ঠাকুরের কথা মানে রক্তমাংস সংকুল জীবন্ত ঈশ্বরের কথা। মূর্তি বা বোবা ভগবান বা আকাশের অদৃশ্য ভগবান বা অমূর্ত ভগবান ( Unseen God)-এর কথা নয়। ঠাকুরের কথা মানে জীবন্ত নারায়ণের কথা। আগামীকাল ০২/০৭/২৩ রবিবার গুরুপূর্ণিমা। গুরুপূর্ণিমা অর্থাৎ গুরুদের জন্য উৎসর্গিত দিন। আষাঢ় মাসে এই গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। ব্যবহারিক জীবনের গুরু ও আধ্যাত্মিক জীবনের গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে এই ব্রত পালন করা হয়। অর্থাৎ এখানে কোনও মূর্তিকে পুজো ও শ্রদ্ধা জানানোর ব্যাপার নেই। ঋষি বেদব্যাস আষাঢ় পূর্ণিমায় এই দিনে তাঁর শিষ্যদের জ্ঞান দান করেছিলেন তাই এই দিনটিকে গুরু পূর্ণিমা বা ব্যাস পূর্ণিমা বলা হয়। সেই থেকে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানায়। বর্তমানে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এসব প্রথা উঠে গেছে। এসব এখন ব্যাক ডেটেড।
আবার কথায় আছে, যস্য কেন্দ্রে বৃহস্পতি কিং কুর্বন্তি গ্রহা। অর্থাৎ যার জীবনের কেন্দ্রে গ্রহের গ্রহ বিগ্রহ বৃহস্পতি আছে তাকে গ্রহ কিছু করতে পারে না। আর বৃহস্পতি অর্থাৎ রক্তমাংস সংকুল গুরু যার জীবনে আছে সেই গুরু তাকে দয়া করে অর্থাৎ রক্ষা করে সমস্ত গ্রহদোষ থেকে। আবার গ্রহদোষ মানে গ্রহণ দোষ আর গ্রহগুণ মানে গ্রহণ গুণ। অর্থাৎ তুমি তোমার জীবনের চলার পথে জীবন ধ্বংসের জন্য যে যে দোষ জীবনে গ্রহণ করেছো বা যে যে গুণাবলী জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য গ্রহণ করেছো তাই গ্রহদোষ বা গ্রহগুণ।
আর, এই যে সমস্ত রকম গ্রহদোষ থেকে রক্ষা করে গ্রহের গ্রহ বিশেষ গ্রহ বৃহস্পতি বা গুরু সেই বৃহস্পতি হ'লেন বিষ্ণু বা নারায়ণ।
তাই এই গুরুপূর্ণিমার দিনে বিষ্ণু বা নারায়ণ পূজো হয়ে থাকে। এই বিষ্ণু বা নারায়ণ মানে বিস্তার বা মানুষের চলার পথ। বিষ্ণু বা নারায়ণের অনেক ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু বলি এই বিষ্ণু বা বিস্তার মানে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বিষ্ণু মানে তিনি, যিনি সর্ব্ব ও প্রত্যেকের ভিতর বিশেষভাবে পরিব্যাপ্ত।" আর নারায়ণ মানে ঠাকুর বললেন, নারায়ণ কথার অর্থ নর+অয়ন। অর্থাৎ নর মানে মানুষ আর অয়ন মানে পথ, চলার পথ। তাহ'লে মানুষের চলার পথের সন্ধান যিনি দেন তিনিই নারায়ণ।
তাই এই গুরুপূর্ণিমার দিনে বিষ্ণু বা নারায়ণ পূজো হয়ে থাকে। এই বিষ্ণু বা নারায়ণ মানে বিস্তার বা মানুষের চলার পথ। বিষ্ণু বা নারায়ণের অনেক ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু বলি এই বিষ্ণু বা বিস্তার মানে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বিষ্ণু মানে তিনি, যিনি সর্ব্ব ও প্রত্যেকের ভিতর বিশেষভাবে পরিব্যাপ্ত।" আর নারায়ণ মানে ঠাকুর বললেন, নারায়ণ কথার অর্থ নর+অয়ন। অর্থাৎ নর মানে মানুষ আর অয়ন মানে পথ, চলার পথ। তাহ'লে মানুষের চলার পথের সন্ধান যিনি দেন তিনিই নারায়ণ।
এখন আমার আপনার সবার প্রাণে প্রাণে কে পরিব্যাপ্ত হ'য়ে আছেন আর কেই বা আমাদের জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যে পথের দরকার সেই চলার পথের সন্ধান ব'লে দেন? তা কি ঐ হাজারো দেবদেবীর মূর্তি বা বোবা ভগবান বা আকাশের ভগবান বা অমূর্ত ভগবান ( Unseen God ) ব'লে দেন? কল্পনার ঐ বিষ্ণু বা নারায়ণের মূর্তি বা আঁকা ফটো কি কথা বলতে পারেন? তাঁরা আমাদের কি বলতে পারেন আমি তোমাদের সবার মধ্যে প্রাণ স্বরূপ পরিব্যাপ্ত হ'য়ে আছি ও তোমার জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য এই এই নিখুঁত ও পরিপূর্ণ চলার পথের সন্ধান ব'লে দিলাম? তাঁরা কি পারেন বলতে, এটা ক'রো না, ওটা ক'রো না, এটা ব'লো না, ওটা ব'লো না, এটা খেয়ো না, ওটা খেয়ো না, এখানে যেয়ো না, ওখানে যেয়ো না ইত্যাদি? পারেন না। যা কিছু বলেন ঐ জীবন্ত বিষ্ণু বা জীবন্ত নারায়ণ বলেন।
জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা মানে জীবনের কথা, বাঁচা-বাড়ার কথা। জীবন বর্দ্ধনের কথা। অস্তি বৃদ্ধির কথা। মরণকে রোধ ক'রে জীবনের পথে এগিয়ে চলার কথা। অস্তিত্ব রক্ষার কথা। আনন্দময় জীবন লাভ ও তা' উপভোগের কথা। ভুল ভ্রান্তির হাত থেকে বাঁচার কথা। বৃত্তি-প্রবৃত্তির বেড়া জাল থেকে বেরিয়ে আসার কথা। শয়তানের ছড়ানো মোহজাল থেকে উদ্ধার পাওয়ার কথা। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক কুসংস্কার থেকে রক্ষা পাবার কথা। চারপাশের জীবন বিধ্বংসী মোহজাল থেকে বেরিয়ে আসার কথা। নিজের মিথ্যে অহঙ্কার, ইগো থেকে বেরিয়ে আসার কথা। ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল, মিথ্যে, ভ্রান্ত প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার কথ। সংসার জীবনের কথা। জন্মের আগে ও জন্মের পর থেকে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য জীবনে নিখুঁত চলার কথা। অকাল মৃত্যুকে রোধ করার কথা। নাম ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা। তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকলে কুষ্ঠি ওলোটপালোট ক'রে দেওয়ার কথা। নিশ্চিত বিপদ, দূর্ঘটনা ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা। সমস্ত রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা। জন্ম বিজ্ঞান ও বিবাহ বিজ্ঞানের কথা। সমাজ গঠনের কথা। শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকের কথা। সবটাই শুধু পজিটিভ-পজিটিভ আর পজিটিভ। নেগেটিভ ব'লে কিছুই নেই, কোনও অস্তিত্বই নেই।
মোদ্দা কথা জীব ও জগতের এমন কোনও দিক নেই যে দিকের জীবনীয় কথা, জড় (?) ও অজড় সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব রক্ষা ও বৃদ্ধির কথা জীবন্ত ঈশ্বর, মূর্ত ভগবান বা ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ব'লে যাননি। তাই ঠাকুরের কথা মানেই বাঁচার ও বেড়ে ওঠার কথা আর সে কথা সব জায়গায় বলা যায়।
আর, সেই জীবন্ত মূর্ত রক্তমাংস সংকুল ঈশ্বর, সেই মানুষরূপী বিষ্ণু বা নারায়ণ হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মুহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্ব্বশেষ The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra. সেই এক ও অদ্বিতীয়ের পূজা হবে কাল গুরুপূর্ণিমার দিনে। কারণ তিনি ও তাঁর পূর্ব পূর্ব রূপ রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-ই একমাত্র আধ্যাত্মিক জগতের গুরু; বাকী সব সাধক।
তাই-ই আমাদের নানা দেবদেবীর মূর্তি পূজো, আংটি, তাবিজ, মাদুলি, লাল সুতো, নীল সুতো, কালো সুতো, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, মায়াজাল ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যথাশীঘ্র সম্ভব আর শয়নে-স্বপনে-জাগরণে-ভোজনে যদি বাঁচতে চাই ও বাড়তে চাই তাহ'লে পূজো করতে হবে জ্যান্ত জগন্নাথ দেবের, জীবন্ত ঈশ্বর রক্তমাংসের নারায়ণের। আর, চলতে হবে তাঁর ব'লে যাওয়া পথ ধ'রে। তবেই মুক্তি, তবেই শান্তি, তবেই হবে এই জন্ম ও জীবন হবে সার্থক ও সফল।
তাই আসুন, কাল আমরা সৎসঙ্গীরা গুরুপূর্ণিমায় ফটোর আঁকা নারায়ণ, অমূর্ত নারায়ণ, বোবা নারায়ণ, আকাশের নারায়ণকে দূরে সরিয়ে রেখে জীব জগৎ জীবন কারণ করুণাময় স্বামী জীবন্ত নারায়ণ, মূর্ত নারায়ণ, কথা বলা নারায়ণ, মানুষ মায়ের গর্ভে মানুষ রূপে মানুষের মাঝে নেবে আসা রক্তমাংসের নারায়ণ এক ও অদ্বিতীয় গুরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সৎসঙ্গ আয়োজনের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি ও গুরুপূর্ণিমা পালন করি। ( শেষ )
( লেখা ১লা জুন,২০২৩ )
No comments:
Post a Comment