Powered By Blogger

Sunday, May 14, 2023

প্রবন্ধঃ মাতৃদিবস!

মাতৃদিবস চলে গেল। কত পোষ্ট দেখলাম মায়েদের নিয়ে! মায়েদের নিয়ে ছেলেমেয়েদের কত ভালোবাসা ঝরে পড়তে দেখলাম! ভালো লাগলো। মায়ের কথা মনে পড়ে গেল! অজান্তে চোখ ভ'রে এলো জলে! কত অযত্ন, কত অবহেলার কথা মনে পড়ে গেল! সযত্নে লুকিয়ে মুছে নিলাম চোখের কোনাটা! বয়স হয়েছে, একটু লজ্জা লাগলো! আমাদের সময়েও সবই ছিল কিন্তু কোথায় যেন সব চাপা পড়ে গেছিল! সমস্যার যাঁতাকলে সূক্ষ্ম অনুভূতি পেস্ট হ'য়ে গিয়েছিল! এখন সমস্যা আছে জীবনে, সমাজ জীবনে বেড়েছে হাজারো সমস্যা আর তার প্রভাব পড়েছে ঘরে ঘরে! আর এইসবের মধ্যে নুতন রূপে এসেছে নানা 'দিবস'! সমস্যা পীড়িত মানুষের জীবনে একটুখানি নকল আনন্দ খুঁজে নেওয়া! তাই বা মন্দ কি?
আবার মাতৃদিবস-এর সেই পোষ্টের মধ্যে কত পোষ্টে দেখলাম মেয়েদের নিয়ে কটূক্তি! মেয়ে আরামে শুয়ে শুয়ে মোবাইল করছে, বাইরে কোথাও বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঠান্ডা খাচ্ছে আর মা ঘরে এই গরমে শরীরে ঘাম ঝরিয়ে খেটে মরছে! আর মেয়ে ফেসবুকের স্বপ্নের জগতে ঘুরতে ঘুরতে, বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে ঘুরতে, ঠান্ডা খেতে খেতে মাকে 'আমার মা পৃথিবীর সেরা মা' ব'লে উয়িশ করছে মাতৃ দিবসে! পিতৃদিবস, ভ্রাতৃদিবস ভগ্নীদিবস, বন্ধুদিবস ইত্যাদি ইত্যাদি বহু বহু 'দিবস' পালিত হ'ক না! হ'ক না কৃত্রিম হ'লেও, অভিনয় হ'লেও এই গুমোট দমবন্ধ করা সমাজে একটু প্রকৃতির না হ'ক কৃত্রিম প্রকৃতির ফ্যানের গরম হওয়ার মত একটু গরম ভ্যাপসা ভালোবাসা! নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো! হ'ক না কানা তবুও আমার মামা তো আছে! একটা নয় দু'দুটো মা 'মামা' রূপে আছে আমার জীবনে! একটু হ'লেও তো অক্সিজেন পাই!!!!!!!
আজকের এই যান্ত্রিক সভ্যতায় এই সংস্কৃতি মন্দের ভালো! তবুও তো ছেলেমেয়েরা এই উড়ুক্কু মন নিয়ে বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল জীবনের মাঝেও এই সংস্কৃতিতে সংস্কৃত হচ্ছে! আদর্শহীন জীবনে এর থেকে বেশী আশা করা আর মূর্খের স্বর্গে বাস করা সমার্থক!
মেয়েই তো একদিন মা! তাই এই অল্প কদিন থাকুক না মেয়ে মায়ের কাছে মায়ের মায়ের মত! আদরে, আনন্দে কাটাক না জীবন! তারপর একদিন তার মায়ের মত সেও অন্য আনন্দের ভাগীদার হবে! তাই আজকের মেয়ের আনন্দ আর সেদিনের আনন্দ অৰ্থাৎ আজকের তার মায়ের যে মাতৃত্বের আনন্দ, সন্তান পরিপালনের আনন্দ, সন্তান স্নেহ-ভালোবাসার আনন্দ, সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে ফল্গুধারার মত তলে তলে ব'য়ে যাওয়া যে নির্মল আনন্দ সেই দুই আনন্দ দু'রকমের আনন্দ! তাই একাকার করলে হবে না! এই যে মেয়ে বা ছেলে মা বা বাবা ব'লে ডেকে ওঠে আবার মা-বাবা ছেলেমেয়েকে 'ওঠ বাবা, মা ওঠ' ব'লে ডেকে ওঠে এই যে ডাক, উভয়ে উভয়কে 'মা বা বাবা' ব'লে ডেকে ওঠা এই আনন্দ আর কোথায় আছে!? তাই ছেলে বা মেয়ে আনন্দে কাটাক, হাত পা ছুঁড়ে কাটাক, দৌড়ে যাক কোনও কষ্ট নেই মায়ের! কোন দুঃখ নেই মায়ের! কোনও আপত্তি, নিষেধ নেই মায়ের, বাবার! কষ্ট-যন্ত্রণা তখনি হয় যখন ছেলে বা মেয়ে আনন্দে কাটাতে গিয়ে ভেসে গ্যাছে কূল ছেড়ে কোন অকূলে, হাত পা ছুঁড়ে কাটাতে গিয়ে ভেঙে বসেছে হাত-পা! দৌড়ে যেতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে ছরে যায় যখন সর্বাঙ্গ, রক্তাক্ত শরীরে মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যখন তখন মায়ের অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে ভয়ে-আতঙ্কে! পাগলের মত ছুটে বেড়ায় দরজায় দরজায় সাহায্যের জন্য বাবা! তাই মা আজ যতই পরিশ্রম করুক, যতই রাগারাগি করুক মা ছেলেমেয়েকে বুক দিয়েই আগলে রাখতে চায়! তাই মা শত দুঃখকষ্টের মধ্যেও চায় ছেলেমেয়ে ভালো থাকুক, আনন্দে থাকুক কোনও বিপদ যেন তাকে স্পর্শ না করে। কোনও কষ্ট যেন না হয় তার সে যতই বদমাশ হ'ক ছেলে বা মেয়ে! সব মা-বাবা চায় দুধেভাতে থাকুক আমাদের সন্তান! কারণ মা জানে আমার এই মেয়েই একদিন আমার এই রোলে অভিনয় করবে! পিতা জানে একদিন আমার এই ছেলেই আমার মত তার ছেলের বাবা হবে! তাই করুক ছেলেমেয়ে আনন্দ, করুক মজা, করুক ফুর্তি! আনন্দ-মজা-ফুর্তি লুটে নিক প্রকৃতির বুক থেকে যত পদে তত এই অনিত্য জীবনে! তবে তা লাগামছাড়া যেন না হয়, আনন্দ-মজা-ফুর্তি যেন নিরানন্দে, দুঃখে, কষ্টে পর্যবসিত না হয়!
তাই বলি, কর আনন্দ মা! কর আনন্দ বাবা! তবে খেয়াল রাখিস জীবনে যেন কখনও কোনও দাগ না পড়ে যায়! অনিয়ন্ত্রিত আনন্দ যেন কলঙ্কিত ক'রে না তোলে জীবনকে! বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,"দৌড়ে যাও, কিন্তু হাঁপিয়ে যেও না; আর, হোঁচট খেয়ে যাতে না পড়, দৃষ্টি রেখো।"
তাই আবার বলি, ছোট, দৌড়াও! ছুটে পার হ'য়ে যাও সমস্ত বাধাবিঘ্নের পাহাড়! পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে যাও আনন্দের স্বর্গ রাজ্যে! লুটেপুটে খাও, চেটেচেটে খাও আনন্দ-আনন্দ আর আনন্দ!!!!! খাও! প্রানভরে খাও সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ, জীবন্ত আদর্শ, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে মাথায় নিয়ে!
( লেখা ১৫ই মে' ২০১৯ )

No comments:

Post a Comment