"গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন হলে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা
আর সংগঠনকেন্দ্রিক জীবন হলে আত্মপ্রতিষ্ঠা"।---দেবব্রত সোম।
আচ্ছা দেবব্রত! যদি বলি 'সৎসঙ্গ' নামক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনটির জনক কে? উত্তর কি হবে? উত্তর হবে, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তাহ'লে তাঁর সৃষ্ট সংগঠনকে কেন্দ্র ক'রে আমার জীবন আবর্তিত হ'লে কেন আত্মপ্রতিষ্ঠা হবে? আচ্ছা, আর গুরু বা আদর্শকে কেন্দ্র ক'রে যদি জীবন আবর্তিত হয় তাহ'লেই কি ইষ্টকে প্রতিষ্ঠা করা হবে? যদি বলি, গুরু বা আদর্শকে কেন্দ্র ক'রে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলি অথচ কেন্দ্রের সংগে যুক্ত থাকি না বা থাকলেও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায়, কেন্দ্র রক্ষা ও শ্রীবৃদ্ধির কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি না বরং কোনও কোনও বা সব ক্ষেত্রে বিরোধিতা করি কিম্বা ভাবের ঘুঘু হ'য়ে বক ধার্মিকের মত বসে থাকি; সেক্ষেত্রে কি হবে? আবার যদি দেখা যায় সংগঠন নিয়ে মেতে আছি বেশ কিন্তু গুরুকে কেন্দ্র ক'রে যে আমাকে চলতে হবে সেক্ষেত্রে বিশাল খামতি এমনতরস্থলেই বা কী করণীয়? এতে কি ইষ্টপ্রতিষ্ঠা বা আত্মপ্রতিষ্ঠা কোনোওটাই হয়?
আচ্ছা ভাই, গুরু বা আদর্শকে কেন্দ্র ক'রে আবর্তিত জীবন কেন্দ্র মন্দিরে তো কম দেখি না তাহ'লে সেখানে কেন ইষ্টপ্রতিষ্ঠার নামে এত গন্ডগোল, এত মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি!? এইসমস্ত ইষ্টপ্রতিষ্ঠার নামে কোন্দল কি আত্মপ্রতিষ্ঠার কোন্দল? আবার, সংগঠনকে কেন্দ্র ক'রে দামাল ভক্তদের যে আস্ফালন তা কি সংগঠন দখল না কি আত্মপ্রতিষ্ঠার ন্যক্কারজনক লড়াই?
আবার ইষ্টপ্রতিষ্ঠা বুঝি কিন্তু ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা বুঝি না তাই-ই বা কেমন? ঠিক আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তেমন।
এ তো গেল একদিক। অন্যদিকটা যদি দেখি তবে কি দেখবো?
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' ছাড়া ঠাকুরের নামে আরও তো অনেক প্রতিষ্ঠান দেখি সেগুলি কি? সেই প্রতিষ্ঠানগুলির জনক কে? সেগুলিরও জনক শ্রীশ্রীঠাকুর? যদি ঠাকুর হন তাহ'লে তিনি এ'রকম নানা নামে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানের কেন জন্ম দিলেন? আর যদি ঠাকুর জন্ম না দিয়ে থাকেন ঠাকুর সৃষ্ট সংগঠন যদি একটাই 'সৎসঙ্গ' হয় তাহ'লে কে বা কারা এইসমস্ত সংগঠনের জন্ম দিল? কেন দিল? কি উদ্দেশ্যেই বা দিল? তারাও তো গুরু বা আদর্শ শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়েই থাকে এবং ঠাকুরকে নিয়ে মাতামাতি ক'রে বেশী! তারা তো ঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' মানলো না! তাহ'লে তাদের জীবন কি ক'রে ধ'রে নেবো গুরুকেন্দ্রিক, আদর্শকেন্দ্রিক? কি ক'রেই বা বুঝবো যে তাদের এই একমাত্র গুরুকেন্দ্রিক জীবনই সাচ্চা ইষ্টপ্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ কৃৎ? এইসমস্ত প্রতিষ্ঠানের ঠাকুর অনুগামীরা কি সত্যি গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক? যদি সাচ্চা গুরু বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবনই হবে তাদের তাহ'লে তারা শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-কে অস্বীকার ক'রে নিজেদের ইচ্ছেমত প্রতিষ্ঠান তৈরী ক'রে গুরু বা আদর্শ ভজনা করছে কি ভাবে? এটা কি সেই "ইচ্ছেমত ভজলি গুরু হ'তে মানুষ হ'লি গরু" বাণীর জ্বলন্ত উদাহরণ নয়? এর থেকে ভন্ডামির বড় প্রমাণ আর কি হ'তে পারে!? এই কর্মকান্ড কি সমগ্র বিশ্বে শ্রীশ্রীঠাকুরকে কালিমালিপ্ত বা কলঙ্কিত করে না!? এইসমস্ত গুরুকেন্দ্রিক বা আদর্শকেন্দ্রিক জীবন কি ইষ্টপ্রতিষ্ঠার জন্য সাচ্চা নিষ্কলঙ্ক জীবন? এরা তো গুরুপাগল মানুষ তা এরা গুরুর ফটো মাথায় নিয়ে, কোলে নিয়ে 'বাবা মহাদেবের চরণে সেবা লাগে' ধ্বনি দেবার মত ঠাকুরের চরণে সেবা লাগে ধ্বনি দিয়ে পথে পথে রাজাধিরাজ স্বয়ং অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুরকে সস্তা কাঙ্গাল ভিখারী দেবতা বানিয়ে ঘুরে বেড়ায় কেন!? তা এরা কি সত্যি সত্যিই গুরুপাগল নাকি আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য পাগল? এরা তো ঠাকুর সৃষ্ট সংগঠন 'সৎসঙ্গ' মানলো না তাহ'লে এরা কি ক'রে সৎসঙ্গী হ'লো!? আর সত্যি সত্যিই কি এরা ঠাকুর কেন্দ্রিক নাকি এদের কর্মকান্ড আত্মপ্রতিষ্ঠারই সাক্ষী বহন করে? এরা কি সত্যি সত্যিই ইষ্টপ্রতিষ্ঠা করছে নাকি ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করছে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য?
এবার আমার সকলের কাছেই জিজ্ঞাস্যঃ
শ্রীশ্রীঠাকুর কেন 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
শ্রীশ্রীঠাকুর কি 'সৎসঙ্গ' ব্যতিত ঠাকুর নামাঙ্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছিলেন?
শ্রীশ্রীঠাকুর কি তাঁর ইচ্ছাবিরুদ্ধ তাঁর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিয়েছেন বা অনুমোদন করেছিলেন?
এইসব প্রতিষ্ঠানের মাথায় কে বা কারা বসে আছেন?
তারা কি ঠাকুর মানেন?
এইসব প্রতিষ্ঠানের ধ্বজাধারীরা ঠাকুর দেহরূপে থাকাকালীন ঠাকুরকে ত্যাগ ক'রে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে বিরাট ভক্ত সেজে ঠাকুরকে চোখের জলে ভাসিয়ে বুকে নির্ম্মম পদাঘাত ক'রে 'সৎসঙ্গ' থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সেই তারা করবে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা!? তারা বলবে ইষ্টের কথা!? এরা তুলে ধরবে ঠাকুর প্রদর্শিত জীবন দর্শন!? এরা পথ দেখাবে ঐক্যের!? এদের সম্পর্কে কি বলেন এদের অনুগামীরা?
এদের অনুগামীদের কাছে আছে এর কোনও উত্তর? যদি থাকে উত্তর তাহ'লে আসুন উত্তর দিন; উত্তর শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
এবার আসুন আলোচনা ক'রে দেখা যাক এর সুদূরপ্রসারী ফল কি হ'তে পারে। মন্দ হ'লে কে বা কারা হবে এর জন্যে দায়ী?
ইতিহাস কি বলে?
ক্রমশঃ ( লেখা ১১ই মে' ২০২২ )
No comments:
Post a Comment