Powered By Blogger

Thursday, February 22, 2024

প্রবন্ধঃ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও আর্য সমাজ ব্যবস্থা।

নীচের পোষ্টে বিজ্ঞানীর কথার মধ্যে একটা inferiority complex প্রকাশ পায়। আর এই প্রকাশ স্বাভাবিক। কারণ তিনি অসাধারণ মেধার অধিকারী হলেও, ছাত্র জীবনে অসাধারণ সহপাঠীদের সংস্পর্শে এবং দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও তিনিও ছিলেন বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তের মধ্যে ঘোরা আমাদের মতোই একজন জীবাত্মা। পরমাত্মার সংশ্রবে জীবের আত্মার বন্ধন মুক্তি ঘটে ও মহান আত্মার পথে চালিত হ'য়ে পরমাত্মায় যুক্ত হয়, অর্থাৎ জ্ঞানের চরম অবস্থা প্রাপ্ত হয়, কারণের কারণ পরমকারণের সন্ধান পায়, সমস্ত কিছুর উৎসের উৎস পরম উৎস, সমস্ত সত্ত্বার সত্তা পরমসত্ত্বার সন্ধান পায়। তা তাঁর জীবনে হ'য়ে ওঠেনি। শৈশবের হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামির তিক্ত স্মৃতি, একশ্রেণীর ব্রাহ্মণদের অতিরিক্ত যুক্তিহীন আচরণের বাড়াবাড়ি ও শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে একচেটিয়া মৌরসী পাট্টা বজায় রাখার প্রয়াস এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর সংস্কার কাজে ধর্মীয় বাধা তাঁকে তাঁর চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে এমনতর প্রভাব বিস্তার করেছিল। যা স্বাভাবিক। আমার আপনার সবার মতই স্বাভাবিক। যে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তাঁদেরই সহপাঠী সহকর্মী, নোবেল জয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী সি ভি রমণের সহকারী ফিজিক্সে গোল্ড মেডেলিস্ট পরম বিজ্ঞানী ঘোরতর নাস্তিক শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য (কেষ্টদা) মহাত্মায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পরমাত্মার সংস্পর্শে এসে। অসাধারণ মেধার অধিকারী শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য সেই সময়ে বিদেশ যাওয়ার ডাককে উপেক্ষা ক'রে, ভবিষ্যতের সমস্ত বিজ্ঞান সাধনার সমস্ত রকম সুযোগকে ত্যাগ ক'রে, ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান সাধনায় নিশ্চিত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ ক'রে The greatest scientist of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর চরণে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন আমৃত্যু। আর, তাই তিনি সৃষ্টির সবকিছুর পিছনে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত কর্মকান্ডের পিছনে সত্যটাকে দেখতে পারার শক্তি অর্জন করেছিলেন। একজন বিজ্ঞানী হ'য়ে চিনতে পেরেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন পরমবিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে। আর, তাই পরমবিজ্ঞানীর সন্ধান পেয়ে তিনি অবলীলায় অবহেলা করতে পেরেছিলেন সেই বিজ্ঞানের ক্ষুদ্র অংশের সাধনাকে।
শ্রীমেঘনাদ সাহা ও শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য এই দুই বাঙালী বিজ্ঞানীর মধ্যে ছিল এই তফাৎ। তফাৎ-এর এই কারণ একজনের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ছিল, আর একজনের জীবনে আদর্শ ছিল না, ছিল অসাধারণ জ্ঞানের অহংকার, হীনমন্যতা আর ছোটোবেলার বাহ্মণ্যবাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা।


পুরোহিতের সংস্কৃত মন্ত্রের অর্থ না জেনে শ্রাদ্ধ বা বিবাহের মন্ত্র পড়া নিশ্চয়ই অপরাধ ও ভুল। কিন্তু তাঁর মধ্যে প্রবাহিত সংস্কৃত রক্তকে অস্বীকার করা আরও বড় ভুল ও পাপ। পূর্বপুরুষের উষ্ণ রক্তের মধ্যে প্রবাহিত গুণাবলী হয়তো পোষণের অভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন কিন্তু যে কোনও উষ্ণতার স্পর্শে তাপিত হ'য়ে সেই রক্তের মধ্যে প্রবাহিত পূর্বপুরুষের সুপ্ত গুণাবলীকে সহজেই জাগিয়ে তোলা যেতে পারে যা ( তাঁর কথানুযায়ী ) মুচি বা তাঁতির রক্তের দ্বারা সম্ভব নয়। তাঁতি বা মুচি নিশ্চয়ই পরিশ্রম করে এবং তা তার গুণ ও কর্মানুযায়ী বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। পুরোহিত হয়তো তাঁর রক্তের মধ্যে প্রবাহিত গুণাবলীকে জাগিয়ে তুলতে পারেনি সাধনার ধারাকে বজায় রেখেই। নিঃসন্দেহে তাঁর পূর্বপুরুষের অর্জিত গুণাবলীকে নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে না পারার জন্য নিজেই দায়ী এবং সেই অনুযায়ীই সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃত হয়। তাই ব'লে তার রক্ত কখনই অসম্মানীয় নয়। যেমন মুচি বা তাঁতির ছেলের মধ্যে তার পিতার মত উন্নত মানের জুতো তৈরী ও সেলাই এবং তাঁতির মত কাপড় তৈরীর কাজে দক্ষতা নাই থাকতে পারে জন্মগত ও অনভ্যাস ইত্যাদি নানা কারণে। কিন্তু তার রক্তে তার পিতার মত গুণাবলী সুপ্ত থাকে। আর এই গুণাবলী বৈশিষ্ট্যানুযায়ী। আর, এই নিজের নিজের বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে বৈশিষ্ট্যকে বিকশিত করার পর অন্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। নতুবা নয়। নিজের বৈশিষ্ট্যকে অবহেলা বা উপেক্ষা ক'রে নয়।


আর, আর্য সমাজব্যবস্থায় সবার সবরকম উন্নয়নের দরজা খোলা ছিল, কোনও রকম বাধা ছিল না। সেখানে কোনও উচ্চনীচ ভেদাভেদ ছিল না। ব্যক্তিগত বদমাইসীর কারণে ভয়ংকর সমস্যার জন্ম হয়েছিল যে ট্রাডিশান আজও ব'য়ে চলেছে। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের "ছোটোকে বড় করো ও বড়োকে আরও বড় করো--------" এই থিয়োরী আর্য সমাজব্যবস্থায় ছিল।


আর, সমাজ সভ্যতাকে যদি কেউ ধ্বংস ক'রে সেই সমাজ বিবর্তনের ঘোর অন্ধকার যুগে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, অধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মকে খতম করতে চায় তখন তাঁকে বধ করার জন্য, তাঁর মাথা কেটে নেবার জন্য আবার শ্রীরামচন্দ্র বা শ্রীকৃষ্ণকে আবার আসতে হবে। এর অন্যথা হবার নয়। তা'তে আগেকার সময় আর এখনকার সময় পরিবেশ পরিস্থিতি যতই ভিন্ন হ'ক না কেন। ভালো কোনও কিছু করার জন্য, সমাজ, সভ্যতার মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য, ধর্ম রক্ষার জন্য যদি কেউ এগিয়ে আসে তাদের কখনও কারও মাথা কেটে নেওয়া হয়নি, আর্য সভ্যতায় অকারণ হত্যার চুলকুনি ছিল না। বিজ্ঞানীর ধারণা ভুল। হীনমন্যতার কারণে এই ভুলের জন্ম। জীবনে আদর্শ না থাকলে, শ্রেয়তর উচ্চ সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ না থাকলে হীনমন্যতা ও প্রভূত জ্ঞান আদর্শের স্পর্শে, ছোঁয়ায় জারিত হয় না। ফলে নূতন দৃষ্টির আলোকে তা সত্তাকে স্পর্শ করে না। তখন বিজ্ঞানী হ'য়েও বিজ্ঞানের আলোকে আলোকিত বর্ণাশ্রম ধর্মকে বুঝতে পারে না। সমাজের এলিট সম্প্রদায় যখন ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থকে বুঝতে পারে না তখন এটা মানবজাতির পক্ষে দুর্ভাগ্য।


কিন্তু আমাদের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর হ'য়ে নেমে আসেন মানুষের মাঝে মানুষ হ'য়ে।
(লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০২৪)।


No comments:

Post a Comment