেথায় ভালোবাসা-প্রেম আছে যেথা।


কবিতাঃ খোঁজো তাঁরে।

পালিয়ে যেতে চায় মন
বারেবারে সবারে ছেড়ে
দূরে কোথাও শান্ত নীড়ে!
যেথা আছে সুনীল আকাশ,
নির্মল বাতাস গাছেরা ডাকে
হাত নাড়িয়ে, পাখির কাকলিতে
যায় মন হারিয়ে! শিশুরা খেলে
টলমল পায়ে হাসে খিলখিলিয়ে!

তখনি কে যেন ব'লে ওঠে,
পালিয়ে যাবে কোথায়?
ধরবো ওই মোড়ের মাথায়!
ঘুরে ফিরে আসতে হবে সেথায়!
যেথায় বাঁধা আছে মায়াময় মন!
পৃথিবীটা জেনো গোল;
যদি হয় বুঝতে গন্ডগোল
তবে কাজ নাই পালিয়ে; থাকো বাসায়।
খোঁজো তাঁরে সর্ব্বক্ষণ__বসাও অন্তরে__
শয়নে-স্বপনে-জাগরণে।
শান্ত হবে শরীর-হৃদয়-মন।

কবিতাঃ মন যেতে চায়----

মাঝে মাঝে মনে হয়,
যদি থাকতো একটা ডানা
মানতে হ'তো না কারও মানা।
হ'তাম যদি পাখির মতো স্বাধীন
থাকতে হ'তো না কারও অধীন।
হে দয়াল, খাঁচায় রেখো না আমায় পুড়ে
তেপান্তরের মাঠে মন যেতে চায় উড়ে।
থাকবো সেথায় একা লোকে বলবে আমায় বোকা
বলে বলুক লোকে যা তা, পাগল কিংবা ক্ষ্যাপা
মন চায় না খেতে আর দোকার মাঝে ধোকা।
জীবন সায়াহ্নে এসে সত্য কি তা অবশেষে
জানতে পেরেছি আমি একমাত্র সত্য জীবনস্বামী
জীবন জুড়ে আপনজন আছে মিথ্যের ভিড়ে মিশে।
কপটতার ভিড়ে দমবন্ধ প্রাণ চায় যেতে উড়ে বারেবারে
আলোর রোশনাই ছেড়ে বহুদূরে একাকী জমাট অন্ধকারে।
আমার সঙ্গে যাবে কি কেউ উড়ে?
যাঃ! সেই-ই আবার দোকা!? আমি শালা বোকা।
মন এমনি! চলে যেতে চায় উড়ে দূরে দূরে
পিছনে ফেলে সকলি আবার ফিরে আসার টানে
আপনজনের ভিড়ে।

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরের কষ্ট ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের পথ চলা।

বিশ্বের বিস্ময় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধর্ম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সমাজ, সাহিত্য, বিবাহ, প্রজনন, সমাজসংস্কার, রাষ্ট্র, রাজনীতি, দর্শন, বর্ণাশ্রম, দশবিধ-সংস্কার, সাধনা ও কৃষ্টি প্রভৃতি জীবনের সমস্তদিকের উপর সুক্ষাত্মিসুক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন। আর, সেগুলি সমস্ত কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী ইত্যাদি ইত্যাদি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রের বিচরণকারী বুদ্ধিজীবীদের কাছে তাঁদের সৃষ্টির পথে অমূল্য সহায় সম্পদ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা সবাই তাঁর সমুজ্জ্বল আলোয় হচ্ছেন আলোকিত। আর তিনি থাকছেন লোকচক্ষুর আড়ালে আঁধারে।

আর যারা শ্রীশ্রীঠাকুরের দিয়ে যাওয়া অমূল্য সম্পদ অহঙ্কার ও অজ্ঞতাবশে তাঁকে ধর্ম্মজগতের লোক মনে ক'রে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে অবহেলায় একটু কৌতুহলবশতও তাঁর অমূল্য সম্পদ উল্টেও দেখলো না। তাঁরা বঞ্চিত হ'লো মানবজাতির জন্য বিশ্বের বিস্ময় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়ের দিয়ে যাওয়া অমূল্য সম্পদ থেকে। অথচ তাঁরা বিদেশের বিভিন্ন মনিষীদের গ্রন্থ অধ্যয়নে তৃপ্তি পান ও গর্ব বোধ করেন।

তাই বোধহয় সর্ব্বদর্শী শ্রীশ্রীঠাকুরকে যখন বিশ্বগুরু ব'লে প্রচার করতে শুরু করেছিল তাঁর প্রিয় ভক্তরা তখন তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন এইভেবে, তাঁর অবাধ চলা থেমে গেল ব'লে। কারণ এখন তিনি ধর্মীয় ট্যাগে আবদ্ধ হ'য়ে গেলেন। সেদিন তাঁর কথা, আদেশ, নিদেশ তাঁর ভক্তমন্ডলী শোনেননি। একশ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ ধর্মীয় জগতের মানুষ ছাড়া অন্যদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কঠিন বড় কঠিন হ'য়ে দাঁড়ালো। এমনকি ধর্ম জগতেরও সবার কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা থাকলো না। আর এই ভয়ংকর প্রতিবন্ধকতা বিশ্বের ৮০০কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনোর পথে হিমালয় সদৃশ বাধার পাহাড় হ'য়ে দাঁড়ালো। কঠিন, ভীষণ কঠিন, সাঙ্ঘাতিক জটিল হ'য়ে দাঁড়ালো তাঁর মিশন বিশ্বময় ছড়রায়ে দিতে, মানবসমাজে fullfill করতে।

সেই কঠিন, দুরূহ, প্রতিমুহূর্তে হাজারো সমস্যা, দুখ-কষ্ট-আঘাতে ভরা কন্টকাকীর্ণ পথ ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন হেঁটেছেন শ্রীশ্রীঠাকুরের আত্মজ এ যুগের পরমভক্ত হনুমান শ্রীশ্রীবড়দা, তদপরবর্তী ইষ্টপ্রাণ ভক্তপ্রবর শ্রীশ্রীদাদা, হেঁটে চলেছেন নির্ঘুম দিনের পর দিন রাতের পর রাত শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্নপূরণে আমাদের নিয়ে আমাদের সবার প্রিয় ভালোবাসাময় ঈশ্বরকোটি পুরুষ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

ঈশ্বরকোটি মানুষ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ৫৬তম জন্মদিনে জানাই আভুমি প্রণাম।

Saturday, May 27, 2023

প্রবন্ধঃ আসুন সত্যকে জানি, খুঁজি!

ফেসবুকে মাঝে মাঝে একটা দুটো লেখা চোখে পড়ে, পড়ি, খুব ভালো লাগে! ফেসবুকের মত স্ট্রং মিডিয়া অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর ক'রে আলো জ্বালাবার কাজে লাগুক এই আহ্বান বহুদিন ধ'রে জানিয়ে আসছি। ফেসবুক যেন সস্তার প্ল্যাটফর্ম না হয়! সস্তার তিন অবস্থা এই কথা যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মাথায় রাখে। ফেসবুক করি অনেক আশা নিয়ে যদি মাঝে মাঝে কখনও বা রত্নর সন্ধান পাই! তা নাহ'লে ফেসবুক করা বন্ধ ক'রে দিতাম। কথায় আছে আশায় মরে চাষা! কিন্তু এক্ষেত্রে আশায় থাকা চাষার প্রাণ ভ'রে গেল! ঈদ নিয়ে লেখা একটা লেখা পড়লাম! লেখকের নাম মনে পড়ছে না। মনে পড়লে বা নোটিফিকেশন এলে নামটা পরে এখানে জানিয়ে দেবো। আপাততঃ লেখাটার সম্পর্কে বলি, লেখাটা বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী। খোলামেলাভাবে তুলে ধরা হয়েছে মোল্লাদের তৈরি ঈদ ও ঈদ, ফিতর সম্পর্কিত ব্যাখ্যা!

যাই হ'ক, ধর্ম, ঈশ্বর ও প্রেরিতদের নিয়ে সব ধর্মে চুটিয়ে ব্যবসা চলছে যুগ যুগ ধ'রে। ধর্ম, ঈশ্বর ও প্রেরিতরা আজ ভন্ড, কপট, ধান্দাবাজ ধার্মিকদের ব্যবসার উপকরণ, বৃত্তি-প্রবৃত্তি পোষণের মোক্ষম হাতিয়ার! অসত্য আজ সত্য হ'য়ে বিরাজ করছে মাথার ওপর, জ্বলজ্বল ক'রে জ্বলছে সূর্য্যের মত! অসত্যের ধ্বজাধারীরা ধর্ম ও ঈশ্বরকে নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা ক'রে যাচ্ছে আর এর জন্যে সব ধর্মের সব ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী দুর্বল কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষেরাই দায়ী। "যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের উত্থান হয় তখনই সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতীদের বিনাশ করার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভুত হ'ই"-----গীতার এই বাণীর রূপকার শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ে তাঁর পরম ভক্ত অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে বলা কথাকে সত্যে পরিণত করার জন্য এবার বললেন, "---------আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে, তোমার ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।" এই ধর্ম জগতে দুর্বল, ভীতু, কপট, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অজ্ঞ মানুষ ঢুকে পড়েছে! এইধরনের মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপস্থিতি ধান্দাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মাথার নিশ্চিন্ত ছাতা হ'য়ে আছে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর; তা যতই ঈশ্বর স্বয়ং নিজেই মানুষের রূপ ধ'রে নেবে আসুক না কেন কিছুই হবে না, এর শেষ পরিণতি ধ্বংস! এই সমস্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মভীরু, লোভী, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ ঝোলের লাউ আর অম্বলের কদু! আর এর সঙ্গে ধর্ম ব্যবসায়ীদের অক্সিজেন যোগানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত ও তৎপর একশ্রেণীর সমাজ কো বদল ডালোর স্বপ্ন বিক্রির ফেরিওয়ালা ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়!

ঐ লেখকের লেখা ফেসবুকের প্রতি মমতা বাড়ালো। মনে বিশ্বাস এলো কম হ'লেও সিরিয়াস ফেসবুক ইউজার আছে! শুধু খুঁজে নাও তাকে! আসুন সত্যকে জানি, খুঁজি! সময় চলে যাচ্ছে। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না এটা সকলেরই জানা। জীবন খুব অল্প কয়েকদিনের জন্য! সত্যকে জানার ইচ্ছা নেই কেন? কেন নেই? কেন আমরা এত উদাসীন!? কিসের অহংকার!? কিসের এত ইগো আমাদের!? কেন আমাদের সত্যকে জানার ইচ্ছা নেই!? আমি যদি ভুল জানি, অসত্য পথে চলি তাহ'লে আমার ছেলে, আমার মেয়ে আরও বেশি আগামী দিনে ভুল জানবে, ভুল করবে, অসত্য পথে চলবে! পরোক্ষভাবে আমি কেন শয়তানের এজেন্ট হবো!? তাই আসুন আলোর দিকে মুখ ঘুরে দাঁড়ান! আলোকে পিছনে রেখে অহেতুক অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে অন্ধকারের ঢাক পেটাবেন না। অন্ধকার আপনার অন্তরে বুকের গভীরে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে বসে আছে ধান্দাবাজিদের দিয়ে আপনাকে পিছন থেকে ছুরি মারার কাজে সহায়তা করার জন্য। The Greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে ২০বছর বয়সেই বললেন, "---------আর তোমার জ্যোতির দিকে পিছন ফিরে 'অন্ধকার' 'অন্ধকার' ব'লে চিৎকার করবো না।" আসুন সত্য সন্ধানী ও অনুসন্ধিৎসু উদার সিরিয়াস মনোভাবাপন্ন ইগোমুক্ত সহজ সরল মানুষ ফেসবুক প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগাই। পরিশেষে জানাই আগ্রহীরা ভালো থাকুন ও সক্রিয় হ'ন এই প্রার্থনা করি।
---------প্রবি।
( লেখা ২৭শে মে' ২০২০ )

Thursday, May 25, 2023

খোলা চিঠিঃ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি ও দেশনেতৃত্বের প্রতি.

দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাদের জনসংখ্যা রোধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু বক্তব্য অতি বিনয়ের সঙ্গে আপনাদের কাছে রাখলাম।

সব কিছুরই ভারসাম্য বজায় থাকা ও রাখা উচিত। ভারসাম্য নষ্ট হ'লেই প্রকৃতি তার কাজ নিজেই ক'রে নেয়। আর যেখানে বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ব'লে কিছুই নেই, নেই কোনও শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির সরকারি পরিকাঠামো সেখানে কঠোর ও নির্ম্মম আইন প্রয়োজন ও জরুরী, জরুরী সৃষ্টি রক্ষার স্বার্থেই। কারণ কায়েমীস্বার্থ রক্ষাকারী শক্তি নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য ও মৌরসি পাট্টা কায়েম রাখার জন্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম ব্যবস্থাকে জিইয়ে রাখে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্মবৃদ্ধির সুড়সুড়িকে হাতিয়ার ক'রে। আর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা ও সচেতন বৃদ্ধির সরকারি পরিকাঠামো গঠনের। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি আর তা জরুরি শিক্ষা ও চেতনাকে ভিত্তি ক'রে। আর প্রয়োজন নিখুঁত প্রস্তুতির! এতটুকু ফাঁকও ব্যর্থতা ডেকে আনতে যথেষ্ট। শ্রীশ্রীবড়দার সাবধান বাণী, "একটা ফুটোও ফুটো দশটা ফুটোও ফুটো। জল বেরিয়ে যাবে। দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরোবে আর একটা ফুটো দিয়ে ধীরে ধীরে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরোবে কিন্তু বেরিয়ে যাবে, শেষ হ'য়ে যাবে আজ না হয় কাল!" প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ লক ডাউন ঘোষণার সময় সৎসঙ্গের জীবন দর্শন শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী "BEING & BECOMING, LIVE & GROW WITH ENVIRONMENT, পারিপার্শ্বিকসহ বাঁচা-বাড়া"র আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। তাই এখানে ইগোর কোনও প্রশ্ন নেই। দেশকে বাঁচাতে হ'লে, দেশের জনগণের সুখ সমৃদ্ধি যদি সত্যি সত্যিই চাই তাহলে সবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দেওঘর 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। দেশের স্বাধীনতার সময় ও দেশভাগের সময়ের প্রথম সারির নেতাদের মত আজকের দেশ নেতৃত্বও যেন ইগোকে ভিত্তি ক'রে সেই একই ভুল না করে। যে ভুল করেছিল তৎকালীন নেতৃত্ব শ্রীশ্রীঠাকুরের দেশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে কোথায় ভুল, কোথায় সংশোধন প্রয়োজন সে সম্পর্কিত সমস্ত পরামর্শকে ও দেশভাগ রোধের সমস্ত সম্ভাবনাকে পরাস্ত ক'রে যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবকে অস্বীকার ক'রে! ফলতঃ দেশ হয়েছিল ও হ'য়ে আছে আজও লুলা ল্যাংড়া! দেশ নেতৃত্বের সেই ভুল স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও একচুল সভ্যতার ও উন্নয়নের অগ্রগতির বদলে হাজার বছরের ব্যর্থতাকে অক্টোপাশের মত জড়িয়ে নিয়েছে সর্বাঙ্গে! বর্তমান দেশের কর্ণধারগণ ইগো থেকে সরে এসে সেই ভয়ঙ্কর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দশের, দেশের ও বিশ্বের সার্বিক স্বার্থে, দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য যেন সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শনকে হাতিয়ার করে আর এই হাতিয়ার করার জন্য প্রয়োজন দেশের নেতৃবৃন্দের ঠাকুরের জীবন দর্শন গভীরভাবে অধ্যয়ন ও আচার্য্য সন্নিধানে আলোচনা। নইলে এই প্রচেষ্টারও সলিল সমাধি ঘটবে শয়তানী শক্তির কাছে। বেশ কয়েক বছর আগে স্বর্গীয় সঞ্জয় গান্ধীর প্রচেষ্টাকে এই একই কৌশলে কবরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ও তাঁর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে কলঙ্কিত ক'রে; এটা যেন আমরা ভুলে না যায়। যদিও সঞ্জয় গান্ধীর জন্ম নিয়ন্ত্রণ রোধ পদ্ধতিতে সীমাহীন প্রস্তুতির অভাব ছিল, ছিল আঁটঘাঁট বেঁধে পথে নাবার জ্ঞান ও পরিকল্পনার চূড়ান্ত অভাব!!!!! তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শনকে সামনে রেখে তাঁর সুরে সুরে মিলিয়ে তাঁর মত এককথায় বলতে পারি, হে দেশনেতৃত্ব! BE CONCENTRIC.
নমস্কারান্তে,
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, হুগলী।
( লেখা ২৫শে মে'২০২০)

উপলব্ধি ৩৯।

হাইকোর্টের রায় ও শিক্ষা ব্যবসা।

কথায় আছে, "পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে।" ঠিক তেমনি শিক্ষা বেওসায়ীর হাতে পড়েছো যখন তখন তো তার গুনাগার দিতেই হবে। অবশ্য মোগলের হাতের খানা খারাপ না; মোগলের মোগলাই খানা বেশ ভালোই লাগে আর এখন তো সেই খানার রমরমা ব্যাপার। রেপসিড তেল আর পাম তেল তা যে তেলই হ'ক না কেন রেপ আর পাম্প ক'রে ক'রে ভাজাটা ভালোই হয়। ঠিক তেমনি শিক্ষা বেওসায়ীর শিক্ষাদানের রকমসকম বেশ রেপিং আর পাম্পিং ক'রে ভাজা লাল মোগলাই আর রোলের মতো একেবারে ঝাঁ চকচকে!!!! খেতে তো প্রথমে ভালোই লাগে তখন কি আর কেউ পরবর্তী সময়ের লিভার ফাংশান ডিসঅর্ডার, পেটের যন্ত্রণা, পাতলা পায়খানার কথা কেউ ভাবে? ভাবে না। অবশ্য অনেক বুদ্ধিমান মানুষ আছে ডানহাতে মোগলাই বা রোল তো বামহাতে হজম, পাতলা পায়খানা, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদির নানাবিধ ঔষধ যেমন ইউনিয়েমজাইম, O2, গ্যাসপ্যাজ, টপসিড বা জিনট্যাক/র‍্যানট্যাক নিয়ে নিশ্চিন্তমনে সেই মোগলের খানা খেয়ে রসনা তৃপ্ত করে। 

আজ শিক্ষার অঙ্গন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁদরকে পাহারাদার হিসাবে নিযুক্ত করার মত আজ শিক্ষা প্রসারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে বাঁদররূপী বেওসায়ীদের হাতে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই রাজার যে হাল হ'য়েছিল সেই হালই হ'য়েছে আজ শিক্ষার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির। আজ সবচেয়ে বড় ব্যবসা শিক্ষা। শিক্ষা আজ পণ্য হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র ভর্তির জন্য চলছে প্রতিযোগিতা, চলছে ছাত্র ভর্তির নানারকম ফন্দিফিকির। একেবারে নার্সারি থেকে শুরু ক'রে উচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি অর্জন ও তার পরবর্তী চাকুরী লাভের জন্য চলছে ছাত্র ভর্তির বেচাকেনা। এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য যাদের কোমরে জোর আছে তারা ঐ বাঁ হাতে প্রতিষেধক নিয়ে মোগলাইয়ারের স্বাদ মেটাবার মত এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাবার বন্দোবস্ত ক'রে নিয়েই ভর্তি করায় আর যাদের সেই বাঁ হাতি ঔষধির ব্যবস্থা থাকে না অথচ এই সমস্ত ঝাঁ চকচকে প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চায় তাদের অবস্থা হয় ঐ প্রতিষেধক ছাড়া মোগলাই বা রোল খাওয়ার খেসারত স্বরুপ পরবর্তী অবস্থার মত। এইভাবে নন স্টপ অর্থাৎ বিরামহীন মোগলের খানা বা ফাস্ট ফুড খাওয়ার পরিণতিতে যে মাল্টি অর্গান ফেইলিয়র অর্থাৎ নানা দেহযন্ত্র বিফল হয় তাদের কাজ করতে তখন শেষের সেদিন হয় ভয়ংকর! ঠিক তেমনি হয় সাধারণ মানুষের এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ভালো কিছু পাওয়ার আশায় পড়ানোর ইচ্ছার পরিণতিও হয় ভয়ংকর কষ্টদায়ক। এই কষ্ট যাদের বাঁ হাতে ঔষধের ব্যবস্থা আছে তাদেরও হয় সেই হওয়াটা হয়তো সবসময় চোখে ধরা পড়ে না যা অন্যভাবে তার খেসারত দিতে হয় সেটা ভুক্তভোগীরাই অনুভব করতে পারে যে অনুভব অন্তঃসলিলার মত বুকের গভীরে প্রবহমান।

যাই হ'ক হাইকোর্টের রায়ে মানুষের নাকি কিছুটা হ'লেও স্বস্তি এসেছে। গরমের ছুটিতে স্কুলগুলির দু'মাসের ফি না নেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট সেই রায় দিয়ে বেওসায়ীর বেওসায়ী বুদ্ধিকে থামানো যাবে না। অভিভাবক মহলের খুশী হ'য়ে লাভ নেই। এই সমস্ত মানসিক ব্যাধি। অনিয়ন্ত্রিত রিপু তাড়িত, বৃত্তি-প্রবৃত্তির ছোবলে ক্ষতবিক্ষত বেওসায়ী মানুষের ক্ষতবিক্ষত লোভী মানসিকতাকে থামানো যাবে না। যেমন কত রোগের ওষুধ আবিস্কার করবে বিজ্ঞানিরা? কত ওষুধ দিয়ে রোগ সারাবে ডাক্তাররা? প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে নানারকম অদভুত অদভুত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে যার কূলকিনারা করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ডাক্তার, বিজ্ঞানিরা। প্রতিদিন ওষুধ খেয়ে সেরে উঠছে মানুষ পর মুহূর্তে আবার সেই রোগে আক্রান্ত হ'য়ে শয্যাশায়ী হ'য়ে পড়ছে অবশেষে অকালে মৃত্যুপথের যাত্রী হচ্ছে। রোগের ঔষুধ আবিস্কার হ'লেও নকল ঔষুধ খেয়ে আর হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় ও ভুল ঔষুধ খেয়ে মারা যাচ্ছে প্রতিদিন কত রোগী। সৎ, দক্ষ ও শুভানুধ্যায়ী চিকিৎসকের অভাবে ও মানবিকতাসম্পন্ন ঔষুধ ব্যবসায়ীর অভাবে আজ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কোথায় যাবে আজ মানুষ? সেই ঘুরে ফিরে এক কথা, "পড়েছো মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে।" তাই অভিভাবকদের এই হাইকোর্টের রায়ে খুশী হ'য়ে লাভ নেই কারণ আইন ক'রে রিপু দমন করা যায় না তার ওপর ভারতের আইন ব্যবস্থা!!!!!!

যাই হ'ক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে The Greatest phenomenon of the world SriSri Thakur Anukul Chandra শারীরিক চিকিৎসা থেকে সরে এসে মানসিক ও আত্মিক চিকিৎসার কাজে হাত দিয়েছিলেন মানুষকে পারিপার্শ্বিকসহ বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য। ঠিক তেমনি আজ শিক্ষা ব্যবস্থার এই হাল দেখে ঠাকুর শিক্ষা সম্পর্কে বলে গেছেন তাঁর বহু বাণী, করিয়েছেন আমাদের শিক্ষার সঠিক মার্গ দর্শন।

তাই, হাইকোর্ট যে রায়ই দিক না কেন চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। গরমের ছুটিতে দু'মাস ফি নেবে না শিক্ষা বেওসায়ীরা কিন্তু বাকি দশ মাসে কোনও না কোনও অজুহাতে এই দু'মাসের টাকা তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় ক'রে নেবেই কি নেবে। কোনও উপায় নেই এই শিক্ষা ব্যবসার বেওসায়ীদের হাত থেকে মুক্তির। এ এক ঘোর অন্ধকার শিক্ষার বেশ্যাকরণ। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরীব ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য কোনও ছাড় নেই সরকারের তরফেও। বাড়ি, গাড়ি কেনো সরকারী লোন আছে, আছে অল্প ইন্টারেস্টে ব্যাঙ্ক লোন কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য আছে ফুল সিকিউরড মোটা ইন্টারেস্টের (১৪% ও ততোধিক) ব্যাঙ্ক লোন সে গরীব হ'ক আর বড়লোকই হ'ক না কেন, কোনও ছাড় নেই, নেই সরকারী শিক্ষা দপ্তরের সদিচ্ছা, দয়া, মায়া, উদ্যোগ। শিক্ষা আজ লাভজনক ব্যবসা আর ছাত্রছাত্রী সেই ব্যবসার বোড়ে। তাই হায়কোর্টের রায় ঐ কাগজেই বন্দী হ'য়ে থাকবে কোনওদিন সূর্যের আলোর মুখ দেখবে না। আদর্শহীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিণতি যা হবার তাই-ই হয়।
(লেখা ২৫শে মে' ২০১৮)

Monday, May 22, 2023

প্রবি সমাচার ১৬

একজন গুরুভাই আমাকে এই ভিডিওটা পাঠিয়েছিল। পাঠিয়েছিল ভালোবেসে। দেখলাম, ভালো লাগলেও তবুও কোথায় জানি মনটা একটু ভারাক্রান্ত হ'য়ে রইলো! হয়তো মনের কোণে কোথাও না বলা অনেক কথা জমে আছে আর তা না বলতে পারার বেদনা আরও কষ্টের। আর যদিও বা বলি কাউকে আপনজন ভেবে সে উল্টা বুঝলি রাম হ'য়ে যায়। কথার মূল এসেন্স ধরতে পারে না ফলে অযথা ভুল বোঝাবুঝি হ'য়ে যায়। আমি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত অনুগামী। আমি যে ঠাকুর দর্শনে বিশ্বাসী শুধু তা নয়; তার নিখুঁত বাস্তব জীবন দর্শন প্রচারে প্রয়াসী। হয়তো তেমন ক'রে পেরে উঠছি না তার জীবন দর্শন ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে নিজের খামতি কিম্বা সহযোগিতার অভাবে। তবুও প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে অকপট অমলিন থাকার চেষ্টা করি। আজ পর্যন্ত ঠাকুরকে জ্ঞানত আয়ের উপকরণ করিনি ও আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থ প্রতিষ্টার কাজে ঠাকুরকে ব্যবহার করিনি। ঠাকুরকে বোঝার চেষ্টা করেছি কেন তিনি বারবার আসেন, কেন তিনি যেতে না যেতেই এত তাড়াতাড়ি এলেন আর কেনই বা তিনি আবার এলেন!? সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করি কে তিনি!? কেন আমি তাকে আমার জীবনে গ্রহণ করলাম!? কি উদ্দেশ্যে!?

তাই আমার ভালো লাগে না এসব নাটকীয় ভক্তি। নাটকীয় বললাম ব'লে হয়তো অনেক ভক্তপ্রাণে ব্যথা লাগতে পারে। তাদের কাছে বিনয়ের সংগে শুধু বলবো, সত্য বড় অপ্রিয় ও কঠোর। ঠাকুর রামকৃষ্ণ-এর পূজার মধ্যে প্রাণ ছিল, ছিল পূজা শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থের ঝংকার! একটু আধটু পড়ে যা বুঝেছি ঠাকুর রামকৃষ্ণ পূজার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির মূল মরকোচ নিজেকেই আবাহন করতেন, স্বাগতম জানাতেন! আর অনেক দেখেছি এসব পূজোপাঠ বিভিন্ন মন্দিরে, পুজো পার্ব্বনে। নিজেও নাটকের ছাত্র ছিলাম। দেখেছি এরকম মন্ত্রোচ্চারণ করা অনেক মানুষের শেষের দিনগুলি। জীবননাথকে অস্বীকার ক'রে জগন্নাথ-এর পুজো আমার ভালো লাগেনি কোনদিনও। অশ্রদ্ধা নেই আমার জীবনে কারও প্রতি। কিন্তু রামকৃষ্ণ-কে আমার ভালো লাগে বেশী; অনেক অনেক বেশী ভালোলাগে রামকৃষ্ণ-এর অমূর্ত রুপ মাটি দিয়ে গড়া মা কালীর চেয়ে জীবন্ত ঈশ্বর রক্তমাংস দিয়ে গড়া মা কালীর জীবন্ত রুপ বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে!!! এইসব সংস্কৃত শ্লোকের ভাইব্রেশন আছে কিন্তু এই ভাইব্রেশন এখন আর রক্তে ঢেউ তোলে না, আলোড়ন জাগায় না। কারণ বাস্তবকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি ও দেখছি এই বয়স পর্যন্ত। বয়স তো কম হ'লো না। এইসব হাজার হাজার বছর ধ'রে চলে আসা পুজো তো কম দেখলাম না সেই ছোট্ট বয়স থেকে বাবা-মায়ের হাত ধ'রে থেকে শুরু ক'রে এই বয়স পর্যন্ত! এই সংস্কৃত শ্লোকের ভাইব্রেশন দেখতে চাই ঠাকুরের সামনে ঠাকুরের মানুষের মধ্যে! তেমন মানুষ কই!? সাধে কি ঠাকুর বলেছেন, এই বাংলা থেকে আমার সৎসঙ্গ আন্দোলনের ঢেউ উঠবে না।---প্রবি।
( লেখাটা একটা মা কালীর পুজোকে কেন্দ্র করে। সেখানে সংস্কৃত মন্ত্র পাঠের সঙ্গে হচ্ছে মায়ের আরতি। আরতি ও মন্ত্রোচ্চারণ খুব সুন্দর) ( লেখা ২৩শে মে'২০২১)

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর ও আচার্য্য পরম্পরা।

"পুরুষোত্তমই রাজা-প্রজা জীবন-যশের খেই,
জন্মগত গুরু-আচার্য্য ঋত্বিক-অধ্বর্যুও সেই;
যাজক-পূজক-শিষ্য তিনি গরীব-ধনী একই জন,
হৃদয়-জোড়া সৃষ্টিছাড়া সৎ-অসৎ-এর বিশ্রয়ণ।"

-------শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।


শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীরা, আচার্য্য প্রথার বিরোধীরা এর উত্তর দিয়ে ৫০ বছর ধ'রে চলা সরল সাধারণ সৎসঙ্গীদের ভ্রম দূর করার সৎ সাহস, পবিত্র দায়িত্ব নেবেন কি! অপেক্ষায় রইলাম।

আসুন ঠাকুরপ্রেমী ভক্তমন্ডলী!
তা সে ঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' মূল কেন্দ্র অনুসারী হ'ন বা না হ'ন, শ্রীশ্রীবড়দাকে আচার্য্য হিসেবে এবং আচার্য্য পরম্পরা মানুন আর না মানুন উপরে উল্লেখিত শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর মর্মার্থ বা তাৎপর্য সম্পর্কে ফেসবুকের মত স্ট্রং মাধ্যমকে সামনে রেখে আসুন আলোচনার গোল টেবিলে বসি।

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় শ্রীশ্রীঠাকুরের উপরিউক্ত বাণী উল্লেখের কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দাকে সামনে রেখে শ্রীশ্রীবড়দার সুযোগ্য, বলিষ্ঠ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্বে যখন সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের বিয়োগ ব্যথা কাটিয়ে নতুন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও শ্রীশ্রীঠাকুর স্বার্থপ্রতিষ্ঠায় সেজে উঠছে ঠিক তখনি শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীরা শ্রীশ্রীবড়দাকে ক্ষমতাচ্যুত ক'রে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে এলোমেলো ক'রে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য, মৌরসি পাট্টা জমিয়ে ব'সে কায়েমীস্বার্থ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে গান বাঁধলো "দে মা লন্ডভন্ড ক'রে লুটেপুটে খায়"; যে ট্র্যাডিশন এখনও সমানে চলেছে ঘরেবাইরে!

শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধিতার অনেক অজুহাতের মোক্ষম অজুহাত ছিল 'আচার্য্য' শব্দ! আচার্য্য কে? আচার্য্য কি একের অধিক হয়? শ্রীশ্রীঠাকুরই ইষ্ট, শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য; এছাড়া আচার্য্য আর কেহ নয়! এরকম নানারকম বাকযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে খুঁজে খুঁজে বের ক'রে "ইষ্টই গুরু, ইষ্টই আদর্শ, ইষ্টই আচার্য্য, সতী নারীর যেমন দুই স্বামী হয় না এবং তা হ'লে ব্যভিচার ঠিক তেমনি দুই আচার্য্য হয় না" ইত্যাদি ইত্যাদি শ্রীশ্রীঠাকুরের এমন বাণীর সমর্থনে যুক্তি ফোয়ারায় সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্তির বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে বিচ্ছেদের পাঁচিল তুলে একতরফাভাবে বাকযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ক'রে তুলেছিল ঠাকুরের প্রথম সন্তান পরম আদরের বড়খোকা সৎসঙ্গ জগতের সৎসঙ্গীদের বড়ভাই চোখের মণি পরমপ্রিয় সর্বশ্রেষ্ট পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দাকে।

আর এই সমস্ত কিছুই মুখ বুঁজে নীরবে সহ্য করেছিলেন ঘোর কলিযুগের হনুমান শ্রীশ্রীবড়দা! নিঃশব্দে, নীরবে, অটুট, অস্খলিত ও অটল মনে-শরীরে ব'য়ে চলেছিলেন সামনের দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পাহাড় প্রমাণ বাধা, নিন্দা, সমালোচনা, গালাগালি, অশ্রদ্ধা, অপমানের পথ শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'সৎসঙ্গ'-এর পতাকা কাঁধে নিয়ে একাকী কয়েকজন বিশ্বস্ত ইষ্টপ্রাণ ভক্ত নিয়ে! দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন পিছন ফিরে না তাকিয়ে ঠাকুরের সত্যানুসরণে বলা "এগিয়ে চল, পিছন ফিরে মেপে দেখতে যেও না কতদূর এগিয়েছো নইলে আবার পিছিয়ে পড়বে" বাণীকে মূলধন ক'রে, হাতিয়ার ও একমাত্র সম্বল ক'রে! তাই শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন্ত চলমান 'সত্যানুসরণ'! শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দার সেই সেদিনের একাকী হেঁটে চলার শেষে আজকের বিশ্বজুড়ে 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'র এক ও একমাত্র আশ্রয়স্থল এই বি-শা-ল 'সৎসঙ্গ' সাম্রাজ্যের ছবি প্রমাণ ক'রে পরমপিতার কৃতি সন্তান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুক ফাটো ফাটো ক'রে গেয়ে ওঠা "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে------" গানের জ্বলন্ত নিদর্শন হ'লেন শ্রীশ্রীবড়দা!!!!!!!!

আজ সেই নিদর্শন ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন চোখেমুখে ফুটে উঠেছে বর্তমান আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে!!!!!! আর সেই কিরণ গিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বর্তমান প্রায় দশ কোটিতে পৌঁছে যাওয়া সৎসঙ্গীদের বিপদে আপদে, সমস্যা জর্জরিত জীবনে তাৎক্ষণিক সরাসরি পরম আশ্রয়স্থল শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে আর অদূরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিরণের ঝলক দিচ্ছে হাসিমুখে সহজ সরল ২০বছর বয়সী শ্রীশ্রীঅবিনদাদা আর বলছেন, "আপনারা আমায় ভালোবাসেন কিনা জানি না, কিন্তু আমি আপনাদের ভালোবাসি। কারণ আপনারা ঠাকুরকে ভালোবাসেন। আপনারা কেউ কখনও নিজেকে অসহায় মনে করবেন না। যখন মনে হবে আমার পাশে কেউ নেই, জসিডির টিকিট কাটবেন আর চলে আসবেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকবো আপনার জন্য। মনে রাখবেন আমি আপনাদের ভালোবাসি। আমি অপেক্ষায় আছি আপনাদের জন্য!!!!!"

তাই নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলো মন, হে দয়াল! তুমি এত দয়াময়! তুমি তোমার ব'লে যাওয়া "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর, রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর" বাণীর এত তাড়াতাড়ি জীবন্ত জ্বলন্ত রূপ হ'য়ে আমাদের মাঝে ধরা দিলে দয়াল!!!! আমরা এত ভাগ্যবান!?!?!?!?!?

তাই আসুন, ঠাকুরপ্রেমী ভক্তমণ্ডলী!
এই লেখা লেখার শুরুতে শ্রীশ্রীঠাকুরের যে বাণী দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই বাণীর মর্ম, তাৎপর্য বিশ্লেষণ করুন, বুঝিয়ে দিন দয়ালের এই বাণীর অর্থ কি!? আপনারা যারা আচার্য্য বিরোধিতার জন্য ঠাকুরের বাণী খুঁজে খুঁজে দিনরাত একাকার ক'রে সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত ক'রে নিজেদের মূল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন ক'রে বিশ্বের কাছে ঠাকুর ও ঠাকুর আত্মজদের ভাবমূর্তিকে, ঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন ক'রে যে যুদ্ধ শুরু ক'রেছিলেন আজ সময় এসেছে উপরে উল্লেখিত বাণীর ব্যাখ্যা ক'রে বুঝিয়ে দিন এই বাণীর মর্মার্থ ও তাৎপর্য কি!?
যদি আপনাদের আচার্য্য সম্পর্কিত প্রশ্নে আপনাদের ব্যখ্যানুযায়ী, প্রচার অনুযায়ী বক্তব্য সত্য হ'য়ে থাকে তা হ'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে ঋত্বিক, যাজক, অধ্বর্যু ইত্যাদি প্রশ্নে আপনাদের ব্যাখ্যা কি?
আসুন আজ আর তর্ক, ঝগড়া, মারামারি, গালাগালির যুগ নয়, আজকের যুগ আলোচনার টেবিলের যুগ! আসুন, বসুন, উপরিউক্ত বাণীকে নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসুন, আলোচনা করুন, মত বিনিময় করুন, মতামত দিন। গ্রহণ ও বর্জন আপনার ব্যক্তিগত তাকে সমষ্টিগত ক'রে তুলবেন না, চাপিয়ে দেবেন না জোর ক'রে মিথ্যের বেসাতি ক'রে। কারণ সামনে আরো আরো আরো ঘোর ভয়ঙ্কর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে! ঠাকুরের ব'লে যাওয়া সেই ভয়ানক দিন "সামনে ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে! যে দিন আসছে তার কাছে এই বিশ্বযুদ্ধে (২য়) লোকক্ষয়, সম্পদক্ষয় তার কাছে কিছুই নয়! গতিক দেখে মনে হচ্ছে মনুষ্যত্বের মূল বুনিয়াদটাই ধ্বংস হ'তে চলেছে! পচা গলা মৃতদেহের স্তুপ চতুর্দিকে, গঙ্গা দিয়ে ব'য়ে যাবে রক্তের ধারা! এখনও সময় আছে, সাবধান হ'য়ে যান আপনারা! নতুবা সেদিন আফসোস করারও কেউ থাকবে না!"

আসুন শপথ করি, আমরা আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠা চাই না। চাই শুধু ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা আর তার জন্য আসুন জীবন উৎসর্গ করি শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে। জীবন উৎসর্গ করার প্রথম ও প্রধান শর্ত ও নমুনা ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় আচার্য্য কেন্দ্রিক হ'য়ে চলা! জয়গুরু।
প্রবি। ( লেখা ২৩শে মে' ২০২০)

কবিতাঃ কি হবে কালক্ষেপে?

নিন্দা মন্দের ঝড় তুলে করবো ইষ্টের চাষ!
অন্তর ভরা বিষ মাঝারে নিয়ে কূট শ্বাস!!
আমরা ওরা'-র পাঁচিলে ইষ্টকে করি খানখান!
গোষ্টী দ্বন্দের জিগির তুলে হ'লাম ইষ্টপ্রাণ!
ইষ্টনিষ্ঠার বাদাম তুলে হ'লাম গোষ্টীদ্বন্ধের পথিকৃৎ।
দ্বন্দের জন্মে হ'লাম বড়ই প্রীত।
তুমি নিজে কিছু করোনি এতদিন
শুধু ক্ষমতার চূড়ায় বসে বাজিয়েছো ভায়োলিন!
এখন অন্যের কাজে করছো হিংসা
হচ্ছে ভাবমূর্তি তোমার মলিন।
মিথ্যে দিয়ে কি সত্যকে চাপা দেওয়া যায়?
নাকি শুধু বগবগানিতে বাস্তবকে অস্বীকার করা যায়!?
সত্য বা বাস্তব এতই ঠুনকো!?
যদি কাউকে পছন্দ না হয়,
ভালো না লাগে তার কথা
তবে তার থেকে দূরে সরে যাও
তবুও তাকে আঘাত ক'রে ঠাকুরকে দিও না ব্যথা।
প্রতিবাদ আর আঘাত কিন্তু এক জিনিস নয়
এটা মাথায় রেখো। আর না বুঝে কথা বলা
বাহাদুরি নয়কো তা কিন্তু আহাম্মকি, বুঝে দেখো।
আঘাত ক'রেই প্রতিবাদ করতে হয়
এ কথা শেখালো কে তোমায়!?
ভুল সংস্কৃতির বাহক হ'য়ে
মানুষকে শোধারানো যায় নাকি সমাজ গড়া যায়?
যেমন আশ্রয় দেওয়া মানেই
প্রশ্রয় দেওয়া নয়
ঠিক তেমনি ব্যাঘাত ঘটালেই উত্তরে
আঘাত দেওয়াও ঠিক নয়।
এসো দেখি ভেবে। কি হবে কালক্ষেপে?
দু'দিনের জন্য তো আসা 
থাকবো না তো চিরদিন এ ভবে।
( লেখা ২৩শে মে' ২০১৭-১৮)



প্রবি সমাচার ১৭

করোনা মহামারীর ভয়াবহতা মানুষকে মনে মনে প্রায়ই মেরেই ফেলেছে। স্প্যানিশ ফ্লু, রাশিয়ান ফ্লু, এশিয়ান ফ্লু, প্লেগ ইত্যাদি মারণ রোগের অভিজ্ঞতা মানুষের আছে, আছে শাসক শ্রেণীর, আছে দেশের প্রথম শ্রেণীর জ্ঞানী-বিজ্ঞানী মানুষদের! তবুও কেন বারবার সব শেষ হ'য়ে যাবার পর তাদের ঘুম ভাঙে!? কেন আগাম প্রস্তুতি থাকে না শাসক শ্রেণীর!? মানুষকে ভয়ংকর বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রোগ মোকাবিলায় ও প্রকৃতির রোষকে শান্ত করার জন্য কেন কোনও বিজ্ঞান নির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না!? প্রতি বছরই কোনও না কোনও কঠিন মারণ রোগ ও ভয়াবহ প্রকৃতির রোষ আছড়ে পড়ছে মানুষের ওপর তবু্ও মানুষ বিপর্যয় কেটে যেতে না যেতেই ভুলে যাচ্ছে সব, ভুলে যাচ্ছে দেশের শাসক শ্রেণী। কেন তারা মনে রাখছে না অতীতকে!? কেন তারা অতীত থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না!? কেন রাজ্য বা দেশের কোনও শাসক দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে রাজ্য বা দেশের মানুষকে ভয়ংকর বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না!? কেন বছরের পর বছর মানুষকে অসহায় হ'য়ে রোগ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মরতে হচ্ছে!? এর উত্তর কি এখন!? এরকম হবেই!? এরকম মরবেই রোগেশোকে যুদ্ধবিগ্রহ ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে!? এটাই নিয়ম!? এর হাত থেকে মুক্তি পাবার কোনও হাত নেই!? নেই কোনও উপায়!?

এইরকমভাবে আমাদের লখীন্দরের বাসর ঘরের মত কালনাগিনীর ছোবল খেতেই হবে!? অথচ এই মানুষই মানুষের ক্লোন তৈরী করছে! অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরী করছে! স্রষ্টার সৃষ্টি এই পৃথিবী গ্রহকেই একেবারেই উড়িয়ে দেবার শক্তি অর্জন ক'রে ফেলেছে! চাঁদের বুকে বাস করার ব্যবস্থা করছে! হাজার লক্ষ মাইল দূরের গ্রহতে পাড়ি জমাতে শক্তি অর্জন ক'রে ফেলেছে! আকাশে নকল সূর্য বানাবার প্রক্রিয়া শুরু করেছে! কত আর বলবো!? পাগলামো এমন জায়গায় পৌঁছেছে অতি বুদ্ধিমান মানুষ বিজ্ঞানীদের যে শোনা যায় মানুষ ক্লোন তৈরীর মত পুরুষের পশ্চাদ্দেশে মানুষ জন্ম দেবার জন্য কোনও কোনও বিজ্ঞানী পাগল! অথচ মানুষকে একটু দু'মুঠো খেতে দিয়ে, একটু আশ্রয় দিয়ে রোগ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাচার জন্য হাত বাড়িয়ে দেবার বাসনায় দেশের শাসকশ্রেণী ও বুদ্ধিমান মানুষেরা পাগল নয়!!!!!!

তাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রাণ ব্যথাহত কন্ঠে ব'লে ওঠে, হে দয়াল! তাহ'লে কার কাছে যাবো!? কার উপর নির্ভর করবো!? করবো ভরসা!?
( লেখা ২৩শে মে'২০২১)

Friday, May 19, 2023

কবিতাঃ ঠাকুর বাহানা মাত্র।

অন্যকে নকল করবো আবার
আসলের মত বুক চেতিয়ে চলবো!
তাই কি কখনো হয়?
নকল কি?
'ঘি' এর পাশে যেমন 'খাঁটি ঘি' !!
মানুষ সবচেয়ে নিজেকেই বেশী ভালোবাসে
আর নকল মানুষই জেনেই হ'ক 
আর না জেনেই হ'ক 
নিজের ক্ষতি নিজেই বেশী করে;
ঐ না-জেনে যারা করে বিষ পান
আর ক্ষতির হিসেবে বেকুব অজান
দুঃখ কষ্ট তাদের লেগেই থাকে ঘরে।
আর, জেনেশুনে যারা নিজের ক্ষতি করে 
ঐ 'আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান'
কিংবা ঐ Smoking is injurious to health-এর মতো
তাদের বাঁচার ইচ্ছাটাই গেছে মরে
কি হবে আর ঠাকুর ধ'রে?
ঠাকুর ধরার পরও যদি তোমার হয় কোনও ক্ষতি,
বড় রকমের হয় লোকসান 
তবে তুমি ঠিক জেনো
তোমার ঠিক নেই মতিগতি
তুমি ঠাকুরের সাথে করেছো কোনও বেইমানী,
নুন খেয়ে করেছো তাঁর সাথে নেমকহারামি
তুমি নেমকখারাম! তুমি বেইমান!!
ঠাকুর ধরেছো অথচ নেই সুখ, শান্তি নেই মনে!
মানে তুমি প্রতিনিয়তই অসুখকে করেছো সাথী
আর অশান্তিকে করেছো সখা। 
ঠাকুর বাহানা মাত্র; শিখণ্ডী ক'রে তাঁকে 
করেছো ছলচাতুরী তাঁর সনে ক্ষণেক্ষণে!!

কবিতাঃ ধরবে না কেউ হাল।

আফজল খাঁ প্রেম, মেঘনাদ চাতুরী,
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষার বুকে হাতুড়ি।
ইষ্টের সাথে কেরামতি?
আফজল খাঁ আর মেঘনাদ পরিণতি।
মনে রেখো গুরুভাই, কেষ্ট দাসের বংশধর;
মরে সবে লজ্জায়, কাঁপে থরথর!!
মীরজাফর, জুডাস আর কেষ্ট দাস
আস্তিনে লুকায় খঞ্জর, মুখে প্রেমের ভাষ!!
বিবেকের বুকে মারছো লাথি, ধরছো টিপে গলা!
"শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর" বন্ধু আছে কিন্তু বলা।
সত্যের মুখে দিয়ে ছাই, আগুন কি নেভানো যায়?
সময় সবসে বড়া বলবান, মনে রেখো গুরুভাই।
দু'হাত মাথায় তুলে দিচ্ছো লম্বা দৌড়!
জিতে গেছো ভাবছো মনে? আসছে সময়,
হবে রাত কেটে ভোর।
সত্যের মুখোমুখি হ'তে ভয় পাও?
অথচ ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা-ইষ্টস্বার্থরক্ষার ধ্বজা ওড়াও।
অন্যের মুখে খেয়ে ঝাল করছো গালাগাল?
আসছে সময় যখন ডুববে তরী
তখন ধরবে না কেউ হাল।
( লেখা ১৯মে' ২০২১৭ )







Monday, May 15, 2023

বর্তমান সময়ঃ ৫

১) "কপট হ'য়ো না, নিজে ঠ'ক না আর অপরকে ঠকিও না।"

শ্রীশ্রীঠাকুর।

"অকপট হ'য়ো না, নিজে ঠ'ক না আর অপরকে ঠকাও।"
প্রবি।

২) "যদি সাধনায় উন্নতি লাভ করতে চাও, তবে কপটতা ত্যাগ কর"।
শ্রীশ্রীঠাকুর।

কপটতার ধার ধেরো না, আত্মপ্রতিষ্ঠা আর আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠাই তোমার জীবনের লক্ষ্য হউক। তুমি অনিষ্টপ্রাণতার উপাসক হও। 

৩) সংহতিতে যে ভাঙ্গন ধরায় সে ছেদক। ইষ্টকে আয়ের উপকরণ ক'রো না।--শ্রীশ্রীঠাকুর।

সংহতিতে ভাঙন ধরাও, লন্ডভন্ড ক'রে দাও, ছেদক হও, ছেদক ছড়িয়ে দাও, ইষ্টকে আয়ের উপকরণ ক'রে নাও আর লুটেপুটে খাও।"
জীবন ধ্বংস সাধনার সাধক হও।--প্রবি।

 
৪)  "প্রিয় বিতরণ করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর"।
শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

"অপ্রিয় বিতরণ করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর"।--প্রবি।

Sunday, May 14, 2023

প্রবন্ধঃ মাতৃদিবস!

মাতৃদিবস চলে গেল। কত পোষ্ট দেখলাম মায়েদের নিয়ে! মায়েদের নিয়ে ছেলেমেয়েদের কত ভালোবাসা ঝরে পড়তে দেখলাম! ভালো লাগলো। মায়ের কথা মনে পড়ে গেল! অজান্তে চোখ ভ'রে এলো জলে! কত অযত্ন, কত অবহেলার কথা মনে পড়ে গেল! সযত্নে লুকিয়ে মুছে নিলাম চোখের কোনাটা! বয়স হয়েছে, একটু লজ্জা লাগলো! আমাদের সময়েও সবই ছিল কিন্তু কোথায় যেন সব চাপা পড়ে গেছিল! সমস্যার যাঁতাকলে সূক্ষ্ম অনুভূতি পেস্ট হ'য়ে গিয়েছিল! এখন সমস্যা আছে জীবনে, সমাজ জীবনে বেড়েছে হাজারো সমস্যা আর তার প্রভাব পড়েছে ঘরে ঘরে! আর এইসবের মধ্যে নুতন রূপে এসেছে নানা 'দিবস'! সমস্যা পীড়িত মানুষের জীবনে একটুখানি নকল আনন্দ খুঁজে নেওয়া! তাই বা মন্দ কি?
আবার মাতৃদিবস-এর সেই পোষ্টের মধ্যে কত পোষ্টে দেখলাম মেয়েদের নিয়ে কটূক্তি! মেয়ে আরামে শুয়ে শুয়ে মোবাইল করছে, বাইরে কোথাও বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঠান্ডা খাচ্ছে আর মা ঘরে এই গরমে শরীরে ঘাম ঝরিয়ে খেটে মরছে! আর মেয়ে ফেসবুকের স্বপ্নের জগতে ঘুরতে ঘুরতে, বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে ঘুরতে, ঠান্ডা খেতে খেতে মাকে 'আমার মা পৃথিবীর সেরা মা' ব'লে উয়িশ করছে মাতৃ দিবসে! পিতৃদিবস, ভ্রাতৃদিবস ভগ্নীদিবস, বন্ধুদিবস ইত্যাদি ইত্যাদি বহু বহু 'দিবস' পালিত হ'ক না! হ'ক না কৃত্রিম হ'লেও, অভিনয় হ'লেও এই গুমোট দমবন্ধ করা সমাজে একটু প্রকৃতির না হ'ক কৃত্রিম প্রকৃতির ফ্যানের গরম হওয়ার মত একটু গরম ভ্যাপসা ভালোবাসা! নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো! হ'ক না কানা তবুও আমার মামা তো আছে! একটা নয় দু'দুটো মা 'মামা' রূপে আছে আমার জীবনে! একটু হ'লেও তো অক্সিজেন পাই!!!!!!!
আজকের এই যান্ত্রিক সভ্যতায় এই সংস্কৃতি মন্দের ভালো! তবুও তো ছেলেমেয়েরা এই উড়ুক্কু মন নিয়ে বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল জীবনের মাঝেও এই সংস্কৃতিতে সংস্কৃত হচ্ছে! আদর্শহীন জীবনে এর থেকে বেশী আশা করা আর মূর্খের স্বর্গে বাস করা সমার্থক!
মেয়েই তো একদিন মা! তাই এই অল্প কদিন থাকুক না মেয়ে মায়ের কাছে মায়ের মায়ের মত! আদরে, আনন্দে কাটাক না জীবন! তারপর একদিন তার মায়ের মত সেও অন্য আনন্দের ভাগীদার হবে! তাই আজকের মেয়ের আনন্দ আর সেদিনের আনন্দ অৰ্থাৎ আজকের তার মায়ের যে মাতৃত্বের আনন্দ, সন্তান পরিপালনের আনন্দ, সন্তান স্নেহ-ভালোবাসার আনন্দ, সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে ফল্গুধারার মত তলে তলে ব'য়ে যাওয়া যে নির্মল আনন্দ সেই দুই আনন্দ দু'রকমের আনন্দ! তাই একাকার করলে হবে না! এই যে মেয়ে বা ছেলে মা বা বাবা ব'লে ডেকে ওঠে আবার মা-বাবা ছেলেমেয়েকে 'ওঠ বাবা, মা ওঠ' ব'লে ডেকে ওঠে এই যে ডাক, উভয়ে উভয়কে 'মা বা বাবা' ব'লে ডেকে ওঠা এই আনন্দ আর কোথায় আছে!? তাই ছেলে বা মেয়ে আনন্দে কাটাক, হাত পা ছুঁড়ে কাটাক, দৌড়ে যাক কোনও কষ্ট নেই মায়ের! কোন দুঃখ নেই মায়ের! কোনও আপত্তি, নিষেধ নেই মায়ের, বাবার! কষ্ট-যন্ত্রণা তখনি হয় যখন ছেলে বা মেয়ে আনন্দে কাটাতে গিয়ে ভেসে গ্যাছে কূল ছেড়ে কোন অকূলে, হাত পা ছুঁড়ে কাটাতে গিয়ে ভেঙে বসেছে হাত-পা! দৌড়ে যেতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে ছরে যায় যখন সর্বাঙ্গ, রক্তাক্ত শরীরে মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যখন তখন মায়ের অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে ভয়ে-আতঙ্কে! পাগলের মত ছুটে বেড়ায় দরজায় দরজায় সাহায্যের জন্য বাবা! তাই মা আজ যতই পরিশ্রম করুক, যতই রাগারাগি করুক মা ছেলেমেয়েকে বুক দিয়েই আগলে রাখতে চায়! তাই মা শত দুঃখকষ্টের মধ্যেও চায় ছেলেমেয়ে ভালো থাকুক, আনন্দে থাকুক কোনও বিপদ যেন তাকে স্পর্শ না করে। কোনও কষ্ট যেন না হয় তার সে যতই বদমাশ হ'ক ছেলে বা মেয়ে! সব মা-বাবা চায় দুধেভাতে থাকুক আমাদের সন্তান! কারণ মা জানে আমার এই মেয়েই একদিন আমার এই রোলে অভিনয় করবে! পিতা জানে একদিন আমার এই ছেলেই আমার মত তার ছেলের বাবা হবে! তাই করুক ছেলেমেয়ে আনন্দ, করুক মজা, করুক ফুর্তি! আনন্দ-মজা-ফুর্তি লুটে নিক প্রকৃতির বুক থেকে যত পদে তত এই অনিত্য জীবনে! তবে তা লাগামছাড়া যেন না হয়, আনন্দ-মজা-ফুর্তি যেন নিরানন্দে, দুঃখে, কষ্টে পর্যবসিত না হয়!
তাই বলি, কর আনন্দ মা! কর আনন্দ বাবা! তবে খেয়াল রাখিস জীবনে যেন কখনও কোনও দাগ না পড়ে যায়! অনিয়ন্ত্রিত আনন্দ যেন কলঙ্কিত ক'রে না তোলে জীবনকে! বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,"দৌড়ে যাও, কিন্তু হাঁপিয়ে যেও না; আর, হোঁচট খেয়ে যাতে না পড়, দৃষ্টি রেখো।"
তাই আবার বলি, ছোট, দৌড়াও! ছুটে পার হ'য়ে যাও সমস্ত বাধাবিঘ্নের পাহাড়! পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে যাও আনন্দের স্বর্গ রাজ্যে! লুটেপুটে খাও, চেটেচেটে খাও আনন্দ-আনন্দ আর আনন্দ!!!!! খাও! প্রানভরে খাও সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ, জীবন্ত আদর্শ, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে মাথায় নিয়ে!
( লেখা ১৫ই মে' ২০১৯ )

প্রবি সমাচার ১৪

আজ রাজ্য সরকারের তরফে দু'সপ্তাহের জন্য ফুল লকডাউন ঘোষণা করা হ'লো। আর ঘোষণা করা হ'লো ঠিক ঈদের ঠিক পরে পরেই।
এই নিয়ে শুরু হ'য়ে গেছে তোলপাড়। বিতর্কিত মন্তব্যে ছেয়ে গেছে ফেসবুক। সকাল থেকে ফোন আর ওয়াট আপে রাজ্য সরকার আর সম্প্রদায়ের বাপ বাপান্ত। রাজ্য সরকারের ভুমিকা আজ পক্ষপাতিত্যের প্রশ্নে সমালোচিত। এই পর্যায়ের সমালোচনার পিছনে দীর্ঘদিনের ঠিক বেঠিক সত্য মিথ্যা অনেক কারণ আছে। ঘোলা জলের মত হ'য়ে গেছে পরিবেশ পরিস্থিতি। এই ঘোলা জলের পরিবেশ পরিস্থিতিতে ল্যাঠা মাচ ধরতে নেবে পড়েছে অতি উৎসাহীর দল আগু পিছু না ভেবেই। আর এই বিতর্কিত মন্তব্যে কিছু সৎসঙ্গী সামিল হ'য়ে গেছে অতি উৎসাহে। তাদের মন্তব্যে রাজনৈতিক খোঁচাও আছে।

এই সম্পর্কে সৎসঙ্গী ভাইবোনের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্যঃ
সৎসঙ্গীদের ভেবে চিন্তে মতামত প্রকাশ করা উচিত। কারণ আমার সঙ্গে আমার ঠাকুর জড়িয়ে আছে। আমার ভুল অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন মতামত ঠাকুরের ভাবমূর্তিকে আঘাত করে। আমার জন্য, আমার ভুল বিশ্লেষণের জন্য সাধারণ ভাঙাচোরা দীক্ষিত অদীক্ষিত মানুষের মধ্যে ঠাকুর সম্পর্কে ভুল বার্তা যায়। ঈদ আমার দয়ালেরই অন্য রূপের উৎসব এটা যেন আমরা সৎসঙ্গীরা অন্তত ভুলে না যায়। যে কোনও সম্প্রদায়ের যে কোনও উৎসবের সময় পরিবেশ পরিস্থিতি যদি অনুকূল না থাকে তাহ'লে মানসিক, পারিবারিক ও পারিপার্শিক কি অবস্থা হয় যাদের হয় তারাই বোঝে। যেমন সাপের ছোবল যে খায়নি সে কি বুঝবে সাপের বিষের তীব্র অসহনীয় জ্বালা? একচক্ষু হরিণের মত যেন আমরা সৎসঙ্গীরা কাজ না করি, ভাবনা চিন্তা না করি। আমরা যেন কোয়ান্টিটির স্টেজ পার হ'য়ে কোয়ালিটিতে উত্তীর্ণ হ'ই। মাথায় রাখতে হবে ঠাকুর মানুষ চেয়েছিলেন, মানুষ মানুষ ক'রে কেঁদেছিলেন। আর আমরা মানুষ হওয়া তো দূরের কথা ঠাকুরের কলঙ্ক যেন না হ'ই। ঈদের সময়, ঈদের আগে আর ঈদের পরে লক ডাউন সংক্রান্ত প্রশ্নে কিছু বিতর্ক থাকতেই পারে, পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে কোনও প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কিন্তু সেই প্রশ্ন, সেই বিতর্ক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন নষ্ট না করে আমাদের মত ঠাকুর সেজে বসা লোকেদের দ্বারা। কি হিন্দু, কি মুসলিম, কি খ্রিষ্টান তা যে যে সম্প্রদায়ের লোক হ'ক না কেন আমরা কেউ যেন অতি উৎসাহে অতি বিজ্ঞের মত কথা বলতে গিয়ে গোটা সম্প্রদায়কে আঘাত ক'রে না বসি।

It is nothing but co-incidence. Id & Corona have been merged in the time womb at a time. এর জন্য কোনও সম্প্রদায় জড়িয়ে যায় এমন কোনও বিতর্কিত ইংগিতপূর্ণ মন্তব্য করা সম্পর্কে যেন আমরা সৎসঙ্গীরা সতর্ক থাকি। ঠাকুরের অবস্থান সম্পর্কে আমরা সৎসঙ্গীরা যেন ওয়াকিবহাল থাকি। নইলে ঠাকুর থেকে সরে থাকা ভালো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন মন্তব্য থেকে সৎসঙ্গীদের সাবধান থাকা উচিত। আমরা যেন ভুলে না যায় সৎসঙ্গীদের মধ্যে অনেক মুসলমান ভাইবোন আছে। রাজনৈতিক বাতাবরণের মধ্যে জড়িয়ে গিয়ে আমরা হিন্দু সৎসঙ্গীরা যেন মুসলমান সৎসঙ্গীদের মধ্যে বিরোধ বিভেদের বীজ বপন না ক'রে বসি। আমরা যেন ভুলে না যায় পরমপিতা পুরুষোত্তম সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনূকূলচন্দ্র বাঙালি তথা হিন্দুদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। যেমন পরমপিতা হজরত মোহম্মদ, যিশুখ্রিস্ট, বুদ্ধ মুসলমান, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। ঠিক তেমনি রাম, কৃষ্ণ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের বেলায় একইভাবে একই কথা প্রযোজ্য। তাঁরাও কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের ঠাকুর এরকম দেখতে চাননি। এরকম বিতর্কিত বিকেন্দ্রিক চলন শেখাননি। আমরা যেন ভুলে না যায় সৎসঙ্গ একটা স্কুল। এই স্কুলে ভর্তি হ'য়ে যেন আমরা ঠাকুর দর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ না থাকি। আমরা যেন রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় আর ঠাকুরকে ঠাকুরের জায়গায় রাখি; খিচুড়ি পাকিয়ে না দিই। আমার চলন চরিত্রই যেন ব'লে দেয় আমার ঠাকুরের চলন চরিত্র কেমন। আমার জীবনই যেন ব'লে দেয় আমার ঠাকুরের জীবন কেমন।
সাবধান! গুরুভাই গুরুবোন সাবধান!
( লেখা ১৫ই মে' ২০২১ )

Saturday, May 13, 2023

প্রবন্ধঃ : লৌকিক-অলৌকিক।

আজ একটা পোষ্ট চোখে পড়লো। যেখানে বলা হচ্ছে কোন এক সন্ন্যাসী নাকি ভয়ঙ্কর আগুনের মধ্যে থেকেও তাঁর সর্বাঙ্গে কোনও পোড়া লাগেনি। এই দৃশ্য দেখার জন্য নাকি মিডিয়া সেখানে ভিড় করেছে। আর সেই ঘটনাকে সামনে রেখে শুরু হ'য়ে গেছে সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য। এ নাকি একমাত্র সনাতনী ধর্মেই সম্ভব। অর্থাৎ আর কোনও ধর্মে সম্ভব নয়। আমার ধর্ম সনাতন ধর্ম পৃথিবীর সব ধর্মের সেরা ধর্ম। এইভাবে বিতর্কের সূত্রপাত হ'য়। তারপরে তা ডালপালা ছড়িয়ে বিকৃতির জন্ম দেয়।

প্রথমতঃ ধর্ম কখনো বহু নয়। ধর্ম এক। তা দেশ কাল পাত্র ভেদে আলাদা আলাদা হয় না, তা এক ও অভিন্ন। সনাতন মানে? সনাতন যা চিরন্তন, যা শাশ্বত, যা নিত্য, চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। যেমন আকাশের সূর্য, চন্দ্র, তারা, গ্রহ, নক্ষত্র চিরন্তন। যেমন শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনে আমার যে বায়ো লজিক্যাল মেক আপ (জৈবী সংস্থিতি) আমাকে ধ'রে রেখেছে তা চিরন্তন ধর্ম অর্থাৎ সনাতন ধর্ম। তা এই সনাতন ধর্ম কি সমগ্র সৃষ্টি মধ্যে শুধু ভারতবর্ষ আর হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? অন্য দেশের অন্য মতের মানুষের জন্য কি প্রযোজ্য নয়? অন্য মত বললাম এইজন্যে যে ধর্ম কখনো বহু হয় না।
The greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধর্ম্ম সম্পর্কে সমস্ত ভুল, অন্ধ, কুসংস্কারাছন্ন, অবৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণাকে ভেঙে দিয়ে পরিস্কার সহজ সরল ক'রে বললেন,

"ধর্ম্মকে জানা মানেই বিষয়ের মূল কারণকে জানা; আর, তাই জানাই জ্ঞান।"
যেমন এই যে ঘটনাটা, একজন সন্ন্যাসী ভয়ঙ্কর আগুনের মধ্যে থেকেও তাঁর সর্বাঙ্গে কোনও পোড়া লাগেনি। এটা যদি সত্য হয়, তাহ'লে দেখতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে কেন তাঁর গাঁয়ে আগুন লাগা সত্ত্বেও গা পোড়েনি। কেন গায়ে আগুন লাগেনি। এই যে আগুন না লাগা বিষয়টা এই বিষয়টার মূল কারণ কি আমাকে জানতে হবে। এর পিছনে একটা কারণ আছে। সেই কারণটাকে জানতে পারলেই ধর্মকে জানা হ'য়ে যাবে। আগুনের ধর্ম জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া। আগুনের মধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সেই ক্ষমতাটা সে ধ'রে আছে। ঠিক তেমনি কোন কারণটা শরীরকে ঘিরে ধ'রে রেখেছে যার ফলে আগুন সেখানে ব্যর্থ হচ্ছে? সেই কারণটাকে জানতে পারলেই রহস্যের সমাধান হ'য়ে যাবে। সেই কারণটাকে জানা মানে ধ'রে রাখাকে জানা অর্থাৎ ধর্মকে জানা।

তাহ'লে এক্ষেত্রে ধর্ম কি? ধর্ম বা ব্রহ্ম তখনি বুঝতে পারবে যখন অভাব মানুষকে ছোবল মারে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,

"অভাবে পরিশ্রান্ত মনই ধর্ম্ম বা ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা করে, নতুবা করে না।"
যখন মানুষ অভাবে ক্লান্ত হয়, বিধ্বস্ত হয় তখন সে বাঁচবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায়, অভাব কাটিয়ে আবার বাঁচতে চায়, বেড়ে উঠতে চায়। এই যে মানুষের জীবনে অভাব আসে তার কারণ তার মধ্যে ভাব নেই। অ মানে নেই অর্থাৎ নেই ভাব, অভাব। তাই আজ আমাদের ঘরে ঘরে অভাব। আমি কি ক'রে বাঁচবো, কি ক'রে বেড়ে উঠবো অর্থাৎ বৃদ্ধি পাবো, কি করলে অভাব বলতে চলতি অর্থে অর্থকষ্ট থেকে, টানাটানি থেকে মুক্ত হবো তা ভাবিনি।

তাই যে কর্মই করো না কেন সেই কর্মের সাথে ভাব করতে হয়, ভাব বিনিময় করতে হয়, সেই কর্ম নিয়ে ভাবতে হয়। সেই কর্মের সাথে সবসময় লেগে থাকতে হয়, কর্মের উপযুক্ত হয়ে উঠতে হয়। ঈশ্বর যেমন সর্বত্র বিদ্যমান অর্থাৎ সব জায়গায় তাঁর উপস্থিতি আছে, তিনি আছেন সর্বত্র ঠিক তেমনি আমিও আমার কর্মের সঙ্গে সবসময় বিদ্যমান অর্থাৎ আমার উপস্থিতি আছে, আমি আছি, সক্রিয়ভাবেই আমি আছি, লেগে আছি, যুক্ত আছি।

এই যে বাঁচার আকুল কান্না, আপ্রাণ চেষ্টা এই চেষ্টা থেকেই সে কোনও একটা কিছুকে ধ'রে বাঁচতে চায়, একটা অবলম্বন চায়। ডুবে যাবার সময় একটা খড়কুটো পেলেও তাকে আঁকড়ে ধ'রে বাঁচতে চায়। আবার উঠে দাঁড়াতে চায়, বেড়ে উঠতে চায় শূন্য থেকে নোতুন ভাবে। তখন সে নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করে কি ধ'রে সে বাঁচবে, কেমন ক'রে সে বেড়ে উঠবে। তখন তার মধ্যে ভাবের জন্ম হয়। তখন সে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে, ভাবো, ভাবো, ভাবতে থাকো, ভাবতে থাকো আর কর্মের সাথে ভাব করো, বন্ধুত্ব করো, কর্মের সঙ্গে যুক্ত হও, সবসময় লেগে থাকো। এইভাবেই ধরে থাকা বা ধর্ম্ম এবং বৃদ্ধি পাওয়া বা ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা আসে।

শ্রীশ্রীঠাকুর আরও বললেন, যার উপর বিষয়ের অস্তিত্ব তাই ধর্ম্ম; যতক্ষণ তা' জানা যায় নাই, ততক্ষণ বিষয়কে ঠিক ঠিক জানা হয় নাই। যার উপর যা' কিছু-সব দাঁড়িয়ে আছে তাই ধর্ম্ম; আর, তিনি পরমপুরুষ।

যেমন জল। জলের অস্তিত্ব বলতে আমরা বুঝি অর্থাৎ H²O হলো জলের রাসায়নিক সংকেত। যেখানে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং ১ টি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে জল গঠিত। তাহ'লে জল এই বিষয়টার অস্তিত্ব হ'লো H²O অর্থাৎ H²O জলকে ধ'রে আছে। যতক্ষণ H²O জানতে পারছি না ততক্ষণ জল বিষয়টাকে ঠিক ঠিক জানতে পারছি না। এক্ষেত্রে H²O ওপর দাঁড়িয়ে আছে জল আর H²O হ'লো জলের ধর্ম। H²O জলকে ধ'রে আছে। আবার জল তৃষ্ণা মেটায়। জলের ধর্ম হ'লো তৃষ্ণা মেটানো। আমার তৃষ্ণা মেটানোকে ধ'রে রেখেছে ধর্ম। তাই জলকে পানি, ওয়াটার ইত্যাদি যে নামেই অভিহিত করিনা কেন একে ধ'রে রাখার যে অস্তিত্ব তা ভিন্ন ভিন্ন নয়, একটাই অস্তিত্ব H²O আর তৃষ্ণা মেটানো।

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, ধর্ম্ম কখনও বহু হয় না, ধর্ম্ম একই আর তার কোন প্রকার নেই। মত বহু হ'তে পারে, এমন কি যত মানুষ তত মত হ'তে পারে, কিন্তু তাই ব'লে ধর্ম্ম বহু হ'তে পারে না। হিন্দুধর্ম্ম, মুসলমানধর্ম্ম, খৃষ্টানধর্ম্ম, বৌদ্ধধর্ম্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও-সবগুলি মত। কোনও মতের সঙ্গে কোনও মতের প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের----একটাকেই নানাপ্রকারে একরকম অনুভব। সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা' নানাপ্রকারে হ'তে পারে; আর, যতটুকু বিস্তারে যা' হয় তাই তার অনুভূতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম অনুভূতির উপর।"

ধর্ম মানে আজগুবি গাঁজাখুরি গল্প নয়। ধর্ম মানে দর্শন অর্থাৎ কারণ, অস্তিত্ব, মৌলিক বিধান। ধর্ম আর বিজ্ঞান সমার্থক। তাই বলে philosophy is the science of science. যদি সন্ন্যাসীর কাহানী সত্য হয় তাহ'লে দেখতে হবে এর পিছনে কারণ কি আছে। কোনও কিছুই অলৌকিক নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত এর কারণের কারণ পরম কারণ জানা না যাচ্ছে ততক্ষণ তা অলৌকিক। আর যখনই সেই কারণ উন্মোচিত হয়, হাতের মুঠোয় চলে আসে তখনই তা হয় লৌকিক। আর যদি মিথ্যা থাকে তাও ধরা পড়ে যায় বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞানের আলোকে যাকে আমরা ধর্ম বলি। আমরা ধর্ম শব্দের ইংরেজী বলি Religion. ধর্ম আর রিলিজিয়ন এক কথা নয়। ধর্ম কথার গভীরতা গভীর, বিস্তৃত, অসীম ও অনন্ত। যার সঙ্গে ধ'রে রাখার সম্পর্ক নিহিত। যেমন জলকে ধ'রে রাখে H2O, জলের ধর্ম্ম তৃষ্ণা মেটানো, আগুনের ধর্ম্ম আলো ও তাপ দেওয়া, বরফ ঠান্ডা আর সেখানে রিলিজিয়ন পুনরায় লেগে থাকার কথা বলে। ল্যাটিন Religare (রেলিগেয়ার) অর্থাৎ Re + ligare থেকে Religion শব্দের উৎপত্তি। রেলিগেয়ারের অর্থ হ'লো বাঁধন, "কিছুর সাথে কিছু বেঁধে রাখা", মানব এবং ঐশ্বরিক, "কানেক্ট করা" Re অর্থাৎ পুনরায় আর ligare(লিগার) অর্থ যুক্ত করা বা হওয়া। সুতরাং জন্মের পরে ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত করা বা হওয়া কে Religion বলে। এ সবই জেনেছি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর পুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কাছে।

যাই হ'ক, আমরা অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড ঘটতে দেখি অহরহ যার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। টোটালি হার্ট বিট বন্ধ তথাপি মানুষ মৃত নয় অবিশ্বাস্য এই ঘটনাও আমরা টিভিতে দেখেছি। যদিও জানি না তা কতটা সত্যি আর কতটা মিথ্যে। আমরা দেখেছি অবিশ্বাস্য ঘটনা অ্যাসিড দিয়ে স্নান করতে, অ্যাসিড ভর্তি কাঁচের চৌবাচ্চায় মানুষকে ডুবে বসে থাকতে! তেমনি অত্যাশর্য অবিশ্বাস্য বহু বহু বিজ্ঞানের কথা বলে গেছেন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তাঁর ভাইব্রোমিটার প্রকল্প (মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চার) তার মধ্যে অন্যতম অত্যাশর্য বিজ্ঞান!

আগুন সব পুড়িয়ে খাক ক'রে দেয় কিন্তু সন্ন্যাসীকে স্পর্শ করতে পারেনি। যদি এক্ষেত্রে উলটো হ'য়ে থাকে তবে বুঝতে হবে এর পিছনে কিছু একটা বিশেষ জ্ঞান আছে যা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে, জ্ঞানের বাইরে। আমরা ইতিহাসে প্রহ্লাদের কাহিনী জানি। তাঁকেও আগুনে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কিচ্ছু হয়নি। আপাত অবাস্তব অলৌকিক ঘটনা তাঁকে ঘিরেও ঘটেছিল। পাগলা হাতির পায়ের তলায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল, পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুই তাঁর অস্তিত্বকে নিভিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি। এইগুলিকে গাঁজাখুরি গল্প ব'লে গাঁজাখোরেরা বলতে পারে কিন্তু সত্যসন্ধানী রহস্যসন্ধানী জিজ্ঞাসুরা কখনও এমন সস্তাভাবে ভাবে না। শ্রীশ্রীঠাকুর সবসময় তাঁর মায়ের কথা তুলে ধ'রে বলতেন,"যেখানেই দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো ভাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।" অর্থাৎ ছাই ব''লে তাকে অবজ্ঞা ক'রো না, উপেক্ষা ক'রো না। হ'ক ছাই তবুও খুঁজতে খুঁজতে একদিন পরশ পাথর পেলেও পেয়ে যেতে পারো। শ্রীশ্রীঠাকুর কত হাজার হাজার বিচিত্র অত্যাশ্চর্য অভূতপূর্ব কথা বলেছেন যা পন্ডিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞ অর্থাৎ প্রাজ্ঞদের বোধবুদ্ধির বাইরে। সেখানে দু'পাতা বালখিল্য বিজ্ঞান পড়া আবালদের শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে সমালোচনা, নিন্দা প্রমাণ করে যে এদের মোল্লার মত দৌড় যা মসজিদ পর্যন্ত কিংবা এরা আদার ব্যাপারী অথচ জাহাজের খোঁজ রাখতে চায় বা এদের অবস্থা উটের চিৎ হ'য়ে শোওয়ার মত কিংবা মেথর যদি গুয়ের বালতি মাথায় ক'রে নিয়ে যেতে যেতে ভাবে যে মাথায় ক'রে সে খেজুর গুড়ের বালতি নিয়ে যাচ্ছে তাহ'লে যা হয় এদেরও দু'পাতা প্রাইমারি স্কুলের বিজ্ঞানের চটি বই পড়ে ভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের অসীম জলরাশীর মত বা অন্তহীন মহাশূন্যের মত বিজ্ঞানের এরা প্রতিনিধি বা সত্ত্বাধিকারী।

এই যে সন্ন্যাসীর গায়ে আগুনের স্পর্শ না লাগা, সম্পূর্ণ রকমে হার্ট বিট বন্ধ হ'য়ে যাওয়া সত্ত্বেও বেঁচে থাকা, অ্যাসিড দিয়ে স্নান করা বা অ্যাসিডের চৌবাচ্চায় ডুবে বসে থাকা, শ্রীশ্রীঠাকুরে ভাইব্রোমিটার প্রকল্প যা কিনা মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চার, নিজের শরীর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিজের কাজ সেরে আবার নিজের শরীরে প্রবেশ করা ইত্যাদি ইত্যাদি নানা আজব অত্যাশ্চর্য অভূতপূর্ব বিষয়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে যখন উন্নত জ্ঞানী মানুষ হাতড়ে মরে তখন মনে পড়ে যায় ইংরেজী ভাষার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকার শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের সংলাপ
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"
এই সংলাপ ছিল আমার দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রের অন্যতম প্রিয় সংলাপ; যা তিনি প্রায় সময়ই আওড়াতেন।

এ সব কিছুই সবজান্তা মানুষের অহঙ্কারকে চূর্ণ করে। মানুষ যে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির একটা ক্ষুদ্র সৃষ্টি তা মানুষ জ্ঞানের অহঙ্কারে ভুলে যায়। তাই প্রতি পদে পদে মুখে পাছায় লাথ খায়। কেউ কেউ লাথ খেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্প জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শুধরে গিয়ে চেষ্টা করে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বা অনুভূতি পুর্ণ বা উপলব্ধিবান মানুষে পরিণত হওয়ার।

আজ পর্যন্ত ধর্মজগতের ভন্ড ধান্দাবাজ ধার্মিক যা কিছু অলৌকিক কান্ড ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়েছে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে ধর্ম বা ঈশ্বরকে সামনে রেখে তারা তা করেছে বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করেই। তাই একশ্রেণীর মানুষের ধর্মের ওপর বিশ্বাস গেছে নষ্ট হয়ে। তারা সবেতেই বুঝরুকি মনে করে, সবাইকেই ভন্ড মনে করে। আর, এই যে ভন্ডামি যারা করে তা' করে সাধারণ কুসংস্কারাছন্ন, অজ্ঞ, মূর্খ, দূর্বল ধর্মীয় ভীরু মানুষের দৌলতে। আর সবেতেই বুঝরুকি মনে করে যারা তারা অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।

তাই ধর্ম্ম আর বিজ্ঞান, লৌকিক-অলৌকিক, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ সব ঘেঁটে ঘ হ'য়ে গেছে। 'ঘ' হ'য়ে নিজের দোষে। কারও দোষ নয়, আমারই দোষ। কারণ আমি চাইনি আমার অজ্ঞানতার অন্ধকারে বন্ধ চোখ জ্ঞান কাঠির স্পর্শে খুলতে। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, তোমার জন্য তুমি নিজে দায়ী। জয়গুরু।
******************************************************
 

Friday, May 12, 2023

কবিতাঃ ঈশ্বর কাঁদেন!

হে দয়াল! 
গভীর এক শূন্যতা গ্রাস করছে চারপাশ!
মাথার ভিতরটা ফাঁকা হ'য়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ!!
শূন্যতা তার ডালপালা ছড়িয়ে 
অক্টোপাশের মত ঢুকে পড়ছে
ক্রমশঃ মস্তিষ্কের গভীর থেকে গভীরে!
চতুর্দিকে আজ মিথ্যের বেসাতি!
মিথ্যেরা আজ সত্যের সিংহাসনে আর
সত্য আজ পায়ের তলায় রাস্তার ধূলিতে!
এ কিসের ইঙ্গিত!? 
কিসের অশনি সংকেত দয়াল!?
মাথা আজ পায়ের তলায়, পা মাথায়!
হাত আজ ভিক্ষা মাগে, পেট মরে ক্ষুধায়!
কালোৱা আজ বুক বাজিয়ে চলে,
চলে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে!
আলো জ্বলে টিমটিমে ঘোর আঁধারে!

হে দয়াল! তুমি কোথায়!?
কথার ঝিকিমিকি আজ রাজনীতি আর ধর্মেতে!
'সমাজ কো বদল ডালো'-র হুঙ্কার ছড়ায়
পথেপথে, মাঠে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, স্কুলে-কলেজে,
অফিস-কাছারি আর যত ঠেকে
উচ্শৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল কবি, সাহিত্যিক, 
নেতা, 
বুদ্ধি বেচে খাওয়া আর কালকের যোগী ভুঁইফোড় জীবেতে!

হে দয়াল! রাবণ রাজ্য কি ফিরে এলো!?
কংসেরা কি জেগে উঠলো সৃষ্টি ধ্বংস করবে ব'লে!?
আজকের শিশুপালেরা আছে বিন্দাস
একশটা অপরাধ ক'রেও রেহাই পায়!
পরবর্তী সর্বনাশের ছক কষে আর 
বহাল তবিয়তে জীবন কাটায়!
মিথ্যেরা উদোম বলাৎকার ক'রে চলেছে সত্যকে!
দয়াল! তুমি কোথায়!? 
এখনও তুমি থাকবে চুপ ক'রে!?

হে দয়াল! যারা নানা রঙের মোড়কে মোড়া
ভালো ভালো কথার ছোটায় ফোয়ারা,
ফেরি করে জনতার দ্বারে দ্বারে
তারা অন্যের ভালো কাজে কেন দেয় না সাড়া,
দেয় না কেন স্বীকৃতি তার তরে!?
বিপ্লবীরা কিসের বিপ্লবের কথা বলে যুগ যুগ ধ'রে!?
ধান্দাবাজ আর ফাঁকিবাজ জীবনের অধিকারী যত 
দখল করে উর্বর জমি বিপ্লব তথা স্বাধীনতার পরে
জীবন বাজী রেখে বিপ্লবীদের চষা অনুর্বর জমি! 
কেন!? কে দায়ী!?
সাজা বিপ্লবী আর সাজা স্বাধীনতা সংগ্রামীকে
চিনতে পারে না কেন সন্ন্যাসী বিপ্লবী আর স্বাধীনতা সংগ্রামী!?
কিসের অসম্পূর্ণতা সেইসব মহাত্মার বুকে 
ভুলের কলঙ্ক এঁকে দিয়ে যায়!?
কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ আম জনতা সংখ্যালঘু মুষ্টিমেয় 
কতিপয় সাজা ভালো মানুষের হাতে সাজা পায়!?
সাধারণ মানুষ কি সত্যিই সাধারণ? 
নাকি অসাধারণ সাধারণ রূপে সাধারণের মাঝে ঠাঁই পায়?
অসাধারণভাবে সাধারণ কিসে অসাধারণ!? 
কু-তে নাকি সু-তে!?
কু আজ সু-এর মুখে দেয় এঁকে কালি আর
নিজেরা ফেস পাউডারে মুখ ঢাকে খালি!
দয়াল! একেই কি বলে কলি!? ঘোর কলি!?

হে দয়াল! কারো জীবনে নেই আদর্শ, জীবন্ত আদর্শ!
থাকলেও আদর্শ, নেই আদর্শের চলন চরিত্র
কারও জীবনে শয়নে স্বপনে জাগরণে!
আদর্শরা আজ ব্যবসার উপকরণ
কপট আদর্শবাদী মানুষের জীবনে!
আদর্শের সিংহাসনে আজ অধিষ্ঠান অনাদর্শের!
ঈশ্বর সাজা আজ জলভাত কারণ বোধবুদ্ধি লোপাট
মূর্খ দূর্বল বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে কাবু মানুষের!
পূজাপাঠ, সম্বর্ধনা, সম্মাননার মোচ্ছব 
আছে লেগে অহরহ তাদের ঘিরে!
নেই যাদের শ্রেষ্ঠের প্রতি, যোগ্য ও দক্ষ আর
বড়োর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান, নির্মল প্রেম-ভালোবাসা!
সাজা ঈশ্বর আর ভন্ড সাধুর জন্য তারা 
ঢাল হ'য়ে আসে ফিরেফিরে!

হে দয়াল! শিশু আজ হয় রেপড, নাবালিকা হয় মাতা!
নাবালক করে সাবালিকাকে ভয়ঙ্কর বীভৎস ধর্ষণ!!!
কিন্তু নাবালক হওয়ার কারণে হয় না তার সাজা!
বউয়ের স্থান মায়ের জায়গায় আর মায়ের স্থান ঝিয়ে,
ঝিয়ের স্থান পায়ের তলায় বাঁচাবাড়া খেমটা নিয়ে!
এমনিভাবেই চলছে জগত চলছে গাড়ি সভ্যতার
ঈশ্বর কাঁদেন একাকি আসছে ভয়াল ঘোর অন্ধকার!
( লেখা ১৭ই ফেব্রুয়ারী' ২০২০ )

প্রবন্ধঃ বিবাহ ও জন্ম বিজ্ঞান।

ইদানীং দেখতে পাই কিছু সনাতনী নামধারী মানুষ নিজেদের সনাতনী ধারার প্রবক্তা হিসেবে তুলে ধ'রে বিবাহ বিজ্ঞান ও জন্ম বিজ্ঞানের ওপর আধুনিকতার দোহাই দিয়ে সব একাকার ক'রে দিতে চাইছেন আর তার ওপরে নানা পোস্ট করছেন। এরা সনাতনী নামের কলঙ্ক। নতুবা ছদ্মবেশী সনাতনী!
এইসমস্ত ছদ্মবেশী সনাতনী বা স্বঘোষিত সনাতনী কলঙ্ক না জেনে, না বুঝে, না পড়ে অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী হ'য়ে সমাজ কো বদল ডালো মেজাজে হাজার বছরের জীবন বিজ্ঞান যা সমাজ, সভ্যতা ও জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল বিষয় সেই বিষয়ে আলটপকা মন্তব্য ক'রে----- তাও প্রকাশ্যে নেট দুনিয়ায়----- সমাজ, সভ্যতাকে বিষাক্ত ক'রে চলেছেন। এর পিছনের রহস্য অনালোকিত।

তাদের কাছে অনুরোধ, এই কাজ থেকে বিরত থাকুন। গভীর জটিল জন্মবিজ্ঞান সম্পর্কে মন্তব্য করুন কিন্তু আগে বিবাহ বিজ্ঞান, জন্মবিজ্ঞান ইত্যাদির উপরে গভীর পড়াশুনা করুন, রিসার্চ করুন, উপলব্ধি করুন, অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, যারা এই বিষয়ে পণ্ডিত বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন।যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে মতের আদানপ্রদান করুন। তারপর না হয় আসুন আপনার গভীর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিকে সমাজের বুকে চারিয়ে দিতে। পড়াশুনা ক'রে দেখুন সত্যিই হাজার বছরের প্রাচীন বিবাহ সম্পর্কিত এই সনাতনী ধারার গভীরে কোনো বিজ্ঞান আছে কিনা। যদি কোনও বিজ্ঞান না থাকে তবে বলুন, সোচ্চার হ'ন ঘরে বাইরে প্রকাশ্যে নেট দুনিয়ায়। আর যদি তা না পারেন তাহ'লে ভাসাভাসা অল্প বিদ্যায় ভয়ঙ্করী হ'য়ে তথাকথিত সনাতনী সেজে সমস্ত খিচুড়ি ক'রে দেবার লক্ষ্যে বিপ্লবী সাজবেন না। সনাতনী সেজে সনাতনের মূলকে আঘাত করতে তারাই পারে যারা প্রকৃত সনাতনী নয়। তাই সাধু সাবধান! গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান বিষয়ক ও সমাজ বিষয়ক বিষয়ে টাট্টি কা মাফিক বাত ব'লে সমাজকে কলুষিত করবেন না। মুখ বন্ধ রাখুন। কারণ এই শিক্ষায় শিক্ষিত হ'য়ে আপনার প্রিয়জনেরও ক্ষতি হ'য়ে যাবে। নিজের ক্ষতি করবেন না ও অন্যেরও ক্ষতি করবেন না। নিজের মানসিক চিন্তাভাবনা ও শিক্ষার যত্ন নিন।

আবার বলি বিবাহ বিজ্ঞান, জন্ম বিজ্ঞানের ওপর রিসার্চিক মেন্টালিটি নিয়ে পড়াশোনা করুন। দেখুন কিছু পান কিনা। কথাগুলো বললাম এইজন্য যে আমিও একজন আপনার মত সমাজে অবস্থানকারী মানুষ আর তাই সমাজকে সুস্থ রাখার দায় আমারও আছে। ভালো থাকুন।
( লেখা ২১শে জুলাই/ ২০২২ )

কবিতাঃ ধনী-গরীব।

ধনী চি-র-কা-ল ধনী
আর গরীব চি-র-কা-ল গরীব!
আমজনতা ভাঁড় মে যায়
আউর দেশ যায় জাহান্নাম মে
হাম সব হ্যায় নবাব শরীফ!
মার চৌকা মার ছক্কা
আর হাত গলে সব ফক্কা!
ভাঁড় মে যায় ফিল্ডিং খুল যা সিমসিম
চিচিং.... ফাঁক! কুর্সি তো নেহি
গুপ্তধনের খনি!!!!!!
গরীব চি-র-কা-ল গরীব
আর ধনী চি-র-কা-ল ধনী!! 

লেখা ১৯শে ফেব্রুয়ারী' ২০১৯)

প্রবন্ধঃ ‘Vox populi vox dei’ নয় Vox expletory vox dei (১)

“'Chennai Express' film টা আমি দেখিনি। কিন্তু ট্রেলার-এ শাহরুখ খান-এর একটা ডায়লগ ছিল যেটাতে চমকে উঠেছিলাম।  
 'DON'T UNDERESTIMATE THE POWER OF A COMMON MAN'

 বন্ধুদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনারা কি এটা সত্যি বিশ্বাস করেন? বিশ্বাস করলে কেন করেন আর না করলে কেন করেন না বলুন। আমি আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম একজন কমন ম্যান হিসেবে। আমি আমার মনোভাব জানালাম।
#DolonchampaDasgupta
'DON'T UNDERESTIMATE THE POWER OF A COMMON MAN'

কথাটা ঠিক, একদম ঠিক। দোলনচাঁপার ‘Chennai Express’ film-এ শাহরুকের বলা dialogue-এর সত্যতা সম্পর্কে বিশ্বাস-অবিশ্বাস প্রশ্নে এবং কৌতুহলের কারণে আমি আলাদা ক’রে লিখতে বসলাম। অন্য কাজে যুক্ত থাকার জন্য এবং বিশেষ ক’রে বিষয়টার জন্যই একটু সময় নিলাম। কথায় আছে, একেবারে কখনো না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হওয়া ভালো। দোলনচাঁপা আপনার কৌতুহল আমায় কলম ধ’রতে বাধ্য করল। প্রশ্ন অনেক উত্তরের জন্ম দেয়। উন্নত প্রশ্নের গর্ভে উন্নত উত্তর নিহিত থাকে। আমার উত্তর যে উন্নত তা’ বলছি না। বলছি প্রশ্নটা সাধারণ হ’লেও হয়তো বা দোলনচাঁপা তাঁর অজান্তেই অনেক গভীরের দিকে প্রশ্নের তীরটা ছুঁড়ে দিয়েছে। প্রশ্নটা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ দোলনচাঁপা; কিন্তু যদি অনুসন্ধিৎসা নিয়ে দেখার ইচ্ছে বা আগ্রহ থাকে তাহ’লে ওই ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার মত ব্যাপার হ’লেও হ’তে পারে। ব্যাপারটা ঠিক ওইরকম, যেখানেই দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই; পাইলেও পাইতে পারও অমুল্য রতন’! FB-কে আমি ওই চোখে দেখি। এটা একটা খুব শক্তিশালী মাধ্যম। যার মাধ্যমে ইচ্ছে করলেই অমুল্য রতন পাওয়া যেতে পারে। হয়তো দোলনের এই প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে অনেক সিরিয়াস পাঠকের সিরিয়াস ও উন্নত উত্তর বেরিয়ে আসতেও পারে। আর এখানেই দোলনের ও ফেসবুকের স্বার্থকতা। আমিও সেই অপেক্ষায় রইলাম। আর সেই জন্যই দোলনের এই প্রশ্নের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমার লেখাটাকে আমার Timeline-এ পোষ্ট করলাম।

সাধারণ মানুষ তো সত্যিই শক্তিমান। আর শক্তিমান বলেই তো পৃথিবীতে যা কিছু অচলায়তনের পরিবর্তন ঘটেছে, ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। অহংকারী ক্ষমতালিপ্সু মানুষ সাধারণ মানুষের শক্তির কথা জেনেও ক্ষমতার মোহে তা’ ভুলে যায় এবং সাধারণ মানুষকে ক্ষমতার চাবুক দেখিয়ে দাবিয়ে রাখে বা রাখতে চায়। ভাবে এ-তাদের পৈতৃক অধিকার। তারা ভুলে যায় যে, সাধারণ মানুষ চিরদিন ঘুমিয়ে থাকে না।

কিন্তু এই সাধারণ মানুষের শক্তি কতটা ঠিক ও স্থায়ী?

সবচেয়ে মজার জিনিস সাধারণ মানুষ নিজেই জানে না যে তাদের এই শক্তি মিথ্যে ও ক্ষণস্থায়ী! তারা যেমন চিরদিন ঘুমিয়ে থাকে না এটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি সত্যি, জেগে উঠেই এরা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঠিক দম দেওয়া কলের পুতুলের মত। যতক্ষণ দম ততক্ষণ এরা জেগে থাকে। তাদের এই ক্ষণস্থায়ী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে থাকা নোতুন আর এক অহংকারী ক্ষমতালিপ্সু শক্তির জন্ম হয়। সাধারণ মানুষ চিনতেই পারে না এই ভয়ংকর শক্তিকে। তারপর এই শক্তি ক্ষমতা লাভের পর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে, শক্তি বৃদ্ধির স্বার্থে, সম্পদ বৃদ্ধির স্বার্থে, কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ মানুষের শক্তির মধ্যে বিভাজনের বীজ বপন করে এবং সেই অগ্ন্যুৎপাতের মত শক্তিকে আবার হিমশীতল কবরে নিমজ্জিত করে। দম শেষ হওয়া পুতুলের মত সাধারণ মানুষের সেই শক্তি নিজেদের মধ্যে অবিরাম লড়াই করতে করতে নিস্তেজ হ’য়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবার কোন এক ছদ্মবেশী পরিত্রাতার হাত ধ’রে জেগে ওঠার অপেক্ষায়! শক্তিমান সাধারণ মানুষ নিজের এই ফাঁপা শক্তির ফাঁকিবাজিতে আজ বেহাল! কারণ ফাঁকি দিলেই পেতে হ’বে ফাঁকি! এই আমার মত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে অভিভূত শক্তিমান(?) সাধারণ মানুষরা সৃষ্টি ও ধ্বংস অনেক কিছুই করতে পারে। রাজার প্রতি অভিভূত ও সেবায় মগ্ন রাজার বিশ্বস্ত বাঁদরের মত রাজার গলায় কোপও বসিয়ে দিতে পারে।
লাতিন ভাষায় আছে, Vox populi vox dei, জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী, The voice of the people is the voice of the God. যা’ সমস্ত ‘সমাজ কো বদল ডালো’ তত্ত্বে বিশ্বাসী মানুষ মনে করে।

কিন্তু কথাটা কি সত্যি? কতটা সত্যি? 

‘Vox populi vox dei’ নয় Vox expletory vox dei (২)-তে এর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

ক্রমশঃ
( লেখা ৭ই ডিসেম্বর' ২০১৩ )

প্রবি সমাচার ১২

আমরা কোথায় আছি!? কোন দেশে বাস করছি!? আমাদের মধ্যে কি একজন রাষ্ট্রপ্রধান দরকার যে প্রয়োজন হ'লেই সাদা ঘোড়ায় চ'ড়ে বসবে!? আর সাদা ঘোড়ায় চ'ড়ে বসেই হত্যা লীলায় মেতে উঠবে!? সাদা ঘোড়ায় চড়া মানেই নাকি রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠা!? এ আবার কেমন ধরণের চাহিদা!? এ আবার কোন ধরণের মানসিকতা!?
কেন এমন কথা মনে হ'লো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম। ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে, বাড়িতে দুটো টিভি। দুটো টিভি-ই না চালাবার কারণে নষ্ট হ'তে বসেছে। তবুও মাঝে মাঝে কখনো সখনো একটা টিভি চালাই। তেমনি মাঝে মাঝে কখনো সখনো চালাবার দৌলতে টিভিতে করোনা সংক্রান্ত খবর প্রচারিত হচ্ছে। প্রচারিত হচ্ছে ওষুধ, অক্সিজেন, হাসপাতাল সংক্রান্ত খবর। আর তার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে এই করোনা মহামারীর সময়ে ওষুধ নিয়ে, অক্সিজেন নিয়ে কালোবাজারি।

এই কালোবাজারির খবর নতুন কিছু নয়। গা স'য়ে যাওয়া খবর এই দেশে। কিন্তু অবাক লাগে যখন দেশ এক ভয়াবহ মারণ রোগে আক্রান্ত; যে রোগের মোকাবিলায় টিভির খবর অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য ডাক্তার, নার্স, ওষুধ, অক্সিজেন, হাসপাতালের শয্যা ইত্যাদির যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই অথচ সেই অপর্যাপ্ত ওষুধ আর অক্সিজেন নিয়ে যখন কালোবাজারির খবর প্রকাশিত হ'তে দেখি তখন ভাবি আমরা কোন সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি!? এ কোন দেশ!? এ কোন সভ্যতা!? এ কোন শাসন ব্য্যবস্থা!? এ কোন ভয়ংকর সময় যখন এই মহামারীর সময়েও মানুষ নির্দ্বিধায় নিশ্চিন্তে মানুষের ওষুধ নিয়ে কালোবাজারি করতে পারে!? এরা কি রক্ত মাংস দিয়ে গড়া মানুষ!? এদের মধ্যে তাহ'লে মনুষ্যত্ব, বিবেক, মানবিকতা ব'লে কিচ্ছু নেই!? এতটাই পাষণ্ড নরাধম!? এরা বহাল তবিয়তে এই ঘৃণ্য কাজ করতে পারে!? এদের ভয় ব'লে কিচ্ছু নেই!? শাসন ব্যবস্থার রক্তচক্ষুকে এরা পরোয়া করে না!? অবশ্য এইসমস্ত মানুষ ও বিষয়ের ক্ষেত্রে শাসন ব্যবস্থার রক্তচক্ষু ব'লে যদি কিচ্ছু অবশিষ্ট থেকে থাকে এই দেশে।

যাই হ'ক, মন বলছিল তাহ'লে এর কোনও বিচার নেই!? এই নরাধমদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না!? কেন পারে না!? কোথায় বাধা!? দেশের প্রধানদের কোথায় অসুবিধা!? তাহ'লে কবে তাঁরা মানুষকে বাঁচাবে!? দু'মুঠো খেতে দিতে পারে না, পরণে বস্ত্র দিতে পারে না, মাথার ছাদ দিতে পারে না, মানুষের প্রাথমিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান জোগাড়ের জন্য ব্যবস্থা ক'রে দিতে পারে না, কোনরকমে দিন গুজরান ক'রে চলে মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শরীর-মন বেচে তথাপি তাদের এই মহামারিতে বেঁচে থাকার জন্য ওষুধ, অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও কালোবাজারিদের জন্য তা পাওয়া হ'য়ে ওঠে না, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় মানুষ কিন্তু এই কালোবাজারী পাষন্ড নরাধমদের বিরুদ্ধে কঠোর দন্ডের কোনও ব্যবস্থা নেই সরকারের পক্ষ থেকে!!!!!!!

তাই মন ব'লে ওঠে এমন একজন কি রাষ্ট্রপ্রধান পাবো না যে সাদা ঘোড়ায় চড়ে এই করোনা মহামারীর সময়ে সাধারণ অসহায় গরীব দুঃস্থ মানুষকে বাঁচাবার জন্য আবির্ভূত হবে! আর আবির্ভূত হ'য়ে এই কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ যম হ'য়ে, শয়তান কিলবিসের মত ক্ষমাহীন সাক্ষাৎ মৃত্যু হ'য়ে দেখা দেবে!? আর অসহায় মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, গরীব দুঃস্থ মানুষ, সাধারণ সরল বোকা মানুষ বাঁচবে এই মহামারী মৃত্যুর হাত থেকে।
( লেখা ১২ইমে' ২০২১ )

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো ৮

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো (৭)

এসির ঠান্ডা হাওয়ায় ধীরে ধীরে ঘরের গরম হাওয়া বদলে যেতে লাগলো; বদলে যেতে লাগলো উপস্থিত অতিথিদের শারীরিক ভাষা। ঠান্ডা হাওয়ায় গরম চা সঙ্গে হালুয়া আর নমকিন জমে গেল। জয়ন্তদা তুলশীদাকে লক্ষ্য ক'রে বললো, ঈশ্বরের কথা তখনই মনে পড়ে যখন মানুষ বিপদে পড়ে, সমস্যায় পড়ে! আমি বললাম, "জো সুখ মে সুমিরণ করে, দুঃখ কাহে কো হৈ।"

এইখানেই যত সমস্যা মানুষের! মানুষ যখন সুখে থাকে, আরামে থাকে তখন ঈশ্বর তো দূর কি বাত নিজের আপনজনদের কথায় মনে রাখে না। বুঁদ হ'য়ে থাকে আপন ফুর্তির নেশায়! কিন্তু মানুষ ভুলে যায় যে কথা তা হ'লো "চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।" যেদিন যখন খারাপ সময় আসে তখন একসঙ্গে বহু সমস্যার মেঘ মাথায় ভেঙে পড়ে! তখন মানুষ হ'য়ে পড়ে দিশেহারা। কি করবে, কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে ভেবে কুল পায় না! পাগলের মত হাতড়াতে থাকে, খড়কুটোর মত হালকা পলকা জিনিসকে ঝাপটে ধরেও বাঁচতে চায়! আর সেই অসহায় অবস্থার সুযোগও নিয়ে নেয় কিছু নরাধম! পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে।

আনন্দের দিনগুলি খুব দ্রুত কেটে যায়! রাত কেটে দিন আসে দিন কেটে রাত তেমনি দুঃখের পরে আসে সুখ, সুখের পরে দিন। আনন্দ শেষে হাজির হয় নিরানন্দ, জীবনী শক্তি হয় ক্ষীণ! যেদিন খারাপ সময় আসে সেদিন কেন একসঙ্গে আসে বহু সমস্যা!? বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে যেমন মেঘের সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি একটু একটু সমস্যা জমতে জমতে সমস্যার পাহাড় ভেঙে পড়ে মাথার উপর একদিন আর হঠাৎই ভেঙে পড়ে! জীবনের সব ক্ষেত্রেই সমস্যার ছোবল! ঘরেবাইরে ভাইয়ে-ভাইয়ে, ভাই-বোনে, বোনে-বোনে, স্বামী-স্ত্রীতে, বন্ধুতে বন্ধুতে, সন্তান আর পিতামাতা, মালিক-কর্মচারী ইত্যাদি নানা সম্পর্কের মধ্যে শুধু ফাটল আর ফাটল, ফাটল আর ফাটল!!!!! কেউ কারো থেকে কম নয়! স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি, মাঠ-ময়দান, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সব জায়গায় সবার মধ্যে অসহযোগিতার বাতাবরণ! কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? মানুষ না সমাজ!? সমাজ না মানুষ!? কার পরিবর্তনের প্রয়োজন? কার জন্য বদলের ডাক!

মানুষ কো বদল ডালো নাকি সমাজ কো বদল ডালো? কোনটা!
ক্রমশ:
( ২৩শে মে' ২০১৯ )

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো (৬)

পথ কোথায়! পথ কোথায়! সত্যিই তো পথ কোথায়!? যেখানেই যায় সেখানেই হায় হায়, ঠাঁই ঠাঁই, নাই নাই, খাই খাই-এর সমুদ্রসমান খাই! দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বিস্ময়ে ব'লে উঠলো শিল্পী জয়ন্ত, সত্যিই তো! আমি বললাম, একটা গান ধরুন তো 'কি যে করি! পথ নাহি পাই! ঘুরে মরি ঘানি চারিপাশে, কেহ কোথাও নাই! কথাটা ভালো লাগলো না জয়ন্তদার। যুৎসই ব'লে মনে হ'লো না পঙক্তিগুলি! আপনিও একথা বলছেন!? না না আপনার মুখে একথা মানায় না। বিরক্তিতে ছটফট ক'রে ব'লে উঠলো জয়ন্তদা। আমি হেসে বললাম, এ যে বাস্তব! নির্ম্মম সত্য! জয়ন্তদা বললো, না, আমি মানতে পারলাম না। এটা আপনি ঠিক বলেননি। আপনার কথা মানি; আমরা জানি আপনি অনেক দূরের দিকে তাকিয়ে গভীরে গিয়ে কথা বলেন। হয়তো আমরা ধরতে পারি না। হয়তো কেন? সত্যি সত্যিই অনেকেই পারে না! আর তাই আপনাকে মেনে নিতেও পারে না! অনেকক্ষন ধ'রে চুপ ক'রে শুনছিল তুলসীদা। এমনিতেই প্রায় সময় চুপ ক'রেই থাকে। খুব কম কথা বলে। কথা যখন জমে ওঠে তখন পড়ে ঘুমিয়ে! কিন্তু ভালো শ্রোতা! যখন মুখ খোলে অল্প কথায় বোমা ফাটায়! জয়ন্তদার দিকে তাকিয়ে বললো, ইগো প্রবলেম থাকলে কাউকে মেনে নেওয়া কঠিন। জয়ন্তদা সহজ সরল ভাবে ব'লে উঠলো, আমার প্রকাশদার সঙ্গে কোনও ইগো প্রবলেম নেই। তবে প্রকাশদার ঐ কথাটা 'কেউ নেই' মানতে পারছি না। তুলশীদা হেসে বললো, ও'টা আপনার প্রবলেম। কেন? কিসের আমার প্রবলেম? আমার কোনও প্রবলেম নেই। আমি বলতে চেয়েছি, কেউ নেই মানে কি? প্রকাশদা তো আছে। প্রকাশদার কাছে আমরা আসি, ইষ্টপ্রসঙ্গ নিয়ে গল্প করি, নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি, সৎসঙ্গ নিয়ে পরস্পর মত বিনিময় করি, মনে জোর পায়, বিশ্বাস জন্মায়, হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখতে পায়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছবি আঁকি, কি করবো না করবো তার একটা দিশা পায়। তাই না? তাহ'লে 'কেউ নেই' এই কথাটা কি ঠিক? এক নিঃশ্বাসে একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে থামলো জয়ন্তদা। কথাগুলোর মধ্যে একটা ঝাঁঝ ফুটে উঠলো। সবাই চুপ ক'রে রইলো কিছুক্ষণ।

ইতিমধ্যে চা, স্ন্যাকস দিয়ে গেল সহধর্মিনী। যাবার সময় এসিটা চালিয়ে দিয়ে গেল! ঠান্ডা বাতাসে ধীরে ধীরে ঘরের গুমোট গরম কাটতে লাগলো। সেই গুরুভাই যার ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল নাম অভিজিৎ চ্যাটার্জি চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, যাক গিয়ে, আপনি তো বলেন সবসময় যার কেউ নেই তার ঠাকুর আছে। আমি বললাম, হ্যাঁ সেতো একশো ভাগ সত্যি কথা। কিন্তু সেই একশোভাগ সত্যি কথাটার মূল্য কে দিচ্ছে!? যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তারা সবাই তো কোথাও না কোথাও কোনও না কোনও ভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে দয়া পাচ্ছে, ঈশ্বর যে আছেন, ঠাকুর যে যার কেউ নেই তার পাশে বিপদের দিনে ছিলেন সেই দয়ার একশোভাগের এক ভাগ ফিরিয়ে দিয়েছে? ফিরিয়ে দিলে আজ মানুষের এই অবস্থা হ'তো!? সমাজের এই অবস্থা হ'তো!? কি দেননি তিনি!? কি দেওয়ার আর বাকি আছে তাঁর মানুষকে, মানুষের পৃথিবীকে!?
ক্রমশঃ

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো (৫)

গুরুভাইকে 'তুমি একা, কেউ নেই পাশে' বলাতে গুরুভাইয়ের মুখটা একটু বিবর্ণ হ'য়ে গেল মনে হ'লো! সত্যিই তো কারই বা ভালো লাগে এই কথা শুনতে। কিন্তু সত্যিই কি গুরুভাই একা! গুরুভাইয়ের পাশে কেউ নেই এই কথা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি সত্যি গুরুভাই একা নয়! গুরুভাইয়ের মত মানুষ প্রচুর আছে! তবে তারা একত্রে একজায়গায় নেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, রয়েছে ঘরে ঘরে ছুপা রুস্তমের মত! সবাই সবাইকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু জানতে পারছে না সেও তার মত একা, নিঃসঙ্গ! ছুটে বেড়াচ্ছে দু'পায়ের উপর ভর দিয়ে চার পায়ে জীবের মত! সভ্যতার আলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তবুও কোথায় যেন অসভ্যতার ঘোর অন্ধকার ঢেকে ফেলেছে সমাজ জীবন, ব্যক্তি জীবনের আকাশ! সবাই ছুটছে এই ঘোর অন্ধকারের সংকীর্ণ পথ বেয়ে! শিক্ষিত-অশিক্ষিত, লেখাপড়া জানা-না জানা, গরিব-বড়লোক, মূর্খ-পন্ডিত, সুস্থ-অসুস্থ, সুখী-অসুখী সবাই ছুটছে! ছুটছে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আলো ভেবে আরও গভীর অন্ধকারের দিকে মরীচিকার পেছনে জল ভেবে যেমন মানুষ ছোটে! এক সীমাহীন অস্থিরতার তীব্র কটু গ্যাস সমাজের মাথার উপরে বাসা বেঁধেছে! সবাই এই তীব্র অম্ল কটু গ্যাস সর্বাঙ্গে মেখে নিয়ে নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে একাকার হ'য়ে ছুটে চলেছে! ছুটে চলেছে সবাই সবাইকে পিছনে ফেলে! সবাই সবাইকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে, ল্যাং মেরে, কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছে! কে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্টে গেল কারও সময় নেই মুখ ঘুরিয়ে দেখার! যদি কারো ইচ্ছেও থাকে মুখ ঘুরিয়ে দেখার সেও পরিস্থিতি পরিবেশের চাপে উচ্ছেদ হ'য়ে যাবে! আর উচ্ছেদ হ'য়ে যাবে দূরের লোকের চেয়েও কাছের লোকের চাপে রাতারাতি!

এই অবস্থায় কোথায় যাবে দুর্দশাগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্থ সাধারণ মানুষ! কার কাছে যাবে? কোথায় যাবে? এই অসহায় মানুষদের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য জন্ম হয়েছে, হচ্ছে প্রতিনিয়ত হাজারো মতবাদ! জন্ম নিচ্ছে নিত্য নুতন নুতন রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে রাজনৈতিক দল আর তার হাজারো জনদরদী নেতানেত্রী! কোথায় কোন দল, কোন নেতা বা নেত্রীর কাছে যাবে আম জনতা! এই নতুন নতুন মতবাদ নিয়ে, আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নের প্যাকেজ নিয়ে হাজির হওয়া রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাদের কাছে যাদের দুঃখ-দারিদ্র, কষ্ট-যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অভাব-অভিযোগ ইত্যাদি নিজেদের অর্থ, মান, যশ-এর উন্নয়নের হাতিয়ার সেই সমস্ত দল ও নেতানেত্রীদের কাছে যাবে!? এ তো সেই বাঁশ কেন ঝাড়ে আয় মোর---------" অবস্থা! সেধে হাতে ধ'রে সমস্যাকে, বিপদকে নিজের জীবনে, নিজের ঘরে ডেকে আনা! এ তো আর মিথ্যে নয়, নেতার চারপাশে ঘুরে বেড়ানো মানুষ মাত্রই জানে যে আম মানুষ যখন বিপদে পড়ে নেতাদের কাছে যায় তখন সেই নেতা হাসতে হাসতে শাকরেদদের দিকে তাকিয়ে বলে, নিশ্চয়ই শালা ফাটা বাঁশে-----আটকে গ্যাছে, তাই এসেছে!

কোথায় যাবে মানুষ!? সমস্যায় পড়ে যেখানেই যাবে তা সে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, ক্লাব-প্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, নেতা-পুলিশ, ধর্ম-রাজনীতি, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এলাকার দাদা কিংবা শিক্ষক যে বা যাই হ'ক না কেন সেখানেই গিভ এন্ড টেক পলিসির শিকার হ'তে হবে! দাও আর নাও! তবে ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে! আর ব্যতিক্রম মাত্রই ব্যতিক্রম! সার্বজনীন দূর অস্ত! যেখানেই যাবে সেখানেই দ্বন্ধ আর ঝগড়া-মারামারি! কোন্দলে কোন্দলে ভরে গ্যাছে ঘর-বাড়ি, অফিস-কাছারি, ব্যবসা-বাণিজ্য, মাঠ-ময়দান, স্কুল-কলেজ, পার্টি অফিস-বিধানসভা-লোকসভা, মন্দির-মসজিদ-গির্জা ইত্যাদি ইত্যাদি গোটা পৃথিবীর আকাশ-বাতাস! দম বন্ধ করা গুমোট পরিবেশে হাঁসফাঁস করছে মানুষ! পথ কোথায়! পথ কোথায়!
ক্রমশঃ
( লেখা ১৪ই মে' ২০১৯ )

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো (৪)

কথা হচ্ছিলো ভাবার অধিকার নিয়ে। খেটে খাওয়া, দিন আনি দিন খাওয়া, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন গুজরান করা, নুন আনতে পান্তা ফুরোনো, শরীর বেচে, মন বেচে, আত্মা বেচে খাওয়া মানুষ মানুষই নয় এই সভ্য দেশে! তাদের জন্য যেমন ভাবার কোনও দরকার নেই সরকার, নেতা বা দেশের বিদ্ধজনদের ঠিক তেমনি তাদের অর্থাৎ এইসমস্ত অসহায় মানুষদের নেই কোনও ভাববার অধিকার। গরিব মানুষ, না খেতে পাওয়া মানুষ, নিম্ন বিত্ত মানুষ তোমরা আবার কি ভাববে? তোমরা শুধু ভাবো সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও নেতা এবং রেডিও-টিভিতে, বই-পুস্তকে এলিট সম্প্রদায় যা বলবে তাই তুমি বলবে, যা করবে তাই তুমি করবে, যা দেখাবে তাই তোমায় দেখতে হবে!!!! আলাদা ক'রে কিছু ভাবতে যেও না! নতুবা কলকে পাবে না এই সংসারে, এই সমাজে।

তাই, গুরুভাইকে বললাম, তাহ'লে কলকে পাবো কি করে? কি উপায়? সবাই যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহ' লে কি নিয়ে বা কাকে নিয়ে বাঁচবো। কার কাছে দেব বাড়িয়ে হাত আশায়-ভরসায়? গুরুভাই এইকথা শুনে চুপ ক'রে রইলো। আর এক গুরুভাই সংগীত শিল্পী জয়ন্তদা গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে বললো, প্রকাশদা, বাইরে এই ভয়ঙ্কর গরম, গা জ্বলে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে এখুনি বুঝি ফেটে যাবে মাথার চাঁদি তবুও সহ্য ক'রে বেঁচে আছি! কিন্তু মানুষের লোভের গরম তাপ লোভের থার্মোমিটারের সর্বোচ্চ পারা ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীর চাঁদি ফাটিয়ে দিয়েছে! লোভের গরম ফুটন্ত লাভা গলে গলে ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম শহরের জনপদ ছাড়িয়ে আর গোটা পৃথিবীকে জড়িয়ে নিয়েছে, নিচ্ছে আষ্টেপৃষ্টে! চোরের দেশে আর কলকে পেতে হবে না! এর থেকে বরং কলকে-কে চিরদিনের সাথী ক'রে নিন! আর গেয়ে উঠুন, এক টানেতে যেমন তেমন দুই টানেতে সুখী, তিন টানেতে রাজউজির, চার টানেতে রুগী! আমি হাসতে হাসতে গেয়ে উঠলাম এক কলি। তারপর পরিবেশের গরম হওয়া একটু হালকা করার জন্য গাইলাম, "দম মারো দম, মিট জায়ে হাম; বোলো সুবা শাম হরে কৃষ্ণ হরে রাম"। তারপর বললাম, সে তো সত্য কথা। মানুষের লোভের শেষ নেই, অন্তহীন লাগামহীন লোভ! জয়ন্তদা বললো, কত টাকা দরকার মানুষের!? থরে থরে টাকা সাজিয়ে রেখে দিয়েছে ঘরের আলমারিতে, ব্যাংকে, দেশের ব্যাংক ছাড়িয়ে বিদেশের ব্যাংকে! কি অদ্ভুত অদ্ভুত দেশ পৃথিবীর বুকে আছে যারা অন্য দেশের অসৎ লোকেদের দ্বারা দেশকে নাঙ্গা, লুলা, ল্যাংড়া ক'রে দিয়ে রোজগার করা অসৎ পথের টাকা সযত্নে বুক দিয়ে আগলে রাখার, রক্ষা করার ব্রত নিয়েছে! লোক অসৎ হয় একটা দেশ অসৎ হয়! আমি বললাম, দেশ চালায় কারা? মানুষ! সেই মানুষই যদি অসৎ হয়, দেশের প্রথম সারির মানুষ যারা দেশকে পরিচালনা করে, দেশের মানুষকে দিশা দেখায় তারা যদি মানুষ না হয়, আদর্শবান না হয়, আদর্শ কেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত না হয়, ঈশ্বরপ্রেমী না হয় তাহ'লে আপনি তাদের কাছ থেকে ত্রুটি হীন কাজ, চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা, দূরদৃষ্টি পাবেন কি করে? আপনি কি জানেন ঠাকুর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে কি বলেছিলেন? বলেছিলেন, দাস দা, স্বরাজ স্বরাজ করছেন, দাশ স্বাধীন হ'লে কাদের উপর দেশের দায়িত্ব দেবেন? ঘোড়া গাড়ি টানে নাকি গাড়ি ঘোড়া টানে? ঠিক তেমনি দেশ মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় নাকি মানুষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়? এই কথায় জয়ন্তদা বললেন, তাই বলে দেশের সমস্ত মানুষতো আর অসৎ নয়! সে ঠিক কথা, আমি বললাম। কিন্তু দেশ পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত, যারা দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তারা যদি আপাদমস্তক শরীরে-মনে-আত্মায় সৎ না হয়, তারা যদি অসৎ-এর পূজারী হয় তাহ'লে যা হবার তাই-ই হয়! মহাভারতের পুনরাবৃত্তি হয়! ঐ যে আপনি প্রথমে বললেন, পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে! ঐটাই ঠিক কথা!

জয়ন্তদা বললেন, কত টাকা দরকার একজনের!? এত টাকা-আ-আ-আ! ইচ্ছা করলেই কত মঙ্গলব্রত করতে পারে! মানুষের জন্য, মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য কত ভালো ভালো কাজ করতে পারে! টাকাগুলো কাগজ হ'য়ে পড়ে থাকে ঘরে, আলমারিতে, ব্যাংকে! কত বড় মাছ খাবে!? ১০০গ্রাম, ২০০গ্রাম, ৫০০গ্রাম ওজনের মাছ খাবে! আর কতবড় খাবে!? হতাশায় রাগে বিরক্তি ঝরে পড়লো জয়ন্তদার চোখে মুখে। শিল্পী মানুষ, এমনিতেই শান্ত, রাগটাগ নেই বললেই চলে আর থাকলেও সহজে প্রকাশ পায় না আর পেলেও বলার মধ্যে থাকে না কোনও উত্তেজনা, কোন আক্রোশ! সেই মানুষও যখন এমন কথা বলে তখন ভাবি, কেমন ক'রে বোঝায় তারে! এ ভারী কঠিন কাজ। এর থেকে বরং সোজা তাকে গানের কথা বলে ঠান্ডা করা। তাই হেসে বললাম, আচ্ছা আমি যদি বলি আপনাকে, 'কেমন ক'রে গান করো হে গুণী! আমি শুনি!" তারপর একটু পরিবেশ হালকা করার জন্য বললাম, আপনি বিয়ে বাড়িতে দেখেছেন কত লোক খাবার নষ্ট করে! কেন করে!? খেতে পারবে না জেনেও পাতে নেয় তারপর ফেলে রেখে উঠে পড়ে! কেন? আমিও দেখেছি, আপনিও দেখেছেন এ দৃশ্য নেমন্তন্ন বাড়িতে সবসময়! পরিবেশন করতে এলে পাতে জায়গা নেই, পেটে জায়গা নেই অথচ নিয়ে যাচ্ছে! পাত ভর্তি ক'রে নিচ্ছে কখনও বা পাশের জন জোর ক'রে নেওয়াচ্ছে আর তখন চুপ ক'রে থাকছে পরে অবহেলায় অবলীলায় পাত ভর্তি খাবার ফেলে দিয়ে উঠে যাচ্ছে নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো হাসতে হাসতে! এটা কেন হয়? কেমন ক'রে মন চায় এত খাবার নষ্ট করার!? বাড়িতে কি নষ্ট করে? করে না। কারণ বাড়িতে মাপা খাবার। আর নষ্ট করলেও অল্প বিস্তর, হঠাৎ বড়লোক হবার অহংকারে তা করে। ঠাকুর বলেছেন, যারা Upstartar অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক তারা হীনমন্যতায় ভোগে! তারা অতীতকে মনে রাখতে চায় না! তারা সবসময় আশঙ্কায় থাকে, এই বুঝি সবাই অতীত জেনে গেল! এটা একটা বিশৃঙ্খল অভ্যাস, নেওয়ার লোভ! নাও, নাও আরো নাও! গরীব বড়লোক সবারই এই রোগ আছে। যে যেমন সুযোগ পায় সে তেমন কোপ মারে! পুকুর চুরিও চুরি আবার স্কুলের চক চুরিও চুরি! তবে চুরির প্রকারভেদ অবশ্যই আছে। এই যে নেওয়ার অভ্যাস এই অভ্যাস জানতে-অজান্তেই ঘটে যাচ্ছে! অবশ্য বদমাশ মানুষও আছে যারা পাহাড় বানাবে ব'লে নেবে! তা' সে ভোগ হ'ক আর না হ'ক, নষ্ট হ'ক আর যাই হ'ক নেবে! আমার হকেরটা, হকের বাইরেটা সবটাই আমি নেব! কি করবেন আপনি? এ হ'লো আম আমাশা রোগ! পিচিত ক'রে বেরিয়ে পড়ে। 

এছাড়াও আপনি দেখবেন, বাড়িতে কেউ এলে তা সে আত্মীয়স্বজন, অতিথি বা বন্ধু বান্ধব যেই হ'ক তাদের অতিথি আপ্যায়নের জন্যে খাবার দিলে প্লেটের সেই খাবার অল্প খেয়ে এঁটো ক'রে বাকি খাবার ফেলে রেখে দেবে! এটা তাদের স্ট্যাটাস মেইন্টেনের মধ্যে পড়ে! একবারও ভাবে না তাদের মুখের এত এঁটো খাবার, এত মিষ্টি কে খাবে! কত কষ্ট ক'রে রোজগার করা পয়সায় খাবার কিনে এনেছে! এ বাঁহাতি টানা মালের পয়সায় কেনা খাবার নয়! এ তো জেনেবুঝেই পয়সার অপচয়! তারা কি ভাবে? তারা কি ভাবে অল্প খেয়ে, আধা খেয়ে গৃহকর্তাকে তারা ধন্য করেছে? তাদের এঁটো খাবার তারা চলে যাবার পরে বাড়ির লোকেরা খাবে? বিশেষ ক'রে তা হ'য়ে থাকে নিম্ন বিত্তের ঘরে উচ্চ বিত্তের আগমনের ঘটনায়!

যাই হ'ক ভাবার কথা নিয়ে শুরু হয়েছিল লেখাটা; এই ভাবার কথায় বলা যেতে পারে গরিবের কথা মুখে বলার জন্য বহু মানুষ আছে, এমনকি গরীব মানুষও আছে! কিন্তু গরীবের পাশে দাঁড়ানো বা গরীবের জন্য কিছু করার জন্য, নিদেন পক্ষে ভাবার জন্য তারা নয় বরং গরীবের গরীবি ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে বড়লোক হবার জন্য তারা দিনরাত প্রাণপাত করে। 'ম'-কার সম্বন্ধীয় সব নেশার চেয়েও টাকা কমানো, ক্ষমতা দখল একটা তীব্র নেশা! যে নেশার উইথড্রয়াল-এর রূপ ধ্বংসাত্মক টাইফুন, আয়লা, ফণীর ভয়ঙ্কর রূপকেও হার মানায়! তাই আম আদমী, গরীব আদমী তোমার কথা ভাবার সময় কোন রাজনৈতিক দল, নেতা বা এলিট সম্প্রদায়ের নেয়!

হে গুরুভাই আমার! তোমার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা চলবে কি চলবে না এত পাতি ব্যাপার ভাববার সময় তথাকথিত 'সমাজ কো বদল ডালো' আন্দোলনের নেতাদের, সরকারের, সমাজপতিদের নেই। যদি কখনও ভাববার সময় হয় তবে জেনো নিশ্চিত ডাল মে কুচ কালা! তোমার ভাবনা তোমাকেই ভাবতে হবে গুরুভাই! এটাও মনে রেখো তোমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য এই যে ভাবার লড়াই এই লড়াইয়ে তোমার পাশে তোমার গুরুভাইয়েরাও নেই!!!!!!!

তাহ'লে কে আছে তোমার পাশে বন্ধু!? বন্ধু নেই, সরকার নেই, রাজনৈতিক দল নেই, নেতা নেই, সমাজপতি নেই, নেই কোনও বিদগ্ধ সমাজের প্রতিনিধি! গভীর অন্ধকারের মহাশূন্যতার মাঝে তুমি একা! একা!! একা!!! কে আছে!
ক্রমশঃ।
( লেখা ১২ই মে' ২০১৯ )

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো! (৩)

এর আগের সমাজ কো বদল ডালো(২)-এ লিখেছিলাম 'কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ'! টোটো চালকদের পৌষ মাস হ'লেও রিক্সা চালক, সাইকেল, রিক্সা রিপেয়ারিং-এর দোকানগুলোর অবস্থা সর্বনাশ। সেখানে লিখেছিলাম সর্বনাশের অন্যতম প্রধান কারণ টোটো অর্থাৎ টোটো ছাড়াও আরও কারণ আছে। কি সেই কারণ? রিক্সার ব্যবসার বারোটা বাজার পেছনে যেমন টোটো টোটকা কাজ করেছে ঠিক তেমনি সাইকেল দোকানেরও সাইকেল বিক্রির ব্যবসায় নেবে আসা অন্ধকার, ঘন অন্ধকারের পেছনে আছে সরকারী উন্নয়নের পরিকল্পনা! গুরুভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আপনি অন্ধকার বলছেন? আপনার কোথায় অসুবিধা? গুরুভাই বললেন, সাইকেল বিক্রি একেবারে কমে গেছে। কেউ আর সাইকেল কিনছে না। তাই সাইকেল পার্টসের প্রয়োজনও কমে গেছে। অর্ডার আর দেয় না আগের মত। আমি বললাম, কেন? কেন কিনছে না?
এই কথায় যা জানা গেল তা'তে বিস্মিত হ'য়ে গেলাম এই ভেবে যে সরকারী সিদ্ধান্ত যদি এমন হয় তাহ'লে ছোট মাছেদের পক্ষে বড় মাছেদের মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা শুধু কঠিন নয়, একেবারেই অসম্ভব! বড় বড় মাছেদের পেটে যেতেই হবে ছোট মাছেদের যদি তাদের সুরক্ষিত পুকুরে স্থানান্তরিত করা না হয়! বড় মাছ আর ছোট মাছেদের একসঙ্গে একই পুকুরে রাখলে অস্তিত্বের সংকট অনিবার্য! দু'জনকেই রাখতে হবে দু'জনের থাকার মত ক'রে উপযুক্ত জায়গায়!
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিনা পয়সায় সাইকেল দেবে। সেই সাইকেল সরাসরি অর্ডার দেওয়া হয়েছিল সাইকেল কোম্পানিকে আর কোম্পানি থেকে সাইকেল স্কুলের মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের হাতে। ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা সাইকেল কেনার জন্য যে দোকানে যেত তার আর দরকার হ'লো না। হাজার হাজার সাইকেল বিক্রি হ'লো কিন্তু তার প্রভাব পড়লো না দোকানদারদের উপর। দোকানদার বসে রইল দোকান খুলে আর উন্নয়নের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্যে ব্যবসার লেনদেন হ'লো সরাসরি সাইকেল নির্মাতাদের সঙ্গে! যদি এলাকায় এলাকায় দোকানের মাধ্যমে সাইকেল কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হ'তো তাহ'লে আজ দোকানদারদের অবস্থা এত করুণ অবস্থায় নেবে আসতো না, ওষ্ঠাগত হ'তো না প্রাণ! আর দোকানদার অক্সিজেন পেলে আমার গুরুভাইয়ের জীবনে এবং গুরুভাইয়ের মত অনেক ছোট ছোট সাপ্লাইয়ারের জীবনে নেবে আসতো না অন্ধকার, ভরে যেত না কার্বনডাই-অক্সাইডে জীবনের আকাশ! সাইকেল পার্টসের সাপ্লাই অন্ততঃ জীবনকে সামান্য হ'লেও রসসিক্ত ক'রে রাখতো গুরুভাইয়ের!
এ কেমন নীতি গ্রহণ!? কেমন উন্নয়নের পরিকল্পনা!? এ কেমন গোড়া কেটে আগায় জল দেবার মত বেকুবি ভালোবাসা!? উন্নয়নের সুফল সরাসরি পৌঁছোয় না নীচের তলায়! শুধুই চকচকে ঝকঝকে বকবক! আরও গভীরে, আরও বিস্তারে গিয়ে ভাবার প্রয়োজন কবে হবে!? সার্বিক উন্নয়নের স্পর্শ যদি তৃণমূল স্তরে না পৌঁছোয় তেমন উন্নয়নে আমার কি লাভ!? চকচক করলেই সোনা হয় না এ তো সর্বজন বিদিত! নিচের তলার কান্নাকে কি এইভাবে উপরি কথার চাপান আর সস্তা প্রগতি দিয়ে চিরদিন ভুলিয়ে রাখা বা দাবিয়ে রাখা যায় নাকি রাখা গেছে কোনোদিন!?
অনেকক্ষন ধ'রে একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছিল গুরুভাই! তারপর ঠান্ডা শরবতে চুমুক দিয়ে একটা তৃপ্তির আওয়াজ দিয়ে বললো, যাক গিয়ে কি আর করা যাবে দাদা! মনে রাখতে হবে, পড়েছো মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে! বললাম, সে তো না হয় বুঝলাম কিন্তু এখন কি করছেন? কি আর করবো দাদা! এই বয়সে নতুন কিছু করার মত মনের আর শরীরের জোর নেই, সুযোগও নেই, বললো গুরুভাই। আমি বললাম, যাই হ'ক একটা কিছু তো করতে হবে, খেয়ে পড়ে বাঁচতে তো হবে! এই শুনে গুরুভাই ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে বললো, যা ইচ্ছা দয়ালের! দয়াল ছাড়া, দয়ালের দয়া ছাড়া বাঁচার আর কোন উপায় নেই আমার, আমাদের মত মানুষদের দাদা! এ মাসে এখনও পর্যন্ত কোনও অর্ডার হাতে আসেনি! তাই এসব নিয়ে আর ভাবি না। আমাদের মত আম আদমিকে ভাবার কোনও অধিকার দেয়নি কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও সরকার।
ক্রমশ: ( লেখা ১১ই মে' ২০১৯ )