Powered By Blogger

Monday, May 22, 2023

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর ও আচার্য্য পরম্পরা।

"পুরুষোত্তমই রাজা-প্রজা জীবন-যশের খেই,
জন্মগত গুরু-আচার্য্য ঋত্বিক-অধ্বর্যুও সেই;
যাজক-পূজক-শিষ্য তিনি গরীব-ধনী একই জন,
হৃদয়-জোড়া সৃষ্টিছাড়া সৎ-অসৎ-এর বিশ্রয়ণ।"

-------শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।


শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীরা, আচার্য্য প্রথার বিরোধীরা এর উত্তর দিয়ে ৫০ বছর ধ'রে চলা সরল সাধারণ সৎসঙ্গীদের ভ্রম দূর করার সৎ সাহস, পবিত্র দায়িত্ব নেবেন কি! অপেক্ষায় রইলাম।

আসুন ঠাকুরপ্রেমী ভক্তমন্ডলী!
তা সে ঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' মূল কেন্দ্র অনুসারী হ'ন বা না হ'ন, শ্রীশ্রীবড়দাকে আচার্য্য হিসেবে এবং আচার্য্য পরম্পরা মানুন আর না মানুন উপরে উল্লেখিত শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর মর্মার্থ বা তাৎপর্য সম্পর্কে ফেসবুকের মত স্ট্রং মাধ্যমকে সামনে রেখে আসুন আলোচনার গোল টেবিলে বসি।

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় শ্রীশ্রীঠাকুরের উপরিউক্ত বাণী উল্লেখের কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দাকে সামনে রেখে শ্রীশ্রীবড়দার সুযোগ্য, বলিষ্ঠ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্বে যখন সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের বিয়োগ ব্যথা কাটিয়ে নতুন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও শ্রীশ্রীঠাকুর স্বার্থপ্রতিষ্ঠায় সেজে উঠছে ঠিক তখনি শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীরা শ্রীশ্রীবড়দাকে ক্ষমতাচ্যুত ক'রে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে এলোমেলো ক'রে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য, মৌরসি পাট্টা জমিয়ে ব'সে কায়েমীস্বার্থ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে গান বাঁধলো "দে মা লন্ডভন্ড ক'রে লুটেপুটে খায়"; যে ট্র্যাডিশন এখনও সমানে চলেছে ঘরেবাইরে!

শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধিতার অনেক অজুহাতের মোক্ষম অজুহাত ছিল 'আচার্য্য' শব্দ! আচার্য্য কে? আচার্য্য কি একের অধিক হয়? শ্রীশ্রীঠাকুরই ইষ্ট, শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য; এছাড়া আচার্য্য আর কেহ নয়! এরকম নানারকম বাকযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে খুঁজে খুঁজে বের ক'রে "ইষ্টই গুরু, ইষ্টই আদর্শ, ইষ্টই আচার্য্য, সতী নারীর যেমন দুই স্বামী হয় না এবং তা হ'লে ব্যভিচার ঠিক তেমনি দুই আচার্য্য হয় না" ইত্যাদি ইত্যাদি শ্রীশ্রীঠাকুরের এমন বাণীর সমর্থনে যুক্তি ফোয়ারায় সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্তির বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে বিচ্ছেদের পাঁচিল তুলে একতরফাভাবে বাকযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ক'রে তুলেছিল ঠাকুরের প্রথম সন্তান পরম আদরের বড়খোকা সৎসঙ্গ জগতের সৎসঙ্গীদের বড়ভাই চোখের মণি পরমপ্রিয় সর্বশ্রেষ্ট পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দাকে।

আর এই সমস্ত কিছুই মুখ বুঁজে নীরবে সহ্য করেছিলেন ঘোর কলিযুগের হনুমান শ্রীশ্রীবড়দা! নিঃশব্দে, নীরবে, অটুট, অস্খলিত ও অটল মনে-শরীরে ব'য়ে চলেছিলেন সামনের দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পাহাড় প্রমাণ বাধা, নিন্দা, সমালোচনা, গালাগালি, অশ্রদ্ধা, অপমানের পথ শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'সৎসঙ্গ'-এর পতাকা কাঁধে নিয়ে একাকী কয়েকজন বিশ্বস্ত ইষ্টপ্রাণ ভক্ত নিয়ে! দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন পিছন ফিরে না তাকিয়ে ঠাকুরের সত্যানুসরণে বলা "এগিয়ে চল, পিছন ফিরে মেপে দেখতে যেও না কতদূর এগিয়েছো নইলে আবার পিছিয়ে পড়বে" বাণীকে মূলধন ক'রে, হাতিয়ার ও একমাত্র সম্বল ক'রে! তাই শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন্ত চলমান 'সত্যানুসরণ'! শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দার সেই সেদিনের একাকী হেঁটে চলার শেষে আজকের বিশ্বজুড়ে 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'র এক ও একমাত্র আশ্রয়স্থল এই বি-শা-ল 'সৎসঙ্গ' সাম্রাজ্যের ছবি প্রমাণ ক'রে পরমপিতার কৃতি সন্তান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুক ফাটো ফাটো ক'রে গেয়ে ওঠা "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে------" গানের জ্বলন্ত নিদর্শন হ'লেন শ্রীশ্রীবড়দা!!!!!!!!

আজ সেই নিদর্শন ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন চোখেমুখে ফুটে উঠেছে বর্তমান আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে!!!!!! আর সেই কিরণ গিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বর্তমান প্রায় দশ কোটিতে পৌঁছে যাওয়া সৎসঙ্গীদের বিপদে আপদে, সমস্যা জর্জরিত জীবনে তাৎক্ষণিক সরাসরি পরম আশ্রয়স্থল শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে আর অদূরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিরণের ঝলক দিচ্ছে হাসিমুখে সহজ সরল ২০বছর বয়সী শ্রীশ্রীঅবিনদাদা আর বলছেন, "আপনারা আমায় ভালোবাসেন কিনা জানি না, কিন্তু আমি আপনাদের ভালোবাসি। কারণ আপনারা ঠাকুরকে ভালোবাসেন। আপনারা কেউ কখনও নিজেকে অসহায় মনে করবেন না। যখন মনে হবে আমার পাশে কেউ নেই, জসিডির টিকিট কাটবেন আর চলে আসবেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকবো আপনার জন্য। মনে রাখবেন আমি আপনাদের ভালোবাসি। আমি অপেক্ষায় আছি আপনাদের জন্য!!!!!"

তাই নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলো মন, হে দয়াল! তুমি এত দয়াময়! তুমি তোমার ব'লে যাওয়া "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর, রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর" বাণীর এত তাড়াতাড়ি জীবন্ত জ্বলন্ত রূপ হ'য়ে আমাদের মাঝে ধরা দিলে দয়াল!!!! আমরা এত ভাগ্যবান!?!?!?!?!?

তাই আসুন, ঠাকুরপ্রেমী ভক্তমণ্ডলী!
এই লেখা লেখার শুরুতে শ্রীশ্রীঠাকুরের যে বাণী দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই বাণীর মর্ম, তাৎপর্য বিশ্লেষণ করুন, বুঝিয়ে দিন দয়ালের এই বাণীর অর্থ কি!? আপনারা যারা আচার্য্য বিরোধিতার জন্য ঠাকুরের বাণী খুঁজে খুঁজে দিনরাত একাকার ক'রে সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত ক'রে নিজেদের মূল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন ক'রে বিশ্বের কাছে ঠাকুর ও ঠাকুর আত্মজদের ভাবমূর্তিকে, ঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন ক'রে যে যুদ্ধ শুরু ক'রেছিলেন আজ সময় এসেছে উপরে উল্লেখিত বাণীর ব্যাখ্যা ক'রে বুঝিয়ে দিন এই বাণীর মর্মার্থ ও তাৎপর্য কি!?
যদি আপনাদের আচার্য্য সম্পর্কিত প্রশ্নে আপনাদের ব্যখ্যানুযায়ী, প্রচার অনুযায়ী বক্তব্য সত্য হ'য়ে থাকে তা হ'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে ঋত্বিক, যাজক, অধ্বর্যু ইত্যাদি প্রশ্নে আপনাদের ব্যাখ্যা কি?
আসুন আজ আর তর্ক, ঝগড়া, মারামারি, গালাগালির যুগ নয়, আজকের যুগ আলোচনার টেবিলের যুগ! আসুন, বসুন, উপরিউক্ত বাণীকে নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসুন, আলোচনা করুন, মত বিনিময় করুন, মতামত দিন। গ্রহণ ও বর্জন আপনার ব্যক্তিগত তাকে সমষ্টিগত ক'রে তুলবেন না, চাপিয়ে দেবেন না জোর ক'রে মিথ্যের বেসাতি ক'রে। কারণ সামনে আরো আরো আরো ঘোর ভয়ঙ্কর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে! ঠাকুরের ব'লে যাওয়া সেই ভয়ানক দিন "সামনে ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে! যে দিন আসছে তার কাছে এই বিশ্বযুদ্ধে (২য়) লোকক্ষয়, সম্পদক্ষয় তার কাছে কিছুই নয়! গতিক দেখে মনে হচ্ছে মনুষ্যত্বের মূল বুনিয়াদটাই ধ্বংস হ'তে চলেছে! পচা গলা মৃতদেহের স্তুপ চতুর্দিকে, গঙ্গা দিয়ে ব'য়ে যাবে রক্তের ধারা! এখনও সময় আছে, সাবধান হ'য়ে যান আপনারা! নতুবা সেদিন আফসোস করারও কেউ থাকবে না!"

আসুন শপথ করি, আমরা আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠা চাই না। চাই শুধু ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা আর তার জন্য আসুন জীবন উৎসর্গ করি শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে। জীবন উৎসর্গ করার প্রথম ও প্রধান শর্ত ও নমুনা ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় আচার্য্য কেন্দ্রিক হ'য়ে চলা! জয়গুরু।
প্রবি। ( লেখা ২৩শে মে' ২০২০)

No comments:

Post a Comment