Powered By Blogger

Wednesday, May 10, 2023

খোলা চিঠিঃ বিশ্বজিৎবাবুকে (৫)

বিশ্বজিৎ এর বিশ্বরূপ দর্শন ও বিশ্বজয়!! (৫)

বিশ্বজিৎবাবু আপনি আপনার চিঠিতে ঠাকুরের ‘Be Concentric’-এর কথা বলেছেন। তা আপনি কনসেন্ট্রিক হয়েছেন তো? তা’ কিসে নিজেকে কনসেন্ট্রেট করেছেন? রিচিপ্রসাদদের জন্মজন্মান্তরের সৌভাগ্য, ভালো কাজের সুফল যে তারা শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, অবিনবাবুর সান্নিধ্যে তাঁদের মধ্যে ঠাকুরকে ও ঠাকুরের বলে যাওয়া “দশ হাজার বছরের মধ্যে আর কিছু লাগবে না” এই লীলাকে উপভোগ করছেন। আর আপনি? আপনি স্বর্গীয় নিত্যানন্দ পান্ডেদের মত একমাত্র ঠাকুর ছাড়া আর কিছুই মানে না, বোঝে না, জানে না এমন সুকেন্দ্রিক পরমভক্ত ইষ্টপ্রাণ গরুভাইদের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি ও লীলাকে উপভোগ করছেন। যদি আমাকে বলেন, ‘আপনারা কি সব গুরুভাই?’ উত্তরে বলবো আমাদের মধ্যেও আমরা অনেকেই গরুভাই। কিন্তু আমাদের গুরুভাই হ’য়ে ওঠার একটা সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ও অবিনবাবুদের সান্নিধ্যে ভালোবাসায় প্রেরণায় আশীর্বাদে গুরুভাই হ’য়ে ওঠার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে যেটা আপনার বা আপনাদের নেই। এবার সেই সুযোগ কাজে লাগালে আমি বা আমরা বেঁচে যাবো; আর না লাগালে ‘শেষের সেদিন ভয়ংকর” আমাদেরও। আপনাদের আর আমাদের মাঝে তফাৎ একটাই আমরা সরাসরি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগালাম না আর আপনারা সুযোগের ধারে কাছেও এলেন না। যেমন ইষ্টকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে মূল কেন্দ্র বিরোধীরা মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসেছে ঠিক তেমনি মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বহু ইষ্টপ্রাণ গরুভ্রাতা ইষ্টকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়ে সুকৌশলে ‘প্রণাম, প্রণামি আর প্রসাদ’ অর্থাৎ P3 এই তিন মন্ত্র ‘ওঁ নম প’ –কে জীবনের ধ্রুবতারা ক’রে নিয়েছে সরল সাধাসিধে বোকা সৎসঙ্গীদের মধ্যে। এইসব সরল সিধা সৎসঙ্গীরা সকলের মধ্যেই ঠাকুরকে দেখতে পায় বিশেষ ক’রে পাঞ্জাধারীদের মধ্যে। এরা চিরদিনই বেকুব থেকে যাবে আর সুযোগ ক’রে দেবে ঠগবাজ গরুভাইদের। একদিকথেকে এই ধরণের মানুষেরা সবাই ঠাকুরের কথা মেনে CONCENTRIC.
আপনি আপনার চিঠিতে ধর্ম সম্পর্কে অনুভূতির উপর জোর দিয়েছেন আর পরক্ষণেই যে কথাগুলি বলেছেন সেগুলিতে অনুভূতির লেশমাত্র নেই। আপনি শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বাবাইদাদাকে রিচিপ্রসাদদের করা সম্বোধন প্রসঙ্গে আপনার তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন। আচ্ছা আপনাকে যদি আপনার বাড়ি, পাড়ার কেউ ভালোবেসে বিশে, বিশু, বিশ, বিশো, বিচ্ছু, বিশ্ব, ভীষ্ম, জিৎ ইত্যাদি ব’লে ডাকে তাহ’লে আপনি কি করেন বা কি করতে পারেন? এই নামে ডাকলে কি আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্যরা তাদের পিছনে তাড়া করেন নাকি জনে জনে পিছনে পিছনে ছুটে ছুটে তাদের বারণ করেন? নাকি এই নামগুলি সব শেষ পর্যন্ত থেকে যায়? এক্ষেত্রে আপনার অনুভূতি কি বলে? আপনি কি কারও ভালোবাসার উপর আপনার বিরক্তির বা আপত্তির তরবারি চালান? তাহ’লে তো লোকে আপনাকে পাগল বলবে; বলবে না-কি, এই বিশে তোর পাগলামো যাবে কিসে? আপনার তীব্র অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও যদি এই পাগল আখ্যা পেয়ে যান, যদি আপনি মানুষকে আপনাকে ক্ষ্যাপাবার সুযোগ ক’রে দেন তাহ’লে মানুষের দোষ কোথায়? এটা কেমন ধরণের বোধ বা বুদ্ধি? ঠিক তেমনি কোথাও কোন ভক্ত ভক্তির আতিশয্যে, ভালোবাসার তীব্র আবেগে যদি বড়দাকে, দাদাকে, বাবাইদাদাকে কোনও বিশেষণ সহযোগে সম্বোধন করে তাহ’লে তার দায় তাঁদের? তাঁরা কি করবেন? হৈ হৈ ক’রে লাঠি নিয়ে তাড়া করবেন আবেগে ভেসে যাওয়া ভক্তদের? শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে এই সম্বোধন প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি তাহ’লে আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি তো জানেন না তাই আপনি মানেন না। আর আপনি জানবেনই বা কি ক’রে? আপনি তো জীবনে কোনোদিন কোনও বিশাল ব্যাক্তিত্বের সঙ্গ করেননি, করার সৌভাগ্য অর্জন করেননি। কুয়োর ব্যাঙের তো আর আকাশের বিশালতা, তার ব্যাপ্তি সম্পর্কে কোনও ধারণা থাকে না। সঙ্গ করেছেন স্বর্গীয় নিত্যানন্দ পান্ডেদের মত ব্যক্তিদের। তাই ‘জানা আর মানা’ এই দুই এর তত্ত্বজ্ঞান আর হয় নি। আর এই ‘জানা আর মানা’ কথাটা ঠাকুরের। যাই হ’ক তবুও বলি যদি কিছু অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর হয় আর ঠাকুরের দয়া অনুভব হয়।
শ্রীশ্রীবড়দাকে কিছু ভক্ত ভালোবেসে পিতৃদেব ব’লে ডাকতেন। এই নিয়ে আপনার মত মানুষের যা স্বভাব এখানেও তাই হ’লো। সব জায়গায় আপনার মত মানুষরা আছে। কিছু একটা পেলেই হ’লো। আপনার মত পরম শক্ত ভক্তরা বেঁকে বসলো। তেড়েমেড়ে বিরাট ভক্ত সেজে ব’লে উঠলো, কেন বড়দাকে পিতৃদেব বলা হবে? বড়দাকে পিতৃদেব বলা হ’লে ঠাকুরকে কি বলা হবে? এই নিয়ে চললো কূটকাঁচালি। আপনার মত বেঁকে বসা শক্ত ভক্তরা শোরগোল ফেলে দিল। তখন শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, “তোরা আমাকে বড়দা বলেই ডাক আর পিতৃদেব বলেই ডাক যে নামেই ডাক না কেন আমি হ’লাম গিয়ে ঠাকুরের কুকুর।“ ঠাকুরের ছড়াটা জানেন তো? “ইশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় পরা, ডাকলে তিনি কাছে আসো তাড়ালে থাকো দূরেই খাড়া।“ এই হ’ল ঠাকুরের পরমপ্রিয় আদরের বড়খোকা আর ‘সৎসঙ্গ’ জগতের সকলের চোখের মণি প্রাণের শ্রীশ্রীবড়দা। ঠাকুরের প্রতিটা বাণী যার জীবনে জীবন্ত হ’য়ে উঠেছে। ঠাকুর তাঁর এই প্রথম সন্তান আদরের বড়খোকা সম্পর্কে বলেছেন, “বড়খোকাকে আমার বাবা ব’লে ডাকতে ইচ্ছা করে।“ এসব আপনি জানবেন না। এসবের স্বাদ থেকে আপনি বঞ্চিত। কার্বাইড পাকা আম খেয়ে অভ্যস্ত আপনি, গাছ পাকা আমের স্বাদ আপনি পাবেন কোথায়, আর গাছ পাকা আমের স্বাদ সম্পর্কে জানবেনই বা কি ক’রে? আপনার এই জন্মটাই বৃথা হ’য়ে গেল বিশ্বজিৎবাবু, তীরে এসেও তৃষ্ণা নিবারিত হ’লো না। দেখুন ঠাকুর কিন্তু অনেক আগেই সব ব’লে দিয়ে গেছেন কারণ তিনি তো সত্যদ্রষ্টা পুরুষ; তিনি সব দেখতে পান আর তাই তিনি আপনার বা আপনাদের মত মানুষদের সম্পর্কে আগাম ব’লে দিয়ে গেছেন। তাঁর সত্যানুসরণ খুললেই দেখতে পাবেন। সত্যানুসরণে ঠাকুর বলছেন, “অমৃতময় বারি কপটের নিকট তিক্ত লবণময়, তীরে যাইয়াও তা’র তৃষ্ণা নিবারিত হয় না।“ অবশ্য আপনাদের অবৈধ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত অবৈধ সত্যানুসরণে পাবেন কিনা জানি না। ওখানে তো দুনিয়ার জল মেশানো। আর ঠাকুর ঐ জল মেশানো অবৈধ সত্যানুসরণকে স্বীকৃতি দিয়ে যাননি। পড়তে হ’লে আপনাকে পড়তে হবে যার স্বীকৃতি আছে, যে বই এর Authenticity আছে অর্থাৎ যার বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, প্রামাণিকতা আছে, যা কিনা নির্ভেজাল, অকৃত্রিম। গবেষকরা যা গবেষণার কাজে ব্যবহার করে। ঠাকুরের মূল কেন্দ্র ‘সৎসঙ্গ’ দেওঘর থেকে প্রকাশিত সেই ‘সত্যানুসরণ’ গ্রন্থ আপনাকে পড়তে হবে।
বিশ্বজিৎবাবু আপনি ঠাকুরের কাছে এসেও তাঁর কথার অন্তর্নিহিত অর্থ ধরতে পারলেন না। ঠাকুর বলে গেলেন “যা দিয়ে গেলাম আগামী দশ হাজার বছরের মধ্যে আর কিছু লাগবে না“ অর্থাৎ তিনি আর আগামী দশ হাজার বছর আসবেন না কারণ যা বলার তিনি সব ব’লে দিয়ে গেছেন; শুধু এবার সেই বলাগুলি ইমপ্লিমেন্ট করার কাজ আর সেই কাজে তিনি নিজেই গোটা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবেন আর তা দেবেন রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে তাঁর বংশধরের মধ্যে দিয়ে বংশ পরম্পরায়। আর তাঁর সেই কাজ তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর পরমপ্রিয় আদরের ধন প্রথম সন্তান বড়খোকার মধ্যে দিয়ে। সেই নেতৃত্বের কাজ চলছে তাঁর তৃতীয় পুরুষ সম্পর্কে বলে যাওয়া আদরের দাদুভাই শ্রীশ্রী দাদার মধ্যে দিয়ে, চলবে দিব্যদৃষ্টির অধিকারী পরম শ্রদ্ধেয় এ যুগের ঠাকুরভক্ত হনূমান ঠাকুরের কুকুর সত্যদ্রষ্টা ঋষি শ্রীশ্রীবড়দার ব’লে যাওয়া, “ বাবা আই” অর্থাৎ বাবাইদাদার মধ্যে দিয়ে। ছোট্ট শিশু বাবাইদাদাকে কোলে ক’রে যেদিন বড়বৌদি অর্থাৎ বাবাইদাদার মা ঘরে পা রেখেছিলেন তারপরে শ্রীশ্রীবড়দার কোলে তুলে দিয়েছিলেন সৎসঙ্গ জগতের আগামী কান্ডারী ছোট্ট শিশুকে তখন সেই ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়েই তিনি আনন্দে তাঁর চকা আঁখি বিস্ফারিত ক’রে চকিতে বলে উঠেছিলেন, “বাবা আই”!!!!! অর্থাৎ বাবা এসেছে!!! সেই থেকেই আগামী সৎসঙ্গ জগতের কান্ডারী পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নাম হ’য়ে গেল ‘বাবাই’!
ক্রমশঃ
( লেখা ১০ই মে' ২০১৭ )

No comments:

Post a Comment