Powered By Blogger

Tuesday, May 9, 2023

খোলা চিঠি' (প্রথম পর্ব) গুরুভ্রাতা কমল নাইডু ও দেবব্রত সোমকে.

প্রথমে আমার 'রা' নন্দিত জয়গুরু জানাই।
আপনাদের দু'জনের উদ্দেশ্যে আমার এই খোলা চিঠি লেখার একটাই উদ্দেশ্য কমল নাইডু আপনি ফেসবুকে একটা প্রশ্ন পোষ্ট করেছিলেন। প্রশ্নটা হ'লো "ইষ্টপ্রতিষ্ঠা না আত্মপ্রতিষ্ঠা।"
এই প্রশ্নে অনেকেই উত্তর দিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, অবশ্যই ইষ্টপ্রতিষ্ঠা। আর বেশীরভাগ গুরুভাই আত্মপ্রতিষ্ঠার পক্ষেই তাদের রায় দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ইষ্টপ্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠা অটোমেটিক তার স্বাভাবিক ছন্দে জীবনকে ঘিরে ধরে। ঘিরে ধরে বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে। তাই মনে করি আত্মপ্রতিষ্ঠার কোনও প্রয়োজন নেই, নেই কোনও মূল্য। ইষ্টপ্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠা হ'য়ে যায়। আর আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রলোভনে যে বা যারা ইষ্টপ্রতিষ্ঠার বাহানা করে, করে ছল চাতুরী, দিনের শেষে সেই বাহানা, সেই ছল চাতুরী নিয়ে যায় জাহান্নামে নরকে। কিন্তু আত্মপ্রতিষ্ঠার বাসনা এমনই এক মানসিক ব্যাধি যা অন্তিমের জাহান্নাম নরকের ধার ধারে না।
যাই হ'ক এর মধ্যে একটা কমেন্ট চোখে পড়লো। গুরুভাই দেবব্রত সোমের কমেন্ট
"গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন হলে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা আর সংগঠনকেন্দ্রিক জীবন হলে আত্মপ্রতিষ্ঠা।"
কমেন্টটা আমাকে ভাবালো। নিয়ে গেল গভীরে।
আর তাই, গুরুভাই কমল নাইডু ও গুরুভাই দেবব্রত সোম-এর উদ্দেশ্যে আমার এই চিঠি। আর এই লেখার পিছনে আরও একটা মানসিকতা কাজ করেছে তা হ'লো কোটি কোটি গুরুভাইদের মধ্যে যারা বাঙালি এই বাংলা ও সারা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের কাছে কমল নাইডুর প্রশ্ন "ইষ্টপ্রতিষ্ঠা না আত্মপ্রতিষ্ঠা" এবং দেবব্রত সোমের উত্তর "গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন হ'লে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা আর সংগঠনকেন্দ্রিক জীবন হলে আত্মপ্রতিষ্ঠা"-র অন্তর্নিহিত সারমর্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরা। যদিও জানি ৯০ভাগ বাঙালি এসবের ধার ধারে না আর বোঝেও না। আর লেখা পড়া তো দূরের কথা। লেখার সঙ্গে যদি ছবি থাকে তাহ'লে আর কথা নেই, শুধু 'জয়গুরু'-র বন্যা। তবুও কথায় আছে আশায় মরে চাষা। আমি হ'লাম সেই চাষা, যে চাষ করবে কিন্তু ফসল ঘরে তুলতে ও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ আমি চাষা একা আর একা বোকা। তবুও লিখে যাই এই আশায় যদি একজনও পড়ে আর তার চোখ খোলে ও প্রচার করে।
প্রথমে বলি, আমার গুরুভাই কমল এমন একটা বিষয় তুলেছে যা নিয়ে বিশদ আলোচনার সুযোগ রয়েছে। কমল ভাই তুমি তো ছুঁড়ে দিলে সৎসঙ্গ জগতে তোলপাড় করা প্রশ্নটা আর এসে বিঁধল আমার চোখে আর যেই না উত্তর দিতে যাব তখনি দ্বিতীয় চোখে এসে বিঁধল আরও জটিল আরও অন্তর্নিহিত ইঙ্গিতপূর্ণ দেবব্রত সোম তোমার একটা উত্তরঃ
"গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন হলে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা।
আর সংগঠনকেন্দ্রিক জীবন হলে আত্মপ্রতিষ্ঠা।"
ভালো লাগলো দু'জনের প্রশ্ন ও উত্তর। অন্য সকলের উত্তরও ভালো লেগেছে। তবে তোমাদের ( তোমাদের তুমি ব'লে ফেললাম ব'লে কিছু মনে ক'রো না ) এ বিষয়ে আমার বক্তব্য তোমাদের খোলা চিঠির মধ্যে দিয়ে জানালাম এইজন্য যে তোমাদের প্রশ্ন ও উত্তরের গুরুত্ব যারপরনাই অসীম ও অনন্ত। আর তাই দেখা যাক আলোচনা কোনদিকে এগোয়।
প্রথমে আমি দেবব্রতর বিষয় নিয়ে দেবব্রতর সঙ্গে আমার আলোচনার অংশটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করছি তারপর আমি সেখান থেকে পরবর্তী পর্বে বিস্তৃত আলোচনায় যাবো।
আমি গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন দেখেছি ও দেখছি বহু; সঙ্গে সঙ্গে এও দেখেছি সংগঠন বিমুখ তাদের জীবন। সংগঠন ঠংগঠন তাদের ভালো লাগে না। শুধু ধর্ম ধর্ম গুরু গুরু আদর্শ আদর্শ ক'রে জীবন চালিয়ে যাওয়া এবং সাধারণ মানুষকে ভজিয়ে যাওয়া। সংগঠনকে রক্ষা করা, সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে চলা, সংগঠনকে শক্তিশালী করার ইচ্ছা আদৌও নেই; আছে শুধু তথাকথিত তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে সত্যকে অস্বীকার করা ও নিজের ত্রুটিকে ঢেকে রেখে তত্ত্ব কথা আউড়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে কি করণীয়?
আবার এটাও ঠিক সংগঠনকেন্দ্রিক হলেই যে গুরুকেন্দ্রিক হবে তাও বলা যাবে না। কিন্তু গুরুকেন্দ্রিক বহু সৎসঙ্গী আছে যারা 'সৎসঙ্গ' সংগঠনকে মানে না। তাহ'লে সেইসমস্ত সৎসঙ্গীদের কি বলা যাবে? তারা কি ঠাকুরকে ভালোবাসে না? তারা কি গুরুকেন্দ্রিক? তারা কি সৎসঙ্গী? আবার সংগঠনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে এমন সৎসঙ্গী তারা কি আত্মপ্রতিষ্ঠার তাগিদে করেছে? এমনতর বহু প্রশ্ন ভিড় ক'রে আসে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সংগঠন নিয়ে যখন কথা এত হচ্ছে যেমন সংগঠন ভালোবাসে ঠাকুর ভালোবাসে না বা ঠাকুরকে ভালোবাসে সংগঠন ভালোবাসে না বা ঠাকুর ও ঠাকুর সৃষ্ট সংগঠন উভয়ই ভালোবাসে তখন পরিস্কার হওয়া ভালো যে তা ঠাকুর সৃষ্ট সংগঠন কোনটা?
এককথায় এর উত্তর 'সৎসঙ্গ'।
তাহ'লে যারা ঠাকুর, গুরু বা আদর্শ মানে, যাদের জীবন ইষ্টপ্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত অথচ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' সংগঠন মানে না সে ক্ষেত্রে কি বলবো!? তারা কি ইষ্টপ্রতিষ্ঠা করছে? তাদের কি গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন?
'সৎসঙ্গ' সংগঠন মানে না এটা কি করে সম্ভব সত্যিই অবাক হ'য়ে যেতে হয়!। দেবব্রত তোমার কথানুযায়ী, ঠাকুর, গুরু, আদৰ্শ মানে অথচ তাঁর প্রবর্তিত সংগঠন মানে না সেটা তো তাঁকে অমান্য করাই হয়।
আমি বলি বন্ধু! ঠিক কথা। আর সংগঠন না মানা প্রশ্নে বলতে পারি সম্ভব সম্ভব সব সম্ভব। মান্য অমান্য খুব জটিল প্রশ্ন, বিষয়। আলোচনা বন্ধ চোখ খুলে দেয়, অনেক রাস্তা খুলে যায়, জন্ম দেয় অনেক প্রশ্নের। তাই তো কথাটা তুলেছি। প্রশ্নের বুদবুদ উঠছে না কি?
এখন কথা হচ্ছে, প্রশ্নের বুদবুদ নাই উঠতে পারে।, উঠবেও না। সাধারণ সৎসঙ্গীদের মাথাতে বেশী কিছু ঢুকবেও না, তারা ঢুকতে দেবেও না ।এই প্রশ্ন নিয়ে বিচার করতেও চাইবে না। গুরু আদর্শের দোহাই দিয়ে, বিচার করা ভালো না, প্রশ্নহীন আদর্শকে বা গুরু, ঠাকুরকে অনুসরণ করা উচিত জ্ঞানত অজ্ঞানত এই সমস্ত অজুহাত দেখিয়ে বিতর্কিত বিষয় থেকে সরে পড়াকে সঠিক মনে করে।
আসলে আমি বিচারক যেমন নই ঠিক তেমনি উদাসীন ভক্তও নই। আমি এখানে কোনও বিচার করতে বসিনি। আমি কোনও তর্কের জন্ম দিতেও কলম ধরিনি। আমি জাষ্ট একটা কনক্রিট গঠনমূলক আলোচনার দিকে যেতে চেয়েছিলাম। হয়তো ধরতে অসুবিধে হবে, ভুল বুঝবে আমাকে অনেকে। কিন্তু মনোযোগ সহকারে যদি অধ্যয়ন করে তাহ'লে পোষ্টের মাধ্যমে কমলের 'ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও আত্মপ্রতিষ্ঠা' ও সেই সংক্রান্ত একটা দারুণ সুস্থ বিষয় দেবব্রতর "গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন হলে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা আর সংগঠনকেন্দ্রিক জীবন হলে আত্মপ্রতিষ্ঠা" প্রশ্নের ঝড় তুলে দিয়েছো আমার মনে।
আর এই বিষয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে গঠনমূলক বিতর্কের মালমশালা বা রত্নখনি। দেবব্রত তোমার অজান্তেই তুমি স্বাস্থ্যকর আলোচনার মাটি খুঁড়েছিলে যা আগামীতে অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, তর্কের অবসান হবে আর তা পাওয়া যাবে বা অবসান হবে বিতর্ক ছাড়াই ইঙ্গিতপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে।
আর এটা হবে পরবর্তী চিঠির দ্বিতীয় পর্বে আমাদের মত কোটি কোটি ভক্তদের শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা নিষ্ক্রিয় ভক্ত কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙ্গাবার জন্যে। ঘুম ভাঙুক আর নাই ভাঙুক চেষ্টা আমাদের করতে হবে আর তা করতে হবে ঠাকুরের দিকে চেয়েই। যাই হ'ক পরবর্তী আলোচনার জন্য এখানেই এই আলোচনার ইতি টানলাম। জয়গুরু।
ক্রমশঃ
( লেখা ৯ইমে' ২০২২)

No comments:

Post a Comment