পরবর্তী অংশঃ
এবারের সময় হ'লো উত্তরণের সময়! কলিযুগ শেষে সত্যযুগে প্রবেশের সন্ধিক্ষণ! এইসময় দয়াল এসেছিলেন তাঁর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে আর ক'রে চলেছেন তাঁর ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী! ক'রে চলেছেন রেত শরীরের মধ্যে দিয়ে! আর তাই তিনি সাবধান ক'রে দিয়ে গেছিলেন আমাদের, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।" আবার বললেন, " যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা করলে রে চলবে না ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
শ্রীশ্রীবড়দার প্রয়াণের পর সৎসঙ্গের সেই ব্যাটন আজ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার হাতে! শ্রীশ্রীদাদা প্রতিনিয়ত আকুলভাবে সবাইকে এক
হ'য়ে চলতে আহবান করছেন! আহ্বান করছেন শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন, ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে এক হ'য়ে চলতে।
কিন্তু আমরা কি সেই আহ্বান শুনতে পাচ্ছি? শুনতে পেলেও মেনে চলছি? আমরা সৎসঙ্গীরা কি বিভিন্ন কেন্দ্র মন্দিরে আচার্য্যের নির্দেশ মত চলছি? মূল কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্র, মন্দির পরিচালনা করছি? আমরা কি কেন্দ্রে কেন্দ্রে, মন্দিরে মন্দিরে ঠাকুরকে সামনে রেখে ব্যবসার উপকরণ সাজিয়ে বসেছি? আত্মপ্রতিষ্ঠা, ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি, অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে সৎসঙ্গী সেজে বসেছি?
কথাগুলি বললাম এইজন্য যে করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কেন্দ্রে কেন্দ্রে (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবার, পরোপকারের রমরমা উপস্থিতি! ঢাকঢোল পিটিয়ে চলছে দুর্গত সেবা! এমনকি শুনতে পাচ্ছি ইষ্টভৃতি কালেকশনের নানা ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা চলছে ঠাকুরবাড়ির নাম দিয়ে! চলছে দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য অর্থ সংগ্রহ!
এখন প্রশ্ন, এইসমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ কি মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' দেওঘর অনুমোদিত? আচার্য্য নির্দেশিত? করোনার কারণে দুর্গতদের মধ্যে চাল, ডাল, আলু ইত্যাদি বিতরণের জন্য অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত কি দেওঘর 'সৎসঙ্গ' অনুমোদিত?
সাধারণ সৎসঙ্গী হিসেবে মনে প্রশ্নগুলি এইজন্য এলো শ্রীশ্রীবড়দাকে না মানার পেছনে যে কায়েমী স্বার্থ, মৌরসি পাট্টা, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি ছিল সেই একই ট্র্যাডিশন এখনও চলেছে কিনা!? এই যে বড়দাকে না মানার মূল কারণকে লুকিয়ে অন্য কারণ হিসেবে আচার্য্য প্রথার উত্থাপন এবং সেই প্রথার বিরোধিতার সমর্থনে বেছে বেছে ঠাকুরের বাণীকে সাধারণের সম্মুখে তুলে ধরার যে নোংরা চেষ্টা সেই চেষ্টার ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে বর্তমান আচার্য্যের সময়েও তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল করোনা। আজ যদি এই আচার্য্য পরম্পরা না থাকতো তাহ'লে যে কি হ'তো তা ভাবলেও ব্যথায় বুকটা ভরে ওঠে। আচার্য্য থাকতেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে মন্দিরে মন্দিরে 'আমি, আমি, আমি প্রধান, আমি প্রধান'-এর পাগলামো দেখে দেখে মনে হ'লো শ্রীশ্রীঠাকুর এবারে কেন 'ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান' হিসেবে প্রধান ভক্তকে নিয়ে এলেন এবং কেন পিতাপুত্রের লীলার মধ্যে দিয়ে সৎসঙ্গকে প্রচন্ড বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন আর কেনই বা আচার্য্য পরম্পরার সৃষ্টি ক'রেছেন!!!!! সৎসঙ্গকে রক্ষা করা ও তাঁর মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য এবার দয়ালকে রেত শরীরে লীলা করতেই হবে! নতুবা সব ধ্বংস ক'রে দেবে ঘোর কলির ভক্তরূপী শয়তানরা!!!
আর যারা সেই ঠাকুরের দেহ রাখার সাথে সাথে শুরু ক'রে দিয়েছিল আচার্য্য বিরোধিতার ধুয়ো তুলে শ্রীশ্রীবড়দা-কে না-মানার ষড়যন্ত্র, যারা শ্রীশ্রীবড়দা-র কঠিন কঠোর ব্যক্তিত্বের সামনে অসহায় বোধ করতো, অসহায় বোধ করতো ইচ্ছেমতো চলবার সুযোগ না পাওয়ার জন্য তারা শ্রীশ্রীবড়দা-কে আচার্য্য ব'লে মেনে নেননি এবং আজ পর্যন্ত আচার্য্য পরম্পরার তীব্র বিরোধিতা ক'রে চলেছে! ক'রে চলেছে ঠাকুরের নানা বাণীর সাহায্যে! এইজন্যই বলতে চাই যদি বিরোধীদের এই কথা সত্য হয় যে শ্রী শ্রী ঠাকুরই আচার্য্য, একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর ছাড়া আর কেউ আচার্য্য নয় তাহ'লে ঠাকুরই একমাত্র রাজা ও প্রজা, একমাত্র ঋত্বিক, যাজক, অধ্বর্জ্যু ইত্যাদি তাহ'লে ব্যাপারটা কেমন হবে? তা হ'লে কেন এত ঋত্বিক!? কেন এত যাজক!? কেন অধ্বর্যু-এর প্রচলন!? তিনিই যদি শিষ্য হ'ন তাহ'লে কেন এত তাঁর শিষ্য!?
যাই হ'ক এই প্রসঙ্গে ঠাকুর কি বলেছেন দেখা যাক।
"পুরুষোত্তমই রাজা-প্রজা জীবন-যশের খেই,
জন্মগত গুরু-আচার্য্য ঋত্বিক-অধ্বর্যুও সেই;
যাজক-পূজক-শিষ্য তিনি গরীব-ধনী একই জন,
হৃদয়-জোড়া সৃষ্টিছাড়া সৎ-অসৎ-এর বিশ্রয়ণ।"
শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীরা, আচার্য্য প্রথার বিরোধীরা এর উত্তর দিয়ে সাধারণ সৎসঙ্গীদের ভ্রম দূর করার সৎ সাহস, পবিত্র দায়িত্ব নেবেন কি! অপেক্ষায় রইলাম।
আর সর্বশেষ, আজকের অতি উৎসাহী কিছু ইয়ং জেনারেশন ঠাকুর প্রতিষ্ঠার নামে নানারকম নিজেদের মনগড়ন পদক্ষেপ গ্রহণ ক'রে চলেছে দিকে দিকে! বিরোধীদের বিরোধিতার জন্য প্রতিবাদ প্রতিরোধের নিজেদের ইচ্ছেমত নকল বুন্দিগড় গড়ে তুলছে, দেওঘর থেকে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে এইরকম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনলাইন সৎসঙ্গ হচ্ছে, ঠাকুরবাড়ির অনুমতি, পরামর্শ ছাড়াই ফোরাম গঠনের বালখিল্য লাফঝাঁপ দিচ্ছে!!!!!! সেই একই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের প্রতিচ্ছবি বাংলার বুকে দিকে দিকে!!!!!!
তাই আজ এই অস্থির সময়ে একান্তে বসে ভাবি, আজ যদি এই আচার্য পরম্পরা না থাকতো, মাথার উপর অভিভাবক না থাকতো, ভবিষ্যৎ আশ্রয় (শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা) সামনে না থাকতো তা হ'লে কি হ'তো!?!? চোখের সামনে মাথার উপর আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আছেন, আছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, আছেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদা তথাপি 'গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল'-দের বাড়বাড়ন্ত, যেমন ইচ্ছে তেমন চলন দেখে এবং বর্তমান করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে সৎসঙ্গীদের দ্বারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্র নির্দেশ ও অনুমতি ছাড়া যার যার ইচ্ছেমতো দুঃস্থ ও গরীবদের এবং সরকারি ক্ষেত্রে দান ও সাহায্যের ভুমিকা পালনে তৎসহ 'সৎসঙ্গ দেওঘর' কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেকে অনলাইন ইষ্টভৃতি সংগ্রহের চক্রান্ত থেকে বোঝা গেল, অনুভব হ'লো, উপলব্ধি হ'লো আচার্য্য পরম্পরার গুরুত্ব!! কেন আচার্য্যের প্রয়োজন! কেন ঠাকুর এবার রেত শরীরের মধ্যে দিয়ে পিতাপুত্রের লীলা ক'রে চলেছেন!!!!
আসুন কোনোদিন না হওয়ার থেকে দেরীতে হ'লেও সাধারণ সৎসঙ্গীদের চোখ খুলুক, চেতনা জাগ্রত হ'ক, আচার্য পরম্পরার মাহাত্ম্য উপলব্ধি হ'ক! আসুন আচার্য পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হ'ই! মাথায় রাখি রেত শরীরে সুপ্ত থেকে তিনি আমাদের সামনে নিরন্তর জ্যান্ত রূপে অবস্থান করছেন! সেই রূপ পরম পূজ্যপাদ আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার সাবধান বাণী "তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর" যেন আমরা না ভুলে যাই সৎসঙ্গীরা! সাবধান!! জয়গুরু।
( লেখা ৭ই মে' ২০২০)
No comments:
Post a Comment