Powered By Blogger

Saturday, April 6, 2024

প্রবন্ধঃ ধর্মীয় দূরাত্মাদের পৃষ্টপোষক সাধারণ মানুষ।

ইসকনের (দোয়ারকা) ব্রহ্মচারী সাধু শ্রীঅমোঘ লীলা দাস পরমপুরুষ পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁর প্রধান ভক্ত শ্রীশ্রীবিবেকানন্দের সম্পর্কে কটূক্তি করায় দেশ-বিদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ছিঃ ছিঃ ক'রে উঠেছে চারপাশ। ফলস্বরূপ ইসকন কর্তৃপক্ষ (ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রী রাধারামন দাস ) তাকে সাস্পনেন্ড করেছে একমাসের জন্য। তিনি লিখেছেন শ্রী অমোঘ লীলা দাসের দুই মহান ব্যক্তিত্বের মহান শিক্ষাদান সমন্ধে এই ধরণের অনুপযুক্ত, অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য এবং বোঝার অভাব তাঁদের অত্যন্ত ব্যথিত করেছে।

শ্রী অমোঘ লীলা দাসের এই গুরুতর ভুলের জন্য ইসকন কর্তৃপক্ষ একমাসের জন্য তার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে এবং তাকে তা জানানো হয়েছে। তিনি তার এই ধরণের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করেছেন। তিনি তার এই অপকর্ম উপলব্ধি করেছেন। এই একমাস তিনি প্রায়শ্চিত্ত করবেন জনমানব থেকে দূরে গোবর্ধন পাহাড়ে নিরালায়।

যাই হ'ক, এইরকম একজন অযোগ্য অসভ্য মানুষ যে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঐশ্বরিক প্রবচন দিতে পারে তা দেখে অবাক হ'য়ে যেতে হয়! তিনি শ্রীকৃষ্ণের লীলা মাহাত্ম্য প্রচার করেন অথচ তিনি জানেন না যে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণই শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ। অথচ এই কৃষ্ণ ভক্তরাই দেখেছি কৃষ্ণকথা বলবার সময়, জ্ঞানগর্ভ ভাষণের সময় বলেন,

"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।
পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।"

অর্থাৎ, হে অর্জুন যে যে সময়ে ধর্মের হানি, ক্ষীণতা, অধর্মের উদ্ভব হয়, তখন আমি অর্থাৎ পরমাত্মা আপনাকে সৃজন করি, অর্থাৎ শরীর ধারণ পূর্বক অবতীর্ণ হই। সাধুদিগের রক্ষার জন্য, দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

তথাকথিত কৃষ্ণপ্রেমীরা হয় গীতা পড়েন না, না-হয় পড়লেও উপরের এই শ্লোকের মানে বোঝেন না, কিংবা পড়লেও মানে বুঝেও বুঝতে চান না। আসলে তারা অনেকেই সব পড়েন, জানেন, বোঝেন কিন্তু আত্মপ্রতিষ্ঠার কারণে শ্রীকৃষ্ণের নবরূপের কাছে আত্মসমপর্ণ করেন না। এইসমস্ত ভন্ডদের ব্যাভিচারী ভক্তির কাছে ঈশ্বর লাঞ্ছিত হন এবং ঈশ্বরের সাধারণ ভীরু, দূর্বল, অজ্ঞানী, কুসংস্কারাছন্ন ও বেকুব ভক্তমণ্ডলী শিকার হন, নতি স্বীকার করেন।

যুগপুরুষোত্তমকে জীবনে গ্রহণ না করলে এমন ব্লান্ডার হবেই হবে আর দিতে হবে তার জন্য মোক্ষম খেসারত। সেই খেসারত শুধু সময়ের অপেক্ষা। পিতৃদত্ত দেওয়া নাম ভুলে যাওয়া নকল 'অমোঘ লীলা'-র জন্য অপেক্ষা করছে সৃষ্টিকর্তা প্রভুর অমোঘ লীলা 'শেষের সেদিন ভয়ংকর'! ব্রহ্মহত্যার মতো এ ঘোর পাপের কর্মফল তাকে ভুগতে হবেই যতক্ষণ না তিনি পরমপ্রেমময় জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের রাতুল চরণে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ নিজেকে আহুতি না দেন এবং ঠাকুর রামকৃষ্ণের পরম ভক্ত বিবেকান্দের কাছে সাশ্রুনয়নে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা না চান। কারণ অমোঘ লীলা দাসের পাপ রত্নাকর দস্যুর পাপকে ছাড়িয়ে গেছে। রত্নাকরের জিভ পাপে এত ভারী ছিল যে মুখ দিয়ে 'মরা' ছাড়া আর কিছুই বেরোতো না। মৃত্যু নিয়েই ছিল তার কারবার। আর তাই-ই ছিল রত্নাকরের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। আর অমোঘ সাধুর পাপ ব্রহ্মহত্যার পাপের চেয়েও গভীর অন্ধকারময় ও ভারী। তিনি পরমপিতা, পুরুষোত্তম, সদ্গুরু, প্রিয়পরম, সৃষ্টিকর্তা, সুপ্রিম কারণ, অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরমঅস্তিত্ব, এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের অবমাননা করেছেন। পরমপুরুষ পুরুষোত্তমের দয়ায় তার জিভ সঙ্গে সঙ্গে খসে পড়েনি কারণ এটা ঘোর কলি যুগ। এই ঘোর কলি যুগে তাকে একা একা নিভৃতে নির্জনে নিরালায় এই পাপের কর্মফল ভোগ করতেই হবে। আর তা কেউ দেখতে পাক আর না পাক। ঐ গোর্বধন পাহাড়ে টাহাড়ে গিয়ে প্রায়শ্চিত্ত ক'রে তার ঘোর পাপ স্খলন হবে না। একমাস লোক দেখানো তথাকথিত প্রায়শ্চিত্ত ক'রে ফিরে এসে আবার প্রবচন দিয়ে পাপ মোচন হবে না। তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত, প্রাজাপত্য-ব্রত এবং কৃচ্ছ-সান্তপন বা মহাসান্তপন-ব্রত পালন ক'রে শুদ্ধ হ'য়ে তারপর বেলুর রামকৃষ্ণ মঠে গিয়ে দয়াল প্রভুর চরণে মুন্ডিত মস্তকে নিজেকে সারেন্ডার করতে হবে। নতুবা বেলুড় মঠের নিয়ম অনুযায়ী তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মনের, শরীরের, আত্মার ময়লা সাফ ক'রে শুদ্ধ হ'য়ে তারপরে আবার ধর্মরাজ্যে ঢুকতে হবে নতুবা ধর্মরাজ্যে ঢোকার অধিকার তার নেই। আগেও তার অধিকার ছিল না তথাপি তিনি ঢূকে পড়েছিলেন শরীরে-মনে-আত্মায় জন্মজন্মান্তরের ময়লা নিয়ে আর তা এত বছরেও ধুয়ে সাফ করার প্রয়োজন মনে করেনি ও চেষ্টা করেনি।

তাই বলি, তিনি যা ভাল বুজেছেন তাই বলেছেন, করেছেন। এই যার যা ইচ্ছা তাই করা ও বলা বোধহয় নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। যা আমরা দেখে থাকি রাজনীতির ময়দানে। ধর্মের ময়দানেও আমরা আজ অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি মিডিয়া ও ফেসবুকের দৌলতে। আগে মিডিয়া এত স্ট্রং ও তার ব্যাপক প্রচারের ক্ষমতা ছিল না তাই আমরা অনেককিছুই দেখতে ও জানতে পারিনি। শুধুমাত্র কাগজ ছিল মাধ্যম। তাই এই জীবন্ত ঈশ্বরকে ও তাঁর সঙ্গে আসা মহামানবদের নিয়ে কুৎসা, নিন্দা, গালাগালি করা নোতুন কিছু নয়। আমরা সব অবতারী, অবতার, মহামানবদের ক্ষেত্রে অহরহ এই ঘৃণ্য, দূর্গন্ধযুক্ত নোংরা তীব্র দূষিত আক্রমণ দেখেছি, দেখছি ও দেখবো ভবিষ্যতে আরও ভয়ংকর রূপে।

এই যে ঘৃণ্য আক্রমণ এই আক্রমণ যে শুধু ঈশ্বর অবিশ্বাসী, দু'পাতা বিজ্ঞান পড়া তথাকথিত বিজ্ঞানী যুক্তিবাদী, নাস্তিক, রাজনৈতিক নানা মতবাদে বিশ্বাসী মানুষেরা যে ক'রে থাকেন তা কিন্ত নয়, এই ঘৃণ্য আক্রমণ ক'রে থাকে ধর্ম জগতের অজ্ঞানী, ভন্ড, কপট, দুশ্চরিত্র, বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে অবস্থানকারী, বেসামাল তীব্র রিপু জ্বরে আক্রান্ত তথাকথিত ধার্মিকেরাও। লোক দেখানো কৃষ্ণপ্রেমে মাতাল এই সমস্ত ভন্ড ভক্তের দল ও স্বঘোষিত সনাতনীরা সরাসরি অমোঘ লীলা দাসের মত জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কুৎসা ক'রে থাকেন প্রকাশ্যে।

শ্রীঅমোঘ লীলা দাসের মুখের কথায় শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীবিবেকানন্দের প্রতি অশ্রদ্ধা, অসম্মান ঝ'রে পড়েছে। আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের প্রতি অকথ্য, কুকথ্য, অশ্লীল, সীমাহীন অশ্রাব্য ভাষায় কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মতন নোংরা গালাগালি সহ চোখে দেখা যায় না এমন সব দৃষ্টিকটু ছবি পোষ্ট হয়ে চলেছে ফেসবুকে এবং সেই পোষ্টের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকায় পুরুষের সঙ্গে নারীও সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলেছে এবং সেই সমস্ত ভিডিও হয়ে চলেছে; যা তাদের স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জন্মগত সাংবিধানিক প্রাপ্য অধিকার।

আর, এই নোংরা প্রচার সহ্য করতে হয়েছে ও করতে হচ্ছে আজও ঠাকুরকে, ঠাকুরের জীবদ্দশায় ঠাকুরকে এবং শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে এমনকি ঠাকুরবাড়ির মায়েদের ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। আর এ ঘৃণ্য প্রচার শুধু বাইরে থেকে অদীক্ষিত ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দ্বারা শুধু হ'য়ে চলেছে তা নয়। এই নোংরা প্রচার অর্থনৈতিক ও অন্যান্য অনৈতিক ব্যভিচারী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সৎসঙ্গ থেকে বাধাপ্রাপ্ত কিছু সৎসঙ্গী এবং কিছু জন্মবিকৃত অতি বোদ্ধা পোঙ্গা পন্ডিত রূপী সাজা সৎসঙ্গীদের কাছ থেকেও পেয়ে আসছে ঠাকুর পরিবার। কোথাও কোনও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ নেই।

দেশের সুশীল সমাজ আজ মহাভারতের মহাবীর ভীষ্মের মত চুপ, নীরব। বাংলা ও বাঙালি আফিমের নেশার মতো আচ্ছন্ন।'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় আচ্ছন্ন।

আর, এই অসভ্য নোংরা লোকেদের মুখে ঈশ্বরের প্রবচন শোনে ধর্ম ও ঈশ্বর ভীরু, দুর্বল, অজ্ঞ ও বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আচ্ছন্ন সাধারণ মানুষ। এইসমস্ত মানুষেরাই অমোঘ লীলা দাসেদের মতো ধর্মীয় দূরাত্মাদের পৃষ্টপোষক। এরা এইসমস্ত অজ্ঞানী, অযোগ্য, ভন্ড, ধর্মজগত ও ঈশ্বরের মহিমায় কলঙ্ক লেপনকারী দূরাত্মাদের কোনওদিনই বয়কট করবে না। বরং এদের দৌরাত্ম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ধর্মের অঙ্গনে বিচরণকারী অধর্মাচারী নরাধম যে হঠাৎ এই কথা বলে ফেলেছে মুখ ফসকে তা নয় তাদের পূর্বসূরীদের হাত ধরেই সচেতনভাবেই এই শিক্ষায় শিক্ষিত তারা। এরা ধর্মের আঙিনায় ধর্মাত্মা রূপে শয়তান কিল্বিসের সহচর। এদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা মুখ দেখাও পাপ। তাই সবটাই ঈশ্বরের ওপর বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম। দেখা যাক এদের শেষের সেদিন কি হয়।
অলমিতি বিস্তারেন। ( লেখা ১২ জুলাই, ২০২৩ )

No comments:

Post a Comment