Powered By Blogger

Wednesday, March 19, 2014

নেতা, নীতি ও দল

ভারতের ১৬তম সাধারণ লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষনা হল। একমাসের ওপর এই নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোট হবে নয় দফায়।  প্রথম দফা অর্থাৎ ভোট শুরু হচ্ছে এপ্রিল। বাকি দফাগুলি হবে যথাক্রমে এপ্রিল, ১০ এপ্রিল, ১২ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, মে এবং ১২ মে। গণনা হবে ১৬ মে। পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ দফায় ভোট হবে। এই তারিখগুলি হল যথাক্রমে ১৭ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, মে এবং ১২ মে। এবারের লোকসভা ভোটে ৮১.৪৬ কোটি মানুষ তাঁদের মত প্রয়োগ করবেন। প্রথম ভোট দেবেন অর্থাৎ নবীন ভোটারই হল .৭৬ কোটি। এবারের লোকসভা ভোটে প্রথম বার 'নোটা' অপশন প্রয়োগ করতে পারবেন ভোটাররা। কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে ইভিএমে সংশ্লিষ্ট বোতাম টিপে জানাতে পারবেন নিজের মতামত। সারা দেশে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা .৩০ লক্ষ। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে নির্বাচন হবে।
নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দল ব্যস্ত হয়ে পড়ল নির্বাচন যুদ্ধ নামক লড়াইয়ে নিজের নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। বিজেপি কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদে তাদের নেতা নরেন্দ্র মোদী রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে জোর কদমে লড়াইয়ের ময়দানে নেবে পড়েছে। অন্যান্য কয়েকটি দল নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদে বিভিন্ন নাম ভাসিয়ে রেখেছে রাজনীতির আকাশে। বামফ্রন্ট তথাকথিত থার্ডফ্রন্ট ঘোষণা করেছে তাদের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশকে বাঁচাতে নেতার চেয়ে নীতির গুরুত্ব বেশী। তাই তারা নেতার ভিত্তিতে সরকার গড়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়। এই মুহুর্তে দেশ নীতির অভাবে ভুগছে। বর্তমান শাসকশ্রেণীর নীতিহীনতায় দেশ দেশের মানুষ সর্বনাশের অতল গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে এই মুহূর্তে নেতা নয়, জবরদস্ত বিকল্প নীতির প্রয়োজন। তাই নির্বাচনী ময়দানে বামফ্রন্ট নেতা, প্রার্থীরা কোমর কষে নেবে পড়েছে জনগণের উদ্দেশ্যে তাদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে যে, নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন। নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে।

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৬৬ বছরএতদিন দেশকে বিভিন্ন দল এককভাবে কিম্বা যৌথভাবে চালিত করেছে। তাহলে কি এতদিন কোন নীতি ছাড়াই দেশ পরিচালিত হয়েছে? নীতিহীন কোন শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে বাঁচানোর কোন নীতি কি তাদের ছিল না? বামফ্রন্টও কখনো কখনো কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত শাসকশ্রেণীকে সমর্থন জুগিয়েছে। তাহলে তখন কি কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত শাসকশ্রেণীর কোন নীতি ছিল না? নিজেদের কোন নীতি ছাড়াই কি তারা কোন নীতিহীন শক্তিকে সমর্থন করেছিল? পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ৩৪বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল। তখন কি কোনও নীতি ছিল না? কোন নীতির ভিত্তি ছাড়াই কি ৩৪বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট? রাজ্যকে কোনও নীতি ছাড়াই কি  বামফ্রন্ট ৩৪বছর পরিচালনা করেছিল? শিল্পনীতি, কৃষিনীতি, আর্থিকনীতি, শিক্ষানীতি ইত্যাদি নীতি ছাড়াই তারা কি রাজ্য পরিচালনা করেছিল? ৩৪বছরের মত দীর্ঘ একটা সময় রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় অতিবাহিত করার সুযোগ পাওয়ার পর একটা সুষ্টু দেশ গঠনের নীতির রুপরেখা তৈরী করতে কি পারেননি? গত বিধানসভা নির্বাচনে কি তাদের রাজ্য পরিচালনার জন্য কোন নীতি ছিল না? এরকম অজস্র প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই একজন নাগরিক হিসাবে মনে জাগে। কারণ নীতি যদি থাকবেই তাহলে হঠাৎ ভারতের ষোড়শ সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচনে বামফ্রন্টের নীতি এত মুখ্য হয়ে উঠল কেন? দেশগঠনে নীতির প্রয়োজনীয়তা যেন প্রথম আবিস্কার হ’ল? সবাই যেন সমস্বরে নীতি নীতি বলে উচ্চকিত হ’য়ে উঠলো! নীতি ছাড়া অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত বা সমাজের হিতকর বিধান ছাড়া যে দেশ গঠন হয় না এটা তো understood subject! ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্যাকর্তব্য বিচার ছাড়া যে সমাজব্যবস্থা অচল এটা তো সর্বজনস্বীকৃত! তাহলে হঠাৎ নীতি নীতি বলে শোরগোল পড়ে গেল কেন বামপন্থীদের মধ্যে?

এখন প্রশ্ন এই নীতি তৈরী করবে কারা? নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞরাই তো নীতি তৈরী করবে। ভালমন্দ ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্যাকর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান বা বিষয় সম্বন্ধে বোধসম্পন্ন ব্যাক্তিরাই নীতি তৈরী করবে। স্বাধীনতার ৬৬বছর পর দেশের ষোলতম সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচন নীতির ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করবে বামপন্থীরা! নীতি যারা তৈরি করবেন তারা কি বামফ্রন্টে নতুন? নতুন তাজা বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞাবান রক্ত কি এই নীতি তৈরী করবে? না-কি সেই যারা ৩৪বছর সুযোগ পেয়েছিল রাজ্যটাকে শাসন করার, যারা একটা রাজ্যকে গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে গোটা দেশকে পথ দেখাবার দীর্ঘ সুযোগ পেয়েছিল তারা তৈরী করবে নীতি? কমিউনিজম যে ফলিত বিজ্ঞান (applied, practical science), এই দর্শন যে সত্যরুপে প্রমানিত, এই মতবাদ যে পরীক্ষা বা গবেষনার দ্বারা সিদ্ধ মতবাদ, একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বহমান উন্নত নিখুঁত এক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির স্রোত যে এই সমাজ কো বদল ডালো নীতি সেটা প্রমাণ করার জন্য দীর্ঘ সময়ের দরকার এবং সেই দীর্ঘ সময়ের সুযোগ পেয়েছিল যারা তারা আজ তৈরী করবে নীতি? তারা এতদিন সুযোগ পেয়েও এই দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না? এতদিন কি তাহলে তাদের সামনে কোন নীতি ছিল না? বামপন্থী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ নিজেদের প্রজ্ঞা সম্পর্কে কি মেসেজ পাঠালো সাধারণ জনগনের কাছে?
এখন নেতা সম্পর্কে বামপন্থী নেতৃবৃন্দের মনোভাব কি? তারা বলছেন, নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন। নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে। এখন প্রশ্ন, নীতি নাহয় নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ, ভালোমন্দ ন্যায়-অন্যায় বা কর্ত্যব্যাকর্তব্য বিষয়ে বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরী করল কিন্তু সেই নীতি কার্যে পরিণত করবে কে বা কারা? সভ্যতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় অন্তিম লগ্নে এসে তাহলে কি মানুষ আবার পিছনের দিকে হাঁটতে শুরু করল? এটাই কি তাহলে সৃষ্টির নিয়ম? শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে আবার শুরু? তাহলে কমিউনিস্টরা কি প্রমাণ করল ঈশ্বরবাদীদের দর্শন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগ-এর অস্তিত্ব? মানুষ কি অজ্ঞানতার অন্ধকার ভেদ করে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে জ্বালাতে চারিদিক আলোময় করে আবার অন্ধকারের বুকে ফিরে যাচ্ছে? অসভ্যতার বেড়াজাল ভেঙ্গে সভ্য হতে হতে চারিদিকে সভ্যতার মশাল জ্বালিয়ে আবার অসভ্যতার অন্ধকার গহ্বরে ঢুকে যাচ্ছে? প্রগতির পথে চলতে চলতে অতি প্রগতির নেশায় দুর্গতিকে ডেকে আনতে চাইছে? নেতার প্রয়োজন নেই? নীতির প্রয়োজন? এ-প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukul Chandra-এর কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় শ্রী শ্রী ঠাকুর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে বলেছিলেন, “দাশদা ঘোড়া গাড়ী টেনে নিয়ে চলে না-কি গাড়ী ঘোড়া টেনে নিয়ে চলে? দেশ মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় না-কি মানুষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়?” ঠিক তেমনি নীতি নিজে নিজে নিজেকে কার্যে পরিণত ক’রে দেশকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে না-কি কাগজের বুকে লেখা ভালো ভালো কথা হয়ে পড়ে থাকবে না-কি একজন নেতা তার চরিত্র দিয়ে, জীবন দিয়ে নীতিগুলিকে কার্যে পরিণত করে তুলবে, বাস্তবায়িত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সপারিরিপার্শিক বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার দিকে? কোনটা? শ্রী শ্রী ঠাকুর আরও বললেন, “বই পড়ে বই হ’য়ে যেও না, বই-এর essence (সার)-কে মজ্জাগত করতে চেষ্টা কর। Pull the husk draw to the seed, (তুষটা ফেলে শস্যটা নিতে হয়)”। তাহলে নেতাদের দ্বারা রচিত নীতিগুলিকে যদি নেতারা নিজেরাই চরিত্রগত করে না তোলে, মজ্জাগত না করে তাহলে সেই নীতি দিয়ে কি হবে? বই পড়ে বই হ’য়ে যাবার মত নীতিকথার তোতাপাখি হ’য়ে লাভ কি? ছোটবেলা থেকে তো কত ভালো ভালো কথা বইয়ে পড়লাম, শুনলাম ‘সদা সত্য কথা বলিবে, অহিংসা পরম ধর্ম, চুরি করা মহাপাপ, সততাই জীবন, গুরুজনকে শ্রদ্ধা করিও ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন আমরা কি দেখতে পাই? উল্টোটা নয় কি? তাহলে নীতি দিয়ে হবেটা কি? যদি না নীতিগুলিকে কার্যে পরিণত করার জন্য নেতা না থাকে? রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, বড় বড় হস্তিরা, রাজনীতিই যাদের ধ্যান-জ্ঞান, মন-প্রাণ, রাজনীতিই যাদের জীবন-মরণ তাঁরা কেউ স্বাধীনতার ৬৬বছর পরেও এতবড় দেশটার জন্য তাঁদের মধ্যে থেকে দেশের হাল ধরার জন্য, বিকল্প নীতিকে রুপায়িত করার জন্য, ভারতকে বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী এক রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার জন্য কোনও ব্যক্তিত্ব খুঁজে পেল না? এত সেই গাড়ি আছে ঘোড়া নেই, দেশ আছে মানুষ নেই। গাড়িটা কে টেনে নিয়ে যাবে? দেশটাকে বিশ্বের দরবারে কে তুলে ধরবে? আনাড়ি হাতে গাড়ীটা যদি পড়ে তাহলে কি হবে? আধুনিক টেকনোলজিতে যদি তার জ্ঞান না থাকে, আধুনিক টেকনোলজি তার করায়ত্ত না থাকে তাহলে তার হাতে আধুনিক টেকনোলজিতে তৈরী গাড়ি কতটা নিরাপদ? দেশে যদি নীতিজ্ঞান সমৃদ্ধ, নীতি চরিত্রায়ত্ত নেতার মত নেতা না থাকে তাহলে কি হবে নীতিজ্ঞ দিয়ে তৈরী নীতিমালা দিয়ে? রাজভোগ, রাজঅন্ন কি ভিখিরির জন্য শোভা দেয়? সে তো সমস্ত অন্ন ঘেঁটে একাকার করে দেবে। এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ঠাকুর বললেন, ‘অপাত্রে করিলে দান, দাতা গ্রহীতা দুই-ই ম্লান’!  দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে বললেন, “দেখুন, দেশে মানুষের মত মানুষের অভাব আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, অথচ এত তাড়াতাড়ি স্বরাজ পেতে যে আপনারা চাচ্ছেন, তা’তেই বোঝা যায় আপনারা স্বরাজ চান না। যদি চাইতেন তবে আমার মনে হয়, আগে মানুষ তৈরী করতেন। তা’ না-করে আপনারা পরের দোষ দিচ্ছেন, আর, ইংরেজের দোষই শুধু দেখছেন। ওদের দোষ দেখতে দেখতে ওদের কি কি গুণে আমাদের ওদের অধীনে থাকতে হচ্ছে তা’ আর নজরেই পড়ছে না”।
আজ ভারতবর্ষের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে শুধু একটাই কথা মনে হয়, দেশের, রাজনৈতিক দলের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষদের আজ এই পরিণতি কেন? সমাজের মোড়লদের যদি এই মানসিক অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটা শোচনীয় ভাবলেই শিউরে উঠি। আয়নায় নিজের মুখ নিজে দেখতে ভয় হয়! তাই মাঝে মাঝে মনে হয় কে কাকে বোকা বানাচ্ছে? নেতারা জনগণকে নাকি জনগণ নেতাদের। আজ নেতাদের সামনে সর্বজনগ্রাহ্য কোনো মানুষ নেই যে এতবড় দেশটাকে নেতৃত্ব দেবার অধিকারী বা ক্ষমতাসম্পন্ন। আর তাই তাঁদের আশ্চর্য সিদ্ধান্ত “নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন! নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে”! সত্য ভারত! কি বিচিত্র এই নেতাগণ!!!!!!! নেতাদের এই আশ্চর্য সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয় হয় নেতারা অদূরদর্শী, অজ্ঞানী বা অল্পজ্ঞানী ও বাস্তব বোধবুদ্ধি রহিত আর না-হয় জনগণকে বোকা বানাবার, বিপক্ষকে আটকাবার, জনগণের মন থেকে বিপক্ষের ঘোষিত নেতাকে, নেতার নামকে মুছে দেবার রণকৌশল!  

আর রাহুল গান্ধী আরো এক ধাপ এগিয়ে বুক চেতিয়ে বললেন, "নেতা দেশ বদলতা নেহী, জনতা দেশ বদলতা হ্যায়” রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই কথার জাগলিং! কোন জনতা? তাহলে যে রাজ্যে জনতা যাকে খুঁজে নিয়েছে রাজ্য শাসন করার জন্য সে ঠিক! তাহলে জনতার দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে, সরকারের প্রধানকে এত সমালোচনা কেন? কেন তাঁর এত নিন্দা? কেন তাঁকে ব্যর্থতার প্রতীক হিসাবে সেঁটে দেওয়া হয়? তাহলে কি জনতা ভুল করল? আর জনতা কি দেশের বা রাজ্যের হাল ধরে? রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস দল যদি জিতে আসে আর সরকার গঠন করে তাহলে কি দেশের শাসনভার জনতার হাতে তুলে দেবেন রাহুল গান্ধী? এই যে ৩৪বছর জনতা সুযোগ দিল বামফ্রন্টকে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য চালাবার জন্য, সেই রাজ্য কার নেতৃত্বে চালিত হয়েছিল? জনগণের? ক্ষমতার চেয়ারে বসে রাজ্যটাকে বদলাবার সুযোগ কে পেয়েছিল? জনগণ? কেন জনতা সেই ফ্রন্টের ওপর, নেতার ওপর অখুশি হ’য়ে তাঁকে সরিয়ে দিল? কেন জনতা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান মনমোহন সিং-এর ওপর অসন্তুষ্ট? কেন জনতা দেশের ১৩জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মত গুটিকয়েক প্রধানমন্ত্রীকে নেতা হিসাবে মনে রাখে? কেন জনতা সুভাষ বোসের মত নেতাকে হৃদয়ে স্থান দেয় ও সারা দেশের মানুষ নেতাজী বলে সম্বোধন করে? কেন মানুষ চিত্তরঞ্জনকে দেশবন্ধু বলে সম্বোধন করে? কেন আজও পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে পশ্চিমবঙ্গের রুপকার বলে? কেন ৩৪বছর সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও অন্যরা সেই স্বীকৃতি পান না? কেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয় অবিসংবাদিত সাংগঠনিক নেতা হিসাবে? এরকম অজস্র উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। জনতা যদি দেশ বদলাতো তাহলে ভারত ৬৬বছর পরেও এমন পঙ্গু হয়ে থাকতো? জনতা তো শুধু ভোট দেওয়ার অধিকারী। তাও দলীয় প্রার্থীদের! দল যাকে প্রার্থী করবে তাঁদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও। দলতন্ত্র আজ গণতন্ত্রের বাবা, ঈশ্বর! দলীয় সীমানার বাইরে যাবার অধিকার, অনুমতি, সুযোগ, সুবিধা, সম্ভাবনা জনগণের নেই! হয় যে কোন একজনকে বেছে নাও আর না-হয় ভোট না দিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে থাকো! আমাদের দেশে ভোট একটা উৎসব। একটা চুলকানি। ঝড়-জল-তুফান হলেও মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রতিনিধির ক্ষমতা লাভের জন্য প্রতিনিধির পক্ষে ভোটাঞ্জলি দেবেই দেবে! জনগণ দেশ নামক গাড়িটার চেয়ারে কাউকে বসাতে পারে কিন্তু গাড়ীটা চালাতে হবে তাঁকেই। জনগণ তো ভারত নামক দেশ গাড়ীটা চালাবে না! তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা সাথে অভিজ্ঞতাবিহীন একজন মানুষ এতবড় ভারত নামক গাড়ীটার পাইলটের চেয়ারে বসবে? এই-ই জনগণ দেশ বদলাবে? কোন জনগন? জীবনের তথা দেশের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশের চাপে পড়ে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিভুতির দ্বারা আক্রান্ত জনগন? কোন মানুষ দেশ বদলাবে? যে মানুষ নানা পরিস্থিতিতে পড়ে নানারকম ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রতিনিয়ত রাঙ্গিয়ে যাচ্ছে, Mental Identity বলে কিছু থাকছে না যে মানুষের, সেই মানুষ?  তাহলে কি ধরে নেব রাহুল গান্ধী মূর্খ না-কি রাজনীতির লড়াই-এর ময়দানে ক্ষমতা লাভের জন্য জনগণের সাথে কথার জাগলিং? কোনটা? 

কেন আজও পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে পশ্চিমবঙ্গের রুপকার বলে? কেন ৩৪বছর সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও অন্যরা সেই স্বীকৃতি পান না? কেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয় অবিসংবাদিত সাংগঠনিক নেতা হিসাবে? এরকম অজস্র উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। জনতা যদি দেশ বদলাতো তাহলে ভারত ৬৬বছর পরেও এমন পঙ্গু হয়ে থাকতো? জনতা তো শুধু ভোট দেওয়ার অধিকারী। তাও দলীয় প্রার্থীদের! দল যাকে প্রার্থী করবে তাঁদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও। দলতন্ত্র আজ গণতন্ত্রের বাবা, ঈশ্বর! দলীয় সীমানার বাইরে যাবার অধিকার, অনুমতি, সুযোগ, সুবিধা, সম্ভাবনা জনগণের নেই! হয় যে কোন একজনকে বেছে নাও আর না-হয় ভোট না দিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে থাকো! আমাদের দেশে ভোট একটা উৎসব। একটা চুলকানি। ঝড়-জল-তুফান হলেও মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রতিনিধির ক্ষমতা লাভের জন্য প্রতিনিধির পক্ষে ভোটাঞ্জলি দেবেই দেবে! জনগণ দেশ নামক গাড়িটার চেয়ারে কাউকে বসাতে পারে কিন্তু গাড়ীটা চালাতে হবে তাঁকেই। জনগণ তো ভারত নামক দেশ গাড়ীটা চালাবে না! তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা সাথে অভিজ্ঞতাবিহীন একজন মানুষ এতবড় ভারত নামক গাড়ীটার পাইলটের চেয়ারে বসবে? এই-ই জনগণ দেশ বদলাবে? কোন জনগন? জীবনের তথা দেশের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশের চাপে পড়ে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিভুতির দ্বারা আক্রান্ত জনগন? কোন মানুষ দেশ বদলাবে? যে মানুষ নানা পরিস্থিতিতে পড়ে নানারকম ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রতিনিয়ত রাঙ্গিয়ে যাচ্ছে, Mental Identity বলে কিছু থাকছে না যে মানুষের, সেই মানুষ?  তাহলে কি ধরে নেব রাহুল গান্ধী মূর্খ না-কি রাজনীতির লড়াই-এর ময়দানে ক্ষমতা লাভের জন্য জনগণের সাথে কথার জাগলিং? কোনটা?
মমতা বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘ব্যক্তি নয়, দল বড়’। ব্যক্তির করিশমায় দল টিকে থাকে, বড় হয়! দল ব্যক্তিকে টিকিয়ে রাখতে পারে না, ব্যক্তি নিজেই নিজের অস্তিত্ব সঙ্গে সঙ্গে দলের অস্তিত্বও রক্ষা করে। দল অটুট থাকলে ব্যক্তির কাজ করবার শক্তি, সু্যোগ অটুট থাকে। আর দলের অবস্থা অটুট রাখে ব্যক্তি স্বয়ং! ব্যক্তির জীবন, ব্যক্তির চরিত্র! তৃণমূল দল গঠনে অনেকের সাহায্য নিশ্চিত ভাবে সংগঠিত হয়েছিল, কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়! এক ও অদ্বিতীয় নেতৃত্ব! ‘ব্যক্তি নয়, দল বড়’ কথাটায় দলকে, দলের কর্মী, সমর্থকদের অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে কিন্তু কথার চালাকিতে সত্যকে ঢাকা দেওয়া যাবে না। যতই সংগঠিত শক্তির কথা বলা হোক না কেন, যতই সম্মিলিত নেতৃত্বের কথা বলা হোক না কেন, যতই ব্যষ্টি বাদ দিয়ে সন্মষ্টির কথা বলা হ’ক না কেন ব্যষ্টি বা ব্যক্তির ভুমিকা প্রধান ও অগ্রগণ্য। আমার মায়ের একটা কথা এই মুহুর্তে মনে পড়ে গেল। মা সবসময় বলতেন, “একে নষ্ট করে, সবে দুঃখ পায়, একে ভালো করে, সবে সুখ পায়” অর্থাৎ সেই ব্যক্তি! এক থেকে একশো যদি গোনা শুরু করি তাহ’লে শুরু করতে হবে সেই এক থেকে। আবার একশো থেকে যদি পিছনে আসতে থাকি তাহলে সেই একে এসে থামতে হবে। তাই ব্যষ্টি থেকে সমষ্টি আবার সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি! সেই একেরই জয়গান! সেই জন্যই Environment makes a man কথাটার থেকে Man makes the environment কথাটা আমার মতে সঠিক। পৃথিবীতে যেখানেই কোনও উন্নতি হয়েছে সেখানেই ব্যক্তির ভুমিকা বড় হয়েই দেখা দিয়েছে। প্রথমে কোনো ব্যক্তির দ্বারাই পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে, পরে সেই পরিবেশ অন্য সকল ব্যক্তিকে পরিবর্তন হতে সাহায্য করে। মমতা বন্ধোপাধ্যায় নিজে প্রমাণ করেছেন দল নয়, ব্যক্তি বড়। দল যদি বড় হ’ত তাহলে কংগ্রেস দল তাঁকে ধরে রাখতে পারল না কেন? দল যদি বড় হয় তাহলে দল কি তাঁকে নেত্রী বানিয়েছেন না-কি তিনি দল তৈরী করেছেন? তাঁকে ঘিরে তৃণমূল নাকি তৃণমূলকে ঘিরে তিনি? তিনি ব্যক্তি নয় দল বড় কথার মধ্যে দিয়ে ঐক্যকে অটুট রাখতে চেয়েছেন। তিনি ভালোই জানেন ব্যক্তিই বড় হ’য়ে দেখা দেয় শেষে তাই তার লাগাম টানার চেষ্টা করেছেন মাত্র। কম্যুনিস্ট পার্টি ও কম্যুনিস্ট দেশগুলো এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ব্যক্তির বড় হ’য়ে ওঠা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। জ্যোতি বাবু শাসনকালের সময়ে তিনিই দলের ও সরকারের মুখ হ’য়ে উঠেছিলেন। সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস দলের শেষ কথা এটা সর্বজনবিদিত। এরকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে। অস্বীকার করা মানে অহেতুক তর্ক করা।

আর নরেন্দ্র মোদী সোজা ব্যাটে খেলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন সরাসরি। তাঁর দলও তাঁর কথাকে অনুমোদন করেছেন। ব্যক্তি ও দলের মধ্যে চলা, বলা ও করার এক অসাধারণ সমন্বয়! নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বলেছেন শুধু নয়, নিজের জন্য ভিক্ষা চেয়ে নিয়েছেন নেতাজীর ঢঙে। তাঁর চাওয়া আমাদের আর একবার ভুলে যাওয়া নেতাজীকে মনে পড়িয়ে দিয়েছে! নরেন্দ্র মোদী অকপট হৃদয়ে বলেছেন, Give me 60months at the centre; I'll give you a life of peace and happiness" সত্যি কথাটাই বলেছেন। জিতে যে দল আসবে সেই দলের প্রধানমন্ত্রীকেই ৬০মাস দিতে হবে। নরেন্দ্র মোদী আগেভাগে সে কথাই বলে দিয়েছেন। কারণ দল জিতলে যে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী! তিনি দলের ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী।