পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন শেষ। শেষ ফলাফল ঘোষণা। কিন্তু শেষ হ'লো না, বন্ধ হ'লো না হিংসা, মারামারি, খুন। এটাই বোধহয় হয়। জিতে আসলে এটাই বদলা নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ তা সে যে দলই জিতুক! যেখানে যে দলের আধিপত্য প্রভাব প্রতিপত্তি সেখানে সেই দলের রবরবা। এরকম কিছুদিন চলবে, জয়ী দলের নেতৃবৃন্দ মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে কিছুদিন, তারপর বদলা নেওয়ার কাজ মোটামুটি শেষ হ'লে জেগে ঘুমিয়ে থাকা নেতানেত্রীরা ময়দানে নাববে মানুষকে মানবতার পাঠ শেখাতে।
নির্বাচনের ফলাফলে আনন্দিত উৎফুল্ল জয়ী দলের কর্মী সমর্থকেরা। আনন্দিত হওয়ারই কথা। যে দলই জিতুক সেই দলের নেতানেত্রী, কর্মী, সমর্থকদের আনন্দ উৎফুল্ল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক যেটা তা হ'লো এই আনন্দ উৎফুল্লতার বহির্প্রকাশ যখন লাগামছাড়া হ'য়ে যায়, লাগামছাড়া হ'য়ে গিয়ে যখন তা হিংস্রতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়, রক্তের হোলি খেলায় পৌঁছে যায় তখন সেই জয়ী দলের কেউ থাকে না যে বা যারা সামনে দাঁড়িয়ে এই ঘৃণ্য পাপ কাজের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করে! যারা নির্বাচনের প্রচারের ভাষণে আগুন ঝরিয়েছিল, দোর্দন্ডপ্রতাপে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর মত দাপট দেখিয়েছিল তাদের চলাফেরায়, বক্তৃতায়, সাংবাদিক সম্মেলনে তারা ঠিক এইসময় এই রক্ত ঝরার সময়, মায়ের কোল খালি হওয়ার সময়, স্ত্রীর সিঁদুর মুছে যাবার সময় কোথায় যে গায়েব হ'য়ে যায়, কখন যে ডুমুরের ফুল হ'য়ে যায় তা একমাত্র ঈশ্বর জানেন।
এই মারামারি কাটাকাটির কাজে যারা সরাসরি জড়িয়ে থাকে তাদের কথা নূতন ক'রে আলোচনা ক'রে আলোচনাকে গুরুত্বহীন করতে চাই না। চাই না----যেসব নেতানেত্রী এইসব কাজকে তাদের নানা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রশ্রয় দেয়, পাশ কাটিয়ে যায় কথার জাগলারিতে, টুইস্ট ক'রে----তাদের নিয়ে আলোচনা করতে। আমি তাদের নিয়েই আলোচনা করতে চাই যারা বাহ্যিক বেশভূষায়, কথাবার্তায় ভদ্র সভ্য, সমাজে গুণী ব'লে সমাদৃত, যারা বিপ্লবের কবিতা লেখে, মুক্তির গান রচনা করে, যাদের বুক ফাটে গরীব মানুষের জন্য ও দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য, যারা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নতুন দিনের, নতুন সূর্য উদয়ের স্বপ্ন দেখায় আলোচনা আমার তাদের নিয়ে। আলোচনা আমার তাদের নিয়ে যারা সমাজের, দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল ক'রে বসে আছে তাদের নিয়ে। আলোচনা করতে চাই তাদের নিয়ে যারা দলের জন্য, পার্টির জন্য কিছু করে না, পথে নাবে না, দলীয় কোনও কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে না, মিছিলে হাঁটে না, মিটিং-এ যায় না শুধু ঘরে বসে বসে নিভৃতে ফেসবুকে (বর্তমানে ফেসবুক বলিষ্ঠ হাতিয়ার) বিপ্লব ঘটায় অথচ সময়মত মেওয়া খেতে সবার আগে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে ভিড় বেড়ে যাবে ব'লে কিম্বা আদৌ পরে ভাগ্যে কিছুই জুটবে না ব'লে। আলোচনা আমার এই সমস্ত নেপোয় মারে দই মানসিকতার পুজারীদের নিয়ে। আমি আলোচনা তাদের নিয়ে করতে চাই যারা সমর্থক, শুধুই সমর্থক, নিষ্ক্রিয় সমর্থক অথচ এইসমস্ত দলীয় নেতানেত্রী ও কর্মীদের মারণ যজ্ঞের কর্মকান্ডকে উপভোগ করে দারুণ আনন্দে! এদের কথাবার্তা, এদের কমেন্ট, এদের পছন্দ, এদের আলোচনা ইত্যাদির মধ্যে চাপা পড়া হিংসা ও আদিম হিংস্রতার ঝলক ফুটে ওঠে! আলোচনা আমার এদের নিয়ে।
এরকম অদ্ভুত চরিত্রের মানুষদের দেখি এরাই প্রধান পৃষ্টপোষক এইসমস্ত সরাসরি হিংস্র ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও নেপথ্যে বিচরণকারী কুশল কৌশলী শয়তান মানুষদের। এরা মনের মধ্যে চাপা পড়া হিংসা, রাগ, ঘৃণাকে ফেসবুকে কমেন্টের মধ্যে দিয়ে পুষিয়ে নেয়, তৃপ্তি পায়। অথচ এরাই সমাজের আপনার আমার এলাকার, পাড়ার ভদ্র সভ্য লাজুক ল্যাজ বিশিষ্ট নারীপুরুষ!!!!!! ধিক! ধিক্কার তাদের! তাদের মানসিকতার!! তাদের ভদ্রতার!!! এদেরই বলা হ'য়ে থাকে তথাকথিত ভদ্রলোক। এরা আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মানসিকতার! আঁচ যা লাগার রাস্তার ছেলেটার লাগুক, পুরে যাক, জ্বলে যাক, যা ইচ্ছা তাই হ'ক।
আমি আরো আলোচনা করতে চাই তাদের নিয়ে যারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত, মন্ত্র শিষ্য, ঠাকুরের মিশন, ঠাকুরের আদর্শ নিয়ে যারা চলবার জন্য তাঁকে গুরু ব'লে মেনে নিয়েছে, স্বীকার ক'রে নিয়েছে অথচ রাজনৈতিক নোংরামিকেও আলিঙ্গন করতে চায়! ঠাকুরের অপছন্দ কাজ, ঠাকুরের আদর্শ বিরোধী, দর্শন বিরোধী, ঠাকুর ব্যথা পান, কষ্ট পান, দুঃখ পান এমন কাজ করতে বিন্দুমাত্র ভাবে না, কেয়ার করে না অথচ তাঁর মন্ত্রশিষ্য ও মন্ত্রশিষ্যা ব'লে দাবী করেন আমি তাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করতে চাই। আলোচনা করতে চাই সৎসঙ্গীরা এমন আচরণ কেন প্রকাশ করবে সে যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন?
আমি নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাবলী সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলতে চাই এইসমস্ত মানুষেরা যারা উপরিউক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী মানুষ, যারা পরোক্ষভাবে ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে মৃত্যুর মিছিল, অসহায় মায়ের চোখের জল পছন্দ করে তাদের শেষের সেদিন ভয়ংকর!!!!!!!
(লেখা ৫/৫/২০২১)
No comments:
Post a Comment