Powered By Blogger

Saturday, April 13, 2024

প্রবন্ধঃ স্বঘোষিত সনাতনীদের বিরুদ্ধে প্রবির প্রতিবাদ।

আজকাল বহু স্বঘোষিত সনাতনী নিজেদের সনাতন ধর্মের রাখোয়ালা মনে ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এবং শ্রীশ্রীআচার্যদেবের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা ও বিরুদ্ধ আলোচনা করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান এদের কাছে এখন প্রচারের আলোয় আসার এবং অর্থ রোজগারের মোক্ষম উপকরণ। এরা ছাড়াও কিছু বালখিল্য ইউ টিউবার আছে যাদের নাক টিপলে এখনও দুধের গন্ধ বেরোবে তারাও পচা দুর্গন্ধযুক্ত ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো নালা ডোবায় ঘাই মারার বৈশিষ্ট্য নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুর পরিবার এবং 'সৎসঙ্গ' এর মতো মহাসমুদ্রে ঘাই মারার আবালের মত স্বপ্ন দেখে। আর স্বঘোষিত সনাতনীদের ধারণা তারাই সনাতন ধর্ম তথা হিন্দু ধর্মের, ভারতে ১১৫ কোটির বেশী হিন্দু ধর্মের জনসংখ্যার মাইবাপ। সনাতন ধর্ম এদের পৈতৃক সম্পত্তি। এই স্বঘোষিত সনাতনীরা যাকে ইচ্ছা যা খুশী বলার ও হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা ও অধিকার রাখে। তাই, এরা ইউ টিউবে বসে শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুর পরিবার এবং বর্তমান আচার্যদেব সম্পর্কে তীব্র কুৎসিত সমালোচনার করে; সঙ্গে বালখিল্য হুমকিও দেয় সৎসঙ্গকে।
এরকম কুৎসা শ্রীশ্রীঠাকুরের যৌবনকাল থেকে হ'য়ে আসছে আজও। সেই সময়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনা করতেন পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে। সমালোচনা করতেন বিদ্দজ্জনেরা 'শনিবারের চিঠি' নামে কাগজে। শনিবারের চিঠি ছিল বাংলাভাষার অন্যতম বিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী, যা বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক কাগজ। এবং এর মূল স্বত্বাধিকারী ছিলেন অশোক চট্টোপাধ্যায়। শনিবারের চিঠি'র প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস। 'শনিবারের চিঠি' তখন জনপ্রিয় ছিল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র ইত্যাদির মতো প্রতিষ্ঠিত মানুষদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণ্য সমালোচনার জন্য। এখানে মোহিতলাল মজুমদার, হেমন্তকুমার চটোপাধ্যায়, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, পরিমল গোস্বামী ইত্যাদিদের মতো বিশিষ্ট প্রথিতযশা বিখ্যাত ব্যাক্তিদের লেখা প্রকাশ হ'তো। এঁদের ব্যঙ্গময় ভাষার জন্য এবং তীক্ষ্ণ সমালোচনায় পিত্ত জ্বালিয়ে দেয়া এইসব রচনার আকর্ষণ ছিল তীব্র। বাঙ্গালিরা রসিয়ে উপভোগ করতো এইসব নোংরা রচনা। সেইসময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছিলেন 'শনিবারের চিঠি' সমালোচকদের কাছে হট কেক। সেইসময় বাঙালী সমাজ সাগ্রহে অপেক্ষা করতো শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে মুখরোচক কুৎসায় ভরা 'শনিবারের চিঠি' পড়ার জন্য। এটা ছিল বাঙালিদের সেই বাবু কালচার। যার ট্রাডিশান আজও ব'য়ে চলেছে, বয়ে চলেছে যদিও কিন্তু তারা সবাই ছিলেন পন্ডিত বিদ্দজ্জন। আর আজকের এইসমস্ত কুৎসাকারীরা? এরা পরিচয়হীন সেফটি ট্যাঙ্কে বসবাসকারী ভিখারী বাঙ্গালি কুৎসাকারী।
সেইসময়ের শ্রীশ্রীঠাকুরের কুৎসাকারী সজনিকান্ত দাস, হরিপ্রসাদ মল্লিক, কৃষ্ণপ্রসন্ন দাস, পঞ্চানন মিত্র ইত্যাদিদের মত মানুষজনের পরিণতি কি হয়েছিল তা' এরা জানে না।
পরবর্তী সময়ে এদের পরিণতি খুবই করুণ ছিল।

আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬ বছর। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, বার্মা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল বিশাল কেন্দ্র-মন্দির স্থাপন হয়েছে। সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, ঠাকুরবাড়ি নামে ৫ হাজারের অধিক কেন্দ্র-মন্দির রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। আর এইসমস্ত কেন্দ্র-মন্দির সৃষ্টি হয়েছে সৎসঙ্গীদের পয়সায়, কোনও সরকারী অনুদানে নয়, এটা যেন নিন্দুকেরা মনে রাখে। তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান আজ মানুষের বাঁচা-বাড়ার কাজে সেইসব দেশে দিবারাত্র কাজ ক'রে চলেছে। কোথায় আজ সেদিনের সেইসব নিন্দুকেরা? তাদের অস্তিত্ব কোথায় আজ? পেরেছে তারা ঠাকুরের রথ থামাতে? যত নিন্দুকেরা করবে কুৎসা, গালাগালি তত মানুষে মানুষে হ'য়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে প্রেম-ভালোবাসার গলাগলি, কোলাকুলি।

যাই হ'ক, সৎসঙ্গীরা যারা ইউ টিউবের সেই ভিডিও গুলিতে কমেন্ট করেছেন তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আমার মতামত। সৎসঙ্গী যারা কমেন্ট করেছেন ঐ ভিডিওগুলিতে তাদের অনেককেই দেখেছি উদারতার একটা পোজ নিয়ে কুৎসাকারীকে কুৎসা না করার, না জেনে বাবাইদাদার বিরুদ্ধে কিছু না বলার কাতর অনুরোধ করেছেন। সৎসঙ্গীরা কুৎসাকারীকে সমস্ত তথ্য নিয়ে বলার জন্য অনুরোধ করেছেন সঙ্গে এও বলেছেন যদি কষ্ট দিয়ে থাকি, দুঃখ দিয়ে থাকি তাহ'লে ক্ষমা ক'রে দেবার জন্য। এমনই এরা উদার বড় মনের সৎসঙ্গী যে, মন্তব্যের মধ্যে কোনও রকম দুঃখ কষ্ট না দিয়েও ক্ষমা প্রার্থনা করছে। কুৎসা, নিন্দা, গালাগালি করছে কারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে কারা! অবাক কান্ড! আবার কেউ কেউ যীশুর উক্তি তুলে ধ'রে বলছেন, এরা জানে না এরা কি করছে। একেবারে প্রায় যীশু হ'য়ে গিয়ে কুৎসাকারীকে আশ্রমে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলছেন, তুমি আশ্রমে এসো, বাবাইদাদার সাথে কথা বলো, দেখবে বাবাইদাদা তোমাকে ভালোবাসবে, স্নেহ করবে। কেউ কেউ তাকে প্রথমে প্রণাম ও শেষে নমস্কার জানিয়ে বাবাইদাদার পুরো ভিডিও শোনার জন্য কাতর অনুরোধ করছে! মোদ্দা কথা একেবারে চরম ভালোমানুষ হ'য়ে ঠাকুরের পরম ভক্তের মতন তাকে তোয়াজ করছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী উৎকৃষ্ট মানুষটিকে সত্য মিথ্যা বোঝাতে সৎসঙ্গীদের মধ্যে প্রতিযোগীতা লেগে গেছে।

কিন্তু অবাক হ'তে হয় দেখে যে, একবারও ইউ টিউবে কুৎসাকারীর অসম্মানজনক উক্তি, শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদাকে অশ্রদ্ধাভরে সম্বোধন, কটুক্তি, শ্রীশ্রীবাবাইদাদার বলা ভিডিওর কথাগুলির উদ্দেশ্যপূর্ণ বিকৃত ব্যাখ্যা, চরিত্র হনন সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে এইসমস্ত সৎসঙ্গীদের বুকের ভেতরে ঝড় ওঠে না, রাগ হয় না, বুকের ভেতরের ঘুমিয়ে থাকা পরাক্রমের বাঘটা একবারের জন্যও জেগে ওঠে না। তখন মনে পড়ে, ঠাকুরের বাণী,

"টান হ'ল তোর ইষ্টে অসীম
পরাক্রমহীন কিন্তু,
পশুর টানেও বিক্রম থাকে
তুই কেমনতর জন্তু!

এমনই এরা নিজেরাই এক একজন জীবন্ত ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এত এদের প্রেম। যে প্রেম যীশুকে ক্রূশবিদ্ধ হ'তে সাহায্য করেছিল। যে প্রেম প্রভু যীশুর ওপর নির্ম্মমভাবে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণাদায়ক অত্যাচার হ'তে দেখেও ভক্তমন্ডলীদের মধ্যে আগ্নেয়গিরির ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হ'তে দেখা যায়নি। এমনই এদের প্রভুর প্রতি প্রেম ভালোবাসার গার্ড ওয়াল। সেই ধারা চলে আসছে যুগ যুগ ধ'রে। একমাত্র আমরা শ্রীশ্রীহনুমানজীর মধ্যে দেখেছিলাম প্রভু রামের প্রতি পরাক্রম আর দেখেছি প্রভু মহম্মদের প্রতি বলিষ্ঠ গার্ড ওয়াল।
কুৎসাকারী যখন আমার প্রভু সম্পর্কে কুৎসা করতে দ্বিধা করে না, আমার প্রিয়পরমকে অশ্রদ্ধাভরে অশ্লীল ভঙ্গিতে সম্বোধন করতে, কাপড় টেনে খুলে ল্যাংটা করতে দু'বার ভাবে না তখন তাকে কোলে বসিয়ে আদর!? কিছু বললেই তখন উলটে সত্যানুসরণের বাণী তুলে ধ'রে কথার ফোয়ারা ছোটায়। তখন ভাবি, নিজের বাড়ির লোকের প্রতি এমন আচরণ করেন তো এই সৎসঙ্গীরা? এত এদের সহ্যশক্তি? এই সহ্যশক্তি নিজের পরিবারের মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যার ওপর দেখান তো? নাকি কাগুজে বাঘের মতো শুধু মন্তব্যে ভালবাসা-প্রেম ঝ'রে পড়ে? নাকি দুর্বল হৃদয়ের বহির্প্রকাশ? এর থেকে আত্মরক্ষার্থে নপুংশকদেরও পরাক্রম ভয়ঙ্কর রকমের হয় ! কিসের জন্য এদের তোয়াজ? এখানে এত কমেন্টের মধ্যে দিয়ে নপুংশকের মতো অনুরোধের ঝড় কেন?

অথচ, যখন ঠাকুরকে নিয়ে, শ্রীশ্রীবড়দাকে নিয়ে, শ্রীশ্রীদাদাকে নিয়ে, শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদাকে নিয়ে, শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে নিয়ে ঘৃণ্য প্রচারের বিরুদ্ধে কোনও লেখা লিখি বা ভিডিওতে বক্তব্য রাখি তখন সমালোচকরা দেখি হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর, একশ্রেণীর গুরুভাই তখন ঠাকুরের, আচার্যদেবের কথা তুলে ধ'রে আমাকে সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের বিচারের ভার হাতে তুলে না নেবার যে বাণী, "বিচারের ভার আপন হাতে নিতে যেও না, পরমপিতার ওপর ন্যস্ত করো, নতুবা উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ ক'রে দেবেন" এই বাণীকে হাতিয়ার ক'রে জ্ঞান দেন আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মানসিকতায়। আর বেশীরভাগকে দেখি কোনও কমেন্ট করতে এগিয়ে আসে না তারা শুধু তখন বালখিল্য জয়গুরু আর জয়গুরু; জয়গুরু আর জয়গুরু।

সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে, আচার্যদেবের বিরুদ্ধে ভিডিও ক'রে প্রচারে মিনিমাম, মিনিমাম লাইক, লাভ সাইন পড়ে 8.9k, কমেন্ট করে 2.5k, শেয়ার করেছে 1.6k সৎসঙ্গ বিরোধীরা। সবচেয়ে কম হিসেব দিলাম। আর সৎসঙ্গীরা পা ধ'রে তোয়াজ করতে বসে গেছে কুৎসাকারীকে সত্যমিথ্যা বোঝাতে। পাল্টা না নিজেরা কোনও প্রতিবাদ করবে, না কোনও শেয়ার ক'রে ছড়িয়ে দেবে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কোনও লেখা। বুকের ভেতরের কষ্টটাকে আর অপ্রিয় সত্যটা শুধু তুলে ধরলাম একজন সৎসঙ্গী হিসেবে। এরা ঠাকুরের "স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও" এই বাণীটা মাথায় রেখেও মিষ্টভাবে স্পষ্টভাষায় প্রতিবাদ করতে পারে কিন্তু তাও করে না।

আচ্ছা, ঠাকুর কি আমাদের এমনই নপুংসক সৎসঙ্গী তৈরী করতে চেয়েছিলেন? একটা মিনিমাম প্রতিবাদ থাকবে না? পরাক্রমের 'প' থাকবে না? যে ভিডিও লাইক করেছে 8.9k, কমেন্ট করেছে 2.5k, শেয়ার করেছে 1.6k আর লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী সৎসঙ্গীর মধ্যে ক'জন কমেন্ট করেছে সেখানে প্রতিবাদী হিসেবে? হাতে গোনা কয়েকজন। তার মধ্যে বেশীরভাগের কমেন্টে কুৎসাকারীর প্রতি অনুরোধের, ভালোবাসার, উদারতার বরফ গলে একেবারে ঝর্ণা হ'য়ে ঝ'রে পড়ছে, ভেসে যাচ্ছে। আর কুতসাকারীর ভিডিও ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে। আর উদারতার ধ্বজাধারী সৎসঙ্গীরা 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতা নিয়ে 'পিঠ পুড়ে যাচ্ছে ফিরে শো' কথাটুকুও বলতে আলস্য বোধ করছে, বলছে 'পিপুফিশু!' এমনই আশ্চর্য সৎসঙ্গী নামক জীব এরা! যাক এদের নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল।

আমি কুৎসাকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাডে
হে কুৎসাকারী!
আপনি / আপনারা সনাতনের রাখোয়ালা হ'য়ে স্বঘোষিত সনাতনী সেজে শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান এবং আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার বিরুদ্ধে ভিডিওতে কথাগুলি বলেছেন সেই আপনি/আপনারা আশ্চর্য জীব একবার আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখুন। আর বাবাইদাদার চেহারাটা দেখুন। আপনি/আপনারা আপনাদের জীবন কিভাবে চালান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কিভাবে চলেন, কতটা আপনার কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত জীবন, কতটা অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করেন ব্যক্তি জীবনে, কতটা আপনি স্বঘোষিত হিন্দু ধর্ম ও রামচন্দ্রের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তা আপনি ভালোভাবেই জানেন। তবে 'পহেলে দর্শনধারী, পিছারী গুণ বিচারী' তত্ত্বের প্রথমটা 'পহেলে দরশনধারী' দিয়ে এক নজরে আপনাকে বিচার করা যায়। আপনি সৎসঙ্গের কোটি কোটি সৎসঙ্গীর আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার পায়ের নখের যোগ্য না--এই কথাটা বললেও তাঁর পায়ের ঐ সুন্দর ঝকঝকে নখও অপমান বোধ করবে, প্রতিবাদে গর্জে উঠবে। শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কথা ছেড়ে দিন, সৎসঙ্গের ইষ্টপ্রাণ ভক্তদের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখবেন। তাদের পায়ের নখ এত সুন্দর যে সেই নখের যোগ্যও আপনি/ আপনারা নন। 'কাল কা যোগী ভাত কে বলে অন্ন' সেই আপনি/আপনারা ঈশ্বরকোটি পুরুষ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ভুল ধরতে বসেছেন, করতে বসেছেন মূল্যায়ণ।
আপনি/আপনারা ইউ টিউবকে হাতিয়ার ক'রে নিয়েছেন ঠাকুরের, আচার্যদেবের ও সৎসঙ্গের কুৎসা ক'রে টাকা কামাবার জন্য। সৎসঙ্গের বিশাল প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন সস্তায় প্রচার লাভের জন্য। আর ভাবছেন আপনার/আপনাদের বালখিল্য টাট্টি কা মাফিক বক্তব্যে আপনি/আপনারা বাজিমাত করবেন। তাই মদ্যপের মতো, নেশাগ্রস্থের মতো তাল জ্ঞান হারিয়ে যা নয় তাই পাগলের প্রলাপ ব'কে চলেছেন। মনে রাখবেন, আপনাদের মধ্যে একজন শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদাকে কর্মফল ভোগের কথা বলেছেন। সে না হয় দেখা যাবে। আপনার শেষের সেদিন কিন্তু ভয়ঙ্কর। সজনিকান্ত দাস ও হরিপ্রসাদ মল্লিক, কৃষচন্দ্র দাস ইত্যাদি আশ্রমের বিরুদ্ধে যে কুৎসা, শ্রীশ্রীঠাকুরের যে চরিত্র হনন করেছিলেন তার উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর কিছু বলেছিলেন? বলেননি। বরং সুশীল চন্দ্র বসুর টেগার্ড সাহেবের কাছে সজনীকান্ত দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের ও তাঁর শাস্তি হওয়ার জন্য ঠাকুর খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এবং এই কাজের জন্য পরম ভক্ত সুশীল চন্দ্র দাসকে ভর্তসনা করেছিলেন ঠাকুর। আজ ঠিক তেমনি ইচ্ছে করলেই আইনি সহায়তায় মিথ্যে বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারে 'সৎসঙ্গ'। কিন্তু করেনা। কিন্তু ভুলে যাবেন না সুশীলচন্দ্র বসুর মতো সৎসঙ্গী কিন্তু আজও আছেন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মধ্যে।

সেইসময় ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গী সুশীল চন্দ্র বসু সজনীকান্ত দাসের সঙ্গে দেখা ক'রে তাকে বলেছিলেন,
"আপনাদের পত্রিকা আশ্রমের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচার করে চলেছে ছদ্মনামে। একটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখাও কি সম্পাদকের কর্তব্য নয়? একবার আশ্রম ঘুরে দেখুন। আমার সাথে চলুন আশ্রমে। আমি খরচ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সব পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে বিচার করে যদি মনে হয় আপনারা যা লিখছেন ঠিক লিখছেন তখন ছদ্মনামে তা প্রকাশ না করে প্রকাশ্য নাম দিয়েই লিখবেন।

'শনিবারের চিঠি' সম্পাদক সজনী কান্ত দাস বলেছিলেন, " আমরা যা লিখেছি,বা লিখছি তা যাই হোক, যদি আপনাদের আশ্রমের আদর্শে সত্য বলে কিছু থাকে তা আমাদের এই আঘাতে ভেঙে পড়বে না। আর যদি আশ্রমে দুষ্ট কিছু থাকে তবে তা ভেঙে পড়বে। কাজেই আপনারা যদি ঐ আঘাত সহ্য করেও টিকে থাকতে পারেন,তাহলে বুঝব আপনাদের আদর্শ সত্য ও আশ্রমে সত্য বলে কিছু আছে"। সজনীকান্ত দাসের এই কথার মধ্যে সেদিন যেমন সত্য ঠিক তেমনি তাঁর প্রচ্ছন্ন অহংকার লুকিয়ে ছিল।

কিন্তু কবি, সাহিত্যিক ও 'শনিবারের চিঠি' সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক সজনী কান্ত দাসকে সৎসঙ্গের সম্পাদক সুশীল চন্দ্র বসু বারবার অনুরোধ করেন একবার আশ্রমে এসে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাথে দেখা ক'রে যাবার জন্য। কিন্তু সজনী কান্ত দাস কিছুতেই আশ্রমে গেলেন না। শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে ও তাঁর 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখতেই লাগলেন। সুশীল চন্দ্র বসু সজনী কান্ত দাসের এই আচরণে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হলেন এবং কলকাতায় লালবাজারে গিয়ে টেগার্ড সাহেব সব জানিয়ে একটা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানালেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের নামে ও সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে 'শনিবারের চিঠি' পত্রিকার এই মিথ্যা অশ্লীল বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে লালবাজারে দরখাস্ত আসতে লাগলো। কলকাতা পুলিশ 'শনিবারের চিঠি' পত্রিকার সম্পাদক সজনী কান্ত দাসকে অশ্লীল মিথ্যা বিকৃত সংবাদ প্রচারের অপরাধে গ্রেপ্তার করেছিলেন। বিচারে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হ'লে তিনি শাস্তিপ্রাপ্ত হন।

পরবর্তীকালে সজনিকান্ত দাস অনুতপ্ত হয়েছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গ লাভের জন্য খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি। অত্যাধিক high pressure এ ভুগছিলেন তিনি। পরে সেই বছরেই মারা গেলেন। একেই বলে নিয়তির নিষ্ঠূর পরিহাস। নিয়তির নিষ্ঠূর পরিহাস মানে? নিয়তি মানে নিয়ে যায়। আর পরিহাস মানে ঠাট্টা, তামাশা, কৌতুক। যে নিষ্ঠুর ঠাট্টা, তামাশা, কৌতুক তুমি করেছো বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে, যে নিষ্ঠুর ঠাট্টা, তামাশা, কৌতুক ক'রে তুমি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শ্রীশ্রীঠাকুরকে তুমি ব্যথা দিয়েছো বুকে, যে কষ্ট, যন্ত্রণা দিয়েছো তাঁর অন্তরে সেই নিষ্ঠুর ঠাটা, তামাশা, কৌতুক তোমাকে টেনে নিয়ে গেছে শেষের সেদিনের ভয়ংকর দিনগুলিতে। জীবনের শেষের ভয়ংকর দিনগুলিতে তাঁর শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখার, ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলার তীব্র ইচ্ছা তাঁকে ভিতরে ভিতরে পাগল ক'রে তুলেছিল। কিন্তু শারীরিক তীব্র অসুবিধার কারণে তাঁর সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি।

জীবনের শেষের দিকে সজনীকান্ত দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, "আমি তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কুৎসা করেছি, আমি শুধু তাঁকে একবার দেখতে চাই, তিনি কত বড় শক্তিমান পুরুষ যে এত কুৎসা, এত নিন্দা, গালাগালি, বদনাম, অপমান, অশ্রদ্ধা, বাধা বিপত্তির পাহাড় ঠেলে কেমন করে বিশ্বের কাছে দাঁড়ালেন মাথা উঁচু ক'রে!? কেমন করে পূজিত হচ্ছেন সকলের কাছে। আমি শুধু তাঁকে দর্শন করব। আর, ওই মন্ত্রপূত দন্ড ধারণ করে নিজেকে ধন্য মনে করব। আপনাদের সভায় আমন্ত্রন নিয়ে যাবো না! শুধু ঠাকুর দর্শন হলেই আমার জীবন সার্থক হবে।" কিন্তু তা আর হ'য়ে উঠলো না। তাঁর অমলিন ইচ্ছা পূর্ণ হ'লো না। মৃত্যু তাঁকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেল।

হয়তো দস্যু রত্নাকরের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বাল্মীকি হয়ে ওঠার মত সজনী কান্ত দাসের মনে বিরাট পরিবর্তন এসেছিল। তাঁরও জীবন 
দস্যু রত্নাকরের শেষ জীবনের মত একটা মিলনাত্মক না হ'য়ে বিয়োগাত্মক গল্প হ'য়েই রয়ে গেল।

তাই বলি, ক্যামেরার সামনে বসে যারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে আজও অকথ্য কুকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন, সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন, শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারকে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা অপবাদে কলঙ্কিত ক'রে চলেছেন, যারা বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে কটু কথায় বিদ্ধ করছেন, যারা অল্পবয়সী আশ্চর্য প্রতিভাবান যুবক শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে তীব্র শব্দবাণে ক্ষতবিক্ষত করছেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সজনী কান্ত দাস, হরিপ্রসাদ মল্লিক, কৃষঞ্চন্দ্র দাস ও পঞ্চানন মিত্র ইত্যাদী কুৎসাকারীদের মতো শেষের ভয়ংকর সেদিন।

আপনারা যারা সৎসঙ্গ কে বলেছেন অসৎসঙ্গ, জয়গুরু কে বলেছেন ভয়গুরু। অপেক্ষায় থাকুন সেই নিয়তির অপেক্ষায়, যে সময় মতো আপনাকে, আপনাদের নিয়ে যাবে ঠিক জায়গায়, সেই ঠিক জায়গাটা হ'লো, শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা অনুযায়ীঃ তুমি যা করছো ও ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।"

আজ আপনি/আপনারা সৎসঙ্গ-কে অসৎসঙ্গ বলেছেন এবং জয়গুরু-কে ভয়গুরু বলার জন্য আপনার ও আপনার পরিবারের শেষের সেদিন অসৎসঙ্গের ভিড়ে ভয়গুরু কতটা ভয়াল হ'য়ে নেবে আসছে দেখতে থাকুন। আপনি ও আপনারা তো রামচন্দ্রের বালখিল্য এক একজন স্বঘোষিত সনাতনী কপট ভক্ত, কারণ প্রভু রামচন্দ্রের প্রকৃত ভক্ত কখনও কারও বিরুদ্ধে কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনা, গালাগালি, অপমান, অশ্রদ্ধা, বদনাম, অপপ্রচার ইত্যাদি করে না। প্রকৃত ভক্তের মুখ দিয়ে সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, ছুঁচো ইত্যাদি বেরোয় না, টাট্টি কা মাফিক কথা বেরোয় না। হীরে, জহরত, মণি, মুক্তোর মত ঝলমলে প্রেম-ভালোবাসার কথা বের হয়। আপনি, আপনারা প্রভু রামচন্দ্রের ভক্ত হ'য়ে, সনাতনী হ'য়ে প্রভুর নোতুন রূপকে চিনতে পারেননি এমনই আপনাদের ভক্তি! আপনারা প্রকৃত ভক্ত হনুমানদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না। আজও তারা আছে। আছে সেদিনের সুশীলচন্দ্র বসুর মতো ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মাঝে।।

শুনুন তবে বলি, একবার ভক্তপ্রাণ শ্রীশ্রীহনুমানজীর লঙ্কা বিরোধী ভয়াল পরাক্রম দেখে স্বয়ং রামচন্দ্র ভয় পেয়ে হনুমানকে শান্ত হ'তে অনুরোধ করেছিল। তখন ভক্তপ্রাণ হনুমান প্রভু রামচন্দ্রকে বলেছিলেন, হে প্রভু! আপনার সব কথা আমি শুনি, শুনেছি এতদিন আর তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। কিন্তু এবার আমাকে আপনি কিছু বলবেন না, আমি এবার আপনার কথা রাখতে পারবো না, আমায় ক্ষমা করবেন। যে দুষ্ট, নোংরা হাত আমার প্রাণপ্রিয়, প্রাণাধিক, নয়নাভিরাম, প্রাণবল্লভ, প্রাণভোমরা, প্রিয়পরম প্রভু রামচন্দ্রের সহধর্ম্মিনী লক্ষ্মীস্বরূপিণী সীতামায়ের কেশ স্পর্শ করেছে, যে আমার প্রভুকে কষ্ট দিয়েছে, যন্ত্রণা দিয়েছে সেই শয়তান নরাধম নরকের কীট লোকের দুষ্ট, নোংরা হাত আমি দেখতে চাই না। স্বর্গ-মর্ত-পাতাল ও দিগন্ত কাঁপিয়ে ভয়ঙ্কর হুঙ্কার দিয়ে হনুমান দুষ্ট রাবণের দু'হাত টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল সেদিন। তারপর শান্ত হ'য়ে হাঁটু গেঁড়ে ব'সে প'ড়ে কাঁদতে কাঁদতে রামচন্দ্রের পায়ের কাছে কৃত কর্মের জন্য, প্রভুর কথা অমান্য করার জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। সেদিন শত অনুরোধেও প্রভুর কথা শোনেনি হনুমান। আর সেই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত প্রভু রামচন্দ্রের দু'চোখ বেয়ে নেবে এসেছিল জলের ধারা। এমনই ছিল হনুমানের ভালোবাসা, প্রেম।

তাই একটা কথা বলি, হে স্বঘোষিত বালখিল্য সনাতনী সাধু, সাবধান! ভুলে যাবেন না এই সৃষ্টির বুকে সবাই সনাতনী। আর, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীরা সবাই স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার এক একজন ভক্ত হনূমান। সমঝদারকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যাঁয়।

আজ এই পর্যন্ত। আগামীতে আবার দেখা হবে। জয়গুরু।

No comments:

Post a Comment