Powered By Blogger

Saturday, February 24, 2024

গানঃ শরীর ভাঙ্গা মন ভাঙ্গা--------

শরীর ভাঙা মন ভাঙা হৃদয় ভাঙা হয়
ইষ্ট টানে প্রবল হ'লে বৃত্তি ভাঙা হয়।

আগুন জ্ব'লে আগল ভাঙা হয় যে প্রাণে প্রাণে
হয়রানিতে ভাঙা জীবন (হয়) জোড়া ইষ্টটানে
বুকেতে ঐ বুক ভাঙা প্রেমের সুরা বয়
ইষ্ট টানে প্রবল হ'লে বৃত্তি ভাঙা হয়।

জনমে হয় সুরত ভাঙা বলো তো কখন?
আগল ভাঙা রিপুর তালে বৃত্তি প্রবল যখন
আঁতুড় ঘরে জীবন ভাঙা প্রথম প্রভাতে
দয়াল যখন থাকে না ঐ ঘরে দিনেরাতে
তাঁর অভাবে সুর ছাড়া যে জীবন ভাঙা হয়।
ইষ্ট টানে প্রবল হ'লে বৃত্তি ভাঙা হয়।

( শিমুল রাঙা পলাশ রাঙা গানের সুরে) 

গানঃ মর্মে মর্মে শরমে মরি যে---

মর্মে মর্মে শরমে মরি যে কি দিয়ে পুজিব এ বেলা?
হারিয়ে জীবন শেষেতে এখন তব চরণে ভিড়িয়েছি ভেলা।
তুমি যে দয়াল বিধিও ভয়াল তুমি যে প্রেমের ধারা
তোমার বাঁশরি তোমার ইশারা করে মোরে গৃহছাড়া।
কুসুম যেমন পাপড়ির বুকে তেমনি আমাতে তুমি
তোমার চরণে সঁপেছি জীবন শুধু তুমি আর আমি।


বুকের পাঁজরে জ্বালি যে আগুন সে বজ্রানল যে তুমি
আঁধার রাতে ঝড় বাদলেতে বাড়িয়ে হাতখানি
নিয়েছো জড়ায়ে বুকেতে আমায় শুনিয়ে আশার বাণী।
তোমারে হেরিয়া পেয়েছি আমার বাঁচার দিশাখানি।
কুসুম যেমন পাপড়ির বুকে তেমনি আমাতে তুমি
তোমার চরণে সঁপেছি জীবন শুধু তুমি আর আমি।


'বৃত্তি রঙ্গিন আমারই জীবন তোমারই চরণ তলে
হৃদয় আমার কাঁপে যে তোমার মুখপানে চেয়ে চেয়ে।
তোমারি চলন তোমারি বলন প্রাণেতে আরাম আনে
জপি তব নাম গাহি তব গান আমারি মনের বীণাতে।
কুসুম যেমন পাপড়ির বুকে তেমনি আমাতে তুমি
তোমার চরণে সঁপেছি জীবন শুধু তুমি আর আমি।


শয়নে স্বপনে তুমি জাগরণে থাকো যে তুমি দয়াল
শিরায় শিরায় পাই যে তোমায় তুমি বিনা আমি বেহাল।
তুমি যে প্রাণ ভোমরা আমার তুমিই যে জীবন স্বামী
লহ মোর প্রণাম জপি তব নাম জীবন জুড়ে শুধু তুমি।
কুসুম যেমন পাপড়ির বুকে তেমনি আমাতে তুমি
তোমার চরণে সঁপেছি জীবন শুধু তুমি আর আমি।


( বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে গানের সুরে )

গানঃ তুমি জীবন দিলে মরণ নিলে

তুমি দুঃখ দিলে গানের সুরে লেখা------

তুমি জীবন দিলে মরণ নিলে তার নেইকো তুলনা।
তুমি যে আমার প্রাণ ভোমরা তাই তো জানতাম না।২
কত ভালবাসো আমায় তুমি তাইতো বুঝতাম না ২
তুমি আমার প্রাণ ভোমরা তাই তো জানতাম না।
তুমি জীবন দিলে মরণ নিলে তার নেইকো তুলনা।
তুমি আমার প্রাণ ভোমরা তাই তো জানতাম না।

ভালো বাসা দিলে আশা দিলে ঝড়বাদলে (হাত) ছেড়ে দিলে না
তোমার দয়ায় জীবন হয় যে মধুর তাই তো বুঝতাম না।
আঁধার রাতে ঐ যমের হাতে ছেড়ে দিলে না ২
হঠাৎ এসে (হাত বাড়িয়ে) নিলে তুলে মরতে দিলে না।
তুমি জীবন দিলে মরণ নিলে তার নেইকো তুলনা।
তুমি যে আমার প্রাণ ভোমরা তাই তো বুঝতাম না।২


তোমার দেওয়া জীবন (আমার) দিলাম তোমায় ফিরিয়ে
অশ্রুজলে (দয়াল) চরণ তোমার দিলাম মুছিয়ে।
তাই তোমার চলার পথে জীবন আমার দিলাম বিছিয়ে
(দয়াল) প্রভু আমার বুকে তোমার চরণ যুগল রাখো সাজিয়ে।।
তুমি জীবন দিলে মরণ নিলে তার নেইকো তুলনা।
তুমি আমার প্রাণ ভোমরা তাই তো বুঝলাম না।২

(তুমি দুঃখ দিলে গানের সুরে লেখা।)

কবিতাঃ জীবাত্মা আর পরমাত্মা।

প্রখর রৌদ্রের ছোঁয়ায় তপ্ত উতপ্ত আমি
ছায়ার আঁচলে আমিও চাই শীতল হ'তে।
তোমার কায়ায়, তোমার ছায়ায়
হে আমার জীবন স্বামী
চাই আমি আমৃত্যু বাঁচতে।
হে দয়াময়, হে প্রেমময়
বরাভয় চায় সত্ত্বা আমার,
তোমার সঙ্গ পরম সঙ্গ
জীবাত্মা আর পরমাত্মার। 
( লেখা ২০শে জানুয়ারী'২৪)

কবিতাঃ চরিত্র রাঙ্গাও।

তুমি মানো আর না-মানো,
স্বীকার করো আর না-করো, করো ধিক্কার
তা'তে না আমার, না আর কারও
যাবে-আসবে না কিছু,
সময়মতো যখন পড়বে নুইয়ে জীবন
মৃত্যুর হাত ধরবে ব'লে
যেমন সূর্য পড়ে ঢ'লে পশ্চিমাকাশের কোলে
তখন দেখতে পাবে ম্লান সূর্যের আলোয়
ঘরের কোণে জীবন, আছে ঢেকে কালোয়।
সেই আঁধারে পড়বে মনে আমার কথা,
সেদিন থাকবে না কেউ সাথে, না আগুপিছু।
সেদিন অহংকার আর সত্য না-মানার মন্ত্রণা,
দয়ালের ভক্ত সেজে দয়ালের সাথে প্রবঞ্চনা,
ভণ্ডামি আর প্ররোচনা করার যাবতীয় যন্ত্রণা
যতই তুমি মিথ্যে গাম্ভীর্যে ঢেকে রাখো না
এঁটুলি পোকার মতো ছাড়বে না তোমার পিছু।
রোগ-শোকে ঘেরা, গ্রহদোষে মোরা,
বুদ্ধি-বিপর্যয়ে ধস্ত জীবন বিপর্যস্ত
বিধ্বস্ত দরিদ্রতাগ্রস্থ পরিবারে দেখবে
সবার জীবন বৃত্তির বৃত্তে শুধুই ঘুরে মরা।
সেথায় তুমি একা, সম্পূর্ণ একা, সাথী
শুধু অতীতের স্মৃতি যা মুর্খামিতে ভরা।
হতাশ, ক্লান্ত ঘোলাটে চোখে দেখবে চেয়ে
ভেসে আসে দিনে-রাতে ঘুমের মাঝে
অলীক মায়ায় ঘেরা 'অতীত' যত ধেয়ে।
এ কলি যুগের ঢেউ
বাঁচবে না-তো কেউ
বাঁচাতে পারবে না কোনও মতবাদ
আর ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদ।
তাই, ঈশ্বরবিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী
ঈশ্বরের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে
যতই করো ঢক্কানিনাদ
বাঁচবে না কেউ, দিনশেষে অবশেষে
আসবে ফিরে হ'য়ে আর্তনাদ।
তাই বলছি আমি হেঁকে
সবাইকে ডেকে ডেকে
হে জীবন, বাঁচতে যদি চাও
গোঁসাই-গোবিন্দ, যোগী-ধ্যানী
পুরুষ-মহাপুরুষ, সাধক-সাধিকা,
মানী-জ্ঞানী যত সাধু-সন্ন্যাসী আর সন্ন্যাসিনী
ভক্ত-শিষ্য যাই-ই না তুমি হও
ছেড়ে ভণ্ডামি আর কপট-চাতুরী
ভাসাও দয়ালের 'নাম' সাগরে নাউ
জীবন উঠছে দুলে দুলে
কাল-মহাকাল আসছে ফণা তুলে
মারবে ছোবল ব্রহ্মতালু 'পরে
সেদিন থাকবে না কেউ পাশে
দয়ালের ভয়াল রূপ দেখে
সেদিন উঠবে কেঁপে ত্রাসে।
বাঁচবে না বন্ধু সেদিন তুমি,
কর্মফল ভুগে ছাড়তে হবে ভূমি
কিন্তু ভাই, বন্ধু, আত্ম-পরিজন
তোমার সন্তানকে তুমি বাঁচাও,
ব'লে যাও তোমার চরিত্রের যত কুকীর্তি
আর, বলো, তোমার সন্তানকে,
হে আত্মজ, ঈশ্বরের চরিত্রে চরিত্র রাঙাও।
( লেখা ২৫শে জানুয়ারী'২৪)

Thursday, February 22, 2024

গানঃ কেউ কারও নয় বন্ধু!

কেউ কারও নয় বন্ধু! কেউ কারও তো নয়!
এ ভবে তুমি এলে একা যাবে একা ভাই!
কেউ কারও নয় বন্ধু! কেউ কারও তো নয়!
ভাই বলো, বন্ধু বলো, ঘাত প্রতিঘাত
এ ভবেতে তুমি একা সাথী প্রাণনাথ!
মাতা বলো, পিতা বলো, স্বামী স্ত্রী পুত্র কন্যা
পরমপিতা চললে বিনা কেউ কারও তো না!
( লেখা বহু বছর আগে যৌবনে )

উপলব্ধিঃ স্বগতোক্তি,

রবীঠাকুর বলেছেন, "ঘরের মধ্যে তুমি যত খুশী কাঁদো। কিন্তু, দরজা সবসময় হাসি মুখে খুলবে । কারণ যদি কেউ দেখে নেয় যে তুমি ভেঙে পড়েছো তবে সে তোমায় আরো ভেঙে দিয়ে যাবে।" 


আমার প্রিয়জন আজ এটা আমাকে পাঠিয়েছিল শুভ সকাল জানিয়ে। তাকে শুভ সকাল জানিয়ে এটা পড়ে মনের মধ্যে যা ভেসে এলো তাই স্বগতোক্তি করলাম।

আমি কাঁদবো কি হাসবো কার বাপের কি? আমি কারও খাই, না পড়ি যে কারো তোয়াক্কো করবো? আমি যৌবন থেকে এই বয়স পর্যন্ত অনেক কেঁদেছি, প্রকাশ্যে কেঁদেছি একটু সাহায্যের জন্য, না, আমার লজ্জা করেনি। লজ্জা কেন করবে? আমি তো আমার সঙ্গীসাথী, প্রিয় ও পরিচিতজনদের অকপট ভালোবাসতাম। বিলিয়ে দিয়েছিলাম আমার যৌবন, আমার জীবন, জীবনকে বাজি রেখে। নিঃশর্তে তুলে নিয়েছিলাম নিজের কাঁধে অন্যের বোঝা, সিঁড়ি হ'য়েছিলাম প্রত্যেকের জীবনের যারা যারা আমার সংস্পর্শে এসেছিল, আর আজও যারা আসে। কঠিন সেইদিনগুলির কথা মনে পড়লে চোখের কোণা খচখচ ক'রে ওঠে, ভিজে যায়, নীরবে ঝাপসা হ'য়ে আসে দৃষ্টি। যাকে ভালোবাসি তার কাছে সাহায্য চাইতে লজ্জা লাগবে কেন? তবে কোনওদিন কারও কাছে টাকাপয়সা সাহায্য চাইনি। চাইতে হয়নি পরমদয়ালের দয়ায়। কঠিন আর্থিক মুহূর্তগুলি কেমন রহস্যজনকভাবে পার হ'য়ে গেছে। আজও তা' রহস্য। কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়নি্ একটু উঠে দাঁড়াবার, সামান্য সহানুভূতিটুকু দেখায়নি অকারণ কষ্টের সেই দিনগুলিতে কেউ, হাতি গাড্ডায় পড়লে যেমন হয় তেমনি আরো ভেঙে দিতে চেয়েছে শরীরে-মনে সেই সমস্যার দিনগুলিতে, কিন্তু কেউ ভাঙতে পেরেছি কি? পারেনি, আরো শক্তিমান করেছে। আমি আমার শিক্ষা, ক্রীড়া, ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, চাকরী ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রের উদ্দাম অপ্রতিরোধ্য যৌবনের দিনগুলি থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত আমার কাঁদার যারা কারণ হ'য়ে ছিল, তারা আজ অনেকেই বেঁচে নেই, অনেকেই আছে, আমি তাদের প্রত্যেকের খবর রাখি, খবর পাই। মনে পড়ে প্রত্যেকের মুখ, প্রত্যেকের সাথে সু'দিন ও দুর্দিনের মুহূর্তগুলির। মনে পড়ে পিছন থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে ছুরি মারার প্রত্যেকের প্রতিটি মুহুর্ত। যাদের জন্যই সিঁড়ি হয়েছিলাম নিঃশর্তে সেই ছোটোবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে, শিক্ষা, ক্রীড়া, ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, চাকরী ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সহপাঠী, ক্রীড়াসঙ্গী, গুরুভাই, সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, সহকর্মী, বন্ধু প্রত্যকের জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের "ছোটোকে বড় করও, বড়কে আরও বড় করো" দর্শনের ছাত্র হ'য়ে সেইখানেই পদাঘাতে ফেলে দিয়েছে সেই সিঁড়ি----যে সিঁড়ি দিয়ে এসেছে উঠে উপরে----কাজ ফুরিয়ে যাওয়ার পরমুহুর্তে, দাবিয়ে রাখতে চেয়েছে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে। অথচ কারও সঙ্গে ছিল না, আজও নেই আমার কোনও বৈরিতা। কোনওদিনও কার সঙ্গে হয়নি আমার কলহ, বচসা। যখনই দেখেছি সবাইকে ছেড়ে দিয়েছিলাম এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা নিজেকে পিছনে সরিয়ে এনে। প্রতিযোগিতা, লড়াই আমার চির অপ্রিয়। প্রত্যেকের জন্য আমার দয়ালের কাছে সুস্থতা প্রার্থনা করি, মঙ্গল কামনা করি।

যারা আজ নেই, আর যারা আছে তাদের সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তোমরা আমাকে ভেঙে দিয়েছো আমি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। বারবার ভেঙে দিতে চেয়েছো আর ভেঙে দিয়েও ভেঙে দিতে পারোনি, নিজেরাই ভেঙে চুড়মার হ'য়ে হয় চলে গেছো নতুবা আজও আছো বেঁচে। আমি আছি, আজও বেঁচে আছি সেই ৭০ দশকের বাপি একইরকমভাবে টানটান হ'য়ে আকাশের দিকে মাথা উঁচু ক'রে শরীরে-মনে-আত্মায় পরমাত্মায় মিলিত হবো ব'লে আর তোমাদের দেখবো বলে। আজ আমার ৭০বছর বয়স, আমি বুড়ো হ'য়ে যাইনি, আমি ৭০বছরের এক যুবক। আমি দেখতে চাই, সেদিন কে ঠিক ছিল আমি না আমার বিগত দিনগুলির সঙ্গীসাথী ও পরিচিতজনেরা।
কারণ I am spring of might.

আমি জানি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত চরম দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার কথা। তাঁর শৈশবের, কৈশোরের, যৌবনের ও বার্ধক্যের একাকীত্বের দিনগুলি, একের পর এক প্রিয়জনদের মৃত্যুর কষাঘাতে জর্জরিত যন্ত্রণাময় দিনগুলির কথা, তাঁর চারপাশের আপন ও পরজনদের নিষ্ঠুর আচরণ, বেইমানীর কথা ভাবলে বুঝতে পারি কেন তিনি এই কথা লিখেছিলেন!!!! কি এক অসম্ভব অব্যক্ত ব্যথা বুকে নিয়ে তিনি বেঁচেছিলেন শৈশব থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত। তাঁর কষ্টের কাছে আমার কষ্ট মহাসমুদ্রের মাঝে একটা ছোট্ট বুদবুদ।
আমি আমার বন্ধুর পাঠানো পোষ্টটাকে সামনে রেখে শুধু স্মরণ করেছিলাম অতীত আর বলতে চেয়েছিলাম, কে যেন বলছে কানের কাছে ফিস ফিস ক'রে, ডর কিস বাত কি, হাম হ্যাঁয় না! ম্যায় হু না।

যারা আজও বেঁচে আছো আমার উদ্দাম যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনের সঙ্গীসাথী, পরিচিতজনেরা তোমরাও শক্তির তনয়, এসো আমার সাথে সর্বশক্তিমানের সাথে মিলিত হ'ই। তিনি যে তোমার আমার সবার অপেক্ষায় ব'সে আছেন, হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকছেন, আয়, আয়, আয়।
( লেখা ১১ই ফেব্রুয়ারী'২৪)।

 

প্রবন্ধঃ ১৮ই ফেব্রুয়ারী--------

আনন্দ ও বেদনার এক অপুর্ব মিশ্রণ ১৮ই ফেব্রুয়ারী।
১৮ই ফেব্রুয়ারী এক পবিত্র তারিখ ও দিনের সাক্ষী বহন ক'রে চলেছে। নিরাকার ঈশ্বরের এক অপূর্ব রহস্যময় আসা যাওয়ার এক লীলার সাক্ষী এই ১৮ই ফেব্রুয়ারী।

নিরাকার ঈশ্বরের সাকার অষ্টম রূপের ষষ্ট রূপ শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আজকের দিনে নেমে যেমন এসেছিলেন, ঠিক তেমনি এই দিনেই তিনি আবার নেমে এসেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ রূপে। নেমে এসেছিলেন হিংসায় পরিপূর্ণ অহংকারী প্রেমহীন মূর্খ মানুষের মাঝে প্রেমের স্বাদ দিয়ে সবাইকে প্রেমের মহাসমুদ্রে মিশিয়ে দিতে। এইভাবে নিরাকার ঈশ্বর সাকার হ'য়ে নেমে এসেছিলেন মোট আটবার। আর এই আটবারের মধ্যে তিনবার তিনি প্রেম বিলাবার সঙ্গে সঙ্গে অসুর বধের জন্যও এসেছিলেন। এসে তাঁর দয়াল রূপের মাঝে থাকা ভয়ংকর ভয়াল রূপকে প্রকট করেছিলেন।

এই আটবারের আবির্ভাবে তাঁর দয়াল ও ভয়াল রূপের সংমিশ্রণে প্রথম এসেছিলেন শ্রীশ্রীরামচন্দ্র রূপে, দ্বিতীয়বার শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, তৃতীয়বার অর্থাৎ পঞ্চম রূপে এসেছিলেন শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ রূপে। এই তিন তিনবার তিনি প্রভূত অর্থে বলবান ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ অহঙ্কারী ঔদ্ধত্ব মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই শেষ কথা। মানুষের কাছে তা অতীত। মানুষ ভুলে গেছে সেই কথা। আবার আসছে সেই ভয়ংকর দিন আগামীতে। মানুষ তুমি প্রস্তুত থেকো সেই দিনের জন্য, আর রেখে যাও তুমি তোমাকে রেত শরীরে তোমার উত্তরসূরির মধ্যে সেই ভয়ংকর দিনের জন্য।

আর, বাকী যে কয়েকবার তিনি এসেছিলেন প্রতিবার তিনি প্রেমের বাঁধনে বাঁধতেই এসেছিলেন তাঁর সৃষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সন্তানদের। তাঁর সেই রূপ হ'লো শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ এবং সর্বশেষ The greatest phenomenon, greatest wonder of the world (বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়) শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে।
আজকের এই দিনে ১৮ই ফেব্রুয়ারী তারিখে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের মালিক সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্টির পরমকারণ, পরমসত্তা, পরমউৎস, পরমপিতা পরমপ্রেমময় নিরাকার ঈশ্বর সাকার রূপে নেমে এসেছিলেন মানুষ মায়ের গর্ভে শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ রূপে ৫০০ বছরের ব্যবধানে। আর এইবার এই কলি যুগের শেষে নেমে এলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ তিরোধান ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আবির্ভাবের ব্যবধান মাত্র ২বছর ২৯দিন। এত অল্প দিনের ব্যবধানের কারণ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের ব'লে যাওয়া কথা। শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ ব'লে গেছিলেন, আমি খুব শিগগিরি আসছি, যাবো আর আসবো। তাই এই অল্প সময়ের ব্যবধান। আজকের এই ১৮ই ফেব্রুয়ারী শুভ দিনেই তিনি দু'দুবার এসেছিলেন; আর আজকের এই তিথিতেই তিনি তাঁর সাকার রূপ ছেড়ে পুনরায় নিরাকার রূপে ফিরে গেলেন। আর ফিরে গেলেন প্রেমের তীব্র আকর্ষণের চরম রূপের নিদর্শন দিয়ে। সেই নিদর্শন দিয়ে গেলেন তাঁর কথার মধ্যে দিয়ে, "এইবার আমি বধ করতে আসিনি, এসেছি বশ করতে।" তাঁর এই বশ করার মধ্যে আছে প্রেমের নরম-গরম, মাখোমাখো, চরম অভূতপূর্ব রূপ!!!

তাই আজ একবার সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি তাঁকে আর নিজের শুষ্ক প্রেমহীন হৃদয়ে চোখের জলে প্রেমকে প্রার্থনা করি। 
( লেখা ১৮ই ফেব্রুয়ারী'২০২৪ )।


আলোচনার টেবিল (২) বিষয়ঃ সগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ।

আজ সকালে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে 'সগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ' বিষয় উঠে এলো। সেটা আলোচনার জন্য এখানে তুলে দিলাম।
আলোচনার টেবিলে সকলকেই আমন্ত্রণ জানাই। আসুন এই ব্যাপারে শ্রীশ্রীঠাকুরের কি বলা আছে যারা জানেন তারা তা তুলে ধরলে সবাই উপকৃত হবে।
সগোত্র মানে হ'লো একবংশীয়, একবংশজাত, জ্ঞাতিগুষ্টির মধ্যে বিবাহ। রক্তের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে এড়াতে এই নিয়ম চালু হয়েছিল। কারণ, একই রক্তের মিশ্রণের কারণে সন্তানের জিনে জেনেটিক বিকৃতি দেখা দেয়; অর্থাৎ শিশুর শারীরিক বিকৃতি হতে পারে। একই রক্তের মিশ্রণের কারণে শারীরিক বিকৃতি না হ'লেও মানসিক বিকৃতি অবশ্যম্ভাবী।
যাই হ'ক, এ এক কঠিন ও জটিল জন্ম বিজ্ঞান যা বিজ্ঞানীদের বিষয়। দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই বিবাহ ও জন্ম বিজ্ঞানের ওপর বিশদে সুক্ষাতিসুক্ষভাবে বলা আছে, যা গবেষকদের গবেষণার বিষয়। সাধারণ মানুষ মানলো কি মানলো না তা'তে বিজ্ঞানের বা সত্যের কিছু যায় আসে না। সত্য সত্যই থেকে যায় আর বিজ্ঞান বিজ্ঞানই। এই বিধানের উল্লঙ্ঘনকারীকে তার ফল পেতেই হয়।
এবার আসি আলোচনার বিষয়ে।
যেমন, ঘোষ পদবী তে শান্ডিল্য গোত্র কি ভাবে? কাশ্যপ গোত্রের মধ্যে ব্রাহ্মণ, শূদ্র ইত্যাদি আছে কেন? গোত্রের ধারা কি বর্ণাশ্রম অনুযায়ী ঋষিদের ঔরসজাতদের মধ্যে বংশ পরম্পরায় বহমান? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বিষয়টা ফেসবুকে আলোচনার জন্য তুলে দিলাম।


প্রসঙ্গের মধ্যে থেকেই আলোচনা করার অনুরোধ রইলো। আমি আমার ধারণা ব্যক্ত করলাম। এই বিষয়ে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞদের উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।


প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী গোত্র মানে একটা বংশ বা গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ কোনও ঋষির ঔরসজাত সন্তান ও তাঁদের বংশধরদের বোঝায়। আবার গোত্র বলতে বিশেষ অঞ্চল বা বিশেষ চিহ্নকেও চিহ্নিত করে।


এছাড়া আমার জানা অনুযায়ী গোত্র মানে সাধনার ধারা। এই সাধনা ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান উভয়ের সাধনা হ'তে পারে। এই অর্থে ঔরসজাত সন্তানেরা যেমন তাঁদের পিতা ঋষির সাধনার ধারাকে ব'য়ে নিয়ে যায় বংশ পরম্পরায়, ঠিক তেমনি ঋষির কৃষ্টিজাত সন্তানেরাও গুরুর সাধনার ধারাকে ব'য়ে নিয়ে যায়, তাই সেই কৃষ্টিজাত সন্তানেরাও সেই গুরুর গোত্রের অধিকারী হয়, অধিকারী হয় কৃষ্টির কারণে ব'লে আমার মনে হয়, নতুবা একই গোত্রের অধিকারী বিপ্র ও অন্যান্য বর্ণের মানুষেরা হয় কি ক'রে আমার জানা নেই।
আর ঔরসসজাত সন্তানেরা কৃষ্টিকে ব'য়ে নিয়ে যাক আর না যাক তারা রক্তের কারণে সেই গোত্রের স্বাভাবিক ভাবেই অধিকারী হয়। আর যে সন্তান পিতার রক্ত ও কৃষ্টিকে একইসঙ্গে গুরুত্বের সঙ্গে ব'য়ে নিয়ে যায় সেই উত্তম সন্তান। সেই প্রকৃত গোত্রের ধারক ও বাহক।


যাই হ'ক, আমি গোত্রের অন্তর্নিহিত অর্থকে বিশ্লেষণ ক'রে বোঝার চেষ্টা করলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম কৃষ্টিজাত সন্তানেরা ঔরসজাত সন্তানদের মতো ঐ একই ঋষির গোত্রের অধিকারী হয় কিনা। তাই ঔরসজাত গোত্রের অধিকারী সন্তানদের মধ্যে একই রক্তের সংমিশ্রণের কারণে বিবাহ নিষিদ্ধ হ'লেও কৃষ্টিজাত গোত্রের অধিকারী সন্তানদের মধ্যে রক্তের সংমিশ্রণের সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও বিবাহ নিষিদ্ধ কিনা সেটা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'বিবাহ বিধান' বিষয় সম্বন্ধে গবেষকরা সঠিক বলতে পারবেন। আমার ধারণা ঠিক হ'তেও পারে, নাও পারে।


যাই হ'ক, যদি কেউ জানে বিশ্লেষণ ক'রে এখানে তুলে ধরে তাহ'লে উপকৃত হ'ই। (লেখা ১৯শে ফেব্রুয়ারী'২০২৪)

প্রবন্ধঃ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও আর্য সমাজ ব্যবস্থা।

নীচের পোষ্টে বিজ্ঞানীর কথার মধ্যে একটা inferiority complex প্রকাশ পায়। আর এই প্রকাশ স্বাভাবিক। কারণ তিনি অসাধারণ মেধার অধিকারী হলেও, ছাত্র জীবনে অসাধারণ সহপাঠীদের সংস্পর্শে এবং দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও তিনিও ছিলেন বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তের মধ্যে ঘোরা আমাদের মতোই একজন জীবাত্মা। পরমাত্মার সংশ্রবে জীবের আত্মার বন্ধন মুক্তি ঘটে ও মহান আত্মার পথে চালিত হ'য়ে পরমাত্মায় যুক্ত হয়, অর্থাৎ জ্ঞানের চরম অবস্থা প্রাপ্ত হয়, কারণের কারণ পরমকারণের সন্ধান পায়, সমস্ত কিছুর উৎসের উৎস পরম উৎস, সমস্ত সত্ত্বার সত্তা পরমসত্ত্বার সন্ধান পায়। তা তাঁর জীবনে হ'য়ে ওঠেনি। শৈশবের হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামির তিক্ত স্মৃতি, একশ্রেণীর ব্রাহ্মণদের অতিরিক্ত যুক্তিহীন আচরণের বাড়াবাড়ি ও শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে একচেটিয়া মৌরসী পাট্টা বজায় রাখার প্রয়াস এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর সংস্কার কাজে ধর্মীয় বাধা তাঁকে তাঁর চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে এমনতর প্রভাব বিস্তার করেছিল। যা স্বাভাবিক। আমার আপনার সবার মতই স্বাভাবিক। যে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তাঁদেরই সহপাঠী সহকর্মী, নোবেল জয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী সি ভি রমণের সহকারী ফিজিক্সে গোল্ড মেডেলিস্ট পরম বিজ্ঞানী ঘোরতর নাস্তিক শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য (কেষ্টদা) মহাত্মায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পরমাত্মার সংস্পর্শে এসে। অসাধারণ মেধার অধিকারী শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য সেই সময়ে বিদেশ যাওয়ার ডাককে উপেক্ষা ক'রে, ভবিষ্যতের সমস্ত বিজ্ঞান সাধনার সমস্ত রকম সুযোগকে ত্যাগ ক'রে, ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান সাধনায় নিশ্চিত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ ক'রে The greatest scientist of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর চরণে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন আমৃত্যু। আর, তাই তিনি সৃষ্টির সবকিছুর পিছনে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত কর্মকান্ডের পিছনে সত্যটাকে দেখতে পারার শক্তি অর্জন করেছিলেন। একজন বিজ্ঞানী হ'য়ে চিনতে পেরেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন পরমবিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে। আর, তাই পরমবিজ্ঞানীর সন্ধান পেয়ে তিনি অবলীলায় অবহেলা করতে পেরেছিলেন সেই বিজ্ঞানের ক্ষুদ্র অংশের সাধনাকে।
শ্রীমেঘনাদ সাহা ও শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য এই দুই বাঙালী বিজ্ঞানীর মধ্যে ছিল এই তফাৎ। তফাৎ-এর এই কারণ একজনের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ছিল, আর একজনের জীবনে আদর্শ ছিল না, ছিল অসাধারণ জ্ঞানের অহংকার, হীনমন্যতা আর ছোটোবেলার বাহ্মণ্যবাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা।


পুরোহিতের সংস্কৃত মন্ত্রের অর্থ না জেনে শ্রাদ্ধ বা বিবাহের মন্ত্র পড়া নিশ্চয়ই অপরাধ ও ভুল। কিন্তু তাঁর মধ্যে প্রবাহিত সংস্কৃত রক্তকে অস্বীকার করা আরও বড় ভুল ও পাপ। পূর্বপুরুষের উষ্ণ রক্তের মধ্যে প্রবাহিত গুণাবলী হয়তো পোষণের অভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন কিন্তু যে কোনও উষ্ণতার স্পর্শে তাপিত হ'য়ে সেই রক্তের মধ্যে প্রবাহিত পূর্বপুরুষের সুপ্ত গুণাবলীকে সহজেই জাগিয়ে তোলা যেতে পারে যা ( তাঁর কথানুযায়ী ) মুচি বা তাঁতির রক্তের দ্বারা সম্ভব নয়। তাঁতি বা মুচি নিশ্চয়ই পরিশ্রম করে এবং তা তার গুণ ও কর্মানুযায়ী বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। পুরোহিত হয়তো তাঁর রক্তের মধ্যে প্রবাহিত গুণাবলীকে জাগিয়ে তুলতে পারেনি সাধনার ধারাকে বজায় রেখেই। নিঃসন্দেহে তাঁর পূর্বপুরুষের অর্জিত গুণাবলীকে নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে না পারার জন্য নিজেই দায়ী এবং সেই অনুযায়ীই সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃত হয়। তাই ব'লে তার রক্ত কখনই অসম্মানীয় নয়। যেমন মুচি বা তাঁতির ছেলের মধ্যে তার পিতার মত উন্নত মানের জুতো তৈরী ও সেলাই এবং তাঁতির মত কাপড় তৈরীর কাজে দক্ষতা নাই থাকতে পারে জন্মগত ও অনভ্যাস ইত্যাদি নানা কারণে। কিন্তু তার রক্তে তার পিতার মত গুণাবলী সুপ্ত থাকে। আর এই গুণাবলী বৈশিষ্ট্যানুযায়ী। আর, এই নিজের নিজের বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে বৈশিষ্ট্যকে বিকশিত করার পর অন্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। নতুবা নয়। নিজের বৈশিষ্ট্যকে অবহেলা বা উপেক্ষা ক'রে নয়।


আর, আর্য সমাজব্যবস্থায় সবার সবরকম উন্নয়নের দরজা খোলা ছিল, কোনও রকম বাধা ছিল না। সেখানে কোনও উচ্চনীচ ভেদাভেদ ছিল না। ব্যক্তিগত বদমাইসীর কারণে ভয়ংকর সমস্যার জন্ম হয়েছিল যে ট্রাডিশান আজও ব'য়ে চলেছে। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের "ছোটোকে বড় করো ও বড়োকে আরও বড় করো--------" এই থিয়োরী আর্য সমাজব্যবস্থায় ছিল।


আর, সমাজ সভ্যতাকে যদি কেউ ধ্বংস ক'রে সেই সমাজ বিবর্তনের ঘোর অন্ধকার যুগে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, অধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মকে খতম করতে চায় তখন তাঁকে বধ করার জন্য, তাঁর মাথা কেটে নেবার জন্য আবার শ্রীরামচন্দ্র বা শ্রীকৃষ্ণকে আবার আসতে হবে। এর অন্যথা হবার নয়। তা'তে আগেকার সময় আর এখনকার সময় পরিবেশ পরিস্থিতি যতই ভিন্ন হ'ক না কেন। ভালো কোনও কিছু করার জন্য, সমাজ, সভ্যতার মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য, ধর্ম রক্ষার জন্য যদি কেউ এগিয়ে আসে তাদের কখনও কারও মাথা কেটে নেওয়া হয়নি, আর্য সভ্যতায় অকারণ হত্যার চুলকুনি ছিল না। বিজ্ঞানীর ধারণা ভুল। হীনমন্যতার কারণে এই ভুলের জন্ম। জীবনে আদর্শ না থাকলে, শ্রেয়তর উচ্চ সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ না থাকলে হীনমন্যতা ও প্রভূত জ্ঞান আদর্শের স্পর্শে, ছোঁয়ায় জারিত হয় না। ফলে নূতন দৃষ্টির আলোকে তা সত্তাকে স্পর্শ করে না। তখন বিজ্ঞানী হ'য়েও বিজ্ঞানের আলোকে আলোকিত বর্ণাশ্রম ধর্মকে বুঝতে পারে না। সমাজের এলিট সম্প্রদায় যখন ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থকে বুঝতে পারে না তখন এটা মানবজাতির পক্ষে দুর্ভাগ্য।


কিন্তু আমাদের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর হ'য়ে নেমে আসেন মানুষের মাঝে মানুষ হ'য়ে।
(লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০২৪)।


Wednesday, February 21, 2024

প্রবন্ধঃ কেউ অপরিহার্য নয়

‘কেউ অপরিহার্য নয়’। এই কথাটা একসময় খুব শুনতাম। এখনও শুনি। শুনি প্রতিদিন টিভির নিউজ চ্যানেলগুলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অন্তর্কলহের পরিণামস্বরূপ ক্রমাগত দলীয় প্রচারের ঢক্কানিনাদ দলে ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ টিভির নিউজচ্যানেল গুলিকে গ্রাস করে ফেলেছে। খবর শুনতে শুনতে ক্লান্ত শরীর মন, ক্লান্ত চোখ মুখ; কিন্তু ক্লান্তিহীন অন্তহীন খবর পরিবেশন। কথাটা শুনতাম বামপন্থীদের মুখে। দলে কেউ অপরিহার্য নয়। আর সেটা বেশী বেশী শুনতাম যখন বামপন্থীরা চূড়ান্ত ক্ষমতার শীর্ষে ছিল তখন। প্রথমদিকে তাদের সমষ্টিগত চিন্তা, সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত, সমষ্টিগত নেতৃত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি রাজনৈতিক দর্শন সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আউড়াতে শুনতাম। পরবর্তীক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসীন হওয়া মাত্র দেখা গেল ধীরে ধীরে ক্ষমতার গোলকধাম বা ভুলভুলাইয়া-ই ঘুরতে ঘুরতে এই ‘সমষ্টি’ নামক দর্শনে তথাকথিত বিশ্বাসী নীতিবাগীশরাই তথাকথিত বিকৃত ‘ব্যষ্টি’ দর্শনে আসক্ত হয়ে পড়েন। আর তখন এই তীব্র আসক্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় তার প্রমাণ আমরা সারা বিশ্বে প্রতিনিয়তই দেখেছি এবং আমাদের রাজ্যেও অফিসে-কাছারিতে, কলে-কারখানায়, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা দেখেছি ও বর্তমানেও তা দেখছি। এমনকি ঘরে-বাইরে, পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে একই দৃশ্য অনুষ্ঠিত হ’য়ে চলেছে আবহমানকাল ধরে। "সেই Tradition সমানে চলেছে" - দ্রষ্টাপুরুষ এস ওয়াজেদ আলির এই একটা মন্তব্যই তাঁকে আমাদের মাঝে জীবন্ত করে রেখেছে, রাখবে চিরদিন।


এই ক্ষমতালোভী মানুষরাই ভোল পালটে নিজের স্বার্থে নিজের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে কিম্বা ক্ষমতাসীন মানুষটির অসময়ে বা দুর্দিনে পরিবর্ত পরিস্থিতিতে পরবর্তী ক্ষমতাসীন মানুষটিকে খুশি করার তাগিদে তাঁর পক্ষে আওয়াজ তোলে 'কেউ অপরিহার্য নয়'। আর সেই পরিহার্য মানুষটির যখন অভাব অনুভূত হয় বা মৃত্যু হয় তখন ঘরে বাইরে ‘এক অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে তাঁর অনুপস্থিতিকে চিহ্নিত করা হয়। কি অদ্ভুত নির্লজ্জ বেইমানী আর সীমাহীন সুবিধাবাদী মানসিকতা! এ সেই নিষ্ঠুর, নির্ম্মম, নৃশংস প্রবাদের জীবন্ত প্রতিফলন, ‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি’। কি অদ্ভুত মস্তিষ্ক এদের! নিজের অবস্থান থেকে নিজেরাই ১৮০ডিগ্রি সরে গিয়ে নিজের অজান্তেই হোক আর ভালো মানুষের মুখোশ ধারণ করেই হোক নিজেদের নিজেরাই অপমান করে বসে! উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা যেতে পারে এমন অনেক দৃষ্টান্তই আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ক্রমশঃ (লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৫)

প্রবন্ধঃ কেউ অপরিহার্য নয়' (৩)

'কেউ অপরিহার্য নয়' এই বিকৃত, অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক দর্শন গ্রহণ করার ফল কি হয়েছিল তা পরবর্তী কাহানীতে তুলে ধরা হ'ল।
আবার এই হিন্দমোটর কারখানায় ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ এই বিকৃত অবাস্তব দর্শনের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আছে। সময়টা তখন সম্ভবত ৮০সালের পর। সরকারে তখন বামপন্থীরা। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে ৭৭সালে সরকার গঠনের পর প্রথম পাঁচ বছর পূর্ণ হ’তে চলেছে। কারখানায় তখন প্রয়াত দীনেন ভট্টাচার্যের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে CITU ইউনিয়ন ক্ষমতায় আসীন। তখন কারখানায় একটা কথা চালু ছিল সবার মুখে মুখে ইউনিয়ন তথা হিন্দমোটরের শেষ কথা দীনেন ভট্টাচার্য ও কোম্পানীর সর্বাধিনায়ক এস এল ভাট্টারের সখ্যতাই বলুন আর দ্বৈরথই বলুন চলত সমানে সমানে। হিন্দমোটরের বর্তমান মর্ম্মান্তিক দুর্দিনে এখনও কান পাতলে শোনা যায় কারখানার আনাচে কানাচে যে মজার গল্প চালু ছিল তাহ’ল শ্রমিকের স্বার্থ ও কোম্পানীর স্বার্থ নিয়ে যখন শ্রমিকের প্রতিনিধি দীনেনবাবু ও কারখানার প্রতিনিধি ভাট্টারজী দুজন দু’প্রান্তে আলোচনায় বসতেন তখন শ্রদ্ধেয় দীনেন ভট্টাচার্য তাঁর ছোটখাটো কালো শরীরের নিটোল ভুরি নাচিয়ে হাসতে হাসতে টেবিলের ওপ্রান্তে বসা কারখানার সর্বাধিনায়ক এস এল ভাট্টারের উদ্দেশ্যে বলতেন, ‘আপনার ফিফটি আমার ফিফটি’! শ্রমিক স্বার্থে ও কোম্পানীর স্বার্থে এই যুগলবন্দীর লেনদেন, বোঝাপড়ার নিখুঁত ভারসাম্যের খেলা ছিল দেখার মত। শ্রমিকনেতা শ্রদ্ধেয় দীনেনবাবু পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে ভাট্টারজীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে মসৃণভাবে শেষ যে কয়েক হাজার শ্রমিককে দু দফায় স্থায়ী করে গেছেন সেই গন্ধ হাতে মেখে ঢেঁকুর তুলে গেছে পরবর্তী দীর্ঘ সময় সিটু নেতৃত্ব। তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হ’য়ে গেছিল ঐক্যবদ্ধ সিটূ নেতৃত্ব। আর তখন বারবার একটা নামই উঠে এসেছিল হিন্দমোটরের আকাশে বাতাসে। আর সেই নাম হ’ল প্রয়াত শ্রদ্ধেয় দীনেন ভট্টাচার্য্য। তাঁর অনুপস্থিতির মুল্য কি হ’তে পারে তার নগ্ন রুপ দেখেছিল হিন্দমোটরের হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী, বিভিন্ন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ও তাদের নেতৃবৃন্দ। সেই অস্থির সময়ে শ্রমিক কর্মচারী মাঝে সত্যকে ঢেকে রাখতে যে কথাটা সচেতন ভাবেই বারবার বলা হ’ত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তা হ’ল সেই ভয়ংকর অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক দর্শন ‘কেউ অপরিহার্য নয়’!


যাইহোক পরবর্তী সময়ে দায়িত্বে অনেকেই এসেছিলেন যেমন বিজয় মোদক, বিনোদ দাস ইত্যাদি এমনকি সিআইটি ইউ-র তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি চিত্তব্রত মজুমদারের সক্রিয় পর্যবেক্ষণও ইউনিয়নকে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের হাত থেকে রক্ষা ক’রে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ এক শৃঙ্খলিত মজবুত ট্রেড ইউনিয়নের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারেনি যা কিনা দীনেন ভট্টাচার্যের আমলে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্ধ মুখোশের আড়ালে হ’লেও এক ঐক্যবদ্ধ চেহারায় ছিল একথা অনস্বীকার্য। আর সেই এক এক নেতার এক এক গোষ্ঠীর পদচারণে ভারী হ’য়ে উঠেছিল হিন্দমোটরের আকাশ বাতাস, ক্ষমতা দখলের নগ্ন লড়াই-এ ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আদর্শ, শ্রমিক স্বার্থ, কোম্পানীর উন্নতি; চরম ব্যহত হয়েছিল উৎপাদন ব্যবস্থা। বহু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কায়েমী স্বার্থে জীর্ণ দীর্ণ সিটু ইউনিয়ন মুছে গেছিল হিন্দমোটরের বুক থেকে। আর ধীরে ধীরে নেবে আসছিল ঈশান কোল কালো করে এক ভয়ংকর ঘুটঘুটে অন্ধকারের ঘন কালো মেঘ যা কিনা সুনামীর ঝড়ের তীব্রতাকে হার মানিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ থেকে হিন্দমোটর নামক বিশাল টাইটানিক রুপী জাহাজের অস্তিত্বকে চিরদিনের মত। আজ স্মৃতি হ’য়ে আছে আইএনটিইউসি, এসএসকেইউ, এসএসইউ, সিআইটিইউ শ্রমিক কর্মচারী ও কনভয় ড্রাইভারদের ইউনিয়ন অফিস! স্মৃতি হয়ে রইল শুধু হিন্দমোটরের অ্যাম্বাসাডর, কন্টেসা, ট্রেকার, বেডফোর্ড-এর মত অভূতপূর্ব সৃষ্টি! ইতিহাস হ’য়ে রইল হিন্দমোটর ও তার নাটকীয় কায়েমী স্বার্থের শ্রমিক আন্দোলন। আজ অধিগৃহীত প্রায় সাড়ে সাতশো একর জমির মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশো একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বিশাল কারখানা ও তৎসংলগ্ন প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন, বাংলো, স্কুল, মন্দির, হাসপাতাল, শ্রমিক কোয়ার্টার, খেলার মাঠ ইত্যাদি ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত। সন্ধ্যে ৬.৩০মিঃ থেকে ৭.৩০মিঃ পর্যন্ত্য এক ঘন্টা আলো থাকে তারপর আবার ডুবে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা ঘোর অন্ধকারে। আর সেই গাঢ় অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকলে একটা গা ছমছম করা রহস্যময় ফিসফিসানি যেন অন্ধকারে ডুবে থাকা গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায় শোনা যায়! মন্দিরের সামনে বিশাল তেল পুকুরের জলে ঢেউ তুলে অন্ধকারের বুক ভেদ করে ভেসে আসে বিকৃত সুরে একটা তীব্র ব্যঙ্গধ্বনি, শুনতে পাই কে বা কারা যেন বলছে,
‘কেউ অপরিহার্য নয়’!!!!!! 'কেউ অপরিহার্য নয়'! (লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৫)

প্রবন্ধঃ কেউ অপরিহার্য নয়’! (২)

'কেউ অপরিহার্য নয়' এই বিকৃত, অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক দর্শন গ্রহণ করার ফল কি হয়েছিল তা পরবর্তী কাহানীতে তুলে ধরা হ'ল।
আবার ভারত তথা এশিয়ার একসময়ের বৃহৎ অটোমোবাইল শিল্প হিন্দুস্তান মোটর্স-এর দিকে যদি ফিরে তাকানো যায় তাহ’লে দেখতে পাবো যখন সি কে বিড়লা কারখানার মালিকানার অধিকার লাভ ক’রে কারখানায় পা রাখলো ১৯৮০ সালে তখন পা রেখেই তিনি কারখানার দীর্ঘদিনের মালি অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট এস এল ভাট্টার যিনি তিল তিল করে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষনের মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে কারখানার শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছিলেন তাঁকেই ইউনিয়নগুলির নেতৃবৃন্দের সহায়তায় কারখানার কর্তৃত্ব থেকে সরাবার জন্য আদা জল খেয়ে লাগলেন। যে মালীর আঙ্গুল ধরে একদিন ছোট্ট ছেলেটি হিন্দমোটর নামক বিশাল টাইটানিক জাহাজরুপী কারখানা ঘুরে বেড়িয়েছিল সেই ছোট্ট ছেলেটি যৌবনে পা দিয়েই কারখানার মালিক হওয়ার অধিকারে সেই দীর্ঘদিনের মালীকে চূড়ান্ত অপমান করে কারখানা থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। চোখের জল চেপে রেখে, বুকের ব্যথা বুকে লুকিয়ে রেখে কারখানার শ্রীবৃদ্ধির জন্য জীবন যৌবন সম্পুর্ণভাবে সঁপে দেওয়া পেসমেকার বুকে নিয়ে সেই যে মানুষটি কারখানার বাইরে পা রেখেছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে সেই মানুষটি আর কোনোদিন পিছন ফিরে তাকাননি সেই নিজের হাতে তৈরী অ্যাম্বাসাডার, ট্রেকার, কন্টেসা ও বেড ফোর্ড গাড়ীর যন্ত্রাংশ তৈরি ও সেই যন্ত্রাংশ পরস্পর যুক্ত করার বিশাল স্বয়ংসম্পুর্ণ কারখানার দিকে। সেদিন হিন্দমোটর কারখানার আকাশে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়েছিল মা অন্নপূর্ণা যেন সেদিন নীরবে চুপি চুপি বেরিয়ে গেছিল কারখানা থেকে ঐ মালীরুপী কারখানার প্রেসিডেন্ট এস এল ভাট্টারের পিছু পিছু। যা আজ দিনের আলোর মত ভয়ংকর স্পষ্ট হিন্দমোটর নামক অটোমোবাইল শিল্পে। আর সেই মালীর জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা ও অটোমোবাইল শিল্পসম্পর্কে সম্পুর্ণ নূতন, অনভিজ্ঞ ‘কাল কা যোগী’ সি কে বিড়লা এনে বসিয়েছিলেন শঙ্কর নারায়নন ও শান্তারাম নামী দুই আধুনিক ম্যানেজমেন্টের দিকপালকে। যাদের আধুনিক চিন্তাধারার মর্মস্পর্শী উদাহরণ আজকের বীভৎস কঙ্কালসার হিন্দমোটর অটোমোবাইল শিল্প। তখন কারখানা জুড়ে ঝড়ের বেগে সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছিল বর্তমান আধুনিক ম্যানেজমেন্টের যুগে মান্ধাতার আমলের ম্যানেজমেন্টের পরিচালক, উত্তরপাড়া থেকে কোন্নগর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল কারখানার রুপকার ভাট্টারজী না-কি বেমানান! হিন্দুস্তান মোটর্সের উত্তরপাড়া প্ল্যান্টের বাগিচায় ‘শান্তারাম’ নামী নূতন ময়ূর পুচ্ছধারী দাঁড়কাকের আগমন ঘটেছে যাকে শ্রমিক কর্মচারীর পক্ষ থেকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘অরণ্যদেব’! সবার চোখেমুখে এক নূতন আশা, স্বপ্ন এই ‘মসীহা’ অরণ্যদেবের হাত ধরে হিন্দমোটরের বুকে নেবে আসবে আধুনিক গাড়ীর স্বর্ণযুগ! ‘অরণ্যদেব’ শান্তানামের হাত ধরে শ্রমিক কর্মচারীর জন্য ‘আচ্ছে দিন আ রহি হ্যায়’ এই অলৌকিক স্বপ্নালু কথাটা শুনেছিলাম সেই নব্বই-এর দশকে আর শুনেছিলাম আরও একটা অদ্ভুত অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক কথা যা হিন্দমোটরের আনাচে কানাচে ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্তর থেকে শ্রমিক-কর্মচারীর তৃণমূলস্তর পর্যন্ত সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে, অস্তিতে-মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিখুঁত প্রচারের মধ্যে দিয়ে সমস্ত বাম-ডান পন্থী ট্রেড ইঊনিয়নের নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় নূতন ম্যানেজমেন্টের নেতৃত্বে তা হ’ল “কেউ অপরিহার্য নয়”!!!!! আর সবাই আপামর শ্রমিক-কর্মচারী ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল সত্যিই এই পৃথিবীতে, এই জীবনে “কেউ অপরিহার্য নয়”। তাই এস এল ভাট্টারের অবর্তমানে কোম্পানীর ও কোম্পানীর শ্রমিক কর্মচারীর কোনও ক্ষতি হবে না। আর আজ সেই দর্শনের পচা দুর্গন্ধে হিন্দমোটরের শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন তছনছ হয়ে গেছে। শাবাশ সি কে বিড়লা শাবাশ! শাবাশ আপনার জীবন দর্শন! শাবাশ আপনার ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ শয়তানি উপলব্ধি! শাবাশ আপনার ব্যবসায়ীক দূরদর্শিতা আর আপনার ধ্বংসলীলার অভুতপুর্ব দক্ষতা-যোগ্যতা। শাবাস শঙ্কর নারায়নন শাবাশ! শোনা গেছিল সেই সময় কোম্পানীর আনাচে কানাচে, সত্যি মিথ্যে জানিনা, কোম্পানীর বৃদ্ধির জন্য, প্রতিযোগীতার বাজারে কোম্পানীকে টিকিয়ে রাখার জন্য, আধুনিক ম্যানেজমেন্টের আধুনিক নূতন গাড়ী বের করার উদ্যোগের জন্য, ছোটাছুটির জন্য আপনি কোনও পুরস্কার পান আর না পান বছরে প্লেন চড়ার জন্য, প্লেন কোম্পানীকে সর্বাধিক পে করার জন্য আপনি প্লেন কোম্পানী থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। শাবাশ শান্তারাম শাবাশ! শ্রমিক-কর্মচারীর সামনে মৃত্যুদেবের আড়ালে অরণ্যদেব হ’য়ে আবির্ভূত হওয়া! কারখানায় না আসা শংকরনারায়নের মত দিল্লীতে বসেই মডার্ন ম্যানেজমেন্টের বিজ্ঞানসম্মত শক্তিশালী হাতিয়ার ‘অপ্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ’-এর সাহায্যে কারখানা পরিচালনের অসীম ক্ষমতা অর্জন ও দিল্লী থেকে বসে বসেই একজন রঙের কারখানার ননইঞ্জিনিয়র অযোগ্য ও অদক্ষ শুধু নয় আপাদমস্তক অভদ্র কর্মচারীকে উত্তরপাড়া প্ল্যান্টের মাথার ওপর বসিয়ে তাঁকে দিয়ে অটোমোবাইল শিল্পকে এবং হিন্দমোটরের পুরোনো দীর্ঘদিনের অটোমোবাইল শিল্পে অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ সমস্ত উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়রদের, শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিচালনা করার দুঃসাহসের জন্য শাবাশী জানাই শান্তানামকে। সেই সময় তাৎক্ষণিক প্রমাণ হয়েছিল সত্যিই ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ এই দর্শন! কিন্তু তার থেকেও বড় যা, সত্য যা ‘সময় সবসে বড়া বলবান’ তা’ও প্রমাণ হয়েছিল বা হয়েছে, আজ যা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। অ্যাম্বাসাডার গাড়ী কারখানার মালিক বি এম বিড়লার সহযোগী এস এল ভাট্টারের অপসারণের পরেই শুরু হ’য়ে যায় কারখানা ধ্বংসের ব্লু প্রিন্ট যা অর্থাৎ কারখানার বিশাল এলাকা আজ শ্মশানের ঘোর অন্ধকার ও নিস্তব্ধতাকে হার মানায়! আর কারখানার সেই ঘোর অন্ধকার নিস্তব্ধ বিশাল কার অ্যাসেম্বলি, ফাউন্ড্রি, ফোর্জ প্ল্যান্ট, ইঞ্জিন প্ল্যান্ট, মেশিন শপ, প্রেস শপ, প্লেটিং শপ সহ বড়ো ছোট অনেক ডিপার্টমেন্ট সঙ্গে বিশাল জেনারেল স্টোর, সিকিউরিটি অফিস, বিশাল অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ বিল্ডিং যাকে বলা হ’ত মেইন অফিস, বিশাল দোতলা ক্যান্টিন, হাসপাতাল, কলোনি মেইন্টেন্যান্স ইত্যাদি চারপাশ থেকে ঘূর্ণির মত ব্যঙ্গের সুরে ভেসে আসে যেন একটাই কথা ‘কেউ অপরিহার্য নয়’! ‘কেউ অপরিহার্য নয়’!!
ক্রমশঃ (লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৫)

প্রবন্ধঃ কেউ অপরিহার্য নয়! (১)

‘কেউ অপরিহার্য নয়’। এই কথাটা একসময় খুব শুনতাম। এখনও শুনি। শুনি প্রতিদিন টিভির নিউজ চ্যানেলগুলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অন্তর্কলহের পরিণামস্বরূপ ক্রমাগত দলীয় প্রচারের ঢক্কানিনাদ দলে ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ টিভির নিউজচ্যানেল গুলিকে গ্রাস করে ফেলেছে। খবর শুনতে শুনতে ক্লান্ত শরীর মন, ক্লান্ত চোখ মুখ; কিন্তু ক্লান্তিহীন অন্তহীন খবর পরিবেশন। কথাটা শুনতাম বামপন্থীদের মুখে। দলে কেউ অপরিহার্য নয়। আর সেটা বেশী বেশী শুনতাম যখন বামপন্থীরা চূড়ান্ত ক্ষমতার শীর্ষে ছিল তখন। প্রথমদিকে তাদের সমষ্টিগত চিন্তা, সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত, সমষ্টিগত নেতৃত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি রাজনৈতিক দর্শন সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আউড়াতে শুনতাম। পরবর্তীক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসীন হওয়া মাত্র দেখা গেল ধীরে ধীরে ক্ষমতার গোলকধাম বা ভুলভুলাইয়া-ই ঘুরতে ঘুরতে এই ‘সমষ্টি’ নামক দর্শনে তথাকথিত বিশ্বাসী নীতিবাগীশরাই তথাকথিত বিকৃত ‘ব্যষ্টি’ দর্শনে আসক্ত হয়ে পড়েন। আর তখন এই তীব্র আসক্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় তার প্রমাণ আমরা সারা বিশ্বে প্রতিনিয়তই দেখেছি এবং আমাদের রাজ্যেও অফিসে-কাছারিতে, কলে-কারখানায়, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা দেখেছি ও বর্তমানেও তা দেখছি। এমনকি ঘরে-বাইরে, পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে একই দৃশ্য অনুষ্ঠিত হ’য়ে চলেছে আবহমানকাল ধরে। "সেই Tradition সমানে চলেছে" - দ্রষ্টাপুরুষ এস ওয়াজেদ আলির এই একটা মন্তব্যই তাঁকে আমাদের মাঝে জীবন্ত করে রেখেছে, রাখবে চিরদিন।

এই ক্ষমতালোভী মানুষরাই নিজের স্বার্থে নিজের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে কিম্বা ভোল পালটে ক্ষমতাসীন মানুষটির অসময়ে বা দুর্দিনে পরিবর্ত পরিস্থিতিতে পরবর্তী ক্ষমতাসীন মানুষটিকে খুশি করার তাগিদে তাঁর পক্ষে আওয়াজ তোলে 'কেউ অপরিহার্য নয়'। আর সেই পরিহার্য মানুষটির যখন অভাব অনুভূত হয় বা মৃত্যু হয় তখন ঘরে বাইরে ‘এক অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে তাঁর অনুপস্থিতিকে চিহ্নিত করা হয়। কি অদ্ভুত নির্লজ্জ বেইমানী আর সীমাহীন সুবিধাবাদী মানসিকতা! এ সেই নিষ্ঠুর, নির্ম্মম, নৃশংস প্রবাদের জীবন্ত প্রতিফলন, ‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি’। কি অদ্ভুত মস্তিষ্ক এদের! নিজের অবস্থান থেকে নিজেরাই ১৮০ডিগ্রি সরে গিয়ে নিজের অজান্তেই হোক আর ভালো মানুষের মুখোশ ধারণ করেই হোক নিজেদের নিজেরাই অপমান করে বসে! উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা যেতে পারে এমন অনেক দৃষ্টান্তই আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।


এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের শাসনব্যবস্থায় জ্যোতিবাবুর অনুপস্থিতি। মমতার আক্রমণে রাজ্যের নির্বাচনী ময়দান থেকে সরে দাঁড়ালেও দেশের সংকট মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সর্ব্বসম্মতিতে তাঁর প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের অযৌক্তিক, ভুল ও ষষ্ঠরিপুর তাড়নায় ইর্ষান্বিত সিদ্ধান্তের কারণে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি হয়। মতভেদ চরম আকার ধারণ করলে সেই অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক যুক্তি ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ সুকৌশলে সামনে চলে আসে। জ্যোতিবাবুর আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হ'ল না, দেশ একজন অসাধারণ প্রশাসক পেল না, বাঙালী নেতাজীর পর দ্বিতীয় বাঙালী প্রধানমন্ত্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হ'ল ইত্যাদি যাই হ'ক না কেন সেই এক বাক্য 'কেউ অপরিহার্য নয়' গিলে ফেলল গোটা দলকে, গোটা দেশকে। পরবর্তী সময়ে যখন বামপন্থীদের পায়ের তলার মাটি সরতে সরতে বিশাল খাদ-এর আকার গ্রহণ করে তখন দ্বিধাহীন চিত্তে দলের বোদ্ধা প্রবীণ সহকর্ম্মীরা তাঁর স্মরণ সভায় দলের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার কথা স্মরণ করে তাঁর স্মৃতিতে প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে ফেলতে স্বীকার করেন জ্যোতি বসু দলে কতটা অপরিহার্য ছিলেন। কায়েমী স্বার্থের এক অদ্ভুত নির্লজ্জ প্রতিফলন!


প্রমাণ হ'ল কেউ পরিহার্য নয়। সবাই সবার জায়গায় অপরিহার্য!
ক্রমশঃ (লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৫)

Monday, February 19, 2024

কবিতাঃ ক্ষমতা!

‘ক্ষমতা’ আমার ধ্যান, ‘ক্ষমতা’ আমার জ্ঞান
‘ক্ষমতা’ লাভই আমার জীবনের যা’কিছু;
সেথা নেই জেনো বিবেক, নেই কোনো আবেগ
নেই কোনো ভালো-মন্দ, চিন্তা-ভাবনার আগুপিছু।
‘ক্ষমতা’ দখলে জেনো আমার নেই কোনো মায়া-মমতা
নেই নীতি, নেই রীতি, সেথা নেই কোনো ভব্যতা-সভ্যতা।
পেতে ক্ষমতার চেয়ার আমি করি না কেয়ার আম জনতার;
মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ তেমনি জানা আছে দৌড়
লড়াই-এর ময়দানের চার অক্ষর আম জনতার ক্ষমতার।
জনতার প্রতি নেই মমতা, নেই পিরিতের কোনো বাড়াবাড়ি
হে জনতা তোমার ক্ষমতা শুধু আমার ‘ক্ষমতা’ লাভের সিঁড়ি।
‘ক্ষমতা’ আমার হয়ে রম্ভা, হয়ে উর্ব্বশী ত্রি-নয়ন মাঝে
নাচে দুলিয়ে সুডৌল, কাঁপিয়ে গোল গোল অনাবৃত সাজে!
তা’ দেখে মগ্ন, হয়ে নগ্ন, নেশাগ্রস্থ আমি
নাচি তিড়িং-ভিড়িং, নাচি তা-ধিনা-ধিনধিন
আমি ক্ষমতালোভী লাজলজ্জাহীন। ( ১৯শে ফেব্রুয়ারী'২০২১)

Friday, February 16, 2024

কবিতা/গানঃ ওরে ভাই আগুন লেগেছে

ওরে ভাই আগুন লেগেছে মনে মনে!
পলে পলে অনল জ্বলে শিরায় শিরায়রে
প্রহরে প্রহরে ক্ষণে ক্ষণে!!
ওরে ভাই আগুন লেগেছে মনে মনে৩ 

আগুনের রঙে লাল হ'লো মনাকাশ!
তাপেতাপে তাপিত বাতাস!
যেন কলকল্লোল নিদ্রিত কুণ্ডল
জাগে মোর প্রানেপ্রাণে! 
আগুন লেগেছে মনেপ্রাণে!
ওরে ভাই আগুন লেগেছে মনে মনে২

এসো এসো করো এই কায়ার সঙ্গ!
আগুনের বুকে যেমন পতঙ্গ!
সময় নেইরে আর বন্দী রেখো না আর
নিজেরে ঘরের কোণে!
 
আগুন ছুটিছে রুধিরাতে
সময় হয়েছে আজ ভাইরে!২
তাই বুঝি বারেবারে তোমাদের দ্বারে দ্বারে
হাঁক দিয়ে যাই জনে জনে!----
আগুন লেগেছে মনে মনে!
ওরে ভাই আগুন লেগেছে মনে মনে!
( লেখা ১৭ই ফেব্রুয়ারী'১৯)

Tuesday, February 13, 2024

প্রবন্ধঃ প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন্স ডে।

আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী সৎসঙ্গীদের কাছে প্রকৃত ভ্যালেনটাইনস ডে হ'য়ে উঠুক। কারণ নিচের ছবিতে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ভালোবাসার বন্ধনে বন্দী এই সেই সি, আর, পি, এফ জওয়ান বাবলু দাস যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার দয়ায় আজকের দিনে সাক্ষাৎ মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন।

আজকের সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি (২০১৯ সাল) শয়তানের ভয়ঙ্কর পুলওয়ামা জঙ্গী হামলার অভিশপ্ত দিন এবং প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে গভীর দুঃখের দিন; যেদিন ভারতের নিরাপত্তা কর্মীদের বহনকারী একটি গাড়ি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার লেথোপোড়া (অবন্তীপাড়ার কাছাকাছি) অতিক্রমকালে জম্মু শ্রীনগর জাতীয় সড়কে একটি বাহন-বাহিত আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়। এই হামলার ফলে ৪০ জন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপিএফ) কর্মী এবং আক্রমণকারী মারা গিয়েছিলেন।
এবং একই সঙ্গে আজকের দিন পরমপিতার জীবন্ত উপস্থিতির আনন্দঘন শুভ দিন যেদিন পরমপিতার দয়ায় এই আত্মঘাতী বোমা হামলার সাক্ষাৎ নিশ্চিত মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন CRPF জওয়ান বাবলু দাস।

আজকের এই গভীর দুঃখের দিনে ৪০জন দেশপ্রেমিক শহিদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে পরমপিতার রাতুল চরণে তাঁদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করি।

প্রসঙ্গত CRPF জওয়ান বাবলু দাস ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মন্ত্রপুত শিষ্য। বাবলু দাস-এর স্ত্রী সুপর্ণাদেবী বলেন "ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন"।

CRPF জাওয়ান বাবলু দাসের বাড়ি আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলায়।
পুলওয়ামা জঙ্গী হামলায় যে বাসে সেদিন বিস্ফোরন ঘটেছিল সেদিন তিনি
ঐ বাসে প্রথমে বসেছিলেন। কিন্তু বাস ছাড়ার আগে তার জল তৃষ্ণা পাওয়ায় সঙ্গে জলের বোতল না থাকার কারণে বাস থেকে নেবে পড়েছিলেন তার ফেলে আসা জলের বোতল আনতে। পরে ফিরে এসে দেখেন তার বসার জায়গায় অন্য একজন ব'সে পড়েছেন এবং পরপর ৩টি বাসের সিট পরিপূর্ণ হ'য়ে গেছে। তাই তিনি পরের বাসে খালি সিটে গিয়ে বসেন।

তারপরে যখন ঘটনা ঘটে তখন বাড়ির সবাই এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় দয়াল ঠাকুরের কাছে গভীর কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ সবাই জানতেন তিনি ঐ বাসে আছেন। অনেক সময় পরে ঐ জওয়ান দাদা বাড়িতে ফোন ক'রে জানান তিনি দয়ালের দয়ায় ঐ ঘটনায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং বিস্তৃত ঘটনা বর্ণনা করেন।
আসামের বাসিন্দা ঐ জওয়ান বাবলু দাস ও তার পরিবার ছিলেন পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্য। নিয়মিত যজন, যাজন ও ইষ্টভৃতি পরায়ণ জওয়ান বাব্লু দাস শয়তানের বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নিয়মিত ঐ যজন, যাজন ও ইষ্টভৃতি করার ফলে।

তাই হে আমার গুরুভাইবোন! যতটুকু পারবেন অকপট হৃদয়ে কোনওরূপ প্রত্যাশা না রেখে নিজে কিছু গ্রহণ করার পূর্বে দয়ালের উদ্দেশ্যে নিঃশর্তে একান্তই তাঁরই যথেচ্ছ ব্যবহারের দরুণ কিছু সমপর্ণ করুন। যাকে শ্রীশ্রীঠাকুর ইষ্টভৃতি বলেছেন।

"যতোই আসুক বিপদ আপদ
যেমনি হোক প্রাণ,
ইষ্টভৃতি আনেই আনে
সবার পরিত্রাণ"---- শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র ।

আর, আসুন আমরা তাঁর অমোঘ বাণী স্মরণ করি আর বাস্তবে তিনি যে কাজে, যে আচরণে খুশী হন, সুখী হন, আনন্দিত হন, খুশীতে চোখমুখ ঝলমল ক'রে ওঠে তাঁর; আসুন আমরা তাই-ই করি।
আজকের দিন ঈশ্বরের সঙ্গে ভালোবাসার অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িত হবার প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন্স ডে হ'য়ে উঠুক অন্তত সৎসঙ্গীদের কাছে। কারণ তিনিই এক ও একমাত্র পরমপ্রেমময়, ভালোবাসার মূর্ত রূপ। বাকী সব মিথ্যা। তাঁর সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে, প্রেমের বন্ধনে বন্দী হ'য়ে আসুন আমরা গুরুভাইবোন ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করি। তবেই বাকী সব প্রেম, ভালোবাসা সত্য হ'য়ে উঠবে।
( লেখা ১৪ই ফেব্রুয়ারী'২০২৩)

Saturday, February 10, 2024

প্রবন্ধঃ চকচক করলেই সোনা হয় না। (১)

লেখাটা লিখতে ব'সে প্রথম যে কথাটা মনে এলো, সাজানো বাগানে ফুল ছিঁড়তে সবাই আসে; একজন দু'জন বাগান প্রেমী ছাড়া।
আমার এই প্রতিবেদন পড়ে হয়তো পাঠকের অনেকের মনে হ'তে পারে তাদেরই মিন করেছি, যেটা আমি করিনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি এখানে সেটা ওভার অল বলতে চেয়েছি। যাই হ'ক যদি কারও খারাপ লেগে থাকে তাহ'লে অনিচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী এবং এর সঙ্গে এটাও বলতে চাই একবার লেখাটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বায়াসড না হ'য়ে পড়ার জন্য।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ১৫০-এর অধিক গাড়ি নিয়ে আসাম সফর নিয়ে ইতিমধ্যে ফোনে পক্ষে বিপক্ষে উল্লাসে, আনন্দে বুকের বরফ গ'লে ঝরণা হ'য়ে গিয়ে এবং হিংসায় ক্ষিপ্ত হ'য়ে মিশ্রিত অনেক মন্তব্যের মুখোমুখি হ'লাম। এবং ফেসবুকেও তাই দেখেছি ও দেখছি। আমার এই বিষয়ে লেখা কথাগুলি হয়তো কারও গায়ে লেগে যেতে পারে। কিন্তু আমি কাউকেও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ক'রে কিছু লিখিনি ও লিখি না। যে বা যারা প্রকৃত সৎসঙ্গী, প্রকৃত মানুষ তাদের গায়ে আমার এই অপ্রিয় কথাটা লাগবে না বলেই বিশ্বাস করি।

'আমি সৎসঙ্গী' এ কথাটা যদি বুক ফুলিয়ে বলতে পারে সৎসঙ্গীরা ঘরে-বাইরে সেটা ঠাকুরের কাছে ভীষণ আনন্দের ও খুশীর বিষয়। আর ভালো কিছু হ'তে দেখলে নিশ্চয়ই গর্ব হয়। তার থেকেও গর্ব বেশী হয় নিজে যদি ঠাকুরের জন্য ভালো কিছু করতে পারি বা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিই। আমি শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদা-দের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধবাদী, কুৎসাকারীদের বক্তব্য সম্পর্কে যে ঘটনাগুলোর কথা এর আগে আমার বিভিন্ন লেখায় বলতে চেয়েছি আরও পরিস্কার ক'রে বললে বলতে হয়, ইঙ্গিত দিয়েছি সেগুলি যেমন আগের, অনেক আগের ঘটনা তেমনি সেগুলি আবার একেবারে কারেন্ট ঘটনা যার ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে আজও। অথচ আমার লেখায় লিখিত সেই ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ চোখে পড়ে না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আর ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই। আমার লিখিত ও বর্ণিত প্রতিবাদ্মুখর লেখাগুলিতে শুধু চোখে পড়ে 'জয়গুরু আর জয়গুরু' কমেন্ট। আর চোখে পড়ে ফেসবুক জুড়ে সাজানো বাগানে ফুল তোলার ছবি।

কে নবীন আর কে পুরাতন, কে চাক্ষুস করেছে কি করেনি তা আমার লেখার বিষয় নয়। ঠাকুর আর ঠাকুর আত্মজ ঠাকুরের পরম আদরের বড়খোকা ও বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই, চোখের মণি প্রিয় শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ঠাকুরের প্রথম জীবন থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত এবং আজও যে কুৎসা হ'য়ে চলেছে তা কে জানে আর জানে না, কে মাথা ঘামায় আর মাথা ঘামায় না, কার বুকে কতটুকু ব্যথা, ক্ষোভ, রাগ জমে আছে কি আদৌ নেই সেটা নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ বা বক্তব্য নেই। আমি শুধু সত্যকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম আমার সব লেখায়; আর সত্য চিরকালই অপ্রিয়। আর এখানেও সত্য তুলে ধরবো পরবর্তী 'চকচক করলেই সোনা হয় না (২)' লেখায়।

আর এই অপ্রিয় সত্য কথা তুলে ধরতে গিয়ে সেই প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত অপ্রিয় হ'য়ে চলেছি এবং আবারও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম সফর নিয়ে অনেকের কাছে অপ্রিয় হ'য়ে গেলাম। তা'তে অবশ্য আমার কোনও মান-অপমান বোধ হয় না। এই লড়াই আজ আমার ৫৫ বছর ধ'রে তথাকথিত সৎসঙ্গী ও 'সৎসঙ্গ' বিরোধী ঠাকুর অনুগামী এবং অদীক্ষিত কুৎসাকারীদের সঙ্গে। একজন লিখেছে, সৎসঙ্গের এখনকার ঘটনাগুলোর মধ্যে যে ঘটনাগুলি গর্ব করার সেগুলি নিয়ে অবশ্যই গর্ব করে। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে, সৎসঙ্গের এখনকার কোন ঘটনাগুলো গর্ব করার মতো নয়? সেই শ্রীশ্রীঠাকুর থেকে আজ পর্যন্ত চিরকালই সৎসঙ্গের ঘটনাগুলি গর্ব করার মতন ব্যাপার ছিল, আছে এবং থাকবে। তর্ক-বিতর্ক হ'তে পারে এ নিয়ে। সে সম্পর্কে বলতে পারি আমার বক্তব্য নিয়ে আমি কাউকে কৈফিয়ৎ দিই না, তাই তর্ক-বিতর্ক করার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। আমার বক্তব্য পাঠক গ্রহণ করতে পারে আবার জঞ্জালের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে। এই স্বাধীনতা পাঠকের একান্তই ব্যক্তিগত। সেখানে হাত গলাবার অধিকার আমার নেই। তবে সাজানো বাগানে যেমন ঘুরতে আসে অনেকে, এসে ফুল ছিঁড়তে যেমন আসে সেটাও যেমন সত্য, আবার সেই বাগানের মালিকের বাগান সাজানোর নির্ম্মম কষ্টটাও সত্য; আর আরও সত্য বাগান এবং মালীর বিরুদ্ধাচরণের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ায় তাদের উপস্থিতিও সত্য।

তাই আমার এই লেখা, চকচক করলেই সোনা হয় না। আর, সাজানো বাগানে ফুল সবাই ছিঁড়তে আসে, একজন দু'জন বাগান প্রেমী ছাড়া। তাই আসুন বাগান প্রেমী হ'ই।

প্রকাশ বিশ্বাস।
ভদ্রকালী, হুগলী।
পরবর্তী অংশ 'চকচক করলেই সোনা হয় না (২)'
ক্রমশঃ।
( ৮ই ফেব্রুয়ারী'২০২৩)

প্রবন্ধঃ চকচক করলেই সোনা হয় না। (২)

চকচক করলেই সোনা হয় না (১) -এ লেখা শেষ করেছিলাম "সাজানো বাগানে ফুল সবাই ছিঁড়তে আসে, একজন দু'জন বাগান প্রেমী ছাড়া।" তাই আসুন বাগান প্রেমী হ'ই।"

এখন লেখা শুরু করছি এই কথা ব'লে, আসুন বাগান সাজাই। আর বাগান সাজাতে গিয়ে নিজেকে আমি আগে একজন বাগানের মালি ক'রে তুলতে গিয়ে নিজের বিবেকের আয়নায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে যা যা প্রশ্ন করেছি এবং সেই সেই প্রশ্নের সমাধানের যে যে উত্তর পেয়েছি তাই আমি এখানে লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি নিজেকে দেখবো আর শুধরে নেবো ব'লে আর আগামী বাকি দিনগুলিতে সতর্ক থাকার প্রচেষ্টায়। এই লেখা সম্পূর্ণ আত্মকথন। পাঠক কেউ নিজের ওপর এই লেখার ছায়া নেবেন না এই-ই আমার বিশেষ অনুরোধ।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম যাত্রাকালীন প্রায় ১৫০-এর অধিক গাড়ির মিছিল স্বচক্ষে ও মিডিয়ায় দেখে গোটা বিশ্বের দীক্ষিত-অদীক্ষিত দর্শককুল স্তম্ভিত! আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা সৎসঙ্গ জগতে এবং দেশে-বিদেশে কোথাও ঘটেনি। এতবড় গাড়ির র‍্যালি নাকি বিশ্বে এই প্রথম।
এই দৃশ্য মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৎসঙ্গীদের মধ্যে যেমন আনন্দ, উৎসাহ, উল্লাসের ঝড় ওঠে ঠিক তেমনি অদীক্ষিত ও সৎসঙ্গ বিরোধীদের মধ্যে এই সফরের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালির ঝড় ব'য়ে যায় মিডিয়ায়।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম সফরের ঘটনায় আবেগে আপ্লূত সৎসঙ্গীরা। সীমাহীন আনন্দে বুকের জমাট বাঁধা উচ্ছ্বাসের বরফ গলে একেবারে ঝরণা হ'য়ে যাচ্ছে! তাদের নাকি বুক ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে 'আমি সৎসঙ্গী'!!!! এই বার্তা ফেসবুকে সুনামির আকার নেয়। এই অভূতপূর্ব সফরের ভিডিও ভাইরাল হ'য়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সৎসঙ্গীর প্রোফাইলে শেয়ার হয় এই ভিডিও এবং এই উচ্ছ্বাস পূর্ণ বার্তা।

আবার এই ভিডিও বিরোধীদের মনে অখুশির তুফান তোলে। বিরোধীরা সোচ্চার হ'য়ে ওঠে এর বিরুদ্ধে। কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপবাদ, অশ্রদ্ধা, অপমানে ও কটু সমালোচনায় ভরিয়ে দেয় নেট দুনিয়া। যা এখনও হ'য়ে চলেছে। হিংসার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ভ'রে যাচ্ছে আকাশ বাতাস।

কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মতো এই সমস্ত গালাগালি সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গীদের কাছে অতি পরিচিত। বিশেষ ক'রে একেবারে পুরোনো ও সক্রিয় সৎসঙ্গীদের কাছে। পুরোনো সৎসঙ্গীদের কাছে এইসব কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা, অপমান ইত্যাদি গা সওয়া হ'য়ে গেছে। একেবারে শুয়োরের বা গন্ডারের চামড়ার মতন হ'য়ে গেছে পুরোনো সৎসঙ্গীদের গায়ের চামড়া। শ্রীশ্রীঠাকুর ও সৎসঙ্গের বিরোধীতা তো আজ নোতুন নয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরোধীতা তাঁর যৌবনকাল থেকেই। তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ'-এর তীব্র বিরোধীতা বাংলাদেশে সৎসঙ্গ সৃষ্টির শৈশব অবস্থা থেকেই। তাঁর ও তাঁর পরিবার এবং তাঁর সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ওপর মর্মান্তিক ঝড় ঝাপটা বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েইতপুরের আকাশ বাতাসকে কলুষিত ক'রে আছড়ে পড়েছিল ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরের বুকে এবং সেই ঝড় আজও ব'য়ে চলেছে ঠাকুর পরিবার ও সৎসঙ্গের ওপর দিয়ে। কত নির্ম্মম যন্ত্রণাদায়ক ক্ষয়ক্ষতির নিদর্শন বুকে নিয়ে আজও মুখ বুজে সৎসঙ্গ এগিয়ে চলেছে ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে মানুষ ও মানব সভ্যতাকে বাঁচাবার তীব্র আকুতিতে। আগামী ভয়ঙ্কর সর্বনাশের হাত থেকে পৃথিবীকে ও মানবজাতিকে রক্ষা করতে শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' বদ্ধপরিকর। মনুষত্বের ভিত আজ ধ্বংস হ'তে হ'তে প্রায় লুপ্ত হওয়ার মুখে। সেই অবস্থা থেকে মনুষত্বের ভিতকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধার ক'রে সৃষ্টিকে বাঁচাতে আজ 'সৎসঙ্গ' মরীয়া। শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে আজ 'সৎসঙ্গ' সদা জাগ্রত। তাই শত হাজার ব্যক্তিগত লাঞ্ছনা, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপবাদ, অপমান, অসম্মান, কটু ও ঘৃণ্য মিথ্যা সমালোচনাকে মাথায় নিয়ে ঠাকুর পরিবার অচ্যুত, অস্খলিত, অটুট শান্ত, ধীর, স্থির সুকেন্দ্রিক চলনে এগিয়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য, মানুষকে বাঁচাবার জন্য ও মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য।

তাই শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম সফরকে কেন্দ্র ক'রে কুৎসা, গালাগালির ঝড় ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় কাটে না। তাঁরা প্রশংসা ও নিন্দা উভয় ক্ষেত্রেই নির্বিকার। বিশ্বজুড়ে প্রশংসার বন্যায় তাঁরা যেমন ভেসে যান না, তাঁদের আচরণে কোনও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না ঠিক তেমনি তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিরোধীতার ক্ষেত্রেও একইরকম তাঁদের আচরণ।

আমরা যেমন পুরাতন সক্রিয় সৎসঙ্গীরা জানি কি নির্মম মানসিক শারীরিক অত্যাচার হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীঠাকুর পরিবার, শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার এবং সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও আশ্রমিকদের ওপর ঠিক তেমনি নূতন সক্রিয় সৎসঙ্গীরাও জানি বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ওপর কি ধরণের ঘৃণ্য কুৎসার আক্রমণ হ'য়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এই আক্রমণ ভয়ঙ্কর হ'য়ে উঠেছে বিজ্ঞানের দৌলতে। নেট দুনিয়া আজ সক্রিয় অকারণ বিরোধীতায়। ফেসবুক ও ইউটিউব আজ কুৎসাকারীদের আঁতুড় ঘর। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে নারীপুরুষ নির্বিশেষে বিরোধীরা ও কুৎসাকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মতো অশ্লীল শব্দের নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কুৎসা, অপবাদ, সমালোচনায় বিদ্ধ করবে ব'লে। ঠাকুর পরিবারের মায়েরাও বাদ যায় না কুৎসাকারীদের নোংরা ক্ষত ও দুর্গন্ধযুক্ত বিকৃত মানসিকতায় ভরা আক্রমণ থেকে।

তাই বলতে ইচ্ছে হয় বুক ফাটিয়ে হে সৎসঙ্গী! চকচক করলেই সোনা হয় না। কুৎসাকারী বিরোধীদের প্রতিনিয়ত আগ্নেয়গিরির লাভার মত বেরিয়ে আসা হিংসার সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা কি ভয়ঙ্কর গরল পান ক'রে চলেছে বর্তমান আচার্যদেব ও তাঁর পরিবার সহ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা তা কল্পনা করলেও আঁতকে উঠতে হয়, শরীরে ভূমিকম্পের মতো তীব্র কম্পন জাগে। বিশ্বজুড়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানের ভার মাথায় নিয়ে, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের ভালোবাসার প্রেমের বাঁধনে একসূত্রে বেঁধে নিয়ে আর সারা ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ'য়ে শ'য়ে মন্দির-এর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিখুঁত ভাবে চলা যে কি কঠিন, কি দুঃসহ তা তাঁরাই জানেন। আর জানে, বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। হে সৎসঙ্গী! আমাদের প্রাণ কি তা জানে, বোঝে?

কিন্তু তাঁদের বাহ্যিক শান্ত সৌম্য ধীর স্থির সুন্দর মিষ্টি রূপ আর কঠিন কোমল ব্যবহারে বিন্দুমাত্র তার ছাপ-ই পড়ে না!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর যেন মূর্ত হ'য়ে রয়েছেন প্রতিমুহূর্তে তাঁদের চলনে, বলনে, আচারে-আচরণে!!!!! তাঁদের বাইরের ঝলমলে আলোময়, রূপময়, মধুময় রূপ দেখলে বোঝাই যায় না তাঁদের মাথার চাপ! শ্রীশ্রীদাদার মহাপ্রয়াণের পর বোঝাই গেল না 'সৎসঙ্গ'-এর কতবড় নক্ষত্র পতন হ'য়ে গেল! এতটুকু বিন্দুসম বোঝা গেল না কম্পন!!! মসৃণভাবে মাখনে ছুরি চলার মত 'সৎসঙ্গ'-এর পরবর্তী আচার্যদেব হ'য়ে আমাদের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের অভিভাবখীন হ'তে দিলেন না পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। রক্তমাংসের মানুষ তো নয় যেন একতাল সোনা! এ সোনা ১০ক্যারেট, ১৪ক্যারেট, ২২ক্যারেট সোনা নয় একেবারে খাদহীন ২৪ক্যারেট সোনা।

তাই বুক ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, হে সৎসঙ্গী! আমরাও অনেকে ঝলমলে, চকচক করি। কিন্তু চকচক করলেই সোনা হয় না। দেখতে হয় তা'তে আদৌ সোনা আছে কিনা আর থাকলেও তা'তে কত ক্যারেট সোনা আছে!!!!

আসুন এবার পরবর্তী লেখায় দেখে নিই, আমার মধ্যে আদৌ সোনা আছে নাকি পুরোটাই ইমিটেশন।

প্রকাশ বিশ্বাস।
ভদ্রকালী, হুগলী।
পরবর্তী শেষ অংশ 'চকচক করলেই সোনা হয় না (৩)' প্রকাশের অপেক্ষায়।
ক্রমশঃ
( লেখা ৯ই ফেব্রুয়ারী'২০২৩)

প্রবন্ধঃ চকচক করলেই সোনা হয় না (৩)।

চকচক করলেই সোনা হয় না (২)-এ লেখা শেষ করেছিলাম " আসুন দেখে নিই, আমার মধ্যে আদৌ সোনা আছে নাকি পুরোটাই ইমিটেশন?" তার আগে লেখা শুরু করেছিলাম "আসুন বাগান সাজাই"।

চকচক করলেই সোনা হয় না (১)-এ লিখেছিলাম, "সাজানো বাগানে ফুল সবাই ছিঁড়তে আসে; একজন দু'জন বাগান প্রেমী ছাড়া। তাই আসুন বাগান প্রেমী হ'ই।"

এই আর্টিকেলের শেষ পর্বে সৎসঙ্গের সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণ ক'রে দেখে নেব আমি নিজে কতটা বাগান তৈরী করেছে যে মালী সেই মালীকে ভালবাসি বা মালীর প্রতি আমার প্রেম কতটা, আর কতটাই বা আমি তাঁর সৃষ্ট বাগানকে ভালোবাসি। তারপর নাহয় বাগান সাজাবো।

সাম্প্রতিক ভাইরাল হওয়া খবর শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ১৫০+ গাড়ির র‍্যালি নিয়ে আসাম সফর সৎসঙ্গ জগতে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মধ্যে ব্যপক উত্তেজনা ও আনন্দের জোয়ার ব'য়ে গেছে। ঠিক তেমনি সৃষ্টি হয়েছে বিরোধিতা ও বিতর্কের। কুৎসা ও গালাগালিতে ভরে গেছে নেট দুনিয়া।

আমি এখানে এই আর্টিকেলে কে কোথায় বিরোধিতা করেছে ও করছে, কে কোথায় কত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে ও ক'রে চলেছে, আর কে কে, কি কি ও কত রসালো রসালো খিস্তি খেউর ও নূতন নূতন গালাগালিতে ভরিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের পাতা, ভয়ঙ্কর নগ্নতা আর অশ্লীলতার ছোঁয়ায় ভাইরাল ক'রে তুলছে অবিনদাদার সফর তা নিয়ে বিন্দুমাত্র লেখার ইচ্ছা আমার নেই। কারণ এটা আন্ডারস্টুড আর স্বাভাবিক ব্যাপার।

এই ভয়ঙ্কর অন্ধকার কলি যুগের অনুকূল স্রোতের বিরুদ্ধে যে হাঁটবে তাকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি পায়ের লাথি খেতে হবেই। এই বিশ্ব শুধু নয়, এই ব্রহ্মান্ড শুধু নয়, এই ব্রহ্মান্ডের বাইরে আরও কোটি কোটি বহ্মান্ড আছে, সেই ব্রহ্মান্ডগুলি (বিজ্ঞানীরা যা কল্পনা করেছেন মাত্র) সৃষ্টির যে কারণ, সেই পরমকারণিক সৃষ্টিকর্তা যখন তাঁর মহাসৃষ্টির একটি সৃষ্টি এই ব্রহ্মান্ডের ক্ষুদ্রতম সৃষ্টি এই পৃথিবীর অস্তিত্বকে, এই পৃথিবীর বুকে তাঁর সৃষ্ট যে যে প্রাণের অস্তিত্ব আছে সেই অস্তিত্ব সমূহকে রক্ষা করবার ও বৃদ্ধির পথে নিখুঁতভাবে চালিত করার তীব্র প্রয়াসে যখন তিনি নেবে আসেন তখন সেই সেই যুগে তাঁকে লাঞ্ছিত, অপমানিত, অস্মমানিত হ'তে হয়েছে। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চরম লাঞ্ছিত, অপমানিত হ'তে হয়েছে তাঁর পরমপ্রিয় ভক্তমন্ডলীকে। যখনই যেখানে তিনি নেবে এসেছেন সেখানেই তাঁকে ও তাঁর প্রাণপ্রিয় ভক্তদের তীব্র আক্রমণ করেছে, ভয়ঙ্কর আঘাত হেনেছে তাঁর ও তাঁদের অস্তিত্বের ওপর ধ্বংসের অনুকূলে হাঁটা অন্ধ মানুষেরা।
দিনদুনিয়ার মালিক সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্ট এই পৃথিবীতে মানুষের মাঝে মানুষ মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন আট আটবার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে। প্রতিবারেই তাঁকে চরম দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। রক্তমাংসরূপী জীবন্ত ঈশ্বর আট আটবারের মধ্যে বেশীরভাগ সময় অর্থাৎ ছয় ছয়বার এশিয়া তথা ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ঈশ্বর তিন তিনবার জন্মগ্রহণ করেন।

যাই হ'ক সৃষ্টিকর্তা যতবারই মানুষ্রূপে জন্ম নিয়েছিলেন ততবারই তাঁকে চরম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। প্রতিবারের মত এবারও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে সীমাহীন চরম দুঃখ কষ্ট লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়।
(লেখা ১১ই ফেব্রুয়ারী' ২০২৩)

Tuesday, February 6, 2024

কবিতাঃ একদিন-----

একদিন আসতেই হবে এই পথে সবাইকে
যদি নষ্ট বীজে নষ্ট চারাগাছ হ'য়ে না জন্মায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে তোমায়
যদি অল্প সময়ের জন্য আসা সময় না শেষ হ'য়ে যায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি লজ্জা পথ রোধ ক'রে না দাঁড়ায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অহংকার প্রাচীর হ'য়ে পথ রোধ না করে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অজ্ঞানতার অন্ধকার চোখ চেপে না ধরে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি শরীরে ঘুণপোকা জমাট বাসা না বাঁধে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি মানসিক অবসাদে মৃত্যু চেপে না বসে কাঁধে।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অতি লোভে বুদ্ধিভ্রষ্ট না হয়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি কামিনী কাঞ্চনে অস্তিত্ব না হয় লয়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে
যদি অন্তহীন দুর্বুদ্ধিতে হিতাহিত জ্ঞান না হারায়।
একদিন আসতেই হবে এই পথে বন্ধু তোমায়
সেদিন পাবে তুমি হেথায় আমায়;
একদিন আসতেই হবে ঘুরে এই পথে
এই পথেই যে আছে তোমার ভালোবাসার ঘর।
একদিন আসতেই হবে এই পথে এই ঘরে
যেখানে আছে বসে তোমার জীবনস্বামী
অশ্রুভেজা চোখে বলছে ডেকে তোমায়,
দিন মাস বছর যায় যাক ঘুরে থাকবো আমি
বন্ধু, শবরীর মতো পথ চেয়ে তোমার অপেক্ষায়।
ছুটে আয়, চলে আয়, অলীক মায়ার জাল ছিঁড়ে আয়
এইখানেতে তোর হারিয়ে যাওয়া জীবন খুঁজে পাবি।

Monday, February 5, 2024

উপলব্ধিঃ ঈশ্বর, ধর্ম ও বিজ্ঞান।

প্রায় সময়ই দেখি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জন্মগত অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা যখনি হ'য়েছে তখনি ধর্মের নামে বা প্রফেটের নামে তার বিরোধীতা হয়েছে, হ'য়ে চলেছে ও ভবিষ্যতেও হবে। এই বিরোধীতা কি ধর্ম বা প্রফেট অনুমোদনযোগ্য নাকি এই বিরোধীতা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও প্রফেটদের অনুগামীদের একাংশের? ধর্মের মূল অর্থ ও প্রফেটরা কি বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে? নাকি ধর্মের মুল অর্থ আর প্রফেটদের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই? বিজ্ঞান কখন প্রয়োজন হয়? মানুষ যখন ধর্মের মূল অর্থের ওপর আর ঈশ্বর বা খোদার ওপর খোদ্গারি করে; আর, ফলস্বরূপ যখন তার বিরূপ ফল ভোগ করে মানুষ তখন যদি বিজ্ঞান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিরূপতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তখন কি বিজ্ঞানের জয়জয়কার আর ধর্মের বা ঈশ্বরের মুখে চপেটাঘাত? নাকি ধর্মের নামে বা প্রফেটের নামে বিজ্ঞানের বিরোধীতা যা হয় তা' বৈধ? নাকি ক্ষমতাসীন অনুগামীরা বা ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিজেরাই ধর্ম ও খোদার অনুশাসন তৈরি করার মালিক হ'য়ে বসে? আর তার সুযোগ নেয় ধর্ম ও ঈশ্বর বিরোধীরা। এই বিরোধীতা কি ইচ্ছাকৃত? নাকি ধর্ম ও ঈশ্বরের মূল অর্থ না বুঝেই ধর্ম ও ঈশ্বরের বিরোধীতা? নাকি মানুষের পান্ডিত্যের, জ্ঞানের অহংকার, ঔদ্ধত্ব?
ঈশ্বর ও ধর্মবিশ্বাসী- অবিশ্বাসী, বিজ্ঞানের ছাত্র সব ধরণের পাঠকের কাছে আলোচনার অভিলাষী।
(লেখা ২৫শে জানুয়ারী'২০২৪)

কবিতাঃ সত্য-মিথ্যা সাজে

প্রেম-ভালোবাসা ভরা যে বাসা তাই-ই ভালো বাসা।
আছে সেথা প্রাণ, আছে আনন্দ, সুখ-শান্তি খাসা।
আলোময়-রূপময়-মধুময়-রসময় সেথা জীবন
প্রেমময় বিরাজে সেথা লভি অনন্ত যৌবন।
এটাই সত্য, এটাই জীবন, এটাই জীবন দর্শন।
এতেই আনন্দ, এতেই মহত্ব, এতেই জীবন বর্ধন!
এতেই আরাম, এতেই বিরাম, এতেই আশ্বস্ততা।
এতেই শান্তি, এতেই স্বস্তি, এতেই জীবনের সার্থকতা।
বাকী সব আর যা কিছু আছে জীবনের চারিপাশে
অলীক মায়ার ফাঁদ পাতা আছে নানা রঙে, নানা ছাঁদে।
ধর্ম-অর্থ-মান-যশ-শিক্ষা রাজনীতি ইত্যাদি আছে যত
বিষয় জগত মাঝে, খুঁজে নিতে হবে তোমাকেই
যা আছে তোমার চারিপাশে সত্য-মিথ্যা সাজে।-

Sunday, February 4, 2024

কবিতাঃ এসো বন্ধু! এসো---------

এসো বন্ধু! এসো প্রিয়ে!!
তুমি একা হ'লেও এ ভবে
জেনো তুমি অর্জুন;
আছো সখা দয়াল সাথে নিয়ে!
ভয় কি তোমার; যা নেই আমার
তা আছে তোমার; তুমি অমর,
তুমি অজেয় এ অনন্ত বিশ্বে!
তুমি অজর, অমর নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে!
এসো বন্ধু! এসো প্রিয়ে!!
তুমি ভাগ্যাধীশ!
আছো দয়াল সখা সাথে নিয়ে!!

হে বন্ধু! হে আমার প্রিয়ে!!
তুমি হ'য়ো না দুর্যোধন
হ'য়ো না ভাই দুঃশাসন
হাজার লাখ সাথী যতই থাক না তোমার
যতই হাজার ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে করো না উল্লাস
দিন শেষে অবশেষে যাবে তুমি নিভে।
(লেখা ৫ই ফেব্রুয়ারী'২০২২)

Friday, February 2, 2024

কবিতাঃ জীবনের ট্র্যাজেডি!

হে জীবন!
তুমি গড়তে পারলে না কিছুই
শুধু ভাঙার নায়ক হ'য়েই র'ইলে!
আর, গড়ার নামে দেশ, বিদেশ, মহাদেশ
নানা বাদ-মতবাদে করলে ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত, 
ক্ষতবিক্ষত করলে জনজীবন শেষমেশ।

হে জীবন!
তুমি নিজেও হাসলে না, হাসাতেও পারলে না কাউকে!
শুধুই কাঁদিয়ে গেলে সবাইকে!
রিপু তাড়িত জীবনের হ'য়ে অধীশ্বর
বৃত্তি-প্রবৃত্তির বেড়াজালে হারিয়ে।

হে জীবন!
জীবনে দিলে না কিছুই কাউকে
হাত বাড়িয়ে নিয়ে গেলে শুধুই
একাই বাঁচবে আর খাবে ব'লে
নানা ছলনায় ভুলিয়ে আর অলীক মায়ায় ভরিয়ে।
প্রতিদানে দিলে শুধুই আঘাত আর আঘাত!
জীবন থেকে দিলে সবাইকে দূরে তাড়িয়ে।

হে জীবন!
নিজেকে নিয়েই সদা ব্যস্ত? মত্ত উল্লাসে 
অন্যের জীবনে ঢেলে সর্বনাশের আগুন
তোমার জীবনে বইছে হাওয়া ফাগুন!!

হে জীবন!
উগ্রতাকে করলে সাথী ভদ্রতাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে!
আর মৃত্যুকে করলে বন্ধু জীবনকে তাড়িয়ে!!

হে জীবন!
ভুলের হুলে নিজের জীবনকে করলে ক্ষতবিক্ষত
আর অন্যের ঘাড়ে ব'সলে চেপে!
অর্থ-মান-যশের মোহে হ'য়ে অন্ধ
নিজের ভুল দেখলে না একবার মেপে!

হে জীবন!
নিজে থাকতে চাও হাসিখুশি অন্যকে কাঁদিয়ে!?
থাকতে চাও কূলের শক্ত জমিতে
অন্যকে অকূলে ভাসিয়ে!?

হে জীবন!
জীবন একটা অংক।
অন্যের জীবন অংক ক'রে জটিল
নিজের জীবন অংককে করতে চাও সরল!?
দিন শেষে কিন্তু অপেক্ষায় সময় কুটিল
সরলতা ভালো যদি না থাকে বুকে গরল!

হে জীবন!
যার ব্যথা বুঝলে না, তাকে করবে তুমি সাহায্য!?
অসহায় দুর্বল মানুষ
কি এতই মূর্খ? বোঝে না সে
ব্যস্ত তুমি বুঝে নিতে নিজের ন্যায্য-অন্যায্য!?

হে জীবন!
ভুল জীবন করে, মহাজীবন ঈশ্বর নয়!
তুমি তো ঈশ্বরপুত্র, শয়তানের হাতছানিতে
ভুলে ঈশ্বর করো অন্যের অসামান্য ক্ষয়!?

হে জীবন!
তোমাকে বিশ্বাস ক'রে একদিন 
ধরেছিল 
দুর্বল যে জীবন শক্ত তোমার হাত,
সেই দুর্বল দু'হাত কেটে নিয়ে তুমি 
ক'রে দিলে তার জীবন বরবাদ!?

হে জীবন!
যে তোমায় বাসলো ভালো
দিলো তোমায় বুকে স্থান
সেই বুকেতেই তুমি মারলে লাথি
জীবন করলে তার খানখান!?

হে জীবন, জীবনের এই ট্রাজেডি 
থাকবে আঁকা দয়ালের বুকে;
দুঃখের সাগরে সব যাবে ভেসে
আর তুমি থাকবে একা সুখে?
তথাস্তু।
(লেখা ১৮ই জানুয়ারী' ২০২০)





কবিতাঃ জীবন সুধা।

হত্যা করো, হত্যা করো নির্ম্মম নিষ্ঠুর
আপোষহীন মনোভাবে নির্দয় হৃদয়ে;
উপেক্ষা করো, তাচ্ছিল্যে ভরিয়ে, দাও
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিঃসঙ্কোচে ফিরিয়ে।
ঘৃণা করো, করো অবহেলা অপমান
যা হয় হবে, যায় যাক রসাতলে যতসব
ঠুনকো পাতি শালা মান-সম্মান।
কঠোর হও, হও কঠিন প্রশ্নশূন্য হৃদয়
দূর ক'রে দাও ক্ষমাহীন দয়ামায়াহীন
প্রাণে ত্যাগ ক'রে মনোভাব সদয়।
বাৎসল্য রসের উৎকর্ষ জেনো তাচ্ছিল্য
জেনেছি দয়ালের কাছে, শয়তানের লীলা
চলে তার প্রাণে আছে যার প্রাণে সারল্য।
নির্ম্মম আঘাতে করো চুরমার, করো ধ্বংস
সমূলে হ'য়ে কালাপাহাড় অবসাদের দেওয়াল,
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও খাক ক'রে হতাশাগ্রস্থ
জীবনের যা কিছু জঞ্জাল। করো পদাঘাত
নীচতার বুকে সবলে, হিংস্রতার সাথে
ঘৃণা উগড়ে ফেল উপড়ে মনের ডাস্টবিনে
যত দুর্গন্ধময় ময়লা জমে আছে তোমার।
ছলে-বলে-কৌশলে দাও খতম ক'রে
ঐ রক্তচোষা বাদুর দুর্বলতাটাকে যেটা
লুকিয়ে আছে তোমার বুকে সংগোপনে।
শয়তানের বুকে ভীমবিক্রমে মার লাথি,
দে ঝাঁপ দ-য়া-ল ব'লে দয়ালের কোলে
আমি বলছি নিশ্চিত তোমায় ওই কোল-ই
একমাত্র স্বর্গ, ওই কোলেই আছে জীবন সুধা,
মৃতসঞ্জীবনী সুরা পানে ঐখানেতেই তুই
জীবন খুঁজে পাবি।

কবিতাঃ দিনের শেষে অবশেষে......

জীবন! দিচ্ছ ছলাং, শব্দ ঝপাং!
হাওয়া হাওয়াই তুলছো তুফান!!
যৌবন ঘোড়ায় চ'ড়ে জীবন
মারছো চাবুক সপাং সপাং!!!
জীবন ‘জীবন’ খুঁজে পেয়েছো কি?
ভাবতে গিয়েই তোমার গেলো সময়
অন্তরেতে জাগছে যে ভয়
ওপারের ডাক এই এলো বুঝি!
বেহাগ কেন তোমার বাজছে বুকে!?
খাসা তুমি আছো তো সুখে
তবু ছড়ায় যেন তুলছে তান!
মনের মাঝে প্রশ্ন মারছে উঁকি
'জীবন' খালি কেন নিচ্ছে ঝুঁকি?
হাজার তাফাল ব’য়ে জীবন
তোমার 'জীবন' হচ্ছে কেন খানখান?
এই কি তবে 'জীবন'!?
কোনটা তবে মরণ!?
জীবন! মনের কোণে দিনের শেষে
হচ্ছে চিন্তা যেন অবশেষে
আজ তুমি হয়রাণ!!!!!!
তাই, জীবন বলছি শোনো
আমার কথা যদি মানো
পাবেই পাবে ‘জীবন’ খুঁজে সেথায়
পরমাত্মা বিরাজে যেথায়
যদি তাঁকে বক্ষ মাঝে রাখো।
(৩রা ফেব্রুয়ারী' ২০১৮)

কবিতাঃ কভি নেহি!!!

ঠাকুরকে ভালোবাসে, ঠাকুরের কথা বলে,
ঠাকুর ফেলে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে ছুটে যারা চলে,
ঠাকুর ধ্যান, ঠাকুর জ্ঞান, ঠাকুর যাদের প্রাণ,
ঠাকুরের স্বপ্ন, ঠাকুরের জীবন নিয়ে গায় যারা গান,
ঠাকুরের মিশন, ঠাকুরের ভিশন নিয়ে গলা ফাটায় যারা,
ঠাকুরের ইচ্ছা আর ভালবাসা নিয়ে যাদের বয় অশ্রুধারা!
তারা কি জানে কোথায় ঠাকুরের কষ্ট আর কোথায় বুকের ব্যথা!?
কোথায় ঠাকুরের দুঃখ? কোথায় আছে চাপা পড়ে তাঁর মনের কথা!?
ঠাকুর আত্মজকে পায়ে দ'লে ঠাকুর প্রেমের বাদাম তুলে
লোক ঠকাবার দোকান খুলে ঠাকুরকে ক'রে আয়ের উপকরণ
ব্যবসা ফেঁদে বসে আছে যেসব মাথা, দেখেছো কি তোমরা
দু'চোখ মেলে মনের বন্ধ দরজা খুলে তাদের ঠাকুর প্রেমের ধরণ?
তোমরা কি তাদের চেনো? ভালোবাসার মুখোশ প'রে
ঠাকুর আত্মজদের বুকে লাথি মেরে লোক ঠকাচ্ছে যারা,
তারা কারা? ঠাকুর আত্মজদের থেকেও এ জগতে হায়!
বড় সাধক, বড় প্রেমী, বড় ভক্ত তারা!? বড় পন্ডিত, বড় জ্ঞানী,
জীবাত্মার স্তর পেরিয়ে মহান আত্মা তারা!?
কারা তারা!? কি নাম তাদের!?
একবারও কি তোমরা দেখবে না ভেবে
ঠাকুরকে যারা ভালবেসেছো এই ভবে!? কি তাদের পরিচয়?
'জয়গুরু' ব'লে গুরুর নামে যারা সামনে দিচ্ছে ধ্বনি
আর পিছনে 'মারি তো গণ্ডার আর লুটি তো ভান্ডার'
ব'লে মারছে ছক্কা আর করছে নয়ছয়!?
শালা! অধর্মের জয় আর হবে ধর্মের পরাজয়!?
কভি নেহি! দো দিন আগে আউর দো দিন পিছে!
আজ নেহি তো কাল আ রহা হ্যায় মহাকাল! সাধু! সাওধান!
(লেখা ২রা ফেব্রুয়ারী'২০১৯)

উপলব্ধিঃ বর্তমান সময়ের ভীষ্মদের প্রতি!

দেশের বর্তমান অস্থির সময়ে বর্তমান সমাজের ভীষ্মরা মহাভারতের যুগে ফিরে গেছে!

মন বলে, এটাই আমাদের সমস্যা! তবুও বলি কাউকে কটাক্ষ না ক'রেও সত্য তুলে ধরা যায়। সত্য তুলে ধরার জন্য তিক্তভাষী হ'তে হয় না, মিষ্টি ক'রেও সত্য তুলে ধরা যায়। এই তুলে ধরার জন্য কোনও রাজনৈতিক কথা বলার দরকার পড়ে না বা কোনও দল সম্পর্কে কটাক্ষ না ক'রেও তুলে ধরা যায় সত্য। দেশের পক্ষে, মানুষের জন্য যেটা মঙ্গল, যেটা ভালো সেটা তুলে ধরা প্রত্যেক দেশবাসীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিজের চোখ খোলো ও অন্যের চোখ খুলতে সাহায্য কর। আর তা করো বলিষ্ঠতার সঙ্গে প্রেমকে আবাহন ক'রে। ঠাকুর বললেন, "স্পষ্টভাষী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও। সত্য বলো কিন্তু সংহার এনো না।" সবাই ভালো থাকো। (লেখা ২রা ফেব্রুয়ারী'২০২১)

কবিতাঃ স্বীকৃতি!

তোমার প্রতি এত রাগ,
এত ঘৃণা কেন তোমার বিরোধীদের?
ভেবে দেখেছো কি?
তোমার চিন্তা, তোমার ভাবনা,
তোমার চলা, তোমার বলা
এর জন্যে দায়ী কি?
যদি মনে করো, যদি থাকে আত্মবিশ্বাস
যা তুমি করেছো ও করছো তা ভুল নয়কো,
নয়কো কপটতার প্রতীক
তাহ'লে যাও এগিয়ে গভীর বিশ্বাসে
দৃঢ়তাকে ক'রে সাথী;
মৌরসি পাট্টার অচলায়তন সরাতে শ্বাসে-প্রশ্বাসে
হবে সংক্রমিত, মেনে নিতে হবে ক্ষয়ক্ষতি।
যদি বিবেক বলে তোমায়ঃ
তুমি স্বচ্ছ! তুমি সুন্দর! তুমি ঠিক!
দেরি হ'লেও আসবে একদিন নতুন সকাল
পাবে স্বীকৃতি নিশ্চিত!!
(লেখা ২রা ফেব্রুয়ারী'২০২১)

কবিতাঃ ঝুল! দেউলিয়ার ঝুল!!

হে কবি! হে বুদ্ধিজীবী!!
ব্যক্তিগত আক্রোশকে ক'রে সাথী
গড়তে চাও নতুন সমাজ!?
আনতে চাও কুয়াশাহীন স্বচ্ছ সকাল!?
প্রেম নেই যে হৃদয়ে, নেই বুক ভরা ভালোবাসা
সেই হৃদয়ে, সেই বুক দিয়ে সরাবে জঞ্জাল,
গড়বে অক্সিজেনে ভরা ভালো বাসা!?
যেই বুকে নেই বল, নেই বিশ্বাস-আত্মত্যাগ-নির্ভরতা
সেই জীবন বাসবে ভালো গরীবেরে,
দরিদ্ররে দেবে বার্তা সুখ-শান্তির, দেবে ভরসা!?
সব কথার ফানুস! নির্লজ্জ কপটতা!!
একচক্ষু হরিণের মত নিজেকে মনে করো চালাক
আর অন্যের সব কিছুর মধ্যে দেখতে পাও ভুল
সেই ভুল্ভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে পথ হারিয়ে
তোমার জীবনের আষ্টেপৃষ্টে গেছে জড়িয়ে ঝুল!
দেউলিয়ার ঝুল!!
( লেখা ২রা ফেব্রুয়ারি'২০২১)