Powered By Blogger

Wednesday, May 10, 2023

খোলা চিঠিঃ বিশ্বজিৎবাবুকে (৬)

বিশ্বজিৎ এর বিশ্বরূপ দর্শন ও বিশ্বজয়!! 

আচ্ছা বিশ্বজিৎবাবু এই যে ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের ভক্তদের করা ভালোবাসাময় নানা সম্বোধন প্রসঙ্গে আপনার তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন তা’ আপনি কি চান কে কাকে কি নামে ডাকবে তার জন্য সবার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ ক’রে হুলিয়া জারী করা হ’ক? ব্যক্তিগত বোধ থেকে যদি কেউ কাউকে কিছু বলে বা কোনও নাম ধ’রে ডাকে তা সমষ্টির ওপর বা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন? এটা তো একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার বিশ্বজিৎবাবু! প্রথম থেকেই দেখছি প্রত্যেকটি বিষয়েই আপনার বাচ্চা ছেলের মত অভিব্যাক্তি, শিশুসুলভ প্রতিক্রিয়া! অথচ ইষ্টপ্রাণতার তীব্র অনুভূতির কথা বলেন? অথচ ফেসবুকে করা আপনার মন্তব্যগুলি প্রমাণ করে আপনি ভিতরে ভিতরে খুব উত্তেজিত ও অস্থির। আর প্রমাণ করে আপনি ধর্ম জগতে বিশ্বরূপ দর্শন করে ফেলেছেন আর বিশ্বরূপ দর্শন যখন হ’য়ে গেছে তখন আপনি বিশ্বজিৎ বিশ্বজয় ক’রে ফেলেছেন। আপনাকে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে বলতে পারেন বিশ্বজিৎবাবু যে আপনাকে বড়দা, অশোকদা, বাবাইদা সম্পর্কে নিয়ে রিচিপ্রসাদদের করা ‘সম্বোধন গুলি মানতে হবে? মানবেন না তো মানবেন না, তা’ কোমর কষে নেবে পড়লেন কেন এই নিয়ে তর্ক করতে? আপনিই একমাত্র ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য যে এই সমস্ত সম্বোধনে আপনার আপত্তি আছে আর কারও নেই? আপনি লিখেছেন আপনি ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য তাই আপনি এগুলি মানতে পারবেন না। প্রথম কথা আপনি ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য কে বলল? আপনি কোথায়, কবে, কার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন? আপনার ঋত্বিকের নাম কি? আপনার ঋত্বিকের দীক্ষা দেওয়ার অধিকার আছে আদৌ যে আপনাকে দীক্ষা দিয়েছেন? ঋত্বিকের দীক্ষা দেওয়ার অধিকার তো দূরের কথা ঋত্বিক কোথা থেকে দীক্ষা নিয়েছেন? ঋত্বিকের দীক্ষা সিদ্ধ তো? তিনি নিজেই সৎনামে দীক্ষিত নন তো তিনি নাম বিলোবার অধিকার পেলেন কোথা থেকে? আর যদি আপনার ঋত্বিক দীক্ষা নিয়ে থাকেন আগে মূল কেন্দ্র থেকে তাহ’লেও তার দীক্ষা অনেক আগেই মরে গেছে। কারণ তার ইষ্টভৃতি ঠাকুরের চরণেই পৌঁছোয় না। ঠাকুরের বলাই আছে, “ইষ্টভৃতে দীক্ষা বাঁচে“ তা মানুন আর নাই মানুন। আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট থাকতেই পারেন। আর তাই অতি বোদ্ধার হাবভাব নিয়ে বাস্তবে নির্বোধের মত বলতে পারেন “পুরুষোত্তমকে যদি তাঁর সন্তানসন্ততিদের সঙ্গে এক ক’রে ফেলেন তাহ’লে সেটা সবাইকে মানাতে পারবেন না।“ ঠাকুর প্রেম আপনার এতই তীব্র যে আপনি পাগল, বদ্ধ উন্মাদ হ’য়ে গেছেন বিশ্বজিৎবাবু। কে বলেছে আপনাকে যে ঠাকুরকে তাঁর সন্তানসন্ততিদের সঙ্গে এক ক’রে ফেলেছে। আপনি সব বোঝেন আর ঠাকুরের কোটি কোটি শিষ্য কিছুই বোঝে না। তারা চার অক্ষর বিশ্বজিৎবাবু না-কি আপনি? এত নিজেকে ঠাকুরের প্রেমিক ভাবেন কেন? আপনি শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদার থেকেও বড় ভক্ত, বড় প্রেমিক? তাঁরা ঠাকুরের আসনে বসে গেছেন? এ তো আপনার মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ। কেন নিজেকে পাগল, উন্মাদ সাজাচ্ছেন? নিজেকে একটু ভালবাসুন। আচ্ছা, আপনাকে রিচিপ্রসাদ বা আর কেউ কি এই সম্বোধনগুলি যেগুলি তারা ভালোবেসে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা সম্পর্কে করে সেগুলি মানাতে চেয়েছে না মানতে বাধ্য করেছে? তারা তাদের মত তাদের ভালোলাগাকে সাজিয়ে নিয়েছে তাতে আপনার বা আপনাদের কি? আপনার বা আপনাদের এত গাত্রদাহ কেন? যেমন আপনার মত আপনি দুর্যোধনের কৌরব পক্ষকে বেছে নিয়েছেন। যার যেমন রুচি তার তেমন লুচি। ফুলকো লুচি, খাস্তা লুচি, ল্যাদা লুচি, পোড়া লুচি, আটার লুচি, ময়দার লুচি ইত্যাদি। যেটা আপনার ভালো লাগে খান না; কে বারণ করেছে? আমরাও তো আপনার অভিযোগ অনুযায়ী রিচিপ্রসাদদের মত শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীঅশোকদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাকে এরকম ভাবি না বা তাঁদের এরকম সম্বোধন করি না তা’তে কই আমার বা সৎসঙ্গ জগতের কোটি কোটি অনুগামীদের কারও তো গাত্রদাহ হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটাচ্ছে না। এতো ভাবের বহির্প্রকাশ। পরম ভক্তের মধ্যেই তো তাঁর বিচ্ছুরণ ঘটে। পরম ভক্তের মধ্যেই তো ভগবান মিশে যান, একাকার হ’য়ে যান, বিলীন হ’য়ে যান। কিন্তু পরম ভক্ত সেই ভাব কখনো প্রকাশ করেন না। পরম ভক্তের মধ্যে অন্যেরা ইষ্টকে দেখতে পান তাঁর আচারে, আচরণে, জ্ঞানের মধ্যে দিয়ে। তাঁদের অর্থাৎ এই সমস্ত পরম ভক্তদের মধ্যে দিয়েই মানুষ---- যারা তাঁকে অর্থাৎ জীবন্ত ইশ্বরকে জীবিত অবস্থায় দেখেনি, পায়নি,----- তাঁর উপস্থিতিকে অনুভব করে। তাই বলে, “এখনও লীলা করে গৌরচাঁদ রাই, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।“ তা’ আপনি এত উচ্চমার্গের ইষ্টপ্রাণ ভক্ত মানুষ যে আপনি এসব ঠিক বুঝবেন না। আর একটা কথা বলি, রিচিপ্রসাদরা শ্রীশ্রীবড়দাদের সম্পর্কে এরকম বললেই কি তাঁরা এরকম হ’য়ে যাচ্ছেন? নাকি যাঁদের সম্পর্কে এরকম বলা হচ্ছে তাঁরা নিজেদের এরকম ভাবেন? আপনি তো তাঁদের সঙ্গ করেননি তাই তাঁদের সম্পর্কে জানেননি বা জানেননা। সঙ্গ তো করেছেন জালি মানুষের যারা ইষ্টকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে ইষ্টকে গুয়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় রূপে জীবনকে ইষ্টপ্রাণতার মোড়কে মুড়ে আপনাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন নীল শেয়ালের মত যার পাপের বোঝা বয়ে চলেছেন এখন আপনি ও আপনারা! শুনুন বিশ্বজিৎবাবু আপনি আর কি করবেন, আপনি তো পূর্বসূরিদের উত্তরসূরি; ঐ সঙ্গই তো আপনাদের কাল হয়েছে দাঁড়িয়েছে কারণ যেমন সঙ্গ তেমন ভাব, যেমন ভাব তেমন লাভ। আপনারা তো কার্বাইড পাকা আম খেয়ে অভ্যস্ত গাছ পাকা আমের স্বাদ কিরকম জানবেন কি ক’রে!? তাই ওরকম বালখিল্যের মত কথা বলতে পারেন। পুরুষোত্তমকে দয়াল দয়াল করেন দয়ালের ভয়াল রূপ তো এখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি যেদিন তার ভয়াল রূপ দেখবেন সেদিন বুঝবেন হেগে মরা কাকে বলে আর কাকে বলে দৌড়ে হাঁপিয়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়া! আসছে সেই দিন; একটু অপেক্ষা করুন। আর সেই দিন আসার অপেক্ষা করতে করতে আগাম একবার চুপি চুপি কাউকে কিছু না ব’লে দেখে নিন তো আপনার বা আপনাদের পূর্বসূরিদের যারা ঠাকুরের জীবিত অবস্থায় ঠাকুরের সঙ্গে বেইমানি করেছিল, হয়েছিল অকৃতজ্ঞ; নেমকহারামির নির্মম ছুরি চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত ক’রে দিয়েছিল তাঁর শরীর, মন, আত্মা সেই অকৃতজ্ঞ, বেইমান, নেমকহারাম সৎসঙ্গ জগতের মীরজাফর, জুডাসদের শারীরিক, মানসিক অবস্থাটা কার কি হয়েছিল শেষের দিনগুলিতে বা বর্তমানে হয়েছে? ঠাকুরের সাবধান বাণীটা জানেন তো? “তুমি যা করছো বা ক’রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন আর তার ফলও পাবে ঠিক তেমনি।“ বিশ্বজিৎবাবু সাবধান! এই বাণীটা আমার জন্য যেমন প্রযোজ্য ঠিক তেমনি আপনার জন্যও প্রযোজ্য এবং সকলের জন্য। “যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি, তা করলে কিন্ত চলবে না, ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না” এটাও ঠাকুরের বাণী বিশ্বজিৎবাবু। আপনি তো কথায় কথায় ঠাকুরের বাণী দেন তাই আপনাকে ঠাকুরের সাবধান বাণীগুলি তুলে শুধু একটু সাহায্য করলাম। দয়ালের ভয়াল কৃষ্টির বৃষ্টির জলে যেদিন ধুয়ে যাবে পূর্বসূরিদের দিয়ে যাওয়া পাপের বোঝা শরীরের নীল রং সেদিন কি হবে বিশ্বজিৎবাবু? ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে সেদিন সময়, বনের পশুরা যেমন ছিঁড়ে খেয়েছিল নীল শেয়ালকে আর স্বজাতিরাও সেদিন নিজের জাতের ব’লে শেয়ালকে রেয়াত করেনি বিশ্বজিৎবাবু। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ‘সময় সবসে বড়া বলবান’ বিশ্বজিৎবাবু। কাকের ময়ূর সাজার পরিণতি কি হয়েছিল তা’তো ভালোই জানেন। ময়ূরেরা কাকের ময়ূর সাজার আস্পর্ধা দেখে ঠুকরে ক্ষতবিক্ষত ক’রে তাড়িয়েছিল কাককে আর কাকেরাও সেদিন বদলা নিয়েছিল তাদের নিচা দেখাবার অপরাধে ময়ূর পুচ্ছধারী কাককে নির্মমভাবে ঠুকরে মেরে ফেলে। তাই সাধু বিশ্বজিৎবাবু সাবধান! সেদিন আসছে! খড়কুটোর মত ভেসে যাবেন ‘সৎসঙ্গ’ এর প্রবল স্রোতে। অন্ধের মত ছুটে চলা দৌড় থামিয়ে একটু থমকে দাঁড়িয়ে একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো যাতে বলতে না পারেন কই আমাকে তো কোনোদিন সাবধান করেননি। যদি পারেন এখনও সময় আছে ঘোর কলি যুগের ভগীরত হ’য়ে দয়ালের দয়ার বৃষ্টিকে হিমাইতপুরের যে পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছেন আপনার পূর্বসূরিরা সেই মাটিতে নাবিয়ে এনে নিজেকে সেই দয়ার জলে সিক্ত ক’রে নিজেকে রক্ষা করুন ও আপনার পূর্বসূরিদের ঠাকুরের প্রতি, বড়দার প্রতি কৃত পাপ থেকে উদ্ধার করুন আর সেই মাটিকে তাঁর দয়ার জলে ভাসিয়ে দিয়ে পবিত্র ক’রে তুলুন। পারবেন বিশ্বজিৎবাবু এতবড় মহান দায়িত্ব পালনের জন্য এ যুগের ভগীরত হ’তে? ভেবে দেখুন। “নইলে গতি কুম্ভীপাকে, শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর”! আপনার লেখা পড়ে অবাক হ’তে হয় আপনি নিজেকে এতবড় ইষ্টপ্রাণ মানুষ মনে করেন যে আপনি ইষ্টেরস্বার্থপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ইষ্টেরস্বার্থরক্ষা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন যা কিনা আপনাদের মত ঈষ্টপ্রাণদের চোখে শ্রীশ্রীবড়দা পারেননি, বর্তমান সঙ্ঘাচার্য শ্রীশ্রীদাদা পারছেন না, বাবাইদাদার তো প্রশ্নই আসে না। ব্র্যাভো বিশ্বজিৎবাবু ব্র্যাভো! আপনাকে হ্যাটস অফ! আপনার মতো অভাগাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
ক্রমশঃ
( লেখা ১০ই মে' ২০১৭ )

No comments:

Post a Comment