Powered By Blogger

Friday, May 12, 2023

প্রবন্ধঃ সমাজ কো বদল ডালো (৬)

পথ কোথায়! পথ কোথায়! সত্যিই তো পথ কোথায়!? যেখানেই যায় সেখানেই হায় হায়, ঠাঁই ঠাঁই, নাই নাই, খাই খাই-এর সমুদ্রসমান খাই! দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বিস্ময়ে ব'লে উঠলো শিল্পী জয়ন্ত, সত্যিই তো! আমি বললাম, একটা গান ধরুন তো 'কি যে করি! পথ নাহি পাই! ঘুরে মরি ঘানি চারিপাশে, কেহ কোথাও নাই! কথাটা ভালো লাগলো না জয়ন্তদার। যুৎসই ব'লে মনে হ'লো না পঙক্তিগুলি! আপনিও একথা বলছেন!? না না আপনার মুখে একথা মানায় না। বিরক্তিতে ছটফট ক'রে ব'লে উঠলো জয়ন্তদা। আমি হেসে বললাম, এ যে বাস্তব! নির্ম্মম সত্য! জয়ন্তদা বললো, না, আমি মানতে পারলাম না। এটা আপনি ঠিক বলেননি। আপনার কথা মানি; আমরা জানি আপনি অনেক দূরের দিকে তাকিয়ে গভীরে গিয়ে কথা বলেন। হয়তো আমরা ধরতে পারি না। হয়তো কেন? সত্যি সত্যিই অনেকেই পারে না! আর তাই আপনাকে মেনে নিতেও পারে না! অনেকক্ষন ধ'রে চুপ ক'রে শুনছিল তুলসীদা। এমনিতেই প্রায় সময় চুপ ক'রেই থাকে। খুব কম কথা বলে। কথা যখন জমে ওঠে তখন পড়ে ঘুমিয়ে! কিন্তু ভালো শ্রোতা! যখন মুখ খোলে অল্প কথায় বোমা ফাটায়! জয়ন্তদার দিকে তাকিয়ে বললো, ইগো প্রবলেম থাকলে কাউকে মেনে নেওয়া কঠিন। জয়ন্তদা সহজ সরল ভাবে ব'লে উঠলো, আমার প্রকাশদার সঙ্গে কোনও ইগো প্রবলেম নেই। তবে প্রকাশদার ঐ কথাটা 'কেউ নেই' মানতে পারছি না। তুলশীদা হেসে বললো, ও'টা আপনার প্রবলেম। কেন? কিসের আমার প্রবলেম? আমার কোনও প্রবলেম নেই। আমি বলতে চেয়েছি, কেউ নেই মানে কি? প্রকাশদা তো আছে। প্রকাশদার কাছে আমরা আসি, ইষ্টপ্রসঙ্গ নিয়ে গল্প করি, নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি, সৎসঙ্গ নিয়ে পরস্পর মত বিনিময় করি, মনে জোর পায়, বিশ্বাস জন্মায়, হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখতে পায়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছবি আঁকি, কি করবো না করবো তার একটা দিশা পায়। তাই না? তাহ'লে 'কেউ নেই' এই কথাটা কি ঠিক? এক নিঃশ্বাসে একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে থামলো জয়ন্তদা। কথাগুলোর মধ্যে একটা ঝাঁঝ ফুটে উঠলো। সবাই চুপ ক'রে রইলো কিছুক্ষণ।

ইতিমধ্যে চা, স্ন্যাকস দিয়ে গেল সহধর্মিনী। যাবার সময় এসিটা চালিয়ে দিয়ে গেল! ঠান্ডা বাতাসে ধীরে ধীরে ঘরের গুমোট গরম কাটতে লাগলো। সেই গুরুভাই যার ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল নাম অভিজিৎ চ্যাটার্জি চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, যাক গিয়ে, আপনি তো বলেন সবসময় যার কেউ নেই তার ঠাকুর আছে। আমি বললাম, হ্যাঁ সেতো একশো ভাগ সত্যি কথা। কিন্তু সেই একশোভাগ সত্যি কথাটার মূল্য কে দিচ্ছে!? যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তারা সবাই তো কোথাও না কোথাও কোনও না কোনও ভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে দয়া পাচ্ছে, ঈশ্বর যে আছেন, ঠাকুর যে যার কেউ নেই তার পাশে বিপদের দিনে ছিলেন সেই দয়ার একশোভাগের এক ভাগ ফিরিয়ে দিয়েছে? ফিরিয়ে দিলে আজ মানুষের এই অবস্থা হ'তো!? সমাজের এই অবস্থা হ'তো!? কি দেননি তিনি!? কি দেওয়ার আর বাকি আছে তাঁর মানুষকে, মানুষের পৃথিবীকে!?
ক্রমশঃ

No comments:

Post a Comment