Powered By Blogger

Wednesday, May 10, 2023

খোলা চিঠিঃ বিশ্বজিৎবাবুকে (১)

বিশ্বজিৎ এর বিশ্বরূপ দর্শন ও বিশ্বজয়!! 

বিশ্বজিৎবাবু, আপনাকে লেখা আমার খোলা চিঠির উত্তরে বিশ্বজয়ের আশা জাগিয়ে যে উত্তর আপনি দিয়েছেন; তা পড়লাম। আপনি লিখেছেন আপনি আনন্দিত হয়েছেন। কিন্তু প্রকারান্তরে আপনি যে আনন্দ পাননি তা বোঝাই যাচ্ছে আপনার চিঠির বক্তব্যের ভাষা দেখে, আপনার মন্তব্যের উপস্থাপনা দেখে। আনন্দ কখন পায় মানুষ? আপনার সঙ্গে আমার আলাপচারিতার ক্ষেত্রে আনন্দটা হ’লো, কোনও একজন মানুষ যখন পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে চায় এবং পৌঁছনোর সঠিক নির্ভুল নিখুঁত পথ অবশেষে খুঁজে পায় তখন সে আনন্দে উর্ধাকাশে দু’বাহু তুলে নির্মল আনন্দে গেয়ে ওঠে, “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, শাখে শাখে পাখি ডাকে, কত শোভা চারিপাশে; আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”। আর এই রকম নির্মল আনন্দ মানুষ তখনই পায় যখন মানুষ তাঁর দয়া পায়। আকাশে যেমন মেঘ ভেসে চলে, শূন্যে যেমন বাতাস বয়, নদীতে যেমন জল ব’য়ে চলে ঠিক তেমনি তাঁর দয়ার বাতাসও বয়ে চলেছে নিরন্তর আবহমানকাল ধরে। আমরা তারাই তাঁর বাতাস অনুভব করতে পারি, উপলব্ধি করতে পারি যারা অকপটভাবে তাঁকে ভালোবাসি, তাঁর মনের মত হ’য়ে উঠি, তাঁর ইচ্ছাকেই একমাত্র আমার ইচ্ছা ক’রে নিই, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া আমার আর কোনও ইচ্ছা নেই অর্থাৎ তাঁকে সর্বোতভাবে আমার মনপ্রাণ, জীবন দিয়ে রক্ষা ক’রে চলি। বিশ্বজিৎবাবু আমি শুধু সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি কোনও আপনার চিঠির ভাষা অনুযায়ী তত্ত্ব কথা জুড়ে লেখনির মাধুর্য ছড়িয়ে একতরফা কোনও চিঠি আপনাকে লিখিনি। আপনার এই একতরফা ধারণা ভুল। আমি আপনার বক্তব্য ও আপনার মানসিকতার সঙ্গে যারা সহমত পোষণ ক’রে মন্তব্য প্রকাশ করেছে সেই সমস্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি একজন ঠাকুরের মিশন প্রচারের সামান্য একজন সৈনিক হিসাবে আমার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি মাত্র; আপনি তা গ্রহণও করতে পারেন বা বর্জনও করতে পারেন। আপনি আমাকে নতজানু প্রণাম জানিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা আপনার বিবেকই বলতে পারবে আমি তা বোঝার চেষ্টা করছি না। কিন্তু যেটা বোঝার চেষ্টা করছি সেটা হ’ল আপনার লেখা অনুযায়ী আমার খোলা চিঠির বিশ্লেষনে যে বাণীটা আপনি দিয়েছেন সেটার। ঠাকুরের বাণীটা হ’লো,
“হিংসায় হিংসা বাড়ায়
প্রীতি বাড়ায় প্রীতি
করবে যেমন পাবেও তেমন
এই সাধারন রীতি।“
তা’ এখানে হিংসা কোনটা? আমার চিঠির বিষয়বস্তু? যদি তা না হ’য়ে থাকে তাহ’লে এখানে হিংসা বলতে কাদের হিংসার কথা বুঝিয়েছেন? হিংসা কে বা কারা ছড়িয়েছে বা বাড়িয়েছে? আপনার লেখায় তা’ পরিস্কার বোঝা গেলো না। পরিস্কার স্বছতার আশ্রয় নিয়ে কথা বলুন বিশ্বজিৎবাবু। আমি পরিস্কার খোলাখুলি জিজ্ঞেস করছি আপনাকে, কারা প্রথম ঠাকুরের জীবিত অবস্থায় ঠাকুরের বুকে লাথি মেরে ব্যথা দিয়ে ঠাকুরকে অপমান ক’রে ঠাকুরের আদর্শ, ঠাকুরের মিশনকে বলাৎকার ক’রে, ঠাকুরের ইচ্ছাকে পদাঘাত ক’রে, ঠাকুরের স্বপ্নকে পা দিয়ে নির্মম নির্দয়ভাবে দ’লে দিয়ে ঠাকুরের পরমপ্রিয় আদরের আত্মজের মুখে মুত্রপাত ক’রে ঠাকুরের ফটো মাথায় ক’রে নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা সংগঠন ক’রে সরল সাধাসিধে বোকা দুর্বল মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ক্ষমতা দখল ক’রে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসে চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় সহযোগে জীবনকে অর্থ, মান, যশের রসে চুটিয়ে ভোগ করার লোভে হিংসার বীজ বপন করেছিল বিশ্বজিৎবাবু? কাদের জিভ থেকে হিংসার লালা ঝরে পড়েছিল প্রথম বিশ্বজিৎবাবু? কারা জীবন্ত ঠাকুরকে ছেড়ে দিয়ে ঠাকুরের ফটোকে মাথায় নিয়ে ভালোবাসার নামে প্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে হিংসার ঘৃণ্য নাটক প্রথম রচনা করেছিল? কারা ঠাকুরের নাম নিয়ে প্যারালাল প্রথম সংগঠনের জন্ম দিয়ে হিংসার বীজ বপন করেছিল? কেন সংগঠনের জন্ম দিয়ে হিংসার বীজ বপন করেছিল? ঠাকুর বলেছিলেন নাকি নিত্যানন্দ পান্ডে মশাইদের পূর্বসূরিদের আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার ফটো মাথায় ক’রে নিয়ে আমার আত্মজদের, আমার ভালোবাসার মানুষদের অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ক’রে, কষ্ট দিয়ে আলাদা সংগঠনের জন্ম দিয়ে আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছা পূরণ কর, আমার মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যা?
পরবর্তীতে আপনি লিখেছেন, আপনার পরিবারের প্রতি হওয়া মিথ্যাচারের প্রতিবাদ প্রয়োজন। আপনার বক্তব্যের সমর্থনে আপনাকে একটা কথা বলি, আপনার পরিবার নিয়ে কেন কেউ মিথ্যাচার করবে? আপনি কি তেমন কোনও সুযোগ কাউকে দিয়েছিলেন? যদি দিয়ে থা্কেন তাহ’লে কেন দিয়েছিলেন? এই প্রশ্নটা কি আয়নায় নিজের মুখ নিজে দেখার মত ওঠা উচিত নয়? আর কোনও ভুলে যদি দিয়েও থা্কেন সুযোগ তাহ’লে কেন আপনি সতর্ক থাকলেন না পরবর্তীতে যাতে আর ভুল না হয় কিম্বা কেন দ্রুত ভুল সংশোধন ক’রে নিলেন না বা নিচ্ছেন না? কার মুখ আটকাবেন আপনি? আটকাতে আটকাতে তো আপনি পাগল হ’য়ে যাবেন বিশ্বজিৎবাবু! আর যদি অকারণ আপনার পরিবারের প্রতি মিথ্যাচার হয় তাহ’লে মান সম্মান হারাবার ভয় থাকে কেন? দিন না রিচিবাবুদের যত ইচ্ছা মিথ্যাচার করার। মিথ্যাবাদীদের আবার সমাজে কোনও অস্তিত্ব থাকে নাকি? মিথ্যাচারেরও তো সত্যিকারের কোনও ভিত্তি থাকে না, থাকে না কোনও অস্তিত্ব। তাহ’লে কিসের ভয়? কার ভয়? কেন ভয়? আপনি তো ঠাকুরকে ধরেছেন তাহ’লে কিসের ভয়? আপনি শোনেননি সেই অমোঘ বাণী, “মহাশক্তি ঘুমায় তোর হৃদয়ে তুই কেন রে মরার মত?” ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস ভরসা নেই আপনার? বিচারের ভার নিজের হাতে নিতে যাচ্ছেন কেন? আপনি পড়েননি ঠাকুরের বাণীঃ “বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপন হাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে। কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয় জেনো------পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ ক’রে দেবেন।“? কে বলেছে আপনাকে যে মিথ্যা সত্য হয়? মিথ্যা তো মিথ্যাই তা কখনো সত্য হয় নাকি? নাকি সত্য কখনো মিথ্যা হয় বা হয়েছে কখনো? একদিন বই দু’দিন নয়। সত্য চিরকাল সত্য আর মিথ্যা চিরকাল মিথ্যা। কেন আপনি যেটা সত্য নয়, আপনার পরিবারের উপর করা সেই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে যাবেন? আপনি তো ঠাকুরের দীক্ষিত, না-কি? তা’ আপনি এত দুর্বল কেন? আপনি ঠাকুরের সত্যানুসরণ পড়েননি? মনে হয় পড়েননি আর পড়লেও নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো ভাসা ভাসা। সত্যানুসরণে ঠাকুর কি বলেছেন? বলেননি, ”তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য ক’রতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ ক’রো না। শীগ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে।“
আপনি লিখেছেন আমার লেখার মাধুরিতে আপনি বুঝেছেন আমি সুশিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত একজন ইষ্টপ্রাণ মানুষ। শুধু আমার লেখার মাধুরিতেই বুঝে গেলেন? পরিচয় হ’লো না, সামনা সামনি কথা হ’লো না, মিশলেন না, বুঝলেন না, চিনলেন না, জানলেন না শুধু লেখা পড়েই ব’লে দিলেন আমি একজন ইষ্টপ্রাণ মানুষ? দূর থেকে একজনকে ভালো বা মন্দ আখ্যা দেওয়া কি ঠিক? শয়তানের হাসি তো ভগবানের চেয়েও মিষ্টি হয় তা’ আমি যে শয়তান অনিষ্টপ্রাণ নই তার প্রমাণ কি? আমার সঙ্গে পরিচয় হ’লে আমার কথা শুনে, আমার ব্যবহার দেখে ভালো লেগেই আপনি আমাকে একজন ঠাকুরর লোক, ভালো মানুষ, ইষ্টপ্রাণ ভেবে নিয়েই আমাকে আপনার ঘরের বেডরুমে নিয়ে যাবেন? এটাকে কি বলে? সরলতা না বেকুবি? সরলতা ভালো কিন্তু বেকুবি ভালো নয় জানেন তো? সরল তো হবেনই, বুকের ভিতরে গরল রাখবেন কেন? কিন্তু সরলতা আর বেকুবি যে এক জিনিস নয় তা’তো ঠাকুর তাঁর বাণীর মধ্যে দিয়ে আমাদের সাবধান করে গেছেন, তাই নয় কি? সত্যানুসরণে ঠাকুর কি বলছেন, “সরল হও কিন্তু বেকুব হ’য়ো না”। তাই তো? আবার একদিন কোনও এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঠাকুর বললেন, “ কেষ্টদা, মন্দিরের আশেপাশে কুৎসিত লোকের আনাগোনা বেশী, সাবধান থেকো তা থেকে”! ঠাকুরের দরবারে কত সুশিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ইষ্টপ্রাণ মানুষ এসেছিল তারা তো ভীষণ মিষ্টি মানুষ ছিল তাদের মধ্যে অনেকে ঠাকুর জীবিত থাকা অবস্থায় কি করেছিল ঠাকুরের সঙ্গে তার খবর রাখেন? নাকি রাখার দরকার নেই? নাকি সেই সমস্ত ঠাকুরের সঙ্গে ছলনাকারী মানুষগুলোর মিষ্টি কথায় ভুলে আমাকে যেমন দূর থেকে শুধু লেখা পড়ে ভেবেছেন ইষ্টপ্রাণ ঠিক তেমনি তাদেরও সুশিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত এক একজন মহান ইষ্টপ্রাণ মানুষ ভেবেছিলেন? কোনটা? নাকি সব জেনেই তাদের অনুসরণ ক’রে চলেছেন আর ইচ্ছাকরেই বিষ পান করছেন? রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ঠ পাঠক? “ আমি জেনেশুনে বিষ করেছি প্রাণ, প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ”। তাই সাধু সাবধান! এই ধর্ম জগৎ রাজনীতির জগৎ থেকেও ভয়ঙ্কর!
ক্রমশঃ
( লেখা ১০ই মে' ২০১৭ )

No comments:

Post a Comment