Powered By Blogger

Tuesday, April 30, 2024

প্রবন্ধঃ প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত।

 এই প্রচন্ড গরমে যখন মানুষ হাঁসফাঁস করছে তখন মাঝে মাঝেই যখন তখন কারেন্ট চলে যাচ্ছে। সেদিন রাত আটটায় যখন বাড়ির দিকে আসছি তখন দেখলাম রাস্তায় সি এস সি-র গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওভার হেড লাইনে কাজ হচ্ছে। আর একদিন দেখলাম ট্রান্সফরমারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইলেক্ট্রিকের লোকজন, জোর কদমে কাজ চলছে। এই গরমে সবার বাড়িতেই দিনরাত বিরামহীন ফ্যান চলছে, চলছে এ সি। আর সঙ্গে চলছে সি এস সি ও বিদ্যুৎ পর্ষদের বিরামহীন মেইটেন্যান্সের কাজ। পাওয়ার কঞ্জিউম বেড়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝে লোড শেডিং-এর কারণে কঞ্জিউমারদের মানসিক চাপ ও মেইন্টেন্যান্স ডিপার্ট্মেন্টের কাজের চাপ বেড়ে গেছে দশগুণ। হঠাৎ কোনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতেই পারে যখন তখন প্রাকৃতিক কারণে। সেটা সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষ ঘটনা। কিন্তু গরম বা বর্ষার আগে রুটিন চেক আপ হ'লে ভালো হয়। তখন ভাবি যে দেশে স্বয়ং ঈশ্বর ৮ - ৮ বার জন্মেছেন সেই দেশ কেন এত পিছনে। সেই দেশ শুধু মুখের কথার হাই হ'য়ে রইলো "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লভে।" কবে নেবে? যাক সেসব বিষয়। ঈশ্বর বারবার মানুষ রূপে ভারতে জন্ম নেওয়ার পরও কেন আজ ভারতের এই দশা আর কি করেই বা ভারত একদিন জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লাভ করবে তা নিয়ে একদিন আলোচনা করবো। এখন আসি আজকের ভিডিওর বিষয়ে। 

গরমের কথা যখন উঠলোই তখন গরম নিয়ে একটা আলোচনার আসর বসানো যাক এই গরমের মধ্যেই। এই গরমে কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও পেট ব'লে কথা, কিছু তো খেতে হবে। তবে যারা রান্না ঘরে এই গরমে থাকে তাদের কষ্ট অবর্ণনীয়। এই অবর্ণনীয় কষ্ট বড়লোকেদের নেই। তাদের জন্য আছে গরমকালে এ সি আর ঠান্ডাকালে রুম হিটার। অবর্ণনীয় কষ্ট গরীব, সাধারণ মানুষদের। 

যাই হ'ক আলোচনা গরমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক। এই গরমে যারা খাওয়ার তারা তেলে ঝালে ঝোলে খাচ্ছে ও খাবে। আর অনেকে আছে এই গরমে ভাতে জল ঢেলে দিয়ে খাচ্ছে। পান্তাভাত আর জলভাতের মধ্যে তফাৎ আছে। গরম ভাতে জল ঢেলে ঠান্ডা ক'রে খেলেই তাকে পান্তাভাত বলে না। ভাতকে জলে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। নতুবা নয়। আমরা শহুরে লোকেরা প্রায়ই পান্তাভাত খাওয়া ভুলে গেছি। গ্রামে এখনও জলভাত বা পান্তাভাত এই গরমে এখনও সমান জনপ্রিয় ও আদরণীয়। পান্তাভাত গ্রাম বাংলার একটা জনপ্রিয় খাবার। রাতে ভাত বেঁচে গেলে বা রেঁধে সেই ভাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া হয়। পরদিন সেই জলে ভিজিয়ে রাখা ভাত কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খায় গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষ। অনেকেই আবার আলু ভর্তা,বেগুন ভর্তা,ডাল ভর্তা,শুটকি ভর্তা, সরিষার তেল, শুকনা মরিচ পোড়া ইত্যাদি দিয়ে পান্তাভাত খায়।

 
এই পান্তাভাত খেতে তথাকথিত শহুরে লোকেরা বা হঠাৎ বড়লোকেরা তা শহরেই হ'ক বা গ্রামেই হ'ক লজ্জা বোধ করে। 
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, বাবা জগন্নাথের কিন্তু নিত্য পান্তা না হলে চলে না। বাচ্চা যদি বাপের অনুবর্ত্তণ করতে লজ্জাবোধ করে, তাহলে যা হবার তা হবে। আমাদের মা জগৎজননী দুর্গা দৈ-পান্তা খেয়ে প্রতি বৎসর বিজয়ার দিন বিদায় নেন। আর আমাদের পান্তা খেতে লজ্জা।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে পান্তাভাতের জল খেতে 
বলেছিলেন। বলেছিলেন ওটা খাবি। ওতে যথেষ্ট ভিটামিন আছে। পান্তাভাতের জল খেলে মানুষ মোটা হ'য়ে যায়। দেখিস না পন্ডিতের মা পান্তাভাত খেয়ে কেমন মোটা হ'য়ে গেছে। 
শ্রীশ্রীপ্রফুল্লদা ভীষণ ভয় ও বড় দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। তাঁর প্রতিমুহুর্তের এই নার্ভাসনেসের কথা জানালে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লদাকে একবেলা পান্তা ভাত খেতে বলেছিলেন। বলেছিলেন সকালে ইষ্টভৃতি ইত্যাদি ক'রে খালি পেটে পান্তা ভাত খেতে। আর নাম করতে বলেছিলেন।যারা নার্ভের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রফুল্লদাকে ঠাকুরের দেওয়া এই ফর্মুলা প্রয়োগ ক'রে দেখতে পারেন।  
 
আমরা গরম ভাতের মধ্যে জল ঢেলে দিয়ে চটকে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়াকে পান্তাভাত বলি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। পান্তাভাত খাওয়ার মধ্যে দিয়ে যদি শরীরে ভিটামিন সাপ্লাই না হয় তাহ'লে সে পান্তাভাত খাওয়া বৃথা। 
*পান্তাভাতের ফর্মূলা শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে দিয়েছিলেন।
আমরা যাকে বলি *পান্তাভাত* , ঠাকুর বলতেন ' *আমানি* '। আসুন আমরা সেই আমানি সম্পর্কে জেনে নিই। আর এই ' *আমানি* ' কেমন করে বানাতে হবে তা-ও বলে দিয়েছিলেন দয়াল ঠাকুর। 
ভাত রান্না করে মাটির হাঁড়িতে রাখতে হবে। সেই ভাতে এবার পরিষ্কার ভাল জল ঢালতে হবে এমন করে যাতে ভাতের ১ ইঞ্চি (১কড়) ওপর অবধি জল থাকে। সবশেষে,পরিষ্কার সাদা কাপড় দিয়ে হাঁড়ির মুখ ঢেকে বেঁধে দিতে হবে। অন্য কোনও ঢাকনা দেওয়া চলবে না।এই অবস্থায় (সাধারণ তাপমাত্রায়) ১৬-১৮ ঘন্টা রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ' *আমানি* '। উপকারী ইষ্টের (ছত্রাক)দল জল আর ভাতে মিশে এবং বৃদ্ধি পেয়ে নানারকম ভিটামিন তৈরি করে বলে তা খাওয়া স্বাস্থ্যকর। খাদ্যরসিক ও পুষ্টিবিশারদ ঠাকুর ' *আমানি* ' কে বলতেন--' *সর্বরোগ হরহরি'।* 
এই ফর্মুলা অনুযায়ী এই গরমকালটা দেখতে পারেন, শরীর ঠান্ডা থাকবে, সুস্থ থাকবে, কাজে উৎসাহ পাবেন।
পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এর আয়রন দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড়কে শক্ত করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে, অর্থাৎ লাল হ'য়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। আবার এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও সাহায্য করে। আরো অনেক কাজে সাহায্য করে। বিভিন্ন রোগ বিশেষত ক্যানসার প্রতিরোধে এই পান্তাভাত সাহায্য করে। কিন্তু পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে বঞ্চিত হ'তে হয়।

জুন-জুলাই মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে যাবে। ফলে বাড়বে দিনের দৈর্ঘ্য ও গরমের তীব্রতা। 
যাই হ'ক এইসময় সৎসঙ্গীরা ও অদীক্ষিত যারা দেখছেন ও শুনছেন এই ভিডিও তারা এই গরমে 'আমানি' খেতে পারেন ঠাকুরের ফর্মুলা মেনে। প্রকৃতির গরমের হাত থেকে  শরীরকে ঠান্ডা রাখার ও বাঁচার উপায় ও পথ্য হ'লো পান্তাভাত।
এবার আসুন দেখি প্রবৃত্তির গরম থেকে বাঁচার উপায় কি?
অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি- প্রবৃত্তির কারণে আমাদের উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুতাড়িত জীবনও গরম হ'য়ে ওঠে। এর হাত থেকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করার, বাঁচার ও বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র উপায় বা মেডিসিন হ'লো বিধাতার হাত।

অনিয়ন্ত্রিত, উচশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ষড় রিপুর উৎপাতের 
কারণে জীবন অতিষ্ঠ হ'য়ে ওঠে। ফলে, সংসার, সমাজ, দেশ অনিয়ন্ত্রিত রিপুতাড়িত উন্মত্ত জীবনের কারণে ধ্বংস হয়। একজন রিপুজ্বরে ভয়ংকর আক্রান্ত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা জীবনের জন্য গোটা সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো হ'য়ে যায়, সমাজ আক্রান্ত হয়, দেশ ঘোর অন্ধকারে ডুবে যায়, মানব সভ্যতা তলিয়ে যায়। এইরকম একজনই যথেষ্ট। ছোটোবেলা থেকে আজ অবধি যতদিন মা বেঁচে ছিলেন ততদিন একটা কথা শুনেছি মায়ের মুখে যা আজ আমাকে পীড়া দেয় মায়ের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ এত দেরীতে বোঝার জন্যে। মা বলতেন, "একে নষ্ট করে সবে দুঃখ পায়, আর একে ভালো করে সবে সুখ পায়।"
 
আজ, Passion parvading attachment মানুষ অর্থাৎ বৃত্তি-ভেদী অনুরাগ সম্পন্ন মানুষের অভাবে ব্যক্তিজীবন, সমষ্টিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবন ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে। সংসারে, পরিবারে, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব জুড়ে গ্রাস ক'রে ফেলেছে অশান্তি। এর থেকে মুক্তির কোনও দ্বিতীয় উপায় নেই যদি না মানুষ প্রবৃত্তির ভয়ানক উগ্র তাপ থেকে নিজেকে
রক্ষা করে, মুক্ত করে। 
গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন বাংলা নববর্ষে বৈশাখ মাসে আদিম উপাদান আমানির মাংগলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, যেমন প্রকৃতির ভয়ংকর উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন হয় আমানির জল, পান্তাভাত। 
ঠিক তেমনি রিপুতাড়িত মানুষ উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুর মোহে বৃত্তি- প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে বিধ্বস্ত হ'য়ে যখন গরম হ'য়ে ওঠে শরীর-মন-আত্মা তখন এই প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে দরকার হয় বিধাতা নির্দেশিত বিধির হাত। তখন সংসারে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ জীবন্ত ঈশ্বরকে ঘরে আবাহন করার জন্য, মঙ্গলের মূর্ত প্রতীককে ঘরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। জীবন্ত ঈশ্বরের উপস্থিতি ও তাঁর বিধিকে আবাহন করতে হয় ব্যক্তি জীবনে, সংসার জীবনে। 
আসুন দেখে নিই প্রকৃতির গরমে পান্তাভাত আর প্রবৃত্তির গরমে বিধাতার হাত এই দুইয়ের মিল কোথায়। 
১) গরমের হাত থেকে বাঁচতে যেমন পান্তাভাত ঠিক তেমনি প্রবৃত্তির গরমের হাত থেকে বাঁচতে দরকার হয় জীবন্ত ঈশ্বর মূর্ত মঙ্গল বিধাতার হাত।
২) 
আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ, তথাকথিত শহুরে মানুষেরা পান্তাভাত খেতে লজ্জা বোধ করে। ঠিক তেমনি এই ধরণের মানুষ যারা, অর্থাৎ আধুনিক মানুষ, আপস্টাটার মানুষ অর্থাৎ হঠাৎ বড়লোক হওয়া মানুষ, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ তারা জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত ধরতেও লজ্জা বোধ করে। 
৩) আর যারা পান্তাভাতের নামে পান্তাভাতের পরিবর্তে গরমভাতে জল ঢেলে জলভাত খায়  ঠিক তেমনি কিছু মানুষও  বিধাতা ও তাঁর নির্দেশিত বিধির হাত ধরার পরিবর্তে আকাশের ভগবান, মাটির ভগবান, কথা বলতে না-পারা বোবা ভগবানের হাত ধরে। 
৪) পান্তাবাতের পরিবর্তে গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত খাওয়ার ফলে পান্তাভাতের যে গুণাগুণ তা থেকে যেমন বঞ্চিত হয় মানুষ, ঠিক তেমনি যারা বোবা ভগবানের বা আকাশের ভগবানের অদৃশ্য হাত ধরার চেষ্টা করে এবং জীবন্ত ঈশ্বরের দেওয়া মত কোনও নির্দেশ পালনের, বিধি পালনের কোনও ব্যাপার থাকে না। পূজার নামে, ভক্তির নামে যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা করা যায়, নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তি পূরণের, নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য পূজা করা যায়। যাকে প্যাশনেট অর্থাৎ প্রবৃত্তিমুখী ভক্তি বলা হয়, সেইরকম বাঁচা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জীবন্ত ঈশ্বর বিধাতার হাত না ধরার ফলে, বিধাতার বিধি না মানার ফলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়, বঞ্চিত হয় রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে।    
৪) জলভাত খাওয়া মানুষ যেমন জলভাতের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা, শুটকি ভর্তা, শুটকি পোড়া, শুটকি ভাজা, শুকনো পোড়া লঙ্কা, সর্ষের তেল ইত্যাদি দিয়ে আয়েস ক'রে তামসিক জলভাত খায় ঠিক তেমনি বোবা ভগবান বা আকাশের ভগবানের হাত ধরা মানুষও বোবা ভগবানের পূজার সঙ্গে সঙ্গে আমিষ জাতীয় তামসিক খাবার খায়।
৫) গরম ভাতে জল ঢেলে জলভাত নয় আগের দিন রাতে জল ঢেলে রেখে দেওয়া পান্তাভাত যাকে আমানি বলে সেই আমানি পরের দিন আমিষ-নিরামিষ সহযোগে খাওয়া আর জীবন্ত ঈশ্বরের হাত ধরার সাথে সাথে তামসিক আমিষ আহার কিংবা রাজসিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করা সমার্থক। স্বর্গীয় পবিত্র খাদ্য আমানির সঙ্গে অর্থাৎ পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে তামসিক উগ্র খাবারের সংমিশ্রণে আমানির যে পুষ্টি, যে গুণাগুণ তা শরীরে গিয়ে ব্যহত হয়, পুরোপুরি পুষ্টি লাভ হয় না, শরীর বঞ্চিত হয়। 
ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর, বিধাতার বাণী 'শ্রীবিগ্রহের মন্দির ভেবে যত্ন করিস শরীরটাকে' এই যে বিধান তা মাথায় রেখে শরীর বিধানকে রক্ষা করার ব্যাপারটা এবং একই সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে গ্রহণ ক'রেও জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার যে বিধান সেই বিধান অর্থাৎ দীক্ষা নেবার সময় আমাকে যে যজন, যাজন ও ইষ্টভৃতি করার বিধান দিয়েছেন আবার স্বস্তয়নী যারা গ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে পাঁচটা নিয়ম মেনে চলার কথা যে বলা হয়েছে সেইসবগুলি না মানার ফলে ফলাফল থেকে যায় জিরো। জীবন বঞ্চিত হয় দয়ালের দয়া থেকে, আশীর্বাদ থেকে।

তাই পান্তাভাত যাকে ঠাকুর আমানি বলতেন সেই নিয়মমত তৈরী পবিত্র পান্তাভাতের সঙ্গে সাত্ত্বিক নিরামিষ আহার গ্রহণ করলে যেমন পান্তাভাতের মধ্যে দিয়ে নানারকম ভিটামিন ও সমস্ত গুণাগুণ শরীরে প্রবেশ করার ফলে শরীর পুষ্ট হয়, শরীর মোটা হয় ঠিক তেমনি জীবন্ত ঈশ্বর যাকে আমরা ইষ্টদেবতা বলি তাঁকে জীবনে গ্রহণ ও তাঁর বিধি তাঁর নির্দেশ ও নিদেশ পালন করার ফলে মানুষের জীবনে নিশ্চিত উন্নতি হয় আর সমস্ত রকম বিপদ আপদ, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, দরিদ্রতা ও অকাল মৃত্যু রোধ হয়। যা আকাশের ভগবান বা বোবা ভগবানে হাজার লক্ষবার পুজো করলেও কিছু হয় না। 
জীবন্ত ঈশ্বর হলেন শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্ব্বশেষ The greatest wonder, greatest phenonomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।

আর, জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ বিধাতার বিধি হ'লো তাঁদের জীবন চলনা; তাঁদের চরিত্র, তাঁদের চলা-বলা, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি। 

পান্তাভাত যাকে আমানি বলেছেন ঠাকুর, যে ফর্মুলা দিয়েছেন তিনি, সেই আমানির সংগে যে সাত্ত্বিক নিরামিষ খাদ্য যেমন লঙ্কা, লেবু, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাল ভর্তা ইত্যাদি সহযোগে সহজ পাচ্য যে আহার গ্রহণ সেইরুপ জীবন্ত ঈশ্বরকে আদর্শ হিসেবে মাথার ওপর নিয়ে তাঁর বলে যাওয়া ও দেখিয়ে দিয়ে যাওয়া যে নিয়ম সেগুলি পালন করার মধ্যে দিয়ে শরীরে-মনে-আত্মায় মানুষ শক্তিমান হ'য়ে দেবতা হ'য়ে ওঠে। একেই বলে যজন অর্থাৎ নিজে পালন করা। এবং নিজে পালন করার পর তা অন্যের কাছে বলা, অন্যকে অনুপ্রাণিত ক'রে তোলা, তাকে বলে যাজন, আর 
দিন শুরুর আগেই নিজে কিছু খাওয়ার আগে জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য বাস্তবভাবে তাঁকে খুশী করার জন্য তাঁর সেবা আগে করা, তাঁর দৈনন্দিন যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য বাস্তবভাবে অর্ঘ্য তুলে রাখা, একে বলে ইষ্টভৃতি। আর এই সেবা যেন অপ্রত্যাশী সেবা হয়, কোনও কিছুর প্রত্যাশায়, লোভে যেন এই সেবা না হয়। Don;t tempt thy lord, তোমার প্রভুকে প্রলুব্ধ ক'রো না। এই সেবা যেমন অপ্রত্যাশী হয় ঠিক তেমনি যেন আগ্রহে উচ্ছল হ'য়ে যেন এই সেবা হয়, এই সেবা স্বতঃ স্বেচ্ছ সেবা যেন হয়, এই সেবা অনুরাগ উদ্দীপি সেবা যেন হয় অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি তীব্র ভালোবাসায়, প্রেমে, অস্খলিত নিষ্ঠায়, আসক্তিতে, টানে যেন হয়। আমার তোমাকে ভীষণ ভালোলাগে তাই তোমায় ভালোবাসি, তোমাকে না ভালোবেসে পারি না তাই ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসলেও ভালোবাসি আবার না ভালোবাসলেও ভালোবাসি। তিরস্কার, শাসন করলেও তোমায় ভালোবাসি। আমার মুখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার চোখ বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার কান বলে তোমায় ভালোবাসি, আমার শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যঙ্গ বলে তোমায় ভালোবাসি। কেটে টুকরো টুকরো ক'রে খন্ড খন্ড ক'রে ফেলে দিলেও প্রতিটি খন্ড বলবে আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি তমায় ভালোবাসি। 

আমানি যেমন সর্বরোগ হরহরি ঠিক তেমনি জীবন্ত বিধাতা শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর বিধি সমস্ত সমস্যার সমাধানকারী।
তাই প্রকৃতির এই তীব্র গরমে আপনারা ঠাকুরের ফর্মুলায় আমানি গ্রহণ করুন শরীরে ভিটামিন সমৃদ্ধ হ'য়ে সর্বরোগ থেকে মুক্ত হ'তে, ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে  যারা গ্রহণ ক'রেছেন তারা তাঁর দেওয়া বিধি বিধান যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আর স্বস্ত্যনী, সদাচার মেনে সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন।
ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অকারণ মিথ্যা ভয়, দুর্বলতা দূরে সরিয়ে, পূজা সম্পর্কে সমস্ত ভুল জবরজং কর্মকান্ড থেকে, জটিলতা থেকে, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হ'য়ে সহজ সরলভাবে তিনি যা বলেছেন তাই-ই করুন। পারলে দু'বেলা প্রার্থনা করুন, না পারলে একবেলা করুন, তাও না পারলে সপ্তাহে একদিন করুন তাঁর জন্মবার শুক্রবারে, তাও না পারলে ঘরে মোবাইলে সকাল-সন্ধ্যা তাঁর প্রার্থনা শুনুন, সময়ে শুনুন, না-পারলে অসময়ে শুনুন। অতি প্রত্যুষে ইষ্টভৃতি করুন, না-পারলে যখন উঠবেন তখন করুন, কিন্তু করুন, দিনের শুরুতে তাঁকে না খাইয়ে নিজে খাবেন না আগে, যা আপনার সামর্থ্য সেইখান থেকে তাঁকে আগে খেতে দিন। এঁকে বলে ইষ্টভৃতি। তাঁকে আরো আরো বেশী দেওয়ার জন্য আপনার সামর্থ্য বাড়ান। সামর্থ্য বাড়লে তাঁরও সেবার অর্ঘ্য বাড়িয়ে দিন। তাই এই ইষ্টভৃতিকে আবার বলে সামর্থীযোগ। সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন আপনার বাড়ি দেওঘরে। ঠাকুরবাড়ি আপনার নিজের বাড়ি। আর আপনার বাড়ি আপনার কর্মস্থল। কর্মস্থল থেকে যেমন মানুষ বাড়ি ফেরে ঠিক তেমনি আপনার বাড়ি অর্থাৎ কর্মস্থল থেকে এই বোধে আপনার বাড়ি যাবেন অর্থাৎ ঠাকুর বাড়ি যাবেন যখনি সময় পাবেন, অন্তত বছরে দু'বার নাহ'লে একবার। আর যেটা আপনার বাড়ি ভাবছেন সেটা আপনার বাড়ি নয় সেটাও ঠাকুরের বাড়ি। আপনি সেই বাড়ির কেয়ারটেকার মাত্র। এই বোধ নিয়ে চলুন। আর চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে, শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ও ভোজনে এমনকি বাথরুমে যেখানেই যান, যেখানেই থাকুন, যার সঙ্গে থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন মনে মনে নামের সঙ্গে থাকুন অর্থাৎ নাম করতে থাকুন। জানবেন যতবার নাম করছেন ততবারই আপনার সঙ্গে ঠাকুর থাকছেন। নাম আর নামী অভেদ। নাম করা মানেই ঠাকুরের সঙ্গে থাকা। এছাড়া তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকার আর দ্বিতীয় কোনও উপায় বা পথ নেই। আর যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকবেন ততক্ষণ শয়তান আপনার থেকে দূরে থাকবে, দয়ালের ভয়াল রূপের ভয়ে আপনার গা ঘেঁষবে না। নাম করতে পারছেন না, ভালো লাগছে না, ভুলে যাচ্ছেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি সাথ দিচ্ছে না, হতাশা, অবসাদ লাগছে, ডুবে যাচ্ছেন কোনও ব্যাপার না চেষ্টা করুন, 'ইয়েস আই ক্যান' ব'লে ঝাঁকানি দিয়ে উঠে দাঁড়ান, দাঁড়াবার চেষ্টা করুন, একবারে না হ'লে না হ'ক, দশবার চেষ্টা করুন। মনে পড়লেই নাম করুন, ভুলে যাচ্ছেন বারবার? ঠিক আছে কোনও ব্যাপার না। মনে পড়লেই নাম করুন, অভ্যাস করুন, একদিন দেখবেন সব ঠিক হ'য়ে যাবে। স্বতঃ অনুজ্ঞা পাঠ করুন। উঠতে বসতে, চলতে-ফিরতে, কাজ করতে করতে, রান্না করতে করতে দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত যখনই সময় পাবেন আবৃত্তি করুন স্বতঃ অনুজ্ঞা। জোরে জোরে আবৃত্তি করুন, আস্তে আস্তে আবৃত্তি করুন, নিজের কানে নিজে শুনুন, বলুন বারবার আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী, আমি অক্রোধী। আমি অমানী, আমানী, আমি অমানী। শুয়ে শুয়ে বলুন, বসে বসে বলুন, হাঁটতে হাঁটতে বলুন, খেতে বসে বলুন, পায়খানায় বলুন, গান গেয়ে উঠুন "আমি অক্রোধী আমি অমানী ইত্যাদি ব'লে। শক্ত ক'রে দয়ালের হাত ধ'রে থাকুন হনুমানের বাচ্চার মত। হনুমানের বাচ্চা যেমন তার মাকে শক্ত ক'রে জড়িয়ে ধ'রে রাখে তেমনি ক'রে ঠাকুরকে জড়িয়ে ধ'রে থাকুন, ধ'রে থাকুন তাঁর হাত। তিনি আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরবেন না। তিনি সমস্ত ব্রহ্মান্ডটাই ধ'রে আছেন, আলাদা ক'রে আপনার হাত ধরতে যাবেন না। তাই বলে জগন্নাথের হাত নেই। তিনি আপনাকে ধ'রে আছেন কি নেই তা ভুলে যান, আপনি তাঁকে ধরে আছেন কিনা সেটা দেখুন। আপনার ধরা এতটূকু আলগা হ'লেই শয়তানের ছোবল নিশ্চিত।

তাঁকে দু'হাতে আঁকড়ে ধ'রে থাকুন 
দেখবেন প্রকৃতির তীব্র গরমে আমানির জলে যেমন শরীর ঠান্ডা হ'য়ে যায়, ভিটামিনে ভরপুর হ'য়ে সমস্ত রোগ হরণ ক'রে নেয় আমানি রুপী হরি। ঠিক তেমনি বৃত্তি-প্রবৃত্তির গরমে যখন শরীর-মন-আত্মা জর্জরিত হ'য়ে উঠবে তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বিধি এই যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি আপনাকে সমস্ত সমস্যা মুক্ত ক'রে ঠান্ডা ক'রে দেবে। 
ইষ্টকে আপনার মধ্যে ও আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে এবং পারিপারশ্বিকের ভিতর প্রতিষ্ঠা করুন আর সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হ'ন। জানবেন, 
সর্ব্ব সমস্যার সমাধান 
জানিস ইষ্টপ্রতিষ্ঠান। 
আপনাদের সবার মঙ্গল প্রার্থনা ক'রে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে। জয়গুরু। 

Sunday, April 28, 2024

স্বপ্নে স্বর্গলোকে আমি।

একদিন ভোর রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে দেখলাম, আমি চলে গেছি স্বর্গলোকে। সেখানে পৌঁছে একেবারে মোহিত হয়ে গেলাম। চতুর্দিকে যেদিকে তাকায় একটা অদ্ভুত মাদকতা। মাদকতাময় পরিবেশে ভরে গেল মনপ্রাণ। কি ঝকঝকে চারপাশটা। এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝলমলে পরিবেশ যে মাথাটা বোঁ ক'রে ঘুরে গেল। একটা নিখুঁত পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে চারপাশ। সমস্তটাই গণিত আর সুখময় কাব্যের চরম সংমিশ্রণের এক চোখ ধাঁধানো বহির্প্রকাশ। যা শুধু অনুভবের ব্যাপার, উপলব্ধি ও নির্বাক দর্শনের ব্যাপার। যা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা বৃথা। তবুও বলবো যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর দৃশ্য!!!!!! ছবির মত যেন সব টাঙ্গানো রয়েছে চারপাশে। যেন কোনও শিল্পী বসে বসে এঁকেই চলেছে তাঁর রঙ আর তুলি নিয়ে পাহাড় পর্ব্বত, নদনদী, ঝরণা, গাছপালা, বুনো লতাগুল্ম, পশুপাখি, ফড়িং প্রজাপতি, কত রকমের যে সুন্দর সুন্দর নানা রঙের কত পাখি আর তাদের কলকাকলিতে ঝমঝম ভরা প্রকৃতির দৃশ্য, কে যেন এ সব এঁকে চলেছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মত! আর দূর থেকে ঐ যে দূরে এঁকে বেঁকে চলে গেছে যে নদী, সেখান থেকে ভেসে আসছে সেই নদীর অবিরত ব'য়ে যাওয়া অস্ফুট কলকল ধ্বনি! মাথার ওপরে ভেসে চলেছে পেঁজা তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ, মেঘের স্তুপ! চারপাশটা ঠান্ডা ছায়াছায়াময়! সূর্যদেবতা যেন পরম মমতায় তাঁর তেজকে নিয়ন্ত্রণ ক'রে নরম আলো ছড়িয়ে মায়াময় ক'রে তুলেছে স্বর্গটা! একটা হাল্কা ঠান্ডা বাতাস যেন তার মনোরম সুখময় শালটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছে বারবার!  কত সুন্দর সুন্দর নারীপুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে! শরীরের পোশাক-আশাকে সলজ্জ মার্জিত ভাব যা স্বর্গকে গৌরবান্বিত ক'রে তুলেছে। সেখানে শিল্পীর আঁকা নারীর শরীরে ঝ'রে পড়ছে সম্মান-শ্রদ্ধার উজ্জ্বল এক মাতৃভাব, অপূর্ব এক দৈবীভাব, দৈবীমায়া!  ঝলমলে হাসিখুশীতে ভরা নারীপুরুষ উভয়ের চোখমুখ! কোনওরকম উৎকণ্ঠা, হতাশা, অবসাদ, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অশ্লীলতা, রাগ, দ্বেষ, হিংসা, নীচতা কোনও কিছুর চিহ্ন মাত্র নেই চোখেমুখে, চলাফেরায়, শরীরী ভঙ্গিতে! অদ্ভুত শান্ত, সৌম্য, ধীর, স্থির, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে সমস্ত শরীর জুড়ে। সদাহাস্যময়! মিষ্টি হাসির ঢেউ ভেসে আসছে পাশে গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা জনাকীর্ণ স্থান থেকে! মিষ্টি সুরে কে যেন গাইছে রাগ ভৈরব! আলোআঁধারিতে ঘেরা ভোরের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে আসা সেই সুর নেশাগ্রস্থ ক'রে আমায় হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় দেবদেউলে। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত স্বর্গে বিচরণ করতে করতে চলে এলাম পরমপিতার দরবারে। 


সেই দরবারে পৌঁছে আমি দেখতে পেলাম সেখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে। সেখানে বহু নামী-অনামী, দামী-অদামী, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, ধনী-দরিদ্র, আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু বহু রকমের মানুষের মিলনস্থল। আমি একপাশে ফাঁকা জায়গা দেখে চুপ ক'রে বসে পড়লাম। দেখলাম দয়াল ঠাকুর পরমপিতা মৃদু হাসি হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছেন। গরীব-বড়লোক, পন্ডিত-মূর্খ, সাধু-শয়তান, ধার্মিক-অধার্মিক সবাই বসে আছেন তাঁর সামনে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখছে দয়াল ঠাকুরকে, দেখছে পরমপিতার অপূর্ব স্নিগ্ধ শান্ত মিষ্টি হাসিতে ভরা মুখমন্ডল, একটা স্বর্গীয় দ্যুতি যেন ঝড়ে পড়ছে সমস্ত বরতনু দিয়ে! চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মোহিত হ'য়ে গেলাম! মনে পড়ে গেল আমারই লেখা গানের লাইন, 

চোখ যেন নয় হীরে তা চোখের অন্তরে, 
চোখের তারায় মমতা রাশি রাশি ঝ'রে পড়ে,২
নয়নে নয়ন মেলে পরাণে ঝড় তোলে,২
ও, মন হারিয়ে যায় রে মন হারিয়ে যায়,
বন্ধুরে তোর পাখনা উড়িয়ে দিয়ে আয় রে,
উড়িয়ে দিয়ে আয়!

মনে হচ্ছে আমি যেন, তাঁর সামনে গেয়ে চলেছি একটার পর একটা শুধু তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে, 
মণিমুক্তো পড়ে ঝ'রে ঝ'রে। 
ঐ চোখের পানে চেয়ে চেয়ে 
প্রাণ পাখি বলে এবার যাবো উড়ে। 
চোখ তো নয় যেন হীরে! 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
চোখ সাগরে ডুবে যে যায়। 
কি যে করি ভেবে না পাই, 
এবার বুঝি ডুবেই যে যায়! 
কে আছো ভাই বাঁচাও আমায় 
ঐ চোখের মাঝে আমার সত্ত্বা হারাই। 
চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
মরি আমি বিষম খেয়ে 
ঐ চোখ সাগরে ডুবে ডুবে
হাবুডুব খেতে খেতে 
এই জন্ম আমার হারিয়ে গেল, 
ঐ চোখের মাঝে আমার নোতুন জন্ম হ'লো।

আপন মনে গান গাইতে গাইতে চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। দেখলাম পরপর সবাই সারি সারি বসে আছে শৃঙ্খলিত ভাবে। কেউ কথা বলছে না। সবাই শুনছে দয়ালের কথা বাধ্য ছাত্রের মত। শুধু ভেসে আসছে ঐ নিস্তব্ধতা মাঝে দয়ালের মধুর মিষ্টি কন্ঠস্বর আর যার সঙ্গে কথা বলছে তার করুণ নিম্ন কন্ঠস্বর। করুণ কেন!? ঐ সামনে বসা ভক্তদেরএকটা করুণ ক্রন্দন ধ্বনি যেন শুনতে পাচ্ছি আমি। মনে হ'লো মর্তে তাদের কৃত অপরাধ কবুল করছে পরম দয়ালের কাছে। মানুষের প্রতি নির্মম অত্যাচার, অন্যায়, অপরাধ, দয়ালের প্রতি ও দয়ালের আত্মজদের প্রতি অশ্লীল গালাগালি, অপমান, মিথ্যে নোংরা অপবাদ, চরিত্রে কলঙ্ক লেপন, দয়ালের ভক্তদের উপর, সৎসঙ্গীদের উপর কুৎসা ও গালাগালি ক'রে ব্যক্তিগত আক্রমণ মৃত্যুর পরেও তাদের উপর ভয়ংকর ভারী হ'য়ে বুমেরাং হ'য়ে ফিরে এসে তাদের আত্মাকে ক'রে চলেছে বীভৎস বলাৎকার! তা তাদের করুণ চেহারা ও ভয়ার্ত কথাবার্তায় উঠেছে ফুটে। আর পরম দয়াল পরম মমতায় তাদের দিকে স্নেহ ঝরা দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে! মনে মনে ভাবলাম এখন তো এরা মর্তে নেই, দেহরূপে নেই তাহ'লে এদের কষ্ট কিসের, কষ্ট কোথায়? তাহ'লে কি এদের আত্মা কাঁদছে?  ক্ষতবিক্ষত আত্মা কি ক্ষতের যন্ত্রণায় কাঁদছে? তাহ'লে কি আত্মা তার চলমান গতিময়তা হারিয়ে বাঁধা পড়ে গেছে গন্ডীতে? ব'সে ব'সে মনে মনে ভাবলাম, নদী যেমন বইয়ে যেতে যেতে তার মূল গতি পথ হারিয়ে খালে এসে আটকে যায় এবং স্বাভাবিক স্রোত হারিয়ে বদ্ধ পচা জলে পরিণত হয় সারা শরীরে অজস্র ক্ষত আর দূর্গন্ধ নিয়ে ঠিক তেমনি তাদের দেহ থেকে আত্মা তার গতি হারিয়ে বেরিয়ে এসে দূর্বল পচা গলা অস্তিত্ব নিয়ে দয়ালের কাছে কেঁদে চলেছে তার হারানো শক্তি ফিরে পাবার জন্য। অবাক হ'য়ে ভাবলাম দেহ ছাড়ার পরও আত্মা কষ্ট পায়, যন্ত্রণা পায়? পায় দেহ থাকা অবস্থায় পাওয়া কষ্ট যন্ত্রণার দশগুণ!? সামনে যারা বসেছিল তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাদের চোখ দিয়ে এক তীব্র যন্ত্রণার রক্তের ধারা গাল বেয়ে ঝ'রে পড়ছে। আর হাতে পায়ে মাথায় মুখে সর্বাঙ্গে ঘা। এমন কেন এদের চেহারা!? অবাক হ'য়ে বোকার মতো স্থির হ'য়ে ব'সে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু অন্তরে অস্থিরতার ঝড় ব'য়ে চলেছে। 

এই চারপাশের সমস্ত বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যের মাঝে আরও একটা জিনিস দেখে বিস্মিত হ'লাম, পরমপিতার দরবারে যারা বসে আছেন তাদের মধ্যে যাদের আমি আমার ছেড়ে আসা পৃথিবীতে পন্ডিত বুদ্ধিজীবী ব'লে জানতাম, যাদের কথা, আচার, ব্যবহার ও কলমের ডগা দিয়ে ঝলকে ঝলকে পান্ডিত্য ঝ'রে পড়তে দেখেছি, যাঁদের তাঁর বার্তাবাহী ব'লে জানতাম, এবং ঈশ্বর আরাধনা ও ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও শব্দের মালা গেঁথে গেঁথে কথার সাগরে ভাসতে ভাসতে ও ভাসাতে ভাসাতে বাগ্মীপ্রবর হ'য়ে বিরাট ভক্তের পরিচিতি লাভ করতে দেখেছিলাম যাঁদের সেইসমস্ত বুদ্ধিজীবী, পন্ডিত, জ্ঞানী, ইষ্টপ্রাণ, বাগ্মীপ্রবর ভক্তবলয়দের স্থান স্বর্গলোকের দেবদেউলে দয়ালের দরবারে সবার পিছনে! বসে আছে কেমন একটা কাঁচুমাচু মুখ ক'রে। চোখেমুখে একটা অপরাধী অপরাধী ভাব। যেন বিরাট কোনও অপরাধ ক'রেছে আর সেই অপরাধ বোধ নিয়ে বসে আছে মাথা নীচু ক'রে। যারা অপরাধ করলো, অন্যায় করলো তারা সামনে বসে আছে, সামনে ব'সে তাদের কৃত অপরাধের জন্য কান্না করছে, পাপমুক্ত হবার জন্য কাতর ক্ষমা প্রার্থনা করছে, ভিক্ষে চাইছে অনুতপ্ত হৃদয়ে, আর, যারা আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে ইষ্টপ্রেমের, ইষ্টপ্রাণতার, ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার প্রচারের তুফান তুলেছে মন্দিরে, ঘরে, উৎসবে, কলমের ডগায় তারা আজ অনেকেই পিছনে বসে আছে কেন!? যাঁরা মর্তলোকে এত ঢাকঢোল পেটালো তারা আজ দয়ালের দরবারে সবার পিছনে!? কেন? তারা অনেকেই দয়ালের বীজনাম বহন করেছে, বীজনাম মানুষকে বিলিয়েছে, এমনও শুনেছি দয়াল তাদের মুখ দিয়ে কথা বলতেন, তাদের মুখ দিয়ে খেতেন। একজনকে দেখেছি তিনি এমনিতে রসগোল্লা খান না, খেতে দিলেও তিনি খেতে চাইতেন না। কিন্তু যেহেতু দয়াল রসগোল্লা খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন তাই তিনি যজমানরা রসগোল্লা দিলে বিনা আপত্তিতে খেয়ে নিতেন, কারণ তিনি খেতেন না, তার মুখ দিয়ে দয়াল স্বয়ং খেতেন। কি পবিত্র নিখাদ ভক্তি! তাঁকেও দেখলাম একেবারে দয়ালের দরবারের চৌকাঠের পিছনে বসে আছেন, বসে আছেন ভগ্ন হৃদয়ে। তাহ'লে রসগোল্লা খাওয়ার ব্যাপারটা ছিল আসলে নাটক!? প্রত্যেকের মুখ বিবর্ণ। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কেমন যেন কুঁকড়ে আছে শরীরটা। মনটা খারাপ হ'য়ে গেল দেখে। এ বড় অন্যায়? পরমপিতার দরবারে পরমপিতার এ কেমনতর বিচার!? অসহিষ্ণু হ'য়ে উঠলো মন। মেনে নিতে পারলাম না। অসহিষ্ণু মন আবারও ব'লে উঠলো, না, এ বড় অন্যায়। এ ভীষণ অন্যায়!! ভাবলাম পরমপিতাকে জিজ্ঞেস করি। অস্থির আমি উঠে দাঁড়ালাম কিছু বলবো ব'লে। ঠিক তক্ষুনি শ্রীশ্রীদাদার 'শেষের সেদিন' কবিতাটা যেন ভেসে এলো কানে, কে যেন দীপ্ত বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে আবৃত্তি করছে,
ফাঁকি দিয়ে ঘুরিস ভবে
প্রবঞ্চনায় ভুলিয়ে লোকে
কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে
আত্মপ্রতিষ্ঠারই ঝোঁকে,
এমনি করেই বেলা গেল
সন্ধ্যা-ছায়ায় ভরল ঘর,
এখনও তুই চেতন হারা ?
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

নিত্য অহংমত্ত যারা
গেছে চলে এমন কত –
কেরদানিতে কাঁপিয়ে ধরা
চলত যারা অবিরত,
গুরুগিরীর মোহে ছুটিস
গরুর মতন নিরন্তর,
তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

পিছু পিছু চলছে যারা
নিত্য নিয়ে মাথায় তোরে
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভাবিস
অনন্তকাল রাখবি ধরে ?
ডুববি যখন শুনবি ওদের
অভিশাপের কলস্বর।
হাতটি ধরার থাকবেনা কেউ;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ইষ্ট ছেড়ে ইষ্ট সেজে
ছড়িয়ে বাহার ভাবিস নাকি
বাহার দেখে ভুলবে বিধি,
পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি ?
সত্ত্বা জুড়ে জাগছে ভাঙ্গন,
জাগছে ঐ প্রলয় ঝড়
পারিস যদি ফের এখনও;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

ঈশের বিষাণ উঠল বেজে,
কাল-ফণী তোর মাথার প'রে,
মরণ তোরে করছে তাড়া
বাঁচবি এবার কেমন করে ?.
দ্রোহ-লোভের বাঁধন ছিড়ে
ইষ্ট পথে ঝাঁপিয়ে পড়
নইলে গতি কুম্ভীপাকে;
শেষের সেদিন ভয়ংকর।

আবৃত্তিটা শেষ হ'তেই মাথার পাশে রাখা মোবাইলে অ্যালার্ম বেজে উঠলো জোরে। ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটা ছিটকে চলে গেল। বিছানায় উঠে বসলাম। চুপ ক'রে চোখ বন্ধ ক'রে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর জানালা খুলে বাইরের দিকে চেয়ে দেখলাম রাতের আঁধার কেটে ধীরে ধীরে ভোরের সূর্যের ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। ভোর হচ্ছে। একটা শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ। চারপাশ ফাঁকা। এক ঝলক ভোরের তাজা ঠান্ডা বাতাস চোখেমুখে এসে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। সম্মোহিতের মতো আমি চোখ বন্ধ করলাম। মনে মনে ভাবলাম স্বপ্নের কথা। তারপর যখন চোখ খুলে ঠাকুরের ফটোর দিকে চেয়ে রইলাম। দেখলাম, দয়াল ঠাকুর আমার দিকে চেয়ে মিট মিট ক'রে হাসছে, আর, যেন খুব মৃদু হাল্কা স্বরে বলছেন, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তে করলে রে চলবে না। ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না। আগে সাহসী হও, বীর হও, অকপট হও তবে জানা যাবে ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার তোমার হয়েছে।" বুকের ভেতরটা কে যেন খামচে ধরলো হঠাৎ। ব্যথা হ'তে লাগলো। চোখ ভ'রে গেল জলে। গাল বেয়ে নেমে এলো জলের ধারা। বুকটা চেপে ধ'রে অনুতপ্ত হৃদয়ে চেয়ে রইলাম দয়ালের সেই বরাভয় চোখের দিকে।

মনে পড়লো তাঁর কথা, "আমার গায়ে মশা মাছিও বসে, তাহ'লে কি তারাও আমার সঙ্গে স্বর্গে যাবে?" 
মাথাটা নীচু ক'রে নিলাম। ভাবলাম ভাগ্যিস জিজ্ঞেস করিনি স্বপ্নে দয়ালকে, কেন এই অন্যায় বিচার। ভাগ্যিস বিচারের ভার আপন হাতে নিইনি। তবুও একটা অপরাধ বোধ খোঁচা মারতে লাগলো বুকে, মনে হ'তে লাগলো, মুখে জিজ্ঞেস না করলেও মনের মধ্যে তো উঠেছিল তার বিচারের প্রতি অবিশ্বাসের প্রশ্ন!! অপরাধ বোধে চোখটা জলে ঝাপসা হ'য়ে এলো। দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো নীচে মাটিতে। জয়গুরু।  

Saturday, April 27, 2024

প্রবন্ধঃ প্রফুল্লদার 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ের লেখা প্রসঙ্গে।

শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা তাঁর 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ে ১১০ নম্বর পাতার ১২৯ নম্বর সংখ্যার 'চাই একজন বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ' শিরোনামে লিখেছেন,

"ঠাকুরের একদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আমার রোজই মনে পড়ে। আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে। আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে।
আমি জিজ্ঞেস ক'রেছিলাম, আপনি সেই ধরণের মানুষ কাউকে পেয়েছেন?
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, না।


অনেকের সম্বন্ধে যেমন তিনি উচ্ছসিত প্রশংসা ক'রে গেলেন তেমনি উপযুক্ত মানুষ না পাওয়ার জন্য তিনি দুঃখ ক'রে গেলেন আজীবন। এ সত্যকে যারা অস্বীকার করেন, তাঁরা নিজেদেরকে এবং ঠাকুরকে প্রতারণা করেন। টাকা সৎসঙ্গে যতই আসুক না কেন তা কিন্তু ঠাকুরের দৃষ্টিতে মূল্যবান নয়কো। টাকায় হাত লাগার ফলে ঠাকুরের একদিন দারুণ অস্বস্তি হ'তে থাকে। বারবার হাত ধোন আর বলেন, এ হ'লো Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা।


এই হ'লো প্রফুল্লদার লেখা 'স্মৃতি তীর্থে' বইয়ের শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখনিঃসৃত কথামৃত।


এই যে বিষয়বস্তু এ সবই প্রফুল্লদার মাথার মধ্যে যা জমা ছিল সেখান থেকে একটা একটা ক'রে তথ্য বের ক'রে এনে এই বই ছাপা হয়েছে। ছাপা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর আগে ১৯৯১ সালে। আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার ২২ বছর পরে। আর, তখন শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন। ১৯৯৪ সালে শ্রীশ্রীবড়দা দেহ রাখেন। অর্থাৎ প্রফুল্লদা শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন এই বিযয় নিয়ে ঠাকুরের সঙ্গে কখনো কোনদিনই আলোচনা করেননি এবং শ্রীশ্রীবড়দা বই প্রকাশের সময় ও তারও পরে ৪ বছর সশরীরে থাকা সত্বেও তাঁব সঙ্গে কোনদিনই আলোচনা করেননি।


স্মৃতির ঘর থেকে বের ক'রে আনা গয়না সব সময় খাঁটি সোনার গয়না হয়না। সবসময় দোষমুক্ত বা ত্রুটিমুক্তো সঠিক ঘটনা হয় না। মস্তিষ্কে ধ'রে রাখা তথ্য অর্থাৎ স্মৃতি সবসময় ত্রুটিমুক্ত হয় না, কিছু না কিছু মূল ঘটনার থেকে তফাৎ থাকে। আর সেই সামান্য তফাৎ-ই বিশাল সমস্যার সৃষ্টি করে, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, ইতিহাস বিকৃত হ'য়ে যায়। উদাহরণস্বরুপ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্ত শ্রীম অর্থাৎ মহেন্দ্রলাল গুপ্তের লেখা শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত ৫ খন্ড বই। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা হওয়া ও কথাবার্তার পর বাড়ি ফিরে এসে রাতে স্মৃতি থেকে আহরণ ক'রে ক'রে সব ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তাঁর নিজের কথায় আমরা জানতে পারি, "বাড়ি ফেরার পর স্মৃতি থেকে সব কিছু লিখে রাখতাম। মাঝে মাঝে সারা রাতও জেগে থাকতে হত...মাঝে মাঝে টানা সাত দিন বসে থেকে লিখতে হত। গানগুলিকে স্মরণে আনতে হত, কোন ক্রমে সেগুলি গাওয়া হয়েছিল, সেগুলিও মনে করতে হত, সমাধি ও অন্যান্য সব ঘটনার কথা মনে করতে হত।" এর থেকে 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত' গ্রন্থের জন্ম রহস্য বোঝা যায়। তাই সেখানে কিছু কিছু অসঙ্গতি থাকলেও থাকতে পারে। এছাড়া আরও অনেকের অনেক গ্রন্থ আছে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের ওপরে। যেগুলির বক্তব্য সম্পর্কেও প্রামাণিকতা দাবী করে। যেমন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের বাউল বেশে বর্ধমানের রাস্তায় ঘুরে বেড়াবার কথা আছে যা ঠাকুর রামকৃষ্ণ কখনোই বলেননি।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের বেলায় আমরা দেখতে পাই, শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে বসেই তাঁর অনুলেখকরা তাঁর কথা সঙ্কলিত ক'রে রেখেছেন। তাই সেখানে কোনও প্রশ্ন নেই। আর তর্কের খাতিরে সবাই সব জায়গায় সব বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। এটা সবার গণতান্ত্রিক বাক স্বাধীনতা। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের রচনার ক্ষেত্রেও তুলেছে নানা অশ্লীল বিতর্ক।

এখন আসুন একটু দেখে নিই শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রফুল্লদা কি বলতে চেয়েছেন তাঁর এই গ্রন্থে।


প্রফুল্লদার কথানুযায়ী, উপযুক্ত মানুষ না পাওয়ার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর যে দুঃখ ক'রে গেছেন আজীবন এ কথা সত্যি। শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা সম্পর্কে ঠাকুর বলেছেন, আপনার মত একটা ভাঙাচোরা মানুষ নিয়ে এত কান্ড করলেম, একটা গোটা মানুষ পেলে আমি গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে পারতেম। তাঁর দেহরূপে থাকাকালীন একবার বিজ্ঞানের ওপরে একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের ঘটনায় রাশিয়ার ৫ বিজ্ঞানীর বিরাট অবদানের কথা পত্রিকা পড়ে ঠাকুরকে জানানো হ'লে তিনি দুঃখ ক'রে উদাস সুরে বলেছিলেন, আমি যদি পেতেম বিজ্ঞানীদের------। এইসব কথা থেকে বোঝা যায় তাঁর মনের অভ্যন্তরে গভীরে মানুষের অভাবে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ের বহু স্বপ্ন পূরণ না হবার অসহনীয় যন্ত্রনা চাপা ছিল। সারাজীবন তিনি মানুষ ভিক্ষা করেছিলেন।


কিন্তু এই যে প্রফুল্লদা আরও লিখলেন, "এ সত্যকে অর্থাৎ বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন মানুষ ঠাকুর পাননি এই সত্য যারা অস্বীকার করেন, তাঁরা নিজেদেরকে এবং ঠাকুরকে প্রতারণা করেন।" এই কথা কারা অস্বীকার করেছেন? শ্রীশ্রীঠাকুরের কোনও প্রধান ভক্ত মন্ডলী কি অস্বীকার করেছেন? তাহ'লে এই কথা ভরা যৌবনে না ব'লে শেষ বয়সে এসে তাঁর মতন ঋষিতুল্য মানুষের একথা অযথা বলার কারণটা কি ছিল? যদি অস্বীকার ক'রে থাকেন কেউ তাহ'লে তিনি সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষ। তাঁব পরিচিত কেউ অস্বীকার করেছেন কি? আর ঠাকুরের সঙ্গে প্রতারণা করার যে কথাটা তিনি বলেছেন সেটা ঠিক। তিনি দীর্ঘ সময় ঠাকুরের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। ১৯৩৯ সাল থেকে তিনি আশ্রমে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের তিরোধান ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঠাকুরের লীলাসঙ্গী। এই দীর্ঘসময় পর্যন্ত তিনি এই প্রতারণার বিষয়টি চাক্ষুস করেছেন, বহু অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, করেছেন অনুভব, হয়েছে চূড়ান্ত উপলব্ধি। কিন্তু সেই দীর্ঘ যাত্রাপথে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে সৎসঙ্গীদের যন্ত্রণাময় প্রতারণা করার চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও উপলব্ধি তিনি প্রকাশ ক'রে যাননি বলিষ্ঠভাবে কোথাও। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি ঠাকুর যে একটাও বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ পাননি সেই কথা ব'লে গেলেন দৃঢ় চিত্তে। কিসের তিনি ইংগিত দিয়ে গেলেন?

আর, টাকা যে Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা এ কথা তো শ্রীশ্রীঠাকুরের ক্ষেত্রে সত্যি। এই যে তিনি হাত পেতে টাকা ভিক্ষে করতেন, এই আমাকে দিতে পারিস ব'লে, কিন্তু সেই টাকা তিনি নিজের হাত দিয়ে কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেননি। কিন্তু এই যে সৎসঙ্গের আজ বিশ্বজুড়ে বিশাল ব্যাপ্তি সেই বিশাল ব্যাপ্তির পিছনে টাকা ছাড়া কিছুই হ'তো না। টাকা অর্থাৎ অর্থ তখনই Devil's dung, শয়তানের বিষ্ঠা হয় যখন অর্থ তার অর্থ ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। অর্থ শক্তিহীন হ'য়ে পড়ে ও অনর্থের কারণ হয় তখনি। এইটাও ঠাকুরেরই কথা। অর্থ আমার ও আমার পারিপার্শ্বিকের বাঁচা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক হ'য়ে উঠুক। অর্থ যেন জীবনকে ও পরিবেশকে কলুষিত করতে না পারে, বিষাক্ত করতে না পারে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বাঁচা ও বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম ও ইশ্বর সাধনা ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। জন্ম নিতেও টাকা লাগে, বাঁচার জন্যও টাকা লাগে এবং মৃত্যুতেও টাকা লাগে। সবেতেই টাকা অপরিহার্য, টাকা ছাড়া দুনিয়া অচল। আবার টাকায় সমাজ ও সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম মূল কারণ। সেইজন্যই ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, কামিনী কাঞ্চন থেকে তফাৎ তফাৎ থাক। তফাৎ থাকতে বলা মানে কামিনী-কাঞ্চনকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেলে দিতে বলেননি। বলেছেন, কচু পাতায় টলটলে জল ও পাঁকাল মাছের মত চকচকে থাকতে ঐ কচু পাতা ও পাঁকে থাকা সত্ত্বেও। জীবন ও পৃথিবীকে সুন্দর স্বর্গ ক'রে তোলার এক ও অদ্বিতীয় হাতিয়ার হ'ক কামিনী-কাঞ্চন। আর এই-ই হ'ল জ্ঞান।


যাই হ'ক, এই যে ঠাকুর যে একটাও বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ পাননি সেই কথা প্রফুল্লদা ব'লে গেলেন তা এই কথা ঠাকুর তাঁর সমগ্র জীবনে ২৪ হাজার বাণী ও অসংখ্য কথোপকথন সমৃদ্ধ বইয়ের কোথাও ব'লে গেছেন? কেন প্রফুল্লদাকে আলাদা ক'রে শেষ বয়সে এসে এই কথাটা ব'লে বই ছাপাতে হ'লো? তাঁর 'আলোচনা প্রসঙ্গে'-র ২৩ খন্ডের কোনও খন্ডের কোথাও বা অন্য কোনও বইয়ে বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন মানুষ না পাওয়ার কথা ব'লে গেছেন? যদি ব'লে গিয়ে থাকেন তাহ'লে শেষ বয়সে এসে আলাদা ক'রে এই কথা আবার বলার কি দরকার ছিল? এই প্রশ্ন কি তিনি তাঁর দীর্ঘ ৩৯ বছর ধ'রে ঠাকুরের সঙ্গে সঙ্গ
করা কালীন কখনও করেছিলেন? করলে সেটা 'আলোচনা প্রসঙ্গে' ২৩ খন্ডের কোন খন্ডে আছে? আর না করলে কেন করেননি? আর আজই বা সেটা কেন তুলে ধরলেন আবার? কিসের ও কার উদ্দেশ্যে?

আর বলি, বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন মানুষ যদি ঠাকুর না পেয়ে থাকেন তাহ'লে ঠাকুরই বা কেন শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে এত কথা ব'লে গেলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত?


শ্রীশ্রীঠাকুর শেষ বয়সে একদিন মানিকপুর থেকে ঘুরে এসে তাঁর শুভ্র শয্যার ওপর বসেছেন। মনটা বেশ ফুরফুরে তাঁর। বেশ আনন্দ হাসিখুশী লাগছে তাঁকে। একজন তাঁকে তামাক সেজে এনে দিলেন। তিনি খোশ মেজাজে তামাক টানছেন। বড়দা ও কাজলদাদাও এসে বসলেন ঠাকুরের চৌকির সামনে। তামাক টানতে টানতে ঠাকুর চারিদিকে তাকাচ্ছেন আর কি যেন খুঁজছেন। দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে ক্যালেন্ডার আর তাঁর কয়েকটা ফটো। সেই ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠাকুর তন্ময় হ'য়ে গেলেন। ঘরে তখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পর তন্ময়তার ঘোর কাটিয়ে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ ক'রে ফটোর দিকে তাকিয়ে চিনতে না পেরে ধরা গলায় শ্রীশ্রীবড়দাকে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ফটোটা কার রে? শ্রীশ্রীবড়দা বলেছিলেন, ওটা আপনার ফটো, আপনার যৌবনের ফটো। শ্রীশ্রীঠাকুর অস্বীকার ক'রে ব'লে উঠেছিলেন, না, এটা তো আমার ফটো নয়, এটা তোর ফটো মনে হয়। শ্রীশ্রীবড়দা আপত্তি করলেন, ঠাকুরকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে ঐটা ঠাকুরেরই ফটো। কিন্তু ঠাকুরকে বোঝানো গেল না, ঠাকুর ফটোর দিকে তাকিয়ে পুনরায় জোর দিয়ে ব'লে উঠেছিলেন, উঁহু, না, না, এটা তো তোরই ফটো। শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরের জোর দিয়ে বলার ধরণ, দৃঢ়তা দেখেই চুপ ক'রে গেলেন, আর কোনও কথা বললেন না। শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখের ওপর কখনোই শ্রীশ্রীবড়দা দু'বার কথা বলতেন না। শ্রীশ্রীঠাকুর যা বলতেন, সেইসময় চুপ ক'রে থাকতেন। মুখের ওপর কখনোই কোনোদিন কথা বলেননি শ্রীশ্রীবড়দা।


তাই এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা বুঝতে পারলাম, শ্রীশ্রীঠাকুর সেদিন গভীর তন্ময়তার মধ্যে ডুবে গিয়ে কথা বলার মধ্যে দিয়ে উপস্থিত সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ও তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র ও পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দা এক ও অভিন্ন।


আর একবার, শ্রীশ্রীঠাকুর বাণী দিচ্ছেন হঠাৎ একজন প্রশ্ন করলেন, এত বাণী ব'লে লাভ কি? কেউ তো কিছু পালনই করে না। কার জন্য এসব? এই কথা শুনেই ঠাকুর চুপ ক'রে গেলেন। মনটা তাঁর খারাপ হ'য়ে গেল। ভারাক্রান্ত হ'য়ে উঠলো পরিবেশ। যিনি বাণী লিখছিলেন তাঁকে ঠাকুর জিজ্ঞেস করলেন, "আমি যে এতসব কথা কই কার জন্য?" ঠাকুরের প্রশ্ন শুনে অনুলেখক উত্তর দিলেন, "আজ্ঞে মানবজাতির কল্যাণের জন্য।" তারপর যে আসে তাকেই জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কেউ বলে জগতের কল্যানের জন্য। কেউ বা বলে মানুষকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনও উত্তরই ঠাকুরকে খুশী করতে পারলো না। এই ঘটনার অনেক পরে যখন শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরকে রোজকার প্রণাম করতে এলেন তখন ঠাকুরকে বড়দা প্রণাম নিবেদন করতেই ঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে জিজ্ঞেস করলেন, "হ্যাঁরে বড় খোকা, এরা কি কয়? শ্রীশ্রীবড়দা উৎসুক কন্ঠে বললেন, কি বাবা? শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, আমি যে এত কথা কই কার জন্যে?" শোনা মাত্রই শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, "আজ্ঞে, আমার জন্যে।" মুহুর্তে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখ চোখ আনন্দে ঝলমল ক'রে উঠলো। হাসি ছড়িয়ে পড়লো তাঁর সারা মুখে। এক অনির্বচনীয় আনন্দ তাঁকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আনন্দে তাঁর বরতনু কাঁপতে লাগলো। এক স্বর্গীয় সুখে ব'লে উঠলেন দয়াল, ঐ দ্যাখ বড়খোকা কি কয়। বড়খোকা কি কয়?


শ্রীশ্রীবড়দাই একমাত্র দয়াল ঠাকুরের মনের কথা বুঝতে পারতেন।


শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার এক বছর আগে 1968 সালের শেষ বসন্তের এক বিকেলে শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এলে ঠাকুর তাকে বললেন, বড়খোকা তুই এখানে আমার বিছানায় ব'স, আমি পেছনের ঘরে যাব।
শ্রীশ্রীবড়দা তখনই প্রতিবাদ ক'রে ব'লে উঠেছিলেন। "না, না বাবা! এটা তোমার বিছানা আর তুমি এখানেই থাকো। শ্রীশ্রীঠাকুর এর উত্তরে সেদিন শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন, "না, তুই এখানে ব'স। তারপর অশ্রুসজল চোখে আদরসোহাগ কন্ঠে জোর ক'রে বলেছিলেন, তুই-ই তো আমি। আমি এখন পেছনের ঘরে যাব। আমি আর শারীরিকভাবে সামলাতে পারছি না।

এই কথা ও দৃশ্যের মর্মবেদনা বোঝে সেই, প্রাণ বোঝে যার, অনুভব করতে পারে সেই, শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্য প্রাণ কাঁদে যার, শ্রীশ্রীঠাকুর আর তাঁর আদরের বড়খোকা শ্রীশ্রীবড়দার
গভীর সম্পর্ক বোঝে সেই উপলব্ধি হয় যার।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"এই শোন মনি, বড়খোকা হল তোদের বড়দা। ওর কিছু হওয়া মানে তোদের হওয়া, নাকি কইস? ঐ যে কুকুর, বাড়ী, গাড়ী যা' যা' দেখিস, ও-সব কিছুই ও আমার কাছে চায় না। আমি ওকে কই রাখতি। আমার কথা শুনেই ও চলে। দ্যাখ, আমি যদি ওর উপর Sincere না হই, তবে তোদের উপর হই কেমন ক'রে? যারা শুনবার চাই, তুই ঠিকমত কইস।"
"পরমপিতা যদি বাঁচিয়ে জীইয়ে রাখেন, তবে বড় খোকাই সব দেখাশুনা করবে, সব কিছু পরিচালনা করবে, সে তোমাদের কমিটির ভিতর থেকে হউক, কিংবা বাইরে থেকেই হোক।"
"বড়খোকার বাইরের রূপ দেখে ওর স্বরূপ বোঝা কঠিন। ও বড় সাচ্চা। কেউ যদি ওর ভিতরে ঢুকতে পারে, বুঝে নেবে কেইসা মাল।"
"বড়খোকা শুধু যে আমার Son by birth(ঔরস জাত সন্তান)তাই নয়, Son by culture(কৃষ্টিজাত সন্তান)-ও বটে। সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।"
"যদি আমার কিছু হ'য়ে যায়, আমি না বাঁচি, তবে বড়খোকা রইল, তা'কে মাথায় নিয়ে তোরা সবাই চলিস। তা'র আদেশ ও নির্দ্দেশ মত সবাই যেন চলে"
"বড়খোকার সাথে সবাই'র যা' সম্বন্ধ, আমার সাথেও তাই। ওর সাথে থাকা মানেই আমার সাথে থাকা। আমার মনের কথা বললাম, অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে।"
"বড়খোকা যা' বলবে শুনবি, আমিই বড়খোকা। বড়খোকার সাথে থাকা মানেই আমার সাথে থাকা।"
"আমাকে প্রণাম ক'রে যে বড়খোকাকে প্রণাম করে না তার প্রণাম আমি নিই না।

তাই আবার বলি,
শ্রীশ্রীবড়দাকে তিনি নিজের বিছানায় বসতে ব'লে বলেছিলেন, "তুই এখানে আমার বিছানায় ব'স, আমি একটু পিছনের ঘরে গিয়ে বসি। বড়দা বসতে না চাইলে ঠাকুর তাঁকে জোর ক'রে বসতে ব'লে বলে উঠেছিলেন, না, তুই এখানে ব'স। তুই-ই তো আমি।"
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "হনুমানজীর পূজা না করলে রামজীর পূজা সম্পূর্ণ হয় না।

ঠিক তেমনি আজ সৎসঙ্গীদের বুঝতে হবে শ্রীশ্রীবড়দার পূজা না করলে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পূজা সম্পূর্ণ হয় না। শ্রীশ্রীঠাকুরের যে মন্দিরে ও বাড়িতে শ্রীশ্রীবড়দার মূর্তি বা ফটো নেই সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর নেই। যে মন্দিরে ও বাড়িতে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রণাম ক'রে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রণাম করা যায় না সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর ভক্তের প্রণাম নেন না ও শ্রীশ্রীঠাকুর থাকেন না। কারণ যেখানে তাঁর পরম ভক্তের স্থান নেই, সম্মান নেই, ভালোবাসা নেই সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থান নেই, সম্মান নেই, ভালোবাসা নেই। সেখানে অপমানকারী অশ্রদ্ধাকারী ভন্ডদের ঘরে ও মূর্খদের ঘরে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকেন না।




আর, এই যে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা 'স্মৃতি তীর্থে' বই ছাপিয়ে লিখে রেখে গেলেন, "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে। আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলোট পালোট ক'রে দিতে পারে।" এখান থেকে আমরা কি বুঝতে পারি?

এতক্ষণ আমি যে যে ঘটনাগুলি তুলে ধরলাম সেই ঘটনাগুলি থেকে কি আমরা বুঝতে পারি না শ্রীশ্রীঠাকুরের কথার সত্যতা? শ্রীশ্রীঠাকুর তো নিজের মুখেই "বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত" পাবার কথা বলে গেছেন ও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তাঁর কথা "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে"-এই কথার মধ্যে দিয়েই। তাহ'লে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার "আপনি সেই ধরণের মানুষ কাউকে পেয়েছেন?" এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, না। তাহ'লে কি শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই পরস্পর বিরোধী কথা বলেছিলেন? শ্রীশ্রী ঠাকুর বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন একটাও মানুষ খুঁজে পাননি অথচ তিনি এবার সাথীহীন এসেছিলেন ধরাধামে? শ্রীশ্রী ঠাকুর বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন একটাও মানুষ খুঁজে পাননি অথচ তিনি শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে নানা ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এতকিছু ইংগিতপূর্ণ কথা ব'লে গেলেন? কি উদ্দেশ্যে? সেই গবেষণাও কি সৎসঙ্গীদের করা উচিত নয়? শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে ভক্তিতে গদগদ হ'য়ে গবেষণা ক'রে গেলেই হবে? তাঁর প্রধান ও পরম ভক্ত সম্পর্কে কোনও গবেষণা হবে না? শ্রীশ্রীঠাকুরের যারা অনুলেখক ও বড় বড় প্রথিতযশা উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত জ্ঞানী বিদগ্ধ ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা আছেন তাঁরা শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন? তাঁরা কি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান, বড় আদরের বড়খোকা, শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই, ত্রেতা যুগের হনুমান, দ্বাপর যুগের অর্জুন, কলি যুগের আনন্দ, ম্যাগডালিন, আবুবকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ইত্যাদির সম্মিলিত রূপ শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে গবেষণা ক'রে দেখবেন না শ্রীশ্রীবড়দা সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ কিনা? আমি নাহয় ছেড়ে দিলাম শ্রীশ্রীবড়দার কথা কিন্তু কে সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ যার কথা শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছিলেন, "আমার অবর্তমানে মানুষ আমাকে পাবে বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্তের মধ্যে" এই কথা তলিয়ে দেখবেন না শ্রীশ্রীঠাকুরের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত প্রথিতযশা ভক্তেরা? তলিয়ে দেখবেন না এই কথার সত্যতা? তলিয়ে দেখবেন না আদৌ শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছিলেন কিনা, যে তিনি একজনও বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত পাননি এই কথা সত্য কিনা?

কে সেই বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন মানুষ তা কি তিনি নিজের মুখে ব'লে যাবেন ঠাকুর নাকি ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের নানা ইংগিতপূর্ণ কথার মধ্যে দিয়ে আমাদের খুঁজে নেওয়ার জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি, চেতনা জাগ্রত করার আজীবন যে শিক্ষা ও তুক দিয়ে গেছিলেন তার সাহায্যে আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে? শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা যে তাঁর পূর্ব গুরুদেব শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন তা'কি ঠাকুর সরাসরি তাঁকে বলেছিলেন, 'আমি রামকৃষ্ণ'? নাকি নানা রহস্যময় ঘটনা পরম্পরার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, নানা বিস্ময়কর ইংগিতপূর্ণ কথার মধ্যে দিয়ে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে খুঁজে পেয়েছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে তাঁর অসীম তৃষ্ণা আর যোগসিদ্ধ বলে?


এরকমভাবেই শ্রীশ্রীঠাকুরের সব বড় বড় ভক্তেরা তাঁদের পূর্ব পূর্ব রূপের ইষ্টদেবতাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁদের ইষ্টদেবতার প্রতি গভীর ভালোবাসা, টান ও যোগসিদ্ধির বলে। তাই বিশ্বের কোনা কোনা থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে।

আর, যেখানে প্রফুল্লদা লিখেছেন 'স্মৃতি তীর্থে' গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "আমার যা দেওয়া থাকলো সেইটের উপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ যদি কাজ করে সেই কিন্তু দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে।" একজন মানুষ কি করতে পারে তারও প্রমাণ আমরা দেখতে পেয়েছি শ্রীশ্রীবড়দার জীবনে, পেয়েছি শ্রীশ্রীদাদার জীবনে, পাচ্ছি বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার জীবনে। শ্রীশ্রীঠাকুর যেন জীবন্ত খেলা করছেন বৃত্তিভেদীটানসম্পন্ন ভক্ত শ্রীশ্রীবাবাইদাদার চলা, বলা, আচার, আচরণ, কথাবার্তার ধরণ, চাউনি, অঙ্গুলি হেলন, শরীরীভঙ্গী ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে।


আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা "দুনিয়া ওলট পালোট ক'রে দিতে পারে" কথার প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পেয়েছি অভূতপূর্ব বিস্ময়কর যুবক শ্রীশ্রীঅবিনদাদার "কি করবো আর কতটুকু করতে পারবো তা জানি না কিন্তু যাবার আগে আর্ধেক পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়ে যেতে চাই" এই অপূর্ব বিস্ময়কর কথার মধ্যে। বাকী আর্ধেক পৃথিবী নাড়িয়ে দেওয়া না-হয় পরবর্তী সময়ের নেতৃত্বের উপর থাকবে।

যাই হ'ক, চেষ্টা করলাম শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রফুল্লদার 'স্মৃতি তীর্থে' গ্রন্থের কথার ওপর দাঁড়িয়ে উত্তর দেবার। সঠিক বেঠিক সেটা বুঝে নেবার দায়িত্ব তামাম সৎসঙ্গীদের।

প্রবন্ধঃ আমি অসহায়! আমি কনফিউজড!!

২০২০তে অসুস্থ হ'য়নি, অসুস্থতা বোধ করিনি। শারিরীক-মানসিক কোনও দিক দিয়ে দূর্বলতা বোধ করিনি, দূর্বল হ'য়নি। একবার মনে হ'য়েছিল বুঝি জ্বর এসেছে, গা-হাত-পা ব্যথা ব্যথা করছে ও আরো অন্যান্য সিম্পটম। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে করতে প্যারাসিটামল এবং অন্যান্য ওষুধ খেয়েই আর সবসময়ের মত নর্মাল জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবারে কেন জানি অসুস্থতা বোধ করছি! বিরক্ত বোধ করছি। টিভি খুলতে আর ইচ্ছে করে না। মনে হচ্ছে টিভির ভিতর দিয়ে করোনা স্প্রে ক'রে দিচ্ছে টিভি সঞ্চালকেরা! চ্যানেলগুলি যেন করোনা প্রচারে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিয়েছে কে কত তীব্রতার সংগে ভয়ংকরভাবে কন্ঠে ও শরীরী ভাষায় ভয়ের বাতাবরণ তৈরি ক'রে টি আর পি রেট বাড়াতে পারে। যদিও সত্য অপ্রিয়। কিন্তু হঠাৎ ক'রে প্রচারের তীব্রতা সত্যতা সম্পর্কে চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। ব্যাপারটা কি তাহলে 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'-র মতন নাকি সত্যিই কোনও রহস্য আছে এর পিছনে। প্রতিটি চ্যানেল বলছে লাফিয়ে লাফিয়ে নাকি বাড়ছে করোনা। আর বিশেষজ্ঞরা নাকি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ হ'য়ে লড়ছে! সাবধান ক'রে দিয়েছিল অগ্রিম কিন্তু ভোট কারিগররা নাকি শোনেনি, পাত্তা দেয়নি!

২০২০-র কথা মনে পড়লো! ২০২০তে যে সময় সারা পৃথিবী করোনা নামক অজানা জীবানুর ধাক্কায় বেসামাল হ'য়ে পড়েছিল সেদিন করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের তামাম চিকিৎসক মহল অসহায় হ'য়ে পড়েছিল। বিশ্বের শাসককুল এমনকি তাবড় তাবড় পরমাণু শক্তিধর ও আধুনিক বিজ্ঞানের শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর প্রধানরা অসহায় হ'য়ে পরস্পর পরস্পরের কাছে ভিক্ষার জন্য হাত পেতে ছিল। তখন আমরা কতকিছু দেখেছি! দেখেছি কাসর ঘন্টা বাজিয়ে শব্দ থেরাপি! দেখেছি স্কুল কলেজ, দোকানপাট, হাটবাজার, অফিসকাছাড়, বাস ট্রেন সমস্ত কিছু বন্ধ হ'তে! দেখেছি সমস্ত ক্লাব, প্রতিষ্ঠান থেকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষ নানারকম খাদ্যসামগ্রী, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গরীবদের পাশে দাঁড়িয়েছে! কিন্তু এখন!?

এই ভয়াবহ সময়ে যখন করোনা দেশের ব্রহ্মতালুতে ছোবল মেরে দিয়েছে সেই বিষে জ্বর্জরিত সময়ে ভোট পুজোয় উদ্দাম উত্তাল উত্তাপে করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেতে উঠেছে রাজ্য তথা দেশ পরিচালনার অভিভাবকবৃন্দ! সত্যি দেশের অভিভাবকবৃন্দ! কি বিচিত্র এই দেশ!! ( রচনা ২৭শে এপ্রিল, ২০২১ )

Thursday, April 25, 2024

নাম! নাম!! নাম!!!

নাম পেয়েও তুমি গাইলে না তাঁর গান, 
করলে অবহেলা উল্টে তাঁর রথের দড়ি ধ'রে 
মারছো কষে টান; এর পরেও চাও 
শয়তান থেকে পরিত্রাণ!? ১৮
নাম ভিন্ন এ সংসারে আর 
কিছু নাই, কেহ নাই।
নামের মধ্যেই কিন্তু নামীর অবস্থান পাই 
তাই করো অবিরাম নাম প্রাণায়াম।১৯
( রচনাঃ ২৬শে এপ্রিল, ২০১৯ )

গানঃ দয়াল আমার ডাকছে

দয়াল আমার ডাকছে
যেও নাকো তোমরা
এখনি আসবে দয়াল আমার!
আলোর ছটা অঙ্গে রামধনু রঙ সঙ্গে
ভয় নেই পথ হারাবার!
দয়াল আমার ডাকছে 
যেও নাকো তোমরা!
গল্প করার এই তো দিন
রাত কালো হ'ক মন রঙিন!
সময় দিয়ে হৃদয়টাকে বাঁধবো নাকো আর!
দয়াল আমার ডাকছে যেও নাকো তোমরা!!
তোমারি কায়াতে চেয়েছি হারাতে
দু'বাহু বাড়াতে তোমারি কাছে!
দয়াল আমার ডাকছে যেও নাকো তোমরা।
যাক না এমন এইতো বেশ
হয় যদি হ'ক রাত শেষ!
পূর্ণ হৃদয় হবে তোমার করলে সঙ্গ তাঁর!!

( আকাশ এত মেঘলা যেও নাকো একলা সুরে গান)
রচনাঃ ২৬শ এপ্রিল, ২০১৯ )





















উপলব্ধি ৩৬ ঠিক ও বেঠিক!!!

Baidyanath Anath Samanta-এর করা পোষ্টের বিষয় ও Mondeep Banerjee-র সমর্থন ও সংশোধনসহ মন্তব্য, দু'জনেরই লেখা পড়লাম। দু'জনের লেখার মধ্যে আচার্যদেবের অবিনদাকে করা উক্তি নিয়ে তফাৎ চোখে পড়লো। একজনের লেখার মধ্যে আবেগের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেল আর অন্যজনের লেখার মধ্যে স্বাভাবিক কথাটা উঠে এলো যেটা নাকি আচার্যদেব বলেছিলেন। আমরা প্রায়ই এরকম ঘরে বাইরে দেখতে পাই দাদুদিদা ও নাতিনাতনির পারস্পরিক স্নেহ, মায়ামমতাময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাঝে পারস্পরিক কথোপকথন। দাদু নাতনিকে বলছে, নাতি দিদাকে বলছে, আবদার করছে কত অসম্ভব বিষয়। সেই হিসেবে দেখতে গেলে মনদীপ মুখার্জির বৈদ্যনাথ সামন্তের পক্ষ সমর্থন ক'রে সংশোধনী সহ তুলে ধরা আচার্যদেবের বলা কথার মধ্যে স্বাভাবিকত্ব ফুটে ওঠে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব কিছু নেই। আবার বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্তর পোষ্টে যেটা দেখলাম সেটার মধ্যে আচার্যদেব ও অবিনদাদার কথোপকথনের ভিতর স্বাভাবিকত্বের মধ্যে একটা আবেগ ও অলৌকিকত্বের ছোঁয়া আছে। এই অলৌকিকত্ব প্রচারের বিরুদ্ধে অনেক গুরুভাইবোন আচার্যদেব ও অবিনদাদার সম্মান রক্ষার্থে তাদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমি ভালো ক'রে ঐ পোষ্ট ও পোষ্টের বিরুদ্ধে করা মন্তব্য ও পোষ্টের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে করা সবার মতামত পড়লাম। দেখলাম, বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্ত যা লিখেছিলেন তার পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যে মতামত দিয়েছিলেন মনদীপ ব্যানার্জী, তা'তে দেখা যাচ্ছে তিনি ঐ বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্তের করা পোষ্টের সমর্থন ক'রে শুধু আচার্যদেবের অবিনদাদাকে বলা কথাটার সংশোধন ক'রে দিয়েছেন মাত্র। বৈদ্যনাথ সামন্তের ফেসবুকে পোষ্টের বিষয় ও তার পক্ষে ও বিপক্ষে করা মন্তব্যগুলি পড়ে এবং বিশ্লেষণ ক'রে যে উপলব্ধি হ'লো তাই-ই আজকের লেখার উপজীব্য বিষয়। আমার বোধ, বুদ্ধি, চেতনা, শিক্ষা ইত্যাদি অনুযায়ী আজকের আমার এই উপলব্ধি! উপলব্ধি ৩৬ লিখে অন্য ভক্তদের সংগে আমার উপলব্ধি শেয়ার করলাম।
আমরা দেখেছি যুগ যুগ ধ'রে কালে কালে সময়ের আবর্তে কত সত্য বা ঘটনা কল্পনার ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে, রুপকথা বা কল্পিত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আবার এমন সব গল্প আছে যা আপাতদৃষ্টিতে গাঁজাখুরি মনে হ'লেও সেই গল্পের গভীরে লুকিয়ে আছে সত্য বা বিজ্ঞান। ঠাকুরের কাছে এসে আমরা দেখতে পেয়েছি, জানতে পেরেছি এমন বহু সত্য, পেয়েছি বিজ্ঞানের সন্ধান। ঠাকুর যেমন মিরাকেল পছন্দ করতেন না ঠিক তেমনি কোনওকিছুকে গালগল্প ব'লে উড়িয়ে দিতেন না বা দিতে বারণ করতেন। প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজতে বলতেন। অতিরঞ্জিত আর একেবারে গাঁজাখুরি এক জিনিস নয়। মানুষের মানসিকতা,বোধবুদ্ধি, চেতনা, শিক্ষা ইত্যাদি অনুযায়ী একটু একটু ক'রে বিষয় রঞ্জিত হ'তে হ'তে অতিরঞ্জিত হ'য়ে গিয়ে শিব গড়তে বাঁদর হ'য়ে যায়। এটা মানুষের বায়োলজিক্যাল, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, নিজের জীবন ধারনের ধরণ, চলন অনুযায়ী হ'য়ে থাকে। আবার মানুষ ভালোওবাসে একটু রঙিন চাকচিক্য।
তাই মনে পড়ে, ঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "যেখানেই দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।" ঠাকুর জ্যোতিষ বিদ্যার উপর যেমন জীবনকে দাঁড় করাননি ঠিক তেমনি জ্যোতিষ বিদ্যাকে উড়িয়ে দেননি। জ্যোতিষ বিদ্যাকে তিনি বিজ্ঞান বলতেন। মহর্ষি ভৃগুকে তিনি অশেষ শ্রদ্ধা করতেন। আর যা আমাদের মতন সাধারণ মানুষের কাছে অলৌকিক বা অসম্ভব, অস্বাভাবিক ব''লে মনে হয় তা' যারা জীবাত্মার স্তর পেরিয়ে মহাত্মায় উত্তীর্ণ হ'য়ে পরমাত্মায় লীন হ'ন তাঁদের সংগে আমাদের মত জীবাত্মার স্তরে বিচরণকারীদের কাজের মিল খুঁজলে সেটা শুধু ভুল হবে নয়, মহাভুল হবে।
যেমন ঠাকুর কখনো কখনো কথায় কথায় নিজেকে প্রকাশ ক'রে ফেলতেন, "কেষ্টদা, আমি যদি মনে করি কাঠের বিড়াল দিয়ে ইঁদুর ধরাতে পারি।" এই কথার মধ্যে আমরা ম্যাজিক বা মিরাকেল খুঁজতে পারি। কিন্তু যদিও বাস্তবে তা তিনি করেননি আবার নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বহুবার সেই কথার প্রতিফলনও ঘটিয়েছিলেন, এটাও আমরা জানি।
এছাড়া আর যেখানে তিনি বলতেন,
"ইষ্ট, গুরু পুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।
আবার প্রায় সময় কথায় কথায় তাঁর প্রিয় কথা ব'লে উঠতেন, "এইবার করিবো লীলা অতি চমৎকার, আমিই বুঝিতে নারি অন্যে কিবা ছাড়।"
আর, ঠাকুরের প্রিয় কয়েকটি কোটেশানের মধ্যে শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটক থেকে উদধৃত অন্যতম প্রিয় কোটেশান যা তিনি প্রায় বলতেন, " There are more things in heaven and earth , Horatio, than are dreampt of in your philosophy" অর্থাৎ স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।
উপরিউক্ত এই চারটি উক্তির সমস্ত দিক বিশ্লেষণ ক'রে দেখলে দেখা যাবে ঠাকুর কিভাবে আজও জীবন্ত হ'য়ে আমাদের মাঝে বিচরণ করছেন ও প্রতিটি পদক্ষেপে কতটা তিনি আমাদের মাঝে জাগ্রত!!!!!!!!
তাই, বৈদ্যনাথ সামন্ত অনাথ ও মনদীপ ব্যানার্জীর বলা বিষয়ে সব দিক মাথায় রেখেই খোলামেলা বিশ্লেষণের সাহায্যে এই কথায় বলতে পারি, তাদের বলা মূল বিষয়ে সত্যতা নিশ্চয়ই আছে তবে হয়তো পরিবেষণে কোথাও আবেগ বশে এদিক ওদিক হ'য়ে গেছে কিম্বা অতিরঞ্জিত হ'য়ে গেছে। কারণ দেখা গেছে আচার্যদেব কিম্বা ঠাকুর বাড়ীর ঠাকুর আত্মজরা যখন যেখানে ব'সে বা দাঁড়িয়ে গল্প করেন, আলাপ আলোচনা করেন তখন সবটাই সবসময় লিপিবদ্ধ বা টেপ করা হয় না। যেখানে এই গল্প বা আলাপ আলোচনা হয় সেখানে যে বা যারা থাকেন, যার বা যাদের সংগে গল্প, আলাপ-আলোচনা হয় সেখানে যে যা শোনে তাই দিনের শেষে স্মৃতি হাতড়ে নিজের মত ক'রে শব্দ বা ভাষা যোগ ক'রে তাঁদের মুখে বসিয়ে দেয় আর তা' মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। রঞ্জিত হ'তে হ'তে তা' ছড়িয়ে পড়ে অতিরঞ্জিত হ'য়ে ও কল্পিত কাহিনী হ'য়ে; যা শুনলে মনে হয় গাঁজাখুরি বা মিরাকেল। আমার সঙ্গেও বাবাইদাদা ও অবিনদাদার কখনো কখনো কথা বলার মত সময়, সুযোগ বা পরিস্থিতি ঘটেছে কিম্বা বাবাইদাদা ও অবিনদাদার অন্যদের সংগে বলা কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে সেখানে দেখেছি দিনের শেষে সেই তাদের বলাগুলি অন্যের মুখে ব'সে ১৮০ডিগ্রি ঘুরে গেছে কিন্তু বলতে চাওয়া বিষয়ের মধ্যে সত্যতা ছিল। হয়তো সত্যতার গায়ে নীল লাল হলুদ ছোপ পড়ে গেছে ঠিক ক'রে বলতে না পারার কারণে। আবার এও দেখা গেছে অনেককে তাঁদের নাম ক'রে এলাকায় এলাকায় মিথ্যে প্রচার ক'রে পান্ডিত্য ফলাতে আর দেওঘরের এবং দেওঘরের ঠাকুর বাড়ীর খুব কাছের লোক প্রমাণ করতে দেখা যায় অনেককে।
তাই ঠাকুর পরিবারের ঠাকুর আত্মজদের সম্পর্কে কিছু বোলতে গেলে অবশ্যই সতর্কতা প্রয়োজন এবং যতটা সম্ভব অতিরঞ্জিত না ক'রে ঠিক ঠিকটা তুলে ধরা উচিত। নতুবা মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যায়।
( লেখা ২৬শে এপ্রিল, ২০১৮ )

Wednesday, April 24, 2024

শিশু

শিশুর শৈশব চলে গেলে তা আর ফিরে পাবে না। শিশুরা ঈশ্বরের দূত। তাদের মধ্যে ঈশ্বর বর্তমান। তাদের ভালোবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়।
তোমার বাড়ির ও আশেপাশের শিশুদের ভালোবেসো। তাদের ভালোবাসলে ঈশ্বর তোমায় ভালবাসবেন। শিশুর শৈশব চলে গেলে তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসার সুযোগ হারাবে।

চলে যাবার আগে ব'লে যাই একটা কথা।
যদি থাকে তোমার ক্ষমতা তবে তোমার ও তোমার আশেপাশের অসহায় গরীব ছোট্ট শিশুর প্রতি রেখো মমতা। শিশুরা লিটল অনুকূল! বাড়িয়ে তোমার হাত দিও সাথ,
দিও তাদের কুল।

প্রবন্ধ কে সেই মানুষ!?

মানুষের পৃথিবীতে শেষ কথা বলবে মানুষ! মানুষ মানে বহু মানুষ নয়, একজন মানুষ। যিনি পারিপার্শ্বিকসহ প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাঁচা-বাড়ার সঠিক ও নিখুঁত পথ জানেন ও প্রতি প্রত্যেককে তা বাতলে দেবেন! আর তাঁর কথা শুনতে হবে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষকে। আর তাহ'লে পৃথিবীতে নেবে আসবে স্বর্গরাজ্য! প্রতিষ্ঠা হবে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের এই পৃথিবীর প্রতি সমান অধিকারের দাবি! আর এই দাবী পূরণ হবে সামঞ্জস্যবাদের ভিত্তিতে তৈরি রূপরেখার উপর!
কে সেই মানুষ!?
সেই একজন মানুষের সংস্পর্শে আসার পর পৃথিবীর সমস্ত বাদের মূল বাদ যে জীবনবাদ বা অস্তিত্ববাদ তা তখন বোধগম্য হবে, বোধগম্য হবে যে জীবনবাদ বা অস্তিত্ববাদকে বাদ দিয়ে দেশে দেশে যত বাদের অস্তিত্ব আছে তা সব গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার মত অসম্পূর্ণ ভুল মতবাদ! এই জীবনবাদ-ই যে এক ও অদ্বিতীয় মতবাদ, এর উপরে যে আর কোনও বাদ নেই, এই বাদ-ই যে একমেবাদীতীয়ম-এর মুখনিঃসৃত বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার মতবাদ সেই সহজ সত্য কথা গরিবের মসিহা অহংকারী ক্ষমতালোভী কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী সমাজ কো বদল ডালোর রূপকাররা মানতে চায়নি! আর নিজেরা মানতে চায়নি যেমন ঠিক কথা তার থেকেও আরও বড় ঠিক ও সত্য কথা হ'লো কেউ যাতে না মানে তারও রাস্তা তৈরি ক'রে রাখা! আর এই মজবুত রাস্তা তৈরি করেছে রাজনীতি ও ধর্মনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা একসঙ্গে মিলে! যুগ যুগ ধ'রে উচ্শৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল বৃত্তি-প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত অদূরদর্শী যুব শক্তিকে হাতিয়ার ক'রে যুব শক্তির সরলতা, বিশ্বাস, উদ্দামতা, উচ্ছাসকে সিঁড়ি বানিয়ে গরিবী ও মানবতার দোহাই দিয়ে উদ্দাম যৌবনকে ক্ষেপিয়েজীবনে অসফল বিগত যৌবন-যৌবনা নরনারী যুবশক্তির আহুতির বিনিময়ে নিজেদের অস্তমিত জীবন সূর্যের উদয় ঘটাতে চেয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের সঙ্গে চলেছে ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার এই লুকোচুরির খেলা!
ঈশ্বরের সঙ্গে বেইমানি করেছে কারা? এককথায় এর উত্তর, অস্তিক্যবাদী বা ধার্মিকরা! নাস্তিক বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী মানুষেরা আস্তিক বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষদের চেয়ে সৎ! তারা আর যাই-ই করুক আস্তিকদের মত বা ঈশ্বর ও ধর্ম বিশ্বাসী এবং ঈশ্বর পূজারীদের মত ভন্ড ও কপট হ'য়ে সাধারণ ঈশ্বর ও ধর্মবিশ্বাসীদের সঙ্গে ভণ্ডামি ও কপটতা করেনি। তারা মানবতার দোহাই দিয়ে সরাসরি ঈশ্বরের উপস্থিতির বিরোধিতা করেছে।
আস্তিকরা বা ঈশ্বর পূজারী ও ধর্ম বিশ্বাসী মানুষেরা কি করেছে!?
ঈশ্বর যে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে সৃষ্টি করার পর তাকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের মেইন লাইনে চলার জন্য, সঠিক ও নির্ভুল পথে চালিত করার জন্য স্বয়ং মানুষের রূপ ধ'রে মানুষের মাঝে নেবে এসেছিলেন এবং বারবার এসেছেন সেই কথাটায় সাধারণ মানুষের কাছে অস্তিক্যবাদী ঈশ্বর বিশ্বাসীরা লুকিয়ে গেছেন। ঈশ্বরকে আকাশেবাতাসে, মূর্তির মধ্যে খুঁজতে বলেছেন আর নিজেরা ধর্মগুরু সেজে সরল, সাধাসিধে, বোকাহাবা, মূর্খ, লেখাপড়া না-জানা, গরীব, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষকে তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মাদুলি ইত্যাদি নির্ভর দুর্বল জীবনের অধিকারী ক'রে রেখেছে যাতে তাদের গরিব মানুষের মসিহা সাজার মৌরসি পাট্টা বজায় থাকে।
এখান থেকে মুক্তির একটাই পথ তা হ'লো জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামীদের জীবন্ত ঈশ্বর যেমন চেয়েছিলেন তেমন হ'য়ে ওঠা।
জীবন্ত ঈশ্বর হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! ঈশ্বর, আল্লা বা গড যুগে যুগে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য বারবার নতুন রূপে এসেছেন মানুষের মাঝে মানুষ রূপে। সেই মানুষকেই চিনে নিতে হবে আর তাঁর কথা মেনে চলতে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষকে। তবেই তাঁর সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা হবে শান্তি! প্রতিষ্ঠা হবে স্বর্গরাজ্য!! ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ডের তিনিই মুখ! তিনিই নেতা!!
আর যদি না মানতে চায় অহংকারী মানুষ, করে গোয়ার্তুমি, ফাটায় তাদের বালখিল্য জ্ঞানের অহংকার তাহ'লে প্রকৃতির আগামী ভয়ঙ্কর ধ্বংসের তাণ্ডবলীলার জন্য রেখে যেতে হবে তাদের বংশধরদের, আগামী প্রজন্মকে! আগামী ধ্বংস! ধ্বংস!! সমূলে ধ্বংসের আগুন পৃথিবীতে!!!-----প্রবি।
No photo description available.
All reac

প্রবন্ধঃ করোনা ও আমি।



কি ভাবছি? ক'দিন ধ'রে একটা বিষয় ঘুরে ফিরে আসছে মাথার ভিতরে সকাল সন্ধে রাতে! বিব্রত বোধ করছি। বিষয়টি হ'লো করোনার প্রত্যাবর্তন। ২০২০-র পর ২০২১ শুরু হ'য়েছিল মোটামুটি স্বস্তি নিয়ে। করোনার ভয়াবহ ভয় আতংক দূরে সরিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছিল মানুষ, সহজ হ'য়ে উঠছিল পরিস্থিতি। কিন্তু হঠাৎ করোনার গ্রাফ বাড়তে লাগলো হুড়মুড়িয়ে। টেলিভিশনের খবর তাই বলছে। আর সঙ্গে সঙ্গে আবার ভীত সন্ত্রস্ত হ'য়ে পড়ছে মানুষ। আচ্ছা এই যে করোনার গ্রাফ বেড়ে গেল তাড়াতাড়ি, রাতারাতি বদলে গেল রাজ্যের পরিস্থিতি এটা কেন হ'লো? এর জন্য কি বা কে দায়ী? মনে
জাগে এর জন্যে কি ভোট দায়ী? তাহ'লে আগাম কেন ব্যবস্থা নেওয়া হ'লো না? কেন আগের থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দেশের বা রাজ্যের চিকিৎসক মহল, বিচার ব্যবস্থা কেউ না কেউ বা সবাই মিলে দূরদৃষ্টি দিয়ে গম্ভীর বিষয়কে গম্ভীরভাবে পর্যালোচনা করলো না!? আর এরকম কঠিন জটিল অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপদ্ধর্ম হিসেবে যদি ভোট না ক'রে রাষ্টপতি শাসন জারি করা হ'তো তাহ'লে কি ভুল হ'তো? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ'য়ে এলে পরে রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে ভোট করা যেত। অবশ্য হাওয়া ব'লেও একটা কথা আছে। তবুও মনে হয় রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সরকারের বিগত বছরগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতার উপর দাঁড়িয়ে পুংখানুপুংখ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভোট যজ্ঞ সম্পন্ন করা যেত এবং জনগণকেও যুগোপযোগী পরিণত মানসিকতা প্রকাশ করার সময় ও সুযোগ দেওয়া যেত।

যাই হ'ক, আমার আলোচনার বিষয় করোনা। দ্বিতীয় দফায় করোনা কতটা বিস্তার লাভ করেছে, কতটাই বা ভোটের চতুর্থ দফার পর করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আর কতটাই বা রাজনীতিকরণ করা হয়েছে বা অন্য কোনও ছুপা রুস্তমি আছে কিনা কিম্বা ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী বা দেশব্যাপী বা রাজ্যব্যাপী করোনার ভয়াবহতা ও তার মোকাবিলায় সামগ্রিক প্রস্তুতির পরিসংখ্যান কি বলছে সেগুলি নিয়ে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করা যেতেই পারে। বিচার করা যেতে পারে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের মানুষের মানসিক দুর্বলতা ও ভয়ের তাপমাত্রা। বিচার করা যেতে পারে ভারতবর্ষের মত বিশাল জনবহুল দেশে যেখানে জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫কোটি, সেই তুলনায় করোনায় আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর হার (%) কতটা?

এখন প্রশ্ন ভয়! ২০২০ সালে যখন করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করেছিল তখন কোনও দেশই এই অজানা ভয়ংকর ভাইরাস সম্পর্কে, ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি, চরিত্র, গঠন ইত্যাদি কোনও কিছু সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল ছিল না। ছিল না তাকে মোকাবিলা করার মত ভ্যাক্সিন ও চিকিৎসার পরিকাঠামো। গোটা বিশ্বকে রগড়ে দিয়েছিল একটা ছোট্ট মারণ পোকা। তাবড় তাবড় পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোকে বালখিল্য দেশে পরিণত ক'রে দিয়েছিল একটা ছোট্ট অথচ ধানি লংকা বা পটকার মত পেছন জ্বালিয়ে দেওয়া বা কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার মত ছোট্ট ধানি পোকা!!!! কিন্তু তবুও এই অসহায় অবস্থার মধ্যেও দেশ সামলে নিয়েছিল পরিস্থিতি, মহামারীর ভয়ংকর তীব্রতাকে রুখে দিয়েছিল দেশ, তৈরি করেছিল করোনা ভ্যাক্সিন এবং দেশের অভ্যন্তরে রাজ্যে রাজ্যে ও বিদেশেও সাপ্লাই দিয়েছিল ও দিয়ে চলেছে করোনা মোকাবিলায় করোনা কিট ও ভ্যাক্সিন। এখন আমার দেশে করোনা তীব্রতাকে মোকাবিলার জন্য দেশ মোটামুটিভাবে তৈরী এবং বিশ্বের বহু দেশকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। অথচ আজ আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মানুষ এমতাবস্থায় সমস্তদিক দিয়ে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছি! দূর্বল ভীরু হ'য়ে যেন করোনার কাছে সারেন্ডারের মানসিকতাকে শরীরে মনে সঞ্চারিত ক'রে চলেছি। গেল গেল রব উঠছে দিকে দিকে! মানুষ নাকি করোনায় মরছে দিকে দিকে রাজ্য জুড়ে! একটু জ্বর, সর্দি, কাশি,গা হাতপা ব্যথা হ'লেই আর বয়সজনিত কারণে মারা গেলেই তাকে করোনা আখ্যা দেওয়া হচ্ছে! মানুষ ভয় পাচ্ছে ডাক্তার দেখাতে! ডাক্তার দেখালেই যদি ব'লে দেয় করোনা টেষ্ট করো আর টেষ্টে পরীক্ষায় সত্যি মিথ্যা হ'ক, ঠিক বা ভুল হ'ক যদি ব'লে দেয় পজিটিভ তাহ'লে হ'য়ে গেল; না ঘরকা, না !
২০২০ সালে করোনা মোকাবিলায় সবাই ঝাপিয়ে পড়েছিল করোনা মোকাবিলায়। তখন সব বন্ধ!জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব বন্ধ! আর এখন!? এবারে ততটা সেই পরিমাণে দেখা যাচ্ছে না। কারণ অভিজ্ঞতা ও গা সওয়া মনোভাব। ২০২১-এ একটু হ'লেও কোমর শক্ত পূর্বের তুলনায়। কিন্তু কোথায় যেন রহস্য রহস্য গন্ধ! গতবছরের দেশ তথা বিশ্বজুড়ে করোনা তীব্রতার মাঝে দেশের মধ্যে বিহারে, বিদেশে আমেরিকায় ভোট হয়েছিল। তখন ভোটের আবহে ঢেকে গেছিল চাপা পড়েছিল করোনা সেই নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি আর এবার ২০২১শের ভোটে প্রথমদিকে করোনার ধারও ধারেনি, পাত্তায় দেয়নি কেউ আর এখন উদবেগ উৎকন্ঠায় বিভোর সমস্ত দল, প্রশাসন, সরকার, কমিশন, চিকিৎসা মহল সব্বাই!!! কেন!? কি এর কারণ!? আদৌও কোনও রহস্য আছে!? কেন হঠাৎ দেশজুড়ে বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গে কাগজে, টিভিতে, নেটে সব জায়গায় সবাই করোনার বৃদ্ধি নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে, সুস্থতার হার নিয়ে, ওষুধের যোগান নিয়ে মতামত দিয়ে আতংকের পরিবেশ তৈরিতে ঝাপিয়ে পড়েছে!? নাকি দেশজুড়ে সবটাই অপরিপক্ক ও অদূরদর্শিতার ফলাফল!?
এমতাবস্থায় কি করণীয়? কেমন ক'রে বাঁঁচবো ও বাঁচাবো? বাঁঁচবার ও বাঁচাবার উপায়!?
করণীয় নির্দেশাবলীঃ ১) সদাচার ২) সদাচার ৩) সদাচার।
আর আমি যেহেতু সৎসঙ্গী (?) সেইহেতু সৎসঙ্গীদের (?) উদ্দেশ্যে এর সঙ্গে বলতে পারিঃ
১) যজন ২) যাজন ৩) ইষ্টভৃতি ৪) নাম-নাম-নাম, ক্রমাগত অনবরত নাম ৫) ইষ্টের উপর নির্ভরতা। ৬) কপটতা, বেইমানি ও অকৃতজ্ঞতা ত্যাগ।
আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা সবসময় বলছেন, সদাচার মানুন, সরকারি নির্দেশ মানুন, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখুন আর বললেন, ভয় কি! আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা আমাদের মাথার ওপর দয়াল আছেন, পরমপিতা আছেন। মাভৈ!!!! পরমপিতার উপর নির্ভর করুন। নির্ভর করুন!! নির্ভর করুন!!! ( লেখা ২৪এপ্রিল, ২০২১ )

Tuesday, April 23, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীহনুমানজী কি শ্রীশ্রীবড়দা?

প্রশ্নঃ আপনি আচার্য পরম্পরা ও শ্রীশ্রীবড়দাকে নিয়ে বিরোধীদের বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে, এবং প্রশ্নকর্তাদের প্রশ্নের উত্তরে কয়েকটা ভিডিও করেছেন। বিরোধীদের প্রচার, প্রশ্নকর্তাদের আপনার বিরুদ্ধে গালাগালি, প্রশংসা ও নানা কৌতুহলী প্রশ্ন এবং বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়ে অনুরোধ চোখে পড়েছে। আবার সম্প্রতি আপনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে দু'টো পোষ্ট করেছেন হনূমান আর বড়দাকে পাশাপাশি রেখে। এই পোষ্ট নিয়ে জল ঘোলা হ'য়ে চলেছে। কমেন্টের মধ্যে দিয়ে তা দেখতে পেলাম। একটা বিতর্কিত পোষ্ট। এমন একটা পোষ্ট যা মানুষ সহজে মেনে নেবে না। রাম ভক্তদের মনে, হনুমানের ভক্তদের মধ্যে অনেকের ভাবে আঘাত লাগতেই পারে। বিশ্বাস আহত হ'তে পারে। হনুমানের সঙ্গে বড়দার তুলনা, এক আসনে বসিয়ে দেওয়া সেটা ভক্তদের মধ্যে বেমানান লাগতেই পারে। আপনাদের সৎসঙ্গীরাও মেনে নিতে পারছে না সেটা; এখানে এই পোষ্টের কমেন্টে তার প্রমাণ। এটা স্বাভাবিক। আপনাকে জিজ্ঞাস্য, আচ্ছা আপনি এরকম বিতর্কিত পোষ্ট করেন কেন? আপনি প্রমাণ করতে পারবেন হনুমানই বড়দা। এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। আর, এই বিতর্কের অবসান আপনিই করতে পারেন। আপনি তো আপনার ভিডিওতে এরকম বহু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আপনার বক্তব্য রেখেছেন। অযথা জল ঘোলা হওয়ার আগেই এই বিষয়েও আপনি ভিডিওর মাধ্যমে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন। আশা করবো যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আপনি বিতর্কের অবসান ঘটাবেন।


উত্তরঃ শ্রীশ্রীহনুমান সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরঃ
আসুন প্রথমে একটু শ্রীশ্রীহনুমানের পরাক্রম নিয়ে কথা বলি। হনূমানজীর ভয়ংকর পরাক্রম দেখে স্বয়ং প্রভু রামচন্দ্র চিন্তায় পড়ে গেছিলেন। এবং যুদ্ধ করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু হনুমানজী প্রভুর কথায় সম্মত হন নি। সীতামাকে রাবণের কাছ থেকে উদ্ধার ক'রে প্রভুকে সুখী করার পণ করেছিলেন ভীষ্মের প্রতিজ্ঞার মতো। এবং যখন রাবণকে বেঁধে আনা হয়েছিল তখন প্রভু রামচন্দ্র মাপ করলেও পরম পূজনীয় শ্রীশ্রীহনুমানজী প্রভুর আদেশ অমান্য করেছিলেন এবং লক্ষ্মীমাতা সীতামায়ের কেশ স্পর্শ করেছিল যে দু'হাত সেই দুই হাত তিনি ভীম গর্জনে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। একই রকম প্রচন্ড প্রতাপ, ভয়ংকর তেজ আমরা দেখতে পেয়েছি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পরম ও প্রধান ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভয়ংকর ক্লান্তীহীন, নিদ্রাহীন যুদ্ধ করেছে ষড়যন্ত্রকারী বিরোধী সৎসঙ্গীদের সঙ্গে। এরকম Adherence নিষ্ঠা আমরা দেখতে পেয়েছি প্রত্যেকটি প্রধান শিষ্যের মধ্যে প্রভুর০ স্বপ্ন পূরণের জন্য।


যাই হক, প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের উপর শ্রীশ্রীহনুমানের Adherence অর্থাৎ অনুরাগ অর্থাৎ ভালোবাসা, প্রীতি, বন্ধুত্ব, পছন্দ, প্রণয়, আকর্ষণ, আসক্তি, টান ছিল অসীম, অভূতপূর্ব। প্রভু রামচন্দ্র যুদ্ধ না ক'রে সমুদ্রের ধার থেকে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। লোকক্ষয় চাননি। কিন্তু সীতামাকে রাবণ নিয়ে গেছে এটা হনুমানের কাছে বিষের মত লাগতো। রাবণ বাঁচুক মরুক সেদিকে হনুমানের কোনও দৃষ্টি ছিল না। মায়ের উদ্ধার চাই। প্রভুর তৃপ্তি চাই। হনূমান এটা বুঝেছিলেন, মা সীতাকে না এনে দিলে প্রভুর মনে শান্তি নেই। সীতামাকে যেমন করেই হ'ক এনে দিতেই হবে। ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠার ও ইষ্টকর্ম করার জন্য মানুষের দূরদৃষ্টি (Farsightedness), বুদ্ধিমত্তা (Intellegence), আয়ু (Longevity) সবই বেড়ে যায়। Passion ( বৃত্তি-প্রবৃত্তি) গুলিও Controlled (নিয়ন্ত্রণ) হয়। তাই হনুমানও সীতামাকে উদ্ধার করার জন্য যা যা করার ও যেখানে যেখানে যাবার সব করেছিল। এই যে প্রবল পরাক্রমী রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক'রে সীতামাকে উদ্ধার করেছিল তার পিছনে ছিল হনুমানের Alertness (সতর্কতা), Sharpness (তীক্ষ্ণতা), Promtitude (ক্ষিপ্রতা) এবং সর্বতোমুখী দৃষ্টি ও তৎপরতা। এগুলি অসম্ভবভাবে হনুমানের চরিত্রে developed হয়েছিল বলেই হনূমান সীতামাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এই যে হনূমানজী দংগল সৃষ্টি করেছিলেন সীতামাকে উদ্ধার করার জন্য ঐ দুঃসাধ্য কাজ করা হনুমানজীর পক্ষে সম্ভব হ'তো না যদি না প্রভু রামচন্দ্রের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা না থাকতো, পরিবেশের প্রতি সেবা দেবার মনোভাব না থাকতো। হনুমান কর্ম করেছিল তাই সে evolve (বিকাশ লাভ) করেছিল। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, By following and achieving he becomes great অর্থাৎ প্রভুকে অনুসরণ ক'রে কার্য্য সমাধা ক'রে হনূমান মহান হয়ে গেলেন। Behaviour এর মধ্যে অর্থাৎ ব্যবহারের মধ্যে ভক্তি না থাকলে তা evolve করে না, বিকাশ লাভ করে না। হনূমান ছিলেন বৃত্তিভেদী টানসম্পন্ন ভক্ত তাই সে প্রবলপরাক্রান্ত রাবণের সাম্রাজ্যে গিয়ে সব তছনছ ক'রে ওলোটপালোট ক'রে দিয়েছিল। এই যে প্রভু রামের প্রতি হনুমানের তীব্র টান সেটা তাঁর জিনের মধ্যেই নিহিত আছে। কারণ একবার দেওঘর কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সংস্কৃত শাস্ত্রের অধ্যাপক পন্ডিত শ্রীছেদীলাল ঝা শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে বসেছিলেন সেইসময় একটা বিড়াল সামনে দিয়ে নির্ভয়ে চলে যাচ্ছিল, আর তার বাচ্চাটা মায়ের পিছন ম্যাও ম্যাও ক'রে যাচ্ছিল। তা দেখে অধ্যাপক ছেদিলাল ঝা বলেছিলেন, "বিল্লিকা বাচ্চা হামকো বহুত আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়।" কারণ মা তার বাচ্চাকে রক্ষা ক'রে চলে সবসময়। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই একটা বড় হনূমান ঠাকুর বাংলার বড়দালান থেকে লাফ দিয়ে সামনে খড়ের ঘরের উপর এসে পড়লো। তারও কোলে একটা বাচ্চা। হনুমানের বাচ্চাটি মা হনুমানকে পেটে-পিঠে জোরে আঁকড়ে ধ'রে আছে। নিরালা নিবেশের সামনে কিছুক্ষণ থাকার পর হনুমানটি আবার লাফ দিয়ে বড়মার ঘরের ছাদে উঠে চলে গেল। তাই দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, মেরেকো হনুমানকা বাচ্চা জাদা আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়।" কারণ বিড়ালের মাকে সবসময় তার বাচ্চার ওপর নজর রাখতে হয় বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু হনুমানের বাচ্চাটি তার মাকে আঁকড়ে ধ'রে আছে আর নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই বলি, বাচ্চার টান মায়ের প্রতি যত হয় তত ভালো।

এই কথার মধ্যে দিয়ে ঠাকুর সক্রিয় ভক্তের নমুনা দেখালেন আমাদের সামনে। আর দেখালেনও রহস্যজনকভাবে অধ্যাপক পন্ডিত ছেদিলালজীর "বিল্লিকা বাচ্চা হামকো আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়" কথার জবাবে তাৎক্ষণিক হনুমানের আগমনের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ ঐ সময় হনুমানের আসার কি দরকার ছিল? সমঝদারোকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যাঁয়। আমরা দেখতে পেলাম কেন ত্রেতাযুগে হনূমান ছাড়া অন্য কোনও জীব প্রভু রামের পরম ও প্রধান ভক্ত হ'লো না। এর একটা তাৎপর্য, আছে Significance আছে। আছে মেসেজ, সিগন্যাল। সৃষ্টিকর্তা পরমপিতা পুরুষোত্তম পরম দয়ালের প্রতি টানের একটা উদাহরণ সৃষ্টি ক'রে রেখেছেন। উদাহরণ চরিত্রগত ক'রে প্রকৃতির বুকে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে রেখে দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা দয়ালের টান স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সৃষ্টির সবার প্রতি থাকেই। কিন্তু তাঁর সন্তানের টান, নিষ্ঠা কেমন হওয়া উচিত তার একটা মজবুত শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তিনি রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্ট জীব হনুমানের মধ্যে। তাই হনূমান প্রভু রামের শ্রেষ্ঠ পরম ও প্রধান ভক্ত। সেই উদাহরণ যেন মানুষ অনুসরণ ক'রে ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের ভিত মজবুত করে।

হনূমান যা করতেন সব প্রভু রামচন্দ্রের জন্য। এছাড়া তাঁর অন্য কোনও কাজ ছিল না। রাবণের মৃত্যুবাণ চুরি করবার জন্য তিনি রাবণের বাড়ি বামুন সেজে পুজো করতে গেছিলেন। রামচন্দ্রকে সুখী করতে, রামচন্দ্রের মুখে হাসি ফোটাতে, রামচন্দ্রের ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য হনুমানজী পাপ-পূণ্য, ইহকাল-পরকাল, স্বর্গ-মোক্ষ ঈশ্বরলাভ কোনও কিছুরই ধার ধারতো না। রামচন্দ্রকে নিয়ে মাতাল হয়ে, তাঁকে নিয়েই কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন প্রচন্ড কর্ম্মোৎসবের মধ্যে দিয়ে। প্রভু রামচন্দ্রকে খুশী করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত সুখ, ব্যক্তিগত সুবিধা, ব্যক্তিগত উন্নতি সব ভুলে গেল।


ঠিক তেমনি আমরা শ্রীশ্রীবড়দার জীবন যদি দেখি আমরা দেখতে পাবো শ্রীশ্রীহনুমানজীর কার্বন কপি। শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রীতির জন্য, শ্রীশ্রীঠাকুরের তৃপ্তির জন্য, বেপরোয়াভাবে কর্ম্মপাতাল হ'য়ে ওঠাটাই ছিল শ্রীশ্রীবড়দার এক ও একমাত্র লক্ষ্য। এই বেপরোয়া মনোভাব মানুষ দেখেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্য শ্রীশ্রীবড়দা কোনও কিছুর সঙ্গে, কারও সঙ্গে যে বা যাই-ই হ'ক কোনও কম্প্রোমাইস করেননি। শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা আছে "ইষ্টের চেয়ে থাকলে আপন ছিন্ন ভিন্ন তাঁর জীবন।" তিনি বলেছেন, ইষ্টের প্রতিষ্ঠা ও ইষ্টের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রকৃত ভক্ত প্রয়োজনে পিতামাতা, ভাইবোন, স্ত্রীপুত্রকন্যা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কারও সাথে বা কোনও কিছুর সাথে আপোষ করে না। শ্রীশ্রীঠাকুর ছাড়া আর সব কিছুর জন্য তিনি আপোষ করেছেন কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও ঠাকুরের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ব্যহত হয় এমন ক্ষেত্রে কোনও কিছুর সঙ্গে বা কারও সঙ্গে আপোষ করেননি। তাঁর এই নীরব আপোষহীন সংগ্রাম আমরা দেখেছি তাঁর শেষদিন পর্যন্ত। তিনি ঠাকুরের জন্য নিজেকে স্যাক্রিফাইস করেছেন কিন্তু ঠাকুরকে স্যাক্রিফাইস হ'তে দেননি। জীবন দিয়ে লড়ে গেছেন ভয়ংকর শয়তানী প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে। প্রভুর জন্য শ্রীশ্রীবড়দার আন কমপ্রোমাইজিং অ্যাটিটিউড যা শ্রীশ্রীহনুমানজীর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এই জন্য তিনি তৎকালীন তথাকথিত বড় বড় সাজা সৎসঙ্গী ভক্তমন্ডলী অনেকের বিরাগভাজন ছিলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "শয়তানের হাতে যতরকম ভেল আছে, তার চাইতে বেশি ভেল না থাকলে শয়তানকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে হবে। শয়তান যেমন মানুষগুলিকে বিভ্রান্ত ক'রে তার সেবায় লাগায়, আমরা তেমনি শয়তানকে বিভ্রান্ত করে পরমপিতার সেবায় লাগাবো।" এই যে ঠাকুরের কথা এই কথা বাস্তবায়িত হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার জীবনে ও শ্রীশ্রীহনুমানের জীবনে। ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীশ্রীবড়দার ভুমিকা আজ গবেষণার বিষয়।

বর্তমানে ‘সৎসঙ্গ’-এর পাঁচ হাজারের অধিক কেন্দ্র রয়েছে; এইগুলি সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, সৎসঙ্গ উপযোজনা কেন্দ্র ও ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ব্রহ্মদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমিরিকাতেও ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রগুলো। ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত প্রদেশে গড়ে উঠেছে ‘সৎসঙ্গ বিহার’। চার মহানগরেই ‘সৎসঙ্গ বিহার’ স্থাপিত হয়েছে। এই বি-শা-ল কর্মকান্ড যেমন সৎসঙ্গ ফিল্যান্ত্রপি, আনন্দবাজার, সৎসঙ্গ রসৈষণা মন্দির, সৎসঙ্গ ভেষজ মন্দির, সৎসঙ্গ দ্যুতদীপ্তি হাসপাতাল, সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজ, অমরদ্যুতি বেদ মন্দির ( সৎসঙ্গ লাইব্রেরী), বেদ ভবন, সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ অমরদ্যুতি মহাবিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বীণাপানি বিদ্যামন্দির, কলাবিভাগ, অতিথি ভবন, মেমোরিয়া, যতি আশ্রম, সৎসঙ্গ প্রেস, পশুপালিনী চিড়িয়াখানা, উপাসনা (মাতৃ-মন্দির গৃহ) ইত্যাদি ঠাকুরের দেহ রাখার আগেই নীরবে, নিভৃতে গড়ে উঠেছিল দেশভাগের আগেই বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুরের পবিত্র মাটিতে। ঠিক তেমনি নীরবতা ও নিঃশব্দতাকে আশ্রয় ক'রে আবার সমস্ত কিছু নুতন ক'রে গড়ে উঠেছে দেওঘরের বুকে এবং এগিয়ে গেছে ঠাকুর পরবর্তী নানা কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে! যা আজো একই ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নেতৃত্বে। এই যে নীরবতা ও নিস্তব্ধতা এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত অসীম দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা, অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনা, গালাগালি!!!!! যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সাধারণ শিষ্যবৃন্দের অগোচরে! কি পাহাড় প্রমাণ শারীরিক-মানসিক বাধা ও সীমাহীন বিরোধীতার সম্মুখীন হ'তে হয়েছিল ও মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরকে এবং শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন ও শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর থেকে শ্রীশ্রীবড়দার দেহ রাখার দিন পর্যন্ত। সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সৎসঙ্গীদের! ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, আর তা ব্যতিক্রম! আর সেই পাহাড় প্রমাণ বাধার ট্র্যাডিশন ব'য়ে চলেছিল মুখ বুঁজে দৃঢ়তার সঙ্গে কঠিন-কঠোর ও কোমল মনোভাবে শ্রীশ্রীবড়দা। ঠাকুরের জীবদ্দশায় শুরু হ'য়েছিল পরিকল্পিতভাবে শ্রীশ্রীবড়দাকে অমান্য করার গোপন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা আর তা রূপ নিয়েছিল ভয়ঙ্করভাবে একেবারে ঠাকুরের শেষের দিকে!! যাতে শ্রীশ্রীবড়দা সৎসঙ্গের হাল ধরতে না পারে। মানসিক যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত করেছিল শ্রীশ্রীবড়দাকে। আর এই যন্ত্রণা দিয়েছিল তৎকালীন তথাকথিত বড় বড় ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা। যাতে এই ঠাকুর সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেঙে যায়, ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দা তা বুঝতে দেননি বিশ্বজুড়ে তামাম সৎসঙ্গীদের। শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঠাকুরের প্রাণের প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'কে যে আগে রক্ষা করার দরকার সেই গ-ভী-র বোধ থেকে 'সৎসঙ্গ'কে রক্ষা করার জন্য অনন্ত-অসীম বাধার পাহাড় ঠেলে কঠিন-কঠোর ও কোমল শরীরে-মনে ও হৃদয়ে কুকুরের মত পাহারা দিয়ে গেছেন! অ্যাটলাসের মত পিঠে ক'রে ব'য়ে নিয়ে গেছিলেন 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে দিনরাত একাকার ক'রে। ঠাকুর প্রতিষ্ঠা ও ঠাকুরের স্বার্থপ্রতিষ্ঠায় বড়দা ছিলেন নিষ্ঠাবান ও আপোষহীন! রাত দু'টোর সময় উঠে প্রাতঃকৃত্য সেরে শুরু হ'তো তাঁর আশ্রম পরিচালনার কাজ। চলতো সেই কাজ সারাদিন। রাত দশটায় নিয়ম ক'রে শুয়ে পড়তেন আর উঠতেন মাঝ রাত দু'টোয়। কোনও অবস্থায় বড়দা দুর্বল হতেন না বা নড়ে যেতেন না। ঠাকুরের বলা "নিষ্ঠা, আনুগত্য, কৃতি-সম্বেগ, ক্লেশ-সুখ-প্রিয়তা"-র মূর্ত প্রতীক হ'য়ে উঠেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা! যেমন শাসনে কঠিন ও কঠোর ছিলেন ঠিক তেমনি শুধু মানবদরদী ছিলেন তা নয় সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের প্রতি ছিল তাঁর সমান দরদ ও ভালোবাসা! আর এই এতবড় প্রতিষ্ঠানকে নিখুঁতভাবে পরিচালনার জন্য তাঁর কঠিন-কঠোর মুখাবয়ব ও তাঁর চখা আঁখি অর্থাৎ জগন্নাথের চোখ এবং তাঁর শান্ত গম্ভীর গলার স্বর ছিল কপট ধান্দাবাজদের কাছে একেবারে ভয়ঙ্কর বজ্রপাতের মত!!! তাই তারা তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারতো না, পিছন থেকে চালাতো ছুরি! শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর স্বার্থপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে শ্রীশ্রীবড়দা ধান্দাবাজ, কপট সৎসঙ্গীদের মোকাবিলায় এতটাই ফ্যানাটিক ও আনকম্প্রমাইজিং ছিলেন যে সেই সময় সৎসঙ্গীদের অনেকেই শ্রীশ্রীবড়দাকে ভুল বুঝেছিলেন! যার রেশ এখনও ব'য়ে চলেছে! এইটাই সৎসঙ্গীদের দুর্ভাগ্য! দুর্ভাগ্য কারণ বিষধর সাপের বিষের জ্বালা যে কি ভয়ঙ্কর হ'তে পারে তা যে সেই সাপের ছোবল খায়নি সে বুঝবে না! প্রবল প্রতাপান্বিত শক্তিমান প্রতিষ্ঠিত বড় বড় সৎসঙ্গীদের পাহাড়প্রমাণ বিরোধীতার পরিস্থিতির মোকাবিলা ক'রে জীবন অতিবাহিত করেছেন তেমন অভিজ্ঞতা কি সাধারণ সৎসঙ্গীদের আছে না হয়েছে!? কোয়ান্টিটি আর কোয়ালিটি এক নয়! কোয়ান্টিটি কখনও কোয়ালিটির মর্মব্যথা বুঝবে না, বুঝতে পারে না! ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী শ্রীশ্রীবড়দাকে আজীবন অপমানিত হ'তে হয়েছে তাঁকে মেনে নিতে না পারা কপট ভক্তমণ্ডলীর কাছে। যে কোনও প্রতিটি শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতির সংগঠনের ক্ষেত্রে মূল লোকের অবর্তমানে ক্ষমতা দখলের লোভে এরকম টালমাটাল ভয়ংকর অবস্থা তৈরী হয়েছে, হচ্ছে ও আগামীতেও হবে। শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে প্রায় সময় ধান্দাবাজ সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতো ও অপবাদ দিত। এই নালিশ শুনতে শুনতে বিরক্ত হ'য়ে ঠাকুর একদিন শ্রীশ্রীবড়দাকে বেত দিয়ে প্রচন্ড মেরেছিলেন এবং বড়দা ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে সেই মার হজম করেছিলেন, একটুও নড়েননি যাতে মারার সময় ঠাকুরের শরীরে এতটুকু কষ্ট না হয়। এবং মারের শেষে ঠাকুরের হাতে মারার সময় যে ঝাঁকুনি লেগেছিল তাঁর ফলে তাঁর হাতে যে কষ্ট, ব্যথা হয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দা নিজের ব্যথা ভুলে ঠাকুরের হাত টিপে দিয়েছিলেন, মালিশ ক'রে দিয়েছিলেন শরীর। শ্রীশ্রীঠাকুর অশ্রুসজল চোখে তখন দুঃখ ক'রে বলেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দাকে, "তোর একটাই দোষ তুই আমার সন্তান!" তাই শ্রীশ্রীবড়দার জীবন ও শ্রীশ্রীবড়দা কে বোঝা ঈশ্বরকোটি মানুষ ছাড়া সম্ভব নয়! আর সম্ভব সামান্য হ'লেও হ'তে পারে যদি বোঝার অন্ততঃ চেষ্টা করে! তখন অনেক বড় বড় ভক্ত ছিলেন তাঁরা কি শ্রীশ্রীবড়দার জীবন বুঝতে পারেননি? নাকি বুঝতে চাননি? সেই চেষ্টা সেইসময় শ্রীশ্রীঠাকুরের নামকরা প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গীদের অনেকেরই ছিল না। অহংকার তাদের এত প্রবল ছিল যে তারা অনেকেই সরাসরি ও অনেকে সঙ্গে থেকে পিছন থেকে শ্রীশ্রীবড়দার কাছা টেনে ধরার চেষ্টা করতো কাঁকড়ার চরিত্র নিয়ে।

শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রীতির জন্য, শ্রীশ্রীঠাকুরের তৃপ্তির জন্য, বেপরোয়াভাবে কর্ম্মমাতাল হ'য়ে নিরাশীনির্ম্মম ভাবে সামনে দাঁড়িয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন, শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট বিশাল সৎসঙ্গ আশ্রম, কোটি কোটি শিষ্য, বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কেন্দ্র, মন্দির রক্ষা করার, বাড়িয়ে তোলার নেতৃত্ব দিয়েছে জীবনকে বাজি রেখে জ্বালা যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হ'তে হ'তে। আর যারা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে ছিল, সাজানো বাগানে ভক্ত সেজে ফুল তোলার বদভ্যাস বহন করে চলেছিল, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতার অধিকারী হ'য়ে চুলকে ঘা করার অভ্যাস নিয়ে, পিছন থেকে ল্যাং মেরে সামনে এগিয়ে যাবার গোপন এজেন্ডা নিয়ে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার চেষ্টা করেছিল আর নেপোয় মারে দই খাওয়ার স্বভাবকে অবলম্বন ক'রে জীবন অতিবাহিত করবে ভেবেছিল তারা হনুমানের মত একইরকম Alertness (সতর্কতা), Sharpness (তীক্ষ্ণতা), Promtitude (ক্ষিপ্রতা) এবং সর্বতোমুখী দৃষ্টি ও তৎপরতা নিয়ে চলা ঈশ্বরকোটি পুরুষ প্রয়োজনে ভয়ংকর কঠিন সীমাহীন কোমল শ্রীশ্রীবড়দাকে বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি শ্রীশ্রীবড়দাকে তিনি ইষ্টের জন্য কতটা ভয়ংকর হ'তে পারেন। তাবড় তাবড় শ্রীশ্রীঠাকুরের ভক্তরা শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে সেদিন হনুমানজির মতো Untottering ও Unrepelling অর্থাৎ অটুট এবং অপ্রতিরোধ্য একাগ্রতা ও নিষ্ঠা লক্ষ্য করতে পারেনি তাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি টান না থাকার কারণে। হনুমানজির যে জন্মগত প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য প্রভুর প্রতি টান যে টানের কথা আমরা শুনেছি এর আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখে "মেরেকো হনুমানকা বাচ্চা বহুত আচ্ছা লাগতা হ্যাঁয়" সেই তীব্র টানের অভূতপূর্ব নিষ্ঠা নোতুন রূপে আমরা দেখতে পেয়েছি শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে নিজেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর বলার মধ্যে দিয়ে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা, ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইলে থাকো দূরে খাঁড়া।"

ভগবানের প্রতি ভক্তের টান কেমন হবে প্রকৃতির বুকে তার একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একমাত্র উদাহরণ যেমন হনূমান। ঠিক তেমনি প্রকৃতির বুকে কুকুরের মত প্রভু ভক্ত জীবজগতে আর কেউ নেই। সেই প্রভু ভক্তের উদাহরণ শ্রীশ্রীবড়দা।

ভগবান মায়ের প্রতি সন্তানের Untottering ও Unrepelling টানের প্রমাণ তাঁর সৃষ্ট জীব হনুমানের মধ্যে দিয়ে ভক্তদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাই সত্য যুগের পরে ত্রেতা যুগে জীবন্ত ঈশ্বর প্রভু রামচন্দ্র তাঁর প্রধান ভক্তের নমুনা হনুমানজীকে সামনে তুলে ধ'রে সমগ্র মানব কুলকে মেসেজ দিয়েছিলেন। আবার এবার এসে নোতুন রূপে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে এসে মেসেজ দিলেন যে, প্রভুর প্রতি প্রেম-ভালোবাসা কেমন হবে, Unrepelling adeherence, অচ্যুত অনুরাগ, নিষ্ঠা, একাগ্রতা কেমন হবে, untottering concentration অটুট একাগ্রতা, বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা কেমন হবে প্রকৃতির বুকে জীবেদের মধ্যে তার একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একমাত্র উদাহরণ কুকুর। কুকুরকে আপনি একদিন যদি খাবার দেন, একটা বিস্কুট দেন তাহ'লে সে আর আপনার থেকে কোনওদিনও যাবে না। আপনি লাথি মেরে তাড়িয়ে দিলেও যাবে না। দূরে সরে যাবে আর জুলজুল চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আপনি ডাকলে কাছে যাবে নইলে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আপনাকে জীবন দিয়ে রক্ষা করবে নিজের জীবনের বিনিময়ে।

আসলে ত্রেতা যুগে জীবন্ত ঈশ্বর প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রবল পরাক্রমী মহাপ্রাণ ইষ্টপ্রাণ মহান ভক্ত পরম ভক্ত বৃত্তিভেদী টান সম্পন্ন ভক্ত কৃষ্টিজাত সন্তান ছিলেন শ্রীশ্রীহনুমান আর সেই হনুমানের একই রকম চরিত্র নিয়ে, বৈশিষ্ট্য নিয়ে কলি যুগে নোতুন রূপে উপস্থিত হলেন শ্রীশ্রীবড়দা প্রভু রামচন্দ্রের নোতুন রূপে আবির্ভূত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর একইসঙ্গে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান হ'য়ে ।

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীকে নিজের চরিত্রে রূপ দিয়েছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা। আপনারা যারা আমার কথা শুনছেন তারা সৎসঙ্গ জগতে দ্বিতীয় ইষ্টপ্রাণ ভক্তের নাম বলুন যিনি নিজের জীবনে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণীকে প্রতিষ্ঠা করেছেন? নিজেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর বলেছেন? একটা নাম বলুন। আমি কাউকেই ছোটো বা বড় করছি না এখানে। শুধু গবেষকের দৃষ্টিতে দেখতে চাইছি যখন তাঁর চারপাশের ভক্তমন্ডলী তাঁকে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীপিতৃদেব আবার অনেক ধান্দাবাজ শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অমরেন্দ্রনাথ ব'লে রাজনৈতিক দলের মত উৎসবের সময় ফেস্টুন বানিয়ে এনে তৈল মর্দন ক'রে কল্কে পেতে চেয়েছিলেন সেদিন বড়দার প্রচন্ড চন্ডাল রাগ দেখতে পেয়েছিল সেই ধান্দাবাজ ভক্ত ও সৎসঙ্গীরা। সেদিন শ্রীশ্রীবড়দা তাদের বলেছিলেন, তোরা আমাকে বড়দা ডাক আর পিতৃদেব যে নামেই ডাক আমার তা'তে কিছুই আসে যায় না, আমি জানি আমি কি। আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর। আর ঐ তৈল্মর্দনকারী ধান্দাবাজ যে শ্রীশ্রীবড়দাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অমরেন্দ্রনাথ আখ্যা দিয়েছিল সেদিন সে দেখেছিল শ্রীশ্রীবড়দার হনুমানের মতো ভয়াল বিধ্বংসী রূপ।

শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিষ্ঠা 'সৎসঙ্গ' কে রক্ষা করার জন্য, তাঁর মিশনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার জন্য, কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে এক সূত্রে মালার মতো বেঁধে রাখার জন্য হনূমানজীর মতো ভয়ংকর পরাক্রম প্রচন্ড প্রতাপ, ভয়ংকর তেজ, Adherence অর্থাৎ অনুরাগ অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা, প্রীতি, বন্ধুত্ব, পছন্দ, প্রণয়, আকর্ষণ, আসক্তি, টান নিষ্ঠা নিয়ে শ্রীশ্রীবড়দা ক্ষতবিক্ষত বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন কঠিন কঠোর কোমল নেতৃত্বে ঠান্ডা মাথায় ধীর স্থির ভাবে বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তায় প্রচন্ড বিরোধীতাকে মোকাবিলা ক'রে। শ্রীশ্রীবড়দা প্রীতিপূর্ণ নিরোধের মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের মিশন 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'-র রথকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রতিটি কঠিন মুহূর্ত ও অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দিনগুলিতে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত! তাঁর তেজে সেদিন ঝলসে গিয়েছিল, জ্বলে পুড়ে খাক হ'য়ে গিয়েছিল সেদিন শয়তানের মিষ্টি হাসির শয়তানী। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার নমুনা! সৎসঙ্গ আজ এই অল্পসময়ের মধ্যে পারিপার্শ্বিক সবাইকে নিয়ে বাঁচা-বাড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন!


আজ আমরা দেওঘরে যাই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি দীক্ষিত অদীক্ষিত মানুষ দেওঘরের নব বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শনে, যাই শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে সমস্যা জর্জ্জরিত হৃদয়ে সমাধানের আশায়। আজ আশ্রম সংলগ্ন অঞ্চল থাকা, খাওয়া ও প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসার বিরাট ক্ষেত্র হ'য়ে উঠেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোকের আসা যাওয়া। কিন্তু আজ যদি বড়দা না থাকতো তাহ'লে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত সৎসঙ্গ শ্রীশ্রীঠাকুর যাওয়ার সাথে সাথে। আর আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা যদি না রেখে যেতেন শ্রীশ্রীবড়দা তাহ'লে ঘুমন্ত বিষধর সাপেরা শ্রীশ্রীবড়দার অবর্তমানে রক্তবীজের ঝাড়েরা শেষ ক'রে দিত বিশ্বজুড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের সোনার 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান সোনার সৎসঙ্গী সেজে। শক্তিমত্তা ও কূটনীতিজ্ঞান এই দুইয়ের সার্থক সমাবেশ দেখা গিয়েছিল শ্রীশ্রীবড়দার চরিত্রে, সমগ্র জীবনে তাই তিনি হনুমানজীর মতোই অপরাজেয় হ'য়ে উঠেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্নপূরণে, ইচ্ছাপূরণে। শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দা দু'জনেই তাঁদের প্রভুর প্রতি তাঁদের সমস্ত passions & complexes নিয়ে অর্থাৎ সমস্ত বৃত্তি নিয়ে actively interested অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে অন্তরাসী হ'য়ে উঠেছিল বলেই তাঁরা উভয়েই Powerful Man হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যারা যারা ছিটকে গেছে তাঁদের মধ্যে ঠাকুরের প্রতি passion uninterested থাকার কারণে অর্থাৎ আবেগ আগ্রহহীন, প্রবৃত্তি আলগা থাকার কারণে তাঁরা ছিটকে গেছিল। তাঁদের মধ্যে individuality ব'লে, ব্যক্তিত্ব ব'লে কিছু ছিল না। শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে Inviduality অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব ছিল কারণ তাঁরা Ideal-এ অর্থাৎ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রে Completely intregrated সম্পূর্ণরূপে সংহত ছিল, Ideal-এ attracted ছিল, আদর্শের প্রতি আকর্ষিত ছিল। শ্রীশ্রীহনুমান আর শ্রীশ্রীবড়দা দু'জনেরই ছিল Passion-parvading attachment অর্থাৎ বৃত্তি-ভেদী অনুরাগ। যে বৃত্তি প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ও প্রভু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে Fulfill করেনি, পরিপূরণ করেনি সেই বৃত্তির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না তাঁদের। আর যে বৃত্তি কোনও না ভাবে প্রভুকে Fulfill করছে, প্রভুর ইচ্ছে, স্বপ্নকে পরিপূরণ করছে, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও প্রশ্ন ছিল না, তা করেছেই।
শ্রীশ্রীহনুমানজীর মধ্যে যে গুণাবলী ছিল, সেই মহৎ অভূতপূর্ব গূণাবলী নিয়ে হনুমানজী ছিলেন একজন প্রবল পরাক্রমী ইষ্টপ্রাণ পরম ভক্ত ইশ্বরকোটি মানুষ। তিনি প্রভু রামচন্দ্রের একনিষ্ঠ বৃত্তি ভেদী টান সম্পন্ন পরম ভক্ত মানুষ। সেই অঞ্চলে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে হনূমান, বাঁদর ছিল সেই কারণেই ৫০০০ হাজার বছর আগের ঘটনা কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হ'তে হ'তে প্রভু রামচন্দ্রের পরম ভক্তকে হনূমান রূপে দেখানো হয়েছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "শয়তানের হাতে যতরকম ভেল আছে, তার চাইতে বেশি ভেল না থাকলে শয়তানকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে হবে। শয়তান যেমন মানুষগুলিকে বিভ্রান্ত ক'রে নিজের সেবায় লাগায়, আমরা তেমনি শয়তানকে বিভ্রান্ত করে পরমপিতার সেবায় লাগাবো।"
আমরা দেখেছি শ্রীশ্রীহনুমান ও শ্রীশ্রীবড়দা উভয়েই শয়তানকে বিভ্রান্ত ক'রে সমগ্র পরিবেশকে উদ্বুদ্ধ ক'রে ইষ্টের সেবায় লাগিয়েছিলেন।

তাই প্রতিটি সৎসঙ্গীকে বলবো দেওঘর যখন যাবেন তখন একবার শ্রীশ্রীবড়দার ঘরের সামনে গিয়ে তাঁর ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে দু'ফোটা চোখের জল ফেলে প্রণাম জানিয়ে আসবেন। সালটা সম্ভবত ৯২-৯৩ হবে দেওঘরে শ্রীশ্রীরাঙ্গামায়ের কাছে গিয়েছিলাম। শ্রীশ্রীরাঙ্গামায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, সেদিন রাঙ্গামা কথায় কথায় শুধু অশ্রুসজল চোখে বলেছিলেন, তোদের বড়দা আরও অনেকদিন থাকতো যদি এত আঘাত না পেত। তাই চোখের জলে শ্রীশ্রীবড়দার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফটোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলবেন,

তোমায় নইলে বড়দা
আমার দয়ালের প্রেম হত যে মিছে।
তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর
তুমি তাই এসেছ নীচে।

কারণ আজ যদি সৎসঙ্গী সত্য না জানে, শ্রীশ্রীঠাকুরের উপস্থিতিতে ও অবর্তমানে শ্রীশ্রীবড়দার ওপর যে অত্যাচার হয়েছে ও এখনো হ'য়ে চলেছে তা' নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বুকে যে অসহনীয় যন্ত্রণা, সেই যন্ত্রণা যদি সৎসঙ্গী অনুভব না ক'রে, শ্রীশ্রীবড়দার যন্ত্রণাবিদ্ধ অবদানের কথা ও আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরার গুরুত্ব না বোঝে তাহ'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের লীলাস্থান দেওঘরে ঘুরতে আসা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে ও সমস্যা মুক্ত হওয়ার জন্য যতই দেওঘরে আসুক না কেন তা তীর্থস্থানে আসা পর্যটকের মত অসাড় হবে।