এই ক্ষমতালোভী মানুষরাই নিজের স্বার্থে নিজের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে কিম্বা ভোল পালটে ক্ষমতাসীন মানুষটির অসময়ে বা দুর্দিনে পরিবর্ত পরিস্থিতিতে পরবর্তী ক্ষমতাসীন মানুষটিকে খুশি করার তাগিদে তাঁর পক্ষে আওয়াজ তোলে 'কেউ অপরিহার্য নয়'। আর সেই পরিহার্য মানুষটির যখন অভাব অনুভূত হয় বা মৃত্যু হয় তখন ঘরে বাইরে ‘এক অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে তাঁর অনুপস্থিতিকে চিহ্নিত করা হয়। কি অদ্ভুত নির্লজ্জ বেইমানী আর সীমাহীন সুবিধাবাদী মানসিকতা! এ সেই নিষ্ঠুর, নির্ম্মম, নৃশংস প্রবাদের জীবন্ত প্রতিফলন, ‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি’। কি অদ্ভুত মস্তিষ্ক এদের! নিজের অবস্থান থেকে নিজেরাই ১৮০ডিগ্রি সরে গিয়ে নিজের অজান্তেই হোক আর ভালো মানুষের মুখোশ ধারণ করেই হোক নিজেদের নিজেরাই অপমান করে বসে! উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা যেতে পারে এমন অনেক দৃষ্টান্তই আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের শাসনব্যবস্থায় জ্যোতিবাবুর অনুপস্থিতি। মমতার আক্রমণে রাজ্যের নির্বাচনী ময়দান থেকে সরে দাঁড়ালেও দেশের সংকট মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সর্ব্বসম্মতিতে তাঁর প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের অযৌক্তিক, ভুল ও ষষ্ঠরিপুর তাড়নায় ইর্ষান্বিত সিদ্ধান্তের কারণে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি হয়। মতভেদ চরম আকার ধারণ করলে সেই অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক যুক্তি ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ সুকৌশলে সামনে চলে আসে। জ্যোতিবাবুর আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হ'ল না, দেশ একজন অসাধারণ প্রশাসক পেল না, বাঙালী নেতাজীর পর দ্বিতীয় বাঙালী প্রধানমন্ত্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হ'ল ইত্যাদি যাই হ'ক না কেন সেই এক বাক্য 'কেউ অপরিহার্য নয়' গিলে ফেলল গোটা দলকে, গোটা দেশকে। পরবর্তী সময়ে যখন বামপন্থীদের পায়ের তলার মাটি সরতে সরতে বিশাল খাদ-এর আকার গ্রহণ করে তখন দ্বিধাহীন চিত্তে দলের বোদ্ধা প্রবীণ সহকর্ম্মীরা তাঁর স্মরণ সভায় দলের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার কথা স্মরণ করে তাঁর স্মৃতিতে প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে ফেলতে স্বীকার করেন জ্যোতি বসু দলে কতটা অপরিহার্য ছিলেন। কায়েমী স্বার্থের এক অদ্ভুত নির্লজ্জ প্রতিফলন!
প্রমাণ হ'ল কেউ পরিহার্য নয়। সবাই সবার জায়গায় অপরিহার্য!
ক্রমশঃ (লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৫)
No comments:
Post a Comment