তাহ'লে নাথরা যদি আদি ব্রাহ্মণ হ'ন তাহ'লে নাথ উপাধি কে দিয়েছিল বা কোথা থেকে এলো? আর ঐশ্বরিক দানটাই বা কি? আকাশ থেকে ঝ'রে পড়া বৃষ্টির মত কিছু? আর নাথদের এই ফেলে দেওয়া পৈতার ওজন সব মিলিয়ে যদি প্রায় সারে ৭৪ মণ হয় তাহ'লে ১ মণ প্রায় ৩৭.৩২ কিলোগ্রাম এর সমান হ'লে ৭৪মন= ২,৭৬১.৬৮ কেজি। তাহ'লে বল্লাল সেনের আমলে নাথ ব্রাহ্মণ যারা ছিল তাঁরা যে সে ব্রাহ্মণ নয় একেবারে খাঁটি আদি ব্রাহ্মণ, যোগী ব্রাহ্মণ ছিল; বল্লাল সেনের দেওয়া উপাধি আল, বাল, ছাল চাটার্জি, ব্যানার্জি, আচার্য, ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ ছিল না; কি বলেন? তাহ'লে নাথেরা কি ঐশ্বরিক দানপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণ ছিল? আর বল্লাল সেনের মতো মানুষের যিনি গুরু ছিলেন তিনি কেমন ঐশ্বরিক দানপ্রাপ্ত গুরু ছিলেন যিনি শিষ্যের মায়ের অন্তেষ্টিক্রিয়ার কাজ করতে রাজি হননি কিংবা শিষ্যকে বোঝাতে সমর্থ হননি তাঁর অসুবিধার কথা? আর, বল্লাল সেনই বা কেমনতর কতবড় ভয়ংকর শয়তান শিষ্য ছিলেন (যদি সত্য হ'য়ে থাকে ইতিহাস) যিনি সামান্য কারণে এতবড় হত্যালীলা চালাতে দ্বিধা করেননি এবং হাত কাঁপেনি! বল্লাল সেনের রাজত্বে বল্লাল সেনের গুরু পীতাম্বর নাথ যদি আদি ব্রাহ্মণই ছিলেন তা তিনি বল্লাল সেনের চরিত্র জানতেন না এবং সংশোধনের চেষ্টা করেননি? বল্লাল সেনের গুরু আদি ব্রাহ্মণ পীতাম্বর নাথের ঈশ্বর সাধনা, যোগ সাধনার ফলে প্রাপ্ত শক্তির কোনও প্রভাবই বল্লাল সেনের ওপর পড়েনি? গুরুশিষ্যের মধ্যে কি কোনও যোগাযোগ, কোনও সম্পর্কই ছিল না? আমাদের বর্তমান ঋত্ত্বিকদের মতো অবস্থা।
নাথ ব্রাহ্মণদের ফেলে দেওয়া পৈতের ওজন যদি মোট ২,৭৬১.৬৮ কেজি হ'য়ে থাকে তাহ'লে তাঁরা তো সংখ্যায় কম ছিলেন না? একটা পৈতের ওজন হিসেব করলেই মোট ২,৭৬১.৬৮ কেজি ওজনের পৈতে অনুযায়ী নাথ ব্রাহ্মণদের সংখ্যা বেরিয়ে যাবে। তাহ'লে তখন কি তাঁরা আদি ব্রাহ্মণ হ'য়েও ব্রহ্মজ্ঞানের মাধ্যমে রাজার মানসিক অবস্থা ও দেশের ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পারেননি? সংখ্যার দিক দিয়ে বলশালী হ'য়েও নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেননি? তাহ'লে কি তা শুধু কোয়ান্টিটিই ছিল, কোয়ালিটিতে জিরো ছিল? এর থেকে কি বোঝা যায়? ব্রাহ্মণ শব্দের যে অন্তর্নিহিত অর্থ সেই অন্তর্নিহিত অর্থানুযায়ী ব্রহ্মজ্ঞান অর্থাৎ বৃদ্ধির জ্ঞান, বৃদ্ধির জ্ঞানের যে অসীম গুণাবলী তাদের রক্তের মধ্যে ছিল না। পোলট্রির মুরগীর মতো শোধবোধহীন ছিল? অস্তিত্বকে রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য হুঁশ সেই হুঁশ তাদের ছিল না অথচ তাঁরা সমাজের মাথার ওপর বসে আদি ব্রাহ্মণ আখ্যা নিয়ে বসেছিল? নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ানো বা নিজস্ব কোমরের জোর তাদের ছিল না? পরনির্ভরশীল পরগাছার মত পূজার্চনা ও যোগ সাধনার নামে শুধু নিম্ন বর্ণের মানুষের রক্ত শুষে খেত? তাদের কোনও আলাদা আইডেন্টিটি ছিল না? যদি তাই হ'য়ে থাকে তাহ'লে বল্লাল সেনের মত স্বৈরাচারী মনোভাবের লোকেরা অত্যাচার চালাবে এ তো স্বাভাবিক। এই যে আজ নিম্ন বর্ণের লোকেরা উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের ওপর এত ক্ষিপ্ত তার কারণও তো সেই স্বৈরাচারী অত্যাচারী অহংকারী অজ্ঞানী লোভী কামুক পৈতে, তিলক, শিখা, জটা সর্ব্বস্ব বিশৃঙ্খল চরিত্রের কারণেই। তাই না? স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির নিয়মেই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হবেই। এবং তা হ'য়ে এসেছে যুগ যুগ ধরেই আর হ'য়েও যাবে যতদিন সৃষ্টি থাকবে ততদিন। যতদিন পর্যন্ত মানুষ না সচেতন হয়, আলস্য, অবসাদ, অজ্ঞানতার ঘুম ভেঙে জেগে না ওঠে। গুণ ও কর্ম অনুযায়ী প্রতিটি রঙের অর্থাৎ বর্ণের মানুষকে নিজ নিজ জন্মগত বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে এবং পারিপার্শ্বিককে নিজের স্বার্থজ্ঞানে সেবা দিতে হবে অর্থাৎ সত্য সম্পর্কে পরিবেশের প্রতিটি মানুষকে অবহিত করাতে হবে। তবে বল্লাল সেনের মতো শাসকেরা বুঝতে পারবে, সচেতন হবে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে।
( লেখা ১লা মার্চ, ২০২৪ )
(বর্তমানে 'পদবী যখন নাথ' লেখাটা ফেসবুকে নেই।)
No comments:
Post a Comment