Powered By Blogger

Monday, April 8, 2024

প্রবন্ধঃ শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি!

এদের গানঃ
'দে মা লন্ডভন্ড করে, লুটে পুটে খাই।'
এদের একটাই লক্ষ্য 'মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার'। এই ভয়ংকর তত্ত্বের এরা পূজারী। এরা ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে না। এরা পুকুর চুরির দক্ষ কারিগর। এদের থাবা ভয়ংকর হিংস্র শ্বাপদের থাবাকেও হার মানায়। এরা জন্মায়; জন্ম কারিগর এরা। অসম্ভব বুদ্ধিমান এরা। কথার জাগলারিতে দুনিয়া কাঁপানো যাদুকর এরা। এরা জানে কখন কোথায় কি রকম কোপ মারতে হয়। আম আদমি এদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারবে না। এরা ধূর্ত শৃগালের মত। এই সমস্ত ধূর্ত শৃগালেরা সমাজের সমস্ত জায়গায়, সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সময় সুযোগের অপেক্ষায় মোক্ষম আঘাত হানবে ব’লে। ভেজা বিড়ালের মত মটকা মেরে পড়ে থাকে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়। এই সমস্ত ধূর্ত শেয়ালেরা স্বাভাবিক নিয়মেই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্যরূপে তাঁর ‘সৎসঙ্গ’ নামক প্রতিষ্ঠানেও জায়গা ক‘রে নেয়। এরা অকৃতজ্ঞ ও বেইমান। এদের রক্তে দোষ। কপটতা এদের রক্তে, এদের শিক্ষায়, চেতনায়। কপটতা এদের জন্মগত ও পরিবেশগত সংস্কৃতি। কপটতা ও বলাৎকার এদের কাছে সমার্থক। নিজের সত্ত্বাকে নিজে বলাৎকার করা কপটতার আর এক নাম। এরা কপট, এরা নিজের সত্ত্বাকে নিজেরাই বলাৎকার করে অবলীলায় অবহেলায়। এদের শকুনের চরিত্র। এই শকুনিরূপী অসৎসঙ্গীরা জানে কৌরবকুলের মত কিভাবে ঠাকুরের তথাকথিত আম ভক্তকুলকে বোকা বানাতে হয়। এদের দূরদৃষ্টি এতটাই প্রখর যে এরা জানত ঠাকুর একটা বিরাট আয়ের স্রোত। ঠাকুর সীমাহীন রোজগারের বিশ্বস্ত নিরাপদ অন্তহীন উপকরণ। এই সমস্ত ঠাকুরের অকৃতজ্ঞ বেইমান বুড়ো ভাম শিষ্যরা ঠাকুরের কাছে এসেছিল শিং ভেঙে বাছুর হ’য়ে বাছুরের দলে ঢুকে ঠাকুরের দীক্ষা নিয়ে ঠাকুরের মিশনকে হাতিয়ার ক’রে নিজেদের গুপ্ত মিশনকে পরিপূর্ণ করার জন্য; এই জন্য এরা সুপরিকল্পিতভাবে ঘুঁটি সাজাতে শুরু ক’রে দিয়েছিল। ভারতভাগ ও বাংলাভাগের পরিকল্পনা এবং ঠাকুরের ভারতে অন্তর্ভুক্ত বাংলায় চলে আসার সিদ্ধান্ত এই সমস্ত মীরজাফর, জুডাসরুপী ভক্তদের মনে বহু আগেই লোভের আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। ঠাকুরের অবর্তমানে ঠাকুরের ফটো সামনে রেখে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে লুটেপুটে খাবার মানসিকতার আগুনে ঘিয়ের মত কাজ করেছিল ঠাকুরের দেশ ত্যাগের এই সিদ্ধান্ত। লোভের আগুনের লকলকে শিখায় এরা এতটাই অন্তরে বাহিরে ঝলসে গিয়েছিল যে ভূতের মত পোড়া কালো শরীর নিয়ে এরা ভারত তথা বাংলাভাগকে ত্বরান্বিত করার জন্য উদ্দাম শয়তানী কীর্তনের নৃত্যে মেতে উঠে গেয়ে উঠেছিল, “ দে মা লণ্ডভণ্ড ক’রে, লুটেপুটে খায়”! এইসমস্ত ঠাকুরের কপট ভক্তরা প্রকারান্তরে যারা শয়তানের বিশ্বস্ত অনুচর ছিল তাদের শয়তানী দিব্যদৃষ্টি এতটাই প্রখর ছিল যে তারা বুঝে গেছিল ঠাকুর যদি তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে এককথায় তাঁর সাধের ৫৪বছরের চরম সীমাহীন পরিশ্রম দিয়ে, শারীরিক ও মানসিক অন্তহীন তীব্র কষ্ট, যন্ত্রণা, অপমান, লাঞ্ছনা, বদনাম দিয়ে তিলেতিলে গড়ে তোলা বি-শা-ল ‘সৎসঙ্গ’ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যায় ভারতের পশ্চিমবাংলা বা অন্য কোনোখানে, যদি তাঁর জন্মস্থান পাবনা হিমাইতপুরের পবিত্র পুণ্যভূমি ছেড়ে চলে যায়, চলে যায় তাঁর পরিবার পরিজনের সকল সদস্যদের নিয়ে তাহ’লে সেই অবাধ শূন্য বিচরণ ক্ষেত্রে সেইসমস্ত জুডাস আর মীরজাফররূপী ঠাকুরের কপট বেইমান অকৃতজ্ঞ শক্ত ভক্তরা যাদের উপর ঠাকুর বিশ্বাস করেছিল, ভরসা করেছিল তারা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যাবে সেই বিশাল ছেড়ে যাওয়া সম্পত্তি, ছেড়ে যাওয়া শূন্য, ফাঁকা বিশাল উর্বর ক্ষেত্র যে ক্ষেত্রের উপর মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসার; সুযোগ পেয়ে যাবে জমিয়ে বসে বংশ পরম্পরায় “শুন্য এ বুকে মোর পাখি ফিরে আয়, ফিরে আয়” নাকি কান্নার গান গেয়ে বাংলাদেশের বেকুব আম সৎসঙ্গীকে বোকা বানিয়ে ‘চর্ব্য-চোষ্য, লেহ্য-পেয়’ রুপে নির্জন রাতের একাকি অসহায় নারীকে দানবের ভোগের মত জীবনকে চুটিয়ে ভোগ করার। বংশপরম্পরায় এদের উত্তরসূরি এবং এদের অনুগামী কিছু বীরপুঙ্গব পোঙ্গাপন্ডিতের দলবল এই পাপের বোঝা বয়ে চলেছে সেই দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশের বুকে ঠাকুর সৃষ্ট ‘সৎসঙ্গ’-এর ভেতরে থেকে এবং সরাসরি ‘শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ’ নামে প্রতিষ্ঠান গঠনের মধ্যে দিয়ে। এদের সঙ্গে ভারতের দেওঘরে অবস্থিত ঠাকুরের মূল কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। এই সমস্ত অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কেষ্টবিষ্টুরা এতবড় যোগীপুরুষ, এতবড় মহাত্মা, এতবড় সিদ্ধপুরুষ, এতবড় গোঁসাই-গোবিন্দ, এতবড় সাধক যে এদের কাছে ঠাকুরের সবচেয়ে আদরের ভালোবাসার ধন প্রথম সন্তান ও সন্ততিদের কোনও মূল্য নেই। বাংলাদেশের ‘সৎসঙ্গ’ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেষ্টবিষ্টুরাও নিজেদের মূল কেন্দ্র দেওঘরের প্রধান আচার্যের সমকক্ষ মনে করে। এরা এতবড় শক্তিমান, এতবড় দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন যোগ্য ও দক্ষ কৃতি সৎসঙ্গী, ঠাকুরের মিশনের পতাকাবাহী প্রথম শ্রেণীর কর্মী যে এদের ওপরই ছিল ঠাকুরের সম্পত্তি রক্ষা করবার দায়িত্ব আর এদের নাকের ডগার ওপর দিয়েই ঠাকুরের সম্পত্তির কিয়দংশ কোর্টে কেস চলা সত্ত্বেও বাংলদেশ সরকারের ভূমি দপ্তরের মাধ্যমে নীরবে হস্তান্তর হ'য়ে যায় ক্লোন সৎসঙ্গীর হাতে! তাই এইসমস্ত অকৃতজ্ঞ বেইমান কপট দায়িত্বজ্ঞানহীন ভোগী সৎসঙ্গীদের অবস্থাও মীরজাফর ও জুডাসদের মত হবে। মুসলমান সমাজ যেমন আর তাদের পরবর্তী প্রজন্মের নাম 'মীরজাফর' রাখে না, ইহুদীরা যেমন 'জুডাস' নামটাকে ঘৃণা করে ঠিক তেমনি আগামী ইতিহাসও নীরবে ফরমান জারি করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে যে আগামী বাঙ্গালী প্রজন্ম আর কখনও ঐ দায়িত্বপ্রাপ্ত অকৃতজ্ঞ বেইমান কপট ভোগী সৎসঙ্গীর নামে কারও নাম রাখবে না। কিন্তু সাধারণ বোকা, সরল, আবেগসর্বস্ব ধর্মভীরু বহুনৈষ্ঠিক ভক্তমণ্ডলীও এদের দ্বারা এদের সঙ্গে অকারণ বয়ে চলেছে এই কলঙ্ক এবং তা’ নিজের দোষেই। এই সমস্ত সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে ঠাকুর ‘সত্যানুসরণের‘ শুরুতেই সাবধান ক;রে দিয়ে বলেছেন, “সরল হও কিন্তু বেকুব হ’য়ো না, আগে সাহসী হও, বীর হও তবে জানা যাবে তোমার ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে। বহুনৈষ্ঠিকের হৃদয়ে প্রেম ভক্তির স্থান নেই”। এরা যদি বেকুব না হ’তো, এরা যদি আবেগসর্বস্ব ধর্মভীরু না হ’তো, বহুনৈষ্ঠিক না হ’ত তাহ’লে এরা দুধ আর জলদুধের তফাৎটা খুব সহজেই ধরতে পারতো। এই সমস্ত ভক্তমণ্ডলীর জীবনে যদি ঠাকুর প্রথম ও শেষ কথা হ’তো এবং ঠাকুরের হাজার হাজার বাণীর একটা বাণীও চরিত্রে ফুটে উঠতো তাহ’লে এই সমস্ত ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসা ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির ঝলক ছেটানো শয়তান ভন্ড কপট শক্ত ভক্তদের চিনতে পারতো, চিনতে পারতো এদের শয়তানি হাসি যা ভগবানের চেয়েও মিষ্টি! আর অনেক জনমের পরে কষ্ট ক’রে পাওয়া নিজের এই অমূল্য জীবনকে এইভাবে এইসমস্ত ধর্ম ও জীবন্ত ঈশ্বর নিয়ে ব্যবসাকারীদের হাতে নষ্ট হ’তে দিতো না। এরা কোনওদিনই জাগবে না ব’লে ঠিক করে নেয়। এরা বলে তুমি যতই যাই বলো না কেন আমি শুনবো, আমি দেখবো, আমি পড়বো, আমি জানবো ও বুঝবো কিন্তু আমি আমার জন্মজন্মান্তের এবং আমার ছোটোবেলা থেকে বড় হ’য়ে ওঠা পরিবার পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত হওয়া বুঝের গন্ডীর বাইরে পা রাখবো না। তাই ঠাকুর দুঃখ ক’রে বললেন, “তোমরা জানলে অনেক, বুঝলে অনেক কিন্তু করলে না”। তাই আজ সময় এসেছে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার। আচার্যের দেখানো পথে চলে ঠাকুরকে উপলব্ধি করার ও ঠাকুরের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার।
যাই হ’ক, এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল ‘সৎসঙ্গ’-এর বর্তমান সংঘাচার্য পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদার সাবধান বাণী, “...............তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই, শেষের সেদিন ভয়ংকর”। আর ঠাকুরের সাবধান বাণীঃ “তুমি যা করছো বা ক’রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।“
আমরা অপেক্ষায় রয়েছি সেই ভয়ংকর দিনের যা শুরু হ’য়ে গেছে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আততায়ীর হাতে হত্যার মধ্যে দিয়ে। পরিতাপের বিষয় এদের বংশে কোনও ভগীরথের জন্ম হবে না কোনওদিনও যার আবির্ভাবে এইসমস্ত ধূর্ত শৃগালেরা এবং এদের বংশধররা যারা এদের পথ অনুসরণ ক’রে চলেছে সেইসমস্ত শৃগালের চেয়েও ভয়ংকর হায়েনারুপী মহাপাতকেরা তাদের পূর্বপুরুষের দ্বারা পরমপিতার প্রতি কৃত মহাপাপের হাত থেকে মুক্তিপাবে। আমরা এইসমস্ত মহাপাতক বংশধরদের উদ্দেশ্যে বর্তমান আচার্যদেবের লেখা সাবধান বাণী তুলে ধরতে পারিঃ
শেষের সেদিন ভয়ংকর
ফাঁকি দিয়েই ঘুরিস ভবে প্রবঞ্চনায় ভুলিয়ে লোকে
কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে আত্মপ্রতিষ্ঠারই ঝোঁকে,
এমনি করেই বেলা গেল সন্ধ্যা-ছায়ায় ভরল ঘর;
এখনও তুই চেতনহারা ? শেষের সেদিন ভয়ংকর।
নিত্য অহংমত্ত যারা গেছে চলে এমন কত----
কেরদানিতে কাঁপিয়ে ধরা চলত যারা অবিরত,
গুরুগিরির মোহে ছুটিস গরুর মতন নিরন্তর,
তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই ; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
পিছু পিছু চলছে যারা নিত্য নিয়ে মাথায় তোরে
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভাবিস অনন্তকাল রাখবি ধরে?
ডুববি যখন শুনবি ওদের অভিশাপের কলস্বর
হাতটি ধরার থাকবে না কেউ ; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
ইষ্ট ছেড়ে ইষ্ট সেজে ছড়িয়ে বাহার ভাবিস নাকি
বাহার দেখেই ভুলবে বিধি, পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি?
সত্তা জুড়ে জাগছে ভাঙ্গন, জাগছে যে ঐ প্রলয় ঝড়
পারিস যদি ফের এখনও ; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
ঈশের বিষাণ উঠলো বেজে , কাল ফণী তোর মাথার পরে,
মরণ তরে করছে তাড়া বাঁচবি এবার কেমন করে ?
দ্রোহ-লোভের বাঁধন ছিঁড়ে ইষ্টতপে ঝাঁপিয়ে পড়
নইলে গতি কুম্ভীপাকেঃ শেষের সেদিন ভয়ংকর।
( লেখা ৮ই এপ্রিল, ২০১৭ )

No comments:

Post a Comment